6 hours ago
(This post was last modified: 4 hours ago by কাদের. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
আপডেট ৩৪
ক
সাবরিনা চোখের উপর আলো পড়ায় ঘুমের মাঝে নড়ে উঠল। সাদমান প্লিজ পর্দা টা টেনে দাও না। আমি আর ঘুমাবো। “সাবরিনা উঠ, দুপুর বারটা বাজে”। গলাটা শুনে চমকে উঠে চোখ খুলে সাবরিনা। ওর বেডরুমে মাহফুজের গলা কেন? চোখ মেলতে রুমটা অপরিচিত লাগে। কোথায় ও। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। জানালার পাশে পর্দা সরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাহফুজ। সব সময়ের মত ড্যাশিং লাগছে। কিন্তু মাহফুজ এখানে কেন? ও কোথায়? ধড়ফড় করে উঠে বসে বিছানায়। উঠে বসতে গায়ের উপর থাকা বিছানার চাদরটা সরে কোমড়ের কাছে চলে যায়। সাবরিনা নিজের দিকে তাকায় একবার। ওর আচল গায়ে নেই, ফলে উঠে বসবার ফলে বিছানার চাদর সরে যাবার কারণে শরীরের উপরের অংশে এখন খালি ব্লাউজ। দ্রুত হাত দিয়ে বুক ঢাকে। টের পায় পুরোটা ঢাকতে পারছে না তাই আবার বিছানার চাদর কাধ পর্যন্ত তুলে ফেলে। মাহফুজ জানালার পাশে দাঁড়ানো। ওর গায়ে বাসায় পড়ার নরমাল একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর গায়ে একটা গোল গলা টিশার্ট। সাবরিনার মনে হয় ঘরের এই সামান্য ড্রেসেই ড্যাশিং লাগছে মাহফুজ কে। তবে সাবরিনার মনে শংকা জেগে উঠে। এখানে কেন ও? চাদর হালকা সরিয়ে নিজের দিকে তাকায়। নাহ শাড়ি অক্ষত। অচেনা জায়গায় মাহফুজ কে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মনের ভিতর যে শংকা জেগে উঠেছিল সেটা খানিকটা কেটে যায় নিজের কাপড় ঠিক আছে দেখে। তবে মাথাটা ওর ভার ভার। এখানে কেন সেই প্রশ্নটা তাই জিজ্ঞস করে- আমি এখানে কিভাবে আসলাম? মাহফুজ সাবরিনার কথা শুনে অবাক হয় না। গতকাল নাবিল কে পরে ধমক দেওয়ার পরে বলেছে যে ড্রাগ ও সাবিত কে দিয়েছে এটাতে শারীরিক ভাবে লং টার্মে কোন ক্ষতি হবে না। এটা খাবার পর যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়বে অনেক প্রথম ছয় থেকে সাত ঘন্টা। এরপর ধীরে ধীরে কমে আসবে। চব্বিশ ঘন্টা পরে আর থাকবে না। আর অনেক সময় স্মৃতি একটু ঝাপসা হয়ে যায়। দুই তিন দিন পর অবশ্য স্মৃতি ক্লিয়ার হয়ে যাবে। তাই সাবরিনা ঘুম থেকে উঠে সংগে সংগে সব কিছু মনে করতে পারবে না এইটা স্বাভাবিক। সাবিতের ফোনটা সেই সময় বুদ্ধিকরে ওর থেকে রেখে দিয়েছিল। সাথে সাথে সাবিতের আই ফোন থেকে ওর আই ক্লাউডে সব কিছু ফ্যাক্টরি রিসেট দিয়ে ডিলিট করে দিয়েছিল মাহফুজ। কোন ঝুকি নেয় নি। পলিটিক্সে সাবিতের মত লোক কম নেই। মাহফুজ জানে এইসব লোক এরকম একটা ভিডিও সুযোগ পেলে কয়েকশ জায়গায় ব্যাকাপ রেখে দিবে পরে ব্লাকমেইল করার জন্য। তবে ভাগ্য ভাল সাবিত কে হাতে নাতে ধরেছিল। ফলে আর কোন ব্যাকাপ রাখার জায়গা ছিল না। সাবিতের আইফোনের মেমরি আর আইক্লাউডে শুধু ব্যাকাপ থাকবে এই ভিডিও এর। তাই ফোনটা নিয়ে নিয়েছে ওর থেকে। সাথে ওকে দিয়ে ডিলিট করিয়ে নিয়েছে আই ক্লাউডের স্টোরেজের সব ছবি মেমরি। আর রুমে ঢোকা থেকে শুরু করে সাবিত কে ধরা, সাবরিনা কে উদ্ধার করার পুরো সময়টা ভিডিও করে রেখেছিল ও। যাতে পরে নিজের নিরাপত্তার কাজে লাগে। সাবিত যদি পরে ওকে মোবাইল চুরির অভিযোগ করে বা সাবরিনা ঘুম ভেংগে যদি ওকে ভুল বুঝে তখন কাজে লাগবে ওর করা ভিডিওটা। যেটাতে স্পষ্ট দেখা যাবে কিভাবে ও রুমে ঢুকল, সেই সময় সাবিত আর সাবরিনা কি পজিশনে ছিল। এরপর দুই চারটা চড় থাপ্পড়ের পর সাবিত কি কি স্বীকার করেছে সব কিছু ভিডিও করে রেখেছে। তাই মাহফুজ অনেকটা নিশ্চিত মনে বলে রাইজ এন্ড সাইন প্রিন্সেস, রাইজ এন্ড সাইন। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব। আগে ক্ষুধা লেগেছে নিশ্চয়। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও।
সাবরিনা মাহফুজের গলায় একটা আস্থার চিহ্ন দেখে। মাহফুজ এত শান্ত স্বরে ওর সাথে কথা বলছে যেন প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সাবরিনার মাহফুজের সাথে দেখা হয়। সাবরিনার মনে পরে গতকাল ও ওদের কোম্পানির গালা নাইটে ছিল। সাবিত ভাই আর কয়েকজন কলিগ সহ একটা টেবিলে বসে ছিল। এরপর থেকে ঠিক মাথায় আসছে না কি হয়েছে। মাহফুজ ঐ প্রোগ্রামে ছিল কিন্তু ওর সাথে কোন কথা বলে নি বরং ওকে এড়ানোর জন্য সাবিত ভাইয়ের টেবিলে বসে ছিল পুরোটা সময়। মাহফুজ এখানে আসল কিভাবে? রুমটা ভাল করে তাকায়। একটা সুন্দর পরিপাটি বিছানা। এক সাইডে একটা ড্রেসিংটেবিল মিরর সহ। রুমের দরজা খোলা সেটাতে সুন্দর একটা পর্দা ঝুলছে। জানলার দিকে তাকায় আবার। দরজা আর জানালায় সেইম পর্দা। পর্দা দেখে সাবরিনা ভাবে যে কিনেছে তার রুচির প্রশংসা করতে হবে। রুমের ভিতর আরেকটা দরজা তবে বন্ধ। সাবরিনা আন্দাজ করে নেয় এটা এটাচড বাথরুম। রুমের দেয়ালে দুই টা এবস্ট্রাকট ছবি ঝোলানো। আরেক সাইডে একটা রিডিং টেবিল। টেবিলের উপর কিছু ইংরেজি বাংলা বই সুন্দর করে গুছিয়ে রাখা। আর তার সাথে একটা ফটোফ্রেম। টেবিলটা একটু দূরে হলেও সবারিনার ছবিটা মিস হয় না। ফটোফ্রেমের ভিতর থেকে সিনথিয়া ওর স্বভাবসুলভ দুষ্টমিষ্টি একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। পিছনে বিকালের পড়ন্ত আলো ওর মুখে উজ্জ্বল আভা তৈরি করেছে। এত বছর ধরে সিনথিয়া কে দেখলেও এই ছবিটা দেখে সাবরিনার মনে হয় এই ছবিতে যেন সিনথিয়া কে অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে। সাথে সিনথিয়ার স্বভাবসুলভ দুষ্ট মিষ্টি হাসি। যেন হাসতে হাসতে কোন একটা ফান করবে আর হেসে গড়িয়ে পড়বে। সিনথিয়ার ব্যক্তিত্ব কে কোন এক ছবিতে যদি ধরে রাখা যেত তবে এটাই হত সেই ছবি। মাহফুজ সাবরিনা কে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটু কৌতুক করে জিজ্ঞেস করে, চিনতে পারলে নাকি ছবির মানুষটাকে। মাহফুজের কথা শুনে মাহফুজের দিকে তাকায় সাবরিনা। বলে সিনথিয়ার ছবি এখানে কেন? মাহফুজ বলে ওয়েককাম টু মাই হাউজ প্রিন্সেস। আমার বাসায় সিনথিয়ার ছবি থাকবে না তো কার ছবি থাকবে বল? আর এটা আমার তোলা ফেভারিট ছবি। আমি জীবনে যত ছবি তুলেছি বিশেষ করে পোট্রেট তার মধ্যে এটা আমার ফেভারিট। তুমি বল সিনথিয়া কে এর থেকে ভাল করে ছবির ফ্রেমে আটকে রাখা যেত? সাবরিনার তখনো ঘুমের ঘোর পুরো কাটেনি তার উপর হঠাত এটা নতুন কোন জায়গা সেটা ওর ব্রেইন প্রসেস করার চেষ্টা করছে। তাই মাহফুজ যখন বলল ওয়েলকাম টু মাই হাউজ সেটা পুরো বুঝে উঠতে কয়েক সেকেন্ড লাগল সাবরিনার। বুঝতেই চমকে উঠল। কি? মাহফুজের বাসায়? কেন? বাইরের আলো দেখে বুঝা যাচ্ছে দুপুর? সারা রাত ও কোথায় ছিল? এখানে? সাদমান কি ভাবছে? উফ গড। নতুন কি সর্বনাশ করলাম আমি আজকে ভাবতে থাকে সাবরিনা। ভাবতে ভাবতে লাফ দিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় বিছানা থেকে। হঠাত করে দাড়ানোর পর মাথাটা একটু চক্কর দিয়ে উঠে, দুই সেকেন্ড দাঁড়িয়ে আবার বসে পড়ে। জানালার কাছে থাকা মাহফুজ চিন্তিত মুখে দ্রুত কাছে আসে। সাবরিনার হাত ধরে বলে এত ক্ষণ ঘুমানোর পর এইভাবে লাফ দিয়ে দাঁড়ানো ঠিক না, ব্রেইনে রক্ত সঞ্চালনে ব্যাখাত ঘটে। মাথা ঘুরাবে। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ ওর হাত ধরে আছে। ঝটকা মেরে হাতটা সরিয়ে নেয় সাবরিনা। সাবরিনা বলে মাহফুজ আমার হাত ধরবে না। তুমি জান তুমি আমার কত বড় ক্ষতি করেছ এরপরেও তুমি এইভাবে স্বাভাবিক ভাবে কিভাবে আছ? সিনথিয়ার ছবির দিকে ইংগিত করে বলে সিনথিয়া কে তুমি ভালবাস বলে, তাহলে কিভাবে তুমি আমার সাথে এইসব করতে পারলে? তোমার লজ্জা করল না। একটু অপরাধবোধ কাজ করল না? নাকি তুমি কোন পাভার্ট, বিকৃতরুচির মানুষ। যে একসাথে তিন চারটা মেয়ে কে বিছানায় নিতে না পারলে নিজের পৌরুষত্ব জাহির করতে পার না। এক সাথে দুই বোন কে ফাসিয়ে নিজেকে কি চরম পুরুষ হিসেবে প্রমাণ করতে চাইছ?
সাবরিনার প্রতিটা কথা একদম ছুরির ফলার মত বিধে মাহফুজের বুকে। যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তবে মনে মনে নিজেকে সান্তনা দেয় মাহফুজ এই ভেবে যে সাবরিনার এখনো গতকাল রাতের পুরো স্মৃতি নেই। তাই খুব শান্ত ধীর স্বরে বলে মাহফুজ, একজন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীকেও মানুষ আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেয়। তুমি গত কিছুদিন ধরে আমার কোন কথাই শুনতে চাচ্ছ না। এক তরফা বলেই যাচ্ছ। অন্তত আজকে আমার কথা শুন। আমার জন্য না হলে তোমার জন্য হলেও শুন। আর তা শুনতে না চাইলে অন্তত সিনথিয়ার কথা ভেবে আমার কথা শুন। আমি জানি তুমি ভাবছ আমি অনেক কথা বানিয়ে বলব তোমাকে। সেটা ভাবার অধিকার তোমার আছে। এইভাবে দুইবোনের সাথে একসাথে আমার যে সম্পর্ক সেটা দেখেলে যে কেউ তাই ভাববে। আমি নিজেই হয়ত তাই ভাবতাম বাইরে থেকে দেখলে। তবে তোমার আমার আর সিনথিয়ার এই সম্পর্কটা স্বাভাবিক নয়। এমন নয় যে আমি সব কিছু নিজে থেকে করেছি। ভাগ্যও এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে। প্লিজ আমাকে একটু সময় নিয়ে কথা বলতে দাও। প্লিজ। মাহফুজের গলায় যে কাতরতা সেটা সাবরিনার চোখে পড়ে। মাহফুজের চোখের কাতর অনুরোধ সাবরিনা অস্বীকার করতে পারে না। সাবরিনা টের পায় ওর গলা শুকিয়ে আছে। তাই মাহফুজ কে বলে ওকে। আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিব ব্যাখ্যা দেবার কিন্তু এরপর আর না। তবে তার আগে আমাকে এক গ্লাস পানি দাও, প্রচন্ড পিপাসা পেয়েছে। মাহফুজ দ্রুত রুমে থেকে চলে যায়। সাবরিনা চোখ মেলে তাকায় রুমে। নরমাল ব্যাচেলরদের রুম যতটা অগোছালো থাকে বলে মানুষের ধারণা তার থেকে অনেক বেশি গোছানো। মনে হয় যেন কোন মেয়ের ছাপ আছে এই রুমে। সিনথিয়া তো বিদেশে, আর কোন মেয়ের সাথে কি সম্পর্ক আছে মাহফুজের? যে এখানে নিয়মিত আসে? মাহফুজ রুমের পর্দা সরিয়ে গ্লাস নিয়ে ঢুকে। হাত থেকে গ্লাস নিয়ে ধীরে ধীরে পানিটুকু খায় সাবরিনা। খাওয়া শেষ হতেই সাবরিনার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে টেবিলে সিনথিয়ার ছবির পাশে রেখে দেয় গ্লাসটা। সিনথিয়ার হ্যাস্যজ্বল ছবির পাশে খালি গ্লাসটা যেন মাহফুজ আর সাবরিনার সম্পর্কের জটিল হিসাব টাকে মনে করিয়ে দেয়। মাহফুজ বলে আমি তোমার সব প্রশ্নের সব জিজ্ঞাসার উত্তর দিব আজকে। তবে ধাপ বাই ধাপ। প্রথমে তুমি কিভাবে আমার বাসায় আসলে সেটাই আগে বলব। সাবরিনা মাহফুজের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। আসলেই কিভাবে ও এইখানে আসল? আর কেন কোন কিছু মনে পড়ছে না ওর?