06-06-2025, 12:46 AM
(This post was last modified: 06-06-2025, 01:07 AM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অপরাহ্নে রোদ ফিকে হয়ে এসেছে। গাছের ডালে ডালে পাখিরা ডেকে উঠছে কখনো সখনো। কুন্দনন্দিনী বেশ খানিকক্ষণ ধরেই সন্ধান করছিল সুপ্রিয়ার। অবশেষে সংবাদ পাওয়া গেল, তিনি আজ অপ্রত্যাশিত ভাবে ছাদে। তা নন্দিনী আর কি করে–সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় তার কানে এলো সূপ্রিয়ার গলায় গুনগুন গানের আওয়াজ,
এমন নয় যে কুন্দনন্দিনী গান গাইতে পারে না, তবে সুপ্রিয়ার গানের ভান্ডার সমৃদ্ধ এবং গলাটিও মিষ্টি। কিন্তু কুন্দনন্দিনী এখনো পর্যন্ত এই বাড়িতে গ্রামোফোন দেখেনি। তবে দোতলায় সুপ্রিয়ার ঘরে থাকার দরুন সে জানে গ্রামোফোন এবাড়িতে ছিল কোন এক সময়। যদিও সে জানতে চায়নি সেটার কি হলো— তবে সুপ্রিয়ার ঘরে সে নয়'টা ডাবলডিক্স গ্রামোফোন রেকর্ড দেখেছে। তার স্বামী দেব গান করেও না,শোনেও না। সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি সুপ্রিয়া দেবীর শখ বিশেষ।
সে যাই হোক, কুন্দনন্দিনী ছাদে উঠে দেখলে— সুপ্রিয়া তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দু'চোখ বুঝে গান গাইছে। মা মেয়ের এইরূপ একান্ত আলাদা করা সময়ে কুন্দনন্দিনীর আর কিছু বলার,বা তাদে মাঝে যাবার কোন ইচ্ছেই হলো না। তথাপি ভাবনার পর মুহূর্তেই সে চুপচাপ সুপ্রিয়ার পাশে এসে বসলো। সেখানে বসেই সে বুঝলো মাতার বুকের উষ্ণ আশ্রয়ে খুকি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওদিকে গানটি আরো খানিকটা এগোলেও শেষ হয়নি এখনও। শুনতে অবশ্য মন্দ লাগছিল না তার,
চুপচাপ বসে নানান ভাবনার মাঝে সময় পেরিয়ে গেল প্রায় মিনিট খানিক। যদিও কুন্দনন্দিনী ভাবছিল সুপ্রিয়া কিছু বলবে। সাধারণত সেই অনর্গল কথা বলে মেয়েদের আসর জমিয়ে রাখে। তার কথা শুরু কি শেষ করার জন্যে বিশেষ কোন বিষয়বস্তুর প্রয়োজন পরেনা। তবে আজ দুপুরের পর থেকে সুপ্রিয়া যেন কেমন হয়ে যেতে লাগলো। এই কেমন হয়ে যাওয়ার কার্যক্রম চলছিল ধীর গতিতে। এখনও তার মুখে হাসি আছে বটে, তবে সেই হাসি কৃত্রিম। মনের ভাব লুকানোর একটি আড়াল মাত্র।
কুন্দনন্দিনী নিশ্চিত সুপ্রিয়া তার উপস্থিতি জানে। তবুও যখন সুপ্রিয়া কিছু বললো না— তখন সেও চুপ করে বসে রইল। নিচতলায় কাকিমার ঘরে কয়েকটি রমণী বসে পানসুপারি সহযোগে তাস খেলতে মত্ত, এই কান্ড নন্দিনী দেখে এসেছে। এমন সময় প্রায় দিন বাকিদের সাথে সুপ্রিয়ার আলোচনা সভা বসে। আজকেও বসার কথা ছিল যদিও। তবে নন্দিনী ভেবে পায় না সুপ্রিয়া নিচে গেল না কেন! অবশ্য কারণ খুঁজে না পেলেও ভাবতেই ভালো লাগছিল তার। যদিও এই ভালো লাগার কিন্তু কোন কারণ নেই। এমন ত নয় যে অকারণে ভালো লাগাটা অন্যায়! সাধারণত মন ভালো থাকলে চারপাশটা দেখতেও বেশ লাগে। যেমন এই মুহূর্তে...ওই মাথার ওপর দিয়ে কত নাম না জানা পাখিরা উড়ে যাচ্ছে দূর দিগন্তে; বাতাসের সাথে গাছেদের কথা হচ্ছে পাতা নড়ার শন শন শব্দে, পশ্চিম আকাশের দূর সীমান্তে কেমন যেন রাঙা। কিরণের বলা কথাগুলো মাথায় কেন যে ঘুরপাক খাচ্ছে সারাক্ষণ। বোধহয় সত্য বা মিথ্যার কোন আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না তারা,
– নন্দিনী! যেও না..... দাঁড়াও....!
নন্দিনী দাঁড়িয়ে ছিল,কেন দাঁড়িয়ে ছিল সে ভেবে পায় না এখন। তবে দাঁড়িয়ে ছিল অদূরে পর্দার আড়ালে।
– আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আমি আপনাকে এড়িয়ে চলি তাকি আপনি বোঝেন না?
কিরণ হেসেছিল বৈ কি, সে যে সুপ্রিয়ার হাতে গড়া! রসবোধ তারও কিছু কম নয়,
– গ্রামে আসার এই কদিনেই এমন পরিবর্তন! ভাবা যায় না বাবা....
কুন্দনন্দিনী রাগে বেরিয়ে এসেছিল আড়াল থেকে, সত্যিই ওভাবে ছুটে পালানোর স্বভাব তো তার ছিল না কখনো। তবে ভুল যেটা হয়েছে তা আর ঠিক করে কি উপায়ে? সে শুধু অগ্নি বর্ষিত দৃষ্টি একবার কিরণের পানে ফেলে পেছন ফিরেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বার আর পালানোর সুযোগ হয়নি। কিরণ পাশ কাটিয়ে চলে এসেছিল সামনে,
– পথ ছাড়ুন, আপনার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
– এত রাগ কিসের শুনি? বিনা অপরাধে শাস্তি দিয়েছিলে, তাও এক রাশ লোকের সামনে, আজ তার কৈফিয়ত না দিলে আমি ছাড়বো কেন? জানো ত আমি আইনের ছাত্র....
আলোচনা হয়েছিল অল্পই। কিন্তু কথাগুলো মাথায় গেঁথে গেছে যেন, কোন ভাবেই ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না। নন্দিনীর ভাবনার মাঝেই সুপ্রিয়া উঠে দাঁড়িয়েছে। আজ বড়ই স্নিগ্ধ সে— যেন শান্ত দিঘীর জলে সদ্য ফোটা পদ্ম। দুপুরের খাওয়া আগে সুপ্রিয়া ঘাটে গিয়েছিল স্নান করতে। যখন ফিরেছে,পরনে তার হালকা নীল পাড়ের শাড়ি— যার কিনারায় এখন বাতাস হালকা দোল দিয়ে চলেছে। প্রতিদিনের মতো আজ আর তার শুভ্র দেহ সোনায় মোড়ানো নয়। হাটু ছাড়ানো খোলা কেশরাশি ও অতি সাদামাটা সাজে— সে আজ যেন এক দেবী প্রতিমা। তবে দেবীর কোলে ঘুমন্ত খুকি! খুব সম্ভবত এমন জীবন্ত প্রতীমা পৃথিবীর কোন মূর্তিকর গড়ে না।
– দিদি… দুপুরে একটা কথা বলেছিলাম, তুমি উত্তর দাও নি কেন?
– সবাইকার অতীত থাকে, অতীত নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি ভালো নয়, বউ।
আঘাত ও প্রতিঘাত হলো হঠাৎ। নন্দিনী কথাগুলো বলছিল আনমনা হয়ে। প্রবল কৌতুহল থাকলেও দুপুরের পর ও কথা আর মুখে আনার সাহস হয়নি কুন্দনন্দিনীর। কিন্তু আনমনে হঠাৎ এই কথা বলে ফেলে এবার সে মুখ তুলে চাইলো। তবে সুপ্রিয়া সেখানে ছিল না,সে এগিয়ে গেছে সিঁড়ি দিকে। ইচ্ছে থাকলেও তৎক্ষণাৎ সে সুপ্রিয়ার পেছনে যেতে পারলো না। একটা সাধারণ কথায় সুপ্রিয়ার এমন চাপা ব্যবহারে তার ভিতরে তখন অন্য কিছু গজিয়ে উঠছে—একধরনের সন্দেহ। ঠিক শঙ্কা নয় বরং অদ্ভুত এক অনুভূতি… যেন কুয়াশার মধ্যে কিছু একটা আছে,যা হাত বাড়ালেও ধরা যায় না।
এরপর রাতটা যেন একটু বেশিই চুপচাপ। তবে চুপ থাকা মানেই কিন্তু শান্তি নয়— এই কথা আজ কুন্দনন্দিনী প্রথমবার সত্যি করে টের পাচ্ছে। সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সে শুনছে, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসা সুপ্রিয়ার ধমকের আওয়াজ—
– জিনিস পত্র ঠিকমত রাখিস না! রান্না করতে বললে পেঁয়াজ পোড়াচ্ছিস? তোদের দিয়ে দেখছি কিছুই হবে না ,এই অসময়ে জল গরম করতে.......
নন্দিনী ছিল দোতলায়। কমলার ডাকে সে নিচে আসছিল। তবে নিচ তলায় আসতেই কমলার ব্যস্ত চিত্ত দেখে সে বারান্দায় একটি থামের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। কি হয়েছে তা বোঝা গেল খানিক পরে।
সাধারণত রান্না ঘরে সব জিনিসপত্র রাখার একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা আছে। এর বিপরীত ঘটলে সুপ্রিয়ার জন্যে একা হাতে কিছু খুজে পাওয়া বেজায় কঠিন। যদিও সুপ্রিয়া এখন রান্না করছিল না। তবে ঝি করছিল। কেন করছিল আপাতত তা জানা গেল না,তার কারণ সুপ্রিয়াকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তার পায়ে গরম জল এসে পরেছে! পরেছে রান্নাঘরে ঢোকা খানিক পরেই। দোষটা নিঃসন্দেহে নিয়তির। তবে বোধকরি সেই নিয়তির দয়াতেই সুপ্রিয়ার বেশি কিছুই হয়নি। যা হয়েছে,তা নিয়ে বাকিরা ব্যস্ত হলেও সুপ্রিয়া কিন্তু ঝি'কেই ভর্ৎসনা করে যাচ্ছে ক্রমাগত। পায়ের আঙ্গুলে গরম জল পরেছে বলে নয়, সে যেন তার অন্য কোনো রাগ ঝারছে মেয়েটার ওপরে। অবশ্য যার ওপরে ঝারছে সে নিজেই হাসি চেপে সুপ্রিয়ার পায়ে ঠান্ডা জল ঢালছে। খুব সম্ভবত পোড়ামুখি, লক্ষ্মীছাড়া, কিংবা শুটকো মাগি জাতীয় ভর্ৎসনা তার কাছে বড্ড মধুর লাগছিল।
যাহোক নন্দিনী কিন্ত গত মাস খানেক এমন খিটখিটে স্বর কখনও শোনেনি সুপ্রিয়ার মুখে। যে দিদি সবার মুখে হাসি ফোটাতো, যার ঠোঁটে ঠোঁটে থাকে বটগাছের ছায়া-মাখানো শান্তি, সেই দিদি আজ একা একা চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রথমটায় মেয়েরা তেমন আমল না দিলেও– রাতের খাবার সময় শরীর খারাপ বলে যখন সুপ্রিয়া যখন খেতে বসলো না মেয়েদের সাথে।! বাড়ির মেয়েরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করেছে তখন। দু একজন উঠে ডাকতেও গিয়েছিল পাল্লা ক্রমে,তবে বিশেষ লাভের কিছুই হয়নি এতে।
ডাক্তার স্বামী অবশ্য এতো কিছুর খবর পায়নি এখনো,কারণ সে এখনও ডাক্তারী বিদ্যে ঝাড়তে নদীর ওপারে। তবে রাত আটটায় বাড়ি এলো কিরণ। স্বভাবতই বাড়ি ঢুকেই বৌরাণী বলে সে চিৎকার জুড়লে। তার ডাকে সুপ্রিয়া নিচে এসে খোকাকে কোলে করে বসলো খানিকক্ষণ। নন্দিনী যদিও তখন নিচতলাতেই ছিল,তবে সে আলোচনায় অংশ নেয় নি। তার কারণ, নন্দিনী তখন শ্বশুরের ঘরে বসে খুকিকে পড়াচ্ছে। গত কদিনে এটা তার শখের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিয়া মেয়েটিও তার মায়ের মতোই ফুটফুটে সুন্দর ও বুদ্ধিমতী।
রাত প্রায় সারে নটার সময় সমীর এলো বাড়িতে। বলাবাহুল্য পাড়াগাঁয়ে এই সময় রাত্রি গভীর। তবে নন্দিনী তখনো নিচতলায় সমীরের ঘরে। আজ কোন এক কারণে সে সুপ্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারছে না। তবে সুপ্রিয়াও নিচে নামলো না বলে কমলাকে সরিয়ে নন্দিনী নিজেই স্বামীর জন্যে ভাতের থালা হাতে নিল। অবশ্য রান্না ঘর থেকে বেরুবার আগেই সে পরলো সুপ্রিয়ার মুখো মুখি।
আজ আকাশের মেঘেরা বোধহয় ছুটি নিয়েছে। অবশ্য মেঘেদের অনুপস্থিতিতে চাঁদের জ্যোৎস্না পাহাড়া দেবার ভার নিয়েছে। গৃহের উঠোনে সেই আলো পড়ে অনিমিখ ধ্যানের মতো থেমে আছে।কারণ বশত সমীরবাবু আজ রাত্রিবেলায় একটু দেরি করেই আহার শুরু করলেন। যদিও তার আহার কার্যের বিশেষ সময় অসময় নেই।মেজাজ তার বেশ খোশ, মুখে হালকা হাসি, চোখে এক ধরনের পরিতৃপ্ত ক্লান্তি। তাঁকে ঘিরে দুই পক্ষের নীরব সমর। এই দৃশ্য চোখে না পড়ে যায় না—দুই পক্ষ মানে দুই বধূ।
একদিকে ছোটবউ নন্দিনী—সে যেন এক কিশলয়রেণু, সদ্য গজানো বাসন্তী আমপাতার মতো নরম, মায়াবী। তবে মুখে হাসি না থাকলেও, হাতে তার তালপাতার পাখা! প্রতি দণ্ডে স্বামীর দিকে চেয়ে, আরামসে হাওয়া দিচ্ছে সে।
অন্যদিকে বড়বউ সুপ্রিয়া—শান্ত স্বভাব, চোখে গভীরতা, ঠোঁটে অস্ফুট অনুযোগ। আজ তার মুখে কোনো হাসি নেই। হয়তো আজকের মেনুতে সে হাত রাখেনি, কিংবা কোনো অপ্রকাশিত কারণে বুকের মধ্যে একটা চাপা অভিমান জমে আছে। এক নজর দেখেই সমীরের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না। তাই তো সমীরবাবু খেতে খেতে একবার বললে,
— আহা, এই মুগডালের খিচুড়িটা কে করলো? যেন ছোটবেলাকার ঠাকুমার রান্না!
নন্দিনী চুপচাপ, ওদিকে সুপ্রিয়ার মুখে একটু কিসের যেন ছায়া খেলে গেল। সে কিছু বললে না, শুধু চোখ নামিয়ে হাতখানা কোলে রাখলে। সমীর এটুকু লক্ষ্য করলো এবং বললো,
— আমাদের সুপ্রিয়া দেবী আজ এমন চুপচাপ কেন? না কি আমার উপরেই রাগ করে বসে আছেন?
সুপ্রিয়া এবার মুখ তুললে, ঠোঁটের কোণে একটুকরো অনিচ্ছুক হাসি,
— মরণ...রাগ কেন করবো? তাছাড়া আমি রাগ করলেও তোমার সঙ্গ দিতে লোকের অভাব হবে না! কিন্তু একবার ও কথা বললে আমি উঠে চলে যাবো...
স্বামীর সাহসে ভর দিয়ে বুঝি বা কুন্দনন্দিনীরও কিছু বলবার ছিল। তবে সেই সাহসিকতার বাতাসে একটুকরো শূন্যতা নেমে এল, যেন বাঁশবাগানে হঠাৎ হাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তবে ডাক্তার বাবু হেসে উঠলো এবার, সেই হাসির ভিতরে একটা সচেতনতা ছিল— আপনি সম্বোধন করাটা ঠিক হয়নি তার, ওটা সুপ্রিয়ার অপছন্দ। যাহোক, দু'জনের মন বোঝা তো হয়েছে,
— তাহলে আজ আমার কাজ হবে তোমাদের দুজনকে একসাথে খুশি রাখা... কী বলো? রাজা যদি প্রজার হৃদয় না বোঝে, তবে সে রাজার কী দরকার?
কুন্দনন্দিনী একবার সুপ্রিয়া পানে চাইলো। মুখে হাসির রেখা লেগেছে বটে– সব ভুলে আজ নন্দিনী প্রথম বার স্বামীর কথার তালে তাল মেলালো,
— তবে রাজামশাই, শুনেছিলাম দিদির নাকি গান বেশ পছন্দ,তা শোনার ব্যবস্থাই হোক না হয়!
সমীর একটু অবাক যে হয়নি তা নয়, কিন্তু সে সব আপাতত সরিয়ে রেখে গলা খাঁকরিয়ে বললে—
“প্রেমে যাদের হৃদয় জ্বলে,
দুজনের মাঝে ছায়া চলে—
তাদের কথা বলব আমি, চাঁদের মতন ধীরে ধীরে...”
না, সমীরকে দিয়ে গান হবার নয়। তবে এমন ছন্নছাড়া উল্টো পাল্টা গান শুনে সুপ্রিয়া মস্তক নত করে খানিক হাসলো। ওদিকে স্বামীর বেসুরো কন্ঠ শুনে থেমে গেল নন্দিনীর পাখা চালানো। সুপ্রিয়া এগিয়ে এসে তার গলা জড়িয়ে কানে কানে বললে,
— প্রেম খেলা শুরু হবে এখনি, খেলতে না চাইলে পালা এ বেলা!
সুপ্রিয়ার কথা শুনে নন্দিনী চাইলো চোখ বড় করে। সুপ্রিয়া স্পষ্টভাষী, এ নিয়ে অভিযোগ করে বিশেষ লাভ নেই। তবে সুপ্রিয়া যেতে বললেও সমীর কিন্তু চেপে ধরলো নন্দিনীর আঁচলখানি, মুচকি হেসে বললে,
– একি ছোট বউ, এত জলদি মঞ্চ ছেড়ে নেমে গেলে চলে?
– উফ্! এ কেমন পাগলামো.....ওর কাজ আছে....
– যতোই কাজ থাক না কেন, রমণীগনের জন্যে স্বামী প্রধান প্রায়োরিটি, একথা ভুলে গেলে বুঝি?
সুপ্রিয়া যতোই উসখুস করুক, সমীর কিন্তু নন্দিনীর আঁচল ছাড়ালো না। এবং এই বিষয়ে আজ নন্দিনীর আয়ত নয়নের কড়া দৃষ্টিকেও হার মানতে হলো। কেন না স্ত্রীর আঁচল টেনে ধরার অধিকার সমীর আজ আদায় না করে ছাড়লো না কিছুতেই। অবশ্য নন্দিনীর বসার ইচ্ছে যে একদমই ছিল না— তেমনটাও নয় কিন্তু। সুতরাং গল্প এগুলো ধীর পদক্ষেপে। কারণ আজ সুপ্রিয়ার গল্পে মনোযোগ ছিল না, এবং গল্পের মাঝে এসে সুপ্রিয়ার ধৈর্য্য ভাঙলো। সে ধীরে ধীরে স্বামীর কাছে আরোও ঘন হয়ে,একসময় মাথা এলিয়ে দিল স্বামীর কাঁধে। লম্বা কেশরাশি তার অনেক আগেই খোঁপার বাঁধন খুলে ছড়িয়ে আছে পিঠে। গা থেকে আলগা শাড়ির আঁচল যেন বলছে—আজ সে আর গৃহিণী নয়, আজ সে কেবল একজন ক্লান্ত ও কামার্ত নারী। এতে অতি শিগগিরই লজ্জায় পড়লো কুন্দনন্দিনী এবং শেষটায় নন্দিনীকে লজ্জা থেকে উদ্ধার করলে খোকা। সে এসে বলতেই তাকে কোলে করে নন্দিনী গেল উঠন পেরিয়ে ইন্দিরার দ্বারে।
////////
দরজা বন্ধ হতেই সুপ্রিয়া উপুড় হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কান পেতে শুনলো সে স্বামীর লঘু পদধ্বনি । ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় দ্বারা সে আভাস পেল সমীর এসে বসেছে বিছানার এক ধারে। চোখে আলো না থাকলেও তনুর ওপরে প্রতিটি স্পর্শ যেন কয়েকগুণ বেশি সংবেদনশীল তার কাছে। ঘাড়ে চুমু খেয়ে সমীর যখন পেছন থেকে এসে চুপিচুপি কানে ফিসফিস করে বলল,
— তুমি জানো, রাগলে তোমায় কত সুন্দর দেখায়? একটু ঘন ঘন রাগলেও ত পার কখনো....“প্চ”
সমীর চুমু খেল আবারও। সুপ্রিয়া কিছুই বলল না। শুধু হালকা একটা হাসি ঠোঁটে খেলে গেল তার। পরক্ষণেই স্বামীর হাত দুটি আস্তে করে চলে এল তার শরীরের ওপর— স্পষ্টতই স্তনের চেপে বসলো বলিষ্ঠ হাত দুখানি। মৃদু স্বরে "উম্ম্মা..." করে একটু সুখের আওয়াজ বেরুল সুপ্রিয়া মুখ থেকে। এতখন স্বামী দ্বারা অবহেলিত রমণীর দেহের উত্তেজনা এখন প্রবল। তাই শায়িতা এই রমণীর প্রতিক্রিয়াতে সমীর ব্লাউজে ঢাকা স্তনে চাপ বাড়িয়ে দিয় কানে কানে বললো,
— এগুলো আমার... একদম আমার.....
হঠাৎ তার আঙুল গুলো আরোও শক্ত হয়ে স্তনজোড়া টিপে ধরল — প্রথমে একটু রুক্ষ, অতপর ধীরে ধীরে চাপ হয়ে এলো কোমল। অন্ধ মেয়েটি গা ঝাঁকিয়ে উঠল। কণ্ঠ দিয়ে এক অদ্ভুত শব্দ বেরিয়ে এল
— উঁ...... আহহহহ্.....।
তা শুনেই যেন উত্তেজনা বাড়লো হঠাৎ! আবারও ক্ষিপ্ত হস্তে সমীর চাপ দিতে লাগলো নরম মাংসপিণ্ডে। সুপ্রিয়া কিছু বলতে পারছিল না আর,শুধু দুই হাতে চাদর মুঠো করে দাঁতে কামড়ে ধরলো বালিশখানি। হঠাৎ হেঁচকা টানে সুপ্রিয়ার দেহ খানি উঠে এলো বিছানা থেকে। মুঠোর মাঝে বিছানার চাদর যেন আপনা আপনিই আড়াল করলো অসহায় নারীর লজ্জা। অবশ্য সে মুহূর্তে মাত্র। কেন না পরক্ষণেই সমীর ছিনিয়ে নিল তা। সুপ্রিয়া স্বামীর পানে চোখ রেখে দাঁতে কামড়ে ধরলো তার অধর
পরপর সরে গেল শাড়ি আঁচল ও ও সাদা ব্লাউজ খানি। সমীর এবার তার স্তনের বোঁটায় আঙুল ঘোরাতে লাগল, মাঝে মাঝে চুষে দিতে লাগল ঠোঁটে নিয়ে। রমণী যেন এবার নিজের সত্তা ফিরে পেল, মাথা পেছনে হেলিয়ে ঘন শ্বাস ফেলে বলল,
— তুমি জানো না, আমি না দেখতে পেলেও সব টের পাই... সব...
সমীরের তখন আলোচনা করার অবসর নেই,তার হাত তখন নামছে নিচে, কোমড়ের মাংসপেশীতে আঙুলের ছাপ যেন সে এঁকে দিতে চাইছে। সুপ্রিয়া আধা বসা, তার পাতলা শাড়ির আঁচল অনেক আগেই নেমে গেছে বুকের ওপর থেকে মেঝেতে। সমীর তার স্তনের এক পাশে চুমু খেয়ে এতখন পরে বললে
— আমার ভিতর পর্যন্ত।
— হুম..
উত্তর শুনে সুমীর ডান স্তনবৃন্ত মুখে পুরে চুষতে লাগলো। প্রথম কয়েকটা টানে সে বড় আশায় ছিল—না জানি কিসের! তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি না পেয়ে যেন খানিক ক্ষুণ্ন হয়েই চোষন ছেড়ে চাইলো সুপ্রিয়া মুখপানে। মুখের আওয়াজে কোন প্রশ্ন নয়, তবুও কাঁপা গলায় সুপ্রিয়া বলল,
– আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি এখন ঠিক কোথায় আছো....কি চাইছো.... কিন্তু..
উত্তর শোনার অপেক্ষায় সমীর থাকবে কেন,সে আবার স্তনের ওপর ঠোঁট চেপে ধরে চুষে দিতে লাগল। পর্দার আড়াল থেকে ঠেলে আসা ঠাণ্ডা বাতাসেও বোঁটা দুটো শক্ত হয়ে উঠছে, আর সুপ্রিয়ার কন্ঠ থেকে চাপা গোঙানির মতো— “আঁ… আহ্…অম্ম্ম্ম্ম্ম...” শব্দ বেরিয়ে মাতিয়ে তুলছে ঘরের পরিবেশ। বেশ খানিকক্ষণ স্তন জোড়া চেপে ও চুষে সমীর হতাশ হয়ে এবার উঠে এল স্ত্রীর কানের কাছে,
– এই সবটা তোমার দোষ....এর শাস্তি কি হয় বল?
বললে সে সুপ্রিয়ার চিবুক ধর। স্বামীর অভিযোগে লজ্জায় লাল হলো সুপ্রিয়ার গাল। সমীর মুখ নামিয়ে লালচে ঠোঁটে আলতো কামড় বসিয়ে চুষতে লাগলো। খানিক পরেই তা পরিবর্তী হলো গভীর চুম্বনে। খানিক পরেই সে চুমু ভেঙে নেমে গেল নিচে, পেটের উপর চুমু খেতে লাগল আবারও, নাভির চারপাশে ঘোরাতে লাগল জিভ। স্বামীর কান্ডে সুপ্রিয়া এবার হাসতে হাসতে বলল—
— এমন করছো যেন আমি কোন রাজকীয় ভোজ্য পদার্থ… অত কামড়ে চুষে কি পাও কি পাও বলতো?
সমীর থেমে গেল, ডান হাতের আঙুলগুলো স্ত্রীর মাথার চুলে ডুবিয়ে হঠাৎ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললে
— তুমি ঠিক বলেছো, তবে এই ভোজ্য পদার্থ শুধু আমার জন্য বরাদ্দ।
বলে সে আবারও জিভ ছোয়ালো নাভিতে, স্বামীর আলতো চুম্বন আবেশে চোখ বুজে শুয়ে পরলো সুপ্রিয়া। সে জানে স্বামীর চাওয়া ছিল তার বুকের দুধ! তবে খোকা স্তন ছেড়েছে মাস দুই,এই অবস্থায় নিয়মিত চোষন না থাকলে দুধ ত শুকোবেই, এতে সুপ্রিয়ার কি অপরাধ সে খুঁজে পেল না।
ওদিকে সমীর এখন স্ত্রীর চুল ও নাভি ছেড়ে চুমু খাচ্ছে পায়ে! চুম্বনে চুম্বনে অস্থির করে তুলেছে সে সুপ্রিয়াকে। উত্তেজনার তারনায় ঘন ঘন দুলছে তার বুক। তবুও দাঁতে হাত কামড়ে ধরে নিজেকে কোনমতে ধরে রেখেছে সে। তবে এবার ধীরে ধীরে সেই চুমু উঠে আসছে ওপরে, সুপ্রিয়া তা অনুভব করল, উষ্ণ অনুভুতিতে দুহাতে আকড়ে ধরলো বিছানার চাদর। অতি অল্পক্ষণেই তার শাড়ি কোমরে উঠে গিয়ে যোনিকেশের আড়াল ভেদকরে স্বামীর জীব স্পর্শ করলো তার লুকানো গুপ্তধন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় একটু কেঁপে উঠে সরে যেতে চাইলোও তা সম্ভব ছিল না। সমীরের বলিষ্ঠ হাত তার কোমর চেপে ধরেছে। উত্তেজিত সুপ্রিয়ার গোঙানি ও ছটফটানিও তাকে থামাতে অক্ষম। স্বামীর এই কান্ড খানি সুপ্রিয়ার ভারি অপছন্দের, কিন্তু অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই কর্তব্য বুঝে নিয়ে সমীর ক্রমাগত জীভ চালিয়ে যাচ্ছে সুপ্রিয়ার গুদে। কামার্ত রমণী এতে অভিমানী হলে খানিকক্ষণ চোষন খাওয়ার পর নিজে আরও মেলে ধরলো, তখন সমীর শক্ত হাতে সুপ্রিয়াকে টেনে নিল আরও কাছে। স্বামীর দুষ্টু জিভখানি ঢুকে গেল গুদের আরও গভীরে!সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ভাবে দুলে উঠল সুপ্রিয়ার অর্ধনগ্ন দেহখানি। এবার কামার্ত রমণী আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো
– আহ্… হ্যাঁ… ওখানেই… ঠিক ওখানে… ওগো… ভেঙে দাও আমায়… আহহহহ্..... আ...আরো জোরে... উহুহহহ্....
এরপর অল্পক্ষণেই সুপ্রিয়া সর্বাঙ্গ টানটান করে আজ রাত্রিতে তার প্রথম কাম মোচন করে অভিমানে মুখ গুজলো বালিশে। সমীর তখনো আলতোভাবে জিভ বুলিয়ে চলেছে সুপ্রিয়ার গুদে। রাগ মোচন করলেও এখনো তৃপ্তির আবেশে মৃদুমন্দ কাঁপছে সুপ্রিয়া পা দুখানি। সমীর আদরের সহিত স্ত্রীরগুদের পাপড়িতে আঙ্গুল বুলিয়ে বললে,
– ইসস্... খুব রাগ হয়েছে বুঝি? দেখি এদিকে তাকাও দেখি লক্ষ্মীটি....
অভিমানী রমণীটি কিন্তু স্বামীর ডাকে সাড়া না দিয়ে খুব বেশি ক্ষণ থাকতে পারলো না। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে নিতে সে বালিশ থেখে মুখ ফেরালো স্বামীর পানে,আর ঠিক তখনি "উম্ম্মাচ্" শব্দের সাথে সমীর অলতো করে চুমু খেলো সুপ্রিয়ার গুদে, এবং সেই সাথে আগের মতোই আদর মিশিয়ে বললে,
– এই ত লক্ষ্মী মেয়ে “ প্চ"
এবারের চুমুতে কেঁপে উঠলো সুপ্রিয়া। সমীর উঠে গেল বিছানায়।স্বামীর উষ্ণ আদরে অভিমানী রমণীর মান ভাঙতে বেশি সময় লাগলো না। তবে সে এবার ব্লাউজটা গা থেকে আলাদা করে স্বামীকে নগ্ন করতে হাত লাগালো। কারণ খেলা তো সবে শুরু হয়েছে মাত্র।
আরো লেখার ইচ্ছে ছিল অবশ্য,তবে এখন তা অসম্ভব, ত ঈদের পর দেখা হচ্ছে, ততদিনে গল্প চলবে কি না? জানালে খুশি হবো।
প্রিয়,তুমি থাকতে পারো ওই মেঘের ছায়ায়,
তুমি থাকতে পারো এই বাতাসের গায়।
চোখে পড়ে না তবু, হৃদয়ে বাজে—
প্রিয়,তুমি কি শুধুই আমার ধ্যানের মাঝে?
এমন নয় যে কুন্দনন্দিনী গান গাইতে পারে না, তবে সুপ্রিয়ার গানের ভান্ডার সমৃদ্ধ এবং গলাটিও মিষ্টি। কিন্তু কুন্দনন্দিনী এখনো পর্যন্ত এই বাড়িতে গ্রামোফোন দেখেনি। তবে দোতলায় সুপ্রিয়ার ঘরে থাকার দরুন সে জানে গ্রামোফোন এবাড়িতে ছিল কোন এক সময়। যদিও সে জানতে চায়নি সেটার কি হলো— তবে সুপ্রিয়ার ঘরে সে নয়'টা ডাবলডিক্স গ্রামোফোন রেকর্ড দেখেছে। তার স্বামী দেব গান করেও না,শোনেও না। সুতরাং, নিঃসন্দেহে বলা যায় এটি সুপ্রিয়া দেবীর শখ বিশেষ।
সে যাই হোক, কুন্দনন্দিনী ছাদে উঠে দেখলে— সুপ্রিয়া তার মেয়েকে কোলে নিয়ে দু'চোখ বুঝে গান গাইছে। মা মেয়ের এইরূপ একান্ত আলাদা করা সময়ে কুন্দনন্দিনীর আর কিছু বলার,বা তাদে মাঝে যাবার কোন ইচ্ছেই হলো না। তথাপি ভাবনার পর মুহূর্তেই সে চুপচাপ সুপ্রিয়ার পাশে এসে বসলো। সেখানে বসেই সে বুঝলো মাতার বুকের উষ্ণ আশ্রয়ে খুকি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ওদিকে গানটি আরো খানিকটা এগোলেও শেষ হয়নি এখনও। শুনতে অবশ্য মন্দ লাগছিল না তার,
স্মৃতির পাতায় ঝরে পড়া দিনে,
চোখের জলেতে বেজেছিল যে গান।
বুঝিনি আগে, জানি আজ সে,
প্রিয়,তোমারই নীরব আহ্বান।
চুপচাপ বসে নানান ভাবনার মাঝে সময় পেরিয়ে গেল প্রায় মিনিট খানিক। যদিও কুন্দনন্দিনী ভাবছিল সুপ্রিয়া কিছু বলবে। সাধারণত সেই অনর্গল কথা বলে মেয়েদের আসর জমিয়ে রাখে। তার কথা শুরু কি শেষ করার জন্যে বিশেষ কোন বিষয়বস্তুর প্রয়োজন পরেনা। তবে আজ দুপুরের পর থেকে সুপ্রিয়া যেন কেমন হয়ে যেতে লাগলো। এই কেমন হয়ে যাওয়ার কার্যক্রম চলছিল ধীর গতিতে। এখনও তার মুখে হাসি আছে বটে, তবে সেই হাসি কৃত্রিম। মনের ভাব লুকানোর একটি আড়াল মাত্র।
কুন্দনন্দিনী নিশ্চিত সুপ্রিয়া তার উপস্থিতি জানে। তবুও যখন সুপ্রিয়া কিছু বললো না— তখন সেও চুপ করে বসে রইল। নিচতলায় কাকিমার ঘরে কয়েকটি রমণী বসে পানসুপারি সহযোগে তাস খেলতে মত্ত, এই কান্ড নন্দিনী দেখে এসেছে। এমন সময় প্রায় দিন বাকিদের সাথে সুপ্রিয়ার আলোচনা সভা বসে। আজকেও বসার কথা ছিল যদিও। তবে নন্দিনী ভেবে পায় না সুপ্রিয়া নিচে গেল না কেন! অবশ্য কারণ খুঁজে না পেলেও ভাবতেই ভালো লাগছিল তার। যদিও এই ভালো লাগার কিন্তু কোন কারণ নেই। এমন ত নয় যে অকারণে ভালো লাগাটা অন্যায়! সাধারণত মন ভালো থাকলে চারপাশটা দেখতেও বেশ লাগে। যেমন এই মুহূর্তে...ওই মাথার ওপর দিয়ে কত নাম না জানা পাখিরা উড়ে যাচ্ছে দূর দিগন্তে; বাতাসের সাথে গাছেদের কথা হচ্ছে পাতা নড়ার শন শন শব্দে, পশ্চিম আকাশের দূর সীমান্তে কেমন যেন রাঙা। কিরণের বলা কথাগুলো মাথায় কেন যে ঘুরপাক খাচ্ছে সারাক্ষণ। বোধহয় সত্য বা মিথ্যার কোন আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না তারা,
– নন্দিনী! যেও না..... দাঁড়াও....!
নন্দিনী দাঁড়িয়ে ছিল,কেন দাঁড়িয়ে ছিল সে ভেবে পায় না এখন। তবে দাঁড়িয়ে ছিল অদূরে পর্দার আড়ালে।
– আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আমি আপনাকে এড়িয়ে চলি তাকি আপনি বোঝেন না?
কিরণ হেসেছিল বৈ কি, সে যে সুপ্রিয়ার হাতে গড়া! রসবোধ তারও কিছু কম নয়,
– গ্রামে আসার এই কদিনেই এমন পরিবর্তন! ভাবা যায় না বাবা....
কুন্দনন্দিনী রাগে বেরিয়ে এসেছিল আড়াল থেকে, সত্যিই ওভাবে ছুটে পালানোর স্বভাব তো তার ছিল না কখনো। তবে ভুল যেটা হয়েছে তা আর ঠিক করে কি উপায়ে? সে শুধু অগ্নি বর্ষিত দৃষ্টি একবার কিরণের পানে ফেলে পেছন ফিরেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বার আর পালানোর সুযোগ হয়নি। কিরণ পাশ কাটিয়ে চলে এসেছিল সামনে,
– পথ ছাড়ুন, আপনার সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই।
– এত রাগ কিসের শুনি? বিনা অপরাধে শাস্তি দিয়েছিলে, তাও এক রাশ লোকের সামনে, আজ তার কৈফিয়ত না দিলে আমি ছাড়বো কেন? জানো ত আমি আইনের ছাত্র....
আলোচনা হয়েছিল অল্পই। কিন্তু কথাগুলো মাথায় গেঁথে গেছে যেন, কোন ভাবেই ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না। নন্দিনীর ভাবনার মাঝেই সুপ্রিয়া উঠে দাঁড়িয়েছে। আজ বড়ই স্নিগ্ধ সে— যেন শান্ত দিঘীর জলে সদ্য ফোটা পদ্ম। দুপুরের খাওয়া আগে সুপ্রিয়া ঘাটে গিয়েছিল স্নান করতে। যখন ফিরেছে,পরনে তার হালকা নীল পাড়ের শাড়ি— যার কিনারায় এখন বাতাস হালকা দোল দিয়ে চলেছে। প্রতিদিনের মতো আজ আর তার শুভ্র দেহ সোনায় মোড়ানো নয়। হাটু ছাড়ানো খোলা কেশরাশি ও অতি সাদামাটা সাজে— সে আজ যেন এক দেবী প্রতিমা। তবে দেবীর কোলে ঘুমন্ত খুকি! খুব সম্ভবত এমন জীবন্ত প্রতীমা পৃথিবীর কোন মূর্তিকর গড়ে না।
– দিদি… দুপুরে একটা কথা বলেছিলাম, তুমি উত্তর দাও নি কেন?
– সবাইকার অতীত থাকে, অতীত নিয়ে এতো ঘাটাঘাটি ভালো নয়, বউ।
আঘাত ও প্রতিঘাত হলো হঠাৎ। নন্দিনী কথাগুলো বলছিল আনমনা হয়ে। প্রবল কৌতুহল থাকলেও দুপুরের পর ও কথা আর মুখে আনার সাহস হয়নি কুন্দনন্দিনীর। কিন্তু আনমনে হঠাৎ এই কথা বলে ফেলে এবার সে মুখ তুলে চাইলো। তবে সুপ্রিয়া সেখানে ছিল না,সে এগিয়ে গেছে সিঁড়ি দিকে। ইচ্ছে থাকলেও তৎক্ষণাৎ সে সুপ্রিয়ার পেছনে যেতে পারলো না। একটা সাধারণ কথায় সুপ্রিয়ার এমন চাপা ব্যবহারে তার ভিতরে তখন অন্য কিছু গজিয়ে উঠছে—একধরনের সন্দেহ। ঠিক শঙ্কা নয় বরং অদ্ভুত এক অনুভূতি… যেন কুয়াশার মধ্যে কিছু একটা আছে,যা হাত বাড়ালেও ধরা যায় না।
এরপর রাতটা যেন একটু বেশিই চুপচাপ। তবে চুপ থাকা মানেই কিন্তু শান্তি নয়— এই কথা আজ কুন্দনন্দিনী প্রথমবার সত্যি করে টের পাচ্ছে। সিঁড়ির পাশে দাঁড়িয়ে সে শুনছে, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসা সুপ্রিয়ার ধমকের আওয়াজ—
– জিনিস পত্র ঠিকমত রাখিস না! রান্না করতে বললে পেঁয়াজ পোড়াচ্ছিস? তোদের দিয়ে দেখছি কিছুই হবে না ,এই অসময়ে জল গরম করতে.......
নন্দিনী ছিল দোতলায়। কমলার ডাকে সে নিচে আসছিল। তবে নিচ তলায় আসতেই কমলার ব্যস্ত চিত্ত দেখে সে বারান্দায় একটি থামের পাশে দাঁড়িয়ে গেল। কি হয়েছে তা বোঝা গেল খানিক পরে।
সাধারণত রান্না ঘরে সব জিনিসপত্র রাখার একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা আছে। এর বিপরীত ঘটলে সুপ্রিয়ার জন্যে একা হাতে কিছু খুজে পাওয়া বেজায় কঠিন। যদিও সুপ্রিয়া এখন রান্না করছিল না। তবে ঝি করছিল। কেন করছিল আপাতত তা জানা গেল না,তার কারণ সুপ্রিয়াকে নিয়ে সবাই ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তার পায়ে গরম জল এসে পরেছে! পরেছে রান্নাঘরে ঢোকা খানিক পরেই। দোষটা নিঃসন্দেহে নিয়তির। তবে বোধকরি সেই নিয়তির দয়াতেই সুপ্রিয়ার বেশি কিছুই হয়নি। যা হয়েছে,তা নিয়ে বাকিরা ব্যস্ত হলেও সুপ্রিয়া কিন্তু ঝি'কেই ভর্ৎসনা করে যাচ্ছে ক্রমাগত। পায়ের আঙ্গুলে গরম জল পরেছে বলে নয়, সে যেন তার অন্য কোনো রাগ ঝারছে মেয়েটার ওপরে। অবশ্য যার ওপরে ঝারছে সে নিজেই হাসি চেপে সুপ্রিয়ার পায়ে ঠান্ডা জল ঢালছে। খুব সম্ভবত পোড়ামুখি, লক্ষ্মীছাড়া, কিংবা শুটকো মাগি জাতীয় ভর্ৎসনা তার কাছে বড্ড মধুর লাগছিল।
যাহোক নন্দিনী কিন্ত গত মাস খানেক এমন খিটখিটে স্বর কখনও শোনেনি সুপ্রিয়ার মুখে। যে দিদি সবার মুখে হাসি ফোটাতো, যার ঠোঁটে ঠোঁটে থাকে বটগাছের ছায়া-মাখানো শান্তি, সেই দিদি আজ একা একা চুপচাপ হয়ে গেছে। প্রথমটায় মেয়েরা তেমন আমল না দিলেও– রাতের খাবার সময় শরীর খারাপ বলে যখন সুপ্রিয়া যখন খেতে বসলো না মেয়েদের সাথে।! বাড়ির মেয়েরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি শুরু করেছে তখন। দু একজন উঠে ডাকতেও গিয়েছিল পাল্লা ক্রমে,তবে বিশেষ লাভের কিছুই হয়নি এতে।
ডাক্তার স্বামী অবশ্য এতো কিছুর খবর পায়নি এখনো,কারণ সে এখনও ডাক্তারী বিদ্যে ঝাড়তে নদীর ওপারে। তবে রাত আটটায় বাড়ি এলো কিরণ। স্বভাবতই বাড়ি ঢুকেই বৌরাণী বলে সে চিৎকার জুড়লে। তার ডাকে সুপ্রিয়া নিচে এসে খোকাকে কোলে করে বসলো খানিকক্ষণ। নন্দিনী যদিও তখন নিচতলাতেই ছিল,তবে সে আলোচনায় অংশ নেয় নি। তার কারণ, নন্দিনী তখন শ্বশুরের ঘরে বসে খুকিকে পড়াচ্ছে। গত কদিনে এটা তার শখের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিয়া মেয়েটিও তার মায়ের মতোই ফুটফুটে সুন্দর ও বুদ্ধিমতী।
রাত প্রায় সারে নটার সময় সমীর এলো বাড়িতে। বলাবাহুল্য পাড়াগাঁয়ে এই সময় রাত্রি গভীর। তবে নন্দিনী তখনো নিচতলায় সমীরের ঘরে। আজ কোন এক কারণে সে সুপ্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়াতে পারছে না। তবে সুপ্রিয়াও নিচে নামলো না বলে কমলাকে সরিয়ে নন্দিনী নিজেই স্বামীর জন্যে ভাতের থালা হাতে নিল। অবশ্য রান্না ঘর থেকে বেরুবার আগেই সে পরলো সুপ্রিয়ার মুখো মুখি।
আজ আকাশের মেঘেরা বোধহয় ছুটি নিয়েছে। অবশ্য মেঘেদের অনুপস্থিতিতে চাঁদের জ্যোৎস্না পাহাড়া দেবার ভার নিয়েছে। গৃহের উঠোনে সেই আলো পড়ে অনিমিখ ধ্যানের মতো থেমে আছে।কারণ বশত সমীরবাবু আজ রাত্রিবেলায় একটু দেরি করেই আহার শুরু করলেন। যদিও তার আহার কার্যের বিশেষ সময় অসময় নেই।মেজাজ তার বেশ খোশ, মুখে হালকা হাসি, চোখে এক ধরনের পরিতৃপ্ত ক্লান্তি। তাঁকে ঘিরে দুই পক্ষের নীরব সমর। এই দৃশ্য চোখে না পড়ে যায় না—দুই পক্ষ মানে দুই বধূ।
একদিকে ছোটবউ নন্দিনী—সে যেন এক কিশলয়রেণু, সদ্য গজানো বাসন্তী আমপাতার মতো নরম, মায়াবী। তবে মুখে হাসি না থাকলেও, হাতে তার তালপাতার পাখা! প্রতি দণ্ডে স্বামীর দিকে চেয়ে, আরামসে হাওয়া দিচ্ছে সে।
অন্যদিকে বড়বউ সুপ্রিয়া—শান্ত স্বভাব, চোখে গভীরতা, ঠোঁটে অস্ফুট অনুযোগ। আজ তার মুখে কোনো হাসি নেই। হয়তো আজকের মেনুতে সে হাত রাখেনি, কিংবা কোনো অপ্রকাশিত কারণে বুকের মধ্যে একটা চাপা অভিমান জমে আছে। এক নজর দেখেই সমীরের আর বুঝতে অসুবিধা হলো না। তাই তো সমীরবাবু খেতে খেতে একবার বললে,
— আহা, এই মুগডালের খিচুড়িটা কে করলো? যেন ছোটবেলাকার ঠাকুমার রান্না!
নন্দিনী চুপচাপ, ওদিকে সুপ্রিয়ার মুখে একটু কিসের যেন ছায়া খেলে গেল। সে কিছু বললে না, শুধু চোখ নামিয়ে হাতখানা কোলে রাখলে। সমীর এটুকু লক্ষ্য করলো এবং বললো,
— আমাদের সুপ্রিয়া দেবী আজ এমন চুপচাপ কেন? না কি আমার উপরেই রাগ করে বসে আছেন?
সুপ্রিয়া এবার মুখ তুললে, ঠোঁটের কোণে একটুকরো অনিচ্ছুক হাসি,
— মরণ...রাগ কেন করবো? তাছাড়া আমি রাগ করলেও তোমার সঙ্গ দিতে লোকের অভাব হবে না! কিন্তু একবার ও কথা বললে আমি উঠে চলে যাবো...
স্বামীর সাহসে ভর দিয়ে বুঝি বা কুন্দনন্দিনীরও কিছু বলবার ছিল। তবে সেই সাহসিকতার বাতাসে একটুকরো শূন্যতা নেমে এল, যেন বাঁশবাগানে হঠাৎ হাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। তবে ডাক্তার বাবু হেসে উঠলো এবার, সেই হাসির ভিতরে একটা সচেতনতা ছিল— আপনি সম্বোধন করাটা ঠিক হয়নি তার, ওটা সুপ্রিয়ার অপছন্দ। যাহোক, দু'জনের মন বোঝা তো হয়েছে,
— তাহলে আজ আমার কাজ হবে তোমাদের দুজনকে একসাথে খুশি রাখা... কী বলো? রাজা যদি প্রজার হৃদয় না বোঝে, তবে সে রাজার কী দরকার?
কুন্দনন্দিনী একবার সুপ্রিয়া পানে চাইলো। মুখে হাসির রেখা লেগেছে বটে– সব ভুলে আজ নন্দিনী প্রথম বার স্বামীর কথার তালে তাল মেলালো,
— তবে রাজামশাই, শুনেছিলাম দিদির নাকি গান বেশ পছন্দ,তা শোনার ব্যবস্থাই হোক না হয়!
সমীর একটু অবাক যে হয়নি তা নয়, কিন্তু সে সব আপাতত সরিয়ে রেখে গলা খাঁকরিয়ে বললে—
“প্রেমে যাদের হৃদয় জ্বলে,
দুজনের মাঝে ছায়া চলে—
তাদের কথা বলব আমি, চাঁদের মতন ধীরে ধীরে...”
না, সমীরকে দিয়ে গান হবার নয়। তবে এমন ছন্নছাড়া উল্টো পাল্টা গান শুনে সুপ্রিয়া মস্তক নত করে খানিক হাসলো। ওদিকে স্বামীর বেসুরো কন্ঠ শুনে থেমে গেল নন্দিনীর পাখা চালানো। সুপ্রিয়া এগিয়ে এসে তার গলা জড়িয়ে কানে কানে বললে,
— প্রেম খেলা শুরু হবে এখনি, খেলতে না চাইলে পালা এ বেলা!
সুপ্রিয়ার কথা শুনে নন্দিনী চাইলো চোখ বড় করে। সুপ্রিয়া স্পষ্টভাষী, এ নিয়ে অভিযোগ করে বিশেষ লাভ নেই। তবে সুপ্রিয়া যেতে বললেও সমীর কিন্তু চেপে ধরলো নন্দিনীর আঁচলখানি, মুচকি হেসে বললে,
– একি ছোট বউ, এত জলদি মঞ্চ ছেড়ে নেমে গেলে চলে?
– উফ্! এ কেমন পাগলামো.....ওর কাজ আছে....
– যতোই কাজ থাক না কেন, রমণীগনের জন্যে স্বামী প্রধান প্রায়োরিটি, একথা ভুলে গেলে বুঝি?
সুপ্রিয়া যতোই উসখুস করুক, সমীর কিন্তু নন্দিনীর আঁচল ছাড়ালো না। এবং এই বিষয়ে আজ নন্দিনীর আয়ত নয়নের কড়া দৃষ্টিকেও হার মানতে হলো। কেন না স্ত্রীর আঁচল টেনে ধরার অধিকার সমীর আজ আদায় না করে ছাড়লো না কিছুতেই। অবশ্য নন্দিনীর বসার ইচ্ছে যে একদমই ছিল না— তেমনটাও নয় কিন্তু। সুতরাং গল্প এগুলো ধীর পদক্ষেপে। কারণ আজ সুপ্রিয়ার গল্পে মনোযোগ ছিল না, এবং গল্পের মাঝে এসে সুপ্রিয়ার ধৈর্য্য ভাঙলো। সে ধীরে ধীরে স্বামীর কাছে আরোও ঘন হয়ে,একসময় মাথা এলিয়ে দিল স্বামীর কাঁধে। লম্বা কেশরাশি তার অনেক আগেই খোঁপার বাঁধন খুলে ছড়িয়ে আছে পিঠে। গা থেকে আলগা শাড়ির আঁচল যেন বলছে—আজ সে আর গৃহিণী নয়, আজ সে কেবল একজন ক্লান্ত ও কামার্ত নারী। এতে অতি শিগগিরই লজ্জায় পড়লো কুন্দনন্দিনী এবং শেষটায় নন্দিনীকে লজ্জা থেকে উদ্ধার করলে খোকা। সে এসে বলতেই তাকে কোলে করে নন্দিনী গেল উঠন পেরিয়ে ইন্দিরার দ্বারে।
////////
দরজা বন্ধ হতেই সুপ্রিয়া উপুড় হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। কান পেতে শুনলো সে স্বামীর লঘু পদধ্বনি । ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় দ্বারা সে আভাস পেল সমীর এসে বসেছে বিছানার এক ধারে। চোখে আলো না থাকলেও তনুর ওপরে প্রতিটি স্পর্শ যেন কয়েকগুণ বেশি সংবেদনশীল তার কাছে। ঘাড়ে চুমু খেয়ে সমীর যখন পেছন থেকে এসে চুপিচুপি কানে ফিসফিস করে বলল,
— তুমি জানো, রাগলে তোমায় কত সুন্দর দেখায়? একটু ঘন ঘন রাগলেও ত পার কখনো....“প্চ”
সমীর চুমু খেল আবারও। সুপ্রিয়া কিছুই বলল না। শুধু হালকা একটা হাসি ঠোঁটে খেলে গেল তার। পরক্ষণেই স্বামীর হাত দুটি আস্তে করে চলে এল তার শরীরের ওপর— স্পষ্টতই স্তনের চেপে বসলো বলিষ্ঠ হাত দুখানি। মৃদু স্বরে "উম্ম্মা..." করে একটু সুখের আওয়াজ বেরুল সুপ্রিয়া মুখ থেকে। এতখন স্বামী দ্বারা অবহেলিত রমণীর দেহের উত্তেজনা এখন প্রবল। তাই শায়িতা এই রমণীর প্রতিক্রিয়াতে সমীর ব্লাউজে ঢাকা স্তনে চাপ বাড়িয়ে দিয় কানে কানে বললো,
— এগুলো আমার... একদম আমার.....
হঠাৎ তার আঙুল গুলো আরোও শক্ত হয়ে স্তনজোড়া টিপে ধরল — প্রথমে একটু রুক্ষ, অতপর ধীরে ধীরে চাপ হয়ে এলো কোমল। অন্ধ মেয়েটি গা ঝাঁকিয়ে উঠল। কণ্ঠ দিয়ে এক অদ্ভুত শব্দ বেরিয়ে এল
— উঁ...... আহহহহ্.....।
তা শুনেই যেন উত্তেজনা বাড়লো হঠাৎ! আবারও ক্ষিপ্ত হস্তে সমীর চাপ দিতে লাগলো নরম মাংসপিণ্ডে। সুপ্রিয়া কিছু বলতে পারছিল না আর,শুধু দুই হাতে চাদর মুঠো করে দাঁতে কামড়ে ধরলো বালিশখানি। হঠাৎ হেঁচকা টানে সুপ্রিয়ার দেহ খানি উঠে এলো বিছানা থেকে। মুঠোর মাঝে বিছানার চাদর যেন আপনা আপনিই আড়াল করলো অসহায় নারীর লজ্জা। অবশ্য সে মুহূর্তে মাত্র। কেন না পরক্ষণেই সমীর ছিনিয়ে নিল তা। সুপ্রিয়া স্বামীর পানে চোখ রেখে দাঁতে কামড়ে ধরলো তার অধর
পরপর সরে গেল শাড়ি আঁচল ও ও সাদা ব্লাউজ খানি। সমীর এবার তার স্তনের বোঁটায় আঙুল ঘোরাতে লাগল, মাঝে মাঝে চুষে দিতে লাগল ঠোঁটে নিয়ে। রমণী যেন এবার নিজের সত্তা ফিরে পেল, মাথা পেছনে হেলিয়ে ঘন শ্বাস ফেলে বলল,
— তুমি জানো না, আমি না দেখতে পেলেও সব টের পাই... সব...
সমীরের তখন আলোচনা করার অবসর নেই,তার হাত তখন নামছে নিচে, কোমড়ের মাংসপেশীতে আঙুলের ছাপ যেন সে এঁকে দিতে চাইছে। সুপ্রিয়া আধা বসা, তার পাতলা শাড়ির আঁচল অনেক আগেই নেমে গেছে বুকের ওপর থেকে মেঝেতে। সমীর তার স্তনের এক পাশে চুমু খেয়ে এতখন পরে বললে
— আমার ভিতর পর্যন্ত।
— হুম..
উত্তর শুনে সুমীর ডান স্তনবৃন্ত মুখে পুরে চুষতে লাগলো। প্রথম কয়েকটা টানে সে বড় আশায় ছিল—না জানি কিসের! তবে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি না পেয়ে যেন খানিক ক্ষুণ্ন হয়েই চোষন ছেড়ে চাইলো সুপ্রিয়া মুখপানে। মুখের আওয়াজে কোন প্রশ্ন নয়, তবুও কাঁপা গলায় সুপ্রিয়া বলল,
– আমি দেখতে পাচ্ছি, তুমি এখন ঠিক কোথায় আছো....কি চাইছো.... কিন্তু..
উত্তর শোনার অপেক্ষায় সমীর থাকবে কেন,সে আবার স্তনের ওপর ঠোঁট চেপে ধরে চুষে দিতে লাগল। পর্দার আড়াল থেকে ঠেলে আসা ঠাণ্ডা বাতাসেও বোঁটা দুটো শক্ত হয়ে উঠছে, আর সুপ্রিয়ার কন্ঠ থেকে চাপা গোঙানির মতো— “আঁ… আহ্…অম্ম্ম্ম্ম্ম...” শব্দ বেরিয়ে মাতিয়ে তুলছে ঘরের পরিবেশ। বেশ খানিকক্ষণ স্তন জোড়া চেপে ও চুষে সমীর হতাশ হয়ে এবার উঠে এল স্ত্রীর কানের কাছে,
– এই সবটা তোমার দোষ....এর শাস্তি কি হয় বল?
বললে সে সুপ্রিয়ার চিবুক ধর। স্বামীর অভিযোগে লজ্জায় লাল হলো সুপ্রিয়ার গাল। সমীর মুখ নামিয়ে লালচে ঠোঁটে আলতো কামড় বসিয়ে চুষতে লাগলো। খানিক পরেই তা পরিবর্তী হলো গভীর চুম্বনে। খানিক পরেই সে চুমু ভেঙে নেমে গেল নিচে, পেটের উপর চুমু খেতে লাগল আবারও, নাভির চারপাশে ঘোরাতে লাগল জিভ। স্বামীর কান্ডে সুপ্রিয়া এবার হাসতে হাসতে বলল—
— এমন করছো যেন আমি কোন রাজকীয় ভোজ্য পদার্থ… অত কামড়ে চুষে কি পাও কি পাও বলতো?
সমীর থেমে গেল, ডান হাতের আঙুলগুলো স্ত্রীর মাথার চুলে ডুবিয়ে হঠাৎ শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললে
— তুমি ঠিক বলেছো, তবে এই ভোজ্য পদার্থ শুধু আমার জন্য বরাদ্দ।
বলে সে আবারও জিভ ছোয়ালো নাভিতে, স্বামীর আলতো চুম্বন আবেশে চোখ বুজে শুয়ে পরলো সুপ্রিয়া। সে জানে স্বামীর চাওয়া ছিল তার বুকের দুধ! তবে খোকা স্তন ছেড়েছে মাস দুই,এই অবস্থায় নিয়মিত চোষন না থাকলে দুধ ত শুকোবেই, এতে সুপ্রিয়ার কি অপরাধ সে খুঁজে পেল না।
ওদিকে সমীর এখন স্ত্রীর চুল ও নাভি ছেড়ে চুমু খাচ্ছে পায়ে! চুম্বনে চুম্বনে অস্থির করে তুলেছে সে সুপ্রিয়াকে। উত্তেজনার তারনায় ঘন ঘন দুলছে তার বুক। তবুও দাঁতে হাত কামড়ে ধরে নিজেকে কোনমতে ধরে রেখেছে সে। তবে এবার ধীরে ধীরে সেই চুমু উঠে আসছে ওপরে, সুপ্রিয়া তা অনুভব করল, উষ্ণ অনুভুতিতে দুহাতে আকড়ে ধরলো বিছানার চাদর। অতি অল্পক্ষণেই তার শাড়ি কোমরে উঠে গিয়ে যোনিকেশের আড়াল ভেদকরে স্বামীর জীব স্পর্শ করলো তার লুকানো গুপ্তধন। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় একটু কেঁপে উঠে সরে যেতে চাইলোও তা সম্ভব ছিল না। সমীরের বলিষ্ঠ হাত তার কোমর চেপে ধরেছে। উত্তেজিত সুপ্রিয়ার গোঙানি ও ছটফটানিও তাকে থামাতে অক্ষম। স্বামীর এই কান্ড খানি সুপ্রিয়ার ভারি অপছন্দের, কিন্তু অতি অল্পক্ষণের মধ্যেই কর্তব্য বুঝে নিয়ে সমীর ক্রমাগত জীভ চালিয়ে যাচ্ছে সুপ্রিয়ার গুদে। কামার্ত রমণী এতে অভিমানী হলে খানিকক্ষণ চোষন খাওয়ার পর নিজে আরও মেলে ধরলো, তখন সমীর শক্ত হাতে সুপ্রিয়াকে টেনে নিল আরও কাছে। স্বামীর দুষ্টু জিভখানি ঢুকে গেল গুদের আরও গভীরে!সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ভাবে দুলে উঠল সুপ্রিয়ার অর্ধনগ্ন দেহখানি। এবার কামার্ত রমণী আর থাকতে না পেরে চিৎকার করে উঠলো
– আহ্… হ্যাঁ… ওখানেই… ঠিক ওখানে… ওগো… ভেঙে দাও আমায়… আহহহহ্..... আ...আরো জোরে... উহুহহহ্....
এরপর অল্পক্ষণেই সুপ্রিয়া সর্বাঙ্গ টানটান করে আজ রাত্রিতে তার প্রথম কাম মোচন করে অভিমানে মুখ গুজলো বালিশে। সমীর তখনো আলতোভাবে জিভ বুলিয়ে চলেছে সুপ্রিয়ার গুদে। রাগ মোচন করলেও এখনো তৃপ্তির আবেশে মৃদুমন্দ কাঁপছে সুপ্রিয়া পা দুখানি। সমীর আদরের সহিত স্ত্রীরগুদের পাপড়িতে আঙ্গুল বুলিয়ে বললে,
– ইসস্... খুব রাগ হয়েছে বুঝি? দেখি এদিকে তাকাও দেখি লক্ষ্মীটি....
অভিমানী রমণীটি কিন্তু স্বামীর ডাকে সাড়া না দিয়ে খুব বেশি ক্ষণ থাকতে পারলো না। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে নিতে সে বালিশ থেখে মুখ ফেরালো স্বামীর পানে,আর ঠিক তখনি "উম্ম্মাচ্" শব্দের সাথে সমীর অলতো করে চুমু খেলো সুপ্রিয়ার গুদে, এবং সেই সাথে আগের মতোই আদর মিশিয়ে বললে,
– এই ত লক্ষ্মী মেয়ে “ প্চ"
এবারের চুমুতে কেঁপে উঠলো সুপ্রিয়া। সমীর উঠে গেল বিছানায়।স্বামীর উষ্ণ আদরে অভিমানী রমণীর মান ভাঙতে বেশি সময় লাগলো না। তবে সে এবার ব্লাউজটা গা থেকে আলাদা করে স্বামীকে নগ্ন করতে হাত লাগালো। কারণ খেলা তো সবে শুরু হয়েছে মাত্র।
আরো লেখার ইচ্ছে ছিল অবশ্য,তবে এখন তা অসম্ভব, ত ঈদের পর দেখা হচ্ছে, ততদিনে গল্প চলবে কি না? জানালে খুশি হবো।