Thread Rating:
  • 91 Vote(s) - 3.44 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance মন ২ - কাহিনীর নাম- শিবের শিব প্রাপ্তি- সমাপ্ত
এইধরণের ক্লাসিক গল্পের ব্যাপারে কিছু লেখা বা মন্তব্য ... অসম্ভব আমার মতো একটা বুরবকের পক্ষে ... শুধু লাইক আর রেপু ছাড়া কিছু নেই ...


অনেক অনেক অভিনন্দন তোমাকে নান্দু দিদি , তুমি এখন এই সাইটের বাংলা গল্পের ফোরামে একজন মডারেটর , অর্থাৎ অ্যাডমিন ...
আশা করি ভালো দিন আসবে এবং রৌনকদা , লেখকদা এবং এদের মতো আরো অনেক মাথা খারাপ করা পুরোনো লেখকরা ফিরে আসবেন এখানে এবং লিখবেন আবারো ...   

Namaskar Namaskar Heart Heart
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(01-02-2022, 08:35 PM)Kallol Wrote: দিদি,আপনার এই গল্প টার প্রথম দিকের অংশ পড়ে   বেশ কিছুক্ষন মাথার ভেতর টা  ভো ভো করছিল, তবে পরবর্তী  অংশ পড়েে  কিছুটা   পরিিিিস্কার  হলো। সত্যি বলতে গল্প টা যে  এমন হবে  ভাবতে পারিনি, আর এই গল্প পড়তে গিয়ে  আপনার লেখা    রুপাান্তর  গল্প টার  কথা   মনে পড়ে  গেল।   লিিখতে থাকুুন  সুস্থ থাকুন।  [image]

কল্লোল, আমি এখানে ইউনিভার্সাল দিদি হয়ে গেছি। তাই তোমাকেও ভাই বললাম। গল্প টা একটু বড়। অনেক টা উপন্যাস মতন। তবে আমার আপডেট ৬৫০০০ শব্দের হয়। আশা করি, পঁচিশ টা পর্বে পুরো টা নামিয়ে নিতে পারব। সাথে থেক।
Like Reply
(01-02-2022, 09:23 PM)Baban Wrote: বেশ সুন্দর একটা পর্ব..... জীবন খাতার একটা পৃষ্ঠায় ছাপা কিছু লেখা খুব পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। তার সাথে সিলেবাসের বাইরের সমস্যাটাও... যেটা শিক্ষার্থীকে বার বার দুশ্চিন্তায় ফেলছে.... সে না পারছে গুরুজনকে জানাতে, না সহপাঠীকে... না আয়নার সামনে দাঁড়ানো ছাত্রকে... সে যে বোঝে না.... কিন্তু লুকিয়ে থাকা একটা মেয়ে উত্তর চায় যে।

আমার একজন পরিচিতা আছেন। তিনি ছেলে ছিলেন। এই গল্প তার জীবন থেকে ধার করা। তার জীবনের লড়াই এর কথা লিখতে ভালো লাগল। অনেক কল্পনা ও আছে। তবে মেডিক্যাল ব্যাপারের বর্ননা করতে গিয়ে আমাকেও পড়াশোনা করতে হয়েছে কিছু টা। প্লিস সাথে থেক গল্প টার। আসলে ছোট করে লেখা গেল না এই ব্যাপার টা।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(01-02-2022, 10:19 PM)nandanadasnandana Wrote: কল্লোল, আমি এখানে ইউনিভার্সাল দিদি হয়ে গেছি। তাই তোমাকেও ভাই বললাম। গল্প টা একটু বড়। অনেক টা উপন্যাস মতন। তবে আমার আপডেট ৬৫০০০ শব্দের হয়। আশা করি, পঁচিশ টা পর্বে পুরো টা নামিয়ে নিতে পারব। সাথে থেক।

UNIVERSAL DIDI !!! clps Smile

Yes we love you Nandu Didi... Big Grin Heart Heart
Like Reply
(01-02-2022, 09:57 PM)ddey333 Wrote: এইধরণের ক্লাসিক গল্পের ব্যাপারে কিছু লেখা বা মন্তব্য ... অসম্ভব আমার মতো একটা বুরবকের পক্ষে ... শুধু লাইক আর রেপু ছাড়া কিছু নেই ...


অনেক অনেক অভিনন্দন তোমাকে নান্দু দিদি , তুমি এখন এই সাইটের বাংলা গল্পের ফোরামে একজন মডারেটর , অর্থাৎ অ্যাডমিন ...
আশা করি ভালো দিন আসবে এবং রৌনকদা , লেখকদা এবং এদের মতো আরো অনেক মাথা খারাপ করা পুরোনো লেখকরা ফিরে আসবেন এখানে এবং লিখবেন আবারো ...   

[image] [image] [image] [image]

তুমি তো এই কথা বলবেই না। কি যেন বুরবক না কি একটা বলবে। খবর্দার বলবে না। আর আমি সবাই কেই বলছি, আমাকে এডমিন না, দিদি হিসাবেই রেখ। ধরে নিও একেবারে দিদির মতই। তোমাদের দুষ্টুমি তেও সাথে আছি, আবার শাসনেও আছি।  Heart Heart Heart Heart
Like Reply
(01-02-2022, 10:22 PM)nandanadasnandana Wrote: আমার একজন পরিচিতা আছেন। তিনি ছেলে ছিলেন। এই গল্প তার জীবন থেকে ধার করা। তার জীবনের লড়াই এর কথা লিখতে ভালো লাগল। অনেক কল্পনা ও আছে। তবে মেডিক্যাল ব্যাপারের বর্ননা করতে গিয়ে আমাকেও পড়াশোনা করতে হয়েছে কিছু টা। প্লিস সাথে থেক গল্প টার। আসলে ছোট করে লেখা গেল না এই ব্যাপার টা।

আমার এই এক বদভ্যাস , অনেক কিছুই আগে থেকেই বোঝার ... ইচ্ছে করে করিনা সত্যি বলছি ,

মাথায় কেউ কোনো ভূত যেন হাতুড়ি মেরে ঢুকিয়ে দেয় ... এর কোনো চিকিৎসা নেই


Sad
Like Reply
অস্বীকার করবো না... দ্বিতীয় পর্বেই একটা হোঁচট খেয়েছিলাম... ভাবি নি গল্পটা এই দিকে ঘুরতে চলেছে বলে... আর হোঁচট খেয়ে দেখলাম বেশ লেগেছে... তবে আঘাত নয়... ভালো... মিথ্যা বলবো না... আমাকে আরো একবার পর্বটা প্রথম থেকে পড়তে হয়েছিল... কি অসাধারণ... আবারও বলতে বাধ্য হচ্ছি... গল্প তো সকলেই বলতে পারে... কিন্তু গল্পকে চোখের সামনে চলচ্ছিত্রের রূপ দিয়ে সাজিয়ে তোলার ক্ষমতা সকলের থাকে না... সেটা পিনুর ছিল... কিন্তু সে তো আমাদের ভুলেই গিয়েছে... আর সেটা চোখে পড়েছে এই সাইটের গুটি কয়েকজনের লেখায়... তার মধ্যে আপনার নাম হয়তো ক্রমসংখ্যায় অনেক আগে রাখতে হবে আমায়... 

লিখতে থাকুন... সাথে আছি অবস্যই...
yourock yourock yourock
Like Reply
(02-02-2022, 12:21 PM)bourses Wrote: অস্বীকার করবো না... দ্বিতীয় পর্বেই একটা হোঁচট খেয়েছিলাম... ভাবি নি গল্পটা এই দিকে ঘুরতে চলেছে বলে... আর হোঁচট খেয়ে দেখলাম বেশ লেগেছে... তবে আঘাত নয়... ভালো... মিথ্যা বলবো না... আমাকে আরো একবার পর্বটা প্রথম থেকে পড়তে হয়েছিল... কি অসাধারণ... আবারও বলতে বাধ্য হচ্ছি... গল্প তো সকলেই বলতে পারে... কিন্তু গল্পকে চোখের সামনে চলচ্ছিত্রের রূপ দিয়ে সাজিয়ে তোলার ক্ষমতা সকলের থাকে না... সেটা পিনুর ছিল... কিন্তু সে তো আমাদের ভুলেই গিয়েছে... আর সেটা চোখে পড়েছে এই সাইটের গুটি কয়েকজনের লেখায়... তার মধ্যে আপনার নাম হয়তো ক্রমসংখ্যায় অনেক আগে রাখতে হবে আমায়... 

লিখতে থাকুন... সাথে আছি অবস্যই...
[image] [image] [image]

Heart Heart Heart
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(01-02-2022, 10:19 PM)nandanadasnandana Wrote: কল্লোল, আমি এখানে ইউনিভার্সাল দিদি হয়ে গেছি। তাই তোমাকেও ভাই বললাম। গল্প টা একটু বড়। অনেক টা উপন্যাস মতন। তবে আমার আপডেট ৬৫০০০ শব্দের হয়। আশা করি, পঁচিশ টা পর্বে পুরো টা নামিয়ে নিতে পারব। সাথে থেক।

অবশ্যই   ভাই  বলবেন,   কারণ  আমি  এখনো তিরিশ ই  পেরোইনি,  আশা করি আমি আপনার থেকে  ছোট।    লিখতে থাকুন    সাাথে  আছি  , দেরি হলেও  সব  আপডেট  পড়বো।  Heart
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ......

মায়ের গলায় অভিমানের সুর থাকত। আর বাপি ও একশবার সরি বলত মা কে। আমরাও তিন ভাই বোনে খুশ। ওদের মেজাজ ঠিক থাকলে আমারাও খুব আনন্দে থাকতাম। আমাদের ও বয়স অনুযায়ী প্যাম্পার করা হত। কিন্তু একটা ব্যাপার মনে দাগ কাটত সেটা হল, এই যে বাপি, নিজের নিয়ে কত গর্ব করে। মা গর্ব করে নিজের ইনভল্ভমেন্ট , বা আমাদের মানুষ করা নিয়ে। ওদিকে রাকা ও বার বার বলে, শালা মর্দ হতে পারছিস না। এই টুকু তেই কাহিল হয়ে পড়লি।সেও নিজের মর্দাংগির প্রত্যক্ষ গর্বে মশগুল। বা মায়ের সামান্য হাত কেটে গেলে বঁটি তে, বাপি আঙ্গুল চেপে ধরে রক্ত বন্ধ করত আর মা বলত,- ছাড়ো তো, মেয়েদের এমন অনেক হয়। অতো ধরলে কি চলে নাকি? মানে সবাই জানে তাদের গরিমা, তাদের ক্ষমতা, তাদের সহ্য শক্তি, তাদের ইমোশন। কিন্তু কই আমার তো কোন দিন ছেলে হওয়া নিয়ে গর্ব বোধ আসে নি? কেন আমার মনে হয়েছে, এই শরীর, এই পোশাক, এই গর্ব আমার না, গর্ব এই ছেলে শরীর টার। তার ভিতরে কি আছে কে আছে, কে মাথা ঘামাচ্ছে?

 
                                                                       পর্ব পাঁচ

কলেজের মেয়েরা আসে, নিজেদের সুন্দর করে। কি সুন্দর লম্বা লম্বা নখ রাখে ওরা। লম্বা চুল। একটা গরিমা যেন চোখে মুখে ফুটে বেরোয়। আমি কেন পারি না, নিজের পুরুষ হবার গরিমা জাহির করতে? বা আমি কেন পারিনা, আমি মেয়ে সেই কথা টা সবাই মুখ ফুটে বলতে? ক্লাস এইট এ থেকেই আমি বুঝে গেছিলাম, আমাদের সমাজ নতুন কোন কিছুই মেনে নিতে পারে না। সেটা নিয়ে উপহাস করে, উক্তি কটুক্তি তে ক্ষতবিক্ষত করে, আর না হলে সরাসরি রিজেক্ট করে। আমি তো আরো ভয়ে থাকি। কারন আমি নিজের চোখে দেখেছি সে দৃশ্য।

আমরা তখন ক্লাস সিক্স এ পড়তাম। ক্লাস ইলেভেনের একটি ছেলে ছিল, নাম ছিল কার্তিক। শুনলাম আমাদের কলেজ ছুটি হয়ে গেছে। বাইরে বেরিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মায়ের। ততক্ষনেই জানলাম, একটি ছেলে আত্মহত্যা করেছে মেয়েদের বাথরুম এ। দুটো হাতের ই শিরা কেটে ফেলেছিল। আমি দাড়িয়েই ছিলাম যখন ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল স্ট্রেচার এ করে। মা আমার চোখ দুটো নিজের হাত দিয়ে আড়াল করে দিয়েছিল। ফাঁক দিয়ে আমি যতটুকু দেখতে পাওয়ার দেখতে পাচ্ছিলাম। কার্তিক বেঁচে ছিল মনে হয় তখনো। দুটো হাত ঝুলে পড়েছিল ওর। ওর ই জামা দিয়ে বাঁধা ছিল কব্জির ওখান টা। কিন্তু চুইয়ে চুইয়ে রক্ত টপাচ্ছিল হাত থেকে কলেজ প্রাঙ্গন এ। বুকের বাম দিকে মোচর দিয়েছিল মারাত্মক।

পরে শুনেছিলাম, কার্তিকের হাব ভাব মেয়েদের মতন ছিল। ওকে সবাই কলেজে ক্ষেপাত। বাড়িতে বকত। টিচার্স রাও ছেড়ে কথা বলত না। পড়াশোনায় ব্রিলিয়ান্ট হওয়া সত্ত্বেও একটা প্রাণের বলি সেদিন হয়েছিল। হয়ত কেউ দায়ী নয়, কিন্তু দায় টা সবার মনের মধ্যে বসে গেছিল। আজকে আমার ওকে খুব আপন মনে হয়। কিন্তু আমার থেকে ও অনেক সাহসী ছিল। নিজের কথা ও রাখতে পেরেছিল সবার সামনে। আমার মধ্যে তো সেই সাহস টুকুও নেই। আমি তো বাপির চোখের দিকে তাকালেও ভুলে যাই আমি কি চাই।

সবাই তারপরে, তার নামে হয়ত অনেক ভালো কথা বলেছিল। হয়ত বুঝেছিল, অতো টা ওকে একা করে দেওয়া ঠিক হয় নি। বা বুঝেছিল, আরেক টু কাছে টেনে নিলে হয়ত অকালে এই প্রাণ টা ঝরে যেত না। কিন্তু একটা তাজা প্রাণ চলে যাবার পরে এই সব ভাবনার তো মানে হয় না তাই না? ওর জন্য আমার চোখে জল আসে। হয়ত ওর বাবা মা ও স্ট্রিক্ট ছিল আমার বাবা মায়ের মতন। হয়ত ওরা ভেবেছিল, মরে গেছে আপদ গেছে। তখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাকে পরের দিন ও কলেজে পাঠায় নি আর। কিন্তু আমার আজকেও জানতে ইচ্ছে করে, কার্তিকের বাবা কি কান্না কাটি করেছিল কার্তিকের জন্য?  
 
আমার কান্না পায় সেই জন্য। নিজের এই ব্যাপার গুলো কে যে কি কস্ট করে দাবিয়ে রাখি আমি ই জানি। খালি ভয় লাগে, যদি আমার বাবা মা জেনে যায় আর ওরাও আমাকে না চায়? আমি কার্তিকের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলাম, কারন আমার জানার ইচ্ছে ছিল, কার্তিকের বাবা মায়ের ভালোবাসা কি কমে গেছিলো? কার্তিকের ভাই বোন ওকে কেমন চোখে দেখত? নিশ্চই খুব উইয়ার্ড ভাবত কার্তিক কে। তাই কার্তিক এই পৃথিবীতে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তখন আরো কান্না পায় আমার।

আমিও বুঝতে পারছি, আমিও ধীরে ধীরে একা হয়ে পড়ছি। মানসিক ভাবে। এমন না যে কেউ আমার সাথে মিশতে চায় না। কিন্তু আমি নিজেকে আলাদা করে নিচ্ছি। আমার কেন জানিনা ভয় লাগছে, যদি কেউ কিছু বুঝে ফেলে আমার ব্যাপারে। তাই এড়িয়ে থাকছি দূরে দূরে থাকছি। বাড়িতেও বিশেষ কথা বলি এমন না। বার বার মনে হচ্ছে মা কিছু বুঝে গেল। বাপি কিছু ধরে ফেলল। সব সময়ে একটা ভয় কাজ করছে মনের মধ্যে আমার। কোন কারনে মা যদি আমাকে দেখছে, তাহলেই ভয় লাগছে। ভয় লাগছে মা যদি আমাকে দূরে ঠেলে দেয় আরো? বাপি কে তো ভাবি ই না। আমার কাছে মা ই সব। মা যদি কোন কারনে আমাকে সরিয়ে দেয়, আমার ও হাল কার্তিকের মতই হবে।

উল্টো দিকে, নিজেকে আর এই ভুল শরীরে নিজেকে আমি মেনে নিতেও পারছি না। আজকে না হোক কালকে, সবাই বুঝবে, আমার এই শরীরের ভিতরে কোন ছেলে নেই, আছে একটা মেয়ে। তখন কি হবে? আমি যতই লোকানোর চেষ্টা করি, ব্যাপার টা বাইরে আসবেই। আমাকে এখনি দেখতে আলাদা লাগে ছেলেদের থেকে। মেয়েদের মতই গোল মুখ। সামান্য লোম ও নেই। ঠোঁটের গঠন ও মেয়েদের মতন। ফুটবল খেলার জন্য যে পেশী তৈরি হয়েছিল, সেগুলো আসতে আসতে আবার নরম হচ্ছে। জানিনা কি হবে। হয়ত আরো খেললে ব্যাপার টা ঠিক ঠাক হবে, কিন্তু খেলতেও ভাল লাগে না, যা ছেলেরা খেলে। কারন ভিতরের নেশা টা বেড়ে যাচ্ছে। নিজেকে মেয়ে হিসাবে দেখার নেশা। ভিতরের কয়েদ খানায় বন্দী থাকা ইচ্ছে গুলো কে বাইরে বের করে ওড়ার নেশা।
ইতিমধ্যে একদিন কি হল, আমাকে রাকা বলল

-     তোর জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে
আমরা সেই তাশী নদীর তিন মাথার মোড়ে মোমো খাচ্ছিলাম। আমি বললাম
-     কি বল?
বলল
-     না এখানে হবে না , আমার বাড়িতে গেলে দেখাব।

অধৈর্য লাগছিল নিজের। কিন্তু কিছু বললাম না। আমি এতো দিনে জেনে গেছি ও কোন খারাপ সারপ্রাইজ আমাকে দেয় না। মনে মনে ফুটছিলাম আমি, কবে শনিবার আসবে। কথা মতো শনিবার দিন ওর বাড়ি যেতে, আন্টি আমাদের খাওয়ালো। ওর বাড়িতে গেলে শনিবারে দুপুরের লাঞ্চ টা ওর বাড়িতেই হয় আমাদের। ভাত, আলু ভাতে, গরম ডাল আর কোন দিন চিকেন থাকে, কোন দিন মাছ থাকে। আমার মন্দ লাগে না। আমি আন্টির কাছে এই খাওয়া টা সময় নিয়ে খাই। খেতে আমার একটু সময় লাগে। ধীরে ধীরে খেতে আমি পছন্দ করি। কিন্তু সেদিনে আমার কোন মন ছিল না। মন ছিল সারপ্রাইজে।

খেয়ে দেয়ে সেই পোড়ো বাড়ির ঘরে যেতেই ও আমাকে একটা প্যাকেট ধরিয়ে দিল আমার হাতে। আমি অবাক হয়ে বললাম
-      কি এটা?
-     খুলেই দেখ।

আমি তাড়াতাড়ি খুলে ফেললাম প্যাকেট টা। দেখলাম, একটা নীল রঙের কোন পুরোন ঘাঘরার মতন পোশাক আর তার সাথে একটা ছোট প্যাকেট। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। যে ইচ্ছে কয়েদ ছিলো , ওকে কোন দিন বলিও নি, সেই রকম একটা ইচ্ছে পুরন করছে আজকে ও আমার। সেই প্যাকেট টা খুলে দেখলাম, কিছু ফলস নেল, একটা ইমিটেশনের হার, দুটো কানের ঝুমকো মতন। অন্যান্য ছেলেরা হয়ত এই গুলো কি জানত ও না। কিন্তু আমার ইন্টারেস্ট ছিল এই সব ব্যাপারে। তাই আমি জানতাম, কোন টা কি গয়না। কোন ড্রেস এর কি নাম। বিশেষ করে মেয়েদের। আমার খুব আনন্দ হল। কিন্তু সমস্যা হল পরতে জানি না আমি। বুকের ভিতর টা ঢিবঢিব করছিল আমার। আমি ড্রেস টা দেখছি, আর রাকা কে দেখছি। আর ভাবছি কি ভাবে ও বুঝল আমার ইচ্ছে। ওকে জিজ্ঞাসা করলাম

-     এগুলো কেন আনলি?

ও তখন নিজের এমপ্লিফায়ার টা রেডি করছিল। ওদিকে তাকিয়েই বলল

-     আমি তোর নাচ দেখছিলাম গত কয়েক শনিবার আর ভাবছিলাম, ইউ ডান্স ব্রিলিয়ান্টলি। কিন্তু কীসের যেন একটা অভাব ছিল। গত দুই তিন সপ্তাহ ভেবেও আমি বের করতে পারিনি। কিন্তু গত শনিবার তুই - বাবুজি ধীরে চলনা গান টায় নাচ ছিলিস, আর তখন আমার মাথায় এল যে, প্রপার ড্রেস না পরলে তো , যে বিট গুলো তুই নিচ্ছিস নাচে, সে গুলো বোঝা যাচ্ছে না।

আমি ওর মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম। মানে আমি যে ভাবতাম ও জাস্ট আমার জন্যেই আমার নাচ দেখছে, ব্যাপার টা সেরকম না। ও খেয়াল ও করেছে আর যেটা দরকার সেটার ব্যবস্থা ও করেছে। আমি মনে তার পর থেকেই ওর উপরে নির্ভরশীল হয়ে পরেছিলাম নিশ্চিত ভাবেই। কত ঝড় গেছে। কিন্তু ও আমার হাত ছাড়ে নি। আর ওর উপরে আমার ভরসা দিনে দিনে বেড়ে গেছে সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
মুশকিল হল, আমি তো কোনদিন ও পরিনি, মেয়েদের কোন পোশাক। কাজেই ওই ঘাগরা টা পরতে সময় লাগল একটু। কিন্তু অর্নামেন্ট গুলো পরে ফেললাম। সমস্যা হল, কানের ঝুমকো পরতে গিয়ে। কারন আমার কানের ফুটো করা ছিল না। সে যাই হোক, জীবনে আবার আমি আনন্দ পেলাম। একটা ছোট আয়নায় দেখলাম নিজেকে। কোন সস্তার লিপস্টিক এনেছিলো রাকা। সেটাই লাগালাম। নিজেকে দেখে নিজেই আপ্লুত হয়ে গেলাম বলাই বাহুল্য। আমার যেন এনার্জির কোন কমতি ছিল না সেদিন। একের পর এক গানে আমি নাচলাম। সবটাই আমার ফোনে রেকর্ড করল রাকা।

হয়ে যাবার পরে আমার তো ড্রেস টা ছাড়তেই ইচ্ছে করছিল না। তাও সন্ধ্যে হয়ে আসছে ভেবে, ছেড়ে নিলাম ড্রেস টা। রাকা ওর একটা রুমাল দিয়ে আমার লিপস্টিক মুছিয়ে দিল। আমি সব সাজ এক এক করে ছেড়ে ফের সুন্দর করে গুছিয়ে ছোট প্যাকেট এ ভরে রেখে দিলাম। ঘাগরা টা কে সুন্দর করে গুছিয়ে রেখে দিলাম প্যাকেট এ। একটা পুরোন ট্রাঙ্ক ছিল, সেখানে রাকা রেখে দিলো দুটো কেই। তারপরে আমরা বেড়িয়ে পরলাম, কলেজ ড্রেস পরে।
সাইকেল টা তে পাম্প ছিল না। দিতে দিতে রাকা কে বললাম,

-     থ্যাঙ্কস
-     কেন?
-     তুই বুঝতে পারছিস না কেন?

আমার বলতেও ওকে কেমন লাগছিল, যে আমি ওই মেয়েদের ড্রেস পরা টা খুব এনজয় করেছি। বা বলা ভালো, ও আমার একটা স্বপ্ন আজকে পূরন করেছে। কিন্তু সেটা বলতে পারছি না। ও কিছু বলল না আমাকে। দুটো চাকা টিপে দেখে বলল,

-     আর পাম্প দিতে হবে না চল।

আমরা হাঁটতে শুরু করলাম তাশীর পাশ দিয়ে। আজকে দারুন খুশী আমি। দারুন খুশী। খুশীর কোন সীমা নেই মনে হচ্ছে। ওকে আমি ই বললাম,

-     তোকে থ্যাঙ্কস দিলাম কারন, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল আমি মেয়েদের ড্রেস পরব। আর তোর জন্য আমি সেটা পরতে পারলাম।

রাকা জানিনা ব্যাপার টা বুঝল কিনা। আমাকে কোন সাড়া দিল না ও। পাশে পাশে হাঁটছিল। কখনো কোন ইটের টুকরো, দূরে ছুড়ে দিচ্ছিল তাশির জলে। আবার চলে আসছিল পাশে। মনে হল ও আমার কথা গুলো শুনতে চাইছে না। একটু অন্য রকম লাগলেও আমি কিছু মনে করলাম না। এই সবের পরেও ও আমাকে ঘেন্না করছে না বা আমাকে উইয়ার্ড ভাবে নি এটাই অনেক। কিছু টা হলেও ওর সাথে থাকলে আমি ফ্রি থাকি। বাকিদের সাথে যে ভয় টা কাজ করে, ওর সাথে থাকলে সেই ভয় টা আমি পাই না। আমি চুপ রইলাম। ওকে আর ঘাঁটালাম না। আমি সাইকেল টা ধরে হাঁটছি। ও এদিক ওদিক করছিল তখন। কখন আমার ডান দিকে চলে আসছে, ইটের খোঁজে। বা কখনো এগিয়ে যাচ্ছে ইটের খোঁজে। কিন্তু অনবরত জলে ইট মেরেই যাচ্ছে ও। হঠাৎ একটা বড় ইট জলে ছুঁড়েই আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

-     শোন, তোর যখন ইচ্ছে করবে, আমাকে ফোন করে দিবি। মানে এই সাজ গোজের ব্যাপারে কথা বলতে ইচ্ছে হলে বা নাচের ব্যাপারে। আর এর বাইরেও কোন ইচ্ছে থাকলে সেই ব্যাপারেও।

আমি বুঝতে পারছিলাম না। একটু আগে যা বুঝলাম ও আমার কথা শুনছিলো ও না। আর এখন কি হল যে একেবারে এই কথা বলছে? আমি ওকে বললাম,

-     একটু আগে তো শুনলিও না আমার কথা। এখন আবার এই কথা বলছিস?
-     না না শুনিনি এমন না। শুনছিলাম। কিন্তু মনের মধ্যে অন্য কথা চলছিল তখন।
-     কি কথা?
-     ধুর বাল, অতো জানতে হবে না তোকে। যদি দরকার পরে সেই কথা বলার তোকে নিশ্চই বলব। এখন তোকে যেটা বললাম সেটা করবি।

রেগে গেল কেন সেটাও বুঝলাম না। ও আমার উপরে রাগ দেখালে আমার রাগ হয়। কিন্তু এবারে ওর উপরে রাগ করলাম না। কেননা, ওর কোন ব্যাপার নেই আমি রেগে গেলাম কি না গেলাম।বলেছিলাম না, আমাকে ও শুধু বন্ধু হিসাবে দেখে মাত্র। লাস্ট এক্সাম এও আমার সাজেশন এ ব্যাটা নাম্বার পেয়েছে ভালই। তবুও আমার উপরে রাগ করল। মানে আমার সাথে কোন স্বার্থের জন্য ও থাকে না। বা আমাকে আমার ইচ্ছে গুলো কে ওর নিজের জন্যেও ও পূরন করে না। নেহাত ভালো বন্ধু তাই ও করে। বা ও এটাও ভাবে নি যে আমাকে ওমনি করলে আমি রেগে যেতে পারি। র‍্যাদার আমি কিন্তু ওর চোখে একটা চিন্তা দেখলাম কথা গুলো বলার সময়ে। ও কিন্তু বলেই চলে,

-     তোর যখন মনে হবে ওই সব কথা বলতে, আমাকে ফোন করবি। রাতের দিকে করিস। আমি মায়ের ফোন টা নিয়ে রেখে দেব। কিন্তু মন গুমরে থাকবি না বুঝলি? আর তোর বাবা মা যেন না বোঝে। বা আমার মা। বা কলেজে কেউ। মনে থাকবে?
আমি তখন ও ওকে দেখছিলাম। ও এতো চিন্তিত কেন ব্যাপার টা নিয়ে সেটা বুঝতে পারছি না আমি। কিন্তু ঠিক আছে। ওকে বললাম
-     সে ঠিক আছে। কিন্তু তোকে আরো কিছু বলার আছে।
-     বল, এই সংক্রান্ত যা কথা, আমাকে বলবি। সমস্যা হলে দুজনে মিলে যুক্তি করব। কিন্তু একা একা কিছু ভাববি না একদম
-     না রে বাবা। একলা ভাবতেই পারি না আমি। সময় কোথায়?
-     আচ্ছা বল কি বলবি?
-     তুই আজকে আমার একটা বহু দিনের সখ মিটিয়েছিস। কিন্তু কি বলত, আমার না মাঝে মাঝে খুব ডিপ্রেসড লাগে।
-     কেন?
-     মনে হয়… মনে হয়……
নিজেকে আটকে নিলাম। বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না আমি। ও আমাকে নক করল আবার
-     কি রে বল কি বলবি?
-     জানিনা । কি ভাবে বলব সেটাও বুঝতে পারছি না। এই যেমন আজকের এই কথাটাই আমি তোকে সাহস করে বলতে পারিনি।
-     কোন কথাটা?
-     এই মেয়েদের ড্রেস পরতে পছন্দ করি, এই ব্যাপার টা।
-     হুম।
-     আমি ভাবতাম কি জানি কি মনে করবি। আমার নাচের ইচ্ছে হয়ত তুই পূর্ন করেছিস, কিন্তু সব ইচ্ছে শুনতে যাবি ই বা কেন?
-     আরে আমাকে বলেই তো দেখতিস। তুই আমাকে বলেছিলি, ইউ উইল নেভার স্টপ কিপিং ট্রাস্ট অন মি।
-     হ্যাঁ বলেছিলাম। আর আমি তোকে ট্রাস্ট করিও। কিন্তু এই কথা গুলো, হয়ত তোকে বোঝাতে পারছি না আমি, নিজেই মানতে পারি না। তাই একটা ভয় লাগে।
-     কীসের ভয় ভাই?
-     ভয় লাগে হয়ত তুই আমাকে ভুল বুঝলি। আর এই ফ্রেন্ডশিপ টা আর রাখলি না।
-     ধুর পাগলা। আমি একটু অন্যরকম রে।

ওই বয়সে কেই বা বোঝে, যে ভালোবাসে তোমাকে তাকেই ভালোবাস। কিছু না বুঝেও যদি এই কানেক্ট টা হয়ে গেলে, কোন ব্যাপার থাকে না। মারামারি হলেও, ভাব হয়ে যায়। আর সত্যি ই ও অন্য রকম। নেহাত আমার জোরাজুরি তে পড়াশোনা টা করে। না হলে ওর কাছে রেজাল্ট কোন ম্যাটার করত বলে আমার কোন দিন মনে হয় নি। ও বলেই চলে,

-     বল এবারে কি বলতে যাচ্ছিলি। আমি তোকে বলে দিচ্ছি, যাই হয়ে যাক, তোর সাথে বন্ধুত্ব আমি কোন দিন নষ্ট করব না রে।

আমি তখন ও ভাবছি। মনে মধ্যে আকুলি বিকুলি করছে, যে ওকে বলে দি। আমি কি এবং কি ওরিয়েন্টেশন এর মানুষ আমি। কিন্তু বলতে পারছি না। আমি জানি ও যা শুনবে আমার থেকে সেটা ওর কাছে প্রথম বার শুনবে। ও বুঝতে হয়ত পারছে না কত খানি মুশকিল একটা মানুষের পক্ষে এটা মেনে নেওয়া যে সে ছেলের শরীরে একটা মেয়ে। এবং সেটা যারা শুনবে, তাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কত কঠিন সেটা আমি জানি। কারন আমার মা কে আমি দেখেছি। আমার মা হয়েও সে মানতে পারছে না, আর ও আমার এই মাস তিনেকের বন্ধু হয়ে কি ভাবে মেনে নেবে?

কিন্তু এই ব্যাপারে আমি ওকে আমার মায়ের থেকে বেশিই নির্ভর করি। জানিনা কেন করি। কিন্তু করি। সেই নির্ভরতাই, বার বার ওকে কথা গুলো বলার জন্য একটা ধ্বনাত্মক ইচ্ছে মনে ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসছে। আমি মনে হয় ভাবনায় হারিয়ে গেছিলাম। চমক ফিরলে দেখলাম, আমরা সেই তিনমাথার মোড়ে এসে হাজির। আজকে পয়সা কম ছিল। ভেজ চাউমিনের অর্ডার দিলাম।

একটা বাড়ির পাঁচিলে দুজনে হেলান দিয়ে খাচ্ছি। আমার সাইকেলের কেরিয়ার এ রাকা বসে আছে আমার দিকে মুখ করে। আর আমি দাঁড়িয়ে আছি রাকা দিকে মুখ করে। ও খেতে খেতে বলল আমাকে,

-     আমি বুঝতে পারছি, তুই হেসিটেট করছিস। কিন্তু তুই বলতে পারিস আমাকে। বা যখন তোর বলতে ইচ্ছে হবে বলিস আমাকে। আমি জোর করছি না তোকে।
-     না বলতে তো ইচ্ছে করছে। কিন্তু একটু সময় দে আমাকে।
-     ওকে।
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে, আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কিছু টা এসেই একটা জায়গা আছে, সেই জায়গা টার নাম হল, দক্ষিনা কালী রোড। সেখান টা একটু ফাঁকা থাকে। আমরা এই জায়গা টা আসার আগে অব্দি চুপ করেই হেঁটে এসেছি। আমি সময় নিচ্ছি ওকে কথা টা বলতে। মনে ভাবনার ঝড় চলছে আমার। বলার পরে ও বন্ধুত্ব ছেড়ে দিলে আমার সব দিক যাবে। কিন্তু আজকে না জেনে ,পরে জানলে তখন ও যাবে বন্ধুত্ব। রিস্ক তো আমাকেই নিতে হবে। সত্যি ই তো। আমি যদি ভয়ে ওর বাড়িতে নাচ না করতাম, বা আজকে যদি ড্রেস না পরতাম, তবে তো এই আনন্দ টাও পেতাম না। কে বলতে পারে,  রাকা আমাদের বন্ধুত্বে কোন আঁচ আসতেই দিল না। বা হয়ত রেগে গেল, কিন্তু বন্ধুত্ব টা রেখে দিল। সব রকম পসিবিলিটি আছে। কিন্তু আমার সব চিন্তা গুলোই ভ্যালিড হবে ,যদি আমি কথা টা ওকে বলতে পারি। ও কোন কথাই বলছে না। ছেলেটা কিন্তু এই ব্যাপারে ম্যাচুওর। আমাকে সময় দিচ্ছে। অনেক ক্ষন সময় নেবার পরে, আমার বাড়ি আর ওই তিন কিমি মতন, তখন ঠিক করে নিলাম ওকে বলেই দি। বলতে গেলাম,

-     বেশ শোন তবে বলি, আমার মনে হয়…
কথার মাঝেই কেউ চেঁচিয়ে উঠল,
-     কিরে শালা, রাকা, নতুন গার্লফ্রেন্ড নাকি তোর?
আমি এদিক ওদিক তকিয়ে দেখলাম দু তিনটে ছেলে ছেলে সামনেই দাঁড়িয়ে। আমি চিনি না। কারন আমাদের কলেজের না। কিন্তু রাকার উত্তর ভেসে এল
-     কেন তোর ও কি ছেলে গার্লফ্রেন্ড নাকি? রনি, ফালতু ঝাঁট জ্বালাস না। আগের বারে মতন কিন্তু এবারেও ক্যালাবো।
-     আচ্ছা? এই ধর তো ওকে। তোকে আমি খেলতে মানা করেছিলাম না?
-     কে তুই বাল! তুই আমাকে মানা করবি, আর আই মাস্ট লিসেন? ওহ গড । ইউ আর কিডিং
-     কিডিং করছি না কি করছি আজকেই বুঝবি।

আমি ঘাবড়ে গেলাম। খুব বাজে ভাবেই ঘাবড়ে গেলাম। ব্যাপার হল, আমি জানি রাকা পালাবে না। কারন ওর মধ্যে এই মারামারির পোকা টা আছে। এই ব্যাপার টা তে ও খুব ম্যানলি ফিল করে। আমার মধ্যে ম্যানলি ব্যাপার টা নেই তাই ভয় ও পাই। তাই খুব ঘাবড়ে গেছি। রাকা কিন্তু খুব ই এগ্রেসিভ। তা সে বন্ধুত্বের ব্যাপারেই হোক বা শত্রুতার ব্যাপারে। যার বন্ধুত্ব এতো মারাত্মক, তার শত্রুতাও তেমন ই ইন্টেন্সিটি মেন্টেন করবে স্বাভাবিক ভাবেই। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমার ই চোখে সামনে রাকা কে ধরতে এলে রাখা খানিক খুব হাত পা ছুঁড়ল। তাতে দু বার নিজেকে ছাড়িয়েও নিল। কিন্তু ততক্ষনে রনি বলে ছেলেটা রাকা কে পিছন থেকে চেপে ধরেছে। তিনটে ছেলের সাথে রাকা আর কি করে যুঝবে? রাকাকে ওরা কাবু করে ফেলল চোখের পলকেই। আমি না তখন প্রায় স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে গেছি। মনে হচ্ছে কোন সিনেমা দেখছি। চমক ভাঙল যখন দেখলাম রাকা কে পিছন থেকে হাত গলিয়ে ঘাড়ের কাছে চেপে ধরে একেবারে কাবু করে ফেলেছে রনি। আর সামনে দাঁড়িয়ে দুটো ছেলের হাতে একটা করে সরু বাশের লাঠি।

এদিকে রনি চেঁচাচ্ছে,
-     কালকে ওর খেলা, তোরা মার ওর পায়ে। কাল যেন খেলতে না পারে।

আমি না কিছু বুঝতে পারছি না তখন ও। কিন্তু এটা বুঝলাম ওরা রাকার পায়ে মারবে। একটা ছেলের খেলা নিয়ে লোকের কীসের এত সমস্যা কে জানে। আমি জানতাম আমি খুব বড় সমস্যার মধ্যে আছি। রাকার এই সমস্যা টা আমার চোখ খুলে দিল বলতে গেলে। ওর পায়ে মারবে কী? পায়ে কিছু হয়ে গেলে ও খেলবে কি করে? মাথা কাজ করল না। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ধীর পায়ের এগিয়ে গেলাম। যারা বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা মনে হয় আমার এগিয়ে যাওয়া টা কে গুরুত্ব দিল না। ওদের মারার আগের মুহুর্তে, রনি কে আমি পাশ থেকে মারলাম একটা পাঞ্চ। খট করে আওয়াজ টা হতেই আমি চোখ বুঝে নিয়েছি। ধপ করে একটা আওয়াজ পেতেই মনে হল,

-     যাহ্‌ , রাকা কে বসিয়ে দিলাম না তো। হাত তো আমার কাঁপছিল তখন।
[+] 11 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
তৃতীয় পর্ব পড়তে পড়তে সেই ছোট বেলার কলেজ-কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম কিছুক্ষনের জন্য... সারাদিন আড্ডা আর বিকেল হলেই পাড়ার মাঠে পায়ে বল নিয়ে দৌড়ানো... না... এখানে একটু ভুল হয়ে গেলো... কলেজে খেলার নেশার সাথে আরো একটা নেশা ততদিনে ধরিয়ে ফেলেছিলাম... প্রেমের... তা সে অন্য গল্প... এখানে ওটা অপ্রাসঙ্গিক... কিন্তু যে ভাবে আপনি ফুটবলের প্রতিটা মুভ সুক্ষ্ম ভাবে বর্ণনা করলেন, সত্যি বলছি... আমি মুগ্ধ... যেন শিব নয়... রাকা নয়... আমি আর আমার বন্ধুরা বল নিয়ে ছুটে চলেছি প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে... অনবদ্য... 


চতুর্থ পর্বে শিবের মানসিক দ্বন্ধ আর ইচ্ছাগুলো যে ভাবে মেলে ধরলেন আমাদের সামনে... আহা... এত ভালো করে বোধহয় একমাত্র কোন সাইকিয়াট্রিস্টই পারতো একজনের মনষ্ক বিশ্লেষন করতে... আমি সত্যি অভিভূত... 
yourock yourock yourock
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
শুরুর অংশটা আবারো পড়লাম ফিরে গিয়ে ,


এরকম গল্পের উপযুক্ত স্থান কিন্তু এই চটি ফোরাম নয় , মনে হলো ...


Namaskar Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
গল্পের পরবর্তী ধাপগুলো এখন ভবিষ্যত... তাই এই বর্তমান পর্ব নিয়ে বলি - সত্যিই খুব খুব সুন্দর পর্ব। শুধু নিজের ভেতরে চলতে থাকা নিজের সাথেই লড়াইটা নাকি, সাথে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব। যারা হয়তো একে অপরকে একটু হলেও বোঝে। একে ওপরের পরোয়া করে, দুই বিপরীত প্রকৃতির মানুষ বলেই হয়তো এই বন্ধন আরও দৃঢ়। আবার নাও হতে পারে...... মনের বা শারীরিক টান বা আকর্ষণ এক জিনিস কিন্তু প্রকৃত বন্ধুত্ব থেকে সেরা বোধহয় আর কিছু হয়না। ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(03-02-2022, 12:54 PM)bourses Wrote: তৃতীয় পর্ব পড়তে পড়তে সেই ছোট বেলার কলেজ-কলেজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলাম কিছুক্ষনের জন্য... সারাদিন আড্ডা আর বিকেল হলেই পাড়ার মাঠে পায়ে বল নিয়ে দৌড়ানো... না... এখানে একটু ভুল হয়ে গেলো... কলেজে খেলার নেশার সাথে আরো একটা নেশা ততদিনে ধরিয়ে ফেলেছিলাম... প্রেমের... তা সে অন্য গল্প... এখানে ওটা অপ্রাসঙ্গিক... কিন্তু যে ভাবে আপনি ফুটবলের প্রতিটা মুভ সুক্ষ্ম ভাবে বর্ণনা করলেন, সত্যি বলছি... আমি মুগ্ধ... যেন শিব নয়... রাকা নয়... আমি আর আমার বন্ধুরা বল নিয়ে ছুটে চলেছি প্রতিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে... অনবদ্য... 


চতুর্থ পর্বে শিবের মানসিক দ্বন্ধ আর ইচ্ছাগুলো যে ভাবে মেলে ধরলেন আমাদের সামনে... আহা... এত ভালো করে বোধহয় একমাত্র কোন সাইকিয়াট্রিস্টই পারতো একজনের মনষ্ক বিশ্লেষন করতে... আমি সত্যি অভিভূত... 
[image] [image]  [image]

এটা আমার স্বভাব, লক্ষ্য ভাবনা ভাবা। লক্ষ্য সম্ভাবনা দেখা। অনেক অনেক ভালবাসা রইল এই রকম মন ভাল করে দেওয়া কমেন্ট এর জন্য।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(03-02-2022, 01:53 PM)ddey333 Wrote: শুরুর অংশটা আবারো পড়লাম ফিরে গিয়ে ,


এরকম গল্পের উপযুক্ত স্থান কিন্তু এই চটি ফোরাম নয় , মনে হলো .

আগের দিনেই বলেছিলাম, বিচিত্রবীর্য্য মহাশয়ের কমেন্ট এ, যে মেইন স্ট্রীম এ লেখার ধক নেই। মনে আনন্দে লিখি। তোমরা ভালো বল, তাই আমার কাছে তোমাদের কমেন্ট অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ন।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(03-02-2022, 01:57 PM)Baban Wrote: গল্পের পরবর্তী ধাপগুলো এখন ভবিষ্যত... তাই এই বর্তমান পর্ব নিয়ে বলি - সত্যিই খুব খুব সুন্দর পর্ব। শুধু নিজের ভেতরে চলতে থাকা নিজের সাথেই লড়াইটা নাকি, সাথে দুই বন্ধুর বন্ধুত্ব। যারা হয়তো একে অপরকে একটু হলেও বোঝে। একে ওপরের পরোয়া করে, দুই বিপরীত প্রকৃতির মানুষ বলেই হয়তো এই বন্ধন আরও দৃঢ়। আবার নাও হতে পারে...... মনের বা শারীরিক টান বা আকর্ষণ এক জিনিস কিন্তু প্রকৃত বন্ধুত্ব থেকে সেরা বোধহয় আর কিছু হয়না। ❤

নাহ বন্ধুত্বের থেকে বড় কিছু নেই। তা সে মা ছেলে হোক, বা বাবা বেটি, অথবা, যে কোন সম্পর্কে, বন্ধু না হতে পারলে, তাকে বুঝতে না পারলে, সম্পর্কের তো মানেই হয় না। আমরা বুঝতেও পারি না, কত মানুষ বন্ধু হয়ে আমাদের কত ভালো করে দিয়ে যায়। যখন বুঝি, তখন দেরী হয়ে যায়। তোমরা সাথে থেক এই গল্পের। ডিডে৩৩৩ বাবুর,  কথার উত্তর টা এখানে দি, কিছু শারীরিক থাকে বলে জায়গা একটু উদার পাঠক দের কাছেই এই গল্প পেশ করতে পেরেছি।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
গল্প টা ভবিষ্যতে কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে  কিছুই  বুঝতে পারছি না। এক একটা আপডেট  নতুন নতুন  চমক সৃষ্টি করছে।   তবে  রাকার মতো বন্ধু মেলা মুশকিল, অনেক না বলা কথাও  খুব সহজেই বুঝে ফেলে। লিখতে থাকুন  Namaskar
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
Like Reply
আমি না কিছু বুঝতে পারছি না তখন ও। কিন্তু এটা বুঝলাম ওরা রাকার পায়ে মারবে। একটা ছেলের খেলা নিয়ে লোকের কীসের এত সমস্যা কে জানে। আমি জানতাম আমি খুব বড় সমস্যার মধ্যে আছি। রাকার এই সমস্যা টা আমার চোখ খুলে দিল বলতে গেলে। ওর পায়ে মারবে কী? পায়ে কিছু হয়ে গেলে ও খেলবে কি করে? মাথা কাজ করল না। আমি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ধীর পায়ের এগিয়ে গেলাম। যারা বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ওরা মনে হয় আমার এগিয়ে যাওয়া টা কে গুরুত্ব দিল না। ওদের মারার আগের মুহুর্তে, রনি কে আমি পাশ থেকে মারলাম একটা পাঞ্চ। খট করে আওয়াজ টা হতেই আমি চোখ বুঝে নিয়েছি। ধপ করে একটা আওয়াজ পেতেই মনে হল,

-     যাহ্‌ , রাকা কে বসিয়ে দিলাম না তো। হাত তো আমার কাঁপছিল তখন।
 
                                                           পর্ব ছয়

কনফার্ম হতে চোখ খুললাম। দেখলাম। রনি পরে আছে। আর রাকা ততক্ষনে সামনের একজনের কাছ থেকে একটা বাঁশ কেড়ে নিয়ে ওদের পিছনে তাড়া করেছে। আর আমি পরে থাকা রনির পাশে দাঁড়িয়ে। ভাবচি এ যদি উঠে আবার আমাকে মারতে আসে তাহলেই হয়ে গেল। জীবনে মারামারি না করা আমি, ছেলের শরীরে মেয়ে আমি, আজকে একটা ছেলেকে মেরে শুইয়ে দিলাম? তাও লেট হয়ে গেছে খুব আজকে। জানিনা বাড়িতে কি বকা নাচছে আমার কপালে। মাথায় শত চিন্তা আমার। তার পরে সামনে পরে আছে রনি বলে ছেলেটা। ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপছে তখন। রাকা কোথায় চলে গেল কে জানে। আমি সাড়া না দিয়ে ব্যাগ টা কাঁধে নিয়ে সাইকেল টা চেপে, যেদিকে রাকা দৌড়েছিল, সেদিকে এগিয়ে গেলাম। রনি পরে রইল পিছনে।

কিছু দূর গিয়েই দেখি রাখা হাতের বাঁশ টা নিয়ে আসছে দৌড়ে আগের জায়গায়। আমাকে দেখেই কেরিয়ার এ চেপে পড়ল। আমি যতটা দ্রুত চালানো যায় চালিয়ে বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে এসে কিছু তা বুকে বল পেলাম আমি। নেমে দাঁড়াতেই দেখলাম রাকা আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। ওকে বললাম,

-     এখানে কোন কথা বললে মা শুনে নেবে। দাঁড়িয়ে আছে ব্যালকনি তে। তুই সাইকেল টা নিয়ে চলে যা। কালকে চলে আসিস দশটা নাগাদ। আমি রাতে ফোন করব।
-     আচ্ছা

আচ্ছা বলে রাকা সাইকেল টা ঘুরিয়ে সামনের দিকে প্যাডেল মারতেই বললাম,

-      একটা টেক্সট করে দিস, বাড়িতে পৌঁছে এখন। চিন্তায় থাকব। বাড়ির পিছন দিক দিয়ে ঘুরে যা। ওই রাস্তা টা অনেকেই চেনে না।

রাকা কোন কথা না বলে, সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে গেল। আমি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম। মা দোতলার ব্যাল্কনি তে দাঁড়িয়ে। হয়ত আমার আসার পথ দেখছিল মা। আমি হাত নাড়তেই মা ঢুকে গেল ঘরে।  

বাড়িতে এসে বকাঝকা খাই নি। এসে হাত পা ধুয়ে, খেয়ে নিয়ে পড়তে বসে পড়লাম। পাশে নিলাম ফোন টা। মন পরে আছে রাকার দিকে। প্রায় আধ ঘন্টা পরে আওয়াজ হতেই খুলে দেখলাম লেখা আছে – রিচড। আমার মন পরে আছে কখন রাকা কে রাতে কল করব। পড়ে নিলাম, ঝড়ঝড় করে। মা এখনো আমার পড়া ধরে। আমি আটটায় পড়তে বসে, সাড়ে নটায় পড়া দিয়ে উঠে পরলাম। রাতে অঙ্ক করব। গান চালিয়ে অঙ্ক করতে আমার দারুন লাগে। তাই দোতলার একটা ছোট ঘর আমাকে মা দিয়ে দিয়েছে। আমি শুই ও এখানেই। বছর খানেক আগেও আমি মায়ের কাছে শুয়েছি। কিন্তু এখন আলাদা শুই। আমি বেড়িয়ে এলাম। বাপি দেখলাম বাইরে টিভি দেখছে। আমার বোন পড়ছে, বাপির কাছে। পড়ছে না বললেই চলে।  বাপিও টিভি দেখছে, আর বোন ও তাই। আর আমার ছোট ভাই আমি আসার আগেই পড়ে উঠে পরেছে।  মা রান্না করছে। ইচ্ছে করছে মায়ের কাছে যাই। মা কে হেল্প করি। কিন্তু গেলেই মা বকবে। থাক মুড ভালো আছে মায়ের। মা কে এখন এই সব বলে মূড খারাপ করে দেবার দরকার নেই।

রাতে খেয়ে দেয়ে কল করলাম রাকা কে। কিছুক্ষন রিং হবার পরে ধরল ও। ফিসফিস করে বলল আমাকে
-     দাঁড়া, একটু।
মিনিট খানেক চুপ থাকলাম আমি। তারপরেই ওদিকে থেকে স্বাভাবিক গলায় বলল,
-     হ্যাঁ বল।

আমি আমার দরজার খিল লাগিয়ে দিয়েছি। এমনি তে মানা আছে খিল লাগান ভিতর থেকে। কিন্তু যেহেতু দোতলায় আমি একলা শুই তাই সাহস করে দিয়ে দিলাম। মা যদি জানতে পারে, আমাকে বকাঝকা তো করবেই , আমার একলা শোবার ও বারো টা বাজতে পারে। কিন্তু আমার কথা আছে রাকার সাথে। আজকে বলতে গিয়েও বলা হল না অনেক কথা। আমি খিল দেওয়া টা নিশ্চিত দেখে নিয়ে বললাম,

-     আমার টেনশন হচ্ছিল তুই না পৌঁছানো অব্দি।
-     আরে না না । বেকার ভাবছিলি তুই    - এটাই ওর স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গী। জাস্ট উড়িয়ে দেয়।

বিপদের আঁচ ও করে না। আর আসলে তোয়াক্কা করে না। সেটা, আজকের সন্ধ্যের মতন বিপদ হলেও না, আর পরীক্ষার খাতা হলেও না। ফলাফল নিয়ে ওর কোন টেনশন নেই। তবে ও বলতে থাকল তারপরেও,

-     কিন্তু ভাই তোর পাঞ্চ টা সলিড ছিল। কি করে পারলি ভাই? নাহ, তুই আমাকে প্রতিদিন সারপ্রাইজ দিস।

শুনে বেশ ভালো লাগল। আমার ভালো লেগেছিল, কারন ওকে আমি হেল্প করতে পারলাম। ব্যাপার টা বোঝাতে পারব না ঠিক। আমি যে মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, আর যে অবস্থা থেকে ও আমাকে তুলে এনেছে, তাতে ওর জন্য ওই টুকু করতে পেরে আমার নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছিল। আর এটা সত্যি আমার মনে তখন চলছিল। ওর এই কথাটা সত্যি আমার কাছে অনেক বড়। ও বলেই চলেছে তখন

-     কালকে আমার ম্যাচ আছে। আর কেমন বেদো ভাব?  আমার পায়ে মারতে আসছিল। মেরে দিলে চাপ ছিল আমার। পাঁচশ টাকা অলরেডি নিয়ে নিয়েছি। খেলার পরে আরো পাঁচশ দেবে বুঝলি?

আসলে আমিও সেই জন্যেই রেগে গেছিলাম। ছেলেটা ভাল খেলে, আর সেই খেলার সব থেকে দামী জিনিস টা কে আক্রমন করায় আমিও রেগে গেছিলাম। রাকার ফুটবলের মতন মুগ্ধকর ব্যাপার আর নেই। কেন যে ও সিরিয়াসলি নেয় না ফুটবল টা কে জানে? ওকে বললাম,

-     ও তুই খেপ ও খেলছিস? খেলিস না বাইরে। কোথায় লেগে যাবে। ইনজিওর হয়ে যাবি।
-     হলে হব। আমি আর কোথায় ইন্ডিয়া খেলব? আমার দৌড় এই রুদ্রপুর বুঝলি?
-     কি করে জানলি? হতেও তো পারে তুই আরো দূরে খেলতে গেলি?
-     ছাড় বালের কথা!

এই টা শুনলে আমার মাথা খুব গরম হয়। মনে হয় আমাকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু কিছু বললাম না ওকে। ওকে গম্ভীর হয়ে বললাম,

-     তোর কাছে সব ই বাল।
-     আরে রাগিস না ভাই। তবে আজকে তুই আমাকে বাঁচিয়েছিস। তোর হক আছে।
-     বাবাহ, একটু আগেই তো বলছিলি, বেকার ভাবছিলাম আমি
-     না না পরে ভেবে দেখলাম, একদম ঠিক সময়েই দিয়েছিলি পাঞ্চ টা। ওকে তো আমি পরে দেখে নোব তুই দেখিস।
-     না না পরে এই সব আর বাড়াস না বুঝলি।
-     ছাড় তুই এই সব কথা, তখন বলতে গেলি একটা কথা আমাকে, আর ওই তিনটে বাল এসে ঝামেলা করল, আর আমার শোনা হল না । বল এবারে।

বুকের ভিতরে আবার আমার ধুকপুকুনি শুরু হল। তখন মন তৈরি করে নিয়েছিলাম আমি। মেনে নিয়েছিলাম, এটা শোনার পরে ও আমাদের বন্ধুত্ব মানতে নাও পারে। আর মানলে কেন মানবে, তার পিছনে অনেক যুক্তিও সেট করে নিয়েছিলাম আমি। কিন্তু এখন আবার সেই ভয় টা ফিরে এলো। বন্ধুদের মধ্যে অনেক ঘটনা ঘটে, যা বন্ধুত্ব কে মজবুত করে। আজকেও একটা ঘটনা ঘটেছে, আর আমার বিশ্বাস এতে আমাদের বন্ধুত্ব, শক্ত হয়েছে কিছু টা হলেও। তাই বলতে ইচ্ছে করছে ওকে আমার মনের কথা গুলো। ওদিক থেকে প্রশ্ন ধেয়ে এল

-     কি রে বল। আবার দেরী করছিস কেন? আরে বল। ভাবিস না অতো আর
বলেই ফেলি। ফোনে আছে তো ও। তখন সামনে সামনে বলতে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল আমার। এখন বলেই দি। বললাম,

-     হুম বলছি। আজকে যখন তুই আমাকে ওই ড্রেস টা দিলি, আমার মনে আনন্দের সীমা পরিসীমা ছিল না। বুঝতে পারছিলাম না তোকে কি ভাবে আমি থ্যাঙ্কস জানাবো। তুই ওই ড্রেস টা দিয়ে, আমাকে একেবারে মেল্ট করে দিয়েছিস। তোকে বলে বোঝাতে পারব না আমি, যেন মনে হচ্ছিল, অনেক আনফুলফিলমেন্ট মনের ভিতরে সেটা একটু ফিল্ড আপ হল।

ওদিকে রাকা চুপ। বুঝতে পারছি না, যে ও বুঝছে কিনা ব্যাপার টা।আমি চুপ করে গেলাম একটু। ভাবলাম ওকে জিজ্ঞাসা করি যে ও কথা বলছে না কেন? পরেই ভাবলাম যদি বলে দেয় , ভাল লাগছে না তখন আর আমার বলাই হবে না। ও চুপ ছিল। কিন্তু আমি থামলাম না। বলতে থাকলাম

-     এমন একটা আনফুলফিলমেন্ট, যে তোকে বোঝাতে পারছি না। আমার না ছেলেদের মতন থাকতেই ভাল লাগে না। আমি ফিল করি, আমার ভিতরে যে আছে সে ছেলে নয় , সে মেয়ে। তুই বুঝতে পারছিস? মানে ধর, এই যে আমি ফুটবল খেলতাম, কোন কালেই আমার সেটা ভালো লাগে নি। আবার, নাচ করতে আমার ভালো লাগে।
 আবার যেমন ধর, আমি যে গীটার শিখি, সেটা কোন দিন আমার ভালো লাগে নি। বরং আমি স্প্যানিশ এর বদলে হাওয়াইয়ান গীটার শিখতে বেশী আগ্রহী ছিলাম, আবার ধর আমার মেয়েদের মতন ড্রেস পরতে, বা ওদের মতন সাজতে ইচ্ছে করে। এই যে যেমন তুই, মারামারি করিস, ঝগড়া হলে এগিয়ে যাস, এটা তোর ভালো লাগে, কিন্তু আমার ভাল লাগে না। মানে আমি মনে করি , আমি একটা মেয়ে , কিন্তু আছি ছেলেদের শরীরে। তাই যখন তুই আমাকে দিলি ড্রেস টা , খুব খুব আনন্দ হয়েছিল।  কি রে বুঝলি? সাড়া দিচ্ছিস না কেন? কি রে?

ওদিক থেকে উত্তর আসছিল না কোন। একটা শ্বাস প্রশ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছিলাম মাত্র। আমি খুব টেনশন এ ছিলাম। কি জানি? কি বুঝল ও। বা আদৌ বুঝল কি না। বা বুঝল কিন্তু আমাকে উইয়ার্ড ভাবল। বা ঘেন্না করল। সবাই তাই করবে। কারন আমার কার্তিকের কথা মাথায় ঘোরে। তখন বুঝিনি, কিন্তু এখন বুঝেছি ওর একা হয়ে যাবার কারন। সেও হয়ত কোন রাকা কে বলেছিল মনে কথা। সে বোঝেনি। কার্তিক চেস্টা করেনি এমন না। কিন্তু হয়ত সে চেস্টা বিফলে গেছিল। আমার প্রচণ্ড ভয় লাগল এবারে। রাকা চুপ করে আছে একেবারে। মনে হল, আমি মনে হয় এবারে শেষ। এবার রাকা কাউকে বলে দিলে ব্যাপার টা চারদিকে ছড়িয়ে পরবে দাবানলের মতন। আমি আর একবার বললাম

-     কি রে? শুনতে পাচ্ছিস?

উত্তর এলো না। আমি ভয়ে কেটে দিলাম ফোন টা। মনের মধ্যে কি যে ভয় বোঝাতে পারব না। রাকার পক্ষে আমার ব্যাপার টা মেনে নেওয়া সম্ভব হয় নি, সেটা আমি বুঝে গেছি। কিন্তু ভয় টা চেপে ধরল যখন মনে হল, ও কাল থেকে আর আমার সাথে মিশবে না। আমি জানি আমাদের সবার থেকে ওর চিন্তা ভাবনা আলাদা। বা ও হয়ত চিন্তাই করে না। ওর কাছে ওর মনের কথাই সব। জানিনা কি হবে কালকে। শুয়ে পরলাম আমি। কেমন একটা শীত শীত করছে। খুব ভয় পেলে শীত করে কি? কি জানি।

ফোন বেজে উঠল কানের পাশেই। রাকা করেছে ফোন টা। ঘুমিয়ে তো যাই নি। হারিয়ে গেছিলাম চিন্তায়। সময় দেখলাম প্রায় একটা। তাড়াতাড়ি ধরে নিলাম ফোন টা। বললাম

-     কি হল, ফোন করলি আবার?

ওদিক থেকে খেঁকিয়ে উঠল আমার উপরে ,

-     ফোন টা কেটে দিলি কেন? যাক ভালই হল কেটে দিয়েছিলি, আমি একটু অন্য চিন্তায় চলে গেছিলাম।
-     তুই আবার চিন্তা ও করিস? আর তুই সাড়া দিচ্ছিলি না, কি করব আমি। ভাবলাম তুই পছন্দ করছিস না।
-     গাঁড় পাকামো করিস না তো। এবারে বল।
-     না আবার কি বলব? বললাম তো কত কথা। তুই না শুনলে আমি কি করব। আর বলব না
-     আরে সেগুলো আমি শুনেছি। বেশী রাগ মারাস না। শোন না, তুই না এগুলো আর কাউকে বলবি না বুঝলি?

আমি ভাবছি তোকেই কোন দিন বলব কিনা আর তার নেই ঠিক, আবার অন্য কাউকে? কিন্তু বললাম,

-     কেন বললে কি হবে?
-     কি হবে মানে? তুই কি কাউকে বলেছিস আমি ছাড়া?
-     আরে না না। তোকে বলতেই আমার ঘাম ছুটে গেছে।
-     ও, হ্যাঁ কাউকেই বলিস না। কেউ বুঝবে না, তোকে রাগাবে।
-     হুম। বলব না ।
-     আচ্ছা আজকে রাখি ,কালকে আমার একটা থেকে খেলা আছে। ঘুমোতে হবে। তুই বরং কালকে কলেজের পরে, আমাদের খেলার মাঠের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকিস। আমার তিনটের মধ্যে খেলা হয়ে যাবে। তারপরে আমি ওখানে চলে আসব।
-     কেন?
-     কারন আছে, একটা যায়গায় নিয়ে যাবো কালকে তোকে।
-     বাড়িতে বলে যাবো না?
-     দরকার নেই। এখন রাখলাম। কালকে অপেক্ষা করিস, বাড়ি চলে যাস না কলেজ থেকে, বুঝলি?
-     আচ্ছা ঠিক আছে।

ফোন টা রেখে মন টা ভালো হয়ে গেল। যাক ও বন্ধুত্ব ত্যাগ করে নি। আমি আমার তরফ থেকে কথা গুলো বলতে পেরেই খুশী হয়ে গেছিলাম। আর তো কিছু চাই নি। ও বরং কালকে একটা জায়গায় আমাকে নিয়ে যাবে বলল। যদিও ওর দেখানো বা চিনিয়ে দেওয়া জায়গা গুলো, সব কটা দারুন। সারা দিন এখানে সেখান ঘুরে বেড়ায়। ও মনে হয় পুরো রুদ্রপুর টাই চেনে। ঘুমোতে সময় নিলাম না আমি।

পরের দিন কলেজ ছুটির পরে আমি আমাদের মাঠে গেছিলাম। মা কে বলেই এসেছিলাম। মাঠে যাবো। মা মানা করেনি আমাকে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম মাঠের পিছন দিকে সাইকেল টা নিয়ে। পিছনেই তাশি নদী। আমরা কিন্তু এই রাস্তা টা আগে কোন দিন নি ই নি। পিছনে রাকার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম আর নদীর দিকে চেয়েছিলাম। বর্ষা কাল ছাড়া তাশি কোন দিন ই, হাঁটুর বেশী জল নিয়ে চলে না। মাঝে মাঝেই ছোট বড় আকারের পাথরের টুকরো। পুরো নদীর জল, তিন চার ভাগ হয়ে বয়ে চলেছে। ওই দিকে ছোট ছোট পাহাড়ের সমাহার। আর এদিকে রুদ্রপুর। জমজমাট একটা শহর। শহরের দিকে নদীর ধার বরাবর ছোট বড় নানা গাছের সারি। কোন বাধ নেই। তবে নদী কোন দিন আমাদের রুদ্রপুর কে ডোবায় ও নি। হয়ত একটু জল বাড়ল, কিন্তু ঘন্টা আট দশের মধ্যে জল নেমেও যায় শহর থেকে।

তখন ও রোদ। পাথরের ছায়া নদীর জলে পরে আসতে আসতে বড় হচ্ছে, সূর্য ঢলে পয়রার সাথে সাথে। ডান দিকে নদীর স্রোত বরাবর গেলে রুদ্রপুরের জঙ্গল। আজকে ভালো লাগছে। তাকিয়ে আছি সামনের দিকে। এক সময়ে রাকা এল। এসেই বলল চল চল , দেরী করা যাবে না বিশেষ। আমি দেখলাম, প্লেয়িং কিট ব্যাগ নেই ওর সাথে। মানে কলেজের বাঙ্কারে রেখে দিয়ে এসেছে। কলেজের ড্রেস টা পরে আছে। ওকে দেখেই বললাম,

-     কি রে কেমন খেলা হল আজ।
-     হল মোটামুটি।
-     ও। কেন ভালো খেলিস নি?
ও ততক্ষনে সিটে চেপে পরেছে সাইকেলের। আর আমাকে ইশারায় সামনে বসতে বলল। আমি সামনের রডে চেপে বসতেই বলল
-     হ্যাঁ খেললাম। ভালই খেলেছি।
-     জিতেছিস তো?
-     হ্যাঁ।
-     তুই গোল করালি?
-     হ্যাঁ একটা করালাম , একটা দিয়েওছি।
-     ওয়াও। জানতাম রে। ইউ মাস্ট ক্যারি ইওর প্রফেশন অন ফুটবল।
-     তুই ও ব্যাপক খেলিস, তুই কি হতে চাস?

আমি তো জানি আমার দৌড় কত টা। আমি জানিও না, আর বছর চার পরে আমার শারীরিক অবস্থা কেমন হবে। কারন আমি পড়াশোনা করে যত টা বুঝেছি, হয়ত আর কিছু দিনের মধ্যেই আমার শারীরিক পরিবর্তন আসবে, এডোলেশনের সময়েই, আমাকে আলাদা করে আইডেন্টিফাই করা যাবে। আমি যে ছেলেদের মতন নই, সেটা অনেকেই বুঝে যাবে। আমি তাই বললাম

-     আমি টিচার হতে চাই।
ও খানিক চুপ থাকল। জোরে জোরে প্যাডেল করছে সাইকেল। আমরা এখন যেখান টা যাচ্ছি, সেখান টা চড়াই একটু, হাঁপাচ্ছে ও বেশ। ওই ভাবেই হাঁপাতে হাঁপাতে বলল আমাকে
-     ধুর তুই ফার্স্ট হোস। তোর মতন স্টুডেন্ট রা, ডক্টর বা ইঞ্জিনিয়ার হয়।
আমার ও ইচ্ছে ছিল না এমন না। কিন্তু আমি এটাও বুঝতে পারি না আমি কত খানি পড়াশোনা করতে পারব। বা ওই রকম একটা প্রাইম টাইম এ আমি কেমন থাকব সেটাও একটা প্রশ্ন চিহ্ন। তাই অনেক ভেবেই ঠিক করেছিলাম, টিচার হলে সব দিক ঠিক ঠাক থাকবে। ওকে বললাম
-     সবাই যা হবে, আমাকেও কি তাই হতে হবে? আবার ধর ওই সব হতে গেলে, আমাকে রুদ্রপুর ছেড়ে যেতে হবে। আমি সেটা চাই না।
-     হ্যাঁ সেটা ঠিক বলেছিস। আমার ও ভালো লাগে না এই জায়গা ছেড়ে।
-     হুম।

ততক্ষনে ও একটা জায়গায় এনে দাঁড় করালো সাইকেল টা। একটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গা। আমি জানতাম ও না, আমাদের রুদ্রপুরে এতো সুন্দর ও একটা জায়গা আছে বলে। আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা প্রকান্ড সবুজ মাঠের মাঝে । আর এখানে দাঁড়িয়ে সামনে দিকে তাকিয়ে  মনে হচ্ছে, তাশি যেন নিজের বপু বাড়িয়ে সামনের আকাশ কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। বলছে যেন, দেখ আমিও তোমার মতম বিশাল আর মুক্ত হতে জানি। নদীর মাঝে ছড়িয়ে থাকা পাথর গুলো, যেন আরো বড় জায়গা পেয়ে খেলায় মত্ত একে অপরের সাথে। ওই দিকের পাহাড় মনে হচ্ছে ঝুঁকে চুমু খাচ্ছে তাশি কে। আর এদিকে, বিশাল সবুজ প্রান্তর। ওই প্রান্তরের শেষে রুদ্রপুরের জঙ্গল যেন সহসা রঙ বদলে কালো হয়ে গেছে, আর বিশাল বৃক্ষ গুলো , প্রকান্ড হাতির শুঁড়ের মতন দুলে দুলে ডাকছে আমাকে- আয় আয়।

আমি অভিভুত হয়ে পরেছিলাম। আমি নেমে পরেছিলাম, সাইকেল থেকে। ধীর পায়ে এগোচ্ছিলাম নদীর দিকে। পিছনে রাকা। এবারে উচ্ছস্বিত হয়ে পরলাম আমি। নিজেই নেচে নিলাম একটু। এতো সুন্দর জায়গা হয় আমি জানতাম না। রাকার দিকে তাকিয়ে বললাম,

-     তোকে কত আর থ্যাঙ্কস দি ই বলতো?
-     তোর বালের থ্যাঙ্কস শুনতে আমি তোকে এখানে আনিনি, বুঝলি?

মাথাটা আবার গরম হল। আমার থ্যাঙ্কস এর ও কোন গুরুত্ব নেই ওর কাছে। আর তারপরে স্ল্যাং। নেহাত বন্ধু তাই। কিন্তু এই জায়গা টা দেখার পরে, মাথার গরম টা দেখালাম না বা প্রকাশ করলাম না। রেগেই বললাম,

-     কেন আনলি?
-     হ্যাঁ সেটাই বলব। চল ওখানে বসি।

বলে একেবারে নদীর ধারে এলাম আমরা। সেখানে নদীর জল আর নদীর পার মিশে গেছে একে অপরের সাথে। মনে হচ্ছে নদীর পার, নদী কে সম্মান দেখিয়ে ঝুঁকেছে। আর জল নদিপারের আদর খেতে ঝেইপ্যে উঠে এসেছে সেখানে। একটা প্রায় চৌকোনা বোল্ডার এ আমরা বসলাম। সাইকেল টা স্ট্যান্ড দেওয়া পিছনে। আমরা পাশা পাশি বসে। বসে কিছুক্ষন পরে, আমার দিকে ফিরে বলল,

-     এই জায়গা টা তোকে দেখালাম কারন, যখন যখন তোর মনে হবে, মানে কালকের বলা কথা গুলোর কন্টেক্সট এ বলছি আরকি, তুই আমাকে বলবি। তোর যেমন ইচ্ছে হবে, যা করতে ইচ্ছে হবে, আমাকে বলবি। এখানে এসে আমরা সেই গুলো নিয়ে ডিসকাস করব। কিন্তু তুই কোন দিন ও এই কথা কাউকে বলবি না আমাকে ছাড়া। বুঝলি?

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। কালকের ভয় টা ধারে কাছে নেই আমার। মনে হল খেলার মাঠে বলা কথা গুলো আমাকে সারা জীবন রাখতেই হবে। ওকে বিশ্বাস না করা টা অন্যায়। আমার বলা কথা টা ও আমার থেকেও বেশী মনে নিয়ে নিয়েছে। কিন্তু ওকে বললাম

-     তুই এই জন্য আমাকে নিয়ে এলি?
-     হ্যাঁ। র‍্যাদার তুই একটা স্পেস পাবি এখানে। কালকে বলছিলি, তুই কয়েদ খানায় আছিস। এখানে এসে একটু ফ্রি হয়ে বাঁচবি। তোর যেমন করে কথা বলতে ইচ্ছে করবে, যা কথা বলতে ইচ্ছে করবে আমাকে বলবি। পোকা গুলো কে মাথায় চড়তে দিস না। এখানে এসে বের করে দিবি। ওই পোকা গুলো ভাল না।
-     তুই কি ভাবে জানলি এতো কিছু।
-     জানি আমি। কি ভাবে জানি তোকে অতো বলতে পারব না।

শেষের কথা টা আমার কানেও ঢুকল না। মিছেই ওর স্ল্যাং এ আমি রেগে যাই। ফালতু রাগ করি ও কত কথায় আমার পাত্তা দেয় না বলে। কিন্তু আজকে বুঝলাম, আমাকে ও অনেক বেশী গুরুত্ব দেয়। হয়ত আমার বাবা মা আমাকে যা গুরুত্ব দেয়, তার থেকে অনেক বেশী দেয়। আমি কোন কথা বললাম না। নিজের ভিতরের মেয়ে টা জেগে উঠল। মনে হল, একটু কাছে ঘেঁসে বসলে কেমন হয়। কিন্তু মনে হল, না থাক। আমার ভালো লাগল বলে রাকার ও ভালো লাগবে এমন কিছু না

মনের মধ্যের অনেক কিন্তুর অবসান ঘটিয়ে দিয়েছে রাকা। আমার ভিতরে পাখী গুল কিচির মিচির করলেই, রাকা কে ফোন করি। অবশ্যই ওর খেলা আর পড়ার সময় বাদ দিয়ে। মাঝে মাঝে ওর বাড়িতে গিয়ে নাচি, আবার মাঝে মাঝে চলে যাই তাশির ধারে। সময় টা ভালই কাটছিল। কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না। কিন্তু সমস্যা আমার হচ্ছিল শারীরিক ভাবে। এইট এর ফাইনালের এর সময়েই আমি বুঝতে পারছিলাম, আমার মধ্যে মেয়ে সুলভ ব্যাপার, যেগুলো বাইরে প্রকাশ পেলে সর্বনাশ হয়ে যাবে, সেই গুলো আসতে আসতে সামনে আসছে।

প্রথম ছিল মুখ গালে কোন লোম না আসা। অনেকের ই আসে না ওই বয়সেও। কিন্তু আমার যেন একেবারে প্লেন। যেন মনে হতো কোন শিশুর মুখ। আমি সেটা বুঝতে পারতাম। লম্বা হয়ে গেছিলাম অনেক টা, কিন্তু হাতের আঙ্গুল এ কোন ছেলেদের মতন ব্যাপার ছিল না, বরং গোল গোল লম্বা হয়ে গেছিল। আমার গীটার বাজানোর জন্য, হাতের তলা দিকের থেকে উপর দিক টা বেশী নরম ছিল। পাছা অল্প ভারি হচ্ছিল। বুকের কিছু টের পাচ্ছিলাম না কিন্তু , আরেক টু ছোট বয়সে ছেলেদের মতন যে খাঁজ টা ছিল আমার সেটা অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল আর একটা সফট ভাব চলে এসেছিল। এই সব গুলোই চট করে চোখে পরে না , কিন্তু ভিতরের বদল, আমি টের পাচ্ছিলাম ভালো মতন।

সব থেকে বড় কথা, আমার মানসিকতা মেয়েদের মতন হয়ে যাচ্ছিল। আমি কারোর সাথে কথা বলতাম না অন্য ব্যাপার, কিন্তু, কথা বার্তা বলতে গেলে মেয়েদের সাথে বেশী কম্ফর্টেবল ছিলাম ছেলেদের থেকে। রাকার সাথে সারাক্ষণ থাকতাম তাই ওর কথা আলাদা। কিন্তু ওর সাথেও অনেক ব্যাপারে সাছন্দ্য ছিলাম না। যেমন ওর হুড়ুম করে গায়ে ঝাঁপিয়ে পরার ব্যাপার টা তে খুব অস্বস্তি হতো। তারপরে মাঝে মাঝেই ফুটবল খেলার সময়ে, জামা বদলে জার্সি পরার মাঝখানে অস্বস্তি হতো। জামা খুলে গেঞ্জি পরে, জার্সি চেঞ্জ করার সময়ে খুব খুব বাজে লাগত। বললাম না শারীরিক থেকেও সমস্যা টা আমার মনে বেশী ছিল।বাড়িতেও আমি স্নান করতে গেলে একেবারে জামা নিয়ে যেতাম। মা বলত,

-     তুই চান করে আয় , ততক্ষনে আমি তোকে জামা বের করে দিচ্ছি বা আয়রন করে দিচ্ছি।

কিন্তু আমি মানতাম না। আমি একেবারে নিয়ে যেতাম সাথে করে। বাড়িতেও খালি গায়ে থাকা একদম অস্বস্তি কর ছিল আমার। আমার শরীর টা ছেলের, তাই কত সময়ে ছোট বেলায় খেলতে খেলতে খালি গায়ে বাপির সাথে খেলেছি। কিন্তু এখন সমস্যা হয়। বাড়ির সামনের গেটের কাছে খেলাই বন্ধ করে দিলাম আমি ভয়ে। হয়ত মা আমাকে নোটিস করত। সেটা আমাকে মা পরে বলেও ছিল।
[+] 6 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
বড় একটা সমস্যা তৈরি হল, সেই বারের সরস্বতী পুজোতে। আমরা তখন ক্লাস এইট থেকে নাইনে উঠব। আমাদের কলেজে বড় করেই পুজো হত। আমি প্রথম হতাম বলে আমার উপরেই দায়িত্ব দেওয়া হল। কিন্তু আমি সযত্নে এড়িয়ে গেলাম ব্যাপার টা। এতোদিন ইচ্ছে ছিল যে, যখন আমাদের সময় আসবে, আমি নিজে হাতে সব দায়িত্ব নেব। কিন্তু আমার মানসিক পরিবর্তনের কারনে, ইচ্ছে করছিল না ব্যাপার টার সাথে জুড়তে।

আগের দিন বিকালে আমাকে রাকা জিজ্ঞাসা করল কথাটা। আমরা সেই জায়গাতেই ছিলাম, তাশি নদীর ধারে, জঙ্গলের সামনে।

-     এতো বড় করে পুজো হচ্ছে আর তোকে দেখলাম না কি ব্যাপার? কি কারনে তোর সমস্যা
আমি হাসলাম। সত্যি আমার সমস্যা ছিল না। কিন্তু আবার ছিল ও। সমস্যা মানসিক। সবাই কে বললে বুঝবেও না। কিন্তু রাকা কে বলা যায়। বললাম
-     আমি থাকতেই চাই না পুজোতে।
-     কেন সেটাই তো জিজ্ঞাসা করছি।
গত বেশ কয়েক মাস ধরে হয়ে চলা আমার মানসিক সমস্যা, সব টাই ওকে খুলে বললাম। ও সব শুনল। কিন্তু চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপরে আমাকে বলল
-     তোর জার্সি বদলাতে সমস্যা হয় আমাকে বলিস নি?
-     কেমন একটা লাগত সেটাও বলতে।
-     তোকে না বলেছি আমাকে সব বলতে।
-     তাই তো বললাম এখন
-     সে তো আমি জিজ্ঞাসা করার পরে বললি রে বাল। তোদের মতন এই পড়াশোনা জানা ছেলে গুলো বড্ড গাঁড় পাকা হয়
আমি চুপ রইলাম। এই গাঁড় পাকা কথা টা আমাকে খুব বলে ও। এখন আর কিছু মনে করি না। থম হয়ে বসে থাকি। যদি এতে কিছু বোঝে তো বুঝুক। কিন্তু ও বোঝে না। কিছু পরে বলল,

-     ঠিক আছে রাগ চোদাতে হবে না।

এই স্ল্যাং টা আমার কাছে নতুন। হয়ত রাকা ও নতুন শিখেছে। কি মানে কে জানে। এটা বুঝলাম, আর রাগ করতে মানা করছে। বড় হচ্ছি সবাই। আমি নতুন নতুন ব্যাপার পড়াশোনা করি। আর ও নতুন গালি শিখে আমাকেই দিচ্ছে। আমি চুপ করেই রইলাম। ও বলল

-     কিরে!  বললাম তো তোকে আর রাগ চোদাস না,কালকে আরেক টা সারপ্রাইজ দেবো তোকে।
আমি শুনে একটু উত্তেজিত হলাম সেটা। কারন ওর সারপ্রাইজ আমাকে এবং আমার মন বেশ ভালো করে দেয়। রাজী হয়ে গেলাম । বললাম
-     ঠিক আছে।
-     কি ঠিক আছে? কিছুই তো শুনলি না। তোর কাছে শ দুয়েক হবে?
-     হ্যাঁ হবে কিন্তু এখন তো নেই। বাড়ি গেলে পাব। কি করবি?
-     লাগবে লাগবে। আচ্ছা ঠিক আছে কাল যখন বাড়িতে আসবি আমাদের, নিয়ে আসবি। আমি ধারে ম্যানেজ করে নেব।  
-     কি করবি?
-     বাল শুনতে পাচ্ছিস না, সারপ্রাইজ। আগে থেকে বলে দিলে কি করে হবে? তুই কখন আসবি কালকে?
-     আমাদের বাড়িতে পুজো শেষ হতে নটা বাজবে। তারপরে খেয়ে দেয়ে বেরোব।
-     মানে সাড়ে নটা বাজবে তাই তো।
-     হ্যাঁ আরাউন্ড সাড়ে নটা।
-     আচ্ছা, তুই না আমাদের বাড়ি ঢুকবি, পিছন দিক দিয়ে। মনে থাকবে? চিনিস তো রাস্তা টা?
-     হ্যাঁ চিনি। কিন্তু কেন?
-     কালকেই দেখবি। এখন চল, সন্ধ্যে হয়ে গেছে। চালাতে পারবি তো?
-     হ্যাঁ চালাতে কেন পারব না?
-     না ওই যে বলছিলি, কি সব সমস্যা হচ্ছে।
-     বড্ড ফালতু কথা বলিস। চল!

কিন্তু সিটে ওই বসল। আমি সামনের রডে চেপে পিছন থেকে ওর খিক খিক মার্কা হাসি টা শুনতে পেলাম। কিছু বললাম না। ওকে ওর বাড়িতে নামিয়ে আমি চলে এলাম। ভাবছি, কি জানি কি সারপ্রাইজ দেবে আমাকে ওই জানে।
আসলে আমি বেরোতে চাই না পুজোর দিন টা। কেমন একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে নিজেকে। সব মেয়েরা সুন্দর করে সেজেগুজে ঘুরে বেড়ায়। ছেলেরাও ঘুরে বেড়ায়। আর আমি কি করব বুঝতে পারি না। আমি পাজামা পাঞ্জাবী পরলে মেয়েরা খুব তাকায়। কিন্তু সেটা আমি এনজয় করতে পারি না। এমন না যে আমি ছেলেদের দৃষ্টি ও পছন্দ করি। সেটা তো কোনদিন ও বুঝিনি আমি। কিন্তু জাস্ট ভালো লাগে না ওই দিন টা আমার।

পরের দিন সকালে, বাবা পুজো করল। আমি ভাই বোন মিলে পুষ্পাঞ্জলী দিলাম। সকাল সকাল পুজো হয়ে গেলো আমাদের। আট টার মধ্যে রেডি আমি। খেয়ে দেয়ে নিলাম। মা কে বললাম,

-     মা আমি বেরোব। ঠাকুর দেখতে যাবো আমি আর রাকা
-     অ্যাঁ?

প্রথম বার আমি এই আবদার করলাম। আসলে ওই দিনে তো কপোত কপোতী রাস্তা ঘাট জুড়ে থাকে। আমার অনুমতি ই ছিল না সেদিনে বাড়ি থেকে বের হবার। কলেজে থাকার অনুমতি ছিল আমার শুধু। মা আমার অনুরোধ শুনে অবাক হয়ে গেল। বাপির দিকে চাইল। বাপি আমার পিছনে ছিল বলে দেখতে পেলাম না আমি বাপি কি বলল। তবে মা বলল,

-     ঠিক আছে, কিন্তু ফিরে আসতে হবে, দুপুরে খাবারের আগে।
আমি বললাম
-     ঠিক আছে।

বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে মা দেখলাম, ব্যালকনি তে দাঁড়িয়ে আছে। আমি সোজা চলে এলাম হীরাপুরে। সময় লাগে আসতে। অনেক টা রাস্তা। আমি ওদের বাড়ির সামনের দিকে গেলাম না। চলে এলাম পিছনের দিকে। ওদের জায়গা টা অনেক বড়। পাঁচিল ধরে কিছু টা এসেই দেখলাম, ওর বাবার সবুজ রঙের স্কুটার টা পাঁচিলের বাইরে দাঁড় করানো। ওখানে এসে দেখলাম, ওই জায়গার পাঁচিলে বেশ বড় একটা গর্ত। সেখান দিয়ে দুটো মানুষ গলে যাবে। আমি ওখানে যেতেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে পাঁচিলের উল্টো দিকে। আমাকে দেখেই বলল,

-     সাইকেল টা ঢুকিয়ে দিতে হবে।

আমি নেমে সাইকেল টা তুলে ধরতেই ও ভিতর থেকে নিয়ে নিল। আমিও ঢুকে গেলাম গর্ত দিয়ে ওদের বাড়ি। রাস্তা টা বেশ ফাঁকা থাকে। কেউ দেখল ও না। কিন্তু ভয় টা তখন লাগছিল, কেউ দেখে নিলো কিনা। এতো সব করছে যখন সারপ্রাইজ টা দারুন হবে। ও সাইকেল টা নিয়ে চালিয়ে চলে গেলো, পোড়ো বাড়িটার ভিতরে। আমি হেঁটে ঢুকলাম। ঘরে ঢুকে, একটা প্যাকেট দিল আমাকে আবার। জানি কোন ড্রেস হবে। ও কি আজকেও এখানে নাচতে বলবে নাকি? তাতে আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু এই ব্যাপার তো আগে আমরা করেছি, সারপ্রাইজ কীসের?দেখলাম, একটা নর্ম্যাল তাঁতের শাড়ি, ব্লাউজ,সায়া। এতে কি হবে জিজ্ঞাসা করতেই, আমাকে বলল,

-     তুই পর তো আগে।

আমি শাড়ি পরতে জানতাম না। তাও ইন্টারেস্ট ছিল বলে, মনে করে করে পরে নিলাম শাড়ি টা। একটা ঘাড় অব্দি চুলের উইগ। ছোট কানের এনেছে দেখলাম, ম্যাগনেট দেওয়া। কানের ফুটো নেই আমার। পরে নিলাম সেগুলো। আমাকে যখন ও আয়না দেখালো, আমি নিজেই নিজেকে চিনতে পারছিলাম না। আমার আনন্দ হয় নি এমন না। ষোলোয়ানা পরে পাওয়ার মতন ব্যাপার। কিন্তু সারপ্রাইজ টা অপেক্ষা করছিল তখন যখন ও আমাকে বলল

-     এখন তুই আর আমি , আমার বাবার স্কুটারে চেপে ঠাকুর দেখতে বেরোব।
-     অ্যাঁ?
-     হ্যাঁ

আমার মনে ভয় ধরে গেল। এতদিন যা করেছি বন্ধ ঘরে। কিন্তু এই সব পরে বাইরে বেরোলে, আর লোকে দেখলে তো চারদিকে ঢি ঢি পরে যাবে। আমি ওকে বললাম,

-     কি বলছিস? পাগল হলি নাকি। কেউ দেখলে কি হবে?
-     আরে দেখে কেউ চিনলে তো। দাঁড়া তোকে ছবি তুলে দেখাই।

ছবি তুলে আমাকে দেখানোর পরেও আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা আমি। মনে হচ্ছিল ক্লাস এইট নাইনে পরা কোন মেয়ে। নিজের লোভ বেড়ে গেল। ভিতরের মেয়েটা যেন চাইল বেড়িয়ে আসতে খুব তীব্র ভাবে। রাকার কথায় কোন সারা না দিয়ে বললাম,

-     চল তবে। কিন্তু আমাকে তো না হয় কেউ চেনে না। তোকে তো দেখবে আমার সাথে। তোর বাড়িতে বলে দিলে?
-     আরে সে দেখা যাবে। চল তো এখন।
আমরা দুজনে বেরোলাম পিছন দিক দিয়ে। ও স্কুটারে স্টার্ট দিয়ে বলল বসতে। কিন্তু আমি তো একদিকে বসতেই জানি না। সাইকেলে বসা এক ব্যাপার আর স্কুটারে বসা অন্য ব্যাপার। ওকে বলতেই বলল
-     বস না আমাকে ধরে ভালো করে। চাপ আগে, তারপরে বলে দিচ্ছি
-     উঠব?
-     হ্যাঁ।

খুব ই কস্টকর ব্যাপার। আমার উঠতেই সময় লাগল মিনিট পাঁচ। খালি মনে হচ্ছে উঠতে গিয়ে সামনের দিকে পরে যাবো। বার তিনেক এমনি করার পরেই, রাকা স্কুটার টা ডাবল স্ট্যান্ড এ করে আমাকে চাপাল আগে, তারপরে নিজে চেপে স্টার্ট দিল। আমাকে বলল,

-     ডান হাত টা দিয়ে আমার কাঁধ টা ধর আর বাম হাত টা পিছনে হোল্ডার টা ধর।

আমি তাই করলাম। ঠিক লাগল ব্যপারটা । ও স্কুটার চালাতে শুরু করল। পিছনে বসে আমি। চোখে মুখে হাওয়ার ধাক্কা। কিন্তু মনের ভিতরে থাকা পাখি গুলো আর ভিতরে কিচির মিচির করছে না। মন থেকে একটা ভারী পাথর আমার নেমে যাচ্ছে। শক্ত করে ধরলাম রাকার কাঁধ টা আমি। সবাই দেখছে আমাদের। রাকাকে দেখছে। কেউ পিছনে বসা আমাকেও দেখছে। শীতকাল, আমি মাথায় একটা মাফলার জড়িয়ে নিয়েছি। যাতে চুলের উইগ টা উড়ে না যায়।

এই মণ্ডপ থেকে সেই মন্ডপে আমরা যাচ্ছি। ঠাকুর দেখছি। আমার মনে কোন ভয় নেই আর। কেউ চিনতে পারে নি। কেউ না। আমার মেয়েদের সাজগোজ দেখে আর কস্ট ও হচ্ছে না। এই সামান্য ব্যাপার টাতে আমার জন্য এতো আনন্দ লুকিয়ে ছিল আমি তো ভাবতেও পারিনি। সামনে রাকা চালাচ্ছে, ইচ্ছে হচ্ছে ওকে জরিয়েই ধরি। কিন্তু ভয় লাগে। ও আমাকে এতো সাহায্য করছে, এই সব করলে হয়ত রেগে যাবে। তাশির পাশ দিয়ে বেশ জোরেই ও স্কুটার চালাচ্ছে। আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলাম,

-     কোথায় পেলি এই সব কস্টিউম?
-     ভাড়া করেছি। দুশ তিরিশ টাকা নিয়েছে।
-     তুই তো দুশ বললি।
-     তিরিশ আমি দিয়ে দিয়েছি। আর বিকালে ওকে দুশ দিয়ে দেব। তুই এনেছিস তো?
-     হ্যাঁ কিন্তু তোর বাড়িতে আছে আমার প্যান্টের পকেটে।
-     ঠিক আছে, যাবার সময়ে দিয়ে যাস।
-     আচ্ছা।

রাকার সব অনেক চেনা শোনা প্রতি মোড়েই রয়েছে দেখলাম। নানা রকম টোন টিটকিরি। কি রে কবে পটালি। দারুন দেখতে কিন্তু রাকা, চালিয়ে যা। একেবারে ঝাক্কাস রাকা। নানা রকম মন্তব্য। শুনে বুকে ভয় লাগলেও, নিজেকে তখন আমার মেয়েই মনে হচ্ছিল। প্রতিটা মুহুর্ত, প্রতিটা টোন্ডিং আমি এনজয় করছিলাম আর মনে হচ্ছিল আমি রাকার গার্লফ্রেন্ড। অদ্ভুত!!! রাকার কাঁধ টা একটু চেপেই ধরলাম আমি। এগিয়ে যাবো আরেকটু? নাহ থাক।

প্রায় ঘণ্টা দুয়েক ঘোরার পরে, আমি রাকাকে বাড়ি ফেরার কথা বললাম। রাকা ও দ্বিরুক্তি না করে, আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল ওদের বাড়িতে। আমি সব কিছু ছেড়ে নিজের পাঞ্জাবী আর প্যান্ট পরে নিলাম। লিপস্টিক মুছে, সব অর্নামেন্ট খুলে দিলাম। রাকা কে টাকা টা দিয়ে দিলাম আমি। অনেক কস্ট করে জমিয়েছিলাম। কিন্তু আজকে যা আমি আনন্দ পেয়েছি তার জন্য জমানো অনেক টাকা আমি দিতে রাজি আছি। সাইকেল নিয়ে বাড়ি এলাম তখন বেজে গেছে দুপুর দুটো।

 সারা দিনটা আমি উড়লাম। জাস্ট উড়ে বেরালাম। কাউকে বোঝাতে পারছি না আমি কত টা খুশী আজকে। কাউকে বলতে পারছি না, কি অসম্ভব, একটা যন্ত্রণা থেকে আমি মুক্তি পেয়েছি আজকে। আমার কাছে, মেয়েদের পোশাক পরা টা গুরুত্বপূর্ন না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ন হল অনুভব টা। মেয়ে হবার অনুভব টা। যেটা সামনে থেকে কেউ রেকগ্নাইজ করে না। কেউ মেনে নিতে চায় না এই ছেলে শরীর টার ভিতরে একটা মেয়ে আছে। তাই এই পোশাক। তাই সবাই কে বুঝিয়ে দেওয়া দেখ আমি মেয়ে। কেউ তোমরা খুঁজে পেতে না একে। কিন্তু আজকে সে বেরিয়েছিল।

খুব জটিল ব্যাপার। অনেকেই তেড়ে আসবেন আমার দিকে। মেয়েদের পরিচয় কি শুধুই পোশাকে? নাকি মেয়েদের পরিচয় শুধু মাত্র নাচে? বা মায়ের সাথে রান্না ঘরে কাজ করায়? বা সন্তান ধারনে? বা সংসার পালনে, বা মমত্বে? সবার আগে তো সে মানুষ নাকি! আমি সব ই বুঝি, কিন্তু কর্ম, খেলা ধূলা, পোশাক আশাক, মায়া মমতা, এই সব দিয়ে মেয়েকে আলাদা তো আমি করিনি? আর আলাদা বলেই, আমার মতন যারা ট্রান্স, যারা ভাবে, তাদের এটা সঠিক শরীর নয়, তাদের সমস্যা। আজকে ছেলে মেয়ে আলাদা না হলে, যারা ট্রান্স ওদের কে যে কোন একটা, জেন্ডার খুঁজে বেড়াতে হতো না। হয় ছেলে না হয় মেয়ে। মাঝের জনেদের তো কেউ মানুষ বলেই মনে করে না। সমাজের কীট তারা। যতই এগিয়ে যাওয়া সমাজ দাবি করুক, সবাই সমান, কিন্তু ভিতরে যে চোরা স্রোত চলে, সেই স্রোতে ভেসে যায় আমাদের মতন কীট পতঙ্গ।

ভেবেছিলাম, এই ব্যাপার টা আমরা করতে থাকব। কিন্তু সেই ঘটনার পরে অনেক কিছু ঘটে গেল আমার জীবনে একসাথে। কি ভাবে নিতে পেরেছিলাম সে আমি জানি আর আমার পরিবার জানে। রাকাও এই আগুনের আঁচ থেকে বাঁচতে পারে নি। সেদিনে আমরা ভেবেছিলাম আমাদের কেউ চিনতে পারে নি। আমরা ভুল ছিলাম। সবার আগে সমস্যা হয়েছিল রাকার। সেদিনে রাতে রাকা আমাকে ফোন করল

-     বল? কি হল, ফোন করলি?
-     আরে আজকে বাওয়াল হয়ে গেছে।
আমার ভয় লাগল। ভাবছিলাম, কেউ দেখে ফেলল নাকি? জিজ্ঞাসা করলাম ভয়ে ভয়ে
-     কেন, কেউ দেখেছে আমাদের বা বুঝতে পেরেছে নাকি?
-     দেখেছে তো বটেই। বুঝতে হয়ত পারে নি তোকে। কিন্তু দেখেছে।
-     কে?
-     আমার বাবা? বাড়িতে মা কেলাল খুব?
আমি হেসে ফেললাম। বললাম
-     সে তো রোজ ই খাস
-     না রে আজকের টা অন্য রকম ছিল। মা কান্না কাটি করছিল।
-     কান্নাকাটি? কেন?
-     বাবা দেখেছে আমাদের। স্কুটার চিনেছে আগে, তারপরে আমাকে দেখেছে। তোকে চিনতে পারে নি । কিন্তু এই বয়সে স্কুটারে মেয়ে নিয়ে ঘোরার অপরাধে বাবা মা দুজনেই খুব ঝেড়েছে আমাকে। আমি তো বলতে পারছি না যে তুই ছিলি ওটা। সেও বলে দেওয়া যেত, কিন্তু বললাম না।

হয়ত অনেকেই এই রকম মজা করে। মেয়ে সেজে রাস্তায় বেরোয়। কিন্তু আমার ভয় লাগে এই জন্য, কারন আমার কাছে সেটা তো নিছক সাজা নয়। আমি ওই সময় টা, মেয়ে হওয়া টা উপভোগ করি। আর তাই ভয় করে যদি কেউ বুঝে যায়। হয়ত অনেকেই এটা মজা হিসাবেই নেবে, কিন্তু ভয় লাগে আমার বাবা মা জানলে ওদের কাছে এটা মজা থাকবে না আর। কারন ওদের কাছে আমার এই ব্যাপার টার আঁশটে গন্ধ অনেক আগে থেকেই আছে। আমি সাড়া দিলাম না ওই ব্যাপারে, শুধু ওকে বললাম,

-     আমার জন্য তোকে ঝাড় খেতে হল তাই না?
-     আরে সে ঠিক আছে। তুই ঠিক আছিস তো। ওদিকে কেউ বুঝতে পারে নি তো?
-     না না এদিকে সব ঠিক আছে। চিন্তা নেই। কালকে কলেজে আসবি?
-     হ্যাঁ যাবো। তুই কখন আসবি।
-     ওই এগারো টার দিকে ।
-     ওকে সি ইউ দেন।
-     গুড নাইট।
ওকে গুড নাইট করে দিলাম। জানিনা কেমন একটা ভয় সর্বদা। প্রাণ খুলে না বাঁচার ভয় নাকি, সামনে আসতে থাকা অগনিত ঝড়ের ভয় বলতে পারব না।
[+] 7 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
অসাধারণ , এই ফোরাম এসব গল্পের জন্য নয় ... আবারো বলছি ..


LGBT যদিও আমার একটা ব্যক্তিগত ঘৃণা , না ঘৃণা নয় ... কিছুটা গা ঘিন ঘিন করে .. অস্বীকার করি কি করে
২০১৪ তে কিছুদিনের জন্য আমস্টারডাম ছিলাম , এক সপ্তাহ ... কিছু অফিসের কাজেই ,
হোটেল আর কাজের জায়গায় আস্তে যেতে রোজ চোখে পড়তো ... ওদের কোনো আন্দোলন চলছিল , WORLD LGBT RIGHTS MOVE এরকম কিছু , কয়েকটা ফটো তুলেছিলাম ... খুঁজতে হবে ..

তোমার লেখা , সাবজেক্ট যাই হোক ... চুম্বকের মতো টেনে ধরে রাখে ,
তুমি হলে LADY PINURAM   Namaskar Namaskar Heart Heart    

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)