Thread Rating:
  • 49 Vote(s) - 3.39 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL কিছু কথা ছিল মনে - বাবান
#1
Star 
[Image: 20220811-181222.jpg]


রোটিক গল্প দিয়ে আমার গসিপিতে লেখক জীবনের যাত্রা শুরু. বেশ কয়েকটা উত্তেজক গল্প লিখেছি যেগুলি আপনারা পড়ে মজা পেয়েছেন, ভালোবেসেছেন, সাপোর্ট করেছেন. তাই সেই এরটিক লেখা থেকে বেরিয়ে যখন অন্যরকম লেখা লিখতে শুরু করলাম তখন বিশ্বাস ছিল সেই সময়ও আপনাদের পাশে পাবো এবং আমার বিশ্বাসের মর্যাদা আপনারা রেখেছিলেন. নতুন রোমান্টিক গল্পেও আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম. আর তারপর এই ছোট ছোট ভিন্ন স্বাদের গল্প লিখতে শুরু করলাম. আর সেখানেও আপনারা দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলেন আমার সেইসব লেখা. তাই ভাবলাম এবং পিনুরামদা-ও বললো  এগুলো  আলাদা আলাদা ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে একসাথে একটা নতুন থ্রেডে সযত্নে তুলে রাখি যাতে সবকটা গল্প আপনারা একসাথে  সহজেই পড়তে পারেন. খোঁজার প্রয়োজন পড়বেনা. আর নতুন  গল্প লিখলে সেটিও এই নতুন থ্রেডে পোস্ট করবো.

[Image: 20230816-221934.png]
[+] 5 users Like Baban's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
Star 
[Image: 20210924-180903.png]


অণু গল্প 





গল্পের নামপৃষ্ঠা
ভোকাট্টা7
অগ্রগতি8
সেইদিনগুলো10
টান13
ছবি21
কথা হয়েছিল22
খোঁজ23
ম্যাজিক24
কথোপকথন26
বন্দি26
জবাব ও ইতি 28
অনেক কথা বলার ছিল 31
স্মৃতি31
হাসি কান্না32
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage



গল্প






গল্পের নামপৃষ্ঠা
অচেনা অতিথি1
নতুন করে শুরু1
দূরত্ব1
বন্ধু1
এলোমেলো2
আমার একলা আকাশ4
Respect5
ভূমি6
কালীপূজার অমাবস্যা রাত 15
তুমি আছো এতো কাছে তাই20
কাগজের নৌকো25
ও খোকন 29
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage




ছড়া/কবিতা 






নামপৃষ্ঠা
আজকের মূলমন্ত্র9
দিনগুলি9
ভু... ভু.. ভুত!14
প্রশ্ন8
আলোয় ভুবন ভরা19
তুমি আছো এতো কাছে তাই21
খোঁজ23
ম্যাজিক24
একটি প্রশ্ন13
সেই সকাল8
অনুরোধ23
সাবধান24
মজার খেলা24
কিছু কথা25
মাছ শিকার27
ছুট28
সাহস10
দস্যু32
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
upcomingpage
[+] 8 users Like Baban's post
Like Reply
#3
[Image: 20210112-012401.jpg]




কিকরবো?  ফোনটা করবো?  নাকি........ যদি ভুল বোঝে? আরে  এত ভয় পাচ্ছি কেন?  নিজের বিয়ে করা বৌ? তাকে আবার ভয় কিসের তারপর কলেজের বান্ধবী. নাহ.... করেই ফেলি ফোনটা. যদি মুখের ওপর ফোনটা কেটে দেয়? যে পরিমান রেগে আছে আমার ওপর. তবে আজকে বছরের শেষ দিন. আজকে এটলিস্ট সাহস করে ফোনটা করা যেতেই পারে.
 একটি নামকরা রেস্টুরেন্টে বসে অনিক ভাবছে এই কথা গুলি. মাত্র 2 মাস বিয়ে হয়েছে ওর আর প্রিয়াঙ্কার. প্রথম দিন যখন মেয়েটাকে কলেজে দেখে ছিল তখনি অনিকের বুকের ভেতরটা ধুকপুক করতে শুরু করে দিয়েছিলো. বড়োলোক বাড়ির ছেলে হলেও স্বভাবে সে খুব লাজুক কিন্তু আর মনটা খুবই পবিত্র. ইয়ার্কি ঠাট্টা আজ অব্দি সেইভাবে করেনি কারোর সাথে. ছোট্ট বিড়াল বা কুকুরের বাচ্চা দেখলে নিজেকে সামলে রাখতে পারেনা ছেলেটা. এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে আদর করতেই হবে. এমন একটা ছেলেকে একদিন পুরো ক্লাসের সামনে হাসির পাত্র হতে হলো. ঘটনাটা খুলেই বলি. কলেজে ওর এক বন্ধু হয়েছিল রজত. আলট্রা মডার্ন ছেলে. আর হবে নাইবা কেন? কলেজের যে পরিমান নাম ডাক. সেখানে বড়োলোক বাড়ির ছেলে মেয়েরা পর্বে সেটাই স্বাভাবিক. আর মেয়েদের মধ্যে যে যত বড়োলোক তাদের জামা কাপড় ততই....... বুঝতেই পারছেন. প্রিয়াঙ্কাও ছিল তাদেরই একজন কিন্তু পড়াশোনাতেও এক নম্বর. অনিককে নিয়ে অনেকেই ছোট খাটো ইয়ার্কি ঠাট্টা করতো কিন্তু কোনোদিন গায়ে মাখেনি সে. বড়োলোক হলেও অহংকার ভাব যে কোনোদিনই ছিলোনা ওর মধ্যে. সাধারণ জামা কাপড় পড়তো. কলেজের ক্লাস টেস্টে সেইবার তার প্রেয়সী তার পাশেই বসলো. যদিও তখনো প্রেয়সী হয়ে ওঠেনি. পরীক্ষা শুরু হতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কা বুঝলো ভয়ানক ভুল করে ফেলেছে সে. নতুন পেন আনার বদলে পুরোনো পেন নিয়ে এসেছে. ব্যাস... কিছুক্ষনের মধ্যেই প্রিয়াঙ্কাকে ঠকিয়ে সেই পেনের কালি আর বেরোবেনা বলে প্রতিজ্ঞা নিলো. অনেকবার ঝেড়েও ফল হলোনা.  এই নাও বলে নিজের একটা পেন এগিয়ে দিলো অনিক. থাঙ্কস বলে ওর হাত থেকে পেন নিয়ে লিখতে শুরু করলো প্রিয়াঙ্কা. প্রথমে দুই হাতের স্পর্শ. লিখতে লিখতে বার বার চোখ চলে যাচ্ছিলো প্রেয়সীর দিকে. চশমা পড়া, চেপে চুল আঁচড়ানো, সাধারণ জামা কাপড় পড়া ছেলেটার দিকে একবারও তাকায়নি প্রিয়াঙ্কা. যাক শেষে পরীক্ষা শেষ হলো. এসে গেলো সেই দিন. সেই রাগিং এর দিন. বন্ধুকে বিশ্বাস করে ওকে অনেকবার বলেছিলো অনিক প্রিয়াঙ্কার কথা. ওকে বলেছিলো ওর মনে প্রিয়াঙ্কা কতটা জায়গায় জুড়ে আছে. কিন্তু তার সেই মনের অনুভূতিটাকে যে তার বন্ধু হাসির পর্যায় নিয়ে যাবে সেটা সে ভাবতেও পারেনি. ওই আলট্রা মডার্ন ছেলে মেয়েগুলো মিলে ওর এই অনুভুতিটার মজা বানালো. অনিকের এই অপমান ততটা গায়ে লাগেনি যতটা দুঃখ হয়েছিল এটা দেখে যে ওই হাসি মুখ গুলোর মধ্যে একটা মুখ ছিল প্রিয়াঙ্কার. প্রিয়াঙ্কা এগিয়ে এসে বলেছিলো : নিজেকে আগে ভালো করে দেখো . আগে নিজেকে আমার যোগ্য বানিয়ে তোলো তারপর এসো. ভেবে দেখবো. এই বলেই আবার সবাই হেসে উঠলো. আর থাকতে পারেনি অনিক. চোখে জল নিয়ে সবার মাঝে দিয়ে বেরিয়েছে গেলো. সেদিনই রেজাল্ট বেরোনোর দিন ছিল. সবাই উপস্থিত ছিল অনিক ছাড়া. সবাই জানে প্রিয়াঙ্কা এবারেও প্রথম হবে. স্যার রেজাল্ট বলতে গিয়ে থেমে গেলো. জিজ্ঞেস করলো অনিক কথায়? ও আসেনি? একজন বললো : না স্যার এসেছিলো কিন্তু কি একটা কারণে চলে গেছে. সবাই চোখ টেপাটিপি করে মুচকি হাসছিলো. কিন্তু সেই হাসি মিলিয়ে গেলো যখন সবাই জানতে স্যারের কাছ থেকে জানতে পারলো অনিক এইবারে প্রথম হয়েছে. আরও অবাক হলো সবাই এই জেনে যখন স্যার বললেন - সত্যি ছেলেটা একদম ওর বাবার মতো হয়েছে. যেমন বাবা নিজের চেষ্টায় আজ এত সাকসেসফুল হয়েছে তেমনি ছেলে. বাবা এই কলেজের সব ব্যাপারে পাশে থাকে অথচ সেই পাওয়ার এর সুযোগ কখনই লাগায়নি ছেলেটা. নিজের যোগ্যতায় এত দূর এগিয়েছে সে. কোনোদিন তৃতীয় হয়নি অনিক. 

সবার মুখ বন্ধ. বলার কিছু নেই যে. সেই থেকে সবার অনিকের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়. সে হয়ে ওঠে ক্লাসের মূল আকর্ষণ. প্রিয়াঙ্কাও নিজের ভুল বুঝতে পারে. নিজে গিয়ে ক্ষমা চায় অনিকের কাছে. সেখান থেকে বন্ধুত্ব আর কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুত্ব পাল্টে যায় ভালোবাসায়. অনিককে আজকের দিনের মতো বানিয়ে তোলে প্রিয়াঙ্কা. মডার্ন. তবে মনটা ছিল সেই পুরোনো অনিকেরই. তাকেই ভালোবাসে প্রিয়াঙ্কা. কলেজ শেষে দুই পরিবারের মধ্যে সাক্ষাৎ হয়. ঠিক হয় সঠিক সময় চার হাত এক হবে. দুজনেই একসময় কাজে যোগ দেয়. অনিক বাবার অফিসে, প্রিয়াঙ্কা নামি কোম্পানিতে. একসময় চার হাত এক হয়. সব কিছু ঠিক চলছিল কিন্তু....... 

স্যার.... আপনার অর্ডার. ওয়েটারের ডাকে আবার বর্তমানে ফিরে এলো অনিক. সে খাবার নিয়ে এসেছে. চিলি চিকেন ফ্রাইডরাইস. প্রিয়াঙ্কার প্রিয় খাবার. বাইরে লোকে লোকারণ্য. আলোয় সেজে উঠেছে কলকাতা শহর ভেতরে ডীস্কো গান বাজছে. লোকে নাচানাচি করছে. আর মাত্র কুড়ি মিনিট বাকি  নতুন বছরের আগমন হতে. খেতে খেতে আবার হারিয়ে গেলো পুরানো সেই দিনের কথায়. বিয়ের পর প্রথম যখন প্রিয়াঙ্কা অনিকের ঘরে ঢুকেছিলো বুকটা আনন্দে লাফাচ্ছিলো. তার প্রেমিকা আজ তার ঘরে আর তার সাথেই সারাজীবন কাটাবে. এরপর এলো হনিমুনের দিন. প্রিয়াঙ্কার পাহাড়ি জায়গা খুব ভালো লাগে. তাই ওর জন্য পাহাড় জঙ্গলে সেজে উঠেছে পরিবেশ এমন জায়গা ঠিক করা হলো. যাওয়া হলো সেখানে. কিন্তু সেখানে গিয়ে অনিকের যে পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হবে কে জানতো? সুপ্রিয় অনিকের বন্ধু. সেও তার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে এসেছে. বেচারা অনিক পুরোনো বন্ধু পেয়ে তার সাথেই মেতে উঠলো. দিনের শেষে রাত নামলো. সুপ্রিয় অনিক ঠিক করলো পরের দিন তারা ভোরবেলা একসাথে হোটেলের পাশের মাঠটায় যাবে. ওখান দিয়ে সূর্যোদয় দারুন দেখা যায়. অনিক সাথে ক্যামেরা নিয়ে এসেছে. কোনো ঝামেলাই হবেনা. ঘরে ফিরে সুন্দরী বৌটার কয়েকটা দারুন ছবি তুললো, ঘনিষ্ট মুহূর্তের ছবি তুললো আর সেই ছবি তুলতে তুলতে পাশে বসে থাকা অপূর্ব সুন্দরী মেয়েটার খুব ঘনিষ্ট হয়ে এলো অনিক. তারপর তারা একে ওপরের সাথে ভালোবাসার খেলায় হারিয়ে গেলো. কিন্তু ভুল করে অনিকের হাতটা ক্যামেরার রেকর্ডিং বাটনে পড়ে গেলো. ওদের পবিত্র ভালোবাবার সব চিহ্ন ওই ক্যামেরায় সাক্ষী হয়ে রইলো. পরের দিন সুপ্রিয়র ফোনে ঘুম ভাঙলো অনিকের. প্রিয়াকে রেডি হতে বলে ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়েছে গেলো. দুই বন্ধুরা মাঠে গিয়ে যেই ছবি তুলবে অমনি অনিক দেখলো ব্যাটারি খালাস. যা..... এবার কি হবে? তুই যে কি করিসনা বললো সুপ্রিয়. অনিক বুঝতে পারলো কেন এটা হয়েছে. তখনি রেকর্ডিং করার আওয়াজটা শুনেছিলো কিন্তু তখন কি আর  ঐসব মাথায় থাকে? 

অনিক : সরিরে.... আসলে কালকে ছবি তুলছিলাম কিন্তু তুলতে তুলতে......... বুঝতেই পারছিস. মনে হয় ভুল করে রেকর্ডিং চালু হয়ে সব রেকর্ড হয়েছে সারারাত. তাই ব্যাটারী শেষ. 

সুপ্রিয় একটু চেঁচিয়ে হেসে বললো : কি?  গুরু.... তুই তো ছুপা রুস্তম. সারারাতের খেলা রেকর্ড করলি ?  যাতে পরে দেখতে পারো? সব রেকর্ড করেছিস??? 

অনিক হেসে বললো : আরে নারে..... সত্যি বলছি ইচ্ছে করে নয়. আসলে কি হয়েছে বলতো........   পুরো কথাটা শেষ হলোনা ওর তার আগেই ঠাস করে একটা থাপ্পড়ে গাল লাল হয়ে গেলো ওর. 
প্রিয়াঙ্কা শুনে ফেলেছে যা শোনার. জল ভরা চোখ নিয়ে ছি : বলে চলে গেলো. কিচ্ছু শুনলো সে. আটকাতে পারলোনা অনিক. তারপর কেটে গেছে 2 মাস. বহুবার চেষ্টা করেছে যোগাযোগ করতে কিন্তু লাভ হয়নি. যা জেদি. প্রিয়াঙ্কার বাবা মাও অনেক বার মেয়েকে বুঝিয়েছে লাভ হয়নি. আজ আরেকবার শেষ চেষ্টা করবে সে. ভাবতে ভাবতে বেশ কিছু সময় কেটে গেছে. আর মাত্র 9 মিনিট বাকি নতুন বছর আসতে. ঠাকুরের নাম নিয়ে কল করলো প্রিয়াঙ্কাকে. তবে নতুন নম্বর থেকে. আগেরটা ব্লক করে দিয়েছে ও. 
রিং বাজছে............. হ্যালো? ....... হ্যালো?  কে?  এতদিন পর ভালোবাসার মানুষটার গলার আওয়াজ পেয়ে মনটা খুশিতে ভোরে উঠলো. সাহস করে বলেই ফেললো : হ্যা...... হ্যালো প্রিয়াঙ্কা? 

প্রিয়াঙ্কা : কে? কে বলছে? 

অনিক : আ..... আআ.... আমি 

প্রিয়াঙ্কা : (কিছুক্ষনের নিরাবতা. তারপর.... ) কি চাই? 

অনিক : এখনও রেগে আছো? 

প্রিয়াঙ্কা : যা বলার তাড়াতাড়ি বোলো. আমার কাজ আছে. 

অনিক : ফিরে এসো সোনা. প্লিস. 

প্রিয়াঙ্কা : যদি না ফিরি? 

অনিক: রাগ করে থেকোনা. তুমি আমায় চেনো সোনা. তোমার মনে হয় আমি...   আমি ওরকম একটা নোংরামি করতে পারি?  

প্রিয়াঙ্কা : আমিও তাই ভাবতাম. কিন্তু  আজ.......... 

অনিক : ঠাকুরের দিব্বি খেয়ে বলছি...... ওটার ব্যাটারি অফ ছিল. তাই আমি সুপ্রিয়কে বলছিলাম যে কেন বন্ধ হয়েছে. সত্যি বলছি. 

প্রিয়াঙ্কা : শোনো আজকে......... 

অনিক : আগে আমার কথা শেষ করতে দাও বাবু. আমি সুপ্রিয়কে কিচ্ছু দেখাইনি. আমি তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকে ভালোবাসি, যখন তুমি অন্যদের সাথে মিলে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করছিলে তখনো ভালোবেসেছি, আজও ভালোবাসি. 

প্রিয়াঙ্কা : শোনো আজকে........ 

অনিক : আগে আমায় শেষ করতে দাও. অনেক সাহস করে ফোন করছি. থামিও না প্লিস. তুমি যখন আমার সাথে........... 

অনিক প্রিয়াঙ্কার সাথে কথা বলছিলো তখনি পেছন থেকে কে যেন ডাকলো. অনিক কথা বলতে বলতে পেছন ফিরে তাকাতেই আবার সেই ঠাস করে থাপ্পড়. অনিক হা. ওকে থাপ্পড় মেরেছে অন্য কেউ না স্বয়ং প্রিয়াঙ্কা. 

প্রিয়াঙ্কা : তখন থেকে কথা বলার চেষ্টা করছি. নিজে বকেই চলেছে. 

অনিক : আমি..... আমি  মানে আমি...... আআআআ মি.. 

প্রিয়াঙ্কা : হ্যা হ্যা তুমি. উফফফফ.... তুমি আর পাল্টালেনা. সেই বাচ্চাটাই রয়ে গেলে. তখন থেকে বলতে চাইছি আজ তোমার সেই বন্ধু সুপ্রিয় তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছিলো আমাদের বাড়িতে. তোমার  বাবার থেকে ঠিকানা নিয়ে আমার সাথে দেখা করে. ওরা সব কিছু খুলে বলে. অনেক আগেই আসতো ওরা কিন্তু হঠাৎ নাকি সুপ্রিয়দার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তাই আসতে পারেনি. ওরা ভেবেছিলো সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে. কিন্তু যখন জানতে পারলো আমরা আলাদা থাকি তখন ওরা আজ দেখা করতে আসে. 

অনিক : কি?  আমি.... আমিতো.... আমি. 

প্রিয়াঙ্কা : কি আমি আমি করছো? বুদ্ধু একটা. আমি আমাদের বাড়িতেই গেছিলাম. মা বললো তুমি এখানে এসেছো. আমি যখন ঢুকেছি তখনি তোমার ফোন এলো. তাই তোমার সাথে একটু ইয়ার্কি করলাম. বুঝলে হনুমান? 

অনিক : তারমানে তুমি....... আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো? 

অনিক কে জড়িয়ে ধরে প্রিয়াঙ্কা বললো : ক্ষমা তো আমার চাওয়ার কথা. কিচ্ছু না শুনে চলে এসেছিলাম. তোমায় ভালবাসি এতদিন তাও বিস্বাস করতে............. সরি অনি. 

প্রিয়াঙ্কার কপালে চুমু খেয়ে অনিক বললো : আজ বুঝলাম ভগবান আছে. নইলে আজকে এই বছরের শেষ দিনেই কেন সব ঠিক হয়ে গেলো? যাতে নতুন বছরটা দুজনে বিশ্বাস, ভালোবাসা নিয়ে চলতে পারি. লাভ ইউ. 

প্রিয়াঙ্কা জল চোখে : লাভ ইউ  টু. 

দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরলো. তখনি 12 টার ঘন্টা বাজলো. আলোয় ভোরে উঠলো আকাশ, সবাই চেছিলো উঠলো হ্যাপি নিউ ইয়ার. 

শুরু হলো পুরোনোকে পেছনে ফেলে নতুন পথ চলা.



সমাপ্ত 
[Image: 20230816-221934.png]
[+] 6 users Like Baban's post
Like Reply
#4
বাহ্ খুব ভালো করলে এটা, গল্পগুলো একটা থ্রেডে থাকলে বেশ গল্পসমগ্রের মতো লাগবে পড়তে  yourock
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply
#5
(06-02-2021, 09:06 AM)Mr Fantastic Wrote: বাহ্ খুব ভালো করলে এটা, গল্পগুলো একটা থ্রেডেথাকলে বেশ গল্পসমগ্রের মতো লাগবে পড়তে 

হ্যা... সেই জন্যই সব কটা এখানে সযত্নে তুলে রাখছি. আর নতুন ছোট গল্প কিছু লিখলে এই থ্রেডেই লিখবো  Heart
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#6
দাদা, একটা ইনডেক্স দিয়েন কাইন্ডলি, আপডেটগুলো দেখতে সুবিধা হতো। ধন্যবাদ। চালিয়ে যান...
[+] 1 user Likes আয়ামিল's post
Like Reply
#7
[Image: 20201205-221537.jpg]

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে অনেক লিখলাম তাই ভাবলাম এবারে অন্য কিছু লিখি. তাই এই ছোট্ট এক আপডেটের গল্প. এই গল্প ছোটদের হলেও আমাদের সকলের..... কারণ আমাদের ভেতরে আজও একটা বাচ্চা আছে. আমার গল্প সেই বাচ্চাদের জন্য. আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে.


বিল্টু কাঁধ থেকে স্কুলের ব্যাগটা নিচে রেখে গাছটার তলায় বসলো. মাটি থেকে একটা ঢিল তুলে পুকুরের জলে ছুড়ে মারলো সেটা. কয়েকবার লাফিয়ে কিছুদূর গিয়ে ডুবে গেলো সেটা. গেছে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো সে.

মনটা আজ সেরকম ভালো নেই ওর. ক্লাসে হারু স্যার সবার সামনে এমন ভাবে কান মুলে দিলো..... ব্যাটা নান্টু আর প্রবীর  দুজনে মুখ টিপে হাসছিলো. ইচ্ছে করছিলো গিয়ে দুটো চড় মারতে. হারু বাবুও কম জাননা.... আরে বাপু ওতো শাস্তি দেবার কি আছে? জানেনই তো যে বিল্টু অংকে একটু কাঁচা. তাই বলে ওরকম কান মূলবে? উফফফ... এখনো গরম হয়ে আছে কানটা. কিন্তু তার থেকেও গরম মাথা.

ব্যাটা আজ যদি মাঠে গিয়ে নান্টু ব্যাটাকে গুনে গুনে পাঁচটা গোল না দিয়েছে তো নিজের নাম পাল্টে ফেলবে বিল্টু. নিজে ব্যাটা অংকে গোল্লা পায়... আর অন্যের কান মোলা দেখে কি হাসি.

বিল্টু আসার সময় দেখেছিলো হারুদা, বদ্রিদা গল্প করতে করতে চ্যাটার্জী পাড়ার দিকে যাচ্ছে. নিশ্চই আজকে ওদের ম্যাচ আছে. দুজনেই ক্রিকেট ফুটবল দুটোই ব্যাপক খেলতে পারে.

বিল্টু আবার বদ্রীদার খুব বড়ো ফ্যান. যেভাবে পায়ের খেলা দেখায় ফুটবলে. সামনের মানুষটা বুঝতেই পারেনা কিকরে বল নেবে নিজের পায়ে. বদ্রীদা বলেছে ওকে শিখিয়ে দেবে.
কিন্তু... সে এখনো আসছেনা কেন? ওতো বলেছিলো এরকম সময় এখানে দেখা করতে. আজ নাকি কি জরুরি কথা আছে. এদিকে দেরি হচ্ছে. মা আবার বকাবকি করবে বেশি দেরি হলে. আসলে মা একটুতেই চিন্তায় পড়ে যায়. তবে মা আগলে রাখে বলেই বাবার পিটুনি কম খায় বিল্টু. নইলে তার শয়তানি দস্যিপনার জন্য বাবা পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতো. এইতো সেইবার খেলতে খেলতে বিল্টু এমন একটা লাথি মারলো ফুটবলে..... সেটা গিয়ে লাগলো সোজা রাস্তার কুকুরটার মুখে. আর অমনি হতচ্ছাড়া প্রতিশোধ নিতে তেড়ে এলো বিল্টুদের দিকে.

বিল্টুরা ততক্ষনে অদৃশ্য হয়েছে মাঠ থেকে. কেউ দৌড়ে গাছের ওপর, কেউ পাঁচিল টপকে বাইরে, কেউ পুকুরের জলে লাফ. কি ভাগ্য মাইরি..... সেদিন ওই সামনের রাস্তা দিয়েই তমাল কাকু যাচ্ছিলো. কুত্তাটা বিল্টুদের কাউকে না পেয়ে শেষে কিনা তেড়ে গেলো তমাল কাকুর দিকেই. আর বেচারা কাকুকে প্রানপনে দৌড়োতে হয়েছিল. আর সেইবার বিল্টু, বাবলু সন্তু কাজল মিলে আম বাগানে আম চুরি করছিলো. সেইসময় বিল্টু গুলতি দিয়ে অর্জুনের মতো আমের দিকেই তীর ছুড়লো..... ইয়ে মানে গুলতি দিয়ে ইঁটের টুকরোটা ছুড়লো ঠিকই কিন্তু সেটা বিল্টুকে ধোঁকা দিয়ে সোজা উড়ে গিয়ে পড়লো পাচু দাদুর টাকে.
দে দৌড় ওখান থেকে. যদিও পাচু দাদু লাঠি হাতে রেরে করে তেড়ে এসেছিলো কিন্তু বিল্টুদের ধরতে পারেনি. যদিও বিলটুকে দেখে ফেলেছিলো. আর তার ফল স্বরূপ পরের দিনই বাবার কাছে নালিশ আর তার ফলাফল উদুম ধোলাই.

আর সেইবারে প্রবীরকে ভুতের ভয় দেখানো. সেতো ব্যাটা এমন ভয় পেয়েছিলো যে পরেরদিন স্কুলেই আসেনি. সন্ধে বেলায় বিল্টু বাবলু আর কাজল মিলে ভোলার মাঠের সামনে লুকিয়ে ছিল. প্রবীর ব্যাটা ওই রাস্তা দিয়েই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলো. কাছাকাছি আসতেই বিল্টুর কালো চাদর জড়িয়ে আর দোকান থেকে কেনা ভুতের মুখোশ পড়ে প্রবীরের সামনে দাঁড়াতেই সে মহাশয় তো সাইকেল থেকে লাফিয়ে বাবাগো গেলাম গো ভুতে ধরলো গো বলে উল্টোদিকে দৌড়. যদিও বিল্টুরা ওই কান্ড দেখে হেসেই পাগল কিন্তু পরে নিজেরাই ওর সাইকেল প্রবীরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলো.

বেশ ডানপিটে বিল্টু. ভয় টয় সেরকম ওর নেই. এই তো সেইবার নান্টু আর বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলো একা একা ওই ভোলার মাঠের উত্তরের ওই ভাঙা পরিত্যক্ত বাড়িটা থেকে ঘুরে আসবে. বন্ধুরা বাইরে অপেক্ষা করবে. ঐদিকটায় কেউ যায়না. সবাই বলে ঐবাড়িতে কাকে যেন রাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়.

কিন্তু বিল্টু এসবে মানেনা. সে বাজি ধরে একাই গিয়েছিলো ওই বাড়িতে. যদিও ভেতরে ঢোকার সময় একটু গা ছম ছম করেছিল কিন্তু বীরত্ব দেখানোর আনন্দই আলাদা. তাই সাহস করে ঢুকে পড়েছিল ভেতরে.

আর সেই খানেই প্রথম দেখা সেই ছেলেটার সাথে. যদিও প্রথম দর্শনে ঐরকম পরিস্থিতিতে একটা আজব বস্ত্র পরিহিত মানুষকে দেখে বিল্টু তাকেই ভুত ভেবে চিল্লিয়ে উঠে ছিল. আর তার চিল্লানি শুনে ওই ছেলেটিও ভয় পেয়ে চিল্লিয়ে উঠেছিল.
এদিকে বাড়ির ভেতর থেকে চিল্লানি শুনে ঐরকম ভুতুড়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাটা আর সম্ভব হয়নি বাকি বন্ধুদের পক্ষে. যে যেদিকে পেরেছিলো দৌড় দিয়েছিলো.

বিল্টুও পালিয়েই আসছিলো কিন্তু একটা কিসে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছিলো মেঝেতে. একটু লেগেও ছিল. চামড়া ছুলে গেছিলো.

ওদিকে সেই ছেলেটিকে এগিয়ে আসতে দেখে বিল্টু তো ভয় ভয় রাম নাম নিতে শুরু করেছিল.
ছেলেটি হাসতে হাসতে ওর কাছে এসে বলেছিলো - আরে আমি ভুত নই.... ভয় পেওনা...

ছেলেটি বিল্টুর কাছে এসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হটাৎ থমকে গেলো. অবাক হয়ে বিল্টুর দিকে তাকিয়ে রইলো. যেন অদ্ভুত কিছু সে দেখে ফেলেছে. তারপর হেসে উঠলো ছেলেটা আনন্দে. 

যা বাবা..... পাগল নাকি? নাকি অভদ্র? এরকম অবস্থায় একজনকে দেখে হাসছে দেখো. একটু রাগ হলো বিল্টুর. সে বললো - হাসার কি আছে অমন করে? অন্যকে কষ্টে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা? নিজের হলে বুঝতে কেমন লাগছে.
ছেলেটা এবারে হাসি থামিয়ে বললো - সরি সরি.... আসলে আপনি যা ভাবছেন আমি সেই জন্য হাসিনি.

বিল্টু অবাক. এ ছেলে বলে কি? বয়সে ওর মতোই হবে... বা হয়তো সামান্য বড়োই হবে ওর থেকে. আর কিনা আপনি করে কথা বলছে? তারপর আবার ইংরেজিতে সরি? কেন বাপু... বাংলায় দুঃখিত বলতে কি হয়?

বিল্টু এবারে দাঁড়িয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে গিয়ে বাড়ির সিঁড়ির কাছে বসলো. ইশ...... বেশ অনেকটা কেটেছে. রক্ত বেরোচ্ছে. সব হয়েছে এই আধপাগল..... নানা... বদ্ধ উন্মাদটার জন্য.

ছেলেটাও এবারে বাইরে এসে বিলটুকে বললো - ব্যাথা লাগছে বুঝি খুব? বিল্টু খেপে গিয়ে বললো - না না.... দারুন লাগছে.... যত্তসব.

ছেলেটা এবারে ওর পাশে বসে পকেট থেকে কি একটা ছোট বাক্স বার করে তার থেকে একটা শিশি বার করে বিলটুকে বললো - দিন..... পা টা দিন....

বিল্টু খেপে গিয়ে বললো - আরে আমাকে কি বুড়ো দাদু মনে হয়? নিজে তো আমার থেকেও বড়ো.... আর আমাকে আপনি আপনি করে বলছে দেখো.... কেন? তুমি করে বলতে কি গায়ে লাগে?

ছেলেটি হেসে বললো - আচ্ছা দাও.. পা টা দাও... এটা লাগিয়ে দি... দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে.

বিল্টু রাগী সুরেই বললো - উহঃ.... এমন করে বলছে যেন এক্ষুনি আমার পায়ের ব্যাথা কমিয়ে দেবে.... এদিকে আমি হাঁটতে পারছিনা.. আর ইনি ডাক্তারি ফলাচ্ছেন.

ছেলেটা এবারে বিল্টুর অপেক্ষা না করে নিজেই পা টা নিজের কাছে টেনে ওই ক্ষত জায়গায় শিশি থেকে দু ফোঁটা কি ফেললেন. আর বিল্টু তারপর যা দেখলো তাতে সে অবাক হয়ে গেলো. ওর চোখের সামনে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে জায়গাটা আবার আগের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো. বিল্টু পা নাড়িয়ে দেখলো. না....... ব্যাথাটাও আর নেই. একি ভোজবাজি নাকি?
বিল্টু ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো. কে এ?
ছেলেটি বিল্টুর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে নিজেই বললো - আমার দিকে ওরকম করে দেখার কিছু নেই. আমি কোনো ম্যাজিশিয়ান নই. এটা এই ওষুধের জাদু.

বিল্টু - এইরকম জাদুর ওষুধ তুমি পেলে কোথায়? আমাদের এখানে তো এরকম ওষুধ নেই. আমাদের এখানে কারোর কিছু হলে ওই বুড়ো রাজেন ডাক্তারই ভরসা. কিন্তু এরকম ওষুধ আমি আগে দেখিনি.

ছেলেটি বললো - এতো আমাদের ওখানে সব জায়গায় পাওয়া যায়.

বিল্টু ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কোথা থেকে এসেছে. কিন্তু ছেলেটি সেইভাবে কিছুই বলেনি. বলেছিলো আমি অনেক দূর থেকে এসেছি..... ওখানে যাওয়া এই মুহূর্তে তোমার বা কারোর সম্ভব নয়. শুধু আমি পারি ওখানে যেতে. আচ্ছা.... আজ চলি... আবার দেখা হবে. আমি আবার রবিবার আসবো. ওই মন্দিরের পাশের পুকুরপাড়ে ১১টা নাগাদ আমাদের দেখা হবে.

এই ছিল ওদের প্রথম আলাপ. ছেলেটিকে প্রথম দেখে অবাকই হয়ে ছিল বিল্টু. কারণ ছেলেটার মুখের সাথে ওর নিজের মুখের বেশ অনেক মিল আছে. কিন্তু ছেলেটার জামা কাপড় বড়ো  অদ্ভুত. ফিরে আসার সময় বিল্টুর মনে পড়েছিল ছেলেটার নামই জানা হয়নি.

এরপর দ্বিতীয়বার দেখা ওই পুকুর পারে. সেদিন রবিবার বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন খেলতে খেলতেই ওর মনে পড়ে গেলো সেদিন দেখা করার কথা. বন্ধুদের মিথ্যে বলে ও চলে গেলো মন্দিরের দিকে. মন্দিরের পেছনে একটা কুকুর চারটে বাচ্চা দিয়েছে. মাঝে মাঝেই বিল্টু ওখানে গিয়ে ছানা গুলোকে আদর করে আর ওদের মাকে বিস্কুট দেয়.

আজকে গিয়ে ও দেখলো ছানা গুলো মায়ের দুধ খাচ্ছে আর ওদের সামনেই দাঁড়িয়ে সেদিনের অচেনা ছেলেটি দুই হাতে কি একটা ধরে কি যেন করছে. বিল্টু আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো ছেলেটার হাতে কালো রঙের পাতলা লম্বাটে কি একটা জিনিস. আর সেটা ধরেই ছেলেটা কি যেন করছে.

বিল্টু এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ছেলেটা চমকে উঠলো.  তারপর বিলটুকে দেখে বললো - ওহ... তুমি.... আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম.

বিল্টু - এটা কি? কি করছো তুমি এটা ধরে?

ছেলেটা - ছবি তুলছি... কি সুন্দর কুকুর ছানা গুলো.

বিল্টু ছেলেটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো. ছবি তুলছে? কিন্তু ক্যামেরা কোথায়?

ছেলেটা - এইতো ক্যামেরা....

বিল্টুর এবার হাসি পেয়ে গেলো. বলে কি এ? ঐটুকু জিনিসটা কিনা ক্যামেরা. বিল্টুর জেঠুর বন্ধুর একটা ক্যামেরা আছে. সেটা ও দেখেছে. বেশ বড়ো আর ভারীও. আর এই ছেলের হাতের ঐটা নাকি ক্যামেরা?

এটা ওকে বলতেই ছেলেটা হেসে বলেছিলো..... এটাই তো তফাৎ তোমাতে আমাতে. এই ছোট্ট জিনিসটাই ক্যামেরা. দাড়াও এই দেখো. অমনি ওই জিনিসটা বিল্টুর দিকে করে কি একটা করতেই অমনি ওই কালো জিনিসটার থেকে ঠিক ক্যামেরার মতোই চোখ ধাঁধানো আলো ছিটকে বেরোলো আর তাতে চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্ধকার নেমে এসেছিলো বিল্টুর.

ছেলেটি তারপর ওর কাছে এসে কালো জিনিসটাতে ওকে দেখিয়েছিলো বিল্টুর ছবি. অবাক হয়ে বিল্টু সেদিন দেখেছিলো সেই ছবি. তাও আবার এতো সুন্দর,রঙিন. বিল্টু অবাক হয়ে নিজের ছবি দেখেছিলো সেদিন. ভারী অদ্ভুত জিনিস তো. ছেলেটা বলেছিলো ওই কালো পাতলা জিনিসটার আরো গুন আছে. এই বলে বিল্টুকে অবাক করে দিয়ে ওকে একটা রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছিল ছেলেটা.

ভারী অদ্ভুত জিনিস তো.... আকৃতিতে ঐটুকু... অথচ ঐদিকে কত কি কাজ করা যায়. ওটার নাম জানতে চাওয়ায় কি একটা "স্মার্টফোন" না কি যেন নাম বলেছিলো. জিনিসটা বিল্টুর এতোই ভালো লেগেছিলো যে ও ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিল এই জিনিস কোথায় কিনতে পাওয়া যায়. তাতে ছেলেটি বলেছিলো এই জিনিস এই মুহূর্তে কোথাও পাবেনা তুমি. এই সময় কোথাও পাওয়া যাবেনা.

বিল্টু ওকে জিজ্ঞেস করেছিল তাহলে তুমি কোথায় পেলে? তাতে ও হেসে বলেছিলো ও তুমি বুঝবেনা. সেদিনও আর নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি ছেলেটার.
তারপর শেষ দেখা হয়েছিল তিনদিন আগে. এই পুকুরপাড়ে. দেখে মনে হচ্ছিলো বেশ মন খাড়াপ. বিল্টু ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে?
ছেলেটা পুকুরের জলে তাকিয়ে বলেছিলো - এই সুন্দর পরিবেশ দেখছি...... দেখছি এই জল, জলে ওই হাঁসগুলো, এই পরিষ্কার আকাশে উড়ন্ত পাখি গুলো, মাঠে খেলতে থাকা ছেলে গুলো..... প্রানভরে দেখছি এগুলো আর ভাবছি..... তুমি কি ভাগ্যবান.
যা বাবা..... এসব আবার কি আবোল তাবোল বলছে রে ছেলেটা? বিল্টু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে - এসব আবার কি বলছো? এগুলো আবার এরকম ভাবে দেখার কি আছে? এতো আমি রোজ দেখি. আমি রোজ এই মাঠে খেলি, জলে সাঁতার কাটি, সরস্বতী পুজোয় ঘুড়ি ওরাই..... এতো আমরা সবাই করি.
ছেলেটা বিল্টুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলেছিলো - তাইতো বললাম তুমি বা তোমরা অনেক ভাগ্যবান. কারণ তোমরা খেলতে জানো, খেলতে খেলতে ব্যাথা কে অনুভব করতে জানো, জানো পড়াশুনার গুরুত্ব, জানো হেরে যাওয়ার দুঃখ, উন্নতির স্বাদ নিতে জানো, দুঃখে পাশে দাঁড়াতে জানো, জানো হাসাতে, জানো বাঁচতে. আর আমরা...........

এই টুকু বলেই চুপ করে গেছিলো. সামনের রাস্তা দিয়ে কয়েকটা পুচকে সাইকেলের টায়ার নিয়ে গড়াতে গড়াতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো...চাকার সাথে ওরাও দৌড়োচ্ছিলো. যেই ওটার গতি কমে যাচ্ছে.... অমনি একটা ছেলে একটা লাঠি দিয়ে মেরে ওটার গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিলো. বিল্টু দেখলো তার নতুন বন্ধু হা করে ওই খেলা দেখছে. যেন জীবনে প্রথমবার এমন কিছু দেখলো. চোখে মুখে একটা আনন্দ ফুটে উঠেছিল ছেলেটার. বিল্টু ভাবছিলো এ আবার এমন করে হা করে দেখার কি আছে? ছোটবেলায় কত খেলেছে এরকম ও.
বাচ্চা গুলো চলে যাবার পর আবার ছেলেটার মুখটা ভার হয়ে গেছিলো. তারপর বিল্টুর দিকে তাকিয়ে বলেছিলো - প্রানভরে এই প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করো. কারণ একদিন আর এসব কিছুই থাকবেনা.

বিল্টু - কেন?

ছেলেটা - কারণ একদিন আর তুমি এরকম ছোট থাকবেনা.... বড়ো হয়ে যাবে.

বিল্টু গোমড়ামুখে বলেছিলো - ধুর..... আমি তো চাই বড়ো হতে... তখন না থাকবে পড়াশুনার চাপ, না বাবা মায়ের বকুনি, না তাড়াতাড়ি ঘুমোনো, না স্কুলের পরীক্ষা.... শুধু আনন্দ.

ছেলেটা মুচকি হেসে বলেছিলো - হ্যা.... তা ঠিকই.... থাকবেনা পড়াশুনা...... তখন থাকবে সেই পড়াশুনাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা প্রমানের লড়াই, থাকবেনা বাবা মায়ের বকুনি..... যে বকুনির মধ্যে থাকে আমাদের প্রতি চিন্তা ভালোবাসা, থাকবেনা তাড়াতাড়ি ঘুমোনো..... হয়তো দেখলে ঘুমোই আসবেনা কখনো কখনো নিজের যোগ্যতা প্রমানের লড়াইয়ের চিন্তায় , হ্যা....থাকবেনা স্কুল.... যে স্কুল তোমায় শিক্ষা দিয়েছে, যে স্কুলে তুমি শিক্ষকদের থেকে শিক্ষা পেয়েছো, যে স্কুলের মাঠে তুমি বন্ধুদের সাথে খেলা করেছো, ভুলে পেয়েছো শাস্তি আর গুনে পেয়েছো প্রশংসা........ আর শেষে কি বললে আনন্দ? হ্যা.... জীবনে আনন্দ তো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার.... কিন্তু তার বিপরীতটাকেও ভুলে যেওনা..... জীবন সবসময় তোমায় আনন্দ দেবেনা..... দুঃখও দেবে... হয়তো দ্বিতীয়টাই বেশি দেবে.... কিন্তু তাও এগিয়ে যেতে হবে. এটাই তো লড়াই..... আর এই লড়াই করতে করতে প্রতি মুহূর্তে তোমার সেদিন মনে হবে এর থেকে ছোটবেলাই অনেক ভালো ছিল. প্রতি মুহূর্তে আজকের এই সময় গুলো মনে পড়বে তোমার. আজ তুমি ভাবছো বড়ো হবার পর আর কেউ তোমায় বকবেনা.... কিন্তু সেদিন.... তুমি এই বকুনি, এই শাস্তি গুলোই ভেবে হাসি দুঃখ দুই পাবে.... এই বকুনি গুলো ছিল বলেই তোমার ভবিষ্যত সুরক্ষিত. তবে হ্যা..... প্রগতি তোমায় অনেক কিছুই দেবে কিন্তু তোমার থেকে কেড়েও নেবে অনেক কিছু. তোমায় প্রগতি সাফল্য দেবে, কিন্তু কেরে নেবে তোমার সরলতা, তোমায় সুরক্ষিত ভবিষ্যত দেবে প্রগতি... কিন্তু কেরে নেবে তোমার অতীত. অতীত শুধুই অতীত হয়ে থাকবে.... অতীতের শিক্ষাও হয়তো আর সেই ভবিষতে কাজে লাগবেনা. প্রগতি দেবে তোমায় বড়ো বড়ো বাড়ি গাড়ি..... কিন্তু কেরে নেবে এই সুন্দর সবুজ গাছপালা, নীল আকাশ. প্রগতি দেবে তোমায় নামি মানুষের সান্নিধ্য... কিন্তু হারিয়ে যাবে ছোটবেলার সেই বন্ধুরা.... যাদের সাথে সাঁতার কেটেছো, মাঠে খেলেছো.... ঝগড়া করেছো. প্রগতি তোমায় শেখাবে নকল বন্ধুত্ব কিন্তু কেরে নেবে সেই সত্যিকারের বন্ধুত্ব. তাইতো বলি এই ছোটবেলা কে প্রানভরে উপভোগ করো.... কারণ একদিন তুমি বার বার ফিরে পেতে চাইবে এই দিনগুলো কিন্তু আর পাবেনা. আমি জানি... আমি বুঝি,  আমি আমার বর্তমানকে মাথায় রেখেই তোমায় এগুলো বললাম. তাই আমি যখনি এখানে আসি এই প্রকৃতির  ছবি তুলে বেড়াই, কারণ এখন তো আর এসব........ 
আর কিছু বলেনি ছেলেটা. বিল্টু হা করে শুনেছিলো ছেলেটার সব কথা. বাড়ি এসে ভেবেছিলো ছেলেটার সব কথা. আর অবাক হয়েছিল এই ভেবে যে ওর বয়সী একটা ছেলে এতো গভীর কথা কিকরে বললো? এসব নিয়ে ভাবনা তো ওর কখনো আসেনি.... কিকরেই বা আসবে? ওর বয়সী বা কত? কিন্তু এই ছেলেটা কি করে এরকম সব কথা বললো? এই বয়সে এতো জ্ঞান?

এইসবই চোখ বুজে ভাবছিলো বিল্টু আজ আর তখনি গায়ে কে যেন ধাক্কা দিয়ে বললো - ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? চোখ খুলে দেখলো ওর নতুন বন্ধু. আশ্চর্য তো.... ছেলেটা কখন এলো? আর এসে ওর পাশে বসলোই বা কখন? ওতো কোনো পায়ের আওয়াজ পায়নি.

বিল্টুর মাথায় বেশ কয়েকদিন ধরে যে প্রশ্নটা ছিল সেটা আজ শুরুতেই জিজ্ঞেস করলো - আচ্ছা তুমি কে বলতো? তুমি থাকো কোথায়? আর আসোই বা কখন?

ছেলেটা হেসে বললো - বাবা.... এতো প্রশ্ন? আচ্ছা সব বলছি.... আজ সব বলবো বলেই তো এসেছি.... আজই তো আমাদের শেষ দেখা. আর আমি আসবোনা কোনোদিন.... আর আমাদের দেখা হবেনা.

বিল্টু এটা শুনে একটু দুঃখই পেলো. এই কয়েকদিনে ওর ভালো লেগে গেছিলো নতুন বন্ধুকে. বিল্টু গম্ভীর গলায় বললো - আর আমাদের দেখা হবেনা?

ছেলেটা হেসে বলেছিলো - না..... এই আমাদের শেষ দেখা বন্ধু.
বিল্টু - তুমি এই কয়দিনেই আমার ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলে... ভেবেছিলাম আমার বন্ধুদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো. আমরা সবাই মিলে মাঠে খেলবো.

ছেলেটাও একটু দুঃখী মুখে বললো - আমার পক্ষে আর তা সম্ভব নয়.... বার বার ব্যাবহারে মেশিনে খুব চাপ পড়ে গো.... বাবা বলেছে আর নয়.... এই শেষবার.

বিল্টু অবাক হয়ে বললো - মেশিন? কিসের মেশিন?

ছেলেটা - আমার এখানে আসার মেশিন. তোমরা যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে গাড়ি ঘোরা মানে যানবাহন ব্যবহার করো... আমি তেমনি আমার বাহন ব্যবহার করি.
বিল্টু - কোই তোমায় বাহন? আমিতো কোথাও কোনোদিন তোমার বাহন দেখিনি.

ছেলেটা হেসে নিজের পকেট থেকে একটা ঘড়ির মতো জিনিস বার করে দেখালো বিলটুকে. তাতে একজায়গায় লেখা ডেস্টিনেশন - 11-11-1987 আর আরেক জায়গায় লেখা আরেকটা টাইম - 11-9-2059. আর আরেক জায়গায় খুব দ্রুত একটা কাউন্টিং হয়েই চলেছে.

কি অদ্ভুত ঘড়ি রে বাবা. বিল্টু জিজ্ঞেস করলো - এ আবার কিরকম ঘড়ি? আজব তো?

ছেলেটা হেসে বললো - এটাই আমার বাহন.... এটার সাহায্যেই আমি এখানে আসি.

এটা শুনে আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলোনা বিল্টু. কি অদ্ভুত কথা...... ওকে কি ছেলেটা এতটাই বোকা ভেবেছে? এই ঘড়ির সাহায্যে ও এখানে আসে? বিল্টু হাসতে হাসতে বললো - আমাকে কি এতটাই বোকা মনে হয়? নাকি পাগল মনে হয়? তুমি চাও যে আমি বিশ্বাস করি যে তুমি এই ঘড়ির সাহায্যে এখানে আসো? ইয়ার্কি হচ্ছে?

ছেলেটা হেসে বললো - আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবেনা উজ্জ্বল. তুমি কেন.... কেউই আজকের সময় একথা মানবেনা. কিন্তু সত্যি এটাই... আমি শুধু এই জায়গার নয়... এইসময়ের এক অতিথি মাত্র.

ছেলেটার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে গেলো বিল্টু. ওতো কোনোদিন নিজের আসল নাম একে বলেনি. তাহলে ও জানলো কিকরে ওর নাম উজ্জ্বল? তারপরেই ভাবলো এটা আর এমন কি? কারোর থেকে নিশ্চই জেনেছে. এবারে একটু রাগই হলো হলো বিল্টুর. এইসব চালাকি করে ছেলেটা কি প্রমান করতে চাইছে?

বিল্টু এবারে একটু রেগেই জিজ্ঞেস করলো - তুমি কে বলতো? এসব করে কি প্রামান করতে চাইছো? তুমি কি ভাবছো আমি তোমার চালাকি ধরতে পারবোনা.... আমার নাম বলেছো বলে কি ভাবছো আমি তোমার এসবে বিশ্বাস করবো যে তুমি এই ঘড়ির সাহায্যে এখানে আসো?

ছেলেটা হেসে বললো - এটা কোনো সাধারণ ঘড়ি নয় গো.... এটা টাইম মেশিন.... এর সাহায্যে আমি আসি আমার সময় থেকে তোমাদের সময়.

বিল্টু - মানে? টাইম মেশিন? সে আবার কি?

ছেলেটা - এর সাহায্যে এক সময় থেকে আরেক সময় যাওয়া যায় বুঝলে?

বিল্টু উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বললো - বটে? গুল মারার আর জায়গা পেলেনা? অন্য সময় থেকে এখানে আসো? তা কোন সময় থেকে আসো শুনি?

ছেলেটা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বললো - আমি ভবিষ্যত থেকে আসি বন্ধু..... আমি জানি তুমি আমার একটা কথাও বিশ্বাস করছোনা... করার কথাও নয়.. কিন্তু সত্যি এটাই. যতটা সত্যি এই মুহুর্ত ততটাই সত্যি আমার উত্তর.

বিল্টু : বটে? তাই নাকি? তা কিকরে আমি বিশ্বাস করবো? আমি সবসময় নিজে না দেখে কিস্সু বিস্বাস করিনা.... আগে প্রমান দাও.

ছেলেটা দুবার মাথা নেড়ে ওই ঘড়িতে কিসব টিপলো তারপর বিলটুকে বললো - তোমার হাত দাও. প্রমান দিচ্ছি.
বিল্টু হাত বাড়াতেই ছেলেটা ওর হাত ধরলো আর বললো - প্রমান দিচ্ছি কিন্তু কথা দাও চেঁচাবেনা... আর আমাদের এই কথা কাউকে বলা যাবেনা.... বললেই কেউ বিশ্বাস করবেনা যদিও.

বিল্টু - বেশ...আগে প্রমান তো দাও দেখি.

ছেলেটা বিল্টুর হাত ধরে ওই ঘড়িতে কি একটা টিপলো আর তারপর কয়েক সেকেন্ড বিল্টুর কিছু মনে নেই. চোখের সামনে একবার উজ্জ্বল আলো লাগায় চোখ বুজে ফেলেছিলো. যখন তাকালো তখন ও দেখলো ও দাঁড়িয়ে ওরই বাড়ির সামনে.

বিল্টু ছেলেটাকে বললো - আমি..... আমি এখানে এলাম কিকরে? আমরা তো পুকুরপাড়ে ছিলাম?

ছেলেটা হেসে বললো - এবারে বিশ্বাস হলো?

বিল্টু ছেলেটার হাত ছাড়িয়ে বললো - না.... তুমি কোনো চালাকি করেছো...দাড়াও আমি মাকে ডাকছি...

এই বলে বিল্টু বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো. বাড়িতে কি অন্যদিনের থেকে একটু আলাদা লাগছে? একি!! পেয়ারা গাছটা এতো ছোট লাগছে কেন? আর বাড়ির সামনে এতো পরিষ্কার কিকরে হলো? এইতো সেদিন বাইরের দেয়ালে একটা বাছুরের ছবি এঁকেছিল বিল্টু রং পেন্সিল দিয়ে.... গেলো কোথায় ওটা?
বিল্টু ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় একটা ছোট্ট বাচ্চার হাসির আওয়াজ পেলো ও. বাড়িতে কি কেউ অতিথি এসেছে? বিল্টু আগে জানলায় চোখ রাখলো আর রাখতেই ও যা দেখলো তাতে ওর গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো.

ভেতরে ওর নিজের বাবা আর মা আর ওদের সামনে একটা ছোটো বাচ্চা. হাত বাড়িয়ে মায়ের কোলে ওঠার বায়না করছে. মায়ের আর বাবার দুজনরই বয়স যেন অনেক কম লাগছে. বাবার মাথায় মাথা ভর্তি চুল, মাকে অনেকটা রোগা লাগছে.

এসব কি দেখছে কি ও? এমন সময় পেছন থেকে ছেলেটা ওর কানের কাছে মুখ এনে বল্ল - কি? এবারে বিশ্বাস হলো?

বিল্টু ওরদিকে ঘুরে বললো - এ কি.... বাবা মা.... এতো আলাদা লাগছে কেন? আর.. আর ওই বাচ্চাটা?

ছেলেটা মুচকি হেসে বললো - ওটা আর কেউ নয়.... ওটা তুমি.

বিল্টু কি বলবে বুঝতে পারছেনা.... চোখের সামনে যা দেখছে তা বিশ্বাস করা যায়না. নিজের গায়ে চিমটি কাটলো ও. উত্তেজনায় হয়তো একটু জোরেই কেটেছিল চিমটিটা . ব্যাথায় মুখ দিয়ে আহ্হ্হঃ আওয়াজ বেরিয়ে গেলো. আর সেই আওয়াজে ওর বাবা বলে উঠলো এই বাইরে কে রে?

ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে বিল্টুর হাত ধরে টেনে গোয়াল ঘরের পেছনে লুকিয়ে পড়লো. বিল্টু দেখলো ওর বাবা বাইরে এসে এদিক ওদিক দেখছে. না...... এই বাবা আজকের বাবা নয়.... ইনিতো অনেক যুবক.... মাথা ভর্তি চুল, বাবার ভুঁড়িটাও নেই. ওদিকে মাকেও একদম আলাদা লাগছে. না চাইতেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো বিল্টু.

একটু পরে আবার বোতাম টিপে ওরা নিজ পূর্বের স্থানে ফিরে এলো. বিল্টু হা করে তাকিয়ে ওই ঘড়ির দিকে. কি আশ্চর্যজনক, কি অদ্ভুত জিনিস!! অতীতে যাওয়া যায় এই ঘড়ির সাহায্যে! ইশ... যদি অতীতের বাবা মায়ের সাথে দেখা করা যেত. কথাটা ছেলেটাকে বলাতে সে বললো বাবা মায়ের আদর তো পেতেই না উল্টে তোমার বাবা তোমায় পাগল ভেবে লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন. কারণ তখন তোমাকে তিনি চেনেনই না.... ওনার সন্তান তখন ওই শিশু.

বিল্টু মাথা চুলকে বললো - তাও ঠিক..... আচ্ছা এবারে তুমি বলতো.... তুমি এখানে এসেছো কেন? কিছু কাজে?

ছেলেটা ঘড়িটা পকেটে রেখে বললো - নাহ..... আমি এসেছি এই সময়টা নিজের চোখে উপভোগ করতে.... এই প্রকৃতি নিজের চোখে দেখতে. আমার দাদু আমায় বলেছে এই সময়ের কথা. সব শুনে আমি আর লোভ সামলাতে পারিনি. এসেছিলাম নিজের চোখে ঘুরে ঘুরে সব দেখবো বলে. আর এসে আমি যেন হারিয়ে গেছিলাম এই সময়.

বিল্টু - কেন? এমন কি আছে এই সময়?

ছেলেটা - পরিষ্কার বাতাস, চারিদিকে সবুজ, নীল আকাশ, সবার মুখে হাসি, সবাই মিলে হৈ হৈ করে আনন্দ করা, সকলের প্রতি ভালোবাসা, মন থেকে উৎসব পালন ..... আরো কত কি..

বিল্টু : কেন? তোমাদের ওখানে এসব নেই নাকি?

ছেলেটার হাসি মিলিয়ে গেলো. বললো - ওই যে বললাম...... ভবিষ্যত বা প্রগতি যেমন কিছু দেয় তেমন অনেক কিছু কেড়েও নেয়.... আর এর জন্য দায়ী মানুষই. আধুনিকতার লোভ মানুষের ভেতরের মানুষটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে. আজ আমাদের কাছে অনেক কিছু আছে জানো.... উড়ন্ত গাড়ি, বড়ো বিশাল বাড়ি, টিভি, টিভিতে লক্ষ লক্ষ চ্যানেল, মোবাইল, vr box, Ai robot সব. এককথায় ঘরে বসেই আমরা সব কিছু হাতের মুঠোয় পেয়ে যাই. 

বিল্টু ছেলেটার কথার অর্ধেক কিছুই বুঝলোনা. শুধু বুঝলো আধুনিকতার ম্যাজিক অসাধারণ. অবাক হয়ে বললো - কি বলছো কিগো? উড়ন্ত গাড়ি? মানে আকাশে গাড়ি উড়ছে? আরিব্বাস!! দারুন ব্যাপার তো.... এই আমাকেও দেখাও না এসব.

ছেলেটা বললো - বিশ্বাস করো.... ভবিষ্যত তোমার অতটাও ভালো লাগবেনা.... কারণ এসব পেলেও.... তুমি কথাও সবুজ রং বা নীল রং খুঁজে পাবেনা, পাবেনা একটাও হাসি মুখ, পাবেনা আড্ডা দেওয়া মানুষের দল, শুধু দেখবে হাজার হাজার মানুষের দল চলেছে..... তাদের একটাই লক্ষ সাফল্য আর সাফল্য.

বিল্টু - সফল হতে সবাই চায়... বাবা বলে জীবনে সফল হওয়া খুব জরুরি... তাহলে এতে খারাপ কি?

ছেলেটা বললো - একদম ঠিক বলে তোমার বাবা..... কিন্তু যে সাফল্য মানুষের ভেতরের ইচ্ছে, আনন্দ দুঃখ সব ভুলিয়ে লোভের দিকে চালিত করে সেই সাফল্য ক্ষতিকারক উজ্জ্বল. সেই সফলতা তোমায় অনেক কিছু দেবে কিন্তু তুমি নিজের কাছেই হেরে যাবে. আমি জানি..... আমি দেখেছি. আমি দেখেছি আমার নিজের পরিবারের লোকেদের, নিজের বাবা মাকে. আমি তোমাকে তা দেখাতে চাইনা বন্ধু. তুমি খুব ভাগ্যবান তোমার বাবা মা তোমায় বকেন, আবার আদরও করেন কিন্তু আমি এটার কিছুই সেইভাবে পাইনা..... না বাবার স্নেহ না মায়ের ভালোবাসা. প্রগতির পথে তারা শুধুই এগিয়ে চলেছে সফল হতে. আমার দাদু আমায় রোজ নিজের অতীতের কত ঘটনা বলতেন.... তাঁদের ছোটবেলার খেলা, দুস্টুমি কতকি.... এইসব শুনেই আমি বড়ো হয়েছি. তারপর একদিন তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে. আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি, বাবার কাছে বার বার বলি দাদুর গ্রামে ঘুরতে আসার জন্য. শেষে অনেক কষ্টে তাকে রাজি করাই বাবাকে. তিনি আমায় এখানে আসতে দিতে রাজি হন... আর আমিও চলে আসি এই মেশিনের সাহায্যে দাদুর গ্রামে বেড়াতে মানে এখানে . আমাদের সময় এই টাইম মেশিন অনেক ধোনিদের কাছেই আছে.

বিল্টু - মানে তোমার দাদু এই গ্রামেই থাকেন? দেখা হয়েছে তার সাথে?

ছেলেটা বললো - হ্যা..... হয়েছে.... তবে কি জানো.... আমি তাকে বলিনি আমি কে? বললে উনিও কি মানবেন কিছু?

বিল্টু ফিক করে হেসে বললো - হয়তো দেখলে তোমার কথা শুনে সেও লাঠি নিয়ে তোমায় তাড়া করেছেন.

ছেলেটাও হেসে উঠলো এটা শুনে. এমন সময় ওর পকেট থেকে পিই... পিই.... পিই করে আওয়াজ হতে শুরু করলো. ছেলেটি ঘড়িটা বার করে বললো - আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে বন্ধু. এবারে আমায় যেতে হবে. শুধু যাওয়ার আগে এইটুকুই বলে যাই জীবনে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত তিনেরই গুরুত্ব অনেক.... কিন্তু সব থেকে বেশি গুরুত্ব দাও বর্তমানকে, আজকে, এই মুহুর্তকে. কারণ ভবিষ্যত তোমার হাতে নেই আর অতীতও নয় কিন্তু এই মুহূর্তটা তোমার নিজের... একদমই নিজের তাই উপভোগ করো এটাকে.... কারণ এই মুহূর্ত আর কোনোদিন ফিরবেনা.... আমরা পেয়েছি আধুকিন জীবন.... আর তোমরা কাটাচ্ছ সত্যিকারের "জীবন". এই দুয়ের মধ্যে অনেক তফাৎ.... তাই জীবনকে উপভোগ করো. আমার দাদু আমায় শিখিয়েছেন-

হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর,
হও উন্নত শির, নাহি ভয় |
ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান, হও সবে আগুয়ান,
সাথে আছে ভগবান,—হবে জয় |

আসি বন্ধু......

বিল্টু অচেনা বন্ধুটার হাত ধরে বললো - আর আসবেনা তুমি? আর দেখা হবেনা কোনোদিন আমাদের?

ছেলেটা হেসে বিল্টুর হাতে হাত রেখে বললো - হবে..... আবার নিশ্চই দেখা হবে..... অন্যভাবে....অন্নরূপে....আজ আসি... বিদায়.

বিল্টু - তোমার নামটা বলে যাও?

ছেলেটা বললো - আমার নাম বিবেক.

বিল্টু - খুব ভালো নাম তোমার.

বিবেক হেসে বললো - দাদু রেখেছিলেন. এবারে যাই বন্ধু.

বিল্টু ভেজা চোখে বললো বিদায় বিবেক

বিবেক মুচকি হেসে হাত নাড়ালো আর মনে মনে বললো - বিদায় দাদু.




সমাপ্ত
[+] 3 users Like Baban's post
Like Reply
#8
(06-02-2021, 12:29 AM)Baban Wrote:
[Image: 20210206-000643.jpg]



Erotic গল্প দিয়ে আমার লেখক জীবনের যাত্রা শুরু. বেশ কয়েকটা উত্তেজক গল্প লিখেছি যেগুলি আপনারা পড়ে মজা পেয়েছেন, ভালোবেসেছেন, সাপোর্ট করেছেন. তাই সেই এরটিক লেখা থেকে বেরিয়ে যখন অন্যরকম লেখা লিখতে শুরু করলাম তখন বিশ্বাস ছিল সেই সময়ও আপনাদের পাশে পাবো এবং আমার বিশ্বাসের মর্যাদা আপনারা রেখেছিলেন. নতুন রোমান্টিক গল্পেও আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছিলাম. আর তারপর এই ছোট ছোট ভিন্ন স্বাদের গল্প লিখতে শুরু করলাম. আর সেখানেও আপনারা দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলেন আমার সেইসব লেখা. তাই ভাবলাম এবং পিনুরামদা-ও বললো  এগুলো  আলাদা আলাদা ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে একসাথে একটা নতুন থ্রেডে সযত্নে তুলে রাখি যাতে সবকটা গল্প আপনারা একসাথে  সহজেই পড়তে পারেন. খোঁজার প্রয়োজন পড়বেনা. আর নতুন  গল্প লিখলে সেটিও এই নতুন থ্রেডে পোস্ট করবো.


এটা তো দারুন খবর দিলে! বেশ ভালো কাজ করেছ এটা !!!!!! Heart Heart happy happy
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 1 user Likes pinuram's post
Like Reply
#9
[Image: 20201223-000806.jpg]


কাটলেটে শেষ কামড়টা দিতেই পিঠে হটাৎ একটা জোরে চাপড় পড়লো. ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে অবাক. সঞ্জয়!! এতো বছর পর!!

সঞ্জয় দুস্টু রাগী চোখেই তাকিয়ে বললো - কিরে শালা? কোথায় ছিলি এতো বছর? ব্যাটা সেই কলেজ শেষ হতে না হতেই গায়েব? শালা... তুমি বহুত চালু মাল হ্যা.... কলেজ শেষ তো বন্ধুত্বও শেষ?

আমি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলাম ওকে. তারপর বললাম - আচ্ছা তাই বুঝি? শালা তুমি যে প্রতিবার আমার পরীক্ষার খাতায় চক্ষুদান করতে.. তখন কি তোমায় আটকেছি? আর আমায় চালু বলছিস? তারপর হেসে বললাম - আরে কি করবো বল? তোর আর বাকিদের নম্বর গুলো আমার ফোনে ছিল... আর সেটাই গেলো চুরি... মানে  তারপর নানারকম ঝামেলা এই করো ওই করো..কিছু ফ্যামিলি প্রব্লেম ছিল... উফফফফ....তারপর তো আমরা অনেকদিন অন্য জায়গায় শিফট করেছিলাম. রাতুলের সাথে পরে দেখা হতে ও বলেছিলো তোরাও অন্য জায়গায় ফ্লাট নিয়ে চলে গেছিস. এদিকে আমিও নিজের জীবন নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম. ছাড় ওসব কথা. তা গুরু তুমি তো ফুলে গেছো ভাই? এতো ভুঁড়ি কিকরে এলো রে? খুব সাঁটাচ্ছিস না? 

সঞ্জয় পেটে হাত বুলিয়ে বললো - এটা কৃতিও বলে রে. কিন্তু কিকরবো বল... শালা কিছুতেই খাওয়া কমাতেই পারছিনা.

আমি চোখ মেরে বললাম - এইযে.... কৃতিটা কে হ্যা? আমাদের কলেজে কৃতি বলে তো কেউ ছিলোনা....

সঞ্জয় বললো - ওরে... সেই কচি বয়স কি আর আছেরে... যে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াবো... কলেজে অন্য জিনিস....তখন আলাদা ব্যাপার ছিল গুরু..... আজ তো আমার হাল দেখছিস.....কৃতি আমার ওয়াইফ. দাঁড়া... পরিচয় করিয়ে দি.....

এই কৃতি এদিকে এসো. 

আমি দেখলাম নীল সালোয়ার পরিহিতা এক বেশ সুন্দরী নারী হাসি মুখে আমাদের দিকে তাকালো. তারপর হাসি মুখে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো.

আমি নমস্কার করলাম. উনিও প্রত্তুতরে নমস্কার করলেন. তারপর উনি বললেন - দাদা..... আপনার কথা ওর থেকে অনেকবার শুনেছি. এখানে এসে আপনাকে দূর থেকে দেখে একবার আমায় বললো চেনা চেনা লাগছে. তারপর চিনতেই ছুটে গেলো আপনার কাছে.

আমি মুচকি হাসলাম.

তারপর কৃতি আমাকে একবার দেখে নিয়ে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো - দেখো.... দেখো নিজের বন্ধুকে.... কি হ্যান্ডসম... কি সুন্দর ভাবে আজও নিজেকে মেইনটেইন করেছেন... আর তুমি.... ইশ.... নিজের পেটের দিকে দেখো একবার.

সঞ্জয় আমার দিকে তাকিয়ে বললো - ওই... দেখলি? শুরু হয়ে গেলো.

আমরা তিনজনেই হেসে উঠলাম. তারপর ভদ্রতার খাতির আমিই বললাম - আয়না.... আমার এখানে বোস. তোরা কি অর্ডার দিয়ে দিয়েছিস?

সঞ্জয় বললো - আরে নারে..... আমরা তিনজন ঢুকে সবে বসেছি... এমন সময় তোর দিকে নজর গেলো আমার. আমার মনেই হচ্ছিলো ওটা তুই. তারপর তুই যখন ওয়েটার কে ডাকতে পাশে তাকালি... পুরো তোর মুখটা দেখতে পেলাম. তাই তো গিয়ে সোজা চাপড়.

আমি বললাম - ইশ.....ব্যাটা যা জোরে মারলি... উফফফ.....তোর শয়তানি গেলোনা... জানেন বৌদি? ব্যাটা.... কলেজে এইভাবেই রোজ আমায় চাপড় দিতো. 

তারপরই একটা কথা মাথায় এলো. জিজ্ঞেস করলাম - এক মিনিট... তুই কি বললি? তিনজন? আরেকজন কে?

সঞ্জয় মাথায় হাত রেখে জিভ বার করে বললো - এমা! দেখেছিস... মেয়েটাকে একা বসিয়ে চলে এসেছি. আমার স্ত্রীয়ের বান্ধবী. দাঁড়া পরিচয় করিয়ে দি..... এই অঞ্জলি.

নামটা শুনেই পলকের মধ্যে হাজার মুহুর্ত মনে পড়ে গেলো আমার.  কেমন একটা করে উঠলো বুকের ভেতরটা. এই নামটা..... এই নামটা কোনোদিন কি আমার পিছু ছাড়বেনা? ওই নামটাকে কি ভুলতে পারবোনা আর কোনোদিন? 

যাক গে..... মাথা থেকে সব ঝেড়ে ভদ্রতার খাতিরে হাসি মুখে সঞ্জয় যে দিকে তাকিয়ে আছে সেই দিকে তাকালাম.

নিজের নাম শুনে কিছুদূরে বসে থাকা মেয়েটি আমাদের দিকে ঘুরে তাকালো. আর তখনি মনে হলো পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে. তৎক্ষণাৎ আমার মুখ ঘুরিয়ে নিলাম.

এ কাকে দেখলাম আমি!! না না..... এতো বছর পর. আবার?

পায়ের শব্দ প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে আসছে. আর ততই দ্রুত হচ্ছে আমার বুকের ধুকপুকানি. শেষে আমার পাশে এসে সে দাঁড়ালো. 

সঞ্জয় হেসে তাকে বললো - হ্যা... আলাপ করিয়ে দি..... আমার কলেজ ফ্রেন্ড অনির্বান. 

হাসি মুখেই সে নিজের মুখ সঞ্জয়ের থেকে ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো. আর তারপরেই তার মুখের হাসিও মিলিয়ে গেলো. হাত দুটো নমস্কার করবে বলে জড়ো করতেই যাচ্ছিলো. দুই হাত সেই দূরত্বেই থেকে গেলো. আমার বুঝতে বাকি রইলোনা যে সামনের মানুষটার অবস্থাও আমার মতোই. তার ভেতরেও একটা ঝড় শুরু হয়েছে. অনেক মুহূর্ত তার সামনেও হয়তো ভেসে উঠেছে.

পরিস্থিতি সামলাতে আমি দুই হাত জড়ো করে বললাম - নমস্কার.

সেও অবাক হয়ে তারপর পরিস্থিতির গাম্ভীর্য বুঝে নকল হাসি হেসে আমায় নমস্কার জানালো.

এটা করতে যে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে বুঝলাম. আমারো তো একি অবস্থা.

আমরা সবাই একসাথেই খেতে বসলাম. আমি আর সঞ্জয় একদিকে আর অন্যপাশে দুই বান্ধবী. সঞ্জয় নিজেদের অর্ডার দিলো. আমি তো বেশ কিছুক্ষন আগেই এসেছিলাম তাই আমার খাওয়া শেষই হয়েছে গেছিলো. তবু বন্ধু জোর করে আবার আমার জন্য অর্ডার দিলো. আমি বারণ করলাম কিন্তু কে শোনে. খাবার আসলে সবাই খেতে লাগলাম. খেতে খেতে বার বার সামনের মানুষটার দিকে নজর চলে যাচ্ছিলো. আজও বেশি ঝাল খেতে পারেনা. তবু সেটাই বেশি করে খায় . বার বার নাক টানে. আজও তার পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না. শেষের চিকেনটা পুরো খেলনা. খাওয়া অনেক কমিয়ে দিয়েছে. একটু রোগাও হয়ে গেছে. না তবে সেই পাগল করা রূপটা একটুও কমেনি. সবুজ শাড়ীটাতে অসাধারণ লাগছে. 

আমার বন্ধুটি আবার খাবার সময় স্পিক্ টি নট. সব ভুলে মাংসের পা চিবোচ্ছে. কি মোটকুই না হয়েছে. কলেজের সময় থেকে কত পাল্টে গেছে ব্যাটা.

আরে ওকে কি বলছি? আমি কি পাল্টাইনি? হ্যা পাল্টেছি.... অনেক পাল্টেছি..... ওর থেকেও বেশি পাল্টেছি একসময়. বাইরে থেকে নয়.... ভেতর থেকে. আর সেটাই তো ছিল আমার.... না.... আমার কেন? আমাদের মাঝে দূরত্বের কারণ.

তাই হয়তো একবারও সোজা তাকিয়ে দেখতে পারিনি সামনে বসে থাকা সুন্দরী নারীটির দিকে. সবসময় খাবার অছিলায় চোখ নামিয়ে ছিলাম. আচ্ছা ও কি আমাকে দেখছে? নাকি একবারের জন্যও তাকায়নি? সত্যি কি তাকায়নি?

এদিকে আমার প্রায় দ্বিগুন গেরাচ্ছে সঞ্জয়টা. কৃতি নিজের স্বামীর খাওয়া দেখে আমায় ইশারায় ওকে দেখিয়ে বললো - দেখেছেন আপনার বন্ধুর কান্ড? কত বলি কন্ট্রোল করো, শুনবেই না কিছু.

সঞ্জয় মাংস চিবোতে চিবোতেই বললো - ওসব ডায়েটিং ফায়েটিং আমার দ্বারা হবেনা গুরু.... আমি এই বেশ আছি. খেতে দাও তো... খেতে দাও. দেখছিস ভাই.....? সবসময় আমার খাওয়া নিয়ে খোঁটা দেবেন ইনি. আরে বেচারা মানুষটার একটু খেতে ভালো লাগে আর সেটা নিয়ে এরকম অত্যাচার... উফফফ.

আমরা হেসে উঠলাম. তারপর হটাৎ একটা প্রশ্নবান ছুটে এলো আমার দিকে সামনের দিক থেকে.

দাদা.... আপনি কি বিয়ে করেছেন? নাকি এখনো অবিবাহিত?

সঞ্জয় বললো - হ্যা রে? সেটাতো জিজ্ঞেসই করা হয়নি.... এখনো unmarried নাকি..... অবশ্য যা হ্যান্ডসম হয়েছিস.... সত্যি যা লাগছেনা তোকে..উফফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে... হেব্বি মাল্লু কামাচ্ছিস না ? ওটাই তো আসল জিনিস... কি বল?

আমি মুচকি হাসলাম. দেখলাম সামনে বৌদির পাশে বসে থাকা মানুষটা একবার আমার দিকে তাকিয়ে আবার খেতে লাগলো.

কৃতি বৌদির প্রশ্ন শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না.... একজন সামনে উপস্থিত না থাকলে হয়তো মিথ্যেটাই বলতাম. কিন্ত......শেষমেষ সত্যিটাই বলে ফেললাম. আর কত এড়িয়ে যাবো এই সত্যিটা?

আমি - হ্যা... করেছি..... I mean করেছিলাম. কিন্তু আমাদের মধ্যে....

এইটুকু শুনেই আমার বন্ধু আর তার স্ত্রীর হাসিমুখটা শান্ত হয়ে গেলো. নিজেদের খাওয়া থেকে সবাই একটু বিরতি দিলেন শুধু একজন বাদে. সে একবারের জন্যও না তাকিয়ে নিজের ফোনে কি দেখছে আর খাচ্ছে.

সঞ্জয় - ওহ... সরি রে... আসলে আমরা.....তো.....

আমি হেসে বললাম - আরে দূর ব্যাটা.... এটাতো নরমাল ব্যাপার. আমাদের দুজনেরই প্রব্লেম হচ্ছিলো এই সম্পর্কটা এগিয়ে নিয়ে যেতে.... তার থেকে ভালো ছিল আলাদা হয়ে যাওয়া... আমরা সেটাই করেছি. 

কৃতি আর আমার বন্ধু নিজেদের চোখ চাওয়া চাই করে আবার খেতে লাগলেন. অর্থাৎ এই ব্যাপারে আর কোনো কথা নয়. আজ আমরা আর সেই কলেজের বিচ্ছু স্টুডেন্ট নই, পুরোপুরি প্রাপ্তবয়স্ক... তাই বুঝি কখন কোথায় ইতি টানতে হয় কথায়.

উফফফফফ পেট ভর্তি পুরো. ব্যাটা সঞ্জুটার জন্য এই অবস্থা. এবার কিছুক্ষন হাঁটা চলা না করলে শান্তি পাবনা.

বিল মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম. এবারে হোটেলে ফেরার পালা. কথা বলে জানলাম আমি যে হোটেলে উঠেছি ওরাও আজকেই সকালে সেই হোটেলেই এসে উঠেছে. এটাকে কি বলে ঠিক জানিনা. আকাশের দিকে তাকালাম. ভগবান? কি বলতে চাইছেন বলুনতো? কি ঘুরছে মাথায়?

 কাজের থেকে বিরতি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে এসে যে হটাৎ দ্বিতীয় দিনেই আমার সাথে এরকম কিছু হবে কে জানতো? যে অতীতকে একান্তে ভাববো বলে এসেছি, সেই অতীত নিজেই আমার সামনে এসে উপস্থিত হবে কে জানতো? 

 দুই বান্ধবী হেটে এগিয়ে গেছে তখন সঞ্জয় আমায় হালকা ধাক্কা মেরে সামনে দেখিয়ে বললো - কিরে? কেমন দেখলি? আমি বুঝেও না বোঝার ভান করে বললাম - খুব মিষ্টি একটা বৌ পেয়েছিস গুরু. ভেরি লাকি. সঞ্জয় কপালে হাত মেরে বললো - ধুর.. আরে ব্যাটা... আমার বৌয়ের কথা কে বললো? ওর পাশে যিনি হাঁটছেন...... কেমন লাগলো তাকে?

আমি একবার সামনে তাকিয়ে হেসে আবার সঞ্জয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম - ভালোই তো....

সঞ্জয় বড়ো বড়ো চোখ করে বললো - ভালো বলছিস কিরে? দারুন বল..... আরে প্রথমবার যখন আমি পরিচিত হয়েছিলাম.. তখন তো আমারই মাথা ঘুরে গেছিলো রে. না.... তাবলে ভাবিসনা ওকে খারাপ চোখে দেখি, মোটেও তা না কিন্তু সত্যি.... মেয়েটার মধ্যে একটা যোগ্য বৌ বৌ ব্যাপার আছে মানতেই হবে.... আমি তো দেখছি ওকে অনেকদিন.... সত্যি খুব ভালো মেয়ে. শান্ত, বেশি কথা বলেনা, আমার বৌয়ের মতো এতো রাগ করেনা. নম্র স্বভাবের.

আমার কেমন কেমন যেন লাগলো. সঞ্জয় কি বোঝাতে চাইছে আমায়? আমি তীক্ষ্ণ নয়নে ব্যাটার দিকে তাকিয়ে বললাম - হুমম  বুঝলাম.... তা বাবা ঝেড়ে কাশতো... কি বলতে চাইছিস.

আমার  হাতে কনুই মেরে ও  বললো - কি? পছন্দ?

আরে ধুর ব্যাটা.... একবার ওই রাস্তায় গিয়ে দেখেছি... আর নয় গুরু. এই বলে তাকালাম সামনের দিকে. দুই বান্ধবী হাসাহাসি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে. দুজনেই একবার পেছনে ফিরে আমাদের দেখলো. তারপর আবার সামনে চলতে লাগলো. যদিও কৃতি বৌদির পাশের মানুষটি আমাদের নয়, আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আর কিছুক্ষন ঐভাবেই তাকিয়ে তারপর মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল.

সঞ্জয় বললো - জানিস ওর ব্যাপারটাও তোর মতোই. তিন বছর আগে ওরও সেপারেশন হয়েছে. আমাদের সঙ্গে তো হটাৎ দেখা এই কয়েকমাস আগে একটা শপিং মলে. কৃতিই পরিচয় করিয়ে দেয় তখন.... আর তখনই সব জানতে পারি. ওর সঙ্গে কৃতির যোগাযোগ সেরকম ছিলোনা স্কুলের পর আর দেখা সেরকম হয়নি দুজনে. এবারে এতদিন পর দেখা. সব তখনই বলে ও. এতদিন পর বান্ধবীকে পেয়ে কৃতিও আর ছাড়লনা... বললো আমরা বেড়াতে যাচ্ছি তোকেও আসতেই হবে. সেতো আসতেই চায়না... জোর করে আমরা রাজি করালাম. কৃতি আমায় বলেছিলো সেই আগের বান্ধবী আর এখনকার অঞ্জলির মিল সেরকম নেই. হয়তো..... ওই ডিভোর্সের কারণেই..... আচ্ছা... এরকম একটা মিষ্টি মেয়েকে কোন বোকাচোদার ভালো লাগেনি বলতো? এরকম একজনকে পেয়েও তার মর্ম বুঝলোনা? শালা গান্ডু একটা.... কি বলিস? 

আমি কথাটা শুনে মাথা নিচু করে হেসেই বললাম - হ্যা...... গান্ডুই..... তাইতো.

আমার কবিত্ব আসেনা. নইলে সামনের ওই মানুষটার ওই একবার ঘুরে তাকানো দেখে আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল তা কাগজে লিখে ফেলতাম. যাইহোক হোটেলে পৌঁছে গেলাম একটু পরেই. বিদায় নেবার আগে সঞ্জয় বললো কাল ওদের ঘুরতে যাবার প্ল্যান আছে. সামনেই দারুন একটা জায়গা আছে. আমাকেও ওদের সাথে যেতেই হবে. কোনো ছাড়াছাড়ি নেই. শেষমেষ রাজি হতেই হলো. তারপর একে অপরকে goodnight জানিয়ে আমি ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলাম . কি মনে হতে কিছুদূর এগিয়ে একবার পেছন ফিরে তাকালাম. দেখলাম আমার বন্ধু ও তার স্ত্রী ঘরে ঢুকে গেছেন কিন্তু তাদের সঙ্গের মানুষটি নিজের রুমের দরজা খুলেও না ঢুকে আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে. চোখাচুখি হতেই মুখ নামিয়ে দ্রুত নিজের রুমে চলে গেলো. আমি নিজের রুমে চলে এলাম.

 না...... আর তাকাইনি ঘুরে.

 নিজের ঘরে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে বাবা মায়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে শুয়ে পড়লাম. না... ঘুম আসছেনা. কিকরে আসবে? আসার কথাও নয়. বার বার চোখের সামনে ভাসছে সেই সব স্মৃতি  গুলো. ফোনের গ্যালারিতে গিয়ে নিজের এক্স ওয়াইফের ছবি দেখতে লাগলাম. তার সাথে বেশ কয়েকটা ছবি তোলা ছিল আমার. ডিলিট করতে গিয়েও কেন জানি পারিনি. সেই ছবি গুলোই পাল্টে পাল্টে দেখতে দেখতে পাশে তাকিয়ে দেখি দুজন মানুষ দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছে. তার মধ্যে একজন পুরুষ একজন নারী. দুজনকেই চিনি আমি. একজন কে তো রোজ দেখি..... নিজের আয়নায়. আরেকজন তারই অর্ধাঙ্গিনী.

মেয়েটির চোখে জল. তাও এগিয়ে গিয়ে স্বামীর কাঁধে হাত রাখলো. কিন্তু শয়তান লোকটা এক ঝটকায় ওর হাত সরিয়ে স্ত্রীয়ের দুই কাঁধ ধরে ক্রুদ্ধ নয়নে বললো - গিভ মি মাই স্পেস. জাস্ট..... লিভ মি অ্যালোন. তুমি থাকোনা তোমার মতন.... আরে আমি কি তোমায় ভুলে অন্য মেয়েকে নিয়ে ফুর্তি করছি নাকি? আমি তো নিজের কাজ নিয়ে আছি নাকি? আরে আজ আমি একটা সুযোগ পেয়েছি নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাবার..... কেন আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছ... কেন?

মেয়েটি ভেজা চোখেই বললো - আমি তোমার এগোনোর পথে বাঁধা? এটা তুমি কি বললে?

লোকটি স্ত্রীকে ছেড়ে এগিয়ে গিয়ে দেয়ালে হাত রেখে বললো - আর নয় তো কি? বার বার কেন আমায় বিরক্ত করো. দেখো অঞ্জু  বোঝো একটু.... আমি তোমায় খুব ভালোবাসি কিন্তু এখন আমি প্রস্তুত নই এতো বড়ো দায়িত্ব নেবার. এটা আমার এগিয়ে যাবার সময়..... এসব ফালতু পিছুটান মাথায় নিয়ে চললে কাজ টাজ মাথায় উঠবে.

মেয়েটি - আমি তো তোমার কাছে আর কিছু চাইনি.... একটা বাচ্চা ছাড়া. তোমাকে তো সারাদিন কাছেই পাইনা.... সারা বাড়িতে একা কাটাই. অন্তত আমাদের বাচ্চা থাকলে তাকে নিয়ে সময় কাটাতাম. আর এটাও তোমার কাছে ফালতু ব্যাপার অনি?

আমি দর্শকের মতো শুধুই দেখছি সব. দেখলাম মেয়েটি বিছানায় বসে স্বামীর দিকেই তাকিয়ে রইলো. টপ করে একফোঁটা জল বেরিয়ে নিচে পড়লো. ওই শয়তান লোকটা বললো - আরে এসব সেন্টিমেন্টাল কথা বলে আমায় নরম করার চেষ্টা করোনা.... বোঝতোনা খাটনি কি.... ঘরে রানীর মতো থাকো... যা চাও তাই পাও... আমি যে কি করে অর্জন করি জানো? বোঝো? বুঝলে আর এসব বলতে না. আমাকে আমার মতো থাকতে দাওনা প্লিস...আগে নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে নি... তারপর সব হবে... ততদিন সময় চাইছি... এই হাত জোর করছি তোমার কাছে.... প্লিস .  উফফফ.

বেরিয়ে যাচ্ছিলো লোকটা. পেছন থেকে মেয়েটি বললো - তাহলে বিয়ে করলে কেন আমায়? যদি আমায় একটুও সময় দিতে না পারো তাহলে....

-আমি চাইনি. বললো লোকটি. আমি এই সময় চাইনি বিয়েটা করতে. বাবা মাকে বলেও ছিলাম কিছু বছর পর করবো.... কিন্তু তারাও এমন সব ইমোশনাল...সেন্টিমেন্টাল কথাবার্তা বলতে লাগলো.... রাজি হতেই হলো. সবাই যেন ইমোশনাল ফুল হয়ে যাচ্ছে. 

আমি তাকালাম লোকটার দিকে. দেখতে আমার মতোই. আমার মতো কেন? সেতো আমিই. আমারই তো অতীত এই শয়তান. সে আবার বললো - বাবা মায়ের কথা রাখতে রাজি হয়েছিলাম. আমি চাইনি এরকম একটা সময় বিয়ে করতে. ভালো আমিও বাসি তোমায়. সেটা তুমিও জানো. কিন্তু এই মুহূর্তে আমার কাছে আমার এম্বিশন আগে. আমি অনেক ঝামেলার মধ্যে বড়ো হয়েছি অঞ্জু. আমাদের একটা ভয়ানক সময় গেছে. প্রায় সব কিছু হারিয়ে গেছিলো আমাদের. নিজের লোকেরাই আমাদের পেছনে ছুরি মেরেছিলো. ওই সময় বাস্তব জীবনের ভয়ঙ্কর রূপটা দেখেছি আমি. আমি কখনোই চাইনি আমার নিজের ভবিষ্যত সেরকম হোক. তাই আমার কাছে আগে আমার ব্যবসা. আমি একটু একটু করে নিজের বিজনেসটা দাঁড় করাচ্ছি.... এখন এসব বাচ্চা টাচ্চা চেওনা. দেখো... সব হবে.... কিন্তু এখন না. আমি যা করছি আমাদের ভালোর জন্যই. আগে সবকিছু গুছিয়েনি তারপরে ভাবা যাবে. আর তাছাড়া সবে তো ৮ মাস হলো আমাদের..... এতো তাড়াতাড়ি কি হবে? আজকাল এতো তাড়াতাড়ি কেউ নেয়না..

মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে স্বামীর পিঠে হাত রেখে বললো - কিন্তু আমি যে একটু একটু করে তোমায় হারিয়ে ফেলছি..আগে যাও বা তোমাকে কাছে পেতাম কিন্তু এখন..... রোজ তুমি সকালে বেরিয়ে যাও... ফেরো সেই রাতে. আমাকে কতক্ষন সময় দাও বলো? আমি তোমায় কখনই আটকাইনি. আমি জানি তোমার কাছে তোমার কাজের মূল্য কি.... কিন্তু আমারো তো তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে. আমরা যতটুকু একে অপরকে পাশে পেয়েছি.... তা ভেবে বলতো? আমাদের বিবাহিত জীবন কি এইভাবেই চলবে? তাহলে এই সংসারের মানেটা কি?

মানুষটা এবারে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - এসব বলে কি বলতে চাইছো? আমি তোমায় খুশি রাখিনা? এই যে গলায় হারটা... এটা কে দিয়েছে? এই যে কানের দুল কার দেওয়া? এগুলো এমনি এমনি আসেনি... আমার এই সারাদিনের খাটনির ফলাফল বুঝলে.....এইযে এতো বড়ো বড়ো জ্ঞান দিচ্ছ.... আজ এগুলো যদি কিনে না দিতে পারতাম তখন নিজেই তো বলতে কার সাথে বিয়ে করলাম.... বৌকে কিছু দেবার দম নেই, সামর্থ নেই ... অযোগ্য লোক একটা.... কি বলতেনা? দেখো... টাকা আছে তো খুশিও আছে... নইলে না এসব জ্ঞান পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায় বুঝলে? যত্তসব...

এইবলে লোকটা বেরিয়ে গেলো. মেয়েটি স্বামীর চলে যাওয়া দেখে  বিছানায় বসে কাঁদতে কাঁদতে কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো.

আমার মনে হচ্ছিলো নিজের অতীতের ওই রূপটাকে গিয়ে কষিয়ে দুটো থাপ্পড় মারতে. কি হয়ে গেছিলো আমার তখন? শুধু টাকা- টাকা - টাকা. এই ঝগড়া প্রায় রোজ হতো দুজনে. আর সহ্য করতে পারেনি মেয়েটি. চলে যায় একদিন ঘর ফাঁকা করে. আমিও জোর করে আটকাইনি তাকে.  ফাঁকা বিছানায় ঘুমোতে প্রথম প্রথম ভালোই লাগতো. আর কেউ নেই বিরক্ত করার. পুরো সময় আমার . আর নেই কোনো বাড়তি দায়িত্ব. সারাদিন অর্থের পেছনে দৌড় করা ছাড়া কোনো কাজ নেই. ঘরে অর্থ আসছে. সাফল্যের মুখ দেখছি. কিন্তু যতদিন যেতে লাগলো ততো মনে হতে লাগলো সত্যি তো কেউ আর বিরক্ত করছেনা, কেউ তো ঝগড়া করছেনা, কেউ তো অপেক্ষা করে থাকেনা. ফাঁকা বাড়িটা সকালে যেমন ছেড়ে যায়, ফেরত এসে তেমনি পাই. মাঝে মাঝে একাকিত্ব অনুভব করে. কেমন যেন ভয় লাগতো. পাশে বার বার তাকিয়ে দেখতাম ফাঁকা জায়গাটা.

নতুন ফ্লাট নিলাম. ভেবেছিলাম একেবারে নতুন ফ্ল্যাটেই বাবা মাকে নিয়ে আসব. এবারে যদি একাকিত্ব দূর হয়. কিন্তু নিজের ঘরে ঢুকলেই আবার সেই একাকিত্ব. বাবা মা অনেকবার বলেছিলো আমাদের আলাদা না হতে কিন্তু তখন আমি আর আমি ছিলাম না. তখন আমি ছিলাম অর্থের উপাসক. শুধুই সাফল্য ছিল আমার স্বপ্ন. নিজের অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সাফল্যের ভবিষ্যত গড়ে তুলতে এতোই মশগুল ছিলাম যে কোনো কিছু তোয়াক্কা করিনি. নিজের বাবা মাকেও না. শুধুই অর্থ উপার্জন করে বাবা মায়ের হাতে টাকা তুলে দেয়াকেই ভেবেছি কর্তব্য পালন. 

আজ আমি সফল. হ্যা... বেশ ভালোই আছি. গাড়ি, ফ্লাট সব হয়েছে. কিন্তু আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই তখন নিজেকে দেখতে পাইনা. দেখি একটা কাপুরুষকে. যে জীবনের মানেটাই বোঝেনি. যে জীবনের মূল অর্থটাই বোঝেনা, যে সাফল্য আর সুখের মধ্যে ভারসাম্যটা অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছিলো.

আজ সে একা..... আমি একা. বাবা মায়ের সন্তান কিন্তু স্পেশাল কারোর একজন আর নই. আমি চাইলেই আবার সংসার করতে পারতাম. না..... পারিনি. পারিনি আর. ইচ্ছে হয়নি.... না.... বোধহয় এটা বলা ঠিক যে সেই মুখটা ভুলতে পারিনি . বার -বার বাবা মা বলেছে কিন্তু পারিনি.

থাকতে না পেরে খোঁজও নিতে চেয়েছি অতীতের চেনা মানুষটার. ফোন করেও ছিলাম কিন্তু ওপাশ থেকে উত্তর পাইনি. সে হয়তো নিজের জীবনে এগিয়ে গেছে ভেবে আর এগোতে পারিনি. তাছাড়াও কি মুখে দাঁড়াতাম তার সামনে? কি বলতাম তাকে?

না... আর খোঁজ নেওয়া হয়নি. ভুলতেও চেয়েছি, পারিনি. কিন্তু এটা বুঝেছিলাম ভালোবাসা আমার জীবনেও এসেছিলো. কিন্তু তাকে দুহাত বাড়িয়ে গ্রহণ করার পরিবর্তে নিজের ভুলে তাকে বর্জন করেছি. শুধুই কষ্ট দিয়েছি. আর শেষে হারিয়ে ফেলেছি আমার ভালোবাসা. ওই শুন্য স্থান আর কেউ পূরণ করতে পারবেনা. 

চোখে হালকা জল এসে গেলো . তারপর ছবিতে সুন্দরী মেয়েটার হাসি মুখটা দেখে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো- সরি. এক্সট্রিমলি সরি.

সকালে উঠে ফ্রেস হয়ে রেডি হয়ে নিলাম. চা খাচ্ছি  এমন সময় ফোন বাজলো. ফোন হাতে নিয়ে দেখি অচেনা নম্বর. আমিই রিসিভ করলে ওপাশ থেকে শুনলাম - উঠে পড়েছিস... চল জলদি রেডি হয়ে নে...খেয়েই বেরিয়ে পড়বো. একসাথে বাইরে খেতে যাবো. 

ভুলেই গেছিলাম কালকেই সঞ্জয়কে নিজের নম্বর দিয়েছিলাম. বাড়ি ফিরে ওরটা সেভ করতে ভুলেই গেছিলাম. কি মনে হতে আমি তখনি বললাম - হ্যা আসছি.... তা আমরা সবাই যাচ্ছি তো?

- হ্যা... সবাই... যদিও  অঞ্জলি বলছিলো ও বেরোবে না ....হোটেলেই থাকবে.... কিন্তু আমরা ঠিক রাজি করিয়ে নিয়েছি. আরে বেড়াতে এসে ঘরে বসে থাকা? কাভি নাহি!!
 নে চল... চল ব্যাটা তাড়াতাড়ি আয় নিচে.

একটু পরে রেডি হয়ে নিলাম. আমার মধ্যে কি যেন একটা পরিবর্তন এসেছে হটাৎ বুঝলাম. কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে. আয়নায় তাড়াতাড়ি একবার নিজেকে দেখে নিলাম. আশ্চর্য!আজ অনেকদিন পর নিজের মুখটা আয়নায় অন্যরকম লাগলো. কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে আমার মধ্যে কি?

সঞ্জয়কে আরেকবার ফোন করে ওরা রেডি হয়েছে কিনা জেনের নিয়েই বেরিয়ে গেলাম নিচে. বাইরে গিয়ে দেখি বন্ধু আর দুই মহিলা দাঁড়িয়ে. আমাকে আসতে দেখে দুজনের মুখে হাসি ফুটলেও একজন নিজের মুখ ঘুরিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো. আমিও আর না তাকিয়ে সঞ্জয়ের সাথে কথা বলতে লাগলাম.

আহা.... এবারে চলো যাই. বৌদির কথায় যথা আজ্ঞা দেবী বলে বন্ধুটি আমার গায়ে ঠেলা দিয়ে বললো - ভাই চল..... অর্ডার পালন করতেই হবে... নইলে বিপদ. আমরা হেসে বেরিয়ে পড়লাম.

বুঝলাম বন্ধুটি আমার বেশ খুশি আছে নিজের জীবনে. যতই বন্ধুকে দেখছি ততই নিজের ওপর লজ্জিত হচ্ছি. ওর জায়গায় আমি কি ছিলাম? দুজনকে একে অপরের সাথে কি ভালো লাগছে.  এটাই তো জীবনের আসল খুশি. একটু রাগ, একটু অভিমান, একটু ইয়ার্কি,দুস্টুমি আর অনেক অনেক ভালোবাসা. 

হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে আমার নজর চলে যাচ্ছে বেগুনি সালোয়ার কামিজ পরিহিতার দিকে. কি অসাধারণ লাগছে. কিন্তু সোজা চোখে তাকিয়ে দেখার অধিকার আজ আর নেই. সত্যি কি নেই? একটুও?

আমার বন্ধুটি হটাৎ আমার ঘনিষ্ট হয়ে গলা নামিয়ে বললো - আচ্ছা তখন তুই আমায় সবাই আসছে কিনা জিজ্ঞেস করলি কেন?

আমি কি বলবো বুঝতে না পারলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে বললাম - না মানে এমনি..... এই আর কি.

দুস্টু চাহুনি দিয়ে সে বললো - এমনি? আচ্ছা? এমনি? আমায় কি কচি খোকা ভাবো? কিছুই বুঝিনা হুম? 

মানে? বুঝেও না বোঝার ভান করে জিজ্ঞেস করলাম.

ও দুস্টু চাহুনি দিয়ে বললো - মানে? বলি চোখ তো সরাতেই পারছোনা গুরু? তাইতো বলি আমাকে জিজ্ঞেস করলো কেন সবাই... মানে সবাই যাচ্ছি কিনা. কাল তো বললামই আমরা সবাই যাচ্ছি তাও আজ আলাদা করে সবাই যাচ্চি কিনা জিজ্ঞেস কেন করলো? কি ব্যাপার গুরু?

আমি অপ্রস্তুত হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম - আরে ধুর ব্যাটা... আমি... আমি তো...

ও বললো - এত আমি আমি করোনা.... পেটে খিদে মুখে লাজ... ন্যাকা....দেখ তুই যদি বলিস আমি মানে আমি আর কৃতি কিন্তু ওর সাথে কথা বলতে পারি.....তারপর না হয়....

আমি - আরে তুই কোথা থেকে কোথায় চলে যাসনা.... এমন কিছু না চল ব্যাটা . (আমি এড়ানোর জন্য বললাম.)

এবারে সঞ্জয় সিরিয়াস হয়ে বললো - আরে আর কতদিন একা থাকবি? যা হবার তো হয়েই গেছে.... এবারে এগিয়ে যাওয়াই তো উচিত নাকি? দেখ তুই আর ও দুজনেই এখন একা. তোদের দুজনেরই একটা পাস্ট আছে কিন্তু সেসব ভুলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়া উচিত. তোর যদি ওকে ভালো লেগে থাকে তাহলে আমাকে বল..... আমরা ওর সাথে কথা বলি.... বা বেস্ট হয় তোরা নিজেদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটা, কথা বল.

আমি হেসে বললাম - আরে আমরা বেড়াতে এসেছি.... এখানে এসে এসব করবো?

সঞ্জয় - তুই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন বলতো? ও ডিভোর্সড বলে?

আমি - সে তো আমিও.

সঞ্জয় - তাহলে? লজ্জা করছে? তুই শালা চিরকাল গুড বয় হয়েই থেকে গেলি. ভদ্র ছেলেটা. আরে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে যা না. 

আমি হেসে বললাম - হুম..... ঠিকই বললি.... গুড বয় হয়েছি ঠিকই, কিন্তু গুড হাসব্যান্ড হতে পারিনি.

সঞ্জয় - এই সরি রে আমি কিন্তু ওই ভাবে কিছু.......

আমি হেসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললাম - আরে ধুর... সরি কিসের..... ছাড় ওসব... চল.

সঞ্জয় - আমি কিন্তু শুধু তোর কথা ভেবে ওগুলো বলিনি. তুই যেমন ওর দিকে দেকছিলিস... তেমনি অঞ্জলিও কিন্তু তোর দিকে দেখছিলো মাঝে মাঝেই কাল. কৃতি বললো আমায়. কাল তুই যখন খাচ্ছিলি তখন কৃতি দেখেছে ওকে তোর দিকে মাঝে মাঝে তাকাতে. I think..... ওরও তোকে পছন্দ হয়েছে. কাল তোর সাথে পরিচয় করানোর সময়ই তো দেখলাম... দুজন দুজনকে দেখেই যাচ্ছিলি.

আমি নিজের মনের হাসলাম ওর কথা শুনে. ও কি ভাবছে আর..... সত্যিটা কি. 

একসময় সেই স্থানে পৌঁছে গেলাম. খুব বেশি দূর না আমাদের হোটেল থেকে. কিন্তু এই রাস্তা টুকু কখন যে পার করে ফেলেছি ভেবে পেলাম না.
[+] 5 users Like Baban's post
Like Reply
#10
উপরের অংশের পর 

আমি এসেছিলাম কটা দিন কাজ থেকে মুক্তি নিয়ে নির্জনে সময় কাটাতে. হয়তো হোটেল থেকে বেশি বেরোতামও না. বাবা মাও বলেছিলো একটু রেস্ট প্রয়োজন আমার. বাবা মাকেও আনতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবার বেশি বেরোনো মানা. তাই আমাকেই প্রায় জোর করেই বললো ঘুরে আসতে. আমিও ভাবলাম একটু মুক্তি প্রয়োজন. আগে কাজে ডুবে ছিলাম সাফল্যের লোভে আর এবং ডুবে থাকি অতীতের ভুল গুলো ভুলে থাকতে.


বেশ সুন্দর জায়গাটা. চারিদিকে গাছ আর গাছ. প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যই আলাদা. একটু দূরে জলের দেখাও পেলাম. নিজের স্থান অধিকার করে নিজের স্রোতে বয়ে চলেছে সে. এপার থেকে ওপার যাবার জন্য ছোটো একটা লাল ব্রিজ. আমরা ব্রিজে উঠে এগোচ্ছি সামনের দিকে. বৌদি একটু ভয় পাচ্ছিলো বলে আমার বন্ধুটি তার হাত ধরে এগোচ্ছে. এটাই তো প্রয়োজন..... ভরসা. সামান্য ভরসা, পাশে থাকা. ওদের দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো. নিচে তাকিয়ে দেখলাম অনেক গুলো হাঁস জলে এদিক থেকে ওদিক যাচ্ছে. সূর্যের আলো জলে পড়ে সোনালী উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত করে তুলেছে স্থানটা. কি অসাধারণ রূপ. আমরা ওখানেই দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য দেখতে লাগলাম. আমার পাশেই দাঁড়িয়ে সেই সুন্দরী সেই দৃশ্য দেখছে. আর আমি দেখছি তাকে. সে বোধহয় বুঝতে পারলো. তাই আমার কাছ থেকে সরে বান্ধবীর পাশে গিয়ে হাসিমুখে কথা বলতে লাগলো. আমি মুচকি হেসে আবার নিচে হাঁসেদের দেখতে লাগলাম. বাচ্চা গুলো কেমন মায়ের পাশে পাশে চলছে. আবার জলে মুখ ডুবিয়েই মাথা ঝাড়া দিয়ে ওপরে তাকাচ্ছে.  

তখনই আমার ফোনটা বেজে উঠলো. দেখলাম অর্কর ফোন. ওর হাতেই সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি. কিছু দরকারে নিশ্চই ফোন করেছে. নইলে আমি বলে এসেছি ফোন না করতে. আমি ফোন রিসিভ করে ওর সাথে কথা বলতে লাগলাম. পেছন থেকে সঞ্জয় বললো - এই আমরা সামনে এগোলাম.... তোর হয়ে গেলে আসিস. আমি সামান্য মাথা ঘুরিয়ে আচ্ছা বলে আবার ফোনে মন দিলাম.

সেরকম কিছু নয়, একটা মিটিংয়ের ব্যাপারে. যেটা কয়েকদিন পর হবার কথা সেটা আরো পিছিয়ে গেছে. এই মুহূর্তে সেটা হচ্ছেনা. সেই ব্যাপারেই আমি আর ও কিছুক্ষন কথা বললাম সাথে  সব কিছু ঠিক মতো চলছে কিনা জেনে নিলাম. বেশ কাজের ছেলে অর্ক. সব একদম নিজ দায়িত্বে সামলাচ্ছে. আমার ছোট ভাইয়ের মতো. বাবা মায়ের পাশাপাশি সেও প্রায় জোর করেই বলেছিলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসতে. সব ও সামলে নেবে. তাই একটু ফাঁকা পেতেই আমিও বেরিয়ে পড়ি. 

কথা শেষ হলে ওই হাঁসেদের দলের একটা ফটো তুললাম. দামি ফোন...... অথচ বাবা মায়ের ছবি আর সেই চলে যাওয়া মানুষটার ছবি ছাড়া কিছুই নেই. পুরো ফাঁকা ফোন. ছবি টবি তোলাই হয়না. আজ এতদিন পরে একটা সুন্দর মুহুর্তকে ফোনে তুলে রাখলাম. তারপর এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে. ওরা বেশ দূরে এগিয়ে গেছে মনে হয়. আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম. কিছুদূর এগোতেই দেখি  দম্পতি একটি জায়গায় দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে. দুজন খুব অন্তরঙ্গ হয়ে ছবি তুলছে. ঐখানে এই মুহূর্তে যাওয়াটা উচিত মনে করলাম না. তাই ওখান থেকে চলে এলাম. একটু এগোতেই একটা বসার জায়গা পেলাম. ওখানেই বসে পড়লাম. আমাদের মতো আরো অনেকে এদিকে ঘুরতে এসেছে. সবাই এদিক ওদিক ছড়িয়ে. একটা বাচ্চা মেয়েকে দেখলাম একটা ছোট্ট কুকুর ছানাকে আদর করছে আর পাশে বাবা মা দাঁড়িয়ে. কুকুর ছানাটা আদর খাচ্ছে আজ লেজ নাড়ছে.

-কেমন আছো?

পেছন থেকে হটাৎ একটা পরিচিত কণ্ঠ শুনে উঠে ঘুরে দাঁড়ালাম. সে  আমার সামনে দাঁড়িয়ে. সামান্য হাসি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো - কেমন আছো?

আমিও সামান্য হেসে বললাম - এই... আছি.

সে - বাবা মা কেমন আছে? ওরা ঠিক আছে তো?

আমি - হ্যা... ভালো..... তোমার মা? ভালোতো উনি?

ও শুধু হ্যা সূচক মাথা নাড়লো.

আমি বললাম - বসোনা. আসলে এতদূর হেটে হেটে এলাম তো. তাই বসেছিলাম একটু.

ও সামান্য হেসে বললো - না ঠিকাছে তুমি বসো... আমি যাই কৃতির কাছে. 

ও পাশে ঘুরতেই আমার মধ্যে কি যেন হলো. আমি একটু জোর করেই বললাম - না প্লিস..... একটু.... একটু বসোনা. 

ও আমার দিকে আবার ঘুরলো. আমার চোখে কিছু দেখলো কিনা জানিনা কিন্তু এবারে আর কিছু না বলে বসলো. আমিও একটু দূরত্ব বজায় রেখে পাশে বসলাম. কিছু পরে তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলাম - তুমি কেমন আছো?

- এইতো... বেশ ভালোই আছি.

আমি এবারে তাকালাম ওর দিকে. ও সামনে তাকিয়ে আমার মতোই ওই বাচ্চাটা আর কুকুর ছানাকে দেখছে. এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ও বাচ্চা মেয়েটার দিকে. ওই চোখে আমি কিছু যেন খুঁজে পেলাম. একটা অপূর্ন ইচ্ছে. নিজেকে নিজেই ধিক্কার দিলাম.  তারপর আমার নজর গেলো ওর গলায়. আরে!... এটাতো ওই.....!

একটু সুখ পেলাম যেন. তারপর সামনে তাকিয়ে বললাম -

কি sweet  না বাচ্চাটা? জিজ্ঞেস করলাম আমি. উত্তরে ও হেসে মাথা নেড়ে বললো খুবই. দেখো..... কেমন বাবাকে নিচে বসিয়ে জোর করে ওনাকে দিয়েও আদর খাওয়াচ্ছে কুকুরটাকে.

আমিও দেখলাম.... তিনজন সুখী মানুষকে আমাদের থেকে কিছুদূরে দাঁড়িয়ে থাকতে. বাবা মা মেয়ে তিনজনের মুখেই হাসি. লোকটা হয়তো সেই ভাবে পশু প্রেমিক নন তাও মেয়ের কথায় কুকুর ছানার গায়ে হাত বোলাচ্ছেন আর মা দাঁড়িয়ে ওদের দেখে হাসছে.

আমি - একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

ও বললো - করো.

আমি - বিয়ে করলেনা কেন আর?

ও হালকা হাসলো. তারপর বললো - ধুর... আর..... ইচ্ছে করলোনা.... মা যদিও কানের সামনে ঘ্যানর ঘ্যানর করে... আমি কান দিই না. 

আমি ওর দিকে তাকিয়ে - ইচ্ছে করেনা... নাকি.....

ও আমার কথা কেড়ে নিয়ে নিজেই এবারে আমায় জিজ্ঞেস করলো - তা তুমিও তো শুনলাম কাল ওদের বললে ডিভোর্সড. তুমি আর বিয়ে করোনি কেন? এখন তো বেশ সাকসেসফুল হয়েছো. দেখেই বোঝা যাচ্ছে.... আলাদাই ব্যাপার.... তাহলে?

আমি মাথা নামিয়ে হেসে বললাম - হ্যা টাকা পয়সার দিক থেকে সফল অবশ্যই..... কিন্তু আমি... আমিও আর পারিনি.... ইচ্ছে হয়নি.

ও এবারে হেসে জিজ্ঞেস করলো - ইচ্ছে হয়নি? নাকি......

দুজনেই হেসে ফেললাম. জানি দুজনের হাসিই নকল.

আমরা বসে আছি. দেখি দূর থেকে সঞ্জয় আর বৌদি আমাদের কেই দেখছে. দুজনের মুখেই হাসি. অঞ্জলি দেখেনি ওদের. ওরা আমাদের একসাথে বসে থাকতে দেখে কি ভাবলো কে জানে....হাতের ইশারায় আমাদের ওখানেই থাকতে বলে নিজেরা অন্যদিকে চলে গেলো. ওরা যেটা ভাবছে সেটা ভেবে হাসি পেলো আমার.

কি হলো? হাসছো কেন? ও জিজ্ঞেস করলো.

তোমার বান্ধবী আর আমার বন্ধু আমাদের এইভাবে একসাথে বসে থাকতে দেখে বোধহয় ভাবলো আমাদের মধ্যে........ তাই আমরা যাতে ডিস্টার্ব না হই তাই অন্যদিকে চলে গেলো.

ওমা! সেকি.....

-হুমম..... ওরা কাল থেকেই ভাবছে যে প্রথম দেখা থেকেই আমাদের মধ্যে......

-কি!! আমি যাই....

আমি - কোথায়?

ও চিন্তিত মুখে বললো - আরে.... ওরা আমাদের দেখে কিনা কি ভাবছে.... কৃতির কাছে গিয়ে বলি যে এরকম কিছু নয়....

আমি হেসে বললাম - আরে ছাড়ো তো....

ও বললো - না.... আমি যাই... ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ুক তার আগেই ওকে গিয়ে বলি এসব কিছুই না.

ও প্রায় উঠেই যাচ্ছিলো. আমার কি মনে হতে ওর হাত ধরে ফেললাম. বা বলা উচিত অজান্তেই আমার হাত ওর হাত ধরে ফেললো. তারপর মুখ থেকে বেরিয়ে এলো - প্লিস যেওনা.

ও ঘুরে আমার হাতের দিকে তাকালো. আমি সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত সরিয়ে নিলাম. ও বসে রইলো.

- সরি.

- কেন?

- না... মানে হাতটা ঐভাবে ধরলাম.

- ওহ..... না ঠিকাছে 

- তাই ?

- মানে?

-সত্যি কি সব ঠিকাছে?

- কি বলছো?

- না কিছুনা.

কিছুক্ষন নীরবতা.

তারপর ওই বললো - বাবা মা কি এখনো আলাদা থাকেন নাকি তোমার সাথে এনে রেখেছো?

আমি - না একটা নতুন ফ্লাট নিয়েছি... আর বাবা মাকেও নিয়ে চলে এসেছি. এখন আমরা একসাথেই থাকি. 

- বাহ্... খুব ভালো. ওদের খেয়াল রেখো....কাজ থেকে সময় বার কোরো ওদের জন্য.... বয়স হচ্ছে তো. এখন ওদের তোমাকে প্রয়োজন. অন্তত এখন আর সেই ভুল করোনা.... ওদের এখন তোমাকে প্রয়োজন.

আমি হেসে বললাম - জানি...  ওহ.. শুনলাম তুমি নাকি আজ আসতে চাইছিলে না? বান্ধবী জোর করাতে বেরোতে রাজি হয়েছো?

- হ্যা.... ওই ভালো লাগছিলোনা... তাছাড়া আমি আর বেশি বেরোই টেরই না... ঘরে থাকলেও না.

আমি - অথচ একটা সময় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করতে. ঘুরতে যাবার কথা বলতে....

ও হালকা হাসি মুখে বললো - কি করবো বলো.... একজনকে তো খুব বলতাম.... কিন্তু সে তো সময়ই পেতোনা আমাকে নিয়ে বেরোনোর. তারপর আমারও ওই ইচ্ছে চলে গেছে.

আমি - তখন সবে ব্যাবসা এগোচ্ছে.... প্রচন্ড চাপ.... দেখতে তো... সকাল যেতাম আর ফিরতাম সেই রাতে.

ও মুচকি হেসে বললো - হ্যা.... তা ঠিক.... নিজের জীবনের থেকে বেশি গুরুত্ব তুমি তোমার ব্যবসাতে দিয়েছো.... তাইতো আজ এতো সাকসেসফুল.

আমি - খোঁটা দিচ্ছ? জীবনে অর্থের প্রয়োজন কতটা সেটা আমি বুঝি.... আমি সেই জীবন দেখেছি.... টাকা ছাড়া যে কি অবস্থা হয়... সেটা আমি এক্সপেরিয়েন্স করেছি. তুমি সেটা বুঝবেনা.

ও বললো - না মোটেও না.... তুমি নিজের চেষ্টায় আজ সফল.... এখানে খোঁটা কেন দেবো.... যাকগে ছাড়ো..... তুমি তোমার মতো করে ভালো আছো... আমি আমার মতো.

নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম - একসাথে কি থাকা যেতোনা? ওই ডিসিশান নেওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? 

এটা শুনে হাসলো অঞ্জলি. তারপর বললো - কি করবো বলো? যার সাথে সারাজীবন চলবো.... তার উপস্থিতির যদি অভাব বোধহয় হয়, যাকে পেয়েও না পাই তাহলে কি করবো? যাকে ভালোবে........

এইটুকু বলেই সে থেমে আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলো. তারপর বললো - আমাদের বোধহয় এবারে ওদের কাছে যাওয়া উচিত.

আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি হটাৎ.....ওমা.... তখনি.... কোথা থেকে দেখি আরেকটা পুচকে কুকুর ছানা আমাদের সামনে এসে উপস্থিত. আমাদের দেখে ভয় পিছিয়েও যাচ্ছে আবার লেজও নাড়ছে. সেটাকে দেখে অঞ্জলি আয় আয় করে ডেকে তখনি কোলে তুলে নিলো.

আমিও এগিয়ে গেলাম ওর কাছে. দেখি সেই পুচকে নিজের ছোট্ট জিভ বার করে ওর গালে চেটে দিচ্ছে.

আমি বললাম - এ বাবা... তোমার গাল চেটে দিচ্ছে তো ইশ....

ও হেসে বললো - তাতে কি হয়েছে? বাবুর খিদে পেয়েছে? সাথে বিস্কুট নেই... ইশ.. 

ওর দিকে তাকালাম. ওই ছোট ছানাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে এক অসাধারণ রূপসী. না শুধু রূপসী নয়, একজন ভালো মনের মানুষও. যেভাবে ওই ছানাটি কোলে নিয়ে আদর করছে যেন........ যেন ওটা ওর কাছের কেউ.

আমি ওর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম - জানতাম না তো.... তোমার কুকুর এতো ভালো লাগে. আগে বলোনি তো.

ও কুকুর ছানার থেকে চোখ না সরিয়েই বললো - আমি কুকুর বেড়াল সবই পছন্দ করি. তোমাকে বলা হয়নি.... ভেবেছিলাম আমাদের বাড়িতে..... একটা ল্যাব কিনবো...

আমি - ল্যাব? ও আচ্ছা লাব্রাডর..... বলোনি তো.....

ও না তাকিয়েই বললো - সেই সুযোগ হয়ে ওঠেনি.....হলেও কি তুমি রাজি হতে?

আমি - তখন কি বলতাম জানিনা....কিন্তু এখন.....

আমার দিকে একবার তাকালো ও. হয়তো বোঝার চেষ্টা করলো আমি কি বলতে চাইছি.

ওদিকে ছানাটা যেন মায়ের কোলের খোঁজ পেয়েছে. চুপচাপ ওর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে. আর ও কুকুর ছানাটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে. আর তখন ওর আঙুলে চোখ গেলো. ডান হাতের আঙুলে একটা আংটি. আমার মুখে হালকা হাসি চলে এলো কোথা থেকে. 

আমিও কুকুর ছানাটার মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম - দেখো.... তোমার কোলে ঘুমিয়েই পড়লো মনে হয়. দুজনেই হাত বোলাতে লাগলাম ছানাটার মাথায়. বেশ কয়েকবার আমাদের দুজনের হাত স্পর্শ হলো. 

আমি - তুমি ঠিকই বলেছো. তখন আমি অন্য মানুষ ছিলাম. আমার একটাই লক্ষ ছিল. টাকা. আমি তোমাকে নিয়ে ভাবার বা সময় বার করার চেষ্টাও করিনি. আমি...বোকা হাঁদা সবসময় ভেবেছি তোমায় দামি গয়না শাড়ী কিনে দিলেই দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেলো...আসলে সেই সময়টা এতো কাজের চাপ.... একটু একটু করে যত সাফল্য পাচ্ছিলাম ততই আরো ব্যাস্ত হয়ে পড়ছিলাম. আরো সাফল্যের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছিলো. জিনিস কিনে দেয়াকেই দায়িত্ব পালন করা বুঝতাম. অতীতের থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে খুঁজতে কখন যে পথটাই হারিয়ে ফেলেছি... বুঝতেই পারিনি. ভাবিনি জীবনের আসল দায়িত্ব পালন কি..... ইডিয়ট ছিলাম একটা !

হটাৎ আমার মুখ থেকে এরকম কথা শুনে ও আমার দিকে তাকালো. আশ্চর্য দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে. হয়তো ভাবছে এ কোন লোককে দেখছে সে? এ কি সেই পরিচিত মানুষটা?

আমার মধ্যে কি হয়েছিল জানিনা. বার বার মনে হচ্ছিলো এই মুহূর্তটা যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে চিরদিনের মতো আমি সব হারিয়ে ফেলবো. ভয় ও সাহস  দুই একসাথে কাজ করছিলো. হয়তো আমার ভেতরের সত্যিকারের পুরুষটা ওই কাপুরুষ কে হারিয়ে বেরিয়ে আসছিলো.

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম - আমি জানি..... আমার ওপর অনেক অভিমান জমে আছে তোমার. তুমি ঠিকই বলেছো... জীবনের একটা সুখের সময় যে মানুষটার সাথে কাটানোর কথা, যাকে সবসময় নিজের পাশে পেতে চেয়েছো..... তুমি তাকে সেই সময় পাশে পাওনি. আমি এর জন্য দায়ী. আমি ভুল.... আমি... আমি মানছি. কিন্তু এটাও ঠিক যে আমি নিজেও ওরকম হতে চাইনি. পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছিল. আমাদের নিজেদের কাছের মানুষকে ধোঁকা দিতে দেখেছি. বাবাকে প্রায় সবকিছু হারিয়ে ফেলতে দেখেছি. সেই সময় নিজের বাবাকে খাটতে খাটতে প্রায় শেষ হয়ে যেতে দেখেছি. মায়ের কান্না দেখেছি আমি. তাও বাবা মা আমার ওপর এসবের কিছুই আসতে দেননি. সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলো ওরা. আমার পড়াশোনার একটুও ক্ষতি হতে দেননি তারা. তাই আমিও ছোট থেকেই নিজেকে পাল্টে ফেলেছিলাম. আমার একটাই লক্ষ্য ছিল বাবা মা কে আবার সেই সুখের জীবন ফিরিয়ে দেওয়া. কিন্তু সেই লড়াই লড়তে লড়তে কখন যে আমিও পাল্টে গেছি বুঝিনি. বাবা মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছি যেমন.... তেমনি তাদেরকেও ভুলে শুধু নিজের ব্যবসা নিয়েই ভেবেছি. অতীতের সেই দিন যাতে আর ফিরে না আসে সেই চেষ্টায় বিলিয়ে দিয়েছি নিজেকে কিন্তু ভুলে গেছি জীবনে ভারসাম্য কতটা প্রয়োজন. ব্যালান্স রক্ষা করা. হ্যা এটা ঠিক যে আমি আমার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারিনি.... কিন্তু এটাও ঠিক যে আমি কোনো কুপথেও যায়নি. আজকে আমি যে স্থানে পৌঁছেছি তার জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছি. কিন্তু এই পরিশ্রমকে আমি কুপথে গিয়ে বা নিজের সভ্যতা বর্জন করে অপমান করিনি. এটা ঠিক যে ওই সময় আমি অন্য মানুষ হয়ে গেছিলাম কিন্তু...... কিন্তু আজ আমি অন্য মানুষ. আর আমার এই পরিবর্তনের কারণ তুমি. তোমাকে হারিয়ে আমি বুঝেছি তোমার গুরুত্ব. ওই যে তখন জিজ্ঞেস করলে না .... ইচ্ছে করে আর বিয়ে করিনি নাকি অন্য ব্যাপার..... হ্যা অন্য ব্যাপার. প্রথমত নিজের কাছেই আমি ছোট হয়ে গেছিলাম আর দ্বিতীয়ত........


-দ্বিতীয়ত কি?

ছানাটা আবার ওর গাল চাটছে... কিন্তু ওর নজর আমার দিকে. সোজা তাকিয়ে আমার দিকে সে.

আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম - দ্বিতীয় কারণটা তুমি. আমার পাশে আর অন্য কাউকে আমি..... আমি ভাবতেও পারিনা.  যে সময়টা তোমার সাথে কাটিয়েছি..... তখন না বুঝলেও আজ বুঝি ওই সময়টার মূল্য কি ছিল. আজ এটা বলতে দ্বিধা নেই যে তোমার জায়গা আর কেউ নিতে পারবেনা. আসলে কি বলতো....? আমাদের দুজনেরই পরিস্থিতি এমন ছিল যে তুমিও ভুল নয়..... আর সেই সময় মনে হতো আমিও ভুল নয়. আমি যা করছি আমার পরিবারের জন্যই তো করছি. কিন্তু ঐযে ব্যালান্স..... ওখানেই প্রব্লেমটা হলো. আজ বিত্তবান হয়েছি কিন্তু পেয়েছি নিঃসঙ্গতা, সফল হয়েছি কিন্তু হারিয়েছি সুখ. বাবা মায়ের ভালোবাসা আশীর্বাদ তো সবসময় সন্তানের সাথে থেকেই কিন্তু মানুষ হিসেবে কাছের মানুষকে ভালোবাসার সুখ থেকে আজ বঞ্চিত আমি. বার বার মনে হয়েছে তোমার সাথে দেখা করি কিন্তু...... পারিনি.


-তা হটাৎ এই উপলব্ধি?

আমি - মানুষ মাত্রেই তো ভুল করে... তাইনা? আমি ভুল করেছি আর সেটা যে কি ভুল আজ বুঝতেও পারছি...

ও আমার থেকে চোখ সরিয়ে বললো - এখন এসব কেন বলছো আমায় ?

আমি - অঞ্জু...

নামটা শুনেই ও অস্থির হয়ে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো. আমার কাছ থেকে নিজের মুখ লুকিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে রইলো.

আমি থামলাম না. বললাম- ভালো আমিও তোমায় বেসেছি..... বা বলতে পারো.... যদি কাউকে ভালোবেসে থাকি সে শুধু তুমি. শুধু ওই সময় আমি...... আমি তোমায় বুঝিয়ে উঠতে পারিনি.... হ্যা আমি ভুল ছিলাম..... কিন্তু... কিন্তু..আমি শুধু তোমাকেই চেয়েছি... সবসময়.... তাইতো আমি... আমি পারিনি আবার নতুন করে পথ চলতে. আবার তোমার সামনেও যেতে পারিনি. সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানো? তোমায় যত ভুলতে চেয়েছি.... ততোই তোমায় মনে পড়েছে. আসলে আমরা যাকে ভুলতে চাই... তাকেই সবথেকে বেশি মনে করি.

- কি বলতে চাইছো তুমি?

আমি নিজের সব টুকু সাহস করে বলেই ফেললাম - বলতে এটাই চাই যে..... আমরা কি আবার..... আবার নতুন করে সব শুরু করতে পারিনা? একসাথে পথ চলতে পারিনা আবার? বিশ্বাস করো.... আমি আর আগের সেই মানুষটা নই... আমি পাল্টে গেছি. 

অঞ্জু আমার দিকে না তাকিয়েই বললো - না..... আর না.....আমিও বদলে গেছি... একা পথ চলতে শিখে গেছি.. প্রথম প্রথম অসুবিধা হতো.... কিন্তু এখন আর হয়না. এই আছি.. বেশ আছি.

আমি ওর আরেকটু কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম. আমি জানি ও আমার থেকে নিজেকে লুকোচ্ছে. হয়তো দুচোখে একটু জলও জমেছে .যেটা আমাকে ও দেখাতে চায়না না.

আমি - জানি... আমার ওপর খুব অভিমান তোমার... আমি তার যোগ্যও..... তুমি হয়তো ভাবছো আজ যখন সব কিছু গুছিয়ে নিয়েছি তখন তোমার কাছে এসেছি. তার আগে তো আসিনি. খোঁজও নিই নি. আসলে ওই ভাবে আমরা হটাৎ আলাদা হয়ে গেলাম... তুমিও আমার ওপর রাগ করে ছিলে, আমিও রাগ করে... দুজনেই রেগে ছিলাম. তারপর আমি পারিনি তোমার সামনে আসতে.... না পেরেছি তোমায় ভুলতে, না পেরেছি তোমার কাছে যেতে. এই অনুভূতি যে কি তা আমি ছাড়া কেউ বুঝবেনা. কিন্তু একদিন পরিস্থিতি  আমাদের দূরে করেছিল আজ সেই পরিস্থিতিই আবার আমাদের একে অপরের সামনে নিয়ে এসেছে. হয়তো কেউ একজন চাইছে যে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু হোক. নইলে ভাবো... আমাদের হটাৎ করে আবার দেখা আমার বন্ধুর মাধ্যমে. আজ যখন এতদিন পর আমরা আবার মুখোমুখি হয়েছি তখন......

অঞ্জলি - আমি তো বললাম আমি আর সেই আগের অঞ্জলি নেই যে একা থাকতে পারতোনা..... আমি আজ একা থাকতেই পছন্দ করি. আমি শিখে গেছি একা থাকতে. আমার আর কাউকে পাশে প্রয়োজন নেই.

দৃঢ়তার সাথে বললো অঞ্জলি. কিন্তু একবারের জন্যও তাকায়নি আমার দিকে.

আমি - কিন্তু আমার যে প্রয়োজন. খুব..... কি করবো বলো? এক নম্বরের স্বার্থপর যে আমি. তাইনা?

ও - হুমম. একদমই তাই.

আমি - তা এই স্বার্থপর লোকটাকে শোধরানোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে আবার নিতে পারবেনা? আমি কি পাশে পেতে পারিনা তোমায় আবার? 

ও -  না..... আর.... আর না.... আমি আর চাইনা তোমায়. একটুও না.

আমার দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে ও তবে ওর গলার স্বরে হালকা কম্পনটা স্পষ্ট বুঝলাম আমি. 

আমি - তাই? তা আমায় বলতো.... ভুল আমি করেছি তাও তুমি কেন নিজের জীবন নতুন করে শুরু করলেনা?

অঞ্জু - আর সাহস হয়নি. 

আমি - সাহস হয়নি? নাকি তুমিও আমায় আজও ভুলতে পারোনি?

ও - তোমায় আমি কবে ভুলে গেছি. তোমার মতো লোককে কে মনে রাখবে?

আমি মুচকি হেসে আবার বললাম.- তা ঠিক..... তা আমার মতো একটা বাজে লোককে মনে যদি নাই রাখো... তাহলে তোমার গলায় আমার দেওয়া ওই কমদামি পেন্ডেন্টটা কেন?ওটা তোমার জন্মদিনে তোমায় কিনে দিয়েছিলাম তাই? 

ও নিজের গলার কাছে একবার হাত রেখে তারপর বাচ্চাটার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো.

আমি আরেকটু এগিয়ে ও যে হাতে বাচ্চাটার মাথায় হাত বোলাচ্ছে সেই হাতের ওপর হাত রেখে বললাম - আর আমার এই রাস্তা থেকে কিনে দেওয়া এই কমদামি আংটিটা কেন? আমরা মেলায় বেড়াতে গেছিলাম আমাদের বিয়ের পর পরেই. তখনই একটা দোকানে আমার নজর পড়ে এই A লেখা আংটিটার ওপর. তোমায় কিনে দি তখন. তখন তোমার হাতে বেশ টাইট হতো কিন্তু এখন তো বেশ ফিট. সামান্য এই ফালতু আংটিটা খালি খালি কেন পড়ে আছো আজও?

আমার দিকে একটু ক্রুদ্ধ নজর নিয়ে ঘুরে তাকালো ও. জল চিক চিক করছে সেই চোখে. হালকা মাথা নাড়িয়ে বললো - তুমি একটুও পাল্টাওনি..... একটুও না.

আমি  - রাগ হচ্ছে আমার ওপর? ওগুলোকে সস্তা কমদামি ফালতু বললাম বলে? তাইনা?

ও - কি বলতে চাইছো?

আমি ওর একদম কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম - আমি এটাই বলতে চাইছি যে আমি পাল্টে গেছি.... কিন্তু তুমি?....তুমি  একটুও পাল্টাওনি. আজও..  আজও আমাকে ভুলতে পারোনি তুমি. তুমিও আমার মতোই ভিতরে ভিতরে কষ্ট পাচ্ছ. আমরা কাগজে কলমে আলাদা হলেও মন থেকে আলাদা হতে পারিনি আর পারবোও না. আজ এতদিন পরেও তুমি সেই একি রয়ে গেছো. তাই আজও আমার দেওয়া এই জিনিস গুলো ফেলে দাওনি... বলো ভুল বলছি?

ও বাচ্চাটাকে নিচে নামিয়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললো - আমি আর এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনা... আমি আসছি.

আমি হালকা স্বর তুলে বললাম - দাড়াও.... আমায় উত্তর দিয়ে যাও.

ও রাগী ভাবে - বললাম তো এই বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা.... আমি ভুলে গেছি তোমায়. 

আমি - তাহলে দুই চোখে জল কেন তোমার? কাকে ঠকাচ্ছ? আমায়? না..... তুমি নিজেকে ঠকাচ্ছ... নিজেকে. 

ও ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার কাছে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে জলে ভেজা ক্রুদ্ধ নয়নে চেয়ে থাকলো কয়েক মুহূর্ত... তারপর ঠাস করে একটা চড় মারলো আমার গালে. তারপর কোনোরকমে নিজের কান্না আটকে বললো - I hate you.... Hate you..

ব্যাথা লাগলোনা....আমি সেই চড়ের যোগ্য ছিলাম. দুঃখও পেলাম না... বরং বিপরীত অনুভূতিটাই বৃদ্ধি পেলো. আমার দুই চোখেও কখন জানি জল এসেছে গেছে. সেই জল চোখেই মুখে হাসি এনে বললাম - ব্যাস..... আর কিছু বলার নেই, জানারও নেই .... আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি.... পেয়ে গেছি.... আজ আমি... খুব খুশি.. খুব.

আমাকে হাসতে দেখে আমায় একটা হালকা ধাক্কা দিয়ে ও বললো - বাজে লোক একটা.... জঘন্য লোক... I hate you. কেন এতদিন....

আর কিছু বলতে পারলোনা ও. চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো ওই জায়গা ছেড়ে. আমি যেন অনেকটা হালকা অনুভব করছিলাম. কেউ - কেউ আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখি ওই বাচ্চাটা ওর ভাই বোনদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করছে, কামড়াকামড়ি করছে. হটাৎ ঘেউ করে একটা আওয়াজ পেয়ে ওরা সবাই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে দ্রুত একটা বড়ো কুকুরের দিকে দৌড়ে গেলো. সবাই ঘিরে ফেললো মাকে. ওদের মা সবার গায়ে মাথায় জিভ বোলাতে বোলাতে শুয়ে পড়লো আর পুচকে গুলো  মাতৃদুগ্ধ পানে ব্যাস্ত হয়ে গেলো.

আমি দেখতে লাগলাম ওদের. ওদের মা দূরে কোথাও গেছিলো খাবার খুঁজতে হয়তো. এতক্ষন পর মা সন্তানের মাঝে দূরত্ব মিটেছে.

আর অন্যদিকে আরেকটি দূরত্বও হয়তো এতদিনে...... 



সমাপ্ত.

কেমন লাগলো এই ছোট গল্প? জানাবেন বন্ধুরা 
 
[Image: 20230816-221934.png]
[+] 8 users Like Baban's post
Like Reply
#11
[Image: 20210205-003021.jpg]

নতুন করে আর কি ধন্যবাদ দেবো আপনাদের... আমি জানি সবসময় আপনাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস ছিল আর আছে. তাইতো এতদিনের যাত্রা সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি. এই যাত্রা পথে যারা যারা পাশে ছিলেন তাদের মন থেকে ধন্যবাদ 
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#12
এই আনন্দে নতুন একটা ছোটো গল্প হয়ে যাক !!  Tongue  congrats
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply
#13
[Image: 20210122-161725.jpg]

বন্ধু - একটি ছোট্ট গল্প
লেখক- বাবান 


উত্তেজক লেখা দিয়ে লেখার যাত্রা শুরু করি আমি. বেশ কয়েকটা এরোটিক গল্প লিখেছি. আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি. তারপরে সেখান থেকে বেরিয়ে রোমান্টিক গল্প - তোমাতে আমাতে দেখা হয়েছিলো লিখলাম. তাতেও আপনাদের ভালোবাসা পেলাম. আর তারপর এরোটিক হরর থেকে ছোটোদের জন্য গল্প সবেতেই পাশে পেয়েছি আপনাদের... তাই জানি এই গল্পেও পাশে পাবো আপনাদের আর আপনাদের মন জয় করবে এই গল্প. তবে এই গল্পটা সবথেকে আলাদা. হয়তো স্পেশাল. 



রাস্তার ধারে বসে এদিক ওদিক মানুষজনের যাতায়াত দেখছিলো ভোলা. কত লোক এদিক ওদিক হেটে চলেছে. কত লোক আবার কিসব জিনিসে বসে যাচ্ছে. কোনটা ছোট, আবার কোনটা বড়ো. নানারকমের সব অদ্ভুত জিনিস. ছোট থেকে এতো বড়ো হয়ে গেলো ভোলা তাও বোঝেনা এই লোকগুলো আসলে যায় কোথায়? কোথায় পৌঁছতে চায় এরা? হাটছে তো হাঁটছেই, যাচ্ছে তো যাচ্ছেই.

না.... সবাই হাঁটছেনা... ঐতো ওই বয়স্ক লোকটার দোকানে কয়েকজন বসে আড্ডা দিচ্ছে. কাগজে কিসব দেখছে আর আর হাতে চায়ের ভাঁড় নিয়ে বেঞ্চিতে বসে তর্ক বিতর্ক চলছে. কেউ বলছে - ধুর শালা.... আর কিছু হলোনা এই দেশের..... শালা দিনে দিনে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে, গরিব আরো গরিব হয়ে চলেছে আর ধোনি আরো ধোনি. আর কতরকমের জালিয়াতির খবর রোজ পড়ি.... না... আর কিসু হলোনা দেশের. কেউ আবার তার কথার বিরোধিতা করে নিজেদের যুক্তি দিচ্ছে.

যদিও এসবের কিছুই বুঝছেনা ভোলা. কানেও নিচ্ছেনা ওসব. ওর নজর একটা লোকের হাতে ধরে থাকা বিস্কুটটার ওপর. সেই লোকটা বেশ বয়স্ক. কিসব যেন বলছে পাশের যুবকটাকে.

কি বলছে লোকটা?

লোকটা বলছে - আরে আসল সময় ছিল আমাদের... আহা কি দিন ছিল তখন.... ফুরফুরে বাতাস, চারিদিকে গাছপালা, শিক্ষা সংস্কৃতি..  সৎ রাজনীতি, সৎ মানুষ.... তখন লোকেরা খাটতে জানতো বুঝলে ভায়া.... এই তোমাদের মতো যুবক আজ দু পা এগিয়েই হাপিয়ে যায়... আর আমরা কত কত রাস্তা হেটে পার করেছি জানো? ভাবতেও পারবেনা.... আর আমাদের মধ্যে ছিল দুটো জিনিস. ধৈর্য আর দয়া মায়া. যে দুটো আজ তোমাদের মধ্যে থেকে কমে যাচ্ছে. বুঝলে? আহা.... কত লোককে কতজনকে আমি নিজের হাতে সাহায্য করেছি কি বলবো..... আহারে.... ওই মুখ গুলো আজও মনে পড়লে বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে. আর তোমরা..... শুধুই নিজেদের নিয়ে ভাবো... এইজন্যই কিস্সু হলোনা এ সমাজের.

ভোলা আর থাকতে পারলোনা..... সকাল থেকে কিছু পেটে পড়েনি ওর. ওই বয়স্ক লোকটার হাতে বিস্কুট দেখে একটু আশা নিয়ে এগিয়ে গেলো লোকটার কাছে. সামনে গিয়ে লেজ নাড়তে লাগলো ভোলা. নজর সোজা ওই হাতের বিস্কুটের দিকে.

বয়স্ক লোকটা ওই যুবককে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো বোধহয় কিন্তু পায়ের কাছে ভোলাকে ওই ভাবে দেখে ক্ষেপে গিয়ে বলে উঠলো - এই.. এই হট... হট... চল হট.. যা এখন থেকে.... আপদ.... যেই দেখেছে হাতে বিস্কুট.. অমনি লেজ নাড়তে নাড়তে এসে উপস্থিত... ফোট...

যুবকটি হেসে বললো - আহা.... ঐভাবে চাইছে যখন দিয়ে দিন না... হাতের বিস্কুটটা.

ওই বয়স্ক মানুষটা যুবকের দিকে তাকিয়ে বললো - আরে না না... একটা দিলে আরো চাইবে.... এদের লায় দিলেই বিপদ..  যা ব্যাটা.. ফোট.... যা ওই আবর্জনায় খাবার খোঁজ.

ভোলা একটু ভয় পেয়ে পিছিয়ে এলো. ও হয়তো মানুষের ভাষা বোঝেনা. বুঝলে হয়তো খিদে পেটেও হাসি পেয়ে যেত বুড়োর মুখের কথা আর ব্যবহার দেখে.

ভোলা আর দাড়ালোনা ওখানে. এগুতে লাগলো. উফফফ... সকাল থেকে কিচ্ছু পেটে পড়েনি. আগেরদিন.. আবর্জনার খাবার খেয়ে কেমন পেট ব্যাথা করছিলো. তারপরে থেকে রাতে কিছুই খাইনি ভোলা. এদিকে রাতে ওই কালু আর ওদের দলটা এমন ভাবে রাস্তা ঘোরাঘুরি করে যেন ওদের বাপের রাস্তা. সারারাত চেঁচিয়ে কান ঝালাপালা করে দেয়. ভোলা ওতো চেঁচাতে পছন্দ করেনা. ও শান্ত চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করে. এই ভোলা নামটা কে দিয়েছিলো ওকে মনে পড়েনা ওর... শুধু মনে পড়ে এই নামেই অনেকে আগে ডাকতো ওকে আর ওর সামনে কিছু খাবার ছুড়ে দিতো. সেই থেকেই ওই নাম মনে ঢুকে গেছে ওর.

ভোলার মা নেই. বোনও অনেক আগেই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সে. তবে ছোটবেলায় অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়েছিলো ওর মা. কিভাবে রাস্তা পার করতে হয়, কিভাবে খাবার জোগাড় করতে হয়, কিভাবে নিজের ভাগ বুঝে নিতে হয়.

সামান্য একটা রুটির জন্য ভোলা ওর মাকে দুটো কুকুরের সাথে মারামারি করতেও দেখেছে. মায়ের পায়ে কামড়ে দিচ্ছে একটা, আরেকটা মায়ের ঘাড়ে... তাও মা দাঁত খিচিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরে অন্যটার ঘাড়ে কামড়ে সরিয়ে দিয়েছে তাকে. শেষে ওরা হার মেনে দূরে সরে গেছে. আর ভোলার মা রুটি মুখে করে নিয়ে এসেছে জয়ের সাথে. তবে তার একটুও নিজে খায়নি সে. পুরোটাই ভোলার আর ওর বোনের জন্য. ভোলা আর ওর বোন খেয়েছে ওই রুটি আর ওদের মা একদৃষ্টিতে সন্তানদের খেতে দেখেছে. ওদের খেতে দেখেই মনে হয় ওর মায়ের পেট ভোরে গেছিলো. পা থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল ওর মায়ের. তাও সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ না করে ভোলা আর ওর বোনের সামনে বসে চুপচাপ দেখেছিলো ওদের খেতে আর লক্ষ রাখছিলো ওই দুটো কুকুরের দিকে.

ভোলা ওর বাবাকে কোনোদিন দেখেনি. মাকে জিজ্ঞেস করেছিল. কোনো উত্তর পায়নি. হয়তো মায়ের কাছে কোনো উত্তর ছিলোনা. ভোলার বোন খুব ছটফটে ছিল. সারাদিন দাদার কান কামড়ে বিরক্ত করা, দাদার গায়ে লাফানো, এসব ছিল তার কাজ. বোনের গায়ের রং ছিল হলদে সাদা আর ভোলা নিজে কালো. যাকে বলে কুচকুচে কালো. আর ওর মা...... না.... মায়ের রং ওর মনে নেই. শুধু মনে আছে লাল রং. মায়ের শরীরের চারিদিকে ছড়িয়ে ছিল.

সেদিন দুই ভাই বোন রাস্তার বস্তিটার পাশের নোংরা জায়গাটায় খেলছিল. হটাৎ কেমন একটা তীব্র যান্ত্রিক শব্দ আর তারপরেই একটা আর্তনাদ. না.... ওই আর্তনাদ কোনো মানবের ছিলোনা. তবে ওই ছোট্ট বাচ্চা দুটো বুঝেছিলো ওই ডাক ওদের মায়ের. ছুট্টে গেছিলো ওই আওয়াজ শুনে.

কিছু লোক ভিড় করে কিসব আলোচনা করছে. আর একটা বিশাল যান্ত্রিক জিনিস.... বোধহয় লরি বলে এগুলোকে. দাঁড়িয়ে আছে. কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে চেঁচিয়ে বলছে - আরে ভাই দেখে চলতে পারোনা নাকি.... ইশ... আহারে. কেউ বলছে আরে আমরা দেখলাম হটাৎ করে চাকার সামনে চলে এলো. ইশ..... খাবার নিয়ে আসছিলো. আহারে....

ভোলা আর ওর বোন কিছুই বোঝেনি. শুধু ওই মানুষদের পায়ের ফাঁক দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলো ওদের মায়ের শরীরের কিছু অংশ. মা ঘুমিয়ে আছে. আর চার পাশে লাল রঙের জল পড়ে.

এরপর থেকে আর ওরা মাকে দেখেনি. ততদিনে ওরা একটু বড়ো হয়েছে আর নিজেরা খেতে শিখেছে. তাই হয়তো বেঁচে গেছিলো. নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে খাওয়ার খোঁজে ঘুরে বেড়াতো. কেউ খেতে দিতো.... কেউ আবার ওই আজকের লোকটার মতোই দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতো. এই ধাক্কা খেতে খেতেই বড়ো হয়েছে ওরা. তারপরে একদিন বোনও কোথায় হারিয়ে গেলো. রোজ কোথায় গায়েব হয়ে যেত আবার অনেক পরে ফিরত...  আবার কখনো দুই তিন দিন ফিরতনা. এরপর পুরোপুরি কোথায় চলে গেলো সে.

ভোলা একা. তবে ভোলা দুঃখ পায়না. ছোটবেলা থেকে এতো কিছু সহ্য করে বড়ো হয়েছে যে আর এসব ব্যাপার গায়ে লাগেনা. প্রতিদিন ও দেখে রাস্তায় লোকদের চলাচল. কিন্তু আজও উত্তর পায়নি এদের চলার শেষ কোথায়?

একবার মনে আছে ভোলার ও পুকুরের ধারে বসে জিভ দিয়ে গা চাটছিল. ও দেখলো ওর মতোই একজন..... না.... ওর মতো নয়. তার গলায় চেন... সেই চেন ধরে পেছনে হাটছে একটি মহিলা. ভোলা সেই মহিলার থেকে চোখ সরিয়ে ওই চার পায়ের প্রাণীকে দেখলো. সেও ভোলাকে দেখলো. বাহ্...  কি সুন্দর দেখতে. গায়ে সোনালী রং, সারা শরীরে কি ঘন লোম, কান দুটো ঝোলা... আর চোখে মুখে একটা সারল্য. সেও বোধহয় ভোলাকে এইভাবেই নজর করছিলো.

ভোলার ইচ্ছে হচ্ছিলো ওর কাছে যেতে... বন্ধুত্ব করতে. হয়তো সেই চেন বাঁধা কুকুরটিরও একি ইচ্ছে হচ্ছিলো. তাইতো সেই এগিয়ে আসছিলো ভোলার দিকে. কিন্তু একটু এগোতেই গলায় টান পড়লো তার. মালকিন তাকে টেনে ভোলার থেকে সরিয়ে বললো - no candy..... ওদিকে একদম নয়... ওটা Dirty dog.. ওদিক একদম যাবেনা.... চলো বাবু....

আর এগোনো হয়নি তার. ভোলারও নয়. ভোলা শুধু দেখেছিলো সেই কুকুরটি তাকেই দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে সামনে. ভোলা তো লেজ ওয়ালা প্রাণী তাই বোঝেনি বন্ধুত্ব সমানে সমানে হয়. উঁচু নিচুতে নয়.... অন্তত দু পায়ে হাঁটা মানুষদের মতে. তবে দুঃখের সাথে এটা ভেবেও শান্তি পেয়েছিলো সে মুক্ত. তার গলায় কোনো চেন নেই.

ভোলা লড়াই ঝগড়া পছন্দ করেনা. রোজ দেখে ওর বন্ধু গুলো আবর্জনায় মুখ ডুবিয়ে খাবার খোঁজে. কিছু পেলেই কাড়াকাড়ি করে নিজেদের মধ্যে. ভোলা এসব পছন্দ করেনা. তাই তো ও রোগা লিকলিকে. কিন্তু তাই বলে ও কমজোর নয়. কারণ ওই লিকলিকে অবস্থাতেই একটা শয়তান দামড়া কুত্তার কান প্রায় ছিঁড়ে নিয়েছিল সে. বিনা কারণে ওর পেছনে লাগছিলো সেই শয়তান. বার বার গোপন জায়গায় কামড়ানোর চেষ্টা করছিলো. ভোলাও জবাব দিয়েছিলো. ব্যাস.... দে দৌড়. মায়ের শেখানো শিক্ষা সে ভোলেনি আর ভুলবেও না..  কিন্তু বিনা কারণে ঝগড়া লড়াইয়ের সর্বদা বিপক্ষে ভোলা. তাই যতটুকু পায় তাই খায়. আগে খুব কষ্ট হতো এখন অভ্যেস হয়েগেছে.

ভোলা প্রয়োজন না পড়লে মানুষের কাছেও যেতে পছন্দ করেনা. ওর ভালো লাগেনা ওই দুই পায়ের প্রাণী গুলোকে. আগে একটা সময় যখন ভট্টাচার্য পাড়ার দিকটায় থাকতো তখন প্রায় রোজ কিছু ছেলে ওর পেছনে লাগলো. ওর গায়ে ঢিল ছুরত, কাঠি দিয়ে কানে খোঁচাতো. একবার ও চুপচাপ শুয়ে ছিল. একটা ছেলে বার বার ওর পেছনে লাঠি মারছিলো আর বন্ধুদের সাথে হাসাহাসি করছিলো. শেষে সহ্য করতে না পেরে শুধু ভয় দেখাতেই ভোলা দাঁত খিচিয়ে তেড়ে গেলো ছেলেটার দিকে. ছেলেটা দূরে পালিয়ে গেলেও ওর এক বন্ধু একটা বড়ো ইঁট ছুড়ে এতজোর পেছনের পায়ে মেরেছিলো যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি ভোলা. লুটিয়ে পড়েছিল মাটিতে. সেইদিন ও বুঝেছিলো ব্যাথা কি জিনিস.

খুব মনে পড়েছিল সেদিন মায়ের কথা. বার বার মাকে মনে করে মাকে ডেকেছিল সেদিন. যদিও অন্যান্য লোকেরা শুধুই একটা কালো কুকুরের আউউউ আউউউ ডাকই শুনতে পারছিলো.

তিনদিন ওই পায়ে হাঁটতে পারেনি ভোলা. তারপরে ধীরে ধীরে ওই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটার চেষ্টা করতো. বেশ অনেকদিন লেগেছিলো পুরোপুরি ঠিক হতে. সেই তখন থেকে ও ঘেন্না করে দু পায়ের প্রাণীদের. শুধু পেটের জ্বালা জড়ানোর জন্য ছাড়া ওই মানুষদের কাছেও যেতে চায়না ও.

ভোলা হাঁটতে হাঁটতে এদিক ওদিক দেখছিলো.  না..... কোথাও কিছু খাবার মতো নেই. আজও হয়তো খালি পেতেই সকালটা কাটবে... বা হয়তো পুরো দিনই.

হাঁটতে হাঁটতে ও মাহিষ্য পাড়ার ভেতরে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতে দেখতে হাঁটতে লাগল. নানারকম লোক এখানেও চলাচল করছে. কোনো বাড়ির বৌ বাইরে দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির বৌয়ের সাথে গল্প করছে. রাস্তার ধারে ওর মতোই কিছু চার পায়ের প্রাণী ঘুমিয়ে.

ভোলা হাঁটতে হাঁটতে ভেতরে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে শুয়ে পড়লো. আর হাঁটতে ইচ্ছে করছেনা ওর. হেটেও লাভ নেই. এইভাবেই থাকতে হবে. এটা ওর জীবন. চোখ বুজে হাত পা ভাঁজ করে শুয়ে রইলো ভোলা.

পাশের বাড়ি থেকে একটা বাচ্চা মেয়ে নিজের ছোট্ট সাইকেল নিয়ে গেট থেকে বেরোলো. গেট ভিজিয়ে সাইকেলে চেপে বসে প্যাডেলে চাপ দিয়ে এগিয়ে আসছে সে. এখনো ঠিকমতো চালানো শেখেনি. তবে এই রাস্তায় কোনো ভয় নেই বলেও ওর মা ওকে এই গলি টুকু চালাতে দেয়.

হাত পাকা নয়. তাই বার বার হ্যান্ডেল এদিক ঘুরে যাচ্ছে সাইকেলের. কোনোরকমে সামলে এগিয়ে আসছে বাচ্চা মেয়েটা. কিন্তু কে জানতো হটাৎ ওর সাইকেলের চাকার নিচে একটা বড়ো ইঁটের শেষভাগটা এসে যাবে আর সাইকেল নিজের রাস্তা ছেড়ে বাঁ দিকে বেঁকে যাবে.

তাই হল. সাইকেল বাঁ দিকে সরে এসে সোজা এগিয়ে গেলো ভোলার দিকে. বাচ্চা মেয়েটার কিছু বোঝার আগেই ওর সাইকেলের সামনের চাকা উঠে গেলো সামনের শুয়ে থাকা কুকুরটার লেজের ওপর.

কেউ...!!! করে চেঁচিয়ে উঠলো কুকুরটা. বাচ্চা মেয়েটাও ভয় পেয়ে সাইকেল থেকে নেমে ছুট্টে কিছুটা দূরে চলে গেলো. তারপরে ফিরে তাকিয়ে দেখলো কালো কুকুরটা উঠে দাঁড়িয়েছে আর ওকেই দেখছে... কিন্তু কামড়াতে আসছেনা. কুকুরটা আবার ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে.

কেমন যেন হোলো ওই ছোট্ট মেয়েটার বুকের ভেতর. একটু এগিয়ে এলো সে সামনে. কুকুরটা কিছুটা গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো মুখ গুঁজে. মেয়েটা আরেকটু এলো সামনে. কুকুরটা কি অসুস্থ? আহারে..... নিশ্চই খুব লেগেছে ওর. সাইকেলটা খুব বাজে... শুধু শুধু কষ্ট দিলো কুকুরটাকে.

মেয়েটার কি মনে হতে সাইকেল ওখানেই রেখে দৌড়ে বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকে গেলো. কিছুক্ষন পরে বেরিয়ে এলো আবার. এবারে হাতে তিনটে বিস্কুট ওর. দৌড়ে এলো কুকুরটার সামনে. একটা ভয়ও হচ্ছে. তাও সাহস করে ডাকলো এই.... এই.... চু.. চু... চু

কুকুরটা মুখ তুলে তাকালো.

সামনে দাঁড়িয়ে একটু আগে ওকে কষ্ট দেওয়া দুই পায়ের প্রাণী. রাগ হচ্ছে ভোলার. কিন্তু কোনো আক্রমণ করলোনা সে. কি হবে করে? শুধুই কিছুক্ষন তাকিয়ে দেখে আবার মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো.

আবার এই.. এই.. চু.. চু... চু.... বিস্কুট খাবি?

ভোলা আবার তাকালো সামনে. ওই বাচ্চাটা হাত বাড়িয়ে কি দেখাচ্ছে. ভোলা গন্ধে বুঝলো খাবার জিনিস ওটা . একটু লেজ নাড়ালো ভোলা. মেয়েটা ওই দেখে কি বুঝলো কে জানে.   আরো কিছুটা সামনে এসে দুটো বিস্কুট ছুড়ে দিলো ওর সামনে. প্রচন্ড খিদে ছিল ভোলার পেটে. তাই সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে খেতে লাগলো বিস্কুট দুটো.

বাচ্চা মেয়েটা দেখছে কুকুরটা চেটেপুটে খেয়ে নিয়েছে বিস্কুট দুটো. নিশ্চই খুব খিদে ছিল. খেয়ে নিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে কুকুরটা তাকিয়ে আছে ওর দিকে. বাচ্চা মেয়েটা আরেকটু এগিয়ে এলো কালো কুকুরটার দিকে. কেন জানে আর ভয় করছেনা ওর ওই কুকুরটাকে.

বাচ্চা মেয়েটা এগিয়ে এসে কুকুরটার মাথায় হাত রেখে কাঁদো কাঁদো মুখে বললো - সরি..... তোর লেগেছে?

ভোলা তাকিয়ে আছে সামনের মানুষটার দিকে. মানুষের এই দৃষ্টি সে চেনেনা. কোনোদিন কোনো দুই পায়ের প্রাণীর এইরকম দৃষ্টি ও দেখেনি. এই জল ভরা চোখ ভোলার কাছে নতুন. ভোলার একটু  এগিয়ে এসে বাচ্চাটার জামা শুকলো.

হ্যা.... এও তো মানব. কিন্তু কিছু যেন আলাদা এই মেয়েটা আর অন্য মানুষ গুলোর মধ্যে.

বাচ্চাটা আরেকটা বিস্কুট হাতে নিয়ে  বললো - নে... এটা খা.... আরো আনবো তোর জন্য.. খা এটা. এখনো ব্যাথা হচ্ছে তোর? এই তো আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি... দেখ ঠিক হয়েযাবে. আমি একবার মাটিতে পরে গেছিলাম. পায়ে খুব লাগছিলো. ঠাম্মি আমার পায়ে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো. একটু পরেই ব্যাথা চলে গেছিলো.... তোর ব্যাথাও কমে যাবে. এই আমি হাত বুলিয়ে দিচ্ছি.

ভোলা মেয়েটার কথা কিচ্ছু বুঝলোনা. কিন্তু বুঝলো এই প্রথম বার..  সামনের মানুষটা ওকে আদর করছে, ওর গায়ে হাত দিচ্ছে, ওই দুই চোখে ভোলার জন্য কষ্ট........ না ওই চোখে দয়া নয়.... ভালোবাসা রয়েছে. চার পায়ের প্রাণী হয়েও ভোলা পড়ে ফেললো ওই ছোট্ট দুপায়ের মানুষটার চোখ.

মেয়েটার হাত থেকে বিস্কুট নিয়ে খেতে লাগলো ও. আর বাচ্চা মেয়েটা ওর মাথায় গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো. বিস্কুট খেয়ে নিয়ে ভোলা তাকালো বাচ্চাটার দিকে. এই প্রথম জিভ দিয়ে চেটে দিতে লাগলো সে বাচ্চাটার গোল ফর্সা গাল.

খিল খিল করে হেসে ফেললো মেয়েটা. তারপরে আদর করে জড়িয়ে ধরলো ভোলাকে. ভোলার গায়ের ধুলো বালি নোংরা তোয়াক্কা না করেই বাচ্চাটা জড়িয়ে ধরলো ওকে. ভোলা বাচ্চাটার বুকে মুখ গুঁজে বসে রইলো.

খুব ভালো লাগছে আজ ভোলার . পেটের খিদে একটুও মেটেনি. তিনটে বিস্কুটে কি খিদে মেটে? কিন্তু তাও খিদে ছাপিয়ে ভেতর থেকে একটা আনন্দর অনুভূতি বেরিয়ে আসছে ওর. আজ ও ভুলে গেছে দুই পা, চার পায়ের তফাৎ. আজ ভোলা জানে ওকে যে জড়িয়ে আদর করছে সে ওর বন্ধু. শুধুই বন্ধু.

এতদিন হয়তো ভোলা ভুল জানতো. এতদিন যে দুপায়ের প্রাণী গুলো সে দেখেছে তাদের হয়তো অন্য নাম আছে. আজ এখন এইমুহূর্তে ওকে যে জড়িয়ে বসে আছে হয়তো তাকেই বলে- মানুষ.


সমাপ্ত  
[Image: 20230816-221934.png]
[+] 5 users Like Baban's post
Like Reply
#14
(06-02-2021, 11:26 PM)Baban Wrote:
[Image: 20210205-003021.jpg]

নতুন করে আর কি ধন্যবাদ দেবো আপনাদের... আমি জানি সবসময় আপনাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস ছিল আর আছে. তাইতো এতদিনের যাত্রা সফল ভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি. এই যাত্রা পথে যারা যারা পাশে ছিলেন তাদের মন থেকে ধন্যবাদ 

অভিনন্দন বাবান দা  congrats

অনেক লেখক ভালো লেখেন কিন্তু মূলত যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর তাদের দক্ষতা বা লেখনী দুর্দান্ত হয়. অন্য বিষয় নিয়ে তারা ভাবতেও চাননা. আপনিও চরম উত্তেজক লেখা দিয়ে শুরু করেছিলেন. একের পর এক যা সব গল্প দিয়েছেন উফফফ...  খুব কম সময়েই পাঠকদের নজর কাড়েন নিজের গল্পের উত্তেজক বর্ণনা দিয়ে. তাই অন্যান্যদের তুলনায় খুব শীঘ্রই সফলতা জয় করেছেন.  

কিন্তু আসল কথা হলো আপনি নিজেকে এখানে আটকে রাখেন নি.  এই লেখা থেকে বেরিয়ে নিজেকে ভেঙে একদম অন্য ভাবেও নিজেকে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন আপনি. erotic writer থেকে রোমান্টিক লেখক.  আবারো সেখান থেকে বেরিয়ে "দূরত্ব" আর "বন্ধু" -র মতো গল্প. 

 বার বার নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসব দুর্দান্ত গল্প লিখেছেন...  এই সাফল্য আপনার প্রাপ্যই ছিল.
[+] 2 users Like Avishek's post
Like Reply
#15
(08-02-2021, 09:22 PM)Avishek Wrote: অভিনন্দন বাবান দা  congrats

অনেক লেখক ভালো লেখেন কিন্তু মূলত যেকোনো একটি বিষয়ের ওপর তাদের দক্ষতা বা লেখনী দুর্দান্ত হয়. অন্য বিষয় নিয়ে তারা ভাবতেও চাননা. আপনিও চরম উত্তেজক লেখা দিয়ে শুরু করেছিলেন. একের পর এক যা সব গল্প দিয়েছেন উফফফ...  খুব কম সময়েই পাঠকদের নজর কাড়েন নিজের গল্পের উত্তেজক বর্ণনা দিয়ে. তাই অন্যান্যদের তুলনায় খুব শীঘ্রই সফলতা জয় করেছেন.  

কিন্তু আসল কথা হলো আপনি নিজেকে এখানে আটকে রাখেন নি.  এই লেখা থেকে বেরিয়ে নিজেকে ভেঙে একদম অন্য ভাবেও নিজেকে আমাদের সামনে নিয়ে আসেন আপনি. erotic writer থেকে রোমান্টিক লেখক.  আবারো সেখান থেকে বেরিয়ে "দূরত্ব" আর "বন্ধু" -র মতো গল্প. 

 বার বার নিজের কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে এসব দুর্দান্ত গল্প লিখেছেন...  এই সাফল্য আপনার প্রাপ্যই ছিল.

অনেক অনেক ধন্যবাদ ❤ Namaskar এতো সুন্দর কথাগুলি বলার  জন্যে. আমার প্রতিটা প্রয়াসকে সফল আপনারা করেছেন, ভালো আপনারা বেসেছেন. নেহাত পাগলামির বশে লিখতে শুরু করেছিলাম. জানতাম না সেই লেখা আপনাদের এইভাবে মন জয় করবে. তারপর ভাবলাম দেখি একবার অন্যরকম কিছু লিখে. সেখানেও আপনারা আমায় ভালোবাসা দিলেন. তাই আমি আপনাদের বার বার ধন্যবাদ জানাই... কারণ আপনারা পাশে না থাকলে ওই এরোটিক লেখক বাবানও আর কিছু লিখতে পারতোনা আর এই বর্তমান বাবানও অন্য কিছু লেখার সাহস পেতোনা. তাই অনেক ধন্যবাদ. thanks
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#16
(09-02-2021, 12:04 AM)Baban Wrote: অনেক অনেক ধন্যবাদ ❤ Namaskar এতো সুন্দর কথাগুলি বলার  জন্যে. আমার প্রতিটা প্রয়াসকে সফল আপনারা করেছেন, ভালো আপনারা বেসেছেন. নেহাত পাগলামির বশে লিখতে শুরু করেছিলাম. জানতাম না সেই লেখা আপনাদের এইভাবে মন জয় করবে. তারপর ভাবলাম দেখি একবার অন্যরকম কিছু লিখে. সেখানেও আপনারা আমায় ভালোবাসা দিলেন. তাই আমি আপনাদের বার বার ধন্যবাদ জানাই... কারণ আপনারা পাশে না থাকলে ওই এরোটিক লেখক বাবানও আর কিছু লিখতে পারতোনা আর এই বর্তমান বাবানও অন্য কিছু লেখার সাহস পেতোনা. তাই অনেক ধন্যবাদ. thanks

সত্যি লেখকের মধ্যে রোমান্টিক, ইরোটিক, রহস্য সব থাকে, একটু একটু করে বের হয় সময়ের সাথে! এই যেমন আমার কথা ধর, চিরদিন রোমান্টিক গল্প লিখে এসেছি, হটাত কি মনে হল থ্রিলার লিখবো, লিখে ফেললাম "মহানগরের আলেয়া" আর "পাপ কাম ভালোবাসা" তারপরে রাজদীপ ব্যাটার চ্যালেঞ্জে যেটা লিখতে ভালোবাসি না সেই গল্প "অসীম তৃষ্ণা" তাও লিখে ফেললাম! তাই বলি, লেখকের মধ্যে কম বেশি সব রকমের উপাদান থাকে সময় মতন সেটা উজাগর হয়, যাকে বলে ক্রমশ প্রকাশ !!!!!!
[Image: 20210115-150253.jpg]
[+] 2 users Like pinuram's post
Like Reply
#17
(06-02-2021, 12:31 AM)Baban Wrote:
সূচিপত্র -

১) অচেনা অতিথি
২) নতুন করে শুরু
৩) দূরত্ব
৪) বন্ধু




[Image: 20201205-221537.jpg]

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে অনেক লিখলাম তাই ভাবলাম এবারে অন্য কিছু লিখি. তাই এই ছোট্ট এক আপডেটের গল্প. এই গল্প ছোটদের জন্যে হলেও আমাদের সকলের. কারণ আমাদের ভেতরে আজও একটা বাচ্চা আছে. আমার গল্প সেই বাচ্চাদের জন্য. আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে.


বিল্টু কাঁধ থেকে স্কুলের ব্যাগটা নিচে রেখে গাছটার তলায় বসলো. মাটি থেকে একটা ঢিল তুলে পুকুরের জলে ছুড়ে মারলো সেটা. কয়েকবার লাফিয়ে কিছুদূর গিয়ে ডুবে গেলো সেটা. গেছে হেলান দিয়ে চোখ বুজলো সে.

মনটা আজ সেরকম ভালো নেই ওর. ক্লাসে হারু স্যার সবার সামনে এমন ভাবে কান মুলে দিলো..... ব্যাটা নান্টু আর প্রবীর  দুজনে মুখ টিপে হাসছিলো. ইচ্ছে করছিলো গিয়ে দুটো চড় মারতে. হারু বাবুও কম জাননা.... আরে বাপু ওতো শাস্তি দেবার কি আছে? জানেনই তো যে বিল্টু অংকে একটু কাঁচা. তাই বলে ওরকম কান মূলবে? উফফফ... এখনো গরম হয়ে আছে কানটা. কিন্তু তার থেকেও গরম মাথা.

ব্যাটা আজ যদি মাঠে গিয়ে নান্টু ব্যাটাকে গুনে গুনে পাঁচটা গোল না দিয়েছে তো নিজের নাম পাল্টে ফেলবে বিল্টু. নিজে ব্যাটা অংকে গোল্লা পায়... আর অন্যের কান মোলা দেখে কি হাসি.

বিল্টু আসার সময় দেখেছিলো হারুদা, বদ্রিদা গল্প করতে করতে চ্যাটার্জী পাড়ার দিকে যাচ্ছে. নিশ্চই আজকে ওদের ম্যাচ আছে. দুজনেই ক্রিকেট ফুটবল দুটোই ব্যাপক খেলতে পারে.

বিল্টু আবার বদ্রীদার খুব বড়ো ফ্যান. যেভাবে পায়ের খেলা দেখায় ফুটবলে. সামনের মানুষটা বুঝতেই পারেনা কিকরে বল নেবে নিজের পায়ে. বদ্রীদা বলেছে ওকে শিখিয়ে দেবে.
কিন্তু... সে এখনো আসছেনা কেন? ওতো বলেছিলো এরকম সময় এখানে দেখা করতে. আজ নাকি কি জরুরি কথা আছে. এদিকে দেরি হচ্ছে. মা আবার বকাবকি করবে বেশি দেরি হলে. আসলে মা একটুতেই চিন্তায় পড়ে যায়. তবে মা আগলে রাখে বলেই বাবার পিটুনি কম খায় বিল্টু. নইলে তার শয়তানি দস্যিপনার জন্য বাবা পিটিয়ে তক্তা বানিয়ে দিতো. এইতো সেইবার খেলতে খেলতে বিল্টু এমন একটা লাথি মারলো ফুটবলে..... সেটা গিয়ে লাগলো সোজা রাস্তার কুকুরটার মুখে. আর অমনি হতচ্ছাড়া প্রতিশোধ নিতে তেড়ে এলো বিল্টুদের দিকে.

বিল্টুরা ততক্ষনে অদৃশ্য হয়েছে মাঠ থেকে. কেউ দৌড়ে গাছের ওপর, কেউ পাঁচিল টপকে বাইরে, কেউ পুকুরের জলে লাফ. কি ভাগ্য মাইরি..... সেদিন ওই সামনের রাস্তা দিয়েই তমাল কাকু যাচ্ছিলো. কুত্তাটা বিল্টুদের কাউকে না পেয়ে শেষে কিনা তেড়ে গেলো তমাল কাকুর দিকেই. আর বেচারা কাকুকে প্রানপনে দৌড়োতে হয়েছিল. আর সেইবার বিল্টু, বাবলু সন্তু কাজল মিলে আম বাগানে আম চুরি করছিলো. সেইসময় বিল্টু গুলতি দিয়ে অর্জুনের মতো আমের দিকেই তীর ছুড়লো..... ইয়ে মানে গুলতি দিয়ে ইঁটের টুকরোটা ছুড়লো ঠিকই কিন্তু সেটা বিল্টুকে ধোঁকা দিয়ে সোজা উড়ে গিয়ে পড়লো পাচু দাদুর টাকে.
দে দৌড় ওখান থেকে. যদিও পাচু দাদু লাঠি হাতে রেরে করে তেড়ে এসেছিলো কিন্তু বিল্টুদের ধরতে পারেনি. যদিও বিলটুকে দেখে ফেলেছিলো. আর তার ফল স্বরূপ পরের দিনই বাবার কাছে নালিশ আর তার ফলাফল উদুম ধোলাই.

আর সেইবারে প্রবীরকে ভুতের ভয় দেখানো. সেতো ব্যাটা এমন ভয় পেয়েছিলো যে পরেরদিন স্কুলেই আসেনি. সন্ধে বেলায় বিল্টু বাবলু আর কাজল মিলে ভোলার মাঠের সামনে লুকিয়ে ছিল. প্রবীর ব্যাটা ওই রাস্তা দিয়েই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলো. কাছাকাছি আসতেই বিল্টুর কালো চাদর জড়িয়ে আর দোকান থেকে কেনা ভুতের মুখোশ পড়ে প্রবীরের সামনে দাঁড়াতেই সে মহাশয় তো সাইকেল থেকে লাফিয়ে বাবাগো গেলাম গো ভুতে ধরলো গো বলে উল্টোদিকে দৌড়. যদিও বিল্টুরা ওই কান্ড দেখে হেসেই পাগল কিন্তু পরে নিজেরাই ওর সাইকেল প্রবীরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলো.

বেশ ডানপিটে বিল্টু. ভয় টয় সেরকম ওর নেই. এই তো সেইবার নান্টু আর বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলো একা একা ওই ভোলার মাঠের উত্তরের ওই ভাঙা পরিত্যক্ত বাড়িটা থেকে ঘুরে আসবে. বন্ধুরা বাইরে অপেক্ষা করবে. ঐদিকটায় কেউ যায়না. সবাই বলে ঐবাড়িতে কাকে যেন রাতে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়.

কিন্তু বিল্টু এসবে মানেনা. সে বাজি ধরে একাই গিয়েছিলো ওই বাড়িতে. যদিও ভেতরে ঢোকার সময় একটু গা ছম ছম করেছিল কিন্তু বীরত্ব দেখানোর আনন্দই আলাদা. তাই সাহস করে ঢুকে পড়েছিল ভেতরে.

আর সেই খানেই প্রথম দেখা সেই ছেলেটার সাথে. যদিও প্রথম দর্শনে ঐরকম পরিস্থিতিতে একটা আজব বস্ত্র পরিহিত মানুষকে দেখে বিল্টু তাকেই ভুত ভেবে চিল্লিয়ে উঠে ছিল. আর তার চিল্লানি শুনে ওই ছেলেটিও ভয় পেয়ে চিল্লিয়ে উঠেছিল.
এদিকে বাড়ির ভেতর থেকে চিল্লানি শুনে ঐরকম ভুতুড়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকাটা আর সম্ভব হয়নি বাকি বন্ধুদের পক্ষে. যে যেদিকে পেরেছিলো দৌড় দিয়েছিলো.

বিল্টুও পালিয়েই আসছিলো কিন্তু একটা কিসে ধাক্কা লেগে পড়ে গেছিলো মেঝেতে. একটু লেগেও ছিল. চামড়া ছুলে গেছিলো.

ওদিকে সেই ছেলেটিকে এগিয়ে আসতে দেখে বিল্টু তো ভয় ভয় রাম নাম নিতে শুরু করেছিল.
ছেলেটি হাসতে হাসতে ওর কাছে এসে বলেছিলো - আরে আমি ভুত নই.... ভয় পেওনা...

ছেলেটি বিল্টুর কাছে এসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হটাৎ থমকে গেলো. অবাক হয়ে বিল্টুর দিকে তাকিয়ে রইলো. যেন অদ্ভুত কিছু সে দেখে ফেলেছে. তারপর হেসে উঠলো ছেলেটা আনন্দে. 

যা বাবা..... পাগল নাকি? নাকি অভদ্র? এরকম অবস্থায় একজনকে দেখে হাসছে দেখো. একটু রাগ হলো বিল্টুর. সে বললো - হাসার কি আছে অমন করে? অন্যকে কষ্টে দেখে খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা? নিজের হলে বুঝতে কেমন লাগছে.
ছেলেটা এবারে হাসি থামিয়ে বললো - সরি সরি.... আসলে আপনি যা ভাবছেন আমি সেই জন্য হাসিনি.

বিল্টু অবাক. এ ছেলে বলে কি? বয়সে ওর মতোই হবে... বা হয়তো সামান্য বড়োই হবে ওর থেকে. আর কিনা আপনি করে কথা বলছে? তারপর আবার ইংরেজিতে সরি? কেন বাপু... বাংলায় দুঃখিত বলতে কি হয়?

বিল্টু এবারে দাঁড়িয়ে এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে গিয়ে বাড়ির সিঁড়ির কাছে বসলো. ইশ...... বেশ অনেকটা কেটেছে. রক্ত বেরোচ্ছে. সব হয়েছে এই আধপাগল..... নানা... বদ্ধ উন্মাদটার জন্য.

ছেলেটাও এবারে বাইরে এসে বিলটুকে বললো - ব্যাথা লাগছে বুঝি খুব? বিল্টু খেপে গিয়ে বললো - না না.... দারুন লাগছে.... যত্তসব.

ছেলেটা এবারে ওর পাশে বসে পকেট থেকে কি একটা ছোট বাক্স বার করে তার থেকে একটা শিশি বার করে বিলটুকে বললো - দিন..... পা টা দিন....

বিল্টু খেপে গিয়ে বললো - আরে আমাকে কি বুড়ো দাদু মনে হয়? নিজে তো আমার থেকেও বড়ো.... আর আমাকে আপনি আপনি করে বলছে দেখো.... কেন? তুমি করে বলতে কি গায়ে লাগে?

ছেলেটি হেসে বললো - আচ্ছা দাও.. পা টা দাও... এটা লাগিয়ে দি... দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে.

বিল্টু রাগী সুরেই বললো - উহঃ.... এমন করে বলছে যেন এক্ষুনি আমার পায়ের ব্যাথা কমিয়ে দেবে.... এদিকে আমি হাঁটতে পারছিনা.. আর ইনি ডাক্তারি ফলাচ্ছেন.

ছেলেটা এবারে বিল্টুর অপেক্ষা না করে নিজেই পা টা নিজের কাছে টেনে ওই ক্ষত জায়গায় শিশি থেকে দু ফোঁটা কি ফেললেন. আর বিল্টু তারপর যা দেখলো তাতে সে অবাক হয়ে গেলো. ওর চোখের সামনে ক্ষত স্থান থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে জায়গাটা আবার আগের মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো. বিল্টু পা নাড়িয়ে দেখলো. না....... ব্যাথাটাও আর নেই. একি ভোজবাজি নাকি?
বিল্টু ছেলেটার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো. কে এ?
ছেলেটি বিল্টুর জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে নিজেই বললো - আমার দিকে ওরকম করে দেখার কিছু নেই. আমি কোনো ম্যাজিশিয়ান নই. এটা এই ওষুধের জাদু.

বিল্টু - এইরকম জাদুর ওষুধ তুমি পেলে কোথায়? আমাদের এখানে তো এরকম ওষুধ নেই. আমাদের এখানে কারোর কিছু হলে ওই বুড়ো রাজেন ডাক্তারই ভরসা. কিন্তু এরকম ওষুধ আমি আগে দেখিনি.

ছেলেটি বললো - এতো আমাদের ওখানে সব জায়গায় পাওয়া যায়.

বিল্টু ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কোথা থেকে এসেছে. কিন্তু ছেলেটি সেইভাবে কিছুই বলেনি. বলেছিলো আমি অনেক দূর থেকে এসেছি..... ওখানে যাওয়া এই মুহূর্তে তোমার বা কারোর সম্ভব নয়. শুধু আমি পারি ওখানে যেতে. আচ্ছা.... আজ চলি... আবার দেখা হবে. আমি আবার রবিবার আসবো. ওই মন্দিরের পাশের পুকুরপাড়ে ১১টা নাগাদ আমাদের দেখা হবে.

এই ছিল ওদের প্রথম আলাপ. ছেলেটিকে প্রথম দেখে অবাকই হয়ে ছিল বিল্টু. কারণ ছেলেটার মুখের সাথে ওর নিজের মুখের বেশ অনেক মিল আছে. কিন্তু ছেলেটার জামা কাপড় বড়ো  অদ্ভুত. ফিরে আসার সময় বিল্টুর মনে পড়েছিল ছেলেটার নামই জানা হয়নি.

এরপর দ্বিতীয়বার দেখা ওই পুকুর পারে. সেদিন রবিবার বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন খেলতে খেলতেই ওর মনে পড়ে গেলো সেদিন দেখা করার কথা. বন্ধুদের মিথ্যে বলে ও চলে গেলো মন্দিরের দিকে. মন্দিরের পেছনে একটা কুকুর চারটে বাচ্চা দিয়েছে. মাঝে মাঝেই বিল্টু ওখানে গিয়ে ছানা গুলোকে আদর করে আর ওদের মাকে বিস্কুট দেয়.

আজকে গিয়ে ও দেখলো ছানা গুলো মায়ের দুধ খাচ্ছে আর ওদের সামনেই দাঁড়িয়ে সেদিনের অচেনা ছেলেটি দুই হাতে কি একটা ধরে কি যেন করছে. বিল্টু আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখলো ছেলেটার হাতে কালো রঙের পাতলা লম্বাটে কি একটা জিনিস. আর সেটা ধরেই ছেলেটা কি যেন করছে.

বিল্টু এগিয়ে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রাখতেই ছেলেটা চমকে উঠলো.  তারপর বিলটুকে দেখে বললো - ওহ... তুমি.... আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম.

বিল্টু - এটা কি? কি করছো তুমি এটা ধরে?

ছেলেটা - ছবি তুলছি... কি সুন্দর কুকুর ছানা গুলো.

বিল্টু ছেলেটার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো. ছবি তুলছে? কিন্তু ক্যামেরা কোথায়?

ছেলেটা - এইতো ক্যামেরা....

বিল্টুর এবার হাসি পেয়ে গেলো. বলে কি এ? ঐটুকু জিনিসটা কিনা ক্যামেরা. বিল্টুর জেঠুর বন্ধুর একটা ক্যামেরা আছে. সেটা ও দেখেছে. বেশ বড়ো আর ভারীও. আর এই ছেলের হাতের ঐটা নাকি ক্যামেরা?

এটা ওকে বলতেই ছেলেটা হেসে বলেছিলো..... এটাই তো তফাৎ তোমাতে আমাতে. এই ছোট্ট জিনিসটাই ক্যামেরা. দাড়াও এই দেখো. অমনি ওই জিনিসটা বিল্টুর দিকে করে কি একটা করতেই অমনি ওই কালো জিনিসটার থেকে ঠিক ক্যামেরার মতোই চোখ ধাঁধানো আলো ছিটকে বেরোলো আর তাতে চোখের সামনে কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্ধকার নেমে এসেছিলো বিল্টুর.

ছেলেটি তারপর ওর কাছে এসে কালো জিনিসটাতে ওকে দেখিয়েছিলো বিল্টুর ছবি. অবাক হয়ে বিল্টু সেদিন দেখেছিলো সেই ছবি. তাও আবার এতো সুন্দর,রঙিন. বিল্টু অবাক হয়ে নিজের ছবি দেখেছিলো সেদিন. ভারী অদ্ভুত জিনিস তো. ছেলেটা বলেছিলো ওই কালো পাতলা জিনিসটার আরো গুন আছে. এই বলে বিল্টুকে অবাক করে দিয়ে ওকে একটা রবীন্দ্রসংগীত শুনিয়েছিল ছেলেটা.

ভারী অদ্ভুত জিনিস তো.... আকৃতিতে ঐটুকু... অথচ ঐদিকে কত কি কাজ করা যায়. ওটার নাম জানতে চাওয়ায় কি একটা "স্মার্টফোন" না কি যেন নাম বলেছিলো. জিনিসটা বিল্টুর এতোই ভালো লেগেছিলো যে ও ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করেছিল এই জিনিস কোথায় কিনতে পাওয়া যায়. তাতে ছেলেটি বলেছিলো এই জিনিস এই মুহূর্তে কোথাও পাবেনা তুমি. এই সময় কোথাও পাওয়া যাবেনা.

বিল্টু ওকে জিজ্ঞেস করেছিল তাহলে তুমি কোথায় পেলে? তাতে ও হেসে বলেছিলো ও তুমি বুঝবেনা. সেদিনও আর নাম জিজ্ঞেস করা হয়নি ছেলেটার.
তারপর শেষ দেখা হয়েছিল তিনদিন আগে. এই পুকুরপাড়ে. দেখে মনে হচ্ছিলো বেশ মন খাড়াপ. বিল্টু ওর পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে?
ছেলেটা পুকুরের জলে তাকিয়ে বলেছিলো - এই সুন্দর পরিবেশ দেখছি...... দেখছি এই জল, জলে ওই হাঁসগুলো, এই পরিষ্কার আকাশে উড়ন্ত পাখি গুলো, মাঠে খেলতে থাকা ছেলে গুলো..... প্রানভরে দেখছি এগুলো আর ভাবছি..... তুমি কি ভাগ্যবান.
যা বাবা..... এসব আবার কি আবোল তাবোল বলছে রে ছেলেটা? বিল্টু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে - এসব আবার কি বলছো? এগুলো আবার এরকম ভাবে দেখার কি আছে? এতো আমি রোজ দেখি. আমি রোজ এই মাঠে খেলি, জলে সাঁতার কাটি, সরস্বতী পুজোয় ঘুড়ি ওরাই..... এতো আমরা সবাই করি.
ছেলেটা বিল্টুর দিকে তাকিয়ে হেসে বলেছিলো - তাইতো বললাম তুমি বা তোমরা অনেক ভাগ্যবান. কারণ তোমরা খেলতে জানো, খেলতে খেলতে ব্যাথা কে অনুভব করতে জানো, জানো পড়াশুনার গুরুত্ব, জানো হেরে যাওয়ার দুঃখ, উন্নতির স্বাদ নিতে জানো, দুঃখে পাশে দাঁড়াতে জানো, জানো হাসাতে, জানো বাঁচতে. আর আমরা...........

এই টুকু বলেই চুপ করে গেছিলো. সামনের রাস্তা দিয়ে কয়েকটা পুচকে সাইকেলের টায়ার নিয়ে গড়াতে গড়াতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো...চাকার সাথে ওরাও দৌড়োচ্ছিলো. যেই ওটার গতি কমে যাচ্ছে.... অমনি একটা ছেলে একটা লাঠি দিয়ে মেরে ওটার গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিলো. বিল্টু দেখলো তার নতুন বন্ধু হা করে ওই খেলা দেখছে. যেন জীবনে প্রথমবার এমন কিছু দেখলো. চোখে মুখে একটা আনন্দ ফুটে উঠেছিল ছেলেটার. বিল্টু ভাবছিলো এ আবার এমন করে হা করে দেখার কি আছে? ছোটবেলায় কত খেলেছে এরকম ও.
বাচ্চা গুলো চলে যাবার পর আবার ছেলেটার মুখটা ভার হয়ে গেছিলো. তারপর বিল্টুর দিকে তাকিয়ে বলেছিলো - প্রানভরে এই প্রতিটা মুহুর্ত উপভোগ করো. কারণ একদিন আর এসব কিছুই থাকবেনা.

বিল্টু - কেন?

ছেলেটা - কারণ একদিন আর তুমি এরকম ছোট থাকবেনা.... বড়ো হয়ে যাবে.

বিল্টু গোমড়ামুখে বলেছিলো - ধুর..... আমি তো চাই বড়ো হতে... তখন না থাকবে পড়াশুনার চাপ, না বাবা মায়ের বকুনি, না তাড়াতাড়ি ঘুমোনো, না স্কুলের পরীক্ষা.... শুধু আনন্দ.

ছেলেটা মুচকি হেসে বলেছিলো - হ্যা.... তা ঠিকই.... থাকবেনা পড়াশুনা...... তখন থাকবে সেই পড়াশুনাকে কাজে লাগিয়ে যোগ্যতা প্রমানের লড়াই, থাকবেনা বাবা মায়ের বকুনি..... যে বকুনির মধ্যে থাকে আমাদের প্রতি চিন্তা ভালোবাসা, থাকবেনা তাড়াতাড়ি ঘুমোনো..... হয়তো দেখলে ঘুমোই আসবেনা কখনো কখনো নিজের যোগ্যতা প্রমানের লড়াইয়ের চিন্তায় , হ্যা....থাকবেনা স্কুল.... যে স্কুল তোমায় শিক্ষা দিয়েছে, যে স্কুলে তুমি শিক্ষকদের থেকে শিক্ষা পেয়েছো, যে স্কুলের মাঠে তুমি বন্ধুদের সাথে খেলা করেছো, ভুলে পেয়েছো শাস্তি আর গুনে পেয়েছো প্রশংসা........ আর শেষে কি বললে আনন্দ? হ্যা.... জীবনে আনন্দ তো একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার.... কিন্তু তার বিপরীতটাকেও ভুলে যেওনা..... জীবন সবসময় তোমায় আনন্দ দেবেনা..... দুঃখও দেবে... হয়তো দ্বিতীয়টাই বেশি দেবে.... কিন্তু তাও এগিয়ে যেতে হবে. এটাই তো লড়াই..... আর এই লড়াই করতে করতে প্রতি মুহূর্তে তোমার সেদিন মনে হবে এর থেকে ছোটবেলাই অনেক ভালো ছিল. প্রতি মুহূর্তে আজকের এই সময় গুলো মনে পড়বে তোমার. আজ তুমি ভাবছো বড়ো হবার পর আর কেউ তোমায় বকবেনা.... কিন্তু সেদিন.... তুমি এই বকুনি, এই শাস্তি গুলোই ভেবে হাসি দুঃখ দুই পাবে.... এই বকুনি গুলো ছিল বলেই তোমার ভবিষ্যত সুরক্ষিত. তবে হ্যা..... প্রগতি তোমায় অনেক কিছুই দেবে কিন্তু তোমার থেকে কেড়েও নেবে অনেক কিছু. তোমায় প্রগতি সাফল্য দেবে, কিন্তু কেরে নেবে তোমার সরলতা, তোমায় সুরক্ষিত ভবিষ্যত দেবে প্রগতি... কিন্তু কেরে নেবে তোমার অতীত. অতীত শুধুই অতীত হয়ে থাকবে.... অতীতের শিক্ষাও হয়তো আর সেই ভবিষতে কাজে লাগবেনা. প্রগতি দেবে তোমায় বড়ো বড়ো বাড়ি গাড়ি..... কিন্তু কেরে নেবে এই সুন্দর সবুজ গাছপালা, নীল আকাশ. প্রগতি দেবে তোমায় নামি মানুষের সান্নিধ্য... কিন্তু হারিয়ে যাবে ছোটবেলার সেই বন্ধুরা.... যাদের সাথে সাঁতার কেটেছো, মাঠে খেলেছো.... ঝগড়া করেছো. প্রগতি তোমায় শেখাবে নকল বন্ধুত্ব কিন্তু কেরে নেবে সেই সত্যিকারের বন্ধুত্ব. তাইতো বলি এই ছোটবেলা কে প্রানভরে উপভোগ করো.... কারণ একদিন তুমি বার বার ফিরে পেতে চাইবে এই দিনগুলো কিন্তু আর পাবেনা. আমি জানি... আমি বুঝি,  আমি আমার বর্তমানকে মাথায় রেখেই তোমায় এগুলো বললাম. তাই আমি যখনি এখানে আসি এই প্রকৃতির  ছবি তুলে বেড়াই, কারণ এখন তো আর এসব........ 
আর কিছু বলেনি ছেলেটা. বিল্টু হা করে শুনেছিলো ছেলেটার সব কথা. বাড়ি এসে ভেবেছিলো ছেলেটার সব কথা. আর অবাক হয়েছিল এই ভেবে যে ওর বয়সী একটা ছেলে এতো গভীর কথা কিকরে বললো? এসব নিয়ে ভাবনা তো ওর কখনো আসেনি.... কিকরেই বা আসবে? ওর বয়সী বা কত? কিন্তু এই ছেলেটা কি করে এরকম সব কথা বললো? এই বয়সে এতো জ্ঞান?

এইসবই চোখ বুজে ভাবছিলো বিল্টু আজ আর তখনি গায়ে কে যেন ধাক্কা দিয়ে বললো - ঘুমিয়ে পড়লে নাকি? চোখ খুলে দেখলো ওর নতুন বন্ধু. আশ্চর্য তো.... ছেলেটা কখন এলো? আর এসে ওর পাশে বসলোই বা কখন? ওতো কোনো পায়ের আওয়াজ পায়নি.

বিল্টুর মাথায় বেশ কয়েকদিন ধরে যে প্রশ্নটা ছিল সেটা আজ শুরুতেই জিজ্ঞেস করলো - আচ্ছা তুমি কে বলতো? তুমি থাকো কোথায়? আর আসোই বা কখন?

ছেলেটা হেসে বললো - বাবা.... এতো প্রশ্ন? আচ্ছা সব বলছি.... আজ সব বলবো বলেই তো এসেছি.... আজই তো আমাদের শেষ দেখা. আর আমি আসবোনা কোনোদিন.... আর আমাদের দেখা হবেনা.

বিল্টু এটা শুনে একটু দুঃখই পেলো. এই কয়েকদিনে ওর ভালো লেগে গেছিলো নতুন বন্ধুকে. বিল্টু গম্ভীর গলায় বললো - আর আমাদের দেখা হবেনা?

ছেলেটা হেসে বলেছিলো - না..... এই আমাদের শেষ দেখা বন্ধু.
বিল্টু - তুমি এই কয়দিনেই আমার ভালো বন্ধু হয়ে গেছিলে... ভেবেছিলাম আমার বন্ধুদের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো. আমরা সবাই মিলে মাঠে খেলবো.

ছেলেটাও একটু দুঃখী মুখে বললো - আমার পক্ষে আর তা সম্ভব নয়.... বার বার ব্যাবহারে মেশিনে খুব চাপ পড়ে গো.... বাবা বলেছে আর নয়.... এই শেষবার.

বিল্টু অবাক হয়ে বললো - মেশিন? কিসের মেশিন?

ছেলেটা - আমার এখানে আসার মেশিন. তোমরা যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে গাড়ি ঘোরা মানে যানবাহন ব্যবহার করো... আমি তেমনি আমার বাহন ব্যবহার করি.
বিল্টু - কোই তোমায় বাহন? আমিতো কোথাও কোনোদিন তোমার বাহন দেখিনি.

ছেলেটা হেসে নিজের পকেট থেকে একটা ঘড়ির মতো জিনিস বার করে দেখালো বিলটুকে. তাতে একজায়গায় লেখা ডেস্টিনেশন - 11-11-1987 আর আরেক জায়গায় লেখা আরেকটা টাইম - 11-9-2059. আর আরেক জায়গায় খুব দ্রুত একটা কাউন্টিং হয়েই চলেছে.

কি অদ্ভুত ঘড়ি রে বাবা. বিল্টু জিজ্ঞেস করলো - এ আবার কিরকম ঘড়ি? আজব তো?

ছেলেটা হেসে বললো - এটাই আমার বাহন.... এটার সাহায্যেই আমি এখানে আসি.

এটা শুনে আর নিজের হাসি আটকে রাখতে পারলোনা বিল্টু. কি অদ্ভুত কথা...... ওকে কি ছেলেটা এতটাই বোকা ভেবেছে? এই ঘড়ির সাহায্যে ও এখানে আসে? বিল্টু হাসতে হাসতে বললো - আমাকে কি এতটাই বোকা মনে হয়? নাকি পাগল মনে হয়? তুমি চাও যে আমি বিশ্বাস করি যে তুমি এই ঘড়ির সাহায্যে এখানে আসো? ইয়ার্কি হচ্ছে?

ছেলেটা হেসে বললো - আমি জানতাম তুমি বিশ্বাস করবেনা উজ্জ্বল. তুমি কেন.... কেউই আজকের সময় একথা মানবেনা. কিন্তু সত্যি এটাই... আমি শুধু এই জায়গার নয়... এইসময়ের এক অতিথি মাত্র.

ছেলেটার মুখে নিজের নাম শুনে অবাক হয়ে গেলো বিল্টু. ওতো কোনোদিন নিজের আসল নাম একে বলেনি. তাহলে ও জানলো কিকরে ওর নাম উজ্জ্বল? তারপরেই ভাবলো এটা আর এমন কি? কারোর থেকে নিশ্চই জেনেছে. এবারে একটু রাগই হলো হলো বিল্টুর. এইসব চালাকি করে ছেলেটা কি প্রমান করতে চাইছে?

বিল্টু এবারে একটু রেগেই জিজ্ঞেস করলো - তুমি কে বলতো? এসব করে কি প্রামান করতে চাইছো? তুমি কি ভাবছো আমি তোমার চালাকি ধরতে পারবোনা.... আমার নাম বলেছো বলে কি ভাবছো আমি তোমার এসবে বিশ্বাস করবো যে তুমি এই ঘড়ির সাহায্যে এখানে আসো?

ছেলেটা হেসে বললো - এটা কোনো সাধারণ ঘড়ি নয় গো.... এটা টাইম মেশিন.... এর সাহায্যে আমি আসি আমার সময় থেকে তোমাদের সময়.

বিল্টু - মানে? টাইম মেশিন? সে আবার কি?

ছেলেটা - এর সাহায্যে এক সময় থেকে আরেক সময় যাওয়া যায় বুঝলে?

বিল্টু উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত রেখে বললো - বটে? গুল মারার আর জায়গা পেলেনা? অন্য সময় থেকে এখানে আসো? তা কোন সময় থেকে আসো শুনি?

ছেলেটা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে বললো - আমি ভবিষ্যত থেকে আসি বন্ধু..... আমি জানি তুমি আমার একটা কথাও বিশ্বাস করছোনা... করার কথাও নয়.. কিন্তু সত্যি এটাই. যতটা সত্যি এই মুহুর্ত ততটাই সত্যি আমার উত্তর.

বিল্টু : বটে? তাই নাকি? তা কিকরে আমি বিশ্বাস করবো? আমি সবসময় নিজে না দেখে কিস্সু বিস্বাস করিনা.... আগে প্রমান দাও.

ছেলেটা দুবার মাথা নেড়ে ওই ঘড়িতে কিসব টিপলো তারপর বিলটুকে বললো - তোমার হাত দাও. প্রমান দিচ্ছি.
বিল্টু হাত বাড়াতেই ছেলেটা ওর হাত ধরলো আর বললো - প্রমান দিচ্ছি কিন্তু কথা দাও চেঁচাবেনা... আর আমাদের এই কথা কাউকে বলা যাবেনা.... বললেই কেউ বিশ্বাস করবেনা যদিও.

বিল্টু - বেশ...আগে প্রমান তো দাও দেখি.

ছেলেটা বিল্টুর হাত ধরে ওই ঘড়িতে কি একটা টিপলো আর তারপর কয়েক সেকেন্ড বিল্টুর কিছু মনে নেই. চোখের সামনে একবার উজ্জ্বল আলো লাগায় চোখ বুজে ফেলেছিলো. যখন তাকালো তখন ও দেখলো ও দাঁড়িয়ে ওরই বাড়ির সামনে.

বিল্টু ছেলেটাকে বললো - আমি..... আমি এখানে এলাম কিকরে? আমরা তো পুকুরপাড়ে ছিলাম?

ছেলেটা হেসে বললো - এবারে বিশ্বাস হলো?

বিল্টু ছেলেটার হাত ছাড়িয়ে বললো - না.... তুমি কোনো চালাকি করেছো...দাড়াও আমি মাকে ডাকছি...

এই বলে বিল্টু বাড়ির দিকে এগোতে লাগলো. বাড়িতে কি অন্যদিনের থেকে একটু আলাদা লাগছে? একি!! পেয়ারা গাছটা এতো ছোট লাগছে কেন? আর বাড়ির সামনে এতো পরিষ্কার কিকরে হলো? এইতো সেদিন বাইরের দেয়ালে একটা বাছুরের ছবি এঁকেছিল বিল্টু রং পেন্সিল দিয়ে.... গেলো কোথায় ওটা?
বিল্টু ঘরে ঢুকতে যাবে এমন সময় একটা ছোট্ট বাচ্চার হাসির আওয়াজ পেলো ও. বাড়িতে কি কেউ অতিথি এসেছে? বিল্টু আগে জানলায় চোখ রাখলো আর রাখতেই ও যা দেখলো তাতে ওর গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলো.

ভেতরে ওর নিজের বাবা আর মা আর ওদের সামনে একটা ছোটো বাচ্চা. হাত বাড়িয়ে মায়ের কোলে ওঠার বায়না করছে. মায়ের আর বাবার দুজনরই বয়স যেন অনেক কম লাগছে. বাবার মাথায় মাথা ভর্তি চুল, মাকে অনেকটা রোগা লাগছে.

এসব কি দেখছে কি ও? এমন সময় পেছন থেকে ছেলেটা ওর কানের কাছে মুখ এনে বল্ল - কি? এবারে বিশ্বাস হলো?

বিল্টু ওরদিকে ঘুরে বললো - এ কি.... বাবা মা.... এতো আলাদা লাগছে কেন? আর.. আর ওই বাচ্চাটা?

ছেলেটা মুচকি হেসে বললো - ওটা আর কেউ নয়.... ওটা তুমি.

বিল্টু কি বলবে বুঝতে পারছেনা.... চোখের সামনে যা দেখছে তা বিশ্বাস করা যায়না. নিজের গায়ে চিমটি কাটলো ও. উত্তেজনায় হয়তো একটু জোরেই কেটেছিল চিমটিটা . ব্যাথায় মুখ দিয়ে আহ্হ্হঃ আওয়াজ বেরিয়ে গেলো. আর সেই আওয়াজে ওর বাবা বলে উঠলো এই বাইরে কে রে?

ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গে বিল্টুর হাত ধরে টেনে গোয়াল ঘরের পেছনে লুকিয়ে পড়লো. বিল্টু দেখলো ওর বাবা বাইরে এসে এদিক ওদিক দেখছে. না...... এই বাবা আজকের বাবা নয়.... ইনিতো অনেক যুবক.... মাথা ভর্তি চুল, বাবার ভুঁড়িটাও নেই. ওদিকে মাকেও একদম আলাদা লাগছে. না চাইতেও বিশ্বাস করতে বাধ্য হলো বিল্টু.

একটু পরে আবার বোতাম টিপে ওরা নিজ পূর্বের স্থানে ফিরে এলো. বিল্টু হা করে তাকিয়ে ওই ঘড়ির দিকে. কি আশ্চর্যজনক, কি অদ্ভুত জিনিস!! অতীতে যাওয়া যায় এই ঘড়ির সাহায্যে! ইশ... যদি অতীতের বাবা মায়ের সাথে দেখা করা যেত. কথাটা ছেলেটাকে বলাতে সে বললো বাবা মায়ের আদর তো পেতেই না উল্টে তোমার বাবা তোমায় পাগল ভেবে লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন. কারণ তখন তোমাকে তিনি চেনেনই না.... ওনার সন্তান তখন ওই শিশু.

বিল্টু মাথা চুলকে বললো - তাও ঠিক..... আচ্ছা এবারে তুমি বলতো.... তুমি এখানে এসেছো কেন? কিছু কাজে?

ছেলেটা ঘড়িটা পকেটে রেখে বললো - নাহ..... আমি এসেছি এই সময়টা নিজের চোখে উপভোগ করতে.... এই প্রকৃতি নিজের চোখে দেখতে. আমার দাদু আমায় বলেছে এই সময়ের কথা. সব শুনে আমি আর লোভ সামলাতে পারিনি. এসেছিলাম নিজের চোখে ঘুরে ঘুরে সব দেখবো বলে. আর এসে আমি যেন হারিয়ে গেছিলাম এই সময়.

বিল্টু - কেন? এমন কি আছে এই সময়?

ছেলেটা - পরিষ্কার বাতাস, চারিদিকে সবুজ, নীল আকাশ, সবার মুখে হাসি, সবাই মিলে হৈ হৈ করে আনন্দ করা, সকলের প্রতি ভালোবাসা, মন থেকে উৎসব পালন ..... আরো কত কি..

বিল্টু : কেন? তোমাদের ওখানে এসব নেই নাকি?

ছেলেটার হাসি মিলিয়ে গেলো. বললো - ওই যে বললাম...... ভবিষ্যত বা প্রগতি যেমন কিছু দেয় তেমন অনেক কিছু কেড়েও নেয়.... আর এর জন্য দায়ী মানুষই. আধুনিকতার লোভ মানুষের ভেতরের মানুষটাকে ধ্বংস করে ফেলেছে. আজ আমাদের কাছে অনেক কিছু আছে জানো.... উড়ন্ত গাড়ি, বড়ো বিশাল বাড়ি, টিভি, টিভিতে লক্ষ লক্ষ চ্যানেল, মোবাইল, vr box, Ai robot সব. এককথায় ঘরে বসেই আমরা সব কিছু হাতের মুঠোয় পেয়ে যাই. 

বিল্টু ছেলেটার কথার অর্ধেক কিছুই বুঝলোনা. শুধু বুঝলো আধুনিকতার ম্যাজিক অসাধারণ. অবাক হয়ে বললো - কি বলছো কিগো? উড়ন্ত গাড়ি? মানে আকাশে গাড়ি উড়ছে? আরিব্বাস!! দারুন ব্যাপার তো.... এই আমাকেও দেখাও না এসব.

ছেলেটা বললো - বিশ্বাস করো.... ভবিষ্যত তোমার অতটাও ভালো লাগবেনা.... কারণ এসব পেলেও.... তুমি কথাও সবুজ রং বা নীল রং খুঁজে পাবেনা, পাবেনা একটাও হাসি মুখ, পাবেনা আড্ডা দেওয়া মানুষের দল, শুধু দেখবে হাজার হাজার মানুষের দল চলেছে..... তাদের একটাই লক্ষ সাফল্য আর সাফল্য.

বিল্টু - সফল হতে সবাই চায়... বাবা বলে জীবনে সফল হওয়া খুব জরুরি... তাহলে এতে খারাপ কি?

ছেলেটা বললো - একদম ঠিক বলে তোমার বাবা..... কিন্তু যে সাফল্য মানুষের ভেতরের ইচ্ছে, আনন্দ দুঃখ সব ভুলিয়ে লোভের দিকে চালিত করে সেই সাফল্য ক্ষতিকারক উজ্জ্বল. সেই সফলতা তোমায় অনেক কিছু দেবে কিন্তু তুমি নিজের কাছেই হেরে যাবে. আমি জানি..... আমি দেখেছি. আমি দেখেছি আমার নিজের পরিবারের লোকেদের, নিজের বাবা মাকে. আমি তোমাকে তা দেখাতে চাইনা বন্ধু. তুমি খুব ভাগ্যবান তোমার বাবা মা তোমায় বকেন, আবার আদরও করেন কিন্তু আমি এটার কিছুই সেইভাবে পাইনা..... না বাবার স্নেহ না মায়ের ভালোবাসা. প্রগতির পথে তারা শুধুই এগিয়ে চলেছে সফল হতে. আমার দাদু আমায় রোজ নিজের অতীতের কত ঘটনা বলতেন.... তাঁদের ছোটবেলার খেলা, দুস্টুমি কতকি.... এইসব শুনেই আমি বড়ো হয়েছি. তারপর একদিন তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে. আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি, বাবার কাছে বার বার বলি দাদুর গ্রামে ঘুরতে আসার জন্য. শেষে অনেক কষ্টে তাকে রাজি করাই বাবাকে. তিনি আমায় এখানে আসতে দিতে রাজি হন... আর আমিও চলে আসি এই মেশিনের সাহায্যে দাদুর গ্রামে বেড়াতে মানে এখানে . আমাদের সময় এই টাইম মেশিন অনেক ধোনিদের কাছেই আছে.

বিল্টু - মানে তোমার দাদু এই গ্রামেই থাকেন? দেখা হয়েছে তার সাথে?

ছেলেটা বললো - হ্যা..... হয়েছে.... তবে কি জানো.... আমি তাকে বলিনি আমি কে? বললে উনিও কি মানবেন কিছু?

বিল্টু ফিক করে হেসে বললো - হয়তো দেখলে তোমার কথা শুনে সেও লাঠি নিয়ে তোমায় তাড়া করেছেন.

ছেলেটাও হেসে উঠলো এটা শুনে. এমন সময় ওর পকেট থেকে পিই... পিই.... পিই করে আওয়াজ হতে শুরু করলো. ছেলেটি ঘড়িটা বার করে বললো - আমার যাবার সময় হয়ে এসেছে বন্ধু. এবারে আমায় যেতে হবে. শুধু যাওয়ার আগে এইটুকুই বলে যাই জীবনে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত তিনেরই গুরুত্ব অনেক.... কিন্তু সব থেকে বেশি গুরুত্ব দাও বর্তমানকে, আজকে, এই মুহুর্তকে. কারণ ভবিষ্যত তোমার হাতে নেই আর অতীতও নয় কিন্তু এই মুহূর্তটা তোমার নিজের... একদমই নিজের তাই উপভোগ করো এটাকে.... কারণ এই মুহূর্ত আর কোনোদিন ফিরবেনা.... আমরা পেয়েছি আধুকিন জীবন.... আর তোমরা কাটাচ্ছ সত্যিকারের "জীবন". এই দুয়ের মধ্যে অনেক তফাৎ.... তাই জীবনকে উপভোগ করো. আমার দাদু আমায় শিখিয়েছেন-

হও ধরমেতে ধীর হও করমেতে বীর,
হও উন্নত শির, নাহি ভয় |
ভুলি ভেদাভেদ জ্ঞান, হও সবে আগুয়ান,
সাথে আছে ভগবান,—হবে জয় |

আসি বন্ধু......

বিল্টু অচেনা বন্ধুটার হাত ধরে বললো - আর আসবেনা তুমি? আর দেখা হবেনা কোনোদিন আমাদের?

ছেলেটা হেসে বিল্টুর হাতে হাত রেখে বললো - হবে..... আবার নিশ্চই দেখা হবে..... অন্যভাবে....অন্নরূপে....আজ আসি... বিদায়.

বিল্টু - তোমার নামটা বলে যাও?

ছেলেটা বললো - আমার নাম বিবেক.

বিল্টু - খুব ভালো নাম তোমার.

বিবেক হেসে বললো - দাদু রেখেছিলেন. এবারে যাই বন্ধু.

বিল্টু ভেজা চোখে বললো বিদায় বিবেক

বিবেক মুচকি হেসে হাত নাড়ালো আর মনে মনে বললো - বিদায় দাদু.




সমাপ্ত

আপনার লেখক প্রতিভা অসাধারণ, দারুন লাগলো গল্পটা
[+] 1 user Likes panudey's post
Like Reply
#18
(09-02-2021, 08:43 PM)panudey Wrote: আপনার লেখক প্রতিভা অসাধারণ, দারুন লাগলো গল্পটা

অনেক ধন্যবাদ ❤
Like Reply
#19
(09-02-2021, 12:11 PM)pinuram Wrote: সত্যি লেখকের মধ্যে রোমান্টিক, ইরোটিক, রহস্য সব থাকে, একটু একটু করে বের হয় সময়ের সাথে! এই যেমন আমার কথা ধর, চিরদিন রোমান্টিক গল্প লিখে এসেছি, হটাত কি মনে হল থ্রিলার লিখবো, লিখে ফেললাম "মহানগরের আলেয়া" আর "পাপ কাম ভালোবাসা" তারপরে রাজদীপ ব্যাটার চ্যালেঞ্জে যেটা লিখতে ভালোবাসি না সেই গল্প "অসীম তৃষ্ণা" তাও লিখে ফেললাম! তাই বলি, লেখকের মধ্যে কম বেশি সব রকমের উপাদান থাকে সময় মতন সেটা উজাগর হয়, যাকে বলে ক্রমশ প্রকাশ !!!!!!

একদম ঠিক কথা. আসলে আমরা এই লেখকদের মাথায় হটাৎ করে কি যে হয়...... এই আজ একরকম লিখছি তো কাল আরেকরকম. আমিও তো তাই দুস্টু দুস্টু গপ্পো লিখতাম... তারপর মাথার কি পোকা নড়লো কে জানে ভদ্র ভদ্র গপ্পো লিখতে লাগলাম.  Big Grin

আমরা এই লেখকরা কখনো মাথা থেকে ভেবে লিখি, কখনো মন থেকে আবার কখনো...... Big Grin Tongue
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
#20
কোনো দুষ্টু-মিষ্টি গল্প হবে নাকি এবার !!?   banana
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)