05-10-2024, 02:17 AM
(This post was last modified: 05-10-2024, 02:35 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ঙ
মাহফুজের গত কয়েকটা দিন ভাল যাচ্ছে না। ঢাকায় এসেছে ছয় দিন। হঠাত করে কোন খবর না দিয়ে নির্বাচনের মৌসুমে কয়েক সাপ্তাহ হাওয়া হয়ে যাওয়ার কারণে পার্টির বড় নেতারা ওর উপর দারুণ ক্ষেপা। তবে মাহফুজ কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে এই কয়দিনে। এর মাঝে নুসাইবার খবর নিয়েছে। ভাল আছে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিন জোহরার ফোনে কথা হয়েছে। একা একা অস্থির হয়ে উঠেছে। আর নিরাপত্তার কারণে আর কার সাথে কথা বলতে পারছে না। প্রতিটাদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে যেতে হচ্ছে। পার্টিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। এর মাঝে বাকি ঝামেলাও সামলাতে হচ্ছে। সিনথিয়ার সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে। মুন্সী একদম চুপচাপ হয়ে আছে, তার কোন খবর নেই। এত চুপচাপ থেকে কখন কি করে সেটাও একটা ভাবার বিষয়। আবার ম্যানেজার ওর খোজ এখনো ছাড়ে নি সেটাও জানে। অন্য দিকে নুসাইবা কে কখন কিভাবে ঢাকা ব্যাক করানো যায় এটা ভাবতে হচ্ছে। মুন্সীর নিশ্চুপ হওয়া আর ম্যানেজার গোপনে ওর খোজ বের করার চেষ্টা এর মাঝে নুসাইবা কে ঢাকাতে আনা কতটা নিরাপদ এই প্রশ্ন আছে কিন্তু সমস্যা হল একা একা আর বেশিদিন হাওরে থাকলে নুসাইবা পাগল হয়ে যাবে। বলা যায় না পালিয় কাউকে না বলে ঢাকায় এসে যেতে পারে। ঐদিকে সিনথিয়ার দেশে আসার সময় হয়ে এসেছে। এইমধ্যে সিনথিয়ার ফ্যামিলি কে রাজি করাতে হবে। সিনথিয়া ওর মায়ের সাথে কথা বলেছে। সিনথিয়ার মা নিমরাজি। নুসাইবাকে এইজন্য হলেও ঢাকা আনা দরকার। কারণ নুসাইবা কথা দিয়েছে তার ভাবী কে সে রাজি করাবে এই ব্যাপারে। আবার অন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে সাবরিনা কে নিয়ে। এমন একটা ঝামেলা বাধতে পারে সেটা মাহফুজ আন্দাজ করেছিল তবে এভাবে বাধবে ভাবে নি। সাবরিনা কে কোনভাবে সিডিউস করতে চায় নি, গিয়েছিল একটা গুড ইম্প্রেশন তৈরি করতে। সেখানে কি যে হল, নিজেই কিভাবে যেন সাবরিনার মোহে পড়ে গেল। নুসাইবার ক্ষেত্রেও তাই। মনে মনে হাসে মাহফুজ। ও কি একটা সেক্স ম্যানিয়াক হয়ে যাচ্ছে? সেক্স নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন কখনো ছিল না আগে। কিন্তু সিনথিয়ার ফ্যামিলি জিনে এমন কিছু একটা আছে যেটা ওকে ওদের সবার দিকে টানছে। নুসাইবা আপাতত সব জানে এবং আশা করা যায় ঝামেলা করবে না বরং হেল্প করবে সিনথিয়ার মা কে রাজি করাতে ঢাকা আসলে। তবে সাবরিনার টা ওকে সামলাতে হবে। সাবরিনার ব্যাপার সিনথিয়া, নুসাইবা বা সিনথিয়ার মা কেউ জানার আগে সাবরিনা কে রাজি করাতে হবে। তবে এইজন্য ওর সাথে কথা বলা দরকার কনভিন্স করার জন্য। সেই সুযোগটাই পাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে অফিসে গিয়েছিল দেখা করার জন্য। ওকে এড়ানোর জন্য অফিস থেকে অসুখের কথা বলে আগে বেড়িয়ে গেল, তবে সাবরিনা অফিস থেকে বের হয়ে গেছে এইটা শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ধরতে পেরেছিল মাহফুজ। ওকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠেছিল সবারিনা। `
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে নিজেকে সামলে নিয়ে সবারিনা বলেছিল আমার গাড়ি এসে গেছে, চলে যেতে হবে। পরে কথা হবে। মাহফুজ কথা বলার এই সুযোগ হারাতে চায় না। তাই আবার সামনে এসে দাঁড়ায়। সাবরিনা আশেপাশে তাকায় কেউ লক্ষ্য করছে কিনা। এরপর গলার স্বর নামিয়ে হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ সাবরিনার গলায় বিষ টের পায়, পারলে যেন এখুনি গাড়ির নিচে ছুড়ে দিবে মাহফুজ কে। মাহফুজ অটল থাকে। বলে প্লিজ আমার কথা শুন, তারপর যা বলার বলো। সাবরিনা আবার হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ অটল। সাবরিনা দেখে ওর অফিসের দুইজন গেটের কাছে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। ওকে দেখে হাত নাড়ায়। সাবরিনা হেসে তাদের দিকে পালটা হাত নাড়ায় তবে মুখের হাসি ধরে রেখে জোর গলায় বলে মাহফুজ ভাল হবে না এইসব করলে। মাহফুজ বুঝে এইখানে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে পারবে না সাবরিনা। তাই বলে প্লিজ পাশের আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে বসি। দশ মিনিট। এরপর দরকার হলে আমি নামিয়ে দিয়ে আসব। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ নাছোড়বান্দা। এইখানে আর কথা বললে অনেকের চোখে পড়বে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও রাজি হয়। মাহফুজ আর সাবরিনা কোণায় একটা টেবিল নেয়। দোকানে লোকজন নেই। আইসক্রিম পার্লারে মেইন ভিড়টা হয় বিকালের পর। সাবরিনা এইবার চড়া গলায় বলে তোমার মত এমন ছোট লোক অসভ্য ইতর, নোংরা মনের মানুষ আর আমি দেখি নি। সাবরিনার গলার ঘৃণা মাহফুজের একদম বুকে গিয়ে লাগে। সাবরিনা বলে শরীরের লোভে মানুষ এমন করতে পারে আমি ভাবি নি। তোমার কি নীতি নৈতিকতাবোধ বলে কিছু নেই? সিনথিয়া কে তুমি ভালবাস তাহলে আমার সাথে কি? আর মানুষ চিট করে সেটা জানি তাই বলে দুই বোনের সাথে একসাথে? কতটা নীচ আর অসভ্য হলে মানুষ এই কাজ করতে পারে। মাহফুজ যখন এই কথার উত্তর দেবার চেষ্টা করল তখন সাবরিনা বলল তুমি কতটা অসভ্য এটা আমি জানি, আর নতুন করে সাফাই গেয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করবার দরকার নেই। তুমি যদি সত্যিকার অর্থে ভাল কিছু করতে চাও তাহলে সিনথিয়ার জীবন থেকে সরে আস। এই বলে মাহফুজ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যায় সাবরিনা। মাহফুজ এতটা হতবিহবল হয়ে গিয়েছিল যে আর কিছুক্ষণ সেখান থেকে উঠতে পারে নি। সাবরিনার যে মেজাজের গল্প এত বছর শুনে এসেছে সেই মেজাজ সরাসরি এই প্রথম দেখল মাহফুজ, সাথে গলায় দারুণ ঘৃণা। সাবরিনার সেই কথা গুলো এখনো কানে বাজছে মাহফুজের। প্রতিবার যতবার ভাবছে এই কথা ততবার এক ধরণের অপমান, দুঃখবোধ সব একসাথে কাজ করছে। সাবরিনা আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা আসলে ঘোলাটে। সাবরিনা কে সিডিউস করবার কোন ইচ্ছাই ওর ছিল না। বরং ওর নিজের মাঝে মাঝে মনে হয় সাবরিনা বুঝি ওকে সিডিউস করেছে। যাতে না চাইতেও ওর ভিতর স্বত্ত্বাটা কাজ করেছে সাবরিনা কে পাওয়ার জন্য। সাবরিনা কে পাওয়ার ইচ্ছার পিছনে খালি কাম ছিল না, ছিল ভালবাসাও। সিনথিয়ার সাথে ভালবাসা থেকে ভিন্ন। এইটা কোন ভাবে আর কাউকে বুঝাতে পারবে বলে মনে হয় না। সিনথিয়ার প্রতি ভালবাসাটা জীবন সংগীর প্রতি ভালবাসা। সেখানে দীর্ঘজীবনে একসাথে থাকার তাড়না আছে। আর সাবরিনার ভালবাসায় দীর্ঘ জীবন সাথে থাকার অংগীকার নেই তবে কাছে পাবার ইচ্ছা আছে। এই দুইটা কে কি আলাদা করা যায়? নাকি নিজেকে বাচানোর জন্য নিজেই খোড়া যুক্তি দাড় করাচ্ছে মাহফুজ?
সাবরিনার গলায় সে ঘৃণা, চোখের এই বিষ দৃষ্টি কোনভাবেই মন থেকে সরাতে পারছে না। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে দেখা হবার পর। মাহফুজ পুরো ঘটনা বলে নি। জানে সিনথিয়া আর মেজাজি বোনের তুলনায়। ফলে দেখা যাবে ফোন করে চার্জ করবে আর তখন সাবরিনা কি বলতে কি বলবে। আর সমস্যা তৈরি হবে। মাহফুজ তাই বুদ্ধি করে উত্তর দিয়েছে যে খুব বেশি কথা হয় নি, সাবরিনা ব্যস্ত ছিল। সিনথিয়া বলে আপু মনে হয় ভাল ভাবে নেয় নি ব্যাপারটা। এতবার করে বললাম তাও আমার কথা শুনল না। ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে আছে নিশ্চয়। তুমি যে শুরু থেকে আমার আর তোমার ব্যাপার খোলাসা কর নি তাতে আপু সহজে ব্যাপারটা নেয় নি। মাহফুজ বলে হ্যা তা ঠিক, তবে বলে না এই পরিচয় না দেওয়ার ব্যাপারটা ঘটনা কে এখন কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গত কয়েক দিন যতবার কথা হয়েছে সিনথিয়ার সাথে মনে হয়েছে সিনথিয়া স্ট্রেসড হচ্ছে দিন কে দিন। এখনো ওর ফ্যামিলি পুরো গ্রিন সিগনাল দেয় নি। নুসাইবা রাজি, সাফিনা মানা করে নি তবে হ্যা বলে নি, আর সাবরিনা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে প্রসংগ। এদিকে সেমিস্টার শেষের কাজের চাপ। সিনথিয়ার মনে হয় আর কয় সাপ্তাহ পর দেশে আসছে এখনো কিছু ঠিক হয় নি। মাহফুজ শত ব্যস্ততার মাঝে সিনথিয়া কে ফোনে নিয়মিত চাংগা রাখার চেষ্টা করে। সিনথিয়া বার বার বলে তীরে এসে কি তরী ঢুববে মাহফুজ? সিনথিয়ার এই চঞ্চল মন মাঝে মাঝে খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। মাহফুজ বলে আমি সব ঠিক করে দিব। সিনথিয়ার অগাধ আস্থা মাহফুজে তাই সেটা শুনে পড়ায় মন দেয় আবার। তবে মাহফুজ জানে না ঠিক কিভাবে কি করবে। সিনথিয়া মাঝে একদিন ওর নানুর সাথে দেখা করবার কথা বলেছিল। মাহফুজের মনে হয় এটাই এখন রাইট কোর্স অফ একশন। এই কয়দিনের ময়মনসিংহের এই এসাইনমেন্ট তাই নিজে থেকে চেয়ে নিয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের ওদের দলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা সমন্বয় টিমে কাজ করবে। কাজের ফাকে সময় করে দেখা করতে এসেছে সিনথিয়া সাবরিনার নানু আয়েশা বেগমের সাথে। মাহফুজ মটরসাইকেল থেকে নামে। ওর সাথে একটা ছেলে এসেছে, পার্টির লোকাল লোক। তাকে বলে বাইক নিয়ে একটু ঘুরে আসতে এক ঘন্টা পর কল দিবে। মাহফুজ আসার আগে আসমা বেগম কে কল দিয়ে এসেছে। আগেও একবার দেখা হয়েছিল। এর মাঝে ফোনে অবশ্য বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে গত দুই বছরে। সিনথিয়া ওর নানু নিজেও কল দিয়েছিল। বাইক থেকে নেমে মাহফুজ সামনের বিল্ডিংটার দিকে তাকায়। তিন তলা একটা বাড়ি। দোতলার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আসমা বেগম। ছেলে মেয়েরা কেউ সাথে থাকে না, সবাই যার যার কাজে। একজন কাজের লোক থাকে সাথে। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের কাছে থেকে ঘুরে আসেন। এই শহরে জন্ম, আর বেড়ে উঠা। তার উপর স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ি। এই জন্য সহজে ছাড়তে চান না ময়মনসিংহ। বাড়িটা পুরাতন হলেও নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয় টের পাওয়া যায়। অন্য ফ্লাট গুলোতে ভাড়াটিয়া থাকে। সামনে একটা গলি রাস্তা। সামনের লোহার গেটের সাথে লাগানো ছোট গেটটা খোলা। সেটা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দোতলায় ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজায়। দরজা খুলে আসমা বেগম নিজেই। বেশ অনেক দিন পর দেখছে কিন্তু দেখার পর মাহফুজের মন ভাল হয়ে যায়। শান্ত সৌম্য একটা চেহারা। হাসি হাসি মুখ। সিনথিয়াদের পরিবারে শুরু থেকে যে ওদের প্রেমের পক্ষে সে হচ্ছে এই নানু। উনাকে দেখলে বুঝা যায় ওদের সিনথিয়ার মা, বোন কেন এত সুন্দর। বংশপরম্পরা। আস, মাহফুজ আস। উনাকে দেখলে বয়স বুঝা যায় না। এখন একদম শক্ত আছেন। বয়স অনায়েসে ৫০ এর ঘরে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। ড্রয়িংরুমে এসে বসল মাহফুজ। পুরাতন আমলের সোফা। ড্রয়িংরুমের এক কোণায় একটা কাচের শোকেস। সেখানে বাসার ক্রোকারিজ রাখা। দেয়ালে পরিবারের সদস্যদের নানা ছবি লাগানো। দেখে মনে হচ্ছে এই রুমে সময় গত বিশ বছর ধরে ফ্রিজ হয়ে গেছে।
যেহেতু গত বছর দুই ধরে আসমা বেগমের সাথে নিয়মিত কথা হয়, একবার দেখাও হয়েছে। সাথে উনি এই রিলেশনের ব্যাপারে পজিটিভ তাই মাহফুজ অনেক রিলাক্সড বোধ করল। আর আসমা বেগমের পার্সনালিটির কিছুটা পেয়েছে সিনথিয়া। হাসিখুশি। কথা বলার সময় খুব রিলাক্সবোধ হয়। আর হিউমার সেন্স ভাল। তাই দশ মিনিট কথা বলার পর মাহফুজের মনে হল কতদিনের পরিচিত বুঝি। এর মধ্যে বাসার কাজের লোক দুই কাপ চা দিয়ে গেল। সাথে বিস্কুট, আর একটা ছোট প্লেটে খোসা ছাড়ানো কমলা। মাহফুজের মনে হয় সিনথিয়ার ফ্যামিলির মধ্যে নানুর সাথে এক ধরনের আত্মিক যোগাযোগ অনুভব করে। আসমা বেগম নিজে থেকেই কথা তুলেন। সিনথিয়া আমাকে সব বলেছে। তুমি নুসাইবা কে হেল্প করছ। তোমাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হইছিল তোমার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। নুসাইবার ঘটনায় তুম সেটা প্রমাণ করছ। নুসাইবা কে আমি আমার নিজের মেয়ের মত দেখি। সাফিনার সাথে ওর যে খাতির, সেটা অনেক সময় মনে হয় ওরা দুই বোন। যদিও ওরা ননদ-ভাবী। এই একটা কাজ করে তুমি তোমার চান্স অনেক বাড়ায়ে দিয়েছ। মাহফুজ বলে নানু কিন্তু এখনো কিছু সমাধান তো হচ্ছে না। সিনথিয়ার আম্মু তো এখনো আমাদের ফ্যামিলির সাথে কথা বলার জন্য গ্রিন সিগনাল দিচ্ছে না। এদিকে সাবরিনা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আসমা বলেন এতদিন যখন ধৈর্য্য ধরেছ আরেকটু ধর। এত অস্থির হবার কিছু নেই। সাবরিনার ব্যাপারটা তুমি চিন্তা কর। তুমি এতদিন ওর সাথে কাজ করেছ কিন্তু ওকে তোমার পরিচয় দাও নি। এইটা ওর মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি করেছে। মাহফুজ মনে মন একটু হাফ ছাড়ে। তার মানে সাবরিনা আর নানুর মাঝে কথা হয়েছে। তবে সাবরিনা পুরো ব্যাপারটা বলে নি। আসমা বলেন, ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। এই কারণে ও এই বিয়ের প্রচন্ড বিরোধিতা করছে। আমি ওকে অনেক ভাবে প্রশ্ন করেছি কিন্তু এর বাইরে আর কিছু বলছে না। আমার মনে হয় এইটা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। সিনথিয়া দেশে আসুক। দরকার হলে তোমরা দুইজন একসাথে সাবরিনার কাছে ক্ষমা চাইবে। আমিও ওকে বুঝিয়েছি। যদিও আমার মনে হচ্ছে ওর মনের ভিতর এই বিয়ে নিয়ে একটা খুতখুত আছে। তবে আসল ব্যাপার হল আমার মেয়ে সাফিনা। ওকে রাজি করানো গেলে বাকিরা এমনিতে রাজি হবে। আমার জামাই ওর বউ এর কথা ফেলবে না। আর মিজবাহ এর সাথে আমার কথা হয়েছে। মিজবাহ ওর বোন কে তুমি সেফ করছ এই কারণে খুব কৃতজ্ঞ।
মাহফুজের গত কয়েকটা দিন ভাল যাচ্ছে না। ঢাকায় এসেছে ছয় দিন। হঠাত করে কোন খবর না দিয়ে নির্বাচনের মৌসুমে কয়েক সাপ্তাহ হাওয়া হয়ে যাওয়ার কারণে পার্টির বড় নেতারা ওর উপর দারুণ ক্ষেপা। তবে মাহফুজ কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে এই কয়দিনে। এর মাঝে নুসাইবার খবর নিয়েছে। ভাল আছে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে বেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিন জোহরার ফোনে কথা হয়েছে। একা একা অস্থির হয়ে উঠেছে। আর নিরাপত্তার কারণে আর কার সাথে কথা বলতে পারছে না। প্রতিটাদিন প্রচন্ড ব্যস্ততার মাঝে যেতে হচ্ছে। পার্টিতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। এর মাঝে বাকি ঝামেলাও সামলাতে হচ্ছে। সিনথিয়ার সাথে নিয়মিত কথা হচ্ছে। মুন্সী একদম চুপচাপ হয়ে আছে, তার কোন খবর নেই। এত চুপচাপ থেকে কখন কি করে সেটাও একটা ভাবার বিষয়। আবার ম্যানেজার ওর খোজ এখনো ছাড়ে নি সেটাও জানে। অন্য দিকে নুসাইবা কে কখন কিভাবে ঢাকা ব্যাক করানো যায় এটা ভাবতে হচ্ছে। মুন্সীর নিশ্চুপ হওয়া আর ম্যানেজার গোপনে ওর খোজ বের করার চেষ্টা এর মাঝে নুসাইবা কে ঢাকাতে আনা কতটা নিরাপদ এই প্রশ্ন আছে কিন্তু সমস্যা হল একা একা আর বেশিদিন হাওরে থাকলে নুসাইবা পাগল হয়ে যাবে। বলা যায় না পালিয় কাউকে না বলে ঢাকায় এসে যেতে পারে। ঐদিকে সিনথিয়ার দেশে আসার সময় হয়ে এসেছে। এইমধ্যে সিনথিয়ার ফ্যামিলি কে রাজি করাতে হবে। সিনথিয়া ওর মায়ের সাথে কথা বলেছে। সিনথিয়ার মা নিমরাজি। নুসাইবাকে এইজন্য হলেও ঢাকা আনা দরকার। কারণ নুসাইবা কথা দিয়েছে তার ভাবী কে সে রাজি করাবে এই ব্যাপারে। আবার অন্য সমস্যা তৈরি হয়েছে সাবরিনা কে নিয়ে। এমন একটা ঝামেলা বাধতে পারে সেটা মাহফুজ আন্দাজ করেছিল তবে এভাবে বাধবে ভাবে নি। সাবরিনা কে কোনভাবে সিডিউস করতে চায় নি, গিয়েছিল একটা গুড ইম্প্রেশন তৈরি করতে। সেখানে কি যে হল, নিজেই কিভাবে যেন সাবরিনার মোহে পড়ে গেল। নুসাইবার ক্ষেত্রেও তাই। মনে মনে হাসে মাহফুজ। ও কি একটা সেক্স ম্যানিয়াক হয়ে যাচ্ছে? সেক্স নিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা থাকলেও এমন কখনো ছিল না আগে। কিন্তু সিনথিয়ার ফ্যামিলি জিনে এমন কিছু একটা আছে যেটা ওকে ওদের সবার দিকে টানছে। নুসাইবা আপাতত সব জানে এবং আশা করা যায় ঝামেলা করবে না বরং হেল্প করবে সিনথিয়ার মা কে রাজি করাতে ঢাকা আসলে। তবে সাবরিনার টা ওকে সামলাতে হবে। সাবরিনার ব্যাপার সিনথিয়া, নুসাইবা বা সিনথিয়ার মা কেউ জানার আগে সাবরিনা কে রাজি করাতে হবে। তবে এইজন্য ওর সাথে কথা বলা দরকার কনভিন্স করার জন্য। সেই সুযোগটাই পাচ্ছে না। কয়েকদিন আগে অফিসে গিয়েছিল দেখা করার জন্য। ওকে এড়ানোর জন্য অফিস থেকে অসুখের কথা বলে আগে বেড়িয়ে গেল, তবে সাবরিনা অফিস থেকে বের হয়ে গেছে এইটা শুনে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে ধরতে পেরেছিল মাহফুজ। ওকে দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠেছিল সবারিনা। `
কয়েক সেকেন্ডের মাঝে নিজেকে সামলে নিয়ে সবারিনা বলেছিল আমার গাড়ি এসে গেছে, চলে যেতে হবে। পরে কথা হবে। মাহফুজ কথা বলার এই সুযোগ হারাতে চায় না। তাই আবার সামনে এসে দাঁড়ায়। সাবরিনা আশেপাশে তাকায় কেউ লক্ষ্য করছে কিনা। এরপর গলার স্বর নামিয়ে হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ সাবরিনার গলায় বিষ টের পায়, পারলে যেন এখুনি গাড়ির নিচে ছুড়ে দিবে মাহফুজ কে। মাহফুজ অটল থাকে। বলে প্লিজ আমার কথা শুন, তারপর যা বলার বলো। সাবরিনা আবার হিস হিস করে বলে আমার রাস্তা ছাড়। মাহফুজ অটল। সাবরিনা দেখে ওর অফিসের দুইজন গেটের কাছে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। ওকে দেখে হাত নাড়ায়। সাবরিনা হেসে তাদের দিকে পালটা হাত নাড়ায় তবে মুখের হাসি ধরে রেখে জোর গলায় বলে মাহফুজ ভাল হবে না এইসব করলে। মাহফুজ বুঝে এইখানে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে পারবে না সাবরিনা। তাই বলে প্লিজ পাশের আইসক্রিম পার্লারে গিয়ে বসি। দশ মিনিট। এরপর দরকার হলে আমি নামিয়ে দিয়ে আসব। সাবরিনা টের পায় মাহফুজ নাছোড়বান্দা। এইখানে আর কথা বললে অনেকের চোখে পড়বে। তাই অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও রাজি হয়। মাহফুজ আর সাবরিনা কোণায় একটা টেবিল নেয়। দোকানে লোকজন নেই। আইসক্রিম পার্লারে মেইন ভিড়টা হয় বিকালের পর। সাবরিনা এইবার চড়া গলায় বলে তোমার মত এমন ছোট লোক অসভ্য ইতর, নোংরা মনের মানুষ আর আমি দেখি নি। সাবরিনার গলার ঘৃণা মাহফুজের একদম বুকে গিয়ে লাগে। সাবরিনা বলে শরীরের লোভে মানুষ এমন করতে পারে আমি ভাবি নি। তোমার কি নীতি নৈতিকতাবোধ বলে কিছু নেই? সিনথিয়া কে তুমি ভালবাস তাহলে আমার সাথে কি? আর মানুষ চিট করে সেটা জানি তাই বলে দুই বোনের সাথে একসাথে? কতটা নীচ আর অসভ্য হলে মানুষ এই কাজ করতে পারে। মাহফুজ যখন এই কথার উত্তর দেবার চেষ্টা করল তখন সাবরিনা বলল তুমি কতটা অসভ্য এটা আমি জানি, আর নতুন করে সাফাই গেয়ে নিজেকে সাধু প্রমাণ করবার দরকার নেই। তুমি যদি সত্যিকার অর্থে ভাল কিছু করতে চাও তাহলে সিনথিয়ার জীবন থেকে সরে আস। এই বলে মাহফুজ কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যায় সাবরিনা। মাহফুজ এতটা হতবিহবল হয়ে গিয়েছিল যে আর কিছুক্ষণ সেখান থেকে উঠতে পারে নি। সাবরিনার যে মেজাজের গল্প এত বছর শুনে এসেছে সেই মেজাজ সরাসরি এই প্রথম দেখল মাহফুজ, সাথে গলায় দারুণ ঘৃণা। সাবরিনার সেই কথা গুলো এখনো কানে বাজছে মাহফুজের। প্রতিবার যতবার ভাবছে এই কথা ততবার এক ধরণের অপমান, দুঃখবোধ সব একসাথে কাজ করছে। সাবরিনা আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা আসলে ঘোলাটে। সাবরিনা কে সিডিউস করবার কোন ইচ্ছাই ওর ছিল না। বরং ওর নিজের মাঝে মাঝে মনে হয় সাবরিনা বুঝি ওকে সিডিউস করেছে। যাতে না চাইতেও ওর ভিতর স্বত্ত্বাটা কাজ করেছে সাবরিনা কে পাওয়ার জন্য। সাবরিনা কে পাওয়ার ইচ্ছার পিছনে খালি কাম ছিল না, ছিল ভালবাসাও। সিনথিয়ার সাথে ভালবাসা থেকে ভিন্ন। এইটা কোন ভাবে আর কাউকে বুঝাতে পারবে বলে মনে হয় না। সিনথিয়ার প্রতি ভালবাসাটা জীবন সংগীর প্রতি ভালবাসা। সেখানে দীর্ঘজীবনে একসাথে থাকার তাড়না আছে। আর সাবরিনার ভালবাসায় দীর্ঘ জীবন সাথে থাকার অংগীকার নেই তবে কাছে পাবার ইচ্ছা আছে। এই দুইটা কে কি আলাদা করা যায়? নাকি নিজেকে বাচানোর জন্য নিজেই খোড়া যুক্তি দাড় করাচ্ছে মাহফুজ?
সাবরিনার গলায় সে ঘৃণা, চোখের এই বিষ দৃষ্টি কোনভাবেই মন থেকে সরাতে পারছে না। সিনথিয়া জিজ্ঞেস করেছিল কি হয়েছে দেখা হবার পর। মাহফুজ পুরো ঘটনা বলে নি। জানে সিনথিয়া আর মেজাজি বোনের তুলনায়। ফলে দেখা যাবে ফোন করে চার্জ করবে আর তখন সাবরিনা কি বলতে কি বলবে। আর সমস্যা তৈরি হবে। মাহফুজ তাই বুদ্ধি করে উত্তর দিয়েছে যে খুব বেশি কথা হয় নি, সাবরিনা ব্যস্ত ছিল। সিনথিয়া বলে আপু মনে হয় ভাল ভাবে নেয় নি ব্যাপারটা। এতবার করে বললাম তাও আমার কথা শুনল না। ভিতরে ভিতরে রাগ পুষে আছে নিশ্চয়। তুমি যে শুরু থেকে আমার আর তোমার ব্যাপার খোলাসা কর নি তাতে আপু সহজে ব্যাপারটা নেয় নি। মাহফুজ বলে হ্যা তা ঠিক, তবে বলে না এই পরিচয় না দেওয়ার ব্যাপারটা ঘটনা কে এখন কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গত কয়েক দিন যতবার কথা হয়েছে সিনথিয়ার সাথে মনে হয়েছে সিনথিয়া স্ট্রেসড হচ্ছে দিন কে দিন। এখনো ওর ফ্যামিলি পুরো গ্রিন সিগনাল দেয় নি। নুসাইবা রাজি, সাফিনা মানা করে নি তবে হ্যা বলে নি, আর সাবরিনা বার বার এড়িয়ে যাচ্ছে প্রসংগ। এদিকে সেমিস্টার শেষের কাজের চাপ। সিনথিয়ার মনে হয় আর কয় সাপ্তাহ পর দেশে আসছে এখনো কিছু ঠিক হয় নি। মাহফুজ শত ব্যস্ততার মাঝে সিনথিয়া কে ফোনে নিয়মিত চাংগা রাখার চেষ্টা করে। সিনথিয়া বার বার বলে তীরে এসে কি তরী ঢুববে মাহফুজ? সিনথিয়ার এই চঞ্চল মন মাঝে মাঝে খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। মাহফুজ বলে আমি সব ঠিক করে দিব। সিনথিয়ার অগাধ আস্থা মাহফুজে তাই সেটা শুনে পড়ায় মন দেয় আবার। তবে মাহফুজ জানে না ঠিক কিভাবে কি করবে। সিনথিয়া মাঝে একদিন ওর নানুর সাথে দেখা করবার কথা বলেছিল। মাহফুজের মনে হয় এটাই এখন রাইট কোর্স অফ একশন। এই কয়দিনের ময়মনসিংহের এই এসাইনমেন্ট তাই নিজে থেকে চেয়ে নিয়েছে। ময়মনসিংহ সদরের ওদের দলের প্রার্থীর হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা সমন্বয় টিমে কাজ করবে। কাজের ফাকে সময় করে দেখা করতে এসেছে সিনথিয়া সাবরিনার নানু আয়েশা বেগমের সাথে। মাহফুজ মটরসাইকেল থেকে নামে। ওর সাথে একটা ছেলে এসেছে, পার্টির লোকাল লোক। তাকে বলে বাইক নিয়ে একটু ঘুরে আসতে এক ঘন্টা পর কল দিবে। মাহফুজ আসার আগে আসমা বেগম কে কল দিয়ে এসেছে। আগেও একবার দেখা হয়েছিল। এর মাঝে ফোনে অবশ্য বেশ কয়েকবার কথা হয়েছে গত দুই বছরে। সিনথিয়া ওর নানু নিজেও কল দিয়েছিল। বাইক থেকে নেমে মাহফুজ সামনের বিল্ডিংটার দিকে তাকায়। তিন তলা একটা বাড়ি। দোতলার একটা ফ্ল্যাটে থাকেন আসমা বেগম। ছেলে মেয়েরা কেউ সাথে থাকে না, সবাই যার যার কাজে। একজন কাজের লোক থাকে সাথে। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েদের কাছে থেকে ঘুরে আসেন। এই শহরে জন্ম, আর বেড়ে উঠা। তার উপর স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়ি। এই জন্য সহজে ছাড়তে চান না ময়মনসিংহ। বাড়িটা পুরাতন হলেও নিয়মিত যত্ন নেওয়া হয় টের পাওয়া যায়। অন্য ফ্লাট গুলোতে ভাড়াটিয়া থাকে। সামনে একটা গলি রাস্তা। সামনের লোহার গেটের সাথে লাগানো ছোট গেটটা খোলা। সেটা দিয়ে ভিতরে ঢুকে দোতলায় ফ্ল্যাটে কলিংবেল বাজায়। দরজা খুলে আসমা বেগম নিজেই। বেশ অনেক দিন পর দেখছে কিন্তু দেখার পর মাহফুজের মন ভাল হয়ে যায়। শান্ত সৌম্য একটা চেহারা। হাসি হাসি মুখ। সিনথিয়াদের পরিবারে শুরু থেকে যে ওদের প্রেমের পক্ষে সে হচ্ছে এই নানু। উনাকে দেখলে বুঝা যায় ওদের সিনথিয়ার মা, বোন কেন এত সুন্দর। বংশপরম্পরা। আস, মাহফুজ আস। উনাকে দেখলে বয়স বুঝা যায় না। এখন একদম শক্ত আছেন। বয়স অনায়েসে ৫০ এর ঘরে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে। ড্রয়িংরুমে এসে বসল মাহফুজ। পুরাতন আমলের সোফা। ড্রয়িংরুমের এক কোণায় একটা কাচের শোকেস। সেখানে বাসার ক্রোকারিজ রাখা। দেয়ালে পরিবারের সদস্যদের নানা ছবি লাগানো। দেখে মনে হচ্ছে এই রুমে সময় গত বিশ বছর ধরে ফ্রিজ হয়ে গেছে।
যেহেতু গত বছর দুই ধরে আসমা বেগমের সাথে নিয়মিত কথা হয়, একবার দেখাও হয়েছে। সাথে উনি এই রিলেশনের ব্যাপারে পজিটিভ তাই মাহফুজ অনেক রিলাক্সড বোধ করল। আর আসমা বেগমের পার্সনালিটির কিছুটা পেয়েছে সিনথিয়া। হাসিখুশি। কথা বলার সময় খুব রিলাক্সবোধ হয়। আর হিউমার সেন্স ভাল। তাই দশ মিনিট কথা বলার পর মাহফুজের মনে হল কতদিনের পরিচিত বুঝি। এর মধ্যে বাসার কাজের লোক দুই কাপ চা দিয়ে গেল। সাথে বিস্কুট, আর একটা ছোট প্লেটে খোসা ছাড়ানো কমলা। মাহফুজের মনে হয় সিনথিয়ার ফ্যামিলির মধ্যে নানুর সাথে এক ধরনের আত্মিক যোগাযোগ অনুভব করে। আসমা বেগম নিজে থেকেই কথা তুলেন। সিনথিয়া আমাকে সব বলেছে। তুমি নুসাইবা কে হেল্প করছ। তোমাকে প্রথম দেখেই আমার মনে হইছিল তোমার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা আছে। নুসাইবার ঘটনায় তুম সেটা প্রমাণ করছ। নুসাইবা কে আমি আমার নিজের মেয়ের মত দেখি। সাফিনার সাথে ওর যে খাতির, সেটা অনেক সময় মনে হয় ওরা দুই বোন। যদিও ওরা ননদ-ভাবী। এই একটা কাজ করে তুমি তোমার চান্স অনেক বাড়ায়ে দিয়েছ। মাহফুজ বলে নানু কিন্তু এখনো কিছু সমাধান তো হচ্ছে না। সিনথিয়ার আম্মু তো এখনো আমাদের ফ্যামিলির সাথে কথা বলার জন্য গ্রিন সিগনাল দিচ্ছে না। এদিকে সাবরিনা আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। আসমা বলেন এতদিন যখন ধৈর্য্য ধরেছ আরেকটু ধর। এত অস্থির হবার কিছু নেই। সাবরিনার ব্যাপারটা তুমি চিন্তা কর। তুমি এতদিন ওর সাথে কাজ করেছ কিন্তু ওকে তোমার পরিচয় দাও নি। এইটা ওর মধ্যে এক ধরনের অবিশ্বাস তৈরি করেছে। মাহফুজ মনে মন একটু হাফ ছাড়ে। তার মানে সাবরিনা আর নানুর মাঝে কথা হয়েছে। তবে সাবরিনা পুরো ব্যাপারটা বলে নি। আসমা বলেন, ওর সাথে আমার কথা হয়েছে। এই কারণে ও এই বিয়ের প্রচন্ড বিরোধিতা করছে। আমি ওকে অনেক ভাবে প্রশ্ন করেছি কিন্তু এর বাইরে আর কিছু বলছে না। আমার মনে হয় এইটা আস্তে আস্তে কেটে যাবে। সিনথিয়া দেশে আসুক। দরকার হলে তোমরা দুইজন একসাথে সাবরিনার কাছে ক্ষমা চাইবে। আমিও ওকে বুঝিয়েছি। যদিও আমার মনে হচ্ছে ওর মনের ভিতর এই বিয়ে নিয়ে একটা খুতখুত আছে। তবে আসল ব্যাপার হল আমার মেয়ে সাফিনা। ওকে রাজি করানো গেলে বাকিরা এমনিতে রাজি হবে। আমার জামাই ওর বউ এর কথা ফেলবে না। আর মিজবাহ এর সাথে আমার কথা হয়েছে। মিজবাহ ওর বোন কে তুমি সেফ করছ এই কারণে খুব কৃতজ্ঞ।