Posts: 1,058
Threads: 6
Likes Received: 2,544 in 636 posts
Likes Given: 1,323
Joined: Apr 2024
Reputation:
764
(11-08-2025, 02:31 PM)gungchill Wrote: গল্পে চরিত্রদের নাম পরিবর্তনের মুল কারন ধর্ম । আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি বাংলা সেকশনে ধর্ম এক বিশেষ স্পর্শকাতর ব্যাপার । তাই দুটো ধর্ম রাখতে চাইনি । একদল হয়তো ভাববে আমি একটি ধর্মের চরিত্র গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি ( যদিও আমি ধর্মে বিশ্বাসী লোক না) । যদিও গল্পের জন্য আমার ডিসিশন টি নেগেটিভ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু কি আর করা ভাই , দেখা যাবে একদলের শত্রুতে পরিনত হয়েছি ।
দেখুন দুই ধর্মের লোক নিয়ে অনেক লেখক এমন করে গল্প লেখে,যা এবেবারে পুরো জাতিকেই অপমান করে বসে।
সুতরাং যারা ভালো লেখে,তাদের গল্প একটু সমস্যা দেখলেই মানুষ ভুল বোঝে। এই ধারণা একদিনে তৈরি হয়নি। Sad
•
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(11-08-2025, 06:57 PM)বহুরূপী Wrote: দেখুন দুই ধর্মের লোক নিয়ে অনেক লেখক এমন করে গল্প লেখে,যা এবেবারে পুরো জাতিকেই অপমান করে বসে।
সুতরাং যারা ভালো লেখে,তাদের গল্প একটু সমস্যা দেখলেই মানুষ ভুল বোঝে। এই ধারণা একদিনে তৈরি হয়নি। Sad
অবশ্যই অবশ্যই , তাই তো আমি এই স্পর্শকাতর ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়েছি । যদিও এতে করে গল্পটা কিছুটা হলেও কম্প্রমাইজ করা হয়েছে । তবে যারা ধর্ম নিয়ে স্পর্শকাতর তাদের উপর আমার কোন অভিযোগ নেই , সবার ই দুর্বল যায়গা থাকে , থাকা ভালো ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৩ (ক)
পরদিন সকালে ;
জান্নাত আর জয় গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে , জয় নিচু হয়ে নিজের বাইক পর্যবেক্ষণ করছে । আর জান্নাত বার বার জয় কে কাল রাতের কথা মনে করিয়ে দিয়ে খোঁটা দিচ্ছে ।
“ ভাইয়া তুই কালকে রাতে বললি যে তোর বাইক তোকে হতাস করে না , এখন কি হলো , আমার পরিক্ষা শেষে কি তোর বাইক ঠিক হবে?”
“ আরে আমার বাইক ও মানুষ চেনে , ও বুঝে গেছে আজ ওর উপর কে উঠবে , তাই ভান ধরেছে নষ্ট হওয়ার, দশ মিনিট একটু চুপ করে থাক , আমি কথা বলে দেখি তোকে নেয়ার জন্য রাজি করাতে পারি কিনা” জয় বাইকের কিছু তার পরিক্ষা করতে করতে বলল ।
“ আমার এতো সখ নাই তোর এই ফালতু বাইকে ওঠার রাস্তায় জ্যাম থাকে তাই পরিক্ষায় লেট না হওয়ার জন্য আজকে যাবো ভেবছিলাম , কিন্তু মনে হচ্চে ভরসা করা ঠিক হয় নাই” জান্নাত ভেংচি কেটে বলল
“ আহা চুপ তো করবি”
এমন সময় রাজীব নিজের বাইক নিয়ে বেড়িয়ে এলো , পেছনে রানী বসে , সেটা দেখে জান্নাত আরো ক্ষেপে গেলো ,
“ ওই দেখ রাজীব কেমন রানী কে নিয়ে রওনা হয়ে গেছে , একে বলে ভাই , যে ছোট বোনের সব খেয়াল রাখে , আর তুই যেমন তোর বাইক ও তেমন”
জয় অবশ্য জান্নাতের কথায় তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না , ও তাকিয়ে আছে রানীর দিকে , একটা সাদা সালোয়ার স্যুট পড়েছে রানী , চুল গুলো খোলা , চোখে হলকা কাজল আর ঠোঁটে হ্লাকা কিছু একটা মেখেছে । এতেই চোখ ফেরানো দ্বায় হয়ে দাঁড়িয়েছে জয়ের জন্য । সেই রাতে রানীর নাচ এখনো মনের মাঝে তাজা হয়ে আছে । না কোনদিন বলে নি কিছু , নিজের মাঝেই চেপে রেখছে । কিন্তু যখনি রানী সামনে আসে , সব কিছু কেমন জানি হয়ে যায় জয়ের । এদিকে রানী বাইক থেকে ওদের দিকেই হেটে আসছে , রানী হেটে আসার দৃশ্যটা জয়ের কাছে স্লো মোশানের মনে হচ্ছে , ।
“এই ভাইয়া তোর হলো” ভাই কে রানীর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়া দেয় জান্নাত
জয় দ্রুত নিজের নজর সরিয়ে নেয় , বলে “ আর পাঁচ মিনিট”
“ তার আর দরকার হবে না” রানী মুচকি হেসে বলে , রানীর কথা শুনে জয় আবার উপরে চোখ তুলে তাকায় । দুজনের চোখ একত্র হয় । জয় ও হালকা হাসি টেনে আনে নিজের ঠোঁটে ।
“ জান্নাত তুই আমাদের সাথে চল” রানী নিজের দৃষ্টি জান্নাতের দিকে ঘুরিয়ে নেয় । তারপর বড় আব্বু আর বড় আম্মুর কাছে দোয়া নেয়ার জন্য বাড়ির ভেতর ঢুকে যায় রানী ।
রানী বাড়ির ভেতরে ঢুকে প্রথমে জয়নাল কে সালাম করে , তারপর আয়শা কে । আয়শা রানীকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু একে দেয় । বলে “ যাও মা ভালো করে পরিক্ষা দাও”
বড় আব্বু আর বড় আম্মুর দোয়া নেয়া শেষে রানী বেড়িয়ে আসে । জয় তখনো নিজের বাইক নিয়ে বিজি ।
জান্নাত কে আর দ্বিতীয়বার বলতে হয় না , যেহেতু জান্নাত জিন্স পরে ছিলো তাই রাজীবের পেছনে জান্নাত বসে , তারপর রানী দু পা এক পাশে রেখে বসে । সালোয়ার স্যুটে পা দুপাশে রেখে বসা বেশ কষ্ট সাদ্ধ । জান্নাত রাজীবের পেছনে বসে নিজের একটা হাত রাজীবের কাধে রাখে । ওর মুখে একটা অন্যরকম হাসি খেলে যায় রাজীবের কাধে হাত রাখার সময় । এদিকে রাজীব নিজের চেহারা নিরলিপ্ত রাখলেও , জান্নাতের হাতের ছোঁয়া অন্য ধরনের একটা অনুভূতি দেয় ওকে।
“ সবাই ঠিক মত বসেছিস” রাজীব নিজের দৃষ্টি রাস্তার দিকে রেখেই জিজ্ঞাস করে ।
“ আমি ঠিক আছি” জান্নাত নিজের হতের গ্রিপ একটু শক্ত করে বলে ,
রানী উত্তর আসে বেশ দেরি করে , তাও সুধু ছোট্ট করে বলে “হু” বলার সময়ও ওর দৃষ্টি জয়ের দিকে নিবদ্ধ ।
“ ওকে জয় গেলাম আমরা তুই তোর গার্ল ফ্রেন্ডকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠিক কর ” রাজীব বাইক স্টার্ট করে , হলকা একটু ঝাকুনিতে জান্নাত আরো একটু এগিয়ে যায় রাজীবের দিকে, এর ফলে জান্নাতের গালে হালকা লালিমা দেখা দেয় । তবে দেখার কেউ থাকে না , কারন রানী তখনো জয়ের দিকে তাকিয়ে। শেষ বারের মত একটা মিষ্টি হাসি তে বিদায় জানাচ্ছে জয় কে ।
জয় ও যতক্ষণ পর্যন্ত ওদের দেখা যায় ততক্ষন পর্যন্ত তাকিয়ে থাকে ।
****
খূব সখ করে রাজীবের পেছনে বাইকে উঠেছিলো জান্নাত , কিন্তু এখন খুব লজ্জা হচ্ছে । প্রতিটা গর্ত প্রতিটা স্পিড ব্রেকার যেন ওর সাথে চরম বেইমানি করছে । যদিও রাজীব বেশ দেখে শুনে বাইক চালাচ্ছে , তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছেনা । বিশেষ করে হতচ্ছাড়া রানী পেছনে থকায় আরো বেশি করে রাজীবের পিঠের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে জান্নাতের বুক । জান্নাতের ইচ্ছে হচ্ছে এখনি বাইক থেকে নেমে যায় । কিন্তু সেটা করলে একটা অহেতুক সিন করা হবে , আর রাজীব কেও একটা অপমান করা হবে যা ওর প্রাপ্য নয় । তাও বাচা যে ব্রা আছে , নইলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকতো না । যদিও একটা গিল্টি মেশানো ভালো লাগাও মনের কোনে চুপটি করে বসে হাসছে । আর মন কে বোঝাচ্ছে , পরিস্থিতি যদি ভিন্ন হতো তাহলে হয়তো জান্নাত মন খুলে এই ছোঁয়ার আনন্দ নিতে পারতো ।
এদিকে রাজীব ও যে খুব ভালো অবস্থানে আছে এমন নয় । সমস্ত মনোযোগ একত্রিত করে বাইক মনে হয় এই ছোট জীবনে কোনদিন চালায়নি ও । যদিও মন বলছে হোক না একটু , কিন্তু মস্তিস্ক বলছে না , এই ধরনের ব্যাবহার জান্নাত প্রাপ্য নয় । একে তো বন্ধু জয়ের ছোট বোন , তার চেয়েও বড় কথা জান্নাত খুব মিষ্টি মেয়ে আর ভালো মনের একজন মানুষ । সব সময় রানী আর ওর পাশে থাকে , যে কোন প্রয়োজনে । তাই জান্নাতের মত একজন মানুষ এমন অপমানকর ট্রিট্মেন্টের যোগ্য নয় । রাজীব দাতে দাঁত পিষে নিজেকে তাই সম্পূর্ণ রুপে নিরলিপ্ত করে রেখছে । নিজের সমস্ত মনোযোগ রাস্তার উপর নিবদ্ধ করে রেখেছে , সত্যি যদি বলতে হয় , বলতে হবে করার চেষ্টা করছে । আসলে প্রতিটি ছোঁয়া রাজীব হৃদয় দিয়ে অনুভব করছে , যদিও রাজীব নিজের কাছেই তা অস্বীকার করছে , ডাহা মিথ্যুকের মত ।
বাকি দুজনের অবস্থা একেবারে পেছনে বসা রানীর অজানাই রয়ে গেলো । ওর সামনেই যে দুটো মানুষ নিজেকেই নিজেরা প্রতারিত করার চেষ্টা করছে সেটা রানী দেখতেই পেলো না । পাবে কি করে , এখনো ওর চোখে ভাসছে ফেলে আসার সময় জয়ের চোখের চাহনি আর ঠোঁটের মৃদু হাসি । বার বার সেই দৃশ্য রানীকে শিহরিত করছে । রানী নিজের মনে ভাবছে , কেনো এই ছেলেটার চাহনি ওকে এমন এপার ওপার বিদ্ধ করে , কেন এই ছেলেটার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি , যা প্রাই মনে হয় তাচ্ছিল্যের , ওর শরীরে শিহরন তোলে । কোনদিন যদি জয় এসব জানতে পারে নিশ্চয়ই হেসে হেসে লুটপুটি খাবে , আর বলবে , ‘রানী তুই ও পারিস , তোর মতন মেয়ে কে আমি হা হা হা’ সেদিন রানী লজ্জায় ই মারা যাবে । কারো সাথে যে শেয়ার করবে এমন কাউকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । যে দুজন মানুষকে রানী নিজের চেয়েও বেশি বিশ্বাস করে , তাদের একজন ওই জয়ের বোন , আর অন্যজন ওর নিজের আপন বড় ভাই । ভাইয়ের কাছে নিশ্চয়ই এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে না । ‘এমন করে চলতে থাকলে আমি একদিন দম আটকে মারাই যাবো’ মনে মনে ভাবে রানী ।
ত্রিশ মিনিটের রাস্তা যেন ত্রিশ ঘণ্টা মনে হলো রাজীবের কাছে । অবশেষে ভার্সিটির নির্ধারিত গেটের কাছে বাইক থামাতে পারলো রাজীব । যেন আবার নিজেকে ফিরে পেলো , এতক্ষণ নিজের মাঝেই ছিলো না ও ।
“ কিরে নাম” রানীকে তাড়া দিলো জান্নাত ,
রানী দ্রুত নিজের সপ্নের জগত থেকে ফিরে এলো , তবে এখনো একটা রেশ রয়েই গেছে । এবং সেটা ওর চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । রানী নামার সাথে সাথেই জান্নাত দ্রুত নেমে গেলো , রাজীব ও হাঁফ ছেড়ে বাচলো । কোন কিছু কে অপছন্দ করে না করা , আর ভালো লেগেও কোন কিছু না করার মাঝে যে বিস্তর তফাৎ সেটা রাজীব আজ বুঝতে পারলো । চেহারায় একটা ক্লান্তি ভাব ফুটে উঠছে । আর সেই ক্লান্তি ভাব জান্নাতের চোখ এড়ালো না । রাজীবের এই মুখচ্ছবি জুয়ান্নাতের মনে গেঁথে গেলো । জান্নাত জানে যে রাজীব ওর প্রতিটা স্পর্শ টের পেয়েছে , কিন্তু একে বারে নির্লিপ্ত থকেছে ছেলেটা , আর এই নির্লিপ্ত থাকার জন্য বেশ কষ্ট করতে হয়েছে , যা ছেলেটার চেহারা ছবিতে ফুটে উঠছে । একটা ভালো লাগা আর লজ্জার অনুভূতি ঘিরে এলো চারপাশ থেকে , হাম্লে পরল জান্নাতের উপর ।
জান্নাত হাত নেড়ে বাই বলল রাজীব কে , রাজীব ও মুচকি হেসে অল দ্যা বেস্ট বলল । কিন্তু রানী তখনো বেশ উদাস , শুকনো মুখে সুধু বলল “ আচ্ছা যাই”
রাজীব ও বাইক রাইডের নামে ইমোশনাল রোলারকোস্টারের রাইড করার ঘোর থেকে এখনো বের হতে পারেনি , তাই রানীর দিকে না তাকিয়েই বলল “ ঠিক আছে যা”
রানী আর জান্নাত বেশ কয়েক পা হেটে চলে গেছে , ঠিক সেই সময় রাজীবের মনে হলো , আরে কিছু একটার কমতি রয়ে গেলো তো। অমনি রাজীবের ঘোর কেটে গেলো , ততক্ষনে রানী কিছুটা দূরে চলে গেছে । রাজীব রানীর দিকে খেয়াল না করলেও , কোন এক ফাঁকে ওর চোখ রানীর উদাস , অমনোযোগী চেহারার ছবি তুলে রেখেছিলো , সেটাই রাজীব এখন দেখতে পাচ্ছে । রাজীব নিজের উপর বিরক্ত হলো , রানী গতকাল থেকেই বেশ ভয়ে আছে সেটা ও ভালো করেই জানে । বোনের এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নিজের ইমোশান নিয়ে ব্যাস্ত থাকা একদম উচিৎ হয়নি ওর । রানীকে একটু ভালো মত সাহস দেয়া দরকার ছিলো ।
“ এই রানী শুনে যা” একটু গলা উচু করে ডাকতে হলো রাজীব কে । একবারে শুনল না রানী , দ্বিতীয় বার ডাকতে জান্নাত রানী কে কনুই এর গুতো দিয়ে রাজীবের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করলো , তবেই রানী রাজীবের দিকে তাকালো । ওরা দুজন দাড়িয়ে গেলো , রাজীব দ্রুত পদে ওদের দিয়ে এগিয়ে গিয়ে রানীর মাথায় হাত রেখে বলল “ কিরে এখনো ভয় পাচ্ছিস”
রানী কি উত্তর দেবে খুজে পেলো না , আসলে পরিক্ষার ভয় তো দুরের কথা , এতক্ষণ ওর মনে জয়ের শেষ দৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন ব্যাপার ই ছিলো না । রাজীবের ডাকে এখন কিছুটা শান্ত হয়ে এসেছে ওর মন । কিন্তু ভাই কে তো আর সে কথা বলা যাবে না । তাই সুধু মাথা উপর নিচে ঝাকালো , ওর কাজ ও করলো এবার ভাই যা বুঝে নেয়।
“ একদম চিন্তা করবি না , মাথা ঠাণ্ডা রেখে পরিক্ষা দিবি , ফলাফল কি হবে ভাবার দরকার নেই বুঝলি?”
রানী ছোট্ট করে সুধু “ হু” বলল
এর পর রাজীব যা করলো সেটা রানী আর জান্নাত কেউ আশা করেনি , রানীর কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল “ যা , পাশ করিয়ে দিলাম” কাজটা করে রাজীব হা হা করে হাসতে লাগলো । ওর এই কাজের উদ্দেশ্য ছিলো রানীকে ডিস্ট্রাক করা , পরিক্ষার ভয় থেকে ।
রানী ছিটকে দূরে চলে গেলো , বেশ লজ্জা পেয়ে আশে পাশে তাকালো , তারপর রাগত চোখে রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল “ ভাইয়া , এটা কি হলো ? আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি , এখন তো আমি ইচ্ছা করেই এই ভার্সিটিতে ভর্তি হবো না”
উত্তরে রাজীব হা হা করে সুধু হাসল , সাথে জান্নাত ও যোগ দিলো । রাজীব আর জান্নাতের চোখাচোখি হতেই ওদের হাসি অবশ্য থেমে গেলো , হাসির জায়গায় একটা বেক্ষাপ্পা অনুভূতি দখল করে নিলো ।
এদিকে রানী গট গট করে হাটা শুরু করে দিয়েছে , মুখে বিড়বিড় করে বলছে ‘ লোকজন দেখলে বলবে , ছোট খুকি পরিক্ষা দিতে এসেছে’
বিদায় নেয়ার আগে জান্নাত আর রাজীবের মাঝে আরো একবার ওয়েল উইশ আর ধন্যবাদ বিনিময় হলো তবে এবার সুধু চোখের ভাষায় ।
পরিক্ষা শেষে অবশ্য রানী মনে মনে রাজীবের ওই দুষ্টুমির জন্য রাজীব কে ধন্যবাদ ই দিলো । জয়ের ওই মর্ম ভেদি চাহনি ওকে সত্যি ই পরিক্ষা থেকে অনেক দূর নিয়ে গিয়েছিলো । ছেলেটা যে কি না একটা , সব কথা সুধু চোখে চোখেই বলতে চায় ।
****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৪
ভার্সিটির নতুন শিক্ষা বর্ষ শুরু হয়ে গেছে । জয় আর রাজীব নিজেদের নির্ধারিত জায়গায় আরো বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে । ওদের আড্ডা স্পট থেকে গেট দেখা যায় । দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্রীরা গেটের সামনে জড় হয়েছে নতুন স্টুডেন্টদের র্যাগ করার জন্য । সেদিকেই দুজনের নজর ছিলো ।
এমন সময় মিস সাম্মি নিজের স্কুটি চালিয়ে গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকে । সাথে সাথে জয় রাজীব কে কনুই দিয়ে গুতো দেয় , “ ভাই দেখ তোর মাল যায়, উফফফ ভাই কি ফিগার আহহহ , এই বছর যদি তুই কিছু করতে না পারিস তাহলে , আগামি বছর কিন্তু আমি ভুলে যাবো এটা তোর মাল ”
“ শাট আপ জয়” রাজীব হালকা ভাবে বলে , রেগেও না আবার খুশি হয়েও না , রাজীব নিজের মোবাইলের দিকে মনোযোগ দিলো । কিছুক্ষন পর রাজীবের ক্লাসের সময় হলে রাজীব বলল , “ আমি ক্লাসে গেলাম রে”
“ ওহো সাম্মি ম্যাম এর ক্লাস” জয় খোঁচা দিয়ে বলল
রাজীব হাতে থাকা প্লাস্টিকের চায়ের পাত্র জয়ের দিকে ছুড়ে দিয়ে ক্লাসের উদ্দেশ্যে চলল ।
ঠিক এর পাঁচ মিনিট পর গেটের সামনে একটা অটো এসে থামে , সেখান থেকে জান্নাত আর রানী নেমে আসে , জান্নাত নিজের চিরাচরিত টপস আর জিন্স , আর রানী আকাশী নীল সালোয়ার স্যুটে। বাতাসে মেচিং ওড়না হালকা উরছে , সব সময়ের মত চুল গুলো খোলা নয় । পনিটেল করে বাধা । রানী কে দেখেই জয়ের একটা হলকা শীতল বাতাসের স্পর্শ অনুভুত হলো । এক মনে রানীর দিকে তাকিয়ে আছে ও ।
এদিকে ওরা গেটের কাছে আসতেই ওদের দুজন কে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্রীরা ঘিরে ধরলো ।
ব্যাপারটা জয় আগে দেখে ফেললো , দেখার সাথে সাথে জয় গেটের দিকে হাটা দিলো ।
জয় জতক্ষনে জান্নাত আর রানীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । ততক্ষনে জটলা করা ছাত্র ছাত্রীরা রানীর হাতে একটি গোলাপ দিয়ে দিয়েছে । আর একটি মেয়ে রানীর চোখ পেছন থেকে ধরে রেখছে । জয়েকে সামনে দেখে সেই ছাত্রি রানীর চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলো । জয়কে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছাত্রীরা ভালো করেই চেনে , কারন ওদের সবচেয়ে বেশি র্যাগ করেছিলো জয়।
নিজের চোখের সামনে জয় কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পরী একদম বরফের মত জমে গেলো , সুধু মাত্র একটা বড় নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এলো । এদিকে ঘিরে থাকা ভির , চেন্ট করতে শুরু করেছে , I LOVE YOU , I LOVE YOU । জয় ত্রিশ সেকেন্দের মত হাসি মুখে দাড়িয়ে থেকে রানীর হাত থেকে গোলাপ নিয়ে বলল “ I love both of you” । জয়ের ঠোঁটে চুটল হাসি , জান্নাত ও হাসছে তবে সেটা পরিত্রাণের হাসি । এদিকে রানীর নজর মাটির দিকে , কারন ওর নিঃশ্বাস বেশ জোরে ওঠা নামা করছে । গাল দুটো লাল হয়ে আছে , সেটা কিভাবে জয়ের সামনে প্রকাশ করবে ।
“ এইজে সম্মানিত দ্বিতীয় বর্ষের ভাই ও বোনেরা , এটা আমার ছোট বোন” জান্নাতের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল , তারপর পরীর দিকে তাকিয়ে বলল , “ আর এটা আমার বোনের বান্ধবি” তখন ভিরের মাঝে ওওওওওওও………… করে একটা শোরগোল উঠলো। যেন ওরা জয় আর রানীর মাঝে কিছু একটা আছে সেটা বুঝে ফেলেছে । রানীর ইচ্ছে হচ্ছিলো মাটির সাথে মিসে যেতে।
একজন ছাত্র ভীরের ভেতর থেকে বলে উঠলো “ এটা কিন্তু ফেয়ার প্লে হলো না , আমাদের তো ঠিক ই র্যাগ করেছেন”
“ কে বলল রে , এদিকে আসো তো সোনা” জয় মজার ছলে বলল , কিন্তু কেউ এগিয়ে এলো না । “ যে বলছে সে জিমে এসে দেখা করো আমার সাথে , ওখানে ফেয়ার প্লে খেলবো আমি” জয়ের এমন হুমকি শুনে কেউ এগিয়ে এলো না । তারপর জয় সবার উদ্দেশ্য করে বলল , “ আজকে সবার জন্য ক্যান্টিনে দুটো করে সিঙ্গারা ফ্রি, সাবধান দুটোর বেশি যেন কেউ না নেয়”
সবাই উল্লাস করে উঠলো , গোটা বিশেক ছেলে মেয়ে ছিলো । ওরা রানী আর জান্নাত কে ছেড়ে দিয়ে অন্য স্টুডেন্ট খুজতে লাগলো ।
জয় আর দাঁড়ালো না , ওর ক্লাস আরো অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিলো । কিন্তু এই কারনে জয় আজ ক্লাসে যায় নি।
জয়ের যাওয়ার পথে রানী অপলক তাকিয়ে রইলো , ঠোঁটে মৃদু হাসি , নিশ্বাসের সাথে বলল ‘হিরো’
এমন সময় জান্নাত রানীর চোখের সামনে হাত এনে তুড়ি বাজালো , বলল “ এই মহারানী , চলেন এখান থেকে, অন্য দল চলে আসার আগে , ওদের কে সিঙ্গারা কিনে দেয়ার মতন কেউ নাই কিন্তু”
দুই বান্ধবি এক সাথে হেসে ফেললো । তারপর দ্রুত পায়ে ক্লাসের দিকে চলল ।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 533
Threads: 0
Likes Received: 240 in 229 posts
Likes Given: 445
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 853
Threads: 0
Likes Received: 391 in 324 posts
Likes Given: 1,598
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৪ (ক)
সন্ধার ঠিক আগে রানী আর রাজীব নিজেদের ছাদের উপর শুকাতে দেয়া কাপড় নিতে এসেছে । রাজীব একটু আগেই বাড়ি ফিরেছে জয়ের সাথে ।
“ ভাইয়া তুই আজকে ভার্সিটিতে ছিলি না?” রানী রাগত স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ ছিলাম তো, কেনো কি হয়েছে ?” রাজীব বেশ অবাক হয় রানীর এই রাগত স্বরের কারনে
“ তুই জানিস না যে ভার্সিটিতে র্যাগিং হয় , তুই আমার জন্য অপেক্ষা করলি না কেনো?”
“ ওহ এই কথা “ রাজীব রানীর রাগের কারন জানতে পেরে একটু নির্ভার হলো । তারপর আবার বলল “আরে এই ভার্সিটিতে র্যাগ অত ভয়ঙ্কর কিছু না , সুধু হাক্লা মজা করা হয়, আর এসব ছোট ছোট ব্যাপার গুলই তো সারাজীবন মনে রাখার মতন হয় , যখন বুড়ি হবি তখন এসব ছোট ছোট ঘটনা গুলই তোর এই দিনগুলিকে বাঁচিয়ে রাখবে” রাজীব কথা গুলো বলে রানীর কাছে আসে , তারপর হেসে বলে , “ খুব রাগ করেছিস? তোর সাথে খুব বেশি কিছু করেছিলো নাকি?” রাজীব উৎকণ্ঠার সাথে জিজ্ঞাস করে
এবার রানী চুপ হয়ে যায় , মনে ভাবে রাজীব ঠিক ই বলছে , আজকের এই ঘটনা ও সারা জীবন মনে রাখবে , রানীর অজান্তেই ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে । গাল আর কানে গরম ভাপ এসে লাগে , চোখের সামনে জয়ের তখনকার মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে , তখ জয়ের কথা বলার স্টাইল , কেমন করে ওই ছেলে গুলো কে থ্রেট করলো , আবার সবাই কে সিঙ্গারা দেয়ার কথা বলে মানিয়ে ফেললো ,উফ……। এই সব কথা ভাবতে গিয়েও রানীর সমস্ত শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে । আর সেই ‘ I love u both’ রানী জানে জয় both না বলে too বলতে চেয়েছিলো ।
“ কিরে , কি হলো , তোর সাথে কি বেশি বেশি করেছে নাকি ? চুপ হয়ে গেলি যে?” রাজীব , রানীর এমন উদ্ভট আচরন দেখে , একটু অবাক ই হলো ,
“ না না তেমন কিছু না , ঠিক আছে যা তোকে এবারের জন্য মাফ করলাম” হাসতে হাসতে বলল রানী ,
“ ভার্সিটি লাইফ মানুষের জীবনের খুবি গুরুত্বপূর্ণ আর সুন্দর সময় , এই সময়টা উপভোগ কর , এই সময়ের সুন্দর সৃতি গুলোই ভবিষ্যতে চলার জন্য ফুয়েল হিশেবে কাজ করবে । এখন বড় হয়েছিস , নিজে নিজে সব কিছু ট্যাকল করা শিখবি , আর যখন না পারবি , তখন আমাকে ডাকবি , দেখবি আমি সারাক্ষণ তোর পাশেই ছিলাম।“
এমন সময় নিচ থেকে ডাক এলো , “ রাজীব , রাজীব , আমার ঔষধ আনার কথা ছিলো , এনেছিস বাবা”
“ ওহ হো , ভুলেই গেছি , এখন আবার সেই দূরে যেতে হবে , এখানে এই ঔষধ পাওয়া যায় না” রাজীব বিড়বিড় করতে করতে নেমে গেলো ।
রাজীব নেমে যাওয়ার পর , রানী আবার কল্পনায় আজকের সকালে চলে গেলো , চোখ ধরে রাখা মেয়েটি যখন চোখ ছেড়ে দিয়েছিলো তখনো রানী চোখ বন্ধ করেই রেখছিলো । চারপাশ থেকে সবাই চাপ দিচ্ছিলো বলার জন্য , কিন্তু রানীর মুখ দিয়ে কিছুই বেরুচ্ছিলো না । মনে মনে সুধু ভাবছিলো , আশেপাশে যদি রাজীব থাকে, তাহলে ওকে বাঁচিয়ে দিতো ।
তার কয়েক মুহূর্ত পর ই রানী টের পেলো , কেউ একজন আলগোছে ওর হাত থেকে ফুলটি নিয়ে নিলো । আর বলল “I Love you both” রানীর সমস্ত শরীর কেপে উঠেছিলো , চোখ দুটো অল্প ফাক করে সামনে থাকা সুদর্শন ছেলেটি যে জয় সেটা নিশ্চিত হওয়ার পর , রানীর সমস্ত শরীরে মনে ভালোলাগার নাতিশীতোষ্ণ বাতাস বয়ে গিয়েছিলো যেন । রানী সরাসরি জয়ের চোখের দিকে তাকায় নি , সেই শক্তি ওর ছিলো না । গেলো দুই বছরে এতোবার দুজনের দেখা হয়েছে , জয়ের চাহনিতে যে বাড়তি কিছু একটা আছে সেটা রানীর নারী সত্ত্বা ঠিক টের পেয়েছে । তখনো রানীর কাছে ব্যাপারটা এতো সিরিয়াস লাগেনি , হ্যা ভালো লাগতো , চোখাচোখি হলে যখন জয় রহস্যময় ভাবে হাসতো তখন রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠত । কিন্তু আজ জয়ের মুখে ওই কথা গুলো শোনার পর রানী জয়ের দিকে তাকানোর সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলো । ভয় হচ্ছিলো যদি জয় ওর চোখের ভাষা বুঝে ফেলে । তাই রানী সরাসরি আজ তাকাতে পারেনি জয়ের দিকে ।
ছাদে দরিতে মেলে রাখা একটা ওড়না নিজের গালের সাথে চেপে ধরে রানী , মুখে লজ্জা মিশ্রিত হাসি , বলে “ ওখানে তো খুব হিরো সাজা হলো মিঃ জয় চৌধুরী , কিন্তু কোনদিন সামনে এসে কিছু তো বলার সাহস করলে না” । কথাটা বলেও রানী শান্তি পেলো না , মনে হতে লাগলো , আচ্ছা যদি সত্যি সত্যি জয় এসে এ ধরনের কিছু একটা বলে তাহলে রানী কি করবে ? তখন কি সামনে দাড়িয়ে থাকার শক্তি পাবে , নাকি আজকের মত সমস্ত শরীর কাঁপতে থাকবে ।
রানী ভেবে পায় না কেনো এই ছেলেটিকে ওর এতো ভালো লাগে । ভালো লাগার কোন কোয়ালিটি নেই , আছে সুধু গুড লুক , আর হিরো গিরি । তা ছাড়া প্রায় রানী দেখছে জয় বহু মেয়েদের সাথে ফ্লারট করে । দেখছে আর মনে মনে জ্বলেছে । কিন্তু কখনোই জয়ের প্রতি ভালালাগা কমেনি রানীর । বরং একটা অধভুত ড্রাইভ ফিল করেছে । জয়ের দৃষ্টি আকর্ষণের ইচ্ছে হয়েছে বারবার । কিন্তু কোনদিন করে উঠতে পারেনি , নিজের লাজুক স্বভাবের জন্য ।
“ কিরে ওড়নার সাথে প্রেম করছিস নাকি আজকাল?”
চৌধুরী বাড়ি আর শিকদার বাড়ির মাঝে পাঁচ ফুটের দূরত্ব , কিন্তু একটা কোনে দূরত্ব কমে দু ফুটের মত হয়ে গেছে । জয় সেখানে একটা কাঠের তক্তা ফেলে দু ছাদের মাঝে আসা যাওয়া করতো , যখন শিকদাররা এই বাড়িতে না থাকতো । এই ছাদেই সকল গোপন কাজ করতো জয় , যেমন সিগারেট খাওয়া ধরার পর এখানে রাতের বেলা সিগারেট খেতো । কিন্তু গত দু বছরে ওই পথ আর ব্যাবহার করা হয়নি । দু বছর পর আজকে প্রথম ওই পথ ব্যাবহার করলো জয় । দুই ছাদের মাঝে ফেলা তক্তাটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে , তাও রিস্কটা নিলো জয় ।
আসলে দূর থেকেই রাজীব আর রানী কে লক্ষ করছিলো । হঠাত রাজীব বেড়িয়ে গেলো তারপর নিচ থেকে রাজীবের বাইক স্টার্ট নেয়ার শব্দ কানে এলে । জয়ের ইচ্ছে হলো রানীর সাথে কথা বলার , আজকে সকালের সেই দৃশ্য নিজের চোখের সামনে থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না জয় । বার বার ঘুরে ফিরে রানীর তখনকার মুখটা ভেসে উঠছে । এরকম আর একবার হয়েছিলো । যেদিন রানীকে প্রথম বার নাচতে দেখচিলো ,প্রায় দুই বছর আগে । সেদিন জয় মন্ত্র মুগ্ধের মত দেখছিলো । রানীর প্রত্যেকটা নড়াচড়া সেদিন ওকে এমন বিমহিত করেছিলো যে , বেশ অনেকক্ষণ মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছিলো না ।
আজ আবার সে রকম কিছু একটা হলো । এমন নয় যে রানীর সাথে ওর দেখা হয় না । রোজ কম করে হলেও একবার দেখা হয় । জয়দের বাড়িতে যেমন রানীর অবাধ যাতায়াত তেমনি রানীদের বারিতেও জয়ের আনাগোনা লেগেই থাকে । তা ছাড়া ঈদে উৎসবে সব সময় এক সাথেই থাকে দু পরিবার । হারদম দেখা হচ্ছে দুজনের , তবে একটা ব্যাপার সত্যি যখনি দেখা হয় , জয়ের কাছে ভালই লাগে । কিন্তু এ পর্যন্ত জয় কোনদিন রানীকে গার্ল ফ্রেন্ড হিশেবে কল্পনা করেনি । আজো যে করছে এমন নয় । কিন্তু আজকে সকালে র্যাগিংএর সময় দেখা মুখটা জয় কে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে । ভয় মিশ্রিত লজ্জাবনত চোখ বন্ধ মুখখানা জয় কে সত্যি একটা ধাক্কার মত দিয়েছিলো । রানীর কম্পমান অধর জোড়া জয়ের হৃদপিণ্ডের গতি কিছু সময়ের জন্য হলেও বাড়িয়ে দিয়েছিলো । আজ পর্যন্ত এতে মেয়ের চোখে চোখ রেখেছে , চুম্বন করেছে অনেকের ঠোঁটে , তাদের মাঝে এমন অনেক ছিলো , একবার দেখা হওয়ার পর কোনদিন আর দেখা হয়নি । কিন্তু একটা খুব পরিচিত মেয়ের কম্পন রত ঠোঁট দেখে যে মনে এমন তৃষ্ণা জাগবে সেটা জয়ের জানা ছিলো না । জয়ের ইচ্ছে হচ্ছিলো আরো কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে সেই ঠোঁট জোড়ার দিকে।
যখন চোখ তুলে একবার তাকিয়ে সাথে সাথে নামিয়ে ফেললো , তখন জয়ের মনে হয়েছিলো । ওই চোখ জোড়ায় লেখা আছে ওর সর্বনাশ । জয় জানে আজকের পর থেকে আর ও রানীর দিকে স্বাভাবিক ভাবে তাকাতে পারবে না । ও চাইলে পারবে না , কারন যখনি তাকাবে আজকের সকালের ছবি ভেসে উঠবে ওর চোখের সামনে । সেই সাথে প্রচণ্ড একটা কৌতূহল তৈরি হয়েছে , অনেক দিনের পরিচিত এই মেয়েটিকে নতুন করে চেনার । আজ মনে হয়েছে এতো দিনের পরিচয় অথচ এই মেয়েটিকে ও ভালো করে চেনেই না । রানীর এই অপরিচিত দিকটা এতদিন ওর কাছে ওদেখা রয়ে গিয়েছিলো ।
“ তু তু তু তুমি , এখানে এলে কখন” হড়বরিয়ে গালো রানী , যাকে নিয়ে এতক্ষণ কল্পনা করছিলো সে ভোজবাজীর মত হাজির হবে , রানী এটা কল্পনায় ও ভাবেনি ।
“ যখন তুই ওড়নার সাথে রোমান্স করছিলো , তখন” জয় পূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে নিজের স্বভাবজাত মিচকে হাসি টেনে বলে ।
রানী দ্রুত ওড়না থেকে হাত সরিয়ে নেয় , দ্রুত বুক ওঠানামা করছে ওর , ভাবছে জয় কিছু শুনে ফেললো নাকি , কিন্তু অতি দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো , বলল “ আমি দেখছিলাম ওড়না শুকিয়েছে নাকি, তোমার তো সব কিছুতেই রোমান্টিকতা চোখে পরে সারাক্ষণ এই তালেই থাকো কিনা ” কথা গুলো বলার সময় রানী নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখালো , যেন জয় ওর এক্সপ্রেশন না দেখে ফেলে ।
“ আমাকে দোষ দিচ্ছিস কেনো রে , তোর কাপড় শুকিয়েছে কিনা সেটা দেখার ভঙ্গিও যদি এমন রোমান্টিক হয় , তাতে আমার এই বেচারা মনের কি দোষ বল” কথা গুলো বলতে বলতে জয় আরো কিছুটা কাছে চলে আসে । ইচ্ছে রানীর মুখটা আরো একটু ভালো করে দেখা । আজ সকালে ভার্সিটি গেটে সেই লজ্জা রাঙ্গা অবনমিত মুখ খানা আর কম্পতি অধর জোড়া দেখার পর , জয় স্থির হয়ে থাকতে পারছে না । বার বার সুধু ওই মুখ দেখার বাহানা খুজছে ওর মন ।
এদিকে জয়ের “বেচারা মন” বলার ভঙ্গি রানীকে ফিক করে একটু হেসে ফেলতে বাধ্য করে । কোন রকমে সেই হাসি লুকিয়ে , জয়ের দিকে তাকায় , তাকিয়েই বোঝে ভুল করে ফেলেছে । কারন জয়ের চোখ জোড়া প্রস্তুত ছিলো , রানী তাকাতেই জয়ের চোখ রানীর চোখ দুটো কে কয়েদ করে ফেলে নিজেদের দৃষ্টিতে । কয়েক মুহূর্ত এভাবেই চলে যায় ।
পুব আকাশের মায়া ত্যাগ করতে না পেরে , অস্তমিত সূর্যের কিছু লালিমা এখনো মেঘেদের শরীরে নিজেদের মাখিয়ে রেখেছে । সন্ধার নিলচে আধারের সাথে সেই লালি মিলে মিশে অপার্থিব এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে , যার মাঝে দাড়িয়ে আছে রানী আর জয়। এতটা কাছে নয় যে একজন আরেকজনের নিশ্বাসের উষ্ণতা ছুঁতে পারবে , আবার এতটা দুরেও নয় যে একে অপরের চোখের ভাষা পড়তে পারবে না । কিন্তু ধিরে ধিরে খুব অল্প করে সেই দূরত্ব ঘুচে আসছিলো । দুজন দুজনের দিকে এগিয়ে আসছিলো যেন দুজন কে কোন অদৃশ্য শক্তি একে অপরের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো ।
সুধু নড়াচড়া করছিলো না ওদের দু জোড়া চোখ , দুজনের চোখের ভাষা একি , সেখানে রয়েছে কিছু চাওয়া । এক জোড়ায় রিয়েছে কিছু বলতে চাওয়ার ছটফটানি , অন্য জোড়ায় কিছু শুনতে চাওয়ার আকুলতা ।
“ রানী ……… মা তোর কাপড় তোলা হলো , এক কাপ চা ভালো হয়”
দ্রুত দুজন দুজনের চোখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় , রানী উঁচু স্বরে বলে ‘ এই তো আসছি বাবা” রানীর বুক ধরফর করছে তখনো । রানীর কাছে হঠাত মনে হয় কি করতে যাচ্ছিলো ও একটু আগে ।
তারপর জয়ের দিকে তাকায় , জয় তখনো দাড়িয়ে আছে , মুখে হাসি , যার অর্থ দাড়ায় , আমি আবার আসবো ,
ধিরে ধিরে জয় যেদিক থেকে এসেছিলো ওদিক দিয়েই চলে যায় ।
রানী তখনো ঘোরের মাঝেই রয়ে গেছে , দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস চলছে ওর । কি হতো যদি বাবা আর একটু পর ডাক দিতো । সত্যি সত্যি কি হতো …… ভাবতেই রানীর সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে ওঠে । আজ প্রথম জয়ের চোখে ও এমন কিছু দেখছে যা দেখার জন্য ও অনন্ত কাল ধরে অপেক্ষা করছে ।
কিন্তু সেই সাথে একটা ভয় ও আঁকড়ে ধরে ওকে । জয় খুব কেয়ার ফ্রি ছেলে , কোন কিছুই সিরিয়াসলি নেয় না । একটু আগে জয়ের দৃষ্টিতে যে আবেগ ও দেখছে , তার স্থায়িত্ব কতদিন হবে তা নিয়ে রানীর সন্দেহ রয়েছে ।
******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্কঃ ৪ (খ)
পরদিন রানী আর জান্নাত দুজনে অটো করে ভার্সিটি যাচ্ছে । যদিও জয়নাল চৌধুরীর নিজস্ব গাড়ি আছে । এবং জয়নাল মেয়ে বার বার বলেছে সেই গাড়ি নিয়ে ভার্সিটি যেতে । কিন্তু জান্নাত কিছুতেই রাজি হয়নি । জান্নাতের মতে , বাবার গাড়িতে করে রোজ ভার্সিটি আসা যাওয়া করলে আর যাই হোক সাংবাদিক হওয়া যাবে না । সাংবাদিক হতে হলে সাধারন জনগনের সাথে মিশতে হবে, আর কাঁচ ঘেরা গাড়ি মানুষ কে সাধারন জনগন থেকে আলাদা করে দেয় । তাই জান্নাত কিছুতেই রাজি হবে না । জান্নাতের দাবি যদি এতই চিন্তা হয় তাহলে যেন ওকে একটা বাইক কিনে দেয়া হয় ।
কিন্তু এতে আবার জয়নাল চৌধুরীর অরুচি । মেয়েকে সে কিছুতেই বাইক কিনে দেবে না । আর এই নিয়ে দুই বাপ বেটির মাঝে বেশ হুলুস্থুল লেগে যায় । জান্নাতের দাবি জয়নাল চৌধুরী ওর বাপ হলেও পুরুষ তন্ত্রের দব্জা ধারি ।
কিন্তু জয়নাল চৌধুরীও নিজের পজিশনে অনড় , ওনার ভাষ্য হচ্ছে যতই যত কিছু বলো , আমি আমার মেয়েকে বাইক কিনে দেবো না , শেষে এক্সিডেন্ট করে চেহারায় দাগ না হয়ে যায় । তখন বিয়ে হবে কি করে । জান্নাত বাপের এমন ধ্যান ধারনায় খুব ক্ষুব্ধ হলেও এই নিয়ে আর কথা বাড়ায় না । এর পর জয়নাল চৌধুরী রানীকে ধরে , কিন্তু রানীও বান্ধবির পক্ষেই নিজের রায় দেয়।
তবে বাইরে এসে যখন অটোর জন্য অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে হয় তখন রানী ইনিয়ে বিনিয়ে জান্নাত কে বোঝাতে চেষ্টা করে গাড়ি হলে মন্দ হয় না ।
ক্ষেপে যায় জান্নাত , বলে “ তুই ও শুরু করলি, তুই বুঝতে পারিস না , ওই কাঁচ ঘেরা এসি গাড়ি হচ্ছে আরাম দায়ক কয়েদ খানা, এখন সময় হচ্ছে স্বাধীনতার , সাধিন ভাবে উড়তে হবে , জীবন কে দেখতে হবে জানতে হবে”
“ আমার কাছে তো আরাম করে ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে খেতে ভার্সিটি যেতে পারাই আসল স্বাধীনতা” রানী কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বলে ।
“ তুই থাক তোর স্বাধীনতা নিয়ে” জান্নাত ক্ষেপে গিয়ে বলে ।
এর কিছুক্ষন পর ই ওরা একটি অটো পেয়ে যায় । দরদাম করে উঠে পরে দুজনে ।
কিছুদুর যাওয়ার পর হঠাত জান্নাত বলে ,
“ শুনেছি ভার্সিটি হলো দুনিয়ার সবচেয়ে মজার যায়গা , এখানে টিচার রা খুব একটা শাসন করে না , পড়লে পড় , না পড়লে না পড় এমন ভাব” জান্নাত এক্সাইট্মেন্টের সাথে রানী কে জিজ্ঞাস করে ।
“ উম আমিও তাই শুনেছি , দেখা যাক” রানীকে তেমন একটা এক্সাইটেড দেখা যায় না ,
“ হলে তো ভালই হয় , আমি ঠিক করেছি প্রথম দুই বছর সুধু মাস্তি হবে…… তুই কি বলিস ” জান্নাত অতি উৎসাহে কোলের উপর রাখা সাইড ব্যাগে থাপ্পড় মেরে বলে
“ আমি ভাই অত কিছু চিন্তা করিনি , দেখা যাক কি হয় , কারন জীবনে সুধু মাস্তি ই সব না , পড়াশুনা ও করতে হবে”
“ আরে তুই তো এখনি টিচারদের মত আচরন শুরু করলি” জান্নাত হাসতে হাসতে বলল
“ ধুর , কিসের টিচার , জাস্ট বললাম যে জীবনে মৌজ মাস্তির সাথে সাথে পড়াশুনা সমান তালে করতে হবে” রানী নিজের ডিফেন্সে বলল
“ সুধু মৌজ ফুর্তি ই না ভার্সিটি লাইফে একটা প্রেম অবশ্যই করতে হবে “ এই কথাটা জান্নাত নিজেকেই নিজে বলল বলে মনে হলো , কারন বলার পর আর রানীর দিকে তাকালো না , নিজের মাঝেই চিন্তায় হারিয়ে গেলো ।
“ ওই আমার প্রেমিকা , কই হারিয়ে গেলি , কাউকে খুজে পেলি নাকি ফুটপাতে” রানী জান্নাতের চোখের সামনে তুড়ি মেরে জিজ্ঞাস করলো ।
রানীর তুড়িতে চমকে ওঠে জান্নাত , তারপর বলে “ আরে না না , এখানে ফুটপাতে প্রেমিক পাবো কই” তারপর হঠাত কি যেন একটা মনে পরে গেলো , এমন ভাবে বলল “ আচ্ছা প্রেমিক থেকে মনে পরলো, আমার ভাই কাল সন্ধায় তোদের ছাদে কি করছিলো রে?”
এবার রানীর চমকে ওঠার পালা , তবে নিজেকে বেশ ভালো ভাবে সামলে নিয়ে কাঁধ ঝাঁকিয়ে , নিচের ঠোঁট উল্টে বলল “ কি জানি , তোর ভাই তো একটা বান্দর , কখন কি করে তার কি কোন ঠিক আছে”
জান্নাত মাথা ঝাঁকিয়ে রানীর কথায় শ্বায় দিলো , বলল “ সেটা তুই ঠিক বলেছিস , একটা বান্দর , কিন্তু নিজেকে ভাবে হিরো”
রানী একটা বড় করে নিঃশ্বাস নিলো জান্নাত কে লুকিয়ে , তারপর মনে মনে বলল ‘ ভালো বাচা বেঁচে গেছি’ । তারপর রানীর ঠোঁটে একটা ছোট্ট হাসির রেখা দেখা দিলো । মনে মনে বলল ‘ বান্দর হলেও সোনার বান্দর’
*******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 853
Threads: 0
Likes Received: 391 in 324 posts
Likes Given: 1,598
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
18-08-2025, 07:44 PM
(This post was last modified: 19-08-2025, 03:02 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কিছু সম্পরকঃ ৫
জয় আর রাজীব কিছু বন্ধুদের সাথে ভার্সিটির মাঠে ফুটবল খেলছিলো । জয় এক দলে আর রাজীব অন্য দলে । ভীষণ টক্কর হচ্ছে দুই দলে । জয় সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলে । আর রাজীব ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেব । তাউ দুই বন্ধুর মাঝেও ভীষণ টক্কর হচ্ছে । জয়ের কাজ হচ্ছে আক্রমণ করা , আর রাজীবের কাজ আক্রমণ ঠেকানো । তাই প্রায় ই দুজনের মাঝে ঠোকা ঠুকি হচ্ছে ।
এরি মাঝে একবার জয়ের পায়ে বল চলে এলো । এমন হাট্টা কাট্টা বডি নিয়েও জয় বেশ দ্রুত গতির । বেশ গতির সাথে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলো , তখনি জয়ের সামনে চলে আসে রাজীব । হার্ড ট্যাকল করে , জয় প্রায় দু ফুট উপরে উঠে আছড়ে পরে । কিন্তু ক্লিন ট্যাকল ছিলো । বল সীমানার বাইরে চলে যায় ।
“ ওই ব্যাটা , আমি যে তোর এক মাত্র বন্ধু সেইটা কি ভুলে গেলি রে বোকাচোদা” জয় মাটিতে পরে থেকেই চেঁচিয়ে ওঠে ।
রাজীব হাসিমুখে এগিয়ে যায় জয়ের দিকে , হাত ধরে টেনে তোলে , তারপর বলে “ শিশু বাচ্চার মত কাঁদিস না , খেলার মাঠ আর জুদ্ধের ময়দানে বন্ধুত্বরে কোন দাম নাই”
“ তোর একমাত্র বন্ধু আমি ভুলে যাসনে , আমি মরে গেলে কে তোকে মেয়ে পটায়ে দিবে কে , তোর তো সেই মুরুদ নাই , সারাজীবন ব্যাচেলর থাকবি আর নিজের হাতের উপর টর্চার করবি ” জয় নিজের শরীর থেকে ধুলো ঝারতে ঝারতে আর চুল ঠিক করতে করতে বলল , সব সময় ফিট থাকা চাই ওর । কারনে মাঠের অপর পাশেই মেয়দের হোস্টেল সেখান থেকে কিছু মেয়ে দেখছে ওকে ।
“ একটা ট্যাকলে আর কি মরে যাবি” রাজীব জয় কে একটি ধাক্কা দিয়ে বলে
“ পা তো যাবে , আর পা গেলে এই ল্যাংড়া রোমিও কে কন মেয়ে পাত্তা দিবে , আর মেয়েরা যদি পাত্তা না দেয় তাহলে তো শুকিয়ে মরে যাবো” জয় করুন চেহারা করে বলল
“ হইসে আর নাটক করতে হবে না, সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে চল” রাজীব এই বলে হাটা দেয় ।
জয় ও ওর পিছনে পিছনে আসে , তখন ওদের সাথে থাকা এক ছেলে বলে , “ তোরা জানিস , টুরিস্ট সোসাইটি নাকি পাঁচ দিনের ট্র্যাকিং ট্যুরের আয়জন করতেসে, ছেলে মেয়ে একসাথে”
সহপাঠীর কথা শুনে জয়ের কান খারা হয়ে যায় , বিশেষ করে ছেলে মেয়ে একসাথে এই কথা গুলো বিশেষ ভাবে আকৃষ্ট করে জয় কে । জয় থমকে দাড়ায় জিজ্ঞাস করে কবে হবে ট্যুর । ছেলেটি বলে শীতে নভেম্বর মাসের দিকে । জয়ের মন খারাপ হয়ে যায় , বলে “ এখন চলছে জুন ,এর মানে আরো চার মাআআআস” জয় হতাশ হয়ে বলে ।
“ কিন্তু রেজিস্ট্রেশন এখন থেকেই চলছে, মাত্র ২০০ জন নেবে” ছেলেটি আবারো
“ এতো আগে রেজিস্ট্রেশন কেনো” রাজীব অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে
“ আক্রন হিল ট্র্যাক হবে , তাই কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে” ছেলেটি উত্তর দিলো
“ ধুর কিসের বালের প্রস্তুতি ,সাথে মেয়ে থাকলে আমি এক দৌরে পাহাড়ে উঠতে রাজি আছি” জয় বিরক্ত হয়ে বলে
“ তোর হয়তো লাগবে না , কিন্তু যে মেয়রা যাবে ওরা তো আর সবাই এক্সপার্ট না” ছেলেটি বলল
“ মেয়েরা যাওয়ার জন্য বসে আছে তো? কয়টা মেয়ে যাবে , কয়জন মেয়ে বাসা থেকে পারমিশন পাবে ” রাজীব হেসে বলল
“ কেন পারমিশন পাবে না , প্রয়োজনে আমি সবার বাসায় গিয়ে গিয়ে পারমিশন আদায় করে দেবো” জয় তাৎক্ষনিক ভাবে বলে উঠলো , সবাই ওর কথায় হেসে উঠলো , তারপর জয় আবারো বলতে লাগলো “ আরে বাড়ির মানুষ বোঝে না কেনো , ছেলে মেয়ে যদি একসাথে না মেলামেশা করে , তাহলে দুনিয়া আগে বাড়বে কি করে , দুনিয়া আগে বাড়ানোর স্বার্থে সব মেয়েদের অভিবাবকদের উচিৎ তাদের মেয়েদের এমন ট্যুরে পাঠানো “
মাঠের সবাই জয়ের এমন বক্তৃতায় হাত তালি দিয়ে উঠলো । এসব কথা বলতে বলতে ওরা মাঠের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে । এখন জয় আর রাজীব একা । জয় একটা সিগারেট বের করে জ্বালিয়েছে , আর তখনি ওদের পরিচিত একটা ছেলে নাম বাপ্পি এগিয়ে এলো । বাপ্পি ওদের সামনে এসে কাচুমাচু করতে থাকে , ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা বলবে কিন্তু সাহস পাচ্ছে না।
“ কিরে কিছু বলবি?” রাজীব জিজ্ঞাস করে
“ হুম , একটা হেল্প দরকার , কিন্তু কি করে বলি” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু করে বলে
“ ভাই টাকার দরকার হলে জয়ের কাছে যা , এখানে সুবিধা হবে না” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ না টাকা না , আসলে গার্ল ফ্রেন্ড প্রব্লেম” বাপ্পি মিন্মিন করে বলে
“ তাহলে আরো আগে অইদিকে দেখো ,”বলে রাজীব জয় কে দেখিয়ে দেয়
জয় সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলে “ আমি কি তোর গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কিছু করেছি , তোর গার্ল ফ্রেন্ড কি এখন আমাকে ছাড়া বাচবে না , এমন কিছু “ জয় গম্ভির ভাবে বলার চেষ্টা করে , কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের হাসি ধরে রাখতে পারে না । সাথে সাথে রাজীব ও হেসে দেয় ।
এদিকে বাপ্পি হালকা রেগে যায় , “ বলে ভেবেছিলাম তোরা দুজন হেল্প করবি”
“ আরে ভাই সমসসার কথা তো বলতে হবে , তাহলে না বুঝবো তোর কি হেল্প দরকার” রাজীব হেসে বাপ্পির কাধে একটা হাত রাখে ।
“ আমার গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গেছে কয়েকদিন আগে , আগামিকাল ওর জন্মদিন তাই ভেবেছিলাম রাত ১২ টার পর উইশ করবো” বাপ্পি আবারো কাচুমাচু ভঙ্গিতে বলে
“ তো কর না আমাদের কাছে ভ্যাদাচ্ছিস কেনো?” জয় একটু রেগে গিয়েই বলে ।
“ কিন্তু করবো কি করে , আমার গার্ল ফ্রেন্ড তো হোস্টেলে থাকে” বাপ্পি অসহায় ভাবে বলল
“ বাপ মা লেখা পড়া করতে পাঠায় , হোস্টেলে রেখে পড়ায় আর ছেলে মেয়ে গুলো সুধু প্রেম করে বেড়ায়” বাপ্পির কথা শুনে রাজীব একটু রেগে গিয়ে বলল।
“ তো কি করবে তোর মত সাধু বাবা সেজে থাকবে নাকি” জয় সাথে সাথে প্রতিবাদ করে , তারপর বাপ্পির দিকে তাকিয়ে বলে “ আমরা কি করতে পারি , রাতের বেলা তোর গার্ল ফ্রেন্ড কে তুলে নিয়ে আসবো নাকি?”
“ আরে না না , সুধু আমাকে একটু দেয়াল টপকাতে সাহায্য করতে হবে” বাপ্পি জয়ের কথায় ভড়কে গিয়ে বলল
“ না না এসব এখানে হবে না , তুই অন্য জায়গায় দেখ” রাজীব সাথে সাথে বাপ্পিকে বলে দিলো
বাপ্পি রাজীবের ব্যাবহারে একটু হার্ট হলো , ঝাঁঝের সাথে বলল “ আরে এমন করে বলছিস কেনো , আমি ভিক্ষা চাইতে এসেছি যে অন্য জায়গায় দেখবো”
“ ভিক্ষা চাইলে দিয়ে দিতাম , কিন্তু যা চাইছিস সেটা আমরা করতে পারবো না , এখানে পড়াশুনা করতে এসেছি , প্রেম প্রেম খেলা খেলতে না” রাজীব ও রেগে গিয়ে বলল
এতক্ষণ জয় চুপ ছিলো , কি যেন ভাবছিলো মনে মনে তারপর হঠাত বলে উঠলো , “যা হয়ে যাবে তোর কাজ, রাত সারে এগারোটায় আমরা চলে আসবো”
সাথে সাথে রাজীব চেঁচিয়ে বলল “ ওই এইখানে আমরা পেলি কোথায় , এই কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয় , আর তোকেও করতে দিচ্ছি না , তুই বুঝতে পারছিস এর পরিনতি কি , সুধু মাত্র এই রোমান্টিক প্রেমের সিনেমা করতে গিয়ে আমাদের ভার্সিটি থেকে বহিস্কার করতে পারে”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পির ও হুঁশ হয় । এই বহিষ্কারের ব্যাপারটা হয়তো ওর মাথায় ছিলো না । তাই প্লান কেন্সেল করার কথা বিবেচনা করতে থাকে ও , কিন্তু বাধা দেয় জয় , “ কিচ্ছু হবে না , আমি থাকতে তোদের চিন্তা কি ? ফুল প্রুফ প্ল্যান বানাবো , কোন শালা কিচ্ছু করতে পারবে না”
“ তুই নায়ক সাজতে চাস তুই কর , আমি এসবে নাই , আর এসব সুধু সিনেমাতে নায়করা করতে পারে, বাস্তবে এসব সম্ভব না” রাজীব উঠে চলে যেতে শুরু করে , কিন্তু জয় ওকে থামিয়ে দেয় ,
“ এই দুনিয়ায় যত প্রেমিক পুরুষ আছে সবাই আমার জাত ভাই , আর ভাইয়ের জন্য আমি জীবন দিতে প্রস্তুত , আর সবচেয়ে বড় কথা আমার কাছে ফুল প্রুফ প্ল্যান আছে , কোন কিচ্ছু হবে না”
রাজীবের কথা শুনে বাপ্পি আশাহত হলেও জয়ের কথায় ওর আশার পুনজাগরন হয় । জয় কে বার বার ধন্যবাদ দিতে থাকে , এদিকে রাজীব এখনো সম্পূর্ণ ভাবে রাজি নয় । কারন ও ভালো করেই জানে জয়ের কোন প্ল্যান নেই । ও এই ঘটনা মাত্র শুনেছে , এতো দ্রুত প্ল্যান এলো কোথা হতে?তাছাড়া জয় জানে ই না বাপ্পির গার্ল ফ্রেন্ড কোন হস্টেলে থাকে ।
তাই জয়ের মিথ্যা ধরার জন্য জিজ্ঞাস করলো “ আচ্ছা আমার মাস্টার প্ল্যানার বলতো , ওর গার্ল ফ্রেন্ড কোন হোস্টেলে থাকে ?”
জয় কিছুটা বিপদে পরে গেলো , কিন্তু দ্রুত সামলে নিলো , বাপ্পির দিকে ইশারা করতেই , বাপ্পি দ্রুতো হোস্টেলের নাম বলে দিলো।
“ আমি কি তোকে জিজ্ঞাস করেছি?” ক্ষেপে গেলো রাজীব ।
“ তুই না এলে না আয় , আমারা দুই প্রেমিক ভাই যাবো” জয় ইচ্ছে করেই এ কথা বলে । কারন জয় যদি আসে তাহলে রাজীব অবশ্যই আসবে ।
****
ঘরে ফিরে নিজের খেলার জুতো জোড়া একটু দূরে ছুরে ফেলে রাজীব , তারপর ধপ করে বিছানায় বসে বিড়বিড় করে গালাগাল দিতে থাকে । এমন সময় রানীও বাহির থেকে এসে রাজীবের অবস্থা দেখে হা হা করে ওঠে । ধুলো ময়লা মাখা খেলার পোশাক পরে রাজীব কেনো সোফায় বসেছে সেই নিয়ে চেঁচামেচি শুরু করে দেয় ।
হঠাত রাজীবের খেয়াল হয় ও এখনো খেলার পোশাক পরে আছে , দ্রুত উঠে পরে রাজীব , তাপর সোফার কুশন হাত দিয়ে ঝাড়তে থাকে । “ আরে বে খেয়ালে বসে পরেছি , নে ছিলো না , এবারের জন্য মাফ করে দে” রাজীব রানী কে শান্ত করার জন্য বলে । কিন্তু রানীকে শান্ত করা সম্ভব হয় না , বরং আরো উঁচু হয় ওর গলা “ কোন খেয়ালে থাকিস ভাইয়া , গত সপ্তায় এই কভার গুলো লাগিয়েছি মাত্র”
“ আচ্ছা যা এবার আমি ধুয়ে দেবো” রাজীব ক্ষমা চাওয়ার স্বরে বলে । এবার কাজ হয় , তবে এখনো রানীর রাগ পুরোপুরি কমেনি, একটা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল “ যা তুই ফ্রেশ হ, আমি চা করে নিয়ে আসি” এই বলে চলে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেলো “ ফ্রেশ না , একেবারে গোসল করবি , গা থেকে ঘামের গন্ধে সারা ঘর গন্ধ হয়ে গেছে” এই বলে নাক চেপে ধরলো ।
রাজীব হাসতে হাসতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো , ও জানে ঘামের গন্ধ আছে , কিন্তু এতোটা নেই যে সারা ঘর ঘন্ধে ভরে যাবে , আর সেই গন্ধের জন্য নাক ধরতে হবে।
ফ্রেস হয়ে , রাজীব নিজের ঘরেই বসে রইলো , একটু পর রানী চায়ের কাপ নিয়ে ওর ঘরে ঢুকে পড়ার টেবিলে কাপ রাখলো । দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাগ এখনো কমেনি । তাই রাজীব আর কোন কথা বলল না , যতটা সম্ভব নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক দিলো, নইলে এই ব্যাপারে আবার লেকচার শুনতে হবে ।
বেশ কিছুক্ষন পর রানী কথা বলল “ বিড়বিড় করে কাকে গালাগাল দিচ্ছিলি?”
রাজীব মনে মনে জিভে কামর দেয় , রানী যে শুনে ফেলবে সেটা ভাবেনি ও , বেশ বিশ্রী রকমের গালি দিচ্ছিলো ও , “ তুই শুনে ফেলেছিস?” রাজীব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করে
“ কান যেহেতু আছে শুনতে তো হবেই , কি আর করা”
“ আর বলিস না আজকে মেজেজ খারাপ ছিলো” রাজীব নিজের দোষ ঢাকার জন্য বলে
“ যতই মেজেজ খারাপ থাক , ঘরের ভেতর এই বিশ্রী গালাগাল চলবে না” রানী হুকুমের স্বরে বলল
“ জো হুকুম মালিক” রাজীব বসে বসে কুর্নিশ করার ভান করলো
“ কেন কি হয়েছে মেজাজ খারাপ কেনো? আজকাল মারামারি ও শুরু করেছিস নাকি , খেলতে গিয়ে কারো সাথে মারামারি করেছিস” রানী গম্ভির স্বরে জিজ্ঞাস করলো
“ আরে না আমি কি বাচ্চা নাকি যে খেলতে গিয়ে মারামারি করবো” হেসে হেসে বলল রজিব , তারপর হঠাত খেয়াল হলো রানীর রাগ অন্য কারো উপরে উঠিয়ে দিলে কেমন হয় , না হলে আজকে জতবার সামনে পরবে শাসন করবে টিচার দের মত।
“ সব দোষ ওই জয়ের , ভার্সিটি লেখা পড়া করতে নয় সিনেমা করতে ভর্তি হয়েছে যেন” রাজীব বানোয়াট রাগ মিশিয়ে কথা গুলো বলল
“ কেনো কি করলো তোর বন্ধু” রানীর কণ্ঠ একটু কোমল হয়ে এলো, যদিও রাগ ধরে রাখার ব্যারথ চেষ্টা করছে ও । ওর চেহারার রাগের দাগ গুলো একটু একটু করে মিইয়ে যেতে শুরু করেছে , জয়ের নাম সামনে উচ্চারিত হতেই । একটু আগেও দেখা হয়েছে জয়ের সাথে । রানী যখন বেরুচ্ছিলো জয় তখন বাসায় ঢুকছিল । কথা হয়নি সুধু হাসি বিনিময় হয়েছে সবারত অগোচরে । আর রানীর নিঃশ্বাস ভারি হয়েছে ঘর্মাক্ত জয়ের টি সার্ট লেপ্টে থাকা মাসল গুলো দেখে । দুজনে যখন একে অপর কে ক্রস করছিলো তখন রানীর নাকে যে পুরুষালী ঘাম আর ধুলো বালির মিশ্রণে এক অপূর্ব সুবাস এসে লেগেছিলো তখন রানী না চাইতেও বুক ভরে একবার শ্বাস নিয়েছিলো । আর তাতেই মনে যেন পাখা গজিয়েছিলো , হাওয়ায় ভাসছিলো ওর মন । কিন্তু ঘরে ঢুকে রাজীবের কান্ড দেখে সেই ভালো লাগার অনুভূতি ওকে ছেড়ে জানালা গলে পালিয়েছে । আর তাতেই ওর রাগ ১০০ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে ।
“ সমস্ত পৃথিবীর প্রেমিক পুরুষ নাকি ওর জাত ভাই , আর এই ভাইদের জন্য ও যে কোন ঝুকি নিতে প্রস্তুত, আরে ভাই হিরো গিরি কর , কিন্তু তার তো একটা লিমিট থাকবে , নিজের ক্যারিয়ার বাজি রেখে এসব করার কি দরকার” এবার রাজীবের রাগের পারদ সত্যি সত্যি উঠে গেছে ।
“ আর একা ওর দোষ দিয়ে কি হবে , সবাই এসব করছে আজকাল , কারো ভবিষ্যৎ নিয়ে কোন চিন্তা নেই , একেক জন সিনেমার নায়ক নাইকা , কেউ বাপ মায়ের টাকা খরচ করে হোস্টেলে থেকে পড়াশুনার বদলে প্রেম করছে , আবার কেউ ঘরের খেয়ে প্রেমিকার মান ভাঙ্গানোর জন্য নিজের ক্যারিয়ার ধংস করতে চলেছে , আবার জয়ের মত কিছু গাধা , প্রতিবেশীর বিয়েতে নাচতে গিয়ে কোমর ভাঙ্গে ফেলার মত কাজ করছে”
রাজীবের কথা গুলো শুনে রানীর কান গরম হয়ে এলো । ও নিজেও যে এদের সঙ্গি সেটা ওর ভাই যদি জানতো তাহলে কি করত কে জানে । না এখনো প্রেমিকা হয়ে উঠতে পারেনি , কিন্তু হওয়ার জন্য এক পায়ে দাড়িয়ে আছে।
“ আচ্ছা ভাইয়া তুই চা খা আমি , ছাদের কাপড় তুলে আনি” বলে রানী কোন মতে রাজীবের সামনে থেকে চলে গেলো । ওর কাছে মনে হচ্ছিলো ও ধরা খেয়ে যাবে ।
দ্রুত সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদের উপরে উঠলো রানী । তারপর নিজের এমন বোকা চিন্তার জন্য নিজের উপর ই হাসি পেলো ওর । কিন্তু তখন ঠিক ই মনে হচ্ছিলো যে ওর কপালে একটু পর জাদু মন্ত্রের মত লেখা ফুটে উঠবে । ‘এ একজন প্রেমিকা , যে লেখাপড়া আর ক্যারিয়ারের চিন্তা চিবিয়ে খেয়ে প্রেম করতে চায়’
****
জয় যেন এই অপেক্ষায় ই ছিলো । রানী ছাদে উঠে আসতেই দ্রুত কাঠের তক্তা পেরিয়ে এই ছাদে চলে এলো ।
“তোর ভাই কোথায় রে?”
রানী চমকে ঘুরে তাকালো , এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার জয় এই কাজ করেছে । কিন্তু এখনো রানী অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। জয় এখন আগের মত ঘর্মাক্ত শরীরে নেই । সম্ভবত গোসল করে এসেছে , পারফিউম ব্যাবহার করেছে , চুল গুলো সুন্দর করে সেট করা । দারুন হ্যান্ডসাম লাগছে । রানী যতটা সম্ভব জয়ের নজর এড়িয়ে ভালো করে একবার দেখে নিলো , মনে মনে ভাবল ভাইয়া সত্যি ই বলেছে , সব সময় ফিট বাবু সেজে থাকে । রানীর ঠোঁটে আপনাতেই একটা হাসি চলে এলো ।
“নিচে চা খাচ্ছে , ডাকবো?” রানী জিজ্ঞাস করলো নিজের হাসি চেপে রেখে
“ নাহ , ওই খারুস কে ডেকে কোন লাভ নেই , ওর চেহারা দেখতে দেখতে আজকাল আমার মন ও পাথর হয়ে যাচ্ছে , এখন এমন একটা চেহারা দেখতে হবে যেন আমার মন মোমের মত নরম হয়ে গলে যায় একেবারে” জয় রানীর দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত পূর্ণ ভাবে হাসল ।
রানী এক মুহূর্তের জন্য নিজের চেহারা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো , তারপর নিজের অভিব্যাক্তি লুকিয়ে নিয়ে আবার জয়ের দিকে ঘুরলো , কোন কিছু বোঝে না এমন ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলল “ তা ওরকম একটা মুখ না খুজে এখানে কি করছো?”
“ দেখা হয়নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া , কবির মত যেন আমাকেও আফসোস করতে না হয় তাই খোঁজা নিজের ঘর থেকে দু পা ফেলেই শুরু করলাম” জয় রানীর চোখে চোখ রেখে বলে । কিন্তু রানী সেই চোখের দিকে তাকায় না । নিজের নখের দিকে তাকিয়ে বলল “ তা পেলে কিছু , নাকি সাত সমুদ্র তেরো নদি পারি দিতে হবে”
“ সেটা নির্ভর করবে সেই মুখের উপর , যদি দয়া করে দর্শন দেয় , চোখে রাখে চোখ” জয় একটু কাছে এগিয়ে আসে
“ চোখে চোখ রাখলে কি হবে” রানীর নিঃশ্বাস ঘন হয় , গালে গরম আঁচ লাগে
“ কথা হবে চোখে চোখে , মনের দূরত্ব ঘুচবে”
রানী দ্রুত কাপড় তোলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে , যেন জয় ওর মুখ দেখতে না পারে । আর জয় রেলিঙে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকায় ,
“ সখি তুমি মুখ তুলে চাইবে কবে ,
লজ্জা শরমের পর্দা খুলে ,
পিদিমের আলোয় তোমার কম্পিত ঠোঁট ,
কাজল টানা চোখ ,
সেখানে কার নাম লেখা ,
দেখবো আমি , যাবো হারিয়ে আপনাকে ভুলে”
রানী ওড়নার আড়ালে নিজের মুখ লুকায় , দাঁতে দাঁত চেপে হাসি থামায়। ও নিশ্চিত জয় এটা কারো কাছে শুনে মুখস্ত করেছে । তাপর জিজ্ঞাস করে “ আজকাল বিজনেস স্টাডিজ বিভাগে কি এসব পড়াচ্ছে নাকি?”
“মনে যখন ঢেউ ওঠে , তখন কথা গুলো কবিতা হয়ে যায়” জয় আকাশের দিক থেকে চোখ নামিয়ে বলে , মনে মনে নিজের ক্লাসের আঁতেল কবি কে ধন্যবাদ জানায় ।
“ ওহ তাই এটা কবিতা ছিলো?” অবাক হওয়ার ভান করে রানী
“ তোর কাছে কি মনে হয়?”
রানী জয়ের প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করে “ তা আমার প্রেমিক কবি এটা কোন ফরম্যাটে লেখা কবিতা?”
“ তোর উপর ত দেখছি এখনি টিচার এর আত্মা এসে ভর করেছে , শব্দ মালায় যখন আবেগ যুক্ত হয় , তখন সেটা কবিতা হয়ে যায় , কবিতার কোন ফরম্যাট দরকার পরে না , আবেগ কে কি ফরম্যাটে বাধা যায়” জয় হারার পাত্র নয় । বেশ সুন্দর করে হাজির জবাব দেয় ।
“ তাহলে কি সত্যি তুমি প্রেমিক দের লিডার হয়ে গেছো , আর প্রেমিক ব্রাদারহুড তৈরি করছো , সেখানে নাকি এক ভাই অন্য ভাইয়ের জন্য মরতেও প্রস্তুত” রানী ওড়নার আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে জিজ্ঞাস করলো
“ তোকে কে বলল”
“ভাইয়া”
“ তোর ভাইয়া কি বুঝবে , ওর মন তো পাথরের , প্রেমিকরা সব সময় মরেই থাকে , ওদের নতুন করে মরার কিছু নেই বুঝলি , আমার মনে হচ্ছে তোকে দ্রুত তোর ভাইয়ের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে , নইলে এই পৃথিবী আরো একটা পাথর মনের মানুষ পাবে”
“ সেটা কিভাবে?” রানী অবাক হওয়ার ভান করে
“ সময় এলেই বুঝবি” জয় রহস্যময় হাসি হেসে বলে
এতক্ষনে রানীর কাপড় তোলা শেষ হয়ে গেছে । “ আমি গেলাম , তুমি থাকলে থাকো”
“ আরো কিছু কাপড় ছিলো না তোদের বাড়িতে?” জয় হতাশ হয়ে জিজ্ঞাস করে ,
“ সেগুলো কি তুমি ধুয়ে দিতে?” রানী চোখ রাঙ্গিয়ে বলে
“ তুই বললে দিতাম , জাস্ট একটা আওয়াজ দিবি , তুই আর আমি পানি সাবান আর সাবানের ফ্যানা , কেমন হবে বলতো”
রানীর কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো জয়ের কথার অর্থ বুঝতে , যখন বুঝতে পারলো , লজ্জায় ওর মুখ লাল হয়ে গেলো , দ্রুত নিচের দিকে নেমে যেতে লাগলো ।
জয় ও হাসতে হাসতে নিজেদের ছাদের দিকে হাটা দিলো , বিড়বিড় করে মুখস্ত করা কবিতা আওড়াতে লাগলো । ওর ঠোঁটে একটা দু কান ব্রিস্তিত হাসি ।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(29-07-2025, 07:32 PM)বহুরূপী Wrote: আপনার লেখা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে যে আবেগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, এবং আত্মিক বন্ধন — তা খুব কম গল্পেই এত স্বচ্ছভাবে উঠে আসে। পাঠক হিসেবে পাবেন যদি না রোমান্টিক বলে, পরবর্তীতে রোমান্স থেকেই নড়েচড়ে বসে!❤️
শেষ বার আপনি যখন পড়েছেন , এর পর গল্প বেশ কিছুটা পথ পার করেছে । কিন্তু রোমান্সের কক্ষপথ থেকে এখনো বিচ্যুত হয়নি বলেই আমার ধারনা । কিন্তু সেই পথে আপনার দেখা তো আর পেলাম না জনাব।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 853
Threads: 0
Likes Received: 391 in 324 posts
Likes Given: 1,598
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(19-08-2025, 02:40 PM)Ari rox Wrote: অসাধারণ
ধন্যবাদ Ari rox
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
20-08-2025, 07:30 PM
(This post was last modified: 21-08-2025, 04:33 PM by gungchill. Edited 3 times in total. Edited 3 times in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ৫ (ক)
রাজীব ভার্সিটি চত্তরে বসে , ফ্লাক্সে চা বিক্রেতার কাছে চা খাচ্ছিলো । প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে , বেশ রোদ হয়েছে আজকে । রাজীব যেখানটায় বসেছে সেখানে একটা বড় গাছ থাকায় ভালো ছায়া হয়েছে । গরমে লেবু চায়ে চুমুক দিতে ভালই লাগছিলো। পাশ দিয়ে কয়েকজন পরিচিত ছেলে হেটে যাওয়ার সময় হাত তুলে অভিবাধন । রাজীব ও হাত তুলে উত্তর দিলো । না এই দুই বছরেও রাজিবেরে নতুন কোন বন্ধু তৈরি হয়নি । যাদের সাথে রাজীবের ওঠা বসা ওরা সবাই জয়ের বন্ধু । কিছু পুরোনো বন্ধু , কিছু ভার্সিটির নতুন বন্ধু । তাই রাজীব যখন একা থাকে ওদের সাথে তেমন একটা বসা হয় না । কিন্তু যখন জয়ের সাথে থাকে তখন এক ঝাক বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা হয় । তখন ওদের বন্ধু মনে হয় রাজীবের ।
মাঝে মাঝে রাজীব ভাবে , ও কি খুব বোরিং একটা ছেলে । তা না হলে ওর পরিচিত ছেলে গুলোও জয়ের অনুপুস্থিতে এমন অপরিচিতের মত হয়ে যায় , কেন ওদের সাথে আড্ডা জমে না । হয়তো ও বন্ধু বানাতে ভুলে গেছে । যখন ওরা অন্য শহরে ছিলো তখনো রাজীবের খুব ঘনিষ্ঠ কোন বন্ধু ছিলো না । তার অবশ্য ভালো কারন ছিলো । রাজীব ওদের সাথে তেমন একটা সময় কাটাতে পারতো না । ক্লাস শেষে সোজা বাড়ি চলে আসতে হতো ওর । আর সময় না দিলে বন্ধুত্ব হবে কি করে । অবশ্য এই নিয়ে রাজীবের তেমন আক্ষেপ ও নেই । চলেই তো যাচ্ছে দিন ।
রাজীব যখন চা প্রায় শেষ করে এনেছে , তখন ওর সামনে হঠাত এক জোড়া জিন্স পরা মেয়েলি পা এসে থমকে দাঁড়ালো। পায়ে লোফার পরা । রাজীব উপরের দিকে চাইলো , একটা সবুজ রঙের কুর্তি পরে আছে , চোখে কালো ফ্রেমের চশমা , চুল গুলো পোনি টেল করে বাধা , রোদ থেকে বাঁচার জন্য ওড়না মাথায় দিয়ে রেখেছে । কাধে ডাউস সাইজের একটা ব্যাগ , গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো । ভার্সিটিতে এরম দেখতে বহু মেয়ে দেখা যায় । কিন্তু রাজীবের সামনে এসে যে দাঁড়িয়েছে তাকে দেখে রাজীবের চোখ দুটো একটু উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । এই তীব্র গরমে ক্লান্ত শরীর ও চনমনে হয়ে উঠলো । সামনে দাঁড়ানো মেয়েটির নাম জান্নাত ।
“ এই রাজীব , জয় কে দেখছিস? কল করছি ধরছে না” জান্নাতের কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বিরক্ত ।
“ এই ভার্সিটিতে আমাকে তুই করে না বললে হয় না , আমি এখানে তোর সিনিয়র , বাড়িতে কি বলিস না বলিস সেটা অন্য ব্যাপার” কথা গুলো রাজীব শান্ত ভাবেই বলে । আসলে বয়সের বেবধান কম হওয়ায় , ওরা চারজন একে অপর কে তুই করেই বলতো । কিন্তু আজকাল রানী জয়কে তুমি করে বলছে ।
“ তাহলে কি বলে ডাকবো তোকে , রাজীব ভাইয়া”
ভাইয়া ডাকটা যদিও রাজীবের পছন্দ হলো না , তবুও কিছু বলল না , জিজ্ঞাস করলো “ তুই চা খাবি?” কিন্তু জান্নাত কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে চা খাওয়ার মুডে নেই
“ চা পরে , আগে বল গতকাল রাতে তোরা কোথায় গিয়েছিলি, তোদের ব্যাচ মেট বাপ্পি নামে একটা ছেলেকে বহিস্কার করা হয়ছে , আর আরো দুজন কে খোঁজার চেষ্টা চলছে এই খবর জানিস? ” এই কথা বলে জান্নাত তীক্ষ্ণ চোখে রাজীব কে কিছুক্ষন দেখলো তাপর বলল “ আমার মনে হচ্ছে বাকি দুইজন তুই আর জয়, তোদের কি আক্কেল জ্ঞান কিছু হবে না , বাসায় কি বলবি ঠিক করে রাখ”
রাজীব বাপ্পির বহিষ্কারের ঘটনা জানে না , ভয় পেয়ে গেলো ও , বাপ্পি যে ধরা পরেছিলো সেটা জানে , কিন্তু এর জন্য যে সরাসরি বহিস্কার করে দেবে এতটা ভাবেনি ও , চিন্তিত ভাবে বলল “ তুই খবর পেলি কি করে , এখনো তো আমরা কিছু জানলাম না”
“ শোন আমি আমার ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিরিয়াস , তোদের মত না , আর একজন সাংবাদিকের জন্য ভেতরের খবর জানা কোন ব্যাপার না” একটু অহংকার ফুটে উঠলো জান্নাতের চেহারায় , সেটা দেখে এই বিপদের সময় ও একটা হাঁফ স্মাইল দেখা দিলো রাজীবের ঠোঁটে ।
“ লেকচার আমাকে না দিয়ে তোর ভাই কে দে , সব জায়গায় হিরো হতে যায়” রাজীব ও জয়ের উপর রাগ করে বলল
“ জয় না হয় উল্লুক একটা , তুই সাথে গেলি কিভাবে ?” জান্নাত জিজ্ঞাস করে
“ আমি না গেলেও যেতো জয় , আমার যাওয়া না যাওয়া কোন ফেক্টর না” রাজীব নিজের হয়ে সাফাই গাইলো । গতকাল রাতে দশটার পর জয় রাজীবের বাড়ির সামনে বাইকে বসে কল দেয় । বলে আমি জাচ্ছি , তুই গেলে দুই মিনিটের মধ্যে নিচে আয় । রাজীবের একবার ইচ্ছা হয়েছিলো বলে দেয় ও যাবে না । কিন্তু প্রচণ্ড রাগে পড়ার টেবিলে একটা ঘুষি মেরে বেড়িয়ে এসেছিলো। দুজনে মিলে জয়ের বাইকে করে ভার্সিটি এরিয়ায় পৌঁছে দেখে বাপ্পি আগেই দাড়িয়ে আছে । হাতে ট্যডি বিয়ার ।
“ একজন হিরো অন্যজন বিশ্বস্ত কমেডিয়ান, এখন বুঝবে ঠ্যালা , ছোট আব্বুকে কি বলবি এখনি ঠিক করে নে”
রাজীব সত্যি সত্যি বেশ চিন্তিত হয়ে পরে । সমস্ত রাগ গিয়ে পরে জয়ের উপর । নিজের ঘড়ি দেখে রাজীব , বলে “ এখন জয়ের ক্লাস শেষ হওয়ার কথা , চল আমার সাথে”
রাজীব আর জান্নাত জয়ের যেখানে ক্লাস হওয়ার কথা সেদিকে পা বাড়ায় । কিন্তু কিছুদুর যেতেই ওরা জয় কে দেখতে পায় লাইব্রেরীর সামনে , রানীর সাথে কথা বলছে । দূর থেকেই জান্নাত ওদের ডাক দেয় । ডাক শুনে ওদের দিকে তাকাতেই রানী আর জয় একটু ভড়কে যায় । দ্রুত হেটে ওরা রাজীব আর জান্নাতের কাছে চলে আসে । রানীর চোখে মুখে একটা চোর চোর ভাব ফুটে উঠেছে , অবশ্য জয় কে দেখে কিছু বোঝা যাচ্ছে না ।
রানী সরাসরি নিজের ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে না । ওর মনে হচ্ছে ভাই কিছু একটা বুঝে যাবে । ধরে ফেলবে এতক্ষণ জয় আর ও কি নিয়ে আলোচনা করছিলো । কিন্তু রাজীব আর জান্নাত দুজনেই চিন্তিত থাকায় এসব ব্যাপার ওদের চোখে পরলো না ।
“ এই যে প্রেমিকদের লিডার , তোমার দলের যে একজন বহিস্কার হয়েছে সেই খবর রাখো?” রাজীব দাঁতে দাঁত পিষে বলল
“ কে কি হয়েছে , কার কথা বলছিস” একদম না বোঝার ভান করলো জয় । পাক্কা অভিনেতার মতন নিজের এক্সপ্রেশন লুকিয়ে রেখছে ।
আর এদিকে বহিস্কার শব্দ শুনেই রানীর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো । হাত দিয়ে ব্যাগ খামচে ধরলো ।
“আমার কাছে লুকিয়ে লাভ কি , কালকে যে কান্ডো করেছো , তোমাদের সেই বন্ধু আজকে বহিসাকার হয়েছে , সুধু এনাউন্স হওয়া বাকি , সাথে ওই মেয়েকেও হল থেকে বের করে দেয়া হবে , আর পলাতক দুই আসামিকে খোজা হচ্ছে” লাস্টের লাইন বলে জান্নাত জয় আর রাজীবের দিকে চাইলো ।
জয় রাজীবের দিকে কট্মট করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন , তাপর বলল “ তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না বোকাচ…” সাথে জান্নাত আর রানী থাকায় শব্দটা শেষ করলো না ।
“ এখানে অন্য কেউ নেই , সবাই আপনার মানুষ , লুকিয়ে লাভ কি” রাজীব হালকা ঝাঁজের সাথে বলল
“ আরে ধুর আমাদের খবর পাবে না , বাপ্পি কিছু বলবে না , ও হচ্ছে প্রেমিক পুরুষ , কলিজা আছে , সব দোষ নিজের উপইর নিয়ে নেবে” জয় হাসতে হাসতে বলল
“ ভার্সিটি যে ক্যামেরা দিয়ে ভরা সেটা জানিস “ জান্নাত জিজ্ঞাস করলো
“ সে জন্যই তো হুডি ব্যাবহার করেছি আর নাম্বার প্লেট ও ঢেকে রেখছিলাম কাদা দিয়ে” জয় হাসতে হাসতে বলল ।
“ লজ্জা করে না তোর ছোট বোনের সামনে এসব বলতে , কই তোকে দেখে আমারা শিখবো , না তুই এসব উল্টো পাল্টা কাজ করে বেড়াচ্ছিস” জান্নাত বিরক্ত হয়ে বলল , তাপর রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলল “ এখনো হয়তো সময় আছে , নিজের ভালো বুঝতে শিখ , ওর সাথে থাকলে তোর অবস্থাও এমন হবে”
“ এই তুই আমাদের মাঝে আসিস না , আমরা কি করবো সেটা আমরা বুঝবো, যেদিন থেকে চশমা নিয়েছিস নিজেকে খুব সিনিয়র ভাবতে শুরু করেছিস তুই ” জয় ক্ষেপে ওঠে
“ ঠিক আছে , আজকে আব্বু বুঝবে তুই ভবিষ্যতে কি করবি , আমি বাসায় গিয়ে বলছি” জান্নাত হুমকি দেয় ।
দুই ভাই বোনের মাঝে কিছুক্ষন এই ইয়ে তর্ক হয় । কথা বলতে বলতে ওরা চারজন একটু নিরিবিলি যায়গা দেখে বসে পরে । সবার চেহারায় চিন্তার ছাপ । জয় দুই হাত পেছনে ভর দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে , জান্নাত রাগে ফুঁসছে এখনো , রানী মাথা নিচু করে ঘাস ছিঁড়ছে । রাজীব মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।
সবাই টুকটাক কিছু বলছে , জান্নাত আর জয় মাঝে মাঝে লেগে যাচ্ছে , রানী ওদের থামাচ্ছে । সুধু কথা বলছে না রাজীব । বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে কোন শব্দ নেই ওর মুখে । তারপর হঠাত মাথা তুলল রাজীব । জয় তখন জান্নাতের সাথে তর্ক করছে এই বলে যে , ভার্সিটি লাইফে এমন দুই একটা ঘটনা না থাকলে সেটকে কি ভার্সিটি লাইফ বলে নাকি ?
“আচ্ছা বুঝলাম , কিন্তু এমন ঘটনা ঘটাতে গিয়ে যে একজনের স্টুডেন্ট লাইফ শেষ হয়ে গেলো তার কি হবে?” জয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো , না রাগ নেই ওর গলায় , তবে বেশ দৃঢ় আর ইন্টেস শোনালো । জয় রাজীবের গলার টোন শুনে ভালো করে একবার তাকালো । বাকি দুজন ও তাকালো , রাজীবের চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে গত রাতের ঘটনার জন্য বেশ অনুতপ্ত এবং নিজের উপর রাগান্বিত ।
জয় কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকলো , বন্ধুর গলার টোন সুবিধার মনে হচ্ছে না , তারপরও বলল “ আরে ওর কিচ্ছু হবে না , ওর বাবা বিশাল টাকা ওয়ালা কোন প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে যাবে”
“ ব্যাপারটা কি এতো সহজ? এই দুই আড়াই বছরের কি কোন দাম নেই?” রাজীব থমথমে গলায় বলল
কেউ কোন উত্তর দিলো না , রানী চোরা চোখে একবার ভাইয়ের দিকে তাকালো ।
“ আর ওই মেয়েটা , ওর বাবাও কি বিশাল ধনী?” রাজীব আবার জিজ্ঞাস করলো
“ গ্রামের মেয়ে , ঢাকায় কেউ নেই হোস্টেলে বহু কষ্টে সিট জোগাড় করেছে” এবার উত্তর দিলো জান্নাত
“ এই মেয়ের কি হবে?’
“ কি আর হবে বাপ্পিকে বিয়ে করে নেবে” জয় ক্যাজুয়াল ভাবে বলল
“ বাহ কি সহজ তাই না , যদি বাপ্পি কে বিয়েই করতে চাইতো , তাহলে ব্রেকাপ করলো কেনো? নিশ্চয়ই মেয়েটি চায় না বাপ্পির সাথে সম্পর্ক রাখতে” রাজীব জয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে , ওর দৃষ্টি বলে দিচ্ছে উত্তর চায় ও ।
জয় মনে মনে ভাবে খেপেছে আজকে শালা , যেদিন ক্ষেপে সেদিন আর রক্ষা নাই “ আরে ভাই এইসব ঠুকাঠুকি প্রেম ভালোসাবার মাঝে হয় , এসব কিছু না , এরকম কত ব্রেকাপ হয়ে আবার ঠিক হয়ে যায় , অসব কিছু না , আর তুই বাপ্পির দিকটা দেখ কত বড় রিক্স নিয়েছে ভালোবাসার জন্য” জয় রাজীব কে শান্ত করার জন্য বলে ।
“ ভালোবাসা , ভালোবাসা , এতো ভরসা কেনো তোদের , নিজের এই ভালোবাসার উপর, হয়তো বাপ্পির এই ভালোবাসার বিন্দু মাত্র দাম নেই ওই মেয়েটির কাছে আজকে , হয়তো বাপ্পি এমন কিছু করেছে যে ওই মেয়েটি চায় না বাপ্পির সাথে সম্পর্ক রাখতে । কিন্তু তোদের কে বোঝাবে এসব , তোদের এতো গর্ব এই ভালোবাসার উপর যে অন্য কিছু দেখতে দেয় না , গেলি নিজের ভালোবাসা জাহির করতে উল্টো মেয়েটি হল ছাড়া হলো , কি ঠিক করলো বাপ্পির ভালোবাসা?” রাজীব প্রায় এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলল ,
“ তুই বুঝবি না এসব , কত কিছু হয় প্রেমিক প্রেমিকার মাঝে , রাস্তায় মারামারি হয় , আরো কি কি হয় এখানে বলা যাবে না , কিন্তু ওদের ভালোবাসা আবার ওদের কাছে আনে” জয় ও এবার বেশ ইন্টেন্সিটির সাথে বলল , যেন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জিততে চায় ।
এদিকে জান্নাত দুই বন্ধুর দিকে বার বার তাকাচ্ছে , মনে হচ্ছে এখুনি ঝগড়া লেগে যাবে ওরা ।
“ তোদের এই ভালোবাসা তোদের এতো অন্ধ করে দেয় যে আশেপাশে যে আরো কেউ আছে যারা তোদের মত প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য মনে ভালোবাসা রাখে । সেটা তোরা দেখতে পাস না , ধরে নিলাম মেয়েটি বাপ্পির এই হিরোয়িক কাজ দেখে ওকে মাফ করে দিলো , আবার ভালোবাসার সাগরে হাবুডুবু খেতে লাগলো , কিন্তু ওই মেয়েটি কি নিজের পিতার ভালোবাসার দাম দিলো , যে পিতা গ্রাম থেকে বিশ্বাস করে মেয়েকে শহরে পাঠিয়েছে , তুই জানিস গ্রামে এখনো কত মেয়ের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায় । সেখানে এই মেয়ের প্রতি ওর বাবা মায়ের ভালোবাসা আর বিশ্বাস মেয়েকে উচ্চসিক্ষিত করতে সমাজের বিরুদ্ধাচরন করে এখানে পাঠিয়েছে । কিন্তু মেয়ে এখানে ভালোবাসা বাসি খেলায় মত্ত , কি দাম রইলো ওই বাবা মায়ের ভালোবাসার? ওই ভালোবাসা কি মহান নয় , নাকি সুধু তোদের মত রোমিও দের ভালোবাসার দাম আছে?”
জয় কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো ,কিন্তু জান্নাত ওকে থামিয়ে দিলো ।
রাজীব একটু বিরতি নিয়ে আবার বলতে শুরু করে “ তোরা কি মনে করিস এমনি এমনি এতো বড় হয়েছিস যে এখন একজন নারী অথবা পুরুষের ভালোবাসার জন্য সব কিছু নষ্ট করতে পারিস? না তোদের এই বড় হওয়ার পেছনে আছে কোন বাবা মায়ের অক্লান্ত পরিশ্রম ত্যাগ তিতক্ষা , যারা নিজের জন্য চিন্তা না করে তোদের জন্য চিন্তা করে । নিজে না খেয়ে তোদের খাওয়ায়, তাদের ওই সব ভালোবাসা নয় সুধু কর্তব্য , তাই না । এমন অনেক ভাই বোন আছে যারা নিজের ভাগেরটা সেক্রিফাইস করে যার মাঝে টেলেন্ট আছে তাকে আগে বারতে সাহায্য করে , তাদের ভালোবাসা কি মূল্যহীন ? জীবনের ২০-২২ বছর পর যার সাথে দেখা হলো , তার জন্য ওই সব ভালোবাসা পায়ে ঠেলে যা খুশি তাই করে বেরাবো , নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবব না”
নিজের কথা শেষ করে রাজীব উঠে চলে যায় । নিজের উপর আর প্রথাগত প্রেম ভালোবাসার উপর ভীষণ বিরক্ত । রাজীব একটু আগে বলা কথা গুলো সুধু জয় কে ই বলেনি , নিজেকেও বলছে । বার বার চোখের সামনে ওর আব্বুর মুখটা ভেসে উঠেছে , রানীর মুখ ভেসে উঠেছে । মনে হয়েছে এদের সামনে মুখ দেখাবে কি করে । ওর আব্বু যে ওদের সচ্ছল জীবনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে , তার প্রতিদান রাজীব কিভাবে দিচ্ছে , আর রানীর জন্য বড় ভাই হিশেবে কি উদাহরন রেখে যাচ্ছে ?
রাজীব প্রতিজ্ঞা করে আজ থেকে আর কোনদিন এমন কাজ ও করবে না , জয় কেও করতে দেবে না । হয়তো আরো একটু কঠোর হলে ও গতরাতে জয় কে আটকাতে পারতো । কিন্তু সেটা ও করেনি । কেমন বন্ধু ও , বন্ধুর জন্য সব করতে পারে এই ওজুহাতে কি বন্ধুর ক্ষতি করছে না ও? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে রাজীব । ওর আব্বুর মত বড় আব্বু আর বড় আম্মুও ওকে আদর স্নেহ করে , সব সময় পাশে থাকে , জয়ের কিছু হলে ওদের সামনেও কি রাজীব দাড়াতে পারবে ? কিছুটা জবাদিহি কি ওকেও করতে হবে না?
বাকি তিনজন এখনো চুপচাপ বসে আছে । জান্নাত মনে মনে কি যেন ভাবছে , রানী মাথা নিচু করে রেখেছে , ওকে দেখে মনে হচ্ছে রাজীব কথা গুলো ওকেই বলেছে । আর জয় বেশ বিরক্ত , একটা ঘাস তুলে তার ডগা চিবুচ্ছে ।
কিছুক্ষন পর জয় বলে উঠলো “ ওকে বাংলা সিরিয়ালের বাবার চরিত্র দেয়া উচিৎ”
“ শাট আপ জয়” পাশ থেকে জান্নাত বলে উঠলো ।
****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 853
Threads: 0
Likes Received: 391 in 324 posts
Likes Given: 1,598
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
(21-08-2025, 02:11 AM)Ari rox Wrote: অনেক সুন্দর হচ্ছে
thanks
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পরকঃ ৫ (খ)
সন্ধার পর রানী পড়ার টেবিলে বসে আছে , সামনে বই খোলা । কিন্তু পড়ায় মন বসছে না । আজকে দুপুরে ক্যাম্পাসে বসে রাজীবের বলা কথা গুলো কানে বাজছে । রাজীব যখন কথা গুলো বলছিলো তখন রানীর কাছে মনে হচ্ছিলো ওর ভাই কথা গুলো ওকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে । বিশেষ করে ওই কথা গুলো যেখানে রাজীব বলছিলো , একজন ছেলে অথবা মেয়ে , নিজদের ভালোবাসা নিয়ে এতো মত্ত থাকে যে , নিজের আশেপাশে থাকা আপনজনদের কথা বেমালুম ভুলে যায় । যাদের ভালোবাসা, ত্যাগ আর সমর্থনের কারনে আজ ওরা এই অবস্থায় এসেছে ।
ভুলে যায় ওই মানুষগুলোর ও যে কিছু স্বপ্ন থাকে এদের নিয়ে। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেখার জন্যই নিজদের কথা না ভেবে সাপোর্ট করে যায় । কিন্তু প্রেমিক জুগল কি করে , নিজেদের আবেগে ভেসে গিয়ে এমন সব কাজ করে ,যা তাদের ওই কাছের মানুষ গুলোর ভালোবাসা আর ত্যাগ কে চরম অপমান করা হয় ।
রানী ভাবে , ও নিজেও এমন একজন যার আজকের অবস্থানে আসার পেছনে দুজন মানুষের চরম ত্যাগ আর ভালোবাসা রয়েছে। একজন পিতা যে কিনা স্ত্রী বিয়োগের পর নিজের সুখের কথা একবার ও না ভেবে দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছে । যেন তার ছেলে মেয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করতে পারে । নিজদের স্বপ্ন পুরুনে যেন বাধা না আসে আর্থিক কারনে । রানী জানে , ওর আব্বু মনে মনে কতটা হতাশা গ্রস্থ , শিক্ষকতা ছেড়ে তাকে কোচিং বিজনেস চালু করতে হয়েছে । শিক্ষকতা ছিলো ওনার প্যাশন , কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে , নীরবে নিজের প্যাশনের গলা টিপে ধরেছেন।
তা ছাড়া উনি চাইলেই আরেকটা বিয়ে করতে পারতেন । কিন্তু করেননি , জীবন কাটিয়েছেন একেকি , এই একাকি জীবনের কষ্ট রানী আজকাল কিছুটা বুঝতে শিখেছে । তার পরিবারের লোকজন বন্ধু বান্ধব সবাই বলেছে বিয়ে করতে , কিন্তু বিগত স্ত্রীর ভালোবাসায় যতটা না উনি নিজেকে বিরত রেখছে , তার চেয়ে বেশি ভেবছেন সন্তানদের কথা । কোন রিক্স নিতে চায়নি , সৎ মা ভালো আচরণ করবে তার ১০০ ভাগ গেরান্টি কেউ দিতে পারে না । হ্যা রাজীব আর রানী একজন মায়ের অভাবে অনেক স্ট্রাগল করেছে , কিন্তু ওই অভাব থেকে শক্তি ও পেয়েছে নিজদের আজকের পজিশনে আনতে । আর মাত্র কয়েকটা বছর , তারপর ই ওরা নিজদের লক্ষ্যে , প্রায় পৌঁছে যাবে ।
আর একজন রাজীব , এমন ভাই দুনিয়ায় আর একটা খুজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে রানীর । অনেক দেখছে রানী কিন্তু এমন দেখনি , যেই ওদের বন্ডিং দেখে অবাক হয়ে যায় । ভালো মন্দ সব সময় পাশে পেয়েছে রাজীব কে । কোনদিন রাজীবের চোখে মুখে এমন ছায়াও দেখেনি , যা দেখে মনে হবে রাজীব ওর উপর বিরক্ত হয়েছে । কৈশোরের আঁকাবাঁকা পথ এই ভাইয়ের কাঁধে ভর করে পার করেছে রানী । তখনকার রানী আজকের রানী ছিলো না , আজকের রানী অনেক কিছু বোঝে , শান্ত থাকে সব পরস্থিতিতে । কিন্তু তখনকার রানী ছিলো সম্পূর্ণ অন্য রকম । খিটখিটে মেজাজ , এই ভালো লাগছে , তো কিছুক্ষন পর মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব কিছু খারাপ । রানী কিন্তু সবার সামনে এমন করতো না , ওর এই সব তাল বাহানা সুধু ঘরের ভেতর ই চলতো। বাইরে সব সময় লাজুক , আর বাইরে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারতো না বলেই হয়তো ঘরের ভেতর তা বহুগুণে প্রকাশ পেতো । আর রানীর এই অত্যাচার সহ্য করতো প্রায় পুরোটাই একা রাজীব । কারন বাবাকে তেমন একটা পেতো না রানী।
রাজীব নিজেও কৈশোর পার করছিলো তখন , অথচ নির্বিবাদে সহ্য করেছে এসব । কোনদিন গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাকুক একটা ধমক ও দেয়নি । রানী মাঝে মাঝে এই কারনেও ক্ষেপে উঠত , ভাবতো রাজীব এসব ভাব দেখায় । কারন ওকে দেখে মনেই হতো না , রানীর চেয়ে মাত্র দু বছরের বড় । রানীর বয়স তখন ছিলো ১৩-১৪ আর রাজীব ১৫-১৬ । অথচ রাজীবের মাঝে একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ধিরস্থিরতা ছিলো ।
তা ছাড়া রাজীব একজন কিশোর বয়সি ছেলের মত স্কু*ল বা কলেজ শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় সময় ব্যয় করতো না । সোজা বাসায় চলে আসতো । কারন ওই সময় বাসায় রানী একা থাকতো , কোন কাজের মহিলার হাতে রানীকে একা ছাড়তে ভরসা করতো না । তাই ওর বন্ধু বান্ধব ও তেমন ছিলো না । বড় হওয়ার পর ও রাজীব নিজের পছন্দের বোটানিক্যাল ফটোগ্রাফি থেকে সরে এসে বিজনেস স্টাডিজ এ ভর্তি হয়েছে । যেন পরিবার কে আর্থিক সাহায্য করতে পারে । পাশ করার পরপর ই যেন কিছু একটা করতে পারে । আজো রানী লক্ষ্য করেছে রাজীব নিজের কর্মের জন্য নিজের উপর কতটা বিরক্ত আর রাগান্বিত ।
রানী ভাবে , ও জয়কে পছন্দ করে , জয়ের সাথে সময় কাটাতে ওর ভালো লাগে । কিন্তু এটা তো ভালোবাসা নয় , সুধুই আকর্ষণ। হয়তো এটা বয়সের দোষ । হয়তো এই বয়সের কারনে জয়ের হ্যান্ডসাম সারিরক গঠন , আকর্ষণীয় চেহারা , আর কেয়ার ফ্রি চলাফেরার প্রতি ও আকর্ষিত হচ্ছে । হয়তো দেখা যাবে কয়েক বছর পর এসব আর ভালো লাগবে না ওর কাছে । তখন সমস্যার সৃষ্টি হবে , সমস্যা যে সুধু ওদের দুজনের মাঝে এমন নয় । দুটো পরিবারের মাঝেও তৈরি হতে পারে । তা ছাড়া ওরাও যদি আবেগে এমন কোন ভুল করে বসে যা ওদের দুজনের ভবিষ্যৎ কে অন্যরকম করে দেবে ।
রানীর মনে প্রশ্ন জাগে , এই ঠুনকো আকর্ষণের জন্য নিজের সময় নষ্ট করা কি রানীর মত মেয়ে এফরড করতে পারবে? যার পেছনে রয়েছে দুজন মানুষের মানসিক আর শারীরিক ইনভেস্টমেন্ট ।
না রানী এই সম্ভাব্য সাময়িক আকর্ষণের কারনে , এ দুজনের , ত্যাগ আর ভালোবাসার অপমান ও করতে পারে না ।
রানীর হাত মুঠো বদ্ধ হয়ে আসে , রানী প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় আজ থেকে রানী নিজের সম্পূর্ণ ফোকাস নিজের ভবিষ্যতের উপর করবে । সামান্য আবাগে নিজেকে ভাসিয়ে দিবে না । কষ্ট হবে রানীর , কিন্তু এটুকু কষ্ট করতে রানী প্রস্তুত । যারা ওকে এতো ভালোবাসা দিয়েছে তাদের জন্য এটুকু কষ্ট করতে রানী পিছপা হবে না ।
*****
জয় এলাকার মোড়ে নিজের দুজন পুরোনো বন্ধুর সাথে বসে আছে । এরা দুজন ভার্সিটিতে পড়ে না । যদিও জয় ওদের সাথে বসে আছে , কিন্তু ওর সম্পূর্ণ মন এদিকে নেই । হাতের সিগারেট হাতেই পুরে যাচ্ছে । আজ রাজীবের চোখে যা দেখতে পেয়েছে , রাজীবের আচরণে যা বুঝতে পেরেছে , তা ওর বন্ধুত্বের প্রতি বিশ্বাস কে কাঁপিয়ে দিয়েছে । হ্যা রাজীবের চোখে মুখে অভিবাক্তিতে আজ জয় রিগ্রেট দেখতে পেয়েছে । সেই রিগ্রেট কিসের জন্য সেটাও জয় জানে । ওর সাথে বন্ধুত্বের জন্য ।
জয় কোনদিন ভাবেনি এমন দিন আসবে যে ওরা দুজন একে অপরের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য অনুতাপ করবে । ব্যাপারটা কিছুতেই হজম হচ্ছে না জয়ের । ও বুঝতেই পারছে না কেনো এমন হলো । হ্যা একটা সমস্যা হয়েছে , সেটা ওরা দুজনে মিলে ফেস করবে , যেমনটা অতীতে করে এসেছে । তাই বলে এমন করবে রাজীব । সেই রাজীব যে কিনা জয় পানিতে ঝাপ দিলে , চোখ বন্ধ করে নিজেও ঝাপ দিতো । বিপদের কথা পরে ভাবতো , আগে বন্ধুর কথা ভাবতো ।
রাজীব যদি আজকে ওকে ধমকাতো , মারতো তাতেও জয়ের এতো মন খারাপ হতো না । যতটা রাজীবের হতাশা দেখে লেগেছে।
জয় মনে মনে ভাবে , আমি কি এতই সেলফিস যে রাজীবের মত বন্ধুকে বিপদে ফেলে , লেজ গুটিয়ে বসে থাকবো? আমার পক্ষে যতটুকু সম্ভব আমি করবো , কিন্তু রাজীবের কিছু আমি হতে দেবো না । এটা কি রাজীব এতো দিনেও বুঝতে পারেনি? তাহলে কিসের বন্ধুত্ব , বন্ধুত্ব কি আদৌ ছিলো ওদের মাঝে ।
নাকি এটা সময়ের কাজ ,সময় তো মানুষ কে পরিবর্তন করে দেয় । হয়তো সময় রাজীব কে সেলফিস বানিয়ে দিয়েছে । নিজের উপর বিপদ দেখে ঘাবড়ে গেছে , ওর আসল চেহারা বেড়িয়ে এসেছে ।
এমন সময় হাতের সিগারেট শেষ হয়ে আঙুলে ছ্যাকা লাগে জয়ের । ব্যাথায় আর রাগে জয় সিগারেটের পোড়া ফিন্টার দূরে ছুরে মারে , আর বিশ্রী একটা গালি দেয় ।
জয়ের বন্ধুরা সেটা দেখে একটু অবাক হয় , জিজ্ঞাস করে “ কি ব্যাপার আজকে কি হইসে তোর বন্ধু ? চুপচাপ বইসা আছিস , আবার ক্ষেপেও আছিস মনে হচ্ছে”
“ বন্ধু” এই বলে জয় হাসে , তারপর বলে “ এই বাইঞ্চোদ শব্দটা আর আমার সামনে বলবি না , শালা সেলফিস , ওই শালা যে একটা চুতিয়া সেটা আমি ছোট বেলা থেকেই জানতাম , সব সময় ওজুহাতের পেছনে লুকায় , শালা গান্ডু”
জয়ের দুই বন্ধু একজন অন্য জনের দিকে চাওয়া চায়ি করে । কিছুই বুঝতে পারে না ।
এদিকে জয় বাইকে উঠতে যাবে , তখন ওর মোবালে কল আসে , স্ক্রিনে নাম দেখে বাপ্পি । জয় কল রিসিভ করে , ওপাশ বাপ্পি বলে ওঠে , “ ভাই আমাকে বহিস্কার করেছে , আর নাজিয়া কে হল থেকে বের করে দিয়েছে।“ বাপ্পির কণ্ঠ শুনে বোঝা যায় বাপ্পি কাঁদছে ।
জয় কিছু বলল না , বাপ্পি ই বলল “ নাজিয়ার জীবনটা আমি নষ্ট করে দিলাম রে ভাই , ওর বাবা এসে ওকে নিয়ে গেছে”
এবার জয় কথা বলল “ তুই তো ওকে ভালোবাসিস , যদি সত্যি ভালোবাসিস ওরে বিয়ে করে নে , নিজের ভালোবাসার মানুষ কে পেলে জীবনে আর কি লাগে , এসব জীবন নষ্ট ফস্ট কিছু না”
“ নারে ভাই , খুব কান্নাকাটি করলো , আমি বিয়ের কথা বলেছিলাম , ও বলছে আমার মত কেয়ারলেস সেলফিস ছেলেকে মরে গেলেও বিয়ে করবে না , ওর মনে হয় আর লেখাপড়া করা হলো না” বাপ্পি এবার সত্যি সত্যি কান্নায় ভেঙ্গে পরে । জয় নানা ভাবে ওকে সাহস দেয় , বলে “ তোরে ভালোবাসতো না , হুদাই টাইম পাস্ট করেছে, যদি ভালোবাসতো তাহলে এই কাজের পেছনে তোর ভালোবাসা দেখতো, সুধু নিজের চিন্তা করতো না “
এক পর্যায়ে বাপ্পি একটু নর্মাল হয় , তারপর বলে “ তোদের দুইজন কেও মনে হয় সমসসায় ফেললাম”
“ আরে ধুর বাল , তুই কি আমাকে গান্ডু ভাবিস , যে এটাকে সমস্যা ভাব্বো , আমি যখন বন্ধুত্ব করি তখন সত্যিকারের বন্ধুত্ব করি , তোর সাহায্য লাগলে আমি আরো সাহায্য করবো , নাজিয়া যদি রাজি হয় প্রয়োজনে ওকে ভাগিয়ে আনতেও সাহায্য করবো , সবার মত আমি সেলফিস না বুঝলি , বন্ধুত্তের মানে বুঝি” জয় কথা গুলো যদিও বাপ্পিকে বলল , আসলে ও রাজীব কেই উদ্দেশ্য করে বলেছে । রাগে কাঁপছে জয় ।
“ নাহ বন্ধু তার আর মনে হয় দরকার হবে না , ভালো থাকিস” এই বলে বাপ্পি ফোন রেখে দেয় ।
জয় রাগে নিজের ফোন একবার আছার দিতে গিয়েও দেয় না । ওর রাগের কারন রাজীবের একটা কথা সত্যি হয়েছে । বাপ্পির গার্ল ফ্রেন্ড সত্যি সত্যি ওকে বিয়ে করতে চায় না । আর মেয়েটির লেখা পড়া বন্ধ হয়ে গেছে । জয়ের রাগ এতে করে আরো বারে , নিজের উপর নয় , রাজীবের উপর । কারনের জয়ের মতে রাজীবের কথা সত্য হওয়া মানে , ওর পরাজয় । আর জয় পরাজয় স্বীকার করার জন্য জন্ম নেয়নি । তাও রাজীবের মত একটা গান্ডুর কাছে ।
“ শালা , মিডেল ক্লাস মাইন্ডসেট , একদম সেলফিস , কত বড় বড় কথা বলতো ,সব সময় বন্ধুত্বের দায়িত্ব পালন করবে কিন্তু যেই না বিপদ দেখলো অমনি নিজের আসল চেহারা দেখিয়ে দিলো” রাগে গজ গজ করতে করতে বলল জয় । “শালা এতদিন অপাত্রে নিজের বন্ধুত্ব খরচ করেছি”
জয়ের এসব আবোলতাবোল কথাবার্তায় ওর দুই ফ্রেন্ড অবাক হচ্ছে খুব । তবে কোন বন্ধুর সাথে যে ঝগড়া হয়েছে সেটা বুঝতে পারছে । ওরা দুইজন মনে মনে হাসছে আর বলছে , আমরা তো গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকাপ হলেও এতো কান্নাকাটি করি না ।
“ শালা এই জয় গে নাতো” একজন অন্যজনেরে কানে বলে । তারপর দুজনেই হেসে ওঠে নীরবে ।
এদিকে জয় বলেই চলছে , “ সব সময় মহিলা মানুষের মত কোন কিছুর পেছনে লুকায়” তারপর অনেকটা মেয়েলি গলায় বলে “আমার মা নেই , আমার বাবা অসুস্থ , আমরা বড়োলোক না , আমার ছোট বোনের কি হবে” তারপর আবার নিজের আসল গলার শ্বরে বলে “ ধ্যাত শালা , তুই যে একটা ভিতুর ডিম সেইটা বল”
আরো কিছুক্ষন নিজের মনের রাগ ঝেড়ে কিছুটা হালকা হয়ে , নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
কিছু সম্পর্ক ঃ ৫ (গ)
সেই একি রাতে জান্নাত রাতের খাওয়ার পর নিজের ঘরে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে । বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে ওকে । আজকে জারনালিজম ক্লাবে এই ঘটনা নিয়েই আলোচনা হচ্ছিলো । ওদের যে “বিশ্ববিদ্যালয়” নামের সাপ্তাহিক পত্রিকা আছে । ওটার সম্পাদক রাতুল ভাই বলছে । বাকি দুজন ও নাকি ধরা পরে যাবে । এসব ব্যাপার ভার্সিটি বেশ কঠোর । জান্নাত ভেবে পাচ্ছে না কি করবে । একবার ভাবছে আব্বু আম্মুর সাথে এই নিয়ে কথা বলবে । আবার সেই চিন্তা নাকচ করে দেয় । জয় জানতে পারলে তুল্কালাম করবে ।
জান্নাত নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে খুব হতাশ , একটুও অনুতপ্ত নয় জয় । অপরদিকে রাজীব কে বেশ অনুতপ্ত মনে হচ্ছে । দুজনে কত ভালো বন্ধু , অথচ দুজনে কত তফাৎ । জয় রাজীবের মত ছেলের সাথে থেকেও আজো পর্যন্ত ম্যাচিওর হয়ে উঠতে পারেনি ।
আরো একটা ভয় জান্নাতের হচ্ছে । আজ জয় আর রাজীবের আচরণে ওর কাছে মনে হচ্ছে দুজনের সম্পর্কের ফাটল ধরতে পারে । জান্নাত আজ দুপুরে রাগান্বিত ভাবে রাজীব কে বলেছিলো জয়ের সাথে আর না চলতে । আসলে সেটা রাগের মাথায় বলেছিলো ও । দুই পরিবারের মাঝে যে বন্ধুত্তরের সম্পর্ক সেটা নষ্ট হোক জান্নাত তা কোনদিন চায় না ।
দুই পরিবারের মাঝে কোন ঝামেলা দেখা দিলে , ওর আব্বু আর ছোট আব্বু দুজনেই ভীষণ কষ্ট পাবে । এই দুইজন মানুষ সেই ছোট বেলা থেকে আজো পর্যন্ত বুহু ঝর তুফান পার করে নিজেদের বন্ধুত্ব অটুট রেখছেন । এখনো দুজন এক সাথে হলে তাদের বন্ধুত্ব যে কতটা গভির সেটা টের পাওয়া যায় । এ দুজনের ছেলে , যারাও সেই ছোট বেলা থেকে বন্ধু , তাদের মাঝে সম্পর্কের টানপোড়ান দুই পরিবারের দুই পরজন্মের সম্পর্কের অবনতি করতে পারে ।
জান্নাত চেয়েছিলো রাজীবের সাথে একবার কথা বলতে , সন্ধার দিকে একবার গিয়েছিলো । কিন্তু রানী বলল সেই বিকেল থেকে ঘরের মধ্যে দরজা দিয়ে বসে আছে । রাজীব ছেলেটার আজকে দুপুরে বলা কিছু কথা সত্যি সত্যি জান্নতের মন ছুয়ে গেছে । ছেলেটার বয়সের তুলনায় চিন্তা ভাবনায় বেশ পরিপক্ব । যে বয়সে বেশিরভাগ ছেলে জয়ের মত লাফঙ্গা গিরি করে বেড়ায় সেই বয়সে রাজীব বেশ ধির স্থির । কথা কম বলে , আচার আচরণেও বেশ নম্র । জান্নাতের ভার্সিটির ভর্তি পরিক্ষা দিতে যাওয়ার দিনের কথা মনে পরে যায় । নিজেকে কি দারুন ভাবেই না সংযত রেখছিলো রাজীব । ওর আচরণে আর কোনদিন সেই দিনের ইংগিত ছিলো না ।
সবাই বলে রাজীব খুব বোরিং ছেলে । জান্নাত এ কথায় এক মত নয় । যতই দিন যাচ্ছে জান্নাত রাজীব কে দেখে আরো বেশি মুগ্ধ হচ্ছে । জান্নাত খেয়াল করেছে , ওদের দুজনে দেখা হলে রাজীবের চোখেও এক অধভুত চমক দেখা যায় । খুব অল্প সময়ের জন্য, কিন্তু জান্নাতের চোখে ব্যাপারটা ধরা পড়েছে । মনে মনে খুশি হয়েছে জান্নাত , আবার কখনো রাগ আর অভিমান ও হয়েছে । নিজের মাঝে এতো লুকিয়ে রাখার কি আছে? একবার সাহস করে বলে তো দেখ ।
কিন্তু আজকে দুপুরে যে লেকচার দিয়েছে , মনে হয় না সহসাই রাজীব মনের কথা মুখে আনবে । আবার নাও আনতে পারে । জান্নাত মনে মনে ভাবে ।
*****
রাতের খাবার শেষে রানী ওর আব্বুকে এক কাপ দুধ দিতে যায় । প্রতিদিন শোয়ার সময় আজকাল রহিম এটা করছে। দিন দিন শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে । এমনিতে হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকায় দুধ খাওয়া রহিমের জন্য সুবিধা জনক নয় । তারপর ও শরীরের দুর্বলতার কথা চিন্তা করে , সকালে দুটো কুসুম ছাড়া ডিম আর রাতে শোয়ার সময় এক কাপ দুধ খেতে বলেছে ডাক্তার । তবে সবচেয়ে জরুরি ভিত্তিতে যে কাজতি করতে বলেছে সেটা হচ্ছে বেড রেস্ট । এই কাজটাই রহিম করছে না ।
রানী এই নিয়ে ওর বড় আব্বু জয়নালের কাছে নালিশ করেছিলো , জয়নাল আর রহিমের মাঝে এই নিয়ে বেশ কথা কাটাকাটি হয়ে গেছে । কিন্তু রহিম কে রাজি করাতে পারেন নি । রহিমের এক কথা রাজীব যতদিন না কিছু করছে ততদিন ওর রেস্ট নেই। আর কাজ করেলই নাকি রহিম ভালো থাকবে । নইলে এমনিতেই বিছানায় পরে যাবে । মাত্র ৫২ বছর বয়সে রহিম কে দেখে মনে হয় ৬০-৬৫ সব দাড়ি পেকে গেছে ।
“আব্বু আজকে শরীর কেমন লাগছে” রানী দুধ টেবিলে রেখে রহিমের পাশে বসে । রহিম হাসে , মেয়ের মাথায় হাত রেখে আদর করে , বলে “ তোর মত একটা মা থাকলে আমার কি শরীর খারাপ থাকতে পারে?”
রানী নিজের আব্বুর চোখের দিকে তাকায় , সেখানে কোন স্পার্ক দেখতে পায়না , তার জায়গায় একজন ক্লান্ত একাকি মানুষের চোখ দেখতে পায় , যারা রেস্ট নেয়ার জন্য আকুতি করছে । রানীর বুক ভারি হয়ে আসে , “ মিথ্যা বলো কেনো আব্বু, আমি যদি তোমার মা ই হতাম তাহলে তুমি আমার কথা শুনতে , রেস্ট নিতে, সেটা তো নিচ্ছো না”
“আমি তোর অবাধ্য ছেলে রে মা” রহিম আবার হাসে , কিন্তু হাসিতে জেল্লা নেই ,
“অন্তত কয়েকটা ক্লাস কমিয়ে দাও” রানী কাতর শ্বরে বলে । কিন্তু রহিম কোন উত্তর দেয় না ।
রানী আবার বলে “ এতো টাকা দিয়ে কি হবে আব্বু , আমরা কি তোমার কাছ থেকে বিলাসিতা চেয়েছি কখনো? তুমি ই যদি না থাকো আমাদের এই টাকা দিয়ে কি হবে” রানীর চোখ থেকে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পরে । যা পুরোটাই বাবার অসুস্থতার জন্য নয়, বাবার ত্যাগের প্রতি নিজের উদাসিনতাও এই জলের একটা প্রধান কারন ।
“ কি আর হবে , কিচ্ছু হবে না , আমি থেকেও কি তোদের জন্য কিছু করতে পেরেছি , সুধু কিছু টাকা দেয়া ছাড়া । তোরা কবে বড় হয়ে গেলি সেটাই তো বুঝতে পারিনি , এখনো বিশ্বাস হয় না আমার, তোদের দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় , তরাই আমার রানী আর রাজীব, কি করবো বল আমি একজন অক্ষম মানুষ , টাকা আয় করতে গিয়ে তোদের বাবার স্নেহ দিতে পারিনি”
রানী আর আব্বু কে জড়িয়ে ধরে , বাবার বুকে মাথা রাখে , বড় করে নিঃশ্বাস নেয় , বাবার শরীরের নোনতা বাবা বাবা গন্ধটা ওকে যেন মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা দিচ্ছে , সাহস দিচ্ছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার । একটা সময় ছিলো রানী ওর আব্বুকে ছাড়া ঘুমাতো না , রানীর ভাসা ভাসা মনে আছে , তখন ওদের আম্মু বেঁচে ছিলো । তবে ওনার শেষ সময় ছিলো । রানী খুব বায়না করতো , কখন আব্বু আসবে , রহিম এলেই তবে রানী রহিমের বুকে ঘুমাতো , রহিমের বুকের পশম নিয়ে খেলতে খেলতে ।
মা মারা যাওয়ার পর ও রানী আর রাজীব কয়েক বছর ওদের আব্বুর সাথে ঘুমিয়েছে । তারপর ওদের আলাদা ঘর হয়েছে । দুজন এক ঘরে দুটো সিঙ্গেল বিছানায় ঘুমাতো । আজ আবার রানী সেই ছোট বেলার স্বাদ কিছুটা পাচ্ছে । বেশ কিছুক্ষন আব্বুর বুকে চুপচাপ মাথা রেখে বসে থাকার পর রানী বলে “ তুমি যে ছিলে , সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো আব্বু , তুমি যদি না থাকতে তাহলে আমরা আশ্রয় খুজতাম কোথায় , তুমি বিজি থাকলেও আমরা জানতাম আমাদের বাবা আছে , আর এটাই আমাদের শক্তি দিয়েছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার”
অনেকদিন পর মেয়েকে এভাবে বুকে নিতে পেরে রহিমের খুব ভালো লাগছে । একটা প্রশান্তি অনুভব করছে রহিম । রহিম হাসি মুখে মেয়ের মাথায় হাত বুলায় । বেশ কিছুক্ষন এভাবেই থাকে রহিম আর রানী । তারপর রহিম বলে “ রাজীবের কি হয়েছে রে , আজকে দেখলাম কেমন জানি হয়ে আছে মুখটা । ছেলেটার জন্য আমার আফসোস হয় খুব , আমি ওকে স্বাভাবিক জীবন দিতে পারিনি , যখন কলেজের ছেলেদের দেখি রাস্তায় দুষ্টুমি করছে , তখন রাজীবের কথা মনে হয়, খুব দুঃখ হয় , আমার জন্যই ছেলেটা এই উচ্ছল কৈশোরের আনন্দ পায়নি । ওর উপর ঘরের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলাম আমি , ঘরে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেগুলো রাজীব ওই বয়সেই নিপুন ভাবে সামাল দিয়েছে , তোকে তো ওই বড় করলো , ভাবতে গেলে আমি অবাক হই , প্রায় সমবয়সী একটা মানুষ আরেকজন কে কি সুন্দর করে সামলেছে , আমি তো ভয়েই কাছে আসতাম না রে মা। ছেলেটার প্রতি আমি অন্যায় করেছি রে” এই বলে রহিম একটু বিরতি নেয়
তারপর আবার বলে “ আজকাল তো আরো চুপচাপ গম্ভির হয়ে গেছে , কেমন জানি পর পর লাগে ওকে , সামনে গিয়ে দুটো কথা জিজ্ঞাস করবো সেই সাহস হয় না, তুই দেখিস তো কি হয়েছে ওর , মনে হয় ভালো কোন বিপদে আছে, তোরা ত একজন আরেকজন কে সব বলিস”
রানী একটা দীর্ঘশ্বাস নেয় , কিভাবে বলবে বাবাকে ভেবে পায় না , এমনিতে অসুস্থ এমন খবর পেলে যদি কিছু হয়ে যায়। রানী বলে “ নাহ কিছু তো হয় নি , ও এমনিতেই এমন গম্ভির হয়ে গেছে আজকাল” কথা গুলো বলে একটু হাসতে চেষ্টা করে রানী।
“ দেখিস মা কোনদিন ভাইয়ের মনে কষ্ট দিবি না , সব সময় ভাইয়ের সাথে থাকবি , আমি যখন না থাকবো তোর একমাত্র আপন বলতে ওই ভাই ই থাকবে । মনে রাখবি , তোর মা তো ছিলোই না , আর আমি থেকেও ছিলাম না , রাজীব ই সেই ছোট্ট বেলা থেকে তোর মা আর বাবা দুইজনের দায়িত্ব পালন করেছে , সেই ছোট বয়স থেকে ও কিভাবে করেছে ওই জানে , বুঝে করেছে না নাবুঝে করেছে আমি জানি না , কিন্তু করেছে যে ভাবেই হোক , আর দশটা ভাইয়ের মত কিন্তু ও না। জীবনে আরো সামনে গিয়ে তোরা দুজন যেখানে জেভাবেই থাকিস না কেনো একজন অন্যজন কে ছাড়বি না” বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে রহিম ।
******
বাবার ঘর থেকে বেড়িয়ে রানী রাজীবের খোঁজে যায় । রাজীব নিজের উপর খুব বেশি চাপ নিয়ে ফেলছে আজকে । কিন্তু রাজীবের ঘরে গিয়ে রাজীব কে পায় না রানী । বাথ্রুমেও নেই , তাই রানী ছাদে যায় ।
ছাদের উপর একটা মাদুর বিছিয়ে চিত হয়ে শুয়ে আছে রাজীব , ওর দৃষ্টি আকাশের থিকে । আজকে আকাশে মেঘ মেই , লক্ষ লক্ষ তারকায় খচিত হয়ে আছে রাতের আকাশ । আর রাজীব এক মনে সেই তারার দিকে তাকিয়ে আছে । রানী যে এসেছে সেটা লক্ষ করেনি রাজীব । রানী যখন রাজীবের মাদুরের পাশে এসে দাঁড়ালো , তখন রাজীবের হুঁশ হলো ।
“ তাঁরা গুনছিস?” রানী হেসে জিজ্ঞাস করলো , আশ্চর্য ব্যাপার গত কিছুদিন রাজীবের সাথে খুলে কথা বলতে কেমন একটা ভয় ভয় লাগছিলো মনে হচ্ছিলো ভাই কিছু বুঝে ফেলবে , আজকে সন্ধ্যায় নিজের সিদ্ধান্তের পর সেই ভয় কেটে গেছে ।
“হুম্মম বলতে পারিস , ভালো টাইম পাস হয়” রাজীব একটা হাফ স্মাইল দিয়ে বলল । রানী লক্ষ্য করলো সেই হাসি কেমন মলিন।
“ঘুমের চেয়ে ভালো টাইম পাস কি আর কিছু আছে বলে তো আমার জানা নেই , রাতে চোখ বন্ধ করবি , চোখ খুলে দেখবি সকাল হয়ে গেছে” রানী হাসতে হাসতে বলল , উদ্দেশ্য রাজীব কে উজ্জেবিত করা ।
রাজীব কিছু বলল না , হেসে নিজের পাশের যায়গা দেখিয়ে দিলো ইশারায় । রানী ভাইয়ের পাশে শুয়ে পরলো , আকাশের দিকে তাকালো ।
“ এই তাঁরা গুলো সুধু তাঁরা নয় , ওই যে ওই তারাটা দেখছিস?” রাজীব একটা জ্বলজ্বলে বড় তাঁরার দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো
“ হুম” রানী ছোট্ট করে বলল
“ যখন থেকে আমার মন থেকে ভুতের ভয় চলে গেছে , তখন থেকে এই তাঁরাটার সাথে আমার বন্ধুত্ব , এই তাঁরাটা আমাকে ওর মত জ্বলজ্বলে ভবিষ্যতের জন্য প্রেরণা যুগিয়েছে , কিন্তু আজকে মনে হচ্ছে আমি ওকে প্রতারণা করেছি , ওর এতো চেষ্টা সত্ত্বেও আমি এমন একটা কাজ করেছি যা আমার ভবিষ্যৎ কে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে” রাজীব বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
রানী অনুভব ওরে রাজীবের অনুতাপের উত্তাপ । “ তুই তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস , এখন থেকে সামলে চলবি” সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে রানী
“জীবন সব সময় দ্বিতীয় সুযোগ দেয় না “ রাজীব ফ্রস্টেসনে মুষ্টিবদ্ধ হাত দিয়ে ছাদে আঘাত করে । ভাইয়ের এই অবস্থা দেখে রানীর খুব কষ্ট হয় , কিন্তু কি বলে সান্তনা দেবে বুঝতে পারেনা , আজকে পজিসন রিভার্স হয়ে গেছে । সব সময় সান্তনা দেয়ার পজিশনে রাজীব থাকে , আর ও পারেও ।
“ সব জায়গায় ব্যারথ হলাম আমি , কোন সম্পর্কের পরিক্ষায় উতরে যেতে পারলাম না , না ছেলে হিশেবে, না বন্ধু হিশেবে , না নিজের ক্যারিয়ার গঠনে , অসুস্থ আব্বু যদি জানতে পারে তাহলে কি হবে ভেবেছিস? আর জয়ের কেমন বন্ধু আমি , ওকে থামানোর পরিবর্তে ওর সাথে গিয়েছি”
“ এখনো ক্ষেপে আছিস জয়ের উপর” রানী জিজ্ঞাস করে
“ না , জয়ের উপর আমার রাগ নেই , রাগ আমার উপর । আমি ভালো বন্ধু হতে পারলাম না । আমি চাইলে ওকে ঠেকাতে পারতাম । কিন্তু আমি যথেষ্ট চেষ্টা করিনি।“ রাজীব বড় শ্বাস ছেড়ে বলে
“ নিজের উপর এতো অত্যাচার করিস না , তুই যা করার করেছিস , তখন ওই পরিস্থিতিতে যা তোর ভালো মনে হয়েছে তুই তা করেছিস , মুখ তো ফিরিয়ে নিসনি” রানী বেশ দৃঢ় ভাবে বলে , চেষ্টা করে রাজীব কে ডিপ্রেশন থেকে বের করে আনার ।
“ নাহ আমার আরো ভালো করা উচিৎ ছিলো , আমাদের সম্পর্কের ধরন টাই এরকম রে , তুই বুঝবি না। আমাদের সম্পর্কে জয় ঘুড়ি আর আমি নাটাই সুতো । জয় উড়বে আর আমি ওকে সুতোর মাধ্যমে মাটির সাথে যুক্ত রাখবো , যখন দরকার হবে টেনে নামাবো , আর তাতেই আমি ফেইল করেছি, নিজেকে বন্ধু বলতে লজ্জা হচ্ছে , যদি কিছু হয়ে যায় , আব্বুকে কি বলবো , বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে কি বলবো” হতাশ স্বরে বলে রাজীব
“তোর মত আমি বলতে পারি না ভাইয়া , তবে আমার মন যা বলে তা হয় , আর আমার মন বলছে তুই ওই বড় তাঁরাটার মতই জ্বলজ্বল করবি , হয়তো দুনিয়ার সবার জন্য নয় , তবে আমার জন্য , আব্বুর জন্য , আমাদের আশেপাশে যারা আছে তাদের জন্য । অন্তত আমার জন্য তো হবি ই , ওই বড় তাঁরার মত তুই আমাকে দিক নির্দেশনা দিবি, এটা কি তোর জন্য যথেষ্ট নয়? তোর ছোট বোন তোর দিকে গর্বের সাথে তাকায়?”
“ সত্যি বলছি তাহলে আমার কিছু চাওয়ার থাকবে না , আমার সারা দুনিয়ার কাছে কোন কিছু প্রমান করার নেই , তুই আর আমার আপনজন যারা আছে তাদের মনে আমাকে নিয়ে যদি কোন ক্ষেদ না থাকে তাহলেই আমি মনে করবো আমি ওই বড় তাঁরার মত হতে পেরেছি”
“ তাহলে হতাশা নয় , নিজেকে নিয়ে গর্ব কর , আমি তো তোকে অনুসরণ করেই এই পর্যন্ত এসেছি , আমার বিশ্বাস তুই আমাকে আরো আগে নিয়ে যাবি , তুই ই আমার জন্য মাঝ সমুদ্রে শুকতারা , আমি বিপদে পরলে তুই আমাকে পথ দেখিয়ে তিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসবি”
রাজীবের গলায় কিছু একটা দলা পাকিয়ে যায় , চোখ বেয়ে দু ফোঁটা পানি বেড়িয়ে আসে । লোকে বলে পুরুষ মানুষের কাঁদতে নেই । কিন্তু রাজীব তাতে বিশ্বাস করে না । মাঝে মাঝে কাঁদলে তেমন ক্ষতি নেই । বরং উপকার হয় ।
রানী ভাবে , এর নাম ই কি ভালোবাসা নয় ? আপন মানুষ গুলো একে অপরকে সম্পর্কের দড়িতে বেধে রেখছে । জীবন নামক পর্বত আহরণের সময় একজন পিছলে গেলে অন্যরা তাকে টেনে তুলছে । কি সুন্দর এই সম্পর্ক গুলো । এক বন্ধু ,বন্ধুত্বের দাবি পুরন করতে নিজেকে ব্যারথ মনে করে নিজেকে দোষারোপ করছে । এক পিতা নিজের সর্বস্ব শেষ করে দিচ্ছে সন্তানদের জন্য হাসি মুখে । এক ভাই ভয়ে কুঁকড়ে আছে নিজের অনুজদের সঠিক নির্দেশনা দিতে ব্যারথ হবে এই ভয়ে । এক কন্যা আর বোন নিজেকে শক্ত করে ফেলছে , আবেগের সমুদ্র শুকিয়ে ফেলেছে , পিতা আর ভাইয়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য । একে অপরের জন্য এই ত্যাগ গুলোই আজকে দুনিয়ায় ভালোবাসা কে বাঁচিয়ে রেখছে । বেঁচে থাকুক এই সুন্দর সম্পর্ক গুলো ।
****
রাত এগারোটা ,জয় নিজের মোবাইল হাতে নেয় । নাম গুলো স্ক্রল করতে করতে আরিফ ভাই নামে সেভ করা একটা নাম্বারে এসে থেমে যায় । কিছুক্ষন ভাবে , তারপর আঙুল দিয়ে স্ক্রিনে চাপ দেয় । তিন চার বার রিং হতেই কল রিসিভ হয় ।
“ আরিফ ভাই কেমন আছে?”
ওপাশ থেকে কি বলে কিছু শোনা যায় না , জয় কে বলতে শোনা যায় “ সরি ভাই , একটু বিজি ছিলাম” তারপর আবার চুপ ,
“ জি ভাই জানি , তাইতো আপনাকে কল করেছি”
“একটা কাজ ছিলো ভাই , আপনি তো মনে হয় জানেন মেয়েদের হোস্টেলে একটা ঘটনা হয়েছে , ঐখানে রায়হান শিকদার রাজীব নামে একটা ছেলে জড়িত । আপনি ওর নাম মুছে দিবেন”
“ জি ভাই আমি জানি এটা আপনার জন্য কোন ব্যাপার না , আমি আসবো আগামিকাল আপনার কাছে”
“জি ভাইয়া আপনি যা বলবেন তাই হবে”
“ জি ভাইয়া” বলে জয় কল কেটে দেয় । মোবাইলের আলোয় ওর চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে , সেখানে তীব্র বেদনা , যা জয়ের চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরিত । জয় বিড়বিড় করে বলে “ যাহ তোকে মুক্ত করে দিলাম আমার বন্ধুত্বরে শিকল থেকে”
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 210
Threads: 3
Likes Received: 278 in 132 posts
Likes Given: 161
Joined: Jul 2025
Reputation:
40
ভালো মন্দ কিছু কমেন্ট না পেলে লেখা ভালো হচ্ছে না খারাপ হচ্ছে বোঝা মুশকিল । তবে ধরে নিতে পারি কিছু মানুষের কাছে ভালো লেগেছে বাকিদের কাছে ভালো লাগেনি ।
এর একটা কারন আমি বুঝতে পারছি । রোমান্টিক গল্প বলে এখনো পারিবারিক আর বন্ধুত্বের কচলানি কচলাচ্ছি ।
let me explain without being asked. আমার কাছে মনে হয়েছে গল্পের পরবর্তী পার্টে যাওয়ার আগে এই চরিত্র গুলোর অবস্থান ভালো মত কিছু ঘটনার মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তুলে ধরা জরুরি ছিলো।রোমান্স আসবে সিঘরই ,ভ্যানিলা প্রেমের সম্পর্ক দেখানো হবে , অন্য কোন কিঙ্ক এখানে ব্যাবহার করা হবে না । সবার উপরে চরিত্র গুলোর সম্পর্কের টানা পোড়ান দেখানোর চেষ্টা করা হবে ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 853
Threads: 0
Likes Received: 391 in 324 posts
Likes Given: 1,598
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
অনেক ভালো হচ্ছে বস,এগিয়ে যান
|