Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
29-07-2025, 04:17 PM
(This post was last modified: 29-07-2025, 06:59 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
একটা হিন্দি গল্প পড়তে গিয়ে একেবারে হুকড হয়ে গেছি । তাই লেখকের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ওই গল্পের প্লট কিছুটা ধার করে এই গল্প লেখা শুরু করলাম । হিন্দি গল্পের লেখক খুবি হাম্বল একজন মানুষ। উনি আমাকে ওনার প্লট ব্যাবহার করে লিখতে অনুমতি দিয়েছেন তাই ওনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তবে প্লটে মিল থাকলেও গল্পে পুরোপুরি মিল থাকবে না । আমি গল্পটাতে আরো নতুন কিছু যোগ করার চেষ্টা করেছি , কিছু ব্যাপার কে নতুন করে লিখতে চেষ্টা করেছি । কতটা সফল হবো জানি না ,তবে চেষ্টা করতে দোষ কি।
ধন্যবাদ , Greenwood , আমি লিঙ্ক দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি । এবং অবশ্যই sarit11 ধন্যবাদ বলতে হবে , দুই দুই বার ব্যান হওয়া থেকে আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে । Thanks sarit11.
যেহেতু গল্পটি যৌন গল্পের ফোরামে দিচ্ছে , সেহেতু গল্পে যৌনতা থাকবে । কবে কখন কিভাবে আসবে বলতে পারছি না । আশা করি সবার ভালো লাগবে
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
29-07-2025, 07:01 PM
(This post was last modified: 01-08-2025, 07:42 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ১
জয়নাল চৌধুরী আর রহিম সিকদার দুজন ছোট বেলার বন্ধু । দুজনের বাড়ি ও পাশাপাশি , তাই বন্ধুত্ব ছোট বেলা থেকে যৌবন শেষ হয়ে বার্ধক্য পর্যন্ত অটুট আছে । দুজনে হরিহর আত্মা , দুজন কে দেখেলে বলবে এরা দুই ভাই , নাহ ভাইদের মাঝেও এতো ভালো সম্পর্ক থাকে না যা এদের দুজনের মাঝে আছে । জয়নাল চৌধুরী বংশ পরম্পরায় ধনী , বাপ দাদার বিজনেস সামলায় । আর রহিম শিকদার মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে , যদিও বাপ দাদার রেখে যাওয়া যে বাড়ি আছে তার দাম অনেক । কিন্তু রহিম সিকদার এই বাড়িকে মূল্য দিয়ে বিবেচনা করে না । সে নিজে সারাজীবন শিক্ষকতা করেছে , টাকার কষ্ট করেছে কিন্তু কোনদিন বাড়ি বিক্রি বা ডেভ্লপার কে দেয়ার চিন্তা করেনি । তাই এই আধুনিক যুগেও শহর অঞ্চলে পাশাপাশি দুটো দোতলা বাড়ি রয়ে গেছে । একটি বেশ জমকালো অন্যটি একটু জীর্ণ । জয়নাল চৌধুরী আর রহিম শিকদার মাঝে অবশ্য দুজনের আর্থিক অবস্থা দেয়াল হয়ে দাড়ায় নি । কেউ কাউকে টকায় হিসাব করে না ।
বাকি সব কাজের মত দুই বন্ধু বিয়েও করেছে এক সাথেই প্রায় । রহিম শিকদারের বিয়েতেই জয়নালের মা জয়নালের জন্য পাত্রি পছন্দ করে । আর তার এক সপ্তার মাঝেই বিয়ে হয়ে যায় । দুজনের স্ত্রী একে অন্যের বান্ধবি । আর এই কারনে এই দুজনার বন্ধুত্ব যেন আরো গভির হয়ে যায় ।
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দুই পরিবারে নতুন অতিথি চলে আসে তাও এক মাসের কম সময়ের ব্যাবধানে । জয়নার চউধুরির ছেলে জন্মানোর দশ দিনের মাথায় রহিম শিকদারের ছেলে জন্ম নেয় । দুই পরিবারেই খুশির বন্যা বয়ে যায় । দুই বন্ধু ডিসিশন নেয় যে তাদের সন্তানেরা কোন দিন যেন দুই বাড়ির মাঝে তফাৎ না করে , একে অন্যের বাড়ি কে নিজের বাড়ি মনে এমন ভাবে এদের মানুষ করবে । তাদের দুই সন্তান ভাইয়ের মত বড় হবে । কাকে বড় আব্বু বলবে আর কাকে ছোট আব্বু সেই নিয়ে দুই বন্ধুর মাঝে ছোট খাটো যুদ্ধ ও লেগে যায় । শেষে ডিসাইড হয় যেহেতু রহিম শিকদার কিছুদিন পর বাবা হয়েছে তাই রহিম শিকদার হবে ছোট আব্বু , আর জয়নাল চৌধুরী বড় আব্বু ।
রহিম শিকদার কোনদিন বন্ধুর কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেয়নি , আর জয়নাল চৌধুরী ও কোনদিন যেচে পরে আর্থিক সাহায্যর কথা বলেনি , বন্ধুর প্রতি সম্মান দেখিয়ে । কিন্তু ছেলের ক্ষেত্রে জয়নাল চৌধুরী এই অলিখিত নিয়ম মানতে একদম নারাজ , নিজের ছেলে জয়ের জন্য যা যা কিনেছে বন্ধুর ছেলে রাজীবের জন্যও ঠিক তাই কিনেছে । রহিম শিকদার এর বিরোধিতা করতে এলে একপ্রকার তেড়ে গিয়েছে বলেছে “ খবরদার যদি আমাকে আমার ছেলের জন্য কিছু কিনতে বাধা দিস” । রহিম শিকদার ও হার মেনে নিয়েছে । আসলে দুই বন্ধুর মাঝে ইগো বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই ।
রাজিব আর জয় ও সেই ছোট বেলা থেকেই ভাইয়ের মত বড় হতে থাকে ।
দুই বছর পর দুই পরিবারে আবারো আনন্দের জোয়ার ওঠে , রহিম শিকদারের স্ত্রী আফরোজা আর জয়নাল চৌধুরীর স্ত্রী আয়শা আবারো গর্ভবতী হয় । এবারো দুজনের মাঝে অল্প দিনের তফাৎ । এবং আশ্চর্যের বিষয় এবার দুজনের ঘরে ফুটফুটে দুটো মেয়ে হয় । রহিম সেখের মেয়ের নাম রাখা হয় রানী , আর তার ঠিক পনেরো দিন পর জম্ন নেয়া জয়নাল চৌধুরীর মেয়ের নাম রাখা হয় জান্নাত ।
হাসি আনন্দে , সুখে দুঃখে দুই পরিবারের দিন কাটতে থাকে ।
কিন্তু খুশির দিন সব সময় দীর্ঘস্থায়ী হয় না । রানীর বয়স যখন ছয় আর রাজীবের আট তখন হঠাত আফরোজার এক দুরারোগ্য রোগ ধরা পরে । রানীর জন্মের সময় এই কমপ্লিকেসন তৈরি হয়েছিলো বলে ডাক্তারের ধারনা , কিন্তু তখন ধরা পরেনি, যতদিনে ধরা পরলো ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে । কিন্তু রহিম হাল ছাড়তে নারাজ , পানির মত টাকা খরচ করতে লাগলো। প্রচুর খরচ হয় সেই চিকিৎসায় , রহিম শিকদারের জমানো টাকা শেষ হয় চোখের পলকে । জীবনে এই প্রথমবার রহিম শিকদার নিজের গরিব হওয়া নিয়ে কোন প্রকার হীনমন্যতায় ভোগে । সিদ্ধান্ত নেয় বাড়ি বিক্রি করে দেবে। এ কথা শুনে জয়নাল চৌধুরী হন্তদন্ত ছুটে আসে বন্ধুর কাছে । অনেক বোঝায় , টাকা ধার দেয়ার কথা বলে , শেষে না পেরে ঝগড়া বাধাতে যায় । কিন্তু রহিম শিকদার নিসচুপ থাকে । এক পর্যায়ে রহিম শিকদার খপ করে জয়নাল চৌধুরীর দুহাত চেপে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলে “ আমাকে মাফ করে দাও বন্ধু, আমাকে মাফ করে দাও” এর পর জয়নাল চৌধুরী আর কিছু বলে না । মাথা নিচু করে সেদিন রহিম শিকদারের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় ।
সেদিন রাতে দুই বাড়িতে কারো চোখে ঘুম হয় না । এমন কি ছোট্ট জান্নাত আর রানী ও বোঝে যে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে। বয়সে কিছুটা বড় রাজিব আর জয় ও বুঝতে পারে কি হতে যাচ্ছে । দুই বন্ধু সেদিন এক ঘরে ঘুমায় , যতক্ষণ না ক্লান্ত হয়ে পরে ততক্ষণ দুই বন্ধুর মাঝে কথা চলে । শেষে ঘুমানোর ঠিক আগে দুই বন্ধু প্রতিজ্ঞা করে যত কিছুই হোক , কোন কিছুতেই ওদের বন্ধুত্ব নষ্ট হবে না । মরে গেলেও না ।
রহিম শিকদার ও সারারাত চোখ বুজতে পারে না । সকালে উঠেই বন্ধুর কাছে যায় । জয়নাল খাঁ তখন নিজ বাড়ির নিচ তলায় বারান্দায় বসে । দু চোখ লালা দেখেই বোঝা যাচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি । রহিম চুপ চাপ বন্ধুর পাশে এসে বসে , বেশ কিছুক্ষন নীরব থাকার পর বলে “ টাকাটা আমি তোর কাছ থেকেই নেবো” কথাটা বলে চুপ হয়ে যায় রহিম , এদিকে জয়নাল আনন্দে লাফিয়ে চেঁচামেচি করতে শুরু করে ।
সেই চেঁচামেচি শুনে আয়শা বেড়িয়ে আসে রান্না ঘর থেকে , কি হয়েছে জিজ্ঞাস্ করলে জয়নাল আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে
“ যাও আয়শা আমাদের জন্য চা আর নাস্তা নিয়ে এসো , ভেবেছিলাম এই হারামি শালাকে চা অফার করবো না ,কিন্তু হারামি ভালো হয়ে গেছে “
আয়শাও বেশ খুশি হয়ে আবার রান্না ঘরে ফিরে যায় । কিছুক্ষন পর চা আর টোস্ট নিয়ে হাজির হয় । বলে “রহিম ভাই আমি খুব খুশি হয়েছি”
নাস্তা শেষে রহিম বলে , “ কিন্তু আমার একটা সর্ত আছে”
“ কি সর্ত বল ব্যাটা” জয়লান উৎফুল্ল স্বরে জানতে চায়
“ বাড়িটা তুই রাখবি “ রহিম বেশ শান্ত কিন্তু দৃঢ় স্বরে বলে ।
রহিমের কথা শুনে জয়নাল ওর দিকে অবাক চোখে তাকায় , জয়নালের চোখে মুখে অবিশ্বাস , কিছুক্ষন এভাবেই চুপ থেকে জয়নাল হঠাত উঠে দাঁড়ালো , ওর চোখ মুখ থমথমে । কয়েক মুহুরতপর জয়নাল একদম শান্ত স্বরে বলল “ বেড়িয়ে যা , তোর চেহারা আমি দেখতে চাই না , তুই আমার বন্ধুত্বকে অপমান করেছিস”
জয়নালের শেষ কথা আয়শা শুনে ফেললো , এই মাত্র বাচ্চাদের নাস্তা দিয়ে স্বামী আর রহিম কে সঙ্গ দেয়ার জন্য বারান্দায় এসেছিলো ।
“ কি ব্যাপার তুমি এমন কথা বলছো কেন” হন্তদন্ত হয়ে বলল আয়শা , তারপর আবার রহিমের দিকে তাকিয়ে আকুতি মিশিয়ে বলল “ ভাই প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না”
“ নাহ ভাবি আমি কিছুই মনে করিনি , আমি এর যোগ্য, জয়নাল আমাকে আমার প্রাপ্য ই বুঝিয়ে দিয়েছে” এই বলে রহিম উঠে গেলো , বেশ ধির তালে হেটে হেটে গেঁটের দিকে চলতে লাগলো রহিম । মাথাটা নিচের দিকে ঝুকে আছে ।
রহিম সত্যিই মনেমনে বেশ লজ্জিত , কিন্তু এ ছাড়া ওর কোন উপায় নেই । যে পরিমান টাকা দরকার সেটা রহিমের পক্ষে কোনদিন ফেতর দেয়া সম্ভব হবে কিনা তা ওর জানা নেই । তাই বন্ধুর কাছে এই সর্ত নিয়ে এসেছিলো । এতে যে জয়নাল এতো রাগান্বিত হবে সেটাও ওর জানা ছিলো ।
সেদিনি রাতে জয়নাল আর আয়শা দুজনে রহিমের বাড়ি আসে । জয়নালের মুখ তখনো থমথমে , দেখে বোঝা যাচ্ছে আয়শা ওকে বেশ বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিয়ে এসেছে । বন্ধুকে দেখে রহিম একটি শুকনো হাসি দেয় । রহিমের ভাব এমন যে ও জানতো যে জয়নাল আসবে ।
বেশ কিছুক্ষন আফরোজার সাথে সময় কাটায় আয়শা আর জয়নাল । পুরোটা সময় রহিম ওদের সামনে বসে থাকলেও জয়নাল একটি কথাও বলে না রহিমের সাথে । পুরো কথা বার্তা হয় আফরোজার সাথে । এক পর্যায়ে দুর্বল আফরোজা বেশ কষ্ট করে জয়নালের উদ্দেশ্যে বলে “ ভাই আপনার বন্ধুকে ক্ষমা করে দেন , ওর মাথা ঠিক নেই , কি বলতে কি বলে ফেলছে”
“ না ভাবি , এর মাঝে আপনি আসবেন না , এই বদের হাড্ডি কে আমি ছোট বেলা থেকেই চিনি , এর বড় অহঙ্কার” এই বলে জয়নাল চুপ হয় , তবে পরক্ষনেই বলে “ আরে তুই কার সামনে আত্মগরিমা দেখাচ্ছিস , আমার সামনে , তোর ভাইয়ের সামনে” শেষ কথা গুলো বলার সময় জয়নালের গলা একটু ধরে আসে ।
সেটা দেখে রহিম উঠে জয়নালের কাধে একটা হাত রাখে , কিন্তু জয়নাল সেই হাত কাধ ঝাঁকিয়ে সরিয়ে দেয় । আবারো ধরা গলায় বলে “ আমারো একটা সর্ত আছে ভাবি , আপনি ওই অহংকারী কে বলে দেন”
“ কি সর্ত ?” যদিও কথা গুলো জয়নাল আফরোজাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলো , কিন্তু উত্তর রহিম ই দেয় ।
“ বাড়ি আমি নেবো , এবং নেয়ার পর এই বাড়ি নিয়ে আমি কি করবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার , কেউ যেন নাক গলাতে না আসে , যদি আসে তাহলে আমি সেই নাক ভেঙ্গে দেবো,”
এই কথা শুনে রহিম মুচকি হেসে বলে “ কেউ নাক গলাতে আসবে না “
বাড়ির যথার্থ মূল্য দিয়েই জয়নাল বাড়ি কিনে রাখে , একটা সাদা দলিলে রহিমের সিগনেচার রেখে দেয় । তারপর একদিন রহিম শিকদার তার পরিবার নিয়ে অন্য শহরে চলে যায় । যাওয়ার সময় সেই এক আবেগ ঘন পরিবেশ ।
বাড়ি বিক্রির এক বছরের মাথায় আফরোজা মৃত্যু বরন করে । খবর পেয়ে জয়নাল আর আয়শা ছুটে যায় । আফরোজার মরদেহ রহিম শিকদারের পুরন বাড়ির পাশেই দাফন হয় । বেশ কিছুদিন রহিম শিকদার ছেলে মেয়ে নিয়ে জয়নাল চৌধুরীর বাড়িতে অবস্থান করে । এই কয় দিন জয়নাল চৌধুরী অনেক বলেও রহিম শিকদার কে এখানেই থেকে যেতে রাজি করাতে পারে না ।
<><><>
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 1,045
Threads: 6
Likes Received: 2,512 in 628 posts
Likes Given: 1,310
Joined: Apr 2024
Reputation:
758
আপনার লেখা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে যে আবেগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, এবং আত্মিক বন্ধন — তা খুব কম গল্পেই এত স্বচ্ছভাবে উঠে আসে। পাঠক হিসেবে পাবেন যদি না রোমান্টিক বলে, পরবর্তীতে রোমান্স থেকেই নড়েচড়ে বসে!❤️
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
29-07-2025, 08:25 PM
(This post was last modified: 30-07-2025, 03:48 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ১ (ক)
নয় বছর পর ঃ
আজকে রাজীবের আর জয়ের উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট বেড়িয়েছে । রাজীব নিজের রেজাল্ট দেখে প্রথম কল করে বন্ধু জয় কে । রাজীবের গলায় উচ্ছ্বাস “ কিরে হিরো রেজাল্ট বল”
এদিকে জয় ও রাজীবের কলের অপেক্ষায় ছিলো “না আগে তুই বল” ওপাশ থেকে জয়ের এর গলা ভেসে আসে
“ তুই পাক্কা ফেইল , ঠিক বলসি কিনা বল?” রাজীব জয় কে উদ্দেশ্য করে বলে । যদিও ও নিজেও নিজের বলা কথাটি বিশ্বাস করে না ।
“এতো দিনেও তোর ভাইকে তুই চিনলিনা বোকাচোদা , আমার ডিকশেনারিতে ফেইল বলতে কোন শব্দ নেই , হোক সেটা পরিক্ষার খাতায় কিনবা মেয়েদের মন নিয়ে খেলায় ,সব জায়গায় আমি জিতেই অভ্যস্ত” জয় সিনেমার হিরোদের মত করে বলে ।
“ বুঝলাম আমার হিরো , কিন্তু রেজাল্ট তো বল” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ পাশ ব্রো” জয় চিৎকার করে বলে
“ পাশ তো বুঝলাম , গ্রেড বল” রাজীব দাঁত পিষে বলে , ধৈর্যের বাধ ভঙ্গে গেছে ওর
“A” জয় এমন ভাবে বলে যেন এটা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার না , তারপর জিজ্ঞাস করে “এবার তোরটা বল , দাড়া দড়া আমি গেস করি , A প্লাস নিশ্চয়ই , আমার ভাই এর কম পেতেই পারে না”
রাজীব ছোট্ট করে বলে “হুম, তবে তুই যে এতো ভালো রেজাল্ট করবি সেটা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না , মেয়েদের শরীর থেকে বইয়ের পাতায় মন গেলো কবে তোর?”
“ তোর ভাই মাল্টি টাস্কিন ছেলে ব্রো , আর আমার জন্য সুধু এক ঝলক যথেষ্ট , বই হোক আর নারী সব মুখস্ত হয়ে যায়” জয় আবারো ফিল্মি স্টাইলে বলে
কথা গুলো শুনে রাজীবের ঠোঁটের কোনায় হাসি ফুটে ওঠে , মনে মনে শালা সব জায়গায় হিরোগিরি না করলে মন ভরে না , তারপর শান্ত স্বরে বলে “ সব কিছু কি মুখস্ত করলে হয় , কিছু কিছু ব্যাপার বুঝে নিয়ে মনে গেথে নিতে হয় ব্রো , সেটা বইয়ের পাতা হোক আর মানুষের মন , নয়তো ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে , দেখা গেলো তুই মুখস্ত লিখে দিয়ে এলি কিন্তু প্রস্নটাই বুঝতে পারিস নি”
কিন্তু জয় এখন এসব নীতিবাক্য শোনার মুডে নেই । ও রাজীবের কথা উড়িয়ে দিয়ে বলল “ তুই কখন আসছিস ? আমার ভাই কে ছাড়া কি পার্টি জমবে? ”
“ আজকে তো হবে না ভাই , কাল আব্বুকে বলে দেখবো “ রাজীব মনমড়া হয়ে বলে , ওর নিজেরো ভালো লাগছে না একা একা
“ ওকে ব্রো তুই যেদিন আসবি সেদিন ই আমার বিশেষ দিন , সেদিন ই পার্টি হবে , ভাই ছাড়া কিসের পার্টি” জয় রাজীবের মন ভালো করার জন্য বলল
“ ওকে ভাই , এখন রাখি , বাসায় ওয়েট করতেসে রেজাল্ট জানার জন্য” বলে রাজিব কল কেটে দেয় । তারপর রানীকে কল করে ,
কল রিসিভ করেই রানী চেঁচিয়ে বলে ওঠে “ ভাইয়া মিষ্টি ছাড়া ঘরে ঢুকবি না”
“ আরে পাগলী রেজাল্ট তো শোন আগে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে ।
“ শুনতে হবে না , আমি জানি তোর চেয়ে ভালো রেজাল্ট আর কারো হতেই পারে না” রানী একদম দৃঢ় স্বরে বলে
“ আরে আমার রানী পাগলী আমি এ প্লাস পাইসি , এরকম হাজার হাজার আছে” রাজীব হাসতে হাসতে বলে
“ থাকুক , নাম্বার যোগ করলে দেখবি তোর নাম্বার সবচেয়ে বেশি, এখন ফালতু কথা বাদ দিয়ে মিষ্টি আন , আমার জিভে লালা চলে আসছে মিষ্টি খাওয়ার জন্য” এই বলে রানী কল কেটে দেয় ।
রাজীব মনে মনে ভাবে এই দুই পাগল এর কাছ থেকে কবে রেহাই পাবে ও । রেহাই পাওয়া কি আদৌ সম্ভব । দুজনের সাথেই যে আজন্ম বাধন , একজনের সাথে রক্তের অন্যজনের সাথে আত্মার। রাজীব হাসতে হাসতে একটা রিক্সা থামায় , তারপ মিষ্টি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ।
বাড়িতে ঢুকেতেই রানী দৌরে আসে , রাজীবের হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় , তারপর সেটা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খুলে , আস্তো একটা মিষ্টি মুখে ভরে চিবুতে থাকে ।
রাজীবের শব্দ পেয়ে রহিম শিকদার বেড়িয়ে আসে , রহিম শিকদার কে এখন আর চেনা যায় না মুখে দাড়ি , বয়সের তুলনায় শরীর যেন একটু বেশি বুড়িয়ে গেছে , চেহারায় ও বয়সের ছাপ পরেছে। স্ত্রী বিয়োগ ঠিক মত হ্যান্ডেল করতে পারেনি রহিম শিকদার ।
আব্বুকে দেখে রাজীব দ্রুত পা ছুয়ে সালাম করে । রহিম শিকদারের চোখ ছলছল করে , মনে মনে ভাবে এই দুটো হীরের টুকরা উপহার দিয়ে আফরোজা ওকে ছেড়ে চলে গেলো । গত নয় বছর সুধু টাকা উপার্জন করেছে রহিম শিকদার , আর বাকি সময় স্ত্রীর সৃতি বুকে নিয়ে মরার মত বেচেছেন । ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে তেমন কোন নজর দিতে পারেনি । রহিম শিকদারের একটাই ইচ্ছা ছেলে মেয়ে দুটো যেন কোনদিন টকার অভাবে না থাকে । ছেলে মেয়ের জন্য ভালো একটা কিছু করতে পারলেই তবে রহিম শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে , তাই নিজের পছন্দের কাজ শিক্ষকতা ছেড়ে বেছে নিয়েছে কোচিং বিজনেস।
তবে আজকাল মনে একটা চিন্তা কাঁটার মত বিধে থাকে রহিমের । সুধু আর্থ যোগান দেয়া ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেন নি ছেলে মেয়ের জন্য । ওরা নিজেরাই বড় হয়েছে , অবশ্য ছেলে রাজীবের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ রহিম । নিজেকে তো সামলেছেই সাথে বোন কেও সামলেছে । রাজীব বেশ শক্ত পোক্ত ছেলে , বেশ দৃঢ় স্বভাবের ছেলে , সহজে বিচলিত হয় না । কিন্তু রানী খুব নরম স্বভাবের আর মুখ চোরা , বেশ অভিমানিও । কিন্তু রাজীব আগলে রেখেছে ছোট বোন কে, ছোট বোনের মনের কথা বুঝে ফেলে । রহিম শিকদারের মাঝেমাঝে মনে হয়ব ওদের মা বেঁচে থাকলেও হয়তো এমন করে বুঝতে পারতো না। যেমনটা রাজীব বুঝতে পারে । রহিম শিকদার দূর থেকে এসব খেয়াল করেছে কিন্তু কাছে যাওয়ার সাহস হয়নি । ওর মনে হয়েছে কাছে গেলেই কিছু গণ্ডগোল পাকিয়ে ফেলবে ।
রহিম শিকদার ছেলের মাথায় হাত রেখে প্রান ভরে দোয়া করলেন । দোয়া করলেন যেন এই ছেলে জিবনে কোথাও পরাজিত না হয় । কিন্তু মুখে কিছু বললেন না । অবশ্য মুখে বলার প্রয়োজন হলো না , রাজীব বাবার হাতের উষ্ণতা থেকেই বুঝে নিলো ওর বাবা কি বলতে চাইছে । গলার ভেতর একটা কিছু দলা পাকিয়ে উঠলো রাজীবের ।
বেশ কিছুক্ষন বাবা ছেলে চুপ করেই দাড়িয়ে রইলো , এদিকে রানী ডাইনিং টেবিলের কাছ থেকে মুখ ভর্তি মিষ্টি নিয়ে বলল ,
“ তোমারা কি মুখে কিছু বলবে নাকি ট্যালিপ্যাথিতেই কথা বলবে”
রানীর কথা শুনে রহিম শিকদার আর রাজীব দুজনেই হেসে ফেললো , রহিম শিকদার ইশারায় মেয়েকে কাছে ডাকল , তারপর দুই ছেলে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন । অনেক দিন পর রহিম শিকদার এমন করলেন , কতদিন পর সেটা জানা নেই । তবে এক আরামদায়ক উষ্ণতায় যেন জড়িয়ে যেতে লাগলো রহিম শিকদার ।
রাজীবের কাছে প্রথম কিছুটা বিব্রতকর লেগ্লেও ধিরে ধিরে ভালো লাগতে শুরু করলো । এদিকে রানী দুহাতে বাবা কে জড়িয়ে ধরেছে । মুখে চওড়া হাসি । রাজীবের সাথে চোখাচোখি হতেই রাজীব ও মুচকি হাসি দিলো ।
ওয়ার্ম ফ্যামিলি হাগ শেষে , রাজীব নিজের খাঁকারি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলল “ আব্বু আগামিকাল আমি বাড়ি যাই? বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে মিষ্টি দিয়ে আসি?”
“ যাও বাবা” ছোট করে উত্তর দিলো রহিম শিকদার ।
“ আমিও যাই বাবা , আমার পরিক্ষার পর তো যাওয়া হয়নি ” রানী ও জিজ্ঞাস করলো, বান্ধুবি জান্নাত কে দেখার তর সইছে না ওর , প্রায় দের বছর হলো যাওয়া হয় না । আগে বছরে দুবার করে যাওয়া হতো । রহিম না গেলেও ছেলে মেয়েকে পাঠিয়ে দিতো । নইলে আয়শা খুব রাগ করতো । কিন্তু দুজনের বোর্ড পরিক্ষা চলে আসায় এই দের বছর আর যাওয়া হয়নি ।
“ যাও মা” রানী খুশিতে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বাবা কে ।
তখন রাজীব বলল “ আব্বু তুমিও চলো”
“ ঠিক আছে চল তোর মায়ের কবর দেখা হয় না অনেক দিন।“
******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
30-07-2025, 12:55 PM
(This post was last modified: 30-07-2025, 04:22 PM by gungchill. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
(29-07-2025, 07:32 PM)বহুরূপী Wrote: আপনার লেখা সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে যে আবেগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, এবং আত্মিক বন্ধন — তা খুব কম গল্পেই এত স্বচ্ছভাবে উঠে আসে। পাঠক হিসেবে পাবেন যদি না রোমান্টিক বলে, পরবর্তীতে রোমান্স থেকেই নড়েচড়ে বসে!❤️
একজন পাঠক পেয়ে ভীষণ খুশি হলাম। তবে রোমান্টিক গল্প বলে এতে সুধু নারী পুরুষের পেমের সম্পর্ক থাকবে এমন নয় । আরো কিছু সম্পর্ক এখানে দেখানোর চেষ্টা করেছি , দেখা যাক কতটুকু সফল হই।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
30-07-2025, 02:14 PM
(This post was last modified: 01-08-2025, 05:03 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পরকঃ ১ (খ)
এদিকে জয়ের বাড়ির পরিবেশ একেবারে ভিন্ন , ছেলের রেজাল্ট শুনে জয়নাল চৌধুরীর খুশিতে হার্ট এটাক হওয়ার জোগাড়। জয়নাল নিশ্চিত ছিলো জয় ফেইল করবে । কিন্তু এতো ভালো রেজাল্ট করবে সেটা কোনদিন ভাবেনি । আনন্দে জয়নালের চোখে পানি চলে আসে , পাশে বসা স্ত্রী আয়শার দিকে তাকিয়ে বলে , “ আয়শা আমি আর কোনদিন তোমার ছেলেকে উল্টা পাল্টা কিছু বলবো না , যদি বলি তুমি এই ফুলের ভাস টা দিয়ে আমার মাথা ফাটিয়ে দিবে”
স্বামীর কথা শুনে স্ত্রী হেসে কুটিকুটী হয় , বলে “ এতো আবার ছাড় দিয়ো না , আবার উছন্নে যাবে”
জান্নাত দূরে দাড়িয়ে ওর বাবা মায়ের এই নাটক দেখছিলো , ওর মাথায় আগুন জলছে , এই তো কিছুদিন আগে ওর মাধ্যমিকের রেজাল্ট হলো জয়ের চেয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে ও , কিন্তু সেদিন ওর বাবা মায়ের এমন ঢং দেখনি , তখন ওদের ভাব এমন ছিলো যে এটা কোন ব্যাপার ই না । এটা হওয়াই তো স্বাভাবিক , না হলেই বরং দুনিয়া উল্টে জেতো । আর এখন ছেলে সাদামাটা রেজাল্ট করেছে , কিন্তু ওদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে নাসার বড় বিজ্ঞানী হয়ে উঠেছে ।
“ তোমাদের ছেলে নিশ্চয়ই নকল করে পাশ করেছে আমি নিশ্চিত”
জান্নতের কথা শেষ হওয়ার আগেই জয়ের আগমন হয় , সার্টের কলার উঠিয়ে জয়নালের পাশে ধপ করে বসে পরে , তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে “ আম্মু তুমি জানো যারা অন্য কারো ভালো সহ্য করতে পারে না তাদের কি বলে?” এক সেকেন্ড বিরতি দিয়ে মায়ের উত্তরের অপেক্ষা না করেই জয় নিজেই উত্তর দেয় , “ তাদের হিংসুটে বলে , আর হিংসুটেদের ওয়ার্ল্ড কাপ হলে আমাদের ঘর ট্রফি দিয়ে ভরে জেতো হা হা হা”
আয়শা ছেলের পায়ে একটা থাপ্পড় মেরে কপট রাগ দেখায় , কিন্তু জয় থামতেই চায় না ।
এদিকে জান্নাত তেড়ে আসে জয় কে মারার জন্য । সেটা দেখে জয় উঠে দৌর লাগায় আর উচ্চ স্বরে বলতে থাকে “ দেখেছো আম্মু আমি বলেছি না , আমাদে বাড়িতে ট্রফি রাখার যায়গা হতো না , পাশের বাড়ি ধার করতে হতো”
ছেলে মেয়ের কান্ড দেখে জয়নাল আর আয়শা হাসতে থাকে ।
জান্নাত জয় কে ধরতে না পেরে আরো বেশি রেগে যায় , রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলে “ আমি তো A প্লাস পেয়েছিলাম কই তখন তো তোমাদের এমন হা হা হি হি দেখি নি , ছেলে একদম নাসার বিজ্ঞানী হয়ে এসছে এমন ভাব করছো”
“ আরে না রে মা , তুই আমার ভালো লক্ষি মেয়ে , তাই আমরা জানতাম তুই ভালো করবি , কিন্তু ওই উল্লুক টা যে পাশ করবে সেই আশাই ছিলো না , তাই একটু বেশি রিয়েক্টঁ করে ফেলেছি , তোর আর জয়ের দুজনের সাফল্য ই আমাদের জন্য গর্বের” বলে জয়নাল রাগে ফুঁসতে থাকা জান্নাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।
বিকেল বেলা অবশ্য , জান্নাত রাগ ভুলে যায় । জয়কে বলে “ কিরে তুই যে দুনিয়া উল্টে এলি পার্টি দিবি না?”
“ দেবো , কিন্তু সেই পার্টিতে বাচ্চা এলাউড না” জয় স্বভাব সুলভ চিকি টোনে বলল ।
“ তুই কাকে বাচ্চা বলছিস?” জান্নাত চোখ সরু করে জিজ্ঞাস করলো
“ এই নে টাকা , বান্ধবিদের সাথে খেয়ে নিস, আমার পার্টিতে সুধু বিশেষ লোকজন থাকবে” জয় পকেট থেকে দুই হাজার টাকা বের করে দিয়ে দেয় ।
জান্নাত অপমানিত বোধ করলেও টাকা নেয়া থেকে বিরত থাকে না । ভাবে এই ওভার এক্টিং করা হিরোর কাছ থেকে যত নেয়া যায় ততই ভালো । টাকা পেয়ে একটু খুশিই হয় । বলে “ কে তোর বিশেষ মানুষ”
“কে আবার আমার ভাই রাজীব”
“ ধুর দুইজনে পার্টি হয় নাকি” জান্নাত নাক সিটকায়
“ হয় হয় মানুষের মত মানুষ দুইজন হলেই হয়” জয় নাটকিয় ভঙ্গিতে বলে
“ কই আমি ত সুধু একজন মানুষ দেখতে পাচ্ছি সেটা হচ্ছে রাজীব , আর তুই তো একটা উল্লুক” বলে জান্নাত আর দাড়ায় না , দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় ,যাওয়ার সময় জয়ের টেবিলে একটা চকলেট বাড় রেখে যায়। জয়ের পাশ উপলক্ষে কিনে এনেছিলো ।
জয় জান্নাত কে ধাওয়া করতে গিয়েও থেমে যায় । টেবিলের উপর থেকে চকলেট বারটি হাতে নেয় , ওর ঠোঁটে একটা উষ্ণ হাসি ফুটে ওঠে । ছোট্ট একটা চকোলেট বার যে মুখে না বলা আদর মায়া মমতার কথা গুলো নিরবে প্রকাশ করতে পারে সেটা জয়ের আগে জানা ছিলো না । sisters are different , ঘরে মায়া মমতার পরিবেশ সৃষ্টি করায় ওদের চেয়ে পারঙ্গম সুধু মা ই হতে পারে, জয় মনে মনে ভাবে।
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
প্রতিটা পোস্টের জন্য এক দিন করে অপেক্ষা করা বেশ কষ্টকর । এভাবেই কি চলবে , আগে তো জানতাম প্রথম পোস্ট আপ্রুভড হলে এর পর থেকে পোস্ট সাথে সাথেই দেখা যায়। কারো জানা থাকলে জানাবেন প্লিজ
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
কিছু সম্পর্কঃ ২
বাড়িতে জয় আর জান্নাত কেউ ছিলো না , তবে শিকদার পরিবারেকে স্বগত জানানোয় কোনরকমে কমতি হলো না । জয়নাল আর আয়শা বাড়ির গেটের সামনে দাড়িয়ে ছিলো । রাজীব অটো থেকে নেমেই ওদের দুজন কে পা ছুয়ে সালাম করলো। আয়শা আর জয়নাল দুজনেই রাজীব কে জড়িয়ে ধরে আদর করলো ।
রানী রাজীবের পেছনেই দাড়িয়ে ছিলো , রানীর পালা এলে ও আর পা ছুয়ে সালাম করার সময় পেলো না , আয়শা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো । কাঁপা গলায় বলল , “ মারে এই দের বছরে তুই কত বড় হয়ে গেছিস, একদম তোর মায়ের মত লাগছে” বান্ধবির কথা মনে হতেই আয়শার চোখে পানি চলে এলো । বেশ কিছুক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখলো রানীকে , তারপর কপালে চুমু খেলো ।
আরে এবার তো ছারো আমাদের মহারানীকে , আমিও একটু দেখি “ জয়নাল পেছন থেকে হাসতে হসাতে বলল”
কিন্তু ওর স্ত্রী তাতে কর্ণ পাত করলো না , বলল “ তুমি পরে দেখো , আমি আগে আমার বুক জুরাই”
এদিকে রহিম শিকদার ব্যাগ পত্তর নিয়ে পেছনে এসে দারিয়েছে , হাসি মুখে বলল “ ছেলে মেয়ে পেয়ে এই বন্ধুকে ভুলে গেলে”
“ তুই না এলেই পারতিস” হাসতে হসাতে জয়নাল এগিয়ে গিয়ে রহিমের হাত থেকে একটা ব্যাগ নিজের হাতে নেয় । তারপর সবাই মিলে ঘরের ভেতর যায় । সুধু রহিম ঘরের ভেতর যাওয়ার সময় পাশের খালি বাড়ির দিকে একবার চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ।
*****
বিকেল বেলা রানী আয়শার সাথে রান্না ঘরে রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে । রানী পেঁয়াজ কেটে দিচ্ছে । আয়শা রানীর পেঁয়াজ কাটা দেখে বেশ ইম্প্রেসড হয়ে জিজ্ঞাস করলো , “ বাহ মা, তুই তো ভালো কাজ শিখে গেছিস , কিভাবে?”
“ আমি আর ভাইয়া মিলেই তো খাবার বানাই বাসায়, ভাইয়ার কাছে শিখেছি” রানী পেঁয়াজ কাটতে কাটতে বলল
আয়শার মনটা ভারি হয়ে এলো , কিন্তু মুখে হাসি রেখেই রানীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল “ মা আমার বড় হয়ে গেছিস”
এমন সময় জান্নাত ফিরে এলে , বাড়ির পরিবেশ দেখেই বুঝতে পারে কে এসেছে । ঘরের ভেতর ঢুকেই চেঁচিয়ে রানীকে ডাকতে শুরু করে , “ কই গো আমাদের মহারানী , আপনার সেবায় দাসী হাজির”
“ ঐযে এসেছে , নিজেকে দাসী বলছে আর কাজ করে সম্রাজ্ঞীর মত , যা মা দেখা কর নইলে বাড়ি মাথায় তুলবে , কিন্তু ভুলেও রান্না ঘরের দিকে আসবে না , এই পথ সে চেনে না” আয়শা রাগের সাথে বলল ,
রানী রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে টিভিতে দেখানো সিরিয়ালে রানীদের মত কমোরে দু হাত রেখে গলা টান করে বলল বলল “ কে এই বেয়াদপ এতো এতো উচ্চস্বরে চেঁচাচ্ছে ?”
“ দাড়া বেয়াদপ কাকে বলে তোকে শেখাচ্ছি ” এই বলে দৌরে এলো জান্নাত , একে অপর কে জড়িয়ে ধরে দুটো চক্কর খেলো, তারপর দুই বান্ধবি হাসতে হসাতে জান্নাতের ঘরে চলে গেলো ।
এর কিছুক্ষন পর জয়ের এন্ট্রি হলো , কেজুয়াল ড্রেস পরা , জিন্স আর টিশার্ট , কিন্তু হাঁটাচলায় হিরোদের এলিগেন্স ।জয় জানে না যে আজ কে এসেছে , রাজীব ইচ্ছা করেই বলেনি । এবং ফোনে বড় আম্মু আর বড় আব্বুকে বলে দিয়েছে যেন জয় কে না জানানো হয় ।
ঘরে ঢুকে সুস্বাদু রান্নার সুগন্ধ পেয়ে , হল ঘর থেকেই চেঁচিয়ে ওর মা কে ডাকল “ আম্মু ,আম্মু , এই আম্মু” কিন্তু আয়শা কোন উত্তর দেয় না দেখে আরো জোরে চেঁচিয়ে ডাকল “মাম্মি………”
আয়শা ইচ্ছে করেই এতক্ষণ উত্তর দেয়নি , কিন্তু উত্তর না দিলে রক্ষা নেই এটা ওর জানা আছে , তাই চেচিয়েই উত্তর দিলো “ তোমরা দুই ভাই বোন কি রান্না ঘরের রাস্তা চেনো না , দূর থেকে চেঁচিয়ে তোমাদের উত্তর দিতে হবে” বেশ রাগের সাথেই বলল আয়শা , ছেলে মেয়ে দুটোর এই অভ্যাসে বেশ বিরক্ত ও বাড়িতে ঢুকেই চেচানো শুরু করবে ।
কিন্তু আয়শার রাগান্বিত স্বরের কোন মূল্য জয়ের কাছে নেই , ও আবারো চেঁচিয়ে উঠলো বলল “ আজকে বাড়িতে এতো রান্নার সুগন্ধ আসছে কেউ আসবে নাকি, জান্নাত কে দেখতে আসবে নাকি পাত্র পক্ষ” শেষের কথা গুলো জান্নাত কে ক্ষেপানোর জন্য বলল।
আর এতে কাজ ও হলো , জান্নাত আর রানী জান্নাতের ঘর থেকে বেড়িয়ে এল । পুরো এগ্রেসিভ মুডে জান্নাত , দোতলার রেলিং ধরে নিচে হল রুমের দিকে তাকিয়ে বলল “ এই উল্লুক , তোর মনের আশা এতো সহজে পূর্ণ হবে না , আমি এই বাড়ি ছেড়ে এতো জলদি কোথাও জাচ্ছি না , আমার বিয়ের পর হ্যাজবেন্ড নিয়েও এইখানে থাকবো”
জয় উত্তর দেয়ার জন্য উপরে তাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু ওর কথা মুখের ভেতরেই আটকে যায় , জান্নাতের সাথে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে , নাহ সাধারন কোন মেয়ে নয় , মেয়েটিকে অনিন্দ্য সুন্দরি বললে ভুল হবে না । একবার তাকালে সহজে চোখ ফিরিয়ে নেয়া যায় না । টানা টানা চোখ দুটোতে রাজ্যের সকল রহস্য এসে আশ্রয় নিয়েছে ।
বেশ কয়েক সেকেন্ড চুপ থাকার পর জয় জিজ্ঞাস করলো “ এটা কে রে ?” তারপর হঠাত করেই চিনতে পারলো বলল “ আমাদের রানী না? ওরে বাপ তোকে তো চেনাই জায়না ,একদম বড় হয়ে গেছিস , একেবারে ইয়ং লেডি লাগছে ” স্বভাব মত চুটল ভঙ্গিতে জিজ্ঞাস করলো জয় ।
বেশ লজ্জা পেলো রানী , গলার ওড়নায় হাত চলে গেলো অটোমেটিক , না এতে জয়ের দৃষ্টির কোন দোষ নেই । কিছুক্ষন আগে জান্নাত আর ওর কথোপকথনের টপিক ছিলো ওর শরীরের বিশেষ একটা অঙ্গ বড় হওয়া নিয়ে । তাই জয় যখন “বড়” শব্দটা বলল তখন ওর হাত অটো রিফ্লেক্স দেখিয়ে ওই কাজটা করলো । সেই সাথে গাল দুটো হালকা লাল হয়ে গেলো , তার উপরে এসে ভর করলো রাজ্যের লজ্জা , যদি কেউ ওর ব্লাশিং করা দেখে ফেলে । জয়ের চোখেও ব্যাপারটা এড়ালো না , হালকা বিব্রত বোধ করে জয় রানীর উপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো ।
এদিকে জান্নাত রেগে মেগে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো , কিন্তু জয় ওকে থামিয়ে দিলো , নিজে নিজেই বলতে লাগলো “ রানী এসেছে , এর মানে রাজীব ও এসেছে” হিসেব মিলে যেতেই রাজীব রাজীব বলে বাড়ি মাথায় তুলতে লাগলো ,
আয়শা আর টিকতে না পেরে রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল “ ও ছাদে রে মুখপোড়া”
“থ্যাংকইউ মাম্মি” এই বলে জয় হাওয়ায় স্যালুট দেয়ার একটা ভঙ্গি করলো তারপর সিঁড়ি ভেঙ্গে ছাদের দিকে চলল , তবে যাওয়ার সময় ঘুরে একবার রানীর দিকে তাকিয়ে গেলো , কয়েক পলক এর জন্য দুজনের চোখ এক হলো , একটা আজব অনুভূতি অনুভুত হলো জয়ের , যে অনুভুতির সাথে ও ঠিক পরিচিত না ।
এদিকে রানীর গাল দুটো আরো এক শেড লাল হয়ে উঠলো , মনে মনে ভাবল …… কি আজব মানুষ !!!
এদিকে জান্নাত ব্যাকগ্রাউন্ডে চেঁচিয়ে কিছু বলছে , কিন্তু দুজনের একজন ও সেই কথা শুনছে না ।
ছাদে উঠতে উঠতে অবশ্য জয়ের মন থেকে সেই আজব অনুভূতি গায়েব হয়ে গেলো । কারন রাজীব তখন ওদের ছাদ থেকে নিজের মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে আছে। বন্ধুকে এমন ভাবে মায়ের কবরের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জয়ের মনটাও সিক্ত হয়ে উঠলো, ছোট বেলার কথা মনে পরে গেলো । এই রাজীব আর সেই রাজীবের মাঝে বিস্তর তফাৎ । তখন রাজীব ছিলো দুষ্টের শিরোমণি আর প্রচণ্ড জেদি । এমন জেদি যে ওর জেদের কাছে জয় কেও হার মানতে হতো । কিন্তু ওর মা মারা যাওয়ার পর আমুলে পরিবর্তন হয়ে গেলো ছেলেটি । এর পর তো এখান থেকে চলেই গেলো । কিন্তু এর পর যখনি আসতো জয় চেষ্টা করতো পুরনো রাজীব কে ফিরিয়ে আনতে । কিন্তু বার বার ব্যারথ হয় জয় ।
রাগ হতো জয়ের , ভাবতো রাজীব একদম স্বার্থপর একটা ছেলে । হ্যা মা চলে গেছে দুনিয়া থেকে , কিন্তু তাতে কি? ওর ভাই তো আছে । ভাইয়ের জন্যও না হয় একটু আনন্দ ফুর্তি কর । কিন্তু ধিরে ধিরে অভ্যস্ত হয়ে গেছে জয় , প্রতিজ্ঞা করেছে , রাজীব যেমনি থাকুক সব সময় ওর ভাই ওর বন্ধু সবচেয়ের কাছের মানুষ হয়েই থাকবে ।
স্থির হলো জয় ধিরে ধিরে হেটে রাজীবের পেছনে এসে দাঁড়ালো । একটা হাত রাখলো বন্ধুর পিঠে , বন্ধুর হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে দাঁড়ালো রাজীব ।
“ ছোট আম্মু এখানে একা নেই ভাই , আমরা সব সময় আছি পাশে”
রাজীব মুখে কিছু বলল না সুধু জয়ের কাধে একটা হাত রেখে চাপ দিলো । মুখটা ভার হয়ে আছে রাজীবের , কিন্তু জয় এই মুখ ভার বেসিক্ষন স্থাই হতে দিতে চায় না , রাজীবের মন খারাপ ও বেসিক্ষন সহ্য করতে পারে না । জয় বলল “ উহু ভাই আজকে তো মুখ ভার করে রাখলে হবে না , আজকে পার্টি , তোকে পেয়ে মনে হচ্ছে আজকেই রেজাল্ট পেলাম, এখন পার্টি না করলে মন ভরবে না”
*****
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
অবশেষে মুক্তি পেলাম । পরবর্তী পর্ব পোস্ট হতে দু চারদিন সময় লাগবে । ততদিনে কিছু কমেন্ট আশা করতে দোষ কি?
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
03-08-2025, 04:19 PM
(This post was last modified: 03-08-2025, 04:19 PM by gungchill. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
কিছু সম্পর্কঃ ২ (ক)
দুই ঘণ্টা পর ,
শহরের নামীদামী ক্লাব এর সামনে জয় বাইক থামালো , বাইক থেকে নামার সময় ই বেশ কিছু চোখ ওদের দুজন কে লক্ষ করলো , অবশ্য রাজীব আর জায়েদ কে দেখে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়ার ই কথা । দুজনের বডি বেশ দেখার মত , রাজীব একটু লম্বা প্রায় ছয় ফুট আর একটু পাতলা গড়নের দিকে হলেও ওয়েল মেইন্টেড ফিগার । কালো সার্ট আর জিন্সে বেশ মানিয়েছে ওকে । অপর দিকে জয় রাজীবের মত লম্বা না হলেও বেটে নয় মোটেও, পাচ ফুট আট উচ্চতার সাথে বেশ মাসল যুক্ত বডি , গত এক বছর নিয়মিত জিমে সময় দেয়ার ফল । সাদা সার্ট আর ব্লু জিন্সে দারুন মানিয়েছে । এমন দুজন হ্যান্ডসাম ছেলে কোন জায়গায় উপস্থিত হলে তো লকজন তাকাবেই , বিশেষ করে মেয়েরা ।
রাজীব কোনদিন নাইট ক্লাবে যায়নি , তাই বন্ধুর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে একটু ভড়কে যায় , জয়ের কানের কাছে মুখ এনে ফিস্ফিস করে বলে “ ভাই কোথায় নিয়ে এলি , এটা যে নাইট ক্লাব”
জয় একটু ইরিটেট হয়ে রাজীবের এমন আচরনে , নিচু স্বরে বলে “ জানি ভাই এইটা নাইট ক্লাব , কিন্তু তুই এমন ফিসফিস করে কানের কাছে কথা বলে আমার ইজ্জতের ফালুদা করিস না”
“বড় আম্মু শুনলে রাগ করবে” রাজীব ভীত স্বরে বলে
“ আম্মুর কাছে কে বলবে ? তুই? শোন আমাদের এখন ১৮ বছর হয়ে গেছে এর মানে আমরা এডাল্ট একটু এডাল্টের মত আচরন কর ,তুই কবিতা পড়িসনি ‘আঠারো বছর বয়সেই অহরহ বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।’ । দেখ কবিও আমাদের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছে আর তুই এখনো বুঝলি না । দ্রুত বুঝে নে নইলে আমি তোকে আবারো কিন্ডারগার্ডেনে ভর্তি করে দেবো , আর লোকাল গার্ডিয়ানের জায়গায় আমার নাম লিখে দেবো”
জয়ের কথা শুনে রাজীব হাসি চাপতে পারে না , হাসতে হসাতে বলে “ আরে ব্যাটা কবি কি বোঝাতে চেয়েছে আর তুই কি বুঝছিস!! এর জন্যই বলি মুখস্ত করা বাদ দিয়ে বুঝতে শিখ, নইলে পরে পচতাতে হবে”
“ হইসে ভাই আমার , আমাকে মাফ কর , এখন আমি কবি এখানে কি বোঝাতে চেয়েছে সেই উত্তর লিখতে আসিনাই , আমার ভাইয়ের সাথে মাস্তি করতে এসেছি , আর চারিদিকে তাকিয়ে দেখে কত পরী , লাল পরী নিল পরী সাদা পরী কালা পরী , এসো আমরা সবার সাথে ভাব করি “ শেষের কথা গুলো জয় গান গাওয়ার মত করে গাইলো ।
রাজীব এবার আর নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পারে না । হাসতে হাসতে জয়ের পেছন পেছন ক্লাবে ঢুকে পরে । মনে মনে ভাবে ওর জীবনে জয়ের অবদান , দুজন এতো বছর যাবত কত দূরে রয়েছে । অথচ যখনি দুজন এক সাথে হয়েছে রাজীব নিজেকে হালকা অনুভব করেছে । জয়ের উপস্থিতিতে রাজীবের কাছে জীবন কে বেশ উপভোগ্য মনে হয় ।
লাউড মিউজিক , নারী পুরুষের হাস্য রস আর শোরগোলের ভরপুর ভেতরটা , রাজীব পুরো জায়গাটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বন্ধুর পেছন পেছন কাউন্টারে এসে পৌছায় , জায়েদ দুটো বিয়ার অর্ডার করে । কিন্তু রাজীব পেছন থেকে বাধা দেয়, বলে “ আমি সুধু কোক নিবো”
“ ওকে গুড বয় , তবে বিয়াড় দুটই আসবে , তোরটা আমি খেয়ে নেবো”
প্রায় বিশ মিনিট পরঃ
রাজীব একটা রেলিঙয়ে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে , আর জয় ডান্স ফ্লোরে । এক অপরিচিত মেয়ে সাথে এমন ভাবে ডান্স করছে যেন কত দিনের পরিচয় ওদের দুজনের মাঝে । রাজীব বন্ধুর কীর্তি কলাপ দূর থেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে শালা কোনদিন ঠিক হবে না । আর মেয়েগুলোও মাছির মত আকর্ষিত হয় ওর দিকে। যেন জয় কোন সন্দেশ আর মেয়ে গুলো মাছি ।
কিছুক্ষন পর রাজীব দেখলো , জয় এখন মেয়েটির সাথে একেবারে লেপ্টে গিয়ে ডান্স করছে । জয়ের হাত মেয়েটির এমন এমন জায়গায় টাচ করছে , যেখানে টাচ করলে সচরাচর থাপ্পর খেতে হয় । কিন্তু মেয়েটি জয়কে কিছু তো বলেছেই না উল্টো নিজেকে আরো খুলে দিচ্ছে । রজিব কাঁধ ঝাঁকিয়ে মনে মনে ভাবল ……”আমার কি” । এর পরক্ষনেই জয় রাজীবের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচিয়ে মেয়েটির দিকে ইশারা করলো । রাজীব ও নিজের কোকের গ্লাস উচিয়ে বিনা শব্দে চিয়ার্স বলল , মনে মনে বলল ‘চালিয়ে যাও ভাই’ ।
এমন নয় যে রাজীবের খারাপ লাগছে এখানে থাকতে । জয়ের আনন্দ দেখে ওর নিজের ও ভালো লাগছে । প্রথমে ঢুকে যতটা বিরক্তি লেগেছিলো এখন ন্তেমন লাগছে না । কেউ ডিস্টার্ব করছে , এক মনে দাড়িয়ে আছে আর আশেপাশের লোকজন গুলো পর্যবেক্ষণ করছে । কত বাহারি যে মানুষের রঙ সেটা এসব যায়গায় এলেই সুধু বোঝা যায় ।
রাজীব যখন জয়ের উদ্দাম নাচ দেখার পাশাপাশি আশেপাশের লোকজনের উপর দৃষ্টি বুলাচ্ছিলো ঠিক তখনি একটা মেয়ে এসে রাজীব কে এপ্রচ করলো । একটু ভেবাচ্যাগা খেয়ে গেলো রাজীব । এমন নয় যে মেয়েদের সাথে কোনদিন আলাপ হয়নি । কিন্তু এমন পরিবেশে আর এমন পোশাক পরা মেয়েদের কোনদিন আলাপ হয়নি । রাজীব একবার ডান্স ফ্লোরে জয়ের দিকে তাকালো । জয় রাজীবকেই লক্ষ করছিলো । দুজনের চোখাচোখি হতেই জয় ভ্রু কুঁচকে রাজীবকে কুল থাকার ইশারা করলো ।
মেয়েটি বেশ সুন্দরি , আর আধুনিক পোষাকে বেশ আবেদনময়ি লাগছিলো । মেয়েটি খুব কনফিডেন্টের সাথে রাজীব কে জিজ্ঞাস করলো , “ একা একা দাড়িয়ে যে কারো জন্য অপেক্ষা করছো?” মেয়েটির গলার স্বর হলকা ফেস্ফেসে , মদকতায় পূর্ণ ।
রাজীব যথাসম্ভব কুলা থেকে বলল “ না , আসলে আমি আমার বন্ধুর সাথে এসেছি” রাজীব জয়ের দিকে ইশারা করলো ,
“মেয়েটি জয়ের দিকে এবার তাকিয়ে ,মিষ্টি করে হেসে বলল , ওয়াও তোমার বন্ধুও তোমার মত হট , তুমি কি তোমার বন্ধুর সাথে জয়েন করতে চাও , তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে যেতে পারি” পরিস্কার ইশারা , রাজীব বুঝলো মেয়েটি ওর সাথে ডান্স করতে চাইছে । ওর গলা শুকিয়ে এলো । কয়েক সেকেন্ডের জন্য নিজেকে ডান্স ফ্লোরে কল্পনাও করলো , কিন্তু সেটা যে একটা ডিজাস্টার হবে সেটাও বুঝতে পারলো ।
“ না আমি এখানেই ঠিক আছি” নিজেকে স্থির রেখে বলল ,
“ ওহ কাম অন , এমন পরিবেসে তুমি সুধু দাড়িয়ে থাকবে!!!” মেয়েটি সত্যি সত্যি অবাক হয়েছে ।
“ আসলে আমি ডান্স করতে ঠিক সাচ্ছন্দ নই” রাজীব নিজের কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল । এখন ওর প্রথম দিককার অস্থিরতা নেই বেশ সুস্থির হয়ে এসেছে , কনফিডেন্স কিছুটা ফিরে এসেছে ।
আরো কিছুক্ষন কথা বলার পর মেয়েটি চলে গেলো , চলে যাওয়ার সময় মেয়েটির চোখে মুখে একি সাথে বিরক্তি আর আফসোস দুটো অভিবেক্তি ই প্রকাশ পেলো ।
প্রায় ঘণ্টা দুই পর , রাজীব জয় কে প্রায় ধরে ধরে ক্লাব থেকে বের করে নিয়ে এলো । প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে জয় ওই মেয়েটির সাথে উধাও হয়ে গিয়েছিলো । অনেক খুজেও রাজীব জয় কে কোথাও দেখতে পায়নি । বেশ বিচলিত হয়ে পরেছিলো রাজীব । জয় সুধু দুটো বিয়ারেই সিমাবদ্ধ থাকেনি । ওই মেয়েটির সাথে আরো কিছু পান করেছে ।
রাজীব যখন পুরোপুরি অস্থির হয়ে উঠেছিলো ঠিক তখনি জয় এসে হাজির হয় , চুল গুলো এলোমেলো , সার্ট কুঁচকে আছে , ঠোঁট দুটো আর তার আশেপাশের কিছু এড়িয়া হলকা লাল । রাজীব দাতে দাঁত পিষে জিজ্ঞাস করেছিলো “ গোসল করে এসেছিস তো , নাহলে আমি তোর সাথে বাইকে উঠবো না”
শুনে জয় হাসতে হসাতে বলে “ চিল ব্রো , ভালবাসা বাসি কি অচ্ছুৎ নাকি , আরে আমরা এই প্রসেসের মাধ্যমেই দুনিয়াতে এসেছি , আর তুই সেই প্রসেস কে অপবিত্র বলছিস!!!! হাউ রুড” কথা বলার সময় জয় বেশ টলছিলো ।
রাজীব জয়ের কাছ থেকে বাইকের চাবি চাইলো , কিন্তু জয় কিছুতেই দিতে চায় না । বলে “ তুই আমার বাইক চালানো নিয়ে সন্দেহ করছিস , আরে তোকে কে শিখিয়েছে বল”
“তুই শিখিয়েছিস , কিন্তু এখন তোর চালানোর মতন অবস্থা নেই” রাজীব দৃঢ় কণ্ঠে বলে
“ কে বলছে?” জয় চেঁচিয়ে উঠলো
“ আমি বলেছি” রাজীব ও ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে দেখলো জয়ের দিকে
“ তুই কি নিজেকে মাস্টার মশায় ভাবিস নাকি , যে তোর সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে, তুই আমাকে চিনিস না , তোর ভাইয়ের প্যাসেঞ্জার সিটে বসার জন্য জন্ম হয়নি , সব সময় ড্রাইভিং সিটে বসার জন্য জন্ম হয়েছে ।
“ সেটা আমি জানি হিরো গিরি না করতে পারলে তোর পেটের ভাত হজম হয় না , কিন্তু আমার সামনে হিরোগিরি করতে এলে দাঁত ভেঙ্গে দেবো শালা” এই বলে রাজীব জয়ের কাছ থেকে জোর করে চাবি নিয়ে নেয় । জয় হালকা মাতাল থাকার কারনে তেমন বাধা দিতে পারে না । কিন্তু শারীরিক ভাবে না পারলে কি হবে , ডায়লগে হারতে নারাজ জয় । তাই রাজীব যখন চাবি নিয়ে নিচ্চিলো তখন বলল “ তুই আমার ভাই বলে কিছু বললাম না অন্য কেউ এই চাবিতে হাত দিলে হাত ভেঙ্গে ফেলতাম”
“ হুম হইসে আমার হিরো , আমাকে নিয়ে পার্টি করবি বলে সারাক্ষণ ওই মেয়ের পেছন পেছন ঘুরলি , এটা কি আমাকে নিয়ে পার্টি হলো ?” রাজীব বেশ রাগত স্বরে বলল
“ আমি তো তোর জন্য ওই মেয়ের বান্ধবিকে পাথিয়েছিলাম ই , তুই ই তো ওই মেয়ে তাড়িয়ে দিলি , যদি তুই আসতি কত ভালো হত বলতো , আমরা একটা ফোরসাম হয়ে যেতাম হা হা হা” জয় উচ্চস্বরে হাসতে হাসতে বলল ,
রাজীব বাইক স্টারট করতে করতে বলল “ আমার ফোরসাম হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই”
“ কেনো তোর সিক্রেট ফাঁস হয়ে যেত ? আচ্ছা বলতো ভাই তোর অইটা কত ছোট , আমাকে লজ্জা কি, বলনা বলনা” জয় চলন্ত বাইকেই রাজীবের কাঁধ ঝাঁকাতে লাগলো ।
“ এরকম কাঁধ ঝাকালে কিন্তু বাইক আমি সোজা ট্রাকের নিচে ঢুকিয়ে দিবো” রাজীব রাগের সাথে বলল
“ এই কাজ ভুলেও করিস না ভাই , তোর ওই ছোট জিনিস নিয়ে বাঁচার ইচ্ছা না থাকতে পারে , কিন্তু আমার আছে , এই পৃথিবীর কোনায় কোনায় কত ট্রেজার লুকিয়ে আছে সেই সব ট্রেজার সাইট খোঁড়ার ইচ্ছা আমার , এতো আগে দুনিয়া ছেড়ে যেতে চাই না” জয় যে ট্রেজার বলতে সুন্দরি মেয়ে বুঝিয়েছে সেটা বুঝতে রাজীবের কষ্ট হলো না ।
“ একটু পর বড় আব্বু তোর ট্রেজার খুঁড়ে বের করবে সেই খেয়াল আছে?” রাজীব হাসতে হাসতে বলল
“ তুই আছিস না আমার ভাই , তুই আমাকে বাঁচিয়ে দিবি আমার বিশ্বাস আছে , তোর সাথে থাকলে আমার আর কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না , আমার ভাগের চিন্তা তুই করে দিবি , মিঃ ডিপেন্ডেবল”
জয়ের কথা শুনে রাজীব মুচকি হাসে । জয় পেছন থেকে ওর গলা পেচিয়ে ধরে বলে “ তুই না থাকলে আমি ফর্ম হারিয়ে ফেলিরে ভাই , যখন ক্রিজের অপর পাশে মিঃ ডিপেন্ডেবল না থাকে তখন এই মাস্টার ব্লাস্টার ছক্কা হাঁকাতে ভয় পায়”
পুরো রাস্তা জয় এরকম ইমোশনাল ডায়লগ দিতে দিতে এসে বাড়ির সামনে বমি করতে শুরু করে , সেই বমির আওয়াজ শুনে আয়শা বারান্দায় বেড়িয়ে আসে ।
“ এই রাজীব জয়ের কি হয়েছে রে ” বলে আয়শা দৌরে জয়ের কাছে আসে , কন্তু রাজীব আগেই আয়শার সামনে এসে দাড়িয়ে যায় বলে “ কিছু না বড় আম্মু , ওর ফুড পয়জনিং এর মত হয়েছে , আমি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি , ডাক্তার বলেছে রেস্ট নিতে”
এই বলে রাজীব জয় কে ধরে ওর ঘরে নিয়ে যায় । সেদিনের মত রাজীব আবারো জয় কে সামলে নেয়।
“ তুই না থাকলে যে আমার কি হবে রে ভাই , তুই হচ্ছিস আমার সব কান্ডের একজিট প্লান , তুই না থাকলে আমি কবেই ধরা খেয়ে হাজতে থাকতাম”
রাজীব জয়ের ইমোশনাল ডায়লগ শুনতে শুনতে এবং খালি পেটে রাত কাটিয়ে দেয় । ঘরে এতো ভালো ভালো খাবার থাকা সত্ত্বেও । কিন্তু তবুও রাজীবের চোখে মুখে একটা তৃপ্তির ভাব । জয় পাশে থাকলে রাজীবের মনে হয় ওর ফিকে ম্যাড়ম্যাড়ে দুনিয়ার সাথে জয়ের রংচঙে দুনিয়া এক হয়ে একটা নতুন দুনিয়া তৈরি হয় । কিছুক্ষনের জন্য হলেও রাজীব জয়ের মাধ্যমে সেই দুনিয়ার স্বাদ নেয় ।
*****
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা, গল্প পড়ে নিজেদের ভালো লাগা মন্দ লাগা নিয়ে যদি দুটো কথা বলেন , তাহলে নিজেকে সফল মনে করতাম।চরিত্র গুলো নিয়ে আপনাদের মতামত কি , এদের কে আপনাদের কেমন লাগছে , কি হলে আরো ভালো হতো । এসব দুটো লাইনে লিখে জানালে আমি খুবি খুশি হবো । লাইক রেপুটেশন এর বদলে এই ধরনের কমেন্টস আমার জন্য বেশি দামি ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 366
Threads: 0
Likes Received: 140 in 134 posts
Likes Given: 203
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
কিছু সম্পর্কঃ ২ (খ)
পরদিন সকালে,
দুই বন্ধু জয়নাল আর রহিম এক সাথে হাটতে হাটতে পুরনো কথা নিয়ে মশগুল , কথার ফাঁকে ফাঁকে পুরনো কোন মজার সৃতি চলে আসলে দুই বন্ধু মন খুলে হাসতে থাকে । এরম হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে জয়নাল সিরিয়াস হয় যায়। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে বলে “ একটা কথা রাখবি?”
বন্ধুর হঠাত এমন সিরিয়াস মুড দেখে রহিম ভালো করে একবার জয়নালের দিকে তাকায় , জয়নালের চোখে অনুনয়ের ভাষা কি বলতে চায় রহিমের বুঝতে অসুবিধা হয় না । রহিম বন্ধুর কাধে হাত রেখে বলে “ আমিও অনেক দিন ধরে চিন্তা করছি, আর ভালো লাগে না”
“ চলে আয় না বন্ধু , কতদিন এমন জেদ ধরে রাখবি” জায়নার কাতর স্বরে অনুরধ করে ।
“ তুই আমাকে যে টাকা দিয়েছিলো তার থেকে সুধু আফরোজার চিকিৎসার খরচ করেছি , বাকি টাকা ওভাবেই আছে ব্যাংকে , এতো দিনে টাকা বেড়ে অনেক হয়েছে বরতমানে এই বাড়ির যে দাম তারচেয়ে খুব বেশি কম হবে না , ভেবেছিলাম ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের জন্য রেখে যাবো , কিন্তু আফরোজা আমাকে দুইটি হীরের টুকরো দিয়ে গেছে , ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমার চিন্তা করার কিছুই নেই, কিন্তু আমি ওদের বর্তমান খুশি দেখতে চাই , আর এখানে থাকার চেয়ে বেশি খুশি ওদের জিবনে আর কিছু নাই বলেই মনে হচ্ছে আমার, তুই বন্ধু টাকাটা ফেরত নে”
উচ্চস্বরে হেসে ওঠে জয়নাল , তারপর বলে “ তুই কখনো মানুষ হবি না শালা, তোর মনে আছে বাড়ি রাখার সময় আমি একটা সর্ত দিয়েছিলাম?”
“হু” ছোট্ট করে উত্তর দেয় রহিম ,
“ আমি তোর সর্ত পূরণ করেছি এবার তুই আমার সর্ত পুরন কর” জয়নাল রহস্য করে বলে
“ মানে?” রহিম বুঝতে পারে না জয়নাল কি বলতে চায়
“ আমি সর্ত দিয়েছিলাম যে এ বাড়ি নিয়ে আমি কি করবো সেটা একান্ত আমার ব্যাপার , তুই এতে নাক গলাবি না” জয়লান রহিম কে মনে করিয়ে দেয় ।
রহিম নিসচুপ থাকে , রহিম কে চুপ থাকতে দেখে বলে “ আমি অনেক আগেই এই বাড়ি রাজীব আর রানীর নামে করে দিয়েছি, মনে আছে যে আমি তোর কাছ থেকে সাদা কাগজে সিগনেচার নিয়েছিলাম , আর তুই গাধা আমাকে বিশ্বাস করে সিগনেচার দিয়ে দিয়েছিলি ?”
রহিমের মুখে কোন কথা আসে না , জয়নাল কি বলতে চাইছে ও ঠিক বুঝতেও পারে না ।
“ ওই দলিলে বাড়ি বিক্রির কোন কথা আমি লিখিনি , লিখিয়েছি যে তুই তোর এই বাড়ি তোর দুই ছেলে মেয়ের মাঝে ভাগ করে দিয়েছিস”
রহিম অবাক হয়ে জায়নালের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন তারপর , মাথা নিচু করে কিছু ভাবতে থাকে , তারপর কিছু বলতে চাইলে জয়নাল ওকে বাধা দেয় “ তোকে আমি চিনি , তাই আমার আর একটা প্রস্তাব আছে , আমি যত টাকা দিয়েছিলাম , তুই ওই টাকাই আমাকে ফেরত দে , বর্তমান দাম নিয়ে চিন্তা করিস না”
এবার রহিমের মুখে হাসি ফুটে ওঠে ,“ বলে বন্ধুর জন্য এটুকু করতে আমার কষ্ট হবে না” যদিও রহিম মজার ছলে কথাগুলো বলল কিন্তু ওর চোখ দুটো বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ছল ছল করে উঠলো, বুকের ভেতর অসহ্য চিনচিনে অনুভূতি হতে লাগল । জয়নালের কাছে রহিম নিজের ছলছলে চোখ লুকাতে পারলো না , জয়নাল বন্ধুর কাধে হাত রেখে আলতো চাপ দিলো ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
কিছু সম্পরকঃ ২ (গ)
দুই বন্ধু জয়নাল আর রহিম যখন রহিমদের নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসার কথা বলছে , ঠিক তখনি রাজীব আর রানী নিজেদের পুরোন বাড়ির পেছনে মায়ের কবরের পাশে দাড়িয়ে । দুজন পাশাপাশি একে অপরের সাথে লেগে দাড়িয়ে আছে , রাজীব এক হাত দিয়ে রানীর কাঁধ বেষ্টন করে রেখছে আর রানী এক হাত দিয়ে রাজীবের কোমর ।
হুহু করে কাঁদছে রানী , কান্নার দমকে হেঁচকি উঠে গেছে , নাকের পানি আটকানোর জন্য বার বার নাক টানছে । রানীর ফর্সা মুখ লাল হয়ে গেছে অনেকক্ষণ ধরে কান্না করার কারনে ।
রাজীব কাঁদছে না , অনেক কষ্টে চোখের পানি আটকে রেখেছে। রানীর সামনে ও কাঁদতে চায় না । ও কাঁদলে রানীকে সামলাবে কে । রাজীব রানীর কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে মাথায় রাখলো । তারপর মোলায়েম স্বরে বলল “এভাবে কাঁদছিস কেনো রে পাগলী”
রানী কোন উত্তর দিলো না , কেঁদেই চলল , রাজীব এবার রানীর মাথা নিজের কাধের কাছে টেনে আনলো , বলল “ এভাবে কাঁদলে আম্মু দুঃখ পাবে”
“ কিন্তু …… আম্মু …… আআ আমাদের ছেড়ে …… চলে গেলো কেনো” আসলে গতকাল থেকে আয়শার আদর পেয়ে , আর আয়শা আর জান্নাতের সম্পর্ক দেখে রানী মনে মনে খুব মুষড়ে পরেছে । ওর কাছে মনে হয়েছে ওর নিজের মা থাকলে নিশ্চয়ই ওর সাথেও এমন সম্পর্ক থাকতো । মা ওকে শাসন করতো , আবার বুকেও জড়িয়ে নিতো । জান্নাতের মত রান্না ঘরের বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলতে পারতো ‘ আম্মু চা দাও তোওওও’ । কাপড় ধোয়ার চিন্তা থাকতো না , সকাল বেলা নিজে নিজে ঘুম থেকে উঠতে হত না কলেজে যাওয়ার জন্য , প্রতিদিন মায়ের বকুনি খেয়ে তবেই বিছানা থেকে উঠত , তার আগে নয়।
“ আম্মু মনেহয় আমার জন্যই মারা গেছে , নারে ভাইয়া? আমি যদি না জন্মাতাম তাহলে হয়তো আম্মু অসুস্থ হত না” এই বলে রানী আরো জোরে কাঁদতে লাগলো , ওর সমস্ত শরীর কেপে কেপে উঠতে লাগলো কান্নার কারনে ।
এবার রাজীবের সহ্যর সীমা অতিক্রম হলো । রাজীব রানীর দুই বাহু ধরে ওকে নিজের সামনা সামনি নিয়ে এলো । তারপর দু হাতে বোনের মুখ উপরের দিকে তুলে ধরলো, রানীর এমন মুখ দেখে রাজীবের ভেতরটা হাহাকার করে উঠলো , নিজের চোখের বাধ ও ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হলো। কিন্তু নিজেকে সামলে নিলো রাজীব , দু হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের নিচে আর গাল মুছে দিলো , তারপর হাতের তালু দিয়ে নাকের নিচটাও মুছিয়ে দিলো । তারপর বলল “এই কথা কোনদিন বলবি না, কে বলেছে আম্মু চলে গেছে আমাদের ছেড়ে, আম্মু তোর মাঝে নিজের কিছুটা আমাদের কাছে রেখে গেছে , আর দূর থেকে আমাদের দেখছে, বুঝলি”
কিন্তু রাজীবের কথায় রানী চোখের পানি থামে না , অঝরে ঝরতে থাকে । রাজীব আরো বলে “ আম্মু তোর কারনে যায়নি , যদি কারো কারনে গিয়ে থাকে সেটা আমার কারনে ,বুঝলি আম্মু দেখতে চেয়েছে উনি আমাকে যে সব শিখিয়েছে তা আমি করতে পারি কিনা”
এবার চোখে খুলে তাকায় রানী , চোখে জিজ্ঞাসা । রাজীব বলতে থাকে “ জানিস তুই যেদিন প্রথম এলি আমি খুব রাগ করেছিলাম, ভেবেছিলাম এই কোন আপদ এলো” এটুকু বলে রাজীব একটু মুচকি হাসল , তারপর আবার বলতে লাগলো
“ তোকে নিয়ে আম্মু কিছু করতে গেলেই আমি জেদ করতাম , কান্নাকাটি করতাম , এমন কি তোকে মারতাম” এবার রানী অবাক হয় , রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতে ওর কষ্ট হয় ।
এদিকে রাজীব বলতে থাকে “ সব কিছুতেই হিংসা করতাম , তোকে কোন খেলনা কিনে দিলে আমাকেও কিনে দিতো হত”
“ ভাইয়া মিথ্যা বলিস কেনো বানিয়ে বানিয়ে” রানীর কান্না কিছুটা কমে এসেছে , তবে এখনো নাকের পানি থামানোর জন্য বার বার নাক টানতে হচ্ছে । একবার নাক টেনে নিয়ে আবার বলল “ তুই তখন দুই বছরের ছিলি , তোর কি এসব মনে আছে?”
“ না আমার মনে নেই , তবে আম্মু আমাকে বলছে , আর সুধু ছোট বেলায় নয় , আমি বড় হওয়ার পর ও তোকে কতবার মেরেছি, তুই হয়তো ভুলে গেছিস,”
“সত্যি?” রানী অবিশ্বাসের সাথে জিজ্ঞাস করে । রাজীব ওকে মারছে এই দৃশ্য কল্পনা করতেও ওর কষ্ট হয় । কারন ওর যতটুকু সৃতি আছে , রাজীব কোনদিন মারা তো দুরের কথা ধমক ও দেয়নি ।
“ হ্যাঁরে সত্যি , আমি কি দুষ্ট কম ছিলাম নাকি?” এই বলে রাজীব কয়েক সেকেন্ড থামে , তারপর আবার বলতে শুরু করে , “জানিস, আমি যখন তোকে মারতাম বা হিংসা করতাম তখন আম্মু কি বলতো?”
রানী কোন কিছু বলল না উত্তরে , তবে ওর নীরবতা বোঝাতে চাইলো ও জানতে চায় । মায়ের গল্প যতই শোনে ততই শুনতে আরো আগ্রহ বারে ।
রাজীব বলতে শুরু করলো , “ আম্মু তখন আমাকে কোলে তুলে নিত , খুব আদর করতো , আর বলতো… আমার রাজীব সোনা , চাঁদের কনা , তুই তোর বোন কে দেখতে পারিস না কেনো? আমি উত্তরে চুপ করে থাকতাম , তখন আম্মু আমাকে বলতো , তুই কি জানিস , তোর বোন দুনিয়ায় কেনো এসেছে ? আমি তখন একটু নরম হয়ে আসতাম মাথা নেড়ে বোঝাতাম, জানি না। তখন আম্মু বলতো , তোর বোন এসেছে তোর জন্য একটা জ্যান্ত খেলনা হয়ে , ঈশ্বর চিন্তা করেছে আমাদের রাজীব এতো ভালো ছেলে তাই ওর জন্য একটা সুন্দর জ্যান্ত পুতুল পাঠিয়ে দেই, আম্মুর এই কথা শুনে আমি খুব খুশি হতাম । তখন আম্মু আমাকে আরো বলতো , সব সময় মনে রাখবি , এই খেলনা তোর জন্য স্রষ্টার আশীর্বাদ , আর ঈশ্বরের আশীর্বাদের অপমান করতে নেই , তুই যতদিন থাকবি এর খেয়াল রাখবি । কোনদিন যেন ও দুঃখ কষ্ট না পায় সেটা দেখে রাখতে হবে , জীবনে যদি কোনদিন ওর কোন দুঃখ আসে আর ওর পাশে থাকার মত কেউ না থাকে , তখন ওর সবচেয়ে বড় আশ্রয় হবি তুই” এটুকু বলে রাজীব একটা বড় নিঃশ্বাস নেয় ।
রানীর কান্না এতক্ষনে থেমে এসেছে , রাজীবের মুখে এসব কথা শুনতে ওর বেশ ভালো লাগে ।
রাজীব আবার বলতে শুরু করে “ কিন্তু আমি কিছুক্ষন পর ই আম্মুর বলা গুলো ভুলে যেতাম , আবার তোকে মারতাম , হিংসা করতাম , কিন্তু সব কিছু পালটে গেলো আম্মু চলে যাওয়ার পর, তুই যখন দরজা ধরে কাঁদছিলি তখন তোর দিকে তাকিয়ে আমার চোখের পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো , সেদিন আমার বয়স কত আর ছিলো আট কি নয়, কিন্তু সেদিন ওই মুহূর্তে আমার কাছে মনে হয়েছিলো আমি অনেক বড় হয়ে গেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে আম্মু আমার জন্য একটা সুন্দর পুতুল রেখে গেছে , আমাকে যে করেই হোক ওই পুতুলের যত্ন নিতে হবে , কিছুতেই ওই পুতুলের কোন ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না । বিশ্বাস কর আজকে তোর সামনে যে রাজীব দাড়িয়ে আছে , যাকে নিয়ে তোর এতো গর্ব , যার উপর তোর এতো ভরসা , এ রাজীব এমন হতে পেরেছে সুধু আমার ঐদিনের সেই ছোট্ট পুতুল আর আজকের মহারানী তোর কারনে । না হলে হয়তো অন্য রকম হতাম আজ , আর এটা হয়তো আম্মু বুঝতে পেরেছিলো , তাই আমাদের রেখে দূরে গিয়ে, আমারদের জন্য অপেক্ষা করছে যেন আমরা আমাদের জীবন সুন্দর ভাবে কাটিয়ে আবার তার কোলে ফিরে যাবো ”
রানী জানে রাজীব সুধু ওর মন ভালো করার জন্য এই গল্প ফেঁদেছে , এটা সত্যি যে রাজীব ওর সব খেয়াল রাখে । রাজীব জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের আগে ওর কথা ভেবে নিয়ে ওর প্রয়োজন মিটিয়ে তবেই সেই পক্ষেপ নিয়েছে । কিন্তু রানীর বিশ্বাস ওর জন্য নয় আজকে যে রাজীব ওর সামনে দাড়িয়ে আছে সে নিজের গুণাবলীর কারনেই আজকের অবস্থানে আছে । কিন্তু তবুও রাজীবের বলা মায়ের মৃত্যুর কারন , সেটা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় , যদিও জানে এটা সুধুই রাজীবের মনগড়া কথা । আসল কারন রানী জানে ।
রানীর আর কাঁদতে ইচ্ছে হয় না , রাজীবের এতো চেষ্টার পরেও যদি ও কাঁদে সেটা রাজীবের উপর সু বিচার হবে না । তাই পরিবেশ হালকা করার জন্য রানী জিজ্ঞাস করে “ আচ্ছা আমার জন্য না হলে তুই কেমন হতি ভাইয়া”
রাজীব হাসতে হসাতে বলে “ জয়ের মত হয়তো”
“ কেনো জয় কি খারাপ ছেলে?” রানী জিজ্ঞাস করে , জিজ্ঞাস করার সময় গতকাল দেখা হওয়ার দৃশ্য ওর চোখে ভেসে ওঠে আর অজথা এই কষ্টের মাঝেও ঠোঁটের কোনে একটু হাসি ফুটে ওঠে ।
“ না না জয় খারাপ ছেলে না , ও হচ্ছে স্বাভাবিক ছেলে , এই বয়সের ছেলেরা যেমন হয় , কেয়ার ফ্রি , হিরো টাইপ”
“ তুই কি টাইপ ভাইয়া , আমার কাছে তো তোকেই হিরো মনে হয়” রানী আবার জিজ্ঞাস করে , ওর মনে একটা শঙ্কা তৈরি হয় , হয়তো রাজীবের স্বাভাবিক জীবন ওর জন্য ব্যাহত হয়েছে । মনটা আবার ভারি হতে শুরু করে ।
“ উহু আমি হচ্ছি ভাই টাইপ ছেলে হা হা হা” রাজীবের হাসিও রানীর মন কে সান্তনা দিতে পারলো না , বার বার ওর মনে হচ্ছে রাজীবের জন্য ও একটা বাড়তি দায়িত্ব , রাজীবের বয়সি কোন মানুষের কাধেই এমন বাড়তি দায়িত্বের বোঝার ভার পরা ঠিক নয়।
দুজনে এখন পাশাপাশি হাঁটছে রানী নিজের দু হাত দিয়ে রাজীবের একটা হাত আঁকড়ে আছে , ওর হাত যেন বলতে চাইছে ‘ধন্যবাদ ভাইয়া’ , যত শক্ত করে ধরবে তত বড় ধন্যবাদ । অবশ্য কোন ধন্যবাদ ই রাজীবের জন্য যথেষ্ট নয় । কারন রানী জানে যদি রাজীব ওকে সামলে না নিতো তাহলে হয়তো ও আজকের রানী হয়ে উঠতে পারতো না । ধিরে ধিরে ওরা দুজন পুরোন শিকদার বাড়ির আড়ালে চলে গেলো ।
রাজীব আর রানীর এতক্ষনের কার্যকলাপ একটা জোড়া চোখ চৌধুরী বাড়ির ছাদ থেকে অবলোকন করছিলো । জান্নাতের কাছে ওদের ভাই বোনের এরোকম ক্লোজ সম্পর্ক একটু অধভুত লাগলো , এই ধরনের ভাই বোনের সম্পর্ক দেখে ও অভ্যস্ত নয় । বিশেষ করে পিঠাপিঠি ভাই বোনের মাঝে সব সময় একটা প্রতিযোগিতা লেগেই থাকে , এমন নয় যে ভালবাসা থাকে না , থাকে কিন্তু তার চেয়ে বেশি থাকে হিংসা প্রতিযোগিতা , একজন ভাবে বাবা মা অন্যজন কে বেশি আদর করছে , অন্যজন কে বেশি দিচ্ছে । একজন একটু বেশি ভালো করলে অন্যজনের উপর সেটা চাপ হয়ে দাড়ায় , সবাই একজন কে দিয়ে অন্যজন কে বিচার করে , এতে করে সম্পর্কের দূরত্ব তৈরি হয় । একজন আরেক জনের প্রতি ভালবাসা খুলে প্রকাশ করতে লজ্জা পায় । এতক্ষণ রাজীব আর রানীর সম্পর্কের যে বন্ধন আর গভীরতা দেখা গেলো সেটা তো ভাবাই যায় না ।
এতক্ষণ চোখের সামনে দেখা দৃশ্য জান্নতের মনে গভির দাগ কাটলো , বিশেষ করে রাজীবের ভুমিকা । এতো সেন্সিবল ভাবে ট্রিট করলো ছোট বোন কে। এরকম যে হয়, না দেখলে জান্নাত বিশ্বাস করতো না । রাজীবের আচরন দেখে মনে হচ্ছিলো রানী একটা মোমের পুতুল একটু এদিক সেদিক হলেই ভেঙ্গে যাবে ।
“ রাজীব তুই অন্য মাটি দিয়ে তৈরি রে , তোর আশেপাশের মানুষ খুব ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, কারন ওরা তোর মত কাউকে পেয়েছে নিজেদের পাশে” জান্নাত ফিসফিস করে নিজেকেই নিজে বলল ।
ততক্ষণে রাজীব আর রানী পুরোন শিকদার বাড়ির গেটের কাছে এসে দারিয়ছে । রাজীব পুরনো বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে , বাড়িটা ভুতের বাড়ি বলে মনে হচ্ছে । জানালা গুলো ভেঙ্গে পরেছে , দেয়ালের রঙ উঠে গেছে । রাজীব রানীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো “ এই বাড়ির কথা তোর মনে পরে?”
“ নাহ , তেমন কিছু না”
আফরোজা মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ঈদে রাজীব আর রানীকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসতো জয়নাল আর আয়শা দম্পতি । কিন্তু রাহিম নিজে আসতো না বলে , ছেড়ে যাওয়ার পর এই বাড়িতে আর থাকা হয়নি রাজীব রানীর । ওরা আয়শা আর জয়নালের কাছে সপ্তা খানেক কাটিয়ে যেত ।
“ দেখিস আমরা আবারো এই বাড়িতে ফিরে আসবো একদিন” রাজীব এর কণ্ঠের দৃঢ় ভাব রানিকেও ছুয়ে যায় । বুঝতে পারে রাজীবের এই বাড়ির প্রতি কতটা টান ।
“ তুই যেখানে থাকবি , সেটাই আমার জন্য বাড়ি , ভাই। কোন বিশেষ বাড়ি আমার জন্য ইম্পরট্যান্ট না” রানী একটা উষ্ণ হাসি দিয়ে বলল , ওর বলার কারন হচ্ছে রাজীবের উপর থেকে কিছুটা হলেও চাপ কমানো । এমনিতেই রাজীব নিজের উপর এতো চাপ নিয়ে নিয়েছে । রানী চায় না এ বাড়ি ফিরে পেতে বাড়তি কোন চাপ রাজীব নিক ।
রাজীব রানীর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে মুচকি হাসল , রানীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো । একটু চুপ থেকে রানী আবার বলল “ আচ্ছা ভাইয়া তোর ইচ্ছা হয় না স্বাভাবিক ছেলেদের মত হাসি আনন্দে জীবন কাটাতে , এই বয়সে তোর এতো বড় ভারি বোঝা কাধে নিতে হচ্ছে, তোর কি মাঝে মাঝে মনে হয় না এরকম না হলেই ভালো হত”
রাজীব চুপ করে রানীর কথা শুনলো , তারপর কৌতুকপূর্ণ দৃষ্টিতে রানীর আপাদমস্তক একবার দেখে নিলো , রানী হঠাত রাজীবের এমন আচরনে অবাক হলো , ও একটা সিরিয়াস কথা বলছে আর রাজীব দুষ্টুমি করছে , রাগ হলো ওর কমরে দুই হাত রেখে বলল “ কি দেখিস হ্যা”
“ দেখলাম , বোঝার ওজন কত? নাহ বেশি ভারি না এই পঞ্চাশ কেজির মত হবে” বলে রাজীব হো হো করে হাসতে লাগলো আর রানী কপট রাগে রাজীবের বাহুতে একটা ঘুষি দিলো । আর বিরক্তির সাথে বলল “ পঞ্চাশ না আটচল্লিশ”
রাজীব হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভাবে বলল “ শোন আর কোনদিন এমন বলবি না ,কে বলছে তুই বোঝা হয়ে আমার উপর পরেছিস , তুই আমাদের বাড়ির প্রান ভোমরা তুই না থাকলে হয়তো আব্বু এক দিকে চলে যেতো আর আমি অন্যদিকে , বাড়িতে ফিরে তোকে দেখলে মনে হয় এটা একটা ঘর , তুই না থাকলে সেটা ছন্নছাড়া হয়ে পরে রইতো আর মারা দুজন ঘরহীন মানুষ এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম ”
রানী ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে একবার তাকালো , নাহ সেখানে মিথ্যা বা মন ভুলানো বানোয়াট কোন কিছু দেখতে পেলো না। তবুও ওর মন মানলো না , ওর কাছে যদি টাইম মেশিন থাকতো তাহলে ও অতিতে ফিরে গিয়ে সব ঠিক করে দিতো , অন্তত রাজীব কে মুক্ত করে দিতো । “ তুই তো কোনদিন ওই জীবন দেখিস ই নি ভাইয়া , তোর তো কোন বন্ধুও নেই , তোর সময় কেটেছে লেখা পড়া করে আমার আমাকে মানুষ করে”
“ কে বলছে আমার বন্ধু নেই , জয় আছে না , ওর মত একটা বন্ধু থাকলেই যথেষ্ট এর বেশি থাকলে আমি হয়তো পাগল হয়ে যেতাম , হা হা হা” রাজীব উচ্চস্বরে হাসতে হসাতে বলল
রানীর গালে আবারো হালকা উষ্ণতা অনুভুত হতে লাগলো । কেনো যেন বার বার কালকের পর থেকে যখনি জয়ের সামনে এসেছে অথবা জয়ের নাম নেয়া হয়েছে তখনি ঠোঁটে একটা হাসি আপনাআপনি চলে আসছে , নয়তো গাল গরম হয়ে যাচ্ছে । অথচ যখনি দেখা হয় সুধু দুষ্টুমি করে কথা বলে। এরকম দুষ্ট ছেলে রানী সহ্য করতে পারে না । সব সময় শান্ত সৌম্য দুই পুরুষের সাথে থাকতে থাকতে রানীর কাছে ভালো ছেলে বলতে , ওর বাপ আর ভাইয়ের মত ছেলেকেই মনে হয় ।
কিন্তু জয় সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছেলে , সারাক্ষণ দুষ্টুমির মাঝেই থাকে এই যেমন গতকাল বিকেলে হঠাত বলল “এই রানী তুই কি ক্রিম মাখছিস রে?”
রানী হঠাত এমন প্রস্নে অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ কেনো তোমার তাতে কি দরকার?”
উত্তরে জয় বলেছিলো “ জান্নাতকে নামটা বলে দে , ওর জন্য পাত্র খুজতে সুবিধা হবে, না থাক আমাকেই বল আমিই কিনে এনে দেবো , বড় ভাই কোনদিন কাজে আসবে হ্যা”
এর পর আর কথা বলার সুযোগ পায়নি রানী , জান্নাত আর জয় ধুম লেগে গেছে ।
হঠাত রানীর কি মনে হলো ,ও রাজীব কে আজব একটা প্রস্ন করলো , বলল “ আচ্ছা জয় তোর বেশি আপন, নাকি আমি?”
রানীর প্রস্ন শুনে রাজীব মুচকি হাসে ,” এটা আবার কেমন প্রস্ন রে”
“ এটা এমনি প্রস্ন , উত্তর তোকে দিতেই হবে” রানী জেদ করে ।
“ তোরা দুজন , আব্বু , বড় আব্বু আম্মু এরা সকলে ই আমার জন্য বিশেষ মানুষ, এদের কারো সাথ কারো তুলনা করা কি সম্ভভ” রাজীব পাশ কাটানো উত্তর দেয় , আসলে এই নিয়ে রাজীব কখনো ভাবেই নি , উত্তর দিবে কি করে ।
“ উহু ডিপ্লমেট উত্তরে চলবে না , উত্তর চাই” রানী দু হাত কমরে রেখে দাড়ায় ।
রাজীব কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকে , তারপর বলে “ জয় আর তুই দুজনেই আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বেক্তি , তোদের ছাড়া আমি হয়তো ঠিক আমি থাকবো না । জয় হচ্ছে আমার এমন ভাই যাকে আমি নিজে পছন্দ করে নিয়েছি । আর তুই হচ্ছিস আমার জন্য ঈশ্বরের দেয়া উপহার , আর ঈশ্বরের দেয়া উপহারের চেয়ে বড় কিছু কারো জন্য কিছুই হতে পারে না । “
রানী মাথা চুল্কে বলে “ কিছুই বুঝলাম না ,”
“ আমি নিজেই বুঝিনি তুই কি বুঝবি” রাজীব ও হাসতে হাসতে বলে
কিন্তু রানী থেমে যাওয়ার পাত্রী নয় , ইন্সটাগ্রাম রিলস এ দেখা বহুল প্রচলিত একটা রিলস , যা সাধারণত মা আর বউ এর ব্যাপারে ব্যবহার করা হয় , একটু পরিবর্তন করে রাজীবের দিকে ছুরে দিলো , বলল “ আচ্ছা ধর একটা নৌকাতে আমি আর জয় , নৌকা ডুবে যাচ্ছে , তুই সুধু একজন কে বাঁচাতে পারবি , এবার বল তুই কাকে বাঁচাবি” রানী মনে মনে ভাবে এবার জব্দ করতে পেরেছি ।
“ তুই ত দেখি আজকে আমার পরিক্ষা নিয়েই ছাড়বি , হঠাত জয়ের পেছনে লাগলি কেনো রে” রাজীব হাসতে হাসতে বলল
“ আমি কই জয়ের পেছনে লাগলাম , তুই উত্তর দে”
রাজীব ও ইন্সটাগ্রাম রিলসে দেখা একটি লাইন বলে উত্তর দিয়ে দিলো “ প্রথমে আমি তোকে বাচাবো , তারপর জয়ে কে বাঁচানোর চেষ্টা করবো , যদি না পারি দুজনে এক সাথে ডুবে যাবো হা হা হা “ রাজীব উচ্চ স্বরে হাসতে লাগলো , ইস্টাগ্রামে যখন এই উত্তর টা দেখেছিলো তখন ওর কাছে বেশ ক্রিঞ্জ লেগেছিলো ।
হাসিতে রানীও যোগ দিলো , বলল “ তুই ও আজকাল ইস্টাগ্রাম দেখিস খুব না? ”
এবার রানী পাশ থেকে রাজীব কে জড়িয়ে ধরলো , মুখে চোওড়া হাসি টেনে বলল “ আচ্ছা ভাইয়া আমি যদি কোনদিন তোর অবাধ্য হই , কথা না শুনি , অথবা তোকে দুঃখ দেই ,তুই কি খুব রাগ করবি ”
“ আরে আজকে আমাদের রানীকে কে কি প্রস্ন রোগে পেলো নাকি ?” এই বলে রাজীব একটু হেসে নিলো , তারপর বলল “না , আমি কোনদিন তোর উপর রাগ করবো না , কি করে রাগ করবো বল , তুই হচ্ছিস আমাদের মহারানী আর আমরা তোর প্রজা , প্রজা কি রানীর উপর রাগ করতে পারে? হয়তো বা দুঃখ পাবো ” রানী আরো ভালো করে রাজীব কে আকড়ে ধরে । দুজনের মুখের হাসি লেগে আছে দুজনেই নিজদের মাঝে আরামদায়ক উষ্ণতা অনুভব করে , টের পায় রক্তে রক্তে কথা বলছে । যা ওদের মুখের হাসিকে আরো চোওড়া করে ।
“ উহু তুই প্রজা না , তুই ও রাজা” রানী রাজীবের কাধে মাথা রেখে বলে ।
রাজীব নিজের কাধের উপর রাখা রানীর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে “ নারে আমার পাগলী রানী , আমি রাজা নই , আমি তোর প্রজা হয়েই খুশি । তবে একদিন তোর রাজা আসবে ,যখন সেই রাজা আসবে তুই নিজে থেকেই বুঝে যাবি”
এবার রানী লজ্জা পায় , রাজীব কে ছেড়ে দিয়ে ওর বাহুতে আর একটি থাপ্পড় দেয় বলে “ আমার দরকার নেই , যেমন আছি তেমনি ভালো” কথা শেষে করে রানী চৌধুরী বাড়ির গেটের দিকে দ্রুত পদে হাটা দেয় । রাজীব পেছনে দাড়িয়ে হাসতে থাকে , কিন্তু সেই হাসির পেছনে আবছা একটা বেদনা ঢাকা পড়তে দেখা যায় ।
******
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 366
Threads: 0
Likes Received: 140 in 134 posts
Likes Given: 203
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
(06-08-2025, 10:15 PM)Saj890 Wrote: Darun
অনেক ধন্যবাদ Saj890 , আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা দুবার এই গল্পের জন্য নিজের অমূল্য সময় ব্যয় করে দুটো কমেন্টস করেছেন ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
•
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
কিছু সম্পরকঃ ২ (ঘ)
রাতে খাওয়ার সময় যখন জয়নাল আর রহিম নিজেদের সিদ্ধান্ত সবার সামনে উপস্থাপন করলো । তখন জয় আনন্দে অলমোস্ট টেবিল উল্টে ফেলছিলো নিজের চেয়ার থেকে ওঠার সময় । চেয়ার ছেড়ে উঠে আনন্দে লাফাতে লাগলো জয় , ওর কাছে মনে হতে লাগলো ওর চেয়ে বেশি খুশি দুনিয়ায় আর কেউ নেই । জান্নাত ও আনন্দে চিৎকার করে উঠলো , সাথে যোগ দিলো রানী। তবে রাজীব একদম চুপচাপ , ওকে দেখে মনে হচ্ছে একেবারে ভাবলেশহীন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে কাঁপছে রাজীব , সেই ছোটবেলার বাড়ি , পুরনো সৃতি , মায়ের স্পর্শের সৃতি , মায়ের কবর , বন্ধু জয়ে কে সর্বক্ষণ পাশে পাওয়া । রাজীব ভাবতেই পারেনি এসব এতো তারাতারি হয় । মনে দৃঢ় বিশ্বাস থাকলেও , মাঝে মাঝে মনে হতো ও পারবে তো পুরনো বাড়িতে ফিরতে।
জয় ততক্ষণে রাজীবের কাছে চলে এসেছে , পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে রাজীবকে ।
রানী আড় চোখে একবার রাজীবের দিকে তাকায় , রানীর বুঝতে অসুবিধা হয় না রাজীবের মনের ভেতর এখন কেমন ঝর বইছে। নিজের একটা হাত রাজীবের হাতে রেখে আলতো করে চাপ দেয় রানী , দুজন দুজনের দিকে তাকায় আলতো করে হাসি রানী , সাথে রাজীব ও যোগ দেয় ।
খাওয়া শেষে সবাই এক সাথে বসে , এক সোফায় জয়নাল আর রহিম , পাশের সোফায় আয়শা আর পরী , রাজীব আর জান্নাত ওদের পায়ের কাছে মেঝেতে । আর জয় জয়নালের পাশে সোফার হাতলে বসে ।
জয়নাল আর রহিম নিজদের ছোট বেলা , ছাত্র জীবন এই নিয়ে আলোচনা করছিলো । ছেলে মেয়েরা সেটা মন দিয়ে শুনছিল , বিশেষ করে রাজীব আর জয় । এক সময় কথার ফাঁকে জয়নাল বলে উঠলো , “ আমাদের সময় তো এতো মোবাইল , ল্যাপটপ এসব ছিলো না , তাই আমরা লেখাপড়ার পাশাপাশি নানা ধরনের এক্টিভিটিতে জড়িত থাকতাম , আজকালের ছেলে মেয়েদের মাঝে তেমন কিছু দেখতে পাই না”
“ কেনো বাবা , কতদিন আগে যে আমি বিতর্ক প্রতিযোগিতা তে জিতে এলাম সেটা” জান্নাত সাথে সাথে প্রতিবাদ করে ওঠে।
“ওহ তাইতো , সরি সরি মা ” জয়নাল লজ্জিত হয়
“ বুড়ো মানুষের এই এক সমস্যা , আমাদের সময় আমরা হ্যান করতাম ত্যান করতাম , এখনকার ছেলে পেলে সব উচ্ছনে যাচ্ছে” আয়শা ছেলে মেয়ের পক্ষ নিয়ে মুখ ঝামটা দিলো । মা কে নিজেদের পাশে চপেয়ে ছেলে মেয়ে চারজন উচ্চ স্বরে হেসে ফেললো ।
“ কথা মন্দ বলেন নি ভাবি , তবে এটা আমাদের দোষ না ঠিক , আমাদের সময় এক্টিভিটি অন্য রকম ছিলো এখন অন্যরকম তাই আমারা ঠিক বুঝতে পারি না” রহিম বন্ধুকে সাপোর্ট করে বলল
এবার আয়শা রাজীবের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করলো “ তুই বাবা পড়াশোনার ফাঁকে কি করিস “
“ সুযোগ পেলে ফুটবল খেলি , আর কলেজের ট্রিভিয়া ক্লাবে ছিলাম” কিন্তু আয়শা ট্রিভিয়া ক্লাবের মানে ঠিক বুঝতে না পারলে রাজীব বুঝিয়ে বলল ।
পাশ থেকে জান্নাত বলে উঠলো “ ওয়াও আমিও বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছি কিন্তু তেমন সাফল্য পাইনি”
শুনে রাজীব বেশ খুশি হলো , বলল “ তাই নাকি, খুব ভালো”
“ আরে ধুর এটা কোন খেলা হলো , পরিক্ষার প্রস্নের উত্তর দিতে দিতে জান তেজপাতা হয়ে গেলো , তোরা আবার এই প্রস্নের উত্তর দেয়াকে খেলা বানিয়ে নিয়েছিস , পরিক্ষা কি তোদের জন্য কম হয়ে গেলো” জয় বিরক্তি সহকারে বলল ।
“ তুই এসব কি বুঝবি , এবস বুদ্ধিমান মানুষের কাজ , তোর মত মাংস পিন্ড এসব বুঝবে না” জান্নাত ঝারি মেরে বলল ,
জয় আরো কিছু বলতে তেড়ে যাচ্ছিলো , কিন্তু রহিম থামিয়ে দিলো , বলল “ তুই কি করিস সেটা বল না”
“ ছোট আব্বু , তোমার এই ছেলে কি করে না সেটা জিজ্ঞাস করো” জয়ের উত্তরে সবাই হেসে ফেললো
এবার আয়শা রানী কে বুকে টেনে নিয়ে জিজ্ঞাস করলো “ আমার মায়ের কি সখ”
রানী চুপ করে থাকলো , তবে ওর হয়ে রহিম উত্তর দিয়ে দিলো “ রানী বেশ ভালো নাচ করে , কয়েকটা প্রাইজ ও পেয়েছে”
ঘরের বাকি সবাই অবাক হয়ে গেলো , এক সাথেই ই বলে উঠলো “ তাই নাকি”
জান্নাত তো উঠেই দাঁড়ালো , হাতে মাইক আছে এমন ভাব করে বলতে শুরু করলো “ সুধী দর্শক এখন আমাদের মাঝে নাচ পরিবেশন করবে , মহারানী মাস্তানি”
সবাই রিকোয়েস্ট করতে লাগলো , রাজীব ও নিরিবে একবার চোখ ইশারা করে আশ্বাস দিলো । শেষে সবার অনুরধে নাচতে রাজি হলো রানী । বেশি না মাত্র পাচ মিটিতের একটা নাচ পরিবেশন করলো , সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সেই নাচ উপভগ করলো । রানীর লম্বা শারীরিক গঠন নাচের জন্য একদম পারফেক্ট , মুভমেন্ট গুলো ও বেশ গ্রেস্ফুল , পুরো পাঁচ মিনিট নাচের ছন্দে সবাই কে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে রাখলো । সব শেষে একটা শেষ চক্কর দিয়ে লজ্জায় নিজের মুখ ঢেকে ফেললো ।
নাচ শেষ হওয়ার পর ও বেশ কিছুক্ষন সবাই চুপ হয়ে রইলো । সবাই ভেবেছিলো এমেচার লেভেলের কিছু দেখবে । কিন্তু রানীর প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া ছিলো একদম মাপা আর এফরটলেস । এতো ভালো নাচ হয়তো কেউ আশা করেনি । এমন কি রাজীব আর রহিম ও নয় । এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলো সবাই , এমনকি জয়ের মত চুটল বেক্তির মুখ ও বন্ধ হয়ে গেছে ।
বেশ কিছুক্ষন পর সবার অবাক হওয়ার রেষ কেটে গেলে সবাই এক সঙ্গে হাততালি দিতে শুরু করলো । এতে রানী আরো লজ্জায় পরে গেলো ।
“ বাহ মা , তুই তো অনেক ভালো নাচিস , এটা প্রফেশন হিশেবে নেয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? ” প্রথমে আয়শা কথা বলে উঠলো
“ হ্যা হ্যা , ঠিক বলেছো” জয়নাল আয়শার কথায় সায় দিলো ।
“ অরে তুই তো মাস্তানিকেও হার মানিয়ে দিলি” জান্নাত খুশিতে জড়িয়ে ধরলো বান্ধবিকে ।
রহিম আর রাজীব গর্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রানীর দিকে মুখে স্মিত হাসি ।
সুধু কিছু বল্লনা জয় , কেমন জানি একটু উদাস হয়ে গেছে ও ।
সবার শেষে রানী জানালো নাচ সুধু ওর হবি , ও বলল “ আমি তো এমনি টিভি দেখে দেখে নাচ শিখেছি , পরে ভাইয়ার চাপাচাপিতে অল্প কিছু শিখেছি , এটা প্রফেশন হিশেবে নিতে চাই না , আমি আমার আব্বুর মত শিক্ষক হতে চাই”
রানীর কথা শুনে সবাই খুব খুশি হলো , জয়নাল বলে উঠলো , “ সাবাস একেবারে বাপ কা বেটি হবি তুই”
এই কথায় আলচনার টপিক চেঞ্জ হয়ে গেলো , জয়নাল রাজীব কে জিজ্ঞাস করলো “ রাজীব , কদিন পরে ভার্সিটিতে ভর্তি হবি , এর পর কি চিন্তা আছে ?”
রাজীব একটু হেসে বলল “ এখনো ঠিক করিনাই বড় আব্বু তবে আমার ফটোগ্রাফার হওয়ার ইচ্ছে আছে ”
“ মানুষের ছবির চেয়ে ভাইয়া গাছ পালার ছবি তুলতে বেশি পছন্দ করে” রানী মাঝ থেকে ফোঁড়ন কাটলো ,
“ সে কিরে? সুধু গাছ পালার ছবি তুলিস” আয়শা একটু অবাক হলো ,
“ এটা বোটানিকাল ফটোগ্রাফি বড় আম্মু” রাজীব একটু খোলাসা করে বলে
“ তোর কি ইচ্ছা জান্নাত” জয়নাল জান্নাতের দিকে তাকিয়ে প্রস্ন করলো ।
“ আমি সাংবাদিক হবো” জান্নাত বেশ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দিলো
“ আরে বাহ , এই তো আমার লক্ষি মেয়ে” জয়নাল খুশি হয়ে বলল , বাকি সবাই ও খুশি হলো
“ তা জয় বাবা আপনি ভবিষ্যতে কি করতে চান” জয়নাল মজা করে জিজ্ঞাস করলো
জয়ের উত্তর ও এলো মজা করে “ ভবিষ্যৎ কে দেখছে আব্বু , না তুমি না আমি , ভবিষ্যৎ কে ওর নিজের জায়গায় রেখে দাও , এখন তো ভার্সিটি লাইফ এঞ্জয় করতে চাই , রাজীবের সাথে”
বাকি সবাই হেসে উঠলেও জয়নাল ,স্ত্রীর দিকে চোখ মটকিয়ে তাকালো , যার অর্থ দাড়ায় ‘তুমি একে কিছু বলবে ,নাকি আমি বলবো’ ।
পরদিন সকালে শিকদার ফ্যামিলি আবার চৌধুরী বাড়ি থেকে নিজেদের ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে নিজেদের শহরে রওনা হলো । যাওয়ার সময় সবাই সবাইকে বিদায় জানালো ,তবে এবার আর সেই বিদায়ে দুঃখ নেই , আছে আনন্দ কারন আর কদিন পর ওরা সবাই আবার একসাথে থাকবে । রাওহিম নিজের কোচিং বিজনেস ওখান থেকে গুটিয়ে এখানে নিয়ে আসতে যত সময় লাগে , সুধু তত সময়ের অপেক্ষা । এর মাঝে শিকদার বাড়ির কিছু মেরামতের কাজ জয়নাল নিজের জিম্মায় নিয়ে নিলো ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 366
Threads: 0
Likes Received: 140 in 134 posts
Likes Given: 203
Joined: Jan 2024
Reputation:
3
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
কিছু সম্পর্কঃ ৩
শিকদার ফ্যামিলি নিজেদের পুরনো বাড়িতে সিফট হয়েছে দুই বছর হতে চলল । এরি মাঝে রাজীব স্থানিয় ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো জয় ও সেই একি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে । কেউ চিন্তাও করতে পারেনি জয় এটা করতে পারবে । কারন জয়ের মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক রেজাল্ট রাজীবের মত এতো ভালো না । কিন্তু জয় দেখিয়ে দিয়ছে ও মুখে যেমন বলে যে ওর অসাধ্য কিছু নেই , তেমন করেও দেখিয়ে দিয়েছে ।
এদিকে জান্নাত আর রানীও উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে । রাজীব আর জয় যে ইউনিতে ভর্তি হয়েছে সেখানেই ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করছে ওরা দুজনে । কারন এটাই এই শহরের সবচেয়ে বড় আর ভালো ভার্সিটি ।
নিজেদের পুরোন বাড়িতে ফিরে আসার পর রাজীবের ও একটু সস্তি হয়েছে । রানী জান্নাতের সাথেই বেশি সময় কাটাচ্ছে । রানীকে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়ার জন্য আর সব সময় রাজীব কে প্রয়োজন হয় না ।
জয় আর রাজীবের দ্বিতীয় বর্ষের শেষ ভাগ চলছে । আগামি কিছুদিন পর ওদের পরিক্ষা তাই সব মৌজ মাস্তি সাইডে রেখে দুজনেই লেখা পড়ায় মন দিয়েছে । সারা বছর তেমন লেখাপড়া হয়নি জয়ের , তাই এখন কোমর বেধে নেমেছে ।
মাস চারেক পর ;
পরিক্ষা শেষ হতেই জয় আবার পুরনো ফর্মে ফিরে আসে । রাজীব কে নিয়ে সারাক্ষণ মাস্তিতে মজে থাকে । সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা , তারপর গলিতে সারাদিন খেলাধুলা , বিকেলে রাজীব কে নিয়ে বাইকে ঘুরে বেড়ানো , মাঝে মাঝে দুই একটা মেয়ের সাথে হালকা রোমান্স রোমান্স খেলা ।
আজো জয় রাজীব আর কিছু বন্ধুর সাথে ভার্সিটি এলাকায় বসে আড্ডা দিচ্ছিলো । এমন সময় ভার্সিটির এক সুন্দরি লেকচারার ওদের সামনে দিয়ে যেতেই , জয় বলল “ আরে এটা মিস সাম্মি না” পাশে থাকা আর একটি ছেলে বলল “ হ্যা ভাই”। জয় রাজীবের দিকে তাকালো । রাজীব নিজের মনে কি যেন ভাবছে । জয় কনুই দিয়ে রাজীব কে একটি ধাক্কা দিলো । ধাক্কা খেয়ে রাজীব জয়ের দিকে তাকালে জয় প্রায় রাগান্বিত ভাবে বলল “ আরে ভাই , মিস সাম্মি তোকে এতো ইশারা ইঙ্গিত করলো গত বছর তুই পাত্তাই দিলি না , উনি কিন্তু তোর উপর পুরো ফিদা ভাই , দেখিস না পুরো ক্লাস সুধু তোকে নিয়েই পরে থাকে, রাজীব তুমি এটা পারো , রাজীব এটার উত্তর কি হবে বলো তো, রাজীব ক্লাস শেষে আমার অফিসে দেখা করো” শেষের কথা গুলো জয় মেয়েলি ভাবে মিস সাম্মি কে নকল করে বলল । আসলে রাজীব আর জয়ের ক্লাস এক সাথে নয় । তবুও জয় নিজের ক্লাস ফাকি দিয়ে মিস সাম্মির ক্লাসে গিয়ে বসে থাকে । আর এতো স্টুডেন্টের মাঝে মিস সাম্মি জয় কে নিজের স্টুডেন্ট ভেবে নেয় । ওদের ডিপার্টমেন্ট এক হলেও সাবজেক্ট আলাদা ।
রাজীব বিরক্ত হলো বলল “ ফিদা হলে ফিদা , আমি কি করবো? উনি আমাদের টিচার , আর টিচার কে সম্মান করতে হয় , বয়সেও কত বড় ”
“ আরে ভাই তুই সুধু বয়স দেখলি , ঐটা কত বড় সেটা দেখলি না , শালা কানাচোদা” জয় হাত দিয়ে মিস সাম্মির বুকের সাইজ দেখিয়ে বলল ।
রাজীব জয়ের এক্সাইট্মেন্ট কে পাত্তা না দিয়ে নিরলিপ্ত ভাবে বলল “ তুই দেখ” । এতে জয়ের মেজেজ আরো খারাপ হয়ে গেলো , বলল “ শালা আমরা এতো কষ্ট করে নিজেদের সম বয়সি মেয়ে পটাই , আর তোকে একজন পাকা মহিলা লাইন দিচ্ছে আর তুই বলছিস তাতে তোর কি , সব কিছু ঠিকঠাক আছে তো বস” শেষের লাইন বলার সময় জয় রাজীবের দু পায়ের মাঝে ইশারা করলো ।
রাজীব প্রথমে একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো জয়ের পিঠে , তারপর বলল “ আমার ঠিক আছে কিনা , সেটা আমি বুঝবো , তোর এতো টেনশন কেনো? আমার যেমন মেয়ে চাই তেম্ন পেয়ে গেলেই দেখতে পাবি তোরা”
“ তা তোমার কেমন মেয়ে চাই? যে তোমার বৃদ্ধ বাবা কে দেখাসুনা করবে , যে তোমার ঘর আলো করে তুলবে,” জয় পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার ডায়লগ নকল করে বলল , রাজীব কে ক্ষেপানর জন্য ।
“ তাই ভেবে নে” রাজীব কথা না বাড়ানোর জন্য বলল ,
“ ধুর ছাগল , এই বয়সে এসব ভাবলে ফুর্তি করবি কখন”
“ ফুর্তি কে করতে চাইছে , সবাই কে ফুর্তিবাজ ভাবিস কেনো তোর মত , কিছুদিন পর পর একটা করে বান্ধবি পাল্টাস” রাজীব একটু রেগে গিয়ে বলল , ওর কাছে মনে হয় জয় নিজের এই অভ্যাসের কারনে একদিন বিপদে পড়বে ।
“ আরে ভাই , ওই মেয়েরাও জানে আমাদের ভবিষ্যৎ নেই , ওরাও ফুর্তি করতেই আসে , আমি কোন অবলা নারীর জীবন নষ্ট করছি না”
“ দেখিস আমি বলে দিলাম একদিন তুই এর জন্য ফাঁসবি” রাজীব জয় কে সাবধান করে বলল
“ সে দেখা যাবে , আর ফেঁসেই যদি যাই তুই তো আছিস আমার ভাই” জয় হেসে রাজীবের দিকে তাকায়
রাজীব ও না হেসে পারে না , মনে মনে ভাবে এই ছেলেটার উপর বেসিক্ষন রেগে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় ।
সন্ধ্যা পর্যন্ত এমন হাসি তামাশায় মশগুল থেকে দুই বন্ধু সন্ধার পর বাড়ি ফেরে । রাজীব ও নিজে একটা বাইক কিনেছে , জয়ের মত এতো ফেন্সি নয় যদিও ।
রাজীব বাসায় ঢুকেই ফ্রেশ হয়ে , রান্না ঘরে চা করার জন্য যায় । দু কাপ চা বানিয়ে সোজা রানীর ঘরে । দরজায় টোকা দিয়ে নিজের অবস্থান জানান দেয় রাজীব ।
“ আসো ভাইয়া” রানী পড়ার টেবিলে বসে বসেই রাজীব কে ভেতরে আসতে বলে ।
“ কিরে এক্সাইটেড” রাজীব রানীর সামনে চা রেখে হাসি মুখে জিজ্ঞাস করে
কিন্তু রানীর মুখে হাসি নেই , ও ঠোঁট ফুলিয়ে বলল “ উহু , ভয় লাগছে”
“ আরে ধুর পাগলী কিসের ভয় , আমাদের জয় যদি চান্স পায় তুই পাবি না কেনো ? , এখন পড়া বাদ দে , চা খেয়ে ছাদে চল আমার সাথে” রাজীব রানীর হাত থেকে বই কেড়ে নিলো । রানী দিতে চাচ্ছিলো না এক প্রকার কেড়েই নিতে হলো । তারপর দুজনে চা খেয়ে খোলা ছাদের রেলিঙে গিয়ে বসলো । কিছুক্ষন পর রানী চিন্তিত কণ্ঠে বলল “ যদি চান্স না পাই”
“ তাহলে আর কি অন্য ভার্সিটিতে পড়বি” রাজীব সহজ ভাবে বলল
“ না না ভাইয়া আমি এই ভার্সিটিতেই পড়তে চাই , তুই পড়েছিস , আব্বু পড়েছে , আমিও পড়বো, তা ছাড়া এই ভার্সিটির কত নাম ” রানী জেদি গলায় বলল
ছোট বোনের কথা শুনে রাজীব মুচকি হাসল , তারপর বলল “ এই ভার্সিটির নাম হয়েছে কারন এখানে থেকে অনেক বড় বড় মানুষ বেড়িয়েছে তাই , তুই যদি অন্য ভার্সিটিতে পড়ে একজন বড় মানুষ হতে পারিস , তখন দেখবি ওই প্রতিষ্ঠানের ও নাম হবে , লোকজন ওই ভার্সিটিতেও ভর্তি হতে চাইবে , ছেলে মেয়েরা বলবে প্রফেসর রুকাইয়া শিকদার রানী এই ভার্সিটিতে পড়েছে , আমরাও পড়বো, বুঝছিস”
রাজীব যেভাবে ওর পুরো নামের সাথে প্রফেসর শব্দ যোগ করে দিলো রানীর কাছে বেশ মজা লাগলো ফিক করে একবার হেসে দিলো রানী , তারপর বলল “ তুই না থাকলে যে আমার কি হবে, আমি সারাক্ষণ ভয়েই আধমরা হয়ে থাকবো”
রাজীব মুচকি হাসে , তারপর বলে “ অনেক কথা হয়েছে এখন চল রান্না ঘরে , তোর পরিক্ষা উপলক্ষে বিরিয়ানি রান্না করবো , তারপর বিরিয়ানি খেয়ে সটান ঘুম দিবি , সকালে উঠে একদম পরিক্ষ হলে, এর মাঝে কোন বই ধরা নিষেধ আর হ্যা তোকে আমি কালকে নিয়ে যাবো , রাস্তায় সাকাল বেলায় খুব্ জ্যাম হয় , জয় কেও বলেছি জান্নাত কে বাইকে করে পৌঁছে দিতে ”
জয়ের নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথেই রানীর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠলো , তবে দ্রুতই সেটা মুছে ফেললো রানী তারপর বলল “আপনি যা বলবেন গুরুজি” রানী কুর্নিস করার ভঙ্গিতে বলল ,তারপর দুজনে সিঁড়ি বেয়ে নামতে লাগলো , নামার সময় রানী বলল “ আচ্ছা পরিক্ষা পাশের উপলক্ষে মানুষ বিরিয়ানি রান্না করে শুনেছি , কিন্তু পরিক্ষা উপলক্ষে কেউ বিরিয়ানি রান্না করে সেটা জানা ছিলো না”
রাজীব হাসতে হাসতে বললে “ আজকে জেনে নে, ভবিষ্যতে কাজে দিবে”
তারপর দুই ভাই বোন মিলে বিরিয়ানি রান্না করার জন্য চলে গেলো । রান্না ঘর থেকে দুজনের যৌথ প্রচেষ্টার কিছু ইঙ্গিত ভেসে আসতে লাগলো “ আহা ভাইয়া তেল মনে হয় বেশি দিয়ে ফেললি ”
“ আরে নাহ কিচ্ছু হবে না”
“ লবন চেক করে দেখতো”
“ আচ্ছা মাংস সেদ্ধ হলো নাকি?”
অন্য দিকে চৌধুরী বাড়ি;
জয় বাসায় ঢুকেই দেখে জান্নাত টিভি দেখছে , “ এই কিরে তোর না কালকে পরিক্ষা” জুয় অবাক হয়ে বলে
“ হু , তো?” জান্নাত কাঁধ ঝাকিয়ের পাল্টা প্রস্ন করে ।
“ তাহলে পড়া রেখে টীভি দেখছিস যে” জয় বড় ভাই সুলভ শাসনের গলায় বলল
কিন্তু জান্নাত তাতে পাত্তা দিলো না , বলল “ কাল পরিক্ষা আজকে পড়ে কি হবে , আজকে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে”
“ দেখিস আবার কালকে পরিক্ষার প্রস্ন দেখে , ঠাণ্ডা মাথা স্টার্ট দেয়ার জন্য হিটার না দরকার হয়ে যায়”
“ সেটা নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না , তুই সুধু নিজের কাজটা ঠিক মতন করিস , সময় মত পরিক্ষা হলে পৌঁছে দিস” জান্নাত হেসে বলল
“ ওটা নিয়ে তোকেও কোন চিন্তা করতে হবে না , আমার বাইক আমাকে কখনো হতাস করে না, যেমন কিছু মানুষ করে থাকে” লাস্টের কথা গুলো জয় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে বলল
জান্নাত ও জয়ের খোঁচা বুঝতে পারলো , কিন্তু পরিক্ষার আগের দিন জয়ের সাথে লাগার কোন ইচ্ছা ওর নেই । তাই চুপ করে রইলো ।
<><><>
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
Posts: 1,386
Threads: 2
Likes Received: 8,087 in 1,167 posts
Likes Given: 1,187
Joined: Jan 2023
Reputation:
2,926
পুরোটা পড়লাম। আপনার লেখার হাত সাবলীল। আর ধন্যবাদ এই কারণে যে, অনেক লেখক অন্যের লেখা চুরি করে। আপনি সেটা না করে মূল লেখকের অনুমতি নিয়ে লিখছেন। তবে একটা অবজারভেশন আছে। আপনার দেওয়া নাম গুলো পড়ে মনে হল আপনি হয়ত গল্পের চরিত্র গুলো কে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লিখছেন। সেটা যদি করে থাকেন তাহলে গল্প গুলো কে আর ভাল ভাবে বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে পারলে গল্প আর বিসস্ত হবে।
Posts: 57
Threads: 2
Likes Received: 112 in 40 posts
Likes Given: 42
Joined: Jul 2025
Reputation:
6
(11-08-2025, 01:22 AM)কাদের Wrote: পুরোটা পড়লাম। আপনার লেখার হাত সাবলীল। আর ধন্যবাদ এই কারণে যে, অনেক লেখক অন্যের লেখা চুরি করে। আপনি সেটা না করে মূল লেখকের অনুমতি নিয়ে লিখছেন। তবে একটা অবজারভেশন আছে। আপনার দেওয়া নাম গুলো পড়ে মনে হল আপনি হয়ত গল্পের চরিত্র গুলো কে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লিখছেন। সেটা যদি করে থাকেন তাহলে গল্প গুলো কে আর ভাল ভাবে বাংলাদেশের বাস্তবতার সাথে খাপ খাওয়াতে পারলে গল্প আর বিসস্ত হবে।
অনেক ধন্যবাদ কাদের ভাই , এই ধরনের কমেন্ট পেলে লেখার কষ্ট সার্থক হয় । রিপ্লে দিতেও ভালো লাগে । আমি গল্পে কি লিখছি কেনো লিখছি সেসব ব্যাপারে পাঠকের কৌতূহল ই বলে দেয় যে পাঠক গল্পটা পড়ছে । উত্তর দিতেও বেশ ভালো লাগে ।
গল্পে চরিত্রদের নাম পরিবর্তনের মুল কারন ধর্ম । আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি বাংলা সেকশনে ধর্ম এক বিশেষ স্পর্শকাতর ব্যাপার । তাই দুটো ধর্ম রাখতে চাইনি । একদল হয়তো ভাববে আমি একটি ধর্মের চরিত্র গুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি ( যদিও আমি ধর্মে বিশ্বাসী লোক না) । যদিও গল্পের জন্য আমার ডিসিশন টি নেগেটিভ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু কি আর করা ভাই , দেখা যাবে একদলের শত্রুতে পরিনত হয়েছি ।
আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই লিখতেই চেষ্টা করবো । পুরোপুরি সম্ভব হবে কিনা বলতে পারছি না । তবে আপনি হয়তো খেয়াল করবেন আমি কোন শহরের নাম নেই নি , কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও নেই নি । না নেয়ার কারন হচ্ছে নিজেকে কিছুটা স্বাধীনতা দেয়ার চেষ্টা করা ।
আশা করবো , ভবিষ্যতেও আপনার কাছ থেকে এ ধরনের কমেন্টস পাবো ।
কেউ কথা রাখে না
আসবো বলেও আসে না।
কথা রাখে সুধু একাকীত্ব ,
কখনো ছেড়ে যায় না।
|