25-07-2025, 04:23 PM
(This post was last modified: 26-07-2025, 03:07 AM by কাদের. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
চ
বিয়েটাই হুট করে হয়েছে অনেকটা তাই হানিমুন কোথায় হবে এটা নিয়ে সিনথিয়া খুব একটা মাথা ঘামায় নি। বিয়ের দুই দিন পর দুপুর বেলা হঠাত করে মাহফুজ বলল ব্যাগ গুছিয়ে নাও, কালকে আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। সিনথিয়া অতটা মাথা ঘামায় নি প্রথমে। কই যাবে? এত দ্রুত কোথায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সিলেট বা কক্সবাজার হয়ত? অবশ্য হানিমুন নিয়ে এতটা মাথা ব্যাথাও নেই সিনথিয়ার। মাহফুজ কে পেয়ে খুশি। আর ইংল্যান্ড ফেরত যাবার আগের পুরোটা সময় যতটা পারে উপভোগ করে নিতে চায় মাহফুজের সাথে। মাহফুজের পরিবারের সদস্যদের সাথে যতটা পারে মিশে নিচ্ছে। খেয়াল করে দেখেছে ওর শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন ভাল উইটি। পুরাতন ঢাকাইয়া একটা হালকা টান থেকে যায় তাদের কথায় শুদ্ধ বাংলা বলতে গেলেও। তবে পুরাতন ঢাইকাইয়্যাদের উইট নিয়ে যে কথা শোনা যায় তা যে একদম মিথ্যা না এটার প্রমাণ তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন। মাহফুজের ভাবী তাই যখন বিকাল বেলা বলল আমগো লাইগা মালদ্বীপ থাইকা কি আনবা। তখন প্রথম চমকে গেল সিনথিয়া। মালদ্বীপ? পরিচয়ের এত বছর পরেও মাহফুজ চাইলে এখনো ওকে চমকে দিতে পারে। দেখা গেল মাহফুজ নিজে নিজে হানিমুনের একটা প্ল্যান করে ফেলেছে। মালদ্বীপে যেতে গেলে বাংলাদেশীদের ভিসা লাগবে না। অন এরাইভাল ভিসা কাজ করে। সিনথিয়া যখন বলল এত কিছুর কি দরকার ছিল। পরেও তো যাওয়া যেত। মাহফুজ বলল পরের টা পরে যাব তবে বিয়ে তো এখন করেছি ফলে হানিমুনটা এখন হতে হবে। তাই পরের দিন সকাল সকাল প্লেন ধরে মালদ্বীপ। মালে থেকে আরেকটা ছোট প্লান ধরে ওদের ডেস্টিনেশন রিজোর্টে। ছোট্ট এইট সিটার একটা সেসনা প্লেন। পাইলট ছাড়া দুই জোড়া কাপল। মাহফুজদের বাদে আরেক জোড়া কাপল। তারাও হানিমুনে এসেছে তবে মজার ব্যাপার হল তাদের বয়স পঞ্চাশের কোটায়। ত্রিশ বছর আগে যখন বিয়ে হয় তাদের তখন কোন হানিমুন হয় নি। এত বছর পর তাই বিবাহ বার্ষিকীতে ছেলে আর ছেলের বউ মিলে জোড় করে পাঠিয়েছে তাদের জীবনের প্রথম হানিমুনে। শমিষ্ঠা আর সৌমিক ব্যানার্জী। আধা ঘন্টার প্লেন রাইডেই খাতির হয়ে গেল তাদের সংগে। এক রিসোর্টেই যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি ভিলাতে থাকবে। সিনথিয়া মাহফুজ দুইজনেই যথেষ্ট মিশুক। তাই খুব একটা অসুবিধা হল না আলাপ জমতে। সৌমিক যদিও একটু চুপচাপ তবে শমিষ্ঠা খুব হাসিখুশি মিষ্টি মহিলা। শমিষ্ঠা একটা কলেজের ফিলসোফির শিক্ষক আর সৌমিক কর্পোরেট ভাল জবে আছে। শমিষ্ঠার বয়স ৫০ ছুবে কয়েক মাস পর আর সৌমিক বছর পাচেক বড় শমিষ্ঠার। ভিন্ন দেশে নিজ ভাষার মানুষ পেলে খাতির জমতে দেরি হয় না। তাই গল্প জমে উঠল ছোট্ট সেসনা প্লেনের ভিতর বিকট শব্দের মাঝেও। মাহফুজ আর সিনিথিয়া যখন বয়সের জন্য আপনি আপনি করে কথা বলছিল তখন শমিষ্ঠাই বলল আরে তোমরা তুমি তুমি করে বল তো। সবাই হানিমুনে যাচ্ছি এইসময় আপনি আপনি বললে বেশি বুড়ো লাগে। পাশ থেকে সৌমিক বলল বয়স ৫০ হল তা বুড়ো বলবে না তো কি বলবে। সৌমিকের দিকে একটা কপট রাগের দৃষ্টি দিয়ে শমিষ্ঠা বলল তোমার মনের বয়স ৭০ হয়ে গেছে আমার এখনো ৪০। শুনে সবাই হেসে উঠে। তখন থেকে এই কাপলের সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ওদের।
সিনথিয়া আর মাহফুজের আজকে হানিমুনের তৃতীয় দিন। গত দুইদিনের বেশির ভাগ সকাল ওদের কেটেছে ভিলার রুমে। দুপুরে খাবার আনিয়েছে রুমে। বিকালের দিকে বের হয়ে সামনেই প্রাইভেট বিচ আছে রিসোর্টের। সেটাতে পানিতে দাপাদাপি করেছে। তারপর রাতে রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া। গতকাল বিকালে রেস্টুরেন্টে খাবার সময় শমিষ্ঠা আর সৌমিক এর সাথে দেখা। প্রতিদিন একবার না একবার দেখা হচ্ছে। তবে গতকাল ডিনারের সময় আড্ডা দেবার জন্য একসাথে বসা হল। প্রচুর গল্প হল। এরপর বের হয়ে প্রাইভেট বিচে কিছুক্ষণ হাটাহাটি। সৌমিক আর মাহফুজ সিগারেট খাবার জন্য হেটে একটু সামনে এগিয়ে গেল। সিনথিয়া আর শমিষ্ঠা বসে পড়ল পরিষ্কার বালুর উপর। ভরপেট খাবার পর সমুদ্রের বাতাস দারুণ লাগছে। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করে তোমরা পানিতে নাম নি একবারো আসার পর থেকে? শমিষ্ঠা বলে কিভাবে নামবো? এসেছি দুইজন। একজন যদি পানি কে ভয় পায় আর নামতে না চায় তাহলে একা নেমে কি মজা বলো। সিনথিয়া বলল আগে বলবে না। আমাদের সাথে নামতে তাহলে আজকে। শমিষ্ঠা বললে, ধূর সে কি করে হয়। তোমরা এসেছ হানিমুনে। তোমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে ইচ্ছা নেই এই বুড়ির। সিনথিয়া বলল ওমা সেইদিন না প্লেনে বললে তুমি বুড়ি না, এখন আবার বুড়ি সাজা হচ্ছে। আর হাড্ডি হবার কিছু নেই। হানিমুনে এসেছি বলে সারাদিন তো আর রুমে বন্দি হয়ে থাকব না। আর পানিতে যত বেশি মানুষ তত বেশি মজা। এইখানের প্রাইভেট বিচে প্রাইভেসি আছে তবে বিচে যে লাইভলিনেস থাকা উচিত সেটা নেয়। মরা মরা মনে হয় আমার। তুমি আমাদের সাথে পানিতে নামলে নাহয় আরেকটা মানুষ বাড়ত। শমিষ্ঠার আসলেই ইচ্ছা হয় পানিতে নামার তবে সৌমিকের জন্য পারে নি এই কয়দিন। শমিষ্ঠা বলল আমি কিন্তু সাতার পারি না। সিনথিয়া বলল আমি পারি তোমাকে কে বলল। শমিষ্ঠার উত্তর, ভয় করবে না তাহলে। আর দুইজন যদি সাতার না জানি তাহলে কিভাবে হবে। সিনথিয়া বলল আরে মাহফুজ আছে না। ও পাকা সাতারু। ঠিক সামলে নিবে দুইজন কে। শমিষ্ঠার তার ভয় হও। জিজ্ঞেস করে পারবে তো? সিনথিয়া বলে আরে বাবা, মাহফুজ কে আমি চিনি। ও ঠিক তোমাকে আমাকে সামলে নিবে। সিগারেট খেয়ে সৌমিক আর মাহফুজ ফিরে আসতেই সিনথিয়া কথাটা তুলে। কাকু তুমি নাকি শমিষ্ঠা কাকী কে পানিতে নামতে দিতে চাও না ভয়ে। সৌমিক হো হো করে ভুড়ি দুলিয়ে হেসে উঠে। বলে আমার নামে তোমার কাছে নালিশ দিয়েছে নাকি। সিনথিয়া বলে নালিশ না, কথায় কথায় শুনলাম এই মালদ্বীপ এসে একবারো নাকি পানিতে নামেনি কাকী। এটা কোন কথা হলো। হানিমুনে এসে পানিতে না নামলে হবে। সৌমিক মুচকি হেসে উত্তর দিল আরে আমি তো ভেবেছিলাম হানিমুনে এসে রুমে বন্দী থাকতে হয়। সৌমিকের উত্তরে মাহফুজ হেসে উঠে। শমিষ্ঠা লাল হয় আর সিনথিয়া হিহি করে উঠে। শমিষ্ঠা বলে এই বুড়ো বয়সে এসে কথার ছিরি দেখ। সবাই হাসতে থাকে। মাঝ বয়সী দম্পতি আর নব দম্পতির মাঝে গল্প আড্ডা জমে উঠে। কিভাবে কাদের দেখা হল। শমিষ্ঠা আর সৌমিকের এরেঞ্জড ম্যারেজ। শমিষ্ঠার এক পিসতুতু দাদার বন্ধু ছিল সেই সূত্রে আগে দেখা হলেও প্রেম ছিল না। শমিষ্ঠা বলেন দেখছ না এখন কেমন টাক ভুড়িয়াল হয়েছে। তখন এমন ছিল না। হলে আর বিয়েটা হতো না। হাসে সবাই। সৌমিক বলে আর শিক্ষকতা পেশায় চাপ নেই। দেখ না তোমাদের কাকীমা কে কম বয়সী লাগে। আর আমাকে দেখ টেনশন আর কাজের প্রেসারে বয়স আর বেশি লাগে। সিনথিয়া বলে আরে কাকা আপনি ঠিক বলেছেন। শমিষ্ঠা বলল আরে তোমার কাকার পক্ষ নিচ্ছ কেন, তোমার মা তো আমার মত কলেজ টিচার। সিনথিয়া বলে সেই জন্য তো নিচ্ছি কাকী। আমার আম্মু তোমার কয়েক বছর জুনিয়র হবে। তোমার মত তারো বয়স বুঝা যায় না। আমাদের দেখলে আম্মু কে বড় বোন বলবে লোকে। আর আব্বুর ঠিক কাকার মত ভুড়ি টাক হয়ে গেছে। শমিষ্ঠা বলল দেখাও দেখি তোমার বাবা মা কে। সিনথিয়া মোবাইল থেকে ছবি বের করে দেখায়। শমিষ্ঠা বলে ওমা, তোমার মা তো রীতিমত সুন্দরী গো। রীতিমত সিনেমার নায়িকার মত সুন্দরী। তোমার মা কে তো দেখে একদম ষাটের দশকের মধুবালার মত লাগে। তাকানোর ভংগিটাও তো সেইম। আর উনার পাশে আমি তো রীতিমত পাড়ার কাকীমা। সিনথিয়া বলে মোটেও না কাকীমা আপনি যথেষ্ট সুন্দরী। ছবি দেখে সৌমিক সেইম মত দেয়। এরপর সিনথিয়া মাহফুজের কথা আসে। কিভাবে মাহফফুজ এক স্টকারের হাত থেকে সিনথিয়া কে বাচিয়েছে। ঘটনা শুনে শমিষ্ঠা সৌমিক দুইজন ইম্প্রেসড হয়ে যান। শমিষ্ঠা বলে উঠে বাবা, তুমি দেখি একদম হিরো জামাই বাগিয়েছো। দেখতেই খালি হিরোর মত না। কাজে কর্মেও হিরো। এইভাবে রাত বাড়ে। শেষে কথা হয়। আগামীকাল সকালে ব্রেকফাস্টের পর দশটার দিকে পানিতে নামবে সবাই।
পরের দিন সকালে কথা অনুযায়ী সবাই এসে হাজির হয় নির্ধারিত স্পটে। শমিষ্ঠা একটা লেগিংস আর গেঞ্জি পড়ে এসেছে, সৌমিক হাফপ্যান্ট গেঞ্জি। সিনথিয়া টু পিস পড়ে এসেছে তবে উপরে গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পড়া। ভেবেছিল এসে গেঞ্জি হাফ প্যান্ট খুলে বিকিনি পড়ে নামবে। তবে সৌমিক কে দেখে অস্বস্তি লাগে ওর। এমন নয় যে সৌমিক ছোক ছোক করা বুড়োদের মত যারা কম বয়সী সুন্দরী মেয়ে দেখলে জুলু জুলু চোখে তাকিয়ে থাকবে। বরং সৌমিক ওর বাবার মত। শান্ত ধীর স্থির। চোখে মুখে একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব। সৌমিক মাঝ বয়সী টিপিক্যাল ছোক ছোক করা বুড়ো হলে সিনথিয়ার জন্য বরং সুবিধা হত। এইসব বুড়োদের অগ্রাহ্য কিভাবে করতে হয় জানা আছে ওর। কিন্তু সৌমিকের সাথে ওর বাবার এত মিল এই কারণে ওর আর বেশি অস্বস্তি হয়। তাই গেঞ্জি প্যান্ট পড়ে থাকে। সৌমিক হাতে একটা বই নিয়ে এসেছে। সেটা নিয়ে একটা ছাতার নিচে শুয়ে পড়ে। বই পড়ছে। শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ নিয়ে ভারী একটা বই। মাহফুজ প্রথমে গিয়ে হালকা কুশল বিনিময় করল সৌমিকের সাথে। শেয়ার বাজার নিয়ে আগ্রহ আছে মাহফুজের তাই প্রশ্ন করতেই আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে সৌমিক জ্ঞান ঝাড়া শুরু করলেন। এদিকে শমিষ্ঠা আর সিনথিয়া পানিতে নেমেছে। তবে শমিষ্ঠা হাটু পানির বেশি অবধি নামতে নারাজ। তবে সিনথিয়া তাকে আর পানিতে নামিয়ে ছাড়বে। শমিষ্ঠা জীবনে দুই একবার দীঘা গিয়ে হাটু অব্দি পানিতে নামা হচ্ছে সমুদ্র অভিজ্ঞতা। আর সিনথিয়ার পানি প্রচন্ড ভাল লাগে। সাতার না জানলেও কক্সবাজারে গিয়ে হোক বা ইংল্যান্ড সমুদ্র পেলে ছাড়ে না যতক্ষণ না ক্লান্ত হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা করেই পানি ছিটানো শুরু করল শমিষ্ঠার গায়ে। যদিও শমিষ্ঠা সিনথিয়ার থেকে ২৫/২৬ বছরের বড় তার পরেও গায়ে পানি ছিটানো শুরু করলে শমিষ্ঠার বয়স যেন কমে আসল। শমিষ্ঠাও পালটা পানি ছিটাতে শুরু করল। এইভাবে পানি ছিটাতে ছিটাতে কখন যেন শমিষ্ঠা আর সিনথিয়া দুইজনে কোমড় পানিতে এসে দাড়িয়েছে। পানি ছিটানোর এক পর্যায়ে শমিষ্ঠা খেয়াল করে পানিতে সারা গা ভিজে গেছে। সাদা গেঞ্জিটা একদম গায়ের সাথে লেগে আছে। ভিতরের ব্রা স্পষ্ট। চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেল ওর খেয়াল করে। মধ্য বয়সী বাঙ্গাগী মহিলা তার উপর কলেজের প্রফেসর। কথায় যতটা স্মার্ট হোক না কেন পোশাকের ব্যাপারে এখনো কনজারভেটিভ। শমিষ্ঠা বললেন আরে দেখ, দেখ কেমন সব ভিজে গেছে। সিনথিয়া বলল আরে সমস্যা কি তাতে? শমিষ্ঠা বলল ছি, কি বল। সব ট্রান্সপারেন্ট হয়ে গেছে। সিনথিয়া বলল আরে কাকী এত স্মার্ট হয়েও তুমি পুরাতন কালের মত কথা বলছ। শমিষ্ঠা বলল আমি মানুষ তো পুরাতন কালের। সিনথিয়া বলল ছাড় তো। এটা প্রাইভেট বিচ। আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। শমিষ্ঠা একবার সৌমিক আর মাহফুজের দিকে তাকালো। সিনথিয়া বুঝল কনসার্নটা। বলল আরে মাহফুজের জন্য অস্বস্তি হচ্ছে? শমিষ্ঠা উত্তর না দিলেও বুঝল সিনথিয়া। বলল, তুমি যে সুন্দর কলেজে গেলে নিশ্চয় কলেজের ছেলেরা তোমাকে দেখে। সেইসব পাত্তা দাও? মাহফুজ এসে এইবার দুই একবার তাকালে পাত্তা দিও না। ধরে নিবে কলেজের ছাত্র। শমিষ্ঠা হেসে বলল নিজের বর কে নিয়ে এইভাবে বলতে পারলে? সিনথিয়া বলল মাহফুজ সুন্দরী কার দিকে তাকালে আমি মাইন্ড করি না। হেসে দিল শুনে শমিষ্ঠা। বলল তোমরা বর বউ দুইজনে কথায় পটু। সিনথিয়া বলল দাড়াও তাইলে মাহফুজ কে ডাক দেই। এই বলে জোরে চিতকার দিল মাহফুজের নাম ধরে।
বিয়েটাই হুট করে হয়েছে অনেকটা তাই হানিমুন কোথায় হবে এটা নিয়ে সিনথিয়া খুব একটা মাথা ঘামায় নি। বিয়ের দুই দিন পর দুপুর বেলা হঠাত করে মাহফুজ বলল ব্যাগ গুছিয়ে নাও, কালকে আমরা ঘুরতে যাচ্ছি। সিনথিয়া অতটা মাথা ঘামায় নি প্রথমে। কই যাবে? এত দ্রুত কোথায় যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া যায়। সিলেট বা কক্সবাজার হয়ত? অবশ্য হানিমুন নিয়ে এতটা মাথা ব্যাথাও নেই সিনথিয়ার। মাহফুজ কে পেয়ে খুশি। আর ইংল্যান্ড ফেরত যাবার আগের পুরোটা সময় যতটা পারে উপভোগ করে নিতে চায় মাহফুজের সাথে। মাহফুজের পরিবারের সদস্যদের সাথে যতটা পারে মিশে নিচ্ছে। খেয়াল করে দেখেছে ওর শ্বশুড়বাড়ীর লোকজন ভাল উইটি। পুরাতন ঢাকাইয়া একটা হালকা টান থেকে যায় তাদের কথায় শুদ্ধ বাংলা বলতে গেলেও। তবে পুরাতন ঢাইকাইয়্যাদের উইট নিয়ে যে কথা শোনা যায় তা যে একদম মিথ্যা না এটার প্রমাণ তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন। মাহফুজের ভাবী তাই যখন বিকাল বেলা বলল আমগো লাইগা মালদ্বীপ থাইকা কি আনবা। তখন প্রথম চমকে গেল সিনথিয়া। মালদ্বীপ? পরিচয়ের এত বছর পরেও মাহফুজ চাইলে এখনো ওকে চমকে দিতে পারে। দেখা গেল মাহফুজ নিজে নিজে হানিমুনের একটা প্ল্যান করে ফেলেছে। মালদ্বীপে যেতে গেলে বাংলাদেশীদের ভিসা লাগবে না। অন এরাইভাল ভিসা কাজ করে। সিনথিয়া যখন বলল এত কিছুর কি দরকার ছিল। পরেও তো যাওয়া যেত। মাহফুজ বলল পরের টা পরে যাব তবে বিয়ে তো এখন করেছি ফলে হানিমুনটা এখন হতে হবে। তাই পরের দিন সকাল সকাল প্লেন ধরে মালদ্বীপ। মালে থেকে আরেকটা ছোট প্লান ধরে ওদের ডেস্টিনেশন রিজোর্টে। ছোট্ট এইট সিটার একটা সেসনা প্লেন। পাইলট ছাড়া দুই জোড়া কাপল। মাহফুজদের বাদে আরেক জোড়া কাপল। তারাও হানিমুনে এসেছে তবে মজার ব্যাপার হল তাদের বয়স পঞ্চাশের কোটায়। ত্রিশ বছর আগে যখন বিয়ে হয় তাদের তখন কোন হানিমুন হয় নি। এত বছর পর তাই বিবাহ বার্ষিকীতে ছেলে আর ছেলের বউ মিলে জোড় করে পাঠিয়েছে তাদের জীবনের প্রথম হানিমুনে। শমিষ্ঠা আর সৌমিক ব্যানার্জী। আধা ঘন্টার প্লেন রাইডেই খাতির হয়ে গেল তাদের সংগে। এক রিসোর্টেই যাচ্ছে তারা। পাশাপাশি ভিলাতে থাকবে। সিনথিয়া মাহফুজ দুইজনেই যথেষ্ট মিশুক। তাই খুব একটা অসুবিধা হল না আলাপ জমতে। সৌমিক যদিও একটু চুপচাপ তবে শমিষ্ঠা খুব হাসিখুশি মিষ্টি মহিলা। শমিষ্ঠা একটা কলেজের ফিলসোফির শিক্ষক আর সৌমিক কর্পোরেট ভাল জবে আছে। শমিষ্ঠার বয়স ৫০ ছুবে কয়েক মাস পর আর সৌমিক বছর পাচেক বড় শমিষ্ঠার। ভিন্ন দেশে নিজ ভাষার মানুষ পেলে খাতির জমতে দেরি হয় না। তাই গল্প জমে উঠল ছোট্ট সেসনা প্লেনের ভিতর বিকট শব্দের মাঝেও। মাহফুজ আর সিনিথিয়া যখন বয়সের জন্য আপনি আপনি করে কথা বলছিল তখন শমিষ্ঠাই বলল আরে তোমরা তুমি তুমি করে বল তো। সবাই হানিমুনে যাচ্ছি এইসময় আপনি আপনি বললে বেশি বুড়ো লাগে। পাশ থেকে সৌমিক বলল বয়স ৫০ হল তা বুড়ো বলবে না তো কি বলবে। সৌমিকের দিকে একটা কপট রাগের দৃষ্টি দিয়ে শমিষ্ঠা বলল তোমার মনের বয়স ৭০ হয়ে গেছে আমার এখনো ৪০। শুনে সবাই হেসে উঠে। তখন থেকে এই কাপলের সাথে সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ওদের।
সিনথিয়া আর মাহফুজের আজকে হানিমুনের তৃতীয় দিন। গত দুইদিনের বেশির ভাগ সকাল ওদের কেটেছে ভিলার রুমে। দুপুরে খাবার আনিয়েছে রুমে। বিকালের দিকে বের হয়ে সামনেই প্রাইভেট বিচ আছে রিসোর্টের। সেটাতে পানিতে দাপাদাপি করেছে। তারপর রাতে রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া। গতকাল বিকালে রেস্টুরেন্টে খাবার সময় শমিষ্ঠা আর সৌমিক এর সাথে দেখা। প্রতিদিন একবার না একবার দেখা হচ্ছে। তবে গতকাল ডিনারের সময় আড্ডা দেবার জন্য একসাথে বসা হল। প্রচুর গল্প হল। এরপর বের হয়ে প্রাইভেট বিচে কিছুক্ষণ হাটাহাটি। সৌমিক আর মাহফুজ সিগারেট খাবার জন্য হেটে একটু সামনে এগিয়ে গেল। সিনথিয়া আর শমিষ্ঠা বসে পড়ল পরিষ্কার বালুর উপর। ভরপেট খাবার পর সমুদ্রের বাতাস দারুণ লাগছে। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করে তোমরা পানিতে নাম নি একবারো আসার পর থেকে? শমিষ্ঠা বলে কিভাবে নামবো? এসেছি দুইজন। একজন যদি পানি কে ভয় পায় আর নামতে না চায় তাহলে একা নেমে কি মজা বলো। সিনথিয়া বলল আগে বলবে না। আমাদের সাথে নামতে তাহলে আজকে। শমিষ্ঠা বললে, ধূর সে কি করে হয়। তোমরা এসেছ হানিমুনে। তোমাদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হতে ইচ্ছা নেই এই বুড়ির। সিনথিয়া বলল ওমা সেইদিন না প্লেনে বললে তুমি বুড়ি না, এখন আবার বুড়ি সাজা হচ্ছে। আর হাড্ডি হবার কিছু নেই। হানিমুনে এসেছি বলে সারাদিন তো আর রুমে বন্দি হয়ে থাকব না। আর পানিতে যত বেশি মানুষ তত বেশি মজা। এইখানের প্রাইভেট বিচে প্রাইভেসি আছে তবে বিচে যে লাইভলিনেস থাকা উচিত সেটা নেয়। মরা মরা মনে হয় আমার। তুমি আমাদের সাথে পানিতে নামলে নাহয় আরেকটা মানুষ বাড়ত। শমিষ্ঠার আসলেই ইচ্ছা হয় পানিতে নামার তবে সৌমিকের জন্য পারে নি এই কয়দিন। শমিষ্ঠা বলল আমি কিন্তু সাতার পারি না। সিনথিয়া বলল আমি পারি তোমাকে কে বলল। শমিষ্ঠার উত্তর, ভয় করবে না তাহলে। আর দুইজন যদি সাতার না জানি তাহলে কিভাবে হবে। সিনথিয়া বলল আরে মাহফুজ আছে না। ও পাকা সাতারু। ঠিক সামলে নিবে দুইজন কে। শমিষ্ঠার তার ভয় হও। জিজ্ঞেস করে পারবে তো? সিনথিয়া বলে আরে বাবা, মাহফুজ কে আমি চিনি। ও ঠিক তোমাকে আমাকে সামলে নিবে। সিগারেট খেয়ে সৌমিক আর মাহফুজ ফিরে আসতেই সিনথিয়া কথাটা তুলে। কাকু তুমি নাকি শমিষ্ঠা কাকী কে পানিতে নামতে দিতে চাও না ভয়ে। সৌমিক হো হো করে ভুড়ি দুলিয়ে হেসে উঠে। বলে আমার নামে তোমার কাছে নালিশ দিয়েছে নাকি। সিনথিয়া বলে নালিশ না, কথায় কথায় শুনলাম এই মালদ্বীপ এসে একবারো নাকি পানিতে নামেনি কাকী। এটা কোন কথা হলো। হানিমুনে এসে পানিতে না নামলে হবে। সৌমিক মুচকি হেসে উত্তর দিল আরে আমি তো ভেবেছিলাম হানিমুনে এসে রুমে বন্দী থাকতে হয়। সৌমিকের উত্তরে মাহফুজ হেসে উঠে। শমিষ্ঠা লাল হয় আর সিনথিয়া হিহি করে উঠে। শমিষ্ঠা বলে এই বুড়ো বয়সে এসে কথার ছিরি দেখ। সবাই হাসতে থাকে। মাঝ বয়সী দম্পতি আর নব দম্পতির মাঝে গল্প আড্ডা জমে উঠে। কিভাবে কাদের দেখা হল। শমিষ্ঠা আর সৌমিকের এরেঞ্জড ম্যারেজ। শমিষ্ঠার এক পিসতুতু দাদার বন্ধু ছিল সেই সূত্রে আগে দেখা হলেও প্রেম ছিল না। শমিষ্ঠা বলেন দেখছ না এখন কেমন টাক ভুড়িয়াল হয়েছে। তখন এমন ছিল না। হলে আর বিয়েটা হতো না। হাসে সবাই। সৌমিক বলে আর শিক্ষকতা পেশায় চাপ নেই। দেখ না তোমাদের কাকীমা কে কম বয়সী লাগে। আর আমাকে দেখ টেনশন আর কাজের প্রেসারে বয়স আর বেশি লাগে। সিনথিয়া বলে আরে কাকা আপনি ঠিক বলেছেন। শমিষ্ঠা বলল আরে তোমার কাকার পক্ষ নিচ্ছ কেন, তোমার মা তো আমার মত কলেজ টিচার। সিনথিয়া বলে সেই জন্য তো নিচ্ছি কাকী। আমার আম্মু তোমার কয়েক বছর জুনিয়র হবে। তোমার মত তারো বয়স বুঝা যায় না। আমাদের দেখলে আম্মু কে বড় বোন বলবে লোকে। আর আব্বুর ঠিক কাকার মত ভুড়ি টাক হয়ে গেছে। শমিষ্ঠা বলল দেখাও দেখি তোমার বাবা মা কে। সিনথিয়া মোবাইল থেকে ছবি বের করে দেখায়। শমিষ্ঠা বলে ওমা, তোমার মা তো রীতিমত সুন্দরী গো। রীতিমত সিনেমার নায়িকার মত সুন্দরী। তোমার মা কে তো দেখে একদম ষাটের দশকের মধুবালার মত লাগে। তাকানোর ভংগিটাও তো সেইম। আর উনার পাশে আমি তো রীতিমত পাড়ার কাকীমা। সিনথিয়া বলে মোটেও না কাকীমা আপনি যথেষ্ট সুন্দরী। ছবি দেখে সৌমিক সেইম মত দেয়। এরপর সিনথিয়া মাহফুজের কথা আসে। কিভাবে মাহফফুজ এক স্টকারের হাত থেকে সিনথিয়া কে বাচিয়েছে। ঘটনা শুনে শমিষ্ঠা সৌমিক দুইজন ইম্প্রেসড হয়ে যান। শমিষ্ঠা বলে উঠে বাবা, তুমি দেখি একদম হিরো জামাই বাগিয়েছো। দেখতেই খালি হিরোর মত না। কাজে কর্মেও হিরো। এইভাবে রাত বাড়ে। শেষে কথা হয়। আগামীকাল সকালে ব্রেকফাস্টের পর দশটার দিকে পানিতে নামবে সবাই।
পরের দিন সকালে কথা অনুযায়ী সবাই এসে হাজির হয় নির্ধারিত স্পটে। শমিষ্ঠা একটা লেগিংস আর গেঞ্জি পড়ে এসেছে, সৌমিক হাফপ্যান্ট গেঞ্জি। সিনথিয়া টু পিস পড়ে এসেছে তবে উপরে গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পড়া। ভেবেছিল এসে গেঞ্জি হাফ প্যান্ট খুলে বিকিনি পড়ে নামবে। তবে সৌমিক কে দেখে অস্বস্তি লাগে ওর। এমন নয় যে সৌমিক ছোক ছোক করা বুড়োদের মত যারা কম বয়সী সুন্দরী মেয়ে দেখলে জুলু জুলু চোখে তাকিয়ে থাকবে। বরং সৌমিক ওর বাবার মত। শান্ত ধীর স্থির। চোখে মুখে একটা জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব। সৌমিক মাঝ বয়সী টিপিক্যাল ছোক ছোক করা বুড়ো হলে সিনথিয়ার জন্য বরং সুবিধা হত। এইসব বুড়োদের অগ্রাহ্য কিভাবে করতে হয় জানা আছে ওর। কিন্তু সৌমিকের সাথে ওর বাবার এত মিল এই কারণে ওর আর বেশি অস্বস্তি হয়। তাই গেঞ্জি প্যান্ট পড়ে থাকে। সৌমিক হাতে একটা বই নিয়ে এসেছে। সেটা নিয়ে একটা ছাতার নিচে শুয়ে পড়ে। বই পড়ছে। শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ নিয়ে ভারী একটা বই। মাহফুজ প্রথমে গিয়ে হালকা কুশল বিনিময় করল সৌমিকের সাথে। শেয়ার বাজার নিয়ে আগ্রহ আছে মাহফুজের তাই প্রশ্ন করতেই আগ্রহী শ্রোতা পেয়ে সৌমিক জ্ঞান ঝাড়া শুরু করলেন। এদিকে শমিষ্ঠা আর সিনথিয়া পানিতে নেমেছে। তবে শমিষ্ঠা হাটু পানির বেশি অবধি নামতে নারাজ। তবে সিনথিয়া তাকে আর পানিতে নামিয়ে ছাড়বে। শমিষ্ঠা জীবনে দুই একবার দীঘা গিয়ে হাটু অব্দি পানিতে নামা হচ্ছে সমুদ্র অভিজ্ঞতা। আর সিনথিয়ার পানি প্রচন্ড ভাল লাগে। সাতার না জানলেও কক্সবাজারে গিয়ে হোক বা ইংল্যান্ড সমুদ্র পেলে ছাড়ে না যতক্ষণ না ক্লান্ত হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা করেই পানি ছিটানো শুরু করল শমিষ্ঠার গায়ে। যদিও শমিষ্ঠা সিনথিয়ার থেকে ২৫/২৬ বছরের বড় তার পরেও গায়ে পানি ছিটানো শুরু করলে শমিষ্ঠার বয়স যেন কমে আসল। শমিষ্ঠাও পালটা পানি ছিটাতে শুরু করল। এইভাবে পানি ছিটাতে ছিটাতে কখন যেন শমিষ্ঠা আর সিনথিয়া দুইজনে কোমড় পানিতে এসে দাড়িয়েছে। পানি ছিটানোর এক পর্যায়ে শমিষ্ঠা খেয়াল করে পানিতে সারা গা ভিজে গেছে। সাদা গেঞ্জিটা একদম গায়ের সাথে লেগে আছে। ভিতরের ব্রা স্পষ্ট। চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেল ওর খেয়াল করে। মধ্য বয়সী বাঙ্গাগী মহিলা তার উপর কলেজের প্রফেসর। কথায় যতটা স্মার্ট হোক না কেন পোশাকের ব্যাপারে এখনো কনজারভেটিভ। শমিষ্ঠা বললেন আরে দেখ, দেখ কেমন সব ভিজে গেছে। সিনথিয়া বলল আরে সমস্যা কি তাতে? শমিষ্ঠা বলল ছি, কি বল। সব ট্রান্সপারেন্ট হয়ে গেছে। সিনথিয়া বলল আরে কাকী এত স্মার্ট হয়েও তুমি পুরাতন কালের মত কথা বলছ। শমিষ্ঠা বলল আমি মানুষ তো পুরাতন কালের। সিনথিয়া বলল ছাড় তো। এটা প্রাইভেট বিচ। আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। শমিষ্ঠা একবার সৌমিক আর মাহফুজের দিকে তাকালো। সিনথিয়া বুঝল কনসার্নটা। বলল আরে মাহফুজের জন্য অস্বস্তি হচ্ছে? শমিষ্ঠা উত্তর না দিলেও বুঝল সিনথিয়া। বলল, তুমি যে সুন্দর কলেজে গেলে নিশ্চয় কলেজের ছেলেরা তোমাকে দেখে। সেইসব পাত্তা দাও? মাহফুজ এসে এইবার দুই একবার তাকালে পাত্তা দিও না। ধরে নিবে কলেজের ছাত্র। শমিষ্ঠা হেসে বলল নিজের বর কে নিয়ে এইভাবে বলতে পারলে? সিনথিয়া বলল মাহফুজ সুন্দরী কার দিকে তাকালে আমি মাইন্ড করি না। হেসে দিল শুনে শমিষ্ঠা। বলল তোমরা বর বউ দুইজনে কথায় পটু। সিনথিয়া বলল দাড়াও তাইলে মাহফুজ কে ডাক দেই। এই বলে জোরে চিতকার দিল মাহফুজের নাম ধরে।