05-09-2024, 11:58 PM
(This post was last modified: 06-09-2024, 10:32 AM by বহুরূপী. Edited 5 times in total. Edited 5 times in total.)
পর্ব ২২
সুতরাং হেমলতা ও সঞ্জয়ের ব্যাপারটা জানাজানি হবার পর পরই,মুরুব্বিদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ চরণ ঘোষ নয়নতারার পিতারকানে একটু অন্যরকম করেই তুলে ধরল। মানে যেভাবে বলল গৃহস্থের ও গৃহকর্তার মান সম্মানে আঘাত করে না,সেই ভাবে।
চরণ ঘোষের মুখে সঞ্জয়ের সাথে হেমলতার বিবাহের প্রস্তাব শুনে, তিনি এই ব্যাপারে বড় মেয়ে নয়নতারার সাথে দুপুরের খানিক আলোচনা করলেন।
আলোচনা এই যে হেমলতার বিবাহের প্রস্তাব একটি নয়।বেশ কিছুদিন আগেই নয়নতারার মাতা যে পত্র দিয়াছিলেন। তাতে আর একটি পাত্রের বর্ণনা দেওয়া ছিল। এবং বর্ণনা অনুযায়ী মাস্টার মশাইয়ের বুঝতে অসুবিধা হয়নি পাত্রটি জমিদার বাড়ির গোবিন্দ লাল। তবে তিনি আপাতত কোন সিদ্ধান্ত নিতে আগ্রহী নন।
কিন্তু নয়নতারার এই আলোচনা শুনিবার পর খানিক চিন্তিত হইয়া পরিলো। কারণটি এই যে,কলকাতায় তার প্রেরিত চিঠির কোন উত্তর এখনও আসেনি।
জ্যৈষ্ঠের দুপুরে বারান্দায় বসে নয়নতারা বৃষ্টিস্নাত জামগাছটার দিকে তাকিয়ে ছিল। বাবু ও নয়নের পিতা ভেতরের ঘরে ঘুম দিয়েছে সেই খাওয়া দাওয়ার পর থেকে। নয়নতারার খাওয়া হয়নি এখনো। কারণটি হয়তো সঞ্জয় দুপুরে খেল না বলে,অথবা তার নিজেই খাবার ইচ্ছে নেই বলে।
ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির জল জমছে উঠনে। যদিও উঠনে বৃষ্টির জল জমার কথা নয়। পেছনের দিকে দেয়ালের নিচে জল নেমে যাবার একটা পথ করা আছে। কিন্তু কোন কারণে জল নামছে না।
নয়নতারার সেই কারণটি এই মুহূর্তে জানবার ইচ্ছে হচ্ছিল। কিন্তু এই বৃষ্টিতে একটু নামলেই কাক ভেজা হয়ে যাবে। এমন বৃষ্টিতে সঞ্জয় বাড়ি কিভাবে এল হঠাৎ এই ভাবনা নয়নতারার মনে উদয় হলো। এই বৃষ্টিতে শুধু শুধু ভিজবার কি দরকার ছিল? এমনতো নয় সে বাড়িতে ক্ষুধার তারনায় এসেছে। স্নান সেরে কিছু মুখে না তুলেই তো দোতলায় উঠে গেল। ভাবতে ভাবতে সে উঠে দাঁড়িয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ালো।
দোতলার মেঝে ভেজা। ঠান্ডা মেঝেতে হাটার সময় শরীরে কেমন শিরশির ভাব চলে আসছে। বাইরের প্রকৃতি খানিকটা উত্তালই বলা চলে। হাওয়া খুব বেশি না হলেও, তার ঝাপটায় গায়ে জল লাগছে।
সঞ্জয়ের কক্ষের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ভেতরে তাকাতেই খালি বিছানা চোখে পরল নয়নতারার। সঞ্জয় তার পাশেই চেয়ায়ে বসে আছে। হাতে ওপরে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে। দুপুরে আসার পর থেকেই শরীর খারাপ বলে কিছু মুখে তোলেনি। এখন এই রকয অবস্থা দেখা নয়নের চিন্তিত হওয়া ছাড়া উপায় কি!
নয়নতারা এগিয়ে যেতেই দেখলো,সঞ্জয় টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। নয়নতারা কপালে হাত ছোয়ালো। তার হাতের ছোঁয়াতে ঘুমন্ত সঞ্জয় একবার কেঁপে উঠলো,তবে ঘুম ভাঙলো না।
না, সঞ্জয় অসুস্থ বলে মনে হলো না। খানিকক্ষণ সঞ্জয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নয়নতারা ভাবছিল ডাকবে কি না। তবে ডাকা হলো না। তার বদলে নয়নতারা সঞ্জয়ের এলোমেলো চুলে হাত বোলাতে বোলাতে টেবিলে লাগোয়া জানলার বাইরে তাকিয়ে রইলো।
এই জানলা দিয়ে তালতলার পথ, মাঝি পাড়ার পথ ও তার মাঝে চায়ের দোকানটি দেখা যায়। ঝমঝম বৃষ্টি হচ্ছে। তার মাঝেই একটি সাইকেল করে দুটি নারীপুরুষ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যাচ্ছে। পেছন বসা মেয়েটি যদিও একটা ছাতি ধরে আছে।তবুও বাতাসের ঝাপটায় বৃষ্টি ঠিকই তাদের ভিজিয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হয়। এই ব্যর্থ প্রচেষ্টায় না জানি বেচারী বউটাকেই বাড়ি পৌঁছে কথা শুনতে হবে। দেখতে দেখতে সাইকেলটি চোখের আড়ালে চলে গেল। চায়ের দোকান সামনেটা খালি, লোকজন সব ভেতরের দিকে ঢুকে পরেছে। মাঝি পাড়ার পথ ধরে কয়েকটি ছেলে উদোম গায়ে ছুটে যাচ্ছে,গন্তব্য হয়তো নদী তীর। নয়নতারা নিজেও ধিরে ধিরে বেড়িয়ে এলো। সিঁড়ির কাছটায় এসে নিজের মনে খানিক কি যেন ভাবলো, তারপর সোজা উঠেগেল ছাদে।
ঘরের ভেতরটা আবছা অন্ধকার। বাইরে এখনো বৃষ্টি পরছে।অবিরাম বারিধারা যেন সব ভাসিয়ে দেবার উদেশ্যে নেমে এসেছে আজ। এই বৃষ্টি যেন আষাঢ়ের আগমনের অগ্রিম বার্তা। নয়নতারা আলো জ্বালল ঘরে। সঙ্গে সঙ্গে আরশীতে বিকশিত হল তাঁর প্রতিবিম্ব। লম্বাটে দেহে ভেজা শাড়িটা লেপ্টে গেছে একদমই। প্রতিবিম্বের দিকে তাকালে সহজেই চোখে পরছে তার দেহের উচুঁ নিচু উপত্যকার আভাস। দেহের কোথাও কোথাও পাতলা মেদ জমে তা আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। একগাদা নিতম্ব ছাড়ানাে চুল থেকে চুয়ে চুয়ে জল গড়িয়ে পরছে মেঝেতে। ঠান্ডা জলের স্পর্শে যে শীতলতা, তাতেই অল্প কম্পন ধরেছিল নয়নতারার দেহে। কিন্তু বুকের ভেতর এক উত্তাল ঢেউ খেলে বেরাছে। সেটি থামবার কোন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না।
আরশীর নারী প্রতিবিম্বের বুকে এক সময় মেঝেতে লুটিয়ে পরলো। আরশীতে নিজে ঐ রূপ দেখে নিকে সামলানো মুসকিল হয়ে পরেছে। নয়নতারার ভেজা দেহে তার নিজের হাত দুখানিই অশ্লীল ভঙ্গিমায় হাতড়ে বেরাতে শুরু করছে ইতিমধ্যে।।।ঘনসন্নিবিষ্ট তার সুডৌল দুটি বুক হাপরের মতো ওঠানামা করছে। কালো রঙের এই কাঁচুলির বাঁধনে তারা যেন আর বাঁধা থাকতে চায় না। বৃষ্টিস্নাত দেহে বিন্দু বিন্দু উজ্জ্বল জলকণা তার সুউচ্চ কুচযুগ বেয়ে ধীরগতিতে গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে রোমাবৃত নাভিবিন্দুর দিকে। কাঁচুলির ওপড়ে পাঁচটি আঙ্গুলের চাপ আর সহ্য করতে না পেরেই হয়তো; তার সুউচ্চ স্তনযুগল কাঁচুলির গলা ফুরে বেরিয়ে আসছে চাইছে। বাঁ হাতটি নেমে যাচ্ছিল আরও নিচে। দুই উরুর সংযোগস্থলে হাত পরতেই নয়নতারার আয়ত চোখে যেন আনন্দের বান ডাকল। “আহহ্” মুখ দিয়ে বের হল তীব্র চীৎকার। কতটুকু সময় গেল তার হিসেব কে রাখে! এক সময় সুখের আবেশে নয়নতারার দুই চোখ বুঝে এলো।বন্ধ চোখের পাতায় কার মুখখানি সে কল্পনা দ্বারা এঁকে চলছে! তার বোঝা গেল না।
নয়নতারা আপন মনে আরশীর সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা কাপড়ে ছেড়ে, সবেমাত্র সবুজ এখানা শাড়ি জড়িছে দেহে। এমন সময় ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখখানি ওপড়ে তুলতেই আতকে উঠলো সে। তার কক্ষের দরজা খোলা। আর খোলা দরজা একপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সঞ্জয়। এই দৃশ্য দেখে ক্রোধে নয়নতারার দুই চোখ জ্বলে উঠলো। তা কয়েকদিন ধরে নয়নতারা প্রশ্রয় দিছিল সঞ্জয়কে, বলতে বাধা নেই একটু বেশিই দিচ্ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে নয়নতারার রাগের মুখেই পড়তে হলো সঞ্জয়কে।
– বারে, সব দোষ আমার কেন হবে? তুমি দোর খোলা রাখলে বলেই তো চোখে পরলো, নয় তো আমি শুধু খিদে পেয়েছে বলে ডাকতে এলাম সবেমাত্র। তাছাড়া তুমি তো দিব্যি কাপড় পড়ে সেজেগুজে বসে আছো। এত লজ্জা কিসের তোমার?
কথা সত্য,ঘুম ভাঙার পর পর ক্ষুধা নিবারণের উদেশ্যে নিচে নেমে এসেছিল সঞ্জয়। তারপর দোর খোলা পেয়ে নয়নতারার কক্ষের সামনে হাজির। এরপর ভেতরের দৃশ্য দেখে খানিকটা থতমত খেয়েই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল সে। তবে খুব বেশি কিছু দেখেনি হয়তো। ওই আয়নায় যতটুকু চোখে পরে আর কি।তবে নয়নতারার রাগের ওপরে ওসবকি আর বলা চলে নাকি! উল্টো অভিমান দেখিয়ে খাবার না খেয়েই বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে। যদিও বৃষ্টি এখনো থামেনি, তবে কমে এসেছে অনেকটাই।
বিছানায় এক পাশে বসে থেকে নয়নতারা ভাবছিল। দরজা খোলা রাখাটা তারই ভুল। সত্যি যদি সঞ্জয় তাকে উদোম অবস্থা না দেখে থাকে! একথা মনে হতেই তার রাগ কমে এলো। মনে মনে ভাবলো,বেচারা ক্ষুধার্ত দেবরটিকে ওভাবে কথা শোনানো টা অন্যায় হয়েছে তার।
খানিকক্ষণ পরেই তার পিতার কাছ থেকে বাবুকে কোলে করে বৈঠক ঘর থেকে বেরিয়ে এলো সে। তারপর নূপুরের রুনুঝুনু আওয়াজ তুলে দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগলো সে। তবে সঞ্জয়ের ঘর খালি দেখে তার মনের অপরাধবোধটা আরো চেপে বসলো যেন। মন খারাপ ভাব নিয়েই নিজের ঘরে ফেরতে হলো নয়নতারাকে।
এক সময় সূর্য পশ্চিমে ঢলে পরে সন্ধ্যা নামলো। খানিক আগেই আসর ভেঙে পাড়ার মেয়েরা যে যার ঘরে ফিরেছে। সন্ধ্যা নামতেই নয়নতারাও তার কাজে মননিবেশ করলো। তবে সে ভেতর ভেতর সঞ্জয়ের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছে। সঞ্জয়ের সন্ধ্যায় ফেরার কথা। কিন্তু এক সময় সন্ধ্যা পেরিয়ে চারদিক অন্ধকার করে এলো। রাত গভীর হয়ে ক্রমে আট'টা এবং দেখতে দেখতে নয়'টা ছাড়িয়ে গেল। কিন্ত সঞ্জয়ের ফেরার নাম নেই। ধীরে ধীরে নয়নতারার মন ব্যাকুল হয়ে উঠলো। তবে কি বিনা দোষে সে সঞ্জয়ের মনে আঘাত দিল?
সমস্ত রাগটা এবার পরলো নিজের ওপড়ে। এক সাথে দুটি পুরুষের মনে সে রাখে কি উপায়ে। চিন্তা-ভাবনা কিছুই কাজ করছে না তার। সোহম যেমনটি হোক না কেন, তার স্বামী যে তার প্রতি কতটা দূর্বল সে নয়নতারার অজানা নয়। নয়নতারা নিজেও স্বামী ছাড়া অন্য কারো কথা ভাবতে পারেনি কখনোই।
সোহম নিতান্তই বিরস পুরুষ মানুষ। প্রেম ভালোবাসা বা সাংসারিক সাধারণ রসবোধটুকুর কিছুই বিশেষ নেই তার মাঝে। তার ওপড়ে কিছু বাজে বন্ধু জুটিয়ে মদ,জুয়ার অভ্যেস কে আপন করে নেয় সে। তারপরেও নয়নতারার জীবন মন্দ ছিল না। শারীরিক চাহিদা স্বামীর কাছে ও হৃদয়ের চাহিদা টুকু সঞ্জয়কে দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছিল সে। কখনো ভাবতেও পারেনি কোন এক কালে এমন দোটানায় ভগবান ফেলবেন তাকে। যে শরীরে স্বামী ছাড়া অন্য কেউ কখনো স্পর্শ করেনি,এখন কিনা আরেকটা পুরুষ তার শরীরে হাত দিচ্ছে। আর শুধু হাত দিয়েই কি শান্তি হচ্ছে তার! সে যে একপ্রকার দলাই মলাই করেছে তার দেহটাকে। কিন্তু কি আশ্চর্য! তাতে নয়নতারা প্রতিবাদ তো করেনই নি উল্টো মৌন সমর্থন দিয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতেই নয়নতারার চোখের কোন আদ্র হয়ে এলো।
রাত্রি যখন আরো গভীর হয়ে,নয়নতারা তখন একখানি প্রদীপ জ্বালিয়ে রাস্তার কাছে পাচিল ঘেষে দাঁড়ায়। তার চোখে অশ্রু দাগ মেলায়নি এখনো। অশ্রুসিক্ত দুই চোখ কেউ কে এই অন্ধকার পথে খুঁজে চলেছে। অবশেষে রাত যখন বারোটা পেরিয়ে গেল, তখন এক অজানা ভয়ে হঠাৎই নয়নতারা মুখখানি বিবরণ হয়ে গেল। বুকের ভেতরে কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে শুরু করেছে। সে আর থাকতে না পেরে হাতের প্রদীপ ফেলে ছোটে তার বাবার ঘরের দিকে।
/////
সারা রাত্রি নয়নতারা ঘুমায় নাই। শেষ রাতের দিকে খবর হয়; সঞ্জয় ও পুলক দেবুকে সাথে নিয়ে নদীপথে গেছে মধুপুর সাস্থ্য কেন্দ্রে। মাঝি পাড়ার কোন এক বালক গাছের ডাল ভেঙে পরে গিয়ে পা ভেঙেছে। সেদিন নন্দলালের কাছে খবর পাওয়া মাত্রই সঞ্জয় নিজে ডাক্তার সাথে নিয়ে দেখে আসে। ব্যথায় এমন অবস্থা যে বিছানাতেই পাশ ফিরিতে পারে না। গতকাল ছেলেটি অবস্থা খারাপ হওয়াতেই শীঘ্রই তার ব্যবস্থা করতে তাদের মধুপুর যাত্রা।
দুপুরে দেবু ফেরে, কিন্তু নয়নতারার মন মানে না। তবুও মনের ভাবে মনে চেপে সে সংসারের কাজে মন লাগায়। সঞ্জয় ফিরতে ফিরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। তখন নয়নতারা বাবুকে কোলে নিয়ে জামগাছটার তলায় বসে আসে। এই সময়টা বেশিরভাগ সময় পাড়ার মেয়েদের আসর বসে এখানটায়। কিন্তু আজ নয়নতারার মনের অবস্থা বিশেষ ভালো না হওয়াতে আসর বসার আগেই উঠে গিয়েছিল।
সঞ্জয় বাড়ি ফিরে বেশ ক্লান্ত ভঙ্গিতে সিঁড়ির পাশটায় বসে পরে। তার পরেই চোখে পরে রান্নাঘরে পাশে জামগাছের তলায়। নয়নতারা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তারই দিকে। প্রথমে সঞ্জয় ব্যাপারটা বুঝতে না পারলেও,পরক্ষণেই নয়নতারার মুখপানে তাকিয়ে সিড়ি থেকে উঠে এগিয়ে যায় সে। নয়নতারার সামনে হাটুগেড়ে তার হাত দুখানি রাখে নয়নতারার গালের দুই পাশে। নয়নতারার চোখে চোখ পরে সঞ্জয়ের। পাখির নীড়ের মত সাজানো গোছানো নিখুত জোড়া আখি। যে চোখ এক টুকরো মিষ্টি হাসির যোগ্য সহযোগী, সেই চোখে এখন কেমন বিষাদময় অতৃপ্তি! ওই অনিন্দসুন্দর চোখ, ওই মায়াবী আকর্ষন হাহাকার জাগিয়ে তোলে সঞ্জয়ের মনে। তার মস্তিস্কের আধাধুসর কোষগুলো জট পাকিয়ে যেতে থাকে যেন। মাথার ভেতর চিনচিনে ব্যাথা অনুভব হয়। সৌন্দর্যের বিকিরনে এ কেমন প্রতিক্রিয়া? রাঙা ওষ্ঠাধরের মৃদু কম্পন জানিয়ে দেয় নয়নতারা কিছু বলতে চাইছে। কিন্তু ঠোঁটের কম্পন সহযোগে নাকের দুই পাশে কেমন ফুলে ফুলে উঠছে তার। তবে মুখ দিয়ে একটি বাক্য উচ্চারণ হচ্ছে না। সঞ্জয়ের এই দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য্য হয় না,সে বুকে টেনে নেয় নয়নতারাকে। কানের কাছটায় মুখ গুজে ফিসফিসিয়ে বলে,
– বড্ডো অন্যায় হয়ে গেছে বৌদিমণি। এবারকার মতো ক্ষমা কর লক্ষ্মীটি। আর এমনটি কখনোই হবে না।
অপরাধী যেই হউক,সঞ্জয়ের বুকে মাথা রেখে নয়নতারা চোখের জল সামলাইতে পারিল না। সঞ্জয়ের মিষ্টি কথা বা শান্তনা কোনটাই এইক্ষেত্রে কাজে লাগিলো না। অবশেষে সঞ্জয় নয়নতারার দেহকে বাহুপাশে আবদ্ধ করে এক নিষ্ঠুর চুম্বনের দ্বারা পিষ্ট করে নিলে তার অধরােষ্ঠকে। এতে নয়নতারার অশ্রু থামলেও আবারও রাগের উপ্রদব দেখা দিল। তবে সঞ্জয় নয়নতারাকে তার বাহুর বন্ধন থেকে মুক্ত করলো না,খানিকটা সময় তাকে জড়িয়ে সেখানেই বসে রইলো।
নয়নতারার নিজের কক্ষে খাটের ওপরে খাটের থালা হাতে বসিয়া। সঞ্জয় ঠিক তার পায়ের পাশেই মেঝেতে বাবু কোলে করিয়া বসিয়াছিল। আজ বহুদিন পর নিজ হাতে সঞ্জয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে দিতে অতিত জীবনের স্মৃতি মনে পরে নয়নতারার।
আজকের কথা নয় সে, নয়নতারার বিবাহের ছয়মাস পরের কথা। তখন তার বয়স পনেরো কি ষোল। সঞ্জয় তখন আট কি নয় বছরে বালক। সঞ্জয়ের সাথে দেখা হবার আগ পর্যন্ত নয়নতারা জানিত না তার একটি দেওর আছে। যখন জানিয়াছিল তখন তার বিস্ময়ের অন্ত ছিল না। প্রথম প্রথম সঞ্জয় তার কাছে ঘেষতো না। নয়নতারা স্বামী বা অন্য কেউ কাছে পিছে না থাকলেই তার দেখা মিলতো।সম্পূর্ণ ঘটনা বলার প্রয়োজন নয় বলেই মনে করি। তবে যেদিনকার ঘটনা সেদিন নয়নতারা মা কি একটা কারণে বাড়ির বাইরে ছিল। বাকিরা কেহই বাড়িতে না থাকিবার দরুন নয়নতারা সেদিন স্বামীর আদেশ অমান্য করিয়া সঞ্জয়কে কাছে ডাকিয়া ছিল। সঞ্জয় ধির পদক্ষেপ নাগালের মধ্যে আসতেই নয়নতারা তার একখানা হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। এবং তার সহিত ভাব জমানোর উদেশ্যে একখানা সন্দেশ হাতে দিয়া জিজ্ঞাসা করিয়াছিল,
– কি ওমন দেখা হয় প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে! বর হবে আমার?
সঞ্জয়ের হাতের সন্দেশ সমাপ্ত হইলে সে উত্তরে ওপড় নিচ সম্মতি সূচক মাথা নাড়ে। কি বুঝিয়া সঞ্জয়ের এই রূপ ভাব প্রকাশ কে জানে, বোধ হয় তাহার ধ্রুব বিশ্বাস জন্মিয়াছিল যে, বরে বুঝি কেবল সন্দেশই খায়। তবে আজ এতদিন পরে সেই স্মৃতি মনে পরতেই নয়নতারার মুখ খানিক রাঙা হয়ে উঠলো। অবশ্য সঞ্জয়ের চোখে এই দৃশ্য পরলো না। তবে এর পর থেকে নয়নতারা যেন সঞ্জয়ের কাছে আরও খানিকটা সহজ হয়ে এল। সুযোগের সৎ ব্যবহার কি করিয়া করিতে হয় সঞ্জয় তা জানিতো। আর তা জানিতো বলিয়াই পোড়া কপালি নয়নতারার যন্ত্রণা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতেই শুরু করলো। যেই কাজ নয়নতারা স্বামীও কোন কালে করে নাই, সঞ্জয় তাই করিতে আরম্ভ করিয়াছিল। দৈনিক সকাল- সন্ধ্যা হাটে যাবার ও আসবার সময় সে নয়নতারার চুম্বন এক রকম বাধ্যতামূলক করিয়া নিল। শত অপরাধবোধ অনুশোচনা থাকিবার পরেও কি করিয়া সেই নিষিদ্ধ আকর্ষণ জয়ী হইতো নয়নতারা তা বুঝিয়া উঠিতে পারিতো না।
আপাতত এটুকুই আগামীকাল লেখার সুযোগ হবে না,নয়তো আর একটু বড় করতাম আপডেট। তবে সমস্যা কি আপাতত এটা চলুক, তারপর.....