Poll: সহজ একটা প্রশ্ন করি,গল্প কেমন লাগছে?
You do not have permission to vote in this poll.
ভালো
90.16%
55 90.16%
খারাপ
1.64%
1 1.64%
সাধারণ, (কোন মতে চলে আর কি)
8.20%
5 8.20%
Total 61 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 47 Vote(s) - 3.32 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
WRITER'S SPECIAL ✒️গল্পের খাতা ✒️﴾প্রেমিকা ও বান্ধবী সিরিজ-গল্প নং১-মেইবি নেক্সট ফ্রাইডে﴿
#48
গোলাপ বাগানে গন্ডগোল 

 Erotic Thriller


কাল রাতে দু পশলা বৃষ্টি হয়ে গিয়ে ভোরের দিকটা বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব হচ্ছিল। নাহলে এই কিছুদিন যা গরম পরেছে দেখবার মতো বটে। তবে এখন একটু তাপমাত্রা বাড়লেও ঘোড়ার গাড়িতে বড় বড় গাছের ছাঁয়ায় ঢাকা রাস্তায় বেশ লাগছে ।আমার এই প্রথম ঘোড়ার গাড়িতে চরা।এমনিতে কলকাতায় ঘোড়ার গাড়িতে চরার উপায়ও নেই। এখন কলকাতার রাস্তায় ঘোড়ার দেখা মেলে না,তবে এই জায়গাটা কলকাতা থেকে দূরে না হয়েও ঘোড়ার টানা গাড়ি চলছে অনেক।


জায়গাটা কলকাতার বাইরে, বালী মাকালতলা।এখানে বাঁশঝাড় আছে, পুকুর আছে, পুরোনো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ আছে, রাতে শেয়াল ডাকে, এমনকি জ্যোৎস্না উঠল টের পাওয়া যায়। তবে আমার কাছে এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় একটি জায়গা হল একটি গোলাপ বাগান।আসলে ঠিক বাগান নয় বাগান বাড়ি।

– নেমে পর অভি, বাকিটা পায়ে হেটে!

ভাবনার মাঝে হঠাৎই গাড়িটা থেমে গেল।দেখলাম উদয়দা নেমেই ঠোঁটের ফাঁকে একটা সিগারেট গুজে জ্বালিয়ে ফেললো। উদয়দা আমার খুড়তুতো ভাই। আমাদের বাড়িতে উঠেছে মাস ছয়এক হলো।এরই মধ্যে উদয়দাকে আমার বেশ ভালো লেগেছে। অবশ্য ভালো লাগাটা আমার একার নয়, বাবার কথা বাদ দিলে বাড়ির সবাই উদয়দাকে পছন্দ করে। বিশেষ করে আমার মা উদয়দাকে ভীষণ স্নেহ করে। আর পছন্দ না করেই বা উপায় কি? রহস্য কার না ভালো লাগে বলুন! আমি মনে করি বাবা বেজায় বে রসিক মানুষ। নইলে মাসখানেক আগে ব্যানার্জী বাড়ি গহনা চুরির ব‍্যাপারে উদয়দাকে যখন সবাই বাহ্ বা দিল, তখন বাবা এমন ভাব করলেন যেন চোর ধরাটা একদম সহজ ব‍্যাপার, যে কেউ পারে। কিন্তু চোরটা যদি সাধারণ চোর না হয় তবে!


কিন্তু আজ ওই ঘটনা নিয়ে কথা বলবো না।তবে যে ঘটনা নিয়ে কথা বলবো তার আগে আমার পরিচয় টা সেরে নিই। আমি অভিজিৎ গাঙ্গুলী,তবে সবাই অভি বলে ডাকে। আমি,আমার বড়দা,বৌদি,দিদি ও বাবা-মা এই নিয়ে কলকাতার নবীন পাল লেনের পুরোনো একটা দোতলা বাড়িতে আমাদের পরিবার।বাবা যদিও বলেছে উদয়দা এখন থেকে আমাদের সাথেই থাকবে, তবুও এখনি নিশ্চিন্ত হবার কোন কারণ নেই। বলা তো যায় না হয়তো হঠাৎ তার মনে হবে পাহাড় চড়তে বা সমুদ্র ভ্রমণ করতে, কে জানে ওর মনের খবর!


আমার বয়স সবে ১৪,উদয়দার ২৪,কিন্তু তার পরেও উদয়দার ব‍্যবহার আমার সাথে বন্ধুর মতো।তার বিশেষ একটা কারণ আমার খুব একটা বন্ধু বান্ধব নেই, ঐ হাতে গোনা দুজন,তাও বাড়ি এতো দূরে যে দেখা করা মুশকিল। তাই সারাক্ষণই আমি উদয়দার আশেপাশে ঘোরাঘুরি করি।অবশ্য এর একটা বিশেষ কারণও আছে। উদয়দা বলে রহস্য রোমাঞ্চকর সব বই পড়তে পড়তে ওর রহস‍্যের প্রতি একটা টান তৈরি হয়েছে।আর সেই থেকেই ওর শখ চলে যায় গোয়েন্দাগিরিতে। বাড়িতে মাঝেমধ্যে বাবা উদয়দাকে শখের গোয়েন্দা বলে ডাকে। তবে এখানে বেরাতে এসে সত্যি সত্যিই এমন এক রহস্যের মুখে পরবো তা ভাবিনি।

আমরা এখানে এসেছিলাম সপরিবারে কয়েকদিনের জন‍্যে বেড়াতে। দাদা বৌদির মধ্যে কিছুদিন যাবত কি নিয়ে যেন সমস্যা চলছে।তাছাড়া বাবা তার ছুটির সময়টা কলকাতার বন্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে ঘোরাঘুরি করতে ভালোবাসে। একটু শান্ত পরিবেশে এলে যদি পারিবারিক কলহটা ঠিক হয় তাই বোধকরি সবাইকে নিয়ে ঘুড়ে আসার বাবার এই প্ল্যান।

এদিকে বাবা যখন ব‍্যানার্জী কাকুর সামনে ঘুরতে যাওয়ার কথা তুলেন,তখন কাকু নিজেই আমাদেরকে এখানে কয়েকদিন ঘুরে যাওয়া অফার করলেন। এখানে উনার এক মামার বাড়ি খালি পরে আছে। তার মামা এখন আর বেচেঁ নেই।আর মামাতো ভাইবোন সবাই বিদেশে,বাড়ি থাকে শুধু মাঝ বয়সী এক চাকর। তবে আমরা এলেও ব‍্যানার্জী কাকু আসতে পারলেন না।


যেদিন প্রথম এলাম,সেই দিনই বাগান বাড়িটা চোখে পরল।উচু পাচিলের দিয়ে ঘেরা বিশাল এক জায়গা।সামনে বিরাট একটা লোহার গেইট। গেইটের ওপড়দিকে বড় করে লেখা "গোলাপ কুঠির"।উদয়দা অবশ্য বলেছিল কুঠির বলতে এখন কিছুই নেই।আগে নাকি কাঠের তৈরি বেশ বড় একটা কুঠির ছিল,পরে ভেঙে নতুন করে বাড়ি বানানো হয়েছে।

গোলাপ কুঠিরকে ডানে ফেলে সোজা রাস্তায় আর দশ মিনিট গেলেই ব‍্যানার্জী কাকুর মামার বাড়িটা পরে হাতের বাঁ পাশে রাস্তার সাথেই। কাঠের তৈরি পুরোনো গেইটটা পেরুলেই চোখে পরে বেশ কিছু আম গাছ,আর মাঝখান দিয়ে একটা লাল ইটের রাস্তা সোজ মিশেছে সাদা রঙের বাড়িটার বারান্দায়।

বাড়িটা একতলা তবে ছাদে দুটো ঘর আছে।একটায় আমি আর উদয়দা উঠেছি অন‍্যটা স্টোর রুম।এছাড়া নিচে রান্নাঘর ও বৈঠকে ঘর সহ ছয়টা রুম। তবে সমস্যা হল বাথরুম একটাই, তাও আবার নিচে। তবে ঘুরতে এসে এইসব নিয়ে চিন্তাভাবনা করলে চলে না।

রাস্তার পাশ দিয়ে উদয়দার সাথে হাটতে হাটতে প্রশ্ন করলাম,

– আচ্ছা উদয়দা দাদা বৌদির মধ্যে কি চলছে বলতো? কিছুই বুঝতে পারছি না।

উদয়দা সিগারেট একটা লম্বা টান দিয়ে বলল,

– ওসব তোর এখনও বোঝির বয়স হয়নি অভি,এই বয়সে সংসারের মারপ্যাঁচে থেকে যতটা বাইরে থাকতে পাড়িস, ততোই ভালো।

– মোটেই না, আমার বেশ বয়স হয়েছে, এইতো এই মাসে আমি ১৪তে পা দিয়েছি।

– উঁহু্, এখনো দু'মাস ৭ দিন বাকি।

– ঐ একি কথা, তুমি বল আমি ঠিক বুঝে নেব।

উদয়দা কিছুক্ষণ আপন মনে সিগারেট টেনে একসময় বললো,

– জানিস তো অভিসারের আইডিয়াটি ভারি মিষ্টি, অবশ্য যদি অভিসারিকা পরস্ত্রী হয় তো। নিজের স্ত্রী অভিসার করলে বোধহয় তত মিষ্টি লাগে না।

– মানে!

– মানে,রতিসুখসারে গতমভিসারে মদনমনোহরবেশম্।

– কি আবোল-তাবোল বকছ উদয়দা,

শেষের একটা টান দিয়ে উদয়দা সিগারেট টা রাস্তার এক পাশে ফেলে দিল,তারপর গম্ভীর মুখে বলল,

– আবোল-তাবোল নয়, এটা গীতগোবিন্দ। তবে তোকে এখন বোঝানো যাবে না। আগে কলকাতা ফিরি,তখন নিজেই দেখতে পাড়বি।

উদয়দা কি বলছে বুঝতে পারলাম না।তবে এটুকু বুঝলাম দাদা বৌদির মধ্যে বড় রকম কিছু একটা হয়েছে।কিন্তু তাই বলে কি আর চুপ করে থাকা চলে!কিছুটা এগিয়ে আবার বললাম,

– আমরা কোথায় যাচ্ছি উদয়দা?

– গোলাপ কুঠির।

– গোলাপ কুঠির! মানে সেই বাগান বাড়ি?

– ইয়েস! সেই বাগান বাড়ি,তোর বাবা মনে হয় আমাকে ওতটাও অপছন্দ করে না।

– সহজ ভাষায় বল, বুঝতে পারছি না।

– আজ সকালে বাড়ির সামনে তোর বাবার সাথে গোলাপ কুঠিরের ম‍্যানেজার প্রীতম বাবু কথা বলছিল,যদিও নামটা পরে জেনেছি এবং কারণটাও।

– কিন্তু বাবা উনাকে চেনে নাকি? কই বাবা তো কখনো বলেনি এখানে বাবার কোন বন্ধু থাকে।

– তোর বাবা বুঝি সব কথা বলে তোকে।

– না মা-মানে ঠিক তা নয়,কিন্তু ....

আমি চুপ মেরে গেলাম।গোলাপ কুঠিরের ম‍্যানেজার বাবার বন্ধু হলেও অবাক করার মতো কিছু নয়। কিন্তু এর সাথে বাবার উদয়দাকে পছন্দ করার বিষয়টা বুঝতে পারছি না। উদয়দাকে প্রশ্নটা আবারও করব ভাবছি এমন সময় উদয়দাই বলল,

– সকালে জগিং করতে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দেখি তোর বাবা একজন ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছে। আমার অবশ্য তোর বাবার সামনে পড়ার ইচ্ছে ছিল না। প্রাথমিক পরিচয়ের পর সটকে পরার তালে ছিলাম। তখনি ভদ্রলোকের মুখে একটা বেখাপ্পা শব্দ শুনে দাঁড়িয়ে গেলাম।

কথাটা শেষ করে উদয়দা পাঞ্জাবীর ডান পকেট থেকে একটা ভাজ করা কাগজের টুকরো আমার দিকে এগিয়ে দিল। নীল রঙের কাগজটা খুলে দেখলাম আঠা দিয়ে আটকানো ছোট ছোট তিন টুকরো কাগজ জুড়ে একটা বাক্য তৈরি হয়েছে " মর্টেমের" আমি উদয়দাকে কাগজটি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম,

– পোস্ট-মর্টের শুনেছি কিন্ত সঠিক জানিনা,এটাকি সেই রকম কিছু? ঠিক বুঝতে পারছি না!

উদয়দা কাগজটা আমার হাত থেকে নিয়ে পকেটে রেখে দিয়ে বলল,

– ইংরেজিতে "পোস্ট-মর্টেম" শব্দটি ল্যাটিন থেকে পোস্টের জন্য এসেছিল, যার হল অর্থ "পরে"।অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতদেহ বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর কারণ জানার যে চেষ্টা করা হয়, তাকেই পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত বলা হয় এটা। তবে মর্টেমের শব্দটির অর্থ "মৃত্যু"।

হঠাৎ মৃত্যুর কথা শুনে গা টা যেন কেমন শিরশির করে উঠলো একবার।,তবে পরক্ষণেই সামলে নিয়ে প্রশ্ন করলাম,

– কিন্তু এই কাগজে এই ভাবে মর্টেমের লেখার মানে কি! কেউ কি ভদ্রলোকের মৃত্যুর হুমকি দিয়েছে?

আমি নিজে রহস‍্য রোমাঞ্চের ও গোয়েন্দাগিরি অনেক বই পরেছি। সুতরাং হুমকি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা আমিও জানি। উদয়দা হঠাৎ দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখতে দেখতে বলল,

– চিঠিটা ঠিক কাকে উদ্দেশ্য করে দেওয়া হয়েছে সেটা একটু গোলমেলে। এবং হুমকি কি না তাও এখনও বলা যায় না। কেউ মজা করেও করতে পারে,তাই নয় কি।

এরপর কথা বলতে বলতে গোলাপ কুঠিরের চার পাশে একবার চক্কর দেওয়া হয়ে গেল আমাদের।উদয়দা ঠিক কিভাবে কাজটা পেল পুরোপুরি না জানলেও এটুকু বুঝলাম যে, বাড়ির মালকিন চাইছেন না এ নিয়ে জল ঘোলা হোক।কিন্তু ম‍্যানেজার বাবু বাড়ির মালকিনের বাবার বন্ধু ছিলেন।সুতরাং তিনি বিষয়টা একদম ছেড়েও দিতে পারছেন না।

বেশ কয়েকদিন যাবত তিনি এই চিঠি নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। কারণ তার অর্থ উনার জানা ছিল না।উদয়দার সামনে আনমনে বলে ফেলায় উদয়দার সাথে ওনার এই বিষয়ে কথা হয়। এবং চিঠির অর্থ জানার পড় তিনি আরো চিন্তিত হয়ে পড়েন।সেই সাথে বাবার মুখে উদয়দার শখের গোয়েন্দাগিরি কথা শুনে বিকেলে বাগান বাড়িতে যেতে বলেন।

লোহার গেইট পেছনে ফেলে ভেতরে ডুকতেই চোখে পরে পাথর বাঁধানো পথ। এগিয়ে যেতে যেতে দুই পাশে সারি বেঁধে সাজানো দেশি বিদেশি ফুলের গাছ‌।আমি হাটতে হাটতে সেগুলো চেনার চেষ্টা করছিলাম।

বাড়িটা দোতলা,এবং নিচের তলাটা পাথরের রাস্তাটি থেকে বেশ উঁচু। পাঁচটি সিড়ি পেরিয়ে তবে বারান্দা শূরু হয়েছে। বারান্দায় উঠতে হাতের বাঁ পাশে একটা বসার টেবিলে রাখা হয়েছে।সেখানে বসে বাবা আর এক ভদ্রলোক কি নিয়ে আলোচনা করছিল।

লোকটা বাবার বয়সী,মাথায় কাঁচাপাকা চুল,মাঝারি গড়নের,গায়ের রঙ বেশ উজ্জ্বল, কিন্তু চোখ মুখে কেমন যেন একটা অস্থিরতা ফুটে উঠছে। অবশ্য অতিরিক্ত চিন্তার ফলে এমন হতে পারে।

আমরা বারান্দায় উঠতেই একটি মেয়ে চা নিয়ে এল। উদয়দাকে দেখে লজ্জা পেয়েই বোধকরি চায়ের স্ট্রে রেখেই ভেতরে চলে গেল। মেয়েটার পড়নে সাধারণ একটা শাড়ি,দুই হাত খালি,শুধু বাঁ পায়ে একটা নূপুর দেখতে পেলাম, মাথায় ঘোমটা থাকায় মুখটা ঠিক মত দেখতে পেলাম না। মনে হয় বাড়ির চাকর-টাকর হবে হয়তো। তবে মেয়েটির গায়ে রঙ অতিরিক্ত রকম ফর্সা আর সেই সাথে উচ্চতাও দেখার মতো,প্রায় উদয়দার কাছাকাছি।বাঙ্গালী মেয়েদের এমন উচ্চতা সচরাচর দেখা যায় বলে তো মনে হয় না। আমাদের দেখেই ভদ্রলোক বসতে বললেন।একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে উদয়দা বলল,

– কাদম্বিনী দেবী বেশ লাজুক মনে হচ্ছে,আমাদের কে মনে হয় আশি করেননি।

ভদ্রলোক অবাক হলেন,আমি নিজেও কিছুটা হলাম। উদয়দার কথা শুনে বুঝলাম এই মেয়েটি বাড়ির মালকিন। এদিকে আমি কিনা চাকর ভেবে বসে আছি। ভদ্রলোক একটা চায়ের কাপ বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে উদয়দার দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেন,

– তোমাকে আমি নাম বলছি বলে মনে হচ্ছে না, তাছাড়া বাড়িতে কাদম্বিনী ছাড়াও আরও দুজন মহিলা আছে সিওর হলে কিভাবে?

উদয়দা একটু হাসলো,তারপর বলল,

– একজন আপনার স্ত্রী, ও অন‍্য জন বাড়িতে কাজ করে। আনদাজ করা কঠিন নয়, কারণ আপনার স্ত্রীর বয়স নিশ্চিয় আঠারো বা বিশ নয় তাছাড়া বাড়ি চাকরের গলায় হিরের নেকলেস দেখেছেন কখনো।

– আর নামটা?

– ওটা কাকতলীয় বলতে পারেন,এখানে সেদিন আসা তার আগের দিন কলকাতায় একটা ফুলের দোকানে ঢুকেছিলাম। সেখানে এই বাড়ির ছবিটা ছিল, ফুলের দোকানের নামটা তো ওনার নামে তাই নয় কি?

কাকতলীয় বটে,তবে শুধু নামটা।আমার জনা মতে সেই দিন কোন পূজো ছিল না। সুতরাং উদয়দা ফুলের দোকানে কেন গিয়েছি আর ছবির ব‍্যপারখানা বা কি, যেটা যতখন না জানছি ততখনে পেটের ভেতরে শুধু ঘুরঘুর করবে, কোন কিছুতেই শান্তি পাবো না।

ভদ্রলোক এবার মাথা নিচু করে একটু হাসলেন।তারপর বললেন,

– তবে এতখন ধরে যা শুনলাম তা মোটেও বানানো গল্প নয়, তা তোমার চা চলবে তো?


– কোনটা মিথ্যে আর কোনটা সত্যি তা নির্ভর করছে কি শুনেছেন তার ওপড়ে। আর হা এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না।

একটু পরেই একটি মেয়ে আর এক কাপ চা সাথে কিছু বিস্কিট ও একগ্লাস চকলেট মিল্ক এনে আমাদের সামনে টেবিলে রাখলো। ভদ্রলোক উদয়দার দিকে কাপটা ঠেলেদিয়ে বললেন,

– তারপর চিঠিটা দেখে তোমার কি মনে হয়?

উদয়দা চিঠিটা বের করে টেবিলে মেলে ধরে বলল,

– চিঠির অক্ষরগুলো নানারকম বই থেকে নেয়া হয়েছে— কারণ হরফ ও কাগজে তফাত রয়েছে। যেমন মর্টেমের "ম" এবং "র্টে" নেওয়া হয়েছে বই থেকে এবং "মের" নেওয়া হয়েছে খবরের কাগজ থেকে। যদি বাড়ির কেউ করে থাকে,তবে এই কয়েকদিনের খবরের কাগজ দেখলে বোঝা যাবে।এছাড়াও যে আঠা দিয়ে আটকানো হয়েছে সেটির গন্ধটা গ্রিপেক্স আঠার মতো।

ভদ্রলোক উদয়দার কথা শুনে খানিক চুপ থেকে বললে,

– খবরের কাগজের ব‍্যপারটা আমি দেখেছি কিছুই পাওয়া যায়নি এগুলো সব ঠিক ভাবেই আছে, আর এরকম আঠা এখানে থাকার কথা নয়।

উদয়দা চা শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

– আপনি বলেছিলেন যেখানে চিঠিটা পেছেন সেখানে চিঠিটা রাখা অসম্ভব,এর কারণ?

– চিঠিটা যেখানে ছিল সেটা আমার অফিস ঘর।তাই ঐ ঘরে বেশি লোক ঢোকে না,বেশিরভাগই সময় ওটা তালাবদ্ধ থাকে আর তার চাবি একটা থাকে আমার কাছে অন‍্যটা কাদম্বিনীর কাছে। সুতরাং ঘরে অন‍্য কারো ঢোক অসম্ভব।

– কিন্তু ঢুকেছে!

উদয়দা চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বলল কথাটা।তারপর চিঠিটা আর একবার দেখে নিয়ে বলল,

– দেখুন আমি এখানে আসার আগে বাড়ির চারপাশে ভালো ভাবে দেখেছি।বাইরে থেকে এত উঁচু দেয়াল টপকানো সহজ ব‍্যপার নয়।

এতখন বাবা চুপচাপ বসে ছিল,এবার বাবা মুখ খুলল,

– দেওয়াল টপকানোর প্রয়োজন পরবে কেন যদি কাজটা সহজেই হয়।

আমার সবাই বাবার দিকে তাকালাম।

– প্রীতম বাবু আপনি পার্টির কথাটা বলছেন না কেন?

আমি দেখলাম পার্টির কথা শুনে উদয়দা ভ্রু কুচকে ম‍্যানেজার বাবুর দিকে তাকাল।

– পার্টি টা বাড়ির পেছনে বাগানের কাছে হয়েছিল।ওদিক থেকে কেউ তো এখানে আসেনি, তাই ভাবলাম..

ওনার কথা শেষ হলো না,তার আগেই উদয়দা বলল।

– আপনি শুধু পার্টির কথা নয়,আর কিছু কথা চেপে গিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

– মানে ঠিক বুঝলাম না।

– আপনি বলেছিলেন এখানে আপনি ও আপনার স্ত্রী, কাদম্বিনী, দুজন দারোয়ান ও দুটি চাকর থাকে,কিন্তু আমি এই বাড়িতে ঢুকেই লক্ষ্য করলাম ঢোকার মুখে ফুল গাছের পাশে একটি পুতুল পরে আছে এবং আর কিছুটা এগিয়ে চোখে পরলো একটি বিলেতি সিগারেটের প‍্যাকেট।আমার মনে আছে সকালে যখন কাকা আপনাকে সিগারেট অফার করে তখন আপনি না বলেন,অবশ্য আপনার বাড়ির চাকদের যদি বিলেতি টানা শখ থাকে তবে সে কথা আলাদা।


হঠাৎ করেই যেন ভদ্রলোকের মুখের ওপড় থেকে অস্থিরতাটা কেটে গিয়ে একটা হাসি ফুটে উঠলো। আসলে শখের গোয়েন্দা বলে প্রীতম বাবু উদয়দাকে ঠিক ভরসা করতে পারছিলেন না। এবার উদয়দার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বুদ্ধির চাক্ষুষ প্রমাণ পেয়ে হাসি মুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন‌,

– এসো বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করাতে করাতে বাকি কথা বলি।


উদয়দা ও বাবা উঠে দাঁড়ালেন,আমার নিজেরও ওদের সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল,কিন্তু বাথরুমের চাপটা এতো পরেছিল যে আর উপায় ছিল না। ম‍্যানেজারে বাবুর বলে দেওয়া দিকনির্দেশনায়

আমি বাড়ি ভেতরে ঢুকে বৈঠক ঘর পেরিয়ে আমরা সোজা উত্তরদিকে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলাম। বাথরুমটা উত্তর দিকের একদম শেষের দিকে বেশ কিছু ঘর পেরিয়ে। বাথরুম থেকে ফ্রেস হয়ে যখন ফিরছি,তখন হঠাৎ একটি খোলা ঘর থেকে পুরুষ কন্ঠে কথা বলতে শোনা গেল,


– এই তো আর কয়েকটি দিন,তারপরই আমাদের বিয়ে হবে, নিজের স্বামীর কাছে কিসের লজ্জা, দেখি এদিকে এসো..

তারপর কিছু পরার শব্দ,আমি হঠাৎই বুকের মাঝে একটা ভয় অনুভব করলাম।এই লোকটা কে, আর কাকেই বা কাছে আসতে বলছে!

ধিরে ধিরে খোলা দরজার সামনে এসে দেখলাম,ঘরের ভেতরে সেই ফর্সা মেয়েটি,কিন্তু এখন তার মুখে কোন ঘোমটা নেই,শুধুমাত্র একটি সাদা বুকের একটু ওপর থেকে নিতম্বের অল্প নিচ অবধি তোয়ালে জড়িয়ে, মেয়েটি আলমারি সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার অপূর্ব সুন্দর মুখমন্ডলে একরাশ ভয়ের ছাপ,মাথার লম্বা ও ভেজা চুল কাঁধের একপাশ দিয়ে নেমে এসেছে কোমড়ের নিচে। হরিণীর মতো ডাগর চোখ দুটির নীল। আমি এক বাক্যে বলতে পাড়ি এই মেয়ে বাঙালী হতেই পারেনা।

– তুমি কে!এখানে কি করছো?

এবারের আমি ঘরে থাকা পুরুষটিকে দেখতে পেলাম। বয়স হবে উদয়দার মতো। উদয়দার থেকে এর গায়ের রঙ ফর্সা তবে উদয়দার মত ফিটফাট নয়। চোখে একটা সোনালী ফ্রেমের চশমা, দাড়ি-গোফ হীন চাছাছোলা মুখ।

আমি যখন ছেলেটিকে দেখছি,তখন মেয়েটি একটা অবাক কাজ করলো। সে ছুটে এসে আমাকে নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে অন্য একটি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল।ঘটনাটা এত জলদি হলো যে কোন প্রতিক্রিয়াই দেখানো গেল না। ঘরে ঢুকেই মেয়েটি দরজার পাশে মেঝেতে বসে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কাঁদতে লাগলো।আর আমি কি করবো বুঝতে না পেরে বোকার মত দাঁড়িয়ে রইলাম।


অবশেষে যখন বেরিয়ে এলাম তখন উদয়দা বাড়ির পেছনে বাগানে। বাড়ির পেছনে গিয়ে বেশ খানিকটা দুর থেকেই বুঝলাম উদয়দা একটা ছুড়ি এক হাতে একবার উপড়ে ছুরছে আর অন‍্য হাতে লুফে নিচ্ছে। এটা উদয়দাকে আগের করতে দেখেছি।এরপর ছুড়িটা উদয়দা কোন এক নিদির্ষ্ট জায়গা টার্গেট বানিয়ে ছুড়িটা ছুড়ে মারবে।এইরকম হাতের খেলায় উদয়দা বেশ পাকা। বুঝলাম পরিচয় পর্ব শেষ,এবার উদয়দার থেকেই বাকি ঘটনা জানতে হবে।তবে আমারও কিছু বলার আছে।আরও খানিকটা এগুতেই উদয়দা তার হাতের ছুড়িটা সামনে আম গাছের দিকে ছুড়ে দিল,আর ওমনি ছুড়িটা একটা আমের গায়ে এফোরওফোর ঢুকে আম সমেত মাটিতে পড়লো।এই দৃশ্য দেখে প্রীতম বাবুর পাশে দাড়িয়ে থাকা একটি দশ বা এগারো বছরের মেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো।


এটি আমার প্রথম রহস্য গল্প,খুব একটা ভালো হবে আশা করি না।তবে ভালো লাগলে অবশ্যই বলবেন চলবে কি না?
[+] 6 users Like বহুরূপী's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: গল্পের খাতা ( রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ গল্প নং ১– গোলাপ বাগানে গন্ডগোল) - by বহুরূপী - 07-07-2024, 12:10 AM
RE: গল্পের খাতা - by buddy12 - 18-08-2024, 10:03 PM
RE: গল্পের খাতা - by zahira - 10-11-2024, 01:16 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)