08-05-2025, 10:57 AM
(This post was last modified: 08-05-2025, 11:00 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
খ
আদিবা রহমান মনযোগ দিয়ে তার ডায়েরিতে সাফিনা করিম কে নিয়ে লেখা নোট গুলো পড়ছেন। একটু পর সাফিনা করিমের সাথে তার এপয়মেন্ট আছে। বিভিন্ন রকম পেশেন্টের সাথে ডিল করতে হয় আদিবা কে, সবাই কে যদিও সমান পছন্দ করা উচিত তবে সেটা সম্ভব হয় না। সাফিনা হচ্ছেন সেরকম পেশেন্ট যাকে অপছন্দ করার উপায় নেই। শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল, সুন্দরী। তার কাছে যারা পেশেন্ট হিসেবে আসে এদের একটা বড় অংশ ডিনায়ালে থাকে। নিজেদের সমস্যা কে অস্বীকার করতে চায় বা মিথ্যা বলে লুকাতে চায়। সেই সমস্যাটা সাফিনা করিমের নেই, ফলে তার সাথে ডিল করা অনেক ইজি। সাফিনা করিমের সমস্যা গুলো এক এক করে মনে মনে সাজাতে থাকেন আদিবা। মধ্য বয়স্ক নারীদের বাংলাদেশে যে সমস্যা, সাফিনার সেটা প্রধান সমস্যা। সারাজীবন পরিবারের জন্য করলেও এই সময়টাতে পরিবারে নারীদের দাম কমতে থাকে। সন্তানরা বড় হয়ে মায়ের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। আবার স্বামী ক্যারিয়ার আর পারিপার্শ্বিকতার চাপে একটু ব্যস্ত হয়ে যায়। তার উপর অনেক বছরের বিয়ের কারণে একটু ঝিমিয়ে পড়ে নিজেদের মাঝে রসায়ন। এইসব কিছু ঘটছে সাফিনা করিমের জীবনে। ফলে এক ধরণের শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তার। আবার যদিও স্বামী তাকে ভালবাসে এই ব্যাপারে ডাউট নেই তবে একটা জিনিস স্বামীর প্রতি এক ধরনের অভিযোগ তৈরি করেছে সাফিনার। সাফিনার মতে সাফিনার স্বামী ছেলে চেয়েছিলেন একটা। ফলে দুই মেয়ের পর আর একবার ট্রাই করতে চেয়েছিলেন ছেলের জন্য তবে সাফিনা নিজের পিএইচডি করার জন্য সেটাতে রাজি হন নি। সাফিনার ধারণা এই কারণে তার হাজব্যান্ড মনে মনে কিছুটা ক্ষুণ্ণ। তার স্বামীর মতে একজন ছেলের পরম্পরা ধরে রাখতে পারে তার ছেলে সন্তান আর নাহয় তার কাজ। এখন যেহেতু ছেলে সন্তান নেই তাই বেশি করে কাজে ঝাপিয়ে পড়ে আর সফল হতে চাচ্ছেন। যদিও সাফিনার স্বামী মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেন নি তবে এটা সাফিনার সন্দেহ। আদিবা ভাবেন খুব কমন একটা প্রবলেম এটা। তবে এইসব কারণে সাফিনার মনে এক ধরনের ডিপ্রেশন তৈরি হয়েছে। পরিবার কে সময় দিতে ক্যারিয়ারে স্যাক্রিফাইস করেছেন এখন পরিবারের সদস্যরা যার যার জীবনে ব্যস্ত, তাকে সময় দেবার কেউ নেই। যে স্বামী কে এত ভালবাসেন, সে স্বামী একটা ছেলে সন্তানের জন্য হাহাকার করছে এটা মেনে নিতে পারছেন না সাফিনা। সব মিলিয়ে এটাই সাফিনার জীবনের ডিপ্রেশনের মূল কারণ তার মতে। তবে সাফিনার পুরাতন একটা ট্রমা আছে। যেটা সম্ভবত আজকাল ডিপ্রেশনের কারণে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। পুরাতন এক প্রেমিক ছিল। অবশ্য প্রেমিক বলা যায় না, এক পাক্ষিক প্রেম। সেই প্রেমিকের অকালমৃত্যু ট্রমা তৈরি করেছিল। সাধারণত মানুষ যখন মানসিক ভাবে দূর্বল থাকে, ডিপ্রেসড থাকে তখন তার পুরাতন ট্রমা গুলো মাথা চাড়া দেয়। সেটাও এখনকার সমস্যা কে প্রভাবিত করছে।
দরজায় নকের শব্দ। আদিবা মাথা তুলে দেখেন তার এসিসটেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে? সাফিনা ম্যাডাম এসে বাইরে অপেক্ষা করছেন। উনার শিডিউলের টাইম এখন। পাঠিয়ে দিব? আদিবা বলেন হ্যা পাঠিয়ে দাও। সাফিনা ভিতরে ঢুকেন। কুশল বিনিময় শেষে সামনের একটা সোফায় বসেন সাফিনা আর উলটো দিকের একটা সিংগেল সোফায় বসেন আদিবা। সাফিনার কাছে আদিবা রহমানের এই সেশনটা একটা খোলা জানলা। কোন রকম জাজমেন্ট ছাড়া মনের সব কথা খুলে বলা যায়। আদিবা সাইকোলজিস্ট। অনেক সময় নিজের অনেক ব্যবহার বা আচরণের নিজে মানে খুজে পান না সাফিনা তখন আদিবা তাকে বুঝতে সাহায্য করেন কিভাবে তার আচরণ কে ব্যাখ্যা করা যায় তার পাস্ট হিস্টরি দিয়ে। নিজের জীবন নিয়ে যে একটা হতাশা লাস্ট কয়েক বছর মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটা কাটাতে আদিবার এই সেশন গুলো কার্যকরী। আদিবা জিজ্ঞেস করেন সব ঠিক ঠাক চলছে তো? সাফিনা তখন এক এক করে সব বলেন লাস্ট সেশনের পর কি কি হয়েছে। সিনথিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা উঠে সেখানে। আদিবার সাথে সিনথিয়ার রিলেশন নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আদিবা ভাল করেই জানেন সাফিনার এই রিলেশন নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে। তাই সাফিনা যখন বলেন সিনথিয়ার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করেছেন তখন একটু অবাক হন। তবে মুখে প্রকাশ করেন না কারণ একজন ভাল সাইকোলজিস্ট তার ভিতরের জাজমেন্ট লুকিয়ে রাখেন যাতে পেশেন্ট সেফ ফিল করেন। আদিবা জিজ্ঞেস করেন কি হল সেখানে? সাফিনা কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন। তারপর বললেন আসলে আই এম ইম্প্রেসড সো ফার এবাউট দিস বয়। আদিবা বলেন কেন? সাফিনা বলেন সিনথিয়া সব সময় রেকলেস ছিল। এর আগের বয়ফ্রেন্ড কারা সেগুলো অল্প বিস্তর আমি জানতাম আমার বড় মেয়ের মাধ্যমে। সেই সব ছেলের তুলনায় অনেক বড় ইম্প্রুভমেন্ট এই ছেলে। দ্বায়িত্বশীল, মার্জিত, কথা বলতে জানে। আমরা খোজ নিয়ে যতটুকু দেখেছি ছেলের একটা বিজনেস আছে যেটার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। সিনথিয়া যে এমন কার প্রেমে পড়তে পারে সেটা আমার ধারণা ছিল না। আদিবা জিজ্ঞেস করেন সিনথিয়া আগে কাদের প্রেমে পড়ত। সাফিনা হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছোট মেয়েটা তো পাগলি। আগের সব ছেলের যদি কমন জিনিস বলি তাহলে দুইটা জিনিস কমন ছিল। এক সবাই টল হ্যান্ডসাম আর কোন না কোন ভাবে আকাইম্মা। আদিবা বলেন এইবারের ছেলেটা? সাফিনা বলেন টল হ্যান্ডসাম নো ডাউট কিন্তু আকাইম্মা না।
আদিবা বলেন এর আগে কয়েক সেশনে তো আপনি এই সম্পর্কের বিরোধী ছিলেন। মতামত চেঞ্জ হল কিভাবে? সাফিনা এরপর সংক্ষেপে পিছনের ঘটনা বললেন। তার ননদ নুসাইবা কে এত বড় একটা হেল্প করেছে এরপর আসলে অন্তত একবার দেখা করা ভদ্রতা ছিল। নুসাইবার পর যখন সাবরিনাও ছেলেটা সম্পর্কে পজিটিভ কথা বলল তখন তার মন খানিকটা নরম হয়। আদিবা বললেন নুসাইবা আর সাবরিনার মন নরম হবার কারণ কি? সাফিনা বললেন নুসাইবা তো এত বড় সাহায্য পেয়েছে তাই সম্ভবত মাহফুজের পক্ষে গেছে। যদিও আগে প্রবল বিরোধী ছিল। আর সাবরিনার ব্যাপারটা শিওর না যদিও। তবে তার মনে হচ্ছে সম্ভবত সিনথিয়া কোন ভাবে বোন কে রাজি করিয়েছে আর এরপর হয়ত মাহফুজের সাথে কথা বলে সাবরিনার মনে হয়েছে ছেলে ওকে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন আপনার মতামত কি তাহলে নুসাইবা আর সাবরিনার প্রেশারে চেঞ্জ হয়েছে? সাফিনা বলেন এইগুলো ফ্যাক্টর তবে মাহফুজ নিজেই আসলে তার মতামত চেঞ্জের ব্যাপারে বড় ভূমিকা রেখেছে। মাহফুজ যেভাবে কনফিডেন্টলি তার মেয়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছে এটা তার ভাল লেগেছে। সাফিনা বলেন আমার মনে হয়েছে এই ছেলে সত্যিকার ভাবে সিনথিয়া কে ভালবাসে। আর নিজের কাজের ক্ষেত্রে মাহফুজ ভাল কনফিডেন্স দেখিয়েছে আর পরে আলাদা করে মাহফুজের সম্পর্কে খোজ নিতে গিয়ে আমরা দেখেছি ওর কথা ঠিক। ব্যবসা স্ট্রং। সবাই বেশ সুনাম করেছে মাহফুজের দুইটা ব্যবসার। আদিবা বলেন আচ্ছা বুঝেছি এইগুলো তাহলে কারণ। সাফিনা একটু ইতস্তত করেন। আদিবা অনেক বছর ধরে সাইকোলজিস্ট তাই পেশেন্টের চেহারা দেখে অনেক কিছু আন্দাজ করতে পারেন। তাই জিজ্ঞেস করেন আর কিছু কি আছে? সাফিনা বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতে হঠাত করে বলে ফেলে। আরেকটা কারণ আছে। আমার মায়ের সাথে কথা হয়েছিল আসলে এই ব্যাপারে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন, আপনার মা কি এই ছেলের পক্ষে কথা বলেছেন? সাফিনা হ্যা সূচক মাথা নাড়ান। আদিবা বলেন বেশ করিতকর্মা ছেলে। পরিবারের সবাই কে রাজি করিয়ে ফেলেছে দেখছি। সাফিনাও মাথা নাড়ান। সাফিনা বলেন মা, মাহফুজের পক্ষে কথা বলেছেন তবে তার থেকে উনি যা বলেছেন সেইটা আমাকে বেশি নাড়া দিয়েছে।
আদিবা জিজ্ঞেস করলেন কি বলেছেন আপনার মা। সাফিনা আবার ইতস্তত করেন। মনের এই দরজাটা বহুকাল বন্ধ ছিল। আদিবা রহমানের কাছে থেরাপি নিতে এসে আবার খুলেছিলেন কিছুদিন আগে। আজকে তার মায়ের কথা বলতে গেলে সেই দরজা আবার খুলতে হবে। তবে সাফিনা জানেন আদিবার কাছে কথা বললে তার হালকা লাগে। তাই ইতস্তত লাগলেও বলতে শুরু করলেন। সাফিন বলতে থাকলেন, মা আমাকে সিনথিয়ার ব্যাপারে রাজি করানোর জন্য ফোন দিয়েছিল। আপনাকে আমি আগেও বলেছি মায়ের উপর আমার একটা পুরাতন রাগ আছে। আদিবা বললেন, কাজলের ব্যাপারটা? সাফিনা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল হ্যা। মা কে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এত বছর আগে মা কেন আমাকে মানা করেছিল আর যদি করে তাহলে কেন মা এত বছর পর তার নাতনির জন্য আবার ওকালতি করছে। আমি আসলে আমার ভিতরের রাগটা চেপে রাখতে পারি নি। কাজল দা আর মাহফুজ। দুই জন পলিটিক্স করে। সেই সময় মা আমাকে বলেছিল পলিটিক্স করা কতটা ডেঞ্জারাস। কেন কাজল’দা এর সাথে মেশা যাবে না। আজকে দেখুন ত্রিশ বছর পর সব বদলে গেছে। কাজল দা এর জায়গায় মাহফুজ এসেছে, আর আমার জায়গায় সিনথিয়া। আর ওমনি মায়ের সিদ্ধান্ত বদলে গেল। জানেন কাজল দা মারা যাবার পর আমার বার বার মনে হত কাজল দা কে আমি বাচাতে পারতাম। হয়ত আমার সাথে প্রেম হলে আমি কাজল দা কে আটকে রাখতে পারতাম। অহেতুক সব ঝামেলায় ঝড়াতে দিতাম না। তাহলে হয়ত পলিটিক্যাল ঝামেলার মাঝে পড়ে এইভাবে মরতে হত না। সাফিনার চোখের কোণায় পানি টের পান আদিবা। তবে কোন কথা বলেন না, সাফিনা কে বলতে দেন। এইসব মূহুর্তে সাইকোলজিস্টদের কিছু বলার নেই বরং পেশেন্টদের বলে হালকা হতে দিতে হয়। সার্ভাইভাল গিল্ট। বেচে যাওয়া মানুষদের ভিতরে যে গ্লানি থাকে প্রিয় মানুষ কে না বাচাতে পারার সেটা বছরের পর বছর ভিতরে জমতে থেকে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। আদিবা টের পেয়েছেন আগের কয়েক সেশনে ঘর সংসার স্বামী সন্তান সব হলেও, তাদের কে ভালবাসলেও সাফিনার বুকে একটা হাহাকার রয়ে গেছে। লুকিয়ে রাখলেও সেই হাহাকার মরে যায় নি। এত বছর পর যখন সাফিনা একা বোধ করেন সব কিছুর মাঝে, তখন সেই হাহাকার গলার মাঝে জমাট বাধা কান্না হয়ে উঠে আসে। আজকে আবার কাজল এর কথা আসায় সেই অনুভূতি ফিরে আসছে।
সাফিনা একটু নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে থাকেন। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মা প্রথমে আটকে গিয়েছিল তবে পরে যা বলেছে সেটা আসলে আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। মা বলেছে কাজল মারা যাবার দা মারা যাবার পর মায়ের নিজের প্রচন্ড খারাপ লেগেছিল। মায়ের মনে হয়েছিল একটা ছেলে মারা যাবার আগে কাংখিত ভালবাসা পেল না। মা বলেছে যে, দেখ সাফিনা তুই সময়টা চিন্তা কর। প্রায় ত্রিশ বছর আগের সেই সময়টাতে ময়মনসিংহ শহর কতটা কনজারভেটিভ ছিল, তার উপর তোর বাবার কড়া নিয়ম কানুন। সেই সময় কিভাবে আমি তোকে প্রেমে উতসাহ দেই। এই ছোট শহরে কিছু গোপন থাকে না। তুই প্রেম করলে ঠিক সবাই জেনে যেত। তখন কি অবস্থা হত ভেবে দেখেছিস? আদিবা প্রশ্ন করে আপনার মায়ের কথা গুলো কি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে? সাফিনা বলে মা যখন কথা বলছিল তখন যেন আবার সেই কিশোরী সাফিনা হাজির হয়েছিল সেখানে। সব যুক্তি তখন আবেগে ভেসে গেছে। আদিবা বলে তারপর? সাফিনা বলে তারপর আর কি। আমাদের মা মেয়ের না বলা অনেক কথা সেদিন বলা হয়েছে। মা তার ভুল স্বীকার করেছে আবার এটা বলেছে যে সেই সময়ের প্রেক্ষিতে দেখতে ব্যাপারটা। আমি আমার সেই সময়ের আবেগ যেমন স্বীকার করেছি আবার মায়ের যুক্তিটাও বুঝতে পেরেছি। আদিবা বলেন তাহলে আপনাদের মা মেয়ের একটা অভিমানের জায়গা তাহলে ক্লিয়ার হয়েছে। সাফিনা বলেন কিছুটা। সেই জন্য হয়ত আমি মাহফুজের প্রতি নরম হয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমি যেই সুযোগ পাই নি সিনথিয়া সে সুযোগ পাক। কাজল দা যেই ভালবাসার স্পর্শ পায় নি মাহফুজ সেই ভালবাসার স্পর্শ পাক। আদিবা মাথা নাড়েন আর ভাবেন, নিজের জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো সন্তানের জীবনের মধ্য দিয়ে পাওয়ার ইচ্ছাটা বাবা মায়েদের একটা স্বহজাত প্রবৃত্তি। আদিবা জিজ্ঞেস করেন, কি মনে হয় আপনার, মাহফুজ পারবে ভালবাসা দিতে সিনথিয়া কে। সাফিনা উত্তর দেন, মাহফুজের ভালবাসা আমার কাছে সিনসিয়ার মনে হয়েছে। তবে লম্বা সময়ের দৌড়ে কি হয় তা আমরা কেউ জানি না, এইটা বলার সময় নুসাইবা আর এরশাদের কথা মাথায় আসে সাফিনার। তবে কাজল দা যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, মাহফুজ যাতে সেখানে সফল হয় আমি সেই আশা করি।
আদিবা রহমান মনযোগ দিয়ে তার ডায়েরিতে সাফিনা করিম কে নিয়ে লেখা নোট গুলো পড়ছেন। একটু পর সাফিনা করিমের সাথে তার এপয়মেন্ট আছে। বিভিন্ন রকম পেশেন্টের সাথে ডিল করতে হয় আদিবা কে, সবাই কে যদিও সমান পছন্দ করা উচিত তবে সেটা সম্ভব হয় না। সাফিনা হচ্ছেন সেরকম পেশেন্ট যাকে অপছন্দ করার উপায় নেই। শিক্ষিত, মার্জিত, রুচিশীল, সুন্দরী। তার কাছে যারা পেশেন্ট হিসেবে আসে এদের একটা বড় অংশ ডিনায়ালে থাকে। নিজেদের সমস্যা কে অস্বীকার করতে চায় বা মিথ্যা বলে লুকাতে চায়। সেই সমস্যাটা সাফিনা করিমের নেই, ফলে তার সাথে ডিল করা অনেক ইজি। সাফিনা করিমের সমস্যা গুলো এক এক করে মনে মনে সাজাতে থাকেন আদিবা। মধ্য বয়স্ক নারীদের বাংলাদেশে যে সমস্যা, সাফিনার সেটা প্রধান সমস্যা। সারাজীবন পরিবারের জন্য করলেও এই সময়টাতে পরিবারে নারীদের দাম কমতে থাকে। সন্তানরা বড় হয়ে মায়ের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। আবার স্বামী ক্যারিয়ার আর পারিপার্শ্বিকতার চাপে একটু ব্যস্ত হয়ে যায়। তার উপর অনেক বছরের বিয়ের কারণে একটু ঝিমিয়ে পড়ে নিজেদের মাঝে রসায়ন। এইসব কিছু ঘটছে সাফিনা করিমের জীবনে। ফলে এক ধরণের শূণ্যতা তৈরি হয়েছে তার। আবার যদিও স্বামী তাকে ভালবাসে এই ব্যাপারে ডাউট নেই তবে একটা জিনিস স্বামীর প্রতি এক ধরনের অভিযোগ তৈরি করেছে সাফিনার। সাফিনার মতে সাফিনার স্বামী ছেলে চেয়েছিলেন একটা। ফলে দুই মেয়ের পর আর একবার ট্রাই করতে চেয়েছিলেন ছেলের জন্য তবে সাফিনা নিজের পিএইচডি করার জন্য সেটাতে রাজি হন নি। সাফিনার ধারণা এই কারণে তার হাজব্যান্ড মনে মনে কিছুটা ক্ষুণ্ণ। তার স্বামীর মতে একজন ছেলের পরম্পরা ধরে রাখতে পারে তার ছেলে সন্তান আর নাহয় তার কাজ। এখন যেহেতু ছেলে সন্তান নেই তাই বেশি করে কাজে ঝাপিয়ে পড়ে আর সফল হতে চাচ্ছেন। যদিও সাফিনার স্বামী মুখ ফুটে কখনো কিছু বলেন নি তবে এটা সাফিনার সন্দেহ। আদিবা ভাবেন খুব কমন একটা প্রবলেম এটা। তবে এইসব কারণে সাফিনার মনে এক ধরনের ডিপ্রেশন তৈরি হয়েছে। পরিবার কে সময় দিতে ক্যারিয়ারে স্যাক্রিফাইস করেছেন এখন পরিবারের সদস্যরা যার যার জীবনে ব্যস্ত, তাকে সময় দেবার কেউ নেই। যে স্বামী কে এত ভালবাসেন, সে স্বামী একটা ছেলে সন্তানের জন্য হাহাকার করছে এটা মেনে নিতে পারছেন না সাফিনা। সব মিলিয়ে এটাই সাফিনার জীবনের ডিপ্রেশনের মূল কারণ তার মতে। তবে সাফিনার পুরাতন একটা ট্রমা আছে। যেটা সম্ভবত আজকাল ডিপ্রেশনের কারণে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। পুরাতন এক প্রেমিক ছিল। অবশ্য প্রেমিক বলা যায় না, এক পাক্ষিক প্রেম। সেই প্রেমিকের অকালমৃত্যু ট্রমা তৈরি করেছিল। সাধারণত মানুষ যখন মানসিক ভাবে দূর্বল থাকে, ডিপ্রেসড থাকে তখন তার পুরাতন ট্রমা গুলো মাথা চাড়া দেয়। সেটাও এখনকার সমস্যা কে প্রভাবিত করছে।
দরজায় নকের শব্দ। আদিবা মাথা তুলে দেখেন তার এসিসটেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। কি হয়েছে? সাফিনা ম্যাডাম এসে বাইরে অপেক্ষা করছেন। উনার শিডিউলের টাইম এখন। পাঠিয়ে দিব? আদিবা বলেন হ্যা পাঠিয়ে দাও। সাফিনা ভিতরে ঢুকেন। কুশল বিনিময় শেষে সামনের একটা সোফায় বসেন সাফিনা আর উলটো দিকের একটা সিংগেল সোফায় বসেন আদিবা। সাফিনার কাছে আদিবা রহমানের এই সেশনটা একটা খোলা জানলা। কোন রকম জাজমেন্ট ছাড়া মনের সব কথা খুলে বলা যায়। আদিবা সাইকোলজিস্ট। অনেক সময় নিজের অনেক ব্যবহার বা আচরণের নিজে মানে খুজে পান না সাফিনা তখন আদিবা তাকে বুঝতে সাহায্য করেন কিভাবে তার আচরণ কে ব্যাখ্যা করা যায় তার পাস্ট হিস্টরি দিয়ে। নিজের জীবন নিয়ে যে একটা হতাশা লাস্ট কয়েক বছর মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটা কাটাতে আদিবার এই সেশন গুলো কার্যকরী। আদিবা জিজ্ঞেস করেন সব ঠিক ঠাক চলছে তো? সাফিনা তখন এক এক করে সব বলেন লাস্ট সেশনের পর কি কি হয়েছে। সিনথিয়ার বিয়ের ব্যাপারে কথা উঠে সেখানে। আদিবার সাথে সিনথিয়ার রিলেশন নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে। আদিবা ভাল করেই জানেন সাফিনার এই রিলেশন নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে। তাই সাফিনা যখন বলেন সিনথিয়ার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করেছেন তখন একটু অবাক হন। তবে মুখে প্রকাশ করেন না কারণ একজন ভাল সাইকোলজিস্ট তার ভিতরের জাজমেন্ট লুকিয়ে রাখেন যাতে পেশেন্ট সেফ ফিল করেন। আদিবা জিজ্ঞেস করেন কি হল সেখানে? সাফিনা কয়েক সেকেন্ড সময় নিলেন। তারপর বললেন আসলে আই এম ইম্প্রেসড সো ফার এবাউট দিস বয়। আদিবা বলেন কেন? সাফিনা বলেন সিনথিয়া সব সময় রেকলেস ছিল। এর আগের বয়ফ্রেন্ড কারা সেগুলো অল্প বিস্তর আমি জানতাম আমার বড় মেয়ের মাধ্যমে। সেই সব ছেলের তুলনায় অনেক বড় ইম্প্রুভমেন্ট এই ছেলে। দ্বায়িত্বশীল, মার্জিত, কথা বলতে জানে। আমরা খোজ নিয়ে যতটুকু দেখেছি ছেলের একটা বিজনেস আছে যেটার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। সিনথিয়া যে এমন কার প্রেমে পড়তে পারে সেটা আমার ধারণা ছিল না। আদিবা জিজ্ঞেস করেন সিনথিয়া আগে কাদের প্রেমে পড়ত। সাফিনা হাসতে হাসতে বলেন, আমার ছোট মেয়েটা তো পাগলি। আগের সব ছেলের যদি কমন জিনিস বলি তাহলে দুইটা জিনিস কমন ছিল। এক সবাই টল হ্যান্ডসাম আর কোন না কোন ভাবে আকাইম্মা। আদিবা বলেন এইবারের ছেলেটা? সাফিনা বলেন টল হ্যান্ডসাম নো ডাউট কিন্তু আকাইম্মা না।
আদিবা বলেন এর আগে কয়েক সেশনে তো আপনি এই সম্পর্কের বিরোধী ছিলেন। মতামত চেঞ্জ হল কিভাবে? সাফিনা এরপর সংক্ষেপে পিছনের ঘটনা বললেন। তার ননদ নুসাইবা কে এত বড় একটা হেল্প করেছে এরপর আসলে অন্তত একবার দেখা করা ভদ্রতা ছিল। নুসাইবার পর যখন সাবরিনাও ছেলেটা সম্পর্কে পজিটিভ কথা বলল তখন তার মন খানিকটা নরম হয়। আদিবা বললেন নুসাইবা আর সাবরিনার মন নরম হবার কারণ কি? সাফিনা বললেন নুসাইবা তো এত বড় সাহায্য পেয়েছে তাই সম্ভবত মাহফুজের পক্ষে গেছে। যদিও আগে প্রবল বিরোধী ছিল। আর সাবরিনার ব্যাপারটা শিওর না যদিও। তবে তার মনে হচ্ছে সম্ভবত সিনথিয়া কোন ভাবে বোন কে রাজি করিয়েছে আর এরপর হয়ত মাহফুজের সাথে কথা বলে সাবরিনার মনে হয়েছে ছেলে ওকে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন আপনার মতামত কি তাহলে নুসাইবা আর সাবরিনার প্রেশারে চেঞ্জ হয়েছে? সাফিনা বলেন এইগুলো ফ্যাক্টর তবে মাহফুজ নিজেই আসলে তার মতামত চেঞ্জের ব্যাপারে বড় ভূমিকা রেখেছে। মাহফুজ যেভাবে কনফিডেন্টলি তার মেয়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেছে এটা তার ভাল লেগেছে। সাফিনা বলেন আমার মনে হয়েছে এই ছেলে সত্যিকার ভাবে সিনথিয়া কে ভালবাসে। আর নিজের কাজের ক্ষেত্রে মাহফুজ ভাল কনফিডেন্স দেখিয়েছে আর পরে আলাদা করে মাহফুজের সম্পর্কে খোজ নিতে গিয়ে আমরা দেখেছি ওর কথা ঠিক। ব্যবসা স্ট্রং। সবাই বেশ সুনাম করেছে মাহফুজের দুইটা ব্যবসার। আদিবা বলেন আচ্ছা বুঝেছি এইগুলো তাহলে কারণ। সাফিনা একটু ইতস্তত করেন। আদিবা অনেক বছর ধরে সাইকোলজিস্ট তাই পেশেন্টের চেহারা দেখে অনেক কিছু আন্দাজ করতে পারেন। তাই জিজ্ঞেস করেন আর কিছু কি আছে? সাফিনা বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতে হঠাত করে বলে ফেলে। আরেকটা কারণ আছে। আমার মায়ের সাথে কথা হয়েছিল আসলে এই ব্যাপারে। আদিবা জিজ্ঞেস করেন, আপনার মা কি এই ছেলের পক্ষে কথা বলেছেন? সাফিনা হ্যা সূচক মাথা নাড়ান। আদিবা বলেন বেশ করিতকর্মা ছেলে। পরিবারের সবাই কে রাজি করিয়ে ফেলেছে দেখছি। সাফিনাও মাথা নাড়ান। সাফিনা বলেন মা, মাহফুজের পক্ষে কথা বলেছেন তবে তার থেকে উনি যা বলেছেন সেইটা আমাকে বেশি নাড়া দিয়েছে।
আদিবা জিজ্ঞেস করলেন কি বলেছেন আপনার মা। সাফিনা আবার ইতস্তত করেন। মনের এই দরজাটা বহুকাল বন্ধ ছিল। আদিবা রহমানের কাছে থেরাপি নিতে এসে আবার খুলেছিলেন কিছুদিন আগে। আজকে তার মায়ের কথা বলতে গেলে সেই দরজা আবার খুলতে হবে। তবে সাফিনা জানেন আদিবার কাছে কথা বললে তার হালকা লাগে। তাই ইতস্তত লাগলেও বলতে শুরু করলেন। সাফিন বলতে থাকলেন, মা আমাকে সিনথিয়ার ব্যাপারে রাজি করানোর জন্য ফোন দিয়েছিল। আপনাকে আমি আগেও বলেছি মায়ের উপর আমার একটা পুরাতন রাগ আছে। আদিবা বললেন, কাজলের ব্যাপারটা? সাফিনা তখন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল হ্যা। মা কে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এত বছর আগে মা কেন আমাকে মানা করেছিল আর যদি করে তাহলে কেন মা এত বছর পর তার নাতনির জন্য আবার ওকালতি করছে। আমি আসলে আমার ভিতরের রাগটা চেপে রাখতে পারি নি। কাজল দা আর মাহফুজ। দুই জন পলিটিক্স করে। সেই সময় মা আমাকে বলেছিল পলিটিক্স করা কতটা ডেঞ্জারাস। কেন কাজল’দা এর সাথে মেশা যাবে না। আজকে দেখুন ত্রিশ বছর পর সব বদলে গেছে। কাজল দা এর জায়গায় মাহফুজ এসেছে, আর আমার জায়গায় সিনথিয়া। আর ওমনি মায়ের সিদ্ধান্ত বদলে গেল। জানেন কাজল দা মারা যাবার পর আমার বার বার মনে হত কাজল দা কে আমি বাচাতে পারতাম। হয়ত আমার সাথে প্রেম হলে আমি কাজল দা কে আটকে রাখতে পারতাম। অহেতুক সব ঝামেলায় ঝড়াতে দিতাম না। তাহলে হয়ত পলিটিক্যাল ঝামেলার মাঝে পড়ে এইভাবে মরতে হত না। সাফিনার চোখের কোণায় পানি টের পান আদিবা। তবে কোন কথা বলেন না, সাফিনা কে বলতে দেন। এইসব মূহুর্তে সাইকোলজিস্টদের কিছু বলার নেই বরং পেশেন্টদের বলে হালকা হতে দিতে হয়। সার্ভাইভাল গিল্ট। বেচে যাওয়া মানুষদের ভিতরে যে গ্লানি থাকে প্রিয় মানুষ কে না বাচাতে পারার সেটা বছরের পর বছর ভিতরে জমতে থেকে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। আদিবা টের পেয়েছেন আগের কয়েক সেশনে ঘর সংসার স্বামী সন্তান সব হলেও, তাদের কে ভালবাসলেও সাফিনার বুকে একটা হাহাকার রয়ে গেছে। লুকিয়ে রাখলেও সেই হাহাকার মরে যায় নি। এত বছর পর যখন সাফিনা একা বোধ করেন সব কিছুর মাঝে, তখন সেই হাহাকার গলার মাঝে জমাট বাধা কান্না হয়ে উঠে আসে। আজকে আবার কাজল এর কথা আসায় সেই অনুভূতি ফিরে আসছে।
সাফিনা একটু নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে থাকেন। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মা প্রথমে আটকে গিয়েছিল তবে পরে যা বলেছে সেটা আসলে আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। মা বলেছে কাজল মারা যাবার দা মারা যাবার পর মায়ের নিজের প্রচন্ড খারাপ লেগেছিল। মায়ের মনে হয়েছিল একটা ছেলে মারা যাবার আগে কাংখিত ভালবাসা পেল না। মা বলেছে যে, দেখ সাফিনা তুই সময়টা চিন্তা কর। প্রায় ত্রিশ বছর আগের সেই সময়টাতে ময়মনসিংহ শহর কতটা কনজারভেটিভ ছিল, তার উপর তোর বাবার কড়া নিয়ম কানুন। সেই সময় কিভাবে আমি তোকে প্রেমে উতসাহ দেই। এই ছোট শহরে কিছু গোপন থাকে না। তুই প্রেম করলে ঠিক সবাই জেনে যেত। তখন কি অবস্থা হত ভেবে দেখেছিস? আদিবা প্রশ্ন করে আপনার মায়ের কথা গুলো কি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে? সাফিনা বলে মা যখন কথা বলছিল তখন যেন আবার সেই কিশোরী সাফিনা হাজির হয়েছিল সেখানে। সব যুক্তি তখন আবেগে ভেসে গেছে। আদিবা বলে তারপর? সাফিনা বলে তারপর আর কি। আমাদের মা মেয়ের না বলা অনেক কথা সেদিন বলা হয়েছে। মা তার ভুল স্বীকার করেছে আবার এটা বলেছে যে সেই সময়ের প্রেক্ষিতে দেখতে ব্যাপারটা। আমি আমার সেই সময়ের আবেগ যেমন স্বীকার করেছি আবার মায়ের যুক্তিটাও বুঝতে পেরেছি। আদিবা বলেন তাহলে আপনাদের মা মেয়ের একটা অভিমানের জায়গা তাহলে ক্লিয়ার হয়েছে। সাফিনা বলেন কিছুটা। সেই জন্য হয়ত আমি মাহফুজের প্রতি নরম হয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমি যেই সুযোগ পাই নি সিনথিয়া সে সুযোগ পাক। কাজল দা যেই ভালবাসার স্পর্শ পায় নি মাহফুজ সেই ভালবাসার স্পর্শ পাক। আদিবা মাথা নাড়েন আর ভাবেন, নিজের জীবনের অপ্রাপ্তিগুলো সন্তানের জীবনের মধ্য দিয়ে পাওয়ার ইচ্ছাটা বাবা মায়েদের একটা স্বহজাত প্রবৃত্তি। আদিবা জিজ্ঞেস করেন, কি মনে হয় আপনার, মাহফুজ পারবে ভালবাসা দিতে সিনথিয়া কে। সাফিনা উত্তর দেন, মাহফুজের ভালবাসা আমার কাছে সিনসিয়ার মনে হয়েছে। তবে লম্বা সময়ের দৌড়ে কি হয় তা আমরা কেউ জানি না, এইটা বলার সময় নুসাইবা আর এরশাদের কথা মাথায় আসে সাফিনার। তবে কাজল দা যেখানে ব্যর্থ হয়েছিল, মাহফুজ যাতে সেখানে সফল হয় আমি সেই আশা করি।