11-07-2025, 08:15 PM
(This post was last modified: 24-07-2025, 09:58 PM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তারা যখন বাড়িতে পৌছালো তখন রোদ্রতপ্ত দুপুর। বোধকরি গগন ও রবির বিরাগ ভেঙ্গে সন্ধী হয়েছে আজ। গাঢ় নীল আকাশে ক'ফালি সাদা মেঘ উড়ে চলেছে। কুন্দনন্দিনীর কাছে বর্ষা অতি প্রিয়, কিন্তু এবারের আষাঢ়-শ্রাবণ শুরু থেকে শেষ তার গেল শুধু মনের টানাপোড়েনে।
নিচতলার ব্যস্ততা মিটিয়ে খানিক পরেই কুন্দনন্দিনী উঠে এল সুপ্রিয়ার ঘরে। বাইরের দিকের জানালাটি খোলা— তার পাশেই সুপ্রিয়ার খাঁচায় বন্দী ময়না। তাকে দেখই পাখিটি হঠাৎ করে মাথা কাত করে বললে—
— সুপ্রিয়া! সুপ্রিয়া!
কুন্দনন্দিনী এগিয়ে এলো খাঁচার পাশে। দেখল খাঁচার ভেতর জলের পাত্র গেছে উল্টে। জল অবশ্য টেবিলে রাখা গ্লাসে ছিল। সে খাঁচা খুলে জলের পাত্রে জল ভরলো, তারপর খাঁচা বন্ধ করে খাটে বসে পাখির দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ। সে কিছু বললো না, তবে পাখিটি আবার বলল, একটু বেশি টান দিয়ে, যেন কারো অভ্যস্ত সুরে,
—"সু-প্রি-য়া!"
তারপর নিস্তব্ধতা। যদিও নিচ তলায় কার বাচ্চার যেন কান্নার রোল তুলেছে। আর তাতেই নন্দিনী উঠে দাঁড়িয়ে ভাবলো শাড়ি পাল্টে নিচে নামে। কিন্তু তখনি তার চোখ পরে নীল পর্দায় ঢাকা দেওয়া গ্রামোফোনটিতে। তখন কি ভেবে সে পর্দাটা সরিয়ে দেখতে গেল।
কুন্দনন্দিনী জানে এই যন্ত্রটি সকলেই 'পুরোনো' বলেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে হাতে ছুঁয়েই তার মনে হলো কিছু একটা ঠিকঠাক মেলে না। রঙের চকচকে ভাব, পিতলের মুখে কোনো কালচে দাগ নেই, চাকতিটাও অদ্ভুতভাবে নতুন নতুন গন্ধ ছড়াচ্ছে। যদিও সে জানে না এটা কবে কেনা হয়েছিল,তবু এটার হাল দেখে নতুন ছাড়া পুরনো মনে হয় না মোটেও।
তবে সেই সব ভেবে তার কাজ কি আর। সে বরং আলমারি থেকে একটি নতুন রেকর্ড বের করে বসায় তাতে—হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে চালু করে। তারপর সূচটি ডিস্কের ওপরে বসাতেই এক মুহূর্ত থেমে থেকে,একটু পরেই কিন্তু ধাতব ঘর্ষণের শব্দ পেরিয়ে গানের সুর ভেসে উঠলো ঘরের বাতাসে:
পাখিটা আবারো ডাকছে,তবে কুন্দনন্দিনী এবার গানে মন লাগিয়েছে। অবশ্য এই মনোযোগ তার বেশিক্ষণ রইলো না। কারণ কিরণ তখন "বৌরাণী"...."বৌরাণী".... বলে গলা ছেড়ে এসে পৌঁছেছে তার ঘরের দুয়ার সম্মুখে।
– আর নন্দি...বৌদি তুমি!.... বৌরাণী আসে নি?
প্রশ্নটার উত্তর দেবার আগেই ইন্দিরা এসে দাঁড়ালো কিরণের পেছন। সে হাঁপাচ্ছে। তবে একটু সামলে নিয়েই কিরণের কানে ধরে টেনে বললে,
– ভারি ছেলে ত তুমি! যখন তখন এমনি ছুটে মেয়েদের ঘরে ঢুকতে হয় বুঝি....
কিরণ ইন্দিরার কথার তোয়াক্কাও করলে না। সে বরং তার কান ছাড়িরে ইন্দিরার চুলের মুঠি ধরে টেনে বললে,
– ফের যদি কখনো কান ধরেছিস আমার ,তবে তোই এই চুল আমি কেটে আমার ঘরে সাজিয়ে রাখবো বললাম।
এমন কান্ড দেখে নন্দিনী এগিয়ে এসে দুজনকে ছাড়িয়ে বললে,
– কি হচ্ছে এইসব,ছাড় দেখি.. ছাড়ো....
কিরণ ছাড়লো বটে,তবে জিজ্ঞাসা পুর্ণ মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইল কুন্দনন্দিনী পানে। নন্দিনীও বুঝতে পেরে বললে,
– দিদি আসেনি।
ইন্দিরা ছাড়া পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নন্দিনীর পেছনে। এবার নন্দিনীর কথা শুনে সে বলে উঠলো,
– কি? এখন হলো তো.... সেই তখন থেকে বলছি বড় বৌদি আসেনি, তবুও সেই এক গো ধরে বসে আছে... এদিকে আমার চুলগুলো টে....
বলতে বলতে ইন্দিরা তার চুলে আঙুল চালাতে লাগলো। কিরণ চুপ মেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। তাই দেখে নন্দিনী হয়তো কিছু বলতো,তবে তার আগেই কিরণ বলে উঠলো,
– দাদা কোথায় রে ইন্দু?
প্রশ্ন শুনলেও এবার ইন্দিরা কিছুই না বলে নিচতলার পথ ধরলো। পেছনে ছুটে গেল কিরণ তাকে ডাকতে ডাকতে। এদিকে বেচারি কুন্দনন্দিনী কিছুই বুঝতে না পেরে আমাদের মতো হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো সিঁড়ির দিকে।
/////////////
নন্দিনী জানতো রাতে কি হতে চলেছে। নতুন বধূকে দোতলায় একলা রেখে ডাক্তার বাবু দুদিন যাবত নিচতলায় থাকছে,এটি বাড়িরে লোকের চোখে লাগবে বৈ কি। তবুও এতদিন সুপ্রিয়া ছিল বলেই কেউ প্রশ্ন তোলে নি। কিন্তু পরিস্থিতির এখন অনুকূল।
তবে এই ব্যাপারে আলোচনা সমালোচনায় ডাক্তার বাবুটির কিন্তু হচ্ছে না কিছুই। যা লাভ ক্ষতির হিসেব তার সবটুকুর মূল্যেই যেন কুন্দনন্দিনী। তাই বাড়ির লোকের আলোচনায় আপাতত নন্দিনী।
অবশ্য এটিই স্বাভাবিক, পুরুষের দোষগুণ সাধারণত বিচারের বাইরে কি না- তবে সত্য বলতে নন্দিনীর মনের খানিক পরিবর্তন ঘটেছে। বোধকরি স্বামীর প্রতি খানিক বিশ্বাসের সঞ্চারও হয়েছে সেখানে। মোট কথা সমীরের সহিত এক ঘরে থাকতে তার কোন আপত্তি নেই আর। তবে তার আপত্তি নেই বলেই তো সমীর সুরসুর করে দোতলায় উঠে আসবে না। কুন্দনন্দিনী নিজেও জানে প্রথম দিনকয়েক স্বামীর প্রতি তার বিরূপ আচরণের কথা.....
– এতো কি ভাবতে বসলে এখন? ওদিকে দাদা যে বেরিয়ে গেল বলে!
কমলার কথায় চমকে ওঠে নন্দিনী। রান্নাঘরে আজ যদিও তার প্রথম আগমন নয়,তবে রান্নাটি প্রথম! অথচ যার জন্যে রান্না সেই নাকি না খেয়ে বেরুবার মতলব করছে!
– আমি যাই, তুমি একটু দেখো এদিকটা।
বলেই নন্দিনী এগুলো স্বামীর ঘরের দিকে, এবং এসেই দেখলো তার স্বামী দেব সত্যিই বেরুবার জন্যে প্রস্তুত। নন্দিনীর কণ্ঠ শুকনো, কিন্তু তাতে একধরনের শান্ত অভিমান মিশিয়ে বললে,
– আমি জানতাম না আপনি এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবেন…
সমীর একটু চমকে তাকায়। পেছন ফিরে দেখে নন্দিনী সেদিন কার মতোই গায়ে শাড়ি জড়িয়েছে ব্লাউজ ছাড়া। তবে আজ নন্দিনী নিজেও সচেতন এবং সমীরও দৃষ্টিতে লাগাম পড়িয়েছে।
– একটু বসুন,খেয়ে তবে বেরুবেন....
নন্দিনীর কথা শেষ হয় না,তার আগেই সমীর ব্যস্ত হয়ে বলে,
_ এখন থাক,আসলে একটু দূরেই যেতে হবে। তাছাড়া বাবা বাড়িতে নেই বলে আমার ঝামেলা এমনিতেই বেরেছে,তার ওপড়ে এতো দেরি.... মানে....
সমীর আর কিছু বলার আগেই কুন্দনন্দিনী এগিয়ে এসে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে,অতপর মাথা নিচু করে বলে,
– এতো জলদি বেরুবেন জানলে রান্না টা আমি করতাম না। এখন আপনি না খেলেই বা কে খাবে?
সমীর এক মুহূর্ত স্তব্ধ থাকে। কথাটি তার ঠিক বিশ্বাস হয় না। তবে পরক্ষনেই কুন্দনন্দিনীর শেষ কথা গুলো মনে করে সে ঠোঁটে হাসি এনে বললে,
– তা খেতে তো পারি, যদি না বিষ মেশানো থাকে।
এইবার নন্দিনী হাতের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ঘাড় ফিরিয়ে বললে,
– আপনার মতো ডাক্তার বিষ চিনতে পারবেন না, আমি এতটা কাঁচা নই। তবে এখন আপনার খাওয়া না হলে, আমায় বুঝবো হবে, বিষের চেয়েও খারাপ কিছু হয়েছে আমার হাতের রাঁধায়।
নন্দিনী বেরিয়ে গেল। এবং সমীর বুঝলো নিজের রান্নায় কুন্দনন্দিনীর বিশেষ ভরশা নেই বলেই এই আমন্ত্রণ।সমীর একটু হাসে। তবে কপালে দুঃখ আছে সে তা ভেবেই নিয়েছে, কেন না বোন সিন্দুর প্রথম রান্না তার বেশ মনে আছে, এবার নন্দিনীর রান্না তেমন না হলেই রক্ষে।।
নিচতলার ব্যস্ততা মিটিয়ে খানিক পরেই কুন্দনন্দিনী উঠে এল সুপ্রিয়ার ঘরে। বাইরের দিকের জানালাটি খোলা— তার পাশেই সুপ্রিয়ার খাঁচায় বন্দী ময়না। তাকে দেখই পাখিটি হঠাৎ করে মাথা কাত করে বললে—
— সুপ্রিয়া! সুপ্রিয়া!
কুন্দনন্দিনী এগিয়ে এলো খাঁচার পাশে। দেখল খাঁচার ভেতর জলের পাত্র গেছে উল্টে। জল অবশ্য টেবিলে রাখা গ্লাসে ছিল। সে খাঁচা খুলে জলের পাত্রে জল ভরলো, তারপর খাঁচা বন্ধ করে খাটে বসে পাখির দিকে তাকিয়ে রইলো খানিকক্ষণ। সে কিছু বললো না, তবে পাখিটি আবার বলল, একটু বেশি টান দিয়ে, যেন কারো অভ্যস্ত সুরে,
—"সু-প্রি-য়া!"
তারপর নিস্তব্ধতা। যদিও নিচ তলায় কার বাচ্চার যেন কান্নার রোল তুলেছে। আর তাতেই নন্দিনী উঠে দাঁড়িয়ে ভাবলো শাড়ি পাল্টে নিচে নামে। কিন্তু তখনি তার চোখ পরে নীল পর্দায় ঢাকা দেওয়া গ্রামোফোনটিতে। তখন কি ভেবে সে পর্দাটা সরিয়ে দেখতে গেল।
কুন্দনন্দিনী জানে এই যন্ত্রটি সকলেই 'পুরোনো' বলেছে। কিন্তু কাছে গিয়ে হাতে ছুঁয়েই তার মনে হলো কিছু একটা ঠিকঠাক মেলে না। রঙের চকচকে ভাব, পিতলের মুখে কোনো কালচে দাগ নেই, চাকতিটাও অদ্ভুতভাবে নতুন নতুন গন্ধ ছড়াচ্ছে। যদিও সে জানে না এটা কবে কেনা হয়েছিল,তবু এটার হাল দেখে নতুন ছাড়া পুরনো মনে হয় না মোটেও।
তবে সেই সব ভেবে তার কাজ কি আর। সে বরং আলমারি থেকে একটি নতুন রেকর্ড বের করে বসায় তাতে—হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে চালু করে। তারপর সূচটি ডিস্কের ওপরে বসাতেই এক মুহূর্ত থেমে থেকে,একটু পরেই কিন্তু ধাতব ঘর্ষণের শব্দ পেরিয়ে গানের সুর ভেসে উঠলো ঘরের বাতাসে:
"আমায় না দেখিতে যদি পারো
তবু চোখ রাখিও চোখের মতো।"
পাখিটা আবারো ডাকছে,তবে কুন্দনন্দিনী এবার গানে মন লাগিয়েছে। অবশ্য এই মনোযোগ তার বেশিক্ষণ রইলো না। কারণ কিরণ তখন "বৌরাণী"...."বৌরাণী".... বলে গলা ছেড়ে এসে পৌঁছেছে তার ঘরের দুয়ার সম্মুখে।
– আর নন্দি...বৌদি তুমি!.... বৌরাণী আসে নি?
প্রশ্নটার উত্তর দেবার আগেই ইন্দিরা এসে দাঁড়ালো কিরণের পেছন। সে হাঁপাচ্ছে। তবে একটু সামলে নিয়েই কিরণের কানে ধরে টেনে বললে,
– ভারি ছেলে ত তুমি! যখন তখন এমনি ছুটে মেয়েদের ঘরে ঢুকতে হয় বুঝি....
কিরণ ইন্দিরার কথার তোয়াক্কাও করলে না। সে বরং তার কান ছাড়িরে ইন্দিরার চুলের মুঠি ধরে টেনে বললে,
– ফের যদি কখনো কান ধরেছিস আমার ,তবে তোই এই চুল আমি কেটে আমার ঘরে সাজিয়ে রাখবো বললাম।
এমন কান্ড দেখে নন্দিনী এগিয়ে এসে দুজনকে ছাড়িয়ে বললে,
– কি হচ্ছে এইসব,ছাড় দেখি.. ছাড়ো....
কিরণ ছাড়লো বটে,তবে জিজ্ঞাসা পুর্ণ মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইল কুন্দনন্দিনী পানে। নন্দিনীও বুঝতে পেরে বললে,
– দিদি আসেনি।
ইন্দিরা ছাড়া পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল নন্দিনীর পেছনে। এবার নন্দিনীর কথা শুনে সে বলে উঠলো,
– কি? এখন হলো তো.... সেই তখন থেকে বলছি বড় বৌদি আসেনি, তবুও সেই এক গো ধরে বসে আছে... এদিকে আমার চুলগুলো টে....
বলতে বলতে ইন্দিরা তার চুলে আঙুল চালাতে লাগলো। কিরণ চুপ মেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তার চোখেমুখে চিন্তার ছাপ। তাই দেখে নন্দিনী হয়তো কিছু বলতো,তবে তার আগেই কিরণ বলে উঠলো,
– দাদা কোথায় রে ইন্দু?
প্রশ্ন শুনলেও এবার ইন্দিরা কিছুই না বলে নিচতলার পথ ধরলো। পেছনে ছুটে গেল কিরণ তাকে ডাকতে ডাকতে। এদিকে বেচারি কুন্দনন্দিনী কিছুই বুঝতে না পেরে আমাদের মতো হতবাক হয়ে চেয়ে রইলো সিঁড়ির দিকে।
/////////////
নন্দিনী জানতো রাতে কি হতে চলেছে। নতুন বধূকে দোতলায় একলা রেখে ডাক্তার বাবু দুদিন যাবত নিচতলায় থাকছে,এটি বাড়িরে লোকের চোখে লাগবে বৈ কি। তবুও এতদিন সুপ্রিয়া ছিল বলেই কেউ প্রশ্ন তোলে নি। কিন্তু পরিস্থিতির এখন অনুকূল।
তবে এই ব্যাপারে আলোচনা সমালোচনায় ডাক্তার বাবুটির কিন্তু হচ্ছে না কিছুই। যা লাভ ক্ষতির হিসেব তার সবটুকুর মূল্যেই যেন কুন্দনন্দিনী। তাই বাড়ির লোকের আলোচনায় আপাতত নন্দিনী।
অবশ্য এটিই স্বাভাবিক, পুরুষের দোষগুণ সাধারণত বিচারের বাইরে কি না- তবে সত্য বলতে নন্দিনীর মনের খানিক পরিবর্তন ঘটেছে। বোধকরি স্বামীর প্রতি খানিক বিশ্বাসের সঞ্চারও হয়েছে সেখানে। মোট কথা সমীরের সহিত এক ঘরে থাকতে তার কোন আপত্তি নেই আর। তবে তার আপত্তি নেই বলেই তো সমীর সুরসুর করে দোতলায় উঠে আসবে না। কুন্দনন্দিনী নিজেও জানে প্রথম দিনকয়েক স্বামীর প্রতি তার বিরূপ আচরণের কথা.....
– এতো কি ভাবতে বসলে এখন? ওদিকে দাদা যে বেরিয়ে গেল বলে!
কমলার কথায় চমকে ওঠে নন্দিনী। রান্নাঘরে আজ যদিও তার প্রথম আগমন নয়,তবে রান্নাটি প্রথম! অথচ যার জন্যে রান্না সেই নাকি না খেয়ে বেরুবার মতলব করছে!
– আমি যাই, তুমি একটু দেখো এদিকটা।
বলেই নন্দিনী এগুলো স্বামীর ঘরের দিকে, এবং এসেই দেখলো তার স্বামী দেব সত্যিই বেরুবার জন্যে প্রস্তুত। নন্দিনীর কণ্ঠ শুকনো, কিন্তু তাতে একধরনের শান্ত অভিমান মিশিয়ে বললে,
– আমি জানতাম না আপনি এত তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবেন…
সমীর একটু চমকে তাকায়। পেছন ফিরে দেখে নন্দিনী সেদিন কার মতোই গায়ে শাড়ি জড়িয়েছে ব্লাউজ ছাড়া। তবে আজ নন্দিনী নিজেও সচেতন এবং সমীরও দৃষ্টিতে লাগাম পড়িয়েছে।
– একটু বসুন,খেয়ে তবে বেরুবেন....
নন্দিনীর কথা শেষ হয় না,তার আগেই সমীর ব্যস্ত হয়ে বলে,
_ এখন থাক,আসলে একটু দূরেই যেতে হবে। তাছাড়া বাবা বাড়িতে নেই বলে আমার ঝামেলা এমনিতেই বেরেছে,তার ওপড়ে এতো দেরি.... মানে....
সমীর আর কিছু বলার আগেই কুন্দনন্দিনী এগিয়ে এসে তার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে,অতপর মাথা নিচু করে বলে,
– এতো জলদি বেরুবেন জানলে রান্না টা আমি করতাম না। এখন আপনি না খেলেই বা কে খাবে?
সমীর এক মুহূর্ত স্তব্ধ থাকে। কথাটি তার ঠিক বিশ্বাস হয় না। তবে পরক্ষনেই কুন্দনন্দিনীর শেষ কথা গুলো মনে করে সে ঠোঁটে হাসি এনে বললে,
– তা খেতে তো পারি, যদি না বিষ মেশানো থাকে।
এইবার নন্দিনী হাতের ব্যাগটা টেবিলে রেখে ঘাড় ফিরিয়ে বললে,
– আপনার মতো ডাক্তার বিষ চিনতে পারবেন না, আমি এতটা কাঁচা নই। তবে এখন আপনার খাওয়া না হলে, আমায় বুঝবো হবে, বিষের চেয়েও খারাপ কিছু হয়েছে আমার হাতের রাঁধায়।
নন্দিনী বেরিয়ে গেল। এবং সমীর বুঝলো নিজের রান্নায় কুন্দনন্দিনীর বিশেষ ভরশা নেই বলেই এই আমন্ত্রণ।সমীর একটু হাসে। তবে কপালে দুঃখ আছে সে তা ভেবেই নিয়েছে, কেন না বোন সিন্দুর প্রথম রান্না তার বেশ মনে আছে, এবার নন্দিনীর রান্না তেমন না হলেই রক্ষে।।