05-10-2024, 02:15 AM
(This post was last modified: 05-10-2024, 02:32 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এইভাবে আর সাত আটদিন যাবার পর যখন সাবরিনা নিজের সাথে নিজের যুদ্ধে কিছুটা গুছিয়ে উঠেছিল তখন আসল সেই কল, যার ভয় সাবরিনা করছিল এই কয়েকটা দিন। সিনথিয়ার কল। সিনথিয়া নরমালি আর বেশি কল দেয় ওর বোন কে তবে সেমিস্টারের শেষের দিক। তারপর বিয়ের জন্য এক মাসের মত সময় থাকবে না তাই ইংল্যান্ডে, পড়াশুনা আর অন্য কাজকর্ম গুছিয়ে নিচ্ছে। তাই ব্যস্ত থাকে আজকাল। সাবরিনা নিজেও কল দেয় নি। ওর মনের ভয় সিনথিয়া বুঝি ওর মনের কথা পড়তে পারবে। যে ছেলেটা কে ভালবাসে সিনথিয়া সাবরিনা তার সাথেই শুয়েছে। এই কথা কিভাবে বলবে ও। তাই ফোনের স্ক্রিনে সিনথিয়ার নাম দেখে পালপিটিশন শুরু হয়ে যায় সাবরিনার বুকে। ফোন ধরবে কি ধরবে না এই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ফোনের রিংটোন বন্ধ হয়ে যায়। আবার কল আসে মেসেঞ্জার। এবারো ফোন ধরে না সাবরিনা। তবে নেক্সটবার ফোন আসে সরাসরি কলে। সিনথিয়া সরাসরি ওর ইংল্যান্ডের ফোন নাম্বার ইউজ করে ফোন দিয়েছে। নরমালি জরুরি দরকার না থাকলে এইভাবে কল দেয় না সিনথিয়া, খরচ অনেক বেশি। সাবরিনা তাই ফোন ধরে। বুক ধড়ফড় করছে ওর। কি বলবে সিনথিয়া কে? যদি সিনথিয়া বুঝে যায় সব। আর সিনথিয়া না বুঝলেও নিজেকে কিভাবে সামলাবে? এইটা কি নিজেই মেনে নিতে পারবে? সিনথিয়া ফোন ধরতেই স্বভাবসুলভ প্রচুর কথা শুরু করল। কেমন আছিস? দেশে এসে কল দিলি না কেন? কি করিস? সাদমান ভাই কি করে? আর প্রচুর কথা। সাবরিনা এক এক করে উত্তর দেয় সবগুলোর। বুক ঢিপ ঢিপ করছে ওর। এরপর সিনথিয়া বলে তোর সাথে একটা কথা আছে। সাবরিনার মনে হয় লাফ দিয়ে হৃদপিন্ড বুক থেকে বের হয়ে যাবে। সিনথিয়া বলে আপু তুই আম্মুর কাছে সব শুনছিস? সাবরিনা না জানার ভাণ করে বলে কি কথা? সিনথিয়া বলে আমি আম্মু কে আমার বিয়ের কথা বলছি। সেইটা আম্মু তোকে বলে নি? সাবরিনা কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না। সিনথিয়া বলে আম্মু তো বলল তোকে বলছে। সাবরিনা এইবার বুঝে এড়ানোর চেষ্টা করে লাভ নাই। তাই বলে হ্যা বলেছে। সিনথিয়া বলে আসলে তোকে আমার আগে বলা উচিত ছিল কিন্তু দেখ কি করব। নুসাইবা ফুফু কে নিয়ে এত বড় একটা ঝামেলা হয়ে গেল আর তখন একমাত্র সাহায্য করার লোক ছিল মাহফুজ। মাহফুজ নামটা সিনথিয়ার মুখ দিয়ে উচ্চারিত হতেই সাবরিনার বুকে যেন কামানের গোলা লাগল। সিনথিয়া বলল তখন আম্মু কে ব্যাপারটা না বলে উপায় ছিল না। আর তোকে আমি বলতাম কিন্তু তোর মনে আছে সেই সময়টাতে তুই বিদেশে তোর অফিসের কাজে কেমন বিজি ছিল। সকালে বের হতি আর মধ্যরাতে ফিরতি। তাই তোকে আর বিরক্ত করতে চাই নি। সাবরিনা একটু সামলে নেয়। সিনথিয়ার কথায় একটু নরম সুর। তাই ওর মনে হয় হয়ত সিনথিয়া কিছু জানে না। সিনথিয়া আবার বলে এইজন্য আজকে এই কল দিলাম তোকে এই ব্যাপারে কথা বলতে। আমি শীঘ্রই দেশে আসব। এখন নভেম্বর চলে ডিসেম্বরে আমি আসছি। আমি চাই এর মাঝে দুই ফ্যামিলির কিছু কথা হয়ে আমাদের ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত আসুক। সিনথিয়া একদম আসল কথায় চলে এসেছে। সাবরিনার বুক থেকে একটা পাথর নামে। সিনথিয়া এখনো কিছু জানে না। সাবরিনা তাই স্বাভাবিক ভাবে জিজ্ঞেস করে তা ছেলেটার পরিচয় দে, কি নাম, কি করে, ফ্যামিলি কেমন, তোদের পরিচয় কোথায়। সিনথিয়া এইবার গলার স্বর নরম করে বলে ওকে তুই চিনিস আপু। আবার বুক ধক করে উঠে, গলার কাছে শ্বাস আটকে যায়, বুকের পাশে ব্যাথা করে উঠে যেন সাবরিনার। সিনথিয়া বলে আপু ও তোর অফিসে যায় মাঝে মাঝে, তুই ওকে চিনিস। তোদের অফিসে লিয়াজো হিসেবে কাজ করে ওদের দলের হয়ে। মাহফুজ নাম। সাবরিনা কোন কথা বলে না। ওর হৃদপিন্ড গলার কাছে আটকে আছে। সাবরিনা কোন কথা বলছে না দেখে সিনথিয়া আর চিন্তিত হয়ে যায়, ভাবে মাহফুজের পরিচয় এতদিন লুকিয়ে রাখায় বুঝি রেগে গেছে সাবরিনা। তাই বলে আপু প্লিজ রাগ করিস না। ও যখন তোদের অফিসে লিয়াজোর দ্বায়িত্ব পেল আমি তখন ওকে মানা করেছি তোকে পরিচয় দিতে। আর আমি চাইছিলাম যাতে ওকে যখন তুই দেখবি তখন যেন কোন প্রিজুডিস কাজ না করে, যাতে তুই কোন পূর্বধারণার বশবর্তী হয়ে ওকে ভাল বা খারাপ না ভাবিস। তুই বল ও কেমন? তোকে অনেক হেল্প করেছে ঠিক না? ও তোকে অনেক বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে ঠিক না? তাইলে বল ও ভাল ছেলে না? সাবরিনা চেয়ারে বসা তাও মনে হয় মাথা রক্তশূণ্য হয়ে ঝিম ঝিম করছে, দাঁড়ানো থাকলে হয়ত পড়ে যেত।
সাবরিনার মনে হয় কি বিপদ থেকে উদ্ধারের কথা বলছে? সোয়ারিঘাটের সেই রাতের কথা জানে কি সিনথিয়া। এতদিন ভেবে এসেছে এই পৃথিবীতে একমাত্র ও আর মাহফুজ জানে এই ঘটনা। মাহফুজ কি এই ঘটনা সিনথিয়া কে বলে দিয়েছে। সাবরিনা তোতলাতে তোতলাতে বলে কি বিপদ? সিনথিয়া বলে ঐ যে তোর অফিসের পলিটিক্সে তোকে সব কঠিন কঠিন কাজ দিত. সেইসবে তোকে হেল্প করেছে না যাতে তোর কষ্ট কম হয়। সাবরিনা বুক ভরে শ্বাস ছাড়ে। উফফ। মাহফুজ তাহলে কিছু বলে নি সোয়ারিঘাট নিয়ে। এত রাগের মাঝেও মাহফুজের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা জেগে উঠে সাবরিনার। সিনথিয়া বলে দেখ আমি জানি আমাদের ফ্যামিলির সবার একটা এলিটিজম আছে। এইসব ব্যাপারে সবাই হাইক্লাস ফ্যামিলি খুজে। সাদমান ভাইদের ফ্যামিলি খুব হাইক্লাস, আমাদের মত। তবে বিশ্বাস কর মাহফুজের ফ্যামিলি এত পয়সাওয়ালা বা শিক্ষিত না হলেও ওরা ভাল মানুষ। আমি ওদের সাথে মিশেছি। মাহফুজ কে তুই এতদিন দেখেছিস আমার বিশ্বাস তুইও সেইম কথা বলবি। মাহফুজ আমাকে বলেছে তোর সাথে ওর নাকি খুব ভাল সম্পর্ক। আবার গলায় শ্বাস আটকে আসে সাবরিনার। কি বলতে চায় সিনথিয়া। সিনথিয়া ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে চলে, মাহফুজ বলে তোমার এত রাগ আমি বলি সেটা নাকি ও টের পায় নি, বরং তুমি নাকি অনেক মিশুক। আর অফিসের কাজে নাকি তোমার মত দক্ষ লোক কম। সিনথিয়ার কথার তোড়ে একটা জিনিস বুঝতে পারে মাহফুজের সাথে ওর সম্পর্কের পুরোটা দিক সিনথিয়া জানে না। ওর কাছে যেমন সিনথিয়ার বিষয় গোপন করেছে তেমন করে সিনথিয়ার কাছে ওর সব দিক বলে নি। এক সাথে হাফ ছেড়ে বাচল আবার রাগও উঠল। বাস্টার্ড। একটা লোক কীভাবে দুইটা বোন কে নিয়ে এভাবে একসাথে খেলতে পারে। সিনথিয়া যে ওর আর মাহফুজের পুরো ব্যাপারটা জানে না এতে একদিকে হাফ ছেড়ে বাচে আবার অন্যদিকে রাগ হয়। কি ডেঞ্জারাস একটা ছেলে মাহফুজ। কিভাবে ওদের দুইজনের সাথে একসাথে খেলা চালিয়ে গেছে। টু টাইমিং লিটল পিস অফ শিট। তবে সাবরিনা মনের ভিতরের অনুভূতি লুকায়। সিনথিয়া কে আপাতত এইসব জানতে দিয়ে লাভ নেই। আসলে সিনথিয়া যেন কোন দিন না জানে সেটাই করা উচিত ওর। তবে আবার মাহফুজ সিনথিয়া কে এত কিছুর পরেও বিয়ে করবে এটাই যেন মানতে পারছে না। কিন্তু কিভাবে নিজেকে এক্সপোজ না করে সিনথিয়া কে মানা করবে সেটাও বুঝছে না। তাই সাবরিনা বলে দেখ সিনথিয়া মাহফুজ কে আমি অফিসে দেখেছি। ছেলেটা আমাকে হেল্পও করেছে কিন্তু কথা হল অফিসে হেল্প করা আর একজন ভাল লাইফ পার্টনার হওয়া আলাদা বিষয়। সিনথিয়া এইবার বলে আপু তুমি এখনো এলিটিজম ধরে বসে আছ। আর সবাই কে কেন তোমার মত হতে হবে? কেউ কেন তার নিজের মত লাইফ পার্টনার খুজে নিতে পারবে না। সিনথিয়ার গলায় এই প্রথমবার ক্ষোভের চিহ্ন। সাবরিনা ডিফেন্সিভ খেলে। সাবরিনা বলল না, না আমি আসলে ওর সামাজিক স্ট্যাটাস নিয়ে বলছি না। আমি বলছি বিয়ে এত সিরিয়াস জিনিস। এখানে তাড়াহুড়ার কি আছে। সিনথিয়া হেসে দেয়, বলে আপু কি বলছ তুমি? সাদমান ভাই কে বিয়ের আগে কয়দিন চিনতে। এরেঞ্জড ম্যারেজ তোমাদের। এংগেজমেন্টের পর তিনমাস ঘুরাঘুরি করে বিয়ে করে ফেললে। আর আমরা প্রেম করছি কয়েক বছর। তুমি বিয়ের আগে সাদমান ভাই কে যতটা চিনতে আমি তার থেকে অনেক বেশি চিনি মাহফুজ কে। “অনেক বেশি চিনি” এই শব্দ গুলোর উপর এক্সট্রা জোর দেয় সিনথিয়া। ইনফ্যাক্ট তোমাদের বিয়ের বয়সের থেকে আমাদের প্রেমের বয়স বেশি। সাবরিনা আবার বলে প্রেম করে কি সব জানা যায়? আর বিয়ের কথা উঠলে অনেক রকম কম্পাটিবিলিটি ইস্যুজ আছে। সব কিছু ভাবার জন্য একটু সময় নে। আমি তো মানা করছি না বিয়ে করতে, খালি হুড়োহুড়ি করতে নিষেধ করছি। সিনথিয়া বলে হুড়োহুড়ি করলাম কই আমি? এর আগেও ওর কথা আরেকবার বলেছিলাম তোমাদের। তখন তোমরা আমার কথা শুনতেও চাও নি। এমনকি একটা ছবিও দেখতে চাও নি ওর। ওর বাবা কি করে শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিয়েছিলে সবাই। আম্মু, তুমি, ফুফু কেউ শুনতেও চাও নি কথা। আব্বু একটু আমার কথা শুনছিল দেখে তুমি আব্বু কে ঝাড়ি দিয়েছিলে, মনে আছে? ফুফু বলেছিল আব্বু কে যে ভাইয়া তুমি এইসব ব্যাপারে কথা বলো না। আর এখন দেখ। ফুফু কে বিপদের দিনে কে হেল্প করেছে। অফিসে তোমার ঝামেলায় কে পাশে দাড়িয়েছে। সিনথিয়ার কথায় যুক্তি আছে। তবে সাবরিনা যা জানে সিনথিয়া তা জানে না। সাবরিনা আমতা আমতা করে। এ যেন অগ্নিসংকট। সিনথিয়া কে কিছু বললে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্ক সারাজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে আবার সিনথিয়া কে কিছু না বললে মাহফুজের সাথে সিনথিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে, সেক্ষত্রে মাহফুজ কে বারবার দেখতে হবে যতবার সিনথিয়ার বাসায় যাবে। সেটাও ওর জন্য অসম্ভব। যাই করুক শেষ পর্যন্ত লুজার ও। এইসব সময় মানুষ যা করে তাই করল সাবরিনা। মানুষ এইসব সময়ে আরেকটু দীর্ঘ করে প্রসেস। সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না। মানুষ ভাবে আরেকটু দেরী করলে হয়ত নিজে থেকে সমস্যার সমাধান হবে। তাই সাবরিনা ভাবে আর কিছু বলবে না আপাতত এই ব্যাপারে। কারণ এই ব্যাপারে যত কথা হচ্ছে ওর বুকে চাপ বাড়ছে তত। আর সিনথিয়ার সাথে বেশি কথা বললে হয়ত বুকের চাপে স্বীকার করে ফেলবে সব। সাবরিনা তাই বলে এই শোনরে আমার অফিসের কাজ আছে একটু। পরে তোকে কল দিব। সিনথিয়া বলে তাহলে আমার উপর রাগ করে নেই তো? কি উত্তর দিবে সাবরিনা। বরং সাবরিনা ভয়ে আছে সব কিছু জানলে রেগে যাবে কিনা সিনথিয়া। তাই দ্রুত বলে আরে না, না। সিনথিয়া বলে আপু বিশ্বাস কর আরেকটু আগে বলতাম কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে সময় হল না। তাই আম্মু কে প্রথম বলতে হয়েছে ফুফুর জন্য। আর আম্মু কে যখন বলেছি তখন আর তোকে বলব না কেন। তবে মাইন্ড করিস না আপু, সব কিছু যদি নরমাল হত তাহলে তোকে আগে বলতাম। সাবরিনা ভাবে সব কিছু নরমাল কি আদৌ হবে কখনো? সাবরিনা একটু চুপ থাকে। সিনথিয়া বলে স্যরি আপু তোকে আগে না বলার জন্য। তুই আমাকে সাপোর্ট দিবি তো। হঠাত করে যেন খেই ফিরে পায় সাবরিনা তাই জিজ্ঞেস করে কিসে? সিনথিয়া বলে আবার কিসে, আমার আর মাহফুজের বিয়েতে। সাবরিনার মনে হয় ওর মাথার ভিতর অনন্তকাল চলে গেছে কি উত্তর দিবে এটা ভেবে। এদিকে সাবরিনা কে চুপ দেখে সিনথিয়া আবার শুরু করে যে যদি সাবরিনা ওদের সাপোর্ট দেয়, আম্মু আর ফুফু, আর আব্বু কে বুঝায় তাহলে সারাজীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সিনথিয়া ছোটকাল থেকে গলা নরম করে কাদো কাদো স্বরে সাবরিনার কাছে মিনতি করে যদি সে সাবরিনা থেকে আসলে কিছু চায়। এখনো তাই করছে। সাবরিনা বুঝে এটা সিনথিয়ার অনুনয়। সাবরিনার মনে বলে এই বিয়ে ভেংগে দিতে হবে। আবার মনের ভিতর ওর বোনের কষ্টের কথা ভেবে হাহাকার উঠে। তাই বলে আচ্ছা ভেবে দেখি, পরে বলব তোকে। সিনথিয়া বুঝে সরাসরি না করলেও পুরো হ্যা করল না সাবরিনা। আশাবাদী হয় সিনথিয়া। কারণ সিনথিয়া ধরে রেখেছিল শুনে প্রচন্ড রাগারাগি করবে সাবরিনা স্বভাবসুলভ ভাবে। তবে এখন হা না বললেও বকা দেয় নি, মাহফুজ কে নিয়ে একটা খারাপ কথা বলে নি। অবশ্য ওর জানার কথা না সাবরিনা নিজে ভয়ে আছে তাই এই ব্যাপারে বেশি কথা বাড়াচ্ছে না। সিনথিয়া তাই এই জয়টুকু মেনে নেয়। অবশ্য পরের ধাপটার জন্য মাহফুজ আছে। সেই প্রসংগে কথা টানে। বলে, আপু আরেকটা কথা আছে রাখার আগে। সাবরিনা ফোন রাখতে উদ্গ্রীব। যত তাড়াতাড়ি কম কথায় সিনথিয়ার সাথে কথা সারা যায়। সাবরিনা তাই বলে তাড়াতাড়ি বল, কি বলবি। সিনথিয়া বলে মাহফুজ আজকে আসবে তোর সাথে দেখা করতে। তোকে স্যরি বলবে আগে ওর পরিচয় না দেবার জন্য। তুই বেশি রাগারাগি করিস না। ওর কথা মনযোগ দিয়ে শুনিস। আগে যেমন তুই ভেবেছিস ও ভাল ছেলে দেখবি এখনো তাই মনে হবে। খালি আমার সাথে প্রেম করেছে দেখে বা আমার সাথে ওর সম্পর্ক লুকিয়েছে দেখে মাইন্ড করিস না প্লিজ। সাবরিনার মনে হয় সারা শরীর কাপছে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড বুঝি বের হয়ে যাবে। সাবরিনা ঠিক শুনেছি কিনা বুঝলা না তাই আবার জিজ্ঞেস করে মাহফুজ আসছে? সিনথিয়া বলে হ্যা। সাবরিনা দ্রুত বলে আজকে ওকে আসতে মানা করে দে, আমার অনেক কাজ আছে। আমি বরং তোকে বলব, ওকে কবে আসতে হবে। সিনথিয়া বুঝে সাবরিনা এড়াতে চাইছে। সাবরিনা এমন কিছু করবে আগেই জানত তাই একদম শেষ মূহুর্তে জানাচ্ছে। সিনথিয়া বলে আপু তুমি কিন্তু কথা রাখছ না। আর মাহফুজ গতকাল রাতে ঢাকা এসেছে। এসেই প্রথমে তোমার সাথে দেখা করতে আসছে। বুঝ এবার তোমাকে আমরা কতটা গূরুত্ব দেই। সাবরিনা মনে মনে ভাবে গূরুত্ব দেয় মাহফুজ নাকি ছাই। সাবরিনা বলে বললাম না ওকে মানা কর। সিনথিয়া বলে ও বাসা থেকে বের হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এতক্ষণে তোমার অফিসে পৌছে যাবার কথা। সাবরিনা কি করবে বুঝতে পারছে না। হাত পা কাপছে ওর রীতিমত। সাবরিনা বলে আমার আরেকটা কল আসছে সিনথিয়া। দরকারি কল, আমি তোকে পরে ফোন দিব এই বলে কলটা কেটে দেয়।
সাবরিনার মনে হয় কি বিপদ থেকে উদ্ধারের কথা বলছে? সোয়ারিঘাটের সেই রাতের কথা জানে কি সিনথিয়া। এতদিন ভেবে এসেছে এই পৃথিবীতে একমাত্র ও আর মাহফুজ জানে এই ঘটনা। মাহফুজ কি এই ঘটনা সিনথিয়া কে বলে দিয়েছে। সাবরিনা তোতলাতে তোতলাতে বলে কি বিপদ? সিনথিয়া বলে ঐ যে তোর অফিসের পলিটিক্সে তোকে সব কঠিন কঠিন কাজ দিত. সেইসবে তোকে হেল্প করেছে না যাতে তোর কষ্ট কম হয়। সাবরিনা বুক ভরে শ্বাস ছাড়ে। উফফ। মাহফুজ তাহলে কিছু বলে নি সোয়ারিঘাট নিয়ে। এত রাগের মাঝেও মাহফুজের প্রতি একটা কৃতজ্ঞতা জেগে উঠে সাবরিনার। সিনথিয়া বলে দেখ আমি জানি আমাদের ফ্যামিলির সবার একটা এলিটিজম আছে। এইসব ব্যাপারে সবাই হাইক্লাস ফ্যামিলি খুজে। সাদমান ভাইদের ফ্যামিলি খুব হাইক্লাস, আমাদের মত। তবে বিশ্বাস কর মাহফুজের ফ্যামিলি এত পয়সাওয়ালা বা শিক্ষিত না হলেও ওরা ভাল মানুষ। আমি ওদের সাথে মিশেছি। মাহফুজ কে তুই এতদিন দেখেছিস আমার বিশ্বাস তুইও সেইম কথা বলবি। মাহফুজ আমাকে বলেছে তোর সাথে ওর নাকি খুব ভাল সম্পর্ক। আবার গলায় শ্বাস আটকে আসে সাবরিনার। কি বলতে চায় সিনথিয়া। সিনথিয়া ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলে চলে, মাহফুজ বলে তোমার এত রাগ আমি বলি সেটা নাকি ও টের পায় নি, বরং তুমি নাকি অনেক মিশুক। আর অফিসের কাজে নাকি তোমার মত দক্ষ লোক কম। সিনথিয়ার কথার তোড়ে একটা জিনিস বুঝতে পারে মাহফুজের সাথে ওর সম্পর্কের পুরোটা দিক সিনথিয়া জানে না। ওর কাছে যেমন সিনথিয়ার বিষয় গোপন করেছে তেমন করে সিনথিয়ার কাছে ওর সব দিক বলে নি। এক সাথে হাফ ছেড়ে বাচল আবার রাগও উঠল। বাস্টার্ড। একটা লোক কীভাবে দুইটা বোন কে নিয়ে এভাবে একসাথে খেলতে পারে। সিনথিয়া যে ওর আর মাহফুজের পুরো ব্যাপারটা জানে না এতে একদিকে হাফ ছেড়ে বাচে আবার অন্যদিকে রাগ হয়। কি ডেঞ্জারাস একটা ছেলে মাহফুজ। কিভাবে ওদের দুইজনের সাথে একসাথে খেলা চালিয়ে গেছে। টু টাইমিং লিটল পিস অফ শিট। তবে সাবরিনা মনের ভিতরের অনুভূতি লুকায়। সিনথিয়া কে আপাতত এইসব জানতে দিয়ে লাভ নেই। আসলে সিনথিয়া যেন কোন দিন না জানে সেটাই করা উচিত ওর। তবে আবার মাহফুজ সিনথিয়া কে এত কিছুর পরেও বিয়ে করবে এটাই যেন মানতে পারছে না। কিন্তু কিভাবে নিজেকে এক্সপোজ না করে সিনথিয়া কে মানা করবে সেটাও বুঝছে না। তাই সাবরিনা বলে দেখ সিনথিয়া মাহফুজ কে আমি অফিসে দেখেছি। ছেলেটা আমাকে হেল্পও করেছে কিন্তু কথা হল অফিসে হেল্প করা আর একজন ভাল লাইফ পার্টনার হওয়া আলাদা বিষয়। সিনথিয়া এইবার বলে আপু তুমি এখনো এলিটিজম ধরে বসে আছ। আর সবাই কে কেন তোমার মত হতে হবে? কেউ কেন তার নিজের মত লাইফ পার্টনার খুজে নিতে পারবে না। সিনথিয়ার গলায় এই প্রথমবার ক্ষোভের চিহ্ন। সাবরিনা ডিফেন্সিভ খেলে। সাবরিনা বলল না, না আমি আসলে ওর সামাজিক স্ট্যাটাস নিয়ে বলছি না। আমি বলছি বিয়ে এত সিরিয়াস জিনিস। এখানে তাড়াহুড়ার কি আছে। সিনথিয়া হেসে দেয়, বলে আপু কি বলছ তুমি? সাদমান ভাই কে বিয়ের আগে কয়দিন চিনতে। এরেঞ্জড ম্যারেজ তোমাদের। এংগেজমেন্টের পর তিনমাস ঘুরাঘুরি করে বিয়ে করে ফেললে। আর আমরা প্রেম করছি কয়েক বছর। তুমি বিয়ের আগে সাদমান ভাই কে যতটা চিনতে আমি তার থেকে অনেক বেশি চিনি মাহফুজ কে। “অনেক বেশি চিনি” এই শব্দ গুলোর উপর এক্সট্রা জোর দেয় সিনথিয়া। ইনফ্যাক্ট তোমাদের বিয়ের বয়সের থেকে আমাদের প্রেমের বয়স বেশি। সাবরিনা আবার বলে প্রেম করে কি সব জানা যায়? আর বিয়ের কথা উঠলে অনেক রকম কম্পাটিবিলিটি ইস্যুজ আছে। সব কিছু ভাবার জন্য একটু সময় নে। আমি তো মানা করছি না বিয়ে করতে, খালি হুড়োহুড়ি করতে নিষেধ করছি। সিনথিয়া বলে হুড়োহুড়ি করলাম কই আমি? এর আগেও ওর কথা আরেকবার বলেছিলাম তোমাদের। তখন তোমরা আমার কথা শুনতেও চাও নি। এমনকি একটা ছবিও দেখতে চাও নি ওর। ওর বাবা কি করে শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে উড়িয়ে দিয়েছিলে সবাই। আম্মু, তুমি, ফুফু কেউ শুনতেও চাও নি কথা। আব্বু একটু আমার কথা শুনছিল দেখে তুমি আব্বু কে ঝাড়ি দিয়েছিলে, মনে আছে? ফুফু বলেছিল আব্বু কে যে ভাইয়া তুমি এইসব ব্যাপারে কথা বলো না। আর এখন দেখ। ফুফু কে বিপদের দিনে কে হেল্প করেছে। অফিসে তোমার ঝামেলায় কে পাশে দাড়িয়েছে। সিনথিয়ার কথায় যুক্তি আছে। তবে সাবরিনা যা জানে সিনথিয়া তা জানে না। সাবরিনা আমতা আমতা করে। এ যেন অগ্নিসংকট। সিনথিয়া কে কিছু বললে সিনথিয়ার সাথে ওর সম্পর্ক সারাজীবনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে আবার সিনথিয়া কে কিছু না বললে মাহফুজের সাথে সিনথিয়ার বিয়ে হয়ে যাবে, সেক্ষত্রে মাহফুজ কে বারবার দেখতে হবে যতবার সিনথিয়ার বাসায় যাবে। সেটাও ওর জন্য অসম্ভব। যাই করুক শেষ পর্যন্ত লুজার ও। এইসব সময় মানুষ যা করে তাই করল সাবরিনা। মানুষ এইসব সময়ে আরেকটু দীর্ঘ করে প্রসেস। সত্যের মুখোমুখি হতে চায় না। মানুষ ভাবে আরেকটু দেরী করলে হয়ত নিজে থেকে সমস্যার সমাধান হবে। তাই সাবরিনা ভাবে আর কিছু বলবে না আপাতত এই ব্যাপারে। কারণ এই ব্যাপারে যত কথা হচ্ছে ওর বুকে চাপ বাড়ছে তত। আর সিনথিয়ার সাথে বেশি কথা বললে হয়ত বুকের চাপে স্বীকার করে ফেলবে সব। সাবরিনা তাই বলে এই শোনরে আমার অফিসের কাজ আছে একটু। পরে তোকে কল দিব। সিনথিয়া বলে তাহলে আমার উপর রাগ করে নেই তো? কি উত্তর দিবে সাবরিনা। বরং সাবরিনা ভয়ে আছে সব কিছু জানলে রেগে যাবে কিনা সিনথিয়া। তাই দ্রুত বলে আরে না, না। সিনথিয়া বলে আপু বিশ্বাস কর আরেকটু আগে বলতাম কিন্তু সব কিছু মিলিয়ে সময় হল না। তাই আম্মু কে প্রথম বলতে হয়েছে ফুফুর জন্য। আর আম্মু কে যখন বলেছি তখন আর তোকে বলব না কেন। তবে মাইন্ড করিস না আপু, সব কিছু যদি নরমাল হত তাহলে তোকে আগে বলতাম। সাবরিনা ভাবে সব কিছু নরমাল কি আদৌ হবে কখনো? সাবরিনা একটু চুপ থাকে। সিনথিয়া বলে স্যরি আপু তোকে আগে না বলার জন্য। তুই আমাকে সাপোর্ট দিবি তো। হঠাত করে যেন খেই ফিরে পায় সাবরিনা তাই জিজ্ঞেস করে কিসে? সিনথিয়া বলে আবার কিসে, আমার আর মাহফুজের বিয়েতে। সাবরিনার মনে হয় ওর মাথার ভিতর অনন্তকাল চলে গেছে কি উত্তর দিবে এটা ভেবে। এদিকে সাবরিনা কে চুপ দেখে সিনথিয়া আবার শুরু করে যে যদি সাবরিনা ওদের সাপোর্ট দেয়, আম্মু আর ফুফু, আর আব্বু কে বুঝায় তাহলে সারাজীবন ওর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে। সিনথিয়া ছোটকাল থেকে গলা নরম করে কাদো কাদো স্বরে সাবরিনার কাছে মিনতি করে যদি সে সাবরিনা থেকে আসলে কিছু চায়। এখনো তাই করছে। সাবরিনা বুঝে এটা সিনথিয়ার অনুনয়। সাবরিনার মনে বলে এই বিয়ে ভেংগে দিতে হবে। আবার মনের ভিতর ওর বোনের কষ্টের কথা ভেবে হাহাকার উঠে। তাই বলে আচ্ছা ভেবে দেখি, পরে বলব তোকে। সিনথিয়া বুঝে সরাসরি না করলেও পুরো হ্যা করল না সাবরিনা। আশাবাদী হয় সিনথিয়া। কারণ সিনথিয়া ধরে রেখেছিল শুনে প্রচন্ড রাগারাগি করবে সাবরিনা স্বভাবসুলভ ভাবে। তবে এখন হা না বললেও বকা দেয় নি, মাহফুজ কে নিয়ে একটা খারাপ কথা বলে নি। অবশ্য ওর জানার কথা না সাবরিনা নিজে ভয়ে আছে তাই এই ব্যাপারে বেশি কথা বাড়াচ্ছে না। সিনথিয়া তাই এই জয়টুকু মেনে নেয়। অবশ্য পরের ধাপটার জন্য মাহফুজ আছে। সেই প্রসংগে কথা টানে। বলে, আপু আরেকটা কথা আছে রাখার আগে। সাবরিনা ফোন রাখতে উদ্গ্রীব। যত তাড়াতাড়ি কম কথায় সিনথিয়ার সাথে কথা সারা যায়। সাবরিনা তাই বলে তাড়াতাড়ি বল, কি বলবি। সিনথিয়া বলে মাহফুজ আজকে আসবে তোর সাথে দেখা করতে। তোকে স্যরি বলবে আগে ওর পরিচয় না দেবার জন্য। তুই বেশি রাগারাগি করিস না। ওর কথা মনযোগ দিয়ে শুনিস। আগে যেমন তুই ভেবেছিস ও ভাল ছেলে দেখবি এখনো তাই মনে হবে। খালি আমার সাথে প্রেম করেছে দেখে বা আমার সাথে ওর সম্পর্ক লুকিয়েছে দেখে মাইন্ড করিস না প্লিজ। সাবরিনার মনে হয় সারা শরীর কাপছে। বুকের ভিতর হৃদপিন্ড বুঝি বের হয়ে যাবে। সাবরিনা ঠিক শুনেছি কিনা বুঝলা না তাই আবার জিজ্ঞেস করে মাহফুজ আসছে? সিনথিয়া বলে হ্যা। সাবরিনা দ্রুত বলে আজকে ওকে আসতে মানা করে দে, আমার অনেক কাজ আছে। আমি বরং তোকে বলব, ওকে কবে আসতে হবে। সিনথিয়া বুঝে সাবরিনা এড়াতে চাইছে। সাবরিনা এমন কিছু করবে আগেই জানত তাই একদম শেষ মূহুর্তে জানাচ্ছে। সিনথিয়া বলে আপু তুমি কিন্তু কথা রাখছ না। আর মাহফুজ গতকাল রাতে ঢাকা এসেছে। এসেই প্রথমে তোমার সাথে দেখা করতে আসছে। বুঝ এবার তোমাকে আমরা কতটা গূরুত্ব দেই। সাবরিনা মনে মনে ভাবে গূরুত্ব দেয় মাহফুজ নাকি ছাই। সাবরিনা বলে বললাম না ওকে মানা কর। সিনথিয়া বলে ও বাসা থেকে বের হয়েছে অনেকক্ষণ আগে। এতক্ষণে তোমার অফিসে পৌছে যাবার কথা। সাবরিনা কি করবে বুঝতে পারছে না। হাত পা কাপছে ওর রীতিমত। সাবরিনা বলে আমার আরেকটা কল আসছে সিনথিয়া। দরকারি কল, আমি তোকে পরে ফোন দিব এই বলে কলটা কেটে দেয়।