Thread Rating:
  • 7 Vote(s) - 3.14 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller শেষ ট্রেনের যাত্রী
#1
শেষ ট্রেনের যাত্রী 


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


[+] 1 user Likes কালপুরুষ's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
পর্ব ১

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত ১১টা। দিনের শোরগোল এখন ধীরে ধীরে স্তব্ধ হচ্ছে, কিন্তু নিস্তব্ধতা এখানে যেন অন্যরকম। কেবলমাত্র হালকা হালকা ঘোষণা আর কিছু দূর থেকে ভেসে আসা হকারের ক্লান্ত কণ্ঠ। বাতাস ভারী, ধোঁয়ায় মিশে থাকা ট্রেনের জ্বালানি আর পুরনো কাঠের গন্ধ।

লং শর্ট ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৪-এর একটি বেঞ্চে বসে আছে মেয়েটি। ঈগল যেমন হাজার ফুট ওপরের থেকেও শিকার ভুল করে না, তেমনি আরিশও নির্ভুলভাবে বুঝে ফেলল, কার সঙ্গে তার খেলা শুরু হয়েছে!


প্ল্যাটফর্মের উজ্জ্বল আলো নিচে বসেছিল মায়া। একা। হালকা লাল শাড়ির আড়ালে তার ত্বকের দীপ্তি যেন বৈদ্যুতিক আলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিল। বাতাসে তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছিল কাঁধের ওপর, তার কপালের টিপ যেন এক তীক্ষ্ণ নির্ভরতার প্রতীক। তার চোখে ছিল এক ধরনের উদাসী ঝিলিক, যেন হাজারো অচেনা গল্পের আমন্ত্রণ। বসার ভঙ্গিতেই ছিল এক অলক্ষ্য দম্ভ—সে জানে, তাকিয়ে থাকবে সবাই, কিন্তু সে তাকাবে না কারো দিকে। 

আরো কাছে এগিয়ে  যেতেই এত উজ্জ্বলতার মাঝে কাঁধের পুরনো ব্যাগটি লাগে বড্ডো বেমানান। এক কৃত্রিম দম্ভ নিয়ে বসে থাকা নিষ্প্রভ মুখটি আরিশের চোখ এড়িয়ে যায় না। অন্য কারো চোখে ধরা না পড়লেও; আরিশের সতর্ক দৃষ্টিতে ঠিকই মেকআপ ভেদ করে মেয়েটির চোখে অনেক রাতের ঘুমহীন ক্লান্তি ধরা পড়ে।

মেয়েটি একভাবে তাকিয়ে আছে রেললাইনের দিকে। কেউ হটাৎ তাকালে বুঝতে পারবে না সে চিন্তিত, না কি এই ভাব ভয়ের ছায়া — কারণ তার চেহারায় এমন এক নির্লিপ্ততা, যা হয়তো কেবল দীর্ঘদিনের অভ্যস্ত মানুষ অর্জন করতে পারে। আরিশ আর একবার নিজের মনে ভাবে সবটা, প্রথমটায় বিশ্বাস না করলেও সব জানার পর তার মনে দোলা দিয়েছে সন্দেহ। তা না হলে কোন মেয়ের রূপে ভুলে ভরকে যাওয়া আরিশের স্বভাবসিদ্ধ নয়!



মায়া আজকের ‘কাজে’ এসেছে। কাজ? না, এটি কোনো চাকরি নয়, নয় কোনো সম্মানজনক দায়িত্ব। এটা তার কাঁধে চাপানো, অন্যদের হাতে সাজানো এক ঘৃণিত বোঝা। ছোট্ট একটি খামে কী আছে তা সে জানে না, জানতে চায়ও না। শুধু জানে, খামটি তাকে পৌঁছে দিতে হবে সীমান্তের এক স্টেশনে — ঠিক সময়ে, ঠিক ব্যক্তির হাতে।পাশে রাখা ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে খামের অস্তিত্ব টের পায় সে। যেন নিজের ভেতরেই কোনো বোমা লুকিয়ে আছে, যা একটু এদিক ওদিক হলেই ফেটে যাবে। এমন সময় ডান পাশ থেকে  হঠাৎ একটা কণ্ঠস্বর তার কাঁধের কাছে ভেসে আসে —

– “আপনার পাশে বসতে পারি?”

মায়া চমকে তাকায়। চোখের সামনে একজন যুবক। লম্বাটে ফিটফাট দেহে কালো টিশার্ট, ডেনিম জিন্স আর চোখে সোনালী ফ্রেমের হালকা চশমা। মুখে এমন এক ধরনের আত্মবিশ্বাস আর হাসি, যা সঙ্গে সঙ্গে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলে — বন্ধু না শত্রু, বোঝা যায় না। 

– “আপনি?” — মায়া একটু কুণ্ঠিত।

– ও হাই! আমি আরিশ। আপনাকে এই রাত্রিতে বড্ডো একা দেখাছিল। ভাবলাম পাশে একটু বসি। এই শেষ ট্রেন তো এমনিতেই লম্বা যাত্রা, তার ওপরে ট্রেন লেইট। সঙ্গী দরকার।

মায়া কিছু বলে না। চুপচাপ তাকিয়ে থাকে ছেলেটির দিকে। নাম বলল, কিন্তু পরিচয় দিল না। খুব স্বাভাবিক লাগছে, আবার একদমই স্বাভাবিক না। মনে মনে ভাবে সে– উঠে চলে গেলে হয় না? না! ওটা অসভ্যতা, কিন্তু.....! মায়ার ভাবনার মাঝে আরিশ ব্যাগের ভেতর থেকে পানির বোতল বের করে একটা চুমুক দেয়। তারপর বলে,

– “আমি সাংবাদিক। একটা অনুসন্ধানে বের হয়েছি। আপনি হয়তো ভাবছেন, এই রাতে এ আবার কোন আপদ! তাই আগেই বলে দিলাম,আমাকে ভয় পাবার কোন কারণ নেই কিন্তু।”



মায়া মুখ ঘুরিয়ে ফেলে। সে ভয় পেয়েছে! সাংবাদিক? মানে... পুলিশও হতে পারে? না, সে তো ইউনিফর্মে নেই। কিংবা... চক্রের কেউ? তাকে পরীক্ষা করতে এসেছে?

–“আপনার নাম কী?” — আবার প্রশ্ন।

“মায়া।” — উত্তর দেয় সে, ঠোঁট শক্ত করে। 

“চমৎকার নাম। একটু গল্প করলে কী খুব ক্ষতি হবে?”

মায়া ঘাড় নাড়ে বলে।– “আমার গল্প খুব একটা আকর্ষণীয় না। বরং আপনি বলুন, কী অনুসন্ধান করছেন?”

ছেলেটা একটু থামে, কিন্তু মায়ার দিকে তাকায় না, দূরের অন্ধকারে দৃষ্টি রেখে খানিক পরেই সে বলে,

– “চোরাচালান। সীমান্ত পেরিয়ে যে মাল যায়, মানুষ যায়, নারীরাও... আমি এসব নিয়েই কাজ করি। কিছু তথ্য আছে আমার কাছে, শুধু সেগুলো মিলিয়ে নিতে চাই।”

এইবার মায়ার মুখে কিছু একটা নড়েচড়ে ওঠে। তার ভেতরে অস্থিরতা বাড়ে। মনে হয় বুকের অস্বাভাবিক উঠানামার শব্দ  ছেলেটা শুনছে স্পষ্ট? যদিও অবান্তর ভাবনা, তবুও ভাবে – সে কি কিছু ধরে ফেলেছে? না কি সে সত্যিই জানে না?

আরিশ আবার বলে, “শুনেছি, আজকের শেষ ট্রেনেই একটা বড় চালান যাচ্ছে। কেউ একজন এটা বহন করছে। শুধু ঠিক লোকটা খুঁজে পেলেই আমি অনেক এগোতে পারবো।” 

কথা শেষ করেই মায়ার দিকে তাকায় সে,তারপর আবার সেই শান্ত কন্ঠে বলে— দেশলাই হবে আপনার কাছে! স্মোক করেন আপনি?

মায়া তাকিয়ে থাকে তার চোখে। এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়, সে সব জানে। আবার মনে হয়, সবটাই যেন নাটক। ছেলেটা দিকে দৃষ্টি রেখেই মায়া ব্যাগ থেকে বের করে দেশলাই। এগিয়ে দেয় সামনে। ছেলেটি হাত বাড়িয়ে দেশলাই হাতে নেয়,তারপর সিগারেটের প্যাকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করে প্যাকেট রাখে দুজনের মাঝে। মায়ার দৃষ্টি নেমে আসে সিগারেটের প্যাকেটে ...তাতে লেখা, “ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” ছেলেটি এবার দ্বিতীয় সিগারেট এগিয়ে দিয়ে বলে,

– “ স্টার!..চলে?

মায়া হয়তো কিছু বলতো,তার [b]মুখের ভীতু ভাব—লাল রঙে রাঙানো পাতলা  ঠোঁট দুটো ফাঁক হয়ে অল্প কেঁপে ওঠে, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে স্টেশনে মাইকে ঘোষণা আসে,“শেষ ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ৪-এ আসছে।”[/b]

দুজনের দৃষ্টি ঘুরে যার। রেলের শব্দ ধীরে ধীরে জোরে শোনা যাচ্ছে। ট্রেন ঢুকছে স্টেশনে। মায়ার শরীরটা কেঁপে ওঠে। ব্যাগটা আরও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে। আরিশ হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলে,

– “ আপনি বোধহয় আমার ব্যবহারে ঘাবড়ে গিয়েছেন। শুনুন! এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই,আপনি যদি জানেন আপনি ঠিক পথে আছেন, তাহলে কোনো বিপদই আপনাকে ছুঁতে পারবে না।”


–“আপনি কী জানেন আমি কোন পথে আছি?”

মায়া কেমন যেন অস্থিরতায়  হঠাৎ বলে ফেলে কথাটা। আরিশ মুখ ফিরিয়ে চুপ করে চেয়ে থাকে ধীর গতিতে স্টেশনে ঢোকা ট্রেনের দিকে,তারপর যে ছেলেটি মায়ার দিকে ফিরে তাকায়, তার চোখে এখন আর আগের রসিকতা নেই। সেখানে এক ধরনের দৃঢ়তা, এমনকি মায়া সেটাতে কিছুটা আশ্বাসও খুঁজে পায় যেন। এক নিঃশব্দ আশ্বাস। তবে পরক্ষণেই ছেলেটির মুখে যেন ফুটে ওঠে কৌতুক। অল্প হেসে সে বলে,

– “ জানি না,তবে যদি পরবর্তী স্টেশন হয়,তবে এই ট্রেনে আপনার না ওঠাই ভালো। ওই স্টেশনে এই গাড়ি থামে না।”

এক তীব্র বিরক্তিতে মায়া চোখ নামায়। সিগারেট প্যাকেটের ওপর থেকে হাতে তুলে নেয় ছেলেটির রাখা সিগারেট। ট্রেন এসে থামে। দরজা খুলে যায়। যাত্রীরা নেমে আসে, ওঠে নতুন যাত্রীরা। সিগারেট ধরিয়ে মায়া এগিয়ে যায় ব্যাগ হাতে। ছেলেটিও দাঁড়িয়ে ছিল দরজার কাছে। বোধহয় সবাই উঠে যাওয়ার অপেক্ষায়।

–“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?” — আরিশ প্রশ্ন করে মায়া গাড়িতে ওঠার আগে। মায়াও ঘার ঘুরিয়ে উত্তর করে নির্দ্বিধায়।

–“নিশ্চয়ই যেখানে আপনি যাচ্ছেন না,” — বলেই ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি টেনে দেয়।

আরিশ হেসে বলে,– “হুম, দেখা যাক কে কার গন্তব্যে পৌঁছয়। ট্রেনে উঠি?”

দুজনেই উঠে পড়ে ট্রেনে। ট্রেনের ভিতরে আলো হালকা, জানালার কাঁচে রাতের অন্ধকার ধুয়ে যাচ্ছে। যাত্রীরা নিজেদের আসনে বসছে, কেউ ফোনে কথা বলছে, কেউ জানালার বাইরে তাকিয়ে — কেউ ভাবছে কীভাবে পালাবে, কেউ ভাবছে কোথায় যাবে।

মায়া নিজের সিটে বসে জানালার দিকে মুখ ফেরায়। মনে মনে ভাবে, সে এই ট্রেনে না উঠে যদি চলে যেত... যদি কখনো এই চক্রে না জড়াতো... যদি মামি তাকে রুদ্রের সাথে থাকতে দিত... তাহলে কি আজ সে এই পথে থাকতো?

হ্যাঁ, রুদ্র। নামটা মনে পড়লেই একটা চাপা কষ্ট বুকের মধ্যে পাথরের মতো জমে যায়। সে চেয়েছিল পালাতে, চেয়েছিল নিজের জীবন গড়তে — কিন্তু মামি সব শেষ করে দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এমনভাবে বুঝিয়েছিল যে সে নিজেই ভুল পথে হেঁটে এসেছে।

“কখনো কি মনে হয়েছে পালিয়ে যেতে?” — হঠাৎ আরিশ বলে ওঠে।

মায়া চমকে তাকায়। এই লোকটা কি তার মনের ভেতরে পড়তে পারে? আরিশ ব্যাগ রাখতে রাখতে আবার বলে,

– “দরজার সামনে দাঁড়ানো যাচ্ছে না, বৃষ্টি শুরু হয়েছে.....জানেন এই কাজটা নেওয়ার আগে ভেবেছিলাম কাজ ছেড়ে পালাবো! আমার মাঝে মধ্যেই সব ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যেতে ......”


এতো চিন্তার মাঝেও ময়ার এবার অল্প হাসি পায়। সে উত্তর দেয় না। 
শুধু জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর বাইরে অন্ধকারের ভেতর ট্রেন চলতে শুরু করে যান্ত্রিক শব্দের ছন্দে...


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#3
গল্প ভালো তবে ভুল জায়গায় পোস্ট করে ফেলেছেন ভাই, এখানে রোমান্টিক গল্প পড়ার লোক অতি অল্প।
তবুও গুড লাক।❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
#4
Very nice.
Like Reply
#5
(08-06-2025, 04:31 PM)বহুরূপী Wrote: গল্প ভালো তবে ভুল জায়গায় পোস্ট করে ফেলেছেন ভাই, এখানে রোমান্টিক গল্প পড়ার লোক অতি অল্প।
তবুও গুড লাক।❤️

ধন্যবাদ ভাই।
তবে কিছু যায় আসে না, ভালো না লাগলে আর লিখবো না,আমি শুধু দেখতে চাই ছিলাম আমার লেখা কেমন হয়। এখন বেশ বুঝতে পারছি বিশেষ ভালো নয়।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#6
(08-06-2025, 04:55 PM)Saj890 Wrote: Very nice.

ধন্যবাদ


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#7
(08-06-2025, 07:06 AM)কালপুরুষ Wrote:
পর্ব ১

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত ১১টা। দিনের শোরগোল এখন ধীরে ধীরে স্তব্ধ হচ্ছে, কিন্তু নিস্তব্ধতা এখানে যেন অন্যরকম। কেবলমাত্র হালকা হালকা ঘোষণা আর কিছু দূর থেকে ভেসে আসা হকারের ক্লান্ত কণ্ঠ। বাতাস ভারী, ধোঁয়ায় মিশে থাকা ট্রেনের জ্বালানি আর পুরনো কাঠের গন্ধ।

লং শর্ট ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৪-এর একটি বেঞ্চে বসে আছে মেয়েটি। ঈগলের যেমন হাজার ফুট ওপরে থেকেও শিকার ভুল করে না, তেমনি আরিশও নির্ভুলভাবে বুঝে ফেলল, কার সঙ্গে তার খেলা শুরু হয়েছে!
এত সুন্দর সংস্কৃত স্তোত্র দেখে উৎসাহিত হয়েছিলাম। বাঃ, এবার একটি রচনা বোধহয় পেয়েছি - যার লেখক বাংলাটা অন্তত জানেন।
Like Reply
#8
(08-06-2025, 07:06 AM)কালপুরুষ Wrote:
পর্ব ১

ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। রাত ১১টা। দিনের শোরগোল এখন ধীরে ধীরে স্তব্ধ হচ্ছে, কিন্তু নিস্তব্ধতা এখানে যেন অন্যরকম। কেবলমাত্র হালকা হালকা ঘোষণা আর কিছু দূর থেকে ভেসে আসা হকারের ক্লান্ত কণ্ঠ। বাতাস ভারী, ধোঁয়ায় মিশে থাকা ট্রেনের জ্বালানি আর পুরনো কাঠের গন্ধ।

লং শর্ট ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলে প্ল্যাটফর্ম নম্বর ৪-এর একটি বেঞ্চে বসে আছে মেয়েটি। ঈগলের যেমন হাজার ফুট ওপরে থেকেও শিকার ভুল করে না, তেমনি আরিশও নির্ভুলভাবে বুঝে ফেলল, কার সঙ্গে তার খেলা শুরু হয়েছে!

প্ল্যাটফর্মের উজ্জ্বল আলো নিচে বসেছিল মায়া। একা। হালকা লাল শাড়ির আড়ালে তার ত্বকের দীপ্তি যেন বৈদ্যুতিক আলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিল। বাতাসে তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছিল কাঁধের ওপর, আর কপালের টিপ যেন এক তীক্ষ্ণ নির্ভরতার প্রতীক। তার চোখে ছিল এক ধরনের উদাসি ঝিলিক, যেন হাজারো অচেনা গল্পের আমন্ত্রণ। বসার ভঙ্গিতেই ছিল এক অলক্ষ্য দম্ভ—সে জানে, তাকিয়ে থাকবে সবাই, কিন্তু সে তাকাবে না কারো দিকে। 

আরো কাছে এগিয়ে  যেতেই এত উজ্জ্বলতার মাঝে কাঁধের পুরনো ব্যাগটি লাগে বড্ডো বেমানান। এক কৃত্রিম দম্ভ নিয়ে বসে থাকা নিষ্প্রভ মুখটি আরিশের চোখ এড়িয়ে যায় না। অন্য কারো চোখে ধরা না পরলেও; আরিশের সতর্ক দৃষ্টিতে ঠিকই মেকআপ বেদ করে মেয়েটির চোখে অনেক রাতের ঘুমহীন ক্লান্তি ধরা পরে।
এরকম বানান ভুল অনেক নজরে এল।
[+] 1 user Likes chitrangada's post
Like Reply
#9
(08-06-2025, 07:00 PM)কালপুরুষ Wrote: ধন্যবাদ ভাই।
তবে কিছু যায় আসে না, ভালো না লাগলে আর লিখবো না,আমি শুধু দেখতে চাই ছিলাম আমার লেখা কেমন হয়। এখন বেশ বুঝতে পারছি বিশেষ ভালো নয়।
আপনার বুঝতে ভুল হয়েছে, আপনার লেখে অতটাও খারাপ নয় ,আমি তো বলি আমার থেকে ভালোই। Big Grin

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
#10
(08-06-2025, 08:25 PM)rakeshdutta Wrote: এত সুন্দর সংস্কৃত স্তোত্র দেখে উৎসাহিত হয়েছিলাম। বাঃ, এবার একটি রচনা বোধহয় পেয়েছি - যার লেখক বাংলাটা অন্তত জানেন।

আপনার কথা পড়ে সত্যিই খুব ভাল লাগলো। তবে আমি বলি, আমি লেখাপড়ায় বিশেষ ভালো নই। পড়াশোনার তেমন সুযোগও পাইনি জীবনে। যা একটু শিখেছি তা পরীক্ষা করে দেখতে মন চাইছিল। কিন্তু সত্য বলতে আমি চেষ্টা করেছি বানান গুলো ঠিক রাখতে। আপনার আশা ভঙ্গের কারণ হয়ে আমি সত্যিই দুঃখিত,এতে যদি আপনার আশা ভঙ্গের হতাশা খানিক কমে তো খুশি হবো।

আর সুন্দর সংস্কৃত ত আমার লেখা নয়। বুঝতেই তো পারছেন এটা ইন্টারনেটের যুগ, এখন ইচ্ছে থাকলে নেটে অনেক কিছু শেখা সম্ভব ।
আমি * নই, তবুও সংস্কৃত ভালো লেগেছিল বলে খানিক পড়েছি। আর শুধু সংস্কৃত কেন আরো অনেক গ্রন্থই আমি পড়েছি। কিন্তু তবুও বলতে হয় আমার জ্ঞান সামান্যই।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#11
শেষ স্টেশনে সবায় যাবে নেমে
মাঝ পথে যেন ট্রেন না যায় থেমে
শুরুটা হয়েছে কিন্তু চমৎকার
জানিনা দেখা পাব কবে আবার
[+] 2 users Like poka64's post
Like Reply
#12
(08-06-2025, 08:35 PM)chitrangada Wrote: এরকম বানান ভুল অনেক নজরে এল।

ধন্যবাদ,আমি ঠিক করে দিয়েছি।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


[+] 1 user Likes কালপুরুষ's post
Like Reply
#13
(08-06-2025, 07:00 PM)কালপুরুষ Wrote: ধন্যবাদ ভাই।
তবে কিছু যায় আসে না, ভালো না লাগলে আর লিখবো না,আমি শুধু দেখতে চাই ছিলাম আমার লেখা কেমন হয়। এখন বেশ বুঝতে পারছি বিশেষ ভালো নয়।

দেখো, তোমার লেখা পড়ে এতুটুকু তো বুঝতে পারলাম যে ভাষার উপর তোমার ভালো দখল রয়েছে এবং তুমি তোমার গল্পের কাহিনীকে সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারো। এখন বহুরূপীর মন্তব্যের সঙ্গে আমি পুরোপুরি সহমত, এটাও ঠিক ওর মন্তব্যের ভুল মানে করার সম্ভাবনা অনেক বেশী। এখানে এই ধরণের লেখার খুব একটা পাঠক-পাঠিকা পাবে না। এই ধরণের নিরামিষ লেখার পড়িয়ে খুব কম। হাতে গোনা কয়েকজনই পাবে। তবু বলবো যে, তুমি যদি এখানে লিখতে চাও লিখতে থাকো, হতোদ্যম হয়ো না। আর লেখার মানের কথা বলছো। দেখবে যে লিখতে লিখতে তোমার হাত কবে পাকা হয়ে গেছে তুমি নিজেও টের পাবে না।

শুভেচ্ছা রইলো। তোমার আরো লেখা পড়ার ইচ্ছে রইলো।
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
#14
অসাধারণ একটি সুন্দর গল্প। পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।
Like Reply
#15
শুরুটা ভালোই হয়েছে। লিখতে থাকুন। পাঠক সংখ্যা হয়তো কম হবে। তবে, যাদের পাবেন তারা সম্ভবত এই সাইটের বিদগ্ধ পাঠক।

আগামীর প্রতীক্ষায়।

Namaskar





গঠনমূলক মন্তব্য আমার অনুপ্রেরণা।

[+] 1 user Likes মাগিখোর's post
Like Reply
#16
পর্ব ২

ট্রেনের জানালার কাচে একটানা বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। মায়া বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে, কিন্তু মন তার হাজার মাইল দূরে। পাশের সিটে বসে থাকা লোকটি মাথা ঘুরিয়ে এক-আধবার তাকে দেখছে। অস্বাভাবিক নয়,তবে মায়া জানে, সে একজন অনুসন্ধানী মানুষ। হয়তো পেশায় সাংবাদিক, কিন্তু চোখ দুটো ঠিক গোয়েন্দার মতো কাজ করে—চুপচাপ পড়ে নিচ্ছে তার প্রতিটা অঙ্গভঙ্গি, চোখের অশান্তি, ঠোঁটের কম্পন। মায়া জানে তার অস্থিরতাই তাকে সন্দেহের তালিকায় তুলে দিয়েছে। “সত্যিই কি লোকটা তাকে সন্দেহ করছে?” নিজেকেই প্রশ্ন করে সে। উত্তর খুঁজে পায় না। বরং অস্থিরতা আরো বারে। মায়া শুনেছে মেয়েরা নাকি পুরুষদের মন পড়তে পারে! তবে সে কেন পারছে না?

–“ আপনি এই ঠান্ডা আবহাওয়াতেও ঘামছেন? আপনার কি কোন সমস্যা হচ্ছে? মানে, আপনি ঠিক আছেন তো?”

বলতে বলতে আরিশ একটি রুমাল এগিয়ে দেয়। মায়া কিছুই না বলে বাঁ হাতে গ্রহণ করে এগিয়ে দেওয়া রুমালটি। মনে মনে বলে, “ না আমি ঠিক নেই! কোন কিছুই ঠিক নেই!” কপালের ঘাম  মুছে রুমালটি কোলের কাছে নামিয়ে আনা মাত্র হঠাৎ তার নিঃশ্বাস আটকে আসে।

সাদা কাপড়, লাল সুতোয় সূচিকর্ম। সেই পুরনো নকশা—তার নিজের হাতে তোলা ডিজাইন। হ্যাঁ সে! সেই ত বছর সাত আগে এই রুমালটা নিজে বানিয়েছিল। কিন্তু... নামটা! নামটা বদলে গেল কেন? “ মহামায়া ” সূক্ষ্মভাবে সেলাই করে লেখা, “কি-কিন্তু মায়া জানে, এই রুমালে সে লিখেছিল শুধুই "মায়া"

সে জিজ্ঞেস করল, গলা কাঁপিয়ে,–"এই রুমাল... তুমি কোথায় পেয়েছো?"

আরিশ মৃদু হেসে বলল,–"আমার মা দিয়েছিলেন। অনেক বছর আগে।"

মায়ার বুক ধক করে উঠল। তার মাথার ভিতর ঘুরপাক খেতে লাগল,“এই রুমাল তো সে রুদ্রকে দিয়েছিল! তাহলে? সে আবার তাকায় সেই লেখার দিকে—"মহামায়া" — যেন “মায়া” কে ঘিরে একটা অভিশপ্ত ছায়া। না,মায়ার জীবনে ভগবানের কোন অস্তিত্ব বাকি নেই....নেই তার প্রতি কোন বিশ্বাস! তবুও সে ভাবে... পরক্ষণেই তার দৃষ্টি হয়ে আসে ঘোলাটে... মনে পর আজকের মতো অন্ধকার একটি রাত্রি, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে হাস্যমুখী এক মধ্যবয়সী মহিলা,আর দরজার ভেতরে অসহায় একটি মেয়ের চিৎকার... কামের তাড়নায় পাগল প্রায় কতগুলো পুরুষ মানুষ – না নেকড়ে বাঘ! 

–“ চা খাবেন?” 

আরিশের ডাকে চমক ভাঙ্গে মায়ার। বোঝে নিজের অজান্তেই হাতের রুমাল সহ নিজেকে দুহাতে জড়িয়ে সে গুটিয়ে গেছে। বাইরে প্রবল বৃষ্টি। ভেতরের আবহাওয়ার উত্তাপও যেন হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নেমে গেছে অনেকটা।মায়া নিজেকে যেন সামলে নিতেই রুমালটা শক্ত করে ধরে, কিন্তু মনে হয় যেন সেটা নিজের হাতেই একটু একটু করে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

– "তুমি কে?" ফিসফিস করে সে বলে।

ছেলেটি কিছু বলে না। সে তাকিয়ে আছে ঘাড় বাঁকিয়ে পেছনে। পেছনে ক্যান্টিন স্টাফ একজনকে চা দিচ্ছে । বোধহয় মায়ার ফিসফিস কথা আরিশ শোনেনি.... তাও ভালো! মায়া ভাবে, তবুও নিজের ক্ষণকালীন এই দূর্বলতায় লজ্জায় মাথা নত করে সে। আরিশ এবার মায়ার অনুমতি না নিয়েই স্টাফকে ডেকে বলে,

— “দুটি রং চা... আর শোনো! খাবারের কোন ব্যবস্থা হবে? খিচুড়ি কি ডাল ভাত?

মায়া চোখ তুলে তাকায়। কিন্তু কারো কিছু বলার আগেই আরিশ একটা নোট স্টাফবয়ের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। চা এগিয়ে দিয়ে নির্দ্বিধায় বলে-

–“ ট্রেনের খাবার যদিও বিশেষ ভালো কিছু নয়, তাছাড়া বারোটার সময় সে কিছু পাওয়া যাবে তাই ত আশ্চর্যের।”

মায়া দৃষ্টিতে কাঠিন্য আনার চেষ্টা চালিয়ে হয় ব্যর্থ, জড়ানো গলায় বলে করে,

–“ এ- সবের প্রয়োজন ছিল না”

–“কি যে বলেন,আপনি অভুক্ত তা দেখেই বোঝা যায়...ও এক মিনিট!

বললেই ছেলেটি ব্যস্ত হয়ে হয়ে ব্যাগ নামায়, পরক্ষণেই ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে একটি নীল রঙের পাতলা চাদর। মায়াকে হতভম্ব করে দিয়ে আরিশ নিজেই সেটি জড়িয়ে দিয়ে বলে,

–“ এমন বৃষ্টি বাদলের দিনে ফিনফিনে শাড়ি পরে রাতে ট্রেন যাত্রা কে করে বলুন তো?”

মায়া রেগে যায় এবার–“ শোন তুমি অত্যন্ত গায়ে পড়া অসভ্য একটি ছেলে....”

মায়া শেষ না করেই থেমে যায়। উত্তেজিত হয়ে সে উঠে দাড়িয়ে ছিল। সবাই তাকিয়ে ছিল তার দিকে..... এতটাই জোড়ালো ছিল তার কথা যে দরজার পাশে বসে থাকা একটি লোক....বোধহয় ঘুমিয়ে ছিল...সেও চোখ তুলে তাকায়। লজ্জিত মেয়েটি "ধপ" করে বসে পরে সিটে, গায়ের নীল চাদরটা দুহাতে আকড়ে যেন নিজেকেই লুকিয়ে নিতে চায় তার আড়ালে। তার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে..সে নিজেও জানে না আজ হঠাৎ তার এমন হচ্ছে কেন? খেয়াল করে দেখে সে নিজেই কখন যেন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে।


–“ আমি সত্যিই দুঃখিত! তবে আমি একটূ গায়ে পড়া হলেও বাজে লোক নই মোটেও... আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন... সত্যি বলছি!"

মায়ার বিশ্বাস হয়না এই লোকটি সাংবাদিক..... খানিকটা পাগলই মনে হয় যেন। সে আরিশের অনর্গল কথা বলা থামাতে কিছু বলতে চায়। কিন্তু তখনি আরিশের ফোনে বেজে ওঠে ধর্মীয় সংগীত— মোবাইলের রিংটোন। 

– “আসসালামু আলাইকুম। রাফি! বল কি বলবে?”

–“-------------”

–“ এই বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত নই....ও আচ্ছা! আমি শুনছি বলে যাও”

–“------------”

–“ হা! হা!হা! সব কথা কিছু সময় বলা যায় না, রাফি। কিছু কথা কেবল নির্দিষ্ট মুহূর্তেই বলা যায়। ফোন রাখো, আগামী সপ্তাহে তোমার সাথে দেখা হচ্ছে।”


মায়া আরিশের কথা শুনতে শুনতে তাকিয়ে ছিল রুমালের লেখাটার দিকে,“মহামায়া” লেখাটা স্পষ্ট। 

– “আপনার তো এর অর্থ জানার কথা, ।। যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।। দেবী দুর্গার টাইটেল নেইম”

মায়া অবাক হয়,মাথার ভেতরের সব কেমন জট পাকিয়ে যেতে শুরু করেছে। আরিশের মুখে আবার সেই হাসি।

–“ আমার ছেলেবেলাটা খানিক অদ্ভুত। আমার মা ছিলেন পশ্চিম বঙ্গের এক সম্ভ্রান্ত *  পরিবারে মেয়ে। বাবা যদিও ব্যবসায়ী লোক, তবুও মা- বাবার সম্পর্ক যেন বামন হয়ে চাঁদে হাত বারানো.....”


মায়াকে কিছুই বলতে হয়নি। রুমাল হাতে নিয়ে সে শুধু অবাক হয়ে সবটা শুনছিল। মনে মনে ভাবছিল কতটা পাগলাটে লোক হলে অজানা অচেনা একটি মেয়েকে সামনে বসিয়ে এমন নিজের গুণগান করা সম্ভব! তবে শুনতে মন্দ লাগে না.. ছেলেটির কন্ঠস্বরের গম্ভীর্য যেন উদাও হয়ে এখন বেশ সহজ হয়ে এসেছে। নিজের অজান্তেই সহজ হয়ে এসেছে মায়াও। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই হয়তো সে বুঝতো আগে কখনোই তার এমন হয়নি। দীর্ঘদিন এই কাজে যুক্ত থেকে সে অনেক সতর্ক ও সচেতন হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজ!..আজ চারপাশে চোখ বুলালেই সে দেখতে পারতো ট্রেনের হালকা আলোতে কতগুলো চোখের দৃষ্টি শুধুমাত্র তাদেরই দিকে নিবদ্ধ!


ঘুম ভাঙলো ট্রেন থামার ঝাকিতে। সম্মুখে তাকিয়ে প্রথম চোখে পরলো আরিশ সেখানে নেই। ধুক করে কেঁপে উঠলো তার বুকের ভেতরটা। ব্যস্ত হয়ে ব্যাগ হাতরে দেখলো ভেতরটা। না, খামটা সেখানেই আছে, একই ভাবে পড়ে আছে ব্যাগে রাখা জিনিস গুলোর তলায়।আরিশের ব্যাগটাও রাখা এখন সিটের একপাশে। ট্রেনটা কিছু খালি। 

মায়ার শরীরটা যেন কেমন ভারি ভারি ঠেকছে। তবুও সে উঠে দাঁড়ায়। মাথা ঘুরিয়ে এদিকে ওদিকে খোঁজে আজ রাতের চেনা মুখানি। তবে খুঁজে পায় না। মাথাটা অল্প বথ্যা করছে,আবারও বসে পরে সে। মোবাইল স্ক্রিনে সময় ৪:১৮। বৃষ্টি থেমেছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই একটি দৃশ্য চোখে পরে মায়ার।

না মায়া আর অবাক হয় না! তার অবাক হওয়া কেটে গিয়েছিল যখন ছেলেটা দুজনের জন্যে সাত প্যাকেটে খিচুড়ি অর্ডার করেছিল! তাই বরং একটুকরো হাসি খেলে যায় তার ঠোঁটে। ওদিকে আরিশ স্টেশনের এক প্রান্তে নিচু হয়ে বসে একটি নোংরা কুকুরকে খিচুড়ি খাওয়াছে..তার পাশেই একটু দূরে মাটিতে বসে দুটি ছোট ছোট ছেলে খাচ্ছে তৃপ্তি সহকারে।

– “ পাগলের কান্ড দেখ!"

পেছনে কেউ যেন বললো কথাটা।  মায়া নিজেও ভাবলো.... হ্যাঁ! পাগলই বটে, পরক্ষণেই আবারও চোখ গেল সেই ছোট্ট ছোট্ট ছেলে দুটির দিকে। ওদের সাথে কোথাও কি মিল আছে মায়ার..মায়ার মনে পড়ে যায় একটি সন্ধ্যা — আজ থেকে বোধ হয় সাত বছর আগের।

তখন সে সদ্য কলেজে ভর্তি হয়েছে। বাবা-মা তখন প্রায় এক বছর আগে এক দুর্ঘটনায় মারা যান। অনাথ মেয়ে,তাই হয়তো করুণা দেখিয়েই মায়ার মামা তাকে শহরে নিয়ে আসেন, আর মামি? তিনি যেন সবসময়ই চেয়েছেন মায়াকে নিচে নামাতে, দমিয়ে রাখতে। চোখে চোখ পড়লেই বলতেন, “তুই একটা বোঝা মায়া। একটাও কাজের না। তোর মা তোকে ঠিক মতো মানুষ করে যায়নি। শুধু রূপ থাকলেই হয় না,কাজও জানতে হয়।”

মামা ছিল মামির হাতে ধরা। তাই প্রথমদিকে রুদ্র ছিল মায়ার একমাত্র আশ্রয়। মামার এক পরিচিতের ছেলে, পাড়ার মাঠে খেলতে আসতো । চুপচাপ, পড়াশোনায় ভালো, তবে চোখে একটা অভিমানের ছায়া সবসময়।

রুদ্র আর মায়ার বন্ধুত্ব যেন নিজের ছায়ার মতো — খেয়াল না করেই দিনে দিনে ঘন হয়ে ওঠে। কলেজ ছুটির পর মাঝে মাঝে তারা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে কথা বলত, কখনোবা কোনো চায়ের দোকানে বসে।

কিন্তু এই সম্পর্ককে প্রথমেই বাঁধা দেয় মায়ার মামি। একদিন সন্ধ্যায়, মায়া ঘরে ফিরতেই মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে ড্রয়িং রুমে।

–“এই যে, এখনি এত! ছেলেমানুষের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিস! বজ্জাত লম্পট ছেলেদের সাথে ফষ্টিনষ্টি করে বেরাছিস!  তুই ভাবছিস আমি কিছু বুঝি না?”

–“কী বলছেন আপনি?” — হতবাক হয় মায়া।

–“ওই ছেলের সাথে দেখা করিস না বললাম! ছেলেটা ভালো না। তা ছাড়া, আমি ঠিক করেছি তোর বিয়ে এক মাসের মধ্যে দিয়ে দেব!”

মায়া কেঁদে ফেলে। কিন্তু ততদিনে মামি তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় রুদ্রের সঙ্গে। ফোন কেড়ে নেওয়া হয়, কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

একটা সন্ধ্যায়, মামা যখন বাইরে, এক অপরিচিত ভদ্রমহিলা ঘরে এসে বসেন। মুখে মিষ্টি হাসি, হাতে দামি পারফিউমের গন্ধ, ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক। মামি বলেন, “এই খালামণি তোকে একটা চাকরির অফার দিতে এসেছে। খুব ভালো মাইনে। শুধু একটু মালামাল নিয়ে এক শহর থেকে আরেক শহরে যাবি।”

মায়া তখন নরম মাটির মতো, অবুঝ, ভাঙা মন আর একাকিত্বে জর্জরিত। সে জানত না এই ‘মালামাল’ কী, জানত না সে কী নরকের দিকে পা বাড়াচ্ছে। 

প্রথমবার চট্টগ্রাম, তারপর খুলনা। একটার পর একটা কাজ। গাড়ির ভেতর, ট্রেনের ভিতরে, এমনকি একবার গর্ভবতী সেজেও এক প্যাকেট ওষুধ বহন করতে হয়েছিল, যেটা আদতে মাদক। তারপর ধীরে ধীরে তার মনবল ভেঙ্গে শুরু হয় শরীরের নোংরা খেলা....তখন সে বুঝে যায়, মামি-ই তাকে এই পথ দেখিয়ে দিয়েছে। সে যেন একটা পণ্য হয়ে গেছে — যার দাম ঠিক করে অন্যেরা।

ট্রেন ঝাঁকুনি দিয়ে চলে। মায়া ফিরে আসে বর্তমানে। ব্যাগ হাতে উঠে দাড়ায় সে। আরিশ এসে বসেছে কখন মায়া টের পায়নি। সে সেদিকে তাকাতেও চায় না...তার কেমন যেন লাগছে হঠাৎ — মাথা ঘুরছে, শরীরের অভ্যন্তরে প্রবল এক ঘৃণা যেন সব কিছু মুচড়ে উঠে আসতে চাইছে। এমন সময় ট্রেনের গতি বাড়ছে, হঠাৎই একটা মোড়। বেসামাল মায়ার পক্ষে এই ঝাঁকি সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পরে... ভারসাম্য হারায় সে।

আরিশ  কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাল ফিনফিনে  শাড়ি পড়া মেয়েটি তার ওপর প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ে যেন। পরক্ষণেই মায়ার চেতনা নড়ে ওঠে। দ্রুত নিজেকে সামলাতে গিয়ে নিজের হাত আরিশের কাঁধে রেখে উঠে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু সেই তাড়াহুড়োয় তার ব্যাগটি আটকে গেছে কিছুতে... হলকা শরীরটা  চেপে বসেছে আবারও।

মোলায়েম রেশমের ব্লাউজের নিচে কোমল স্তনের স্পর্শ—নিতান্তই এক দুর্ঘটনার অপ্রস্তুত পরিণতি। স্পর্শটা ছিল না কামনার, বরং হতবুদ্ধি এক অসংলগ্নতায় মোড়ানো। কিন্তু নিঃশ্বাস যেন থেমে গেছে মায়ার। দু জোড়া দৃষ্টির ধাক্কাই নয়... যেন সবেগে  নাড়া দিয়েছে কেউ হৃদপিন্ডে! 

তারপর এক মুহূর্ত— যেন চোখের নিমেষেই আরিশের একটি বলিষ্ঠ হাত চেপে বসে মায়ার কোমরে... এক প্রবল ঝাঁকির পর মায়া নিজেকে আবিষ্কার করে ট্রেনের সিটে শায়িতা অবস্থায়। আরিশ তার পাশেই মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসেছে...মুখে তার একরাশ উৎকন্ঠা... কিন্তু কেন? মায়া ত তার আপন কেউ নয়!

– “আপনি ঠিক আছেন ত?”

আরিশের হাতখানি এখনো মায়ার কোমরে.... লম্বা আঙুল গুলো যেন নিজেদের অধিকার করা জায়গায় দখল নিতে চেপে বসেছে লাল শাড়িটার ওপড় দিয়ে। মায়া কিছু বলতে চায়...পাতলা ঠোঁট দুটো মৃদ কেঁপে ওঠে, কিন্তু মুখের কথা আঠকে গেছে কন্ঠনালীতেই...চোখ নামিয়ে নেয় সে.. আরিশ হঠাৎ বুঝতে পারে যেন,হাত সরিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ভাবে বলে,

–  "আমি... আমি দুঃখিত!" 


মায়ার ওঠার প্রয়োজন, তবুও উঠে দাড়াতে ইচ্ছে হয় না তার।আরিশ আলতো ভাবে হাত ছোঁয়ায় মায়ার কপালে! তৎক্ষণাৎ চোখের পাতা দুটি মেলে তাকায় মায়া। নিঃশ্বাস তার ধীরে ধীরে ওঠানামা করছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে উঠছে নামছে ভাড়ি বুক....পাতলা শাড়ি ও লাল ব্লাউজ খানি মেয়েটার লজ্জা ঢাকার বদলে আরো আকর্ষণীয় করে তুলে ধরেছে।


আরিশের কপালে ভাঁজ পড়ে— মায়ার দেহে হালকা জ্বরের আভাস,চোখে ভয়ের। তবুও ছেলেটি তার হাত থেকে ব্যাগটা নেবার সময় সে বাধা দিতে পারে না,“ওই ব্যাগেই ত খামটা...যদি...যদি..” আর ভাবতে পারে না মায়া, শুধু আবারও কানে লাগে আরিশের কন্ঠস্বর,

– “ এটা খেয়ে নিন”

মায়ার ঠোঁটে কাছে কিছু একটা তুলে ধরেছে আরিশ।

– “ জ্বর আসছে বুঝি?”– মায়ার ক্লান্ত কন্ঠস্বর ।

– “ খুব বেশি না, কিন্তু এখনই কিছু না করলে বেড়ে যাবে।"

গলার স্বরটা কেমন আবেগ মাখানো মিষ্টি শোনায় মায়ার কানে...মনে হয় যেন বহুকাল কেউ এমন আদর করে কোন কথা বলেনি মায়াকে। সে আপত্তি জানায় না। ওষুধ খাওয়ানো পর আরিশ মায়াকে নিজে নিয়ে যায় বাথরুমে।

ফিরে এসে তাকে সিটে বসিয়ে নীল চাদরটা ভালো মতো জড়িয়ে দেয় গায়ে। পাশে বসতেই মায়া না জানি কেন আরিশের কাঁধে মাথা এলিয়ে দেয়। শুধু একবার ক্লান্ত দু'চোখের দৃষ্টি পরে অপর পাশের সিটে রুদ্রর উপহার দেওয়া পুরোনো ব্যাগটা..... তারপর শুধু অনুভব— ট্রেন চলছে, সামনে গন্তব্য এখনো অনেকটা দূর!


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#17
(09-06-2025, 12:22 AM)ray.rowdy Wrote:
দেখো, তোমার লেখা পড়ে এতুটুকু তো বুঝতে পারলাম যে ভাষার উপর তোমার ভালো দখল রয়েছে এবং তুমি তোমার গল্পের কাহিনীকে সুন্দরভাবেই ফুটিয়ে তুলতে পারো। এখন বহুরূপীর মন্তব্যের সঙ্গে আমি পুরোপুরি সহমত, এটাও ঠিক ওর মন্তব্যের ভুল মানে করার সম্ভাবনা অনেক বেশী। এখানে এই ধরণের লেখার খুব একটা পাঠক-পাঠিকা পাবে না। এই ধরণের নিরামিষ লেখার পড়িয়ে খুব কম। হাতে গোনা কয়েকজনই পাবে। তবু বলবো যে, তুমি যদি এখানে লিখতে চাও লিখতে থাকো, হতোদ্যম হয়ো না। আর লেখার মানের কথা বলছো। দেখবে যে লিখতে লিখতে তোমার হাত কবে পাকা হয়ে গেছে তুমি নিজেও টের পাবে না।

শুভেচ্ছা রইলো। তোমার আরো লেখা পড়ার ইচ্ছে রইলো।

ধন্যবাদ। আমি সত্যিই ভুল বুঝে ছিলাম। তবে খারাপ ভাবে নিই নি।
যাই হোক,সবাইকেই ধন্যবাদ।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#18
(09-06-2025, 11:37 AM)কালপুরুষ Wrote: আমি সত্যিই ভুল বুঝে ছিলাম। তবে খারাপ ভাবে নিই নি।

যাক বাঁচা গেল।❤️
এখন সময় নেই তবে পরে পড়বো,লিখতে থাকুন। 
এছাড়া নামের পাশে ছোট গল্প কেটে দিয়ে আপডেট নং লিখে দিতে পারেন।

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
#19
(09-06-2025, 04:25 PM)বহুরূপী Wrote: যাক বাঁচা গেল।❤️
এখন সময় নেই তবে পরে পড়বো,লিখতে থাকুন। 
এছাড়া নামের পাশে ছোট গল্প কেটে দিয়ে আপডেট নং লিখে দিতে পারেন।

কোন সমস্যা নেই,তবে একটা প্রশ্ন ছিল,এমন কোন ভালো ওয়েবসাইটে আছে ,সেখানে সাধারণত রোমান্টিক,সাইফাই,হরর, থ্রিলার এই সব গল্প লেখা হয়, বললে খুশি হতাম।


যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ। যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ ॥


Like Reply
#20
তুমি লেখা খুবই সুন্দর, তুমি সত্যিই ভালো গল্প বলতে পারো। লিখতে থাকো।
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)