Thread Rating:
  • 6 Vote(s) - 3.5 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
HORROR কালো কুয়াশার ছায়া
#4
.

শ্যামল আর বিকাশের মৃত্যুর পর গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। 
জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ এখন শুধু একটা ভয়ের জায়গা নয়, একটা নিষিদ্ধ অঞ্চল হয়ে উঠল। গ্রামের বুড়োরা বলতে শুরু করল, "কামিনী আরো ক্ষুধার্ত হয়ে উঠেছে। ওর প্রতিশোধ শেষ হয়নি।" 

অতঃপর সেই গ্রামে এল এক তান্ত্রিক, নাম রুদ্রনাথ।

রুদ্রনাথ ছিল একজন অদ্ভুত মানুষ—লম্বা দাড়ি, চোখে তীব্র দৃষ্টি, আর হাতে একটা ত্রিশূল। 
সে শুনেছিল কামিনীর কথা আর বলেছিল, "এই আত্মা শুধু প্রতিশোধ নিচ্ছে না, এ শক্তি সংগ্রহ করছে। ওকে থামাতে হবে, নইলে পুরো গ্রাম ধ্বংস হবে।" 

গ্রামের মানুষ তাকে ভয় পেলেও, তার কথায় ভরসা করল। 
রুদ্রনাথ ঠিক করল, সে জমিদার বাড়িতে গিয়ে কামিনীর সঙ্গে মোকাবিলা করবে।
রাতের যুদ্ধরাত বারোটার সময় রুদ্রনাথ জমিদার বাড়ির ভাঙা ফটকে পৌঁছাল। তার হাতে একটা তামার থালায় জ্বলন্ত ধূপ, আর মুখে অদ্ভুত মন্ত্র। চারপাশে কালো কুয়াশা জমতে শুরু করল, আর সেই মিষ্টি গন্ধ—যেন কোনো নারীর দেহের সুবাস—আবার ছড়িয়ে পড়ল। রুদ্রনাথের মন্ত্র থামল না, কিন্তু তার শরীরে একটা অদ্ভুত শিহরণ হল।

"তুই কে, যে আমার কাছে এসেছিস?" কামিনীর কণ্ঠ ভেসে এল, এবার আরো গভীর, আরো প্রলোভনময়। 
কুয়াশা থেকে তার আকৃতি ফুটে উঠল—লাল শাড়ির আড়ালে তার শরীর যেন আগুনের মতো জ্বলছে। তার চোখে একটা জ্বলন্ত কামনা, যা যে কাউকে পাগল করে দিতে পারে। 

"তুই কি আমাকে চাস না, রুদ্রনাথ? আমি তোকে এমন সুখ দিতে পারি, যা তুই কখনো কল্পনাও করিসনি।"রুদ্রনাথের হাত কেঁপে উঠল, কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল। 
"তোর মায়া আমার উপর কাজ করবে না, কামিনী। তুই যে শক্তি চুরি করছিস, তা ফিরিয়ে দে!"
 কিন্তু কামিনী হাসল, আর তার হাসির সঙ্গে কুয়াশা আরো ঘন হল। সে এগিয়ে এল, তার শাড়ির আঁচল মাটিতে টেনে পড়ছিল, আর তার স্পর্শের প্রতিশ্রুতি রুদ্রনাথের মনকে দোলা দিচ্ছিল।

হঠাৎ কামিনী তার হাত রুদ্রনাথের বুকে রাখল। সেই স্পর্শে রুদ্রনাথের শরীরে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। তার মাথায় ছবি ভেসে উঠল—কামিনীর সঙ্গে এক অন্ধকার ঘরে, তার শরীরের উত্তাপ, তার ফিসফিসানো কথা। রুদ্রনাথের ত্রিশূল মাটিতে পড়ে গেল। 
কামিনী ফিসফিস করে বলল, "আমাকে দে তোর শক্তি, আমি তোকে আমার করে নেব।"
কিন্তু রুদ্রনাথের মনের গভীরে একটা আলো জ্বলে উঠল। সে চিৎকার করে উঠল, "তোর মায়া ভাঙবই!" 
সে তার কোমর থেকে একটা রুদ্রাক্ষের মালা বের করল আর সেটা কামিনীর দিকে ছুঁড়ল। মালাটা কামিনীর শরীরে লাগতেই সে চিৎকার করে উঠল। তার শরীর থেকে কালো ধোঁয়া বেরোতে শুরু করল, আর তার সুন্দর মুখ বিকৃত হয়ে গেল—চোখ ফেটে রক্ত পড়ছে, মুখে হাড়ের টুকরো।"তুই আমাকে থামাতে পারবি না!" কামিনী গর্জন করে উঠল।

 হঠাৎ জমিদার বাড়ির মাটি ফেটে গেল, আর সেখান থেকে আরো কয়েকটা ছায়া বেরিয়ে এল—শ্যামল, বিকাশ, আর অন্যান্য যারা কামিনীর শিকার হয়েছিল। তাদের চোখ ফাঁকা, শরীরে নখের দাগ, আর তারা রুদ্রনাথের দিকে এগিয়ে আসছিল।রুদ্রনাথ পিছিয়ে গেল, কিন্তু তার মন্ত্র আবার শুরু হল। সে একটা অগ্নিকুণ্ড তৈরি করল আর সেখানে হোম শুরু করল। 
কামিনী আর তার ছায়ারা চিৎকার করতে লাগল, কিন্তু আগুনের শিখা তাদের গ্রাস করতে শুরু করল।

 কামিনীর শেষ কথা ছিল, "আমি ফিরব, রুদ্রনাথ... আমার ক্ষুধা কখনো মিটবে না!"


সকাল হল। জমিদার বাড়ির ধ্বংসাবশেষে শুধু ছাই আর ধোঁয়া। রুদ্রনাথ গ্রামে ফিরে এল, কিন্তু তার চোখে একটা অদ্ভুত ছায়া। গ্রামের মানুষ তাকে ধন্যবাদ দিল, কিন্তু রুদ্রনাথ চুপচাপ চলে গেল। 

কয়েক রাত পরে, একজন জমিদার বাড়ির কাছে আবার সেই মিষ্টি গন্ধ পেল। আর সঙ্গে একটা ফিসফিস—"রুদ্রনাথ, তুই আমারই হবি...
[+] 1 user Likes Abirkkz's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: কালো কুয়াশার ছায়া - by Abirkkz - 04-05-2025, 07:35 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)