Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
08-04-2025, 08:58 PM
(This post was last modified: 09-04-2025, 10:23 PM by বহুরূপী. Edited 5 times in total. Edited 5 times in total.)
[গল্পটি কাল্পনিক। এর সাথে কোনোরূপ বাস্তবতার মিল নেই। অডিয়েন্সের বিনোদনের উদ্দ্যেশ্যে এই গল্পটির রচনা।]
স্বামী
সূচিপত্র
Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
09-04-2025, 10:19 PM
(This post was last modified: 09-04-2025, 10:20 PM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
স্বামী :- প্রথম কথা
কন্যার এ বিবাহ করার মত ছিল না। কিন্তু কন্যাপক্ষের এই ছাড়া দ্বিতীয় উপায় ছিল না। বিশেষ করে বিবাহের দিন সান্ধ্যকালীন রেলে করে বর না এসে যখন বরের প্রাণনাশ হয়েছে বলে পত্র এলো; তখন বলাই বাহুল্য যে কন্যার পিতা প্রশান্ত ব্যানার্জি মাথায় হাত দিয়ে সত্যত্ব ভীষণ শান্ত হয়ে বসে পরলেন।
ব্যানার্জি বাবুর কন্যাটি দেখতে এমন নয় যে এই বর ছুটে গেল আর বর মিলিবে না। কিন্তু একে ত তাঁর কন্যার লগ্নভ্রষ্টা হবার আশঙ্কা, তাঁর ওপরে বিয়ের দিন বরের মৃত্যুতে অলুক্ষুনে মেয়ে বলে অপবাদটিও লেগে গিয়েছে ইতি মধ্যে। এখন বাড়ি ভর্তি লোক সম্মুখে এমন কান্ড ঘটলে তা ছড়াতে যে বিশেষ সময় লাগবে না,এই কথা সবারই জানা। তবে ব্যানার্জি বাবুর কন্যাটি কলিকাতায় লেখা পড়া করার দরূণ বেশ আধুনিকা। তাই বাবার কাছে নিজের কথা সে মন খুলেই বললে। কিন্তু ব্যানার্জি বাবুর ভাবনা ছিল ভিন্ন। মা মরা মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে ব্যানার্জি বাবু দু'চোখে অন্ধকার দেখছেন তখন। কারণ মাস খানেক আগে তিনি ঘোড়ার পেছনে টাকা লাগিয়ে বড় সড় ব্যবসায়িক বিপর্যয়ের মধ্যে আছেন। তার ওপড়ে ঘটা করে মেয়ে বিয়ে দিতে গিয়ে গাঁটের কড়িও তিনি কম গোনেন নি। সুতরাং তাঁর দু'চোখে অন্ধকার দেখার যথেষ্ট কারণ ছিল। কিন্তু তাঁর কন্যাটির সেই কারণ জানা ছিল না।
তবে এই অন্ধকারে মাঝেই ব্যানার্জি বাবু আশার আলো হিসেবে দেখালেন তাঁরই বাল্যকালের বন্ধু বলরাম মুখার্জিকে। তিনি মধুপুর গ্রামের একজন নাম করা ডাক্তার। যদিও এখন তাঁর একমাত্র ছেলে সমীর মুখার্জি সেই জায়গাটার দখল নিয়ে বসেছে। তবুও গ্রামের লোকে এখনো মুখার্জি বাবুকেই ডাক্তার বাবু এবং সমীরকে ছোটবাবু বলে ডাকে। গ্রামে সমীরের বাঘের মতো নামডাক থাকলেও তা ছোট বাবু পদবীটির জন্যে নয়। গাঁয়ের লোক সমীরকে অল্প বয়স থেকেই ছোটবাবূ বলে ডেকে আসছে। তাই সমীর ডাক্তারী পাস করলেও পদবীর পরিবর্তন ঘটে নি।
বলরাম মুখার্জির সাথে বন্ধুর দেখাসাক্ষাৎ ছিল না বহুদিন। তাই তিনি বন্ধুর বাড়িতে বন্ধু কন্যার বিবাহ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন পরিবার সমেত। এবং ব্যানার্জি বাড়ির আর কেহ সমীরকে না দেখিলেও ব্যানার্জি বাবু সমীরকে চিনিতেন। মুখার্জি বাড়ির বাঘটি দেখতে মন্দ না হলেও রঙটি খানিক কালোই বলা চলে এই কথা সবাই মানলো। ওদিকে আমাদের ব্যানার্জি বাবুর কন্যাটি গুণে ষোলকলা পূর্ণ না থাকলেও রূপে সবাই মুগ্ধ। তপ্ত সোনার মতো উজ্জ্বল তার দেহের রঙটি। কাটা কাটা নাক মুখে সাথে টানা টানা চোখ দুটোয় যেন সর্বক্ষণ নব যৌবনের বিদ্যুৎ তরঙ্গ খেলা করে। বয়স একটু কাচা হলেও দেহটির গঠন তার আঁটসাঁট ও লম্বাটে। এই কাঁচা বয়সেই ব্যানার্জি বাবুর মেয়ের অমন উঁচু আর খাড়া খাড়া দুধ জোড়া দেখে পাড়ার লোকেদের মাথা ঘোরে এই কথাও সত্য। সেই সাথে চিকন কোমর পেরিয়ে অমন মাংসল পাছা বাঙালি মেয়েদের খুব একটা দেখা যায় না। তার ওপরে পড়াশোনা,নাচগান জানা মেয়ে। সুতরাং বলা চলে সাধারণ পরিস্থিতিতে এই মেয়ের বর পেতে চিন্তা করার কিছু ছিল না। কিন্তু কন্যাপক্ষ এই রূপ আশঙ্কা জনক অবস্থায় জলদি সঠিক বর নির্ণয় করতে সক্ষম না হওয়াতে মেয়ের অমতেই বাল্যকালের বন্ধু মুখার্জি বাবুর হাত ধরে বসলেন।
কান্ড খানি বড় সহজ নয়। কেন না, মুখার্জি বাড়ির বাঘটির এক বাঘিনী ছিল। এমনকি বাঘিনীর দুটি ছানাও এই বাড়িতেই উপস্থিত। তাই বন্ধুর প্রস্তাব শুনে মুখার্জি বাবু পরলেন ভাড়ি চিন্তায়। তবে মুখার্জি বাবুর কিন্তু বাঘিনীকে নিয়ে চিন্তা করার কিছু ছিল না। কারণ বাঘিনীটি বুদ্ধিমতী এবং বিপদে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করিতে জানে। যত চিন্তা তার ছেলে সমীরকে নিয়ে। তার ছেলেটির দেহে বাঘের মতো শক্তিই নয়, বাড়ি এবং বাইরে তার বাঘের মতো দাপটও ছিল। তবে সেই ইতিহাস আমরা ক্রমে ক্রমে জানিবো। আপাতত মুখার্জি বাবু এই সংবাদ বাঘিনীর কানে তুললেন। যার গলাতে সতিন নামক ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়েছে! তার কাছে সংবাদ দিতে ডাক্তার বাবুর ভয় যে খানিক ছিল না— তা বলা যায় না। তবে সংবাদ শুনে বাঘিনী কিন্তু হুঙ্কার ছাড়লে না। খানিকক্ষণ নিঃশব্দে মাথা নত করে কি ভেবে সে নিজে গিয়ে তাঁর বরটিকে এই সংবাদ দিতে এবং বোঝাতে বসলো।
এই কান্ড দেখে ব্যানার্জি পরিবার ও তার সকল আত্মীয়স্বজনেরা খানিক অবাক হলেও মুখার্জি বাবু কিন্তু হাঁপ ছেড়ে বাচলেন। তবে এতো কিছুর পরেও প্রধান দুজনের মনে কিন্তু অশান্তি রয়েই গেল। কিন্তু ক্রন্দনরতা কন্যাটি কে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরলেও অন্য জনকে নিয়ে কারোরই মাথা ব্যথা হতে দেখা গেল না। তবে পাঠক-পাঠিকাদের জন্যে গোপন সংবাদ এই যে–৩৩ পার করে নতুন করে বিবাহ করার ইচ্ছে ডাক্তার সমীর মুখার্জির কোন কালেই ছিল না। যদিও বয়সটা তার খুব বেশি নয়। তবে কন্যার তুলনায় অনেক, এই ছিল তার মত। কিন্তু তার পরেও শুভ বিবাহ অতি শুভক্ষণে সুসম্পন্ন হয়ে গেল।
এর কদিন পরে মধুপুর গ্রামের যাত্রা পথে সাপের মতো আঁকাবাঁকা যে পথটি পরে। সেই পথে শেষ বিকেলের মরে যাওয়া আলোতে ধুলো উড়িয়ে চলছিল লাল চাদরে ঢাকা এক গরুর গাড়ি। যাত্রীদের সন্ধ্যার আগেই গন্তব্যে পৌঁছানোর তারা । তাই গাড়োয়ান বারবার “হুররররর...'হাঁট' 'হাঁট” বলে তাগাদা দিচ্ছে বলদ জোড়াকে। কিন্তু ক্লান্তি তো মানুষের মতো গরুরও আছে, নাই নয়কি? বিশেষ করে এই কাঠফাঁটা রৌদ্দুরে সেই সকাল থেকে একটানা হেঁটে চলেছে গরু দুটি। একটু ঢিল দেওয়ার জো নেই। গতি কমালেই গাড়োয়ানের নির্দয় লাঠির শপাং শপাং বাড়ি পড়বে পিঠে।
ছইয়ের ভেতরে মাথায় লালপার আঁচল টেনে চার বছরের খোকনকে কোলে নিয়ে বসে আছে সুপ্রিয়া। চোখমুখে তার রাজ্যের উৎকন্ঠা। সময় মতো পৌঁছাতে পারবে তো? নৌকা পেলে তাদের এতো সময় কখনোই লাগতো না। ছেলেটারও বিরক্তি এসে গিয়েছে একঘেয়ে পথচলায়। মাঝেমধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করে সে তার এলো মেলো বুলিতে বলছে,
– মা! আল কত পথ বাকি? আল ভল লাগে না আমাল।
সুপ্রিয়া কিছুই বলে না। শুধু মাঝেমধ্যে এমন ভাব করে, যেন খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু সে শোনার চেষ্টা করছে। তা যে কি,তা কে বলিবে? তার সম্মুখে ছইয়ের অপর পাশে বসে নিশ্চুপ হয়ে এক দৃষ্টিতে সতিনের আঁখিপানে তাকিয়ে ছিল কুন্দনন্দিনী। মাঝে মাঝে দেখছিল সূপ্রিয়ার মুখভঙ্গি। সম্মুখে আসন গ্রহণরতা রমণীটির প্রতি তার প্রবল রাগ করার যথেষ্ট কারণ ছিল। তথাপি ওই দুধেআলতা রমণীটির হাস্যমুখি ভাব দেখে তার কিছুতেই রাগ হয় না। এমনটি আজ প্রথম অনুভব করছে না নন্দিনী। ওই রমণীটিকে সে প্রথম সেদিন দেখেছিল! সে দিনই অবাক হয়ে সে চেয়ে ছিল ওই রমণীর কাজল পড়া পদ্মলোচন দুটি চোখের পানে। সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল এই রমণীটির চোখে না জানি কি অপার্থিব মায়া নিহিত আছে। তবে এই রমণী শুধু যে কুন্দনন্দিনীকে আকৃষ্ট করেছে তা নয়। বিয়ে বাড়িতে এই রমণীর রূপ ও হাঁটু ছাড়ানো চুলের প্রশংসা ছিল সকলের মুখে মুখে। সেই সাথে নিন্দায় কিছু ছিল বৈ কি। তবে তির মাঝে কিছু কথা হয়তো মিথ্যা, কিছু হয়তো সত্য। কিন্তু বিশেষ করে পাড়াগাঁয়ের এই গৃহবধূটির রূপ ঈর্ষার আগুন লাগলো শহুরে কিছু মেয়ের চোখে। দুষ্টু যুবকেরা খুজলো তাকে সচোখে একটি বার দেখবার সুযোগ। কিন্তু সমস্যা হল রমণীটি নিজের ঘরে হতে খুব একটা বাইরে বেরুতো না। স্বামীটিও যেন তাঁর আঁচল ধরা। তবে নন্দিনী অদূরে থেকে কয়েক বার এই নিটল স্বাস্থ্যবতী সুঠামদেহী রমণীটিকে দেখেছে। তার দুটি চোখের শান্ত দৃষ্টিতে কি জেন এক মন কাড়া অপার্থিব আকর্ষণ। সে যে কি আকর্ষণ নন্দিনী তা জানে না। কিন্তু বিশেষ করে এই রমণীটির মাতৃস্নেহ দেখার পর থেকে সে সব সময় তাকে পাশে কামনা করতো মনে মনে।
তবে রমণীটি কিন্তু তার বাড়িতে ঘুরতে এসেও কখনো তার কাছে আসার চেষ্টা করলে না। এতে নন্দিনীর খানিক অভিমান হয়। কেন হয়েছিল নন্দিনী তাও ঠিক বলিতে পারে না। তাকে সে চিনিতো না, শুধু শুনিয়া ছিল বাবার বাল্যকালের বন্ধুর একমাত্র পুত্রবধূ সে। অচেনা এই মনমোহনী রমণীটিকে দেখিবার ভাগ্য সবার না হলেও ভেতর বাড়ির দোতলার বারান্দায় থামের আড়ালে দাঁড়িয়ে সুপ্রিয়াকে সে দেখার সুযোগ পেলই। সূপ্রিয়া যখন নির্জন দুপুরে ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে খোকাকে ঘুম পাড়াতো কোলে নিয়ে। তখন সে কেন যেন দৃষ্টি কিছুতেই ফিরিয়ে নিতে পারতো না। মাঝে মাঝে তার ভয় হত সূপ্রিয়া না জানি তার দৈনিক এমন তাকানো দেখে কি ভাববে। তবে অবাক হলেও সত্য সূপ্রিয়া কখনোই দোতলার পানে তাকাতোই না। নিচে যদি বা দৈবাৎ সম্মুখে নন্দিনী পরিতো,তবে সে যেন তাকে দেখিতেই পাইতো না। তৎক্ষণাৎ পায়চারি থামিয়ে আবারও সে ঢুকতো নিজের ঘরে।
সূপ্রিয়ার এইরূপ কান্ডে আত্মীয়েরা যে অবাক হতো না, এমনটি নয়। কেন না সাধারণত বিয়ে বাড়িতে রমণীগন এমনটা করে না। তারা ঘুরে ফিরে নানান কাজে কর্মে হাত দিয়ে নানান আলোচনায় মগ্ন থাকে সারাক্ষণ। এতো গুলি আত্মীয়ের মাঝে এসে এর ওর কলঙ্কের খবরাখবর না নিলে তাদের চলিবে কেন! তবে আমাদের সুপ্রিয়া একটু আলাদা হলেও নন্দিনী কিন্তু আপত্তি ছিল না। মনমোহনী রূপে অহংকারী সূপ্রিয়া যদি তার কাছে নাই বা আসে— তাতে তার রাগ হয় না, হয় অভিমান। তবু সে সময় পেলে এই সময়টা সূপ্রিয়ার গান শুনতে ও তার পায়চারী করা দেখিতে আসে কেন? কারণ তার নিজের গর্জটাই হয়তো ছিল বেশি। তবে সমীর প্রায় সর্বক্ষণ সুপ্রিয়ার কাছে কাছে থাকায় নন্দিনী ভয়নাক বিরক্ত হয়ে উঠেছিল ধীরে ধীরে। সে এমন নারীর আঁচল ধরা পুরুষ মানুষকে দু চোখে দেখতে পারে না। তা হলেই বা সুন্দরী বউ। তাই বলে সারাক্ষণ তার আঁচল তলে বসে থাকতে হবে কেন? এই কথা নন্দিনী বুঝে উঠতে পারে না। সুতরাং ইচ্ছে থাকলেও সূপ্রিয়া ও কুন্দনন্দিনীর আলাপ আলোচনার উপায় হচ্ছিল না। তবে বিয়ের দিন সূপ্রিয়া যখন প্রথমবারের মতো বাকি রমণীদের সাথে কুন্দনন্দিনীর ঘরে এল। সেই দিন নন্দিনী ও বাকি সকলেই জানতে পারলো সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল এই সৌন্দর্য্য প্রতিমাটি দৃষ্টিহীনা! অমন অপূর্ব যার চোখ দুখানি সেই কিনা অন্ধ! জগতে এই রূপ খাপছাড়া কান্ডও ঘটে বৈ কি।
ছইয়ের সামনের দিকটায় খানিকটা জায়গা খোলা। সমীর সেদিকটার বসে ছিল বিরক্ত মুখে। কিন্তু বিরক্তির কারণটি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। সে খানিক পরপর আকাশের পানে চেয়ে দেখছে কালো কালো মেঘেরা দল বেঁধে ছুটোছুটি করে ঘনিয়ে আসছে দক্ষিণে। সমীর একবার ভাবলো হেকে গাড়ির গতি বাড়াতে বলবে কিনা। কিন্তু আত্ম সম্বরণ করলে সকাল থেকে দীর্ঘ যাত্রা পথের কথা ভেবে। এতখনে গাড়ির চাকার কর্কশ শব্দও কানে বাজছে যেন বিরামহীন পথচলার প্রতিবাদের মতো। তবু চলার যেন শেষ নেই,একই গতিতে গাড়ি হাঁকিয়ে চলেছে গাড়োয়ান। লোকমুখে এরাই গাড়িয়াল নামে পরিচিত। কখনো কোলাহলমুখর হাটের ভেতর দিয়ে। ত কখনো লোকালয়ের পাশ দিয়ে ধীরগতিতে গায়ে রোদ্দুর মেখে চলতে চলতে ঘামে ভিজে তার স্নান হয়ে গিয়েছে। পথের পাশের দোকান ও দুই একটি বাড়ির দোরের মুখ থেকে পল্লী গাঁয়ের গৃহবধূরা মাথার আঁচল টেনে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাদের গমনপথের দিকে। চাদর টাঙানো ছইয়ের ভেতর থেকে এক আধবার বাইরে তাকিয়েই সূপ্রিয়ার ছোট্ট মেয়েটি আড়াল করেছে নিজের মুখ। অদূরের বটতলায় খেলছে একদল ছেলেমেয়ে। ভিনগাঁয়ের গাড়ি তাদের ভারি আমোদ দেয়। ওরা দল বেঁধে ছুটে এসে ছড়া কাটে,
“ভাঙা গাড়ি ভেঙে যা”
“বউটা মোদের দিয়ে যা।”
ছড়া শুনে অবশ্য গাড়ি ভাঙার কোন লক্ষণ দেখা যায় না। তবে দুষ্টু ছেলেদের দল তবু হাল ছাড়িলো না। ছুটে এসে গাড়ির পেছন ধরে ঝুলতে পরলো দু একজন। ঝুলতে ঝুলতে তাল খেজুরের ছায়া ঘেরা মাটির পথে গাড়ির সওয়ারি হলো কিছুক্ষণের জন্যে। গাড়িয়াল বিরক্ত হয়ে ,“তবে রে ব্যাটা” বলে তেড়ে আসলো।তখন ধমক খেয়ে নেমে পড়ে দুষ্টু ছেলেমেয়ের দল।
আবার পথচলা শুরু। বটতলার পুকুর ঘাট পেরিয়ে উত্তরে সোজা রাস্তায় আরোও খানিক এগিয়ে মধুমতি নদীর তীরে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। মন্দিরের কাছাকাছি আসতেই গাড়ি যাত্রীদের কানে লাগে শুমধুর কীর্তন। সূপ্রিয়া তখন খোকন কে জাগিয়ে তুলে কানে কানে কি যেন বলে। সেখান থেকে আর একটু এগুতেই পূর্ব দিকে বেঁকে দু দিকে চলে গিয়েছে রাস্তাটা। পূর্ব দিকের পথে সারি বাধা খেজুর গাছের ছায়া দিয়ে পথ চলতে চলতে দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেতের মাঝে মাঝে কয়েকটি বাড়িঘর চোখে পরে। আরোও পাঁচ ছয় মিনিট এগিয়ে গিয়ে মুখার্জি বাড়িতে পৌছানো আগেই রঘুনাথের মুদির দোকান থেকে এক সুদর্শন যুবক একটি খবরের কাগজ হাতে বেড়িয়ে এসে হাত উঁচিয়ে হেকে গাড়ি থামায়,
– আরে রোক! রোক!
গাড়ি থামিয়ে সামনে খোলা দিকটাতে উঠে বসে সে এবার চায় সমীরের মুখপানে। সারা মুখে বিরক্তির ছাপ দেখে তার বোধকরি সমীরের সহিত আলাপ জুড়ে দেবার সাহস হয় না। তার বদলে সে ছইয়ের দিকে মুখ ফিরিয়ে চাদরের আড়ালে থাকা সূপ্রিয়ার উদ্দেশ্যে বললে,
– আমার জন্যে বউ খুঁজতে গিয়ে দাদার গলায় আর একটা ঝুলিয়ে আনা কি ঠিক কাজ হলো বৌরাণী?
ছইয়ের টানানো চাদরের আড়াল থেকে সূপ্রিয়ার মৃদু ভর্ৎসনা মেশানো কোমল গলার স্বর শোনা গেল এবার।
– লক্ষ্মীছাড়ার কথা শোন! তোমার জন্য ঘটকালি করে পরের মেয়ের কপাল পোড়াতে যাবো কেন আমি?
– তা না হয় নাই করলে,কিন্তু বরের জন্যে ঘটকালি করে নিজের কপাল পোড়ালে কেন? তাও তো আমি ভেবে পাই না বৌরাণী!
– সে আমার পোড়া কপাল আমি দেখবো না হয়। আমার পোড়া কপাল নিয়ে হঠাৎ তোমার এতো ভাবনা কেন? সেইটি ত আমিও ভেবে পাই নে ঠাকুরপো!
সূপ্রিয়ার সাথে নতুন লোকটির কৌতুক ভরা কথা কাটাকাটি চলতে লাগলো মুখার্জি বাবুর আম-কাঁঠালের বাগান ঘেরা সেকেলে ধাঁচের দোতলা বাড়ির সদরে গাড়ি লাগার আগ পর্যন্ত। রঘুনাথের দোকান থেকেই ছেলেমেয়েদের একটা দল আসছিল গাড়ির পিছু পিছু। এবার তাঁদের মুখেই খবর শুনে বাড়ির লোকজন ছুটে এল বাইরে। ভেতর বাড়িতে একটা হুলুস্থুল কাণ্ড বেধে গিয়েছে তা আওয়াজ শুনে সদর দ্বারে দাঁড়িয়েই বোঝা যায়।
গাড়ি থামতেই কন্দুনন্দিনী পড়লো মহা বিপদে। সে কখনোই গরুর গাড়ি চড়ে নাই। তবে দৃষ্টিহীনা সূপ্রিয়ার এই ব্যপারে ভাড়ি সুবিধা। সে গাড়ি থেকে নামলো স্বামীর কোলে চড়ে। নামতেই এক অল্প বয়সী রমণী প্রণাম করলো তার পায়ে। কিন্তু নন্দিনীর স্বামীর কোলে চড়ে নামাতে ভাড়ি আপত্তি। তাই গাড়ি থেকে নামনে গিয়ে বেকায়দায় তার ডান পা খানা গেল মচকে। সঙ্গে সঙ্গে মৃদু স্বরে চিৎকার করে সে বুঝি প্রায় বসেই পরে মাটিতে। তবে পতন ঠেকালো দুই দিক থেকে দুই হাতের সাহায্যে। একটি তার স্বামীর এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু মুখখানি তুলে অপর জনের মুখ দেখেই নন্দিনীর বুকখানি উঠলো কেঁপে! এখন কেন কাঁপলো নন্দিনীর বুকখানা? সে কথা আমি কি জানি! গল্প এগুলো সামনে আসবে হয়তো। তবে তার আগে গল্প চলবে কি না সেটা তো দেখা চাই!!
The following 12 users Like বহুরূপী's post:12 users Like বহুরূপী's post
• bluesky2021, Boss1996, Jibon Ahmed, jktjoy, Mahreen, Maleficio, Mamun@, Odrisho balok, ray.rowdy, Roy234, sudipto-ray, •°৹৴°【সামিউল】°৲৹°•
Posts: 264
Threads: 0
Likes Received: 204 in 178 posts
Likes Given: 358
Joined: May 2022
Reputation:
11
Posts: 3
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 5
Joined: May 2019
Reputation:
0
Posts: 615
Threads: 7
Likes Received: 683 in 376 posts
Likes Given: 3,015
Joined: Nov 2019
Reputation:
70
খুব সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যান।
Posts: 38
Threads: 0
Likes Received: 44 in 35 posts
Likes Given: 126
Joined: Feb 2024
Reputation:
0
Posts: 110
Threads: 0
Likes Received: 55 in 46 posts
Likes Given: 24
Joined: Dec 2018
Reputation:
8
গ্রাম্য পরিবেশের গল্প গুলো বেশ লাগে
Posts: 61
Threads: 0
Likes Received: 31 in 27 posts
Likes Given: 108
Joined: May 2019
Reputation:
2
মনে হচ্ছে নন্দিনীর ও বাঘ ছিল, তাই বাঘ কে দেখে বাঘিনীর বুক কেঁপে উঠেছিল ।
পরের আপডেটের অপেক্ষায়……..
লাইক ও রেপু দিলাম
Posts: 250
Threads: 2
Likes Received: 439 in 192 posts
Likes Given: 343
Joined: Oct 2023
Reputation:
75
শুরু করুন ভাই
Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
11-04-2025, 01:14 PM
(This post was last modified: 11-04-2025, 01:15 PM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Posts: 40
Threads: 0
Likes Received: 28 in 23 posts
Likes Given: 61
Joined: Mar 2024
Reputation:
0
এগিয়ে নিয়ে জান,পাশে আছি।
____________________________
•°৹৴°【সামিউল】°৲৹°•
_____________ °°°°°°°°°°°°°°_____________
Posts: 1,065
Threads: 2
Likes Received: 356 in 332 posts
Likes Given: 709
Joined: Feb 2019
Reputation:
6
আহ! এতদিন পর মনে হয় বাংলা সেকশনে প্রাণ আসবে,,,কিছু একটা পড়তে পারবো,,,ভাই এগিয়ে যান,,,আর রেগুলার আপডেট দিবেন প্লিজ,,,
Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
(11-04-2025, 04:15 PM)masud93 Wrote: আহ! এতদিন পর মনে হয় বাংলা সেকশনে প্রাণ আসবে,,,কিছু একটা পড়তে পারবো,,,ভাই এগিয়ে যান,,,আর রেগুলার আপডেট দিবেন প্লিজ,,, (11-04-2025, 04:05 PM)•°৹৴°【সামিউল】°৲৹°• Wrote: এগিয়ে নিয়ে জান,পাশে আছি।
ধন্যবাদ ❤️
Posts: 32
Threads: 1
Likes Received: 57 in 32 posts
Likes Given: 77
Joined: Jul 2024
Reputation:
4
Posts: 1,065
Threads: 2
Likes Received: 356 in 332 posts
Likes Given: 709
Joined: Feb 2019
Reputation:
6
Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
(11-04-2025, 11:35 PM)masud93 Wrote: অপেক্ষায় আছি
(11-04-2025, 09:50 PM)Mahreen Wrote: অপেক্ষায় রইলাম।
একটু অপেক্ষা করতে হবে। নববর্ষের পর লেখা শুরু করবো।
তাই আগামী শুক্রবার থেকে স্বামী গল্পের পথ চলা শুরু হবে। ধন্যবাদ ❤️
•
Posts: 6
Threads: 0
Likes Received: 2 in 2 posts
Likes Given: 0
Joined: May 2024
Reputation:
0
(Yesterday, 07:34 AM)বহুরূপী Wrote: একটু অপেক্ষা করতে হবে। নববর্ষের পর লেখা শুরু করবো।
তাই আগামী শুক্রবার থেকে স্বামী গল্পের পথ চলা শুরু হবে। ধন্যবাদ ❤️ অসাধারণ হচ্ছে গল্প টা। এরকম গ্রামীণ পরিবেশের গল্প বেশ আকর্ষণীয় হয়। সামনে গ্রামীন জীবনের প্রেম ভালোবাসা রতিমিলনের সাথে আপনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিবেন এই আশা রাখি। ভালো থাকবেন।
Posts: 882
Threads: 6
Likes Received: 2,091 in 537 posts
Likes Given: 1,100
Joined: Apr 2024
Reputation:
645
(Yesterday, 12:04 PM)Rubya Wrote: অসাধারণ হচ্ছে গল্প টা। এরকম গ্রামীণ পরিবেশের গল্প বেশ আকর্ষণীয় হয়। সামনে গ্রামীন জীবনের প্রেম ভালোবাসা রতিমিলনের সাথে আপনি আমাদের পরিচয় করিয়ে দিবেন এই আশা রাখি। ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকুন এই কামনা করি। ধন্যবাদ ❤️
•
|