06-06-2025, 12:22 AM
(This post was last modified: 06-06-2025, 01:07 AM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ৬
– গেল কোথায়? কোথায়....এখানেই তো রেখেছিলাম.....
রাত্রি কালে সমীর তার ডাক্তারী ঘরে আপন মনে বির বির করতে করতে কি যেন খুঁজছিল। তাকে বই ও কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখে বোধকরি তা চিঠি জাতীয় কিছু একটা হবে। যদিও চিঠি সে পেল না,তবে চিঠি খুঁজতে খুঁজতে তার চোখ পড়লো,শোবার ঘরে ঢোকার মুখে দেয়ালের একপাশে একটি কৌটো রাখা। তখনি তার মনে পড়লো — এই কৌটো দিয়েই সে চিঠিটা চাঁপা দিয়ে রেখেছিল টেবিলের ওপর।
চিঠিটা এসেছে পাঁচ -ছদিন আগে। কিন্তু নানান ব্যস্ততায় চিঠির কথা সে একদম ভুলেই গিয়েছিল। তাছাড়া সুপ্রিয়া এখন নিচতলায় খুব একটা আসতে পারে না। কেন পারে না,তা ভাবলে সমীরের হয় রাগ। তবে সে যাই হোক,আজ একটু সময় পেয়ে শান্ত অবসরে সুপ্রিয়াকে চিঠি পড়ে শোনানোই যায়। তবে চিঠি পাওয়া গেল ত পড়ে শোনাবে। তাছাড়া কৌটোটাই বা ওখানে গেল কেন? সূপ্রিয়া কি ঘর গুছিয়ে আজ?
সমীর সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে এলো কৌটোটার কাছে। কৌতুহল বশত নিচু হয়ে কৌটো হাতে তুলতেই পাশের ঘরের পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকলো খোকা। আচমকা সমীরের হাতে ধাক্কা লাগলেও খোকা সামলে নিয়ে বাবার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু সমীরের হাত থেকে কৌটাটা মেঝেতে পরে কতগুলো শিশি ভাঙা কাচের টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে গেল। এর পরপরই কিছু ঘটনা ঘটলো অতি দ্রুত বেগে। খোকাকে সামলাতে সমীর নিচু হয়ে মেঝেতে বসে পরেছিল,তবে খোকা তো আগেই সামলে নিয়ে এখন তার পেছনে। এদিকে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে খোকার পিছু পিছু ঢুকলো কুন্দনন্দিনী। হাতে তার দুধের গ্লাস। সে এক রকম ছুটে এসে পা রাখছিল মেঝেতে পরে থাকা কাচের টুকরোর ওপরে। কিন্তু সমীর থাকতে তা হয় কি করে!
– আরে দেখে......!
না! কথা বাতাসে ভর করে কানের দুয়ারে পৌঁছনোর আগেই কুন্দনন্দিনীর পা পরলো ঘরে। তবে কাঁচে নয়,পা পরলো স্বামীর হাতে! সমীর কথার সাথে সাথে তার বাঁ হাতখানিও চালিয়েছে তৎক্ষণাৎ। তাই কাঁচে নন্দিনীর পা পরার আগেই পা ঠেকলো স্বামীর হাতের তালুতে। এতে অবশ্য কুন্দনন্দিনীর পা বাঁচলেও বেসামাল হয়ে তাল সামলাতে না পেড়ে গ্লাসের বেশি অর্ধেক দুধ পরলো সমীরের মাথায়! কুন্দনন্দিনীও হয়তো পরতো স্বামীর ওপরেই! তবে ততক্ষণে সমীর পতন ঠেকিয়েছে ডান হাতে বারিয়ে নন্দিনীর কোমর আঁকড়ে।
বলিষ্ঠ কঠিন হাত সমীরের। সেই হাত এখন নরম কোমড়ের মাংসপেশীতে চেপে বসতেই নন্দিনীর বুক অজানা শিহরণে কেঁপে উঠলো। এই প্রথম কোনো পুরুষের হাত তার কোমরে পরেছে, অনুভুতি টা কেমন যেন। সর্বাঙ্গে কাটা দিয়ে ওঠে। সে স্বামীর হাতের ওপরে পা রেখেই থ মেরে অবাক আয়ত নয়নে স্বামীর পানেই চেয়ে রইল খানিক। ঠিক কি হয়েছে তা সে বুঝে উঠতে পারেনি এখনো। এদিকে সমীর নন্দিনীর পা খানি নিরাপদ জায়গায় নামিয়ে রাখতেই পাশ থেকে খোকা বলে উঠলো,
– আমি দুধ খাবো না এখন....
কথাটা বলেই খোকা কুন্দনন্দিনীকে পাশ কাটিয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু সমীর বাঁ হাতে তাকে আটকে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললো,
– উঁহু্! এভাবে না দেখে কেউ ছোটে? এখুনি একটা রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধাতে।
সমীর খোকাকে সরিয়ে আনলো বটে, তবে শুধু যে দুধ খাওয়ার ভয়েই খোকা বেরিয়ে যেতে চাইছে তা নয়। এখন যে কান্ডখানি ঘটলো, তার প্রতিক্রিয়ায় ছোট-মা কী করবে, বোধহয় তার ভয় ছিল— একটু বেশি।
তবে নন্দিনীর মুখ এখনও বিস্ময়ে হতবাক। সমীর নন্দিনীর কোমড় ছেড়ে যখন উঠে দাড়ালো, তখন তার চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট ভাবে পরলো স্বামীর পানে । দেখা গেল সাদা সাদা দুধ গড়িয়ে পড়ছে সমীরের মুখ বেয়ে। দুধে তার চুল,পিঠ, এমনকি ধুতির খানিকটাও ভিজে গেছে। দৃশ্যটি হাস্যকর বটে। তবে নন্দিনীর কিন্তু হাসি পেল না। কারণ সমীরের বাঁ হাতে— মানে যে হাতটি সে নন্দিনীর পায়ের তলায় পেতে দিয়েছিল, সেই হাতের ওপরে দিকটায় একটি কাচের টুকরো গেঁথে গেছে।
– আপনার হাতে....ওকি! এ যে গেঁথে গেছে....
বলতে বলতে নন্দিনী হাতের গ্লাস ফেলে স্বামীর বাঁ হাতখানি টেনে নিল। কুন্দনন্দিনীর নরম হাতের আশ্রয় থেকে মেঝেতে আছাড় খেলেও গ্লাসটি ভাঙলো না মোটেও,তবে হঠাৎ নন্দিনী এমন উৎকন্ঠা সমীরকে অবাক করে দিল।
কুন্দনন্দিনীর সাথে তার বিয়ে হয়েছে প্রায় মাস পেরুলো। এর মধ্যে একদিনও নন্দিনী তার সাথে কথা বলেনি ঠিক করে, ভালো ব্যবহার ত দূরের কথা। এতে সমীরের যে রাগ হয়নি তা নয়। তবে রাগটা ঝেরে ফেলে সে পুরো চেষ্টা চালিয়েছে কথা বলার। কিন্তু শেষ মেষ উপায় না দেখে ভেবেছে কুন্দনন্দিনীকে মানিয়ে নিতে খানিক সময় দেবে। তাই সে দোতলায় নিজের ঘর ছেড়ে নিচতলায় থাকছে আপাতত পাকাপাকি ভাবে।
– ও কিছু নয়, আমি দেখছি! তুমি পারলে একটু সুপ্রিয়া কে ডেকে দেবে?
বলেই সমীর হাতটি টেনে নিল। অবশ্য ততক্ষণে নন্দিনী স্বামীর হাত থেকে কাচের টুকরোটা সাবধানে তুলে নিয়েছে। এখন সমীর টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই সে আর কোন কথা খুঁজে না পেয়ে বেরিয়ে গেল । গেল সে দোতলায়। সমীর যে সুপ্রিয়াকে কেন ডাকছে তা নন্দিনী বুঝে নিয়ে ছিল সহজেই । তাই সে সুপ্রিয়াকে না ডেকে ঘরে ঢুকে সুপ্রিয়ার আলমারি খুলে একখানা নতুন ধুতি আর গামছা নামিয়ে গেল নিচ তলায় সমীরের ঘরে। সমীর তখন হাতে ব্যান্ডেজ পাকাচ্ছে চেয়ারে বসে। খুব একটা গভীর ক্ষত নয় যদিও,তবে ভোঁতা ধাঁচের ক্ষত। তাই ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধাই ভালো। শুনে নন্দিনী আগে নিচু হয়ে বসে মেঝে থেকে কাচের টুকরো গুলো তুলে আবারও টিনের কৌটায় ভরতে লাগলো । অবশ্য আড়চোখে স্বামীর পানে দৃষ্টিও সে রেখেছিল, তাই ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলেই সে বললে,
– আপনি স্নান ঘরে যান আমি আসছি!
– স্নান ঘর! বলছিল একটু জল দিয়ে ধুয়ে ফেল......
– উঁহু্, তা হচ্ছে না! স্নান ঘরে জল আছে, সেখানে গিয়ে ভালোমত মুছে নেবেন না হয়।
– কি দরকার ওসবের?
– দরকার আছে, দুধে যা মাখামাখি অবস্থা; দিদির চোখে পরলেই হলো.....
সমীর আর কথা বাড়ালো না, হাজার হোক সুপ্রিয়ার মতো এনিও গিন্নী। তা হোক বা ছোট গিন্নী — তাই বলে কথা অগ্রাহ্য করা চলে না। সে সুবোধ বালকের মতো নন্দিনীর কথায় পর্দা ঠেলে বেরিয়ে গেল। এদিকে নন্দিনীরও প্রায় হয়ে এসেছিল। তবে স্বামী বেড়িয়ে যাবার পর নন্দিনী খানিকক্ষণ আনমনা হয়ে কৌটাতে রাখা স্বামীর রক্ত মাখা কাচের টুকরোটার দিকে চেয়ে রইলো। "খুব বেশি গেঁথে নি" এতে বিশ্বাস হলো না তার। কাঁচের টুকরোটা এখনো টকটকে লাল রক্তে মাখামাখি। গতকাল এটা সরিয়ে রাখলে আজ এমনটা হতো না। এই কথাও ভাবলো সে। তবে কাল অমনি হঠাৎ কিরণ এসে দাঁড়ালো...না থাক, সে কথা ভাবলেই নন্দিনীর লজ্জা ও রাগ একত্রে হচ্ছে।
নতুন সংসারে পা দেওয়ার পর থেকেই নন্দিনীর মনের ভিতরে একধরনের অজানা অস্বস্তি কাজ করছে। সংসারের টুকিটাকি কাজকর্ম, অতিথি আপ্যায়ন, রীতি-নীতি মেনে চলার মাঝে যে আশঙ্কা দূর করতে সে সুপ্রিয়াকে ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছিল। আজ হঠাৎ সেই আশঙ্কার সত্য'তা নিয়ে তার মনে সংশয় দেখা দিল। ঘটনাটি ছোটই। হয়তো সুপ্রিয়া দেবী তার জাগয়ায় থাকলেও সমীর এইভাবেই হাত পেতে আঘাতটা নিজেই সইত। কিন্তু সুপ্রিয়া আর সে কি এক?
কাঁধে ধুতি-গামছা ও হাতে আলো নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নন্দিনী তাই ভাবছিল। স্নান ঘর উঠনে নেমে পুকুরঘাটে যাওয়া পথের সাথে লাগোয়া। অন্যমনস্ক হয়ে নন্দিনী স্নান ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল । স্নানঘর এই বাড়ির কেউই স্নান করতে তেমন একটা ব্যবহার করে না। তাই দরজার বাহুল্য স্নানঘর নেই বললেই চলে। তাছাড়া কুন্দনন্দিনীর স্বামী দেব যে সরাসরি স্নান করে বসবে! তা বেচারি নন্দিনী কি করে জানবে?
আলো হাতে ভিতরে ঢুকেই নন্দিনীর পা থমকে গেল। ঘরটার মাঝখানে তার স্বামী প্রায় নগ্ন। নন্দিনীর অন্যমনস্কের সুযোগে সমীর স্নান সেরে একটি গামছা– ওটা এই স্নান ঘরেই থাকে। সেটা কোমড়ে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া শরীরের বাকি অংশ অনাবৃত। এই নতুন দৃশ্য যেন নন্দিনীকে পাথর করে দিয়েছে। সে অবাক হয়ে চেয়ে আছে স্বামীর পানে। তবে মুখপানে নয়, তার চোখ আটকে গেছে নিচের দিকে এক জায়গায়—ডান হাটুর খানিক উপরের দিকটা। যেখানে একটা পুরোনো, কিন্তু বেশ বড় কাটা দাগ হাড়িকেনের উজ্জ্বল আলোয় দৃশ্যমান। দাগটা পুরনো, কিন্তু এতটাই বড় যে সহজেই চোখে পড়ে। উরু ও হাঁটুর মাঝখানে একটা লম্বাটে রেখা, যেখানে ছুরি বা দা'য়ের ধার একসময় নেমে এসেছিল নির্দয় ভাবে। একসময় সেটা ছিল গভীর । এমন এক আঘাত যা কেবল দুর্ঘটনায় নয়—কোনো রকম সংঘর্ষে, হয়তো দা-র কোপে তৈরি হয়েছে। কিসের আঘাত তা নন্দিনী বুঝতে না পারলেও,তার মুখ শুকিয়ে আসে। এই কথা সে জানে— এই বাড়ির সবাই সমীরকে সমিহ করে চলে। তাই বলে এই কদিনে স্বামীর শান্ত মধুর ভাব দেখে সে কখনো ভাবেনি, সমীর কোন অন্ধকার অতীত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যা তার দেহের প্রতিটি কোষে লেখা আছে। কে কোপ মেরেছিল তাকে? কেন? কী ছিল সেই অন্ধকার অধ্যায় যার ছায়া আজও তার দেহে ?
ধুতির কোণা শক্ত করে ধরে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সে, চোখে মিশে যায় বিস্ময়। সাথে ভয় আর আকস্মিক এক কৌতূহল। অবশ্য সমীর কিন্তু নন্দিনীর দৃষ্টি খেয়াল করেনি। সে স্বাভাবিক রসিকতার ভঙ্গিতেই বললো,
– দেখার সাধ মিটলে একটি বার গামছা আর ধুতি টা দাও দেখি,আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো বলো?
হতচকিত হয়ে নন্দিনীর সম্বিত ফিরল। তবে স্বামীকে ধুতি গামছা দিয়েও কিন্তু সে সরে যেতে পারলো না, আলো হাতে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।
///////
সকালে এক পলসা বৃষ্টির পর গরমের দুপুর। উঠনের মাঝখানে খানিক জল জমেছে। আর সেখানেই হঠাৎ একটা পাখি—সাধারণ চেনা পাখি নয়, একটু বুনো প্রকৃতির—ফরফর করে উড়ে এসে বসলো উঠোনের ঠিক মাঝখানে। পাখিটার গায়ের রঙ গাঢ় সবুজ, ডানার নিচে হালকা নীলের ছোঁয়া, চোখে কৌতূহলী চাহনি। যেন কাউকে খুঁজছে সে মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ।তারপর হঠাৎ নিজের ঠোঁট দিয়ে উঠন থেকে জল খেল। একটু থেমে আবার ডানা ঝাঁপটা দিল দুবার। যেন চেনা জায়গা নয়, তবু কোথাও থেকে একটা টান টান অনুভব তাকে এখানে এনে ফেলেছে। বলাবাহুল্য সেই টান তৃষ্ণা মেটানো। বাড়ির পেছনের বাঁশ ঝাড়ের পাতাগুলো মৃদুমন্দ দুলছে, বাতাস নেই তেমন, তবুও পাখিটার পালক হালকা কেঁপে উঠলো। সে একটা পা তুলে নিজের ডানায় মুখ ঘষে, তারপর আবার নিচে বসে—গভীর মনোযোগে রোয়াকে বসা রমণী কটার কথায় আড়িপাতে!
ভেতর উঠনের মূল দালানে, ঠিক সিঁড়ির কাছটায় দাঁড়িয়ে থাকা পেয়ারা গাছটার ছায়া পরেছে রোয়াকের সিমেন্ট করা মেঝেতে। রান্নাঘরের ভেতর থেকে চুলার ধোঁয়া উঁকি দিয়ে আসছে। বাইরের থেকে কানে ভেসে আসছে কুকুরের ডাক, সেই সাথে আর দূর থেকে কারও গলায় বাউল গান যেন শোনা যায় যেন।
সমীর নেই। সে বেরিয়েছে রোগি দেখতে। মুখার্জি বাবুও বেরিয়েছেন কোথায় যেন। আসবেন দূপুরের খাওয়ার সময়। তা এখনো ঘন্টা খানেক পর। নন্দিনী, কমলা, সুপ্রিয়া ও গ্রামের দুটি মেয়ে কি যেন কথা বলছিল। এই সময়েই হাজির হয়েছে কাদম্বিনী—পাড়ার বউবাজারী, গলার চেনা ডাকের জন্য তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না কারোরই। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সে বলে
– এই যে বৌদি,নতুন বউ দেখতে এলাম গো।
– শুধু বউ দেখলেই কি পেঠের জ্বালা জুড়াবে কদম?
– ধূর! কি যে বল না তুমি বউ। শুধু বউ দেখতে নয়,সাথে কাঁচের চুড়ি, আলতা, সিঁদুর, শাড়ি, এক্কেবারে শহরের ধাঁচে এনেছি আজ!
বলতে বলতে বিছানা পেতে বসে পড়ে সে রোয়াকে। চাদরের ভাঁজ খুলতেই বেরিয়ে আসে কাঁচের রঙিন চুড়ির রাশি। রোদে চিকচিক করে ওঠে। তার পাশে সাদা পিচবোর্ডে রাখা নানান রঙের আলতা—গোলাপি, গাঢ় লাল, বেগুনি।
– বলি ও কদমদি, সেই লালচে কমলাটা দেখাও তো। বলে দিস ত কেমন লাগছে, কমলা?
– বেশ মানাবে তোকে,খুবই সুন্দর রং।
মেয়ে দুটির মধ্যে গীতা নতুন আগত,সে তাই বলে উঠলো।
– তা বেশ লাগছে বটে,কিন্তু দিদি! আপনি কীভাবে বোঝেন....
গীতার কথা শেষ হল না। পাশ থেকে মালতী তাকে ঠেলে ইশারায় থামিয়ে দিল। সুপ্রিয়া হেসে উত্তর করলো,
– ও বুঝতে আবার চোখ লাগে নাকি রে! তুই দেখতে যেমন লক্ষ্মী তোকে সবেতেই মানাবে।
গীতা ভেবে পেল না সুপ্রিয়াদি তাকে দেখলো কি করে! তবে হঠাৎ লজ্জায় সে কিছু বলতেও পারলো না। অবশ্য কথাটা বলেই একখানা পান মুখে গুঁজে উঠে গেল সুপ্রিয়া। গেল সে রান্নাঘরের দিকে। আর তাই দেখে কমলাও উঠতেই যাচ্ছিল। তখনি নন্দিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল।
কথাটা সে গত রাত থেকেই সুপ্রিয়াকে বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু গতকাল সংকোচ কাটিয়ে আর বলার সুযোগ হয়নি। তাই আজ একটু সাহস জুগিয়ে একা পেয়ে কুন্দনন্দিনী বললে,
— আচ্ছা দিদি, একটা সত্য কথা বলবে?
– পোড়ামুখির কথা শোন! বলি আমি তোকে মিথ্যে বললাম কবে বলতো?
– না তা নয়, তবুও তুমি বলো সত্য বলবে?
এবার সুপ্রিয়া দাড়িয়ে গেল মাঝ উঠনে। পাখিটা এই দুই রমণীর বাক্যালাপ শুনে উরে গেছে অনেক আগেই। সুপ্রিয়া হাত বাড়িয়ে ধরেছে নন্দিনীর মুখখানি– নন্দিনী তার থেকে কিছু খাটোই। সে কুন্দনন্দিনীর গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,
– না শরীর তো গরম নয়,তবে এমন......
– ধূর ছাই! সবসময় ফাজলামো ভালো নয় দিদি।
সুপ্রিয়া হাসতে লাগলো। নন্দিনী খানিক চুপ থেকে এবার বলেই ফেললো। অবশেষে সবটা বলার পর সে প্রশ্ন ছুঁড়ল একেবারে সুপ্রিয়া মুখমুখি
– তোমার ছোটবাবুর ডান পায়ে অত বড় কাঁটা দাগ টা কিসের দিদি?
প্রশ্নটা করেই নন্দিনীর চমক লাগলো। কারণ প্রশ্ন শোনা মাত্র মুহুর্ত খানিকের জন্যে সদা হাসময়ী সুপ্রিয়ার হাসি যেন উড়ে গেল। যদিও সামলে নিতে সুপ্রিয়ার সময় লাগলো অল্পই, কিন্তু প্রশ্নের উত্তরও যে পেল না। যায় পেলে তা সামলাতে তাকে লজ্জায় লাল হতে হলো,
– ওরে মুখপুড়ি! তলে তলে এতটা? এদিকে আমি আছি বসন্তের অপেক্ষায়, সে এলেই দু'জন কে এক ঘরে ঢুকিয়ে দোর দেবো ভাবছিলুম..
– দিদি! দোহাই লাগে আর বলো না!
ওদিকে সবাই হেসে ওঠে। বলাবাহুল্য সুপ্রিয়া ধীরে ধীরে কিছুই বলেনি। যাই হোক সুপ্রিয়া নন্দিনীকে রোয়াকে বসতে বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। নন্দিনী বারান্দায় বসতেই গীতা বলে উঠলো,
– হয়েছে আমাদের সামনে আবার লাজ্জ কিসের বউ....ওলো কদমদি কত দামে দিচ্ছিস রে এই চুড়ি?"
– সস্তা দিচ্ছি আজ, পাঁচটা মোটে দুয়েক আনায়! শহরের কাঁচ, ফাটে না, হাতেও বসে ভালো।
– ইসস্,যতসব মিছে কথা....
এরমধ্যেই সুপ্রিয়া এসে গেল। নন্দিনী এক জোড়া সাদা-সবুজ চুড়ি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বললে
– এইটা কেমন লাগছে, সুপ্রিয়াদি?
সুপ্রিয়া হাত বাড়িয়ে চুড়ি গুলোতে হাত বুলিয়ে বললে
– তোর মতনই—নতুন আর ঢঙের, কিন্তু ভিতরে মিঠে। পর তো দেখি কেমন বাজে তোর হাতে!
নন্দিনী একটু কুণ্ঠিত হয়। চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখলেও তার কেনার ইচ্ছে নেই। তাছাড়া হাতে টাকাও নেই। তবে নন্দিনী কিছু বলার আগেই সুপ্রিয়া বললে,
– টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না ওতো, পছন্দ হলে নিয়ে নে।
আসলে মুখার্জি বাড়ির সংসার নামক গাড়ির চাকা সমীরের ডাক্তারীর ওপরে নির্ভরশীল ছিল না। সুতরাং সমীর প্রতি মাসে সুপ্রিয়াকে কম করে হলেও সাতটি টাকা করে হাত খরচ দিত। সেই নিয়ম অনুযায়ী এইবার কুন্দনন্দিনীরও কিছু পাওয়া ছিল। সুপ্রিয়া তাই নন্দিনীকে বুঝিয়ে দিতেই সে খানিক সহজ হয়ে হাত বারালো। তবে হাত বাড়ালে কি হয়? চুড়ি পরাতে গিয়ে কাদম্বিনী একটু চাপ দিয়ে ধরতেই—টচ্ করে একটা ফেটে যায়।
– ইসস্... হাত কেটে গেল যে!
– ও কিছু না, দোষ তোমার না। আমার হাতেই বুঝি বেশি শক্ত…
কথা যাই হোক,চুড়ি পরাতে গিয়ে আরো খান কয়েক চুড়ি টপাটপ ভেঙে গেল। অবশেষে সুপ্রিয়া চুড়ি হাতে নিতেই বাড়ি এলো সমীর। সে বোধ হয় মেয়েদের হাসাহাসি ও কথাবার্তা খানিক শুনেছে,তাই বাড়ি ঢুকেই বললে,
– আহা... এই হারে চুড়ি ভাঙলে তো ব্যবসা লাটে উঠবে কদম!
সমীরের কথা শোনা মাত্র সুপ্রিয়া উঠেগেল। এল সে স্বামীর পাশে ,হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে চুড়ি গুলো ধরিয়ে দিয়ে সে বললে,
– কদমের ব্যবসার প্রতি যখন এতো দরদ তখন তুমিই না হয় পরিয়ে দাও!
– না, না, আপনি কেন…?
– না না করিস না, ও তো তোর স্বামী, অচেনা লোক নয়। বরং দেখি, ভালোবেসে পরাতে পারে কিনা।
মেয়েরা মুখে আঁচল চেপে এমনিতেই হাসছিল। নন্দিনী লজ্জা বারাতে আর কিছূ বললো না। স্বামী ধীরে ধীরে তার পাশে নেমে বসতেই কুন্দনন্দিনী একবার চাইলো। তার মুখে একধরনের স্নিগ্ধতা। সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে নরম গলায় বলে,
– হাতটা দাও দেখি, চিন্তা নেই খুব আস্তে পরাব। ব্যাথা দেব না একদমই
নন্দিনী চুপচাপ ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সে চুড়ি পরায়—কাঁচের ঠান্ডা পরশে নন্দিনী যেন কেঁপে ওঠে। কোনো চুড়ি ভাঙে না। সুপ্রিয়া কান পেতে শোনে।
– শুনতে পাচ্ছি—চুড়ির টুংটাং বাজনা বদলে গেছে। প্রেম মিশেছে এবার।
– সত্যিই বউদি, চুড়ির আওয়াজে প্রেম ধরা যায় বুঝি?
– সব শব্দেই প্রেম থাকে রে—শুধু শোনার কান চাই।
সবাই হাসে। কাদম্বিনী এরপর একজোড়া আলতা ও সিঁদুর নন্দিনীর হাতে গুঁজে দিয়ে বলে—
– নববউয়ের আজ উপহার রইল আমার তরফ থেকে। টাকাটা পরে দিও, আজ না হয় মাফ।
সমীরের হাতে নন্দিনীর বা হাতটি তখনো বন্দি, শেষ কয়েকটি চুড়ি স্বামী পরাছে তার হাতে। ওটা পড়ানো হলেই নন্দিনী চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে দূরে সরে পরলো। সমীরও অবশ্য বসে রাইলো না। সে গেল পুকুর ঘাটে স্নান করতে।
/////////
পরবর্তী অংশ খানিক পরেই আসছে
– গেল কোথায়? কোথায়....এখানেই তো রেখেছিলাম.....
রাত্রি কালে সমীর তার ডাক্তারী ঘরে আপন মনে বির বির করতে করতে কি যেন খুঁজছিল। তাকে বই ও কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে দেখে বোধকরি তা চিঠি জাতীয় কিছু একটা হবে। যদিও চিঠি সে পেল না,তবে চিঠি খুঁজতে খুঁজতে তার চোখ পড়লো,শোবার ঘরে ঢোকার মুখে দেয়ালের একপাশে একটি কৌটো রাখা। তখনি তার মনে পড়লো — এই কৌটো দিয়েই সে চিঠিটা চাঁপা দিয়ে রেখেছিল টেবিলের ওপর।
চিঠিটা এসেছে পাঁচ -ছদিন আগে। কিন্তু নানান ব্যস্ততায় চিঠির কথা সে একদম ভুলেই গিয়েছিল। তাছাড়া সুপ্রিয়া এখন নিচতলায় খুব একটা আসতে পারে না। কেন পারে না,তা ভাবলে সমীরের হয় রাগ। তবে সে যাই হোক,আজ একটু সময় পেয়ে শান্ত অবসরে সুপ্রিয়াকে চিঠি পড়ে শোনানোই যায়। তবে চিঠি পাওয়া গেল ত পড়ে শোনাবে। তাছাড়া কৌটোটাই বা ওখানে গেল কেন? সূপ্রিয়া কি ঘর গুছিয়ে আজ?
সমীর সাত-পাচ ভাবতে ভাবতে এলো কৌটোটার কাছে। কৌতুহল বশত নিচু হয়ে কৌটো হাতে তুলতেই পাশের ঘরের পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকলো খোকা। আচমকা সমীরের হাতে ধাক্কা লাগলেও খোকা সামলে নিয়ে বাবার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু সমীরের হাত থেকে কৌটাটা মেঝেতে পরে কতগুলো শিশি ভাঙা কাচের টুকরো মেঝেতে ছড়িয়ে গেল। এর পরপরই কিছু ঘটনা ঘটলো অতি দ্রুত বেগে। খোকাকে সামলাতে সমীর নিচু হয়ে মেঝেতে বসে পরেছিল,তবে খোকা তো আগেই সামলে নিয়ে এখন তার পেছনে। এদিকে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে খোকার পিছু পিছু ঢুকলো কুন্দনন্দিনী। হাতে তার দুধের গ্লাস। সে এক রকম ছুটে এসে পা রাখছিল মেঝেতে পরে থাকা কাচের টুকরোর ওপরে। কিন্তু সমীর থাকতে তা হয় কি করে!
– আরে দেখে......!
না! কথা বাতাসে ভর করে কানের দুয়ারে পৌঁছনোর আগেই কুন্দনন্দিনীর পা পরলো ঘরে। তবে কাঁচে নয়,পা পরলো স্বামীর হাতে! সমীর কথার সাথে সাথে তার বাঁ হাতখানিও চালিয়েছে তৎক্ষণাৎ। তাই কাঁচে নন্দিনীর পা পরার আগেই পা ঠেকলো স্বামীর হাতের তালুতে। এতে অবশ্য কুন্দনন্দিনীর পা বাঁচলেও বেসামাল হয়ে তাল সামলাতে না পেড়ে গ্লাসের বেশি অর্ধেক দুধ পরলো সমীরের মাথায়! কুন্দনন্দিনীও হয়তো পরতো স্বামীর ওপরেই! তবে ততক্ষণে সমীর পতন ঠেকিয়েছে ডান হাতে বারিয়ে নন্দিনীর কোমর আঁকড়ে।
বলিষ্ঠ কঠিন হাত সমীরের। সেই হাত এখন নরম কোমড়ের মাংসপেশীতে চেপে বসতেই নন্দিনীর বুক অজানা শিহরণে কেঁপে উঠলো। এই প্রথম কোনো পুরুষের হাত তার কোমরে পরেছে, অনুভুতি টা কেমন যেন। সর্বাঙ্গে কাটা দিয়ে ওঠে। সে স্বামীর হাতের ওপরে পা রেখেই থ মেরে অবাক আয়ত নয়নে স্বামীর পানেই চেয়ে রইল খানিক। ঠিক কি হয়েছে তা সে বুঝে উঠতে পারেনি এখনো। এদিকে সমীর নন্দিনীর পা খানি নিরাপদ জায়গায় নামিয়ে রাখতেই পাশ থেকে খোকা বলে উঠলো,
– আমি দুধ খাবো না এখন....
কথাটা বলেই খোকা কুন্দনন্দিনীকে পাশ কাটিয়ে ছুটে বেরিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু সমীর বাঁ হাতে তাকে আটকে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে বললো,
– উঁহু্! এভাবে না দেখে কেউ ছোটে? এখুনি একটা রক্তারক্তি কাণ্ড বাঁধাতে।
সমীর খোকাকে সরিয়ে আনলো বটে, তবে শুধু যে দুধ খাওয়ার ভয়েই খোকা বেরিয়ে যেতে চাইছে তা নয়। এখন যে কান্ডখানি ঘটলো, তার প্রতিক্রিয়ায় ছোট-মা কী করবে, বোধহয় তার ভয় ছিল— একটু বেশি।
তবে নন্দিনীর মুখ এখনও বিস্ময়ে হতবাক। সমীর নন্দিনীর কোমড় ছেড়ে যখন উঠে দাড়ালো, তখন তার চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট ভাবে পরলো স্বামীর পানে । দেখা গেল সাদা সাদা দুধ গড়িয়ে পড়ছে সমীরের মুখ বেয়ে। দুধে তার চুল,পিঠ, এমনকি ধুতির খানিকটাও ভিজে গেছে। দৃশ্যটি হাস্যকর বটে। তবে নন্দিনীর কিন্তু হাসি পেল না। কারণ সমীরের বাঁ হাতে— মানে যে হাতটি সে নন্দিনীর পায়ের তলায় পেতে দিয়েছিল, সেই হাতের ওপরে দিকটায় একটি কাচের টুকরো গেঁথে গেছে।
– আপনার হাতে....ওকি! এ যে গেঁথে গেছে....
বলতে বলতে নন্দিনী হাতের গ্লাস ফেলে স্বামীর বাঁ হাতখানি টেনে নিল। কুন্দনন্দিনীর নরম হাতের আশ্রয় থেকে মেঝেতে আছাড় খেলেও গ্লাসটি ভাঙলো না মোটেও,তবে হঠাৎ নন্দিনী এমন উৎকন্ঠা সমীরকে অবাক করে দিল।
কুন্দনন্দিনীর সাথে তার বিয়ে হয়েছে প্রায় মাস পেরুলো। এর মধ্যে একদিনও নন্দিনী তার সাথে কথা বলেনি ঠিক করে, ভালো ব্যবহার ত দূরের কথা। এতে সমীরের যে রাগ হয়নি তা নয়। তবে রাগটা ঝেরে ফেলে সে পুরো চেষ্টা চালিয়েছে কথা বলার। কিন্তু শেষ মেষ উপায় না দেখে ভেবেছে কুন্দনন্দিনীকে মানিয়ে নিতে খানিক সময় দেবে। তাই সে দোতলায় নিজের ঘর ছেড়ে নিচতলায় থাকছে আপাতত পাকাপাকি ভাবে।
– ও কিছু নয়, আমি দেখছি! তুমি পারলে একটু সুপ্রিয়া কে ডেকে দেবে?
বলেই সমীর হাতটি টেনে নিল। অবশ্য ততক্ষণে নন্দিনী স্বামীর হাত থেকে কাচের টুকরোটা সাবধানে তুলে নিয়েছে। এখন সমীর টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতেই সে আর কোন কথা খুঁজে না পেয়ে বেরিয়ে গেল । গেল সে দোতলায়। সমীর যে সুপ্রিয়াকে কেন ডাকছে তা নন্দিনী বুঝে নিয়ে ছিল সহজেই । তাই সে সুপ্রিয়াকে না ডেকে ঘরে ঢুকে সুপ্রিয়ার আলমারি খুলে একখানা নতুন ধুতি আর গামছা নামিয়ে গেল নিচ তলায় সমীরের ঘরে। সমীর তখন হাতে ব্যান্ডেজ পাকাচ্ছে চেয়ারে বসে। খুব একটা গভীর ক্ষত নয় যদিও,তবে ভোঁতা ধাঁচের ক্ষত। তাই ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ বাঁধাই ভালো। শুনে নন্দিনী আগে নিচু হয়ে বসে মেঝে থেকে কাচের টুকরো গুলো তুলে আবারও টিনের কৌটায় ভরতে লাগলো । অবশ্য আড়চোখে স্বামীর পানে দৃষ্টিও সে রেখেছিল, তাই ব্যান্ডেজ বাঁধা হয়ে গেলেই সে বললে,
– আপনি স্নান ঘরে যান আমি আসছি!
– স্নান ঘর! বলছিল একটু জল দিয়ে ধুয়ে ফেল......
– উঁহু্, তা হচ্ছে না! স্নান ঘরে জল আছে, সেখানে গিয়ে ভালোমত মুছে নেবেন না হয়।
– কি দরকার ওসবের?
– দরকার আছে, দুধে যা মাখামাখি অবস্থা; দিদির চোখে পরলেই হলো.....
সমীর আর কথা বাড়ালো না, হাজার হোক সুপ্রিয়ার মতো এনিও গিন্নী। তা হোক বা ছোট গিন্নী — তাই বলে কথা অগ্রাহ্য করা চলে না। সে সুবোধ বালকের মতো নন্দিনীর কথায় পর্দা ঠেলে বেরিয়ে গেল। এদিকে নন্দিনীরও প্রায় হয়ে এসেছিল। তবে স্বামী বেড়িয়ে যাবার পর নন্দিনী খানিকক্ষণ আনমনা হয়ে কৌটাতে রাখা স্বামীর রক্ত মাখা কাচের টুকরোটার দিকে চেয়ে রইলো। "খুব বেশি গেঁথে নি" এতে বিশ্বাস হলো না তার। কাঁচের টুকরোটা এখনো টকটকে লাল রক্তে মাখামাখি। গতকাল এটা সরিয়ে রাখলে আজ এমনটা হতো না। এই কথাও ভাবলো সে। তবে কাল অমনি হঠাৎ কিরণ এসে দাঁড়ালো...না থাক, সে কথা ভাবলেই নন্দিনীর লজ্জা ও রাগ একত্রে হচ্ছে।
নতুন সংসারে পা দেওয়ার পর থেকেই নন্দিনীর মনের ভিতরে একধরনের অজানা অস্বস্তি কাজ করছে। সংসারের টুকিটাকি কাজকর্ম, অতিথি আপ্যায়ন, রীতি-নীতি মেনে চলার মাঝে যে আশঙ্কা দূর করতে সে সুপ্রিয়াকে ঢাল হিসেবে বেছে নিয়েছিল। আজ হঠাৎ সেই আশঙ্কার সত্য'তা নিয়ে তার মনে সংশয় দেখা দিল। ঘটনাটি ছোটই। হয়তো সুপ্রিয়া দেবী তার জাগয়ায় থাকলেও সমীর এইভাবেই হাত পেতে আঘাতটা নিজেই সইত। কিন্তু সুপ্রিয়া আর সে কি এক?
কাঁধে ধুতি-গামছা ও হাতে আলো নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নন্দিনী তাই ভাবছিল। স্নান ঘর উঠনে নেমে পুকুরঘাটে যাওয়া পথের সাথে লাগোয়া। অন্যমনস্ক হয়ে নন্দিনী স্নান ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল । স্নানঘর এই বাড়ির কেউই স্নান করতে তেমন একটা ব্যবহার করে না। তাই দরজার বাহুল্য স্নানঘর নেই বললেই চলে। তাছাড়া কুন্দনন্দিনীর স্বামী দেব যে সরাসরি স্নান করে বসবে! তা বেচারি নন্দিনী কি করে জানবে?
আলো হাতে ভিতরে ঢুকেই নন্দিনীর পা থমকে গেল। ঘরটার মাঝখানে তার স্বামী প্রায় নগ্ন। নন্দিনীর অন্যমনস্কের সুযোগে সমীর স্নান সেরে একটি গামছা– ওটা এই স্নান ঘরেই থাকে। সেটা কোমড়ে পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া শরীরের বাকি অংশ অনাবৃত। এই নতুন দৃশ্য যেন নন্দিনীকে পাথর করে দিয়েছে। সে অবাক হয়ে চেয়ে আছে স্বামীর পানে। তবে মুখপানে নয়, তার চোখ আটকে গেছে নিচের দিকে এক জায়গায়—ডান হাটুর খানিক উপরের দিকটা। যেখানে একটা পুরোনো, কিন্তু বেশ বড় কাটা দাগ হাড়িকেনের উজ্জ্বল আলোয় দৃশ্যমান। দাগটা পুরনো, কিন্তু এতটাই বড় যে সহজেই চোখে পড়ে। উরু ও হাঁটুর মাঝখানে একটা লম্বাটে রেখা, যেখানে ছুরি বা দা'য়ের ধার একসময় নেমে এসেছিল নির্দয় ভাবে। একসময় সেটা ছিল গভীর । এমন এক আঘাত যা কেবল দুর্ঘটনায় নয়—কোনো রকম সংঘর্ষে, হয়তো দা-র কোপে তৈরি হয়েছে। কিসের আঘাত তা নন্দিনী বুঝতে না পারলেও,তার মুখ শুকিয়ে আসে। এই কথা সে জানে— এই বাড়ির সবাই সমীরকে সমিহ করে চলে। তাই বলে এই কদিনে স্বামীর শান্ত মধুর ভাব দেখে সে কখনো ভাবেনি, সমীর কোন অন্ধকার অতীত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে। যা তার দেহের প্রতিটি কোষে লেখা আছে। কে কোপ মেরেছিল তাকে? কেন? কী ছিল সেই অন্ধকার অধ্যায় যার ছায়া আজও তার দেহে ?
ধুতির কোণা শক্ত করে ধরে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে সে, চোখে মিশে যায় বিস্ময়। সাথে ভয় আর আকস্মিক এক কৌতূহল। অবশ্য সমীর কিন্তু নন্দিনীর দৃষ্টি খেয়াল করেনি। সে স্বাভাবিক রসিকতার ভঙ্গিতেই বললো,
– দেখার সাধ মিটলে একটি বার গামছা আর ধুতি টা দাও দেখি,আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো বলো?
হতচকিত হয়ে নন্দিনীর সম্বিত ফিরল। তবে স্বামীকে ধুতি গামছা দিয়েও কিন্তু সে সরে যেতে পারলো না, আলো হাতে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই।
///////
সকালে এক পলসা বৃষ্টির পর গরমের দুপুর। উঠনের মাঝখানে খানিক জল জমেছে। আর সেখানেই হঠাৎ একটা পাখি—সাধারণ চেনা পাখি নয়, একটু বুনো প্রকৃতির—ফরফর করে উড়ে এসে বসলো উঠোনের ঠিক মাঝখানে। পাখিটার গায়ের রঙ গাঢ় সবুজ, ডানার নিচে হালকা নীলের ছোঁয়া, চোখে কৌতূহলী চাহনি। যেন কাউকে খুঁজছে সে মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে ।তারপর হঠাৎ নিজের ঠোঁট দিয়ে উঠন থেকে জল খেল। একটু থেমে আবার ডানা ঝাঁপটা দিল দুবার। যেন চেনা জায়গা নয়, তবু কোথাও থেকে একটা টান টান অনুভব তাকে এখানে এনে ফেলেছে। বলাবাহুল্য সেই টান তৃষ্ণা মেটানো। বাড়ির পেছনের বাঁশ ঝাড়ের পাতাগুলো মৃদুমন্দ দুলছে, বাতাস নেই তেমন, তবুও পাখিটার পালক হালকা কেঁপে উঠলো। সে একটা পা তুলে নিজের ডানায় মুখ ঘষে, তারপর আবার নিচে বসে—গভীর মনোযোগে রোয়াকে বসা রমণী কটার কথায় আড়িপাতে!
ভেতর উঠনের মূল দালানে, ঠিক সিঁড়ির কাছটায় দাঁড়িয়ে থাকা পেয়ারা গাছটার ছায়া পরেছে রোয়াকের সিমেন্ট করা মেঝেতে। রান্নাঘরের ভেতর থেকে চুলার ধোঁয়া উঁকি দিয়ে আসছে। বাইরের থেকে কানে ভেসে আসছে কুকুরের ডাক, সেই সাথে আর দূর থেকে কারও গলায় বাউল গান যেন শোনা যায় যেন।
সমীর নেই। সে বেরিয়েছে রোগি দেখতে। মুখার্জি বাবুও বেরিয়েছেন কোথায় যেন। আসবেন দূপুরের খাওয়ার সময়। তা এখনো ঘন্টা খানেক পর। নন্দিনী, কমলা, সুপ্রিয়া ও গ্রামের দুটি মেয়ে কি যেন কথা বলছিল। এই সময়েই হাজির হয়েছে কাদম্বিনী—পাড়ার বউবাজারী, গলার চেনা ডাকের জন্য তাকে চিনতে অসুবিধা হয় না কারোরই। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই সে বলে
– এই যে বৌদি,নতুন বউ দেখতে এলাম গো।
– শুধু বউ দেখলেই কি পেঠের জ্বালা জুড়াবে কদম?
– ধূর! কি যে বল না তুমি বউ। শুধু বউ দেখতে নয়,সাথে কাঁচের চুড়ি, আলতা, সিঁদুর, শাড়ি, এক্কেবারে শহরের ধাঁচে এনেছি আজ!
বলতে বলতে বিছানা পেতে বসে পড়ে সে রোয়াকে। চাদরের ভাঁজ খুলতেই বেরিয়ে আসে কাঁচের রঙিন চুড়ির রাশি। রোদে চিকচিক করে ওঠে। তার পাশে সাদা পিচবোর্ডে রাখা নানান রঙের আলতা—গোলাপি, গাঢ় লাল, বেগুনি।
– বলি ও কদমদি, সেই লালচে কমলাটা দেখাও তো। বলে দিস ত কেমন লাগছে, কমলা?
– বেশ মানাবে তোকে,খুবই সুন্দর রং।
মেয়ে দুটির মধ্যে গীতা নতুন আগত,সে তাই বলে উঠলো।
– তা বেশ লাগছে বটে,কিন্তু দিদি! আপনি কীভাবে বোঝেন....
গীতার কথা শেষ হল না। পাশ থেকে মালতী তাকে ঠেলে ইশারায় থামিয়ে দিল। সুপ্রিয়া হেসে উত্তর করলো,
– ও বুঝতে আবার চোখ লাগে নাকি রে! তুই দেখতে যেমন লক্ষ্মী তোকে সবেতেই মানাবে।
গীতা ভেবে পেল না সুপ্রিয়াদি তাকে দেখলো কি করে! তবে হঠাৎ লজ্জায় সে কিছু বলতেও পারলো না। অবশ্য কথাটা বলেই একখানা পান মুখে গুঁজে উঠে গেল সুপ্রিয়া। গেল সে রান্নাঘরের দিকে। আর তাই দেখে কমলাও উঠতেই যাচ্ছিল। তখনি নন্দিনী তাকে থামিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল।
কথাটা সে গত রাত থেকেই সুপ্রিয়াকে বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু গতকাল সংকোচ কাটিয়ে আর বলার সুযোগ হয়নি। তাই আজ একটু সাহস জুগিয়ে একা পেয়ে কুন্দনন্দিনী বললে,
— আচ্ছা দিদি, একটা সত্য কথা বলবে?
– পোড়ামুখির কথা শোন! বলি আমি তোকে মিথ্যে বললাম কবে বলতো?
– না তা নয়, তবুও তুমি বলো সত্য বলবে?
এবার সুপ্রিয়া দাড়িয়ে গেল মাঝ উঠনে। পাখিটা এই দুই রমণীর বাক্যালাপ শুনে উরে গেছে অনেক আগেই। সুপ্রিয়া হাত বাড়িয়ে ধরেছে নন্দিনীর মুখখানি– নন্দিনী তার থেকে কিছু খাটোই। সে কুন্দনন্দিনীর গালে আলতো করে হাত রেখে বললো,
– না শরীর তো গরম নয়,তবে এমন......
– ধূর ছাই! সবসময় ফাজলামো ভালো নয় দিদি।
সুপ্রিয়া হাসতে লাগলো। নন্দিনী খানিক চুপ থেকে এবার বলেই ফেললো। অবশেষে সবটা বলার পর সে প্রশ্ন ছুঁড়ল একেবারে সুপ্রিয়া মুখমুখি
– তোমার ছোটবাবুর ডান পায়ে অত বড় কাঁটা দাগ টা কিসের দিদি?
প্রশ্নটা করেই নন্দিনীর চমক লাগলো। কারণ প্রশ্ন শোনা মাত্র মুহুর্ত খানিকের জন্যে সদা হাসময়ী সুপ্রিয়ার হাসি যেন উড়ে গেল। যদিও সামলে নিতে সুপ্রিয়ার সময় লাগলো অল্পই, কিন্তু প্রশ্নের উত্তরও যে পেল না। যায় পেলে তা সামলাতে তাকে লজ্জায় লাল হতে হলো,
– ওরে মুখপুড়ি! তলে তলে এতটা? এদিকে আমি আছি বসন্তের অপেক্ষায়, সে এলেই দু'জন কে এক ঘরে ঢুকিয়ে দোর দেবো ভাবছিলুম..
– দিদি! দোহাই লাগে আর বলো না!
ওদিকে সবাই হেসে ওঠে। বলাবাহুল্য সুপ্রিয়া ধীরে ধীরে কিছুই বলেনি। যাই হোক সুপ্রিয়া নন্দিনীকে রোয়াকে বসতে বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। নন্দিনী বারান্দায় বসতেই গীতা বলে উঠলো,
– হয়েছে আমাদের সামনে আবার লাজ্জ কিসের বউ....ওলো কদমদি কত দামে দিচ্ছিস রে এই চুড়ি?"
– সস্তা দিচ্ছি আজ, পাঁচটা মোটে দুয়েক আনায়! শহরের কাঁচ, ফাটে না, হাতেও বসে ভালো।
– ইসস্,যতসব মিছে কথা....
এরমধ্যেই সুপ্রিয়া এসে গেল। নন্দিনী এক জোড়া সাদা-সবুজ চুড়ি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করে বললে
– এইটা কেমন লাগছে, সুপ্রিয়াদি?
সুপ্রিয়া হাত বাড়িয়ে চুড়ি গুলোতে হাত বুলিয়ে বললে
– তোর মতনই—নতুন আর ঢঙের, কিন্তু ভিতরে মিঠে। পর তো দেখি কেমন বাজে তোর হাতে!
নন্দিনী একটু কুণ্ঠিত হয়। চুড়ি নেড়েচেড়ে দেখলেও তার কেনার ইচ্ছে নেই। তাছাড়া হাতে টাকাও নেই। তবে নন্দিনী কিছু বলার আগেই সুপ্রিয়া বললে,
– টাকা নিয়ে ভাবতে হবে না ওতো, পছন্দ হলে নিয়ে নে।
আসলে মুখার্জি বাড়ির সংসার নামক গাড়ির চাকা সমীরের ডাক্তারীর ওপরে নির্ভরশীল ছিল না। সুতরাং সমীর প্রতি মাসে সুপ্রিয়াকে কম করে হলেও সাতটি টাকা করে হাত খরচ দিত। সেই নিয়ম অনুযায়ী এইবার কুন্দনন্দিনীরও কিছু পাওয়া ছিল। সুপ্রিয়া তাই নন্দিনীকে বুঝিয়ে দিতেই সে খানিক সহজ হয়ে হাত বারালো। তবে হাত বাড়ালে কি হয়? চুড়ি পরাতে গিয়ে কাদম্বিনী একটু চাপ দিয়ে ধরতেই—টচ্ করে একটা ফেটে যায়।
– ইসস্... হাত কেটে গেল যে!
– ও কিছু না, দোষ তোমার না। আমার হাতেই বুঝি বেশি শক্ত…
কথা যাই হোক,চুড়ি পরাতে গিয়ে আরো খান কয়েক চুড়ি টপাটপ ভেঙে গেল। অবশেষে সুপ্রিয়া চুড়ি হাতে নিতেই বাড়ি এলো সমীর। সে বোধ হয় মেয়েদের হাসাহাসি ও কথাবার্তা খানিক শুনেছে,তাই বাড়ি ঢুকেই বললে,
– আহা... এই হারে চুড়ি ভাঙলে তো ব্যবসা লাটে উঠবে কদম!
সমীরের কথা শোনা মাত্র সুপ্রিয়া উঠেগেল। এল সে স্বামীর পাশে ,হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে চুড়ি গুলো ধরিয়ে দিয়ে সে বললে,
– কদমের ব্যবসার প্রতি যখন এতো দরদ তখন তুমিই না হয় পরিয়ে দাও!
– না, না, আপনি কেন…?
– না না করিস না, ও তো তোর স্বামী, অচেনা লোক নয়। বরং দেখি, ভালোবেসে পরাতে পারে কিনা।
মেয়েরা মুখে আঁচল চেপে এমনিতেই হাসছিল। নন্দিনী লজ্জা বারাতে আর কিছূ বললো না। স্বামী ধীরে ধীরে তার পাশে নেমে বসতেই কুন্দনন্দিনী একবার চাইলো। তার মুখে একধরনের স্নিগ্ধতা। সে ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে নরম গলায় বলে,
– হাতটা দাও দেখি, চিন্তা নেই খুব আস্তে পরাব। ব্যাথা দেব না একদমই
নন্দিনী চুপচাপ ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। ধীরে ধীরে সে চুড়ি পরায়—কাঁচের ঠান্ডা পরশে নন্দিনী যেন কেঁপে ওঠে। কোনো চুড়ি ভাঙে না। সুপ্রিয়া কান পেতে শোনে।
– শুনতে পাচ্ছি—চুড়ির টুংটাং বাজনা বদলে গেছে। প্রেম মিশেছে এবার।
– সত্যিই বউদি, চুড়ির আওয়াজে প্রেম ধরা যায় বুঝি?
– সব শব্দেই প্রেম থাকে রে—শুধু শোনার কান চাই।
সবাই হাসে। কাদম্বিনী এরপর একজোড়া আলতা ও সিঁদুর নন্দিনীর হাতে গুঁজে দিয়ে বলে—
– নববউয়ের আজ উপহার রইল আমার তরফ থেকে। টাকাটা পরে দিও, আজ না হয় মাফ।
সমীরের হাতে নন্দিনীর বা হাতটি তখনো বন্দি, শেষ কয়েকটি চুড়ি স্বামী পরাছে তার হাতে। ওটা পড়ানো হলেই নন্দিনী চটজলদি উঠে দাঁড়িয়ে দূরে সরে পরলো। সমীরও অবশ্য বসে রাইলো না। সে গেল পুকুর ঘাটে স্নান করতে।
/////////
পরবর্তী অংশ খানিক পরেই আসছে