Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR কালো কুয়াশার ছায়া
#6
গ্রামের প্রান্তে, যেখানে ঘন জঙ্গলের ছায়া মাটিতে পড়ে অদ্ভুত আঁকিবুকি কাটে, সেখানে রুদ্রনাথের কুঁড়েঘরটি দাঁড়িয়ে ছিল—একটি জরাজীর্ণ, কাঠের তৈরি আশ্রয়, যার ছাদে শ্যাওলা জমে সবুজ হয়ে উঠেছিল। সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে আসছিল, আর দূরের পাহাড় থেকে ভেসে আসা কুয়াশা কুঁড়েঘরের চারপাশে একটা রহস্যময় পর্দা তৈরি করছিল।

 বাতাসে একটা অস্বস্তিকর নীরবতা, শুধু মাঝেমধ্যে পাতার মর্মর আর কাকের কর্কশ ডাক ভেসে আসছিল।মালতী কুঁড়েঘরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তার পায়ের নিচে শুকনো পাতা মচমচ করে ভাঙছিল। জ্বরের পর তার শরীর এখনো দুর্বল, কিন্তু তার চোখে একটা জেদি দৃঢ়তা ঝিলিক দিচ্ছিল। 
তার পরনে একটা সাদা শাড়ি, যার আঁচল বাতাসে হালকা উড়ছিল, আর কপালে একটা ছোট্ট লাল টিপ যেন অন্ধকারে একমাত্র উজ্জ্বল বিন্দু। 

কুঁড়েঘরের কাছে পৌঁছতেই সে থমকে দাঁড়াল। একটা বোঁটকা, মিষ্টি, পচা মিশ্রিত গন্ধ তার নাকে এল—যেন পুরনো ফুলের সাথে কিছু অজানা, অশুভ কিছু মিশে আছে। গন্ধটা এত তীব্র ছিল যে তার গলা শুকিয়ে গেল, আর বুকের ভেতর একটা অজানা আশঙ্কা জেগে উঠল।
কুঁড়েঘরের দরজা খোলা ছিল, কিন্তু ভেতরে অন্ধকার এত ঘন যে মনে হচ্ছিল সেটা কোনো অতল গহ্বর। মালতী সাবধানে পা বাড়াল, তার হাতে ধরা একটা ছোট্ট মাটির প্রদীপের আলো কাঁপছিল। ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতেই গন্ধটা আরো তীব্র হয়ে উঠল, আর তার সাথে একটা অদ্ভুত শীতলতা তার গায়ে ছড়িয়ে পড়ল, যেন কেউ অদৃশ্যভাবে তার চারপাশে ঘুরছে। 

ঘরের এক কোণে রুদ্রনাথ বসে ছিল, তার মুখে একটা গভীর চিন্তার ছায়া। তার পরনে একটা মলিন ধুতি, আর কাঁধে একটা পুরনো শাল জড়ানো। তার পাশে একটা ছোট্ট টেবিলে কিছু পুরনো পুঁথি আর একটা অর্ধেক পোড়া মোমবাতি জ্বলছিল, যার আলোয় তার মুখের রেখাগুলো আরো তীক্ষ্ণ দেখাচ্ছিল

।মালতী কথা শুরু করল, তার কণ্ঠস্বর প্রথমে কাঁপছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়ে উঠল। সে কামিনীর মুখোমুখি হওয়ার সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা বলল, কুঠুরির অন্ধকারে কামিনীর লাল চোখের দৃষ্টি, তার বিষাক্ত হাসি, আর সেই অমানুষিক চিৎকার যা যেন তার হৃৎপিণ্ড থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। 
সে বলে গেল, কীভাবে জ্বরে ভুগতে ভুগতে তার স্বপ্নে কামিনী বারবার ফিরে এসেছে, তার সৌন্দর্য আর ভয়ঙ্কর রূপ একসাথে মিশে তাকে পাগল করে দিচ্ছিল। তার কথার মাঝে মাঝে ঘরের ভেতর একটা অস্পষ্ট শব্দ হচ্ছিল—যেন কেউ দেয়ালের ওপারে নখ দিয়ে আঁচড়াচ্ছে। 
মালতী থেমে গেল, তার চোখে ভয় ফুটে উঠল, কিন্তু রুদ্রনাথ শান্তভাবে তাকে এগিয়ে যেতে বলল।

রুদ্রনাথ মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, তার চোখে একটা অদ্ভুত দীপ্তি। সে মাঝেমধ্যে প্রশ্ন করছিল, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জানতে চাইছিল—কামিনীর কণ্ঠস্বর কেমন ছিল, তার চোখের দৃষ্টি কীভাবে মালতীকে আকর্ষণ করেছিল, আর কুঠুরির ভেতর সেই অদ্ভুত গন্ধ কি এই ঘরের গন্ধের মতো ছিল কিনা। 
তার প্রশ্নগুলো এত তীক্ষ্ণ ছিল যেন সে শুধু মালতীর কথা শুনছে না, বরং কামিনীর উপস্থিতিকে এই ঘরের মধ্যেই খুঁজে বের করতে চাইছে।হঠাৎ মোমবাতির শিখা কেঁপে উঠল, যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি ঘরের ভেতর প্রবেশ করেছে। মালতী চুপ করে গেল, তার হাতের প্রদীপের আলো মাটিতে পড়ে একটা অদ্ভুত ছায়া তৈরি করছিল। রুদ্রনাথ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, তার হাতে একটা পুরনো তামার তাবিজ ঝুলছিল। সে মালতীর দিকে তাকিয়ে বলল, “তুমি যা দেখেছ, যা অনুভব করেছ, সেটা কামিনীর শক্তির একটা অংশ মাত্র। সে আমাদের ভয়কে খাওয়ায়। কিন্তু আমি তাকে থামাব।” 
তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ছিল, কিন্তু ঠিক তখনই ঘরের বাইরে একটা তীক্ষ্ণ হাসির শব্দ ভেসে এল—মিষ্টি, বিষাক্ত, আর অমানুষিক। মালতীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল, আর রুদ্রনাথের চোখে একটা আগুন জ্বলে উঠল।ঘরের ভেতর সেই বোঁটকা গন্ধ আরো তীব্র হয়ে উঠল, আর মনে হচ্ছিল যেন কামিনী নিজেই অন্ধকারের মধ্যে লুকিয়ে তাদের কথা শুনছে, তাদের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি ভয়কে গ্রাস করছে।

সন্ধ্যার আলো ম্লান হয়ে আসছিল। ঘরের ভেতরে একটি নিস্তব্ধতা ঝুলছিল, যেন সময়টাও থমকে দাঁড়িয়েছে। মালতী তার নরম, কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে কথা বলছিল। তার প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি বাক্য যেন অদৃশ্য তীরের মতো ছুটে এসে তাকে বিঁধছিল। মালতীর চোখে ছিল এক অদ্ভুত মায়া, যা কখনো উষ্ণ, কখনো তীক্ষ্ণ। তার কথার সুরে মিশে ছিল আবেগের ঢেউ, যা শুনতে শুনতে তার মনের ভেতর এক অস্থির ঝড় উঠল।তার শরীরে এক তীব্র উত্তেজনা জেগে উঠল। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানি যেন কানে বাজতে লাগল।

 তার রক্তে এক অজানা আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল। 

মালতীর কথার মাঝে, তার মুখের অভিব্যক্তির মাঝে, সে যেন কিছু লুকানো ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছিল—যা তার শরীরকে আরও অস্থির করে তুলছিল। তার শরীরের প্রতিক্রিয়া এত তীব্র ছিল যে, এক মুহূর্তের জন্য সে নিজেকে ভুলে যেতে চাইল। তার মনে এক তীব্র আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল—মালতীকে কাছে টেনে নিয়ে, তার সমস্ত শরীর খুবলে খাওয়ার। তার চোখের সামনে মালতীর ঠোঁট, তার মুখের কোমল রেখা, সব যেন তাকে ডাকছিল।
 খুব ইচ্ছা করছিল এখনই মালতীকে জাপটে ধরে তার লৌহ দন্ড লিঙ্গটা মালতীর মুখে ঢুকিয়ে দিতে 

কিন্তু পরক্ষণেই তার ভেতরের সংযম জেগে উঠল। এই তীব্র আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমল। সে দাঁতে দাঁত চেপে, মুষ্টি শক্ত করে নিজেকে সামলে নিল। তার মনের ভেতর একটা যুদ্ধ চলছিল—একদিকে অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছা, অন্যদিকে নৈতিকতা আর আত্মনিয়ন্ত্রণের বোধ। অনেক কষ্টে সে তার মুখে একটা গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে তুলল। 
তার চোখে এখন আর সেই তীব্র আকাঙ্ক্ষার আগুন ছিল না; ছিল একটা ঠাণ্ডা, সংযত দৃষ্টি। সে গভীর নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করল, যেন মুহূর্ত আগের ঝড়টা কখনো ছিলই না।
মালতী তার কথা শেষ করে তাকাল তার দিকে। তার চোখে কৌতূহল, হয়তো একটু বিস্ময়। সে হয়তো বুঝতে পারেনি, তার কথার ঢেউ কী তাণ্ডব সৃষ্টি করেছিল তার মনে। কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিয়েছিল। ঘরের নিস্তব্ধতা ভাঙল মালতীর পরবর্তী কথায়, আর সে গম্ভীর মুখে উত্তর দিল, যেন কিছুই হয়নি। 

ঘরের কোণে একটা পুরোনো লণ্ঠন জ্বলছিল, যার ক্ষীণ আলোতে রুদ্রনাথের মুখের কঠিন রেখাগুলো আরও গভীর মনে হচ্ছিল। তার কণ্ঠে একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা ছিল, কিন্তু তার চোখে লুকিয়ে ছিল ভয়—এক অজানা, অতিপ্রাকৃত শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা মিশ্রিত ভয়।“কামিনী তার শক্তি বাড়িয়েছে,” সে বলল, তার কণ্ঠে একটা অস্বাভাবিক গাম্ভীর্য। “তার নতুন রূপ আরও বিপজ্জনক। আমি তাকে থামাতে পারিনি, কিন্তু এবার আমাকে তার উৎস খুঁজে বের করতে হবে।” তার কথাগুলো ঘরের নিস্তব্ধতায় প্রতিধ্বনিত হলো, যেন দেয়ালগুলোও তার কথা শুনে শিউরে উঠল।
রুদ্রনাথ জমিদার বাড়ির নিচে একটা গোপন কুঠুরির কথা শুনেছিল, যেখানে কামিনীর দেহ পোড়ানো হয়েছিল। সে ঠিক করল, সে সেখানে যাবে। 
মালতী একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। তার চোখে ছিল এক অদ্ভুত জেদ, কিন্তু তার মুখের কোমল রেখাগুলোতে লুকিয়ে ছিল অতীতের এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি। সে যখন কথা বলল, তার কণ্ঠে কাঁপুনি ছিল, কিন্তু তাতে দৃঢ়তার ছোঁয়া ছিল। “আমিও যাব তোমার সাথে। আমি একবার তার মুখোমুখি হয়েছি, আমি জানি সে কতটা ভয়ঙ্কর।”রুদ্রনাথ তাকাল মালতীর দিকে। তার চোখে এক মুহূর্তের জন্য দ্বিধা ঝিলিক দিল। সে জানত, কামিনীর সৌন্দর্য এক মায়াময় ফাঁদ। সে সতর্ক করল, “কামিনী তোমাকে আবার ফাঁদে ফেলবে। তার সৌন্দর্য তোমার দুর্বলতা খুঁজে বের করবে।” তার কথায় একটা অশুভ ইঙ্গিত ছিল, যেন সে নিজেও কামিনীর মায়ায় পড়ার ভয়ে কাঁপছিল।
।।
[+] 1 user Likes Abirkkz's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কালো কুয়াশার ছায়া - by Abirkkz - 04-05-2025, 09:50 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)