25-07-2025, 04:14 PM
(This post was last modified: 25-07-2025, 04:40 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এসব ভাবতে ভাবতে সিনথিয়া সাবরিনা গাড়িতে হাজির হয়। সিনথিয়া ওকে দেখে হাত নাড়ায়। গাড়ি থেকে সাবরিনা সিনথিয়া নেমে আসে। সিনথিয়া স্বভাব সুলভ ভাবে সামনে এসে কথা বলতে শুরু করে। একের পর এক প্রশ্ন। উত্তরের অপেক্ষা না করে পরের প্রশ্ন। এক মিনিট পর খেয়াল করে যে শুধু ও কথা বলে যাচ্ছে। তখন সাবরিনা কে বলে আপু কিরে তুই চিনিস না মাহফুজ কে, তোর অফিসেতো যায় মাঝে মাঝে। আর মাহফুজ কে বলে কি আপু কে দেখে কথা আটকে গেছে নাকি। তারপর সাবরিনা কে জড়িয়ে ধরে বলে আরে আপু কে এত ভয় পাবার কিছু নেই। আপু অফিসে বাঘ হলেও খুব ভাল মানুষ। মাহফুজ সাবরিনার দিকে তাকিয়ে সালাম দেয় আর জিজ্ঞেস করে কেমন আছেন। সাবরিনা উত্তর দেয় আর বলে ভাল, আপনি ভাল তো। সিনথিয়া ওদের কথোপকথন শুনে বলে কিরে তোরা এমন ফর্মাল আচরণ করছিস কেন। কি মাহফুজ তুমি না বলেছিলে আপুর সাথে অফিসে তোমার ভাল খাতির হয়েছে। সাবরিনা গাল লাল হয়ে যায় সিনথিয়ার কথায়। মাহফুজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেবার জন্য বলে হ্যা, ম্যাডামের সাথে তো অনেক গুলো প্রজেক্টে কাজ করা হলো। উনি খুব ভাল মানুষ। সাবরিনাও এইবার সায় দেয়, মাহফুজ সাহেব অনেক হেল্পফুল ছিল। সিনথিয়া এইবার প্রশ্ন করল দুইজন যেহেতু দুইজন কে চিনিস আর একসাথে কাজ করেছিস, ভাল রিভিউ দিচ্ছিস একে অন্যের তাহলে এরকম জড়তা কাজ করছে কেন। সাবরিনা আমতা আমতা করে বলে না আমরা তো এরকম। মাহফুজ বুঝে সাবরিনার অভিনয় কনভিন্সিং না। ও হাত না দিলে সিনথিয়ার জেরার মুখে ভুল কিছু বলে ফেলবে সাবরিনা। মাহফুজ তাই এইবার নিজে থেকে বলে আহা, সিনথিয়া এমন পুলিশের জেরা ছাড় তো। আসলে ভুল আমার। উনার সাথে অফিসে দেখা হবার সময় আমি বলি নি যে তোমাকে আমি চিনি। আমার ধারণা এই কারণে উনি একটু মাইন্ড করেছেন। এটাই স্বাভাবিক। তারপর সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলে ম্যাডাম বিশ্বাস করুন আমি বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু ভয়ে বলা হয় নি আপনি কিভাবে রিএক্ট করবেন এটা ভেবে। আর পরে যখন সম্পর্ক ভাল হয়ে গেল তখন আমি ভেবেছে আজকে বলব কালকে বলব কিন্তু বললে আপনি কি রিএকশন দেখাবেন এই ভয়ে তখনো বলা হয় নি। সাবরিনা মাহফুজের কথা শুনে। সেই চিরচেনা কনফিডেন্ট মাহফুজ। সবা খানে যার কোন না কোন উত্তর রেডি আছে। তবে সাবরিনা মনে মনে থ্যাংকিউ দেয়। কারণ মাহফুজের কথার পর সিনথিয়ার কথার দিক ঘুরে গেছে। এইবার সে সাবরিনা কে বলে আপু দেখ আমি কতবার তোকে স্যরি বলেছি। এই মাহফুজ নিজেও স্যরি বলছে। প্লিজ আমাদের মাফ করে দে। আমরা জানতাম আম্মু কে রাজি করাতে গেলে তোকে রাজি করাতে হবে। তাই আমাদের একটু অন্য রাস্তা নিতে হয়েছে। জানিস তো এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। এই বলে হাসতে থাকে। সাবরিনা লাল হয়ে যায় আর মাহফুজ অস্বস্তিতে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। সিনথিয়া আবার বলে আপু বল তুই আমাদের মাফ করে দিয়েছিস। সাবরিনা বুঝে যতক্ষণ না হ্যা বলবে ততক্ষণ এই পাগলামি চলবে সিনথিয়ার তাই বলে হ্যা। সিনথিয়া হাত তালি দিয়ে উঠে। মাহফুজের দিকে তাকিয়ে বলে বলেছিলাম না আমার আপু আইস কুইন হলেও হার্টটা একদম ওয়ার্ম। বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। সবাই এইবার একটু হাসি দেয়। পরিস্থিতি খানিকটা স্বাভাবিক এবার।
শাড়ির দোকান গুলোতে ঘুরছে ওরা এক এক করে। সিনথিয়া আর সাবরিনা দুই বোন শাড়ি দেখতে ব্যস্ত। মাহফুজ মনযোগ দিয়ে পাশ থেকে দুইজন কে দেখছে। দুইজন চমৎকার, দুইজন সুন্দরী, দুইজন কনফিডেন্ট। তবে তার পরেও দুইজন সম্পূর্ণ আলাদা। সিনথিয়া চাইলে ওর ভিতর আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে আবার সাবরিনা কে দেখলে ওর মনে হয় এটা তুষ কয়লার আগুন। ভিতরে যেটা ধিক ধিক করে জ্বলছে তবে উপরে সেই আগুনের অস্তিত্ব বোঝা যায় না। পছন্দ করা শাড়ি গুলো সিনিথিয়ার গায়ে জড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কেমন মানাবে। যেগুলো শর্ট লিস্ট করছে সেগুলোর ব্যাপারে মাহফুজের মন্তব্য জানতে চাইছে। মাহফুজ যতটুকু বুঝে তার উপর ভিত্তি করে তার মতামত বলছে। এর মাঝে নতুন এক দোকানে ঢোকার আগে সিনথিয়া কে ওর এক বান্ধবী ফোন দিল। সিনথিয়া দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে ওদের কে ইশারা করল ভিতরে গিয়ে বসতে। সাবরিনা আর মাহফুজ ভিতরে ঢুকতেই দোকানের লোকজন এগিয়ে আসে, ভাইয়া আসেন আপু আসেন বলে। দুইজন গিয়ে দোকানের ভিতরে রাখা টুল গুলোতে বসে। একজন জিজ্ঞেস করে ভাইয়া কিসের জন্য শাড়ি নিবেন। মাহফুজ বলে আমার বিয়ের শাড়ি নিব। এইবার জিজ্ঞেস করে কোন স্পেসিফিক কালার পছন্দ আছে আপনাদের। সাবরিনা সিনথিয়ার পছন্দ অনুযায়ী বলে লাল অথবা মেরুনের মাঝে দেখান। লোকটা তখন অন্যদের ইনস্ট্রাকশন দেয় কোন তাক থেকে কোন শাড়ি নামাতে হবে। মাহফুজ আর সাবরিনা অকয়ার্ড ভাবে পাশাপাশি বসে থাকে। কি বলবে দুইজন দুইজন কে। মাহফুজ তাই গলা নামিয়ে হালকা স্বরে বলে স্যরি। তোমাকে এমন একটা অবস্থায় ফেলার জন্য। সাবরিনা ফোস করে উঠে। গলা নামিয়ে উত্তর দেয় তুমি আমাকে কিসের মাঝে এনে ফেলেছ তুমি নিজেও জান না মাহফুজ। মাহফুজ বলে অল উইল বি ওকে, সাবরিনা। ট্রাস্ট মি। আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি এটা তুমি জান। আমি এমন কিছু করব না যাতে ঝামেলা হয়। আর তোমাকেও আমার ভাল লাগে। আমি চাই না তোমার জীবনে অহেতুক কোন ঝড় আসুক আমার জন্য। এর মাঝে শাড়ি চলে আসে। একটা শাড়ি সাবরিনার দিকে এগিয়ে দিয়ে লোকটা বলে আপা এই শাড়িটা দেখেন। আপনার সাথে চমৎকার মানাবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে এই শাড়ি পড়লে সবাই বললে এই সিজনের বেস্ট বউ এর শাড়ি এইটা। মাহফুজ আর সাবরিনা চমকে উঠে। বুঝতে পারে লোকটা ভুলে সাবরিনা কে কনে ভেবেছে। ওরা কেউ ভুল ভাংগানোর আগেই সিনথিয়া হাজির হয় পিছনে। দোকানদারের কথা ওর কানে গেছে। কথাটা শুনতেই সিনথিয়ার মাথায় বরাবরের মত দুষ্ট বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। সিনথিয়া সাবরিনা মাহফুজ কেউ কথা বলার আগেই বলে হ্যা, আপু এই শাড়ি টা পড়লে তোকে যা গর্জিয়াস বউ লাগবে না। কি বলেন মাহফুজ ভাই? এই বলে নিজেই খিল খিল করে হেসে উঠে সিনথিয়া। দোকানদার সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করে আপা আপনিও কি উনাদের সাথে আছেন। সিনথিয়া বলে হ্যা, এই বলে সাবরিনা কে দেখিয়ে বলে উনি আমার বড় বোন। দোকানদার এইবার বলে হ্যা আপা আপনি বুঝতে পারবেন। দেখেন আপনার বোন কে এই শাড়িতে বউ সাজে কত চমৎকার লাগবে। লাল হয়ে গেছে সাবরিনা। মাহফুজ কিছু একটা বলতে যায় সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে দুলাভাই আপু কে এই শাড়িতে চমৎকার লাগবে না। মাহফুজ আমতা আমতা করতে করতে বলে কি হচ্ছে সিনথিয়া? সিনথিয়া বলে কেন দুলাভাই আপু কে কোন শাড়িতে ভাল লাগবে আপনি বলে দেন, আমরা দেখি আপু কে সেই শাড়িতে বউ সাজে কেমন লাগবে। দোকানদার ভাবে সিনথিয়া কে হাত করতে পারলে হয়ত একটা শাড়ি গছাতে পারবে। তাই সিনথিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে থাকে দেখেন ভাই আপনার শালী কেমন চমৎকার শাড়ি বুঝতে পারে। শালী শব্দটা শুনেই হেসে গড়িয়ে পড়ে সিনথিয়া। মাহফুজ আর সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলে কি দুলাভাই আপনার একমাত্র শালীর কথা শুনবেন না। দোকানদার এইবার হাসতে হাসতে মাহফুজ কে বলে, ভাইজান শালীর কথা শুনেন। শালী কে খুশি করা মানে বউ কে হাতে রাখা। সিনথিয়ার এইবার হাসতে হাসতে হেচকি উঠার মত অবস্থা।
মাহফুজ এইবার দোকানদারের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে ভাই আপনাকে বোকা বানাচ্ছে। বিয়ের কনে হচ্ছে ও, এই বলে সিনথিয়ার দিকে আংগুল দেখায়। আর ইনি বউ এর বড় বোন। দোকানের সব লোক এইবার হেসে উঠে। যে শাড়ি দেখাচ্ছিল সে একটু হেসে উঠে স্যরি বলে। মাহফুজ সিনথিয়া কে দেখিয়ে বলে ওর খালি ফান করার অভ্যাস। দোকানদার হেসে বলে সেটা টের পাইছি ভাই। আপনার বিয়ের পরে ভাবী আপনাকে দৌড়ের উপর রাখবে। এইটা শুনে সবাই হেসে উঠে দোকানে। সিনথিয়া বলে আরে আমি বাড়ির ছোট মেয়ে। ওর তাই কোন শালী থাকবে না। এইটা ভেবে আমার খারাপ লাগে। এইজন্য নিজেই একবার বউ এর অভিনয় করি আরেকবার শালীর। দোকানের লোকজন সিনথিয়ার পাগলামি কথা শুনে হাসতে থাকে। আর এর মাঝে সাবরিনা একবার লজ্জায় লাল হয় আবার আরেকবার সিনথিয়ার পাগলামি শুনে হাসতে থাকে। এর মাঝে সাবরিনার ফোন বেজে উঠে। সাবরিনা ফোন নিয়ে দেখে ওর বাবা ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই মিজবাহ মেয়ে কে প্রশ্ন করেন, সাবরিনা তোর মা কি তোদের সাথে শপিং এ এসেছে। সাবরিনা বলে না তো বাবা, মা তো কলেজে গেছে। আমি সিনথিয়া আর মাহফুজ এসেছি শপিং এর জন্য। মিজবাহ বলেন তোর মা কে ফোন করছি কিন্তু ফোন ধরছে না। সাবরিনা বলে মা তো মাঝে মাঝে ক্লাসে যাবার সময় ফোন অফিসে রেখে যায় যাতে ডিস্টার্ব না হয় সেই জন্য। হয়ত তেমন কিছু করেছে। মিজবাহ বলে তোর মায়ের কলেজে অনেক মারামারি হচ্ছে। টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। আমি ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরছে না। খুব টেনশন হচ্ছে। সাবরিনা জিজ্ঞেস্ক করে তুমি কিভাবে জানলে মারামারি হচ্ছে। মিজবাহ বলেন আরে বললাম না টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। অফিসের এক কলিগ খেয়াল করে আমাকে দেখালো। সিনথিয়া আর মাহফুজ দুইজনেই পাশ থেকে কথা শুনছিল। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কোন প্রবলেম? সাবরিনা হাত তুলে মাহফুজ কে চুপ করতে ইশারা দেয়। মিজবাহের গলায় টেনশন বুঝা যাচ্ছে। সাবরিনার নিজেরো একটু টেনশন হচ্ছে। সাবরিনা মিজবাহ কে জিজ্ঞেস করে কোন চ্যানেলে দেখাচ্ছে। মিজবাহ বলে আমার সামনে সময় টেলিভিশন খোলা। সাবরিনার দিকে মনযোগ দিয়ে সিনথিয়া আর মাহফুজ তাকিয়ে আছে। কথার অর্ধেক শুনতে পাচ্ছে তারা তাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সব। সাবরিনা দোকানের এক কোণায় ঝোলানো বড় এলসিডি মনিটরে চলা টিভির দিকে তাকায়। স্টার ক্রিকেট কোন একটা খেলার হাইলাইটস দেখাচ্ছে। সাবরিনা দোকানদার কে বলে ভাইয়া সময় টিভিটা একটু ছাড়া যাবে। দোকানদার বলে অবশ্য আপু। আমি ছাড়ছি। সিনথিয়া মাহফুজ দুইজনেই এইবার ,একটু টেনসড হয়ে উঠে, কি হচ্ছে। দোকানদার সময় টিভি ছাড়ে। সাবরিনা বলে ভাইয়া একটু সাউন্ডটা বাড়ান। বড় এলসিডি মনিটরে দেখা যায় একজন শুকনো করে রিপোর্টার বলছে, শামীম এই এলাকা বর্তমানে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আপনি জানেন সকাল থেকে সরকারী দলের দুই পক্ষের হামলা পালটা হামলায় এই এলাকা সম্পূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ একটু আগে টিয়ারগ্যাস আর রবার বুলেট নিক্ষেপ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আপাতত পুলিশ একটু দূরে অবস্থান নিয়েছে। পুলিসের দ্বায়িত্বশীল অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে। পুলিশ আর রিএনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। আসলেই পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে। তবে এই এলাকায় তাই পুরো সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কলেজের ভিতরে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা আটকা পড়েছেন বলে আমরা শুনেছি। নিউজ এংকর জিজ্ঞেস করল রিপোর্টার কে, আটকে পড়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কি অবস্থা শামীম? রিপোর্টার তখন বলল এই ব্যাপারে আমি আপনাকে কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। পাশেই দাঁড়ানো একজন মধ্য পঞ্চাশের মাঝারি গড়নের পাকা চুলের চশমা পড়া ভদ্রলোক কে রিপোর্টার জিজ্ঞেস করলেন, স্যার আমরা শুনেছি কলেজের মাঝে কয়েকজন শিক্ষক এবং বেশি কিছু শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। আপনি কি তাদের সম্পর্কে আমাদের কিছু জানাতে পারেন। প্রিন্সিপাল বললেন, আজকে সকালের পর থেকে পরিস্থিতির কারণে আমাদের কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন কলেজে। পুলিশ তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও বিবাদমান দুই পক্ষের মারামারির মুখে তাদের কে এই মূহুর্তে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। আমাদের কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা এই মূহুর্তে ভিতরে আছেন। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি উনি ভিতরে আটকা পড়া সবাই কে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখেছেন। এর বাইরে আসলে আমার কাছে খবর নেই। প্রিন্সিপালের কথা শুনতেই সিনথিয়া সাবরিনা দুইজনেই বুঝে ফেলল ভিতরে আটকে পড়া সিনিয়র শিক্ষিতা অবশ্যই তাদের আম্মু সাফিনা করিম। টেনশনে দুইজনের গলা শুকিয়ে গেল, বুক ধড়ফড় করছে এবং চোখ ছলছল। সিনথিয়া সাবরিনা এবং মাহফুজ তিন জনে এক সাথে সাফিনা করিমের মোবাইলে ফোন দেবার চেষ্টা করল। ফোন ঢুকছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। যতবার ফোন বাজছে ততবার সিনথিয়া আর সাবরিনার বুকের ভিতর যেন হাতুড়ির আঘাত পড়ছে। সিনথিয়া ছল ছলো চোখে মাহফুজের দিকে ফিরল। বলল, আমার আম্মু কে যেভাবে হোক এর ভিতর থেকে বের করে নিয়ে আস মাহফুজ। আমি কিছু জানি না আমি আমার আম্মু কে চাই। সিনথিয়ার গলায় যেন দশ এগার বছর বয়সী কিশোরীর আবেগ। সাবরিনাও এইবার কথা বলল, প্লিজ মাহফুজ আম্মু কে যেভাবে হোক সেফ কর। মাহফুজ দুইজনের দিকে তাকিয়ে খালি একবার বলল, আমি থাকতে আন্টির কিছু হতে দিব না।
শাড়ির দোকান গুলোতে ঘুরছে ওরা এক এক করে। সিনথিয়া আর সাবরিনা দুই বোন শাড়ি দেখতে ব্যস্ত। মাহফুজ মনযোগ দিয়ে পাশ থেকে দুইজন কে দেখছে। দুইজন চমৎকার, দুইজন সুন্দরী, দুইজন কনফিডেন্ট। তবে তার পরেও দুইজন সম্পূর্ণ আলাদা। সিনথিয়া চাইলে ওর ভিতর আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে আবার সাবরিনা কে দেখলে ওর মনে হয় এটা তুষ কয়লার আগুন। ভিতরে যেটা ধিক ধিক করে জ্বলছে তবে উপরে সেই আগুনের অস্তিত্ব বোঝা যায় না। পছন্দ করা শাড়ি গুলো সিনিথিয়ার গায়ে জড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কেমন মানাবে। যেগুলো শর্ট লিস্ট করছে সেগুলোর ব্যাপারে মাহফুজের মন্তব্য জানতে চাইছে। মাহফুজ যতটুকু বুঝে তার উপর ভিত্তি করে তার মতামত বলছে। এর মাঝে নতুন এক দোকানে ঢোকার আগে সিনথিয়া কে ওর এক বান্ধবী ফোন দিল। সিনথিয়া দোকানের বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে ওদের কে ইশারা করল ভিতরে গিয়ে বসতে। সাবরিনা আর মাহফুজ ভিতরে ঢুকতেই দোকানের লোকজন এগিয়ে আসে, ভাইয়া আসেন আপু আসেন বলে। দুইজন গিয়ে দোকানের ভিতরে রাখা টুল গুলোতে বসে। একজন জিজ্ঞেস করে ভাইয়া কিসের জন্য শাড়ি নিবেন। মাহফুজ বলে আমার বিয়ের শাড়ি নিব। এইবার জিজ্ঞেস করে কোন স্পেসিফিক কালার পছন্দ আছে আপনাদের। সাবরিনা সিনথিয়ার পছন্দ অনুযায়ী বলে লাল অথবা মেরুনের মাঝে দেখান। লোকটা তখন অন্যদের ইনস্ট্রাকশন দেয় কোন তাক থেকে কোন শাড়ি নামাতে হবে। মাহফুজ আর সাবরিনা অকয়ার্ড ভাবে পাশাপাশি বসে থাকে। কি বলবে দুইজন দুইজন কে। মাহফুজ তাই গলা নামিয়ে হালকা স্বরে বলে স্যরি। তোমাকে এমন একটা অবস্থায় ফেলার জন্য। সাবরিনা ফোস করে উঠে। গলা নামিয়ে উত্তর দেয় তুমি আমাকে কিসের মাঝে এনে ফেলেছ তুমি নিজেও জান না মাহফুজ। মাহফুজ বলে অল উইল বি ওকে, সাবরিনা। ট্রাস্ট মি। আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি এটা তুমি জান। আমি এমন কিছু করব না যাতে ঝামেলা হয়। আর তোমাকেও আমার ভাল লাগে। আমি চাই না তোমার জীবনে অহেতুক কোন ঝড় আসুক আমার জন্য। এর মাঝে শাড়ি চলে আসে। একটা শাড়ি সাবরিনার দিকে এগিয়ে দিয়ে লোকটা বলে আপা এই শাড়িটা দেখেন। আপনার সাথে চমৎকার মানাবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে এই শাড়ি পড়লে সবাই বললে এই সিজনের বেস্ট বউ এর শাড়ি এইটা। মাহফুজ আর সাবরিনা চমকে উঠে। বুঝতে পারে লোকটা ভুলে সাবরিনা কে কনে ভেবেছে। ওরা কেউ ভুল ভাংগানোর আগেই সিনথিয়া হাজির হয় পিছনে। দোকানদারের কথা ওর কানে গেছে। কথাটা শুনতেই সিনথিয়ার মাথায় বরাবরের মত দুষ্ট বুদ্ধি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। সিনথিয়া সাবরিনা মাহফুজ কেউ কথা বলার আগেই বলে হ্যা, আপু এই শাড়ি টা পড়লে তোকে যা গর্জিয়াস বউ লাগবে না। কি বলেন মাহফুজ ভাই? এই বলে নিজেই খিল খিল করে হেসে উঠে সিনথিয়া। দোকানদার সিনথিয়া কে জিজ্ঞেস করে আপা আপনিও কি উনাদের সাথে আছেন। সিনথিয়া বলে হ্যা, এই বলে সাবরিনা কে দেখিয়ে বলে উনি আমার বড় বোন। দোকানদার এইবার বলে হ্যা আপা আপনি বুঝতে পারবেন। দেখেন আপনার বোন কে এই শাড়িতে বউ সাজে কত চমৎকার লাগবে। লাল হয়ে গেছে সাবরিনা। মাহফুজ কিছু একটা বলতে যায় সিনথিয়া হাসতে হাসতে বলে দুলাভাই আপু কে এই শাড়িতে চমৎকার লাগবে না। মাহফুজ আমতা আমতা করতে করতে বলে কি হচ্ছে সিনথিয়া? সিনথিয়া বলে কেন দুলাভাই আপু কে কোন শাড়িতে ভাল লাগবে আপনি বলে দেন, আমরা দেখি আপু কে সেই শাড়িতে বউ সাজে কেমন লাগবে। দোকানদার ভাবে সিনথিয়া কে হাত করতে পারলে হয়ত একটা শাড়ি গছাতে পারবে। তাই সিনথিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলতে থাকে দেখেন ভাই আপনার শালী কেমন চমৎকার শাড়ি বুঝতে পারে। শালী শব্দটা শুনেই হেসে গড়িয়ে পড়ে সিনথিয়া। মাহফুজ আর সাবরিনার দিকে তাকিয়ে বলে কি দুলাভাই আপনার একমাত্র শালীর কথা শুনবেন না। দোকানদার এইবার হাসতে হাসতে মাহফুজ কে বলে, ভাইজান শালীর কথা শুনেন। শালী কে খুশি করা মানে বউ কে হাতে রাখা। সিনথিয়ার এইবার হাসতে হাসতে হেচকি উঠার মত অবস্থা।
মাহফুজ এইবার দোকানদারের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে ভাই আপনাকে বোকা বানাচ্ছে। বিয়ের কনে হচ্ছে ও, এই বলে সিনথিয়ার দিকে আংগুল দেখায়। আর ইনি বউ এর বড় বোন। দোকানের সব লোক এইবার হেসে উঠে। যে শাড়ি দেখাচ্ছিল সে একটু হেসে উঠে স্যরি বলে। মাহফুজ সিনথিয়া কে দেখিয়ে বলে ওর খালি ফান করার অভ্যাস। দোকানদার হেসে বলে সেটা টের পাইছি ভাই। আপনার বিয়ের পরে ভাবী আপনাকে দৌড়ের উপর রাখবে। এইটা শুনে সবাই হেসে উঠে দোকানে। সিনথিয়া বলে আরে আমি বাড়ির ছোট মেয়ে। ওর তাই কোন শালী থাকবে না। এইটা ভেবে আমার খারাপ লাগে। এইজন্য নিজেই একবার বউ এর অভিনয় করি আরেকবার শালীর। দোকানের লোকজন সিনথিয়ার পাগলামি কথা শুনে হাসতে থাকে। আর এর মাঝে সাবরিনা একবার লজ্জায় লাল হয় আবার আরেকবার সিনথিয়ার পাগলামি শুনে হাসতে থাকে। এর মাঝে সাবরিনার ফোন বেজে উঠে। সাবরিনা ফোন নিয়ে দেখে ওর বাবা ফোন দিয়েছে। ফোন ধরতেই মিজবাহ মেয়ে কে প্রশ্ন করেন, সাবরিনা তোর মা কি তোদের সাথে শপিং এ এসেছে। সাবরিনা বলে না তো বাবা, মা তো কলেজে গেছে। আমি সিনথিয়া আর মাহফুজ এসেছি শপিং এর জন্য। মিজবাহ বলেন তোর মা কে ফোন করছি কিন্তু ফোন ধরছে না। সাবরিনা বলে মা তো মাঝে মাঝে ক্লাসে যাবার সময় ফোন অফিসে রেখে যায় যাতে ডিস্টার্ব না হয় সেই জন্য। হয়ত তেমন কিছু করেছে। মিজবাহ বলে তোর মায়ের কলেজে অনেক মারামারি হচ্ছে। টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। আমি ফোন দিলাম কিন্তু ফোন ধরছে না। খুব টেনশন হচ্ছে। সাবরিনা জিজ্ঞেস্ক করে তুমি কিভাবে জানলে মারামারি হচ্ছে। মিজবাহ বলেন আরে বললাম না টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে। অফিসের এক কলিগ খেয়াল করে আমাকে দেখালো। সিনথিয়া আর মাহফুজ দুইজনেই পাশ থেকে কথা শুনছিল। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কোন প্রবলেম? সাবরিনা হাত তুলে মাহফুজ কে চুপ করতে ইশারা দেয়। মিজবাহের গলায় টেনশন বুঝা যাচ্ছে। সাবরিনার নিজেরো একটু টেনশন হচ্ছে। সাবরিনা মিজবাহ কে জিজ্ঞেস করে কোন চ্যানেলে দেখাচ্ছে। মিজবাহ বলে আমার সামনে সময় টেলিভিশন খোলা। সাবরিনার দিকে মনযোগ দিয়ে সিনথিয়া আর মাহফুজ তাকিয়ে আছে। কথার অর্ধেক শুনতে পাচ্ছে তারা তাই ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সব। সাবরিনা দোকানের এক কোণায় ঝোলানো বড় এলসিডি মনিটরে চলা টিভির দিকে তাকায়। স্টার ক্রিকেট কোন একটা খেলার হাইলাইটস দেখাচ্ছে। সাবরিনা দোকানদার কে বলে ভাইয়া সময় টিভিটা একটু ছাড়া যাবে। দোকানদার বলে অবশ্য আপু। আমি ছাড়ছি। সিনথিয়া মাহফুজ দুইজনেই এইবার ,একটু টেনসড হয়ে উঠে, কি হচ্ছে। দোকানদার সময় টিভি ছাড়ে। সাবরিনা বলে ভাইয়া একটু সাউন্ডটা বাড়ান। বড় এলসিডি মনিটরে দেখা যায় একজন শুকনো করে রিপোর্টার বলছে, শামীম এই এলাকা বর্তমানে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আপনি জানেন সকাল থেকে সরকারী দলের দুই পক্ষের হামলা পালটা হামলায় এই এলাকা সম্পূর্ণ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ একটু আগে টিয়ারগ্যাস আর রবার বুলেট নিক্ষেপ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আপাতত পুলিশ একটু দূরে অবস্থান নিয়েছে। পুলিসের দ্বায়িত্বশীল অফিসারের সাথে আমার কথা হয়েছে। পুলিশ আর রিএনফোর্সমেন্ট চেয়ে পাঠিয়েছে। আসলেই পরবর্তী পদক্ষেপে যাবে। তবে এই এলাকায় তাই পুরো সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। কলেজের ভিতরে সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা আটকা পড়েছেন বলে আমরা শুনেছি। নিউজ এংকর জিজ্ঞেস করল রিপোর্টার কে, আটকে পড়া শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কি অবস্থা শামীম? রিপোর্টার তখন বলল এই ব্যাপারে আমি আপনাকে কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। পাশেই দাঁড়ানো একজন মধ্য পঞ্চাশের মাঝারি গড়নের পাকা চুলের চশমা পড়া ভদ্রলোক কে রিপোর্টার জিজ্ঞেস করলেন, স্যার আমরা শুনেছি কলেজের মাঝে কয়েকজন শিক্ষক এবং বেশি কিছু শিক্ষার্থী আটকা পড়েছে। আপনি কি তাদের সম্পর্কে আমাদের কিছু জানাতে পারেন। প্রিন্সিপাল বললেন, আজকে সকালের পর থেকে পরিস্থিতির কারণে আমাদের কিছু শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থী আটকা পড়েছেন কলেজে। পুলিশ তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও বিবাদমান দুই পক্ষের মারামারির মুখে তাদের কে এই মূহুর্তে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। আমাদের কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষিকা এই মূহুর্তে ভিতরে আছেন। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি উনি ভিতরে আটকা পড়া সবাই কে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখেছেন। এর বাইরে আসলে আমার কাছে খবর নেই। প্রিন্সিপালের কথা শুনতেই সিনথিয়া সাবরিনা দুইজনেই বুঝে ফেলল ভিতরে আটকে পড়া সিনিয়র শিক্ষিতা অবশ্যই তাদের আম্মু সাফিনা করিম। টেনশনে দুইজনের গলা শুকিয়ে গেল, বুক ধড়ফড় করছে এবং চোখ ছলছল। সিনথিয়া সাবরিনা এবং মাহফুজ তিন জনে এক সাথে সাফিনা করিমের মোবাইলে ফোন দেবার চেষ্টা করল। ফোন ঢুকছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না। যতবার ফোন বাজছে ততবার সিনথিয়া আর সাবরিনার বুকের ভিতর যেন হাতুড়ির আঘাত পড়ছে। সিনথিয়া ছল ছলো চোখে মাহফুজের দিকে ফিরল। বলল, আমার আম্মু কে যেভাবে হোক এর ভিতর থেকে বের করে নিয়ে আস মাহফুজ। আমি কিছু জানি না আমি আমার আম্মু কে চাই। সিনথিয়ার গলায় যেন দশ এগার বছর বয়সী কিশোরীর আবেগ। সাবরিনাও এইবার কথা বলল, প্লিজ মাহফুজ আম্মু কে যেভাবে হোক সেফ কর। মাহফুজ দুইজনের দিকে তাকিয়ে খালি একবার বলল, আমি থাকতে আন্টির কিছু হতে দিব না।