29-07-2024, 06:07 AM
পর্ব ১৭
মধ্যাহ্নের নীরবতায়, জামগাছটির ছায়াতে বসে, নয়নতারা তার শিশু পুত্রটির পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে স্তনদান করছিল। এই মায়ের মনের অবস্থা তার কোলের শিশুটির অবগত থাকার কথা নয়,তবুও অকারণেই শিশুটির কোমল হাতখানি মায়ের গলা স্পর্শ করায় নয়নতারার ভাবনায় বাধা পরলো। সেই ক্ষুদ্র হাতের কোমল স্পর্শ নয়নতারার ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করলেও, শিশুর হাস্যউজ্জ্বল মুখ দেখা মাত্রই তার মায়ের মুখেও হাসি ফুটলো। বাবু যে কখন স্তনপান ছাড়িয়া তার গলার মঙ্গলসূত্র খানি হাতে ধরে খেলে করছে, নয়নতারা ভবনার মাঝে তা টের পায় নাই।
আজ সকাল থেকেই নয়নতারার মনটি ভীষণ খারাপ। মন খারাপের কারণটি মোটেও ছোট নয়। নয়নতার কলকাতা হইতে ফিরিবার পর আজ অবধি তার ছোট মেয়ের মুখ দেখে নাই। যদিওবা মন্দিরার মায়ের থেকে মাসির টান বেশি,তাই বলিবা মায়ের মন আর কতখন মানে!
তার স্বামী অবশ্য তাকে ওবাড়ি নিতে ব্যাকুল। তবে এই প্রস্তাবে, নয়নতারা তার মনটিকে কিছুতেই রাজি করিতে পারিতেছে না। এইবাড়ি ছাড়ে যাবার কথা উঠলেই নয়নতারার বুকের মধ্যে কেমন করে ওঠে। না জানি কি করিয়া তার মনে এই সন্দেহ জাগিয়াছে যে; সেই এই বাড়ি ছাড়িলেই তার দেবরটির ভীষণ খারাপ কিছু হইতে পারে। তাছাড়া শশুরবাড়ির মাটিতে প্রথম বার পা রাখিয়া নয়নতারার মনে যে অনুভূতি জাগিয়াছিল, সেই অনুভূতির রেশ এখনো কাটে নাই।
নয়নতারা কাপড় ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। এক'পা দু'পা করে সিঁঁড়ির কাছটায় এসে একটু থামলো। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর উচ্চস্বরে দুই বার, "দেবু" "দেবু" ডাকে যখন কোন সারা শব্দ পেল না। তখন নিজেই সিঁড়ি ভাঙে দোতলায় উঠতে লাগলো।
গতকালকের ঘটনাটি বিশেষ কিছু নয়,এমন দুর্ঘটনা কি জগতে তার সাথে প্রথম! না জানি কতজনের সাথে নিত্য এমন ঘটনা ঘটে। সুতরাং এই সহজ ব্যাপারে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
তারপরেও গতরাতে এই সকল কথা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারার আর ঘুম হল না। তবুও ত সে ভেবে রেখে ছিল; সকালে এমন ভাব করবে যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু হায়! সকালে সঞ্জয়ের সামনে আসতেই তার যে কি হল!
সঞ্জয়ের সামনে লজ্জায় তার মুখে কোন কথা ফুটলো না। তারপর থেকে আর কোন কাজে নয়নতারা মন বসাতে পারে না, রান্নার সময় মাছের ঝোলে আলুর দমে গোটা গোটা আলু ছেড়ে খুন্তি দিয়ে তরকারির মতো ঘুটে দেয়। নুন দেওয়া হয়েছে কিনা মনে করতে পারে না।
পরে নুন হয়েছে কিনা দেখতে গিয়ে,খুন্তি টা উঁচু করে ঠান্ডা হবার সময় না দিয়েই একফোঁটা তপ্ত ঝোল জিভে ফেলে দেয়।এতে গরমের জ্বালাটাই সে টের পায়,নুনের স্বাদ পায় না।
শেষে দেবু'কে ডেকে না পেয়ে তার রাগ হয়। মোটের ওপড়ে কোনভাবেই সে গতকালের কথা ভুলতে না পাড়ায়, অবশেষে সে চেষ্টা বাদ দিয়ে সে কোন মতে রান্না সেরে বাবু কোলে নিয়ে বসেছিল। এখন হঠাৎ সঞ্জয় ক্ষুধার্ত মনে পড়াতে তার সেবাবৃত্তি জাগ্রত হয়ে উঠল।
তাই তো সে লজ্জা ভেঙে দোতলায় উঠে এসেছে।নয়নতারা ভালো ভাবেই জানে যে সঞ্জয়কে ডেকে না খাওয়ালে,সে নিজে থেকে খেতে আসবে না। সঞ্জয় একা মানুষ, এক দু'বেলা না খেয়ে থাকার অভ্যেস তার থাকতেই পারে, তাই বলে নয়নতারা এখানে থাকতে তা হবে কেন?
সঞ্জয় হাটে থেকে ফিয়েই নিজের ঘরে ঢোকে। কয়েদিন যাবত তার দিন ভালো কাটছে না,আজ আবার তার একটি দোকানে তালা দিতে হয়েছে। তার ওপড়ে এই গরমে উত্তপ্ত ও ঘর্মাক্ত দেহে সে যখন বাড়ি ফিরিলো,তখন স্নান করাটা বিশেষ প্রয়োজনীয় হলেও নয়নতারার সমুখে সে পড়তে চায় নাই। তার কারণে নয়নতারা বিব্রতবোধ করুক এটি তার অপ্রিয়।
দোতলায় উঠে নিজের ঘরে ঢুকেই খালি গায়ে সে বিছানায় দেহে এলিয়ে দিল। তারপর বৌদিমণির ডাকের অপেক্ষা করতে করতে সঞ্জয়ের চোখ এক সময় লেগে আসে।
কতখন সে ঘুমিয়েছে তার খেয়াল নেই। চোখ খোলার পর সমুখে নয়নতারাকে দেখে সঞ্জয় বুক থেকে যেন একটা ভার নেমে হালকা হয়ে আসে। সে সাবধানে পাশ ফিরে দেখতে থাকে নয়নতারার কি করছে।
নয়নতারা অবশ্য বিশেষ কিছু করছিল না। সে শান্তভাবে টেবিলের পাশে চেয়ারটায় বসে সঞ্জয়ের রেডিও টি নেড়েচেড়ে দেখছিল। অন্য দিকে বাবু কোলে শুয়ে তার মায়ের এক গাছি চুল নিয়ে খেলা করছিল।
নয়নতারার রেডিওতে বেশিক্ষণ মন ঠিকলো না,অবশ্য ঠিকবার কথাও নয়। ওটি শেষ কবে চলেছিল সঞ্জয় নিজেও জানে না,শুধুমাত্র বাবার শেষে স্মৃতি বলেই ওটি তার টেবিলে ঠাই পেয়েছে।
রেডিও রেখে দিয়ে নয়নতারা যখন সঞ্জয়ের খাতাপত্রে হাত দেয়, ঠিক তখনই অনাকাঙ্ক্ষিত এক হাঁচির শব্দে নয়নতারা মুখ ফেরায় বিছানার দিকে। খানিকক্ষণ নীরব দৃষ্টি বিনিময়ের পর,নয়নতারা মৃদুস্বরে জিগ্যেস করে,
– ফিরে এসে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ঘুমানো কোন? রাতের বেলা বাইরে এতো কি কাজ শুনি?
এই প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয় বিশেষ কিছুই বললো না। কারণ প্রশ্নকারি এর জবাব ভালো মতোই জানে।
সঞ্জয় স্নান করতে বেড়িয়ে গেলে,নয়নতারা বাবুকে বিছানায় শুয়েই দিয়ে টেবিলের ছড়ানো খাতাপত্রে গুলি গুছিয়ে রাখতে লাগলো। গোছানো শেষে একটি খাতা ও কলম হাতে নিয়ে বাবুকে কোলে করে সে নিচে নেমে সঞ্জয়ের খাবার আয়জন করতে লাগলো।
///////
তালতলার মাটির ঝোপে ঝোপে অন্ধকারে জোনাকিরা ঝাঁক বেঁধে জ্বলছিল। দূরে ক্ষেতের মাঝে কৃষক বস্তিতে দুই একটা ঘরে হাড়িকেনের মিটি মিটি আলোর আভা দেখিতে দেখিতে,সঞ্জয় একখানা সিগারেট ডান হাতের দু'আঙুলের ধরিয়া মাঝে মাঝে টানিতে ছিল।
কিছু সে ভাবছে বটে,তবে ভাবনা টাকা-পয়সা নিয়ে নয়। তার একটি দোকানে তালা পরেছে তো এমনকিই বা হয়েছে! আর একটি দোকানে তালা পড়লেও তার বিশেষ চিন্তার কারণ নেই, এর থেকে অনেক খারাপ পরিস্থিতি তে সে পরিয়াছে,এবং উঠিয়াছেও। পুরুষ মানুষের ওত সত ভাবলে চলবে কেন!
তার ভাবনা নয়নতারা ও হেমলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই দুই নারী তার মন প্রাণ জুড়ে যে ভালোবাসার আগুন জ্বালিয়েছে; তার উপায় করতে করতে সঞ্জয় দিনে দিনে নাজেহাল হয়ে পরছে।
সে এতদিন নয়নতারার সাথে যে দূরত্ব রাখবার চেষ্টা করে নাই তা নয়,চেষ্টা সে যথেষ্ট করিয়াছিল। তবে সে নিজেও বুঝতে পারে সেই চেষ্টা এখন দিনে দিনে বেশ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছে।
অনেক ঘটনা ক্রমে জল গিয়ে অনেক দূর,এখন শুধু বাধভাঙ্গার অপেক্ষা মাত্র। তারপর ঠিক কি হইতে পারে তা সে নিজেও ঠিক বলিতে পারে না।
অন্যদিকে হেমকে ছাড়ার তার কোন রকম ইচ্ছা নেই, অতিতের পুনরাবৃত্তি সে হেমের সাথে কোন মতেই করবে না। যত শিগগিরই সম্ভব হেম সমস্যার সমাধান তার চাই!
সিগারেটে শেষ একটি টান দিয়ে অবশিষ্ট জ্বলন্ত সিগারেট সঞ্জয় নিচু ক্ষেতের দিকে ছুড়ে দিল। জ্বলন্ত সিগারেট ছুটে গিয়ে ক্ষেতের উঁচুনিচু জমিতে বাড়ি খেয়ে একপাশে খানিকটা জমা জলে গিয়ে পড়লো। সঞ্জয় বেশ আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অন্ধকার ঝোপে জোনাকির খেলা দেখে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
বাড়ি ফিরে ভেতরে বারান্দায় পা দিয়েই, সঞ্জয় একটি বার পাশ ফিরে দেখল নয়নতারার ঘরে আলো জ্বলছে। শুধু আলো সঞ্জয়কে কতটা আকর্ষণ করতে পারেত তা জানি, তবে ঘরের আলোয় ভেতর বারান্দার মেঝেতে জালনার পাশে বসা নয়নতারার গরাদ সমেত যে ছায়া পরেছে,তার আকর্ষণ সঞ্জয়ের পক্ষে কিছুতেই ত্যাগ করা গেল না।
সঞ্জয় যেরূপ ভাবে পা ফিলিয়া জানালার একপাশে এসে দাঁড়ালো; খাতা কলমে বিশেষ মনযোগ না থাকিলে,বোধকরি নয়নতারার বুঝতে অসুবিধা হতো না। তবে রমনীর খাতাতে মনযোগ থাকায় সঞ্জয়ের বিশেষ সুবিধাই হল।
রাত্রি যথেষ্ট গভীর ছিল,প্রকৃতি ও নিস্তব্ধ। ঘরের হলদেটে আলো নয়নতারার নগ্ন বাহুতে পরে সঞ্জয়ের দৃষ্টিতে যে আভা লাগলো, তা ভাষায় প্রকাশ করিতে পারিব না।
নয়নতারা শুধু শাখা,সিঁদুর ও শাড়ি গায়ে জড়িয়ে খোলা চুলে জানালার পাশে বসে কিছু একটা লিখছে। আবার মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে কলমের শেষ প্রান্ত ঠোঁটে চেঁপে কি ভেবে নিচ্ছে যেন। এদিকে সঞ্জয়ের চোখ যেন পলক ফেলতেই ভুলে গেছে,ঠিক কতখন সেই দাঁড়িয়ে রইলো, তার কি আর সে খেয়ালও আছে!
অবশেষে নিজের অনূভুতি গুলোকে সামাল দিয়ে, সঞ্জয় জানালার পাশে থেকে ধিরে ধিরে সরে পড়লো। তাবে নয়নতারার এই রাত্রিকালীন সাধারণ সাজসজ্জা যে তার আজ রাতের ঘুম কারিয়া লইয়াছে, তা সে বেশ বুঝলো।
অপরদিকে পত্র লিখিবার পরে নয়নতারা নিদ্রা যাইবে সে উপায় কি আছে! তার মনও যে বড্ড অশান্ত হয়ে আছে। একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে রাত যেন চোখের পলকে কেটে গেল। শেষেরাতে ছোট্ট মেয়েটার কথা মনে পড়ায় নয়নতারা হাঁটুতে মাথা গুজে কাঁদতে বসলো।
অনেক ভেবে ভেবে সঞ্জয় এই সিদ্ধান্ত পৌঁঁছুলো যে; বৌদিমণির সঙ্গে যাই হোক না কেন, তার পক্ষে আর দূরে দূরে থাকা সম্ভব নয়। সে যখন এই সব নিজের মনকে বোঝাছে, ঠিক এমন সময় নয়নতারা ঘরথেকে বেড়িয়ে উঠনে নামলো। সঞ্জয় ছাদেই দাঁড়িয়ে ছিল, বুঝতে অসুবিধা হল না যে নয়নতারা স্নান করতে কলঘরে ঢুকছে।
কলঘরের চারপাশে বেতের বেড়া থাকলেও, ওপড়ের দিকটা খোলা। কিন্তু হায়! নয়নতারা একটি বারও ওপড়ে তাকালো না। তবে এই ভালো,তাকালে ত লজ্জা ছাড়া আর কিছু পাবার নেই।
তাই বলে সঞ্জয় নিজের চোখ দুটি কে সরিয়ে নিতে পারলো না। নয়নতারা এখনো সেই রাতের সাজেই,খোলা চুল তার পিঠে ছরানো, কাঁচুলি বিহীন নগ্ন বাহু দুটি ভোরে নির্মল আলোতে যেন হাসছে,শাড়ির আঁচল ঢাকা সুউচ্চ বক্ষযুগলের আকার অনুমান করতে কল্পনার সাহায্য নেবার প্রয়োজন পরে না। আর সেই সাথে শাড়ির ফাঁক দিয়ে যেন মারছে নয়নতারা অল্পা মেদ যুক্ত ফর্সা পেট। এই সাজ পরিবর্তন করার বিশেষ কোন কারণ তার মনে আসেনি। তার কারণ এবাড়িতে তিনটি পুরুষের মধ্যে কেউ কেই সে কখন ওত ভোরে উঠতে দেখেনি। কিন্তু আজ রাতে এক রাত জাগা পাখি যে বাড়ির ছাদে আস্তানা গেড়ে বসে আছে! এই কথা কে বলবে তাকে?
তবে সঞ্জয়ের মনের আশা পূরণ হলো কই! নয়নতারা অন্য দিনের মতো স্নান সারতে বিশেষ সময় নিল না।এমনকি আজ ঠাকুর ঘরের বন্ধ দরজায় নয়নতারার কোমল হাতখানি স্পর্শ করলো না। নয়নতারা তার ঘরে ঢুকলে সঞ্জয় ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো।
ভোরবেলায় শান্ত মুক্ত প্রান্তের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে সঞ্জয়ের তালতলার পথ ধরে হাটতে হাটতে মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। তার গন্তব্য মন্দির নয়। মন্দিরের পেছনের পথধরে খানিক এগিয়ে, দুটো মাটির ঘর পেরুলেই রাস্তার বাঁ পাশে খেজুর গাছে ঘেরা পুকুরের পাশেই নতুন লেপ দেয়া একটি মাটির ঘর। সঞ্জয় বেশ কয়েকবার ডাক দিয়ে সারা না পেয়ে বাড়ির উঠনে পা দেয়।
এটি তার বন্ধু পুলকের বাড়ি,সঞ্জয়ের অনুপস্থিতি ও উপস্থিতি দুই ক্ষেত্রেই পুলক গঞ্জের দোকানের দেখানো করে। উঠেনে পা দিয়ে পুলকের ঘরের জানালায় চোখ পরতেই দেখল,পুলক চিৎ হয়ে মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। সঞ্জয় জানালার কাছে এসে গরাদের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে জোরে একটা ঢেলা মেরে বললো,
– ব্যাটা ওঠ বলছি, এতবার ডাকলাম কোন সারা শব্দ নেই!
সঞ্জয়ের এক ঠেলা খেয়ে পুলক মাথা ঘুরিয়ে কি হয়েছে দেখার চেষ্টা করলো। এমন সময় বাড়ির উঠনে একটি মেয়ে কলসি কাকে ঢুকলো। সঞ্জয়কে দেখে কোমল হাসিতে মেয়েটির মুখ ভরে গেল। রান্নাঘরের সামনে কলসি নামিয়ে হাসি মুখে বলল,
– এতদিন পর বুঝি বোনটিকে মনে পড়লো!আমি ত ভাবলাম বৌদিকে পেয়ে বাকি জগৎ সংসার ভুলে বসে আচেঢ়্যঢ়ৎন।
সঞ্জয় কি বলবে ভেবে পেল না। মেয়েটি তার স্বামীকে দরজা দিয়ে বেরুতে দেখে আবারও বলল,
– ও, বন্ধুর খোঁজ নিতে আসা হয়েছে বুঝি, তা বাইরে কেন, ভেতরে চলুন।
সঞ্জয় ভেতর ঘরে গেল না,পুলককে সাথে নিয়ে সে মন্দিরের সামনে তালদিঘীর একপাশে একটি নুয়ে পরা তালগাছের গোড়ার দিকটায় বসলো।
পুলক তার ডান পাশে দিয়ে কিছুটা নিচে নেমে দিঘীর জলে মুখ ধুতে ধুতে বলল,
– এত সকাল সকাল কি মনে করে?ওবেলা গঞ্জে গেলেই তো দেখা হতো।
সঞ্জয় তার বাঁ পাশে মাথা ঘুরিয়ে, পুরাতন মন্দিরটির নতুন সংষ্কারের পরে কেমন দেখতে হয়েছে তা দেখতে দেখতে মনে মনে ভাবছিল, আগেভাগেই কাজ সেরে ফেলে ভালোই হয়েছে, নয়তো এমন কিছু ঘটবে কে জানতো।
– কি হল, কথা বলছিস না যে!
পুলকের কথায় এবারে হুশ ফিরলো সঞ্জয়ের,
– ভাবছি গঞ্জে যাবো না কয়েদিন,সবকিছু তো সামলে দিলাম,এবারে তুই বাকিটা দ্যাখ।
পুলক তার পেছন একটা তালগাছে হেলান দিয়ে,লুঙ্গির কোচ থেকে একটা সিগারেটের পাকেট ও দেশলাই বের করে আনলো। সঞ্জয়ের দিকে একটি সিগারেট বাড়িয়ে দিতেই সঞ্জয় কোন রকম আপত্তি করলো না দেখে পুলক একটু হেসে বলল,
– ব্যাপার কিরে? খুব টেনশন আছিস মনে হয়!
– এমন ভাব করসি যেন জানিস না কদিন আগে কি হয়ে গেল।
কথা শেষ করে সঞ্জয় দেশলাইয়ের একখোচায় ঠোটের ফাঁকে ধরে রাখা সিগারেট'টা জ্বালিয়ে নিল।
– তা জানি, তবে ভাবলাম এখনো কিছু হয়নি তো…
– এখনো হয়নি,তবে হতে কতখন? কখনো দেখেছিস চোর'কে দলিল পত্র চুরি করতে? এই চুরির ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে।
পুলক সিগারেটে টান দিতে দিতে খানিকক্ষণ কি ভাবে নিয়ে বলল,
– ঐপাড়ের জমিদার বাড়ির খোড়া গোবিন্দ লালকে এপাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে কয়েকদিন।
সঞ্জয় খানিক উত্তেজিত হয়ে বলল,
– ওর নজর পরেছে হেমের ওপড়ে,বেশি বাড়াবাড়ি করলে আর একটি পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেব… এই হাসবি না একদম!
পুলক হাসি থামিয়ে সিগারেটে লম্বা টান মেরে বলল,
– তার দরকার পরলে হবে না হয়, কিন্তু মালটা ভীষণ চালাক আছে, ভাইয়ে বোনে মিলে জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র'কে ভাঙিয়ে খাওয়া সহজ কর্ম নয়।
পুলক কথাটা বলে আড়চোখে একবার সঞ্জয়কে দেখে নিল। এই কথায়ে যে সঞ্জয় বিশেষ আমল দিল না,তা তার নিরবিকার ভঙ্গিতে চোখে বুঝে সিগারেট টানা দেখেই বোঝা গেল।
//////
বাড়ির বাইরে পা রাখার সহস হেমলতার খুবই অল্প,তার ওপড়ে এই দিনের আলোতে প্রেমিকের ডাকে সারা দেবার ইচ্ছে তার মোটেও ছিল না। কিন্ত সারা না দিয়ে উপায় কি! তার দেরি হলে সঞ্জয় নিজেই যদি বাড়িতে এসে ঢোকে, তবে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।
তাই ত মন্দিরার হাত ধরে ধিরে ধিরে সে, বাড়ির পেছনে আম বাগানের সঞ্জয়কে খুজতে বেরিয়েছে। খুব বেশিখন তাকে খুঁজতে হলো না, কিছু দূর যেতেই সামনে একটি বড় আমগাছের তলায় বসে জিলাপি খেতে দেখা গেল সঞ্জয়কে।
কাছাকাছি আসতেই সঞ্জয় মন্দিরাকে কাছে টেনে,তার ছোট্ট দুটি হাতে বড় দুটো জিলাপি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– বেশি দূরে যাসনে,কাছাকাছি ঘুরে বেরা আর কেউ এলে মাসিকে ডাকবি,ভুলেও আমাকে ডাকিসনে কিন্তু,মনে থাকবে?
মন্দিরা হাতের জিলিপির দিকে তাকিয়েই মাথা কাত করে বলল,
– হু্…
সঞ্জয় তার কপলে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিতেই ,মন্দিরা যে পথে এসেছিল সে পথেই হাটতে লাগলো।
হেমলতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল,সঞ্জয় তাকে বিশেষ কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে জিলিপি খেতে বসলো দেখে, বেচারী হেমলতা ঠিক কি করবে বুঝতে পারলো না।
খানিকটা সময় এদিক ওদিক চাহিয়া হেমলতা সসংকোচে সঞ্জয়ের বাঁ পাশে ঘাসের ওপড়ে হাঁটু মুড়ে বসলো। কাঁপা হাতে একবার সঞ্জয়ের কাঁধ ছুঁয়ে দিয়ে যখন কোন সারা পেল না,তখন হেমের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তার অতিরিক্ত দেরির কারণে সঞ্জয় মনঃক্ষুন্ন হয়েছে।
কিন্তু হেমের যে আরো আগে কোম মতেই আসবার উপায় ছিল না, সে কথাটি সে এখন কি করিয়া বোঝায়!
অপরদিকে সঞ্জয় ভেবেই রেখেছিল হেম তার মান না ভাঙালে সে কিছুতেই কথা বলবে না। যার জন্যে ঝোপ-জঙ্গলে পোকামাকড়ের কামড় খেয়ে এত দূর আসা,তার আসতে এত দেরি হলে অভিমান করাটা কি দোষের কিছু!
কিন্তু খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর যখন হেমের মুখে কৈফিয়ত ত দূরের কথা কোন কথাই ফুটলো না, তখন হাতের জিলিপি পাশের ঠোঙ্গাতে রেখে সঞ্জয় হেমের দিকে ফিরে বসলো।
সঞ্জয় হেমলতার দিকে তাকিয়ে দেখল,হেম নিজের কোলের ওপড়ে দুহাত রেখে মাথা নত করে বসে আছে। হাত বারিয়ে হেমলতার চিবুক ঠেলে উপড়ে তুলে, তার বন্ধ চোখ আর কম্পিত ওষ্ঠাধর দেখে সঞ্জয় বুঝলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে, ওই কাজলে রাঙা দু'চোখে অশ্রু বিন্দু দেখা গেলে অবাক হবার কিছু নেই।
সঞ্জয় হেমলতাকে কাছে টেনে তার মস্তক চুম্বন করে কোমল স্বরে বলল,
– এতো দেরি কেন শুনি? সে কখন থেকে পথ চেয়ে বসে আছি সে খেয়াল আছে মহারানীর!
সঞ্জয়ের কোমল বুলিতে হেম কিছুটা সহজ হল। তার মুখের কালো মেঘ আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। তার দেরি হবার কারণটি সে জানবার পরে, সঞ্জয়ের হেমের কোলে মাথা রেখে সবুজ ঘাসের ওপড়ে গা এলিয়ে দিল। অভ্যেস বশতঃ হেমের শাড়ির আঁচল খানি তার ডান হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে,শাড়ির ওপড়দিয়ে হেমলতার নাভির কাছটায় নাক ঘষতে লাগলো। হেম তার পেছনে আম গাছে হেলে পরে দু'হাতে দেহে দু'পাশের নরম কোচি ঘাস আঁকড়ে ধরে নিজের সামাল দিল।
সঞ্জয় এমন আচরণের সাথে নিজেকে এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি সে। তাই ত সঞ্জয় কাছে এলেই তার বুক কেঁপে ওঠে, ওষ্ঠাধরের কম্পন থামতে চায় না। কিন্তু তার প্রেমিকের নিষ্ঠুর মনটি কি তা বোঝে! ওই'ত তার শাড়ি আঁঁচল সরিয়ে তার সরু কোমড়টি চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে শুরু করেছে।
খানিকখন নাভি ও পেটে চুম্বনের পরে সঞ্জয়ের জিলাপির কথা মনে পরায়,সেদিকে না তাকিয়েই সে হাতরে হাতরে জিলিপির ঠোঙ্গা টা খুঁঁজতে থাতে। তাই দেখে হেমলতা ঠোঙ্গা হাতে নিয়ে সঞ্জয়ের হাতের কাছে এগিয়ে দেয়।। কিন্তু সঞ্জয় হাত সরিয়ে নেওয়াতে তার মুখপানে চেয়ে চোখের চাহনিতে ব্যাপারখানা বুঝে নিয়ে ,হেমে মুখমন্ডল রাঙা হয়ে ওঠে।
হেমলতার হাতে জিলিপি খেতে খেতে হেমের বাবার ও নয়নতারার সংবাদ জানায় সঞ্জয়।তারপর নিস্তব্ধ অপরাহ্নে আম বাগানে প্রকৃতির মাতার কোলে দুই কপত-কপতি প্রেমালাপ আজকে মতো আমর নাই বা শুনলাম!
আপডেট বিশেষ বড় নয়,আসলে দেশের যা অবস্থা লেখালেখি করতে ভালো লাগছিল না। অবশেষে বলা ভালো যে,গল্পরে সমালোচনা করলে এই সাধারণ লেখকের খারাপ লাগার বিশেষ কিছু নেই। সুতরাং মনে খুলে ভালো-মন্দ সকল কথাই বলা যেতে পারে,
মধ্যাহ্নের নীরবতায়, জামগাছটির ছায়াতে বসে, নয়নতারা তার শিশু পুত্রটির পেটের ক্ষুধা নিবারণ করতে স্তনদান করছিল। এই মায়ের মনের অবস্থা তার কোলের শিশুটির অবগত থাকার কথা নয়,তবুও অকারণেই শিশুটির কোমল হাতখানি মায়ের গলা স্পর্শ করায় নয়নতারার ভাবনায় বাধা পরলো। সেই ক্ষুদ্র হাতের কোমল স্পর্শ নয়নতারার ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করলেও, শিশুর হাস্যউজ্জ্বল মুখ দেখা মাত্রই তার মায়ের মুখেও হাসি ফুটলো। বাবু যে কখন স্তনপান ছাড়িয়া তার গলার মঙ্গলসূত্র খানি হাতে ধরে খেলে করছে, নয়নতারা ভবনার মাঝে তা টের পায় নাই।
আজ সকাল থেকেই নয়নতারার মনটি ভীষণ খারাপ। মন খারাপের কারণটি মোটেও ছোট নয়। নয়নতার কলকাতা হইতে ফিরিবার পর আজ অবধি তার ছোট মেয়ের মুখ দেখে নাই। যদিওবা মন্দিরার মায়ের থেকে মাসির টান বেশি,তাই বলিবা মায়ের মন আর কতখন মানে!
তার স্বামী অবশ্য তাকে ওবাড়ি নিতে ব্যাকুল। তবে এই প্রস্তাবে, নয়নতারা তার মনটিকে কিছুতেই রাজি করিতে পারিতেছে না। এইবাড়ি ছাড়ে যাবার কথা উঠলেই নয়নতারার বুকের মধ্যে কেমন করে ওঠে। না জানি কি করিয়া তার মনে এই সন্দেহ জাগিয়াছে যে; সেই এই বাড়ি ছাড়িলেই তার দেবরটির ভীষণ খারাপ কিছু হইতে পারে। তাছাড়া শশুরবাড়ির মাটিতে প্রথম বার পা রাখিয়া নয়নতারার মনে যে অনুভূতি জাগিয়াছিল, সেই অনুভূতির রেশ এখনো কাটে নাই।
নয়নতারা কাপড় ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো। এক'পা দু'পা করে সিঁঁড়ির কাছটায় এসে একটু থামলো। কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে তারপর উচ্চস্বরে দুই বার, "দেবু" "দেবু" ডাকে যখন কোন সারা শব্দ পেল না। তখন নিজেই সিঁড়ি ভাঙে দোতলায় উঠতে লাগলো।
গতকালকের ঘটনাটি বিশেষ কিছু নয়,এমন দুর্ঘটনা কি জগতে তার সাথে প্রথম! না জানি কতজনের সাথে নিত্য এমন ঘটনা ঘটে। সুতরাং এই সহজ ব্যাপারে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?
তারপরেও গতরাতে এই সকল কথা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারার আর ঘুম হল না। তবুও ত সে ভেবে রেখে ছিল; সকালে এমন ভাব করবে যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু হায়! সকালে সঞ্জয়ের সামনে আসতেই তার যে কি হল!
সঞ্জয়ের সামনে লজ্জায় তার মুখে কোন কথা ফুটলো না। তারপর থেকে আর কোন কাজে নয়নতারা মন বসাতে পারে না, রান্নার সময় মাছের ঝোলে আলুর দমে গোটা গোটা আলু ছেড়ে খুন্তি দিয়ে তরকারির মতো ঘুটে দেয়। নুন দেওয়া হয়েছে কিনা মনে করতে পারে না।
পরে নুন হয়েছে কিনা দেখতে গিয়ে,খুন্তি টা উঁচু করে ঠান্ডা হবার সময় না দিয়েই একফোঁটা তপ্ত ঝোল জিভে ফেলে দেয়।এতে গরমের জ্বালাটাই সে টের পায়,নুনের স্বাদ পায় না।
শেষে দেবু'কে ডেকে না পেয়ে তার রাগ হয়। মোটের ওপড়ে কোনভাবেই সে গতকালের কথা ভুলতে না পাড়ায়, অবশেষে সে চেষ্টা বাদ দিয়ে সে কোন মতে রান্না সেরে বাবু কোলে নিয়ে বসেছিল। এখন হঠাৎ সঞ্জয় ক্ষুধার্ত মনে পড়াতে তার সেবাবৃত্তি জাগ্রত হয়ে উঠল।
তাই তো সে লজ্জা ভেঙে দোতলায় উঠে এসেছে।নয়নতারা ভালো ভাবেই জানে যে সঞ্জয়কে ডেকে না খাওয়ালে,সে নিজে থেকে খেতে আসবে না। সঞ্জয় একা মানুষ, এক দু'বেলা না খেয়ে থাকার অভ্যেস তার থাকতেই পারে, তাই বলে নয়নতারা এখানে থাকতে তা হবে কেন?
সঞ্জয় হাটে থেকে ফিয়েই নিজের ঘরে ঢোকে। কয়েদিন যাবত তার দিন ভালো কাটছে না,আজ আবার তার একটি দোকানে তালা দিতে হয়েছে। তার ওপড়ে এই গরমে উত্তপ্ত ও ঘর্মাক্ত দেহে সে যখন বাড়ি ফিরিলো,তখন স্নান করাটা বিশেষ প্রয়োজনীয় হলেও নয়নতারার সমুখে সে পড়তে চায় নাই। তার কারণে নয়নতারা বিব্রতবোধ করুক এটি তার অপ্রিয়।
দোতলায় উঠে নিজের ঘরে ঢুকেই খালি গায়ে সে বিছানায় দেহে এলিয়ে দিল। তারপর বৌদিমণির ডাকের অপেক্ষা করতে করতে সঞ্জয়ের চোখ এক সময় লেগে আসে।
কতখন সে ঘুমিয়েছে তার খেয়াল নেই। চোখ খোলার পর সমুখে নয়নতারাকে দেখে সঞ্জয় বুক থেকে যেন একটা ভার নেমে হালকা হয়ে আসে। সে সাবধানে পাশ ফিরে দেখতে থাকে নয়নতারার কি করছে।
নয়নতারা অবশ্য বিশেষ কিছু করছিল না। সে শান্তভাবে টেবিলের পাশে চেয়ারটায় বসে সঞ্জয়ের রেডিও টি নেড়েচেড়ে দেখছিল। অন্য দিকে বাবু কোলে শুয়ে তার মায়ের এক গাছি চুল নিয়ে খেলা করছিল।
নয়নতারার রেডিওতে বেশিক্ষণ মন ঠিকলো না,অবশ্য ঠিকবার কথাও নয়। ওটি শেষ কবে চলেছিল সঞ্জয় নিজেও জানে না,শুধুমাত্র বাবার শেষে স্মৃতি বলেই ওটি তার টেবিলে ঠাই পেয়েছে।
রেডিও রেখে দিয়ে নয়নতারা যখন সঞ্জয়ের খাতাপত্রে হাত দেয়, ঠিক তখনই অনাকাঙ্ক্ষিত এক হাঁচির শব্দে নয়নতারা মুখ ফেরায় বিছানার দিকে। খানিকক্ষণ নীরব দৃষ্টি বিনিময়ের পর,নয়নতারা মৃদুস্বরে জিগ্যেস করে,
– ফিরে এসে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ঘুমানো কোন? রাতের বেলা বাইরে এতো কি কাজ শুনি?
এই প্রশ্নের জবাবে সঞ্জয় বিশেষ কিছুই বললো না। কারণ প্রশ্নকারি এর জবাব ভালো মতোই জানে।
সঞ্জয় স্নান করতে বেড়িয়ে গেলে,নয়নতারা বাবুকে বিছানায় শুয়েই দিয়ে টেবিলের ছড়ানো খাতাপত্রে গুলি গুছিয়ে রাখতে লাগলো। গোছানো শেষে একটি খাতা ও কলম হাতে নিয়ে বাবুকে কোলে করে সে নিচে নেমে সঞ্জয়ের খাবার আয়জন করতে লাগলো।
///////
তালতলার মাটির ঝোপে ঝোপে অন্ধকারে জোনাকিরা ঝাঁক বেঁধে জ্বলছিল। দূরে ক্ষেতের মাঝে কৃষক বস্তিতে দুই একটা ঘরে হাড়িকেনের মিটি মিটি আলোর আভা দেখিতে দেখিতে,সঞ্জয় একখানা সিগারেট ডান হাতের দু'আঙুলের ধরিয়া মাঝে মাঝে টানিতে ছিল।
কিছু সে ভাবছে বটে,তবে ভাবনা টাকা-পয়সা নিয়ে নয়। তার একটি দোকানে তালা পরেছে তো এমনকিই বা হয়েছে! আর একটি দোকানে তালা পড়লেও তার বিশেষ চিন্তার কারণ নেই, এর থেকে অনেক খারাপ পরিস্থিতি তে সে পরিয়াছে,এবং উঠিয়াছেও। পুরুষ মানুষের ওত সত ভাবলে চলবে কেন!
তার ভাবনা নয়নতারা ও হেমলতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই দুই নারী তার মন প্রাণ জুড়ে যে ভালোবাসার আগুন জ্বালিয়েছে; তার উপায় করতে করতে সঞ্জয় দিনে দিনে নাজেহাল হয়ে পরছে।
সে এতদিন নয়নতারার সাথে যে দূরত্ব রাখবার চেষ্টা করে নাই তা নয়,চেষ্টা সে যথেষ্ট করিয়াছিল। তবে সে নিজেও বুঝতে পারে সেই চেষ্টা এখন দিনে দিনে বেশ অনেকটাই দুর্বল হয়ে পরেছে।
অনেক ঘটনা ক্রমে জল গিয়ে অনেক দূর,এখন শুধু বাধভাঙ্গার অপেক্ষা মাত্র। তারপর ঠিক কি হইতে পারে তা সে নিজেও ঠিক বলিতে পারে না।
অন্যদিকে হেমকে ছাড়ার তার কোন রকম ইচ্ছা নেই, অতিতের পুনরাবৃত্তি সে হেমের সাথে কোন মতেই করবে না। যত শিগগিরই সম্ভব হেম সমস্যার সমাধান তার চাই!
সিগারেটে শেষ একটি টান দিয়ে অবশিষ্ট জ্বলন্ত সিগারেট সঞ্জয় নিচু ক্ষেতের দিকে ছুড়ে দিল। জ্বলন্ত সিগারেট ছুটে গিয়ে ক্ষেতের উঁচুনিচু জমিতে বাড়ি খেয়ে একপাশে খানিকটা জমা জলে গিয়ে পড়লো। সঞ্জয় বেশ আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অন্ধকার ঝোপে জোনাকির খেলা দেখে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
বাড়ি ফিরে ভেতরে বারান্দায় পা দিয়েই, সঞ্জয় একটি বার পাশ ফিরে দেখল নয়নতারার ঘরে আলো জ্বলছে। শুধু আলো সঞ্জয়কে কতটা আকর্ষণ করতে পারেত তা জানি, তবে ঘরের আলোয় ভেতর বারান্দার মেঝেতে জালনার পাশে বসা নয়নতারার গরাদ সমেত যে ছায়া পরেছে,তার আকর্ষণ সঞ্জয়ের পক্ষে কিছুতেই ত্যাগ করা গেল না।
সঞ্জয় যেরূপ ভাবে পা ফিলিয়া জানালার একপাশে এসে দাঁড়ালো; খাতা কলমে বিশেষ মনযোগ না থাকিলে,বোধকরি নয়নতারার বুঝতে অসুবিধা হতো না। তবে রমনীর খাতাতে মনযোগ থাকায় সঞ্জয়ের বিশেষ সুবিধাই হল।
রাত্রি যথেষ্ট গভীর ছিল,প্রকৃতি ও নিস্তব্ধ। ঘরের হলদেটে আলো নয়নতারার নগ্ন বাহুতে পরে সঞ্জয়ের দৃষ্টিতে যে আভা লাগলো, তা ভাষায় প্রকাশ করিতে পারিব না।
নয়নতারা শুধু শাখা,সিঁদুর ও শাড়ি গায়ে জড়িয়ে খোলা চুলে জানালার পাশে বসে কিছু একটা লিখছে। আবার মাঝে মাঝে লেখা থামিয়ে কলমের শেষ প্রান্ত ঠোঁটে চেঁপে কি ভেবে নিচ্ছে যেন। এদিকে সঞ্জয়ের চোখ যেন পলক ফেলতেই ভুলে গেছে,ঠিক কতখন সেই দাঁড়িয়ে রইলো, তার কি আর সে খেয়ালও আছে!
অবশেষে নিজের অনূভুতি গুলোকে সামাল দিয়ে, সঞ্জয় জানালার পাশে থেকে ধিরে ধিরে সরে পড়লো। তাবে নয়নতারার এই রাত্রিকালীন সাধারণ সাজসজ্জা যে তার আজ রাতের ঘুম কারিয়া লইয়াছে, তা সে বেশ বুঝলো।
অপরদিকে পত্র লিখিবার পরে নয়নতারা নিদ্রা যাইবে সে উপায় কি আছে! তার মনও যে বড্ড অশান্ত হয়ে আছে। একথা সেকথা ভাবতে ভাবতে রাত যেন চোখের পলকে কেটে গেল। শেষেরাতে ছোট্ট মেয়েটার কথা মনে পড়ায় নয়নতারা হাঁটুতে মাথা গুজে কাঁদতে বসলো।
অনেক ভেবে ভেবে সঞ্জয় এই সিদ্ধান্ত পৌঁঁছুলো যে; বৌদিমণির সঙ্গে যাই হোক না কেন, তার পক্ষে আর দূরে দূরে থাকা সম্ভব নয়। সে যখন এই সব নিজের মনকে বোঝাছে, ঠিক এমন সময় নয়নতারা ঘরথেকে বেড়িয়ে উঠনে নামলো। সঞ্জয় ছাদেই দাঁড়িয়ে ছিল, বুঝতে অসুবিধা হল না যে নয়নতারা স্নান করতে কলঘরে ঢুকছে।
কলঘরের চারপাশে বেতের বেড়া থাকলেও, ওপড়ের দিকটা খোলা। কিন্তু হায়! নয়নতারা একটি বারও ওপড়ে তাকালো না। তবে এই ভালো,তাকালে ত লজ্জা ছাড়া আর কিছু পাবার নেই।
তাই বলে সঞ্জয় নিজের চোখ দুটি কে সরিয়ে নিতে পারলো না। নয়নতারা এখনো সেই রাতের সাজেই,খোলা চুল তার পিঠে ছরানো, কাঁচুলি বিহীন নগ্ন বাহু দুটি ভোরে নির্মল আলোতে যেন হাসছে,শাড়ির আঁচল ঢাকা সুউচ্চ বক্ষযুগলের আকার অনুমান করতে কল্পনার সাহায্য নেবার প্রয়োজন পরে না। আর সেই সাথে শাড়ির ফাঁক দিয়ে যেন মারছে নয়নতারা অল্পা মেদ যুক্ত ফর্সা পেট। এই সাজ পরিবর্তন করার বিশেষ কোন কারণ তার মনে আসেনি। তার কারণ এবাড়িতে তিনটি পুরুষের মধ্যে কেউ কেই সে কখন ওত ভোরে উঠতে দেখেনি। কিন্তু আজ রাতে এক রাত জাগা পাখি যে বাড়ির ছাদে আস্তানা গেড়ে বসে আছে! এই কথা কে বলবে তাকে?
তবে সঞ্জয়ের মনের আশা পূরণ হলো কই! নয়নতারা অন্য দিনের মতো স্নান সারতে বিশেষ সময় নিল না।এমনকি আজ ঠাকুর ঘরের বন্ধ দরজায় নয়নতারার কোমল হাতখানি স্পর্শ করলো না। নয়নতারা তার ঘরে ঢুকলে সঞ্জয় ছাদ থেকে নিচে নেমে এলো।
ভোরবেলায় শান্ত মুক্ত প্রান্তের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে লাগিয়ে সঞ্জয়ের তালতলার পথ ধরে হাটতে হাটতে মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। তার গন্তব্য মন্দির নয়। মন্দিরের পেছনের পথধরে খানিক এগিয়ে, দুটো মাটির ঘর পেরুলেই রাস্তার বাঁ পাশে খেজুর গাছে ঘেরা পুকুরের পাশেই নতুন লেপ দেয়া একটি মাটির ঘর। সঞ্জয় বেশ কয়েকবার ডাক দিয়ে সারা না পেয়ে বাড়ির উঠনে পা দেয়।
এটি তার বন্ধু পুলকের বাড়ি,সঞ্জয়ের অনুপস্থিতি ও উপস্থিতি দুই ক্ষেত্রেই পুলক গঞ্জের দোকানের দেখানো করে। উঠেনে পা দিয়ে পুলকের ঘরের জানালায় চোখ পরতেই দেখল,পুলক চিৎ হয়ে মরার মতো ঘুমিয়ে আছে। সঞ্জয় জানালার কাছে এসে গরাদের ফাঁকে হাত ঢুকিয়ে জোরে একটা ঢেলা মেরে বললো,
– ব্যাটা ওঠ বলছি, এতবার ডাকলাম কোন সারা শব্দ নেই!
সঞ্জয়ের এক ঠেলা খেয়ে পুলক মাথা ঘুরিয়ে কি হয়েছে দেখার চেষ্টা করলো। এমন সময় বাড়ির উঠনে একটি মেয়ে কলসি কাকে ঢুকলো। সঞ্জয়কে দেখে কোমল হাসিতে মেয়েটির মুখ ভরে গেল। রান্নাঘরের সামনে কলসি নামিয়ে হাসি মুখে বলল,
– এতদিন পর বুঝি বোনটিকে মনে পড়লো!আমি ত ভাবলাম বৌদিকে পেয়ে বাকি জগৎ সংসার ভুলে বসে আচেঢ়্যঢ়ৎন।
সঞ্জয় কি বলবে ভেবে পেল না। মেয়েটি তার স্বামীকে দরজা দিয়ে বেরুতে দেখে আবারও বলল,
– ও, বন্ধুর খোঁজ নিতে আসা হয়েছে বুঝি, তা বাইরে কেন, ভেতরে চলুন।
সঞ্জয় ভেতর ঘরে গেল না,পুলককে সাথে নিয়ে সে মন্দিরের সামনে তালদিঘীর একপাশে একটি নুয়ে পরা তালগাছের গোড়ার দিকটায় বসলো।
পুলক তার ডান পাশে দিয়ে কিছুটা নিচে নেমে দিঘীর জলে মুখ ধুতে ধুতে বলল,
– এত সকাল সকাল কি মনে করে?ওবেলা গঞ্জে গেলেই তো দেখা হতো।
সঞ্জয় তার বাঁ পাশে মাথা ঘুরিয়ে, পুরাতন মন্দিরটির নতুন সংষ্কারের পরে কেমন দেখতে হয়েছে তা দেখতে দেখতে মনে মনে ভাবছিল, আগেভাগেই কাজ সেরে ফেলে ভালোই হয়েছে, নয়তো এমন কিছু ঘটবে কে জানতো।
– কি হল, কথা বলছিস না যে!
পুলকের কথায় এবারে হুশ ফিরলো সঞ্জয়ের,
– ভাবছি গঞ্জে যাবো না কয়েদিন,সবকিছু তো সামলে দিলাম,এবারে তুই বাকিটা দ্যাখ।
পুলক তার পেছন একটা তালগাছে হেলান দিয়ে,লুঙ্গির কোচ থেকে একটা সিগারেটের পাকেট ও দেশলাই বের করে আনলো। সঞ্জয়ের দিকে একটি সিগারেট বাড়িয়ে দিতেই সঞ্জয় কোন রকম আপত্তি করলো না দেখে পুলক একটু হেসে বলল,
– ব্যাপার কিরে? খুব টেনশন আছিস মনে হয়!
– এমন ভাব করসি যেন জানিস না কদিন আগে কি হয়ে গেল।
কথা শেষ করে সঞ্জয় দেশলাইয়ের একখোচায় ঠোটের ফাঁকে ধরে রাখা সিগারেট'টা জ্বালিয়ে নিল।
– তা জানি, তবে ভাবলাম এখনো কিছু হয়নি তো…
– এখনো হয়নি,তবে হতে কতখন? কখনো দেখেছিস চোর'কে দলিল পত্র চুরি করতে? এই চুরির ব্যাপারটা বড্ড গোলমেলে।
পুলক সিগারেটে টান দিতে দিতে খানিকক্ষণ কি ভাবে নিয়ে বলল,
– ঐপাড়ের জমিদার বাড়ির খোড়া গোবিন্দ লালকে এপাড়ায় ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে কয়েকদিন।
সঞ্জয় খানিক উত্তেজিত হয়ে বলল,
– ওর নজর পরেছে হেমের ওপড়ে,বেশি বাড়াবাড়ি করলে আর একটি পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেব… এই হাসবি না একদম!
পুলক হাসি থামিয়ে সিগারেটে লম্বা টান মেরে বলল,
– তার দরকার পরলে হবে না হয়, কিন্তু মালটা ভীষণ চালাক আছে, ভাইয়ে বোনে মিলে জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র'কে ভাঙিয়ে খাওয়া সহজ কর্ম নয়।
পুলক কথাটা বলে আড়চোখে একবার সঞ্জয়কে দেখে নিল। এই কথায়ে যে সঞ্জয় বিশেষ আমল দিল না,তা তার নিরবিকার ভঙ্গিতে চোখে বুঝে সিগারেট টানা দেখেই বোঝা গেল।
//////
বাড়ির বাইরে পা রাখার সহস হেমলতার খুবই অল্প,তার ওপড়ে এই দিনের আলোতে প্রেমিকের ডাকে সারা দেবার ইচ্ছে তার মোটেও ছিল না। কিন্ত সারা না দিয়ে উপায় কি! তার দেরি হলে সঞ্জয় নিজেই যদি বাড়িতে এসে ঢোকে, তবে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।
তাই ত মন্দিরার হাত ধরে ধিরে ধিরে সে, বাড়ির পেছনে আম বাগানের সঞ্জয়কে খুজতে বেরিয়েছে। খুব বেশিখন তাকে খুঁজতে হলো না, কিছু দূর যেতেই সামনে একটি বড় আমগাছের তলায় বসে জিলাপি খেতে দেখা গেল সঞ্জয়কে।
কাছাকাছি আসতেই সঞ্জয় মন্দিরাকে কাছে টেনে,তার ছোট্ট দুটি হাতে বড় দুটো জিলাপি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
– বেশি দূরে যাসনে,কাছাকাছি ঘুরে বেরা আর কেউ এলে মাসিকে ডাকবি,ভুলেও আমাকে ডাকিসনে কিন্তু,মনে থাকবে?
মন্দিরা হাতের জিলিপির দিকে তাকিয়েই মাথা কাত করে বলল,
– হু্…
সঞ্জয় তার কপলে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিতেই ,মন্দিরা যে পথে এসেছিল সে পথেই হাটতে লাগলো।
হেমলতা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল,সঞ্জয় তাকে বিশেষ কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে জিলিপি খেতে বসলো দেখে, বেচারী হেমলতা ঠিক কি করবে বুঝতে পারলো না।
খানিকটা সময় এদিক ওদিক চাহিয়া হেমলতা সসংকোচে সঞ্জয়ের বাঁ পাশে ঘাসের ওপড়ে হাঁটু মুড়ে বসলো। কাঁপা হাতে একবার সঞ্জয়ের কাঁধ ছুঁয়ে দিয়ে যখন কোন সারা পেল না,তখন হেমের বুঝতে অসুবিধা হলো না যে তার অতিরিক্ত দেরির কারণে সঞ্জয় মনঃক্ষুন্ন হয়েছে।
কিন্তু হেমের যে আরো আগে কোম মতেই আসবার উপায় ছিল না, সে কথাটি সে এখন কি করিয়া বোঝায়!
অপরদিকে সঞ্জয় ভেবেই রেখেছিল হেম তার মান না ভাঙালে সে কিছুতেই কথা বলবে না। যার জন্যে ঝোপ-জঙ্গলে পোকামাকড়ের কামড় খেয়ে এত দূর আসা,তার আসতে এত দেরি হলে অভিমান করাটা কি দোষের কিছু!
কিন্তু খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর যখন হেমের মুখে কৈফিয়ত ত দূরের কথা কোন কথাই ফুটলো না, তখন হাতের জিলিপি পাশের ঠোঙ্গাতে রেখে সঞ্জয় হেমের দিকে ফিরে বসলো।
সঞ্জয় হেমলতার দিকে তাকিয়ে দেখল,হেম নিজের কোলের ওপড়ে দুহাত রেখে মাথা নত করে বসে আছে। হাত বারিয়ে হেমলতার চিবুক ঠেলে উপড়ে তুলে, তার বন্ধ চোখ আর কম্পিত ওষ্ঠাধর দেখে সঞ্জয় বুঝলো আর কিছুক্ষণের মধ্যে, ওই কাজলে রাঙা দু'চোখে অশ্রু বিন্দু দেখা গেলে অবাক হবার কিছু নেই।
সঞ্জয় হেমলতাকে কাছে টেনে তার মস্তক চুম্বন করে কোমল স্বরে বলল,
– এতো দেরি কেন শুনি? সে কখন থেকে পথ চেয়ে বসে আছি সে খেয়াল আছে মহারানীর!
সঞ্জয়ের কোমল বুলিতে হেম কিছুটা সহজ হল। তার মুখের কালো মেঘ আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। তার দেরি হবার কারণটি সে জানবার পরে, সঞ্জয়ের হেমের কোলে মাথা রেখে সবুজ ঘাসের ওপড়ে গা এলিয়ে দিল। অভ্যেস বশতঃ হেমের শাড়ির আঁচল খানি তার ডান হাতে পেঁচিয়ে নিয়ে,শাড়ির ওপড়দিয়ে হেমলতার নাভির কাছটায় নাক ঘষতে লাগলো। হেম তার পেছনে আম গাছে হেলে পরে দু'হাতে দেহে দু'পাশের নরম কোচি ঘাস আঁকড়ে ধরে নিজের সামাল দিল।
সঞ্জয় এমন আচরণের সাথে নিজেকে এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি সে। তাই ত সঞ্জয় কাছে এলেই তার বুক কেঁপে ওঠে, ওষ্ঠাধরের কম্পন থামতে চায় না। কিন্তু তার প্রেমিকের নিষ্ঠুর মনটি কি তা বোঝে! ওই'ত তার শাড়ি আঁঁচল সরিয়ে তার সরু কোমড়টি চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতে শুরু করেছে।
খানিকখন নাভি ও পেটে চুম্বনের পরে সঞ্জয়ের জিলাপির কথা মনে পরায়,সেদিকে না তাকিয়েই সে হাতরে হাতরে জিলিপির ঠোঙ্গা টা খুঁঁজতে থাতে। তাই দেখে হেমলতা ঠোঙ্গা হাতে নিয়ে সঞ্জয়ের হাতের কাছে এগিয়ে দেয়।। কিন্তু সঞ্জয় হাত সরিয়ে নেওয়াতে তার মুখপানে চেয়ে চোখের চাহনিতে ব্যাপারখানা বুঝে নিয়ে ,হেমে মুখমন্ডল রাঙা হয়ে ওঠে।
হেমলতার হাতে জিলিপি খেতে খেতে হেমের বাবার ও নয়নতারার সংবাদ জানায় সঞ্জয়।তারপর নিস্তব্ধ অপরাহ্নে আম বাগানে প্রকৃতির মাতার কোলে দুই কপত-কপতি প্রেমালাপ আজকে মতো আমর নাই বা শুনলাম!
আপডেট বিশেষ বড় নয়,আসলে দেশের যা অবস্থা লেখালেখি করতে ভালো লাগছিল না। অবশেষে বলা ভালো যে,গল্পরে সমালোচনা করলে এই সাধারণ লেখকের খারাপ লাগার বিশেষ কিছু নেই। সুতরাং মনে খুলে ভালো-মন্দ সকল কথাই বলা যেতে পারে,