05-10-2024, 02:14 AM
(This post was last modified: 05-10-2024, 02:31 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ
সাবরিনার এই কয় দিন সারাক্ষণ মনে হচ্ছে বুকের ভিতর একটা জ্বালাপোড়া হচ্ছে। সাফিনা ওকে যেদিন থেকে সিনথিয়ার প্রেমিকের নাম বলল সেদিন থেকে। মাহফুজ??? মাহফুজ!!! সিনথিয়া আর মাহফুজ??? দেশের বাইরে বসে এমন একটা ধাক্কা খাবে ভাবে নি ও। কাকে জিজ্ঞেস করে শিওর হবে? সিনথিয়া কে ফোন দেওয়া যায় তবে ওর সাহস হয় নি। এরপরেও দুই দিন সিনথিয়ার সাথে কথা হয়েছে তবে ভুলেও মাহফুজের প্রসংগ তুলে নি ও। ওর মনে হচ্ছিল যেন চাপা দিয়ে রাখতে পারলে সব কিছু মুছে যাবে। ওর মা কে জিজ্ঞেস করে এরপর আরেকদিন। অনেকটা ছেলের খোজ নিচ্ছে বোনের জন্য এইভাবে প্রশ্ন করে আর কিছু জিনিস জেনেছে। সাফিনা তখন প্রশ্ন করেছিল তোর বোন কে জিজ্ঞেস করিস না কেন? এমনিতে তো এত খাতির, আমার নামে কত কথা বলিস দুইজনে। সাবরিনা কথা ঘুরিয়ে বলে ও তো প্রেমে পাগল, যা জিজ্ঞেস করব সব ভাল বলবে। তাই তোমার থেকে আগে শুনে রাখছি যাতে ওর সাথে কথা বলার সময় চেক করতে পারি। সাফিনা করিম বলেন আরে আমি কি ছেলে কে এখনো দেখেছি নাকি। নুসাইবা কে নিয়ে ঢাকা আসলে তখন দেখা করবে বলেছে সিনথিয়া। সাবরিনা বলে তুমি একটা ছবি দেখতে চাও নি? সাফিনা বলে আরে সিনথিয়া একটা ছবি পাঠাবে বলেছিল আর পরে পাঠায় নি। আর নুসাইবার এই সব সমস্যায় ছেলেটা এত সাহায্য করছে তাতে আমারো মনে হয় নি এখন এইসব ছবি নিয়ে এত কথা বলা ঠিক হবে। সাবরিনা বলে মা তুমি কি করছ? একজন উপকার করল মানে এই না যে আমরা তাকে আমাদের বাড়ির মেয়ে কে সারাজীবনের জন্য দিয়ে দিব। সাফিনা বলে কেউ কাউকে দিয়ে দিচ্ছে না সাবরিনা। তোমার বোন নিজেই এই ছেলে কে পছন্দ করে এনেছে। আর তুমি ভাল করে জান যে সিনথিয়া যে জেদি। এর আগে আমরা আর একবার মানা করেছি এই ছেলে নিয়ে, তখন ছবি দেখাতে চেয়েছিল ও মনে আছে। আমরাই বলেছি দেখব না। এখন এই ছেলে এত বড় একটা উপকার করছে লাইফের রিস্ক নিয়ে আর এখন তাই সরাসরি না করা কেমন দেখায়। আর হতেও পারে ছেলেটা ভাল। কে জানে। পলিটিক্স করলেও তো ভাল ছেলে হতে পারে নাকি। সাফিনার প্রতিটা কথা সাবরিনার বুকে ছুরির মত বিধে।
সাফিনার সাথে কথা হওয়ার পর সাবরিনা আর সাতদিন দেশের বাইরে ছিল। এই সাতদিন ওর প্রোগ্রামের লাস্ট উইক ছিল। কিছু ফাংশন ছিল বিদায়ের। এখানে নতুন পরিচয় হওয়া লোকরা ওকে খাওয়াতে নিয়ে গেছে। সবখানে হাসিমুখে প্রফশনালি গেছে। তবে ওর বুকে যে জ্বালাপোড়া এটা যেন বেড়েছে প্রতিটা দিন। ঘুম থেকে উঠলে প্রতিদিন বমি বমি লাগে। প্রচন্ড গ্যাস হয়। একবার ভেবেছিল প্রেগনেন্ট হয়ে গেল কিনা। কয়েক সাপ্তাহ আগে সাদমান ঘুরে গেছে। তখন ওদের বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে উত্তেজক সেক্স হয়েছে। এর মধ্যে একবার সাদমান কন্ডোম ছাড়াও করেছে। অবশ্য সাবরিনা পিল খায় নিয়মিত। তাই একটু কনফিউজ হয়ে গেছিল। বুকের জ্বালাপোড়া, গ্যাস হওয়া, সকালে বমি বমি। দশ লক্ষে একবার নাকি পিল ব্যর্থ হয়। ও কি সেই ব্যর্থ হওয়া কেসে পড়ে গেছে। একদিকে মাহফুজ নিয়ে এই ঝামেলা আবার হঠাত করে এর মাঝে প্রেগনেন্ট হলে কি হবে? ভাবতেও পারছিল না। পরে প্লেনে উঠার আগের দিন হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট কিনল দুইটা ভিন্ন কোম্পানির। দুইটা টেস্টেই সেইম রেজাল্ট। নেগেটিভ। অর্থায় প্রেগনেন্ট না। তার মানে এই বুকে জ্বালা পুরোটাই মাহফুজের সম্পর্কিত। প্লেনে উঠে পুরোটা সময় ভেবেছে ও। অন্য সময় প্লেনে উঠলে ঘুমায় না হলে মুভি দেখে তবে এইবার এইসব কিছুই করতে পারে নি। সারাটা সময় মাহফুজ, সিনথিয়া আর ওর নিজে কে নিয়ে চিন্তা করেছে। মাহফুজ শিওর জানে ও কে। কারণ কথা প্রসংগে মাহফুজ কে ও বলেছে ওর এক বোন আছে যে ইংল্যান্ডে পড়াশুনার জন্য আছে। মাহফুজ ওকে বোনের নামও জিজ্ঞেস করেছিল এইটা শিওর। সিনথিয়া নাম শুনে ওর মুখে অভিব্যক্তির কোন চেঞ্জ হয় নি সেটাও মনে আছে। তার মানে ও না জেনে মাহফুজের সাথে গেলেও মাহফুজ পুরোটা সময় জানত ও কে, সিনথিয়া আর ওর রিলেশন কি। এইটা প্লেনে চিন্তার সময় যত ভেবেছে তত হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। মাহফুজ, সিনথিয়া আর ও যখন মুখোমুখি দাঁড়াবে তখন কি হবে? যদি সিনথিয়া জেনে যায়? ক্ষমা করতে পারবে ওকে? বোন সুলভ যত রাগারাগি থাকুক না কেন ওদের মাঝে সাবরিনা জানে ওকে কতটা ভালবাসে সিনথিয়া। আর ও নিজেও জানে সিনথিয়া কে কতটা ভালবাসে। সিনথিয়া যাকে ভালবাসে তার সাথে কিভাবে এক বিছানায় যেতে পারল ও? ছি ছি ছি। নিজের উপর ঘেন্না হয়। আবার ভাবে ও তো জানত না মাহফুজ কে। তবে মাহফুজ জানত ও কে। কি বিশ্রী ব্যাপার। মাহফুজ কি আসলে সাইকোপ্যাথ? এক বোন কে বিয়ে করতে চাচ্ছে আর আরেক বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক। গা গুলিয়ে আসে ওর। প্রচন্ড রাগ হয় ওর মাহফুজের উপর।
দেশে এয়ারপোর্টে নামার পর নিজের বাসায় না গিয়ে মায়ের বাসায় রওনা দেয় সাবরিনা। সাদমান এসেছিল ওকে রিসিভ করতে। রিসিভ করার সময় নিজের চেহারাটা কষ্ট করে ঠিক করে। দুপুরের সময়। আজকে সাফিনার কলেজে ক্লাস থাকলেও আগে আগে চলে এসেছে মেয়ে আসবে বলে। সাবরিনার পছন্দের খাবার রান্না করেছে। বাসায় ঢুকে অনেকদিন দেখা হবার উচ্ছাসে মা কে জড়িয়ে ধরে। মেয়ে আর মেয়ে জামাই কে ভাল মত দু পুরের খাবার খাওয়ায় সাফিনা। অফিস ডে তে সাবরিনা কে রিসিভ করবে বলে হাফবেলা ছুটি নিয়ে বের হয়েছিল কিন্তু শেষবেলায় একটা গূরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে তাই লাঞ্চ শেষে বের হয়ে পড়ে সাদমান। মায়ের পাশে তাই ক্লান্ত সাবরিনা শুয়ে পড়ে। সাবিরিনার মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে সাফিনা এই কয়মাসের বিদেশে ওর দিন কেমন গেল সেইসব গল্প জিজ্ঞেস করতে থাকে। মা কে এইসব উত্তর দিতে দিতে সাবরিনার আবার বুকের ভিতর জ্বালাপোড়া শুরু হয়। মা যদি জানে কি অন্যায় করেছে ও তাহলে কি হবে। পরিবারের কেউ কি ওর মুখ দেখবে আর। এইটা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি বের হতে শুরু করে। সাফিনা অনেক দিন পর মেয়ে কে কাছে পেয়ে খুশি। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প করতে করতে হঠাত করে টের পান যে সাবরিনা কান্না করছে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করার জন্য শরীর দুলছে। অবাক হয়ে কারণ বুঝতে চেষ্টা করেন সাফিনা। বার বার জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে মা? সব ঠিক আছে? তোর শরীর ঠিক আছে? সাদমানের সাথে কোন ঝামেলা হয় নি তো? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের উত্তরে কান্না আটকাতে আটকাতে সাবরিনা উত্তর দেয়, নাহ কোন ঝামেলা হয় নি। সাফিনা বুঝে উঠতে পারেন না কি হয়েছে। কি জন্য এই অশ্রুবিয়োগ। মনের ভিতর পাপবোধ সাবরিনার চোখের পানি কে থামতে দিচ্ছে না। তবে ওর মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে আর প্রশ্নের ফুলঝুড়ি দেখে তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারল সাবরিনা। কেন কাদছে? পাপবোধের কারণে? এই উত্তর দিলে মা কে জানাতে হবে কিসের জন্য এই পাপবোধ। তাই দ্রুত নিজেকে সামলে নিল, বলল অনেক দিন তোমাকে দেখি না। আজকে তোমার পাশে শুয়ে হঠাত করে মনে হল যখন তুমি থাকবে না তখন এইভাবে কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। সাবরিনার উত্তর সাফিনার মনে কাপন ধরাল। মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলেন সাফিনা। এইবার দুইজনের চোখে অশ্রু। সাফিনার চোখে পানি মেয়ে তাকে কতটা ভালবাসে ভেবে আর সাবরিনার চোখে পানি নিজের পাপবোধ কাউকে বলতে না পারের ভারে।
এইভাবে দেশে আসার পর চারপাচ দিন কাটিয়ে দিল। সাদমান কে পাশে পাবার পর একটু হলেও ওর অস্থিরতা কাটছে। এমন না যে এর আগে মাহফুজ কে নিয়ে ভাবে নি, মাহফুজের সাথে ওর শারীরিক সম্পর্কের পুরোটাই কয়েক মাস আগের যখন ও দেশে ছিল। পাপবোধ তখনো মনে ছিল তবে এখনকার মত গ্রাস করে নি ওকে। সাদমান কে তাই আজকাল অতিরিক্ত মনযোগ দিচ্ছে। একবার এটাও বলল যে ওদের ফ্যামিলি নিয়ে অতিদ্রুত প্ল্যানিং করা দরকার। সাদমান আর সাবরিনা মিলে যে প্ল্যান শুরুতে করেছিল তাতে ওদের বাচ্চা নেবার জন্য আর দুই বছর ওয়েট করার কথা। সাবরিনার বয়স মোটে ২৬। আইবিএ থেকে দ্রুত বের হবার কারণে অল্প বয়সেই চাকরিতে ঢুকেছে। তবে বাচ্চা নেবার আগে অন্তত আরেকটা প্রমোশন নিবে এটা ভেবেছিল। কিন্তু আজকাল পাপবোধ থেকে হোক বা হঠাত মনে আসা নানা দুশ্চিন্তার কারণে সাবরিনার মনে হচ্ছে দ্রুত একটা বাচ্চা নেবার দরকার। তাহলে হয়ত সাদমানের সাথে ওর সম্পর্ক আর দৃঢ় হবে। সাদমান বাচ্চা নেবার কথা শুনে খুশি হলেও বলল আর মাস ছয়েক ওয়েট করলে ভাল হবে। আর সাবরিনা মাত্র একটা বড় এসাইনমেন্ট শেষ করে এসেছে। বলা যায় না হয়ত অফিস ওর প্রমোশনের টাইমলাইন এগিয়ে আনতে পারে বা বড় কোন দ্বায়িত্ব দিতে পারে। সাবরিনা বুঝে যে সাদমানের কথায় ভ্যালু আছে। এই সময়টা ইম্পোর্টেন্ট। আর এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। সাবরিনার অনেক ফ্রেন্ডের এখনো বিয়ে পর্যন্ত হয় নি। তাই সাদমানের সাথে কথা বলে ঠিক করে আগামী এক বছর পর ওরা ট্রাই করা শুরু করবে।
সাবরিনার এই কয় দিন সারাক্ষণ মনে হচ্ছে বুকের ভিতর একটা জ্বালাপোড়া হচ্ছে। সাফিনা ওকে যেদিন থেকে সিনথিয়ার প্রেমিকের নাম বলল সেদিন থেকে। মাহফুজ??? মাহফুজ!!! সিনথিয়া আর মাহফুজ??? দেশের বাইরে বসে এমন একটা ধাক্কা খাবে ভাবে নি ও। কাকে জিজ্ঞেস করে শিওর হবে? সিনথিয়া কে ফোন দেওয়া যায় তবে ওর সাহস হয় নি। এরপরেও দুই দিন সিনথিয়ার সাথে কথা হয়েছে তবে ভুলেও মাহফুজের প্রসংগ তুলে নি ও। ওর মনে হচ্ছিল যেন চাপা দিয়ে রাখতে পারলে সব কিছু মুছে যাবে। ওর মা কে জিজ্ঞেস করে এরপর আরেকদিন। অনেকটা ছেলের খোজ নিচ্ছে বোনের জন্য এইভাবে প্রশ্ন করে আর কিছু জিনিস জেনেছে। সাফিনা তখন প্রশ্ন করেছিল তোর বোন কে জিজ্ঞেস করিস না কেন? এমনিতে তো এত খাতির, আমার নামে কত কথা বলিস দুইজনে। সাবরিনা কথা ঘুরিয়ে বলে ও তো প্রেমে পাগল, যা জিজ্ঞেস করব সব ভাল বলবে। তাই তোমার থেকে আগে শুনে রাখছি যাতে ওর সাথে কথা বলার সময় চেক করতে পারি। সাফিনা করিম বলেন আরে আমি কি ছেলে কে এখনো দেখেছি নাকি। নুসাইবা কে নিয়ে ঢাকা আসলে তখন দেখা করবে বলেছে সিনথিয়া। সাবরিনা বলে তুমি একটা ছবি দেখতে চাও নি? সাফিনা বলে আরে সিনথিয়া একটা ছবি পাঠাবে বলেছিল আর পরে পাঠায় নি। আর নুসাইবার এই সব সমস্যায় ছেলেটা এত সাহায্য করছে তাতে আমারো মনে হয় নি এখন এইসব ছবি নিয়ে এত কথা বলা ঠিক হবে। সাবরিনা বলে মা তুমি কি করছ? একজন উপকার করল মানে এই না যে আমরা তাকে আমাদের বাড়ির মেয়ে কে সারাজীবনের জন্য দিয়ে দিব। সাফিনা বলে কেউ কাউকে দিয়ে দিচ্ছে না সাবরিনা। তোমার বোন নিজেই এই ছেলে কে পছন্দ করে এনেছে। আর তুমি ভাল করে জান যে সিনথিয়া যে জেদি। এর আগে আমরা আর একবার মানা করেছি এই ছেলে নিয়ে, তখন ছবি দেখাতে চেয়েছিল ও মনে আছে। আমরাই বলেছি দেখব না। এখন এই ছেলে এত বড় একটা উপকার করছে লাইফের রিস্ক নিয়ে আর এখন তাই সরাসরি না করা কেমন দেখায়। আর হতেও পারে ছেলেটা ভাল। কে জানে। পলিটিক্স করলেও তো ভাল ছেলে হতে পারে নাকি। সাফিনার প্রতিটা কথা সাবরিনার বুকে ছুরির মত বিধে।
সাফিনার সাথে কথা হওয়ার পর সাবরিনা আর সাতদিন দেশের বাইরে ছিল। এই সাতদিন ওর প্রোগ্রামের লাস্ট উইক ছিল। কিছু ফাংশন ছিল বিদায়ের। এখানে নতুন পরিচয় হওয়া লোকরা ওকে খাওয়াতে নিয়ে গেছে। সবখানে হাসিমুখে প্রফশনালি গেছে। তবে ওর বুকে যে জ্বালাপোড়া এটা যেন বেড়েছে প্রতিটা দিন। ঘুম থেকে উঠলে প্রতিদিন বমি বমি লাগে। প্রচন্ড গ্যাস হয়। একবার ভেবেছিল প্রেগনেন্ট হয়ে গেল কিনা। কয়েক সাপ্তাহ আগে সাদমান ঘুরে গেছে। তখন ওদের বিবাহিত জীবনের সবচেয়ে উত্তেজক সেক্স হয়েছে। এর মধ্যে একবার সাদমান কন্ডোম ছাড়াও করেছে। অবশ্য সাবরিনা পিল খায় নিয়মিত। তাই একটু কনফিউজ হয়ে গেছিল। বুকের জ্বালাপোড়া, গ্যাস হওয়া, সকালে বমি বমি। দশ লক্ষে একবার নাকি পিল ব্যর্থ হয়। ও কি সেই ব্যর্থ হওয়া কেসে পড়ে গেছে। একদিকে মাহফুজ নিয়ে এই ঝামেলা আবার হঠাত করে এর মাঝে প্রেগনেন্ট হলে কি হবে? ভাবতেও পারছিল না। পরে প্লেনে উঠার আগের দিন হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট কিনল দুইটা ভিন্ন কোম্পানির। দুইটা টেস্টেই সেইম রেজাল্ট। নেগেটিভ। অর্থায় প্রেগনেন্ট না। তার মানে এই বুকে জ্বালা পুরোটাই মাহফুজের সম্পর্কিত। প্লেনে উঠে পুরোটা সময় ভেবেছে ও। অন্য সময় প্লেনে উঠলে ঘুমায় না হলে মুভি দেখে তবে এইবার এইসব কিছুই করতে পারে নি। সারাটা সময় মাহফুজ, সিনথিয়া আর ওর নিজে কে নিয়ে চিন্তা করেছে। মাহফুজ শিওর জানে ও কে। কারণ কথা প্রসংগে মাহফুজ কে ও বলেছে ওর এক বোন আছে যে ইংল্যান্ডে পড়াশুনার জন্য আছে। মাহফুজ ওকে বোনের নামও জিজ্ঞেস করেছিল এইটা শিওর। সিনথিয়া নাম শুনে ওর মুখে অভিব্যক্তির কোন চেঞ্জ হয় নি সেটাও মনে আছে। তার মানে ও না জেনে মাহফুজের সাথে গেলেও মাহফুজ পুরোটা সময় জানত ও কে, সিনথিয়া আর ওর রিলেশন কি। এইটা প্লেনে চিন্তার সময় যত ভেবেছে তত হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। মাহফুজ, সিনথিয়া আর ও যখন মুখোমুখি দাঁড়াবে তখন কি হবে? যদি সিনথিয়া জেনে যায়? ক্ষমা করতে পারবে ওকে? বোন সুলভ যত রাগারাগি থাকুক না কেন ওদের মাঝে সাবরিনা জানে ওকে কতটা ভালবাসে সিনথিয়া। আর ও নিজেও জানে সিনথিয়া কে কতটা ভালবাসে। সিনথিয়া যাকে ভালবাসে তার সাথে কিভাবে এক বিছানায় যেতে পারল ও? ছি ছি ছি। নিজের উপর ঘেন্না হয়। আবার ভাবে ও তো জানত না মাহফুজ কে। তবে মাহফুজ জানত ও কে। কি বিশ্রী ব্যাপার। মাহফুজ কি আসলে সাইকোপ্যাথ? এক বোন কে বিয়ে করতে চাচ্ছে আর আরেক বোনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক। গা গুলিয়ে আসে ওর। প্রচন্ড রাগ হয় ওর মাহফুজের উপর।
দেশে এয়ারপোর্টে নামার পর নিজের বাসায় না গিয়ে মায়ের বাসায় রওনা দেয় সাবরিনা। সাদমান এসেছিল ওকে রিসিভ করতে। রিসিভ করার সময় নিজের চেহারাটা কষ্ট করে ঠিক করে। দুপুরের সময়। আজকে সাফিনার কলেজে ক্লাস থাকলেও আগে আগে চলে এসেছে মেয়ে আসবে বলে। সাবরিনার পছন্দের খাবার রান্না করেছে। বাসায় ঢুকে অনেকদিন দেখা হবার উচ্ছাসে মা কে জড়িয়ে ধরে। মেয়ে আর মেয়ে জামাই কে ভাল মত দু পুরের খাবার খাওয়ায় সাফিনা। অফিস ডে তে সাবরিনা কে রিসিভ করবে বলে হাফবেলা ছুটি নিয়ে বের হয়েছিল কিন্তু শেষবেলায় একটা গূরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে তাই লাঞ্চ শেষে বের হয়ে পড়ে সাদমান। মায়ের পাশে তাই ক্লান্ত সাবরিনা শুয়ে পড়ে। সাবিরিনার মাথার চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে সাফিনা এই কয়মাসের বিদেশে ওর দিন কেমন গেল সেইসব গল্প জিজ্ঞেস করতে থাকে। মা কে এইসব উত্তর দিতে দিতে সাবরিনার আবার বুকের ভিতর জ্বালাপোড়া শুরু হয়। মা যদি জানে কি অন্যায় করেছে ও তাহলে কি হবে। পরিবারের কেউ কি ওর মুখ দেখবে আর। এইটা ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি বের হতে শুরু করে। সাফিনা অনেক দিন পর মেয়ে কে কাছে পেয়ে খুশি। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প করতে করতে হঠাত করে টের পান যে সাবরিনা কান্না করছে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করার জন্য শরীর দুলছে। অবাক হয়ে কারণ বুঝতে চেষ্টা করেন সাফিনা। বার বার জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে মা? সব ঠিক আছে? তোর শরীর ঠিক আছে? সাদমানের সাথে কোন ঝামেলা হয় নি তো? অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে? সব গুলো প্রশ্নের উত্তরে কান্না আটকাতে আটকাতে সাবরিনা উত্তর দেয়, নাহ কোন ঝামেলা হয় নি। সাফিনা বুঝে উঠতে পারেন না কি হয়েছে। কি জন্য এই অশ্রুবিয়োগ। মনের ভিতর পাপবোধ সাবরিনার চোখের পানি কে থামতে দিচ্ছে না। তবে ওর মায়ের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে আর প্রশ্নের ফুলঝুড়ি দেখে তাড়াতাড়ি নিজের ভুল বুঝতে পারল সাবরিনা। কেন কাদছে? পাপবোধের কারণে? এই উত্তর দিলে মা কে জানাতে হবে কিসের জন্য এই পাপবোধ। তাই দ্রুত নিজেকে সামলে নিল, বলল অনেক দিন তোমাকে দেখি না। আজকে তোমার পাশে শুয়ে হঠাত করে মনে হল যখন তুমি থাকবে না তখন এইভাবে কে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। সাবরিনার উত্তর সাফিনার মনে কাপন ধরাল। মেয়ে কে জড়িয়ে ধরলেন সাফিনা। এইবার দুইজনের চোখে অশ্রু। সাফিনার চোখে পানি মেয়ে তাকে কতটা ভালবাসে ভেবে আর সাবরিনার চোখে পানি নিজের পাপবোধ কাউকে বলতে না পারের ভারে।
এইভাবে দেশে আসার পর চারপাচ দিন কাটিয়ে দিল। সাদমান কে পাশে পাবার পর একটু হলেও ওর অস্থিরতা কাটছে। এমন না যে এর আগে মাহফুজ কে নিয়ে ভাবে নি, মাহফুজের সাথে ওর শারীরিক সম্পর্কের পুরোটাই কয়েক মাস আগের যখন ও দেশে ছিল। পাপবোধ তখনো মনে ছিল তবে এখনকার মত গ্রাস করে নি ওকে। সাদমান কে তাই আজকাল অতিরিক্ত মনযোগ দিচ্ছে। একবার এটাও বলল যে ওদের ফ্যামিলি নিয়ে অতিদ্রুত প্ল্যানিং করা দরকার। সাদমান আর সাবরিনা মিলে যে প্ল্যান শুরুতে করেছিল তাতে ওদের বাচ্চা নেবার জন্য আর দুই বছর ওয়েট করার কথা। সাবরিনার বয়স মোটে ২৬। আইবিএ থেকে দ্রুত বের হবার কারণে অল্প বয়সেই চাকরিতে ঢুকেছে। তবে বাচ্চা নেবার আগে অন্তত আরেকটা প্রমোশন নিবে এটা ভেবেছিল। কিন্তু আজকাল পাপবোধ থেকে হোক বা হঠাত মনে আসা নানা দুশ্চিন্তার কারণে সাবরিনার মনে হচ্ছে দ্রুত একটা বাচ্চা নেবার দরকার। তাহলে হয়ত সাদমানের সাথে ওর সম্পর্ক আর দৃঢ় হবে। সাদমান বাচ্চা নেবার কথা শুনে খুশি হলেও বলল আর মাস ছয়েক ওয়েট করলে ভাল হবে। আর সাবরিনা মাত্র একটা বড় এসাইনমেন্ট শেষ করে এসেছে। বলা যায় না হয়ত অফিস ওর প্রমোশনের টাইমলাইন এগিয়ে আনতে পারে বা বড় কোন দ্বায়িত্ব দিতে পারে। সাবরিনা বুঝে যে সাদমানের কথায় ভ্যালু আছে। এই সময়টা ইম্পোর্টেন্ট। আর এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। সাবরিনার অনেক ফ্রেন্ডের এখনো বিয়ে পর্যন্ত হয় নি। তাই সাদমানের সাথে কথা বলে ঠিক করে আগামী এক বছর পর ওরা ট্রাই করা শুরু করবে।