Thread Rating:
  • 315 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Misc. Erotica অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৬)


মাহফুজ আজকে পার্টির ছেলের থেকে মটরসাইকেলটা নিয়ে নিয়েছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সন্তোষ’দা এর সাথে ফোনে যেদিন কথা হল সেদিন সন্তোষ’দা খুব অবাক হয়েছিল কাজলের নাম জিজ্ঞেস করায়। বেশ কিছুক্ষণ কোন কথা বলেন নি। তারপর বলেছিলেন এই নামটা তুমি কোথা থেকে জানলে? মাহফুজ সরাসরি উত্তর টা দিতে চায় না। তাই বলে শুনলাম পরিচিত একজনের কাছ থেকে। শুনে খুব ইন্টারেস্টিং মনে হল ভদ্রলোক কে। আর আপনি তো জানেন রাজনৈতিক ইতিহাস আমার খুব পছন্দের। কোন এলাকায় গেলে সেই এলাকার রাজনৈতিক গল্প আমি গোগ্রাসে গিলি। সন্তোষ’দা মাহফুজের উত্তরে সন্তুষ্ট হন। কারণ মাহফুজ তাকে আগেও বিভিন্ন আড্ডায় ময়মনসিংহের বিভিন্ন পার্টির নাম করা নেতাদের নিয়ে নানা গল্প জানতে চাইত। সন্তোষদা তাই বলেন আচ্ছা বলব তোমাকে কাজলের গল্প তবে ফোনে না। সময় করে আমার অফিসে আস তারপর বলব। এটা গত সাপ্তাহের কথা। সেই সাপ্তাহে সময় করে উঠতে পারে নি মাহফুজ। এই সাপ্তাহে আবার নির্বাচনের কাজে ময়মনসিংহ এসেছে। সন্তোষ’দা কে বলা আছে। তাই রাত নয়টার পর উনার অফিসে সরাসরি চলে যাচ্ছে। ঢাকাতে শীত আসে নি এখনো। ডিসেম্বরের শুরু হয়ে গেছে। ময়মনসিং শহরে সন্ধ্যার পর বেশ শীত পড়ে। লেদার জ্যাকেটের চেইন আটোকানো কিন্তু মটরসাইকেল চালানোয় ঠান্ডা লাগছে। এমনিতে শহরের রাস্তা গুলো বেশ সরু সরু। তবে রাত নয়টা বাজায় ভীড় কম। অনেক রাস্তা ফাকা হয়ে এসেছে। ল্যাম্প পোস্টের নিচে হালকা কুয়াশার আনাগোনা। কেসি রায় রোডে অফিস সন্তোষ’দা এর পত্রিকার। উনি সম্পাদক ময়মনসিং বার্তার। লোকালি বেশ ইনফ্লুয়েন্সিলায় পত্রিকা। তাই সব দল উনারে সমজে চলে। তারপর গত চল্লিশ বছর ধরে এই শহরের সব সাংস্কৃতিক উদ্যোগের সাথে জড়িত। ফলে সেই দিকেও তার ভাল প্রভাব। স্মৃতিশক্তি খুব ভাল। চল্লিশ পয়তাল্লিশ বছর আগের ঘটনাও নিখুত বর্ণ্না দেন। শহরে বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপিং সম্পর্কে উনার মত এত নিখুত জ্ঞান কেউ রাখে না। এই জন্য উনাকে ফোন দিয়েছিল কাজল সম্পর্কে জানার জন্য। সিনথিয়ার নানী আসমা বেগমের কথা শুনে বুঝতে পেরেছে মাহফুজ যে সাফিনা করিমের মনে একটা বড় বাধা আছে ওর জন্য। যেটার সাথে সম্পর্ক আছে কাজলের। আসমা বেগমের কথাতে বুঝা গেছে কাজল ছিল সাফিনার ক্রাশ। ঐদিন আসমা বেগমের বাসায় দেখা সেই সাদাকাল ছবির কথা মনে পড়ে। লম্বা, চোখে মুখে দৃঢতার ছাপ। ব্যাক ব্রাশ করা চুল। আসমা বেগমের মনে করিয়ে দেওয়া সাবধান বাণীও মনে পড়ে। রাজনৈতিক সংঘাতে কাজলের মৃত্যুর পর থেকে পলিটিক্স আর পলিটিক্স করা লোক কাউকেই খুব ভাল চোখে দেখে না সাফিনা করিম।


মাহফুজ ভেবে দেখেছে এরপর। ওর পক্ষে রাজনীতি ছাড়া সম্ভব না। প্রত্যেক মানুষের প্রেম-ভালবাসা, পরিবার এর বাইরেও কিছু ভালবাসার জিনিস থাকে। রাজনীতি ওর জন্য এমন। ওর আইডেন্টিটির একটা অংশ এটা। চাইলেও ছাড়তে পারবে না। আর সিনথিয়া কে পাওয়ার জন্য ছাড়তে গিয়ে নিজেকে এক ধরণের খাচায় বন্দী করতে চায় না মাহফুজ। তাই ওর জানা দরকার কাজল সম্পর্কে। কে এই কাজল? কি করত? কি পড়ত? কেমন ছিল মানুষ হিসেবে সব জানা দরকার ওর। বহু বছর আগে মৃত্যু হয়ে যাওয়া একটা মানুষ ওর প্রেমের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এটা মানতে পারছে না ও। তাই কাজল সম্পর্কে ওর যত বেশি জানা দরকার তা জানতে চাচ্ছে। সন্তোষ’দার নাম প্রথমে মাথায় এসেছিল এত বছর আগের রাজনৈতি করা একজন মানুষ কে চিনতে পারে এটা ভেবে। অনুমান ভুল হয় নি। আজকে তাই এসেছে উনার অফিসে ভাল করে জানার জন্য। দরকার হলে আর কার কাছে যাবে খবর সংগ্রহ করার জন্য। সিনথিয়া ঢাকায় আসছে আর অল্প কিছুদিন। এর মাঝে অন্তত একটা সমাধান দরকার ওর। মাহফুজের তাই জানা দরকার কাজল সম্পর্কে, কাজলের মৃত্যু সম্পর্কে। হয়ত তাহলে সিনথিয়ার আম্মু সাফিনা করিমের কাছে নিজের কেসটা ভাল করে উপস্থাপন করতে পারে। ভাবতে ভাবতে মটরসাইকেলটা রাস্তার উপর পার্ক করে। রাত নয়টার মত বাজে। অত লোকজনের আনাগোনা নেই। পত্রিকা অফিসের উলটো দিকে যমুনা ব্যাংকের অফিস। ব্যাংকের সাইনবোর্ডের নিয়ন আলোতে ঝলমল করছে রাস্তা। সন্তোষ’দার পত্রিকা অফিসের সাইনবোর্ডে আলো নেই। কালবোর্ডে সাদা কালিতে নামধাম লেখা। ব্যাংক আর পত্রিকা অফিসের জৌলুসের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয় সমাজের অবস্থা। আর কয়েকটা বাইক দাড় করানো অফিসের সামনে। মাহফুজ আগেও এসেছে এখানে। সাংবাদিকদের প্রায় সবাই এখানে বাইকে চলাচল করে। নির্বাচনী মৌসুম। তাই পত্রিকা অফিসে কাজের চাপ বেশি। মাহফুজ সরু একটা সিড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে যায়। সরু বারান্দা। বারান্দায় কোমড় সমান রেলিং দেওয়া। পুরাতন কালের বিল্ডিং। নিচে তাকালে রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়। পত্রিকা অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়। কাচের স্লাইডিং দরজা। ভিতরে তাকালে টিউবলাইটের আলোয় অনেকগুলো টেবিল পাতা। বিভিন্ন টেবিলে মানুষজন কাজ করছে। দরজা খুলতেই অফিসের পিয়ন এগিয়ে আসল। কে আপনে? কারে চান? মাহফুজ বলে সন্তোষদার কাছে আসছি। পিয়ন বলে আইয়েন। টেবিলের ফাক ফোকড় দিয়ে ওকে নিয়ে যায় সামনে। বড় একটা রুমের শেষ মাথায় কাডোবোর্ডের পার্টিশন দিয়ে সম্পাদকের রূম আলাদা করা। মাহফুজ দরজায় দাড়াতে সন্তোষ দাস বলে উঠেন আরে অনেক দিন পর। আস আস। ভাল সময়ে আসছ। চাপ কম এখন। ভাল করে কথা বলা যাবে। সন্তোষদা পিয়ন কে বলেন, মানিক, বাবুলের দোকান থেকে গরম গরম ভাজা চপ আন কয়েকটা আর সাথে কড়া করে চা। মাহফুজ সামনের চেয়ারে বসতেই সন্তোষ দাস  বলেন চা আর সাথে টা না থাকলে কি আড্ডা জমে বল। মাহফুজ সায় দেয়।

মাহফুজ সন্তোষদার উলটো দিকে আরাম করে বসে। দুইজন টুকটাক কথা বলে। নির্বাচন মৌসুম। একজন সাংবাদিক আরেকজন রাজনৈতিক কর্মী তাই আলোচনা রাজনীতি নিয়ে হয়। কে জিতবে, সরকারে কি হবে, বিরোধীদল কি করবে এইসব। এর মধ্যে চা আর চপ চলে আসে। চপে কামড় দিয়ে সন্তোষ মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে তারপর বল কাজল সম্পর্কে কিভাবে জান আর কি জানতে চাও। মাহফুজ বলে ক্যাম্পিং এর কাজে বিভিন্ন খানে যেতে হয় সেভাবে কাজল এর নাম শুনেছি। এরপর যখন শুনলাম এই লোক রাজনীতি করত, নাটক করত, সুদর্শন, প্রতিপক্ষের জন্য ত্রাস। তখন কৌতুহলী জেগে উঠেছে মনে। আপনি তো জানেন রাজনীতিতে বিভিন্ন গল্প আমি কত ভালবাসি। এরকম একটা চরিত্রতো সিনেমায় থাকা দরকার। তাই আপনাকে নক দিলাম। এমনিতে অনেকদিন আপনার সাথে আড্ডা হয় না। আর তার উপর আপনার থেকে যদি এমন একটা চরিত্র সম্পর্কে গল্প শুনে তাহলে তো আড্ডা জমে যাবে পুরো। সন্তোষ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে হ্যা ঠিক বলছ। একদম সঠিক জায়গায় আসছ। মাহফুজ বলে তাহলে শুরু করেন সন্তোষদা।


সন্তোষ দাসের গল্প শুরু করেন। কাজল। লম্বা চওড়া ছেলেটা। মুখে সব সময় হাসি লেগে আছে। ব্যাকব্রাশ করা চুল। কথায় বুদ্ধির ছাপ। দেখা হলেই বলছে সন্তোষ দা কবে তুমি পত্রিকার সম্পাদক হবে আমি কিন্তু ততদিনে এমপি মন্ত্রী কিছু একটা হয়ে যাব। সন্তোষ দাসের চোখে  সেই সময় গুলো ফুটে উঠে। পলিটিক্স করা ছেলেরা সাধারণত শিল্প সাহিত্য থেকে দূরে থাকে। শিল্পের সাথে তাদের সম্পর্ক হয় পাড়ায় অনুষ্ঠান আয়োজনে সহায়তা করা বা কোন অনুষ্ঠানের জন্য চাদা তুলা বা আরেকটু সিনিয়র হলে অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া পর্যন্ত। সেখানে কাজল চমৎকার কবিতা পড়ে। ভরাট গলা। একটা এমেচার নাটকের দলে কাজ করে মাঝে মাঝে। সন্তোষের বন্ধু সেই দলের ডিরেক্টর তাই ওদের কাজ গুলো দেখা হয়। খুব একটা খারাপ নাটক করে না এরা এমেচার হিসেবে। আর সাহস আছে ছেলেটার। যেখানে সবাই ভয়ে চুপসে যায় সেখানে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন সন্তোষ। এই সাহস বুঝি কাল হল ছেলেটার। এমন কি যে মারামারির মাঝখানে পড়ল ছেলেটা সেই মারামারির সাথে ওর কোন সম্পর্ক ছিল না। অন্য দলের দুইটা উপদলের মাঝে কোন্দলের কারণে মারামারি শুরু হয়। সময়টা আর্লি নাইনটিজ। সামারিক শাসন শেষ হয়েছে মাত্র। গণতন্ত্র এসেছে তবে অস্ত্রের ঝনঝনানি প্রচুর রাস্তায়। পাড়ার ছোট মারামারিতেও বোমা বন্দুক কমন। সেই সময় খালি নিজের বন্ধু কে বাচানোর জন্য অন্য দলের কোন্দলের মাঝে ঢুকে পড়াটা বোকামি। আবার সাহসীরা অনেক সময় বোকা হয়। সন্তোষ আফসোস করে বলেন, সেইদিন ছেলেটা ঐভাবে মারামারির মাঝে ঢুকে পড়ল। এরপর কোথা থেকে একটা গুলি এসে ওর বাম পাজরে লাগে। কে গুলি করেছিল এত মারামারির মাঝে কেউ খেয়াল করে নি। ওর বন্ধুরা গুলি লাগার পর ওকে সরিয়ে এনেছিল তবে হসপিটালে নিতে পারছিল না দুই পক্ষের তুমুল গোলাগুলির মাঝে। এরপর যতক্ষণে ময়মংসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হল ততক্ষণে অনেক রক্তক্ষরণ হয়ে গেছে।


মাহফুজ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনে। সন্তোষ’দা একে একে কাজলের নানা বীরত্বের গল্প বলে, মজার গল্প বলে আর মাহফুজ চমকিত হয়, হেসে উঠে। ধীরে ধীরে গল্প কাজলের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। মাহফুজ জানে অলরেডি কাজলের পরিণতি তবু সন্তোষ’দা যখন ছল ছল চোখে কাপা গলায় কাজলের পরিণতি বলে তখন কেন জানি এই না দেখা যবুকের প্রতি মাহফুজের একটা ভালবাসা জেগে উঠে। ওর বুকটা কাপে। রাজনীতির মাঠের সৈনিক কাজল আর ও। মাঝে ত্রিশ বছর পার্থক্য। তাই এই গল্প খুব ভাল ভাবে নিজের সাথে রিলেট করতে পারে। কাজলের মৃত্যুর কথা বলার পর সন্তোষ’দা আর মাহফুজ দুই জনে কয়েক মিনিট চুপ করে থাকে। রুমের পরিবেশ ভারী। এরপর মাহফুজ জিজ্ঞেস করে কাজলের কি কোন প্রেম ছিল? সন্তোষ বলেন তিনি তেমন কিছু জানেন না। অনেক মেয়ে কাজল কে পছন্দ করত এইটা কমন নলেজ তবে কাজল কি কাউকে সেভাবে পছন্দ করত বা প্রেম করত এমন কিছু তিনি জানেন না। মাহফুজ বুঝে কাজল আর সাফিনার ব্যাপারটা হয়ত খুব বেশি লোক জানে না অথবা এমন হতে পারে প্রেমটা হয়ত সাফিনার তরফ থেকে এক তরফা ছিল। আর সিনথিয়ার নানী যেভাবে বলল সেটা হবার চান্স আছে বেশি। সেই সময় মফস্বল শহরে লোকজন প্রেমের ব্যপারটা যতটা সম্ভব গোপন রাখত। তাই আর বেশি কেউ জানে না হয়ত। এক তরফা হোক বা দুই তরফা কাজলের প্রেমে সাফিনার পড়াটা খুব স্বাভাবিক মনে হয় মাহফুজের। এমন ছেলেদের প্রেমে মেয়েরা বারবার পড়ে। মাহফুজ তাই বুঝে ওর জন্য সামনে বড় একটা বাধা। কারণ সাফিনার প্রথম প্রেম ব্যর্থ হয়ে গেছে পলিটিক্সের কারণে। প্রথম প্রেমের ব্যাথা মানুষ সারাজীবন ভুলতে পারে না। তাই ওকে দেখলে সাফিনার সেই ব্যাথা মনে পড়বে আবার সেটা বুঝে মাহফুজ। তবে এর জন্য কোন একটা উপায় খুজে বের করতে হবে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: অঘটনঘটন পটিয়সী (নতুন আপডেট ৩৩ ) - by কাদের - 10-01-2025, 10:36 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)