28-05-2025, 03:03 AM
(24-01-2020, 10:54 PM)nadupagla Wrote: ছোটকা আর আমি বাস ধরে ভুবনেশ্বর পৌঁছে সানশাইন হসপিটাল খুঁজে সেখানে যেতে যেতে প্রায় বেলা ১১টা বেজে গেল। কিচ্ছু খাওয়া হয়নি। রাত্রে ঝুমার ফোন এসেছিল, ২ মিনিট কথা বলে খবরটা দিয়েই ফোন রেখে দিয়েছিলাম কারণ কথা বলার মত অবস্থায় ছিলাম না। চোখের সামনে পিসির হাসিখুশি মুখটা ভেসে উঠছিল বারবার। বাপ্পাটা আমার খুব ন্যাওটা ছিল বিশেষ করে খেলার জন্য। খুব মন খারাপ হচ্ছিল। হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম পিসি রিসেপশনে বসে আছে ডান ভুরুর উপরে একটা পট্টি, কম করে গোটা পাঁচ স্টিচ পড়েছে। ডান হাতে প্লাস্টার, আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরেই কেঁদে উঠলো।অসম্ভব সুন্দর একটা গল্প অকালে থেমে গেল।
পনের
শেষ সাত দিন পুরো ঝড়ের গতিতে পেরিয়েছে। পিসিকে বাড়ী এনেছি, পিসেমশাইয়ের দাহ কার্য সম্পন্ন করেছি। বাপ্পার চিকিৎসার জন্য ওকে কোলকাতাতে এডমিট করেছে ছোটকা। ডাক্তার বলছে বেঁচে যাবে কিন্তু মাথায় আঘাত পাবার জন্য হয়তো সুস্থ হয়ে বাঁচতে পারবে না। এর মধ্যে ঝুমাকে নিয়ে আসা হয়নি, ঝুমার সঙ্গে নিয়মিত কথা ও হয়নি। বাপ্পাকে বেশিদিন আর হাসপাতালে রাখা যাবে না ওকে বাড়ীতে রেখেই ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। এরই মধ্যে ডিক্লেয়ার হলো ১৬ ই উচ্চ মাধ্যমিক আর ১৫ ই জয়েন্টের রেজাল্ট বেরোবে। পিসির উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে, কদিন মা এখানে এসে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু বাচ্চা মেয়ে নিয়ে অসুবিধা হবে বলে মানা করেছিলাম। পিসির সব দায়িত্ব আমি নিজে নিয়েছি। ঠিক করলাম গ্রামের বাড়ীতে তালা দিয়ে পিসি কে নিয়েই কলকাতা চলে যাবো পিসেমশাইয়ের শ্রদ্ধা শান্তি হয়ে গেলেই। ঝুমাকে আর ওর মা কে বললাম ওরা যেনো ২৯শে এপ্রিল হাওড়ার ঠিকানায় চলে আসে। রাত্রে আমি পিসির পাশে বসেছিলাম, পিসি আমার হাত ধরে কেঁদে উঠে বললো, "টুকুন আমার কি হবে? বাপ্পাটা যদি না বাঁচে আমি মরবো।" আমি বললাম, "পিসি বাপ্পাকে বাঁচতেই হবে। আর আমি তো আছি।" পিসি কাঁদতে কাঁদতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল।
কাল পিসেমশাইয়ের শ্রাদ্ধ শান্তি হয়ে গেছে। পিসি প্রায় সাড়ে তেরো লক্ষ টাকা পাবে ইনসিওরেন্সের। আমি বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি কলকাতা যাবার জন্য। পিসেমশাইয়ের দোকানটা বেচে দেবে বললো পিসি।