27-01-2025, 08:22 PM
(This post was last modified: 27-01-2025, 09:18 PM by বহুরূপী. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
দাসী কমলিনী: পর্ব ৩
দিন কয়েক এমনি পালাক্রমে পরিচারিকাগণ রাজকুমারের শয়নকক্ষে রাত্রি যাপন করতে লাগলো। আর সেই সাথে কুমারের সমুখেই চলতে লাগলো তাঁদের অবাধ্য মিনল খেলা। কুমার বিজয় প্রতাব এই সবে অভ্যস্ত। তাই কক্ষময় লাস্যময়ী রমণীদের মিলন খেলার উন্মাদনা বিজয় প্রতাবের নিদ্রায় তেমন ব্যঘাত ঘটাতে সক্ষম হলো না। তবে কুমার জাগিয়া থাকিলেও যে দাসীদের বিশেষ সুবিধা হয় তাও নয়। তবে দাসীদের রাত্রিকালীন এই খেলায় কুমার জাগিয়া থাকিলে সকলের আগ্রহ ও উন্মাদনা সপ্তমে উঠিয়া থাকে। তবে কুমারের কিন্তু এই সবে কোন হেলদোল দেখা যায় না। সে বরং শান্ত ভাবেই তার কাজে মনোনিবেশ করে এই মিলন খেলার মাঝেই, কিংবা মিলনরত রমণীগণের পাশে বসেই এর ওর সাথে গল্প করে।
প্রথম দিনের পর কমলিনী বেশ কদিন এই ঘরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বেশ বুঝেছে; কুমারকে এই দাসীগণের কেহই ভয় করে না। সবারই আচরণ কুমারের সহিত সখী সুলভ। অবশ্য কুমার নিজেও দাসীদের সকলকেইআদরে সহিত সখী বলেই ডাকে। আবার কখনো সখনো রাগমোচনের পর শ্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পরা পরিচারিকাদের বুকে টেনে মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে রসিকতা করতেও কুমারে বাঁধে না। তবে এতে অল্প বয়সী দাসীরা খানিক লজ্জায় কুমারের বলিষ্ঠ লোমশ বুকে মুখ লুকিয়া আর অভিজ্ঞ দাসীগণ সৎ সুযোগ হাতে পাওয়া মাত্র নিজেরাই কুমারের নিকটে আরও ঘন হয়ে তার চপলতা সহিত কুমারের রসিকতার জবাব দিচ্ছে।
তবে আমাদের কমলিনীর এই সকলের সাথে পরিচয় নতুন। সে বেচারী যেখান থেকে এসেছে,সেখানে এই সকলের সাথে তার ইতিমধ্যে এতো খোলাখুলি ভাবে পরিচয় হয় নাই। তার এই মধুর রতিক্রিয়া সম্পর্কে যা জ্ঞান তা অতি অল্প এবং নারী ও পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দুজন নারীর মধ্যেও যে এমন কিছু হতে পারে! তা কমলের জানা ছিল না। তাই নতুন এই বিষয়টিতে তার কৌতূহল হাওয়াটা অস্বাভাবিক বলা চলে না। তাই প্রথমে অবাক হলেও কদিন পরেই সে নিজেও রাত্রিতে কুমারের শয়নকক্ষে রাত্রিযাপন আরম্ভ করলো।
/////////
কমলিনী এখানকার স্থানীয় নয়। কোথায় তার গ্রাম আর কিইবা তার নাম! এই সব কমল নিজেও সঠিক জানে না। ছোট বয়সে মরুভূমি সংলগ্ন কোন এক রাজ্যে এক দরিদ্র বৃদ্ধার গৃহে তার বসবাস ছিল। সেই বৃদ্ধা তাকে কোথায় পায়? বা কিভাবে পায়? তা কমল কখনোই জানিতে চাহে নাই। তাই শুধু এই টুকুই বলা যায় যে, সেই বৃদ্ধা তাকে কমল বলে ডাকতো। আর তার সাথে সাথেই কমল নগরীর পথে ভিক্ষা করে বেরাতো।
এইরূপ ধীর গতিতে কোনমতে ঘুরছিল তার জীবনের চাকা। কিন্তু তারপর সেখান হঠাৎ যুদ্ধ লাগলে কোথায় গেল সেই বৃদ্ধা আর সেই বা কোথায় হারালো,তার খোঁজ কেউ রাখেনি। অবশ্য খোঁজ রাখার মতো কমলিনীর কেহই ছিল না। তবে কমলিনীর মনে পরে এক বনিক পরিবারের সাথে মরুভূমির পথে তার যাত্রার কথা। তারপর তাদের সাথে মাসখানেক থেকে এক বৃদ্ধ লোকের সাথে কন্টকমণি রাজ্যে তার আগমন। এরপর এখানে এসে এখানকার একটি ছোট্ট গ্রামে বছর দুই সে ওই বৃদ্ধের পরিবারের পরিচারিকা হিসেবে ছিল।পরে সেই বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে বৃদ্ধের মেয়েটির স্বামী গৃহে স্থান হয় কমলিনীর। সেই রমণীর সাথেই তার জীবনযাত্রার প্রায় আরো বছর ছয় পেরিয়ে অবশেষে কুমারের সেনানিবাসের এসে দাঁড়ানোর ইতিহাস আমরা খানিকটা জানি।
এই সব কিছুই কমলিনী একে একে মহারাণীর পায়ের কাছে উদ্যানের ঘাসের ওপরে বসে বলে গেল এক শান্ত অপরাহ্নে। যদিও মহারাণীর আদেশ ছিল তার পরদিনই তার কাছে যাবার। কিন্তু পরদিনই যাওয়া সম্ভব হয়নি, বা বলা চলে মহারাণীর সময় হয়নি।
দিনটা ছিল বেশ মেঘলা মেঘলা। আবহাওয়া দূর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়াতে শীতল। যতদূর চোখ যায় কোনোদিকেই ধুলা নাই,সুতরাং শিকারের জন্যে বেশ সুবিধাজনক দিন। কুমারী উল্কা পুরুষবেশে মৃগয়া করতে ভালোবাসে। সেনানিবাসে সৈনিকের বেশ ধারণ করে রাজনন্দিনী উল্কা কে যে লড়াই করতে দেখে গিয়ে ছিল। সেটি কুমারী উল্কার মৃগয়ায় গমনের বেশ। ছোটবেলা থেকেই কুমারী উল্কা তার ভাইয়ের সাথে বনে বনে ঘোড়ায় চড়ে শিকার করে বেরাতো, এমকি নিজে ধনুর্বিদ্যা শেখার পর পুরুষ বেশে সে বহুবার শিকারে গিয়েছে একা। তবে আগের দিন মাতার আগমনে সেদিন কোন মতেই শিকারে যাওয়া সম্ভব ছিল না। অবশ্য পরদিনও যাওয়া যেতে পারে, তবে শিকার দেখলে খাঁচার ভিতরে চিতাবাঘ যেমনটি ছটফট করে, সেদিন এমন শিকারের দিনে প্রাসাদের ভিতরে বসে থেকে রাজনন্দিনী উল্কার প্রাণ তেমনই ছটফট করছিল। কিন্তু উপায় অন্তত না দেখে কুমারী প্রাসাদের ছাদে একা একাই এদিক ওদিক করে সময় পার করছিল। আর এমন সময়ে একটি দৃশ্য তার চোখে পরায় ছাদের কিনারায় এসে সে আরো ভালো ভাবে দেখবার চেষ্টা করলো।
পাঠকদের কে আগেই বলা হয়েছে যে― রাজপ্রাসাদ চারপাশের ভূখণ্ড থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত। তাই সেখানে দাঁড়িয়ে নগরীর পথঘাট অনেক দূর পর্যন্ত চোখে পর। প্রাসাদের শিখড়ে দাঁড়িয়ে কুমারী সেদিন দেখলো যে― কুমার বিজয় প্রতাব তার অতি প্রিয় ঘোড়াটি নিয়ে প্রাসাদের পার্শ্ববর্তী পথটি দিয়ে দ্রুত বেগে নগরীর বাইরের দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছে।
কুমারী এই দৃশ্য দেখে প্রমাদ গুনলো। রাজকুমার অসুস্থ এবং তার সাস্থ্য এই মুহুর্তে এতোটাও ভালো নয় যে সে একা কোথায় যাবার সাহস করে। তাই কি হয়েছে তা বুঝতে কুমারী তৎক্ষণাৎ ছাদ থেকে নেমে খবর নিল যে― কুমারের নামে এক পত্র আসাতে কুমার ব্যস্ত হয়ে ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। এই সংবাদ শোনা পর কুমারীকেও আর প্রাসাদে সন্ধ্যার আগে দেখা গেল না।
সম্পূর্ণ ঘটনাটি এতটাই দ্রুত ঘটে গেল যে মহারাণীর সব জানতে খানিকটা দেরি হলো। এদিকে কুমার সেদিন ফিরলো সন্ধ্যের অনেক পর। কিন্তু সে ফিরলেও এই রহস্য সেদিন সমাধান হয় নি। তবে সেদিন সেই দূর্বল দেহ নিয়ে ঘোড়া ছোটানোর ফলে; কুমারের জন্যে রাজা চন্দ্র প্রতাবের আদেশ এল পরের দু মাস নিজের শয়নকক্ষে নজরবন্দি থাকার। বিজয় প্রতাব বুঝলো এই আদেশের পেছনে তার মাতা ও ভগিনীর সুস্পষ্ট অবদান আছে। তাই কুমার এই আদেশ বিনা বাক্য ব্যায়ে পালন করতে লাগলো।
এর প্রায় দিন পনেরো বাদে এমনি এদিন ভোররাতে কুমারের সারা ঘরময় অর্ধনগ্ন এবং নগ্ন পরিচারিকারা একে অপরের গায়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরে নিদ্রায় আছন্ন। কমলিনীও এর ব্যতিক্রম নয়। সে নিজেও এই মুহূর্তে নগ্ন বক্ষে নিজেকে কুমারের দেহের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রেখেছে। কেন না কুমারের প্রতি তার ভয় বেশ খানিকটা কমে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তার ওপরে সেদিন রাণীমাকে তার জীবন ইতিহাস বলার পর মহারাণী প্রভাদেবী অসুস্থ কুমারের দেখভালের ভার দেবসেনা ও কমলিনীর হাতে দিয়েছেন। তার মধ্যে দেবসেনার কাজ কুমারকে নজরবন্দি রাখা,আর কমলিনীর কাজ কুমারের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা। বলা বাহুল্য এই দুজনেই তাদের কর্ম অতি সুনিপুণ ভাবেই পালন করে আসছে।
গতরাতে দেবসেনার সঙ্গীত শুনে কুমার নিদ্রায় ডুবলে কমলিনীর সাথে যে পরিচারিকা কুমারের দেখাশোনা করছিল। সে এগিয়ে এসে কমলিনীকে অর্ধনগ্ন করে তার ওপরে চরাও হয়। কমলের এইসবে অভ্যেস নেই,তার ওপড়ে কুমারের নিদ্রা পার্শ্বে এইরুপ কিছু করার ইচ্ছে তার ছিল না। তাই খুব বেশি অগ্রসর না হলেও রাত্রি গভীর হলে সে অর্ধনগ্ন অবস্থাতেই কুমারে পাশে নিদ্রা লুটিয়ে পড়ে।
তার যখন নিদ্রা ভাঙ্গলো তখন অন্য পাশে আর একটি দাসী কুমারের বুকে মাথা রেখে ঘুমাছে। প্রথমটায় কমল অবাক হলো। কারণ সে মাত্র দুদিন আগেই এই দাসীটিকে সেনানিবাসের এক সৈনিকের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছে।
দাসীটির নাম অনিন্দিতা। সে এখানে আছে প্রায় সাত বছর। দেখতে শুনতে সে দেবসেনার থেকে মোটেও মন্দ নয়,শুধু গায়ের রঙটা দেবসেনার মত দুধে আলতা নয়,একটু চাপা। এর বাইরে দেবসেনা ও অনিন্দিতার মতো সুগঠিত স্তনযুগল আর ওমন ভরা নিতম্বের অধিকারিণী আর কেউ এই সেনানিবাসে নেই । তবে এখানে লেখক কমলিনীকে বাদ দিয়ে বলেছে । কারণ তার কথা আমরা খানিক পর শুনবো।
যাহোক, কমলিনী সৈনিকের সহিত অনিন্দিতাকে দেখার পর দেবসেনার কাছে শোনে; দাসী অনিন্দিতা সেনানিবাসের একটি সৈনিককে ভালোবাসে। সেই সূত্রপাতেই সৈনিকটির এদিকটায় আগমন। যদিও কমল সেই সৈনিকটির পরিচয় জানে না,কিন্তু বাকি আর কারো কাছেই তার পরিচয় গোপন নেই। কিন্তু অনিন্দিতার সহিত সৈনিকের এই সৌহার্দ্য নিয়ে বাকিদের তেমন অসুবিধা নাই বলিয়াই মনে হয়। কেন না, কোন কারণে এই সংবাদটি গত দুবছরের মধ্যে কুমার জানিলেন মহারাণীর কানে কেউ তোলে নাই। তবে কমলের অবাক হওয়াটা এর জন্যে যে, অনিন্দিতা সেই সৈনিকে মন দিয়েও কুমারের সঙ্গ পেতে এত ব্যাকুল কেন?
সে কুমারের বুকে শুয়ে অনিন্দিতার মুখপানে তাকিয়ে না জানি কত কি ভাবছিল। আর ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ খেয়াল হল কুমার তার ও অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে। একথা খেয়াল হয়েই কমলিনী সংকোচে খানিক গুটিয়ে গেল। কিন্তু কুমারের স্পর্শে অনিন্দিতা নিদ্রা ভেঙে উঠে বসলো। এদিকে বেচারী কমল অর্ধনগ্ন হওয়াতে কুমারকে কোনভাবেই ছাড়তে পারছে না। কারণ, কুমারের থেকে আলাদা হলেই তার নগ্নদেহের সৌন্দর্য কুমারের দৃষ্টি গোচর হবে। তাছাড়া মনের মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে কমলিনী সবে মাত্র জেগে জেগেই সুখো স্বপ্ন দেখতে মগ্ন হচ্ছিল,এত জলদি তা ভাঙচুর হবে একথা যেন মেনে নেওয়াই যায় না।
তবে এই দিবা স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে কমলিনীকে উঠতে হল দেবসেনার ডাকে। খানিক পরেই দেবসেনা এসে কমলিনী ও অনিন্দিতা কে জাগ্রত পেয়ে তাদের কেই কুমারে সকল পরিচর্যার ভাড় দিয়ে বেরিয়ে গেল। এদিকে কমলিনী পরলো মহা বিপাকে!
দাসী অনিন্দিতা খানিক রসিকা ও বেশ খানিক লজ্জাহীনা বলে কমল তাকে এরিয়ে চলতো। কিন্তু আজ সময় মন্দ! তাই এদিকে কুমার যখন ভোজনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, সেই সুযোগে অনিন্দিতা কমলিনীর পট্টবস্ত্র হরণ করে অলিন্দ দিয়ে উদ্যানে নিক্ষেপ করলো। কমল হয়তো কিছু বলতো, তবে তার আগেই কুমার ভোজনের প্রস্তুতি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করায় কমলিনী তখন লজ্জায় লাল হয়ে এক হাতে নিজের বুক ও অন্য হাতে নিজের যোনি ঢেকে আড়ষ্ট হয়ে কক্ষমধ্যে দাড়িয়ে গেল।
– ছিইইই....আচ্ছা মেয়ে তো তুই কমল! কাঁদিস কেন?
আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে,কমলের গাত্রবর্ণ সোনার রঙের মতোই উজ্জ্বল। সেই সাথে এও জানি সে আয়তনে খাটো। কুমারের সমুখে দাড়ালোও কুমারের মুখ দেখতে কমলিনীকে মস্তক উন্নত করতে হয় বেশ অনেকটায়,যা সে সচরাচর সংকোচ ও লজ্জায় এমনিতেই করে না। কিন্তু আজ কুমারের মুখপানে তাকাতেই তার চঞ্চল হরিণীর মতো চোখ দুটির দৃষ্টি কুমারের চোখে আটকে গেল। যদিও লজ্জা বাকি দিনের থেকেও আজ শতগুণ বেশি ছিল,কিন্তু তবুও দৃষ্টি নামলো না। কুমার যখন কমলের কোমল গালে আঙুল বুলিয়ে অশ্রু বিন্দু মুছিয়ে দিল। তখন বিজয় প্রতাবের সরল চোখের দৃষ্টিতে কমলিনী নিজেকে আর এক বার হারাতে বসলো।
তবে আজ শুধুমাত্র কমল নয়,বিশেষ চিন্তা বিষয় এই যে–কুমারের দৃষ্টিও আজ নারী দেহের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ! কেন না, কক্ষমধ্যে তখন প্রভাতের স্নিগ্ধ সূর্যকিরণ কমলিনী সোনা বরণ নগ্ন দেহে যেন গলে গলে তরল ধারায় সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পরছিল।
অনিন্দিতা কুমারের এই দৃষ্টি দেখে প্রথমটায় বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ঘোর কাঁটতেই তার মুখে হাসি ফুটলো। সে দেরি না করে কমলিনীর পেছনে হাজির হয়ে আলতো হাতে কমলে হাত দুখানি সরিরে কুমারের সমুখে কমলিনীকে সম্পূর্ণ ভাবে উন্মুক্ত করে বললে,
– কি লো কমল! কি জাদুতে বাঁধলী কুমারকে?
কুমার এতক্ষণে কমলিনীর বৃহৎকার চক্ষু ,ফুলের পাপড়ির মতো পাতলা ওষ্ঠাধর এবং নিটল বক্ষযুগলের থেকে ধীত গতিতে দৃষ্টি নামিয়ে– কমলের চিকন কোমর ও সুগভীর নাভি পার করে হালকা যৌনিকেশ ঢাকা উরুসন্ধি ফাঁকে দৃষ্টি দিয়েছিল মাত্র। তখনি অনিন্দিতার কথায় মুচকি হেসে বোধকরি কমলের হয়ে সেই উত্তর করলে,
– সখী অনিন্দিতা! দেবসেনা ফিরলো বলে.......
– এ মা! বড্ড এতো জলদি কি করে!
অনিন্দিতা বলতে বলতেই কুমারের শয়নকক্ষ থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল উদ্যানের দিকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কুমারের সাথে একা হয়ে কমলের নিশ্বাস যেন উত্তেজনায় বন্ধ হয়ে এলো, মনের অজান্তেই কুমারের স্পর্শে দেহে তার মৃদু কম্পন ধরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দুই চোখ বুঝে কি যেন বিড়বিড় করতে লাগলো কমল মনে মনে। এবং আবারও প্রাণপণে বাঁ হাতে নিজের নিটল স্তন দুখানা ডাকতে চাইলো সে। কিন্তু হঠাৎ করে দেহের কম্পন এতোটাই বারলো যে, তার বাঁ হাতে চেপে ধরা নিটল বক্ষযুগল হাতের কম্পনে কুমারের চক্ষু সমুখে বার বার উন্মুক্ত হয়ে পরছিল। অবশ্য দেবসেনার মতো অত বড় বড় না হলেও কমলের দুধ দুখানি কি আর তার এক হাতে সম্পূর্ণ ঢাকা পরতে চায়? মোটেও না ! তাই বেচারারা বার বার কমলিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সগর্বে তাদের বাদামী স্তনবৃন্ত উচিয়ে অসহায় কমলিনীর কাম উত্তেজনার জানান দিচ্ছিল।
তবে খানিক পরেই কুমার সরে যেতেই সে চোখ খুলে দেখলো― তার দেহে লাল রঙের পট্টবস্ত্র জড়ানো। আর কুমার এই মূহুর্তে তার থেকে খানিক দূরে ভোজনে বসেছে।
নগ্নতা কুমারের জন্যে নতুন নয়।কিন্তু কুমার বহু বছর ধরে নিজের অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে,এত সহজে তা ভাঙার নয়। তবে একথা সত্য যে― আজ সত্ত্বই কমলিনী দৈহিক সৌন্দর্যে কুমার খনিকের জন্যে হলেও অভিভূত হয়ে পরেছিল। আজ এতোদিন পর কমলিনীকে দেখে কুমার মনে এমন অনুভূতি কেন জাগছে, তার উত্তর হয়তো সে নিজেও জানে না? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত আমাদেরও জানা নেই। তবে কমলিনী এখনো কাঁপছে। অন্য দিকে কুমার তাঁর মনে হঠাৎ আসা এই বসন্ত অনুভূতিকে সামাল দিতে ভোজন ছেড়ে উঠে গিয়েছে অলিন্দের কাছে.....
/////////
মহারাণীর আদেশে কুমার এখন সার্বক্ষনিক সেনানিবাসে নজরবন্দি। সুতরাং বুদ্ধিমতী দেবসেনা এই সুযোগ হেলায় হারাবে এমনটি ভাববার কোন কারণ নেই। তাছাড়া রাণীমা এবার তার কাঁধে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়েছেন। সেই সাথে কুমারের মন জয় করা তো তার সার্বক্ষণিক চেষ্টা। তাই আজ বিশ্রামরত কুমারের সাথে সে একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলছিল,
– কুমার ! গত কদিন যাবত দেখছি আপনি কমলিনীর প্রতি যেন একটু বেশিই যত্নশীল।
দেবসেনার বলার ভঙ্গিমায় বোধকরি খানিক অভিমান ছিল। তাই কথাটা শুনে কুমার দেবসেনার দিকে একবার চাইলো। দেবসেনার রূপের কথা বলা বাহুল্য। সে রূপবতী তো বটেই, সেই সাথে মাঝে মধ্যেই কুমারের সাথে সে অসিবিদ্যা ও চিত্রকলার অনুশীলন করতো। তাই তো এমন সঙ্গীনি কাছে পেয়ে কুমার নজর বন্দী হয়েও বিরক্ত হয়নি মোটেও। দেবসেনা সার্বক্ষণিক কুমারের মনোরঞ্জনের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। তাই কুমার কিছু না বলে তাকিয়ে আছে দেকে দেবসেনা এবার গাল ফুলিয়ে পূর্ণ অভিমান প্রকাশ করেই বললে,
– বলি, তাকে নিজে এনেছেন বলে কি আমাদের অবহেলা করা উচিত?
দেবসেনার দেহে সবুজ রঙে পট্টবস্ত্র হালকা ভাবে জড়ানো ছিল। তার নিচে কাঁচুলি ছিল না। তাই কুমার যখন তাকে কাছে টেনে নিল; তখন দেবসেনার মোলায়েম ভরাট স্তনযুগল কুমারের লোমশ বুকে লেপ্টে গেল। বাকী পরিচারিকারদের থেকে দেবসেনার সহিত কুমারের ঘনিষ্ঠতা ছিল সবচেয়ে বেশি। কুমার দেবসেনাকে কাছে টেনে কপলে একটা গাঢ় চুম্বন করে বললে,
– সত্যই সখী, এ আমার ভারি অন্যায় হয়েছে। তবে তোমার কাছে কিছু গোপন করতে চাই না! কমলকে দেখে মাঝে মধ্যেই মন খানিক চঞ্চল হয়ে উঠছে। আমি জানি নি এমনটি হবার কারণ কী!
কুমারের প্রতিটি কথা দেবসেনার বুকে যেন তীরের মতো বিঁধল।কিন্তু বুকের ব্যথা চেপে মুখে হাসি ফুটিয়ে সে বললে,
– এতো সুখের সংবাদ! তবে এতো দিন পর আপনার মনে অন্তত এক জনকে ধরেছে! যদি অনুমতি পাই তো আজ রাতেই কমলকে...
কথা শেষ হলো না, তার আগেই কুমার ডান হাতের তর্জনী রাখলো দেবসেনা কোমল ঠোঁট দুখানির ওপরে। তারপর মৃদু হেসে বলল,
– সখী! তোমায় আমি কত বার বলেছি, ও আমার দ্বারা হবার নয়।
– কিন্তু কুমার!.....
– না সখী, এ নিয়ে আর কথা নয় বরং এই রূপ শান্ত সময়ে তোমার মধুর কণ্ঠস্বরে সঙ্গীত শুনতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে।
দেবসেনা কুমারের মনভাব বুঝলো। খানিক আগে কমলের প্রতি কুমারের টান দেখে সে যে মনে ব্যথা পেয়েছিল, তা এখন খানিক শিথিল হয়ে এলো। কিন্তু তার বদলে জায়গা করে নিল পুরোনো হতাশা। তবে সে দীর্ঘদিনের অভ্যেসে নিজের মনভাব ও মুখভঙ্গি আলাদা করতে শিখেছে। তাই হাসি মুখেই সে সঙ্গীত পরিবেশনে মনোনিবেশ করতে লাগলো। আর অতি অল্পক্ষণেই উদ্যানের পরিবেশ দেবসেনার সঙ্গীতের সঙ্গ নিয়ে নানান পাখিদের কলকাকলি মিলে এক অপূর্ব সুরে মুখরিত হয়ে উঠলো।
///////
কুমারীর বয়স যখন দশ তখন একবার বনের মাঝে হিংস্র শ্বাপদের মুখ থেকে এক সন্ন্যাসী তার প্রাণ রক্ষা করে । বনের মাঝে তার চঞ্চল স্বভাবের কারণে ভাই বিজয় প্রতাবের কাছে শাসন সে অনেক পেয়েছে। কিন্তু সেই দিনের মতো এমন বিপদে সে আগে কখনোই পরেছিল বলে মনে পরে না। তাই সেই সন্ন্যাসীকে রাজকুমারী উল্কা আজও ভোলেনি। অবশ্য সেদিনের পর থেকে আর কখনোই কুমারী তাকে আর দেখেও নি,তবে সে একথা জানতঝ যে কুমার সেই সন্ন্যাসী কে অনেক আগে থেকে চেনে। কিন্তু এতদিন পর সেই সন্ন্যাসীকে বিজয় প্রতাবের সাথে গহীন অরণ্যে সাক্ষাৎ করতে দেখে কুমারী বেশ অবাক হয়েছে।
কুমারী লুকিয়ে ছিল। কেন না, এটাই প্রথম নয় যে কুমার এই ভাবে হঠাৎ বেরিয়ে গেছে। এর আগেও অনেক বার এমনটা হয়েছে। তবে এইবার এমন দূর্বল দেহে ঘোড়া নিয়ে বেরুনো কুমারীর পছন্দ হয়নি। তবে এও সত্য ভাইয়ের গোপন খবর সে মহারাণীকে অর্থাৎ তার মাতাকে এখনও বলে নি। যদিও কুমারের বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্তে অধিকাংশ সময়েই সে তার মাতার পক্ষেই নিয়ে থাকে, তবে এই সন্ন্যাসীর সাথে সাক্ষাৎ বিশেষ গোপনী বলেই তার ধারণা। তবে রাজনন্দিনীর সইটি দেবসেনা এবং তার সহিত কুমারীর সম্পর্ক বিশেষ ঘনিষ্ঠ। তাই কিছু দিন ভাবভার পর আজ কুমারী তার সইয়ের সাথে গোপনে পরামর্শ নিতে নিজের শয়নকক্ষে অপেক্ষায় বসেছে।
রাত খুব একটা গভীর নয়। আকাশে মেঘেদের আগমনে উজ্জ্বল নক্ষত্র ও চন্দ্র আজ ছুটি নিয়েছে। তবে রাত্রি অন্ধকার হলেও নগরীর কিছু পথ দীপমালায় উজ্জ্বল। রাজপূরিতে ওঠার পথটিও অন্ধকার নয়। এই অবস্থায় গোপনে রাজপুরীতে প্রবেশ সবার জন্যে সম্ভব নয়। কেন না, প্রথমে পরিখা আর পরিখা পার করলেই প্রায় দশহাত চওড়া স্থূল চতুষ্কোণ প্রস্তরে নির্মিত প্রাকার বেষ্টন রাজপুরীতে ওঠার পথটি অতি সুরক্ষিত করে রেখেছে। প্রায়ই পনেরো হাত উঁচু হয়ে দাড়ানো পাথরের তৈরি এই প্রাকার বলয়ের মতো চক্রাকারে পুরভূমিকে আবদ্ধ করে সগর্বে দাড়িয়ে আছে ।প্রাকারের অভ্যন্তরে সুড়ঙ্গ আছে; কিন্তু সে পরের আলোচনা।
দেবসেনা সেনানিবাসের থেকে নগরীতে এসে প্রধান পথ ধরে সোজা এগিয়ে প্রাকারের পাহারা পার করে রাজপুরীর উচ্চ তোরণদ্বার দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলো। এমনটি নয় যে গোপন পথের সন্ধান দেবসেনার জানা ছিল না,আসলে আলোচনা গোপনীয় হলেও গোপনে আসার কোন প্রয়োজনে ছিল না।
দিন কয়েক এমনি পালাক্রমে পরিচারিকাগণ রাজকুমারের শয়নকক্ষে রাত্রি যাপন করতে লাগলো। আর সেই সাথে কুমারের সমুখেই চলতে লাগলো তাঁদের অবাধ্য মিনল খেলা। কুমার বিজয় প্রতাব এই সবে অভ্যস্ত। তাই কক্ষময় লাস্যময়ী রমণীদের মিলন খেলার উন্মাদনা বিজয় প্রতাবের নিদ্রায় তেমন ব্যঘাত ঘটাতে সক্ষম হলো না। তবে কুমার জাগিয়া থাকিলেও যে দাসীদের বিশেষ সুবিধা হয় তাও নয়। তবে দাসীদের রাত্রিকালীন এই খেলায় কুমার জাগিয়া থাকিলে সকলের আগ্রহ ও উন্মাদনা সপ্তমে উঠিয়া থাকে। তবে কুমারের কিন্তু এই সবে কোন হেলদোল দেখা যায় না। সে বরং শান্ত ভাবেই তার কাজে মনোনিবেশ করে এই মিলন খেলার মাঝেই, কিংবা মিলনরত রমণীগণের পাশে বসেই এর ওর সাথে গল্প করে।
প্রথম দিনের পর কমলিনী বেশ কদিন এই ঘরে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বেশ বুঝেছে; কুমারকে এই দাসীগণের কেহই ভয় করে না। সবারই আচরণ কুমারের সহিত সখী সুলভ। অবশ্য কুমার নিজেও দাসীদের সকলকেইআদরে সহিত সখী বলেই ডাকে। আবার কখনো সখনো রাগমোচনের পর শ্রান্ত হয়ে লুটিয়ে পরা পরিচারিকাদের বুকে টেনে মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে রসিকতা করতেও কুমারে বাঁধে না। তবে এতে অল্প বয়সী দাসীরা খানিক লজ্জায় কুমারের বলিষ্ঠ লোমশ বুকে মুখ লুকিয়া আর অভিজ্ঞ দাসীগণ সৎ সুযোগ হাতে পাওয়া মাত্র নিজেরাই কুমারের নিকটে আরও ঘন হয়ে তার চপলতা সহিত কুমারের রসিকতার জবাব দিচ্ছে।
তবে আমাদের কমলিনীর এই সকলের সাথে পরিচয় নতুন। সে বেচারী যেখান থেকে এসেছে,সেখানে এই সকলের সাথে তার ইতিমধ্যে এতো খোলাখুলি ভাবে পরিচয় হয় নাই। তার এই মধুর রতিক্রিয়া সম্পর্কে যা জ্ঞান তা অতি অল্প এবং নারী ও পুরুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দুজন নারীর মধ্যেও যে এমন কিছু হতে পারে! তা কমলের জানা ছিল না। তাই নতুন এই বিষয়টিতে তার কৌতূহল হাওয়াটা অস্বাভাবিক বলা চলে না। তাই প্রথমে অবাক হলেও কদিন পরেই সে নিজেও রাত্রিতে কুমারের শয়নকক্ষে রাত্রিযাপন আরম্ভ করলো।
/////////
কমলিনী এখানকার স্থানীয় নয়। কোথায় তার গ্রাম আর কিইবা তার নাম! এই সব কমল নিজেও সঠিক জানে না। ছোট বয়সে মরুভূমি সংলগ্ন কোন এক রাজ্যে এক দরিদ্র বৃদ্ধার গৃহে তার বসবাস ছিল। সেই বৃদ্ধা তাকে কোথায় পায়? বা কিভাবে পায়? তা কমল কখনোই জানিতে চাহে নাই। তাই শুধু এই টুকুই বলা যায় যে, সেই বৃদ্ধা তাকে কমল বলে ডাকতো। আর তার সাথে সাথেই কমল নগরীর পথে ভিক্ষা করে বেরাতো।
এইরূপ ধীর গতিতে কোনমতে ঘুরছিল তার জীবনের চাকা। কিন্তু তারপর সেখান হঠাৎ যুদ্ধ লাগলে কোথায় গেল সেই বৃদ্ধা আর সেই বা কোথায় হারালো,তার খোঁজ কেউ রাখেনি। অবশ্য খোঁজ রাখার মতো কমলিনীর কেহই ছিল না। তবে কমলিনীর মনে পরে এক বনিক পরিবারের সাথে মরুভূমির পথে তার যাত্রার কথা। তারপর তাদের সাথে মাসখানেক থেকে এক বৃদ্ধ লোকের সাথে কন্টকমণি রাজ্যে তার আগমন। এরপর এখানে এসে এখানকার একটি ছোট্ট গ্রামে বছর দুই সে ওই বৃদ্ধের পরিবারের পরিচারিকা হিসেবে ছিল।পরে সেই বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে বৃদ্ধের মেয়েটির স্বামী গৃহে স্থান হয় কমলিনীর। সেই রমণীর সাথেই তার জীবনযাত্রার প্রায় আরো বছর ছয় পেরিয়ে অবশেষে কুমারের সেনানিবাসের এসে দাঁড়ানোর ইতিহাস আমরা খানিকটা জানি।
এই সব কিছুই কমলিনী একে একে মহারাণীর পায়ের কাছে উদ্যানের ঘাসের ওপরে বসে বলে গেল এক শান্ত অপরাহ্নে। যদিও মহারাণীর আদেশ ছিল তার পরদিনই তার কাছে যাবার। কিন্তু পরদিনই যাওয়া সম্ভব হয়নি, বা বলা চলে মহারাণীর সময় হয়নি।
দিনটা ছিল বেশ মেঘলা মেঘলা। আবহাওয়া দূর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়াতে শীতল। যতদূর চোখ যায় কোনোদিকেই ধুলা নাই,সুতরাং শিকারের জন্যে বেশ সুবিধাজনক দিন। কুমারী উল্কা পুরুষবেশে মৃগয়া করতে ভালোবাসে। সেনানিবাসে সৈনিকের বেশ ধারণ করে রাজনন্দিনী উল্কা কে যে লড়াই করতে দেখে গিয়ে ছিল। সেটি কুমারী উল্কার মৃগয়ায় গমনের বেশ। ছোটবেলা থেকেই কুমারী উল্কা তার ভাইয়ের সাথে বনে বনে ঘোড়ায় চড়ে শিকার করে বেরাতো, এমকি নিজে ধনুর্বিদ্যা শেখার পর পুরুষ বেশে সে বহুবার শিকারে গিয়েছে একা। তবে আগের দিন মাতার আগমনে সেদিন কোন মতেই শিকারে যাওয়া সম্ভব ছিল না। অবশ্য পরদিনও যাওয়া যেতে পারে, তবে শিকার দেখলে খাঁচার ভিতরে চিতাবাঘ যেমনটি ছটফট করে, সেদিন এমন শিকারের দিনে প্রাসাদের ভিতরে বসে থেকে রাজনন্দিনী উল্কার প্রাণ তেমনই ছটফট করছিল। কিন্তু উপায় অন্তত না দেখে কুমারী প্রাসাদের ছাদে একা একাই এদিক ওদিক করে সময় পার করছিল। আর এমন সময়ে একটি দৃশ্য তার চোখে পরায় ছাদের কিনারায় এসে সে আরো ভালো ভাবে দেখবার চেষ্টা করলো।
পাঠকদের কে আগেই বলা হয়েছে যে― রাজপ্রাসাদ চারপাশের ভূখণ্ড থেকে বেশ উঁচুতে অবস্থিত। তাই সেখানে দাঁড়িয়ে নগরীর পথঘাট অনেক দূর পর্যন্ত চোখে পর। প্রাসাদের শিখড়ে দাঁড়িয়ে কুমারী সেদিন দেখলো যে― কুমার বিজয় প্রতাব তার অতি প্রিয় ঘোড়াটি নিয়ে প্রাসাদের পার্শ্ববর্তী পথটি দিয়ে দ্রুত বেগে নগরীর বাইরের দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে চলেছে।
কুমারী এই দৃশ্য দেখে প্রমাদ গুনলো। রাজকুমার অসুস্থ এবং তার সাস্থ্য এই মুহুর্তে এতোটাও ভালো নয় যে সে একা কোথায় যাবার সাহস করে। তাই কি হয়েছে তা বুঝতে কুমারী তৎক্ষণাৎ ছাদ থেকে নেমে খবর নিল যে― কুমারের নামে এক পত্র আসাতে কুমার ব্যস্ত হয়ে ঘোড়া নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। এই সংবাদ শোনা পর কুমারীকেও আর প্রাসাদে সন্ধ্যার আগে দেখা গেল না।
সম্পূর্ণ ঘটনাটি এতটাই দ্রুত ঘটে গেল যে মহারাণীর সব জানতে খানিকটা দেরি হলো। এদিকে কুমার সেদিন ফিরলো সন্ধ্যের অনেক পর। কিন্তু সে ফিরলেও এই রহস্য সেদিন সমাধান হয় নি। তবে সেদিন সেই দূর্বল দেহ নিয়ে ঘোড়া ছোটানোর ফলে; কুমারের জন্যে রাজা চন্দ্র প্রতাবের আদেশ এল পরের দু মাস নিজের শয়নকক্ষে নজরবন্দি থাকার। বিজয় প্রতাব বুঝলো এই আদেশের পেছনে তার মাতা ও ভগিনীর সুস্পষ্ট অবদান আছে। তাই কুমার এই আদেশ বিনা বাক্য ব্যায়ে পালন করতে লাগলো।
এর প্রায় দিন পনেরো বাদে এমনি এদিন ভোররাতে কুমারের সারা ঘরময় অর্ধনগ্ন এবং নগ্ন পরিচারিকারা একে অপরের গায়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পরে নিদ্রায় আছন্ন। কমলিনীও এর ব্যতিক্রম নয়। সে নিজেও এই মুহূর্তে নগ্ন বক্ষে নিজেকে কুমারের দেহের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রেখেছে। কেন না কুমারের প্রতি তার ভয় বেশ খানিকটা কমে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তার ওপরে সেদিন রাণীমাকে তার জীবন ইতিহাস বলার পর মহারাণী প্রভাদেবী অসুস্থ কুমারের দেখভালের ভার দেবসেনা ও কমলিনীর হাতে দিয়েছেন। তার মধ্যে দেবসেনার কাজ কুমারকে নজরবন্দি রাখা,আর কমলিনীর কাজ কুমারের স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখা। বলা বাহুল্য এই দুজনেই তাদের কর্ম অতি সুনিপুণ ভাবেই পালন করে আসছে।
গতরাতে দেবসেনার সঙ্গীত শুনে কুমার নিদ্রায় ডুবলে কমলিনীর সাথে যে পরিচারিকা কুমারের দেখাশোনা করছিল। সে এগিয়ে এসে কমলিনীকে অর্ধনগ্ন করে তার ওপরে চরাও হয়। কমলের এইসবে অভ্যেস নেই,তার ওপড়ে কুমারের নিদ্রা পার্শ্বে এইরুপ কিছু করার ইচ্ছে তার ছিল না। তাই খুব বেশি অগ্রসর না হলেও রাত্রি গভীর হলে সে অর্ধনগ্ন অবস্থাতেই কুমারে পাশে নিদ্রা লুটিয়ে পড়ে।
তার যখন নিদ্রা ভাঙ্গলো তখন অন্য পাশে আর একটি দাসী কুমারের বুকে মাথা রেখে ঘুমাছে। প্রথমটায় কমল অবাক হলো। কারণ সে মাত্র দুদিন আগেই এই দাসীটিকে সেনানিবাসের এক সৈনিকের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখেছে।
দাসীটির নাম অনিন্দিতা। সে এখানে আছে প্রায় সাত বছর। দেখতে শুনতে সে দেবসেনার থেকে মোটেও মন্দ নয়,শুধু গায়ের রঙটা দেবসেনার মত দুধে আলতা নয়,একটু চাপা। এর বাইরে দেবসেনা ও অনিন্দিতার মতো সুগঠিত স্তনযুগল আর ওমন ভরা নিতম্বের অধিকারিণী আর কেউ এই সেনানিবাসে নেই । তবে এখানে লেখক কমলিনীকে বাদ দিয়ে বলেছে । কারণ তার কথা আমরা খানিক পর শুনবো।
যাহোক, কমলিনী সৈনিকের সহিত অনিন্দিতাকে দেখার পর দেবসেনার কাছে শোনে; দাসী অনিন্দিতা সেনানিবাসের একটি সৈনিককে ভালোবাসে। সেই সূত্রপাতেই সৈনিকটির এদিকটায় আগমন। যদিও কমল সেই সৈনিকটির পরিচয় জানে না,কিন্তু বাকি আর কারো কাছেই তার পরিচয় গোপন নেই। কিন্তু অনিন্দিতার সহিত সৈনিকের এই সৌহার্দ্য নিয়ে বাকিদের তেমন অসুবিধা নাই বলিয়াই মনে হয়। কেন না, কোন কারণে এই সংবাদটি গত দুবছরের মধ্যে কুমার জানিলেন মহারাণীর কানে কেউ তোলে নাই। তবে কমলের অবাক হওয়াটা এর জন্যে যে, অনিন্দিতা সেই সৈনিকে মন দিয়েও কুমারের সঙ্গ পেতে এত ব্যাকুল কেন?
সে কুমারের বুকে শুয়ে অনিন্দিতার মুখপানে তাকিয়ে না জানি কত কি ভাবছিল। আর ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ খেয়াল হল কুমার তার ও অনিন্দিতার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে। একথা খেয়াল হয়েই কমলিনী সংকোচে খানিক গুটিয়ে গেল। কিন্তু কুমারের স্পর্শে অনিন্দিতা নিদ্রা ভেঙে উঠে বসলো। এদিকে বেচারী কমল অর্ধনগ্ন হওয়াতে কুমারকে কোনভাবেই ছাড়তে পারছে না। কারণ, কুমারের থেকে আলাদা হলেই তার নগ্নদেহের সৌন্দর্য কুমারের দৃষ্টি গোচর হবে। তাছাড়া মনের মানুষটিকে বুকে জড়িয়ে কমলিনী সবে মাত্র জেগে জেগেই সুখো স্বপ্ন দেখতে মগ্ন হচ্ছিল,এত জলদি তা ভাঙচুর হবে একথা যেন মেনে নেওয়াই যায় না।
তবে এই দিবা স্বপ্নের ঘোর কাটিয়ে কমলিনীকে উঠতে হল দেবসেনার ডাকে। খানিক পরেই দেবসেনা এসে কমলিনী ও অনিন্দিতা কে জাগ্রত পেয়ে তাদের কেই কুমারে সকল পরিচর্যার ভাড় দিয়ে বেরিয়ে গেল। এদিকে কমলিনী পরলো মহা বিপাকে!
দাসী অনিন্দিতা খানিক রসিকা ও বেশ খানিক লজ্জাহীনা বলে কমল তাকে এরিয়ে চলতো। কিন্তু আজ সময় মন্দ! তাই এদিকে কুমার যখন ভোজনের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত, সেই সুযোগে অনিন্দিতা কমলিনীর পট্টবস্ত্র হরণ করে অলিন্দ দিয়ে উদ্যানে নিক্ষেপ করলো। কমল হয়তো কিছু বলতো, তবে তার আগেই কুমার ভোজনের প্রস্তুতি নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করায় কমলিনী তখন লজ্জায় লাল হয়ে এক হাতে নিজের বুক ও অন্য হাতে নিজের যোনি ঢেকে আড়ষ্ট হয়ে কক্ষমধ্যে দাড়িয়ে গেল।
– ছিইইই....আচ্ছা মেয়ে তো তুই কমল! কাঁদিস কেন?
আমরা ইতিমধ্যেই জানি যে,কমলের গাত্রবর্ণ সোনার রঙের মতোই উজ্জ্বল। সেই সাথে এও জানি সে আয়তনে খাটো। কুমারের সমুখে দাড়ালোও কুমারের মুখ দেখতে কমলিনীকে মস্তক উন্নত করতে হয় বেশ অনেকটায়,যা সে সচরাচর সংকোচ ও লজ্জায় এমনিতেই করে না। কিন্তু আজ কুমারের মুখপানে তাকাতেই তার চঞ্চল হরিণীর মতো চোখ দুটির দৃষ্টি কুমারের চোখে আটকে গেল। যদিও লজ্জা বাকি দিনের থেকেও আজ শতগুণ বেশি ছিল,কিন্তু তবুও দৃষ্টি নামলো না। কুমার যখন কমলের কোমল গালে আঙুল বুলিয়ে অশ্রু বিন্দু মুছিয়ে দিল। তখন বিজয় প্রতাবের সরল চোখের দৃষ্টিতে কমলিনী নিজেকে আর এক বার হারাতে বসলো।
তবে আজ শুধুমাত্র কমল নয়,বিশেষ চিন্তা বিষয় এই যে–কুমারের দৃষ্টিও আজ নারী দেহের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ! কেন না, কক্ষমধ্যে তখন প্রভাতের স্নিগ্ধ সূর্যকিরণ কমলিনী সোনা বরণ নগ্ন দেহে যেন গলে গলে তরল ধারায় সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পরছিল।
অনিন্দিতা কুমারের এই দৃষ্টি দেখে প্রথমটায় বিষ্ময়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু ঘোর কাঁটতেই তার মুখে হাসি ফুটলো। সে দেরি না করে কমলিনীর পেছনে হাজির হয়ে আলতো হাতে কমলে হাত দুখানি সরিরে কুমারের সমুখে কমলিনীকে সম্পূর্ণ ভাবে উন্মুক্ত করে বললে,
– কি লো কমল! কি জাদুতে বাঁধলী কুমারকে?
কুমার এতক্ষণে কমলিনীর বৃহৎকার চক্ষু ,ফুলের পাপড়ির মতো পাতলা ওষ্ঠাধর এবং নিটল বক্ষযুগলের থেকে ধীত গতিতে দৃষ্টি নামিয়ে– কমলের চিকন কোমর ও সুগভীর নাভি পার করে হালকা যৌনিকেশ ঢাকা উরুসন্ধি ফাঁকে দৃষ্টি দিয়েছিল মাত্র। তখনি অনিন্দিতার কথায় মুচকি হেসে বোধকরি কমলের হয়ে সেই উত্তর করলে,
– সখী অনিন্দিতা! দেবসেনা ফিরলো বলে.......
– এ মা! বড্ড এতো জলদি কি করে!
অনিন্দিতা বলতে বলতেই কুমারের শয়নকক্ষ থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল উদ্যানের দিকে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কুমারের সাথে একা হয়ে কমলের নিশ্বাস যেন উত্তেজনায় বন্ধ হয়ে এলো, মনের অজান্তেই কুমারের স্পর্শে দেহে তার মৃদু কম্পন ধরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে দুই চোখ বুঝে কি যেন বিড়বিড় করতে লাগলো কমল মনে মনে। এবং আবারও প্রাণপণে বাঁ হাতে নিজের নিটল স্তন দুখানা ডাকতে চাইলো সে। কিন্তু হঠাৎ করে দেহের কম্পন এতোটাই বারলো যে, তার বাঁ হাতে চেপে ধরা নিটল বক্ষযুগল হাতের কম্পনে কুমারের চক্ষু সমুখে বার বার উন্মুক্ত হয়ে পরছিল। অবশ্য দেবসেনার মতো অত বড় বড় না হলেও কমলের দুধ দুখানি কি আর তার এক হাতে সম্পূর্ণ ঢাকা পরতে চায়? মোটেও না ! তাই বেচারারা বার বার কমলিনীর হাত থেকে মুক্তি পেয়ে সগর্বে তাদের বাদামী স্তনবৃন্ত উচিয়ে অসহায় কমলিনীর কাম উত্তেজনার জানান দিচ্ছিল।
তবে খানিক পরেই কুমার সরে যেতেই সে চোখ খুলে দেখলো― তার দেহে লাল রঙের পট্টবস্ত্র জড়ানো। আর কুমার এই মূহুর্তে তার থেকে খানিক দূরে ভোজনে বসেছে।
নগ্নতা কুমারের জন্যে নতুন নয়।কিন্তু কুমার বহু বছর ধরে নিজের অনুভূতি গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে,এত সহজে তা ভাঙার নয়। তবে একথা সত্য যে― আজ সত্ত্বই কমলিনী দৈহিক সৌন্দর্যে কুমার খনিকের জন্যে হলেও অভিভূত হয়ে পরেছিল। আজ এতোদিন পর কমলিনীকে দেখে কুমার মনে এমন অনুভূতি কেন জাগছে, তার উত্তর হয়তো সে নিজেও জানে না? এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত আমাদেরও জানা নেই। তবে কমলিনী এখনো কাঁপছে। অন্য দিকে কুমার তাঁর মনে হঠাৎ আসা এই বসন্ত অনুভূতিকে সামাল দিতে ভোজন ছেড়ে উঠে গিয়েছে অলিন্দের কাছে.....
/////////
মহারাণীর আদেশে কুমার এখন সার্বক্ষনিক সেনানিবাসে নজরবন্দি। সুতরাং বুদ্ধিমতী দেবসেনা এই সুযোগ হেলায় হারাবে এমনটি ভাববার কোন কারণ নেই। তাছাড়া রাণীমা এবার তার কাঁধে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়েছেন। সেই সাথে কুমারের মন জয় করা তো তার সার্বক্ষণিক চেষ্টা। তাই আজ বিশ্রামরত কুমারের সাথে সে একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হয়ে কথা বলছিল,
– কুমার ! গত কদিন যাবত দেখছি আপনি কমলিনীর প্রতি যেন একটু বেশিই যত্নশীল।
দেবসেনার বলার ভঙ্গিমায় বোধকরি খানিক অভিমান ছিল। তাই কথাটা শুনে কুমার দেবসেনার দিকে একবার চাইলো। দেবসেনার রূপের কথা বলা বাহুল্য। সে রূপবতী তো বটেই, সেই সাথে মাঝে মধ্যেই কুমারের সাথে সে অসিবিদ্যা ও চিত্রকলার অনুশীলন করতো। তাই তো এমন সঙ্গীনি কাছে পেয়ে কুমার নজর বন্দী হয়েও বিরক্ত হয়নি মোটেও। দেবসেনা সার্বক্ষণিক কুমারের মনোরঞ্জনের দিকে বিশেষ নজর রাখছে। তাই কুমার কিছু না বলে তাকিয়ে আছে দেকে দেবসেনা এবার গাল ফুলিয়ে পূর্ণ অভিমান প্রকাশ করেই বললে,
– বলি, তাকে নিজে এনেছেন বলে কি আমাদের অবহেলা করা উচিত?
দেবসেনার দেহে সবুজ রঙে পট্টবস্ত্র হালকা ভাবে জড়ানো ছিল। তার নিচে কাঁচুলি ছিল না। তাই কুমার যখন তাকে কাছে টেনে নিল; তখন দেবসেনার মোলায়েম ভরাট স্তনযুগল কুমারের লোমশ বুকে লেপ্টে গেল। বাকী পরিচারিকারদের থেকে দেবসেনার সহিত কুমারের ঘনিষ্ঠতা ছিল সবচেয়ে বেশি। কুমার দেবসেনাকে কাছে টেনে কপলে একটা গাঢ় চুম্বন করে বললে,
– সত্যই সখী, এ আমার ভারি অন্যায় হয়েছে। তবে তোমার কাছে কিছু গোপন করতে চাই না! কমলকে দেখে মাঝে মধ্যেই মন খানিক চঞ্চল হয়ে উঠছে। আমি জানি নি এমনটি হবার কারণ কী!
কুমারের প্রতিটি কথা দেবসেনার বুকে যেন তীরের মতো বিঁধল।কিন্তু বুকের ব্যথা চেপে মুখে হাসি ফুটিয়ে সে বললে,
– এতো সুখের সংবাদ! তবে এতো দিন পর আপনার মনে অন্তত এক জনকে ধরেছে! যদি অনুমতি পাই তো আজ রাতেই কমলকে...
কথা শেষ হলো না, তার আগেই কুমার ডান হাতের তর্জনী রাখলো দেবসেনা কোমল ঠোঁট দুখানির ওপরে। তারপর মৃদু হেসে বলল,
– সখী! তোমায় আমি কত বার বলেছি, ও আমার দ্বারা হবার নয়।
– কিন্তু কুমার!.....
– না সখী, এ নিয়ে আর কথা নয় বরং এই রূপ শান্ত সময়ে তোমার মধুর কণ্ঠস্বরে সঙ্গীত শুনতে মন ব্যাকুল হয়ে উঠছে।
দেবসেনা কুমারের মনভাব বুঝলো। খানিক আগে কমলের প্রতি কুমারের টান দেখে সে যে মনে ব্যথা পেয়েছিল, তা এখন খানিক শিথিল হয়ে এলো। কিন্তু তার বদলে জায়গা করে নিল পুরোনো হতাশা। তবে সে দীর্ঘদিনের অভ্যেসে নিজের মনভাব ও মুখভঙ্গি আলাদা করতে শিখেছে। তাই হাসি মুখেই সে সঙ্গীত পরিবেশনে মনোনিবেশ করতে লাগলো। আর অতি অল্পক্ষণেই উদ্যানের পরিবেশ দেবসেনার সঙ্গীতের সঙ্গ নিয়ে নানান পাখিদের কলকাকলি মিলে এক অপূর্ব সুরে মুখরিত হয়ে উঠলো।
///////
কুমারীর বয়স যখন দশ তখন একবার বনের মাঝে হিংস্র শ্বাপদের মুখ থেকে এক সন্ন্যাসী তার প্রাণ রক্ষা করে । বনের মাঝে তার চঞ্চল স্বভাবের কারণে ভাই বিজয় প্রতাবের কাছে শাসন সে অনেক পেয়েছে। কিন্তু সেই দিনের মতো এমন বিপদে সে আগে কখনোই পরেছিল বলে মনে পরে না। তাই সেই সন্ন্যাসীকে রাজকুমারী উল্কা আজও ভোলেনি। অবশ্য সেদিনের পর থেকে আর কখনোই কুমারী তাকে আর দেখেও নি,তবে সে একথা জানতঝ যে কুমার সেই সন্ন্যাসী কে অনেক আগে থেকে চেনে। কিন্তু এতদিন পর সেই সন্ন্যাসীকে বিজয় প্রতাবের সাথে গহীন অরণ্যে সাক্ষাৎ করতে দেখে কুমারী বেশ অবাক হয়েছে।
কুমারী লুকিয়ে ছিল। কেন না, এটাই প্রথম নয় যে কুমার এই ভাবে হঠাৎ বেরিয়ে গেছে। এর আগেও অনেক বার এমনটা হয়েছে। তবে এইবার এমন দূর্বল দেহে ঘোড়া নিয়ে বেরুনো কুমারীর পছন্দ হয়নি। তবে এও সত্য ভাইয়ের গোপন খবর সে মহারাণীকে অর্থাৎ তার মাতাকে এখনও বলে নি। যদিও কুমারের বিষয়ে যেকোন সিদ্ধান্তে অধিকাংশ সময়েই সে তার মাতার পক্ষেই নিয়ে থাকে, তবে এই সন্ন্যাসীর সাথে সাক্ষাৎ বিশেষ গোপনী বলেই তার ধারণা। তবে রাজনন্দিনীর সইটি দেবসেনা এবং তার সহিত কুমারীর সম্পর্ক বিশেষ ঘনিষ্ঠ। তাই কিছু দিন ভাবভার পর আজ কুমারী তার সইয়ের সাথে গোপনে পরামর্শ নিতে নিজের শয়নকক্ষে অপেক্ষায় বসেছে।
রাত খুব একটা গভীর নয়। আকাশে মেঘেদের আগমনে উজ্জ্বল নক্ষত্র ও চন্দ্র আজ ছুটি নিয়েছে। তবে রাত্রি অন্ধকার হলেও নগরীর কিছু পথ দীপমালায় উজ্জ্বল। রাজপূরিতে ওঠার পথটিও অন্ধকার নয়। এই অবস্থায় গোপনে রাজপুরীতে প্রবেশ সবার জন্যে সম্ভব নয়। কেন না, প্রথমে পরিখা আর পরিখা পার করলেই প্রায় দশহাত চওড়া স্থূল চতুষ্কোণ প্রস্তরে নির্মিত প্রাকার বেষ্টন রাজপুরীতে ওঠার পথটি অতি সুরক্ষিত করে রেখেছে। প্রায়ই পনেরো হাত উঁচু হয়ে দাড়ানো পাথরের তৈরি এই প্রাকার বলয়ের মতো চক্রাকারে পুরভূমিকে আবদ্ধ করে সগর্বে দাড়িয়ে আছে ।প্রাকারের অভ্যন্তরে সুড়ঙ্গ আছে; কিন্তু সে পরের আলোচনা।
দেবসেনা সেনানিবাসের থেকে নগরীতে এসে প্রধান পথ ধরে সোজা এগিয়ে প্রাকারের পাহারা পার করে রাজপুরীর উচ্চ তোরণদ্বার দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করলো। এমনটি নয় যে গোপন পথের সন্ধান দেবসেনার জানা ছিল না,আসলে আলোচনা গোপনীয় হলেও গোপনে আসার কোন প্রয়োজনে ছিল না।