Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica স্বামী ﴾ পর্ব নং:- ১৪ ﴿
পর্ব ১১

মন্দির থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার আগে,পাড়ার মেয়েদের সাথে নদীর পাড়ে গাছ তলায় বসেছিল কুন্দনন্দিনী। পুরো গ্রামে পুজো পুজো একটা হাওয়া বইছে । গত মাস কয়েক যে উত্তেজনা হীন গ্রামটি সে দেখে এসেছে, এখন আর তেমনটি মনে হচ্ছে না। বাড়িতেও সবার মুখে মুখে মায়ের আগমনের সাথে, সুদূর কলকাতা থেকে যাত্রাপালার আগমন বার্তাও ঘুরে ফিরে বেরাছে। এর মধ্যেই কুন্দনন্দিনী পিতার আর একটি চিঠি পেয়েছে। তবে তাতে তার স্বামীদেবের উল্লেখ নেই। বোধকরি তিনি পৌঁছানোর আগেই এই পত্র প্রেরিত হয়েছিল। নয়তো তার বাবাকে কুন্দনন্দিনী বেশ ভালো করেই চেনে।



তারা উঠে বাড়ি ফেরার পথে পশ্চিমাকাশে সূর্য দেব আজকের মতো ছুটির প্রস্তুতি নিচ্ছে। নদীর পাড়ে ছড়িয়ে থাকা কাশবনের মাথায়; আলো ছায়ার খেলায় দুলে ওঠে ওই সাদা তুলোর মতো কাশফুলগুলোকে, খুব ছুঁয়ে দেখতে মন চাইছে নন্দিনীর। হাওয়ার ছোট ছোট ঢেউয়ে তারা কেমন একত্রে দুলে উঠছে,সেই তুলনায় নদী আজ অনেকটাই নিরব। শান্ত নদীর মাঝে আপন মনে ভেসে চলেছে দু'টো পাল তোলা নৌকা। মাঝি হয়তো গান গাইছে,তবে সেই সুর এই পর্যন্ত আসছে অল্পেই। তাতে অবশ্য বোঝার উপায় নেই।


সময়ের সাথে সাথে শান্ত নদীর জলে প্রতিফলিত আকাশের রঙ বদলাতে থাকে—নীল থেকে ধূসর, ধূসর থেকে হলুদ, হলুদ থেকে যেন হালকা গোলাপি। পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটছে যেন দ্রুত বেগে। বোধহয় শহুরে মেয়ে নন্দিনীকে প্রকৃতি তার কোন মায়ায় জড়াতে চাইছে। আজ তার চোখে কেমন সুন্দর লাগছে এই ছোট্ট গ্রাম্য নদীটি। ওপারে বাঁশবন, আমবন ও বহুকালের ফলের বাগান যেন কোন প্রাচীন অরণ্য। প্রকৃতি মায়ের এই নিরব সৌন্দর্য দেখতে দেখতে, কুন্দনন্দিনী কেমন যেন এই পার্থিব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তাই তখন হঠাৎ ফিরতে হবে শুনে একটু খারাপই লাগলো তার। তবে করার কিছু নেই। একটু পরেই নামবে সন্ধ্যা,বাড়িতে এই বধূসকলের কাজ ত আর কম নয়।

বোধহয় মেয়েরা নিজেদের মধ্যে সেই সব কথা বলতে বলতে এগুছিল আপন মনে। চারদিক দেখতে গিয়ে কুন্দনন্দিনী বারবার একটু পেছনে সরে যাচ্ছিল। এবার বাড়ির কাছাকাছি আসতেই পথের পাশে ঘন বাঁশ ঝাড় থেকে বেরিয়ে, কে যেন তার মুখ ও কোমড় আঁকড়ে, টেনে নিল বাঁশ বাগানের অন্ধকারে। আচমকা এমন কান্ডে কুন্দনন্দিনী ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যেন চিৎকার দিতেও ভুলে গেল। অবশ্য চিৎকার দিতে চাইলেই তাকে দিতে দিচ্ছে কে! কিরণ ইতিমধ্যে তাকে বাঁশ বাগানের অন্ধকারে ঠেসে ধরে আটকে দিয়েছে মুখখানা। 


– দেখ নন্দি..বৌদি! তুমি আমার পেছনে লেগেছো কেন বলবে?


নন্দিনী নিজেকে ছাড়াতে দুই হাতে কিরণকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু সে চাইলেই তা হবে কেন? তার স্বামীর মতো হাট্টাগাট্টা না হলেও ,কিরণের দেহ যথেষ্ট সবল। তাই সে এবার একটু রেগেমেগেই বললে,

– আমার যেন আর কাজকর্ম নেই! সব ফেলে  তোমার পেছনে লাগবো। এমন হঠাৎ করে উফ্.. ভয়ে আমার.....


নন্দিনীর কথা সম্পুর্ণ শেষ হবার আগেই কিরণ যেন তাকে ঠেলে নিতে চাইলো আরো পেছনে। কিন্তু পেছনে জায়গায় কোথায় আর? তাই এবার বাঁশ ঝাড়ে কিসের খোঁচায় নন্দিনীর শাড়ির আঁচলটা গেল ছিঁড়ে। তার পরেও সে বেচারি ভাবছিল সমস্যাটি অল্পে কাটিয়ে দিতে পারলে লেটা চুকে যাবে। তবে কিরণ নাছোড়বান্দা।

আসলে দু'দিন আগে সিঁড়ির নিচের ওই ঘরে নন্দিনী যা দেখেছিল, আজ সকালে তাই নিয়ে কৌশলে সবার সামনে কিরণকে সে একটু কথা শুনিয়েছে। তার কথার বিষয়বস্তু সকলে না বুঝলেও কিরণ ও লক্ষ্মী বেশ বুঝেছিল— তা বোঝাই যাচ্ছে এখন। আর সে জন্যই বোধকরি লক্ষ্মী হটাৎ বাড়ি যেতে ছটফট করতে শুরু করেছে। নন্দিনীর অবশ্য এই সব দেখে একরকম তৃপ্তিই হচ্ছিল,তবে কিরণ এমন রেগে যাবে সে ভেবে দেখেনি। 

– তুমি কি চাইছো বলো তো? 

– আমি! 

নন্দিনী কিরণের চোখের পানে চাইলো এবার। ছেলেটা সত্যিই রেগেছে। তবে নন্দিনী মনেও বোধহয় লুকানো রাগ ছিল। তাছাড়া কিরণ বড্ড কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। তার পুরুষালী বুকের ছোঁয়া লাগছে নন্দিনীর বুকে। একটু ভয় ও অনেকটা উত্তেজনায় দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইছে নন্দিনীর। সে এবার কিরণকে সজোরে ঠেলে সরি বললে,

– পাগলামি করো না কিরণ। আমি এমন কিছুই করিনি যাতে তোমার এই রাগের হেতু বোঝা যায়।

এই বলে নন্দিনী এবার  সরে এসে হয়তো চলেই যেত। তবে রাগের বশে কিরণ চেপে ধরলো নন্দিনীর ডান হাতের কব্জি। ধরলো বোধহয় খানিক জোরেই। কিরণের হাতের চাপে ভেঙে গেল নন্দিনীর কাঁচে কটা চুড়ি। জোরালো টানে সে এবার আঁছড়ে পড়লো কিরণের বুকে। কুন্দনন্দিনী অবশ্য দেরি করলো না, তৎক্ষণাৎ  নিজেকে সামলে সপাটে কিরণের গালে বসিয়ে দিল তার বাঁ হাত খানি। এবং আর পেছনে না তাকিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যেতে লাগলো বাড়ির দিকে। দুজনেই খেয়াল করলো না কাঁচের চুড়ি ভাঙায় নন্দিনীর হাতেও অল্প লেগেছে.…..


 
রাত পেরিয়ে পরদিন সকাল থেকে কুন্দনন্দিনী একটু আনমনা। আগেরদিন বাঁশঝাড়ের সেই মুহূর্ত যেন বারবার ফিরে ফিরে আসছে তার মনে। তার কানের কাছে কিরণের রূঢ় নিঃশ্বাস গুঞ্জন তুলছে বার বার। নন্দিনী যেন ঠিক করতে পারছে না—সে রাগ করেছিল, নাকি... হিংসে!

গত সন্ধ্যায় ওরকম ভাবে কিরণের কাছে আসাতে, হটাৎ তার দেহে একরকম শিহরণ খেলে গিয়েছে, যেটি এখনো যেন শিরশির অনুভুতি তুলছে মনে?  এমনটা কেন হচ্ছে তা নন্দিনী বুঝতেও পারছে বটে। লক্ষ্মীর আচমকা চলে যাওয়াতে কেমন একটা তৃপ্তি অনুভব হচ্ছে তার। গতকাল হাতের চুড়ি ভেঙে গিয়েছিল বটে, তবে তার চামড়ায় লেগে থাকা কিরণের আঙুলের চাপ গুলো তাকে নিয়ে গিয়েছিল অতীতে। না চাইতেও সারাটা দিন নন্দিনীর কাটলো কিরণের কথা ভাবতে ভাবতে। সেই সাথে সে চেয়ে রইলো হাতের কাঁটা দাগটার দিকে।

বিকেলে দোতলায় ঘরে বসে সে যখন চুলে চিরুনি চালাচ্ছে। হাওয়ায় জানালার পর্দা উড়ছে বারবার।আম বাগানে কি একটা অচেনা পাখি ডাকছে গলা ছেড়ে। কুন্দনন্দিনী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগোবে জানালার দিকে, ঠিক তখনই হঠাৎ দরজার কাছে নিঃশব্দে এসে দাড়ালো কিরণ। চৌকাঠে হেলান দিয়ে, কণ্ঠে মাখা আলতো কৌতুক নিয়ে সে বলল—

— চড়টা বেশ জোরে মেরেছো বৌদি, এখনো ব্যথা করছে।

কুন্দনন্দিনী ঘাড় না ঘুরিয়ে বলল,

— আর একটা খেতে না চাইলে আমার সামনে থেকে যাও এখন।

কিরণ যাবে কি,সে এবার ঢুকে এল ঘরে। তার চোখে সেই সন্ধ্যার রাগি দৃষ্টি নেই—বরং একধরনের নির্লজ্জ আর একরোখা আকর্ষণ মিশ্রিত কিছু। ধীরে এসে নন্দিনীর পাশে দাঁড়িয়ে সে বলল,

— আমি জানি, আমাকে ঘেন্না করছো তুমি এখন। কিন্তু তুমিও জানো... আমি তোমায় সেদিন মিথ্যা বলিনি। একটা সময় ছিল যখন আমি তোমায় সত্যিকার অর্থেই কাছে চেয়েছিলাম।


কুন্দনন্দিনী চুপ। আয়নায় নিজের পাশে দাঁড়ানো পুরুষটিকে তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বড়, কিন্তু তবুও এই মানুষটি কেন যে তাকে টানে! 


— তোমার সবটাই মিথ্যে কিরণ।


বলতে বলতে কুন্দনন্দিনী সরে দাঁড়ালো। সে চলে যেতে চাইলো ঘরের বাইরে। কিন্তু একটা শক্ত হাত গতকালের চেয়েও আরো শক্ত করে চেপে বসলো নন্দিনীর হাতে। হেঁচকা টানে কুন্দনন্দিনীর হালকা দেহটা চলে এলো কিরণের বুকের কাছে। তারপর এক মুহূর্ত নীরবতা। অপ্রত্যাশিতভাবে কুন্দনন্দিনীর মুখের সামনে মুখ এনে কিরণ বললে,

—একবার আমার চোখের দিকে তাকাও, তোমার কি মনে হয়?


চোখে চোখ অবশ্য পরে,তবে কিরণের দু'চোখ ভরা জমে থাকা আক্রোশ অনুভব করে কেঁপে ওঠে নন্দিনী। তাদের মধ্যে মনের সামান্য বোঝাপড়া হয়তো ছিল,তবে প্রেমের বন্ধন তো কোন কালেই ছিল না। যা ছিল কাঁচা বয়সের পাগলামি। তাও সে তো শুরু হবার আগেই ভেঙ্গে গিয়েছিল সবটা। কিন্তু আজ এতো দিন পর কিরণের চোখে তাকিয়ে নন্দিনী মনে এক নতুন প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে। পরিস্থিতি তাকে ভাবতে বাধ্য করছে নতুন করে। তবে কি কিরণের মনেও ভাঙন ধরে–যখন কুন্দনন্দিনী গিয়ে দাড়ায় সমীরের পাশে?

হটাৎ নন্দিনীকে ছেড়ে সরে দাড়ায় কিরণ। কুন্দনন্দিনীর হতচকিত ভাবটা তখনো কাটেনি। তবে পেছন থেকে ইন্দিরার কন্ঠ ভেসে আসে। পায়ের শব্দে পেছন ফিরে তাকাতেই ইন্দিরা এসে দাঁড়ায় দ্বারপ্রান্তে। ভেতরে কিরণকে দেখে সে এগিয়ে এসে নন্দিনীর হাতে ধরে টানতে টানতে বলে,

– দুটিতে মিলে এতো কি কথা হচ্ছে বলো ত? সেই কখন থেকে ডাকচি, অথচ কারো সারা শব্দটি নেই! এখন এসো দেখি নিচে, সেকরা এসে বসে আছে সেই কখন...


বিকেলটা কেটে গেল নিচ তলায় রমণীগণের কোলাহলে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নামছে যখন, ভেতর উঠনে তখন গৃহবধূগণ কেউ কেউ পুরুষেদের খাওয়ার তদারকি ত কেউ কেউ দুধের শিশু কে নিয়ে বসেছে  মুখে স্তন গুঁজে। নিচতলায় সমীরের ঘরে সাধারণত প্রয়োজন না পড়লে রমণীগণের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু সমীর যেহেতু অনুপস্থিত, তাই কুন্দনন্দিনীর ভরশায় নিচতলায় সমীরের ঘরে বসে সমবয়সী বধূগণ আলোচনা সভা বসিয়েছিল। তাদের আলোচনার মূল্য বিষয়বস্তু নদীর ওপারে জমিদার বাড়ির দূর্গা পুজো ও কলিকাতার যাত্রাপালার দল। আজ বিকেলে বাড়ির মেয়েরা যখন গয়না তৈরির কারিগর কে একে একে নিজেদের ইচ্ছে বলে চলেছে,তখনি জমিদার বাড়ির লোক এসেছিল সমীরের খোঁজ নিতে। তবে মুখার্জি বাবু বা ছোবাবুর কাউকেই না পেয়ে তারা সংবাদটি নন্দিনীর কাছে বলেই বাড়ির পথ ধরেছে। 

কিন্তু খবরটি ত বিশেষ ভালো নয়, জমিদার বাড়ির বড় গিন্নী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সমীর নেই শুনে  জয়নগরের সরকারি ডাক্তার তাকে ইতিমধ্যে দুবার পরখ করে গেছে। কিন্তু তা গেলে কি হয়! জমিদার গিন্নীর ভয় কাটেনি একটুও। এদিকে আবার পুজোর উৎসবও বেশি দূরে নয় আর। তাই সবাইকে এই ঘরে রেখে কুন্দনন্দিনী কলকাতায় পত্র লিখতে পাশের ঘরে টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে বসেছিল। সমীর তাকে আগেই বলে গিয়েছে কলকাতায় সে এবার শশুর বাড়িতেই থাকবে। বলেছিল একদিন থেকেই ফিরবে, কিন্তু আজকে যে দিন তিন পেরিয়ে যায় যায় করছে–ভাগ্যিস বলে গেছিলো সে শশুর বাড়িতে উঠবে।


এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কুন্দনন্দিনী একমনে পত্র লিখছিল। কিন্তু তাকে থামতে হলো মাথায় এক অপ্রত্যাশিত হাতের ছোঁয়াতে। ছোট কাকিমা। তিনি অনেকটা শান্তশিষ্ট লক্ষ্মী প্রতিমার মতো। গৃহিণী পাশে দাঁড়িয়ে কুন্দনন্দিনী মাথায় হাত বুলিয়ে বললে,

– এখন এই সব না করলে কি চলছিল না তোর? ওদিকে সবাই খেয়ে দেয়ে সারা। না জানি এদের কি হয়েছে আজ,মুখে কিচ্ছুটি তোলার নাম নেই!

অগত্যা লেখার মাঝে ছাড়ান দিয়ে নন্দিনীকে উঠতে হলো। অবশ্য এতে একদিকে ভালোই হলো। তাদের খাওয়া দাওয়া শেষ হতেই সমীর পা রাখলো বাড়ির উঠনে। ডান হাতের কুনুইয়ের নিচ থেকে কব্জি অবধি তার ব্যান্ডেজ করা। এর কারণ হয়তো তৎক্ষণাৎ জানা যেত,কিন্তু জমিদার বাড়ির বড় গিন্নীর সংবাদ শুনো মাত্র সমীরের খাওয়া দাওয়া মাথায় উঠলো। সে এই রাতের বেলাতেই বেরিয়ে গেল গদাধরকে নিয়ে। কাকা মশাই বাইরে এসে এই কথা শুনে বললে,

– এই রাতের বেলা ছেলেটা এসেই বেরুলো,তুমি বাধা দিতে পারতে ত বৌমা।


–কী যে তুমি বলো ! নতুন বউ, তাছাড়া এখনও খোকার সঙ্গে ওর তেমন বনিবনা হয়েছে কি? এখন সে কি না খোকাকে আটকাবে? 

কাকিমার কথা বোধহয় বাড়ির অনেকরই বিশ্বাসযোগ্য হিসেবেই বিবেচনা করলে। কেউ একজন বলে উঠল,

– দাদাকে আটকাবে যে সে লোক কি এখন বাড়িতে আছে? ও ছোট বৌদির কর্ম্ম নয়....


কুন্দনন্দিনীর এইসব শুনতে ভালো লাগছিল না তা বলাবাহুল্য। এই বাড়িতেই হোক কি বাড়ির বাইরে।,পদে পদে সবাই যেন থাকে সুপ্রিয়ার সাথে তুলনায় তুলতে চাইছে। ঈর্ষা যেমন সুপ্রিয়া মাঝে নেই, তেমনি কুন্দনন্দিনীর মাঝেও যে থাকবে না,এমনটাতো নয়। তার কাঁচা বয়সের চঞ্চল মনে সমীর ইতিমধ্যে হয়তো কিছুটা হলেও জায়গা দখল করে বসেছে। তারমধ্যে সুপ্রিয়া বিচরণ এতোটাই স্পষ্ট যে নন্দিনীর কেমন যেন হয় মাঝে মাঝেই। কেন না তুলনা শুধু ত সেই মানুষটিকে নিয়ে নয়,সংসারের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকে এর মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছে। মঝে মঝে তার মনে হয় সে যেন সুপ্রিয়া সাজিনো দুনিয়াতে এক অনিয়ন্ত্রিত আগন্তুক, এই অনুভূতি নারী হৃদয়ের জনে বিশেষ ভালো কিছু নয় নিশ্চয়? বিশেষ করে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যখন দৃষ্টিহীন!

/////////////

গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পর, নিজের ঘরে কুন্দনন্দিনীকে দেখে সমীর একটু হকচকিয়ে যায় বৈ কি। মেয়েটা টেবিলে খাবারের পাত্র ঢাকা দিয়ে,হয়তো স্বামীর ফিরে আসার প্রহর গুনছিল। তারপর এক সময় আর থাকতে না পেরে টেবিলের কোনায় মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। অবশ্য সমীরের হাতের আলতো স্পর্শেই নন্দিনীর ঘুম উড়ে গেল। চোখ মেলে স্বামীর মুখের ক্লান্ত ভাব চোখে পড়লো নন্দিনীর। সমীর নন্দিনীকে ঘুম ভেঙ্গে উঠতে দেখে কৈফিয়ৎ দেবার মতো বললে,

– তোমাকে খুব কষ্ট দিয়েছি না আমি? আসলে  জমিদার মশাই এমন চেপে ধরলেন.... ইসস্.....সত্যিই বড্ড দেরি হয়ে গেল, তুমি শুয়ে পড়তে পারতে।

নন্দিনী কিছু না বলে শুধু মাথা নিচু করেছিল। হাতের ব্যান্ডেজটার কথা জিজ্ঞেস করবে কি না ভাবতে ভাবতে আবার স্বামী স্পর্শে একটু চমকে গেল সে। কুন্দনন্দিনীর মনের ভাবটা বোধহয়  মুখে ফুটে উঠেছিল। সমীর বাঁ হাতে নন্দিনীর চিবুক ঠেলে তুলে অনেকটা চোখে চোখ রেখে বললে,

– কি ব্যাপার! কিছু হয়েছে কি? মুখটা কেমন কেমন... অ্যায় তুমি খাওয়া দাওয়া করনি বুঝি।

নন্দিনী একটু লজ্জিতই হলো,খাওয়া দাওয়া তার সারা হয়ে গিয়েছে সেই কখন। যা হোক, নন্দিনীর নিরবতায় সমীর এই নিয়ে আর কথা বাড়ালো। 
বাড়ির মানুষ যাই বলুক,এই মানুষটি কিন্তু তাকে সুপ্রিয়ার মতোই অনুভূতি দেবার চেষ্টা করে সবসময়। কুন্দনন্দিনী নিজেও তা বোঝে ভালো ভাবেই,আর সেই জন্যই তার মনের অনুভূতি গুলো বার বার হয়ে আসে কেমন এলোমেলো....

রাত গাঢ় হয়। জানালার ফাঁক গলে পাতলা মেঘে-ঘেরা চাঁদের আলো পড়ে টেবিলের ওপরে। নন্দিনী স্বামীর ডাক্তারী ব্যাগটা এইঘরে রেখে ফিরে যায় পাশের ঘরে। সমীর এই এতো রাতেও গেছে পুকুরে। নন্দিনী বলছিল কুয়ো থেকে জল তুলে দেবার কথা। কিন্তু কে শোন কার কথা? সমীর উল্টে নন্দিনীকে বুঝিয়ে পুকুর থেকে স্নান সেরে, হাতের ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। 

নন্দিনী অবশ্য ছিল এই সময়ে। সমীরের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখতেই সমীর নিজেই বললে, আসলে আসার সময় ট্রেনটা একটু ধাক্কা মত খাওয়ায়,হঠাৎ একজন হকারে হাতে বাঁশের ঝুড়িতে তার ভারসাম্য হারিয়ে গিয়ে ছিটকে পড়ে সমীরের হাতে, তৎক্ষণাৎ কনুইয়ের ঠিক নিচে লম্বা ফালি কেটে রক্ত গড়িয়ে যা তা অবস্থা।  

তা এই ঘটনা শুনে কেন যেন নন্দিনী নিজের ভেতর এক ধরণের প্রশান্তি অনুভব করল। কেন করলে তা কে জানে? হয়তো নন্দিনীর ভয়ে ছিল সমীর  হাতে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করে। যাই হোক, সমীর ঘরে প্রায় ঘন্টাব্যাপী খাতা কলম নিয়ে বসলো সমীর।নন্দিনী পাশের ঘরে গিয়ে একপাশে শুয়ে রইলো।কিন্তু চোখে ঘুম নেই তার। যদিও সমীর বলেছিল আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়তে। এদিকে সে এখন বসেছে পাশের ঘরে। রাত এখন প্রায় তিনটে। নন্দিনী চোখ বুঝে পড়ে ছিল বিছানায়। একসময় সমীর অবশ্য বিছানায় এলো, শুয়ে বোধকরি ঘুমিয়েও পড়লো সে জলদিই। তবে ভোর রাতে নন্দিনী পিঠে হঠাৎ উষ্ণ এক শ্বাসের অনুভূতি  জেগে উঠলো। সমীর ধীরে হাত বাড়িয়ে তার কাঁধ ছুঁয়েছে এটিও সে বুঝলো।

মানুষটা কখন এসেছে কুন্দনন্দিনী তা টেরও পায়নি। অবশ্য নন্দিনী কিছু বলেনি। সে বুঝতে পারছে এই হাত শুধু চাদর টানতে চায় না। সেদিনের মতো তাকেও টানতে চাইছে কাছে। একটু উষ্ণতা, একটু অধিকার, আর একটা অপ্রকাশ্য আকাঙ্ক্ষা স্বামীর কন্ঠে অস্বচ্ছ ভাবে ফুটে উঠেছে। কিছু বোধহয় বলছে সে,কাছে সরে এসেছে অনেকটা। তার ডান হাতটি ছুঁয়ে গেছে নন্দিনীর কোমর। হতে পারে এতে কামনা নেই আদৌ। কিন্তু নন্দিনীর দেহে ওই আলতো স্পর্শেই কেমন অস্থিরতা ছড়িয়ে পরে। সে ঠোঁট কামড়ে নিজের অনুভূতি গুলো সামলে নেবার চেষ্টা চালায়। অথচ শরীর তার কথা শোনে না।

সমীর তার গলার কাছটায়  ঝুঁকে আসে,ধীরে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় নন্দিনীর দেহের উষ্ণতায়, স্বামীর স্পর্শে কি ছিল নন্দিনী তা জানে না। সে নিজেকে সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু পারে না। তার মনে হয়, সে যদি আজ না সাড়া দেয়, তবে সে অন্যায় করছে। সমীর তো তাকে সে ভাবে কাছে টানছে না, এক স্বামীর কি স্ত্রীকে চুম্বন করার অধিকার থাকতে পারে না? 

কিন্তু এতো শান্ত প্রেমেও শরীর কাঁপে কেন? নাকি এই কাঁপনটা আসলে অন্য কারো জন্য? স্বামীর আলতো ঠোঁটের ছোঁয়া, তার দেহে যেমন উষ্ণ অনুভূতি সাঁড়া জাগিয়ে তুলছে, তেমনি স্বামীর স্পর্শে নন্দিনীর হৃদয়জুড়ে তখন কিরণের সেই বাঁশঝাড়ের দৃষ্টিও ফিরে আসে—রুক্ষ, বেপরোয়া, পুরুষালী।

এতসব কিছু মনে আসলেও তার কোনটাই সে বুঝে উঠতে  পার না সে। মুখ ফুটে নন্দিনী কিছু বলতে চায়, কিন্তু গলার ভেতর কথাগুলো আটকে যায়। মনে কোণে তীব্র একটা ভয়ের আভাস পায় সে, সে বুঝতে পারছে আজ রাতে সমীর তার দেহে অধিকার খাটাতে চাইলে সে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে না কোন মতেই...... কিন্তু এমন সময় স্বামী অস্পষ্ট বুলির মধ্যে একটা নাম খুব স্পষ্ট হয়ে কানে বাজে কুন্দনন্দিনীর..... সুপ্রিয়া।


চমকে ওঠে নন্দিনী! সাবধানে পাশ ফিরে অন্ধকারেও বুঝতে বাকি থাকে না সমীর আসলে ঘুমিয়ে আছে।ভোরের নীরবতা বিছানায় বিরাজ করছে গভীরভাবে। এদিকে সমীরের হাত দুটো যেন আরও আঁকড়ে ধরে তাকে। কোমরের বক্ররেখায় একটা সুবল হাতে নেমে এসেছিল আগেই, কিন্তু এখন তা যেন উঠছে ওপরে। নন্দিনী চোখ বন্ধ রেখেও সেসব স্পর্শ অনুভব করে, যা শরীরের বুকে জ্বালাময় এক অচেনা সুর সৃষ্টি করে। সে চায় নিজেকে সরিয়ে নিতে, ঘুম থেকে জেগে ওঠা বোধের ভেতর যেন এক অদৃশ্য বাঁধন তাকে আটকায়। 
যদিও সে জানে এই স্পর্শ টা তার জন্যে নয়,সমীর হয়তো তার প্রথমা প্রেয়সী সুপ্রিয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে। তবে সে এতক্ষণে মুখ গুঁজে দিয়েছে কুন্দনন্দিনী বুকের উষ্ণতায়।পাশ ফিরতে গিয়ে শাড়ির আঁচলটা সড়ে গিয়েছিল আগেই,এবার ব্লাউজের পাতলা আবরণ ভেদ করে নিঃশ্বাসের উষ্ণতা দুই স্তন্য স্পর্শ করতেই নন্দিনী কেঁপে উঠলো। হাতের ঠেলাতে সমীরের ঘুমটাও গেল ভেঙে......

INKITT:– ☛inkitt☚   / ছোট গল্প:–গল্পের খাতা 

[Image: IMG-20241001-072115.jpg]

[+] 7 users Like বহুরূপী's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: স্বামী ﴾ পর্ব নং:- ১০ ﴿ - by বহুরূপী - 08-08-2025, 09:43 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)