Thread Rating:
  • 0 Vote(s) - 0 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy মুমতাহিনা টয়া: দিনের রাণী, রাতের দাসী
#1
১।
রাত একটা বেজে সতেরো মিনিট।

ঢাকার গুলশান এভিনিউর ‘রয়্যাল’ অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। বাইরে সোডিয়াম বাতির হলুদ আলো পিচঢালা রাস্তার ওপর অলস ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে দু-একটা দ্রুতগামী গাড়ির হেডলাইটের আলো সেই হলুদ অন্ধকারকে চিরে দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিন্তু বারো তলার এই ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে বাইরের কোনো শব্দ পৌঁছায় না। এখানকার জানালগুলো সাউন্ডপ্রুফ, মোটা কাঁচের দেয়াল ভেদ করে শহরের কোলাহল ভেতরে ঢোকার অনুমতি পায় না। এখানে শুধুই নিস্তব্ধতা। কৃত্রিম, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, এবং সুগন্ধিযুক্ত নিস্তব্ধতা।

মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া তার মাস্টার বেডরুমের বিশাল আয়নাটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ঘরে এখন আলো নেই বললেই চলে, শুধু বেডসাইড ল্যাম্পের শাওনচে আভা ঘরের পরিবেশটাকে মায়াবী এবং একইসাথে রহস্যময় করে তুলেছে। টয়ার পরনে শ্যাম্পেন রঙের পিওর সিল্কের স্লিপিং গাউন। এই পোশাক এতই মিহি যে তা তার শরীরের প্রতিটি ভাঁজের সাথে এমনভাবে লেপ্টে আছে, যেন দ্বিতীয় চামড়া। 

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির বয়স চৌত্রিশ। কিন্তু আয়নার গভীরে যে প্রতিবিম্বটা তাকিয়ে আছে, তার বয়স উনিশ। সময় কি আসলেই সামনের দিকে গড়ায়? মাঝে মাঝে মনে হয় সময় থমকে থাকে, মানুষ শুধু শরীর বদলে সামনে এগিয়ে যায়।


২০১০ সালটা টয়ার খুব স্পষ্ট মনে পড়ে। জীবন তখন আজকের মতো এত গোছানো ছিল না, তবে স্বপ্নগুলো ছিল আকাশছোঁয়া। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা। হাজার হাজার প্রতিযোগীর ভিড়ে টয়া নামের এক কিশোরী। চোখেমুখে ভয় আর সাহসের অদ্ভুত এক মিশ্রণ। গ্রুমিং সেশন, ক্যাটওয়াক, বিচারকদের তীক্ষ্ণ প্রশ্ন—সব মিলিয়ে এক ঘোরলাগা সময়। সেই প্রতিযোগিতায় টয়া পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিল। প্রথম হতে পারেনি, মাথায় মুকুট ওঠেনি। সাধারণ হিসেবে এটা পরাজয়, কিন্তু টয়ার কাছে এটা ছিল সিঁড়ি। সাফল্যের সিঁড়ি। সে জানত, দৌড়ে প্রথম হওয়াটাই শেষ কথা নয়, আসল কথা হলো দৌড়টা থামিয়ে না দেওয়া।


মডেলিং দিয়ে শুরু। তারপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রুমানা রশিদ ঈশিতা—যাকে দেখে বড় হয়েছে, সেই মানুষের পরিচালনায় ‘অদেখা মেঘের কাব্য’ নাটকে অভিনয়ের সুযোগ। মেঘ কেটে রোদ উঠতে শুরু করল। টয়া নামের মেয়েটি ধীরে ধীরে হয়ে উঠল শোবিজের পরিচিত মুখ।


আজকের টয়া আর সেই ২০১০ সালের টয়ার মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব। এখন ঢাকা শহরের বড় বড় মোড়ে বিশাল সব বিলবোর্ডে টয়ার হাসিমুখ। জ্যামে আটকে থাকা বিরক্ত মানুষগুলো তার ছবির দিকে তাকিয়ে হয়তো খানিকটা স্বস্তি পায়। নাটকে, মিউজিক ভিডিওতে, বিজ্ঞাপনে—সব জায়গায় তার সরব উপস্থিতি। ভক্তরা তার একঝলক দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে। তার অটোগ্রাফের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। অথচ, এই গভীর রাতে, গুলশানের এই নিস্তব্ধ ফ্ল্যাটে দাঁড়িয়ে টয়া অনুভব করে, তার ভেতরের সেই উনিশ বছরের মেয়েটা এখনো মরে যায়নি। সেই উদ্যমী, সাহসী আর কিছুটা অবুঝ মেয়েটা এখনো এই চৌত্রিশ বছরের শরীরের ভেতর বাস করে। সে এখনো আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখে, যদিও আকাশটা তার এখন হাতের মুঠোয়।


হঠাৎ নীরবতা ভাঙল। ‘টিং’—একটা যান্ত্রিক শব্দ। খুব ছোট শব্দ, কিন্তু এই নিঝুম রাতে সেটাকে মনে হলো কাঁচ ভাঙার শব্দের মতো তীব্র। আয়নার ঘোর কেটে গেল। টয়ার মনোযোগ সরে গেল বেডসাইড টেবিলে রাখা মোবাইল ফোনটার দিকে। স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠেছে।


শাওনের মেসেজ। শাওন এখন ঢাকায় নেই। বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকায় কোনো এক নাটকের শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। ফিরবে আরও তিন দিন পর। মেসেজে হয়তো লিখেছে—‘পৌঁছে গেছি’, কিংবা ‘খুব টায়ার্ড, ঘুমিয়ে পড়ছি’। শাওন মানুষটা এমনই। ছিমছাম, দায়িত্ববান।


টয়া ফোনটা হাতে নিল না। দূর থেকে তাকিয়ে রইল। ফ্ল্যাটটা আজ ভয়ানক রকমের খালি। কাজের মেয়েটাও নেই, বোনের বাসায় গেছে ছুটির অজুহাতে। হাজার বর্গফুটের এই আলিশান ফ্ল্যাটে টয়া একা। নিঃসঙ্গতা মাঝে মাঝে খুব ভারী হয়। একা এই ফ্ল্যাটে শাওন থাকলে সময়টা অন্যরকম হতো। দুজনে মিলে এক মগ কফি নিয়ে হয়তো ব্যালকনিতে বসত। গুলশানের রাস্তার দিকে তাকিয়ে অর্থহীন গল্প করত। কিন্তু তাদের জীবনটা সাধারণ দম্পতির মতো নয়।


তাদের ক্যারিয়ারটাই এমন—যেদিন টয়া ফ্রি, সেদিন হয়তো শাওন ক্যামেরার সামনে ব্যস্ত। আবার যেদিন শাওনের অফ ডে, সেদিন হয়তো টয়ার দম ফেলার সময় নেই। দুটি ব্যস্ততম রেললাইন পাশাপাশি চলে, কিন্তু খুব কম সময়েই তারা জংশনে মিলিত হতে পারে। আজকের রাতটা তেমনই এক একাকী রাত।


প্রচণ্ড ব্যস্ততা থাকলেও টয়ার দাম্পত্য জীবনের খাতাটা অবশ্য বেশ পরিপাটি। সেখানে কোনো কাটাকুটি নেই, কোনো অযত্নের দাগ নেই। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়—কী নিখুঁত একটা ছবি! 


সায়েদ জামান শাওন এবং মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া—বাংলাদেশের শোবিজ জগতের এক ‘আইডিয়াল কাপল’। শাওন মানুষটা বড্ড বেশি নিখুঁত। সে টয়াকে ভালোবাসে, সম্মান করে, এবং তাদের ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির বিয়েটা ছিল রূপকথার মতো। শাওন কখনো টয়ার সাথে উচু গলায় কথা বলে না, কখনো তাকে অসম্মান করে না। 


পত্রিকা আর ম্যাগাজিনের পাতায় ওদের হাসিমুখের ছবি ছাপা হয়। ক্যাপশনে লেখা থাকে—‘দ্য পারফেক্ট ডিও’। আসলেই ওরা পারফেক্ট। শাওন মানুষটা অদ্ভুত রকমের ভালো। তার মধ্যে কোনো প্যাঁচ নেই, কোনো ভান নেই। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সে যখন কফি বানিয়ে টয়ার মুখের সামনে ধরে, তখন মনে হয় ভালোবাসার চেয়ে বড় সত্য এই পৃথিবীতে আর কিছু নেই। দুজনের শিডিউল ভয়াবহ ব্যস্ত। টয়া হয়তো উত্তরা থেকে শ্যুটিং শেষ করে ফিরছে রাত এগারোটায়, শাওন তখন পূবাইলে আউটডোর শ্যুটে। তবুও তাদের মধ্যে যোগাযোগের কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিটা কাজের ফাঁকে, লাঞ্চ ব্রেকের সময়, মেকআপ রুমের একঘেয়ে অবসরে—তাদের আলাপ চলে মুঠোফোনে।

তাদের সংসারটা একটা স্বচ্ছ কাঁচের ঘরের মতো। সেখানে লুকোছাপা নেই। শোবিজের রঙিন দুনিয়ায় যেখানে সম্পর্ক ভাঙ্গে আর গড়ে, সেখানে শাওন আর টয়া একে অপরের প্রতি চরমভাবে বিশ্বস্ত। শাওন কখনো অন্য কোনো সহ-অভিনেত্রীর দিকে মুগ্ধ চোখে তাকায় না। টয়াও কোনোদিন কোনো প্রযোজক বা পরিচালকের সাথে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলে না। তাদের জীবনে কোনো পরকীয়া নেই, কোনো কেলেঙ্কারি নেই। আছে শুধু অগাধ বিশ্বাস আর নির্ভরতা।


মাঝেমধ্যে কাজ থেকে খনিকের অবসর নিয়ে ন দুজনেই বাসায় থাকে। শাওন গিটার বাজায়, টয়া ব্যালকনিতে বসে সেই সুর শোনে। শাওন টয়ার কপালে চুমু খেয়ে বলে, "টয়া, তুমি আমার জীবনের সেরা উপহার।" টয়া হাসে। সেই হাসিতে তৃপ্তি থাকে। সাংসারিক সুখের সবটুকুই তাদের আছে। ব্যাংক ব্যালেন্স, গুলশানের ফ্ল্যাট, দামী গাড়ি, আর ভক্তদের ভালোবাসা। ঝগড়াঝাঁটি তাদের হয় না বললেই চলে। হলেও সেটা স্থায়ী হয় বড়জোর পাঁচ মিনিট। শাওন এসে ‘সরি" বলে দেয়, অথবা টয়া এসে শাওনের গলা জড়িয়ে ধরে।

বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, এই সুখের দুর্গে কোনো ফাটল নেই। ঈশ্বর নিজ হাতে এই চিত্রনাট্য লিখে পাঠিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা হলো, ঈশ্বর চিত্রনাট্য লিখলেও, ভেতরের অন্ধকার সংলাপগুলো মানুষ নিজেই তৈরি করে নেয়। টয়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। এত সুখ, এত স্বাচ্ছন্দ্য, এত ভালোবাসার পরেও টয়ার মনে হয়—কোথাও একটা তীব্র অভাব রয়ে গেছে। যে অভাবের কথা শাওন জানে না, সমাজ জানে না। জানলে হয়তো এই সুখের সংসারটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ত। তাদের সম্পর্কটা স্বচ্ছ কাঁচের মতো। কিন্তু টয়া জানে, কাঁচ যত স্বচ্ছ হয়, তা ভেঙে যাওয়ার শব্দ তত বেশি তীক্ষ্ণ হয়। সব ঠিক আছে, কোথাও কোনো ভুল নেই। তবুও একটা অস্বস্তি টয়াকে ঘিরে রাখে। মশার কামড়ের মতো একটা সুক্ষ্ম জ্বালা। এই নিখুঁত জীবন, এই নিরাপদ আশ্রয়—সবকিছু ছাপিয়ে তার মনের গহীনে এক নামহীন অস্থিরতা খেলা করে। সে জানে, এই অস্বস্তির উৎস কোথায়, কিন্তু স্বীকার করতে ভয় পায়।

টয়ার অসুখটা শরীরে নয়, মনে। মনোবিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন—হায়ারার্কোফিলিয়া (Hierarchophilia) এবং হাইপারসেক্সুয়ালিটি। ডাক্তারি ভাষায় শব্দগুলো শুনতে খুব ভারি শোনায়, কিন্তু টয়ার কাছে এগুলো এক একটা জীবন্ত অভিশাপ। হায়ারার্কোফিলিয়া হলো নিজের চেয়ে সামাজিকভাবে নিচু অবস্থানের মানুষের প্রতি তীব্র, অদম্য যৌন আকর্ষণ। আর হাইপারসেক্সুয়ালিটি হলো এক অতৃপ্ত তৃষ্ণা, যা কিছুতেই মেটে না।

কৈশোর বয়স থেকেই টয়া নিজের ভেতরের এই অস্বাভাবিকতা বুঝতে পেরেছিল। বয়স তখন সতেরো কি আঠারো। কলেজে পড়ে। টয়ার একটা বয়ফ্রেন্ড ছিল—ভদ্র, মার্জিত, যাকে বলে ‘চকোলেট বয়’। ছেলেটা তার জন্য দামী গিফট আনত, হাতে হাত রেখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনত। কিন্তু টয়া খেয়াল করল, ছেলেটার স্পর্শে তার শরীরে কোনো বিদ্যুৎ খেলে না। বরং তার চোখ আটকে থাকত কলেজের গেটে বসা সেই নোংরা, পান-খাওয়া দারোয়ানের দিকে। দারোয়ানের ঘামে ভেজা শার্ট, তার রুক্ষ চাহনি টয়াকে যেভাবে আলোড়িত করত, বয়ফ্রেন্ডের দামী পারফিউম তা পারত না।

ব্যাপারটা অদ্ভুত, এবং একই সঙ্গে ঘৃণ্য। কিন্তু টয়া দেখল, তার ফ্যান্টাসির জগতটা সাধারণ মেয়েদের মতো নয়। যখন তার বান্ধবীরা সিনেমার নায়কদের নিয়ে স্বপ্ন দেখত, টয়া তখন ভাবত রাস্তার কোনো রিক্সাওয়ালার কথা। রোদে পোড়া চামড়া, পেডাল ঘোরানোর সময় পায়ের ফুলে ওঠা রগ, আর গায়ের উৎকট গন্ধ—এসব ভেবে রাতের পর রাত সে এক অদ্ভুত যন্ত্রণায় ছটফট করত। শুরুতে সে বিষয়টাকে পাত্তা দেয়নি। ভেবেছিল, হয়তো বয়সের দোষ, হয়তো সাময়িক কোনো ঘোর।


কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, টয়া বুঝেছে—এই অস্বাভাবিকতাই তার বাস্তবতা। সে ইন্টারনেট ঘেঁটে জানল, এটা সাধারণ কোনো ফ্যান্টাসি নয়, এটা একটা রোগ। মস্তিষ্কের এক জটিল রসায়ন।


পরবর্তী জীবনে যখন সে প্রেমিকের সঙ্গে ‘রুম ডেট’ বা একান্ত সময় কাটাতে যেত, তখন বিষয়টা আরও প্রকট হয়ে ধরা দিত। প্রেমিক তাকে আদর করছে, ভালোবাসছে, কিন্তু টয়া সেখানে অনুপস্থিত। সে শরীর পেতে দিত ঠিকই, কিন্তু মন পড়ে থাকত অন্য কোথাও। প্রেমিকের আদর তার কাছে মনে হতো পানসে। তার মনে হতো, এই নরম হাতের স্পর্শ তার জন্য নয়। তার দরকার প্রেমিকের বাসার সেই কাজের ছেলেটার আদর—যে হয়তো দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে, যার হাতে কোনো মমতা নেই, আছে শুধু বুনো কামড়।


সভ্য সমাজের মোড়কে ঢাকা টয়ার এই গোপন জগতটা বড়ই অন্ধকার। সেখানে ভালোবাসা নেই, সম্মান নেই। আছে শুধু শরীর, আর সেই শরীরের আদিম, কদর্য ক্ষুধা। এই ক্ষুধা তাকে শান্তি দেয় না, বরং প্রতিনিয়ত তাকে মনে করিয়ে দেয়—সে আসলে দ্বৈত সত্তার এক মানুষ। দিনের আলোয় সে রাজকণ্যা, আর রাতের অন্ধকারে সে দাসী হতে চায়।


২০১৯ সালের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে টয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তখন সময়টা অন্যরকম ছিল। ভারতে সেই অভিনয়ের কর্মশালায় শাওনের সঙ্গে যখন প্রথম ঘনিষ্ঠতা হয়, তখন শাওন আজকের মতো এত ‘ভদ্র’ ছিল না। প্রেম যখন নতুন থাকে, তখন তাতে একটা বারুদ থাকে। আগুনের আঁচ থাকে।

শুরুর দিকে শাওন ছিল টয়ার কল্পনার সেই পুরুষের মতোই—হিংস্র আর বুনো। তাদের একান্ত মুহূর্তগুলো তখন কবিতার মতো কোমল ছিল না, ছিল ঝড়ের মতো উত্তাল। শাওন তখন টয়াকে আদর করত না, যেন দখল করত। তার সেই আগ্রাসী মনোভাব, সেই চুয়ে পড়া আদিমতা টয়ার ভেতরের ‘হায়ারার্কোফিলিয়া’র অসুখটাকে সাময়িকভাবে থামিয়ে রেখেছিল। টয়া ভেবেছিল, যাক, অবশেষে সে এমন কাউকে পেয়েছে যে তার এই অস্বাভাবিক চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে। শাওনের সেই বুনো রূপ দেখে টয়া তৃপ্ত হতো, শান্ত হতো। মনে হতো, রাস্তার কোনো ড্রাইভার বা দারোয়ানের কথা ভাবার আর দরকার নেই, শাওন একাই একশ।


কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ অভ্যাসের দাস। আর ভালোবাসা মানুষকে বড্ড বেশি নরম করে দেয়। সম্পর্ক যত গভীর হয়েছে, শাওন ততই ‘সভ্য’ হতে শুরু করেছে। প্রেমিকের খোলস ছেড়ে সে যখন দায়িত্ববান হবু স্বামী হয়ে উঠল, তখন থেকেই সমস্যার শুরু। শাওন টয়াকে এতটাই ভালোবাসতে শুরু করল যে, তার স্পর্শে আর সেই আগের ধার থাকল না। সে সতর্ক হয়ে গেল। টয়া ব্যথা পাবে কি না, টয়ার অস্বস্তি হচ্ছে কি না—এসব ভাবতে ভাবতে শাওন তার ভেতরের পশুটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিল।


আর ২০২০ সালের সেই লিপ ইয়ারের বিয়ের পর? সব যেন একেবারে পানসে হয়ে গেল। বিয়ের পর শাওন পুরোপুরি বদলে যাওয়া এক মানুষ। এখন বিছানায় সে টয়াকে স্পর্শ করে কাঁচের পুতুলের মতো। যেন একটু জোরে ধরলেই টয়া ভেঙে যাবে। তার আদরে এখন শুধুই মমতা, শুধুই শ্রদ্ধা। সে কপালে চুমু খায়, আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দেয়, ফিসফিস করে ভালোবাসার কথা বলে। যেকোনো সাধারণ নারীর জন্য এটাই হয়তো স্বর্গ। কিন্তু টয়ার কাছে এই ‘সুস্থ’ ভালোবাসাটা অসহ্য লাগে।


টয়া চায় শাওন তাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলুক। সে চায় শাওন তার সঙ্গে কথা না বলুক, শুধু জানোয়ারের মতো তাকে ভোগ করুক। কিন্তু শাওন এখন বড্ড বেশি মার্জিত। সে টয়াকে সম্মান করে, আর এই অতিরিক্ত সম্মানটাই টয়ার শরীরের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।


রাতের পর রাত টয়া শাওনের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকে, শাওন তাকে আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। অথচ টয়ার রক্তে তখনো আগুন জ্বলে। শাওনের এই ‘ভদ্র’ ভালোবাসা টয়ার হাইপারসেক্সুয়ালিটির ক্ষুধা মেটাতে পারে না। বরং তা আরও উসকে দেয়। টয়া বুঝতে পারে, শাওন তাকে সুখী করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, কিন্তু সে জানে না—তার স্ত্রীর শরীর কোনো দেবতাকে চায় না, চায় কোনো দানবকে।


শাওন যখন টয়াকে কাছে টানে, আদর করে, টয়া তখন অভিনয় করে। সুখী হওয়ার অভিনয়। শাওনের শরীরটা বড্ড বেশি পরিষ্কার, বড্ড বেশি মার্জিত। তার গা থেকে দামী পারফিউমের গন্ধ আসে। সেই গন্ধ টয়াকে উত্তেজিত করে না, বরং ক্লান্ত করে। টয়ার শরীর খোঁজে নোংরামি, খোঁজে রুক্ষতা। তার শরীর চায় এমন কাউকে যে তাকে সম্মান করবে না, বরং ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলবে। শাওন যখন তাকে কাছে টানে, তার আদর হয় ফুলের মতো পবিত্র, চন্দনের মতো সুবাসিত। কিন্তু টয়ার শরীর খোঁজে ক্যাকটাসের কাঁটা, ঘামের নোনা স্বাদ, আর বুনো জানোয়ারের মতো আগ্রাসন।
[+] 1 user Likes Orbachin's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.




Users browsing this thread: