07-05-2025, 03:48 AM
(This post was last modified: 07-05-2025, 03:52 AM by বহুরূপী. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্ব ২
রাতে এক পসলা বর্ষণ হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও তার রেশ ধরে রেখে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে চলছে হালকা হাওয়া। খানিকক্ষণ আগে বারান্দায় ঢুলে বসিয়ে সুপ্রিয়া তার শাড়ির আঁচলে কিরণের ভেজা মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বকাঝকা করছিল। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে নন্দিনী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তাঁদের দিকেই। ছেলেটা যেন এই ছ'মাসেই একদম পাল্টে গেছে,নাকি সে নিজেই ভুল বুঝেছিল তাকে? কিরণ যে এ বাড়ির মানুষ গুলোর সাথে বিশেষ ভাবে জড়িত তা সুপ্রিয়ার আচরণেই বোঝা যায়।
প্রথমটা কুন্দনন্দিনী অবশ্য স্বামী পাগল রমণীটির পরপুরুষের সম্মুখে এই বেসে দেখে যথার্থই অবাক হয়েছে। সুপ্রিয়ার দেহে তখনো শুধু শাড়ি ও কেশে বাঁধা ভেজা গামছা। তাই তার শুভ্র দেহের নগ্ন বাহু যুগল সকালের স্নিগ্ধ আলোতে দেখতে মন্দ লাগছে না যদিও। তবে সেটিই চোখে লাগার বিষয়। বিশেষ করে নন্দিনীর ধারণা ছিল পাড়াগাঁয়ের মেয়েরা ভাড়ি লাজুক স্বভাবের হয়। অবশ্য খানিকক্ষণ পর সমীরের বাসগৃহের রমণীগন যখন অন্তঃপুরে নানান কাজে বা অকাজে একই রূপে বৃষ্টি ভেজা উঠনে পায়ের দাগ ফেলে পাক খেতে লাগলো নির্দ্বিধায়,তখন নন্দিনীর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। আসলে গ্রামে পর্দা প্রথা থাকলেও তা অচেনা লোকেদের জন্যেই। কিন্তু কিরণ অচেনা লোকেদের মধ্যে পরে না। এছাড়া এইবাড়ির রমণীগন কেউ কেউ ব্লাউজ পর কেউ কেউ পরে না। এতে অতি আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, তবে নন্দিনীর গ্রামে আসা এই প্রথম।
কিন্তু সুপ্রিয়া অবশ্য পরলো। কিরণের মাথা মুছিয়ে দিয়ে সে কমলার সাথে উঠলো দোতলায়। নামলো সে নন্দিনীকে তাক লাগিয়ে। আমাদের সাধারণ সুপ্রিয়ার অসাধারণ সাজ দেখে এবার সত্যিই আশ্চর্য হলো নন্দিনী। তাও যদি কোথাও বেরোনোর হতো, কিন্তু সূপ্রিয়া সর্বাঙ্গ সোনায় মুড়িয়ে গৃহকর্মে মনোনিবেশ করলো।
যদিও রান্নাঘরে রাঁধুনীর অভাব ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও দষ্টিহীনা সুপ্রিয়া কে কেন হেঁসেলে ঢুকতে হলো সেই কারণ নন্দিনীর জানতে দেরি হলো। হবার কারণ কিরণ নামক মানুষটি। বজ্জাত লক্ষ্মীছাড়া ছেলেটি একদুবার কুন্দনন্দিনীকে দেখে একটু হেসেছিল। হয়তো এ চেনা কেউকে দেখে তার সাধারণ প্রতিক্রিয়া । তবে তাই দেখে কুন্দনন্দিনীর মনে জ্বালা ধরে গেল। জ্বালা জূড়াতে তাই সে উঠলো দোতলায়।
এদিকে সুপ্রিয়া যতখনে রান্না ও সকলের খাবার পর্ব শেষে কিরণের সহিস আলোচনা করতে বসলো। সেই সময়টা কুন্দনন্দিনী কাটালো একলা বসে খাঁচায় বন্দী ময়না পাখিটার সাথে কথা বলে। তবে লক্ষ্মীছাড়া পাখিটা "সুপ্রিয়া" ছাড়া আর কিছু বলেই না। তখন নন্দিনী গালে হাত ঠেকিয়ে নিজের কথা ভাবতে বসলো। ভবনা তার কম নয়। বন্ধু-বান্ধব,নাটক-থিয়েটার আর স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা ছেঁড়ে এই উত্তেজনা হীন নিরামিষ গ্রাম্য জীবন সে সইবে কি উপায়ে এর থেকেও বড় ভাবনার ছাপ নন্দিনীর মুখে পরেছিল। মনে তার রাগের পরিমাণও নিতান্তই কম নয়। তবে ভগবানের ওপরে তার রাগ বিশেষ নেই বললেই চলে। কারণ তিনি যে এই ধরণীতে আছেন সেই ধারণাতে কুন্দনন্দিনীর বিশ্বাস ছিল আতি অল্প। রাগ তার সবচেয়ে বেশি ছিল বাবার প্রতি,তার পর সেটুকু বাকি তা স্বামীর ওপরে সে ফুলশয্যার রাতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন নতুন করে রাগ হচ্ছে হতচ্ছাড়া কিরণের ওপরে।সেই সাথে ভাবছিল সে ভবিষ্যতের ভাবনা। তবে তার এই ভাবনার মাঝে খানিক ক্ষণ পর পর বাড়ির লোকজন নববধূর খোঁজ খবর নিতে লাগলো। সে খেতে কেন নিচে নামলো না তা নিয়েও বেশ কবার খোঁজ নেওয়া হলো। তবে নন্দিনী ছাড়া পেল গতকালের দূর্ঘটনার অজুহাতে। যদিও পায়ের ব্যথাটা ছিল তার অল্পই।
///////////
সুপ্রিয়া সেজেছিল বটে। পায়ে তার একজোড়া পুরোনো রূপোর নূপুর থাকে সর্বক্ষণ। সেই সাথে এখন তার দেহ যেন সোনায় মোড়ানো। নন্দিনীর পক্ষে অত অলঙ্কার নাম জানাতো দূরের কথা কিছু গহনা সে চিনতেই পারলো না। চেনাজানার মধ্যে চোখে পারলো লাল শাড়ির ওপাড়ে সুপ্রিয়ার কোমড় বিছা,গলার চন্দ্রহার,নাকে নোলক ও দূই কানের দুলতে থাকা দুল জোড়া। এছাড়া সুপ্রিয়ার দু'হাত ভরতি চুড়ির ঠুংটাং ধ্বনি প্রাত্যহিক গৃহকর্মে নানান আওয়াজের সাথে মিলেমিশে একাকার। লম্বা কেশ গুচ্ছ তার মোটা বিনুনির বাঁধনে আঁটকে হাঁটু ছাড়িয়ে দোল খাচ্ছে হাটার তালে তালে। এই চুলের ঝামেলা নিয়ে সুপ্রিয়া কি করে গৃহকর্ম সারবে নন্দিনী তা ভেবে পায় না।
অবশ্য সুপ্রিয়া সাজসজ্জা যতোই করুক না কেন,তাতে তার কাজকর্ম কিছুই আঁটকে থাকলো না। বিশেষ করে সুপ্রিয়ার হাতের রান্না ছাড়া মুখার্জি বাবুর নাকি মুখে কিছুই রোচে না। এই শুনে নন্দিনীর ঠিক বিশ্বাস হয়নি। তবে সুপ্রিয়ার হাতের রান্না খেয়ে সে প্রশংসা না করে থাকতেও পারে নি। তবে এরপরেও সে ভেবেছিল কমলা বোধকরি রান্নার সময় সুপ্রিয়ার দৃষ্টির কাজ করে। কিন্তু তার কথা শুনে কমলা হেসে বললে,
– ওমা! তা হবে কেন? আমি ত এবাড়িতে এসেছি দু বছর হলো। বৌদি ত এই করছে গত চৌদ্দ বছর।
কথা মিথ্যে নয়। কমলা দুবছর আগে সেই যে স্বামীর ঘর থেকে এখানে এসেছিল,তাকে আজ পর্যন্ত আর স্বামীর ঘরে ফিরতে হয়নি। যদিও এই ঘটনা অল্পে বর্ননা করা চলে,তবে সে কথা এখন নয়।
– এতেই অবাক হলে বৌ, আমি তো সেই ছোট্ট টি থেকে দেখছি। প্রথম যখন জয়নগরের হাট থেকে বাবা ফিরে বললেন কাল দাদার বিয়ে এবং কন্যাটি অন্ধ, তখন মায়ের কন্না দেখে কে। একটা মাত্র ছেলে তার। সেই ছেলের বৌ যদি অন্ধ হয়, ত কেমন লাগে বল? কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বৌদি কাজে কর্মে মায়ের প্রিয় হয়ে উঠলো। তারপর মা চলে গেলেন, বৌদির হাতে উঠলো সংসার।
ইন্দিরার গলাটা যেন একটু কেঁপে উঠলো । দুই সন্তানের মৃত্যুর পর জমজ বোন সিন্দু আর ইন্দিরা। মায়ের সে আঁচল ধরাই ছিল। তাই মায়ের কথা মনে করতেই বেচারির চোখে জল এলো। তবে চোখের জল তার মুছিয়ে দিলে সুপ্রিয়া। সে সবে মাত্র হাতের কাজ সেরে ছাদে উঠেছে। আলোচনা মগ্ন থাকায় কারোরই সেদিকে খেয়াল ছিল না।
– কাজ কর্ম ফাঁকি দিয়ে দিব্যি ছাদে বসে আড্ডা চলছে! ওদিকে আমি খেটে খেটে সারা হলাম, সে খেয়াল আছে কারো?
বলতে বলতে সে ইন্দিরার হাত ধরে পাশে আয়েশ করে বসলো । তবে তার কথা কারোরই কানে লাগলো না। তার কারণ বোধকরি সুপ্রিয়া হাতের চিঠিখানি।
– ওটা কি নিয়ে এলে বৌদি! চিঠিপত্র বুঝি?
কমলা জিগ্যেস করলে খানিক কৌতুকের ভঙ্গিতেই। তবে এই সব ব্যপারে সুপ্রিয়া আরও রসিকা।
_ হ্যাঁ, ওই পত্রই বটে। আমাদের শহুরে জামাইবাবু চিঠি দিলেন। আমায় তার খুব মনে পরে কি না! তা চোখ ত বিধাতা দিলে না যে রসের পত্র পড়বো,তাই নিয়ে এলাম ইন্দুর কাছে। যদি পড়ে শোনান আমাদের।
এবার এক কান্ড হলো বটে। ইন্দিরা সুপ্রিয়ার হাত থেকে চিঠি নিতে গেল। কিন্তু ইন্দিরা হালকা মেয়ে,সে স্বাস্থ্যবতি সুপ্রিয়া সাথে পারবে কেন? চিঠি সুপ্রিয়া আঁচলে লুকিয়ে ইন্দিরার গলা জড়িয়ে ধরলো ছড়া গান,
গান শেষ হলো না। তার আগেই ইন্দু লজ্জায় মুখ লাল করে ছুটে গেল নিচে। বিবাহ তার খুব পুরোনো নয়,তাই স্বামীর চিঠিতে লজ্জায় রাঙা হবার কারণ ইন্দিরার ছিল। তবে তার লজ্জায় দৌড়ে যাওয়ার পেছনে মেয়েদের হাসির রোল উঠলো। সূপ্রিয়া তখন গান ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললে,
– চিঠিটা নিয়ে যা ভাই,নয়তো উত্তর দিবি কি করে?
দুপুরের আড্ডা ওখানেই সমাপ্ত। তবে আর একটু বেলা গড়াতেই রোয়াকে লক্ষ্মী বৌ'টির মতো মাথায় আচল টেনে বসতে হলো কুন্দনন্দিনীকে। সে ভেবেছিল পাড়াপড়শিদের কৌতুহল হয়তো গলকাল সন্ধ্যাতেই মিটে গিয়েছে। কিন্তু এখন দেখা গেল একে এক গ্রামের মেয়ে বৌ এমনকি বুড়িরাও এসে ভিড় করলো কুন্দনন্দিনীকে চোখের দেখা দেখতে। এরমধ্যে এক বৃদ্ধা— খুব সম্ভবত সুপ্রিয়ার বিশেষ পরিচিত। কেন না, সে এসেই সবাইকে ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিয়ে বললে,
– ও লো মুখপুড়ির দল সর ত দেখি! দেখতে দে শহুরে মাগিটা হল কেমন!:
বৃদ্ধার গাল শুনে এলোমেলো ভিড় দু ভাগে ভাগ হয়ে দুদিকে সরে দাড়ালো। এদিকে এতো গুলো লোক সম্মুখে এমন গাল শুনে কুন্দনন্দিনীর ফর্সা মুখ কান পর্যন্ত সিঁদুর রাঙা হয়ে উঠলো। তবে বেশি ভাববার সময় সে পেল না। তার আগেই সুপ্রিয়া হাসি মাখানো সুরে বললে,
– মাগি দেখতে তোমার থেকে মন্দ গো ঠাকমা! চিন্তা নেই, তোমার ছোটবাবুর তোমায় ছাড়া চলছে না।
শুনে সকলেই হাসলো। তবে নন্দিনী এই সবে অভ্যস্ত নয় মোটেও। তাই এদের কথাবার্তায় সে ঠিক তাল মেলাতে পারলো না। অবশ্য নববধূর কাছে থেকে কেউ কথা শুনতেও আসে নি। তাই যা কথা হলো তার অধিকাংশই সুপ্রিয়ার সাথে।
–আহা, মাগির হাসে দেখলে গা জ্বলে। বলি সতিন কাটা গলায় যে বিঁধিয়ে আনলি, এখন কয়দিন সয় তাই দেখবো।
– এতগুলো বছর গেল তোমার মতো বুড়িকে সইছি আর ও ত একফোঁটা মেয়ে। ও আমার কি ক্ষতিটা করবে শুনি?
– হয়েছে হয়েছে, আর রঙ্গকরে কাজ নেই! মাগির সাজের ঘটা দেখলে মনে হয় যেন বাইজি। যাক বাপ সে সবে আমার কাজ কি?একখানা পান খাওয়াতো দেখি.......
বুড়ি সুপ্রিয়াকে মৃদু ভর্ৎসনা করে পানের কথা বলে পরলো নন্দিনীকে নিয়ে। কথা সে বললো অনেক,তবে নন্দিনী উত্তর করলে অল্প ভাষায়।
– ও লো সুপ্রিয়া! বৌ দেখি লজ্জায় মুখ তোলে না। ছোটবাবুর ভাগ্য খুললো এবার।
সুপ্রিয়া এক ধারে বসে পান সাজতে সাজতে মুখ বাঁকিয়ে বললে,
– তা খুলবে বৈ কি! বিয়ে তো সে করেনি,আমি হাতেধরে করিয়েছি। এমন বৌ পেতে সাধনা করতে হয় মনে রেখো।
কথা শেষ করে এক এক করে খান কয়েক কৌটো তুলে ঘ্রাণ নিয়ে সে সাজিয়ে রাখলো হাতে কাছে। তার পর দুখানি পান সেজে একটি মুখে পুরে অন্যটি এগিয়ে ধরলো বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে। বুড়ি এগিয়ে গিয়ে পান নিয় বসলো সুপ্রিয়ার পাশে। কানে কানে কথা হলো তাদের। কি কথা হলো তা কে জানে? তবে কথা শেষ হতেই সুপ্রিয়ার সুন্দর মুখখানা আবারও হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
– মরণ আমার! এই বয়সেও বুড়ি তোমার রস গেল না?
হাসি ঠাট্টা ও বাঁশ ঝির থেকে ভেসে আসা ঝিরঝিরি হাওয়াতে তাদের আলোচনার আসর চললো অনেকক্ষন। এরপর সমীর এলো শেষ বিকেলে। সে আজ রাধাপুরিই দুপুরের আহার সেরেছে। এরপর গাঁয়ে ফিরলেও তৎক্ষণাৎ গৃহে ফেরার উপায় ছিল না। কেন না মধুপুরে তার রোগির সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে জয়নগর ছাড়া আসপাশের দশ গ্রামের মধ্যে মুখার্জি বাড়ি বাতিত যখন আর কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই— তখন সমীরকে ডাকা ছাড়া উপায় কি আর? জয়নগরের দূরত্ব কম,নৌকায় গেলেও দুপুরে রওনা করলে পৌঁছাতে সন্ধ্যে গড়ায়।
সমীর গৃহে ফিরে পুকুর ঘাঁটে স্নান করতে আসতেই তার দেখা হলো নন্দিনীর সহিত। ইন্দিরা তখন ঘুরে ফিরে নন্দিনীকে বাড়ি-বাগান সব দেখিয়ে বেরাছিল। এদিকে স্বামীর পিছু পিছু সুপ্রিয়া ও এসে পৌছালো ঘাটে। ঘাঁটের ওপর দিকটায় পাকা বাঁধানো বসার স্থান ছিল। তিন রমণী একত্রে বসে খানিক ক্ষণ গল্প করে কাটালেও, নন্দিনীর কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিল। সমীরের বিয়ে করা বৌ সে। স্বামীকে আদ্র বস্ত্রে দেখলে অস্থির অস্থির লাগাটা বোধহয় উচিত নয়। তবে সমীর জল থেকে উঠে এলে এক দুবার তার দিকে চোখ পরতেই কুন্দনন্দিনীর বুকখানি শিরশির করতে লাগলো। সমীরের বলিষ্ঠ কালো বুক খানি ঘন লোমের অরণ্যে ঢাকা। শিরা বহুল কঠিন হাত দুখানে দেখেই হঠাৎ নন্দিনী গলা শুকিয়ে গেল। মন পরলো কদিন আগেই এই লম্বা-চওড়া লোকটিকে রাগের মাথায় সে কত কথাই না শুনিয়েছে। অপরাধ সমীরের কিছু ছিল নাকি ছিল না— সে তো পরের কথা। বর্তমানে নন্দিনীর ভাবনা স্বামীর ওই বলিষ্ঠ হাত দুখানি তার কোমল বাহু চেপে ধরলে সে ছাড়াবে কি উপায়ে? চিৎকার হয়তো করা যায়! তবে এতে লোক হাসানো ছাড়া আর কিই বা হবে? স্বামী তার স্ত্রীকে সোহাগ করতে চেপে ধরেছে— এতে পাড়াপড়শির বা বাড়ির লোকের কি করার আছে? তাছাড়া দোতলায় রাতের আঁধারে রাগের মাথা ওই শক্ত হাত দুটো তার নধর শরীরের চেপে বসলে দম তার এমনি বেরিয়ে যাবে!
/////////////
রাত্রি বেলা সুপ্রিয়া রান্নাঘরে ঢুকেছিল শ্বশুরমশাইয়ের জন্যে চা করতে। কমলা সাথেই ছিল,তবে নন্দিনী তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই বসেছিল সুপ্রিয়ার পাশে। কিন্তু কমলা তা শুনতে নারাজ। অবশেষে সুপ্রিয়াই কমলাকে পাঠিয়ে দিল আলোচনার সুবিধার্থে। কথাবার্তার মাঝে এক সময়ে নন্দিনী বলে উঠলো,
– শুধু রান্নাবান্না আর ঘরকন্না দেখবে বলেই কি তোমার ভগবান মেয়েদের বানিয়েছেন দিদি?
– মেয়ের কথা শোন! আমি কি তাই বললাম নাকি? কই আমাদের বাড়িতেও ত চাঁপা আর রেশমা কাজ করে। তাই বলে ওরা কি ঘরের লোককে রেঁধে খাওয়াতে মানা করে?
সুপ্রিয়ার কথায় নন্দিনীর অল্প রাগ হলো হাসলো। তারপর বললে,
– কি যে বল দিদি। ওতো সেই ঝি গিড়ি,ঘরে রই কাজ সব। আমি সে কথা বলিনি।
– অত তো জানিনে ভাই। আমি জানি কাজ কাজওই হয়। তাছাড়া ঝি গিড়িও বড় সহজ কাজ নয়। জীবনে ত কাউকে রেঁধে খাওয়াসনি,তুই এই সব বুঝবি না।
– সে কথা রেখে আমার কথায় জবাব দাও দেখি,এছাড়া আর কিছুই আমি শুনছি না।
– সব মেয়েদের কথা ত বলতে পারিনে ভাই। তবে যদি আমার কথা বলিস তবে ভাই ঘরের লোককে আমি থাকতে অন্যের হাতের রান্না খাওয়াতে আমার লজ্জা করে। হাজার হোক ও বাবা ইচ্ছে, তাছাড়া স্বামী সন্তানদের যদি নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াতেই না পারি তবে মেয়ে হয়ে জন্মেছি কেন বল? নিজের লোকের রান্নায় যে ভালোবাসা মেশানো থাকে তা কি আর বামুন ঠাকুরদের দিয়ে হবে বলে? সাধে কি আর লোকে বলে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা!
কথাটার নন্দিনী কোন বিরুদ্ধ যুক্তি দাড় করাতে পারলো না। হটাৎ মনে পরে গেলে কলেজের বান্ধবী জবা একবার বলে ছিল“ চল আজ তোকে মায়ের হাতের রান্না খাওয়াবো। দেখিস এই রান্নার স্বাদই অন্যরকম। খেয়েছিস তো আজীবন ভাড়া করা বামুনের আবর্জন...” আরো অনেক কথা সে বলেছিল নন্দিনীকে। সেদিন প্রথম মায়ের মতো কেউ পাশে বসে আদর করে খাইয়ে ছিল কুন্দনন্দিনীকে।
মায়ের মতো? কে জানে? তবে নন্দিনীর মনে পরে সেদিন জোর করেই সে খানিক বেশি খেয়েছিল বান্ধবীর মাকে খুশি করতে। খানিক আদর পেতেও বটে। নিজের মায়ের আদর ত সে পায়নি কখনোই। এইসব ভাবনা নন্দিনীর মাথায় ঘুরছিল এখন। এদিকে সুপ্রিয়াও অবশ্য চুপ নেই, তার কথা শেষ হয়নি এখনো,
– তুই নিজে একদিন ভালোবেসে রেঁধে খাইয়ে দেখিস তাকে। আর কটা দিন যাক, তোকে সব শিখিয়ে দেব না হয়। এটা শিখে রাখলে কাজে দেবে। তাছাড়া হৃদয়ে সহিত উদরের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ কি-না! আমার মা বলতেন উদর হল হৃদয়ের পৌঁছানোর চাবি.......
সুপ্রিয়ার কথার মাঝে কমলা এসে সমীরের ফেরার সংবাদ দিল। সন্ধ্যার পরপর সমীর আর একবার কোথায় যেন বেরিয়েছিল। এখন কমলার কথায় সুপ্রিয়া চায়ের দ্বায়িত্ব তার হাতে দিয়ে নিজে উঠেল গেল । গেল সে স্বামীর ঘরে। তবে বীনা কারণে নয়। স্বামীর সাথে তার কিছু গোপন কথা ছিল । জানার ছিল গত রাতের কথা। বিয়ে বাড়িতে সমীর ও নন্দিনীর ব্যপারটা সুপ্রিয়াও জানতো।
নন্দিনী ফুলশয্যার দিন সুপ্রিয়া ঘুম হয়নি। যদিও আমাদের সুপ্রিয়ার মনে বিষ বা কাটা কোনটাই নেই,তথাপি বিয়ের দু'দিন পর ফুলশয্যার খাট সাজিয়ে রাত্রিতে স্বামীকে আর একজনের হাতে তুলে দিতে বুকে তার ব্যথা খানিক লেগেছিল বৈ কি। তবে সেই ব্যথা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মধ্যরাতে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি শব্দে বুক খানি তার কেঁপে উঠেছিল অজানা ভয়ে।
যদিও শহুরে ভূতের নাম ডাক সে কখনো শোনিনি। তবুও বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ড কেমন যেন করছিল তার। তবে সাহস করে সে ডেকেছিল কোনমতে। এবং খানিক পর ভূতের আশংকাকে মিথ্যা করে ডাকে সারা দিয়েছিল তার স্বামী। তখন বাইরে বেরিয়ে স্বামীর কাছে ঘেষে সুপ্রিয়া বুঝেছিল স্বামী তার সিগারেট টানছেন। তখন সুপ্রিয়াই স্বামীর হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে নিয়ে এসেছিল তার ঘরে। কিছু একটা হয়েছে তার আভাস সে পেয়েছিল। বাকিটা স্বামীর পায়ের কাছে বসে নরম হাতের আলতো ছোঁয়ায় উরুতে বুলিয়ে বুলিয়ে— গত চৌদ্দ বছরের প্রেমময় অভিজ্ঞতাকে সঙ্গি করছ একে একে সব কথা বের করে নিয়েছে। তারপর পুরষ্কার হিসেবে স্বামীর কাছে নিজেকে করেছে দান।
এই হিসেবে ধরতে গেলে বিয়ে সমীরের নন্দিনীর সাথে হলেও মধুচন্দ্রিমা হয়েছে সুপ্রিয়ার সহিত। রমণরতা রমণীর কামার্ত আকর্ষণে কাছে সমীর বেশিক্ষণ নিজের ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। প্রশ্নের পর প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে তার মনে লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি কিছুই। আর তাই তো অত ঘটা করে দোতলায় নিজের ঘরটি সুপ্রিয়া সাজিয়ে দিয়েছিল কাল। উদ্দেশ্য ছিল স্বামীকে বুঝিয়ে দেওয়া তার ভালোবাসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই চেষ্টা তার বুঝি ব্যার্থ গেল।
অবশ্য স্বামীর ঘরে গিয়ে এই সংবাদ হাসিল করতে খানিক প্রগল্ভতাই করতে হলো তাকে। স্বামীটি তার সহজ নয়,পেটের কথা সহজে বাইরে বেরুতে চায় না। তবে সুপ্রিয়া যখন শাড়ির আঁচলটা খানিক আগলা করে নাকের নোলক নেড়ে স্বামীর পায়ের কাছে বসে! তখন সমীরের কি যে মোহ লাগে তা সে নিজেও বোঝে না। সমীরের মনে হয় সুপ্রিয়া এমনটি করে জেনে বুঝে।
আজও সুপ্রিয়া স্বামীর পায়ের কাছে বসতে গিয়েছিল। সমীর তার হাতে ধরে বসিয়েছে কোলে। টেবিলে রাখা আট টাকা দামের টেবিল ল্যাম্পের রাঙা আলোতে সে উপভোগ করছিল স্ত্রীর নিঃশব্দ বেহায়াপনা। শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারছিল লাস্যময়ী এই রমণীর দৈহিক ঐশ্বর্য। ব্লাউজে ঢাকা বিশাল বুক দুখানি নিঃশ্বাসের সাথে কেমন ফুলে ফুলে উঠছিল। তার রাঙা ব্লাউজের গলার ফাঁক দিয়ে চন্দহারে আড়ালে বৃহৎ বক্ষ যুগলের গহীন বিভাজিকা অল্প দেখা যায়। সমীর বাঁ হাতের আঙুলে সুন্দরী স্ত্রীর শাড়ি আঁচল খানিক নামিয়ে নিল। তারপর সেই হাতেই কোমর বিছার আড়াল থেকে সুপ্রিয়ার সুগভীর নাভীটিকে আলো দেখালো। সুপ্রিয়া দেবী এতক্ষন চুপ ছিল, কিন্তু এবার নরম নিতম্বে কঠিন কিছুর ছোঁয়া লাগতেই তার মুখ খুললো,
– খোকাকে খাওয়ানো হয়নি। আচ্ছা,রাতে কি তুমি এখানেই থাকবে ?
কথা তার শুরু হলো এই রূপেই। এরপর প্রশ্ন ছুঁড়ল একের পর এক। তার ফাঁকে ফাঁকে স্বামীর অবাধ্য হাতটিকে তার কোমল হাতের আলতো চাপড়ে শাসন করতে লাগলো।
– উফ্...কি হচ্ছে এই সব! ছি লক্ষ্মী্টি ঘরের দুয়ার খোলা.... তারপর কি হল বল না?
বলতে বলতেই সুপ্রিয়া ব্লাউজ ঢাকা তুলতুলে স্তন দুখানি স্বামীর বুকে আলতো ভাবে চেপে ধরে।
– কি আর হবে? খানিকক্ষণ পরেই সে ঘুমিয়ে কাদা। তখন জানালা লাগিয়ে ময়নার কাছে খানিকক্ষণ বসে ভাবলাম জানো.....
একে একে সবই বলে সে,কথা লুকানোর উপায় থাকে না সমীরের। সুপ্রিয়া মাঝে মাঝে এমন জ্বালাতন করলেও, হাতে সময় থাকলে স্বামী সেবায় সে কোন ত্রুটি রাখে না। কিন্তু এখন সেই সময়টা তার নেই। তাবে সমীর কিন্তু সুপ্রিয়ার বাঁধা উপেক্ষা করে ব্লাউজ ঢাকা নরম মাংসপিণ্ডে হাত রাখলো। খান কয়েক জোরালো টেপন দিতেই গোলাকার আকৃতি মাঝে অল্প এটু জায়গা ভিজে উঠলো। পরক্ষণেই ব্লাউজের পাতলা কাপড় ঠেলে মাথা তুলে দাঁড়ালো আঙ্গুর ফলের মতো স্তনবৃন্ত দুটি। সমীর সেই রসালো বোঁটাতে আঙুল ঘেঁষতেই “ উফফফ্....” বলে খানিক কেঁপে উঠলো সুপ্রিয়া। খোকার বয়স এখন চার বছর। তবে ছেলেটার সব কিছুই হয়েছে দেরিতে। কথা গুলো তার এখনো এলো মেলো। মায়ের দুধ ছেঁড়েছে মাস দুই আগে।তাই এখনো সুপ্রিয়ার বুকের দুধ শুকায় নি,জোরে চাপ দিলে সাদা সাদা তরলের স্রোত এখনো ব্লাউজ ভিজিয়ে দেয়।
– অনেক হয়েছে, ছাড় দেখি। কাছে পেলেই বুঝি হাত নিষপিস করে তোমার।
স্বামীর কাঁধে সম্পুর্ণ দোষ চাপিয়ে সুপ্রিয়া উঠে দাঁড়ালো। যেই কাজে সে এসেছিল সেটি তার জানা হয়ে গিয়েছে। তাই শাড়ি খানি ঠিকঠাক করে মাথায় আঁচল টেনে সে স্বামীর কাছে বিদায় নিয়ে চটজলদি বেরিয়ে এল বাইরে। পরলো সে নন্দিনীর সম্মুখে। নন্দিনীর অবশ্য তাকেই প্রয়োজন ছিল। তাই শশুর মশাইকে চা দিয়ে সে এসে ছিল সুপ্রিয়াকে খুঁজতে। কিন্তু কতখন আগে সে এসে এইখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল তা সুপ্রিয়ার জানা হলো না।
এদের পারিবারিক ঘটনা গুলো চলছে ধির গতিতে। অনেকটা গরুর গাড়ির মতোই। তবে চলতে থাকুক,এর মধ্যে আর ব্যস্ততাল অজুহাত দেখিয়ে লাভ নেই।ওটা মানুষের সব সময়ের সঙ্গি। পরবতী আপডেট শুক্রবার দেবার চেষ্টা থাকবে।
রাতে এক পসলা বর্ষণ হয়ে গিয়েছে। তবে এখনও তার রেশ ধরে রেখে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সাথে চলছে হালকা হাওয়া। খানিকক্ষণ আগে বারান্দায় ঢুলে বসিয়ে সুপ্রিয়া তার শাড়ির আঁচলে কিরণের ভেজা মাথা মুছিয়ে দিতে দিতে বকাঝকা করছিল। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে নন্দিনী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল তাঁদের দিকেই। ছেলেটা যেন এই ছ'মাসেই একদম পাল্টে গেছে,নাকি সে নিজেই ভুল বুঝেছিল তাকে? কিরণ যে এ বাড়ির মানুষ গুলোর সাথে বিশেষ ভাবে জড়িত তা সুপ্রিয়ার আচরণেই বোঝা যায়।
প্রথমটা কুন্দনন্দিনী অবশ্য স্বামী পাগল রমণীটির পরপুরুষের সম্মুখে এই বেসে দেখে যথার্থই অবাক হয়েছে। সুপ্রিয়ার দেহে তখনো শুধু শাড়ি ও কেশে বাঁধা ভেজা গামছা। তাই তার শুভ্র দেহের নগ্ন বাহু যুগল সকালের স্নিগ্ধ আলোতে দেখতে মন্দ লাগছে না যদিও। তবে সেটিই চোখে লাগার বিষয়। বিশেষ করে নন্দিনীর ধারণা ছিল পাড়াগাঁয়ের মেয়েরা ভাড়ি লাজুক স্বভাবের হয়। অবশ্য খানিকক্ষণ পর সমীরের বাসগৃহের রমণীগন যখন অন্তঃপুরে নানান কাজে বা অকাজে একই রূপে বৃষ্টি ভেজা উঠনে পায়ের দাগ ফেলে পাক খেতে লাগলো নির্দ্বিধায়,তখন নন্দিনীর চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। আসলে গ্রামে পর্দা প্রথা থাকলেও তা অচেনা লোকেদের জন্যেই। কিন্তু কিরণ অচেনা লোকেদের মধ্যে পরে না। এছাড়া এইবাড়ির রমণীগন কেউ কেউ ব্লাউজ পর কেউ কেউ পরে না। এতে অতি আশ্চর্য হবার কিছুই নেই, তবে নন্দিনীর গ্রামে আসা এই প্রথম।
কিন্তু সুপ্রিয়া অবশ্য পরলো। কিরণের মাথা মুছিয়ে দিয়ে সে কমলার সাথে উঠলো দোতলায়। নামলো সে নন্দিনীকে তাক লাগিয়ে। আমাদের সাধারণ সুপ্রিয়ার অসাধারণ সাজ দেখে এবার সত্যিই আশ্চর্য হলো নন্দিনী। তাও যদি কোথাও বেরোনোর হতো, কিন্তু সূপ্রিয়া সর্বাঙ্গ সোনায় মুড়িয়ে গৃহকর্মে মনোনিবেশ করলো।
যদিও রান্নাঘরে রাঁধুনীর অভাব ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও দষ্টিহীনা সুপ্রিয়া কে কেন হেঁসেলে ঢুকতে হলো সেই কারণ নন্দিনীর জানতে দেরি হলো। হবার কারণ কিরণ নামক মানুষটি। বজ্জাত লক্ষ্মীছাড়া ছেলেটি একদুবার কুন্দনন্দিনীকে দেখে একটু হেসেছিল। হয়তো এ চেনা কেউকে দেখে তার সাধারণ প্রতিক্রিয়া । তবে তাই দেখে কুন্দনন্দিনীর মনে জ্বালা ধরে গেল। জ্বালা জূড়াতে তাই সে উঠলো দোতলায়।
এদিকে সুপ্রিয়া যতখনে রান্না ও সকলের খাবার পর্ব শেষে কিরণের সহিস আলোচনা করতে বসলো। সেই সময়টা কুন্দনন্দিনী কাটালো একলা বসে খাঁচায় বন্দী ময়না পাখিটার সাথে কথা বলে। তবে লক্ষ্মীছাড়া পাখিটা "সুপ্রিয়া" ছাড়া আর কিছু বলেই না। তখন নন্দিনী গালে হাত ঠেকিয়ে নিজের কথা ভাবতে বসলো। ভবনা তার কম নয়। বন্ধু-বান্ধব,নাটক-থিয়েটার আর স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরা ছেঁড়ে এই উত্তেজনা হীন নিরামিষ গ্রাম্য জীবন সে সইবে কি উপায়ে এর থেকেও বড় ভাবনার ছাপ নন্দিনীর মুখে পরেছিল। মনে তার রাগের পরিমাণও নিতান্তই কম নয়। তবে ভগবানের ওপরে তার রাগ বিশেষ নেই বললেই চলে। কারণ তিনি যে এই ধরণীতে আছেন সেই ধারণাতে কুন্দনন্দিনীর বিশ্বাস ছিল আতি অল্প। রাগ তার সবচেয়ে বেশি ছিল বাবার প্রতি,তার পর সেটুকু বাকি তা স্বামীর ওপরে সে ফুলশয্যার রাতেই বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন নতুন করে রাগ হচ্ছে হতচ্ছাড়া কিরণের ওপরে।সেই সাথে ভাবছিল সে ভবিষ্যতের ভাবনা। তবে তার এই ভাবনার মাঝে খানিক ক্ষণ পর পর বাড়ির লোকজন নববধূর খোঁজ খবর নিতে লাগলো। সে খেতে কেন নিচে নামলো না তা নিয়েও বেশ কবার খোঁজ নেওয়া হলো। তবে নন্দিনী ছাড়া পেল গতকালের দূর্ঘটনার অজুহাতে। যদিও পায়ের ব্যথাটা ছিল তার অল্পই।
///////////
সুপ্রিয়া সেজেছিল বটে। পায়ে তার একজোড়া পুরোনো রূপোর নূপুর থাকে সর্বক্ষণ। সেই সাথে এখন তার দেহ যেন সোনায় মোড়ানো। নন্দিনীর পক্ষে অত অলঙ্কার নাম জানাতো দূরের কথা কিছু গহনা সে চিনতেই পারলো না। চেনাজানার মধ্যে চোখে পারলো লাল শাড়ির ওপাড়ে সুপ্রিয়ার কোমড় বিছা,গলার চন্দ্রহার,নাকে নোলক ও দূই কানের দুলতে থাকা দুল জোড়া। এছাড়া সুপ্রিয়ার দু'হাত ভরতি চুড়ির ঠুংটাং ধ্বনি প্রাত্যহিক গৃহকর্মে নানান আওয়াজের সাথে মিলেমিশে একাকার। লম্বা কেশ গুচ্ছ তার মোটা বিনুনির বাঁধনে আঁটকে হাঁটু ছাড়িয়ে দোল খাচ্ছে হাটার তালে তালে। এই চুলের ঝামেলা নিয়ে সুপ্রিয়া কি করে গৃহকর্ম সারবে নন্দিনী তা ভেবে পায় না।
অবশ্য সুপ্রিয়া সাজসজ্জা যতোই করুক না কেন,তাতে তার কাজকর্ম কিছুই আঁটকে থাকলো না। বিশেষ করে সুপ্রিয়ার হাতের রান্না ছাড়া মুখার্জি বাবুর নাকি মুখে কিছুই রোচে না। এই শুনে নন্দিনীর ঠিক বিশ্বাস হয়নি। তবে সুপ্রিয়ার হাতের রান্না খেয়ে সে প্রশংসা না করে থাকতেও পারে নি। তবে এরপরেও সে ভেবেছিল কমলা বোধকরি রান্নার সময় সুপ্রিয়ার দৃষ্টির কাজ করে। কিন্তু তার কথা শুনে কমলা হেসে বললে,
– ওমা! তা হবে কেন? আমি ত এবাড়িতে এসেছি দু বছর হলো। বৌদি ত এই করছে গত চৌদ্দ বছর।
কথা মিথ্যে নয়। কমলা দুবছর আগে সেই যে স্বামীর ঘর থেকে এখানে এসেছিল,তাকে আজ পর্যন্ত আর স্বামীর ঘরে ফিরতে হয়নি। যদিও এই ঘটনা অল্পে বর্ননা করা চলে,তবে সে কথা এখন নয়।
– এতেই অবাক হলে বৌ, আমি তো সেই ছোট্ট টি থেকে দেখছি। প্রথম যখন জয়নগরের হাট থেকে বাবা ফিরে বললেন কাল দাদার বিয়ে এবং কন্যাটি অন্ধ, তখন মায়ের কন্না দেখে কে। একটা মাত্র ছেলে তার। সেই ছেলের বৌ যদি অন্ধ হয়, ত কেমন লাগে বল? কিন্তু মাস ঘুরতে না ঘুরতেই বৌদি কাজে কর্মে মায়ের প্রিয় হয়ে উঠলো। তারপর মা চলে গেলেন, বৌদির হাতে উঠলো সংসার।
ইন্দিরার গলাটা যেন একটু কেঁপে উঠলো । দুই সন্তানের মৃত্যুর পর জমজ বোন সিন্দু আর ইন্দিরা। মায়ের সে আঁচল ধরাই ছিল। তাই মায়ের কথা মনে করতেই বেচারির চোখে জল এলো। তবে চোখের জল তার মুছিয়ে দিলে সুপ্রিয়া। সে সবে মাত্র হাতের কাজ সেরে ছাদে উঠেছে। আলোচনা মগ্ন থাকায় কারোরই সেদিকে খেয়াল ছিল না।
– কাজ কর্ম ফাঁকি দিয়ে দিব্যি ছাদে বসে আড্ডা চলছে! ওদিকে আমি খেটে খেটে সারা হলাম, সে খেয়াল আছে কারো?
বলতে বলতে সে ইন্দিরার হাত ধরে পাশে আয়েশ করে বসলো । তবে তার কথা কারোরই কানে লাগলো না। তার কারণ বোধকরি সুপ্রিয়া হাতের চিঠিখানি।
– ওটা কি নিয়ে এলে বৌদি! চিঠিপত্র বুঝি?
কমলা জিগ্যেস করলে খানিক কৌতুকের ভঙ্গিতেই। তবে এই সব ব্যপারে সুপ্রিয়া আরও রসিকা।
_ হ্যাঁ, ওই পত্রই বটে। আমাদের শহুরে জামাইবাবু চিঠি দিলেন। আমায় তার খুব মনে পরে কি না! তা চোখ ত বিধাতা দিলে না যে রসের পত্র পড়বো,তাই নিয়ে এলাম ইন্দুর কাছে। যদি পড়ে শোনান আমাদের।
এবার এক কান্ড হলো বটে। ইন্দিরা সুপ্রিয়ার হাত থেকে চিঠি নিতে গেল। কিন্তু ইন্দিরা হালকা মেয়ে,সে স্বাস্থ্যবতি সুপ্রিয়া সাথে পারবে কেন? চিঠি সুপ্রিয়া আঁচলে লুকিয়ে ইন্দিরার গলা জড়িয়ে ধরলো ছড়া গান,
“মনের সুতোয় গাঁথলাম সই গো প্রেমেরও মালা,”
“সেই মালা গলায় দিয়া বারলো মোর যৌবন জ্বালা।”
“কি যে সে জ্বালা সই গো,সহে না এই দেহে,
“বাঁশির সুরে প্রাণ কাঁদে মোর বন্ধুরও বিরহে ......”
গান শেষ হলো না। তার আগেই ইন্দু লজ্জায় মুখ লাল করে ছুটে গেল নিচে। বিবাহ তার খুব পুরোনো নয়,তাই স্বামীর চিঠিতে লজ্জায় রাঙা হবার কারণ ইন্দিরার ছিল। তবে তার লজ্জায় দৌড়ে যাওয়ার পেছনে মেয়েদের হাসির রোল উঠলো। সূপ্রিয়া তখন গান ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললে,
– চিঠিটা নিয়ে যা ভাই,নয়তো উত্তর দিবি কি করে?
দুপুরের আড্ডা ওখানেই সমাপ্ত। তবে আর একটু বেলা গড়াতেই রোয়াকে লক্ষ্মী বৌ'টির মতো মাথায় আচল টেনে বসতে হলো কুন্দনন্দিনীকে। সে ভেবেছিল পাড়াপড়শিদের কৌতুহল হয়তো গলকাল সন্ধ্যাতেই মিটে গিয়েছে। কিন্তু এখন দেখা গেল একে এক গ্রামের মেয়ে বৌ এমনকি বুড়িরাও এসে ভিড় করলো কুন্দনন্দিনীকে চোখের দেখা দেখতে। এরমধ্যে এক বৃদ্ধা— খুব সম্ভবত সুপ্রিয়ার বিশেষ পরিচিত। কেন না, সে এসেই সবাইকে ঠেলেঠুলে সরিয়ে দিয়ে বললে,
– ও লো মুখপুড়ির দল সর ত দেখি! দেখতে দে শহুরে মাগিটা হল কেমন!:
বৃদ্ধার গাল শুনে এলোমেলো ভিড় দু ভাগে ভাগ হয়ে দুদিকে সরে দাড়ালো। এদিকে এতো গুলো লোক সম্মুখে এমন গাল শুনে কুন্দনন্দিনীর ফর্সা মুখ কান পর্যন্ত সিঁদুর রাঙা হয়ে উঠলো। তবে বেশি ভাববার সময় সে পেল না। তার আগেই সুপ্রিয়া হাসি মাখানো সুরে বললে,
– মাগি দেখতে তোমার থেকে মন্দ গো ঠাকমা! চিন্তা নেই, তোমার ছোটবাবুর তোমায় ছাড়া চলছে না।
শুনে সকলেই হাসলো। তবে নন্দিনী এই সবে অভ্যস্ত নয় মোটেও। তাই এদের কথাবার্তায় সে ঠিক তাল মেলাতে পারলো না। অবশ্য নববধূর কাছে থেকে কেউ কথা শুনতেও আসে নি। তাই যা কথা হলো তার অধিকাংশই সুপ্রিয়ার সাথে।
–আহা, মাগির হাসে দেখলে গা জ্বলে। বলি সতিন কাটা গলায় যে বিঁধিয়ে আনলি, এখন কয়দিন সয় তাই দেখবো।
– এতগুলো বছর গেল তোমার মতো বুড়িকে সইছি আর ও ত একফোঁটা মেয়ে। ও আমার কি ক্ষতিটা করবে শুনি?
– হয়েছে হয়েছে, আর রঙ্গকরে কাজ নেই! মাগির সাজের ঘটা দেখলে মনে হয় যেন বাইজি। যাক বাপ সে সবে আমার কাজ কি?একখানা পান খাওয়াতো দেখি.......
বুড়ি সুপ্রিয়াকে মৃদু ভর্ৎসনা করে পানের কথা বলে পরলো নন্দিনীকে নিয়ে। কথা সে বললো অনেক,তবে নন্দিনী উত্তর করলে অল্প ভাষায়।
– ও লো সুপ্রিয়া! বৌ দেখি লজ্জায় মুখ তোলে না। ছোটবাবুর ভাগ্য খুললো এবার।
সুপ্রিয়া এক ধারে বসে পান সাজতে সাজতে মুখ বাঁকিয়ে বললে,
– তা খুলবে বৈ কি! বিয়ে তো সে করেনি,আমি হাতেধরে করিয়েছি। এমন বৌ পেতে সাধনা করতে হয় মনে রেখো।
কথা শেষ করে এক এক করে খান কয়েক কৌটো তুলে ঘ্রাণ নিয়ে সে সাজিয়ে রাখলো হাতে কাছে। তার পর দুখানি পান সেজে একটি মুখে পুরে অন্যটি এগিয়ে ধরলো বৃদ্ধার উদ্দেশ্যে। বুড়ি এগিয়ে গিয়ে পান নিয় বসলো সুপ্রিয়ার পাশে। কানে কানে কথা হলো তাদের। কি কথা হলো তা কে জানে? তবে কথা শেষ হতেই সুপ্রিয়ার সুন্দর মুখখানা আবারও হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
– মরণ আমার! এই বয়সেও বুড়ি তোমার রস গেল না?
হাসি ঠাট্টা ও বাঁশ ঝির থেকে ভেসে আসা ঝিরঝিরি হাওয়াতে তাদের আলোচনার আসর চললো অনেকক্ষন। এরপর সমীর এলো শেষ বিকেলে। সে আজ রাধাপুরিই দুপুরের আহার সেরেছে। এরপর গাঁয়ে ফিরলেও তৎক্ষণাৎ গৃহে ফেরার উপায় ছিল না। কেন না মধুপুরে তার রোগির সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে জয়নগর ছাড়া আসপাশের দশ গ্রামের মধ্যে মুখার্জি বাড়ি বাতিত যখন আর কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই— তখন সমীরকে ডাকা ছাড়া উপায় কি আর? জয়নগরের দূরত্ব কম,নৌকায় গেলেও দুপুরে রওনা করলে পৌঁছাতে সন্ধ্যে গড়ায়।
সমীর গৃহে ফিরে পুকুর ঘাঁটে স্নান করতে আসতেই তার দেখা হলো নন্দিনীর সহিত। ইন্দিরা তখন ঘুরে ফিরে নন্দিনীকে বাড়ি-বাগান সব দেখিয়ে বেরাছিল। এদিকে স্বামীর পিছু পিছু সুপ্রিয়া ও এসে পৌছালো ঘাটে। ঘাঁটের ওপর দিকটায় পাকা বাঁধানো বসার স্থান ছিল। তিন রমণী একত্রে বসে খানিক ক্ষণ গল্প করে কাটালেও, নন্দিনীর কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিল। সমীরের বিয়ে করা বৌ সে। স্বামীকে আদ্র বস্ত্রে দেখলে অস্থির অস্থির লাগাটা বোধহয় উচিত নয়। তবে সমীর জল থেকে উঠে এলে এক দুবার তার দিকে চোখ পরতেই কুন্দনন্দিনীর বুকখানি শিরশির করতে লাগলো। সমীরের বলিষ্ঠ কালো বুক খানি ঘন লোমের অরণ্যে ঢাকা। শিরা বহুল কঠিন হাত দুখানে দেখেই হঠাৎ নন্দিনী গলা শুকিয়ে গেল। মন পরলো কদিন আগেই এই লম্বা-চওড়া লোকটিকে রাগের মাথায় সে কত কথাই না শুনিয়েছে। অপরাধ সমীরের কিছু ছিল নাকি ছিল না— সে তো পরের কথা। বর্তমানে নন্দিনীর ভাবনা স্বামীর ওই বলিষ্ঠ হাত দুখানি তার কোমল বাহু চেপে ধরলে সে ছাড়াবে কি উপায়ে? চিৎকার হয়তো করা যায়! তবে এতে লোক হাসানো ছাড়া আর কিই বা হবে? স্বামী তার স্ত্রীকে সোহাগ করতে চেপে ধরেছে— এতে পাড়াপড়শির বা বাড়ির লোকের কি করার আছে? তাছাড়া দোতলায় রাতের আঁধারে রাগের মাথা ওই শক্ত হাত দুটো তার নধর শরীরের চেপে বসলে দম তার এমনি বেরিয়ে যাবে!
/////////////
রাত্রি বেলা সুপ্রিয়া রান্নাঘরে ঢুকেছিল শ্বশুরমশাইয়ের জন্যে চা করতে। কমলা সাথেই ছিল,তবে নন্দিনী তাকে সরিয়ে দিয়ে নিজেই বসেছিল সুপ্রিয়ার পাশে। কিন্তু কমলা তা শুনতে নারাজ। অবশেষে সুপ্রিয়াই কমলাকে পাঠিয়ে দিল আলোচনার সুবিধার্থে। কথাবার্তার মাঝে এক সময়ে নন্দিনী বলে উঠলো,
– শুধু রান্নাবান্না আর ঘরকন্না দেখবে বলেই কি তোমার ভগবান মেয়েদের বানিয়েছেন দিদি?
– মেয়ের কথা শোন! আমি কি তাই বললাম নাকি? কই আমাদের বাড়িতেও ত চাঁপা আর রেশমা কাজ করে। তাই বলে ওরা কি ঘরের লোককে রেঁধে খাওয়াতে মানা করে?
সুপ্রিয়ার কথায় নন্দিনীর অল্প রাগ হলো হাসলো। তারপর বললে,
– কি যে বল দিদি। ওতো সেই ঝি গিড়ি,ঘরে রই কাজ সব। আমি সে কথা বলিনি।
– অত তো জানিনে ভাই। আমি জানি কাজ কাজওই হয়। তাছাড়া ঝি গিড়িও বড় সহজ কাজ নয়। জীবনে ত কাউকে রেঁধে খাওয়াসনি,তুই এই সব বুঝবি না।
– সে কথা রেখে আমার কথায় জবাব দাও দেখি,এছাড়া আর কিছুই আমি শুনছি না।
– সব মেয়েদের কথা ত বলতে পারিনে ভাই। তবে যদি আমার কথা বলিস তবে ভাই ঘরের লোককে আমি থাকতে অন্যের হাতের রান্না খাওয়াতে আমার লজ্জা করে। হাজার হোক ও বাবা ইচ্ছে, তাছাড়া স্বামী সন্তানদের যদি নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াতেই না পারি তবে মেয়ে হয়ে জন্মেছি কেন বল? নিজের লোকের রান্নায় যে ভালোবাসা মেশানো থাকে তা কি আর বামুন ঠাকুরদের দিয়ে হবে বলে? সাধে কি আর লোকে বলে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদই আলাদা!
কথাটার নন্দিনী কোন বিরুদ্ধ যুক্তি দাড় করাতে পারলো না। হটাৎ মনে পরে গেলে কলেজের বান্ধবী জবা একবার বলে ছিল“ চল আজ তোকে মায়ের হাতের রান্না খাওয়াবো। দেখিস এই রান্নার স্বাদই অন্যরকম। খেয়েছিস তো আজীবন ভাড়া করা বামুনের আবর্জন...” আরো অনেক কথা সে বলেছিল নন্দিনীকে। সেদিন প্রথম মায়ের মতো কেউ পাশে বসে আদর করে খাইয়ে ছিল কুন্দনন্দিনীকে।
মায়ের মতো? কে জানে? তবে নন্দিনীর মনে পরে সেদিন জোর করেই সে খানিক বেশি খেয়েছিল বান্ধবীর মাকে খুশি করতে। খানিক আদর পেতেও বটে। নিজের মায়ের আদর ত সে পায়নি কখনোই। এইসব ভাবনা নন্দিনীর মাথায় ঘুরছিল এখন। এদিকে সুপ্রিয়াও অবশ্য চুপ নেই, তার কথা শেষ হয়নি এখনো,
– তুই নিজে একদিন ভালোবেসে রেঁধে খাইয়ে দেখিস তাকে। আর কটা দিন যাক, তোকে সব শিখিয়ে দেব না হয়। এটা শিখে রাখলে কাজে দেবে। তাছাড়া হৃদয়ে সহিত উদরের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ কি-না! আমার মা বলতেন উদর হল হৃদয়ের পৌঁছানোর চাবি.......
সুপ্রিয়ার কথার মাঝে কমলা এসে সমীরের ফেরার সংবাদ দিল। সন্ধ্যার পরপর সমীর আর একবার কোথায় যেন বেরিয়েছিল। এখন কমলার কথায় সুপ্রিয়া চায়ের দ্বায়িত্ব তার হাতে দিয়ে নিজে উঠেল গেল । গেল সে স্বামীর ঘরে। তবে বীনা কারণে নয়। স্বামীর সাথে তার কিছু গোপন কথা ছিল । জানার ছিল গত রাতের কথা। বিয়ে বাড়িতে সমীর ও নন্দিনীর ব্যপারটা সুপ্রিয়াও জানতো।
নন্দিনী ফুলশয্যার দিন সুপ্রিয়া ঘুম হয়নি। যদিও আমাদের সুপ্রিয়ার মনে বিষ বা কাটা কোনটাই নেই,তথাপি বিয়ের দু'দিন পর ফুলশয্যার খাট সাজিয়ে রাত্রিতে স্বামীকে আর একজনের হাতে তুলে দিতে বুকে তার ব্যথা খানিক লেগেছিল বৈ কি। তবে সেই ব্যথা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মধ্যরাতে বারান্দায় হাঁটাহাঁটি শব্দে বুক খানি তার কেঁপে উঠেছিল অজানা ভয়ে।
যদিও শহুরে ভূতের নাম ডাক সে কখনো শোনিনি। তবুও বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ড কেমন যেন করছিল তার। তবে সাহস করে সে ডেকেছিল কোনমতে। এবং খানিক পর ভূতের আশংকাকে মিথ্যা করে ডাকে সারা দিয়েছিল তার স্বামী। তখন বাইরে বেরিয়ে স্বামীর কাছে ঘেষে সুপ্রিয়া বুঝেছিল স্বামী তার সিগারেট টানছেন। তখন সুপ্রিয়াই স্বামীর হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে নিয়ে এসেছিল তার ঘরে। কিছু একটা হয়েছে তার আভাস সে পেয়েছিল। বাকিটা স্বামীর পায়ের কাছে বসে নরম হাতের আলতো ছোঁয়ায় উরুতে বুলিয়ে বুলিয়ে— গত চৌদ্দ বছরের প্রেমময় অভিজ্ঞতাকে সঙ্গি করছ একে একে সব কথা বের করে নিয়েছে। তারপর পুরষ্কার হিসেবে স্বামীর কাছে নিজেকে করেছে দান।
এই হিসেবে ধরতে গেলে বিয়ে সমীরের নন্দিনীর সাথে হলেও মধুচন্দ্রিমা হয়েছে সুপ্রিয়ার সহিত। রমণরতা রমণীর কামার্ত আকর্ষণে কাছে সমীর বেশিক্ষণ নিজের ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। প্রশ্নের পর প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে তার মনে লুকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি কিছুই। আর তাই তো অত ঘটা করে দোতলায় নিজের ঘরটি সুপ্রিয়া সাজিয়ে দিয়েছিল কাল। উদ্দেশ্য ছিল স্বামীকে বুঝিয়ে দেওয়া তার ভালোবাসা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই চেষ্টা তার বুঝি ব্যার্থ গেল।
অবশ্য স্বামীর ঘরে গিয়ে এই সংবাদ হাসিল করতে খানিক প্রগল্ভতাই করতে হলো তাকে। স্বামীটি তার সহজ নয়,পেটের কথা সহজে বাইরে বেরুতে চায় না। তবে সুপ্রিয়া যখন শাড়ির আঁচলটা খানিক আগলা করে নাকের নোলক নেড়ে স্বামীর পায়ের কাছে বসে! তখন সমীরের কি যে মোহ লাগে তা সে নিজেও বোঝে না। সমীরের মনে হয় সুপ্রিয়া এমনটি করে জেনে বুঝে।
আজও সুপ্রিয়া স্বামীর পায়ের কাছে বসতে গিয়েছিল। সমীর তার হাতে ধরে বসিয়েছে কোলে। টেবিলে রাখা আট টাকা দামের টেবিল ল্যাম্পের রাঙা আলোতে সে উপভোগ করছিল স্ত্রীর নিঃশব্দ বেহায়াপনা। শাড়ির আঁচলের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারছিল লাস্যময়ী এই রমণীর দৈহিক ঐশ্বর্য। ব্লাউজে ঢাকা বিশাল বুক দুখানি নিঃশ্বাসের সাথে কেমন ফুলে ফুলে উঠছিল। তার রাঙা ব্লাউজের গলার ফাঁক দিয়ে চন্দহারে আড়ালে বৃহৎ বক্ষ যুগলের গহীন বিভাজিকা অল্প দেখা যায়। সমীর বাঁ হাতের আঙুলে সুন্দরী স্ত্রীর শাড়ি আঁচল খানিক নামিয়ে নিল। তারপর সেই হাতেই কোমর বিছার আড়াল থেকে সুপ্রিয়ার সুগভীর নাভীটিকে আলো দেখালো। সুপ্রিয়া দেবী এতক্ষন চুপ ছিল, কিন্তু এবার নরম নিতম্বে কঠিন কিছুর ছোঁয়া লাগতেই তার মুখ খুললো,
– খোকাকে খাওয়ানো হয়নি। আচ্ছা,রাতে কি তুমি এখানেই থাকবে ?
কথা তার শুরু হলো এই রূপেই। এরপর প্রশ্ন ছুঁড়ল একের পর এক। তার ফাঁকে ফাঁকে স্বামীর অবাধ্য হাতটিকে তার কোমল হাতের আলতো চাপড়ে শাসন করতে লাগলো।
– উফ্...কি হচ্ছে এই সব! ছি লক্ষ্মী্টি ঘরের দুয়ার খোলা.... তারপর কি হল বল না?
বলতে বলতেই সুপ্রিয়া ব্লাউজ ঢাকা তুলতুলে স্তন দুখানি স্বামীর বুকে আলতো ভাবে চেপে ধরে।
– কি আর হবে? খানিকক্ষণ পরেই সে ঘুমিয়ে কাদা। তখন জানালা লাগিয়ে ময়নার কাছে খানিকক্ষণ বসে ভাবলাম জানো.....
একে একে সবই বলে সে,কথা লুকানোর উপায় থাকে না সমীরের। সুপ্রিয়া মাঝে মাঝে এমন জ্বালাতন করলেও, হাতে সময় থাকলে স্বামী সেবায় সে কোন ত্রুটি রাখে না। কিন্তু এখন সেই সময়টা তার নেই। তাবে সমীর কিন্তু সুপ্রিয়ার বাঁধা উপেক্ষা করে ব্লাউজ ঢাকা নরম মাংসপিণ্ডে হাত রাখলো। খান কয়েক জোরালো টেপন দিতেই গোলাকার আকৃতি মাঝে অল্প এটু জায়গা ভিজে উঠলো। পরক্ষণেই ব্লাউজের পাতলা কাপড় ঠেলে মাথা তুলে দাঁড়ালো আঙ্গুর ফলের মতো স্তনবৃন্ত দুটি। সমীর সেই রসালো বোঁটাতে আঙুল ঘেঁষতেই “ উফফফ্....” বলে খানিক কেঁপে উঠলো সুপ্রিয়া। খোকার বয়স এখন চার বছর। তবে ছেলেটার সব কিছুই হয়েছে দেরিতে। কথা গুলো তার এখনো এলো মেলো। মায়ের দুধ ছেঁড়েছে মাস দুই আগে।তাই এখনো সুপ্রিয়ার বুকের দুধ শুকায় নি,জোরে চাপ দিলে সাদা সাদা তরলের স্রোত এখনো ব্লাউজ ভিজিয়ে দেয়।
– অনেক হয়েছে, ছাড় দেখি। কাছে পেলেই বুঝি হাত নিষপিস করে তোমার।
স্বামীর কাঁধে সম্পুর্ণ দোষ চাপিয়ে সুপ্রিয়া উঠে দাঁড়ালো। যেই কাজে সে এসেছিল সেটি তার জানা হয়ে গিয়েছে। তাই শাড়ি খানি ঠিকঠাক করে মাথায় আঁচল টেনে সে স্বামীর কাছে বিদায় নিয়ে চটজলদি বেরিয়ে এল বাইরে। পরলো সে নন্দিনীর সম্মুখে। নন্দিনীর অবশ্য তাকেই প্রয়োজন ছিল। তাই শশুর মশাইকে চা দিয়ে সে এসে ছিল সুপ্রিয়াকে খুঁজতে। কিন্তু কতখন আগে সে এসে এইখানটায় দাঁড়িয়ে ছিল তা সুপ্রিয়ার জানা হলো না।
এদের পারিবারিক ঘটনা গুলো চলছে ধির গতিতে। অনেকটা গরুর গাড়ির মতোই। তবে চলতে থাকুক,এর মধ্যে আর ব্যস্ততাল অজুহাত দেখিয়ে লাভ নেই।ওটা মানুষের সব সময়ের সঙ্গি। পরবতী আপডেট শুক্রবার দেবার চেষ্টা থাকবে।