Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 2.64 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller শেষ ট্রেনের যাত্রী/ সমাপ্ত
#41
গল্পটা ভাল
চালিয়ে যাও
পাঠক কম এখন 
বড় বড় আপডেট দিয়েও তেমন পাঠক পাই না আগের মত
সবাই ব্যস্ত  
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
(23-06-2025, 11:18 PM)বহুরূপী Wrote: সে আর ফিরবে না এখন,তবে পরবর্তী আপডেটে এই গল্প শেষ হবে এবং তা আমি নিজেই দেব।
তবে উনার শেষ আপডেটে কোন যৌন মিলন নেই, সুতরাং আমি নিজে থেকে কিছু যোগ করব না।
কয়েকদিন অপেক্ষা করুন, আমি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেই আপডেট দেবো।

শুনে ভালো লাগলো, তবে রংতুলির শেষ আঁচড় আমি দিলেই বোধহয় ভালো হয়। ব্যস্ত না হয় একটু অপেক্ষা করুন, সময়মতো সমাপ্তি টেনে দেবো।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


[+] 2 users Like কালপুরুষ's post
Like Reply
#43
(27-06-2025, 05:40 AM)কালপুরুষ Wrote: শুনে ভালো লাগলো, তবে রংতুলির শেষ আঁচড় আমি দিলেই বোধহয় ভালো হয়। ব্যস্ত না হয় একটু অপেক্ষা করুন, সময়মতো সমাপ্তি টেনে দেবো।

শুভস্য শীঘ্রম।
Like Reply
#44
(27-06-2025, 05:40 AM)কালপুরুষ Wrote: শুনে ভালো লাগলো, তবে রংতুলির শেষ আঁচড় আমি দিলেই বোধহয় ভালো হয়। ব্যস্ত না হয় একটু অপেক্ষা করুন, সময়মতো সমাপ্তি টেনে দেবো।

রহস্যময় পরিনতি যত জলদি জানা যায় ততই ভালো। bananaSad

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
#45
ব্রা বিহীন নরম দুদ
পেন্টি ছাড়া গরম গুদ
বিজন বনে দুজনায়
কে জানে কে কি চায়
আরিশ লাগায় গুদে মুখ
মায়ার কন্ঠে ভাসে সুখ
--------------------
XOSSIP exclusive desi photos ( NEW )
https://photos.app.goo.gl/VvkcYNbp6KP2VW2g8


Like Reply
#46
আআআআআআআআআআআআআ
--------------------
XOSSIP exclusive desi photos ( NEW )
https://photos.app.goo.gl/VvkcYNbp6KP2VW2g8


Like Reply
#47
ট্রেন যে প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই যে থেমে রইলো, তার যে আর কোনো নড়নচড়ন নেই অনেককাল যাবৎ। আশা করি, আর কালবিলম্ব না করে খুব শীঘ্রই ট্রেন ছাড়বে। 
Like Reply
#48
(04-08-2025, 01:56 AM)ray.rowdy Wrote:
ট্রেন যে প্রান্তিক স্টেশনে পৌঁছানোর আগেই যে থেমে রইলো, তার যে আর কোনো নড়নচড়ন নেই অনেককাল যাবৎ। আশা করি, আর কালবিলম্ব না করে খুব শীঘ্রই ট্রেন ছাড়বে। 

আমি আছি, তবে কিছু সমস্যার কারণে লেখা হচ্ছে না। আমি সময় বের করে দেব , বিলম্বের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#49
ভালো। পরিবার, দৈনন্দিন জীবন সবার আগে। নিজের সময় করেই দিয়ে দিও, তবুও দিও। শুধু একটাই অনুরোধ, গল্পের মান ও গতির সঙ্গে কোনো আপোস করো না।
Like Reply
#50
আপডেট কই
Like Reply
#51
পর্ব ৫

– "ছেলেটা সত্যি হতভাগা!"

কথাটা রুদ্র বলল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এতগুলো বছর পেরিয়ে মায়া আবারও রুদ্র কে দেখবে,এটি তার জন্যে একে বারেই অপ্রত্যাশিত। আরিশ যদিও বলেছিল সবটা। কিন্তু কেন যেন বিশ্বাস হয়নি মায়ার।। বা হয়তো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়নি তার।

– "কাকিমার কথা তোমার মনে আছে মায়া?"

– “হু....!” মায়া ধাক্কাটা এখনো সামলে উঠতে পারেনি। তাই রুদ্র প্রশ্নের কোন বিশেষ উত্তর তার কাছে থেকে পাওয়া গেল না।

– “শুধু হু্! কাকিমার কথা মনে নেই তোমার? কাকু- কাকিমার প্রেম নিয়ে তুমি আমায় কত কথা শুনিয়েছো। তাছাড়া.....”

– “কেমন আছেন উনি?”— এই প্রথম বার মায়া মুখ তুলে চাইলো রুদ্রর দিকে, শান্ত ও ক্লান্ত চোখের দৃষ্টিতে।

– “ভালো নেই মায়া! আসলে ওদের পুরো পরিবারটাই ভালো নেই।..... মাত্র এক বছর মায়া, মাত্র এক বছরে পুরো পরিবারটা শেষ হয়ে গেছিয়েছে...”

রুদ্র বলতে লাগলো,মায়া তার চোখের দিকে তাকিয়ে যেন দেখছিল সবটা,এই গভীর কালো চোখের মণিতে....



– শুরুটা হয় আফরোজা দিদির বিয়ে দিয়ে।ভেতরের খবর আমি খানিক জানি দাদা পুলিশ বলে। তবে তোমায় প্রথম থেকে বলি— দিদি বর ছিল রাজনীতিক দলের বড় কর্মকর্তা,তার স্বভাব চরিত্র বিশেষ ভালো ছিল না। এখন ভাবলে খুব আফসোস হয় মায়া। যদি কোন ভাবে সেই দিনটা ফিরিয়ে আনা যেত,তবে বিয়েটা আমি নিজে আঁটকে দিতাম।

– “তাই?” 

মায়া ভালো করেই জানে রুদ্রর প্রথম ভালো লাগা আফরোজা। হয়তো কিশোর বয়সে ছেলে সিনিয়র দিদির....না! মনটাকে আবার ফিরিয়ে আনে মায়া।দেখে আর একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো রুদ্রর বুকের গভীর থেকে। তারপর রুদ্র বলতে লাগলো আবারও

– “ লোকে বলে ছেলেটির পিতার মৃত্যুর পর ও বাড়িতে নানান লোকজনের আসা যাওয়া শুরু হয়। রাজনীতিতে পাকা দাপুটে নেতা, তাছাড়া বাপে টাকা ছিল যথেষ্ট। অনেক রাত পর্যন্ত বন্ধুবান্ধব মিলে মদতট খেয়ে যা তা অবস্থা। রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে এইসব অসম্ভব নয় যদিও। কিন্তু এক রাতে আফরোজাদি খুন হয় ও বাড়িতে! প্রথমটা চালানো হয় আত্মহত্যা হিসেবে, কিন্তু ওরা সন্দেহ করে দিদির বরকেই। এরপর পুলিশ-কোটকাচারী, কিন্তু কোন লাভ হয়নি।

এ কথা মায়ার অজানা নয়। বিশেষ করে সে নিজেও অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে টাকার সামনে মাথা নত করতে দেখেছে,মায়ার নগ্ন দেহের সামনেও! তবে মায়া চমকে উঠলো রুদ্রর পরবর্তী কথা গুলো শুনে,

– “ আসলে আফরোজা দিদিকে ওরা সবাই মিলে.... মানে। ( বলতে বলতেই রুদ্রর চোখ মুখটা কেমন কঠিন হয়ে গেল, দাঁতে দাঁত লেগে একটু থমকে গেল যেন।) মেয়ের মৃত্যু সইতে না পেরে কাকিমা কেমন যেন হয় গিয়েছিলেন। তারপর হঠাৎ একদিন শুনলাম পুলিশ কাকামণিকে খুনের দায়ে থানায় আটকেছে। অনেক রকম কথা উঠলেও আমার মনে হয় কাকামণি রাগের বসে আফরোজা দিদি বরকে গলা টিপে হত্যা করে। উনার ফাঁসির আদেশ শুনে কাকিমা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেনে....“

এক ফোঁটা অশ্রু বিন্দু নেমে এলো চোখের কোণ বেয়ে। মায়া চেয়ে ছিল একদৃষ্টিতে। অবশেষে যখন শুনলো আরিশের মাকে পশ্চিমবঙ্গে তার বাবার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ছেলের সাথে দেখা করার অধিকার টুকুও তার নেই, তখন সত্যিই তারও দুই চোখ জল টলমল করে উঠলো।

এতখন মনে তার কিছুই ছিল না,থাকার কথাও নয়। অনেক সময় নিয়ে সে সবটি ভুলে ছিল এতোদিন। শুধু...... শুধু ভুলতে পারেনি রুদ্রকে,তবে ভুলতে শুরু করেছিল একথা মিথ্যে নয়। এখন রুদ্রর চোখের কোনে জল দেখে আচমকা সবকিছু যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল মায়ার।

আশ্চর্য লাগল—সে আগে কেন আরিশকে চিনতে পারেনি?
কলেজের সেই রোগা-পাতলা, পাগলাটে ছেলেটি!
হাঁ! সেই তো! ছেলেটি  রুদ্রর বন্ধুদের মধ্যে ছিল একেবারে আলাদা স্বভাবের। অনেক বার মায়া তো নিজেও দেখেছিল আরিশ নিজের খাবারও ভাগ করে দিত বন্ধুদের। আসলে কাকিমার রান্নার হাত ছিল এক কথায় সোনা বাঁধানো। তাই আরিশ না দিলে বন্ধু-বান্ধবেরা একরকম কাড়াকাড়ি করে ছিনিয়ে নিত।

ছেলেটা কী বোকা দেখতে ছিল তখন। বোকা বোকা চেহারা, অথচ চোখে-মুখে ছিল এক অন্য রকমের উচ্ছ্বাস—যেন নিজের এক আলাদা দুনিয়ায় বাস করত সে। আজ দেখলে অবাক লাগে। সেই ছেলেই এখন এক সুপুরুষ যুবক! 
ভাবা যায় এমনটা সম্ভব? 

 প্রশ্ন জাগে মনে,তবে উত্তর দেয় তার নিজের অতিত। সময় মানুষকে কতটুকু পাল্টে দিতে পারে! শেষটায় ওই পাগলটার সাথেও তার এই সব লেখা ছিল তা হলে। আগেকার সময় হলে মায়া লজ্জায় লাল হতো এখন।আফজোরা দিদির কথা শুনে মনে জমাট বেঁধে নামতে ঈর্ষা। কিন্তু আজ চোখের জলে দুই গাল ভেসে গেল তার।

মনে মনে সে ভাবলে, হয়তো ওই সোনালি ফ্রেমের চশমাটিই চিনতে না পারার অন্যতম কারণ। পরক্ষনেই নিজের মনে বলে না....তা নয় মোটেও—ওর চোখের ভেতর তাকালেই বোঝা যায়,এ সেই আরিশ। কারণ পাগলাটে স্বভাবটাও যে আজও ছেলেটার  যায়নি মোটে। তবে আজ তার মুখে নতুন করে লেগে আছে এক শান্ত স্থির হাসি। যেন জীবনের অনেক কিছু জেনে ফেলেছে, তবু কিছুই হারায়নি সে—বরং আরও কিছু পেয়েছে। 

মায়া খানিকের জন্যে অতীতের গভীরতায় ভেসে যায়, খানিক আগে তারা কোথায় ছিল? এখন আরিশ কোথায়?  কোথায় সেই অল্প কিন্তু সুন্দর সুখময় সময় টুকু? মায়া জানে না,তবে ভাবে কিছু সময় কি নাছোড়বান্দা! তাই না? মনের গহীনে লুকিয়ে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে সর্বক্ষণ~~~~~



চুম্বন থেমে গিয়েছিল অনেক আগেই, এরপর ঘটেছে অনেক কিছুই। কিন্তু চোখে-মুখে এখনো তার রেশ লেগে রয়েছে। ভেতরের ঘনীভূত উত্তাপ যেন নিঃশ্বাসে ঝরে পড়ছে। আরিশ মায়ার চোখে তাকিয়ে হঠাৎ কাঁপা গলায় বলে—

– “মায়া! আমি.....আ... আমি!

এক মুহূর্তের জন্য সময় যেন স্থির হয়ে যায়। জীবনে হয়তো এই প্রথম আরিশের কথাগুলি কন্ঠেই আটকে গেছে। কিছু বুঝে উঠতে পারে নাসে কেন হচ্ছে এমন? তবে মায়া যে ভেঙ্গে পড়েছে তা সে বুঝেছিল। কিন্তু তার প্রতি এতটা দুর্বল হয়ে পরেছে তা আরিশ ভাবেনি। অবশ্য তখন আর এই সব ভাবনা সময় কই। স্টেশন থেকে লোকজনের সাথে ছুটে এসেছে রেল পুলিশ। আরিশের হাত পিস্তল ছিল। সুতরাং তাকে গান পয়েন্টে রেখে বলা হলো হাত ওপরে তুলতে। তারপর যা হয়েছে তা এই দুজনের প্ল্যানে না থাকলেও বোধকরি খোদাতাল্লার চিন্তাধারায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা ছিল।

তখনও ওই আধোআলোয় ঝিম ধরে দাঁড়িয়ে ছিল ট্রেনটি। বাইরের নিস্তব্ধতা যেন নিঃশব্দে পেঁচিয়ে ধরেছিল কেবিনটিকে। বাইরে শুধু টিপটিপ বৃষ্টির শব্দ… আর ভেতরে দু’জন মানুষের ঘন ঘন নিঃশ্বাস।

আরিশ ও মায়া—একই হাতকড়ায় বাঁধা, পাশাপাশি বসে। বৃষ্টির পানি জানালার কাঁচ বেয়ে নেমে যাচ্ছে। যেন তাদের অন্তরের ভেতরটাও ধুয়ে দিচ্ছিল সে জল। মায়ার দেহে এখনো হালকা জ্বরের ছাপ, কিন্তু চোখদুটো... তীব্র, জ্বলন্ত! যেন কোনো এক অন্তর্জ্বালায় পুড়ে যাচ্ছে। সে ধীরে ধীরে আরিশের দিকে ঘুরে বসে। কেবল একটি অঙ্গুলির দূরত্ব—তাদের শরীর, নিঃশ্বাস, ইচ্ছা—সব একরকম জমাট হয়ে আছে। 


তাদের এই কেবিনে রাখা ছাড়া উপায় ছিল না। এই ছোট্ট স্টেশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা আর কোথায়? থানা তো দূরের কথা। ট্রেনের লোকেরাও আশ্চর্য বটে, মোবাইল হাতে পিস্তলধারির ভিডিও করতে ভয় নেই,অথচ হাতকড়া বন্দি দুই অপরাধীর পাশে বসতে ভয়ে কাতর। তাই অগত্যা ফাঁকা কেবিনে মায়া ও আরিশের আশ্রয়। অবশ্য একটু প্রাইভেসি পেয়ে মন্দ হয়নি। খানিক আগেই আরিশ মায়াকে বলেছে সব। বলেছে একমাত্র রুদ্রর অনুরোধে মায়ার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়েছিল আরিশ, কিন্তু এই কথা বিশ্বাস হয়নি মায়ার। আরিশ বলেছে রুদ্র এখনো তাকে ভালোবেসে। এখনো তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকে। এই ট্রেনের শেষ গন্তব্যে হয়তো এখন রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে শুধু তার জন্যই।

এই সব শোনার পর আরিশের ধারণা ছিল মায়া খুশী হবে।একরাশ আনন্দ উচ্ছলতা ফুটে উঠবে মায়ার মুখে। কিন্তু হয়েছে উল্টো,মায়া বিষণ্ণ মুখে বসে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটাকি বিশ্বাস খরছে না তাকে?

সময় পেরিয়ে যাচ্ছে......দূরত্ব কম আসছে তীব্র গতিতে.. কিন্তু কারো মুখে কোন কথা নেই অনেকক্ষণ। এরপর একসময় নিজের অনুভুতি গুলো সামলে নিয়ে হঠাৎই মায়া বলে উঠলো,

– "তুমি কেন এসেছিলে আমার জন্য? যেমনটি ছিলাম তেমনি থাকতে দিলে না কেন?" মায়ার কণ্ঠ জড়ানো, কিন্তু গভীর।

আরিশ কোনো কথা বলে না। তার চোখে কেবল মায়ার মুখ, অগোছালো চুল, অশ্রুর ফোঁটায় ভেজা গাল, আর অদ্ভুত নরম এক আলো ছড়ানো ঠোঁট—যার দিকে তাকিয়ে নিজেকেই অপরাধ মনে হয়, অথচ চোখ ফেরানো যায় না।

হাতকড়ায় বাঁধা হাত ধীরে ধীরে মায়ার দিকে সরিয়ে আনে আরিশ। ওদের কনুই ছুঁইছে, তবু যেন দুজনের মাঝখানে হাজার মাইল দূরত্ব বেয়ে গিয়েছে। তবে আরিশকে অবাক করে মায়া দূরত্বটা কমিয়ে আনে,ওর কাঁধে মাথা রাখে । আরিশ অনুভব করে কাঁধের ওপরে ছোট ছোট কাঁপুনি। তা কি জ্বরের, না ভেতরের কোনো দহন—সে জানে না।

– "তুমি যদি আমার জীবনে না আসতে..." মায়া কাঁপা গলায় বলে, "আমি হয়তো এই অন্ধকারে হারিয়ে যেতাম। কিন্তু তুমি ....."

মায়া কথা শেষ করতে পারে না,আরিশের কাধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আবারও। রুদ্রর প্রতি তার ভালোবাসা হয়তো এখনো আছে মনের গভীরে। কিন্তু আরিশের উপস্থিতিতে সেই অনুভূতি এতটাই চাপা পরে গিয়েছে- যে তারা আর ঠেলে বেরুবার পথ পাচ্ছে না।

আরিশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে একসময় ওর চিবুক ধরে তুলে নেয়। চোখে চোখ পড়ে। কান্নার দমকে মৃদুমন্দ কাঁপছে ঠোঁট—তীব্র এক চুম্বনের অপেক্ষা করছে যেন!

মায়া নিজেই চোখ বন্ধ করে ঠোঁট বাড়ায়। এবার আরিশ থামে না।তাদের ঠোঁট এক হয়ে যায়—ভেজা, কাঁপা, কিন্তু গভীর। যেন দুই ভাঙা আত্মা একে অপরকে জুড়ে দিচ্ছে। চুম্বনের ভেতর দিয়ে মায়ার কন্ঠস্বরে ...আহহহ্.. ধ্বনি বেরিয়ে আসে। একরাশ জমে থাকা বিষণ্নতা যেন ঘন বর্ষার হয়ে ঝড়ে পড়ে। আলতোভাবে আরিশের আঙুল মায়ার ঘাড় ছুঁয়ে যায়, সেখান থেকে সরে আসে গালের পেছনে, ভিজে চুলের গোঁড়ায়। মায়া একটু পিছিয়ে এসে বলে,

– "এই হাতকড়া না থাকলে আমি তোমার গলা জড়িয়ে ধরতাম।"

আরিশ হাসে, তারপর চোখে চোখে রেখে তাকায়,– "হাতকড়া থেকেও তুমি পারো…"

মায়া হঠাৎ ঘন হয়ে আসে। বুকের কাছে ঠেসে ধরে আরিশকে, পাগলের মতো জড়িয়ে ধরে, যেন এই মুহূর্তে সে ছুঁড়ে ফেলতে চায় সব অতীত, সব শঙ্কা। মায়া ধীরে ধীরে বলে, 

– “তোমার শরীরের গন্ধটা যেন আমার সমস্ত শীত লাগা দূর করে দেয়,সব অতীত বর্তমান এক নিমিষেই ভুলিয়ে দেয়… দোহাই তোমার না বলো না,এর পর হয়তো.....হয়তো.....

হাতকড়ার শেকল টেনে উঠে একবার। ওদের হাতে ব্যথা লাগে সামান্য, কিন্তু সে ব্যথার মাঝে আনন্দের হালকা শিহরণ। দুজনেই কিছু বলে না, শুধু নিঃশ্বাস বদল করে। টি-শার্টের পাতলা আচ্ছাদনের নিচে মায়ার যুবতী দেহের উঁচুনিচু অবয়বে ঘোরাফেরা করে আরিশের হাত দুটি। ওদিকে মায়া যেন কোন মানবী নয়–এক হিংস্র বাঘিনী! 

সে প্রবল উত্তেজনায় দুহাতের লাল নেল পলিশ পড়া নখে ছিন্নভিন্ন করে দেয় আরিশের দেহের কাপড়। মায়াকে সামলাবার চেষ্টা করে আরিশ। কিন্তু হঠাৎ করে আজ মায়া যেন মহা মায়ার মতই শক্তিধর হয়ে উঠেছে। আরিশের গালের দুই পাশে হাতরেখে মায়া গভীর চুম্বনে ডুবিয়ে দেয় তাকে। দুজনের নিঃশ্বাস হয় ওঠে তীব্র থেকে তীব্রতর। কামের তাড়না ছুয়ে যায় সকল বাস্তবতার উর্ধ্বে। চুম্বনের সাথে চলে এলোমেলো কামড়, যদিও কামড় শুধু আরিশের দেহতেই পড়ে। আর মায়ার পাতলা দেহটি ট্রেনের লোহার দরজায় চেপে বসে এক সময়।

তখন কামের উত্তেজনা ছুয়ে গেছে আরিশকেও। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল একজন। চলন্ত ট্রেনের ঝনঝন শব্দে হয়তো তার কানে ঘেঁষে বেরিয়ে গেছে মায়ার কামার্ত আর্তনাদ।আর নয়তো অজানা ভয়ে একবার দরজা ঠেলেই সে ছুটেছে সামনে সহকর্মীকে ডাকতে। ভেতর তখন প্রতিটি ধাক্কায় ধাক্কায় সারা দেহ কেঁপে উঠেছে মায়ার। টি-শার্টে ওপরে আরিশের একটি হাত ক্রমাগত চেপে বসছে মায়া স্তনে। হয়তো প্রবল তৃপ্তিতেই স্তনবৃন্ত দুটি টনটন করে উঠছিল তার।হাতকড়া বন্দি দুজনের হাত দুটি আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে।

সময় কিভাবে পেরিয়ে যায় তারা জানে না। একটি কেবিন দুই নর নারী এই মুহূর্তে আদিম লীলায় মত্ত। তাদের জন্যে এখন সময় কোন মূল্য রাখেনা। পুরুষাঙ্গ ও যোনির মিল বন্ধন তো হাজার হাজার বছর পুরনো চিরন্তন বাস্তবতা। তার সাথে ভালোবাসা মিশে গেলে.. তা কি আর দুনিয়াদারির খেয়াল রাখে?

এরপর এক সময় বাইরে ট্রেনের হুইসেল বেজে ওঠে। ভেতরে সময় থেমে থাকে তখনো। ট্রেনের কম্পনে জানালায় জমা বিন্দু বিন্দু জল ঝরে পড়ে। বাতির আলোর আভায় মায়ার মুখটা রহস্যময় ছায়ার মতো লাগছে। চুম্বন ও মিলন ভেঙে সে চুপচাপ বসে, এক হাতে শক্ত করে ধরেছে সে আরিশের হাত। যদিও আরিশ বলেছে  “কোন ভয় নেই মায়া....আমি আছি তো,সামনের স্টেশনে ট্রেন থামলেই দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।” এরপর শুধু ট্রেনের যান্ত্রিক শব্দ আর দু'জনের নিরবতা। 

তবে আরিশ নিরব থাকলেও চোখে তার সতর্কতা, আর মস্তিষ্কে চলমান বিশ্লেষণ। মায়ার মুখ পড়ার চেষ্টা করছে সে—শুধু সাংবাদিকসুলভ কৌতূহল নয়, বরং একজন সত্য সন্ধানীর নিরব,শান্ত কিন্তু চতুর দৃষ্টি! সে খোঁজার চেষ্টা করছে কিছু,তবে মুখে সেটি বলতে পারে না।

–“এতো ভয় পাচ্ছো কেন?” — আরিশ হালকা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

–“জানি না কেন, ওকথা আর জিগ্গেস করো না আরিশ।” 

মায়া বলল। ঠোঁটে জড়ানো নিঃসঙ্গতা আর দু'চোখে চাপা অস্থিরতা ও ভয় নিয়ে। উত্তেজনা কেটে গেল এক সময় সবাইকে ফিরতে হয় বাস্তবতাতে। এখন মায়ার মনে ও তাই নিয়ে চলছে চিন্তা ধারা।

আরিশ তাকায়, কিন্তু আর কেন প্রশ্ন করে না। সে জানে, এই মেয়েটার ভেতর একটা ধ্বংসস্তূপ আছে—ভেঙে পড়া দেয়াল, জ্বলন্ত ছায়া। তাড়াহুড়ো করলে সব ভেঙে যাবে, নীরব থাকলে সে নিজের মতো বেরিয়ে আসবে। গন্তব্য এখনো খানিক দূরে। আরিশ মায়ার মাথাটা টেনে আনে,মায়া প্রতিবাদ করে না, বরং রতিকান্ত মেয়েটি আরিশের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে পা গুটিয়ে।

তার চোখ জানালার বাইরে — ছুটে চলা রাত, অস্পষ্ট স্টেশন, দূরের কোনো ঘোষণা শোনার আশায়। সে ভাবে: ভাবে এই মানুষটা কে? তার মনে হয়—আরিশ যেন তার জীবনের এক নিঃশব্দ সংলাপ। যা সে কখনো বলতে পারেনি, কিন্তু বুঝতে পারছে। খুব কাছের কেউ, কিন্তু তবুও চিনতে পারেনি। আচ্ছা! একজনের পরিচয় না জেনে কি এতটা কাছে আসা সম্ভব,নাকি এই লোকটাই তার চির চেনা কেউ?


এই ভাবনা চিন্তা করতে করতে আজও চেতনার মধ্যে সময় পেরিয়ে যায়। মায়ার ভাবনার মাঝেই ট্রেন ধীরে ধীরে থামে।আলো-আঁধারির মাঝখানে এটি হয়তো এই ট্রেনের শেষ গন্তব্য,তবে মায়ার জীবনের জন্যে এটি এক অজানা স্টেশন। এই মুহূর্তে তার সব কিছুই অন্ধকার,একমাত্র আরিশ ছাড়া। তাই ট্রেন থামতেই মায়া আরিশর বাহু জরিয়ে ধরে।

ওদিকে সবাই এখন নামছে। আরিশও দাঁড়িয়ে পড়ে। পরক্ষণেই দু'জন পুলিশ ঢোকে কেবিনে। বড় কর্মকর্তাদের কেউ নয়,থাকার কথাও না। থাকলে নর-নারীর ওই প্রলয় কর্মকান্ডে ব্যাঘাত অবশ্যই দিত,ভয়ে আরেকজনকে ডাকতে যেত না! তবে লোক দুটি অচেনা,আগের দুজন নয়।

–“উঠে পরুন,এখন নামতে হবে।” 

তাদের গলায় শান্ত,অন্য সব সাধারণ মানুষের সাথে এমনটা অধিকাংশ সময়ই থাকে না। আরিশের মুখে শান্ত হাসিটা আবারো ফিরে এসেছে। মায়ার হাত খানি শক্ত করে ধরে সে বলেছিল

 – “ ভয় পেওনা। তোমার কিছু হবে না, কথা দিলাম।”


আরিশের এই কথার পর তিন ঘন্টা কিভাবে কাটলো মায়া নিজেও জানে না। আরিশ বললেও ভয় তার মনে ছিল। সে বিশ্বাস না করলেও, মনের অবচেতনে সে জানে আজ এই স্টেশনে কেউ তার অপেক্ষায়। ভাবতেই মায়ার বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে। কাউকে সে চায়নি, কাউকে সে আশা করেনি!

না! নিজের মনেই বলে ওঠে সে– আজ আর মিথ্যা নয়, রুদ্র প্রতি ভালোবাসা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি আরিশের প্রতি এই দুর্বল অসহায় অনুভুতি গুলোও মিথ্যা নয়। সে এখনো জানে না আরিশ কে? কি তার আসল নাম ....কি তার পরিচয়? এই ভাবনার মাঝেও বন্ধ ঘরে একজন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে ঢোকে রুদ্র। মুখে তার হাসি,প্রবল উত্তেজনা যেন সেই হাসিতেই ফুটে উঠেছে। 

পরিচিত মানুষের সান্নিধ্যেও মায়ার ভয় কাটে না। আর কেউ না জানুক,সে নিজে তো জানে সে একজন অপরাধী। আচ্ছা! সবটা নিজে থেকে স্বীকার করে নিলে হয় না? এই কঠিন জীবনের বাস্তবতা থেকে একটু আড়ালে জীবনটা যদি কেটে যেতে ! তবে তো মন্দ হতো না!

না,মায়া পারেনা কিছু বলতে, বলার সুযোগও সে পায়নি। রুদ্র তার হাত শক্ত হাতে ধরে তাকে বের করে নিয়ে আসে বাইরে.... দ্রুত বেগে। আশেপাশের শত লোকজনের দৃষ্টি কে উপেক্ষা করে তারা বেরিয়ে আসে স্টেশনের বাইরে। তারপর গাড়িকরে দোতলায় এই কফি হাউজে। গাড়িতে কাঁচের ভেতর থেকে সে দেখেছিল হাতকড়া পরিয়ে বন্দি আরিশকে বের করে আনছে পুলিশ। ইচ্ছে করছিল ছুটে গিয়ে সত্যটা সে বলে সবার সামনে। চিৎকার করে স্বীকারোক্তি দিতে ইচ্ছে হয় তার। কিন্তু মানুষ যা ভাবে তা অধিকাংশ সময়েই করে উঠতে পানে না~~~~~~


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


[+] 1 user Likes কালপুরুষ's post
Like Reply
#52
পর্ব ৬

দুই চোখ বুঝে মায়া আর একবার প্রথম থেকে সবটা ভাবে।  একটি চেনা, কি অচেনা মানুষের জন্যে, আর একজন মানুষের জীবনের গতি পথ পাল্টে যায়। যার জন্যে পাল্টায় সেই মানুষটি কি তার খোঁজ রাখে? এ আশ্চর্য  বৈকি!


মায়ার খুব জানতে ইচ্ছে করে। উঠে দাঁড়িয়ে সে এগিয়ে যায় ব্যালকনির ধারে। সকাল আরো স্পষ্ট হয়ে এসেছে। ফোনের স্ক্রিনে সময় বলছে ১০:১২। মায়া তার হাতে থাকা সোনালী ফ্রেমের চশমাটির দিকে তাকায়।তারপর নিজের দিকে। তার মন শুধু নয়,তার সারাটা দেহ জুড়ে আরিশ নিজের ছায়া রেখে গিয়েছে। মায়া দুচোখ বোঝে,তারপর শান্ত কন্ঠেই বলে,

– “রুদ্র একটা কথা রাখবে?”

রুদ্র এগিয়ে এসে দাঁড়ায় মায়ার পাশে। মুখে কিছু না বললেও আলতো করে  হাত রাখে মায়ার হাতে।

– “সেই পাগলাটে ছেলেটির সাথে আর একবার দেখা করতে চাই। ওর প্রয়োজনীয় কিছু একটা রয়ে গিয়েছে আমার কাছে,আমায় নিয়ে যাবে স্টেশনে?

রুদ্র হাসিমুখে তাকিয়ে মাথা নাড়ে,বলে,

– “ এমনিতেই যেতে হবে আমাদের,তোমার গল্পটার সমাপ্তী, এখনো আরিশের হাতে!”


মায়া আর রুদ্র যখন থানা হয়ে স্টেশন পৌঁছায়,তখন স্টেশনে পুলিশ অফিসার আবির সেন,তার টেকো মাথায় হাত বুলিয়ে কি যেন ভাবছেন। গতকালের শেষ ট্রেনে এমন কিছু হবে তার কোন ইনফর্মেশন তার কাছে ছিল না। কিন্তু আজ সকালেই এই বিষয়টি নিয়ে তার মাথা এলোমেলো হয়ে আছে। ওপর মহল থেকে ফোন এসেছে ছেলেটিকে নিরাপদে ঢাকায় পৌঁছা দিতে, এদিকে ছেলেটি অপরাধী। তবে বোঝাই যাচ্ছে  ঘটনা মোটে সাধারণ নয়। 

কিন্তু এ নিয়ে তার এতো ভাবনার কারণ ছিল না। ছেলেটাকে কোন মতে ঢাকা চালান করতে পারলেই সে বেঁচে যায় আর কি। কিন্তু সমস্যা একটা হয়েছে? চার দেয়ালের মাঝে থেকে মানুষ কিভাবে উদাও হতে পারে তার মাথায় ঢুকছে না। তিনি গরম চায়ে চুমুক দিয়ে টাকমাথায় আর একবার হাত বুলিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন,


—“ছেলেটা তো একা ছিল না… হাবিলদার রাজীব আর সুলতান তো পাহারায় ছিল!”

–“হাবিলদার সুলতান আর রাজীব,কেউ নেই সার”

কথাটা তার কানে গেল না। গাড়ির জানালা দিয়ে তিনি দেখলেন,রুদ্র সেই মেয়েটিকে নিয়ে আসছে তার দিকেই। তিনি গাড়ি থেকে নেমে বলনেন, 

–“ ইমিডেটলি সব কটা বাস স্ট্যান্ডে খোঁজ নাও,সকালের সিডিউল ট্রেন গুলো  চেক করো, ছেলেটি পালালে চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হবে আমার.... আর তোমাদেরও,কথাটা মনে থাকে যেন।

তারকথা শেষ হতেই রুদ্র ও মায়া  কাছে এসে পৌছালো।

–“ ভেতর এসো ওনাকে নিয়ে,কিছু কথা আছে।"

রুদ্র একটু অবাক হলো মায়ার সাথে তার মামার কথাবার্তা শুনে। আরিশ তার সাথে করে দুজন হাবিলদার সহ উধাও হয়েছে শুনে মায়াও অবাক হলো। 

– “দেখুন আপনাকে ধরে রাখার মতো এভিডেন্স আমাদের কাছে আছে। তা অনুযায়ী শাস্তি হয়তো খুব বেশি হবে না, তবে দিন কয়েক পেলে.... বুঝতেই পারছেন।

না! মায়া কিছুই বুঝতে পারছে না। এভিডেন্স যদি থাকে তবে তো মায়াকে লম্বা সময়ের জন্যে লকআপ ঢুকিয়ে দেওয়া চলে!  সে অফিসারের চোখে চোখ রেখে ভালোমতো পরিস্থিতি তা বুঝে ওঠার চেষ্টা করলো। ভারি আশ্চর্য জনক হলেও আশিরে ওপরে এই পদ্ধতিটা কাজে আসেনি, কিন্তু অফিসারের বেলায় কিন্তু হলো!

– “ আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ তুলবেন আপনি?  একটি অসহায় মেয়ে নিজের সম্মান বাঁচাতে একটা বাজে লোককে পিঠিয়েছে,এর জন্যে আমার জেল হবে না নিশ্চয়?”

– “দেখুন আপনি যে কতটা অসহায় তা আপনার সঙ্গী কে দেখলে বোঝা যায়, নেহাতই ওপর মহলে চাপ আর নয়তো...."


– “এটা তোমার বাড়াবাড়ি মামু, আরিশ পালাবে কেন?”


–“ উফৃ আবার মামু কেন? দেখ অন-ডিউটি আমি তোর মামু নই রুদ্র! আর আরিশ কেন পালাবে তা আমি কি করে বলি? কথা হলো সে পালিয়েছে,সাথে আমার দুই বিশ্বস্ত হাবিলদার নিয়ে পগারপার....না মা- মানে.......


হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। অফিসার কাঁপা হাতে ফোন ধরলেন। ওপাশে থেকে কি কথা ভেসে এলো তার কিছুই জানা গেল না। অফিসার ফোন রেখে চটজলদি উঠে বেরিয়ে যেতে যেত বললে,

–“ রুদ্র,আমি আসছি, তোরা বাড়িতে অপেক্ষা কর,আর মেয়েটা যেন কোথায় না যায়, মানে পালিয়ে না যায় আবার!

রুদ্র চেয়ার পেছনে ঠেস দিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো। মায়া মুখ ঘুরিয়ে বাইরে রাস্তার দিকে থাকিয়ে রইলো। অফিসার স্টেশন খানায় এসেছিল আরিশ পালিয়েছে শোনা মাত্রই। মায়ার নাম হয়তো পুলিশের খাতা আছে,তবে সে ছন্দনাম, তাছাড়া কোন ছবি নেই তার। এটা প্লাস পয়েন্ট হলেও মায়ার সম্পর্কে কিছু তথ্য তো পুলিশের জানা। তাই তাকে এভাবে অবাধে ছেড়ে দেওয়ার কারণ মায়া এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। 

– “ বাড়িতে যাবে এখন? মামি তোমায় দেখলে খুব খুশি হবে।


– “এই রহস্যের শুরুটা রেলস্টেশনে হয়েছিল। আমি এখানে থেকে এটার শেষ দেখতে চাই।“

–” তা বোধ হয় সম্ভব হবে না মায়া। দেখ আরিশ পালিয়েছে এটা আমার বিশ্বাস হয় না, কারণ ওর পখলালোর কোন কারণই নেই! এদিকে তোমার সম্পর্কে কোন এভিডেন্স পুলিশের কাছে নেই,মামু যা বলেছে সব মিথ্যা! ভয় দেখানোর চেষ্টা মাত্র। তবে হ্যাঁ, আরিশ ঢাকা না পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত তোমার মুক্তি নেই। সুতরাং আমি মনে করি আপাতত বাড়ি যাওয়াই ভালো নয় কি! নাকি তুমি এখানে থাকতে চাও?




মায়া আবারও ভাবে, “এই রুদ্র কি তার মনের ভাব বুঝতে পারে আরিশের মত? বোধহয় না!” প্রশ্ন জাগে মনে, উত্তর সে দেয় নিজেই। তার মনে হয়, ওই মানুষটার ভেতরে ছিল শুধুই উদ্দেশ্য, তবু তার উপস্থিতি তাকে এক অদ্ভুত নিশ্চিন্ত বোধ দিয়েছে। ভালোবাসা হয়তো নয়… কিন্তু এক ধরনের শ্রদ্ধা, আর বিশ্বাস—যা সে কাউকে দীর্ঘদিন দিতে পারেনি। টেবিলের ওপরে আরিশের চশমাটা রেখেছিল সে। প্রথম থেকেই  চশমাটা মায়ার কাছে, পুলিশ হয়তো ভেবেছে এটা মায়ারই। অবশ্য ভাবাটা অস্বাভাবিক নয়,ওটা মায়ার চোখেই যেহেতু ছিল।

টেবিল থেকে আবার ওরা হাতে নিয়ে মায়া নিজের মনেই বলে— “তুমি জানতেও পারবে না আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম। যদি প্রশ্ন কর কেন? আমি উত্তর দিতে পারবো না, কারণ আমার নিজেও যে জানা নেই কেন!” 

– “ তো কোথায় যাবো আমরা?“

–” হু!”

– “ বলছি মামির সাথে দেখা করবে? নাকি.....

মায়া উঠে পরে। হাতের চশমাটা চোখে পড়ে নিয়ে রুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

– “ আমার একা পথ চলা শেষ হয়েছে। তবে তোমাকে দেখাতে চাই একটা জায়গা! তুমি কি যাবে আমার সাথে?


রুদ্র বুঝলো,মায়া যেখানে যেতে চায় সেই জায়গাটি এখন সব টিভি নিউজে দেখাচ্ছে। একবার কি ভাবলো সে,তার পর উঠে দাঁড়িয়ে বললে,

– “ তুমি আমাকে বিপদে ফেলবে মায়া,তবে গাড়ি যেহেতু আছে ত আর অপেক্ষা কেন?”

– উঁহু্, গাড়ি নয় ট্রেনে যাবো!

রুদ্র ঘড়ি দেখলো,তারপর হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে বললে,

– তবে দৌড়াতে হবে!

কিছু বোঝার আগেই মায়ার হাত ধরে রুদ্র দৌড়ে গেল বাইরে। স্টেশন প্লাটফর্মে যখন তারা এল,তখন গতকাল রাতে শেষ ট্রেন সবে গতি তুলেছে। লোহার পাতে লোহার চাকার ঘর্ষণের গাড়ি প্রায় প্লাটফর্ম ছাড়ে ছাড়ে অবস্থা। তবে রুদ্র উঠল, হাত বাড়িয়ে ধরল মায়ের হাত। এবার আর শেষ ট্রেন নয়– গতকালকের শেষ ট্রেন আজ সকালের প্রথম। যাত্রী পাল্টেছে ,পাল্টেছে গন্তব্য, গত রাতের যাত্রীদের মধ্যে অনেকেই হয়তো রয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে আরিশ হয়তো একজন।


............

আরিশ বসেছিল পেজন দিকটাতে। সম্মুখের দিগন্ত কেমন দ্রুত বেগে পেছনে সরে যাচ্ছে! স্টেশনে  সেই গিটার বাজানো ছেলেটি একটু আগেও ফোনে বলছিল“ তুমি চিন্তা করো না মা আমি আসছি।” এখন সে গুম হয়ে বসে আছে। ছেলেটার সাথে তার বন্ধুদের দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক,ওরা আসেনি.... না ছেলেটি আসতে দেয়নি। আরিশ শুনেছিল ওদের বলা কথাগুলো ,এই ট্রাকে ওঠার আগেই।

 – “স্যার!”


– “রাজীব! আমি তোমার স্যার নই।”


রাজীব কিছুই বললো না, শুধু ফোনটা এগিয়ে দিল। আরিশ দেখলো, তবে ফোন হাতে নিয়ে কল কেটে দিল। তারপর দিগন্তে চোখ রেখে বলল,

– ” আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে,তাকি জানানো যায়?”

– “ প্রথমে ঢাকা। তার পর চট্টগ্রাম। এর বাইরে কিছু জানানো হয় আমাদের,তবে ভারত বা রাশিয়া এমন কিছু একটা শুনেছিলাম,তবে ওটা স্যার।”


আরিশ আর কোন প্রশ্ন করলো না। পকেট থেকে বের করলো একটা পেনড্রাইভ। চোখের সামনে ধরতেই লেখাটা ভেসে উঠলো, “প্রজেক্ট জিরো “ খুলে দেখার সুযোগ এখনো হয়নি। মারামারি পর স্টেশন পুলিশ বডি সার্চ করে সব নিয়ে নিয়েছিল। থানা পুলিশ খোলার চেষ্টা করেছে ,তবে পেনড্রাইভের ফাইল গুলো পাসওয়ার্ড লক করা। যদিও খামে শুধু এটাই ছিল না। সাথে একটা ছবি। একটি বিদেশি মেয়ে। ফর্সা টকটকে মুখ, লাল কেশরাশি কাঁধের একপাশে ছড়ানো,চোখের সানগ্লাস আর তার কাঁচে জ্বলন্ত অগ্নি শিখা।

এই দুটোর কি কোন মানে হয়। বোঝা মুশকিল যতক্ষণ না খুলে দেখা হচ্ছে পেনড্রাইভটি। কিন্তু সমস্যা একটাই পাসওয়ার্ড জানা নেই। মায়া নিজেও নিশ্চয় জানে না, খামের ভেতর কি ছিল মায়ার তা জানার কথা নয়,ওকে জানানো হয়নি। ওর কাজ ছিল পৌঁছে দেওয়া। হঠাৎ এতো গুলো বছর পর! 

ভাবনাটা থামিয়ে দেয় আরিশ।আবেগী ভাবনা তার মানায় না । তবে মায়াকে জুড়ে তার কলেঝ জীবন,প্রথম ভালো লাগা কি ভালোবাসা ,তা সে এখনো জানে না। 


মায়া এখন ট্রেনের জানালা দিয়ে ছুটে চলা দিগন্তে তাকিয়ে অতিতের পাতা উল্টে চলেছে। পাশে বসে এক দৃষ্টিতে রুদ্র দেখছে তার প্রিয়তমার মুখ, তৃষ্ণা হয়তো তার একারই মিটেছে। ওদিকে  দূরের কোন পথে আরিশ হাতের মুঠোয় পেনড্রাইভ আর ছবিটা নিয়ে বসে। 

“প্রজেক্ট জিরো" ট্রাকের পেছনে বসা ছেলেটার চিন্তা ভাবনার পরবর্তী গন্তব্য। মায়া দূরের রেলপথে কোন এক কামরায় বসে আছে, কিন্তু বুঝতে পারছে না—এই পথ কি মুক্তির, নাকি অন্ধকারের? ট্রেন গর্জন করে সামনে ছুটে চলেছে। পেছনে পড়ে থাকে প্রশ্ন, উত্তর আর অদেখা ভবিষ্যৎ...শেষ ট্রেনের এই দুজন যাত্রীর পথ এখন আলাদা,বাকি সবার মতোই। তবে গন্তব্য বদলায়, দূরত্ব বাড়ে, কিন্তু চেনা মুখ গুলো হয়তোবা সহজেই অচেনা হয়ে যায় না.... 

সমাপ্ত 


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


[+] 2 users Like কালপুরুষ's post
Like Reply
#53
গল্পটা শেষ করে নিজের কিছুটা ভালো লাগছে। যদিও ভেবেছিলাম গল্পটার অনেকগুলি সিজেন করব। কিন্তু আমার বোধহয় সময় হবে না। তাছাড়া বুঝতে পারছি এই ওয়েবসাইটে হয়তো এমন গল্প চলে না। তবুও যারা প্রথম থেকে সাথে ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ! Namaskar


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#54
ধন্যবাদ শেষ করার জন্য

খুব খুশি হব যদি আপনি সিজন আনেন
[+] 1 user Likes রাত জাগা পাখি's post
Like Reply
#55
Dhonnobad
[+] 1 user Likes Momcuc's post
Like Reply
#56
(05-09-2025, 09:41 PM)কালপুরুষ Wrote: গল্পটা শেষ করে নিজের কিছুটা ভালো লাগছে। যদিও ভেবেছিলাম গল্পটার অনেকগুলি সিজেন করব। কিন্তু আমার বোধহয় সময় হবে না। তাছাড়া বুঝতে পারছি এই ওয়েবসাইটে হয়তো এমন গল্প চলে না। তবুও যারা প্রথম থেকে সাথে ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ! Namaskar
ফাটাফাটি হয়েছে
[Image: IMG-20250228-150207.png]
[+] 1 user Likes Mamun@'s post
Like Reply
#57
(05-09-2025, 10:28 PM)রাত জাগা পাখি Wrote: ধন্যবাদ শেষ করার জন্য

খুব খুশি হব যদি আপনি সিজন আনেন

এখানকার পাঠক কুল রহস্য থেকে মিলন বেশি পছন্দ করে। অবশ্যই এটাই স্বাভাবিক। দেখি চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply




Users browsing this thread: