Thread Rating:
  • 15 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বামী ﴾ পর্ব নং:- ৬ ﴿
#81
এক বসায় সম্পূর্ণ পড়ে ফেললাম । যত পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিল এখনি যেন শেষ না হয় । নেক্সট আপডেট কবে পাবো?
জলদি দাও । আর কিরন চরিত্র টা জটুক আছে তটুক ই থাক ।
নন্দিনী কে ২ পুরুষের মধ্যে টানাটানি করলে গল্পের তারতম্য গোলমাল খেয়ে যাবে বলে মনে করি । আর গল্পটি কত এপিসোড এর হতে পারে এ নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে? কারণ নন্দিনী ভাবসাব ভালো ঠেকছে না, বোকামেয়ে নিজের পায়ে নিজেই আবার কুরোল মারে না যেন । আপডেট চাই বড়
"The greatest trick the devil ever pulled was convincing the world he didn't exist."
[+] 1 user Likes Patrick bateman_69's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
গ্লপ স্লো এগোচ্ছে তাতে সমস্যা নেই,তবে আপডেটে অনিয়ম হচ্ছে কেন? আপনার বাকি সব থ্রেড গুলো বন্ধ কেন?
আমি এমনিতেই এই সাইটে বেশি একটা আসি না। তার মধ্যে এমন অনিয়ম হলে তো মুশকিল।আশা করি বাস্তবতার ব্যস্ততা কাটিয়ে কল্পনার জগতে একটু বিশেষ নজর দেবেন। আপনার জন্যে শুভকামনা রইল। :heart:
[+] 1 user Likes shazana's post
Like Reply
#83
(14-05-2025, 11:51 PM)shazana Wrote: গ্লপ স্লো এগোচ্ছে তাতে সমস্যা নেই,তবে আপডেটে অনিয়ম হচ্ছে কেন? আপনার বাকি সব থ্রেড গুলো বন্ধ কেন?
আমি এমনিতেই এই সাইটে বেশি একটা আসি না। তার মধ্যে এমন অনিয়ম হলে তো মুশকিল।আশা করি বাস্তবতার ব্যস্ততা কাটিয়ে কল্পনার জগতে একটু বিশেষ নজর দেবেন। আপনার জন্যে শুভকামনা রইল। Heart

এই বিষয়ে আগেও বলেছি আর্যা— আমি আছি খানিক মুশকিলে। আর অন্য থ্রেড গুলো সেই কারণেই বন্ধ রেখে শুধু এই গল্পটা একটু ধিরে সুস্থে এগিয়ে নিচ্ছি। 


(14-05-2025, 03:21 AM)Patrick bateman_69 Wrote: এক বসায় সম্পূর্ণ পড়ে ফেললাম । যত পড়ছিলাম আর মনে হচ্ছিল এখনি যেন শেষ না হয় । নেক্সট আপডেট কবে পাবো?
জলদি দাও । আর কিরন চরিত্র টা জটুক আছে তটুক ই থাক ।
নন্দিনী কে ২ পুরুষের মধ্যে টানাটানি করলে গল্পের তারতম্য গোলমাল খেয়ে যাবে বলে মনে করি । আর গল্পটি কত এপিসোড এর হতে পারে এ নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবে? কারণ নন্দিনী ভাবসাব ভালো ঠেকছে না, বোকামেয়ে নিজের পায়ে নিজেই আবার কুরোল মারে না যেন । আপডেট চাই বড়

কতগুলো পর্ব আসতে পারে তা এখনি সঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে পঞ্চাশের মধ্যে রাখার চেষ্টা থাকবে আমার। এর কমে হয়ে গেলে তো আমারই ভালো।
Like Reply
#84
পর্ব ৪

দশ-বার দিন যেতেই কুন্দনন্দিনী বুঝলো কিরণের এখানে আসা যাওয়া যখন তখন। মুখার্জি পরিবার ত বটেই, সুপ্রিয়ার সাথেও সর্ম্পক তার গাঢ়। অবশ্য সুপ্রিয়ার সহিত বাড়ির প্রায় সকলের সম্পর্কই গাঢ়। বোধকরি  দৃষ্টি না থাকায় সকলকেই এই দৃষ্টিহীনা রমণী মনের দাড়িপাল্লায় এক ভাবেই  ওজন করিয়া থাকে।  তাছাড়া বিশেষ করে সিন্দু, ইন্দিরা ও কিরণ ছোট বেলা থেকে সুপ্রিয়ার কাছে মায়ের মতো আদর-স্নেহ পেয়ে এসেছে। সে ক্ষেত্রে আলাদা একটা মাতৃশক্তিও তাদের মধ্যে খাটে বৈ কি। কুন্দনন্দিনী এতে অবাক হয়না, কেন না সে নিজেও সুপ্রিয়ার মাতৃত্বে মুগ্ধ। 


এছাড়া কিরণের বাড়ি খুব বেশি দূর নয়। এই বাড়ির সদর দুয়ার থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে বাগান পেরিয়ে পাঁচ-ছ  মিনিটেই পৌঁছানো যায়। কিরণের বাবা মা কেউ নেই। এক কাকা আছে তার ছেলেপুলে হয়নি। কাকিমা'টি তার বছরের ছ'মাস নানান রোগব্যাধি নিয়ে বিছানাতেই পরিয়া থাকে। বাড়ির এই অবস্থায় কিরণ প্রায় সময় অবসর বিনোদন করতে আসে এ বাড়িতে। বোধকরি এই সূত্রেই সুপ্রিয়া দেবীর মাতৃস্নেহের আঁচলে কিরণ সহজেই এসেছিল। তবে স্নেহের বাঁধনে বাঁধলেও সুপ্রিয়া কিরণকে সম্পুর্ণ কাছে না পাওয়াতে শাসনের ভাগটায় কমতি রয়ে গেল। ওপর দিকে কিরণের কাকিমার  অতিরিক্ত আদরে কিরণের লাগাম হীন জীবন যাত্রা হাটলো খানিক মন্দ পথে। এই ব্যাপারে আধুনিক কলকাতার দূষিত হাওয়াও খানিক দায়ি।

জমিদার বাড়ির পরে গ্রামের কিছু সম্ভ্রান্ত পরিবারের মধ্যে পাশাপাশি বাসরত সমীর ও কিরণের পরিবার বিখ্যাত। এই খ্যাতি অবশ্য দুই পরিবারের দুই রকমের। গ্রামের লোকে বলিয়া থাকে সমীর মুখার্জি লোকের প্রাণ রক্ষা করে আর কেদার চাটুজ্যে গলা কাটেন! যদিও গলা কাটাকাটিতে তিনি ছুড়ি বা চাকুর ব্যবহার করেন না। এই বিষয়ে তার একমাত্র অস্ত্র অর্থ। সেই অর্থে তিনি দালালি ও মহাজনি কাজ কারবার চালান। সুদের কারবার তার চড়া দরের। তাছাড়া মেজাজ ও স্বভাবের দিক দিয়ে লোক সে সুবিধার নয়। তবে দাদা বৌদির মৃত্যুর পর কিরণের লালনপালনের দায়িত্ব কেদার চাটুজ্যে আগ বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। হয়তো নিজের অপুত্রবতি রমণীর মন রাখতেই নিয়েছিলেন। কারণ কিরণের প্রতি তাহার কাকিমা গভীর ভালোবাসার কথা লোকের অজানা নয়। নিজের সন্তানআদি না থাকায় এই ভালোবাসা খানিক অতিরিক্ত।

তা সেই যাই হোক, এই বাড়িতে কিরণের ঘনঘন যাতায়াতে নন্দিনী হতো বিরক্ত। প্রথম প্রথম যদিও সে নিজেকে খানিক লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিল। তবে কিরণের এত ঘনঘন যাতায়াতে ও কাজ সম্ভব হবার নয়। অবশ্য সে এও ভাবলো, শুধু শুধু নিজেকে সে লুকিয়ে রাখবে  কেন? কোন অপরাধ তো সে করেনি। দোষ যদি কিছু থাকে, সে কিরণের! বহু ঘাটের জল খেয়ে  কুন্দনন্দিনীর কাছে প্রেম নিবেদন করার সাহস সে পায় কোথায় ?  আমাদের কুন্দনন্দিনী মোটেও সহজ মেয়ে নয়। যদিও কিরণের বহু ঘাটে জল খাওয়া নিয়ে নন্দিনী নিশ্চিত নয়। বোধকরি এই কারণেই খানিক অনিশ্চয়তায় কিরণের সম্মুখে যেতে তার হতো অসস্থী। তবে কিরণের সস্থী বা অসস্থী কোনটাই হয় কি না— তা বোঝা যায় না। সে যথারীতি অন্দরে ঢুকে বৌরাণী বলে ডেকে উঠে জোর গলায়। ভাবটা এমন যে তার আগমণের খবর বাড়ির সবার কানে যাওয়া চাই। কিরণের এই অভ্যেসটা পুরাতন। তবে কুন্দনন্দিনী কিন্তু ভাবে এই রকম গলা ফাটিয়ে চিৎকার বুঝি তার জন্যে। এই ভেবে রাগে  লাল হয় তার গাল। কিন্তু রাগ তো তার শুধু কিরণের উপরে নয়।  দিন কয়েক সুপ্রিয়া স্বামী ভক্তি নিয়ে নন্দিনীকে জ্বালিয়ে মারছে। শান্ত অপরাহ্নে পুকুর ঘাটে বসে সুপ্রিয়া মাঝে মধ্যেই বলে,

– যা হয়ে গিয়েছে তা কি আর বদলানো যায় না বদলানো সম্ভব? শুধু শুধু সংসারে অশান্তি টেনে লাভ কি তুই বল?

কুন্দনন্দিনী সে কথা জানে না। তাই উত্তরও সে করলো না। তাকে চুপ দেখে সুপ্রিয়া বললো,

– গ্রামে থেকে অভ্যেস নেই ত তাই মন বসছে না। কদিন গেলে মন বসে যাবে দেখিস।

সুপ্রিয়া বলেছিল বটে। তবে সামান্য বৃষ্টিতেই যেখানে জল জমে হয় কাঁদা,গৃহবধূ বলে চার দেয়ালের মাঝে থাকতে হয় বন্দি, সেখানে এতো অল্পেই নন্দিনীর মতো অধুনিকার মন বসার কথা নয়। জীবন নিয়ে চিন্তা ভাবনা তার ছিল ভিন্ন। বাবার পছন্দের বিয়ের করলেও বরেটির সাথে পরিচয় তার ছিল দীর্ঘদিনের। সে হয়তো সমীরের মতো বড় লোক ঘরের ডাক্তার সাহেব ছিল না, তবে দেখতে সে ছিল সুপুরুষ। সেই সাথে আধুনিকতার কোন কমতি তার মধ্যে ছিল কি না সন্দেহ। তার চাইতেও বড় কথা সে দূর্বল চিন্তা ভাবনার গ্রাম্য ভুত নয় মোটেও। সুতরাং ভাগ্যের ফেরে কালো মত এক পাড়াগাঁয়ের ডাক্তারের সাথে বিবাহে কুন্দনন্দিনী সুখী হবার কথা নয়। সে সুপ্রিয়ার মতো গ্রাম্য সাদাসিধে রমণী নয়। তাই আজীবন ঠাকুর পূজো আর স্বামীর সেবা করে সুপ্রিয়া সর্বদা হাসলেও নন্দিনী তা পারবে কেন? 


অবশ্য মনে মনে এই সব ভাবলেও নন্দিনী কিন্তু চার দেওয়ালে বন্দিনী হয়ে থাকতো না।  গ্রামের অনেক মেয়েরাই মুখার্জির বাড়ির পুকুরে স্নান করতে আসতো। নন্দিনীর কাজকর্মের বালায় ছিল না। কাজকর্ম বিশেষ সে পারতোও না। তাই সুপ্রিয়ার ময়না পাখিটার খাদ্যের যোগান দিয়ে অবসর সময়টা সে গ্রাম্য মেয়েদের সাথে খানিক কথা বলতে যেত পুকুর ঘাটে। যদিও নন্দিনীর সহিত তাদের কথাবার্তা সুপ্রিয়ার মতো জমতো না। তবে সময় কাটা নিয়ে কথা,সে তার ভালোই কাটতো। মাঝে মাঝে সুপ্রিয়া তাকে ডাকতো রান্না ঘরে। প্রথম প্রথম ভালো লাগলেও রান্না না পারায় কুন্দনন্দিনী বিরক্তিতে ফেটে পরে বলতো,

– ও কাজ আমার দ্বারা হবে না দিদি।

এই শুনে কেঊ হাসতো, কেউ বা  বলতো বাঁকা কথা‌। সবাই যে সম্মুখে বলতো তাও নয়, কেউ কেউ বলতো আড়ালে। নন্দিনী লজ্জা ত পেতোই, তবে রাগটাও তার কম হতো না। তখন কুন্দনন্দিনী রাগ দেখে সুপ্রিয়া হেসে বলতো,

– তা বললেই হলো?  আচ্ছা, তুই যখন প্রথমবার নাচ শিখতে যাস তখন কি একদিনেই শেখা হয়েছিল?

নন্দিনী এবার মৃদু স্বরে বললে,

– না,সে একদিনে শেখার কর্ম নয় দিদি।

– তা রান্নাটাও ত একদিনে শেখার কর্ম নয় ভাই। ভালো নাচতে ও গাইতে  শেখা যেমন সময়ের ব্যাপার,তেমনি রান্নাটাও।

– সে ত বুঝলাম। তবে দিদি, নাচ গানে নাম ডাক হয়, কিন্তু ভালো রাঁধতে শিখে কি হয় বল?

কুন্দনন্দিনীর কথায় সুপ্রিয়ার মুখখানি হাসিতে হয়েছিল উজ্জ্বল। তারপর এগিয়ে এসে দুহাতে নন্দিনীর গলা জড়িয়ে সে বলেছিল,

– লোকের মন পাওয়া হয় ভাই! নাচ- গান সে ত চোখের শান্তি। কিন্তু উদরের রাস্তায় লোকের হৃদয়ে পৌঁছানো সহজলভ্য। হাজার হোক চোখের চাইতে উদর আর হৃদয়ের দূরত্ব কম।

কথা খানিক জটিল। তবে সুপ্রিয়ার বলার ভঙ্গিতে কমবেশি সবারই পায় হাসি। ওটি সুপ্রিয়ার বিশেষত্ব। সে প্রাণ খুলে হাসতে ও হাসাতে জানে।তারপর আর একদিন নদীর ধারের কৃষ্ণ মন্দির ও নৌকা করে রাধাপুরের সরকার কলেজটাও নন্দিনী ঘুরে এলো। তবে ঘটনা এই দুখানাও সহজে ঘটলো না।


মন্দিরে যাবার দিন সমীর বাড়িতে ছিল না। একটু দূর হলেও বাড়ির অনেক  মেয়েরাই গিয়েছিল পূজো দিতে। তবে রাধাপুরে যাবার সময় সুপ্রিয়া বেঁকে বসলো। রাধাপুরের কলেজ কাছে নয়। তাছাড়া স্বামীর অনুমতি না নিয়ে সে যেতেও রাজি নয়। বাড়ির অন্য মেয়েদেরও একই অবস্থা। যুক্তি দ্বারা ভাবলে নন্দিনী হয়তো সুপ্রিয়ার এমন আচরণের কারণ বুঝতে পারতো। তবে কলেজ শাস্ত্রের শিক্ষা ছাড়া বাস্তবিক অর্থে অধিকাংশ সময়েই মানুষকে যুক্তি দ্বারা বুঝিয়ে নেওয়া যায় না, রাগিয়ে দেওয়া যায় মাত্র। তাছাড়া সুপ্রিয়ার অতিরিক্ত স্বামী ভক্তিতে নন্দিনী ইতিমধ্যে বিরক্ত। তাই এই অন্ধ রমণীকে নিয়ে তার পক্ষে একা নৌকা ভ্রমণ যাওয়া কতটা সমস্যা জনক হতে পারতো, সেই কথা নন্দিনীর মাথায় এল না। তাছাড়া পল্লী সমাজ শহরের মতো আধুনিক নয়। এই কথা নন্দিনী না জানলেও বাড়ির বাকি মেয়েরা ভালোই জানতো। পল্লী অঞ্চলে সম্ভ্রান্ত ঘরের  রমণীদের নির্বিবাদে ঘোরা ফেরা দৃষ্টি কটুও বটে এবং বিপদজনকও বটে।

 তাই এই বিষয়ে অল্প তর্কবিতর্কের পর সুপ্রিয়ার সঙ্গে নন্দিনীর কথা হলো বন্ধ। এরপর সমীর তাদের নৌকা ভ্রমণ করালেও নন্দিনীর অভিমান কাটলো না। তবে সে দু'দিন আগের কথা।আজ ভোরে সুপ্রিয়া উঠে পুকুর  ঘাটে যাবার আগে নন্দিনীই কথা শুরু করলো। অবশ্য কথা বন্ধও সেই করেছিল। সুপ্রিয়ার ওসবের বালাই নেই। এই সব ছোটখাটো মনমালিন্য সে ভুবন ভোলানো হাসি হেসেই উড়িয়ে দিয়ে থাকে। 

নন্দিনীর জন্যে আলাদা ঘরের ব্যবস্থা হয়েছে ইতি মধ্যে। তবে সে মনমালিন্য হলেও সুপ্রিয়ার ঘরের শুয়েছিল।  এতে অবশ্য সুপ্রিয়া কোন সমস্যা হয়নি। তার ছেলে মেয়ের কেউই তার সাথে শোয় না। বড় মেয়েটি কমলার সাথে আর ছেলে সঙ্গি করেছে তার দাদা মশাইকে। তবে সুপ্রিয়া ও নন্দিনীর অতিরিক্ত কাছে আসা সমীর জন্যে খানিক সমস্যার হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু এখন সে কথা থাক। আপাতত পুকুরের শীতল জলে মৃদুমন্দ ঢৈউ তুলে তিন স্নানরতা রমণীর মধ্যে কি করা হচ্ছে তাই শুনি বরং,

– উফ্! রাগ ভেঙেছে তবে ছোট বউয়ের।

– আহা, আবার ওকথা তুলিস কেন কমলা?  

সুপ্রিয়া ও কমলা  বুক জলে নেমে কথা বলছিল, তবে নন্দিনীর সেদিকে খেয়াল ছিল না। কোত্থেকে যেন চন্দ্রপ্রভা ফুলের মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ ভেসে আসছিল। ফুলটি নন্দিনী নতুন চিনেছে কদিন আগে। তবে সে তার স্বামীর ডাক্তারী ঘরে সম্মুখে। সেই ঘ্রাণ ত এতটা ঘুরে বাঁশ আর কলা বাগানের দেওয়াল পেরিয়ে পুকুর ঘাটে পৌঁছানোর কথা নয়!  

চন্দ্রপ্রভার সুঘ্রাণ ও ভোরবেলার হাওয়াতে নন্দিনী খানিক আনমনা হয়ে গিয়েছিল। একটু দৃষ্টি ঘোরাতেই ভোরের হালকা আলোতে পুকুরের ওপারে শিমুল গাছের পাশেই ফুট খানিক উচু হলদেটে ফুলের ঝাঁক তার চোখে পরলো। দুবার ডেকে সারা না পেয়ে কমলা এবার কথা বললো সুপ্রিয়ার কানে। শুনে সুপ্রিয়া ডাকলো তাকে,

– নন্দিনী! ওদিকে কি দেখছিস ওমন করে?

– হুম! 

– বলছি এমন হা করে দেখছিস কী? স্নান করতে হবে না বুঝি?

চমক ভেঙে নন্দিনী এবার নামলো পুকুরে। শীতল জলের প্রথম ছোঁয়াতে সর্বাঙ্গের লোম দাঁড়িয়ে গেল তার। হঠাৎ মনে পড়লো গতকাল সন্ধ্যে বেলায় রোয়াকে বসে সুপ্রিয়া গল্প বলছিল মেছো ভূতের। সুপ্রিয়ার হাত মুখ নেড়েচেড়ে গল্প বলার পদ্ধতি অতি আকর্ষণীয়। বিশেষ করে সুপ্রিয়ার খোকাটি তখন কুন্দনন্দিনী কোলে বসে ভয়ে ছোট-মা'র বুকে মুখ সেঁধিয়ে দিয়েছিল, খুকি দুহাতে চেপে ধরেছিল পাশে বসা  ইন্দিরার হাত। শহুরে মেয়ে নন্দিনীর ভুতের ভয় না থাকলেও ভোর সকালের শান্ত হাওয়া,ও পুকুরের শীতল জলের স্পর্শ দেহ কোন অনুভুতি জাগালো, তা আর বোঝা গেল না।


//////////

কিছুতেই কিন্তু কুন্দনন্দিনীর সহিত সমীরের কথাবার্তা সহজ হচ্ছিল না। সমীর অবশ্য কুন্দনন্দিনী সাথে কয়েকবার কথাবার্তা বলার চেষ্টা চালিয়ে ছিল। কিন্তু কুন্দনন্দিনীর পক্ষ থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া গেল না। সংসার জীবনে প্রথম স্ত্রী  তার অন্ধ হলেও অশান্তি ছিল না। কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহের পর কুন্দনন্দিনীর আচরণে সমীরের মনে অল্প হলেও অশান্তি বাসা বেঁধেছে। তাই নিয়ে বেচারার চিন্তা ভাবনার শেষ ছিল না।

বিবাহের পর  নন্দিনীর সাথে প্রথম রাত্রি যাপনের দিনে ঘরে পা রেখেই সমীরের চোখে পরে ছিল;মেয়েটি গুটিসুটি মেরে সোফায়  শুয়ে। এই বিবাহ নিয়ে সমীর নিজেও সন্তুষ্ট ছিল না। তথাপি কুন্দনন্দিনীকে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে সে চুপ থাকতেও পারেনি। কারণ শুধু মন্ত্র পড়ে প্রতিজ্ঞা করে আর সিঁথিতে সিঁদুর রাঙিয়ে স্বামী হাওয়া যায় না। একটা সম্পর্কে আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা না থাকলে তাকে আর দাম্পত্যে বলা চলে না। তবে সেদিন কুন্দনন্দিনীকে ডাকতে গিয়ে সমীর কিছু  প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিল। নন্দিনী তখন জেগেই ছিল। অনেক চেষ্টা করেও সেদিন ঘুম তার চোখে  আসেনি। সে যতই আধুনিক হোক না কেন বুকে তার রমণীর কোমল মন। সেই মন নিস্তব্ধ রাত্রিতে অজানা এক পুরুষের কাছে খানিক ভীতু হয়ে পরেছিল। অবশ্য মনবল ফিরে আসতে তার সময় লাগেনি বেশি। স্বামীর ডাকে সারা সে দিয়েছিল তীব্র স্বরে,

– আপনি এই বিয়ে কেন করলেন?

সমীর চমকে গিয়েছিল। সত্য বলতে এমন অভ্যর্থনা সে আশা করেনি মোটেও। বিশেষ করে কেউ তাকে বলেই নি কুন্দনন্দিনীর এই বিবাহে কোন আপত্তি আছে। তাই এই প্রশ্নের জবাবে খানিক হতবাক হয়ে সে জানতে চেয়েছিল, এবং জানার পর বলেছিল,

– মানে! তুমি এই বিয়েতে রাজি নয় এই কথা আগে বলনি কেন?

নন্দিনী বলেছিল বটে,একথা আমাদের অজানা নয়। তবে সবার বোঝানোর ধাক্কায় বেসামাল হয়ে বিয়ে সে বসলেও — একাকী এই ঘরে নিজের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কুন্দনন্দিনীর চোখে হয়ে উঠেছিল স্পষ্ট। শহরে অঞ্চলের জাঁকজমকপূর্ণ পরিবেশ ছেড়ে তাকে যেতে হবে ঘুমট মারা শান্ত নিস্তেজ পাড়া গাঁয়ে! এটি তার মতো মেয়ের জন্যে মেনে নেওয়া সহজ কথা নয়। তাই হয়তো তার চোখের কোণে জমেছিল জল।নিজের ভাবনায় আনমনা কুন্দনন্দিনীর চোখের জল মুছিয়ে দিতে সমীর তখন বারিয়ে দিয়েছি তার হাত। তখন হঠাৎ সচেতন হয়ে তীব্র কন্ঠে নন্দিনী এক রকম চিৎকারই  করেছিল বৈ কি। বলেছিল

– আপনি আমার গায়ে হাত দিলেই চিৎকার করবো। ধরুন একবার ধরে দেখুন। 

মনে মনে সমীর ভেবে ছিল “কি ত্যাদর মেয়েরে বাবা!” তার পর নিজেই সিগারেট ধরিয়ে বেরিয়ে এসেছিল বাইরে। ভয় ছিল মেয়েটার চিৎকারে বাড়ির সবাই না দোতলায় উঠে আসে। তবে বোধকরি ভগবান প্রসন্ন ছিলেন সেদিন,তাই রক্ষা।

তা শহরে যাই হোক, পরে গ্রামে এসে কুন্দনন্দিনী এমন নিশ্চুপ অবহেলায় সমীরের মনে খানিক ভাবনা ঢুকিয়েছে। রাশভারী স্বভাব সমীরের নয়। তবে রঙ্গরসের মূল্য যে বোঝে না তার সহিত সে সব করে ভাব জমানো ত সহজ কথা নয়। কিন্তু আজীবন দূরত্ব ধরে রাখাও তো কাজের কথা নয়। বিবাহ যখন হয়েছে ভাব জমানোর চেষ্টা তো অল্প হলেও করা চাই‌ । আর নয়তো যে সমাধানে যেতে হয় সেই উপায়ে  পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হবার আশঙ্কাই বেশী। কিন্তু অমন রসকষহীন মেয়ের সাথে কি করে ভাব জমাবে সমীর তা ভেবে পায় না। এই ভাবনা  মাথায় নিয়ে  সমীর যখন  দু'চোখ বুঝে বসে ছিল নিজের ঘরে। তখন হঠাৎ কানের অতি নিকটে লাগলো সুপ্রিয়ার কন্ঠস্বরে  গানের ছন্দ,

“সখী কার বাঁশরি সুর তলেছে বদল ঘন এই দুপুরে”
“কোথায় গেলে পাইবো তারে, কোন বিজনে, কোন বা বনে”

সমীর ভাবনায় খানিক বেশিই ডুবেছিল। নয়তো দুই রমণীর পায়ে থাকা ঝুমঝুম নূপুরে ধ্বনি তার কানে যেত।  আজ দুপুরে খাবার সময় সমীর অনিহা প্রকাশ করায় সুপ্রিয়ার সাথে খাবার হাতে এসে ছিল নন্দিনী। স্বামীর সাথে সুপ্রিয়ার সম্পর্ক মুধুর। তবে গানের ছন্দে বোধহয় প্রকাশ পেল বিরহ। দূরত্বটা যে তারই জন্যে এটি নন্দিনীর অজানা ছিল না। তাই খাবার রেখে সে হয়তো চলেই যেতো, কিন্তু বাদ সাধল সুপ্রিয়া। যাই বলে পা বাড়াতেই সুপ্রিয়া প্রমাদ গোনে,

– ওকি লো! এমনি চলে গেল হবে কি করে?

– কিন্তু দিদি....

– উঁহু্, ওসব হবে না ভাই। রেধেছি আমি, এবার সামনে বসে খাওয়ানো দ্বায়িত্বও কি আমি নেব নাকি? বলি একটু হাঁফ ছাড়তেও দিবি না কি ছোট? 

এরপর নন্দিনীর আর যাওয়া চলে না। অগত্যা মেঝেতে আসন পেতে স্বামীর খাওয়া-দাওয়ার তদারকি করতে বসলো সে। সুপ্রিয়া অবশ্য চলে গেল না।  আবহাওয়া ঠান্ডা থাকা শর্তেও একখানা হাতপাখা হাতে বিনা কারণে করতে লাগলো হাওয়া। সেই সাথে দুই বধূর মধ্যে চললো ভাঙা ভাঙা কথা বার্তা। সে সবে অবশ্য সমীরের যোগদানের প্রয়োজন ছিল না। সে খাবারের ফাঁকে ফাঁকে চোখ রাখছিল সুপ্রিয়া পানে। 

সুপ্রিয়ার সহিত দাম্পত্য জীবনে তার দীর্ঘ চৌদ্দ বছরের। ঐ রমণী দেহের প্রতি বাঁকের সাথে তার পরিচয় গাঢ়। তবুও আজ এই মেঘ ঘন পরিবেশে সুপ্রিয়াকে মনে হয় এক ছন্দময় গীতিকবিতা— যার প্রতিটি ভাঁজে, প্রতিটি রেখায় লুকিয়ে রয়েছে একেকটি অধ্যায়। কাজল রাঙা ওই দৃষ্টি হীন চোখে আছে যেন দিগন্তছোঁয়া গভীরতা, যেন সেখানে মিশে থাকে গোধূলির রঙ। তার পাতলা  কোমল ওষ্ঠাধর যেন শব্দ না উচ্চারণ করেও বলে যেতে পারে শত গল্প—কখনো প্রেমের, কখনো প্রতিবাদের। এতো নারী দেহ নয়,যেন এক জীবন্ত কবিতা। কেবল মাত্র সাত দিনের দূরত্বে মনে যে এই রূপ ভাবনার ঘনঘটা তৈরি হতে পারে তা কে জানতো! কুন্দনন্দিনী তো পরের কথা– আজ রাত্রিতে এই নারী দেহ বুকে না জড়ালে সমীরের ঘুম আসবে কি না সন্দেহ.....


লিখতে লিখতে মাঝেমধ্যে আমি যৌনতা ভুলে যাই,তবে পরের পর্বে কিছু থাকবে, আপাতত এটুকুই চলুক। ও আর একটি কথা– গল্পটা খানিক স্লো চলছে এবং খুব সম্ভবত ঈদের শেষ হবার আগ পর্যন্ত এর গতি বাড়বে না- বড় আপডেট ত দূরের কথা। তবে আমি চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।❤️
Like Reply
#85
সুপ্রিয়া দৃষ্টি আকর্ষণ করছে Heart Heart
[+] 3 users Like FreeGuy@5757's post
Like Reply
#86
(17-05-2025, 08:44 AM)FreeGuy@5757 Wrote: সুপ্রিয়া দৃষ্টি আকর্ষণ করছে Heart Heart

She is a dream wife material after all.

Mahreen
[+] 1 user Likes Mahreen's post
Like Reply
#87
কয়েকটি লাইন অসাধারণ ছিল। 

Mahreen
[+] 1 user Likes Mahreen's post
Like Reply
#88
দারুণ... চালিয়ে যাও।
[+] 1 user Likes ray.rowdy's post
Like Reply
#89
চমৎকার আপডেট
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
#90
(17-05-2025, 08:44 AM)FreeGuy@5757 Wrote: সুপ্রিয়া দৃষ্টি আকর্ষণ করছে Heart Heart

Shy
(17-05-2025, 02:58 PM)Mahreen Wrote: She is a dream wife material after all.

কথা সত্য,এখন এমন নারী একমাত্র স্বপ্নই সম্ভব।❤️
(17-05-2025, 03:00 PM)Mahreen Wrote: কয়েকটি লাইন অসাধারণ ছিল। 

কোন লাইন গুলো তা বললে আরো ভালো লাগতো ❤️
(18-05-2025, 12:03 AM)ray.rowdy Wrote:
দারুণ... চালিয়ে যাও।
(18-05-2025, 02:51 AM)Jibon Ahmed Wrote: চমৎকার আপডেট
ধন্যবাদ ❤️
Like Reply
#91
(17-05-2025, 02:58 PM)Mahreen Wrote: She is a dream wife material after all.

গল্পের নাম "স্বামী" না হয়ে "স্ত্রী" হলে মন্দ হতো না। তবে মজা বাদ দিয়ে যদি বলি- শেষের লাইন গুলো চমৎকার।
[+] 1 user Likes Sweet angel's post
Like Reply
#92
(18-05-2025, 05:52 PM)Sweet angel Wrote: গল্পের নাম "স্বামী" না হয়ে "স্ত্রী" হলে মন্দ হতো না। তবে মজা বাদ দিয়ে যদি বলি- শেষের লাইন গুলো চমৎকার।

নাম সঠিক আছে আর্যা,ওতে সমস্যা নেই।❤️
আপনি বোধ হয় শরৎ বাবুর স্বামী  উপন্যাস পড়েননি। Big Grin
[+] 1 user Likes বহুরূপী's post
Like Reply
#93
(17-05-2025, 08:44 AM)FreeGuy@5757 Wrote: সুপ্রিয়া দৃষ্টি আকর্ষণ করছে Heart Heart

সত্যিই,তবে আমার মনে হয় গল্পটা কুন্দনন্দিনীর ওপের ভিত্তি করে লেখা।
____________________________
  •°৹৴°【সামিউল】°°
_____________ °°°°°°°°°°°°°°_____________
Like Reply
#94
Update please drop a big update as soon as you can
[+] 1 user Likes Nobody03's post
Like Reply
#95
(21-05-2025, 01:51 PM)Nobody03 Wrote: Update please drop a big update as soon as you can
(19-05-2025, 03:21 PM)•°৹৴°【সামিউল】°৲৹°• Wrote: সত্যিই,তবে আমার মনে হয় গল্পটা কুন্দনন্দিনীর ওপের ভিত্তি করে লেখা।

দুঃখিত একটু ব্যস্ততার কারণে উত্তর দেওয়া হয়নি।
আপডেট শুক্রবারে আসবে এমনটাই আশা করছি।❤️
Like Reply
#96
পর্ব ৫


– কর্তার ইচ্ছেই কর্ম, আমার থাকার উপায় নেই। এমনিতেই দেরি হয়ে গেল।  তাছাড়া একবার খুব বেশী রেগে গেলে পরে মান ভাঙানোর ঝোক্কি কে সইবে শুনি? তুই তো কথাই বলিস না।

রাত্রী বেশ গভীর। অন্তত পাড়াগাঁয়ের হিসেবে প্রায় সবাই এখন ঘুমিয়ে।  দোতলায় খোকাকে ঘুম পাড়িয়ে সুপ্রিয়া নিঃশব্দে বেরিয়ে যেতে চাই ছিল। কিন্তু কে জানত এত সমস্যার পরেও এখন নতুন করে কুন্দনন্দিনীর প্রশ্নের মুখে পরতে হবে তাকে। তবে সে যাই হোক, কুন্দনন্দিনী কিন্তু এই অন্ধকার রাত্রিতে সমীরের পাগলামি দেখে খুশি হতে পারলো না। দু একটা কথা কাটাকাটির পর সে নিজেও সুপ্রিয়ার সাথে এলো সিঁড়ির নিচ পর্যন্ত। যদিও আসার বিশেষ প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু কে শোনে কার কথা। 

ঘরের বাইরে পা রাখতেই সুপ্রিয়া ঠান্ডা একটা হাওয়া অনুভব করছিল। বোধহয় বৃষ্টি নামবে খানিক পরে। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে গাছে গাছে শনশন শব্দে কথা হচ্ছে এখন। খুব কাছাকাছি একটা পেঁচা ডাকছে গম্ভীর সুরে। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে সুপ্রিয়ার আজ সন্ধ্যার কথা খুব মনে পরলো। নিঃশব্দে অল্প হাসলো সে। দাম্পত্যের এত গুলো বছর পেরিয়েও স্বামীর ছেলেমানুষী আচরণে সুপ্রিয়া মনে মনে পুলকিত না হয়ে পারে না।

তীব্র গরমের পর বেশকিছু দিন ধরেই আকাশ মেঘলা মেঘলা করে আছে। বৃষ্টি হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। ঋতুচক্রের নতুন অতিথি হিসেবে বর্ষার আগমনের হয়তো খুব একটা দেরি নেই। কদিন ছাড়া ছাড়া বৃষ্টির পরে আজ বৈকালে খানিক রোদ উঠেছিল। সমীর খাওয়া দাওয়া পর পর  ব্যাগ হাতে বেরিয়ে ফিরেছিল সন্ধ্যায়। তখন সুপ্রিয়া তুলসী মঞ্চে দীপ জ্বালছে। পূজো সারার আগে হঠাৎ করেই পেছন থেকে মুখ চেপে ধরে তাকে কে যেন টেনে নিল। প্রথমটা বেচারী ভয়ে সিটিয়ে গেলেও— দেহের ঘ্রাণে স্বামীকে চিনে নিতে তার সময় লাগলো অল্প। ততক্ষণে অবশ্য সুপ্রিয়ার কাঁধের আঁচল খানিক সরিয়ে  সমীর চুমু খেয়েছে সেখানে। পুরুষালী সুঠাম হাতের স্পর্শ লেগেছে সুপ্রিয়া বক্ষযুগলে। স্বামীর প্রেমময় ঘন স্পর্শে কেঁপে উঠেছিল সুপ্রিয়া।  বয়সটি তার খুব বেশি নয়। দুই সন্তানের জননী হলেও সুপ্রিয়ার দেহটি এখনো উচ্ছলে পরা যৌবন রসে পরিপূর্ণ। তাছাড়া স্বামীটিও তার একটু যেন পাগলাটেই বলা চলে। নইলে সময় অসময় সুপ্রিয়াকে এমন জ্বালাতন করা কেন? 

তা যাই হোক, এদিকে স্বামীর চুম্বন এখন ঘাড় ছাড়িয়ে সুপ্রিয়ার রক্তিম গাল ছুঁয়েছে। সুপ্রিয়ার এক হাতে তখনও জ্বলছে প্রদিপ, অন্য হাতে স্বামীকে দিচ্ছে সে মৃদুমন্দ বাঁধা। প্রদীপের হলদেটে আলোতে সুপ্রিয়ার ভীত মুখখানি যেন আরো বেশি আকৃষ্ট করে সমীরকে। তার ঠোঁট দুটি যেন রক্তজবা— স্নিগ্ধ, নরম, অনিঃশেষ আকর্ষণে ভরা। সুপ্রিয়া অনুভবে বুঝে নেয় স্বামীর আদরের দিক পাল্টে নিশানা এখন তার ঠোঁট দুখানি। তবে সমীরের উদ্দেশ্য সফল হয় না, উষ্ণ নিঃশ্বাস ঠোঁটে ছুঁয়ে যেতেই সুপ্রিয়া মুখ সরিয়ে ভীত কাঁপা গলায় বললে,

– ছাড় না লক্ষ্মীটি, কেউ দেখলে! ছিঃ ছিঃ দোহাই লাগে ছাড়......

কিন্তু সুপ্রিয়ার ধরা পরার আশংকা নিয়ে বিচলিত কথাবার্তা সমীরকে যেন আরও খানিকটা পাগল করে তুলেছিল। দেহের উত্তেজনা যেন হঠাৎ দীগুন বের গিয়েছিল। সে তখন আঁচল মেঝেতে  ফেলে ব্লাউজের ওপর দিয়েই জোরে চেপে ধরল সুপ্রিয়ার ডান স্তন। পাতলা কাপড়ের আড়ালে মোলায়েম মাংসপিণ্ড— হালকা চাপ পরতেই সুপ্রিয়ার ওষ্ঠাধর ঈষৎ ফাক হয়ে “আহঃ..” ধ্বনিটি লাগলো স্বামীর কানে। তখনি সমীর ঠোট ঠোঁট লাগিয়ে মনভোলানো চুম্বনে মাতিয়ে তোলে সুপ্রিয়াকে। সমীরের বলিষ্ঠ হাতের থাবা থেকে— সে সুপ্রিয়া যতোই সুঠামদেহী হোক, বেরিয়ে আসার উপায় ছিল না। অপরদিকে স্বামী বিরহে  দেহের কামনা সুপ্রিয়ারও যে কিছু কম ছিল, তাও নয়। তবে স্বামীদেব তাকে জোর করে টেনে ঠিক কোথায় নিয়ে এসেছে তা বুঝতে না পারায় হচ্ছিল চিন্তা ও ভয়। 

এদিকে সুপ্রিয়ার ভাবনার মাঝেই তার নধর শরীরটা নিয়ে চলছিল সমীরের দৈহিক প্রেম খেলা। সুপ্রিয়ার অনুভবে স্পষ্ট বোঝে স্বামীর বলিষ্ঠ দুটি হাত তার কোমর ও বাম স্তনটি এখন আঁকড়ে ধরেছে আরও কঠিন ভাবে। বাম স্তনে হাতের চাপ যেন লাগছে হৃদয়ের গভীরে - স্পষ্টতই সুখের অনুভুতি। কারণ কিছু একটা বলতে গিয়েও সুপ্রিয়ার কন্ঠস্বর মৃদু “আহহ্...আহহ..." শব্দে ছাপিয়ে যাচ্ছে। জ্বলন্ত প্রদীপের শিখায় কামনা ঘন দুই নর নারীর ছায়া দেওয়ালে পরছিল খানিক অশান্ত ভাবেই। সুপ্রিয়া নিজেও বুঝতে পারছিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। সে এনে ছিলও বটে। তবে তখন স্বামীকে শান্ত করতে তাকে কথা দিতে হয়েছিল সে রাতে স্বামীর ঘরে আসবে। কিন্তু আজ হঠাৎ নন্দিনীর সাথে সুর মিলিয়ে বাধ সাধল খোকা। দুই মায়ের মাঝে শুয়ে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত গল্প শুনে সবে মাত্র সে চোখ বুঝেছে— সিঁড়ির নিচে নেমে সুপ্রিয়া বলছে,

– থাক ভাই আর আসতে হবে না।

– কিন্তু....

– উঁহু্, ঘরে যা  নন্দিনী।

সুপ্রিয়ার গলায় খানিক দৃঢ় ভাব। যদিও অন্ধকার বলে তার দুই গালের রক্তিম আভা কুন্দনন্দিনীর চোখে পরলো না। সিঁড়ির মুখ থেকে ওপর দিকে নন্দিনীর পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুপ্রিয়া ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো স্বামীর কক্ষদারের সম্মুখে। 

বাইরে দাঁড়িয়েই বোঝা যায় ঘরে আলো জ্বলছে।  সুপ্রিয়া বললেও কুন্দনন্দিনী যেতে পারেনি। ওপড়ে উঠে সিঁড়ির এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর সুপ্রিয়া এগিয়ে গেলেই সে খানিক নেমে এসেছে। দাঁড়িয়ে ছিল অবশ্য সুপ্রিয়ার ভাবনায়। তবে নিচে নেমে অজানা ভয়ে বুক খানি একটু  ধুক ধুক করছিল।  সমীরের ঘর সিঁড়ির মুখোমুখি অপর প্রান্তে। তাই এখন দরজা খুলে সোজা তাকালে নন্দিনী ধরা পরলেও পরতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্য নন্দিনীর খারাপ নয়। সুপ্রিয়ার দৃষ্টিহীনতায় এখনো নন্দিনী ঠিক সহজ হতে পারে নাই,তাই  ঘরে ঢোকার আগে পর্যন্ত নন্দিনী সুপ্রিয়াকে নজরদারির মধ্যেই রাখতে চাইছিল । ওদিকে দুই একবার টোকা মেরে কোন সারা না পেয়ে— দরজা খোলাই ছিল, সুপ্রিয়া ভেতরে ঢুকে আবার লাগিয়ে দিল।

//////////

সমীর এই ঘরে ছিল না। সে পাশের ঘরে আরামকেদারায় বসে সুপ্রিয়ার জন্যে অপেক্ষা করছিল। সুপ্রিয়া দেবীর আসতে যে অনেকটাই দেরি হয়েছে, এই কথা সত্য। তবে সমীর কিন্তু সেই কথা তুললো না,আসলে বলতে গেলে সে কোন কথাই বললো না। তখন সুপ্রিয়াই এই ঘর থেকে গেল পাশের ঘরে। এই বাড়ির প্রতিটি কোণ তার নখদর্পণে— অল্প সময়ে ভেতরেই সে বুঝলো স্বামীটি তার ঘরেই আছে। তবে আগে জানা দরকার কোথায়।

– মা গো, এতো রাগ! কথা বলবে না বুঝি?

রাত প্রায় একটা। সুপ্রিয়ার হালকা রসিকতায় সমীরের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি।  প্রায় দশ-বার দিন ধরে সুপ্রিয়া তাকে এক রকম যেন এড়িয়েই চলছে। কিন্তু আজ নিজে থেকে এতো অনুরোধ করা শর্তেও—এল না সময়মতো। একবার রান্না, একবার খোকা, একবার খুকি আর বাকি সময় শুধু রসিকতা,এই করে করে রাত শেষ! স্বামীর ডাকের যেন কোন মূল্যই নেই! মাঝে মধ্যে সমীর ভাবে, সুপ্রিয়ার বিয়েটা বোধহয় এই সংসারে সাথে হয়েছে,তার সাথে নয়। এখন এই হলে সমীর আর কথা বলে কি করে?  সে গোঁজ হয়ে মুখ ফিরিয়ে থাকে। কিন্তু সুপ্রিয়ার সাথে  সে পারবে কেন? অল্পক্ষণ পরেই তার অভিমান ভাষায় প্রকাশ পায়।

— আমি ত ভাবলাম আজ বুঝি আসবেই না!

এটুকুই দরকার ছিল সুপ্রিয়ার, সে এবার স্বামীর অবস্থান বুঝে নিয়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো স্বামীর পেছনে, কাঁধে হাত রেখে পরক্ষণেই স্বামীর গলা জড়িয়ে একটু হেসে বললে,

— এই তো, এসেই পড়লাম। কী এমন ক্ষতি হয়েছে শুনি? এতক্ষণে ঘুমও আসেনি বুঝি?”

সমীর চুপ, সুপ্রিয়া তখন স্বামীর সামনে এসে বসলো স্বামীর কোলে। তারপর একটু হেসে যোগ করলো

— নাকি বউয়ের গা-ঘেঁষা ছাড়া ঘুম আসে না আজকাল?

– রসিকতা হচ্ছে খুব, তাই না? একদিন দেখবে অন্য কাউকে ডেকে নেব,তখন দেখবো রসিকতা কোথায় থাকে!

সুপ্রিয়া স্বামীর কথা শুনে হাসে। তারপর নিজের বুক খানি স্বামীর বুকে চেপে, দুহাতে চট করে তার গলা জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা এলিয়ে বলে,

— ডেকে দেখো না… দেখি কে তোমার এই কাঁধে এভাবে মাথা রাখে, কে তোমার ঘাড়ে এভাবে চুমু খায়, আর কে তোমার ওই ছোট বাবুকে আমার মতো আদর করে।

সমীর যেন সুপ্রিয়ার স্তনযুগলের নরম ও উষ্ণ স্পর্শে গলে যেতে থাকে। নিজের অজান্তেই ডান হাতটি শাড়ির ফাঁক গলে খেলা করে সুপ্রিয়ার মাখনের মতো কোমরে, সুগভীর নাভীর গর্তে বুলায় আঙ্গুল। ওদিকে সুপ্রিয়া স্বামীর কানে আলতো কামড় লাগিয়ে  ফিসফিসিয়ে বলে,

— তোমার যা রাগ, আমি ঠিক জানি কী করলে গলে যাও…

বলতে বলতে সে স্বামীর কোলে অদ্ভূত সুন্দর কৌশলে নিতম্বের নাড়াচাড়া  শুরু করে।

সমীর এবার হঠাৎই বাঁ হাতে "খপ" করে চেপে ধরে সুপ্রিয়ার ব্লাউজে ঢাকা সুডৌল স্তনের একটি। সেই সাথে ঠোঁট ঠোঁট লাগিয়ে আলতো চুম্বন করে বলে,

– তার আগে আজকের দেরি করার হিসেব আমি সুদে-আসলে শোধ নেবো। তখন রসিকতা ছেড়ে তোমার শ্বাসও বলে উঠবে ‘বাঁচাও!

সুপ্রিয়া আবারও হেসে ওঠে। তারপর আগের মতোই স্বামীর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

— তাহলে আজ আর আমার রেহাই নেই বল! এতক্ষণ অপেক্ষার সব হিসেব এখন আদায় করে ছাড়বে বুঝি?

এই বলে সে আবারও স্বামীর কানে আলতো কামড় বসায়, নিজেকে স্বামীর দেহে আরো ঘন করে হাসতে হাসতে বলে,


— ধরো, আমি যদি বলেই ফেলি ‘আর পারছি না গো’, তখন তুমি থামবে ত... আঃ......

সমীর এবার সুপ্রিয়াকে এক ঝটকায় পাঁজাকোলে তুলে এগিয়ে যার শোবার ঘরের দিকে। সমীর রাগে ও উত্তেজনায় আজ সুপ্রিয়ার দেহের গহনা ও কাপড় খোলাতেও মনোনিবেশ করে না। সুন্দরী রমণীকে বিছানায় ফেলে প্রথমেই চুমু খায় তার আলতা রাঙা পায়ে। তারপর ধীরে ধীরে হাটু, উরু ছাড়িয়ে চুম্বন পরে সুপ্রিয়া নাভী ও স্তনযুগলে।

খানিক পরেই সুপ্রিয়া কিছু একটা বলতে চাইছিল, কিন্তু তার আগেই সমীরের ঠোঁটের তলায় সুপ্রিয়ার ঠোঁট দুখানি চাপা পরে গেল। স্বামীর ঘনিষ্ঠ আলিঙ্গনে আবদ্ধ অবস্থাতেই সুপ্রিয়া টের পেল কোমরে– ঠিক নাভীর গর্তে উদ্ধৃত পুরুষাঙ্গের খোঁচা। সমীর চুম্বন করতে করতে দুই হাতে সুপ্রিয়ার মাথাটা আঁকড়ে অনেকেটাই ওপড়ে উঠে এসেছে। দেহের উত্তেজনায় ধুতি খুলে গেছে এমনিতেই। যেটুকু ছিল সুপ্রিয়ার হাতের নিপুণতায় উন্মুক্ত হয়ে গেল। 

তখন সুপ্রিয়াই আদরের সহিত স্বামীর দীর্ঘ ও রোমশ পুরুষাঙ্গে হাত বোলালো। আর হাত লাগিয়েই বুঝলো উত্তেজনায় ফুঁসতে থাকা এই বিষধর সাপকে শান্ত করতে আজ তার হাঁপ ছুটে যাবে,ঘন সাদা বীর্য রসে কতবার তার গুদ ভিজবে তার হিসেব থাকবে না। দীর্ঘ রতিক্রিয়া তে সে বেশ ক্লান্ত হবে বটে— তবুও স্বামীর কাছে হার স্বীকার করা চলে না। সে একহাতে স্বামীর কামদন্ড আন্দোলিত করতে করতে অন্য হাতে স্বামীকে ঢেলে শুইয়ে দিতে চাইলো তার পাশে। তবে বলা বাহুল্য সমীরের সাথে শক্তিতে পেরে ওঠা তার কর্ম নয়। তাই এবার চুম্বন ভেঙে স্বামীর দৃষ্টি সম্মুখে তার ব্লাউজে ঢাকা মাতৃদুগ্ধ পূর্ণ দুধ দু'খানি তুলে ধরতে চাইলো। সফলতাও সে পেল অবশ্য। অল্পক্ষণেই ব্লাউজে ঢাকা স্তনযুগলে সমীর টেপন ও চুম্বন করতে করতে সুপ্রিয়ার মৃদু ঠেলাতে বিছানায় শুয়ে পরলো। তখন সুপ্রিয়া স্বামীর ঠোঁটে  তর্জনী ঠেকিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললে,

– চুপটি করে শুয়ে আমার ঠোঁটে তোমার ভালবাসার স্বাদ নিতে দাও...

সমীর প্রথমটায় ঠিক বুঝতে না পারলেও, পরক্ষণেই নিজের কামদন্ডে সুপ্রিয়ার নরম ঠোঁটের স্পর্শ অনুভব করে তৃপ্তি তে "উমম্ " শব্দের সাথে দু'চোখ বুঝলো। উত্তেজিত পুরুষাঙ্গে লালাভরা উষ্ণতা পূর্ণ  মুখের চোষনে ডান হাতে সে সুপ্রিয়ার কাঁধ আকড়ে ধরলো। সমীরের কোমড় যেন নিজে থেকেই তলঠাপ দিয়ে সুপ্রিয়ার চোষনের সাথে তাল মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। সমীরের উত্তেজিত ছোটবাবু তার চেনা গন্তব্য পথে ধীরে কিন্তু পরম আনন্দে এবার ঢুকছে ত একবার বেরুছে।

 ওদিকে সুপ্রিয়া স্বামীর কোমরের কাছে ঝুঁকে পরে— ধীর কিন্তু অতি গভীর মনোযোগে স্বামীর বৃহৎ কালো লিঙ্গটি চুষে চলেছে। তার মুখমণ্ডল কামনা ও প্রেমময় আনন্দে উদ্বেলিত। মনে তার ভাবনা অন্তহীন। তবে স্বামীকে তৃপ্তি দিতে সে আজ নিচে পরে চোদন খেতে নয়— কোলে চড়ে ঘোড়সওয়ারির মতো রমণ করতে আগ্রহী। 

//////


বছর চৌদ্দ-পনেরো আগের এক বসন্ত সকাল।  যদিও হাট শুরু হতে ডের সময় বাকি। তবুও এখনি জয়নগরের হাট লোকে লোকে ঠাসা। নানা অঞ্চল থেকে কৃষক, কারিগর, এবং ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়েছিল তাঁদের পণ্যের বাহার নিয়ে। যে যার মতো পণ্য সামগ্রী সাজিয়ে তৈরি হচ্ছে হাটবারের জন্যে। ইতিমধ্যে বেচাকেনাও হচ্ছে কিছু কিছু। 

সেই হাটেই, বলরাম মুখার্জি একরকম মনঃক্লান্তি নিয়ে ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিলেন। তিনি গতকাল দুপুরে  এসে পৌঁছে ছিলেন রোগী নিয়ে হাসপাতালে। জয়নগরের সরকারী হাসপাতাল তখন নতুন। বছর দুয়েক হয় চালু হয়েছে মাত্র। গ্রামের লোকজনের মধ্যে হাসপাতাল তখন ভয়ের বিষয়বস্তু। তাই অধিকাংশ সময়েই হাসপাতালে কেউ আসতে চাইতো না। যা আসতো তাও ডাক্তার বাবুকে সাথে নিয়ে। 

তবে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েও তিনি গ্রামে ফিরতে পারেননি। তাছাড়া হাটবার সামনে থাকায় তার ফেরার ইচ্ছেটাও ছিল না। গ্রামে নদী ঘাঁটের কাছাকাছি তাদের ছোটখাটো একটা বাজার আছে বটে, তবে জয়নগরের হাট দশ গায়ের মিলন মেলা। তাই ইচ্ছে ছিল হাট করে তারপর চেনাজানা লোকেদের সাথে বাড়ি ফিরবেন।
তবে সেদিন সেই বসন্ত সকালে জয়নগরের হাটের আকাশ যেন কিছুটা বেশিই কালো। হাওয়ার বেগটাও বেশ তীব্র । কিন্তু মুখার্জি বাবুর সেদিকে খেয়াল ছিল না।  তিনি আপন মনে কি যেন ভেবে চলেছিলেন।

ডাক্তার বলরাম মুখার্জি ছিলেন মধুপুরের গর্ব। গাঁয়ে বেদ কবিরাজ কিছু না থাকায় কলকাতার ফেরত ডাক্তারের খ্যাতি ছড়িয়ে ছিল জেলা পেরিয়ে। তবে তিনি কেবল চিকিৎসক নন, ছিলেন দার্শনিকমনা, যুক্তিবাদী—কুসংস্কার থেকে দূরে, বিজ্ঞানমনস্ক সচেতন মানুষ। যেখানকার পাড়াগাঁয়ের মানুষ ছেলেদের কেই ঠিক মতো পড়ানোর ভার নেয় না— সেই গাঁয়ে মুখার্জি বাবু দুই মেয়েকেই নিজে পড়াশোনা করাছেন মন দিয়ে, ভবিষ্যতে দরকার হলে মাস্টার রাখারও তার ইচ্ছে। তাঁর একমাত্র পুত্র সমীরও তাঁর মতোই—কলকাতার ক্যাম্পবেল মেডিকেল কলেজে পড়ে। সে কদিন হলো ছুটিতে গ্রামে ফিরেছে। ফিরেছে অবশ্য তারই চিঠি পেয়ে। ছেলেকে গ্রামে আনতে পত্র প্রেরণের কারণ বলরাম মুখার্জির স্ত্রী!

বলরাম মুখার্জি কোন কালেই আধ্যাত্বিক আশ্চর্য কোন ঘটনায় বিশ্বাসী নয়। তবে বেশ কিছু দিন যাবত স্ত্রীর নানা রকমের দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা সারানোর দ্বিতীয় ওষুধ না পেয়ে ছেলেকে গ্রামে ডাকেন তিনি । আসলে তার স্ত্রীর মাথায় তখন ঘুরছে ছেলের বিয়ে দিয়ে ঘরে নববধূ আনার চিন্তা। ছেলের বয়স কম হয়নি,প্রায় উনিশ। তাছাড়া বলরাম মুখার্জি স্ত্রী ঘনঘন স্বপ্ন দেখছেন বিয়ে বাড়ির কোলাহল। তার কথা মতো এ দেবতার ইঙ্গিত ছাড়া আর কি! মেয়েদের ত আর বিয়ের বয়স হয়নি। বিবাহ যোগ্য ছেলে ঘরে ইত্যাদি ইত্যাদি....

তবে মুখার্জি বাবুর তখন সে ইচ্ছে ছিল না। পড়ালেখার মাঝে ছেলে বিয়ে দিতে তিনি ছিলেন নারাজ। আর ত মাত্র কটা বছর,তার পর না হয় হবে ওসব। কিন্তু স্ত্রীর ঘনঘন নথ নেরে এক গীত কানের কাছে গেয়ে চলায় তিনি ছিলেন খানিক চাপে। দু-একটি মেয়েও তিনি দেখেছেন অবশ্য। কিন্তু ছেলের জন্যে মেয়ে পছন্দ করা হয়েছে আর এক মুসকিল। আসলে ছেলের পড়াশোনার কথা ভেবে তিনি নিজের ইচ্ছায় ছেলের বিবাহ পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু আজ হঠাৎই তার ইচ্ছের পরিবর্তন ঘটলো। এই পরিবর্তনের জন্যে বসন্তের হাওয়া দায়ি কি না তা অবশ্য বোঝা গেল না। তবে মনের মাঝে নানা চিন্তা ভাবনা নিয়ে হাটে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ তার চোখে পরলো একটি মেয়ে।

হাটের দক্ষিণ মাথায়, এক পাশে বড়সড় এক কাপড়ের দোকানে  কাঁচা বয়সী একটি মেয়েকে এক পলক দেখে বলরামবাবু স্তব্ধ। পুরোনো পাকাঘরের ছায়ায় বসে থাকা কাপড়ের দোকানটায় সেদিন উপচেপড়া ভিড়। এক নরজ দেখতেই ভীড় মেয়েটিকে আড়াল করেছিল। বলরাম মুখার্জি এগিয়ে গেলেন। দোকানে গামছা, ধুতি, শাড়ি, লুঙ্গির রঙিন স্তূপগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক ধরণের অস্থির সৌন্দর্য তৈরি করেছিল। আর তার এক কোণায়, কাপড়ের তোলার একপাশে বসে একটি কিশোরী — দু’চোখ তার অল্প ক্ষণের জন্যে খুলে বন্ধ হচ্ছে আবারও, মুখখানি শান্ত, অথচ হাত চলমান। সূচের ডগা কাপড়ে গাঁথে, আঙুল দিয়ে বুনন চিনে নিয়ে, আপন মনে সেলাই করছে। সেই চোখ দুটো নিভৃত, আলোহীন, তবু তাতে এমন এক গভীরতা, এমন অপার্থিব সৌন্দর্য যে তাকিয়ে থাকা যায় না। দেখে বোঝাই যায়, এই চোখ পৃথিবীকে দেখে না, কিন্তু হৃদয়ের ভিতর দিয়ে অনায়াসে অনুপ্রবেশ করতে পারে। তার চোখে যেন স্মৃতির চিহ্ন লেগে আছে—এক বিস্মৃত শপথের ছায়া। 

ডাক্তার বাবু দোকানে ভেতরে ঢুকে গেলেন কিছু না বলেই।  সবাইকে অবাক করে কিশোরীর সম্মুখে বসে ভালো মতো দেখলেন মেয়েটিকে। মেয়েটির শরীর যেন সদ্য জেগে ওঠা বৈশাখী ঝড় — তীব্র, অবিন্যস্ত, অথচ অনবদ্য রূপময়তায় পূর্ণ। তার ত্বক যেন উজ্জ্বল শালপাতার মতো, নিখুঁত নির্মল। যেন এই মেয়ে রোদে পোড়েনি কখনো, অথচ গ্রাম্য ধুলোকণায় তৈরি হয়েছে তার শরীরের কঠিন সংযম। মাথার কোঁকড়ানো লম্বা চুলগুলো হঠাৎ হাওয়ার মৃদু ঝাপটা তে মৃদুমন্দ নড়েচড়ে উঠছিল ।যেন নিঃশব্দ পুরাকালের মূর্তি আপন অস্তিত্বে সাড়া দিয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে—নীরব, গম্ভীর, অথচ অপার সৌন্দর্যে পূর্ণ। হাটের মাঝে এই রকম মুখ—অন্ধ, অথচ দীপ্ত, অচেনা, অথচ চিরপরিচিত— বিজ্ঞানমনস্ক বলরাম মুখার্জিকে কাঁপিয়ে দিল। 

তিনি মেয়েটির পিতাকে চিনতেন। হরিপদ দত্ত, সেই মেয়েটির পিতা। রাধাপুরে বাস তাদের। এমনিতে হাটে হরিপদ দত্ত পরিবার নিয়ে বসেন না। তবে বেশ কিছুদিন যাবত  তিনি অসুস্থ থাকায় আজ হাটবারে তার একমাত্র  মেয়েটি  একরকম জোর  করেই সাথে এসেছিল। বলরাম মুখার্জি আরও শুনলেন, হরিপদের  অসুস্থতা ইদানিং গুরুতর। এদিকে পুত্র সন্তান  না থাকায় মেয়েটি প্রায় নিঃসহায়। হরিপদর মেয়ে—সুপ্রিয়া জন্ম থেকেই অন্ধ। তবে অসামান্যা রূপ থাকায় মেয়েটি বখাটে লোকেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বেশি। তাই এই অবস্থায় মেয়েটির ভালো বিবাহের সম্বন্ধ করা যাচ্ছে না। এদিকে পাড়াপড়শিরা সবাই বলে, ওর চোখে কিছু একটা আছে... ও মেয়ের চোখের দিকে তাকালে অজানা মোহ লাগে। যদিও ওসব গুজব ছাড়া আর কিছু নয়। তবে বিপদ এতেও কম নয়।

কিন্তু বলরাম দেখলেন মেয়েটির সৌন্দর্য যা আছে তা কেবল বাহ্যিক নয়—সুপ্রিয়ার গলার স্বরেও ছিল স্নিগ্ধতার আভাস, মুখে কথার ভঙ্গিতে ছিল অদ্ভুত নরম ছায়া। মেয়েটি যেন প্রকৃতি আর অতীন্দ্রিয়তার সংমিশ্রণ—এক রহস্যময় অস্তিত্ব, যার সৌন্দর্য চোখে নয়, হৃদয়ে এসে বাজে। এমন একটি মেয়েকে ছেলের বৌ হিসেবে ঘরে তুলতে বলরাম মুখার্জির দেরি সইলো না। অবশ্য এই বিয়ে  ও অন্ধ মেয়েটিকে নিয়ে তার স্ত্রী ও পাড়াপড়শিরা নেড়েচেড়ে অনেক কথা বললো,যা বিবাহের পরেও বেশ কিছুদিন চলেছিলো। তবে বলরাম মুখার্জির জাতপাতের ভয় কোন কালেই ছিল না। তাই পাড়াপড়শিদের কথা কানে না তুলে শুধু স্ত্রী কে বুঝিয়ে সুপ্রিয়াকে তিনি ছেলের বৌ করে ঘরে তোলেন। বাবার ইচ্ছায় একটি অন্ধ মেয়েকে বিয়ে করে সমীর অবশ্য এখন অসুখী নয়। বরং তার মতো সাজানো সংসার অনেক পুরুষের কামনার বস্তু। 


গভীর বৃষ্টি ভেজা রাতে— রতিক্লান্ত  স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে সমীর আপন মনে তার বিবাহের দিনটির কথা ভাবছিল। এমন সময়  ক্লান্ত সুপ্রিয়া ঘুমের ঘোরে স্বামীর দিকে আরো ঘন হয়ে এলো। সমীরের বুকের অতি কাছে এসে সে শুয়েছে মুখানি ছাদের পানে রেখে। তার শরীরের উষ্ণতা যেন প্রেমের ক্লান্ত ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে, খুঁজে নিতে চায় কোন চেনা আশ্রয়। ঘুমন্ত রমণীর ডান হাতটি নড়েচড়ে যেন আঁকড়ে  ধরতে চাইছে কোন চেনা অবলম্বন, আর সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে কাথা সরে গিয়ে দৃশ্যমান হয়েছে তার নগ্ন স্তনযুগল।

ওদুটি যেন যুগল পদ্ম। প্রশান্ত প্রেমের পর স্বামীর দেওয়া ভালোবাসার লালচে দাগ নিয়ে নিঃশ্বাসে হালকা ওঠা-নামার মধ্যে জীবন্ত কবিতা। কোনোটাই বাড়াবাড়ি নয়, কোনোটাই ঘনত্বে ভারী নয়, বরং এমন এক ছন্দময় মাধুর্য, যা চোখে পড়লে হৃদয় স্তব্ধ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ। 

সমীর তখন নিজেই পাতলা কাঁথাটা সরিয়ে উন্মুক্ত করে সুপ্রিয়া নগ্ন দেহ। ঘরের হলদেটে  আলো-আধারিরতে  তার চোখ সুপ্রিয়ায় পেটের রেখা ধরে নিচে নেমে এসে থেমে যায় একটি অলৌকিক সৌন্দর্যে—ঘুমন্ত রমণীর সুগভীর নাভি। গোলাকার, গভীর, নিখুঁত অনুপাতের এই নাভি যেন শরীরের কেন্দ্র নয়, এক নিঃশব্দ মন্ত্র। তার চারপাশে ত্বকের মসৃণ সৌন্দর্য, হালকা গন্ধে মিশে আছে ঘাম, রতি ও কোমল নারীত্বের গোপন ভাষা।

সমীর ঘুমন্ত সুপ্রিয়া কে টেনে নেয় আরও কাছে। স্বামীর টানে একবার নড়ে উঠে সর্বাঙ্গ মুচড়ে আরোও কাছে সরে আসে সুপ্রিয়া।আর তখনি সমীরের চোখে পরে স্ত্রীর বগলের কাছে লুকানো কোমল কেশরাশি—আলো-আঁধারির খেলার মাঝে সেগুলো যেন শরীরের এক অরণ্যপ্রান্তর। যেখানে লজ্জা ও কামনা পাশাপাশি বাস করে। কোনো কৃত্রিমতা নেই, বরং এক অনাবিল প্রাকৃতিকতা, যা দেখে চোখের পাতায় জেগে ওঠে আদিম প্রেমের ধ্বনি। সেই কেশরাশি যেন বলে—এই নারী নিজের শরীরকে ভালোবেসেছে, আপনভাবে আগলে রেখেছে, শুধু তারই জন্যে। 

সমীরের পক্ষে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পরে। বেসামাল  হয়ে সুপ্রিয়ার নগ্ন বুকের উষ্ণতায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই আচমকা ঘুম ভেঙ্গে যায় সুপ্রিয়ার। তবে সে কিছু মাত্র বিচলিত না হয়ে স্বামীর ঘন চুলে তার কোমল আঙুলগুলো ডুবিয়ে অন্য হাতে স্বামীর পিঠ আঁকড়ে ধরে যেন স্বামীকে তার দেহে মিশিয়ে নেয়।
[+] 6 users Like বহুরূপী's post
Like Reply
#97
/////////

সকাল সকালে জলখাবারের পর্ব সেরে, সমীর বেড়িয়ে গেল গ্রামের মন্দিরে ঠাকুর মশাইয়ের সাথে দেখা করতে। গ্রামের বাতাসে বর্ষার আগমন বার্তার সাথে যেন রোগব্যাধি খানিক বেরে গিয়েছে। ইদানিং সমীরের হাত পা যেরে এক দন্ড স্বস্তিতে বসার সময় নেই। তার ওপরে যখন তখন মেঘ বৃষ্টির জ্বালাতন ত আছেই। তবে আজ সকালের আকাশে মাঝে মাঝে মেঘের ছায়া খেলে গেলেও, এখন রোদ উঠে আঁচড়ে পরেছে ভেজা পাতার গায়ে। ছাদে উঠলেই দেখা যায় বাগানের সীমানা ছাড়িয়ে চারপাশে ধানক্ষেতের সবুজে ধোয়া ধোয়া এক আলো ছড়ানো। বাতাসে ভেসে আসে শেওলা আর কাদা মিশ্রিত গন্ধ। সকাল বিকেল  মুখার্জি বাড়ি ঘিরে পাখিদের আড্ডার কিচিরমিচির নন্দিনীর কাছে এখন খানিক পরিচিত। দোয়েল, শালিক সহ আর নাম না জানা কত পাখি—সবারই যেন কিছু বলার আছে এই সকালে। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে দোতলায় সুপ্রিয়া ময়নাটাও মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে। এদিকে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে নন্দিনী আজ বড় বৌয়ের কথায় উঠোন পেরিয়ে  বারান্দায় উঠে ঢুকলো স্বামীর ঘরে। সুপ্রিয়া তাকে বলেছিল,

— আজ ত আমার সময় হবে না। ওদিকে ওর ওষুধের ঘরটা কদিন হলো গোছানো সুযোগ হচ্ছে না। তাই বলছি,ওর ডাক্তারী ঘরটা তুই একবার ঝাঁট মেরে, একটু গুছিয়ে দে তো....।

এই বাড়ির সব ঘরের দরজা ভারী কাঠের,তাতে লাগালো লোহার ছিটকিনি। দরজা খুলে স্বামীর ঘরের ভেতর দিয়ে ঢুকে পর্দা ঠেলতেই একটা সেঁকা গন্ধ নাকে এল—পুরোনো বই, ওষুধ, আর কাঠের ধুলোর গন্ধ মিশে যেন একরকম নীরব ইতিহাস বয়ে নিয়ে আসে। সত্যই বেশ কদিন যাবত সুপ্রিয়ার এদিকে আসা হচ্ছে না। তা খানিক বাড়ির কাজের জন্যেও বটে, আবার তার মেয়েটার হঠাৎ অসুখ হয়েছে বলেও বটে। তবে ধুলাবালি বড় কথা নয়,ঘরটাও বেশ গোছানো, কিন্তু কোন জায়গায় ওষুধের শিশি ভেঙে গন্ধ ছড়াচ্ছে। এদিকে  এই ঘরের দরজা- জানালা সব বন্ধ।

নন্দিনী এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকের জানালাটা খুলতেই জানালা দিয়ে এই দৃশ্য  চোখে পড়ে! মৃদু মৃদু হাওয়াতে ফুলগুলো কেমন দুলছে– যেন বাতাস ফিসফিস শব্দে কিছু বলে চলেছে তাদের সাথে। কি বলছে নন্দিনী তা জানে না,তবে তার চোখে পর– ঘর খানিক এলোমেলো হলেও বাগানের যত্ন সমীর ঠিকই নিয়েছে। 

নন্দিনী নিঃশব্দে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাতাসের সাথে ফুলেদের কানাকানি দেখলো। তার মধ্যেই এক ঝোপের আড়াল থেকে একটি কাঠবিড়ালী  দৌড়ে উঠলো অদূরে আম গাছটায়। সেই গাছেরই একটি নিচু ডালে একটা শালিক বসে ঠোঁট ঘষেছিল। কাঠবিড়ালীর বোধ করি নন্দিনীর সংবাদ পৌঁছে দিল শালিকের কাছে। পরক্ষণেই পাখিটি উড়ে এসে বসলো অদূরে চন্দ্রপ্রভার ডালে।

খানিক পরে, নন্দিনী তখন ধীরে ধীরে ঘর গুছাতে শুরু করেছে। জানালার বাঁ দিকে পাশাপাশি  রাখা পুরোনো দুটো কাঠের আলমারিতে বই আর ওষুধপত্র রাখা, তার মধ্যে একটির কাচ ভেঙে গেছে এক কোণ। বইয়ের তাকের ধারে কয়েকটা খালি কাঁচের শিশি, সেখানে মেঝেতে এক টা ওষুধের শিশি ভেঙে ছড়িয়ে আছে। দরজাটার ডান পাশে আর একটা জানালা। সেখানেই টেবিলের উপর ছড়ানো একগাদা সাদা কাগজ—মাঝখানে কয়েকটা হলদে হয়ে যাওয়া।

টেবিলের এক কোণে ছিল একটা গোল টিনের কৌটো। সেটাকে সরাতেই নিচে পড়ে থাকা এক খাম চোখে পড়ল। ধুলোমলিন খাম নয়, নতুন। ধীরে ধীরে সেটা তুলে নিল নন্দিনী। খামের ওপরে নামটা স্পষ্ট— সূপ্রিয়া, প্রেরকের নাম লেখা “সিন্দু”। চিঠির ঠিকানা বেশ দূরের। নন্দিনী এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকে। সিন্দু কে, তা সে জানে। তবুও চিঠিটা পড়ার ইচ্ছা হয়, কিন্তু সে হাত গুটিয়ে নেয়। চিঠিটা সুপ্রিয়ার জন্যে, কিন্তু এখনো সমীর তাকে দেয়নি কেন সে বুঝে উঠতে পারে না। তবে সমীর নিজেও পড়ে নি। তা সহজেই বোঝা যায় কারণ খাম বন্ধ। চিঠিটা সরিয়ে রেখে নন্দিনী আবার কাজে মন দেয়।

ঘর গোছানো শেষ করতে করতে হাওয়াটা যেন একটু বদলায়, রৌদ্রের তীব্রতা শীতল হাওয়াকে উত্তপ্ত করতে শুরু করেছে তা বোঝা যায়। নন্দিনী চিঠি হাতে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে পরে।



((( শ্রীচরণে, প্রণাম নিবেদন করি।

আশা করি, তুমি ও সকলে সদয় কুশলে আছো। এখানে আমরা সকলে ঈশ্বরের কৃপায় স্থির আছি।

বৌদি, সংবাদ পাইয়াছি, দাদা দ্বিতীয়বার বিবাহ করিয়াছেন। সংবাদ পাইয়া বিস্ময়ে ও বিষাদে স্তব্ধ হইয়া পড়িয়াছিলাম। শুনিলাম, তুমি নিজ হস্তে তাহার উদ্যোগ করিয়াছ। জানি না, কীভাবে হৃদয় ধরিয়া এই মহৎ কার্য তুমি করিতে পারিলে। তোমার ত্যাগ ও সহনশীলতায় বিস্মিত হই, কিন্তু একই সঙ্গে হৃদয়ে একরাশ অভিমানও জমিয়া উঠিয়াছে। দাদার বিবাহে সম্মতি দিয়া তুমি কি কেবল এক গৃহিণী, না কি এক পত্নী হিসাবে নিজের স্থানকে অল্প মূল্য দিলে?

বৌদি, আমি তো তোমার ননদ, ছোট্ট বয়সে তোমার কোলে ঘুমাইয়াছি, তুমিই ছিলে আমাদের দ্বিতীয় মা। আজ তুমি এমন এক সিদ্ধান্ত লইলে, যাহা আমাদের সকলকেই এক অদ্ভুত দ্বন্দ্বে ফেলিয়া দিল।

তবে আমি জানি, তুমি স্বভাবতই সহিষ্ণু, ধৈর্যশীলা। দাদার ভালোর জন্যই হয়তো এই ত্যাগ। তাহা হউক, আমি আসিতে চাহি, একবার সামনাসামনি কথা বলিতে। স্বামী ছুটি পাইলে দেখা হইবে নিশ্চয়, ততদিনে হৃদয় হইতে অভিমান কিছু কমিলে আবার পত্র লিখিব।

ইতি –
তোমার  স্নেহের ননদ,
সিন্দু)))))

চিঠি পড়া সময় কুন্দনন্দিনীর নজরে পরেনি। তবে এখন চিঠি পড়া শেষে চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে সে মুখোমুখি হলো অতীতের সাথে! বোধকরি নন্দিনীর চিঠি পড়া দেখেই কিরণ এতোক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল দরজার পাল্লায় হেলান দিয়ে। এখন নন্দিনীকে উঠতে দেখে সে বললে,

– প্রেমপত্র পড়া হচ্ছে বুঝি?

নন্দিনী স্তব্ধ,জানালার বাইরে বাতাসে ফুলগাছ গুলো কাঁপছে স্নিগ্ধ শব্দে। দূর থেকে ভেসে আসছে  হাঁসের ডাক। আকাশ পরিষ্কার কার, আবহাওয়া রৌদ্রের তীব্রতায় ঝলমলে, তবে হটাৎ যেন কুন্দনন্দিনীর মুখখানি কালো মেঘে ছেয়ে গেল।



আজকের পর্ব মেঘের অন্ধকারেই সমাপ্ত। এখন খানিক মেঘের আড়ালে খেলাধুলা চলুক, বর্ষণের সংবাদ পরবর্তী পর্বে জানবো আমরা। আর হ্যাঁ,সিন্দুর পত্রটি উটকো ভাষা লিখেছি বলে দুঃখিত,আসলে খুব ইচ্ছে করছিল। ধন্যবাদ ❤️
[+] 8 users Like বহুরূপী's post
Like Reply
#98
very nice.
[+] 1 user Likes Saj890's post
Like Reply
#99
একেই বলে বড়দের সাহিত্য।
[+] 2 users Like bluesky2021's post
Like Reply
Update বড় আপডেট দরকার, ভেবে ছিলাম মিলন দৃশ্য টা সম্পূর্ণ দেখতে পাবো হলো না মাঝে অতীত এনে ফেললেন।
আপডেট চাই তাড়াতাড়ি
[+] 1 user Likes Nobody03's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)