25-09-2025, 05:17 PM
নিয়োগ পর্ব ১৩
সমরেশ মাধবীর প্যান্টি হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো। এতক্ষণ মাধবী বিছানায় শুয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছিলো। সে জানে সমরেশ বিমলকে উপরের ঘরে আসতে দেবেনা। এইটুকু বিশ্বাস সমরেশের প্রতি তার আছে। তাই সে কোনো তাড়াহুড়ো না করে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলো।
শাড়ি এলোমেলো হয়ে গায়ে জড়ানো ছিল। তাতে সমরেশের বীর্যও লেগেছিল, সায়াতেও। সমরেশ অনেকটাই গরম অঘনীভূত, ঈষৎ ক্ষারীয় তরল ঢেলে দিয়েছিল তার যোনিতে। ফলে তা উপচে পড়ে তার সায়া শাড়িকেও খানিক নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আবার সেগুলো পড়েই বাড়ি ফিরতে হবে। কি জ্বালা! মা হতে কত কিছুই না তাকে সইতে হচ্ছে। ভেবেই অস্থির লাগছে তার।
এমতাবস্থায় ঘরের দোরগোড়ায় এসে উপস্থিত সমরেশ, "তুমি এখনো শুয়ে আছো? ওদিকে বিমল যে তাড়া দিচ্ছে!"
সমরেশকে দেখা মাত্রই মাধবী চমকে গিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। তা দেখে সমরেশ মজার ছলে বললো, "আরে! ভূত দেখলে নাকি?"
মাধবীও মুখ বেঁকিয়ে ভেংচি কেটে বললো, "বালাই ষাট! ভূত দেখতে যাব কেন? তুমি এভাবে হঠাৎ চলে এলে তাই খানিক চমকে উঠলাম!"
"চলো চলো, তৈরী হয়ে নাও, বাড়ি যেতে হবে তো। তোমার স্বামী নিচে অপেক্ষা করছে। তাকে অনেক কষ্টে কথার জালে বেঁধে এসছি। নাহলে সে তো উপরে উঠেই আসছিলো।"
"তা এই বলতে বুঝি আসা?"
"তা নয়তো কি?"
"আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার এত তাড়া তোমার?"
আসলে মনের গভীরে কোথাও এক কোণায় মাধবী নিজের অজান্তেই ইচ্ছের বাসা বাঁধছিল এই সান্যাল বাড়িতে থেকে যাওয়ার। বসু মল্লিক বাড়ির মতো এখানে অত নিয়ম কানুনের বালাই নেই, নেই শাশুড়ির অহেতুক শাসন। এক চিলতে স্বাধীনতার বাস এই বাড়িতে। তাই মন সায় দিতে চাইছিল না বিমলের সাথে ফিরে যেতে সেই সোনায় মোড়া খাঁচায়।.. সমরেশ হয়তো ঠিকই বলেছিল ওই বাড়িতে আমার বাগান সুরক্ষিত নয়। তবু উপায় নেই, মেয়েদের কি নিজের বাড়ি বলে কিছু থাকে নাকি? তারা তো একপ্রকার যাযাবরই।
সমরেশ মাধবীর মনের দ্বন্দ্ব টের পাচ্ছিলো। তবুও সে অপারক, আপাতত। তাই মাধবীর দোদুল্যমানতাকে উস্কানি দিয়ে সেটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করলো না। শুধু প্রত্যুত্তরে বললো, "তাড়িয়ে দিচ্ছি না, বরং তোমার চলে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে আসার প্রতীক্ষা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তুমি চলে না গেলে তোমায় ফিরে পাবার আশায় আমার প্রতীক্ষার প্রহর গোনার সময়কাল আগত হবে কি করে?"
মাধবীর চোখটা ছল ছল করে উঠলো। তবে কি সে সমরেশের বাগিচায় ভালোবাসার ফুল ফোটাতে শুরু করেছে? সে উঠে এসে সমরেশকে জড়িয়ে ধরলো।
"আমি কথা দিচ্ছি, আমি আবার ফিরে আসবো"
সমরেশেরও কান্না পেয়ে গেছিল। তবুও সে নিজেকে সামাল দিয়ে কথার বিষয়টা বদলে দিল, "বাই দা ওয়ে, আমার এখানে আসার আরো একটা কারণ আছে?"
সমরেশের বুক থেকে মাধবী মাথাটা তুলে জিজ্ঞাসা করলো, "কি?"
সমরেশ ঘরেতে ঢোকার আগে মাধবীর প্যান্টিটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। তাই মাধবীর প্রশ্নের উত্তরে সমরেশ তখন পাঞ্জাবির পকেট থেকে প্যান্টিটা বের করে চোখের সামনে ঝুলিয়ে প্রদর্শন করিয়ে বললো, "তুমি এটা নিচে ভুলে এসছিলে!"
মাধবী তা দেখেই আঁতকে উঠলো, "যাহঃ! বিমল দেখেনি তো?"
সমরেশ হেসে উত্তর দিল, "সেই পাঠিয়েছে...."
"মানে?"
"মানে, সেই প্রথমে দেখতে পায় টেবিলের তলায় কি যেন একটা পড়ে রয়েছে। ভালো করে লক্ষ্য করতেই বুঝতে পায় সেটা তার অর্ধাঙ্গিনীর অন্তর্বাস! বিমলের মুখটা তখন দেখার মতো ছিল বটে, একেবারে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিল বেচারা।.... হা হা হা হা!"
"তুমি হাসছো??"
"তা হাসবো না তো কি কাঁদবো? হাসারই তো ব্যাপার এটা...."
"বিমলের দিকটা একবারও বুঝলে না তাকে নিয়ে হাসাহাসি করার আগে?"
"আমার দিকটাই বা কে বুঝেছে? সন্ধ্যেবেলায় যখন ও প্রথম এলো, আমাকে মিছিমিছি রাগ দেখালো। দরজা খুলতেই আমাকে ঠেলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে তোমার নাম নিয়ে চিৎকার করছিল। তুমি তখন ঘুমোচ্ছিলে তাই কিছু শুনতে পাওনি। তুমি শুধু দেখেছো আমি কিভাবে ওকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি। আর তার উপর ভিত্তি করে তুমি আমাকে কত কথাই না শোনালে, কাঙাল, লোভী ইত্যাদি।"
"তুমি এখনো সেই কথা নিয়ে পড়ে আছো? কতবার ক্ষমা চাইবো তার জন্য?"
"ক্ষমা নয়, আদর চাই", এই বলেই মাধবীর মুখটা তার কাছে টেনে এনে ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট ঢুকিয়ে দিল। সমরেশের হাত থেকে পড়ে গেল প্যান্টিটা, কারণ তার হাত তখন উদগ্রীব ছিল মাধবীকে তার সকল অনৈতিক বিশেষণ প্রয়োগের অপরাধে গ্রেপ্তার করে নিতে ভালোবাসার কারাগারে। কিন্তু মাধবী তখন আগাম জামিন চাইছিল। সমরেশের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, "বিমল আছে.."
"ও থাক, আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুক...."
"এখন বুঝি দেরী হচ্ছে না?"
"কি করি বলো, মুখে যাই বলিনা কেন, মন তো তোমাকে যেতে দিতে চাইছে না।"
"আমিও কি চাইছি....", মুখ ফস্কে মনের গোপন কথাটা বেরিয়ে এলো মাধবীর।
সমরেশ আর কোনো কথা না বাড়িয়েই মাধবীকে পাঁজাকোলা করে নিজের কোলে তুলে নিল।
"সমরেশ! কি করছো?"
সমরেশ কোনো উত্তর দিলনা। সে মাধবীকে নিয়ে পৌঁছলো বিছানায়। চড়ে পড়লো তার উপর।
"বিমল চলে আসবে!!"
"আসুক। প্যিয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া!"
"প্যিয়ার তুমি করেছো, আমি না...."
মাধবীর এই কথাটা শুনে সমরেশের ভীষণ খারাপ লাগলো। সে সঙ্গে সঙ্গে মাধবীর উপর থেকে সরে গেল। মাধবীর নিজেকে বড্ড স্বার্থপর মনে হচ্ছিল, বারবার সমরেশকে প্রত্যাখ্যান করে। সমরেশ আর কিছু না বলে মেঝে থেকে প্যান্টিটা কুড়িয়ে বিছানার ধারে রেখে গটমট করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মাধবী শুধু চেয়ে রইলো। সে কি কাউকেই সন্তুষ্ট করতে পারবে না? না স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে, না বন্ধু হিসেবে তার প্রেমিককে! নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে নিয়তি তাকে এ কেমন দোলাচলে ফেলে দিল?? উত্তর মেলা দায়....
মাধবী বিছানা থেকে উঠে দরজা লাগিয়ে দিল। তারপর শাড়ি সায়া সব খুলে পূনরায় নতুনভাবে সুসজ্জিত হতে লাগলো বাড়ি যাবার জন্য। বিছানা থেকে প্যান্টিটা হাতে নিয়ে একবার দেখলো। কিছু একটা মনে মনে ভেবে ফের সেটাকে বিছানায় রেখে দিল।
নিচে বিমল অস্থির হয়ে পড়ছিল সমরেশের দেরী হওয়া দেখে। সে কি করছে এতক্ষণ ওখানে? গেছে তো শুধু প্যান্টিটা দিয়ে আসতে। তাহলে এত সময় লাগছে কেন? বুকটা কেঁপে উঠলো অজানা এক শংকায় শঙ্কিত হয়ে।
অস্থির হয়ে চেয়ার থেকে উঠে পিছনে ঘুরে সিঁড়ি ঘরের দিকে এগোতেই যাবে কি দেখলো পাদুকা জোড়া এক পা দু পা করে সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসছে। তা দেখামাত্রই বিমল আবার পিছন ঘুরে চেয়ারে গিয়ে বাধ্য ছেলের মতো বসলো। সমরেশ এলো বিমলের কাছে। সমরেশেরও মন মেজাজ ভালো ছিলনা, মাধবীর থেকে পর্যাপ্ত কামনার সাড়া না পেয়ে। বিমলের সামনে বসে চুপ করে সেও প্রতীক্ষা করতে লাগলো মাধবীর নিচে নামার।
সমরেশের গোমড়া মুখ দেখে বিমল বুঝে উঠতে পারলো না ঠিক কি হয়েছে। সমরেশকে নিয়ে অজানা এক ভয় তাকে গ্রাস করেছিল। সমরেশের প্রতি তার অনুরাগের টান যেন অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসছিল। সেই আগের মতো ব্যাপারটা যেন একদিনেই উধাও হয়েগেছিল মাধবীকে নিয়ে টানাপোড়েনে। তাই বিমলও তার সাথে কোনো বাক্যব্যয় না করে মাধবীর প্রতীক্ষা করতে লাগলো। যদি তার কিছু জানার থাকে তাহলে সে পরে মাধবীকেই শুধোবে নাহয়।
কিছুক্ষণ পর মাধবী নেমে এলো। এসে কোনো বাড়তি কথা না বলে বিমলকে গিয়ে শুধু বললো, "চলো, দেরী হয়ে যাচ্ছে।"
একবার সমরেশের দিকে চোখ মেলে তাকিয়ে ধাবিত হল সদর দরজার দিকে। নিজেই খিল নামিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। বিমল ও সমরেশ দাঁড়িয়ে রইলো। মাধবী তাদের কিছু বলার অবকাশই দিলনা। বিমল তখন ভদ্রতার খাতিরে সমরেশকে "আসছি রে" বলে বেরিয়ে গেল। সমরেশ পুবের জানালাটা খুললো, যেখান থেকে পাল মিষ্টান্ন ভান্ডার দেখতে পাওয়া যায়। তার পাশেই সাইড করে রাখা বিমলের গাড়ি। খেয়াল করে দেখলো পিছনের সিটে কে একজন বসে আছে। মাধবী? হ্যাঁ, সেই!!
বিমল গাড়ির কাছে এসে দেখলো মাধবী পিছনের সিটে চুপ করে বসে রয়েছে। গাড়িতে ঢুকে ড্রাইভিং সিটে বসে পিছনে তাকালো বিমল, "সামনে বসবে না?"
"না.." গম্ভীর ভাবে জবাব এল।
বিমল বুঝলো মাধবীর মন মেজাজ কোনো একটা কারণে ভালো নেই, তাই তাকে না ঘাটানোই ভালো। গাড়ি স্টার্ট দিল বিমল। মাধবী আড় চোখে দেখলো সান্যাল বাড়ির একতলার পূবের জানলা খোলা, এবং তার সামনে চাতক পাখির মতো কে যেন দাঁড়িয়ে! কে আবার? সমরেশ সান্যাল! সে ছাড়া আছে কে সেই পোড়ো বাড়িতে?.. কিন্তু একজন যে ছিল, সকাল থেকে। তার নাম মাধবীলতা, বসু মল্লিক বাড়ির বড় বউ। যাকে এখন তার নিজ ঠিকানায় ফিরতে হবে। মনে মনে টা-টা করলো সে সমরেশকে। সমরেশের মন কি তা জানলো? কে জানে?
গাড়ি বি.কে. পাল অ্যাভিনিউয়ের রাস্তাটা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া অবধি সমরেশ জানালার ধারেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। আবার সে একা হয়ে পড়লো। সদর দরজাটা লাগিয়ে এসে উঠে গেল দোতলায়। টেবিলে চায়ের কাপ দুটো ঠান্ডা হয়ে গিয়ে সেভাবেই অর্ধেক ভর্তি, অর্ধেক খালি থেকে পড়ে রইলো। দোতলার সেই ঘরে প্রবেশ করে সমরেশ দেখলো বিছানার উপর খুব যত্ন সহকারে নিরুপমার নাইটি, এবং তার উপর মাধবীর প্যান্টি ও সমরেশের জাঙ্গিয়াটা গুছিয়ে রেখে দিয়ে গ্যাছে মাধবী। সে প্যান্টিটা পড়েনি। তার জন্য হয়তো উপহারস্বরূপ সেটা দিয়ে গ্যাছে মাধবী। যতদিন না সে আবার ফিরছে ততদিন এই প্যান্টিটাকেই নাহয় সম্বল করে সমরেশ প্রতীক্ষার প্রহর গুনুক, সেই সময়কাল তো আগত। কিন্তু মাধবী কি আর ফিরবে?