5 hours ago
(This post was last modified: 5 hours ago by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ছ
সাফিনা আজকে কলেজ থেকে একটু আগে বের হয়েছেন। আজকে একটা দরকারী এপয়মেন্ট আছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে বেশ একটা চিন্তায় আছে ও। আজকে সিনথিয়া যে ছেলেটার সাথে প্রেম করে সেই ছেলেটার সাথে দেখা করবে ও। ছেলেটা ওর অফিসে আসতে চেয়েছিল তবে মানা করে দিয়েছে। বাসায়ও আনতে চায় নি কারণ তাহলে ছেলেটা ভাবতে পারে যে ওর ব্যাপারে ওরা পজিটিভ। আর অফিসে আনতে চায় নি কারণ যদি এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে ছেলেটা ওর সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছে না তখন যেন কোন সিনক্রিয়েট করতে না পারে ওর সহকর্মীদের সামনে। তাই ধানমন্ডিতে একটা রুফটফ ক্যাফেতে দেখা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবরিনা ওর লক্ষী মেয়ে। সব সময় যা বলেছে তাই শুনেছে তাই মেনেছে। সিনথিয়া হল রেবেল চাইল্ড। ছোট বেলা থেকে নিয়ম ভাংগা ওর লক্ষ্য। তবে মেয়েটার মনটা খুব ফ্রেশ। এই যে একটা ছেলে কে হঠাত করে পছন্দ করে বসে আছে। পছন্দ করার আগে সিনথিয়ার ভাবা উচিত ছিল ওদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে এই ছেলের ফ্যামিলি যায় কিনা। সিনথিয়া ড্যাডিস গার্ল। তাই বাবাকে কথা বলে নরম করে ফেলেছে। কিন্তু ওর স্বামী ওর হ্যা ছাড়া সরাসরি মতামত দিবে না এইটা ও জানে। এতদিন পর্যন্ত নুসাইবা আর সাবরিনা ওর সাথে সায় দিয়েছিল। সত্য বলতে কি ওর থেকে সাবরিনা আর নুসাইবা বরং বেশি নেগেটিভ ছিল এই সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু মাহফুজ ছেলেটাকে অঘটন ঘটন পটীয়সী বলতে হবে। নাইলে নুসাইবা আর সাবরিনা দুইজনকে কিভাবে ওর পক্ষে নিল এইটা একটা রহস্য। অবশ্য নুসাইবার টা আন্দাজ করতে পারছে। নুসাইবার জামাই আরশাদ যে সব ঝামেলা পাকিয়েছিল ঘুষ খেতে গিয়ে সেইসব ঝামেলা থেকে নুসাইবা কে সেভ করেছে । নুসাইবা তাই স্বভাবত মাহফুজের পক্ষ নিয়েছে। একটু হাসে সাফিনা। নুসাইবার মত ওর এত ক্লাস সচেতনতা নেই। নুসাইবা তার সব নিজের ফ্যামিলি নিয়ে অহংকার সরিয়ে এই ছেলের পক্ষে ওকালতি করছে এটাই মজার। নিজের ননদ কে এতদিন ধরে দেখছে। তাই ব্যাপারটা একসাথে কৌতুহলকর আর কমিডিক। তবে যতই মজার হোক না কেন নুসাইবার ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা আছে। সাবরিনার ব্যাপারটার কোন ব্যাখ্যা ওর কাছে নেই। সাবরিনা সব সময় ওর বোনের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। সিনথিয়াও সব সময় এইজন্য সাবরিনার সাথে ঝগড়া করে। এইবারো তাই হচ্ছিল। কিন্তু গত সাপ্তাহে হঠাত করে কি হল, সাবরিনা বলল এই বিয়েতে ওর মত আছে। সাফিনা অবাক হয়েছিলেন। মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলেন কি হল তোর? সাবরিনা বলল মাহফুজের সাথে কথা বলে আমার মনে হল ছেলে ভাল। আর সিনথিয়া ওকে যেভাবে পাগলের মত ভালবাসে তাতে ওদের দুইজনের একসাথে থাকা উচিত। পাগলের মত ভালবাসা শব্দ গুলো মাথায় আসতেই নিজের কিশোরি বয়সের কথা মনে আসে। নিজেও তো পাগলের মত ভালবাসতেন একজনকে। কতদিন সেই কথা মনের ভিতর চাপা দিয়ে রেখেছেন। কিছুদিন ধরে সাইকোলজিস্ট এর কাছে থেরাপি নেবার পর থেকে পুরাতন সেই স্মৃতি আবার সামনে চলে এসেছে। মাহফুজের ব্যাপারে সাফিনার মেইন আপত্তি মাহফুজের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড না। হ্যা ফ্যামিলি আরেকটু ভাল হলে ভাল হত তবে এইটা মেইন কারণ না আপত্তি করার। সাফিনা জানেন তার আপত্তির মূল কারণ তার সেই পুরাতন স্মৃতি। পাগলের মত সেই ভালবাসা। সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান তাকে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছে। পরে তার মা আসমা বেগমের সাথে কথার সময় ব্যাপারটা আর নিশ্চিত হয়েছেন সাফিনা। তবে তার ভয়টা কি অমূলক? পলিটিক্স করা একটা ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে কতটা নিরাপদ। নুসাইবা যত বলুক মাহফুজের মত দক্ষ ছেলে হয় না। মাহফুজের ব্যাবসার ভাল ভবিষ্যত আছে। আর সাবরিনা যত বলুক সিনথিয়াকে এমন ভালবাসবে না আর কেউ। কিন্তু এইসবের কোন মূল্য থাকবে না যদি না ভবিষ্যতে অস্তিত্ব না থাকে। ছেলেটাই যদি না থাকে। তবে নুসাইবা, সাবরিনা আর তার মা আসমা তিন জনের সম্মিলিত অনুরোধ থেকে মাহফুজের সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে সাফিনা। কারণ সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান তাকে একটা জিনিস বুঝিয়েছেন পুরাতন ট্রমা থেকে বের হতে হলে সেই ট্রমা কে মোকাবেলা করতে হবে। আর ট্রমার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে নেই। নিজের জীবনের ট্রমার উপর ভিত্তি করে তাই সিনথিয়ার জীবনের জন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন না উনি। এইজন্য আজকে দেখা করতে রাজি হয়েছেন। ছেলেটার সাথে একবারো দেখা হয় নি, কথা হয় নি। সিনথিয়া একবার ছবি দেখাতে চাইছিল রাজি হন নি তখন দেখতে। আজকের সাক্ষাতের সব ব্যবস্থা করেছে সিনথিয়া। মাহফুজ সেখানে উনার জন্য অপেক্ষা করবে।
এইসব ভাবতে ভাবতে সিনথিয়ার মেসেজ আসে হোয়াটসএপে। আম্মু তুমি দোকানের কাউন্টারে গিয়ে তোমার নাম বললে হবে তোমাকে টেবিলে নিয়ে যাবে কাউন্টার থেকে। মাহফুজ অলরেডি চলে এসেছে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার জন্য হলেও প্লিজ ওর সাথে ভাল ব্যবহার করো। আর খোলা মনে ওর সাথে কথা বললে আমার বিশ্বাস তুমি বুঝবে কেন আমি ওকে পছন্দ করেছি। সাফিনা নিজের মন কে কোন রকম বায়াস থেকে মুক্ত রাখতে চান। তাই এইসব থেকে মন দূরে রাখেন। ছেলেটার সাথে দেখা হোক। কথা হোক। এরপর প্রাথমিক কিছু প্রশ্ন ঠিক করে এসেছেন সেইসবে যদি ঠিক উত্তর দিতে পারে তাহলে স্বামী মিজবাহ করিম আর উনি মিলে একসাথে ছেলেটাকে বাসায় ডাকবেন। তখন উতরাতে পারলে হ্যা বলবেন। আজকে তাই বলা যায় প্রিলি পরীক্ষা ছেলেটার। হাসেন মনে মনে সাফিনা। দেখতে দেখতে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে। এর মধ্যে হোয়াটসএপে আরেকটা মেসেজের শব্দ হল। সাফিনা দেখলেন নাম্বারটা চিনেন না। মেসেজ খুলতেই দেখলেন ভিতরে লেখা। হাই, হাউ আর ইউ? হোয়াই আর ইউ নট এনসারিং মি? ইউ আর স্টিলিং মাই স্লিপ ফর মান্থস। ইংরেজিতে লেখা এই টেক্সট দেখে একটু হাসি আসল আবার চিন্তাও হল। গত কিছুদিন ধরে নানা অপরিচিত নাম্বার থেকে তার কাছে হোয়াটএপে মেসেজ আসছে। গত তিন সাপ্তাহে তিনটা ফোন নাম্বার ব্লক করেছেন। প্রতিবার ব্লক করলে তিন চারদিনের মধ্যে নতুন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। কখনো প্রেমের কবিতা। কখনো গুড মর্নিং। এই বয়সে এইসব মেসেজ ভাল লাগে না। অবশ্য বাংলাদেশে সব বয়সী মেয়েরা এইসব ঝামেলা কম বেশি পোহায়। আর সুন্দরী হলে তো কথা নেই। সাফিনা জানে তার ক্লাসে সব সময় স্টুডেন্টরা উপস্থিত থাকে এর কারণ শুধু যে সে ভাল পড়ায় তা না, তার সৌন্দর্যের এর পিছনে ভূমিকা আছে। ওর এক বান্ধবী করপোররেটে জব করে। সেও এমন এক গোপন প্রেমিকের মেসেজের পাল্লায় পড়েছিল। চার পাচ মাস পরে বের হল সেটা তার অফিসের এক কলিগ। সেই কলিগ এমন নাছোড়বান্দা ছিল যে এইচ আরে রিপোর্ট করেও ছাড়া পাওয়া যায় নি। পরে অফিস ছাড়তে হয়েছিল বান্ধবী কে। ওর সাথে এইসব কে করছে? ওর কলেজের কোন কলিগ? ফিজিক্সের জয়ন্ত স্যার যেভাবে সারাদিন ওর কাছে ঘুর ঘুর করে করে তাতে কলিগদের মধ্যে কেউ হলে উনাকে সন্দেহ করতে হয়। কলেজের কোন স্টুডেন্ট না তো? হয়ত কোন ভাবে ওর ফোন নাম্বার পেয়ে গেছে? আর কে হতে পারে? সাফিনা মেসেজ পাঠান। হু আর ইউ? হোয়াই আর ইউ সেন্ডিং মি মেসেজ? এক মিনিট পর উত্তর আসে। এট লাস্ট ইউ এন্সার মি। আই এম ওয়ান অফ ইউর এডমায়ারার। সাফিনা এইবার শিওর হন নিশ্চয় কোন ক্রিপি স্টকার। কলিগ হতে পারে, স্টুডেন্ট হতে পারে। মিজবাহ কে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন এই আননোন নাম্বার থেকে মেসেজের কথা। মিজবাহ সিরিয়াস হবার বদলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল তোমার এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে আরেক মেয়ের সামনে বিয়ে হবে এমন সময় এইসব মেসেজ পেলে তো খুশি হবার কথা। তা কে সেই তোমার গোপন প্রেমিক? সাফিনা মিজবাহ এর এই হাসিঠাট্টায় বিরক্ত হন। ছেলেরা মেয়েদের এই স্টকার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো বুঝে না। একটা ছেলে মেয়ের থেকে মেসেজ পেলে খুশি হয়। আরে একটা মেয়ে ছেলের থেকে এমন আননোন মেসেজ পেলে ভাবতে হয় অনেক কিছু। সেফটি, গসিপ অনেক কিছু। ছেলেরা এইসব বুঝে না। থানায় কমপ্লেইন করার কথা বললে মিজবাহ বলেন কি বলে কমপ্লেইন করব? যে সকাল বিকাল খবর জানতে চেয়ে মেসেজ করে? এইসব বললে তো হাসবে থানার লোক। আর উত্তর দিও না। এমনিতে এক সময় থেমে যাবে। সাফিনা টের পেয়েছেন মিজবাহ সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। সাফিনার মনে হয় ওর বয়স যদি ছিচল্লিশ না হয়ে ছাব্বিশ হত তাহল কি এত নির্বিকার থাকতে পারত মিজবাহ? তখন নিশ্চয় খুব দৌড়াদৌড়ি করত। পুলিশে লিংক গুলো কাজে লাগিয়ে এই মেসেজ গুলোর পিছনের লোকটাকে ধরত। এখন দুইটা বড় মেয়ের মা হয়েছে বয়স হয়েছে তাই বলে কি মনে করে মিজবাহ যে কেউ ওকে ডিস্টার্ব করবে না? ওদের বিয়ে সেফ? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাফিনা। সাইকোলজিস্টের সাথে কথায় কথায় বলেছে ও মিজবাহ আর আগের মত সময় দেয় না। মিজবাহ এখনো ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ তবে মিজবার এর প্রায়োরেটি পরিবর্তন হয়েছে। আজকে ওকে জামদানি শাড়িতে দেখলে শিওর অনেক প্রশংসা ছুড়ে দিত। অবশ্য যে কেউ দিবে। সাফিনা জানেন এই বয়সেও সবার মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেন উনি। তবে মিজবাহ এই প্রশংসা ছুড়েই খালাস। আগের মত প্রশংসার সাথে সাথে ওর সাথে সময় কাটাতে চাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এইসব কমিয়ে দিয়েছে। মিজবাহ প্রেম করে না কোথায় এইটা শিওর। মিজবাহ আসলে এখন প্রফেশনাল লাইফে সফলতা ছুতে চায়। সাফিনার প্রায়োরেটি তাই আজ সেকেন্ড। এইসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি ক্যাফের সামনে আসে।
গাড়ি থেকে নেমে সাফিনা লিফট ধরে উপরে উঠে যায়। রুফটফ ক্যাফেতে সরাসরি নিয়ে যায় লিফট। অফিস ছুটির পরের ভিড়টা এখনো শুরু হয় নি। সিনথিয়া বলেছিল ভাল ক্যাফে। বেশি হইহল্লা নেই। বসে চুপচাপ কথা বলা যায়। সাফিনা লিফট থেকে নামতেই সামনে রিসেপশন কাউন্টার। সাফিনা কে কাউন্টারের লোকটা বলে ম্যাডাম আপনি একা? সাফিনা বলে নাহ আমার সাথে আরেকজন আছে। তবে উনি আগে আসছে। উনার নাম মাহফুজ। লোকটা বলে ও ম্যাডাম। স্যার আগেই আসছে। আসুন আপনি আমার সাথে। আমি আপনাকে টেবিলে নিয়ে যাচ্ছি। সাফিনা হেটে হেটে টেবিলের দিকে যায়। চারপাশের পরিবেশটা সুন্দর। শীতের বিকাল। গায়ের শালটা শাড়ির উপর ভাল করে জড়িয়ে নেন। বেশির ভাগ টেবিল এখনো খালি। তবে পরিবেশটা ভাল। সফিসটিকেটেড। দূরে একটা টেবিলে একটা ছেলে দাঁড়ায় ওকে আসতে দেখে। রিসেপশনের লোকটা সেইদিকে হাটতে থাকে। সাফিনা ভাল করে এইবার টেবিলের দাঁড়ানো ছেলেটাকে খেয়াল করে। চেহারা এখনো স্পষ্ট হচ্ছে না। চশমাটা দিয়ে ভাল করে তাকায়। সাদা একটা পাঞ্জাবী পরা। একটা কাল শাল ক্রস করে পরা। সাফিনা আরেকটু সামনে আগান। চমকে উঠে আবার তাকান। সময় কি তার সাথে হেয়ালি করছে। ছেলেটার মাথায় ব্যাকব্রাশ। চওড়া কপাল। সেইম হাইট। টেবিলের কাছে যেতেই ছেলেটা বলে উঠে আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আমি মাহফুজ। সেই ভরাট গলা। বসুন আন্টি। সাফিনা নিজের ভিতরের বিস্ময় চেপে রাখতে পারেন না। জিজ্ঞেস করেন তোমার নাম তো মাহফুজ তাই না? মাহফুজ বলে জ্বি আন্টি। সাফিনা জিজ্ঞেস করেন তোমাদের বাড়ি কি ময়মংসিং বা সেখানে তোমাদের কোন আত্মীয় আছে? মাহফুজ বলে জ্বী না আন্টি। আমরা পুরান ঢাকাইয়া কয়েক পুরুষ ধরে। সাফিনার মনে হয় এত মিল কিভাবে। একভাবে তাকায়। একভাবে কথা বলে। সেই ভরাট গলা। চওড়া কাধ। এক রকম ব্যাকব্রাশ। এক রকম করে পাঞ্জাবী আর চাদর পরা। এত বছরের পুরাতন সময় যেন ময়মংসিং এর তাদের পাড়ার রাস্তা থেকে ঢাকার এই বহুতলা ভবনের রুফটপের কফিশপে চলে এসেছে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি নিবেন আন্টি? এদের কেক ভাল করে। আমি শুনেছি আপনি চকলেট কেক পছন্দ করেন। এদের চকলেট কেক ভাল। দিতে বলব? সাফিনা উত্তর দিতে পারেন না। তার মনে হয় সময় তার সাথে হেয়ালি করছে। তার অতীত আর বর্তমান কে এক বিন্দুতে এনে দাড় করিয়েছে।
সাফিনা আজকে কলেজ থেকে একটু আগে বের হয়েছেন। আজকে একটা দরকারী এপয়মেন্ট আছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে বেশ একটা চিন্তায় আছে ও। আজকে সিনথিয়া যে ছেলেটার সাথে প্রেম করে সেই ছেলেটার সাথে দেখা করবে ও। ছেলেটা ওর অফিসে আসতে চেয়েছিল তবে মানা করে দিয়েছে। বাসায়ও আনতে চায় নি কারণ তাহলে ছেলেটা ভাবতে পারে যে ওর ব্যাপারে ওরা পজিটিভ। আর অফিসে আনতে চায় নি কারণ যদি এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে ছেলেটা ওর সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছে না তখন যেন কোন সিনক্রিয়েট করতে না পারে ওর সহকর্মীদের সামনে। তাই ধানমন্ডিতে একটা রুফটফ ক্যাফেতে দেখা করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাবরিনা ওর লক্ষী মেয়ে। সব সময় যা বলেছে তাই শুনেছে তাই মেনেছে। সিনথিয়া হল রেবেল চাইল্ড। ছোট বেলা থেকে নিয়ম ভাংগা ওর লক্ষ্য। তবে মেয়েটার মনটা খুব ফ্রেশ। এই যে একটা ছেলে কে হঠাত করে পছন্দ করে বসে আছে। পছন্দ করার আগে সিনথিয়ার ভাবা উচিত ছিল ওদের ফ্যামিলি স্ট্যাটাসের সাথে এই ছেলের ফ্যামিলি যায় কিনা। সিনথিয়া ড্যাডিস গার্ল। তাই বাবাকে কথা বলে নরম করে ফেলেছে। কিন্তু ওর স্বামী ওর হ্যা ছাড়া সরাসরি মতামত দিবে না এইটা ও জানে। এতদিন পর্যন্ত নুসাইবা আর সাবরিনা ওর সাথে সায় দিয়েছিল। সত্য বলতে কি ওর থেকে সাবরিনা আর নুসাইবা বরং বেশি নেগেটিভ ছিল এই সম্পর্ক নিয়ে। কিন্তু মাহফুজ ছেলেটাকে অঘটন ঘটন পটীয়সী বলতে হবে। নাইলে নুসাইবা আর সাবরিনা দুইজনকে কিভাবে ওর পক্ষে নিল এইটা একটা রহস্য। অবশ্য নুসাইবার টা আন্দাজ করতে পারছে। নুসাইবার জামাই আরশাদ যে সব ঝামেলা পাকিয়েছিল ঘুষ খেতে গিয়ে সেইসব ঝামেলা থেকে নুসাইবা কে সেভ করেছে । নুসাইবা তাই স্বভাবত মাহফুজের পক্ষ নিয়েছে। একটু হাসে সাফিনা। নুসাইবার মত ওর এত ক্লাস সচেতনতা নেই। নুসাইবা তার সব নিজের ফ্যামিলি নিয়ে অহংকার সরিয়ে এই ছেলের পক্ষে ওকালতি করছে এটাই মজার। নিজের ননদ কে এতদিন ধরে দেখছে। তাই ব্যাপারটা একসাথে কৌতুহলকর আর কমিডিক। তবে যতই মজার হোক না কেন নুসাইবার ব্যাপারটার একটা ব্যাখ্যা আছে। সাবরিনার ব্যাপারটার কোন ব্যাখ্যা ওর কাছে নেই। সাবরিনা সব সময় ওর বোনের উপর কর্তৃত্ব ফলাতে চায়। সিনথিয়াও সব সময় এইজন্য সাবরিনার সাথে ঝগড়া করে। এইবারো তাই হচ্ছিল। কিন্তু গত সাপ্তাহে হঠাত করে কি হল, সাবরিনা বলল এই বিয়েতে ওর মত আছে। সাফিনা অবাক হয়েছিলেন। মেয়ে কে জিজ্ঞেস করলেন কি হল তোর? সাবরিনা বলল মাহফুজের সাথে কথা বলে আমার মনে হল ছেলে ভাল। আর সিনথিয়া ওকে যেভাবে পাগলের মত ভালবাসে তাতে ওদের দুইজনের একসাথে থাকা উচিত। পাগলের মত ভালবাসা শব্দ গুলো মাথায় আসতেই নিজের কিশোরি বয়সের কথা মনে আসে। নিজেও তো পাগলের মত ভালবাসতেন একজনকে। কতদিন সেই কথা মনের ভিতর চাপা দিয়ে রেখেছেন। কিছুদিন ধরে সাইকোলজিস্ট এর কাছে থেরাপি নেবার পর থেকে পুরাতন সেই স্মৃতি আবার সামনে চলে এসেছে। মাহফুজের ব্যাপারে সাফিনার মেইন আপত্তি মাহফুজের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড না। হ্যা ফ্যামিলি আরেকটু ভাল হলে ভাল হত তবে এইটা মেইন কারণ না আপত্তি করার। সাফিনা জানেন তার আপত্তির মূল কারণ তার সেই পুরাতন স্মৃতি। পাগলের মত সেই ভালবাসা। সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান তাকে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছে। পরে তার মা আসমা বেগমের সাথে কথার সময় ব্যাপারটা আর নিশ্চিত হয়েছেন সাফিনা। তবে তার ভয়টা কি অমূলক? পলিটিক্স করা একটা ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে কতটা নিরাপদ। নুসাইবা যত বলুক মাহফুজের মত দক্ষ ছেলে হয় না। মাহফুজের ব্যাবসার ভাল ভবিষ্যত আছে। আর সাবরিনা যত বলুক সিনথিয়াকে এমন ভালবাসবে না আর কেউ। কিন্তু এইসবের কোন মূল্য থাকবে না যদি না ভবিষ্যতে অস্তিত্ব না থাকে। ছেলেটাই যদি না থাকে। তবে নুসাইবা, সাবরিনা আর তার মা আসমা তিন জনের সম্মিলিত অনুরোধ থেকে মাহফুজের সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে সাফিনা। কারণ সাইকোলজিস্ট আদিবা রহমান তাকে একটা জিনিস বুঝিয়েছেন পুরাতন ট্রমা থেকে বের হতে হলে সেই ট্রমা কে মোকাবেলা করতে হবে। আর ট্রমার ভিত্তিতে কোন সিদ্ধান্ত নিতে নেই। নিজের জীবনের ট্রমার উপর ভিত্তি করে তাই সিনথিয়ার জীবনের জন্য কোন সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন না উনি। এইজন্য আজকে দেখা করতে রাজি হয়েছেন। ছেলেটার সাথে একবারো দেখা হয় নি, কথা হয় নি। সিনথিয়া একবার ছবি দেখাতে চাইছিল রাজি হন নি তখন দেখতে। আজকের সাক্ষাতের সব ব্যবস্থা করেছে সিনথিয়া। মাহফুজ সেখানে উনার জন্য অপেক্ষা করবে।
এইসব ভাবতে ভাবতে সিনথিয়ার মেসেজ আসে হোয়াটসএপে। আম্মু তুমি দোকানের কাউন্টারে গিয়ে তোমার নাম বললে হবে তোমাকে টেবিলে নিয়ে যাবে কাউন্টার থেকে। মাহফুজ অলরেডি চলে এসেছে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার জন্য হলেও প্লিজ ওর সাথে ভাল ব্যবহার করো। আর খোলা মনে ওর সাথে কথা বললে আমার বিশ্বাস তুমি বুঝবে কেন আমি ওকে পছন্দ করেছি। সাফিনা নিজের মন কে কোন রকম বায়াস থেকে মুক্ত রাখতে চান। তাই এইসব থেকে মন দূরে রাখেন। ছেলেটার সাথে দেখা হোক। কথা হোক। এরপর প্রাথমিক কিছু প্রশ্ন ঠিক করে এসেছেন সেইসবে যদি ঠিক উত্তর দিতে পারে তাহলে স্বামী মিজবাহ করিম আর উনি মিলে একসাথে ছেলেটাকে বাসায় ডাকবেন। তখন উতরাতে পারলে হ্যা বলবেন। আজকে তাই বলা যায় প্রিলি পরীক্ষা ছেলেটার। হাসেন মনে মনে সাফিনা। দেখতে দেখতে মেয়েরা বড় হয়ে গেছে। এর মধ্যে হোয়াটসএপে আরেকটা মেসেজের শব্দ হল। সাফিনা দেখলেন নাম্বারটা চিনেন না। মেসেজ খুলতেই দেখলেন ভিতরে লেখা। হাই, হাউ আর ইউ? হোয়াই আর ইউ নট এনসারিং মি? ইউ আর স্টিলিং মাই স্লিপ ফর মান্থস। ইংরেজিতে লেখা এই টেক্সট দেখে একটু হাসি আসল আবার চিন্তাও হল। গত কিছুদিন ধরে নানা অপরিচিত নাম্বার থেকে তার কাছে হোয়াটএপে মেসেজ আসছে। গত তিন সাপ্তাহে তিনটা ফোন নাম্বার ব্লক করেছেন। প্রতিবার ব্লক করলে তিন চারদিনের মধ্যে নতুন নাম্বার থেকে মেসেজ আসে। কখনো প্রেমের কবিতা। কখনো গুড মর্নিং। এই বয়সে এইসব মেসেজ ভাল লাগে না। অবশ্য বাংলাদেশে সব বয়সী মেয়েরা এইসব ঝামেলা কম বেশি পোহায়। আর সুন্দরী হলে তো কথা নেই। সাফিনা জানে তার ক্লাসে সব সময় স্টুডেন্টরা উপস্থিত থাকে এর কারণ শুধু যে সে ভাল পড়ায় তা না, তার সৌন্দর্যের এর পিছনে ভূমিকা আছে। ওর এক বান্ধবী করপোররেটে জব করে। সেও এমন এক গোপন প্রেমিকের মেসেজের পাল্লায় পড়েছিল। চার পাচ মাস পরে বের হল সেটা তার অফিসের এক কলিগ। সেই কলিগ এমন নাছোড়বান্দা ছিল যে এইচ আরে রিপোর্ট করেও ছাড়া পাওয়া যায় নি। পরে অফিস ছাড়তে হয়েছিল বান্ধবী কে। ওর সাথে এইসব কে করছে? ওর কলেজের কোন কলিগ? ফিজিক্সের জয়ন্ত স্যার যেভাবে সারাদিন ওর কাছে ঘুর ঘুর করে করে তাতে কলিগদের মধ্যে কেউ হলে উনাকে সন্দেহ করতে হয়। কলেজের কোন স্টুডেন্ট না তো? হয়ত কোন ভাবে ওর ফোন নাম্বার পেয়ে গেছে? আর কে হতে পারে? সাফিনা মেসেজ পাঠান। হু আর ইউ? হোয়াই আর ইউ সেন্ডিং মি মেসেজ? এক মিনিট পর উত্তর আসে। এট লাস্ট ইউ এন্সার মি। আই এম ওয়ান অফ ইউর এডমায়ারার। সাফিনা এইবার শিওর হন নিশ্চয় কোন ক্রিপি স্টকার। কলিগ হতে পারে, স্টুডেন্ট হতে পারে। মিজবাহ কে কয়েকদিন আগে বলেছিলেন এই আননোন নাম্বার থেকে মেসেজের কথা। মিজবাহ সিরিয়াস হবার বদলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল। বলেছিল তোমার এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে আরেক মেয়ের সামনে বিয়ে হবে এমন সময় এইসব মেসেজ পেলে তো খুশি হবার কথা। তা কে সেই তোমার গোপন প্রেমিক? সাফিনা মিজবাহ এর এই হাসিঠাট্টায় বিরক্ত হন। ছেলেরা মেয়েদের এই স্টকার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো বুঝে না। একটা ছেলে মেয়ের থেকে মেসেজ পেলে খুশি হয়। আরে একটা মেয়ে ছেলের থেকে এমন আননোন মেসেজ পেলে ভাবতে হয় অনেক কিছু। সেফটি, গসিপ অনেক কিছু। ছেলেরা এইসব বুঝে না। থানায় কমপ্লেইন করার কথা বললে মিজবাহ বলেন কি বলে কমপ্লেইন করব? যে সকাল বিকাল খবর জানতে চেয়ে মেসেজ করে? এইসব বললে তো হাসবে থানার লোক। আর উত্তর দিও না। এমনিতে এক সময় থেমে যাবে। সাফিনা টের পেয়েছেন মিজবাহ সিরিয়াসলি নিচ্ছে না। সাফিনার মনে হয় ওর বয়স যদি ছিচল্লিশ না হয়ে ছাব্বিশ হত তাহল কি এত নির্বিকার থাকতে পারত মিজবাহ? তখন নিশ্চয় খুব দৌড়াদৌড়ি করত। পুলিশে লিংক গুলো কাজে লাগিয়ে এই মেসেজ গুলোর পিছনের লোকটাকে ধরত। এখন দুইটা বড় মেয়ের মা হয়েছে বয়স হয়েছে তাই বলে কি মনে করে মিজবাহ যে কেউ ওকে ডিস্টার্ব করবে না? ওদের বিয়ে সেফ? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সাফিনা। সাইকোলজিস্টের সাথে কথায় কথায় বলেছে ও মিজবাহ আর আগের মত সময় দেয় না। মিজবাহ এখনো ওর সৌন্দর্যে মুগ্ধ তবে মিজবার এর প্রায়োরেটি পরিবর্তন হয়েছে। আজকে ওকে জামদানি শাড়িতে দেখলে শিওর অনেক প্রশংসা ছুড়ে দিত। অবশ্য যে কেউ দিবে। সাফিনা জানেন এই বয়সেও সবার মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেন উনি। তবে মিজবাহ এই প্রশংসা ছুড়েই খালাস। আগের মত প্রশংসার সাথে সাথে ওর সাথে সময় কাটাতে চাওয়া, ঘুরতে যাওয়া এইসব কমিয়ে দিয়েছে। মিজবাহ প্রেম করে না কোথায় এইটা শিওর। মিজবাহ আসলে এখন প্রফেশনাল লাইফে সফলতা ছুতে চায়। সাফিনার প্রায়োরেটি তাই আজ সেকেন্ড। এইসব ভাবতে ভাবতে গাড়ি ক্যাফের সামনে আসে।
গাড়ি থেকে নেমে সাফিনা লিফট ধরে উপরে উঠে যায়। রুফটফ ক্যাফেতে সরাসরি নিয়ে যায় লিফট। অফিস ছুটির পরের ভিড়টা এখনো শুরু হয় নি। সিনথিয়া বলেছিল ভাল ক্যাফে। বেশি হইহল্লা নেই। বসে চুপচাপ কথা বলা যায়। সাফিনা লিফট থেকে নামতেই সামনে রিসেপশন কাউন্টার। সাফিনা কে কাউন্টারের লোকটা বলে ম্যাডাম আপনি একা? সাফিনা বলে নাহ আমার সাথে আরেকজন আছে। তবে উনি আগে আসছে। উনার নাম মাহফুজ। লোকটা বলে ও ম্যাডাম। স্যার আগেই আসছে। আসুন আপনি আমার সাথে। আমি আপনাকে টেবিলে নিয়ে যাচ্ছি। সাফিনা হেটে হেটে টেবিলের দিকে যায়। চারপাশের পরিবেশটা সুন্দর। শীতের বিকাল। গায়ের শালটা শাড়ির উপর ভাল করে জড়িয়ে নেন। বেশির ভাগ টেবিল এখনো খালি। তবে পরিবেশটা ভাল। সফিসটিকেটেড। দূরে একটা টেবিলে একটা ছেলে দাঁড়ায় ওকে আসতে দেখে। রিসেপশনের লোকটা সেইদিকে হাটতে থাকে। সাফিনা ভাল করে এইবার টেবিলের দাঁড়ানো ছেলেটাকে খেয়াল করে। চেহারা এখনো স্পষ্ট হচ্ছে না। চশমাটা দিয়ে ভাল করে তাকায়। সাদা একটা পাঞ্জাবী পরা। একটা কাল শাল ক্রস করে পরা। সাফিনা আরেকটু সামনে আগান। চমকে উঠে আবার তাকান। সময় কি তার সাথে হেয়ালি করছে। ছেলেটার মাথায় ব্যাকব্রাশ। চওড়া কপাল। সেইম হাইট। টেবিলের কাছে যেতেই ছেলেটা বলে উঠে আসসালামু আলাইকুম আন্টি। আমি মাহফুজ। সেই ভরাট গলা। বসুন আন্টি। সাফিনা নিজের ভিতরের বিস্ময় চেপে রাখতে পারেন না। জিজ্ঞেস করেন তোমার নাম তো মাহফুজ তাই না? মাহফুজ বলে জ্বি আন্টি। সাফিনা জিজ্ঞেস করেন তোমাদের বাড়ি কি ময়মংসিং বা সেখানে তোমাদের কোন আত্মীয় আছে? মাহফুজ বলে জ্বী না আন্টি। আমরা পুরান ঢাকাইয়া কয়েক পুরুষ ধরে। সাফিনার মনে হয় এত মিল কিভাবে। একভাবে তাকায়। একভাবে কথা বলে। সেই ভরাট গলা। চওড়া কাধ। এক রকম ব্যাকব্রাশ। এক রকম করে পাঞ্জাবী আর চাদর পরা। এত বছরের পুরাতন সময় যেন ময়মংসিং এর তাদের পাড়ার রাস্তা থেকে ঢাকার এই বহুতলা ভবনের রুফটপের কফিশপে চলে এসেছে। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কি নিবেন আন্টি? এদের কেক ভাল করে। আমি শুনেছি আপনি চকলেট কেক পছন্দ করেন। এদের চকলেট কেক ভাল। দিতে বলব? সাফিনা উত্তর দিতে পারেন না। তার মনে হয় সময় তার সাথে হেয়ালি করছে। তার অতীত আর বর্তমান কে এক বিন্দুতে এনে দাড় করিয়েছে।