Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বামী ﴾ পর্ব নং:- ১৪ ﴿
পর্ব ১০ এর অপেক্ষায়।
[+] 1 user Likes halum.halum's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
দাদা নতুন পর্ব কবে আসবে
[+] 1 user Likes Dip 99's post
Like Reply
(24-07-2025, 10:09 PM)Dip 99 Wrote: দাদা নতুন পর্ব কবে আসবে

আজকেই

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
পর্ব ১০

বলরাম মুখার্জির বাড়িতে লোকের অভাব কোন কালেই ছিল না। তবে সবদিক সামলে নেওয়ার মতো মাথার অভাব অতি অবশ্যই; মুখার্জি বাড়ির সাধারণত তিনটি মাথা। প্রথমটি সুনিশ্চিত ভাবে  মুখার্জি বাবু নিজে। দ্বিতীয়টি সুপ্রিয়া, তার নিজের গুণের বলে। এরপর বহু মাথার মধ্যে সমীরের মাথাটি তৃতীয় স্থান দখল করে বসেছে ধীরে ধীরে ।তাই বিশেষ করে এই মাথাটিকে বাড়ির সকলেই একটু ভয় করে চলে। যদিও সে বাড়ির কোন কাজকর্মে নাক তেমন একটা গলায় না। অন্তত কুন্দনন্দিনী আসার পর থেকে, সে তেমনটাই দেখে এসেছে।

এই কারণেই হঠাৎ করে, বাড়ির দুটি প্রধান মাথার অনুপস্থিতিতে,  কুন্দনন্দিনী ভেবেছিল– একা হয়ে সে বুঝি বা বড্ড সমস্যায় পড়ে। তবে সমস্যা তেমনটা হলো না। বরং সমীর নিজেই আগ বাড়িয়ে প্রায় সবটা সামলে নিল। এতে করে কুন্দনন্দিনী অবাক হয়েছে যথেষ্ট। এদিকে একই সাথে সমীরের প্রতি তার শ্রদ্ধাও বেরেছে খানিক। 

আমরা সকলেই  অবগত যে—, আমাদের এই নায়িকাটি বউয়ের আঁচল ধরে পুরুষ দু'চোখে দেখতে পারে না। তা প্রথমটা সমীরকে নন্দিনী তাই ভেবে নিয়েছিল‌। অবশ্য এটা ভেবে নেবার যথেষ্ট কারণও ছিল। তবে সে যাই হোক, এখন সমীর বাড়ির দিকে নজর দেওয়াতে কুন্দনন্দিনীকে রান্নাঘর আর বাড়ির মেয়েদের চিন্তা ছাড়া, অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করতে হলো না।


যদিও পরবর্তীতে রান্নার চাইতে দেখভাল করাটাই দিনে দিনে বেশি কঠিন হয়ে উঠল। কারণ, তার দ্বারা রান্না খুব একটা ভালো হয় না—তাছাড়া এই বাড়িতে রান্নার লোকের অভাবও নেই। সুতরাং ভালো রাঁধুনী থাকতে শুধু শুধু নন্দিনীকে নিয়ে কেউ টানাহেঁচড়া করবেই বা কেন? তাই রান্না সমস্যার সমাধান সহজেই হলে বটে। কিন্তু অভাব দেখা দিল আদর-আবদার,ছোটখাটো অভ্যাস,ও আবেগঘন যত্নের— যা সবার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।


মুখার্জি বাড়ির জনসংখ্যার মধ্যে যাঁরা বিবাহিত, তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার খেয়াল রাখে স্বামীরা। যদিও সব কটি নয়, এবং সবার  স্বামী ভাগ্য অতটা ভালোও নয়। তবুও বলা চলে তাদের নিয়ে সমস্যা অল্পেই। কিন্তু যারা অবিবাহিত, বা বিধবা, বা এমন কেউ যাঁদের দিন চলে যায় শুধু মুখ গুঁজে সংসার করে—তাঁদের একটু-আধটু চাওয়া থাকলেও সে সব দেখার কেউ নেই।  কোন কালেই তাদের আগ বাড়িয়ে কেউ জিজ্ঞেসও করে না— …কী ভালো লাগে, কী খারাপ লাগে, কী চাই, বা আদৌ কিছু চাওয়ার ইচ্ছে এখনো অবশিষ্ট আছে কি না। যেন চাওয়াটাই ভুল। মুখার্জি বাড়ির দেওয়ালের মতোই স্থির আর চুপচাপ হয়ে উঠেছেন তাঁরা—রোজকার রান্না, কাপড় ধোয়া, শাড়ি ভাঁজ করা আর এর ওর সাথে কান ভাঙানো, এই তো তাঁদের জীবন,কিংবা বলা ভালো এটাই চিরাচরিত গ্রাম্য জীবন। 


তবে সুপ্রিয়া কিন্তু এই গ্রাম জীবনেও বাড়িটিকে মাথায় করে রাখতো। সুতরাং তাকে ছাড়া একটু নয়, বেশ অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে মুখার্জি বাড়ির অন্দরমহল। সেই সাথে ঝিমিয়ে পড়েছে রমণীগণের চাওয়া পাওয়া গুলোও। এমন নয় যে সমীরকে কিছু বললে সে ব্যবস্থা নেবে না—সমীর ভদ্র, খানিক রসিক ও খোলা মনের পুরুষ। কিন্তু সব কথা তো আর পুরুষ মানুষকে বলা যায় না—লজ্জা বলে তো একটা বালাই লেগেই আছে! তাই নয় কি? তাছাড়া মুখার্জি বাড়ির প্রায় সবাই সমীরকে জমের মতো ভয় করে। কেন করে, সেটা কুন্দনন্দিনীর এখনও পুরো বোঝা হয়নি, তবে খানিকটা আন্দাজ সে অবশ্যই করতে পারে বৈ কি।

সুপ্রিয়ার অবশ্য এই বিষয়ে কোন বাঁধা বিপত্তি ছিল না। আর বাঁধা থাকলেও শশুরের সেবা,আর স্বামী সম্মুখে প্রগল্ভতা মিশ্রিত আদর সোহাগ করেই সে কার্য সম্পাদন করতো অধিকাংশ সময়ে। নন্দিনীর কিন্তু সেই উপায় ছিল না। তবে তাই বলে সে বসেও থাকেনি, চেষ্টা ত সেও করেছে।  কিন্তু সফলতার হার কমেছে তার নিজেরই দোষে সে কথা আলাদা। 

তবে এখন থাক সে কথা। কুন্দনন্দিনীর দোষ গুণের বিচার আপাতত আমাদের না করলেও চলবে। আমরা বরং দিন কয়েক এগিয়ে বর্তমানের পথে চলি! আজ সকাল সকাল সমীর বেরিয়ে ছিল হাঁটতে। নন্দিনীর ঘুম ভাঙতে স্বভাবতই অল্প দেরি হয়। তা সে যখন স্নান সেরে বাড়ির উঠনে পা দিয়েছে, তখন স্বামীর সাথে তার চোখাচোখি হলো। সমীর মুখে একটু হাসি রেখে বললে,

– কলকাতা থেকে চিঠি এসেছে...

ব্যস! এরপর আর কিছু শোনার প্রয়োজন ছিল না। নন্দিনী সেই অবস্থাতেই স্বামীর পিছু পিছু এলো চিঠির জন্যে। কারণ চিঠি সমীরের হাতে ছিল না,তার ঘরে ছিল‌। তা কুন্দনন্দিনী ঘরে ঢুকে চিঠি নিয়ে স্বামীর বিছানাতেই বসে পড়লে। সমীর অবশ্যই চেষ্টা করলো চোখ দুটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। সেই জন্য সদ্য আসা খবরের কাগজটাও সে হাতে নিয়েছিল বটে, তবে কি না সেই নিয়ন্ত্রণ ছিল খানিক দুর্বল। এখন কেন দুর্বল তার গূঢ় প্রাকৃতিক, জৈবিক এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়া বহুস্তর বিশ্লেষণ লেখক মহাশয় বৈজ্ঞানিক হলে হয়তো বা বুঝিয়ে বলতেন। তবে সে উপায় নেই কোন রকম গূঢ় বিশ্লেষণ ছাড়া সহজলভ্য ভাষা বলতে গেলে– 

সদ্য স্নান সেরে এসেছে কুন্দনন্দিনী। তবু যেন শরীর এখনও জলে ডুবে—গালের কাছে এক গুচ্ছ চুলের আগা থেকে গলে পড়া ঠান্ডা ফোঁটাগুলো চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নীরবে। ঘাড়ের বাঁকে জমে থাকা জল যেন কোনও অলক্ষ্মী প্রণয়ীর আলতো ছোঁয়া। এই রূপটি কিন্তু গ্রামীণ জনপদে প্রতিটি গৃহস্থালির  ভোর সকালের রমণী চিরচেনা রুপ। না জানি এই রুপে সমীর তার অর্ধাঙ্গিনী সুপ্রিয়াকে কতবার দেখেছে। 


আনমনে সমীর এগিয়ে গেল কুন্দনন্দিনী অতি কাছে। ভোর সকালে আধভেজা দেহজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এক সতেজ সুবাস নাকে ধাক্কা দিলে তার। মনে হয় যেন প্রকৃতির গোপন কোনো মন্ত্র সে গায়ে মেখে এসেছে। শুভ্র বর্ণের বুকে জড়িয়ে আছে পাতলা সুতির একখানা শাড়ি—শুকনো, কিন্তু অল্প হাওয়াতে দুলে উঠে এতটাই সায় দেয় দেহের প্রতিটি বাঁকে— যেন কাপড় নয়, এক স্বচ্ছ কামনা।


সমীর এগিয়ে এসে তা কুন্দনন্দিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেনি এখনো। তার বুকের ঠিক কাছে, হালকা হাওয়ায় কাঁপতে কাঁপতে অবাধ্য আঁচলটা একটু সরে গিয়েছে। যেন অনিচ্ছায় ফাঁস করে দিয়েছে বাঁ স্তনের গোলাভুজ রেখা—যা ঢাকার চেয়ে না-ঢাকাই বেশি। তার সেই অবচেতন ঔৎসুক্যে—হয়তো জানা, হয়তো না জানা —দেহের ভঙ্গিমায় এক নিঃশব্দ আহ্বান জেগে রয়েছে এখন। এখন বিধাতা যদি পুরুষকে একটু মন্দ দৃষ্টি দিয়েই থাকেন-তবে রমণী গণের কি উচিৎ সেই দুর্বলতা সৎ ব্যবহার করা?


চিঠি পড়ার তাড়ায় আঁচলটা একবার নন্দিনী গুছালো হেলায়। কিন্তু সে হেলা যেন অনবধানতা নয়, এক রকম সাহসী ক্লান্তি—নির্ভার, নিরাবরণ, নিঃশঙ্ক। এই মুহূর্তে কুন্দনন্দিনী শুধু এক নারী নয়— সে এক বৃষ্টি-ভেজা গন্ধ,এক শরীরী ছায়া, এক রূপকথার ভিতরে চেপে রাখা আর্তি। এগিয়ে এলেও সমীর কিন্তু নন্দিনীর মনযোগ না ভেঙে তাকে দেখছিল এক দৃষ্টিতে। তার চোখে হয়তো কামনা ছিল না,তবে নন্দিনী মুখ তুলতেই লজ্জায় লাল হলো। তার অবশ্য কারণ ছিল,বেচারীর আঁচলটা যে কি অবস্থায় ছিল,তার বর্ণনা তো এতখন দিয়েছি। সমীর এবার নন্দিনীর সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে হাতের কাগজটা রাখলে কোলে,অন্য হাতে শাড়ির আঁচলটা কাঁধ ঠিক করতে করতে নরম গলায় বললে,

— আজ...তোমায় বড় সুন্দর লাগছে কুন্দ।


কুন্দনন্দিনী খানিকটা অবাক হয়ে চোখ রাখে স্বামীর চোখে। সামনে বসা মানুষটির  এই দুটি চোখে  সুপ্রিয়ার রূপ ছাড়াও যে আর কারো রূপ ভালো লাগতে পরে, এটা তার জানা ছিল না যেন। সে চোখ নামিয়ে উঠে বেরিয়ে যায় নিঃশব্দে। আজ পুকুর ঘাটে এই কথাটি আর একজন বলেছিল,বোধকরি সেই কথাটিও ভাবছে সে আনমনে। তাইতো চিঠির সাথে খবরের কাগজ খানি! যেটি সমীর রেখেছিল তার কোলে! সেটিও সে নিয়ে গেল হাতে করে.........


///////

রোদ ধীরে ধীরে মাটির গায়ে লেপটে যাচ্ছে। মুখার্জি বাড়ির অন্দরমহলটাও যেন থেমে পড়েছে এক কোমল নিস্তব্ধতায়। বাড়ির পেছনটায় শুকোতে দেওয়া শাড়িগুলো ধীরে ধীরে নামিয়ে নেওয়া হচ্ছে। খানিক দূরের পুকুর ঘাটের সিঁড়িতে বসে কয়েকটি রমণী। কেউ বলছে কথা ত কেউ বাঁধছে বিনুনি।

কুন্দনন্দিনী চুপচাপ বসে,তার পেছনে কমলা চুল নিয়ে ব্যস্ত। এখানে উপস্থিত সকলেই নন্দিনী ও সমীরের বর্তমান টানাপোড়েন অনুভব করতে শুরু করেছে এতো দিনে। তারা এও জানে বিয়েটা সমীর বা নন্দিনী নিজের ইচ্ছায় করে নি। সুতরাং এই রমণী সকলের ধারণা— সমীর কুন্দনন্দিনীকে মেনে নেয়নি বলে সে দোতলায় থাকতে চায় না। যদিও কেউ কেউ বিভিন্ন ধারণাও পোষণ করে থাকে, তবে  ওটি থেকে এই ভাবনার কারণ বা যুক্তি দুটোই শক্ত পোক্ত। 

সমীরের একটি সুন্দরী গৃহিণী,একটি মেয়ে ,একটি ছেলে এবং একটি বিশাল পরিবার আছে। এখন অবস্থার পরিপেক্ষিতে দেখতে গেলে, বাবার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করে সমীরের ভাগ্যে খানিক অশান্তি নেমেছে বৈ ত নয়। সে বেচারা বাড়ির ওপড় মহল থেকে নিচের মহলে নেমেছে।  তা তো ওই নতুন বিবাহের কারণেই। তা নয়তো বাড়ির কে না জানে, সুপ্রিয়া দেবী ছাড়া সমীর মুখার্জির দু'চোখ অন্ধ! 

তাছাড়া একটা অপয়া মেয়ে– যে কিনা বিয়ের দিনেই বরটিকে খেয়েছে। হাজার হোক প্রাণের ভয় কার না আছে? বোধকরি এই  সব ভেবেচিন্তে, এবং ভেতরকার খানিক খবর নিতে কে যেন একটু অতিরিক্ত  সহানুভূতিতেই বলে উঠল—

— সত্যিই বৌ, দাদাবাবুর মতো এমন  গোড়ার গোবিন্দ মরদ তো আমি দুটো দেখি না। দোতলায় এমন সুন্দরী বউটা রেখে, একগাদা বই নিয়ে নিচতলার পা গেরে বসে আছে।

পাশ থেকে আর একজন উত্তর করলে,

– কি যে বল না দিদি, সমীরদা ওমনটি নয় মোটেও! সে ডাক্তার মানুষ,তাদের ঢের পড়াশোনা করা চাই। তা না হলে.....

– ইসস্..... তার দাদাটি সাধু বাবা কি-না! ও সব পড়া সাধন করতে করতে গ্রাম উদ্ধার করে দেবেন। 

এইসবের ফাঁকে এক কিশোরী তার মনের কথা পাড়লো,

– উফ্, এই সন্ধ্যাবেলাটা একেবারে যাচ্ছেতাই! এই তো একটু আগেই বসলাম, এখুনি ডাক পড়বে কাকিমার দেখো। 

তার বয়স অল্প,তার ওপড়ে সে আছে ছোট কাকিমার কড়া শাসনে। এদিকে সূর্য দেবের বোধকরি আজ তারাতাড়ি কাজকর্ম তুলে ছুটি নেবার মতলব ছিল। মেয়েরা তাই ও বিষয়ে আলোচনা করার আগ্রহ  দেখালে না। এক সময় বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। মেয়েরা জানে, এই সময়টাই স্বামী বা শ্বশুরদের ফিরে আসার সময়। তাই  রান্নাঘরে ধীরে ধীরে ধোঁয়া ওঠে। আলু পোড়া গন্ধে ধুপের ধোঁয়া মিশে যায়, আর উঠোনের পাশের তুলসীতলার কাছে একজন কাঁধে আঁচল টেনে আলতা পরা পায়ে হেঁটে যায়, ছোট পিতলের ঘটিতে জল ঢালে। এটা শুধু এই বাড়ির দৃশ্য নয়, সব গ্রামীণ জনপদের  বউদের চোখে একরকমই চেনা শ্রান্তি, অভিমান আর সুখ  প্রহরের অপেক্ষা থাকে বোধ হয়।


কুন্দনন্দিনীও এর ব্যতিক্রম নয়। সেও বাড়ির সকলের সাথে চলছে তাল মিলিয়ে। হাত ভরা কাপড়ের স্তপ নিয়ে সে নিচতলা থেকে রওনা দিয়েছে দোতলার দিকে। ধীরে ধীরে সিঁড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যায়।

দোতলার সিঁড়ি নিচের ঘরেটির দরজা আধখোলা। ভেতর থেকে যেন কারো শব্দ শোনা যায় অল্প। সে অবাক হলো,কেন না সেই ঘরটি বন্ধই থাকে সব সময়। খানিক এগুতেই ভেতরে মৃদু আলো। দরজার ফাঁক গলে চোখ পড়তেই তার নিঃশ্বাস আটকে গেল।


ভেতরে কিরণ। আর তার সামনে, আধেক বসা-আধেক শোয়া অবস্থায় রয়েছে সে মেয়েটি — লক্ষ্মী। এ বাড়িরই মেয়ে বটে। দিন কয়েক হলো এসেছে বেড়াতে। মেয়েটির শাড়ির আঁচল বুক থেকে পুরোপুরি সরে গিয়েছে। প্রদীপের হলদেটে আলোয় তার শ্যামবর্ণ স্তনজোড়া একেবারে স্পষ্ট। কিরণ তার ডান হাত দিয়ে একটি স্তন আলতো করে মুঠোয় ধরে রেখেছে। বাম হাতে তার মুখ চেপে ধরেছে, যেন কেউ শব্দ না শুনতে পায়। কিন্তু লক্ষ্মীদির চোখে লজ্জা নেই — তীব্র কামনায় দু'চোখ বুঁজে শরীরটা বাঁকা করে ফেলেছে সে।

— ওই না রে...ওইখানে না, আহ্‌ কিরণ...!

নিচু গলায় অস্ফুট গোঙানির মতো বেরোলো তার কণ্ঠ।

কিরণের ঠোঁট তার ঘাড়ে, তারপর ধীরে ধীরে কানের পেছনে চলে গেল। বাম হাতটা এখন পিছলে এসেছে নাভির নিচে...পেট ঘেঁষে ধীরে ধীরে নামছে। মেয়েটির পা আলগা হয়ে যাচ্ছে, শরীর উঠছে নামছে যেন সজনে পাতার মতো বাতাসের কম্পনে।


কম্পন প্রবাহিত হচ্ছে কুন্দনন্দিনী দেহেতেও। তবে তা রাগ ও অজানা অভিমানের। তার সরে যেতে ইচ্ছে করলেও,পা আটকে গেছে তার, চোখ সরাতে পারছে না। তার দেহে এক ঝলক শিহরণ উঠছে, যেন গোপনে কেউ তার বুকের উপর হাত রেখে দিয়েছে, হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেরে গিয়েছে ইতিমধ্যে।  হঠাৎ কিরণের মাথা কিছুটা সরে আসে—চোখের চাহনিতে পশুর মতো স্পর্ধা।

— চুপ কর, বজ্জাতি...আজ তোকে একদম খুলে ফেলার ইচ্ছে করছে...

চিরুনি দিয়ে বাধা লক্ষ্মীদির খোলা চুল ছড়িয়ে পড়েছে বিছানায়। আঁচল খসে গিয়ে দুই স্তনের মাঝখানে জমে থাকা ঘামের রেখা চিকচিক করছে আলোতে। কিরণের আঙুল যখন সরে যাচ্ছে তার ঊরুর ভেতরে, তখন তার কণ্ঠ থেকে ভেসে এল একটা তীক্ষ্ণ শ্বাস—

— উফ্‌... এবার ঢোকাও কিরণ, আর পারছি না...!

এতক্ষণ দণ্ডায়মান ছিল কুন্দনন্দিনী। তার বুকের ভেতর ধুকপুক করছে। তার চোখ কিরণের বুকে, বাহুতে, আঙুলে আটকে আছে। একটা অদ্ভুত, লজ্জার মত কিছু অনুভব করেও সে দেহ সরাতে পারছে না। তবে তার চমক ভাঙলো ভেতরে আলোটি নিভে গেলে। নন্দিনীও কাঁপা কাঁপা পা ও শুকনো গলায় উঠে গেল দোতলায়। ঘরে এসে বিছানার পাশে মেঝেতে বসে পড়লো সে। তার মনে হলো এই ধরণীতলে সকলেরই সঙ্গী ধরা বাধা, শুধু তাহার জন্যে বরাদ্দ মানুষটিকেই কেন অসময়ে তুলে নেওয়া হলো?


সন্ধ্যার পর নিচের বৈঠক ঘরে চা পরিবেশন চলছে—চায়ের ট্রে সাজানো হয়েছে মোটা কাপে, সঙ্গে পাঁপড় ভাজা আর কাঁচা কলার চপ। বাড়ির ও পাড়ার কয়েকজন গুনিমানি লোক আসর বসিয়েছে আলোচনার। কুন্দনন্দিনী এই সংসার চক্রের নানান শব্দ শুনতে শুনতে খানিক আনমনা হয়ে পরেছিল। হঠাৎ বৌদি ডাক শুনে চমকে পাশ ফিরলো


–দাদা বললে আজ সকালের কাগজ খানি নাকি তুমি চিঠির সাথে দোতলায় নিয়ে এসেছো? কাগজটা দাও দেখি।

নন্দিনী কিরণের কথাটা প্রথমটায় ঠিক বুঝলো না। অবশ্য যখন বুঝলো তখন একটু লজ্জিত হয়ে খবরের কাগজটি খুঁজতে লাগলো। তবে দুজনে খুঁজেও কাগজের হদিস মিললো না।

– আরে বাবা,কাগজটা কোথায় রাখলে মনে নেই?

না, মনে কুন্দনন্দিনীর আছে ভালোই। সে সকালে চিঠি ও কাগজ দোতলায় বিছানার পাশে টেবিলে রেখেছিল। 

– আমি তো টেবিলেই রেখেছিলাম, কিন্তু!

– বুঝেছি তবে নিশ্চয়ই কেউ নিয়ে গেছে।

বলতে বলতে কিরণ বেরিয়ে গেল। নন্দিনী তার পিছু পিছু দুয়ার সম্মুখে অগ্রসর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেদিন স্বামীর ডাক্তারী ঘরে কুন্দনন্দিনী সাথে কিরণের হয়েছিল বোঝাপড়া। তবে সে বোঝাপড়া বড় সহজ নয়।  প্রথমটা কুন্দনন্দিনীই একনাগাড়ে একগাদা কথা কিরণকে শুনিয়ে দিয়েছিল বটে। অবশ্য কিরণ নিজেও কথা কম বলে নি,তবে কুন্দনন্দিনীর তা বিশ্বাস হয়নি মোটেও। কিন্তু এতকিছুর পরেও সন্ধিটা কিন্তু মন্দ হয়নি।  মানে নিজের জেনা জগত থেকে হঠাৎ কেউ যদি বড় বেশি দূরে সরে আসে, হাঁপিয়ে ওঠে তার মনপ্রাণ। তখন সেই চেনা কলকাতার একটু রঙ চড়ানোর ছোঁয়া গায়ে মাখতে ভালো লাগে বৈ কি!
//////


চিঠি পাবার দুদিন পর সমীর কলকাতা যাবে বলে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে। গরুর গাড়ি এগুনোর সময়  নন্দিনী দাঁড়িয়ে ছিল দুয়ারে। এই কমাসেই কি তার মধ্যে এমন এক অভ্যস্ততা এসে গেছে, যার জন্যে কলকাতার সব কিছুই ভুলে থাকতে চাইছে সে—আলোর ঝলক, গলির রোদ্দুর, বাড়ির ছাদ, তার বাবার মুখ। সমীর ভাবে। তবে ভাবলেই কি হয়? রমণীগণের মন পড়া বা বোঝা পুরুষদের কর্ম নয়।

সকালের উজ্জ্বল আলো তে দূর যাত্রা পথে গরুর গাড়ি যতখন দেখা গেলো, ততক্ষণ নন্দিনী চেয়ে রইল সেদিকে। তারপর জানালা বন্ধ  আলো-আঁধারি ঘরটাতে চুপচাপ বসে খানিকটা চোখের জল ফেলে হালকা হয়ে নিল।


সে জানে, বাবার শরীর ভাল এখন। তবুও যাওয়াটা উচিত, এটাই নিয়ম। তবে স্বামী যখন জানতে চাইল সে যাবে কি না,তখন সে কারণ হিসেবে,সুপ্রিয়া যেভাবে অন্দরমহলের দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছে—তাতে বাইরে যাওয়া অনুচিত এটাই দেখালো। অবশ্য এমনটাই সকলের ধারণা হবে। কিন্তু এটাই কি সত্যিকারের কারণ? আর কেউ না জানলেও সে জানে,তা না।


গতকাল নিচতলায় সমীর যখন বসে ছিল তার ডাক্তারী ঘরে। তখন সন্ধ্যার একটু পর।  কুন্দনন্দিনী চুপচাপ ঘর গুছানো তে মন লাগিয়েছে। কখনো তাকের বই গুলো উল্টেপাল্টে দেখছে সে। কখনো আড়চোখে দেখছে স্বামীকে। সমীর কিন্তু চেয়ারে বসে আপন মনে লিখে চলেছে। সে খেয়াল করে নি কুন্দনন্দিনী চুপচাপ কখন তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।


— আপনি যাচ্ছেন?

সমীর চেয়ারে বসা অবস্থায় তাকায়। প্রথমটা বুঝতে না পারলেও, পরক্ষনেই উত্তর করে,

— হ্যাঁ, সম্ভবত কাল বা পরশু। তুমিও চল না,বাবার অমন শরীরের অবস্থা,তোমায় দেখলে ভালো লাগবে তার।

স্বামীর কথায় কুন্দনন্দিনী মাথা হেঁট করে বলে—

— বাবা এখন ভালই আচ্ছে, তাছাড়া সবাই গেল বাড়ি দেখবে কে?

এক মুহূর্ত চুপ থেকে সে নিজেই বলে ওঠে—

— আমি যাচ্ছি না।

সমীর তাকে একটু অবাক হয়ে দেখে। কণ্ঠে মৃদু জিজ্ঞাসা:

— কেন? বাড়িতে তো লোকের অভাব নেই, তেমন হলে বাবাকে চিঠি লিখে দেব না হয়।

— না,বাবাকে শুধু শুধু ডাকতে হবে না। এইবার অ-আপনি গিয়ে দেখে আসুন,আমি পরে যাবো না হয়।

এই পর্যন্ত বলেই থেমে যায় সে।

সমীর কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তার চোখে কেমন একটা বেদনাবোধ খেলে যায়, যেন বুঝতে পেরেছে — এই মেয়েটা বাইরে থেকে যেমন জেদি, তেমনি ভিতরেও একটা অসমাপ্ত রাগে পুড়ছে নিত্যদিন। সে শুধু বলে,

— যেমন ইচ্ছে তোমার।

তারপর মাথা নীচু করে লেখায় ফিরে যায়। কুন্দনন্দিনী আজ কিন্তু কাজ শেষ হলেও চলে যায় না। ধীরে পদক্ষেপে পেছনে ফিরে পর্দা পেরিয়ে পা রাখে ওপাশের ঘরে,স্বামী বিছানায় শুয়ে পরে সে। মাঝে মাঝে মনের কথাগুলো  এতটাই জটিল করে তোলে মানুষ— গলায় যেন কে একটা দড়ি বেঁধে রেখেছে,বলি বলি করেও মুখ ফোটে না সত্যি কথা।

-
রাতে খাওয়ার সময় কুন্দ খেতে যায়নি। তাই সমীর নিজেই খাবার নিয়ে আসে তার ঘরে। সামনে বসে অভিমানী মেয়েটিকে যতটুকু পারে খায়িয়ে দেয় ধমকে ধমকে। রাতে কুন্দনন্দিনী আজ আর স্বামীর ঘর ছাড়ে না। স্বামীর বিছানাতেই এক পাশে চুপচাপ শুয়ে থাকে। সমীর ততক্ষণে আবারও পাশের ঘরে। রাতে বাতাস কিছুটা গুমোট—কুন্দনন্দিনীর মতোই। বৈঠকখানার আলো নিভে গেছে অনেক আগেই। বাকিদের ঘুম, রান্নাঘরের স্তব্ধতা, এবং উঠোনের ওপরে ছড়িয়ে থাকা অন্ধকার—সবই যেন এক বিষণ্ন সুরে বাঁধা।

সমীর তার ঘরে যখন ফেরে তখন বিছানায় কুন্দনন্দিনীকে দেখে অবাক হয়। সত্য বলতে কুন্দনন্দিনীকে খাইয়ে ওঘরে গেলেও আজ কিন্তু কোন কাজে বা বাইয়ের পাতাগুলোয় চোখ ছিল না তার। মনের কোণায় এক অভিমানী রমণীর মুখ। মধুচন্দ্রিমায় সে অবোধ মেয়েটির কান্না ভেজা কন্ঠ– বার বার মনে পরছিল তার। তাই এখন বিছানায় সমীর তাকে দেখে একটু অবাক হলেও,কিছু না বলে নিজেও শুয়ে পরে অন্য পাশে।


কিন্তু শুলেই কি ঘুম আসে?  না, সে খানিকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে চুপচাপ শুয়ে থাকে। এক সময় যেন মনে হয় পাশে থাকা রমণীটি নিঃশব্দে কাঁদছে। সমীর মুখ ফেরায়। যদিও পেছন দিকে দৃষ্টি রেখে বোঝার উপায় নেই। সে একটি বার হাত বাড়িয়েও আবার গুটিয়ে আনে। মৃদু স্বরে ডাকে নন্দিনীকে। কিন্তু কোন সারা না পেয়ে সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে সমীর একসময় ডান হাতে ছুঁয়ে দেয় কুন্দনন্দিনী বাহু। ধীরে ধীরে তাকে নিজের দিকে টেনে আনে। হালকা বাধা, হালকা দ্বিধা, কিন্তু শেষমেশ নন্দিনী এসে ঠেকে স্বামীর বুকের ওপর। নন্দিনীকে কাছে টেনে সমীর কোমল স্বরে কথা বলে তার কানের কাছে,


— তুমি যদি না যাও, আমি আর নিশ্চিন্তে যেতে পারবো না। তুমি যা রগচটা মেয়ে! একা ছাড়তে চিন্তা হয় খুব।



এই কথায় কুন্দর চোখের কোণায় হালকা জল এসে পড়ে। সমীর তার মুখ তুলে আলতোভাবে হাত রাখে গালে, মুছিয়ে দেয় অশ্রু বিন্দু। তারপর একসময় তাকে একেবারে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে। কুন্দনন্দিনী তখন আর কিছু বলে না। নিজেকে ছাড়িয়েও না। সেই জড়ানোয় অল্প কাঁপুনি, কিছু স্বস্তি, আর অনেকটা দীর্ঘশ্বাস মিশে যায়।



ভোরের আলো এ ঘরে ঢোকে সমীরে ডাক্তারী চেম্বারের পর্দা র ফাঁক গলে। ঘড়ির কাঁটা ছয় ছুঁই ছুঁই করছে। সমীরের চোখ খুলতেই সে টের পায়, কুন্দনন্দিনী তার বুকে মুখ গুঁজে ঘুমোচ্ছে। তার এক হাত সমীরের বুকে জড়ানো, আর এক পা তুলে রেখেছে তার উরুর উপর—নিবিড়, একান্ত।

সমীর একটু নড়তে গিয়েও থেমে যায়। তার বুকের উপর এত মৃদু নিশ্বাস—পাশে তাকিয়ে কুন্দনন্দিনী ঘুমকাতুরে মুখটা দেখে নড়াচড়া করার ইচ্ছে থাকে না। একটু পর, কুন্দর চোখ খুলে যায়। চোখ খোলার পর প্রথমেই সে বোঝে, কীভাবে তার হাত, তার শরীর, সম্পূর্ণভাবে জড়িয়ে ছিল সমীরের শরীরের সঙ্গে।

তার মুখ লাল হয়ে ওঠে। তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিতে চায়। কিন্তু ঠিক তখনই সমীর তার কানের কাছে আস্তে বলে

— বাঁচা গেল, ঘুম ভেঙেছে এতক্ষণে।

কুন্দ চোখ নামিয়ে ফেলে। মুখে কিছু না বললেও চোখের কোণায় যে প্রশ্রয়, তা বলে দেয়—সেই অভিমানের মেঘ ভেঙেছে। তবে সত্যিই বেরুবার সময় কুন্দনন্দিনী কিন্তু গাড়িতে ওঠেনি। তা সব দিক ভেবে সমীরও আর জোরজবরদস্তি করলে না।



 আপডেট দিতে একট দেরি হল, কিছু পার্সোনাল সমস্যায় ভুগছিলাম।  যাই হোক, হ্যাপি রিডিং ❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

[+] 10 users Like বহুরূপী's post
Like Reply
Very nice
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
(25-07-2025, 09:32 PM)বহুরূপী Wrote: পর্ব ১০

বলরাম মুখার্জির বাড়িতে লোকের অভাব কোন কালেই ছিল না। তবে সবদিক সামলে নেওয়ার মতো মাথার অভাব অতি অবশ্যই; মুখার্জি বাড়ির সাধারণত তিনটি মাথা। প্রথমটি সুনিশ্চিত ভাবছ  মুখার্জি বাবু নিজে। দ্বিতীয়টি সুপ্রিয়া, তার নিজের গুণের বলে। এরপর বহু মাথার মধ্যে সমীরের মাথাটি তৃতীয় স্থান দখল করে বসেছে ধীরে ধীরে ।তাই বিশেষ করে এই মাথাটিকে বাড়ির সকলেই একটু ভয় করে চলে। যদিও সে বাড়ির কোন কাজকর্মে নাক তেমন একটা গলায় না। অন্তত কুন্দনন্দিনী আসার পর থেকে, সে তেমনটাই দেখে এসেছে।

এই কারণেই হঠাৎ করে, বাড়ির দুটি প্রধান মাথার অনুপস্থিতিতে,  কুন্দনন্দিনী ভেবেছিল– একা হয়ে সে বুঝি বা বড্ড সমস্যায় পড়ে। তবে সমস্যা তেমনটা হলো না। বরং সমীর নিজেই আগ বাড়িয়ে প্রায় সবটা সামলে নিল। এতে করে কুন্দনন্দিনী অবাক হয়েছে যথেষ্ট। এদিকে একই সাথে সমীরের প্রতি তার শ্রদ্ধাও বেরেছে খানিক। 
বাঃ বেশ লাগল।
[+] 1 user Likes kenaram's post
Like Reply
(26-07-2025, 02:03 AM)kenaram Wrote: বাঃ বেশ লাগল।
(25-07-2025, 10:27 PM)Saj890 Wrote: Very nice

ধন্যবাদ ❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
অসাধারণ। একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন দাদা!
[+] 1 user Likes priancazz's post
Like Reply
(26-07-2025, 08:22 AM)priancazz Wrote: অসাধারণ। একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন দাদা!

Thank you bro ❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
খুব সুন্দর হয়েছে ❤️
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
[+] 1 user Likes Dip 99's post
Like Reply
লেখায় অলসতা স্পষ্ট মহাশয়!
[+] 1 user Likes Sweet angel's post
Like Reply
(29-07-2025, 08:11 AM)Sweet angel Wrote: লেখায় অলসতা স্পষ্ট মহাশয়!
জেনেশুনে এমন গুঁতো মারা উচিত নয়। Sad

(26-07-2025, 09:25 PM)Dip 99 Wrote: খুব সুন্দর হয়েছে ❤️
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
থ্যাংকস ব্রো ❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
এত সুন্দর হচ্ছে দাদা যে পড়ে যেতেই মন চাইছে। দিন না আরেকটা পর্ব তাড়াতাড়ি। প্রতিদিন দু'বার করে ঢু৺ মারছি আপনার এই থ্রেডে।
[+] 1 user Likes priancazz's post
Like Reply
১১ দেখি আসলো না শুক্রবার
[+] 1 user Likes রাত জাগা পাখি's post
Like Reply
(30-07-2025, 12:22 AM)priancazz Wrote: এত সুন্দর হচ্ছে দাদা যে পড়ে যেতেই মন চাইছে। দিন না আরেকটা পর্ব তাড়াতাড়ি। প্রতিদিন দু'বার করে ঢু৺ মারছি আপনার এই থ্রেডে।
(02-08-2025, 01:59 PM)রাত জাগা পাখি Wrote: ১১ দেখি আসলো না শুক্রবার

সরি ব্রাদার
যা লিখেছি তা শেষটায় এসে আমারই পছন্দ হয়নি।
তাই এ সপ্তাহে আপডেটা বাদ দিতে হলো।

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
এবার কুন্দনন্দিনীর সাথে সমীরের অন্তত একটি হলেও দৃষ্টিনন্দন ও আবেগঘন লাজুক লাজুক রতিমিলন ঘটুক এটাই পাঠিকা হিসাবে আপনার কাছে আমার একান্ত চাওয়া।
[+] 1 user Likes Rubya's post
Like Reply
(03-08-2025, 01:57 AM)Rubya Wrote: এবার কুন্দনন্দিনীর সাথে সমীরের অন্তত একটি হলেও দৃষ্টিনন্দন ও আবেগঘন লাজুক লাজুক রতিমিলন ঘটুক এটাই পাঠিকা হিসাবে আপনার কাছে আমার একান্ত চাওয়া।

তার কাছাকাছিই আসছে ম্যাডাম। ❤️

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply
পর্ব ১১

মন্দির থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার আগে,পাড়ার মেয়েদের সাথে নদীর পাড়ে গাছ তলায় বসেছিল কুন্দনন্দিনী। পুরো গ্রামে পুজো পুজো একটা হাওয়া বইছে । গত মাস কয়েক যে উত্তেজনা হীন গ্রামটি সে দেখে এসেছে, এখন আর তেমনটি মনে হচ্ছে না। বাড়িতেও সবার মুখে মুখে মায়ের আগমনের সাথে, সুদূর কলকাতা থেকে যাত্রাপালার আগমন বার্তাও ঘুরে ফিরে বেরাছে। এর মধ্যেই কুন্দনন্দিনী পিতার আর একটি চিঠি পেয়েছে। তবে তাতে তার স্বামীদেবের উল্লেখ নেই। বোধকরি তিনি পৌঁছানোর আগেই এই পত্র প্রেরিত হয়েছিল। নয়তো তার বাবাকে কুন্দনন্দিনী বেশ ভালো করেই চেনে।



তারা উঠে বাড়ি ফেরার পথে পশ্চিমাকাশে সূর্য দেব আজকের মতো ছুটির প্রস্তুতি নিচ্ছে। নদীর পাড়ে ছড়িয়ে থাকা কাশবনের মাথায়; আলো ছায়ার খেলায় দুলে ওঠে ওই সাদা তুলোর মতো কাশফুলগুলোকে, খুব ছুঁয়ে দেখতে মন চাইছে নন্দিনীর। হাওয়ার ছোট ছোট ঢেউয়ে তারা কেমন একত্রে দুলে উঠছে,সেই তুলনায় নদী আজ অনেকটাই নিরব। শান্ত নদীর মাঝে আপন মনে ভেসে চলেছে দু'টো পাল তোলা নৌকা। মাঝি হয়তো গান গাইছে,তবে সেই সুর এই পর্যন্ত আসছে অল্পেই। তাতে অবশ্য বোঝার উপায় নেই।


সময়ের সাথে সাথে শান্ত নদীর জলে প্রতিফলিত আকাশের রঙ বদলাতে থাকে—নীল থেকে ধূসর, ধূসর থেকে হলুদ, হলুদ থেকে যেন হালকা গোলাপি। পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটছে যেন দ্রুত বেগে। বোধহয় শহুরে মেয়ে নন্দিনীকে প্রকৃতি তার কোন মায়ায় জড়াতে চাইছে। আজ তার চোখে কেমন সুন্দর লাগছে এই ছোট্ট গ্রাম্য নদীটি। ওপারে বাঁশবন, আমবন ও বহুকালের ফলের বাগান যেন কোন প্রাচীন অরণ্য। প্রকৃতি মায়ের এই নিরব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে, কুন্দনন্দিনী কেমন যেন এই পার্থিব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন হঠাৎ ফিরতে হবে শুনে একটু খারাপই লাগলো তার। তবে করার কিছু নেই। একটু পরেই নামবে সন্ধ্যা,বাড়িতে এই বধূসকলের কাজ ত আর কম নয়।

বোধহয় মেয়েরা নিজেদের মধ্যে সেই সব কথা বলতে বলতে এগুছিল আপন মনে। চারদিক দেখতে গিয়ে কুন্দনন্দিনী বারবার একটু পেছনে সরে যাচ্ছিল। এবার বাড়ির কাছাকাছি আসতেই পথের পাশে ঘন বাঁশ ঝাড় থেকে বেরিয়ে, কে যেন তার মুখ ও কোমড় আঁকড়ে, টেনে নিল বাঁশ বাগানের অন্ধকারে। আচমকা এমন কান্ডে কুন্দনন্দিনী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেন চিৎকার দিতেও ভুলে গেল। অবশ্য চিৎকার দিতে চাইলেই তাকে দিতে দিচ্ছে কে! কিরণ ইতিমধ্যে তাকে বাঁশ বাগানের অন্ধকারে ঠেসে ধরে আটকে দিয়েছে মুখখানা। 


– দেখ নন্দি..বৌদি! তুমি আমার পেছনে লেগেছো কেন বলবে?


নন্দিনী নিজেকে ছাড়াতে দুই হাতে কিরণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু সে চাইলেই তা হবে কেন? তার স্বামীর মতো হাট্টাগাট্টা না হলেও ,কিরণের দেহ যথেষ্ট সবল। তাই সে এবার একটু রেগেমেগেই বললে,

– আমার যেন আর কাজকর্ম নেই! সব ফেলে  তোমার পেছনে লাগবো। এমন হঠাৎ করে উফ্.. ভয়ে আমার.....


নন্দিনীর কথা সম্পুর্ণ শেষ হবার আগেই কিরণ যেন তাকে ঠেলে নিতে চাইলো আরো পেছনে। কিন্তু পেছনে জায়গায় কোথায় আর? তাই এবার বাঁশ ঝাড়ে কিসের খোঁচায় নন্দিনীর শাড়ির আঁচলটা গেল ছিঁড়ে। তার পরেও সে বেচারি ভাবছিল সমস্যাটি অল্পে কাটিয়ে দিতে পারলে লেটা চুকে যাবে। তবে কিরণ নাছোড়বান্দা।

আসলে দু'দিন আগে সিঁড়ির নিচের ওই ঘরে নন্দিনী যা দেখেছিল, আজ সকালে তাই নিয়ে কৌশলে সবার সামনে কিরণকে সে একটু কথা শুনিয়েছে। তার কথার বিষয়বস্তু সকলে না বুঝলেও কিরণ ও লক্ষ্মী বেশ বুঝেছিল— তা বোঝাই যাচ্ছে এখন। আর সে জন্যই বোধকরি লক্ষ্মী হটাৎ বাড়ি যেতে ছটফট করতে শুরু করেছে। নন্দিনীর অবশ্য এই সব দেখে একরকম তৃপ্তিই হচ্ছিল,তবে কিরণ এমন রেগে যাবে সে ভেবে দেখেনি। 

– তুমি কি চাইছো বলো তো? 

– আমি! 

নন্দিনী কিরণের চোখের পানে চাইলো এবার। ছেলেটা সত্যিই রেগেছে। তবে নন্দিনী মনেও বোধহয় লুকানো রাগ ছিল। তাছাড়া কিরণ বড্ড কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার পুরুষালী বুকের ছোঁয়া লাগছে নন্দিনীর বুকে। একটু ভয় ও অনেকটা উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে নন্দিনীর। সে এবার কিরণকে সজোরে ঠেলে সরি বললে,

– পাগলামি করো না কিরণ। আমি এমন কিছুই করিনি যাতে তোমার এই রাগের হেতু বোঝা যায়।

এই বলে নন্দিনী এবার  সরে এসে হয়তো চলেই যেত। তবে রাগের বশে কিরণ চেপে ধরলো নন্দিনীর ডান হাতের কব্জি। ধরলো বোধহয় খানিক জোরেই। কিরণের হাতের চাপে ভেঙে গেল নন্দিনীর কাঁচে কটা চুড়ি। জোরালো টানে সে এবার আঁছড়ে পড়লো কিরণের বুকে। কুন্দনন্দিনী অবশ্য দেরি করলো না, তৎক্ষণাৎ  নিজেকে সামলে সপাটে কিরণের গালে বসিয়ে দিল তার বাঁ হাত খানি। এবং আর পেছনে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতে লাগলো বাড়ির দিকে। দুজনেই খেয়াল করলো না কাঁচের চুড়ি ভাঙায় নন্দিনীর হাতেও অল্প লেগেছে.…..


 
রাত পেরিয়ে পরদিন সকাল থেকে কুন্দনন্দিনী একটু আনমনা। আগেরদিন বাঁশঝাড়ের সেই মুহূর্ত যেন বারবার ফিরে ফিরে আসছে তার মনে। তার কানের কাছে কিরণের রূঢ় নিঃশ্বাস গুঞ্জন তুলছে বার বার। নন্দিনী যেন ঠিক করতে পারছে না—সে রাগ করেছিল, নাকি... হিংসে!

গত সন্ধ্যায় ওরকম ভাবে কিরণের কাছে আসাতে, হটাৎ তার দেহে একরকম শিহরণ খেলে গিয়েছে, যেটি এখনো যেন শিরশির অনুভুতি তুলছে মনে?  এমনটা কেন হচ্ছে তা নন্দিনী বুঝতেও পারছে বটে। লক্ষ্মীর আচমকা চলে যাওয়াতে কেমন একটা তৃপ্তি অনুভব হচ্ছে তার। গতকাল হাতের চুড়ি ভেঙে গিয়েছিল বটে, তবে তার চামড়ায় লেগে থাকা কিরণের আঙুলের চাপ গুলো তাকে নিয়ে গিয়েছিল অতীতে। না চাইতেও সারাটা দিন নন্দিনীর কাটলো কিরণের কথা ভাবতে ভাবতে। সেই সাথে সে চেয়ে রইলো হাতের কাঁটা দাগটার দিকে।

বিকেলে দোতলায় ঘরে বসে সে যখন চুলে চিরুনি চালাচ্ছে। হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে বারবার।আম বাগানে কি একটা অচেনা পাখি ডাকছে গলা ছেড়ে। কুন্দনন্দিনী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগোবে জানালার দিকে, ঠিক তখনই হঠাৎ দরজার কাছে নিঃশব্দে এসে দাড়ালো কিরণ। চৌকাঠে হেলান দিয়ে, কণ্ঠে মাখা আলতো কৌতুক নিয়ে সে বলল—

— চড়টা বেশ জোরে মেরেছো বৌদি, এখনো ব্যথা করছে।

কুন্দনন্দিনী ঘাড় না ঘুরিয়ে বলল,

— আর একটা খেতে না চাইলে আমার সামনে থেকে যাও এখন।

কিরণ যাবে কি,সে এবার ঢুকে এল ঘরে। তার চোখে সেই সন্ধ্যার রাগি দৃষ্টি নেই—বরং একধরনের নির্লজ্জ আর একরোখা আকর্ষণ মিশ্রিত কিছু। ধীরে এসে নন্দিনীর পাশে দাঁড়িয়ে সে বলল,

— আমি জানি, আমাকে ঘেন্না করছো তুমি এখন। কিন্তু তুমিও জানো... আমি তোমায় সেদিন মিথ্যা বলিনি। একটা সময় ছিল যখন আমি তোমায় সত্যিকার অর্থেই কাছে চেয়েছিলাম।


কুন্দনন্দিনী চুপ। আয়নায় নিজের পাশে দাঁড়ানো পুরুষটিকে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বড়, কিন্তু তবুও এই মানুষটি কেন যে তাকে টানে! 


— তোমার সবটাই মিথ্যে কিরণ।


বলতে বলতে কুন্দনন্দিনী সরে দাঁড়ালো। সে চলে যেতে চাইলো ঘরের বাইরে। কিন্তু একটা শক্ত হাত গতকালের চেয়েও আরো শক্ত করে চেপে বসলো নন্দিনীর হাতে। হেঁচকা টানে কুন্দনন্দিনীর হালকা দেহটা চলে এলো কিরণের বুকের কাছে। তারপর এক মুহূর্ত নীরবতা। অপ্রত্যাশিতভাবে কুন্দনন্দিনীর মুখের সামনে মুখ এনে কিরণ বললে,

—একবার আমার চোখের দিকে তাকাও, তোমার কি মনে হয়?


চোখে চোখ অবশ্য পরে,তবে কিরণের দু'চোখ ভরা জমে থাকা আক্রোশ অনুভব করে কেঁপে ওঠে নন্দিনী। তাদের মধ্যে মনের সামান্য বোঝাপড়া হয়তো ছিল,তবে প্রেমের বন্ধন তো কোন কালেই ছিল না। যা ছিল কাঁচা বয়সের পাগলামি। তাও সে তো শুরু হবার আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল সবটা। কিন্তু আজ এতো দিন পর কিরণের চোখে তাকিয়ে নন্দিনী মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। পরিস্থিতি তাকে ভাবতে বাধ্য করছে নতুন করে। তবে কি কিরণের মনেও ভাঙন ধরে–যখন কুন্দনন্দিনী গিয়ে দাড়ায় সমীরের পাশে?

হটাৎ নন্দিনীকে ছেড়ে সরে দাড়ায় কিরণ। কুন্দনন্দিনীর হতচকিত ভাবটা তখনো কাটেনি। তবে পেছন থেকে ইন্দিরার কন্ঠ ভেসে আসে। পায়ের শব্দে পেছন ফিরে তাকাতেই ইন্দিরা এসে দাঁড়ায় দ্বারপ্রান্তে। ভেতরে কিরণকে দেখে সে এগিয়ে এসে নন্দিনীর হাতে ধরে টানতে টানতে বলে,

– দুটিতে মিলে এতো কি কথা হচ্ছে বলো ত? সেই কখন থেকে ডাকচি, অথচ কারো সারা শব্দটি নেই! এখন এসো দেখি নিচে, সেকরা এসে বসে আছে সেই কখন...


বিকেলটা কেটে গেল নিচ তলায় রমণীগণের কোলাহলে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামছে যখন, ভেতর উঠনে তখন গৃহবধূগণ কেউ কেউ পুরুষেদের খাওয়ার তদারকি ত কেউ কেউ দুধের শিশু কে নিয়ে বসেছে  মুখে স্তন গুঁজে। নিচতলায় সমীরের ঘরে সাধারণত প্রয়োজন না পড়লে রমণীগণের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু সমীর যেহেতু অনুপস্থিত, তাই কুন্দনন্দিনীর ভরশায় নিচতলায় সমীরের ঘরে বসে সমবয়সী বধূগণ আলোচনা সভা বসিয়েছিল। তাদের আলোচনার মূল্য বিষয়বস্তু নদীর ওপারে জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো ও কলিকাতার যাত্রাপালার দল। আজ বিকেলে বাড়ির মেয়েরা যখন গয়না তৈরির কারিগর কে একে একে নিজেদের ইচ্ছে বলে চলেছে,তখনি জমিদার বাড়ির লোক এসেছিল সমীরের খোঁজ নিতে। তবে মুখার্জি বাবু বা ছোবাবুর কাউকেই না পেয়ে তারা সংবাদটি নন্দিনীর কাছে বলেই বাড়ির পথ ধরেছে। 

কিন্তু খবরটি ত বিশেষ ভালো নয়, জমিদার বাড়ির বড় গিন্নী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সমীর নেই শুনে  জয়নগরের সরকারি ডাক্তার তাকে ইতিমধ্যে দুবার পরখ করে গেছে। কিন্তু তা গেলে কি হয়! জমিদার গিন্নীর ভয় কাটেনি একটুও। এদিকে আবার পুজোর উৎসবও বেশি দূরে নয় আর। তাই সবাইকে এই ঘরে রেখে কুন্দনন্দিনী কলকাতায় পত্র লিখতে পাশের ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বসেছিল। সমীর তাকে আগেই বলে গিয়েছে কলকাতায় সে এবার শশুর বাড়িতেই থাকবে। বলেছিল একদিন থেকেই ফিরবে, কিন্তু আজকে যে দিন তিন পেরিয়ে যায় যায় করছে–ভাগ্যিস বলে গেছিলো সে শশুর বাড়িতে উঠবে।


এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কুন্দনন্দিনী একমনে পত্র লিখছিল। কিন্তু তাকে থামতে হলো মাথায় এক অপ্রত্যাশিত হাতের ছোঁয়াতে। ছোট কাকিমা। তিনি অনেকটা শান্তশিষ্ট লক্ষ্মী প্রতিমার মতো। গৃহিণী পাশে দাঁড়িয়ে কুন্দনন্দিনী মাথায় হাত বুলিয়ে বললে,

– এখন এই সব না করলে কি চলছিল না তোর? ওদিকে সবাই খেয়ে দেয়ে সারা। না জানি এদের কি হয়েছে আজ,মুখে কিচ্ছুটি তোলার নাম নেই!

অগত্যা লেখার মাঝে ছাড়ান দিয়ে নন্দিনীকে উঠতে হলো। অবশ্য এতে একদিকে ভালোই হলো। তাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সমীর পা রাখলো বাড়ির উঠনে। ডান হাতের কুনুইয়ের নিচ থেকে কব্জি অবধি তার ব্যান্ডেজ করা। এর কারণ হয়তো তৎক্ষণাৎ জানা যেত,কিন্তু জমিদার বাড়ির বড় গিন্নীর সংবাদ শুনো মাত্র সমীরের খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো। সে এই রাতের বেলাতেই বেরিয়ে গেল গদাধরকে নিয়ে। কাকা মশাই বাইরে এসে এই কথা শুনে বললে,

– এই রাতের বেলা ছেলেটা এসেই বেরুলো,তুমি বাধা দিতে পারতে ত বৌমা।


–কী যে তুমি বলো ! নতুন বউ, তাছাড়া এখনও খোকার সঙ্গে ওর তেমন বনিবনা হয়েছে কি? এখন সে কি না খোকাকে আটকাবে? 

কাকিমার কথা বোধহয় বাড়ির অনেকরই বিশ্বাসযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করলে। কেউ একজন বলে উঠল,

– দাদাকে আটকাবে যে সে লোক কি এখন বাড়িতে আছে? ও ছোট বৌদির কর্ম্ম নয়....


কুন্দনন্দিনীর এইসব শুনতে ভালো লাগছিল না তা বলাবাহুল্য। এই বাড়িতেই হোক কি বাড়ির বাইরে।,পদে পদে সবাই যেন থাকে সুপ্রিয়ার সাথে তুলনায় তুলতে চাইছে। ঈর্ষা যেমন সুপ্রিয়া মাঝে নেই, তেমনি কুন্দনন্দিনীর মাঝেও যে থাকবে না,এমনটাতো নয়। তার কাঁচা বয়সের চঞ্চল মনে সমীর ইতিমধ্যে হয়তো কিছুটা হলেও জায়গা দখল করে বসেছে। তারমধ্যে সুপ্রিয়া বিচরণ এতোটাই স্পষ্ট যে নন্দিনীর কেমন যেন হয় মাঝে মাঝেই। কেন না তুলনা শুধু ত সেই মানুষটিকে নিয়ে নয়,সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে এর মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। মঝে মঝে তার মনে হয় সে যেন সুপ্রিয়া সাজিনো দুনিয়াতে এক অনিয়ন্ত্রিত আগন্তুক, এই অনুভূতি নারী হৃদয়ের জনে বিশেষ ভালো কিছু নয় নিশ্চয়? বিশেষ করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যখন দৃষ্টিহীন!

/////////////

গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পর, নিজের ঘরে কুন্দনন্দিনীকে দেখে সমীর একটু হকচকিয়ে যায় বৈ কি। মেয়েটা টেবিলে খাবারের পাত্র ঢাকা দিয়ে,হয়তো স্বামীর ফিরে আসার প্রহর গুনছিল। তারপর এক সময় আর থাকতে না পেরে টেবিলের কোনায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। অবশ্য সমীরের হাতের আলতো স্পর্শেই নন্দিনীর ঘুম উড়ে গেল। চোখ মেলে স্বামীর মুখের ক্লান্ত ভাব চোখে পড়লো নন্দিনীর। সমীর নন্দিনীকে ঘুম ভেঙ্গে উঠতে দেখে কৈফিয়ৎ দেবার মতো বললে,

– তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি না আমি? আসলে  জমিদার মশাই এমন চেপে ধরলেন.... ইসস্.....সত্যিই বড্ড দেরি হয়ে গেল, তুমি শুয়ে পড়তে পারতে।

নন্দিনী কিছু না বলে শুধু মাথা নিচু করেছিল। হাতের ব্যান্ডেজটার কথা জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবতে ভাবতে আবার স্বামী স্পর্শে একটু চমকে গেল সে। কুন্দনন্দিনীর মনের ভাবটা বোধহয়  মুখে ফুটে উঠেছিল। সমীর বাঁ হাতে নন্দিনীর চিবুক ঠেলে তুলে অনেকটা চোখে চোখ রেখে বললে,

– কি ব্যাপার! কিছু হয়েছে কি? মুখটা কেমন কেমন... অ্যায় তুমি খাওয়া দাওয়া করনি বুঝি।

নন্দিনী একটু লজ্জিতই হলো,খাওয়া দাওয়া তার সারা হয়ে গিয়েছে সেই কখন। যা হোক, নন্দিনীর নিরবতায় সমীর এই নিয়ে আর কথা বাড়ালো। 
বাড়ির মানুষ যাই বলুক,এই মানুষটি কিন্তু তাকে সুপ্রিয়ার মতোই অনুভূতি দেবার চেষ্টা করে সবসময়। কুন্দনন্দিনী নিজেও তা বোঝে ভালো ভাবেই,আর সেই জন্যই তার মনের অনুভূতি গুলো বার বার হয়ে আসে কেমন এলোমেলো....

রাত গাঢ় হয়। জানালার ফাঁক গলে পাতলা মেঘে-ঘেরা চাঁদের আলো পড়ে টেবিলের ওপরে। নন্দিনী স্বামীর ডাক্তারী ব্যাগটা এইঘরে রেখে ফিরে যায় পাশের ঘরে। সমীর এই এতো রাতেও গেছে পুকুরে। নন্দিনী বলছিল কুয়ো থেকে জল তুলে দেবার কথা। কিন্তু কে শোন কার কথা? সমীর উল্টে নন্দিনীকে বুঝিয়ে পুকুর থেকে স্নান সেরে, হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। 

নন্দিনী অবশ্য ছিল এই সময়ে। সমীরের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখতেই সমীর নিজেই বললে, আসলে আসার সময় ট্রেনটা একটু ধাক্কা মত খাওয়ায়,হঠাৎ একজন হকারে হাতে বাঁশের ঝুড়িতে তার ভারসাম্য হারিয়ে গিয়ে ছিটকে পড়ে সমীরের হাতে, তৎক্ষণাৎ কনুইয়ের ঠিক নিচে লম্বা ফালি কেটে রক্ত গড়িয়ে যা তা অবস্থা।  

তা এই ঘটনা শুনে কেন যেন নন্দিনী নিজের ভেতর এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করল। কেন করলে তা কে জানে? হয়তো নন্দিনীর ভয়ে ছিল সমীর  হাতে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করে। যাই হোক, সমীর ঘরে প্রায় ঘন্টাব্যাপী খাতা কলম নিয়ে বসলো সমীর।নন্দিনী পাশের ঘরে গিয়ে একপাশে শুয়ে রইলো।কিন্তু চোখে ঘুম নেই তার। যদিও সমীর বলেছিল আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়তে। এদিকে সে এখন বসেছে পাশের ঘরে। রাত এখন প্রায় তিনটে। নন্দিনী চোখ বুঝে পড়ে ছিল বিছানায়। একসময় সমীর অবশ্য বিছানায় এলো, শুয়ে বোধকরি ঘুমিয়েও পড়লো সে জলদিই। তবে ভোর রাতে নন্দিনী পিঠে হঠাৎ উষ্ণ এক শ্বাসের অনুভূতি  জেগে উঠলো। সমীর ধীরে হাত বাড়িয়ে তার কাঁধ ছুঁয়েছে এটিও সে বুঝলো।

মানুষটা কখন এসেছে কুন্দনন্দিনী তা টেরও পায়নি। অবশ্য নন্দিনী কিছু বলেনি। সে বুঝতে পারছে এই হাত শুধু চাদর টানতে চায় না। সেদিনের মতো তাকেও টানতে চাইছে কাছে। একটু উষ্ণতা, একটু অধিকার, আর একটা অপ্রকাশ্য আকাঙ্ক্ষা স্বামীর কন্ঠে অস্বচ্ছ ভাবে ফুটে উঠেছে। কিছু বোধহয় বলছে সে,কাছে সরে এসেছে অনেকটা। তার ডান হাতটি ছুঁয়ে গেছে নন্দিনীর কোমর। হতে পারে এতে কামনা নেই আদৌ। কিন্তু নন্দিনীর দেহে ওই আলতো স্পর্শেই কেমন অস্থিরতা ছড়িয়ে পরে। সে ঠোঁট কামড়ে নিজের অনুভূতি গুলো সামলে নেবার চেষ্টা চালায়। অথচ শরীর তার কথা শোনে না।

সমীর তার গলার কাছটায়  ঝুঁকে আসে,ধীরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নন্দিনীর দেহের উষ্ণতায়, স্বামীর স্পর্শে কি ছিল নন্দিনী তা জানে না। সে নিজেকে সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু পারে না। তার মনে হয়, সে যদি আজ না সাড়া দেয়, তবে সে অন্যায় করছে। সমীর তো তাকে সে ভাবে কাছে টানছে না, এক স্বামীর কি স্ত্রীকে চুম্বন করার অধিকার থাকতে পারে না? 

কিন্তু এতো শান্ত প্রেমেও শরীর কাঁপে কেন? নাকি এই কাঁপনটা আসলে অন্য কারো জন্য? স্বামীর আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া, তার দেহে যেমন উষ্ণ অনুভূতি সাঁড়া জাগিয়ে তুলছে, তেমনি স্বামীর স্পর্শে নন্দিনীর হৃদয়জুড়ে তখন কিরণের সেই বাঁশঝাড়ের দৃষ্টিও ফিরে আসে—রুক্ষ, বেপরোয়া, পুরুষালী।

এতসব কিছু মনে আসলেও তার কোনটাই সে বুঝে উঠতে  পার না সে। মুখ ফুটে নন্দিনী কিছু বলতে চায়, কিন্তু গলার ভেতর কথাগুলো আটকে যায়। মনে কোণে তীব্র একটা ভয়ের আভাস পায় সে, সে বুঝতে পারছে আজ রাতে সমীর তার দেহে অধিকার খাটাতে চাইলে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না কোন মতেই...... কিন্তু এমন সময় স্বামী অস্পষ্ট বুলির মধ্যে একটা নাম খুব স্পষ্ট হয়ে কানে বাজে কুন্দনন্দিনীর..... সুপ্রিয়া।


চমকে ওঠে নন্দিনী! সাবধানে পাশ ফিরে অন্ধকারেও বুঝতে বাকি থাকে না সমীর আসলে ঘুমিয়ে আছে।ভোরের নীরবতা বিছানায় বিরাজ করছে গভীরভাবে। এদিকে সমীরের হাত দুটো যেন আরও আঁকড়ে ধরে তাকে। কোমরের বক্ররেখায় একটা সুবল হাতে নেমে এসেছিল আগেই, কিন্তু এখন তা যেন উঠছে ওপরে। নন্দিনী চোখ বন্ধ রেখেও সেসব স্পর্শ অনুভব করে, যা শরীরের বুকে জ্বালাময় এক অচেনা সুর সৃষ্টি করে। সে চায় নিজেকে সরিয়ে নিতে, ঘুম থেকে জেগে ওঠা বোধের ভেতর যেন এক অদৃশ্য বাঁধন তাকে আটকায়। 
যদিও সে জানে এই স্পর্শ টা তার জন্যে নয়,সমীর হয়তো তার প্রথমা প্রেয়সী সুপ্রিয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। তবে সে এতক্ষণে মুখ গুঁজে দিয়েছে কুন্দনন্দিনী বুকের উষ্ণতায়।পাশ ফিরতে গিয়ে শাড়ির আঁচলটা সড়ে গিয়েছিল আগেই,এবার ব্লাউজের পাতলা আবরণ ভেদ করে নিঃশ্বাসের উষ্ণতা দুই স্তন্য স্পর্শ করতেই নন্দিনী কেঁপে উঠলো। হাতের ঠেলাতে সমীরের ঘুমটাও গেল ভেঙে......

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

[+] 7 users Like বহুরূপী's post
Like Reply
Darun
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
(08-08-2025, 09:55 PM)Saj890 Wrote: Darun

ধন্যবাদ ❤️ 

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)