05-10-2024, 02:18 AM
(This post was last modified: 05-10-2024, 02:36 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চ
সাবরিনা ওর বুকের মাঝে যে কি হচ্ছে এই কয় সাপ্তাহ কাউকে বুঝাতে পারবে না। বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে মনে হচ্ছে ওর সাথে বিট্রে করা হয়েছে, সেই কষ্ট। আরেক দিকে কাউকে কিছু বলতে না পারার কষ্ট। মাহফুজের সাথে ওর সম্পর্কটা যে কয়মাস চলেছে সেই সময় ধরা পড়ার ভয় ছিল কিন্তু সেই ধরা পড়ার ভয়টা যেন আর উত্তেজনা বাড়িয়েছিল। ওর মনে যে ফ্যান্টাসি ছিল সেগুলোর পূরণের রাস্তা ছিল মাহফুজ। ওর মনে হত এটা স্থায়ী কিছু না, সাদমানের কাছে সে ফেরত যাবে শেষ পর্যন্ত। একটা সময় যখন মনে হচ্ছিল ইমোশনালি বেশি ইনভলব হয়ে যাচ্ছে তখন বিদেশে এই ট্রেইনিং অপরচুনিটি আসল। ফলে এক ধরণের ক্লিন ব্রেকাপ ছিল মাহফুজের সাথে। যদিও বিদেশ গিয়ে টের পাচ্ছিল মাহফুজ ওর ভিতরে ভালভাবে বাসা বেধেছে। মনের ভিতর যে অপরাধবোধ কাজ করত সেটা চাপা দিত এই ভেবে যে এইবার দেশে গেলে কিছু আর হবে না যেহেতু সরে এসেছে সেখান থেকে। আর সাদমান যেটা জানে না সেটা না জানা থাক ওর। সাদমানের সাথে তাই একদিন সেক্সের সময় মাহফুজ কে মনের ভিতর থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু সেক্স শেষে আবিষ্কার করেছে মাহফুজ বরং সেখানে আর ভাল ভাবে আসন গেড়ে বসেছে। এরপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল মাহফুজ আর সিনথিয়ার পুরো ব্যাপারটা জানার পর। অপরাধবোধ এখন নতুন মাত্রায় চলে গেছে ওর ভিতর। বোনের প্রেমিকের সাথে বিছানায় গিয়েছে ও। সাদমান খালি না সিনথিয়ার সাথেও বিট্রে করেছে ও। এইটা অন্য কেউ জানলে কি রিএকশন দিবে এইটা মনের ভিতর যতবার আসছে ততবার হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছে। কার সাথে শেয়ার করার অপশন নেই। মাহফুজের উপর রাগ হচ্ছে। মাহফুজ সব জেনে বুঝে কিভাবে এইটা করতে পারল? ঐদিন আইসক্রিম পার্লারে মাহফুজ কে ইচ্ছামত কথা শুনিয়ে দিয়েছে। মাহফুজ কোন উত্তর দিতে পারে নি। দিবেই বা কিভাবে। একসাথে দুই বোন কে ঘুরিয়েছে। ওর ভিতর এখন একেক ঘন্টায় একেক অনুভূতি প্রবল হয়। কখনো রাগ, কখনো অপরাধবোধ আর কখনো অনুশোচনা। ভাল তো ছিল। সারা জীবন ভাল মেয়ে হয়ে কি এমন খারাপ ছিল। একটু ফ্যান্টাসির জন্য, একটু ব্যাড গার্ল ভাইব আনতে গিয়ে সব সুখ চলে গেছে জীবন থেকে। এই কয়দিন সিনথিয়া ওকে কয়েকবার ফোন করেছে, প্রতিবার এড়িয়ে গেছে ও। সিনথিয়া শেষবার রাগারাগিও করেছে। তবে নিজেকে শান্ত রেখেছে সাবরিনা। যদি ভুলে কিছু বলে ফেলে তাহলে হয়ত বুঝে ফেলবে সিনথিয়া। আবার একদিন নানু ফোন দিয়ে ওকে বুঝালো সিনথিয়ার বিয়েতে যেন বাধা না দেয়। নানু কে কিভাবে বুঝাবে সাবরিনা যে এইটা কত বড় অনাচার হতে যাচ্ছে। আর মাহফুজ ওকে এরপর আর দুইবার কল দিয়েছিল তবে নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে সাবরিনা। মাহফুজ কে একবার রাগে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে আবার অবাক হয়ে খেয়াল করছে সিনথিয়ার সাথে ওর প্রেম আছে এইটার কারণে মনের ভিতর হিংসাও হচ্ছে। এই হিংসা হচ্ছে এইটা ভাবলে নিজের প্রতি নিজের ঘিন্না আর বাড়ছে ওর।
তার উপর আজকে মাহফুজ কে দেখতে হবে এইটা ভাবতে আর রাগ লাগছে। ওর মনে হচ্ছে এতদিন ধরে ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন আজকে বের হয়ে আসবে। আজকে অফিসে ওদের গালা নাইট। হেড অফিসের প্রোগ্রাম। ওদের সাথে কাজ করা নানা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরাও আসবে এই অনুষ্ঠানে। মাহফুজ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছে জানে ও। দাওয়াতের লিস্ট চেক করেছে। এই অনুষ্ঠানে না গেলেই না। কারণ কড়া নির্দেশ আছে। আবার এটাও জানে মাহফুজ আসবে এবং ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে। সেই ক্ষেত্রে কি করবে জানে না ও। তার উপর আজকে এই অনুষ্ঠানে কিছু দায়িত্ব ওর উপর। এইসব দায়িত্ব ওকে পালন করতে হবে সাবিত ভাইয়ের সাথে। সোয়ারিঘাটের ওর সাথে যে ব্যাপারটা ঘটেছিল (পর্ব ১১) সেটার জন্য দায় আসলে সাবিত ভাইয়ের। সাবিত ভাই ওকে বিপদে ফেলার জন্য ঐ অপ্রস্তুত অবস্থায় এই কাজটার দায়িত্ব দিয়েছিল। মাহফুজের উপর ওর আস্থার শুরুটা মেইনলি সেখান থেকে। মাহফুজ ওকে ঐখান থেকে উদ্ধার না করলে কি হত সেটা ভাবতেও পারে না। এই মুহুর্তে ঘটনা টা মনে পড়াতে মাহফুজের উপর কৃতজ্ঞ হবে না রাগ করবে বুঝছে না। সাবিত ভাই ওকে বলল আর সাবরিনা আমাদের গ্রুপের জন্য আমি কোনায় একটা টেবিল বুক করে রেখেছি। একসাথে বসব। সাবরিনা হেসে উত্তর দিল ঠিকাছে ভাইয়া। করপোরেট পলিটিক্স এমন। যে তোমার চাকরি খাবার জন্য বসে আছে তার সাথে সবচেয়ে বেশি হেসে কথা বলতে হয়। প্রোগ্রাম শুরু হতে আর কিছুটা সময় বাকি। আয়োজক দলের সদস্য হওয়ায় সাবরিনা আগে এসেছে। এই সময় দেখতে পেল মাহফুজ এসে হাজির। ওকে দেখে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে। মাহফুজ কে এড়াতে সাবরিনা উলটো ঘুরে সাবিত ভাইয়ের কাছে হাজির হল। সাবিত ভাইয়ের সব গালগল্প হাসি মুখে শুনছে ও মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য। মাহফুজ আজকে প্রস্তুত হয়ে এসেছে যেভাবে হোক সাবরিনার সাথে কথা বলবে। সাবরিনা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটিতে আছে। তার উপর অফিসের প্রোগ্রাম। এখানে চাইলেও সাবরিনা সিনক্রিয়েট করতে পারবে না। মাহফুজ ওকে অন্তত নিজের ব্যাখ্যা গুলো দিতে পারবে। মাহফুজ দেখলে ওকে এড়ানোর জন্য সাবিতের সাথে কথা বলা শুরু করেছে সাবরিনা। সাবরিনা কে অফিসে বিপদে ফেলার মূল কারিগর এই লোক। আর সাবরিনা ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মাহফুজ বুঝে আজকে ওকে এড়ানোর জন্য যে কোন মূল্যে যে কোন কিছু করতে পারে সাবরিনা। একটু হতাশ হয় মাহফুজ।
সাবিত উল হক। কথার জাদুকর তবে কাজের বেলায় টো টো মাস্টার। বাবা মা দুইজনে কর্পোরেট জগতে বড় মানুষ। পড়াশুনা ইংলিশ মিডিয়ামে। অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রাজুয়েশন করে এসেছে। বাবা-মায়ের ব্যাকিং এর জোরে আর ভাল কথা বলার কারণে দ্রুত কর্পোরেট জগতে উচুতে উঠেছে। ফর্সা, লালটু মার্কা চেহারা। সাবিতের ধারণা পৃথিবীর সব মেয়েরা তার জন্য পাগল। আজকে তাই সাবরিনা ওর সাথে এসে হেসে হেসে কথা বলায় অবাক হয় না। ওর মনে হয় এটাই হওয়ার কথা ছিল। এমনিতে সাবরিনা কে দেখতে পারে না। অফিসে ওর প্রতিপক্ষ রাইয়ান, সাবরিনা কে হায়ার করেছে মেইনলি। এটা একটা কারণ। আর অন্য কারণ হচ্ছে সাবরিনা ওকে পাত্তা দেয় না সেভাবে। সুন্দরী মেয়েরা তাকে পাত্তা না দিলে প্রচন্ড অপমানবোধ করে। সাবরিনা ওকে পাত্তা দিচ্ছে না বরং রাইয়ান কে পাত্তা দিচ্ছে এইটা যেন আগুনে ডাবল ঘি ঢালার সমান। তার পর সাবরিনা কে নানা ভাবে কাবু করার চেষ্টা করেছে সফল হয় নি। সোয়ারিঘাটে একটা এমন চাল দিয়েছিল যাতে সাবরিনা ফেসে যেত তবে কিভাবে কিভাবে যেন সেটা থেকেও বের হয়ে আসল। বরং অফিসে ফেরত এসে উপর মহলে কথা তুলল রাইয়ানের সহায়তায় কিভাবে সেই রাতে রুম্মানের বদলে সাবরিনা কে পাঠানো হল এই কাজে। ভাগ্য ভাল বাবা-মায়ের কারণে কর্পোরেটের অনেক বড় বড় নাম ওর ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। তাই হাওয়া ঠান্ডা করার জন্য আজকাল সাবরিনার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে। এইবার অফিসের গালা নাইটের প্রোগ্রামের আয়োজক কমিটিতে সাবরিনার নাম ও নিজেই রেখেছে। তবে কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছে যতটুকু দরকার তার বেশি একটু কথা বলে না ওর সাথে সাবরিনা। তাই ভিতরে রাগটা আর বেড়েছে ওর। তবে আজকে ওর সাথে এইভাবে হেসে হেসে কথা বলায় ওর মনে হচ্ছে ওর চার্ম বুঝি কাজ করছে। আসলে সব সময় নানা উপায়ে মেয়েদের পটানোয় সাবিতের ধারণা মেয়েরা ওকে স্বর্গের দেবতা ভাবে। তাই সাবরিনা মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য ওর সাথে হেসে কথা বলছে এটা না জানায় সাবিতের ধারণা হয় অফিসের কোল্ড বিচ সাবরিনার মনে বুঝি ওর জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে। তাই মনে মনে ওর একটা প্লান তৈরি করে দ্রুত।
সাবরিনা ঘড়ি দেখছে। সাড়ে নয়টা। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে এক ঘন্টার মত। আর দুই ঘন্টা চলবে মিনিমাম। সাদমান আবার একটা বিদেশ ট্যুরে বাইরে আছে। সাদমানের প্রতি এই কিছুদিনে ওর ভালবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। এর পিছনে অপরাধবোধের অবদান আছে অবশ্য। অনুষ্ঠানে নান কিছু হচ্ছে তবে কোন ভাবেই মনযোগ দিতে পারছে না কিছুতে। কোণায় বসে আছে একটা টেবিলে। এই টেবিলে সব সাবিত ভাইয়ের পা চাটা গ্রুপের লোকজন। এরাই এইবার ওর গ্রুপের লোক আয়োজনে। রাইয়ান ভাই অবশ্য এভাবে বসে থাকতে দেখলে রাগ করবে না। রাইয়ান ভাইয়ের কথা হচ্ছে দরকার হলে ওদের সাথে মিশে ওদের থেকে সুবিধা আদায় করে নাও। আর আজকে মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য এইটা ভাল উপায়। বসে বসে সফট ড্রিংক করছে। বাকিরা হার্ড ড্রিংক নিয়েছে। অফিসের এইসব প্রোগ্রামে ড্রিংক ফ্রি থাকে। তাই মানুষজন হার্ড ড্রিংক নেবার বেলায় কার্পন্য করে না। অফিসের টাকায় বিদেশী দামী মদ খাবার এই সুযোগ কে ছাড়ে। ওর গ্লাসের কোক অনেক আগেই শেষ। সাবিত ভাই বলল, সাবরিনা তোমার গ্লাসে তো কিছু নেই। সাবরিনা বলল সাবিত ভাই আমি ড্রিংক করি না সাধারণত। সাবিত বলে আরে একটু নাও। সাবরিনা বলে নো থ্যাংক্স ভাই। সাবিত বলে ওকে তাহলে কোল্ড ড্রিংকস নাও। নাকি তাও নিবে না? সাবরিনা বলে উঠে গিয়ে আনতে ইচ্ছা করছে না সাবিত ভাই। সাবিত বলে, ও কাম অন সাবরিনা। ডোন্ট বি এ পার্টি পুপার। আচ্ছা দাড়াও আই উইল এরেঞ্জ দ্যা ড্রিংক। এইবলে নিজে উঠে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে কি চাও তুমি? কোক স্প্রাইট বা ফানটা নাকি জিরা পানি? সাবরিনা বলে ভাইয়া আমি আনতে পারব দরকার হলে। বাকিরা টেবিলে অনুষ্ঠান দেখছে, সাবরিনা আর সাবিতের কথোপকথনে তেমন একটা খেয়াল করছে না। দেশের নামকরা শিল্পীরা গান গাইছে একের পর এক। বলরুম জুড়ে প্রচন্ড শব্দ। সাবরিনা আর সাবিত পাশাপাশি বসা। অর্নব গাইছে এখন। সাবরিনার পছন্দের শিল্পী। তাই এইবার সাবিতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। বলল ঠিকাছে ভাইয়া তাইলে এক গ্লাস কোক ইজ এনাফ। সাবিত বলল ওকে, আমার গ্লাসও ফাকা। আমি আমার গ্লাস রিফিল করে আনছি সাথে তোমার জন্য এক গ্লাস কোক।
সাবরিনা ঘড়ি দেখে আর কিছু সময় গেছে। সাবিত ভাই গেছে পনের মিনিট এখনো আসার নাম নেই। অবশ্য ওর তাড়া নেই। কোক খাবার কোন ইচ্ছা ওর নেই। খালি সাবিত ভাই তাড়া দিল দেখে। আগামীকাল এমনিতেও ছুটির দিন। অফিসের সবাই তাই ফ্রি ড্রিংক রিফিল করতে কার্পন্য করছে না। এইসব পার্টিতে শেষের দিকে দেখা যায় লোকেরা বেশ মাতাল হয়ে যায়। তবে সতর্ক থাকে যাতে বিব্রতকর কিছু না করে বসে। সাবিত ভাই হয়ত কোথাও মাঝখানে কথায় আটকে গেছে। একদিক দিয়ে ভাল। লোকটা নার্সিসিস্ট চুড়ান্ত রকমের। ভাবে তার মত বুদ্ধিমান কেউ নেই। সুদর্শন কেউ নেই। নার্সিসিস্টোরা কেউ তাদের অগ্রাহ্য করলে মানতে পারে না। নার্সিসিস্টদের একটা দূর্বলতা হল এদের প্রশংসা করে কেউ কিছু বললে এরা সেটাকে ঠিক মনে করে, তা সেটা যত ভুল হোক। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় সেই কাজটাই করেছে সাবরিনা। আজকে এই মূহুর্তে সেটাই করছে। মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য সাবিত ভাইয়ের সাথে জোকের মত লেগে আছে। আর সাবিত ভাই কে অনুষ্ঠান আয়োজন কতটা দক্ষতার সাথে করেছে সেই সব বলছে আর সাবিত স্বভাবগত ভাবে ফুলছে। অবশ্য আর বেশি খুশি হবে কারণ রাইয়ান ভাইয়ের প্রিয় কেউ তার প্রশংসা করছে এইটা সাবিত ভাইয়ের ইগো কতটা বাড়ীয়ে দিবে এইটা ভেবে মনে মনে হাসে। লোকটা স্কাউন্ড্রেল এটাতে সন্দেহ নেই। তবে নিজেকে যতটা চালাক ভাবে তার ধারে কাছেও না। একটু পর সাবিত আসে। দুই হাতে দুই গ্লাস। সাবরিনা কে কোকের গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। টেবিলের একজন জিজ্ঞেস করে কি আনলেন ভাই? সাবিত উত্তর দেয় হুইস্কি। আবার জিজ্ঞেস করে নিট? সাবিত বলে না না, নিট হলে খুব তাড়াতাড়ি ধরে। আজকে মাতাল হওয়া যাবে না। অনেক কাজ বাকি। এই বলে সাবরিনার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। সাবরিনা ভাবে মেইন আয়োজক কমিটিতে থাকায় সাবিত ভাইয়ের কাজ আছে প্রোগ্রাম শেষ হবার পরেও। সাবরিনা বলে সাবিত ভাই আমি প্রোগ্রামের পর থাকতে পারব না। সাবিত বলে একটু থাকতে হবে। তবে তুমি অল্প একটু হেল্প করে তাড়াতাড়ি চলে যেও। দরকার হলে আমি অফিসের গাড়ি পুল থেকে গাড়ি আনিয়ে রাখব। এইসব টুক টাক কথা বলার মাঝে সাবরিনা অল্প অল্প করে কোকের গ্লাসে চুমুক দেয়। সবারিনা ঘড়ি দেখে। সাড়ে দশটা। আর এক ঘন্টার মত প্রোগ্রাম হবে। হঠাত করে টের পায় গরম লাগছে ওর। শেরাটনের বল রুমের এসেইর মাঝেও কপালে হালকা ঘাম আসে ওর। পাত্তা দেয় না। আর পাচ মিনিট যায়। ওর মনে হয় মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। পেটের কাছে হালকা পরিচিত একটা অনুভূতি। তবে এই মূহুর্তে এই অনুভূতি কেন সেটাও বুঝে না। ওর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসে। ঘুম ঘুম একটা অনুভূতি আবার বুকের ভিতর ড্রাম বাজছে। আপনা আপনি ওর মাহফুজের কথা মনে আসে। তুরাগের জাহাজের মাস্টারের রুমে সেই সন্ধ্যা যেভাবে বুক ধক ধক করছিল সেই রকম। মাহফুজ সামনে হয়। অনেক ক্ষণ দেখে নি। হয়ত চলেও গেছে প্রোগ্রাম থেকে। তাই ওর নাম কেন মাথায় আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আশেপাশে মাহফুজ কে দেখা যায় কিনা। ও দেখে সাবিত ভাই গভীর মনযোগের সাথে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ক্রিপি লোকটা। সাবরিনা দেখে ওর পা ঘামছে। শরীরের উষ্ণতা ধীরে ধীরে বুক থেকে পেট হয়ে নিচে নামছে। চোখে ঘুম বাড়ছে। অবাক হয় নিজেই। ওর মনে হয় বাসায় গিয়ে দ্রুত সাদমান কে জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল লাগত। সাদমানের শরীরটা জড়িয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। আজকে রাতে সাদমান কে ইচ্ছামত আদর করবে ফিরে গিয়ে। অনুষ্ঠানের মাঝে এইসব কি ভাবছে এটা ভেবে লাল হয়ে যায় সাবরিনা। আবার মনে পড়ে সাদমান দেশে নেই। একটু হতাশ লাগে। সাবরিনার শরীরের গরম আর নিচে নামছে আর চোখে ঘুম আর বাড়ছে। এমন আর হয় নি কখনো। সাবরিনা উঠে দাঁড়ায়। দাড়ানোর সময় মনে হয় মাথাটা ঘুরে উঠছে। তাই ধপ করে টেবিল ধরে। টেবিলের বাকি সবাই অন্ধকারে প্রোগ্রাম দেখছে প্রচন্ড সাউন্ড। কেউ ওর দিকে খেয়াল করে না। সাবিত ভাই বলে কি হল সাবরিনা? সাবরিনা বলে একটু শরীরটা কেমন জানি করছে। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আসি। সাবিত ভাই বলে আমি আসব? সাবরিনা ভাবে মেয়েদের ওয়াশরুমে সাবিত ভাই কিভাবে যাবে। তাই হেসে বলে না না ভাই আমি একাই যাব। সাবরিনা অবাক হয়ে দেখে হাসিটা ও মনে মনে দিয়েছিল কিন্তু কিভাবে যেন ওর মুখ দিয়ে হাসিটা বের হয়ে গেছে। ওর হাসির উপর যেন ওর কন্ট্রোল নেই। চেয়ার থেকে বের হবার সময় আবার চেয়ারটা ধরে। পা কাপছে ওর। এমন কেন হচ্ছে। সাবিত ভাই উঠে দাঁড়ায়। বলে চল আমি তোমাকে হেল্প করছি। সাবরিনা না বলতে চায় কিন্তু ওর মুখ দিয়ে যেন না বের হচ্ছে না। সাবরিনা অবাক হয়ে খেয়াল করে সাবিত ভাই ওর হাত ধরেছে। সাবিত ভাই কে না বলতে যায় কিন্তু খেয়াল করে সাবিত ভাইয়ের হাতের মুঠোয় ওর হাত যাওয়া মাত্র এক ধরনের ভাল লাগার অনুভূতি শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। সাবরিনার মনে হল ওর আসলে মানুষের স্পর্শ দরকার। সাদমান কই তুমি? সাবিত ভাইয়ের স্পর্শ ওর শরীরের গরমটা কে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওদের টেবিল ছিল একদম এক কোণায় অন্ধকারে। তাই ওদের চুপচাপ বেড়িয়ে যাওয়াটা কার চোখে পড়ল না তেমন।
সাবরিনা ওর বুকের মাঝে যে কি হচ্ছে এই কয় সাপ্তাহ কাউকে বুঝাতে পারবে না। বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। একদিকে মনে হচ্ছে ওর সাথে বিট্রে করা হয়েছে, সেই কষ্ট। আরেক দিকে কাউকে কিছু বলতে না পারার কষ্ট। মাহফুজের সাথে ওর সম্পর্কটা যে কয়মাস চলেছে সেই সময় ধরা পড়ার ভয় ছিল কিন্তু সেই ধরা পড়ার ভয়টা যেন আর উত্তেজনা বাড়িয়েছিল। ওর মনে যে ফ্যান্টাসি ছিল সেগুলোর পূরণের রাস্তা ছিল মাহফুজ। ওর মনে হত এটা স্থায়ী কিছু না, সাদমানের কাছে সে ফেরত যাবে শেষ পর্যন্ত। একটা সময় যখন মনে হচ্ছিল ইমোশনালি বেশি ইনভলব হয়ে যাচ্ছে তখন বিদেশে এই ট্রেইনিং অপরচুনিটি আসল। ফলে এক ধরণের ক্লিন ব্রেকাপ ছিল মাহফুজের সাথে। যদিও বিদেশ গিয়ে টের পাচ্ছিল মাহফুজ ওর ভিতরে ভালভাবে বাসা বেধেছে। মনের ভিতর যে অপরাধবোধ কাজ করত সেটা চাপা দিত এই ভেবে যে এইবার দেশে গেলে কিছু আর হবে না যেহেতু সরে এসেছে সেখান থেকে। আর সাদমান যেটা জানে না সেটা না জানা থাক ওর। সাদমানের সাথে তাই একদিন সেক্সের সময় মাহফুজ কে মনের ভিতর থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছে কিন্তু সেক্স শেষে আবিষ্কার করেছে মাহফুজ বরং সেখানে আর ভাল ভাবে আসন গেড়ে বসেছে। এরপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেল মাহফুজ আর সিনথিয়ার পুরো ব্যাপারটা জানার পর। অপরাধবোধ এখন নতুন মাত্রায় চলে গেছে ওর ভিতর। বোনের প্রেমিকের সাথে বিছানায় গিয়েছে ও। সাদমান খালি না সিনথিয়ার সাথেও বিট্রে করেছে ও। এইটা অন্য কেউ জানলে কি রিএকশন দিবে এইটা মনের ভিতর যতবার আসছে ততবার হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছে। কার সাথে শেয়ার করার অপশন নেই। মাহফুজের উপর রাগ হচ্ছে। মাহফুজ সব জেনে বুঝে কিভাবে এইটা করতে পারল? ঐদিন আইসক্রিম পার্লারে মাহফুজ কে ইচ্ছামত কথা শুনিয়ে দিয়েছে। মাহফুজ কোন উত্তর দিতে পারে নি। দিবেই বা কিভাবে। একসাথে দুই বোন কে ঘুরিয়েছে। ওর ভিতর এখন একেক ঘন্টায় একেক অনুভূতি প্রবল হয়। কখনো রাগ, কখনো অপরাধবোধ আর কখনো অনুশোচনা। ভাল তো ছিল। সারা জীবন ভাল মেয়ে হয়ে কি এমন খারাপ ছিল। একটু ফ্যান্টাসির জন্য, একটু ব্যাড গার্ল ভাইব আনতে গিয়ে সব সুখ চলে গেছে জীবন থেকে। এই কয়দিন সিনথিয়া ওকে কয়েকবার ফোন করেছে, প্রতিবার এড়িয়ে গেছে ও। সিনথিয়া শেষবার রাগারাগিও করেছে। তবে নিজেকে শান্ত রেখেছে সাবরিনা। যদি ভুলে কিছু বলে ফেলে তাহলে হয়ত বুঝে ফেলবে সিনথিয়া। আবার একদিন নানু ফোন দিয়ে ওকে বুঝালো সিনথিয়ার বিয়েতে যেন বাধা না দেয়। নানু কে কিভাবে বুঝাবে সাবরিনা যে এইটা কত বড় অনাচার হতে যাচ্ছে। আর মাহফুজ ওকে এরপর আর দুইবার কল দিয়েছিল তবে নাম্বারটা ব্লক করে দিয়েছে সাবরিনা। মাহফুজ কে একবার রাগে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করছে আবার অবাক হয়ে খেয়াল করছে সিনথিয়ার সাথে ওর প্রেম আছে এইটার কারণে মনের ভিতর হিংসাও হচ্ছে। এই হিংসা হচ্ছে এইটা ভাবলে নিজের প্রতি নিজের ঘিন্না আর বাড়ছে ওর।
তার উপর আজকে মাহফুজ কে দেখতে হবে এইটা ভাবতে আর রাগ লাগছে। ওর মনে হচ্ছে এতদিন ধরে ভিতরে ভিতরে জ্বলতে থাকা আগুন আজকে বের হয়ে আসবে। আজকে অফিসে ওদের গালা নাইট। হেড অফিসের প্রোগ্রাম। ওদের সাথে কাজ করা নানা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিরাও আসবে এই অনুষ্ঠানে। মাহফুজ অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছে জানে ও। দাওয়াতের লিস্ট চেক করেছে। এই অনুষ্ঠানে না গেলেই না। কারণ কড়া নির্দেশ আছে। আবার এটাও জানে মাহফুজ আসবে এবং ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে। সেই ক্ষেত্রে কি করবে জানে না ও। তার উপর আজকে এই অনুষ্ঠানে কিছু দায়িত্ব ওর উপর। এইসব দায়িত্ব ওকে পালন করতে হবে সাবিত ভাইয়ের সাথে। সোয়ারিঘাটের ওর সাথে যে ব্যাপারটা ঘটেছিল (পর্ব ১১) সেটার জন্য দায় আসলে সাবিত ভাইয়ের। সাবিত ভাই ওকে বিপদে ফেলার জন্য ঐ অপ্রস্তুত অবস্থায় এই কাজটার দায়িত্ব দিয়েছিল। মাহফুজের উপর ওর আস্থার শুরুটা মেইনলি সেখান থেকে। মাহফুজ ওকে ঐখান থেকে উদ্ধার না করলে কি হত সেটা ভাবতেও পারে না। এই মুহুর্তে ঘটনা টা মনে পড়াতে মাহফুজের উপর কৃতজ্ঞ হবে না রাগ করবে বুঝছে না। সাবিত ভাই ওকে বলল আর সাবরিনা আমাদের গ্রুপের জন্য আমি কোনায় একটা টেবিল বুক করে রেখেছি। একসাথে বসব। সাবরিনা হেসে উত্তর দিল ঠিকাছে ভাইয়া। করপোরেট পলিটিক্স এমন। যে তোমার চাকরি খাবার জন্য বসে আছে তার সাথে সবচেয়ে বেশি হেসে কথা বলতে হয়। প্রোগ্রাম শুরু হতে আর কিছুটা সময় বাকি। আয়োজক দলের সদস্য হওয়ায় সাবরিনা আগে এসেছে। এই সময় দেখতে পেল মাহফুজ এসে হাজির। ওকে দেখে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসছে। মাহফুজ কে এড়াতে সাবরিনা উলটো ঘুরে সাবিত ভাইয়ের কাছে হাজির হল। সাবিত ভাইয়ের সব গালগল্প হাসি মুখে শুনছে ও মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য। মাহফুজ আজকে প্রস্তুত হয়ে এসেছে যেভাবে হোক সাবরিনার সাথে কথা বলবে। সাবরিনা এই অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটিতে আছে। তার উপর অফিসের প্রোগ্রাম। এখানে চাইলেও সাবরিনা সিনক্রিয়েট করতে পারবে না। মাহফুজ ওকে অন্তত নিজের ব্যাখ্যা গুলো দিতে পারবে। মাহফুজ দেখলে ওকে এড়ানোর জন্য সাবিতের সাথে কথা বলা শুরু করেছে সাবরিনা। সাবরিনা কে অফিসে বিপদে ফেলার মূল কারিগর এই লোক। আর সাবরিনা ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মাহফুজ বুঝে আজকে ওকে এড়ানোর জন্য যে কোন মূল্যে যে কোন কিছু করতে পারে সাবরিনা। একটু হতাশ হয় মাহফুজ।
সাবিত উল হক। কথার জাদুকর তবে কাজের বেলায় টো টো মাস্টার। বাবা মা দুইজনে কর্পোরেট জগতে বড় মানুষ। পড়াশুনা ইংলিশ মিডিয়ামে। অস্ট্রেলিয়া থেকে গ্রাজুয়েশন করে এসেছে। বাবা-মায়ের ব্যাকিং এর জোরে আর ভাল কথা বলার কারণে দ্রুত কর্পোরেট জগতে উচুতে উঠেছে। ফর্সা, লালটু মার্কা চেহারা। সাবিতের ধারণা পৃথিবীর সব মেয়েরা তার জন্য পাগল। আজকে তাই সাবরিনা ওর সাথে এসে হেসে হেসে কথা বলায় অবাক হয় না। ওর মনে হয় এটাই হওয়ার কথা ছিল। এমনিতে সাবরিনা কে দেখতে পারে না। অফিসে ওর প্রতিপক্ষ রাইয়ান, সাবরিনা কে হায়ার করেছে মেইনলি। এটা একটা কারণ। আর অন্য কারণ হচ্ছে সাবরিনা ওকে পাত্তা দেয় না সেভাবে। সুন্দরী মেয়েরা তাকে পাত্তা না দিলে প্রচন্ড অপমানবোধ করে। সাবরিনা ওকে পাত্তা দিচ্ছে না বরং রাইয়ান কে পাত্তা দিচ্ছে এইটা যেন আগুনে ডাবল ঘি ঢালার সমান। তার পর সাবরিনা কে নানা ভাবে কাবু করার চেষ্টা করেছে সফল হয় নি। সোয়ারিঘাটে একটা এমন চাল দিয়েছিল যাতে সাবরিনা ফেসে যেত তবে কিভাবে কিভাবে যেন সেটা থেকেও বের হয়ে আসল। বরং অফিসে ফেরত এসে উপর মহলে কথা তুলল রাইয়ানের সহায়তায় কিভাবে সেই রাতে রুম্মানের বদলে সাবরিনা কে পাঠানো হল এই কাজে। ভাগ্য ভাল বাবা-মায়ের কারণে কর্পোরেটের অনেক বড় বড় নাম ওর ফ্যামিলি ফ্রেন্ড। তাই হাওয়া ঠান্ডা করার জন্য আজকাল সাবরিনার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে। এইবার অফিসের গালা নাইটের প্রোগ্রামের আয়োজক কমিটিতে সাবরিনার নাম ও নিজেই রেখেছে। তবে কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছে যতটুকু দরকার তার বেশি একটু কথা বলে না ওর সাথে সাবরিনা। তাই ভিতরে রাগটা আর বেড়েছে ওর। তবে আজকে ওর সাথে এইভাবে হেসে হেসে কথা বলায় ওর মনে হচ্ছে ওর চার্ম বুঝি কাজ করছে। আসলে সব সময় নানা উপায়ে মেয়েদের পটানোয় সাবিতের ধারণা মেয়েরা ওকে স্বর্গের দেবতা ভাবে। তাই সাবরিনা মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য ওর সাথে হেসে কথা বলছে এটা না জানায় সাবিতের ধারণা হয় অফিসের কোল্ড বিচ সাবরিনার মনে বুঝি ওর জন্য জায়গা তৈরি হয়েছে। তাই মনে মনে ওর একটা প্লান তৈরি করে দ্রুত।
সাবরিনা ঘড়ি দেখছে। সাড়ে নয়টা। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে এক ঘন্টার মত। আর দুই ঘন্টা চলবে মিনিমাম। সাদমান আবার একটা বিদেশ ট্যুরে বাইরে আছে। সাদমানের প্রতি এই কিছুদিনে ওর ভালবাসা বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকগুণ। এর পিছনে অপরাধবোধের অবদান আছে অবশ্য। অনুষ্ঠানে নান কিছু হচ্ছে তবে কোন ভাবেই মনযোগ দিতে পারছে না কিছুতে। কোণায় বসে আছে একটা টেবিলে। এই টেবিলে সব সাবিত ভাইয়ের পা চাটা গ্রুপের লোকজন। এরাই এইবার ওর গ্রুপের লোক আয়োজনে। রাইয়ান ভাই অবশ্য এভাবে বসে থাকতে দেখলে রাগ করবে না। রাইয়ান ভাইয়ের কথা হচ্ছে দরকার হলে ওদের সাথে মিশে ওদের থেকে সুবিধা আদায় করে নাও। আর আজকে মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য এইটা ভাল উপায়। বসে বসে সফট ড্রিংক করছে। বাকিরা হার্ড ড্রিংক নিয়েছে। অফিসের এইসব প্রোগ্রামে ড্রিংক ফ্রি থাকে। তাই মানুষজন হার্ড ড্রিংক নেবার বেলায় কার্পন্য করে না। অফিসের টাকায় বিদেশী দামী মদ খাবার এই সুযোগ কে ছাড়ে। ওর গ্লাসের কোক অনেক আগেই শেষ। সাবিত ভাই বলল, সাবরিনা তোমার গ্লাসে তো কিছু নেই। সাবরিনা বলল সাবিত ভাই আমি ড্রিংক করি না সাধারণত। সাবিত বলে আরে একটু নাও। সাবরিনা বলে নো থ্যাংক্স ভাই। সাবিত বলে ওকে তাহলে কোল্ড ড্রিংকস নাও। নাকি তাও নিবে না? সাবরিনা বলে উঠে গিয়ে আনতে ইচ্ছা করছে না সাবিত ভাই। সাবিত বলে, ও কাম অন সাবরিনা। ডোন্ট বি এ পার্টি পুপার। আচ্ছা দাড়াও আই উইল এরেঞ্জ দ্যা ড্রিংক। এইবলে নিজে উঠে দাঁড়ায়। জিজ্ঞেস করে কি চাও তুমি? কোক স্প্রাইট বা ফানটা নাকি জিরা পানি? সাবরিনা বলে ভাইয়া আমি আনতে পারব দরকার হলে। বাকিরা টেবিলে অনুষ্ঠান দেখছে, সাবরিনা আর সাবিতের কথোপকথনে তেমন একটা খেয়াল করছে না। দেশের নামকরা শিল্পীরা গান গাইছে একের পর এক। বলরুম জুড়ে প্রচন্ড শব্দ। সাবরিনা আর সাবিত পাশাপাশি বসা। অর্নব গাইছে এখন। সাবরিনার পছন্দের শিল্পী। তাই এইবার সাবিতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল। বলল ঠিকাছে ভাইয়া তাইলে এক গ্লাস কোক ইজ এনাফ। সাবিত বলল ওকে, আমার গ্লাসও ফাকা। আমি আমার গ্লাস রিফিল করে আনছি সাথে তোমার জন্য এক গ্লাস কোক।
সাবরিনা ঘড়ি দেখে আর কিছু সময় গেছে। সাবিত ভাই গেছে পনের মিনিট এখনো আসার নাম নেই। অবশ্য ওর তাড়া নেই। কোক খাবার কোন ইচ্ছা ওর নেই। খালি সাবিত ভাই তাড়া দিল দেখে। আগামীকাল এমনিতেও ছুটির দিন। অফিসের সবাই তাই ফ্রি ড্রিংক রিফিল করতে কার্পন্য করছে না। এইসব পার্টিতে শেষের দিকে দেখা যায় লোকেরা বেশ মাতাল হয়ে যায়। তবে সতর্ক থাকে যাতে বিব্রতকর কিছু না করে বসে। সাবিত ভাই হয়ত কোথাও মাঝখানে কথায় আটকে গেছে। একদিক দিয়ে ভাল। লোকটা নার্সিসিস্ট চুড়ান্ত রকমের। ভাবে তার মত বুদ্ধিমান কেউ নেই। সুদর্শন কেউ নেই। নার্সিসিস্টোরা কেউ তাদের অগ্রাহ্য করলে মানতে পারে না। নার্সিসিস্টদের একটা দূর্বলতা হল এদের প্রশংসা করে কেউ কিছু বললে এরা সেটাকে ঠিক মনে করে, তা সেটা যত ভুল হোক। এই অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় সেই কাজটাই করেছে সাবরিনা। আজকে এই মূহুর্তে সেটাই করছে। মাহফুজ কে এড়ানোর জন্য সাবিত ভাইয়ের সাথে জোকের মত লেগে আছে। আর সাবিত ভাই কে অনুষ্ঠান আয়োজন কতটা দক্ষতার সাথে করেছে সেই সব বলছে আর সাবিত স্বভাবগত ভাবে ফুলছে। অবশ্য আর বেশি খুশি হবে কারণ রাইয়ান ভাইয়ের প্রিয় কেউ তার প্রশংসা করছে এইটা সাবিত ভাইয়ের ইগো কতটা বাড়ীয়ে দিবে এইটা ভেবে মনে মনে হাসে। লোকটা স্কাউন্ড্রেল এটাতে সন্দেহ নেই। তবে নিজেকে যতটা চালাক ভাবে তার ধারে কাছেও না। একটু পর সাবিত আসে। দুই হাতে দুই গ্লাস। সাবরিনা কে কোকের গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। টেবিলের একজন জিজ্ঞেস করে কি আনলেন ভাই? সাবিত উত্তর দেয় হুইস্কি। আবার জিজ্ঞেস করে নিট? সাবিত বলে না না, নিট হলে খুব তাড়াতাড়ি ধরে। আজকে মাতাল হওয়া যাবে না। অনেক কাজ বাকি। এই বলে সাবরিনার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। সাবরিনা ভাবে মেইন আয়োজক কমিটিতে থাকায় সাবিত ভাইয়ের কাজ আছে প্রোগ্রাম শেষ হবার পরেও। সাবরিনা বলে সাবিত ভাই আমি প্রোগ্রামের পর থাকতে পারব না। সাবিত বলে একটু থাকতে হবে। তবে তুমি অল্প একটু হেল্প করে তাড়াতাড়ি চলে যেও। দরকার হলে আমি অফিসের গাড়ি পুল থেকে গাড়ি আনিয়ে রাখব। এইসব টুক টাক কথা বলার মাঝে সাবরিনা অল্প অল্প করে কোকের গ্লাসে চুমুক দেয়। সবারিনা ঘড়ি দেখে। সাড়ে দশটা। আর এক ঘন্টার মত প্রোগ্রাম হবে। হঠাত করে টের পায় গরম লাগছে ওর। শেরাটনের বল রুমের এসেইর মাঝেও কপালে হালকা ঘাম আসে ওর। পাত্তা দেয় না। আর পাচ মিনিট যায়। ওর মনে হয় মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। পেটের কাছে হালকা পরিচিত একটা অনুভূতি। তবে এই মূহুর্তে এই অনুভূতি কেন সেটাও বুঝে না। ওর নিঃশ্বাস প্রশ্বাস ভারী হয়ে আসে। ঘুম ঘুম একটা অনুভূতি আবার বুকের ভিতর ড্রাম বাজছে। আপনা আপনি ওর মাহফুজের কথা মনে আসে। তুরাগের জাহাজের মাস্টারের রুমে সেই সন্ধ্যা যেভাবে বুক ধক ধক করছিল সেই রকম। মাহফুজ সামনে হয়। অনেক ক্ষণ দেখে নি। হয়ত চলেও গেছে প্রোগ্রাম থেকে। তাই ওর নাম কেন মাথায় আসছে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে আশেপাশে মাহফুজ কে দেখা যায় কিনা। ও দেখে সাবিত ভাই গভীর মনযোগের সাথে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ক্রিপি লোকটা। সাবরিনা দেখে ওর পা ঘামছে। শরীরের উষ্ণতা ধীরে ধীরে বুক থেকে পেট হয়ে নিচে নামছে। চোখে ঘুম বাড়ছে। অবাক হয় নিজেই। ওর মনে হয় বাসায় গিয়ে দ্রুত সাদমান কে জড়িয়ে ধরতে পারলে ভাল লাগত। সাদমানের শরীরটা জড়িয়ে শুয়ে থাকতে ইচ্ছা করছে। আজকে রাতে সাদমান কে ইচ্ছামত আদর করবে ফিরে গিয়ে। অনুষ্ঠানের মাঝে এইসব কি ভাবছে এটা ভেবে লাল হয়ে যায় সাবরিনা। আবার মনে পড়ে সাদমান দেশে নেই। একটু হতাশ লাগে। সাবরিনার শরীরের গরম আর নিচে নামছে আর চোখে ঘুম আর বাড়ছে। এমন আর হয় নি কখনো। সাবরিনা উঠে দাঁড়ায়। দাড়ানোর সময় মনে হয় মাথাটা ঘুরে উঠছে। তাই ধপ করে টেবিল ধরে। টেবিলের বাকি সবাই অন্ধকারে প্রোগ্রাম দেখছে প্রচন্ড সাউন্ড। কেউ ওর দিকে খেয়াল করে না। সাবিত ভাই বলে কি হল সাবরিনা? সাবরিনা বলে একটু শরীরটা কেমন জানি করছে। ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আসি। সাবিত ভাই বলে আমি আসব? সাবরিনা ভাবে মেয়েদের ওয়াশরুমে সাবিত ভাই কিভাবে যাবে। তাই হেসে বলে না না ভাই আমি একাই যাব। সাবরিনা অবাক হয়ে দেখে হাসিটা ও মনে মনে দিয়েছিল কিন্তু কিভাবে যেন ওর মুখ দিয়ে হাসিটা বের হয়ে গেছে। ওর হাসির উপর যেন ওর কন্ট্রোল নেই। চেয়ার থেকে বের হবার সময় আবার চেয়ারটা ধরে। পা কাপছে ওর। এমন কেন হচ্ছে। সাবিত ভাই উঠে দাঁড়ায়। বলে চল আমি তোমাকে হেল্প করছি। সাবরিনা না বলতে চায় কিন্তু ওর মুখ দিয়ে যেন না বের হচ্ছে না। সাবরিনা অবাক হয়ে খেয়াল করে সাবিত ভাই ওর হাত ধরেছে। সাবিত ভাই কে না বলতে যায় কিন্তু খেয়াল করে সাবিত ভাইয়ের হাতের মুঠোয় ওর হাত যাওয়া মাত্র এক ধরনের ভাল লাগার অনুভূতি শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। সাবরিনার মনে হল ওর আসলে মানুষের স্পর্শ দরকার। সাদমান কই তুমি? সাবিত ভাইয়ের স্পর্শ ওর শরীরের গরমটা কে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ওদের টেবিল ছিল একদম এক কোণায় অন্ধকারে। তাই ওদের চুপচাপ বেড়িয়ে যাওয়াটা কার চোখে পড়ল না তেমন।