13-04-2025, 06:32 AM
(This post was last modified: 13-04-2025, 06:52 AM by বহুরূপী. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
ময়না মতির তীরে
হালকা ইরোটিকতা আছে বটে,তবে খুব বেশী কিছু নয়!
ময়নামতির তীরে, বট তলাকে ঘিরে, মন্দির সম্মুখের মাঠে বৈশাখী মেলা বসবে কাল। চলবে তিন দিন একটানা। তবে আজ বৈকালে মাঠটি ফাঁকা। সেই ফাঁকা মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে, ময়নামতির পাড়ে দাঁড়িয়ে, ময়না নামের একটি মেয়ে কাজল পড়া আঁখি কোণে বিন্দু বিন্দু অশ্রু নিয়ে, চেয়েছিল দূরে দাড়ানো একটি নৌকার পানে।
মাস ছয়েক পরে নৌকা করে শহর থেকে মতি আজ গ্রামে ফিরেছে পহেলা বৌশাখের উপলক্ষ্যে। দূর থেকেই ময়না পরেছে তার নজরে। তবে কাঁচা মেয়ের বোকা বোকা কান্ডে মতি পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেল বাড়ির পথে। ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়। এর জন্যে বকাঝকা তার কপালে আছে ঢের। তবে এই গোধূলি বেলায় নদী তীরে, ময়নার পাশে মতিকে পেলে, গ্রামের মানুষ নানান কেচ্ছা রটাবে এই কথা ময়নাকে কে বোঝাবে?
গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে মেলা যেমন একটি অত্যন্ত মজার উৎসব। তেমনি গ্রামের মেয়েদের মিথ্যে কলঙ্ক নিয়ে অযথা মাতামাতি করাটাও আর একটি উৎসব। তবে অভিমানী মেয়েটি সেই কথা বুঝবে কেন? পরদিন ভোর সকালে মতিদের পুকুর পারে, তাই সে বসলো গাল দুটো ফুলিয়ে। তখন হতচ্ছাড়া মতি যদি তার পাশে বসে মিষ্টি মধুর হেঁসে ভাব করার চেষ্টা করেই, তখন অভিমানী ময়না তা শুনবে কেন? তাই মতি কথার সারা না পেয়ে ময়নার গাল দুখানি দিলে টিপে।
– উফ্! আমার লাগে না বুঝি?
– হয়েছে, নাটক রাখ তো ময়না।
– আমি নাটক করি!
বলতে বলতে কাঁচা মেয়েটি মতির শক্ত বুকে মারল এক কিল। অবশ্য কিল মেরে ক্ষতিটা হলো তারই। কারণ মতি তখন ময়নার হাতখানি চেপে ধরে টেনে নিল বুকে। উঠতি যৌবন ঢালা কোমলমতি বুকে টেপন লাগালো খান কয়েক। মনে মনে ভাবলো—তুলতুলে পাকা আমের মতো এই বুক দুখানি একদিন নিজের ঘরের খাটে ফেলে আচ্ছা মতো টিপে রসালো তরমুজ করে দেবে সে।
ওদিকে বুকে হাত পরতেই ময়না কিন্তু ছটফট করে ওঠে। প্রিয় মানুষটির অসভ্য স্পর্শের অস্থির অনুভূতি সে সামাল দেয় দাঁতে ডান হাতের নখ কামড়ে কামড়ে। এদিকে বাঁ হাতে স্তন মর্দন করতে করতে মতি ডান হাতে ময়নার চিবুক নেড়ে দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু স্বরে বলে,
– মেলায় কি নিবি বল?
প্রথমটাও ময়না কিছুই বলতে পারে না। শুধু মনে মনে ভাবে , হায় খোদা! গ্রামের এত ছেলে থাকতে শেষে কিনা তাকে এই ইতর, অসভ্য, লক্ষ্মীছাড়া ছেলেটার প্রেমে পরতে হল। “উফফফ্.....” দুধ দুটো কে চটকাতে ব্যথা করে দিলে! ময়না ভাবে বটে,তবে এখন এই কথা ভাবলে কি হবে? এই প্রেমের আগুনে কপাল ত তার পুড়বেই।
– কিরে থম মেরে গেলি যে বড়! দুধ টেপা খেতে বুঝি খুব মজা?
ময়না এবার এক ঝটকায় নিজেকে নিল ছাড়িয়ে। এদিকে ময়নাকে রাগিয়ে মতি লাগলো হাসতে। মতির হাসি দেখে ময়নার ফর্সা মুখ রাগে ও লজ্জায় সিঁদুর বর্ণ হয়ে দাঁড়ালো মুহূর্তেই। সে তরাক করে লাফিয়ে উঠে পালাতে গিয়ে ধরা পরে গেল মতির শক্ত দুই হাতের বাঁধনে। মতি তাকে পুকুর পাড়ের একটি বড় আম গাছের আড়ালে নিয়ে মুখ চেপে ধরল। বিষয়টা প্রথমে ময়না না বুঝলেও খানিক পরে পুকুরের জলে আলোড়ন উঠতেই সে বেচারির গলা শুকিয়ে গেল।
সাধারণত এই ভোর সকালে মতিদের বাগানের পুকুর পাড়ে কেউ আসে না। আধুনিকতার সাথে তালে তাল মিলিয়ে মতিদের পাকা বাড়িতে এখন এটার্চ বাথরুম। কিন্তু না জানি কি মনে করে আজ ভোর সকালে মতির মেজো ভাবি স্নান করতে নেমেছে পুকুরের জলে। এদিকে ভয়ে ময়না গেছে চুপসে। তবে অসভ্য মতির কি আর সে খেয়াল আছে? সে বন্দিনীর শাড়ির ফাঁক গলে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে কোমড়ে। ঠিক ময়নার গোলগাল নাভী গভীর গহ্বরে। বেচারি ময়না এই অবস্থায় আর কি করে? দুষ্টু প্রেমিকের অসভ্য আদরে কাঁচা কোমল দেহটি তার বেঁকে বেঁকে ওঠে। কন্ঠ নালি ঠেলে বেরুতে চায় গভীর ভালোবাসা সিক্ত উষ্ণ কতগুলো আওয়াজ। তবে মতি মুখ চেপে আছে বলে ময়না অসহায়। ময়নার রাগ হয়, মারাত্মক রাগ।তবে প্রেম বুঝি মানুষকে এমননি মারে!
খানিক পরে মতি অবস্থা বুঝে ময়নাকে নিয়ে চুপিচুপি পালায় বাগান ছেড়ে। নির্জন পথের ধারে দুজনে মিলি বেরিয়ে এলে, ময়না মতিতে দুহাতে ঠেলে দেয় এক ছুট। হতভম্ব মতি খানিক পর ব্যাপারটা বুঝে প্রাণ খুলে হাসে আপন মনে। মনে মনে ভাবে ময়নার হাত সে এই বৈশাখেই নিজের হাতে পাকাপাকি ভাবে তুলে নেবে। মতির মায়ের ময়নাকে বেশ পছন্দ , এই কথা মতি জানে।এখন শুধু কোন মতে বাবাকে রাজি করাতে পারলেই হয়। ব্যাস! তখন ওই চঞ্চলা দেহটাকে আদর সোহাগে মতি অস্থির করে তুলবে প্রতি রাতে। ছুটির দিনে বাসায় থেকে ব্যস্ত গৃহকর্মের ফাঁকে ফাঁকে ময়নার কানে কানে বলবে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার কথা। প্রেমিক মানুষ মতি,এই সব চিন্তা ভাবনা ছাড়া তার চলবে কেন? তবে আমাদের আশা ময়না-মতির প্রেম যেন পায় পূর্ণতা,তাই নয় কি?
//////////////
গ্রামে বৈশাখের এই সময়টা কেবল বৈশাখের উৎবই নয়। এই সময়টাতে ঘরে ঘরে আনন্দের ধুম পড়ে নতুন ধান বোনার উৎসবেও। মতিদের অবস্থা উন্নত। তবে আমাদের মতি মাটির ছেলে। এই গ্রামের মাটি আঁকড়ে ধরে সে বেড়ে উঠেছে। বাল্যকাল থেকে দেখে আসছে প্রতি বছর নিজেদের ক্ষেতের ফসল থেকে কিছুটা ধান দাদা মশাই সবসময়ই আলাদা করে রাখতেন। এতে সাহায্য করতো তার বাবা,কাকা, পরিবারের বৌয়েরা এমনটি মতি সহ বাড়ি অনেক ছেলেমেয়েরাও। সারাবছর ধরে আগলে রাখা ওই ধানকে বলে বীজধান।
মতির মনে পরে ছোট্ট বেলা সবার সাথে বৈশাখের প্রথম দিনে ওই ক্ষেতের আল বেড়ে সে সোজা চলে যেত ধানক্ষেতে। তারপর পায়ে কাদামাটি মেখে মাঠে নেমে বুনতো ধানের প্রথম বীজ। ফসল বোনার জন্য বছরের প্রথম দিনটাকেই সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হতো। তাই তো কৃষকদের এতো ব্যস্ততা।
তবে ব্যস্ততা কৃষক বধূদেরও। ঘরের পুরুষের যখন মাঠে ধান বোনে তখন কৃষক বধূরা কিন্তু চুপটি করে বসে থাকে না। তারা স্বামী-ছেলেকে মাঠে পাঠিয়ে জমানো বীজধানের কিছুটা দিয়ে রান্না করে আমক্ষীর। পায়েস বা ক্ষীরের সঙ্গে গাছের কাঁচা আম মিলিয়ে এই উপাদেয় খাবার বানাতে কৃষক রমণীগণের সাথে হাতে হাত লাগায় ঘরের ছোট্ট মেয়েরা। বাড়ি ফেরার পথে তাঁদের বাবা কিনে আনে কিছু জিলিপি বা মিষ্টি। হাত-মুখ ধুয়ে পুরো পরিবার মজা করে খায় ঘরে বানানো আমক্ষীর আর দোকানের সদ্য তৈরি রসেভরা গরম গরম জিলিপি।
আজকেও ব্যাতিক্রম হয়নি এই নিয়মের। মতি শহরে চাকরি করে তো কি হয়েছে? সে নিজেও গ্রামের বাকি কৃষক ও তার দুই ভাইয়ের সাথে পায়ে কাদা মেখে বীজধান লাগিয়ে এল ক্ষেতে। তারপর রান্নাঘরের দোরে বসে দুই ভাবির সাথে কতখন করলে রসিকতা। শেষে তার জ্বালাতনে বিরক্ত হয়ে মোজ বৌ কমলা বললে,
– উফ্.....কি লক্ষ্মীছাড়া ছেলেরে বাবা।
– রাগিস কেন মেজো? তুই রাধনা যেমন পারিস,ও কি সত্য সত্যই বলছে নাকি।
– বড় ভাবী! এই তোমার লায় পেয়ে পেয়ে মেজো ভাবী এমন আলস্যে হয়েছে জানো! এটুকু রান্না করতে এতো সময় লাগে নাকি? সর দেখি তুমি, আমি রাঁধতে বসছি!
– আরে! আরে! কর কি? মাফ কর ভাই! এদিকে এসো বলছি....
বড় বৌ মতিকে হাতে ধরে টেনে বাইরে নিয়ে আসে। ওদিকে বেচারি মেজো বৌ রাগে ফুঁসছে। মেজোকে রাগতে দেখে বড় জন মতির কানে ধরে বের করে বাড়ির বাইরে। এরপর দুই ভাবির দ্বারা পরিত্যক্ত মতি হাজির হয় পুকুর পাড়ে। সেখানে তার দেখা হলো ময়নার সাথে। পুকুর পাড়ের নির্জনতায় অভিমানী ময়না মতিকে পায়েস খাওয়াবে বলে আসছিল। এগিয়ে গিয়ে মতি তাঁকে বুকে টেনে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দেয় মুখ খানা। তবুও ময়নার অভিমান ভাঙে না। মতি তাঁকে ঘাসের ওপরে চেপে ধরতে গেলে সে ধাক্কা দিয়ে মুখ ভেংচে পায়েসের বাটি রেখে পালায়। মতি বাটি তুলে পায়েস খাওয়া সেরে রেখে দেয় আম গাছের উঁচুতে এক ফোকড়ে। ময়না আড়াল থেকে এই দেখে প্রমাদ গোনে। অবশেষে হার মেনে সে ধরা দেয় মতির হাতে। মতি অবশ্য পায়েসের বাটি ময়নাকে সহজেই দেয়। কিন্তু যাবার আগে ময়নাকে বুকে জড়িয়ে ঠোঁটে দেয় আলতো কামড়। ওতে মতিকে দোষী সাব্যস্ত করা চলে না! বিশেষ করে অমন মিষ্টি কোমল ঠোঁট দুখানি চোখের সামনে মৃদু মৃদু কম্পিত হলে লোভ সে সামলায় কি করে?
এইরূপ হাল্কা প্রেমের পাঠ চুকিয়ে, মতি গ্রামের ছেলেদের সাথে সোজা নেমে পড়ে বিল পাড়ের অগভীর জলে । পাড়ের কাছে খলুই হাতে দাঁড়িয়ে উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করে ছোট ছোট মেয়েরা। এই বুঝি কেউ মাছ ধরল আর ছুঁড়ে দিল তার দিকে। মাছের অভাব হয় না অবশ্য। দক্ষ হাতে গ্রামের ছেলে ছোকরা দল একেকটা মাছ ধরে ধরে ছুড়ে মারে পাড়ে। আর মেয়েরাও টপাটপ কুড়িয়ে নেয় সেগুলো। কে কয়টা মাছ ধরতে পারল— তাই নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয় যেন সবার মাঝে।
মাঝেমধ্যে ছেলেদের দেখাদেখি মাছ ধরতে নেমে পড়ে মেয়েরাও। মতি পাড়ের পানে চেয়ে দেখে তিন-চারটি সখীকে সাথে নিয়ে পাড়ের উঁচুতে কৃষ্ণচূড়া গাছের ছায়াতে ময়না দাঁড়িয়ে মাছ ধরা দেখছে। ওদিকে ময়নামতির পাড়ে বটতলা ইতিমধ্যে মেলা বসে গিয়েছে হয়তো। ছেলেরা তাই আর দেরি করলে না। মতিও পাড়ে উঠে খলুইভর্তি মাছ নিয়ে ধরিয়ে দেয় ময়নার হাতে। দেয় সে সবার সামনেই। লজ্জায় মুখ লাল হয় ময়নার। কিন্তু না নিলে লজ্জা আরো বেশি। তাই হাত বারিয়ে ধরে সে। যাবার সময় মতির বড় ভাই হেঁকে বলে,
– বিকেলে বাড়ি আসিস ময়না,তোর ভাবি ডেকেছে বুঝলি।
বাড়িতে মতির দুই ভাবি তৈরিই থাকে উনুনে পাশে। সবাই হাত-মুখ ধুয়ে খানিক বিশ্রাম নিতে না নিতেই তারা হাজির হয় সবার জন্য এক থালা পান্তা আর গরম গরম মাছ ভাজা নিয়ে। সঙ্গে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ। পান্তা ভাত মতিদের বাড়িতে থাকার কথা নয়। তবে কোন কৃত্রিম উপায়ে এই পান্তার আবির্ভাব ঘটলো — এই রহস্য মতির আর মেজো ভাবিকে রাগিয়ে জানবার ইচ্ছে হয় না।মাছ ভাজা সহযোগে পান্তা ভাত তৃপ্তিসহকারে খেয়েদেয়ে মতি খানিক ভাত ঘুম দেয় বারান্দায়।
বৈকালে গ্রামের পরিবেশ ভিন্ন। মেলায় যাওয়ার সময় রমণীগন সাজতে বসে আয়না সামনে নিয়ে। মেয়েরা মাথার চুল বাঁধে সখীদের দল নিয়ে। তবে সবাই যে মেলায় যায় তা নয়। কেউ কেউ স্বামীর কানে কানে বলে দেয় দরকারি কী কী আনতে হবে। আর হাতে ধরিয়ে দেয় চকচকে টাকা। নিজের জমানো টাকা আর মায়ের দেওয়া টাকা— এ দুই-ই হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে মেলার উদ্দেশে পা বাড়ায় ছেলেমেয়েরা। সঙ্গে বাপ কি বড় ভাই।
ময়না একখানি রঙিন শাড়ি গায়ে জড়িয়ে লম্বা বেণী দুলিয়ে দুলিয়ে এসেছিল মতিদের বাড়িতে। মতি তখন প্যান্ট শার্ট পরে ঠিক যেন শহুরে বাবু। ময়নার কাজল রাঙা চোখে মতিকে দেখতে লাগে বেশ। তখন রাগ অভিমান কোথায় থাকে তার! কে বলবে সে কথা? সে যখন সবার আড়ালে কলঘরের পেছনে মতির হাতে বন্দী! তখন তার মনে ভয় খানিক থাকে বটে, কিন্তু অজানা এক উত্তেজনায় ছেয়ে যায় তার দেহ মন। ভিরু চোখ দুখানি তখন মেলে ধরতে ভয় হয় ময়নার। না জানি কি দেখবে অসভ্য ছেলেটার ওই দুষ্টুমি ভরা আঁখি পানে!
এদিকে মতি বন্দিনীর বুকের আঁচল সরিয়ে লাল ব্লাউজের গলার ফাঁকে আলতো করে চালান করে কড়কড়ে কটি নোট। তারপর হঠাৎ প্রচন্ড উত্তেজনায় কেঁপে ওঠে ময়না। বেশি কিছু নয়, মতি ময়নার ব্লাউজ ও বুকের সংযোগ স্থানে মুখ নামিয়ে চুমু দিয়েছে আলতো করে। তবে আরো কিছু সে করতো বোধহয়, যদি না ডাক পরতো বড় ভাবির। মেলায় যেতে হবে যে,সময় ফুরিয়ে গেলে কি চলবে?
মেলায় গিয়ে কাজের শেষ নেই! দম ফেলবার ফুরসতই মেলে না। ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েদের পুতুল, ঘড়ি, ঘুড়ি, মাটির নকশি করা কলস, বাঁশি, চুলের ফিতে এইসব কিনতে কিনতেই বেলা যায় যায়। মতির মেজো ভাইয়ের হাতখানি শক্ত করে আঁকড়ে মেজো ভাবি পেছন পেছন যায় ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছে। বড় ভাবী আর ছেলেমেয়েদের মতি এক সময় হারিয়েই ফেলে ভিড়ে। তবে সে খুঁজতেও যায় না তাদের,বড় ভাই আছে তাদের সাথে। তাই সে খোজে ময়নাকে।
বায়োস্কোপ দেখার ভাগ্য সাধারণত এখন আর হয় না কারোরই। তবে বটগাছের তলায় মতি আজ অবাক হয়ে দেখলো— ময়না দুই হাতের আঙ্গুলে অবাধ্য চুলেগুলোকে কানের পাশে গুজে ঘাসের ওপরে হাঁটু গেড়ে বসে দেখছে বায়োস্কোপ। দৃশ্যটি রীতিমতো বিস্ময়কর বলা চলে। এই জিনিস মতি দেখেনি বহু বছর হলো। ছোট বেলায় একটি বার দেখবার ভাগ্য তার হয়েছিল বটে, কিন্তু এখন এই জিনিস কোথা থেকে এলো কে জানে?
এরপর মতি ময়নাকে কাছে পায় সহজেই। রঙিন শাড়ি পরা কাঁচা মেয়েটার কোমল হাত সে তখন নেয় নিজের হাতে। তারপর আড়ালে নিয়ে একগাছি কাঁচের চুড়ি পড়িয়ে দেয় সেই হাতে। তবে ময়নাকে সহজে পেলেও তখন সময় বেশি নেই। কেন না কেনাকাটা ও ঘুরোঘুরি সেরে তখন সবার ফুরসত মেলে বাড়ির কথা ভাবার। এদিকে বাড়ির পথ ধরতে ধরতেই ঝুপ করেই যেন নেমে পড়ে সন্ধ্যা।
আল পথে হাঁটতে হাঁটতে তারা যখন ওটে তাল পুকুরের মেঠোপথে— তখন মাথার ওপদিয়ে একঝাঁক নাম না জানা পাখি ফিরছে তাদের নীড়ে। তাঁরাও তেমনি ফিরছে যে যার বাড়িতে। শুধু আবছা অন্ধকার এই সন্ধ্যার সাহায্য নিয়ে মতি ময়নাকে টেনে হাঁটা লাগায় বাগানের দিকে। বাড়ির পেছনে যে দিকটাতে মতি ময়নাকে টেনে আনে,যেখানে বড় জাম গাছের পেছনেই বন্ধ জানালা। প্রথমটায় উত্তেজনার বশে মতি শোনে না কিছুই। ময়নার কোমল দেহ খানি একটু বুকে জড়িয়ে নিতে তার যে কি ব্যাকুলতা। এই বলে সে ময়নাকে,
– আচ্ছা মেয়ে তুই ময়না! সেই কখন থেকে ইশারায় বলছি সরে আসতে! তুই কি বুঝিস না?
ময়না বোঝে বৈ কি! সে হয়তো একটু বোকাসোকা। তাই বলে অতটা বোকা মেয়ে ত ময়না নয় মোটেও। বজ্জাত ছোকরাটা তাকে বাগানে এনে যে সব নোংরামি করবে ময়না সবই ত বোঝে। এই সব কি কেউকে বুঝিয়ে দিতে হয় নাকি? তাই তো সে মতির হাতের বাঁধনে করে ছটফট। মতি সবলে আঁকড়ে ধরে ময়নার কোমড়। ঠিক এমনি সময় হঠাৎ বন্ধ জানালার ওপার থেকে এক লাইন কথা ভেসে আসে সন্ধ্যের হাওয়াতে ভর করে,
– ময়না মেয়েটি মন্দ নয়,দেখতে শুনতে ভালো। আমার মতির সাথে বেশ মানাবে। তুমি কি বল বৌমা?
– তা মানায় বটে। তবে মেয়েটাকে একটু বোকা বোকা লাগে যে মা!
– তাতে কি? ওই বোকাসোকাই ভালো। শিখিয়ে পড়িরে নেবে এখন.....
এই সৎ পরামর্শ শুনে মতির হাতে বন্দিনী ময়না লজ্জায় কাঁচুমাচু। এদিকে মতির মুখে হাসি যেন আর ধরে না। সে যদিও ভেবে ছিল নিজে বাবা মাকে রাজি করাবে,তবে এও ত মন্দ নয়। শুভ নববর্ষের সাথে যদি শুভ বিবাহটাও যদি পূর্ণ হয়— তবে মন্দ কিসে? পূর্ণতা পাক এমন ভালোবাসা। সুখে থাকুক কোমল আর দুষ্টু মিষ্টি মন গুলো। শেষটায় সমাপ্ত নয়, বলবো অগ্রীম "শুভ নববর্ষ"'
![[Image: Picsart-25-04-12-08-54-39-715.jpg]](https://i.ibb.co/cc3x3MPr/Picsart-25-04-12-08-54-39-715.jpg)