15-06-2024, 07:21 PM
(This post was last modified: 15-06-2024, 11:42 PM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ১৫
দু'তিন দিনের চিন্তিত ও ব্যথিত হৃদয় লইয়া হেমলতার সময় ভালো কাটিলো না। চিন্তার বিষয়টি যে কি,তা পাঠকেরা নিশ্চয়ই অবগত। তবে এই দু'তিন দিনে তাহাদের বাটীতে অচেনা কিছু লোকের নিত্য সমাগমে একজনের মুখ দেখিয়াই, আমাদের সরল মনের হেমলতার রাতের ঘুম উড়িয়া গিয়াছে। দিদির অবর্তমানে ঘরকন্যা হেম দেখিলেও,তাহাকে দেখিবার মত কেউই ছিল না। তাই বাড়ি ফিরিয়য়া কয়েকদিন মনমরা থাকিবার পর,আজ সমস্ত বিকেল ধরিয়া কেবল মন্দিরাকে লইয়া মনের মতো করিয়া যখন ঘর সাজাইল। তখন ইহার হেতু জানিবার অবশ্যক কেহই মনে করিলো না। এরপর কিছুটা ভয় ও সন্দেহ বুকে লইয়া সন্ধ্যার পূর্বে আপনি সাজিতে বসিল। সাবান দিয়া মুখ ধুইয়া তাহাতে পাউডার দিল, আলতা গুলিয়া পায়ে দিল, পান খাইয়া ওষ্ঠ রঞ্জিত করিল। সঞ্জয়ের দেওয়া চুড়ি গুলি হাতে ও পায়ে নূপুর পড়িলো। তাহার পর গলায় একখানি সরু সোনার চেইন পরিয়া দেহের সাথে আঁটিয়া শাড়ি পরিল; চুলে বেনি বাঁধিয়া আবার কালো একখানি টিপ পরিল।অবশেষে আয়নায় মুখ দেখিয়া মনে মনে হাসিয়া বলিল, পোড়া অদৃষ্টে আরও কি আছে!
ঘটনাখানি গতকাল রাত্রির আঁধারে ঘটিয়া গিয়াছে।দিনে সকল গৃহ কর্মের সমাধা করিয়া এবং ঘরে সন্ধ্যা প্রদিপ দিয়া হেমলতা জানালার পাশে বসিয়া ছিল। নক্ষত্র পুঞ্জ খুব সম্ভব কোন কারণে অভিমান করিয়া মেঘের আড়ালে লুকাইয়া পরিয়াছিল।চন্দ্রিমা হঠাৎ হঠাৎ ভাসিয়া আবারও ডুবেতেছিল। কয়েকদিন মেঘ মেঘ করিয়াও যে মেঘ ঝরিতে চাহিতেছিল না;সে মেঘ আজ নামিয়া সঞ্জয়ের গা ভিজাইয়া একদম শিতল করিয়া দিল। অবশ্য ততক্ষণে সঞ্জয় যাহা করিতে আসিয়াছিল তাহা নির্বিগ্নে সম্পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। আষাঢ় নামিবার আগেই তার পত্রখানি একখানি পাথরের সহিত বাঁধিয়া গরাদহীন জানালা দিয়া পাচার করা হইয়া গিয়াছিল। ভাগ্য ক্রমে হেমলতাও জানালার পাশেই ছিল।তবে সমস্যা হইলো ফিরিবার পথে। পত্র দিয়া যখন সে পালাই পালাই করিতেছে,ঠিক তখনই আষাঢ় নামিলো আম বাগানের পথে।
সঞ্জয় যে খান দিয়া আসিয়াছে, এখান হইতে প্ৰায় পনেরো মিনিট ধরিয়া মেঠপথে অনবরত আম বাগান ও পরে জঙ্গলা অতিক্ৰম করিয়া। তবে নদী ঘাটে পৌছানো যায়। আম বাগানে পথ নির্বিঘ্নে পার করিলেও,বাগানের শেষে জঙ্গলার পথে বন-চালিতা ময়না-কঁটা ষাঁড়া গাছের দুৰ্ভেদ্য জঙ্গল পার করিতে তাহার অবস্থা দেখিবার মতো হইবে। ভরশা একটা এই যে দেবু পথের শেষে আলো লইয়া দাড়াইয়া আছে।নয়তো ও পথে জনপ্রাণীর বাস নাই। তবে এই বৃষ্টিতে আলো জ্বলিবে বলিয়া মনে হয় না। সুতরাং অন্ধকারেই চলিতে হইবে।
আম বাগান পার হইতেই হঠাৎ বৃষ্টি আরও বারিয়া গেল।ভিজে মাটির সোঁদা সেঁন্দা গন্ধ ও মোটা মোটা ফোটায় চড়বড় করিয়া গাছের পাতায় বৃষ্টি পড়িবার শব্দ শুনিতে শুনিতে তারা দুজনে যখন নদী ঘাটের কাছাকাছি আসিলো। তখনই ক্কড়-ক্কড়-কড়াৎ… শব্দে বন-বাগানের অন্ধকার মাথাটা যেন এদিক হইতে ওদিকের নদী ঘাট পর্যন্ত চিরিয়া গেল-চোখের পলকের জন্য চারিধার আলো হইয়া উঠিল—সামনের গাছের ফাঁক দিয়া নদীর তীরে তাহাদের ছোট্ট নৌকা খানি দুলিতে দেখা গেল।
বৃষ্টির ঝাপটায় তাহাদের কাপড় চুল ভিজিয়া টসটস করিয়া জল ঝরিতেছে। বনের বাহিরে পা রাখিতেই মাথার ওপড়দিয়া গুমগুমু গুম-ম-ম-চাপা গভীর ধ্বনিতে-একটা বিশাল লোহার রুলকে যেন আকাশের ধাতব মেঝেতে এদিক হইতে ওদিকে কেহ টানিয়া লইলো।সঞ্জয়ের পেছনে দেবু ভয় পাইয়াছিল,এবার আর থাকিতে না পারিয়া বলিয়া ফেলিল,
– সঞ্জয়দা! এই অবস্থায় নৌকায় উঠলে যদি কিছু হয়।
সঞ্জয় পেছন ফিরিয়া বলিল,
– ভয় কিরে!একবার চোখ বুঝে নৌকায় উঠলেই হল, ভয় নেই, আয়ঃ
ভয় নেই কথাটা দেবুর বিশ্বাস হইয়াছিল কি না তা বলিতে পারি না। তবে চারিধারে যখন শুধু মুষলধারে বৃষ্টিপতনের হুস-হুস-স-স-স একটানা শব্দ, তখন সঞ্জয়ের সাথে সাথে দেবুও নৌকা ঠেলিয়া এক লাফে উঠিয়া বসিলো। তবে বৃষ্টি মাথায় করিয়া বাটীতে ফিরিবার পরেও রেহাই মিলিলো না।
চুরির ঘটনা খানি নয়নতারা মনে খচখচ করিতেছিল।সন্দেহ তাহার কিছুটা হইলেও তার মা যে এমনটা করিতে পাড়ে ইহা বিশ্বাস করিতে মনে চাহিতেছিল না।ইহা তাছাড়াও অনেক ঘটনা তাহার অজানা, তাই সব মিলাইয়া হিসাব কষিলেও,হিসাব কোন মতেই মিলিতেছে না। তবে দেবুর বলা ঘটনা শুনিয়া নয়নতারা বুঝিয়াছে ইহা কোন সাধারণ চুরি নহে,যাহা হইয়াছে তাহা আরও বড় কোন সমস্যার সৃষ্টি করিবার উদ্যোগ মাত্র। ইহা ভাবিয়াই নয়নতারার মন ব্যাকুল ও পরাণ শুকাইয়া যাইতেছে।
কিন্তু অনেক ভাবিয়াও কোন কারণ সে খুঁজিয়া পাইলো না। নয়নতারা তার মায়ের স্বভাব জানিত,সেই সাথে এও জানিত তার স্বামীর মনে সঞ্জয়ের ভালো বা মন্দ দেখিবার কোন উৎসাহই নাই। সে নিজের স্বার্থে তার ভাইয়ে ক্ষতি করিতেও দু-দন্ড ভাবিয়া দেখিবে না। তাহার নেশাখোর স্বামী ঠিক কি উপায়ে তাহাদের বাড়ি উদ্ধার করিতে পারে,ইহা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারার সন্দেহ ঘুরিয়া ফিরিয়া তাহার মা ও স্বামীর ওপড়ি পড়িতেছে।
ইহা ছাড়াও তাহার আর এক চিন্তা হইয়াছে সঞ্জয়। নয়নতারা ইতি মধ্যেই তার মায়ের কাছে হইতে পত্র পাইয়াছে। যদিও বা পত্রখানা তাহার বাবার নামে আসিয়াছিল, তবুও সে পত্রখানি নিজেই পড়িয়াছে এবং কপাল দোষে সঞ্জয় তাহা শুনিয়াছে। পত্র যেহেতু উহাদিগের পড়া হইয়া গিয়াছে,তখন আর পাঠকদের ক্লেশ দেওয়া কেন! শুধু ইহা জানানো আবশ্যক যে; পত্রটি মিনতী দেবির হইয়া নয়নতারা স্বামী লিখিয়াছিল। পত্রে বিশেষ করিয়া তাহাদের বাটীতে ফিরিবার অনুরোধ নহে রিতিমত আদেশ করা হইয়াছে। এবং আরও বলা হইয়াছে উহারা গেলেই পাত্রপক্ষ হেমলতাকে দেখিতে আসিবে। আর পাত্রপক্ষ যে কে তাহা পাঠকের অজানা নহে।আর অবশেষে সৌদামিনী! তাহার কথাই বা ভুলিবে কি করিয়া!
তাই রাত্রিকালে সঞ্জয় যে মুহূর্তে প্রবল বর্ষণ মাথায় করিয়া বাড়ি ফিরিল। তখন নয়নতারার আর বুঝিতে বাকি রহিল না সঞ্জয় কোথা হইতে ফিরিলো।
সঞ্জয় ও দেবু বাটীতে ফিরিয়া দোরের সমুখে মূর্তিমান নয়নতারাকে দেখিয়া ভীত হইয়া কহিল,
– বৌদিদি..মণি.. এ কি!
এরপরে যে ঠিক কি হইয়া ছিল,তার আমরা একটু পরেই জানিবো।ইহার আগে হেমলতা কাহার অপেক্ষায় সাজিয়া গুজিয়া জানলার পার্শ্বে উপবেশন করিল,তাহা জানিয়া লই।
এই বাড়িটি সঞ্জয়ের বাড়ির মতো প্রাচীরে ঘেরা না হইলেও, বাড়িটি দোতলা। নদী হইতে সোজা পথে হাটিলে বড়জোর দশ-পনেরো মিনিটের পথ। তবে সে পথে সঞ্জয়ের যাওয়া হইবে না। সঞ্জয় সোজা পথে পা না দিয়া অন্য পথ ধরিয়া ঘুরিয়া, তার দাদা শশুর বাড়ির পেছনে আম বাগানের মাঝে আসিয়া পরিলো। গতকালের প্রবল বর্ষণে জাগায় জাগায় জল জমিয়া কাদা হইয়া গিয়াছে। চাঁদ আকাশে থাকিলেও জ্যোৎস্না ছড়াইবার ব্যপারে আজ সে বড্ড কৃপণতা করিতেছিল।
সুতরাং আলোর অভাবে এতোটা পথ আসিয়া সঞ্জয়ের সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবীতে বেশ কাদা লাগিয়া গিয়াছে। ইহার ফলে নয়নতারার সহজে ব্যপারখানা বুঝিয়া লইবে। আর কি হইয়াছে তা বুঝিলে নয়নতারা তাহাকে কথা শুনাইয়া ছাড়িবে কেন!সে যাইহোক, উহার মিষ্টি শাসনে সঞ্জয়ের বিশেষ কোন ক্ষতি হইবে না।
আম বাগান পার হইয়া বাড়ি পেছনের এখানা গাছ সম্বল করিয়া সঞ্জয় জানালার নাগাল পাইলো। সঞ্জয়ের হাল দেখিলে অনেক মেয়েলোকের হাসি আসিবার কথা। কিন্তু হেমের সরল মনটি সঞ্জয়ের গাছে চড়া দেখিয়া ভীত হইয়া ছিল। তাহার অনেক কথা বলিবার ছিল। কিন্তু বেচারী সঞ্জয়কে সমূখে দেখিয়া সংকোচে দুপা পিছাইয়া গেল।
লাজ লজ্জা বলিতে সঞ্জয়ের যাহা ছিল,তাহা কেবল নয়নতারা সমুখেই খাটিতো। সুতরাং হেমলতা মনের ভাব না বুঝিয়া ঘরে ঢুকিবা মাত্র হাত গলাইয়া পরনের পাঞ্জাবী খানি খুলিয়া ঘরের একদিকে ছুড়িয়া হেমকে কাছে টানিয়া নিল। অবশ্য সঞ্জয় এতটা পার করিয়া হেমলতার কাছে আসিয়াছে শুধু মাত্র হেমকে বুকে টানিয়া নয়নতারাকে ভুলিয়া থাকিবার উদ্দেশ্যে।এ উপায় ঠিক কতটা কাজে লাগিল তা এখনি বলা ঠিক হইবে না। তবে হেমের কোমল নারী দেহের স্পর্শ পাইবা মাত্র, সকল আধুনিক মানব সভ্যতাকে ত্যাগ করিয়া। সঞ্জয়ের যে রূপ বাহিরে আসিলো,তাহা যেন এক ক্ষুধার্ত পশু।তবে বলিয়া রাখা ভালো এই পশুর মুখে নারী মাংস নতুন নহে। ঘটনা বশত নারী মাংসের স্বাদ সে পাইয়াছিল এবং তাহা নিবারণ করিয়া সে সরিয়াও আসিয়াছিল। তবে কলিকাতায় নয়নতারার সহিত ঘনিষ্ঠতা তাহার ক্ষুধা কে দিগুণ করিয়া জাগাইয়া দিয়াছে।অগত্যা যাহা হইবার ছিল তাহা না হইয়া উল্টা হইলো।
হেমলতার মনের ভাব বুঝিবার চেষ্টা মাত্র না করিয়া সঞ্জয় তাহাকে জানালার পার্শ্বে দেয়ালে সহিত ঠাসিয়া মস্তক নত করিয়া হেমলতার ওষ্ঠাধরে একখানি চুম্বন করিয়া,পরক্ষণেই হেমের অধরখানা দন্তের ধারা বন্দী করিয়া চুষিতে লাগিলো।সেই সাথে তার পুরুষালী হস্ত দুখানিও থামিয়া নাই।তাহারা নিজেদের সুবিধা মত হেমলতার বুকের নরম জায়গায় আরামদায়ক ভাবে দখল লইয়া নিজেদের সুখ করিতে ব্যস্ত হইয়াছে,এতটাই ব্যস্ত হইয়াছে যে শাড়ির আঁচল খানি সরাইয়া লইবার অবকাশও মেলে নাই।
অপরদিকে বেচারী হেম রিতিমত অবাক হইয়া গিয়াছে।যদিওবা এমন পরিস্থিতি যে হইতে পারে, ইহা সে জানিত। তবে সে যাহা জানিতো না,তাহা হইলো; যে আগুনে সে পুড়িতেছে, সে আগুনের নামখানি নয়নতারা।সে ভাবিয়াছিল মনের মানুষটির সাথে বসিয়া দু একটি কথা কহিবে,একটু গল্প করিয়া তাহার নিকট একটু সহজ হইয়া সংকোচ দূর করিয়া লইবে। কিন্ত হায়! সেই ভাগ্যি কি তার আছে! তাহাকে যে তার দিদির জ্বালানো আগুনে জল ঢালিয়া নিভাইতে হইবে,কিন্তু ইহা সে জানিতেও পারিবে না।
হঠাৎই সঞ্জয়ের হস্তের গতিবিধি বুঝিয়া হেমলতার সর্বাঙ্গ কাপিয়া উঠিলো।সঞ্জয়ের ডান হাতখানি ধীরে ধীরে তার বুকে আঁচল খানি সঙ্গে লইয়া নিচে নামিতেছিল। হেমলতার ছাড়া পাইবার কোন সুযোগ ছিল না। যতখনে হেম বুঝিয়া পাইলো সঞ্জয় কি করিতে চাহে, ততখনে তাহার মাথার সুদীর্ঘ বেণীখানা সঞ্জয়ের বা হাতে বাধাঁ পরিয়াছে। ওষ্ঠাধর তাহার অনেক আগে আটক হইয়াছিল। হাত দুখানি যদিওবা কেহ বাধিয়া রাখে নাই,তবে ওদুখানি এমন আড়ষ্ট হইয়াছে যে তা আর হেমের কোন কাজেই লাগিল না। এহেন অবস্থায় বেচারী হেমলতার শাড়ির আঁচল মেঝেতে ফেলিয়া দিয়া,তার পায়ের কাছে হইতে সঞ্জয় কাপড় গুটাইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে হেমলতার সুন্দর পা দুখানি ছাড়াইয়া কাপড় তাহার হাটুর ওপড়ে উঠিয়া গেল। বোধকরি এতখন পরে হেমলতার আড়ষ্টতা কাটিয়া গিয়াছিল।বুঝিবা মাত্র সে ব্যস্ত হইয়া হাত বারাইয়া সঞ্জয়ের হাতের গতি রোধ করিতে গেল বটে। কিন্তু ততখনে বড্ড দেরি হইয়া গিয়াছে। ততখনে সঞ্জয়ের আঙ্গুল গুলি হেমলতার পায়ের ফাঁকে সরু সরু চুলে নিড়ানি মত আঁচড় কাটিতেছে। হেমলতা এই নিষ্ঠুর ব্যবহারের প্রতিরোধ করিতে পা দুখানি যথাসম্ভব গুটাইয়া লইলো। কিন্ত পরক্ষণেই বুঝিলো ইহা মোঠেও লাভজনক নহে।কিন্তু হায়! এখন বুঝিয়া কি আর হইবে! বলি কি; তাহার কুমারী যৌনি পুষ্পের দুই পাপড়ি ফাঁকে, এই নিষ্ঠুর পুরুষটির রুক্ষ আঙুলের ওঠানামা বেচারী সহিবে কি করিয়া!
সুতরাং অল্পক্ষণের আলিঙ্গনেই হেমলতা বিহ্বল হইয়া পড়িল। একটু পরে সঞ্জয়ের তাহাকে চুম্বনের বাঁধন হইতে মুক্ত করিলে,অসহায় হেম সঞ্জয়ের বুকে মাথা দিয়া ঠোঁট দুখানি কিঞ্চিৎ ফাঁক করিয়া ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগিলো। তার দুই হস্তের একখানি সঞ্জয়ের ডান বাহু চাপিয়া ও অন্য টি তার গুটানো কাপড় মুষ্টিবদ্ধ করিয়াছিল । তবে এই অবস্থা দেখিয়াও হেমের প্রতি সঞ্জয়ের মনে কোন মায়া জাগিলো না। সঞ্জয়ের অঙুলি তার নিজের গতি বজায় রাখিয়া বেণীখানা ছাড়িয়া হেমের মাথা ধিরে ধিরে হাত বুলাইতে লাগিলো। তবে সঞ্জয়ের বুকে হেম থাকিলেও, ভাবনায় নয়নতারার বিরাজ করিতেছিল।
এইবার উহাদের আলিঙ্গন রত রাখিয়া, আমরা সংক্ষিপ্ত অতিত জানিয়া লই। গতকাল বৃষ্টি মাথা করিয়া ও পোশাকে কাদামাটি মাখিয়া যখন সঞ্জয় বাটীতে ফিরিলো।তখন নয়নতারার বকুনি নিরবে হজম করিয়া সে স্নান করিতে গিয়াছিল। নয়নতারা বাড়ির ভেতর খাবার পাত্র সমুখে লইয়া বসিয়াছিল। অনেকটা সময় পার হইলেও যখন সঞ্জয় ভেতরে আসিলো না,তখন নয়নতারা ভেতরের বারান্দায় আসিয়া দেখিল; স্নান করিয়া সঞ্জয় দোতলা উঠিয়া গিয়াছে। নয়নতারা সঞ্জয়ের পোশাক বারান্দায় রাখিয়া গিয়াছিল। সুতরাং সে খাইবে না বলিয়াই নিজের ঘরে ঢুকিয়াছে। নয়নতারা বিরক্ত মুখে দোতলায় উঠিয়া সঞ্জয়ের ঘরের সমুখে গিয়া হাজির হইলো। ঘরের ভেতর টেবিলের ওপড়ে দুই পা তুলিয়া চেয়ারে পিঠ দিয়া সঞ্জয় কী ঘুমাইতেছে! নয়নতারা প্রমাদ গুনিলো। সে কলিকাতায় সেদিন বুঝিয়াছে এই মানুষটি একবার ঘুমাইলে শতবার ডাকিলেও সহজে উঠিবে না। তখন কি উপায় হইবে!
নয়নতারা ধির পদক্ষেপের সঞ্জয়ের কাছে আসিল। সঞ্জয় ক্লান্ত দেহ লইয়া খালি গায়ে বুকে ওপড়ে এখানি কাগজ চাপিয়া ঘুমাইতেছে। নয়নতারার সেদিকে দেখিয়াই কেমন অস্থির হইয়া উঠিলো। এই উপসর্গ তাহার নতুন হইয়াছে। সেই রাত্রির আগে ইহা কখনোই মনে জাগে নাই। কিন্তু মেলার দিন তাহার কি হইয়াছিল! যেইদিন দিন যখন সে দেখিল, হেমলতা সঞ্জয়ের সমুখে মঝেতে বসিয়া আর সঞ্জয় নিজ হস্তে হেমের হাতে চুড়ি পড়াইতে ছিল।এই দৃশ্য নয়নতারার বুকে আঘাত দিয়াছিল।
কিন্ত হায়!অভাগীনি তখন তাহা বুঝিতে পারে নাই। বুঝিবে কি করিয়া!তার আর সঞ্জয়ের মাঝে যেটুকু যাই ছিল,তাহাতে যে তৃতীয় কেউ আসিয়া ভাগ বসাইতে পারে, ইহা সে কখনোই ভাবিতে পারে নাই। যখন সে ইহা বুঝিয়া পাইলো। তখন সাথে আরও বুঝিলো সঞ্জয়ের প্রতি তার মনে যা আছে,তাহা হইতে ভাগ দিতে গেলে তার হৃদয় পুড়িবে। মনে মনে নানান কথা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারা যেই মুহুর্তে তার দেবরকে ডাকিবে বলিয়া হাত খানি কাঁধে রাখিতে গেল।তার হাত সঞ্জয়ের কাঁধ স্পর্শ করিবার আগে সঞ্জয়ের দেহটি খানিক কাপিয়া বুকের ওপড়ে থাকা কাগজ খানি গড়াইয়া চেয়ারের পায়ের কাছে পড়িয়া গেল। তবে সেদিকে দেখিবার অবকাশ নয়নতারার হইলো না। কারণ কাগজ খানার সাথে তাহার দেবরটিও পরিতে ছিল। সঞ্জয়ের পতন ঠেকাইতে নয়নতারা হাত বাড়াইলেও,উহার পতন ঠেকানো সম্ভব হইলো না।সঞ্জয় মেঝেতে পড়িবার সাথে নয়নতারা তার একদম মুখের ওপড়ে পড়িলো।ইহাতে সঞ্জয় ক্ষণকাল হতভম্ব থাকিবার পর। মুখের ওপড়ে নয়নতারার বুকের কোমল স্পর্শ অনুভব করিবা মাত্র, তাহার ধুতি সহ বিশেষ অঙ্গটি ফুলিয়া উঠিয়া নয়নতারার হাটুতে স্পর্শ করিয়া তাহার অস্তিত্ব জানাইয়া দিল। নয়নতারা সামলাইয়া উঠিলে, এই দৃশ্য দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া যখন ঘোর কাটিল,সেই মুহূর্তে তাহার লজ্জায় রঞ্জিত মুখ লুকাইয়া পলায়ন করা ছারা, অন্য কিছু ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই।..... কোন প্রশ্ন নয়,দু-তিন দিন ব্যস্ত থাকবো। তাই অগ্রীম বলে দেই “সবাইকে ঈদ মোবারক"
দু'তিন দিনের চিন্তিত ও ব্যথিত হৃদয় লইয়া হেমলতার সময় ভালো কাটিলো না। চিন্তার বিষয়টি যে কি,তা পাঠকেরা নিশ্চয়ই অবগত। তবে এই দু'তিন দিনে তাহাদের বাটীতে অচেনা কিছু লোকের নিত্য সমাগমে একজনের মুখ দেখিয়াই, আমাদের সরল মনের হেমলতার রাতের ঘুম উড়িয়া গিয়াছে। দিদির অবর্তমানে ঘরকন্যা হেম দেখিলেও,তাহাকে দেখিবার মত কেউই ছিল না। তাই বাড়ি ফিরিয়য়া কয়েকদিন মনমরা থাকিবার পর,আজ সমস্ত বিকেল ধরিয়া কেবল মন্দিরাকে লইয়া মনের মতো করিয়া যখন ঘর সাজাইল। তখন ইহার হেতু জানিবার অবশ্যক কেহই মনে করিলো না। এরপর কিছুটা ভয় ও সন্দেহ বুকে লইয়া সন্ধ্যার পূর্বে আপনি সাজিতে বসিল। সাবান দিয়া মুখ ধুইয়া তাহাতে পাউডার দিল, আলতা গুলিয়া পায়ে দিল, পান খাইয়া ওষ্ঠ রঞ্জিত করিল। সঞ্জয়ের দেওয়া চুড়ি গুলি হাতে ও পায়ে নূপুর পড়িলো। তাহার পর গলায় একখানি সরু সোনার চেইন পরিয়া দেহের সাথে আঁটিয়া শাড়ি পরিল; চুলে বেনি বাঁধিয়া আবার কালো একখানি টিপ পরিল।অবশেষে আয়নায় মুখ দেখিয়া মনে মনে হাসিয়া বলিল, পোড়া অদৃষ্টে আরও কি আছে!
ঘটনাখানি গতকাল রাত্রির আঁধারে ঘটিয়া গিয়াছে।দিনে সকল গৃহ কর্মের সমাধা করিয়া এবং ঘরে সন্ধ্যা প্রদিপ দিয়া হেমলতা জানালার পাশে বসিয়া ছিল। নক্ষত্র পুঞ্জ খুব সম্ভব কোন কারণে অভিমান করিয়া মেঘের আড়ালে লুকাইয়া পরিয়াছিল।চন্দ্রিমা হঠাৎ হঠাৎ ভাসিয়া আবারও ডুবেতেছিল। কয়েকদিন মেঘ মেঘ করিয়াও যে মেঘ ঝরিতে চাহিতেছিল না;সে মেঘ আজ নামিয়া সঞ্জয়ের গা ভিজাইয়া একদম শিতল করিয়া দিল। অবশ্য ততক্ষণে সঞ্জয় যাহা করিতে আসিয়াছিল তাহা নির্বিগ্নে সম্পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। আষাঢ় নামিবার আগেই তার পত্রখানি একখানি পাথরের সহিত বাঁধিয়া গরাদহীন জানালা দিয়া পাচার করা হইয়া গিয়াছিল। ভাগ্য ক্রমে হেমলতাও জানালার পাশেই ছিল।তবে সমস্যা হইলো ফিরিবার পথে। পত্র দিয়া যখন সে পালাই পালাই করিতেছে,ঠিক তখনই আষাঢ় নামিলো আম বাগানের পথে।
সঞ্জয় যে খান দিয়া আসিয়াছে, এখান হইতে প্ৰায় পনেরো মিনিট ধরিয়া মেঠপথে অনবরত আম বাগান ও পরে জঙ্গলা অতিক্ৰম করিয়া। তবে নদী ঘাটে পৌছানো যায়। আম বাগানে পথ নির্বিঘ্নে পার করিলেও,বাগানের শেষে জঙ্গলার পথে বন-চালিতা ময়না-কঁটা ষাঁড়া গাছের দুৰ্ভেদ্য জঙ্গল পার করিতে তাহার অবস্থা দেখিবার মতো হইবে। ভরশা একটা এই যে দেবু পথের শেষে আলো লইয়া দাড়াইয়া আছে।নয়তো ও পথে জনপ্রাণীর বাস নাই। তবে এই বৃষ্টিতে আলো জ্বলিবে বলিয়া মনে হয় না। সুতরাং অন্ধকারেই চলিতে হইবে।
আম বাগান পার হইতেই হঠাৎ বৃষ্টি আরও বারিয়া গেল।ভিজে মাটির সোঁদা সেঁন্দা গন্ধ ও মোটা মোটা ফোটায় চড়বড় করিয়া গাছের পাতায় বৃষ্টি পড়িবার শব্দ শুনিতে শুনিতে তারা দুজনে যখন নদী ঘাটের কাছাকাছি আসিলো। তখনই ক্কড়-ক্কড়-কড়াৎ… শব্দে বন-বাগানের অন্ধকার মাথাটা যেন এদিক হইতে ওদিকের নদী ঘাট পর্যন্ত চিরিয়া গেল-চোখের পলকের জন্য চারিধার আলো হইয়া উঠিল—সামনের গাছের ফাঁক দিয়া নদীর তীরে তাহাদের ছোট্ট নৌকা খানি দুলিতে দেখা গেল।
বৃষ্টির ঝাপটায় তাহাদের কাপড় চুল ভিজিয়া টসটস করিয়া জল ঝরিতেছে। বনের বাহিরে পা রাখিতেই মাথার ওপড়দিয়া গুমগুমু গুম-ম-ম-চাপা গভীর ধ্বনিতে-একটা বিশাল লোহার রুলকে যেন আকাশের ধাতব মেঝেতে এদিক হইতে ওদিকে কেহ টানিয়া লইলো।সঞ্জয়ের পেছনে দেবু ভয় পাইয়াছিল,এবার আর থাকিতে না পারিয়া বলিয়া ফেলিল,
– সঞ্জয়দা! এই অবস্থায় নৌকায় উঠলে যদি কিছু হয়।
সঞ্জয় পেছন ফিরিয়া বলিল,
– ভয় কিরে!একবার চোখ বুঝে নৌকায় উঠলেই হল, ভয় নেই, আয়ঃ
ভয় নেই কথাটা দেবুর বিশ্বাস হইয়াছিল কি না তা বলিতে পারি না। তবে চারিধারে যখন শুধু মুষলধারে বৃষ্টিপতনের হুস-হুস-স-স-স একটানা শব্দ, তখন সঞ্জয়ের সাথে সাথে দেবুও নৌকা ঠেলিয়া এক লাফে উঠিয়া বসিলো। তবে বৃষ্টি মাথায় করিয়া বাটীতে ফিরিবার পরেও রেহাই মিলিলো না।
চুরির ঘটনা খানি নয়নতারা মনে খচখচ করিতেছিল।সন্দেহ তাহার কিছুটা হইলেও তার মা যে এমনটা করিতে পাড়ে ইহা বিশ্বাস করিতে মনে চাহিতেছিল না।ইহা তাছাড়াও অনেক ঘটনা তাহার অজানা, তাই সব মিলাইয়া হিসাব কষিলেও,হিসাব কোন মতেই মিলিতেছে না। তবে দেবুর বলা ঘটনা শুনিয়া নয়নতারা বুঝিয়াছে ইহা কোন সাধারণ চুরি নহে,যাহা হইয়াছে তাহা আরও বড় কোন সমস্যার সৃষ্টি করিবার উদ্যোগ মাত্র। ইহা ভাবিয়াই নয়নতারার মন ব্যাকুল ও পরাণ শুকাইয়া যাইতেছে।
কিন্তু অনেক ভাবিয়াও কোন কারণ সে খুঁজিয়া পাইলো না। নয়নতারা তার মায়ের স্বভাব জানিত,সেই সাথে এও জানিত তার স্বামীর মনে সঞ্জয়ের ভালো বা মন্দ দেখিবার কোন উৎসাহই নাই। সে নিজের স্বার্থে তার ভাইয়ে ক্ষতি করিতেও দু-দন্ড ভাবিয়া দেখিবে না। তাহার নেশাখোর স্বামী ঠিক কি উপায়ে তাহাদের বাড়ি উদ্ধার করিতে পারে,ইহা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারার সন্দেহ ঘুরিয়া ফিরিয়া তাহার মা ও স্বামীর ওপড়ি পড়িতেছে।
ইহা ছাড়াও তাহার আর এক চিন্তা হইয়াছে সঞ্জয়। নয়নতারা ইতি মধ্যেই তার মায়ের কাছে হইতে পত্র পাইয়াছে। যদিও বা পত্রখানা তাহার বাবার নামে আসিয়াছিল, তবুও সে পত্রখানি নিজেই পড়িয়াছে এবং কপাল দোষে সঞ্জয় তাহা শুনিয়াছে। পত্র যেহেতু উহাদিগের পড়া হইয়া গিয়াছে,তখন আর পাঠকদের ক্লেশ দেওয়া কেন! শুধু ইহা জানানো আবশ্যক যে; পত্রটি মিনতী দেবির হইয়া নয়নতারা স্বামী লিখিয়াছিল। পত্রে বিশেষ করিয়া তাহাদের বাটীতে ফিরিবার অনুরোধ নহে রিতিমত আদেশ করা হইয়াছে। এবং আরও বলা হইয়াছে উহারা গেলেই পাত্রপক্ষ হেমলতাকে দেখিতে আসিবে। আর পাত্রপক্ষ যে কে তাহা পাঠকের অজানা নহে।আর অবশেষে সৌদামিনী! তাহার কথাই বা ভুলিবে কি করিয়া!
তাই রাত্রিকালে সঞ্জয় যে মুহূর্তে প্রবল বর্ষণ মাথায় করিয়া বাড়ি ফিরিল। তখন নয়নতারার আর বুঝিতে বাকি রহিল না সঞ্জয় কোথা হইতে ফিরিলো।
সঞ্জয় ও দেবু বাটীতে ফিরিয়া দোরের সমুখে মূর্তিমান নয়নতারাকে দেখিয়া ভীত হইয়া কহিল,
– বৌদিদি..মণি.. এ কি!
এরপরে যে ঠিক কি হইয়া ছিল,তার আমরা একটু পরেই জানিবো।ইহার আগে হেমলতা কাহার অপেক্ষায় সাজিয়া গুজিয়া জানলার পার্শ্বে উপবেশন করিল,তাহা জানিয়া লই।
এই বাড়িটি সঞ্জয়ের বাড়ির মতো প্রাচীরে ঘেরা না হইলেও, বাড়িটি দোতলা। নদী হইতে সোজা পথে হাটিলে বড়জোর দশ-পনেরো মিনিটের পথ। তবে সে পথে সঞ্জয়ের যাওয়া হইবে না। সঞ্জয় সোজা পথে পা না দিয়া অন্য পথ ধরিয়া ঘুরিয়া, তার দাদা শশুর বাড়ির পেছনে আম বাগানের মাঝে আসিয়া পরিলো। গতকালের প্রবল বর্ষণে জাগায় জাগায় জল জমিয়া কাদা হইয়া গিয়াছে। চাঁদ আকাশে থাকিলেও জ্যোৎস্না ছড়াইবার ব্যপারে আজ সে বড্ড কৃপণতা করিতেছিল।
সুতরাং আলোর অভাবে এতোটা পথ আসিয়া সঞ্জয়ের সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবীতে বেশ কাদা লাগিয়া গিয়াছে। ইহার ফলে নয়নতারার সহজে ব্যপারখানা বুঝিয়া লইবে। আর কি হইয়াছে তা বুঝিলে নয়নতারা তাহাকে কথা শুনাইয়া ছাড়িবে কেন!সে যাইহোক, উহার মিষ্টি শাসনে সঞ্জয়ের বিশেষ কোন ক্ষতি হইবে না।
আম বাগান পার হইয়া বাড়ি পেছনের এখানা গাছ সম্বল করিয়া সঞ্জয় জানালার নাগাল পাইলো। সঞ্জয়ের হাল দেখিলে অনেক মেয়েলোকের হাসি আসিবার কথা। কিন্তু হেমের সরল মনটি সঞ্জয়ের গাছে চড়া দেখিয়া ভীত হইয়া ছিল। তাহার অনেক কথা বলিবার ছিল। কিন্তু বেচারী সঞ্জয়কে সমূখে দেখিয়া সংকোচে দুপা পিছাইয়া গেল।
লাজ লজ্জা বলিতে সঞ্জয়ের যাহা ছিল,তাহা কেবল নয়নতারা সমুখেই খাটিতো। সুতরাং হেমলতা মনের ভাব না বুঝিয়া ঘরে ঢুকিবা মাত্র হাত গলাইয়া পরনের পাঞ্জাবী খানি খুলিয়া ঘরের একদিকে ছুড়িয়া হেমকে কাছে টানিয়া নিল। অবশ্য সঞ্জয় এতটা পার করিয়া হেমলতার কাছে আসিয়াছে শুধু মাত্র হেমকে বুকে টানিয়া নয়নতারাকে ভুলিয়া থাকিবার উদ্দেশ্যে।এ উপায় ঠিক কতটা কাজে লাগিল তা এখনি বলা ঠিক হইবে না। তবে হেমের কোমল নারী দেহের স্পর্শ পাইবা মাত্র, সকল আধুনিক মানব সভ্যতাকে ত্যাগ করিয়া। সঞ্জয়ের যে রূপ বাহিরে আসিলো,তাহা যেন এক ক্ষুধার্ত পশু।তবে বলিয়া রাখা ভালো এই পশুর মুখে নারী মাংস নতুন নহে। ঘটনা বশত নারী মাংসের স্বাদ সে পাইয়াছিল এবং তাহা নিবারণ করিয়া সে সরিয়াও আসিয়াছিল। তবে কলিকাতায় নয়নতারার সহিত ঘনিষ্ঠতা তাহার ক্ষুধা কে দিগুণ করিয়া জাগাইয়া দিয়াছে।অগত্যা যাহা হইবার ছিল তাহা না হইয়া উল্টা হইলো।
হেমলতার মনের ভাব বুঝিবার চেষ্টা মাত্র না করিয়া সঞ্জয় তাহাকে জানালার পার্শ্বে দেয়ালে সহিত ঠাসিয়া মস্তক নত করিয়া হেমলতার ওষ্ঠাধরে একখানি চুম্বন করিয়া,পরক্ষণেই হেমের অধরখানা দন্তের ধারা বন্দী করিয়া চুষিতে লাগিলো।সেই সাথে তার পুরুষালী হস্ত দুখানিও থামিয়া নাই।তাহারা নিজেদের সুবিধা মত হেমলতার বুকের নরম জায়গায় আরামদায়ক ভাবে দখল লইয়া নিজেদের সুখ করিতে ব্যস্ত হইয়াছে,এতটাই ব্যস্ত হইয়াছে যে শাড়ির আঁচল খানি সরাইয়া লইবার অবকাশও মেলে নাই।
অপরদিকে বেচারী হেম রিতিমত অবাক হইয়া গিয়াছে।যদিওবা এমন পরিস্থিতি যে হইতে পারে, ইহা সে জানিত। তবে সে যাহা জানিতো না,তাহা হইলো; যে আগুনে সে পুড়িতেছে, সে আগুনের নামখানি নয়নতারা।সে ভাবিয়াছিল মনের মানুষটির সাথে বসিয়া দু একটি কথা কহিবে,একটু গল্প করিয়া তাহার নিকট একটু সহজ হইয়া সংকোচ দূর করিয়া লইবে। কিন্ত হায়! সেই ভাগ্যি কি তার আছে! তাহাকে যে তার দিদির জ্বালানো আগুনে জল ঢালিয়া নিভাইতে হইবে,কিন্তু ইহা সে জানিতেও পারিবে না।
হঠাৎই সঞ্জয়ের হস্তের গতিবিধি বুঝিয়া হেমলতার সর্বাঙ্গ কাপিয়া উঠিলো।সঞ্জয়ের ডান হাতখানি ধীরে ধীরে তার বুকে আঁচল খানি সঙ্গে লইয়া নিচে নামিতেছিল। হেমলতার ছাড়া পাইবার কোন সুযোগ ছিল না। যতখনে হেম বুঝিয়া পাইলো সঞ্জয় কি করিতে চাহে, ততখনে তাহার মাথার সুদীর্ঘ বেণীখানা সঞ্জয়ের বা হাতে বাধাঁ পরিয়াছে। ওষ্ঠাধর তাহার অনেক আগে আটক হইয়াছিল। হাত দুখানি যদিওবা কেহ বাধিয়া রাখে নাই,তবে ওদুখানি এমন আড়ষ্ট হইয়াছে যে তা আর হেমের কোন কাজেই লাগিল না। এহেন অবস্থায় বেচারী হেমলতার শাড়ির আঁচল মেঝেতে ফেলিয়া দিয়া,তার পায়ের কাছে হইতে সঞ্জয় কাপড় গুটাইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে হেমলতার সুন্দর পা দুখানি ছাড়াইয়া কাপড় তাহার হাটুর ওপড়ে উঠিয়া গেল। বোধকরি এতখন পরে হেমলতার আড়ষ্টতা কাটিয়া গিয়াছিল।বুঝিবা মাত্র সে ব্যস্ত হইয়া হাত বারাইয়া সঞ্জয়ের হাতের গতি রোধ করিতে গেল বটে। কিন্তু ততখনে বড্ড দেরি হইয়া গিয়াছে। ততখনে সঞ্জয়ের আঙ্গুল গুলি হেমলতার পায়ের ফাঁকে সরু সরু চুলে নিড়ানি মত আঁচড় কাটিতেছে। হেমলতা এই নিষ্ঠুর ব্যবহারের প্রতিরোধ করিতে পা দুখানি যথাসম্ভব গুটাইয়া লইলো। কিন্ত পরক্ষণেই বুঝিলো ইহা মোঠেও লাভজনক নহে।কিন্তু হায়! এখন বুঝিয়া কি আর হইবে! বলি কি; তাহার কুমারী যৌনি পুষ্পের দুই পাপড়ি ফাঁকে, এই নিষ্ঠুর পুরুষটির রুক্ষ আঙুলের ওঠানামা বেচারী সহিবে কি করিয়া!
সুতরাং অল্পক্ষণের আলিঙ্গনেই হেমলতা বিহ্বল হইয়া পড়িল। একটু পরে সঞ্জয়ের তাহাকে চুম্বনের বাঁধন হইতে মুক্ত করিলে,অসহায় হেম সঞ্জয়ের বুকে মাথা দিয়া ঠোঁট দুখানি কিঞ্চিৎ ফাঁক করিয়া ঘনঘন নিশ্বাস নিতে লাগিলো। তার দুই হস্তের একখানি সঞ্জয়ের ডান বাহু চাপিয়া ও অন্য টি তার গুটানো কাপড় মুষ্টিবদ্ধ করিয়াছিল । তবে এই অবস্থা দেখিয়াও হেমের প্রতি সঞ্জয়ের মনে কোন মায়া জাগিলো না। সঞ্জয়ের অঙুলি তার নিজের গতি বজায় রাখিয়া বেণীখানা ছাড়িয়া হেমের মাথা ধিরে ধিরে হাত বুলাইতে লাগিলো। তবে সঞ্জয়ের বুকে হেম থাকিলেও, ভাবনায় নয়নতারার বিরাজ করিতেছিল।
এইবার উহাদের আলিঙ্গন রত রাখিয়া, আমরা সংক্ষিপ্ত অতিত জানিয়া লই। গতকাল বৃষ্টি মাথা করিয়া ও পোশাকে কাদামাটি মাখিয়া যখন সঞ্জয় বাটীতে ফিরিলো।তখন নয়নতারার বকুনি নিরবে হজম করিয়া সে স্নান করিতে গিয়াছিল। নয়নতারা বাড়ির ভেতর খাবার পাত্র সমুখে লইয়া বসিয়াছিল। অনেকটা সময় পার হইলেও যখন সঞ্জয় ভেতরে আসিলো না,তখন নয়নতারা ভেতরের বারান্দায় আসিয়া দেখিল; স্নান করিয়া সঞ্জয় দোতলা উঠিয়া গিয়াছে। নয়নতারা সঞ্জয়ের পোশাক বারান্দায় রাখিয়া গিয়াছিল। সুতরাং সে খাইবে না বলিয়াই নিজের ঘরে ঢুকিয়াছে। নয়নতারা বিরক্ত মুখে দোতলায় উঠিয়া সঞ্জয়ের ঘরের সমুখে গিয়া হাজির হইলো। ঘরের ভেতর টেবিলের ওপড়ে দুই পা তুলিয়া চেয়ারে পিঠ দিয়া সঞ্জয় কী ঘুমাইতেছে! নয়নতারা প্রমাদ গুনিলো। সে কলিকাতায় সেদিন বুঝিয়াছে এই মানুষটি একবার ঘুমাইলে শতবার ডাকিলেও সহজে উঠিবে না। তখন কি উপায় হইবে!
নয়নতারা ধির পদক্ষেপের সঞ্জয়ের কাছে আসিল। সঞ্জয় ক্লান্ত দেহ লইয়া খালি গায়ে বুকে ওপড়ে এখানি কাগজ চাপিয়া ঘুমাইতেছে। নয়নতারার সেদিকে দেখিয়াই কেমন অস্থির হইয়া উঠিলো। এই উপসর্গ তাহার নতুন হইয়াছে। সেই রাত্রির আগে ইহা কখনোই মনে জাগে নাই। কিন্তু মেলার দিন তাহার কি হইয়াছিল! যেইদিন দিন যখন সে দেখিল, হেমলতা সঞ্জয়ের সমুখে মঝেতে বসিয়া আর সঞ্জয় নিজ হস্তে হেমের হাতে চুড়ি পড়াইতে ছিল।এই দৃশ্য নয়নতারার বুকে আঘাত দিয়াছিল।
কিন্ত হায়!অভাগীনি তখন তাহা বুঝিতে পারে নাই। বুঝিবে কি করিয়া!তার আর সঞ্জয়ের মাঝে যেটুকু যাই ছিল,তাহাতে যে তৃতীয় কেউ আসিয়া ভাগ বসাইতে পারে, ইহা সে কখনোই ভাবিতে পারে নাই। যখন সে ইহা বুঝিয়া পাইলো। তখন সাথে আরও বুঝিলো সঞ্জয়ের প্রতি তার মনে যা আছে,তাহা হইতে ভাগ দিতে গেলে তার হৃদয় পুড়িবে। মনে মনে নানান কথা ভাবিয়া ভাবিয়া নয়নতারা যেই মুহুর্তে তার দেবরকে ডাকিবে বলিয়া হাত খানি কাঁধে রাখিতে গেল।তার হাত সঞ্জয়ের কাঁধ স্পর্শ করিবার আগে সঞ্জয়ের দেহটি খানিক কাপিয়া বুকের ওপড়ে থাকা কাগজ খানি গড়াইয়া চেয়ারের পায়ের কাছে পড়িয়া গেল। তবে সেদিকে দেখিবার অবকাশ নয়নতারার হইলো না। কারণ কাগজ খানার সাথে তাহার দেবরটিও পরিতে ছিল। সঞ্জয়ের পতন ঠেকাইতে নয়নতারা হাত বাড়াইলেও,উহার পতন ঠেকানো সম্ভব হইলো না।সঞ্জয় মেঝেতে পড়িবার সাথে নয়নতারা তার একদম মুখের ওপড়ে পড়িলো।ইহাতে সঞ্জয় ক্ষণকাল হতভম্ব থাকিবার পর। মুখের ওপড়ে নয়নতারার বুকের কোমল স্পর্শ অনুভব করিবা মাত্র, তাহার ধুতি সহ বিশেষ অঙ্গটি ফুলিয়া উঠিয়া নয়নতারার হাটুতে স্পর্শ করিয়া তাহার অস্তিত্ব জানাইয়া দিল। নয়নতারা সামলাইয়া উঠিলে, এই দৃশ্য দেখিয়া স্তব্ধ হইয়া ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া যখন ঘোর কাটিল,সেই মুহূর্তে তাহার লজ্জায় রঞ্জিত মুখ লুকাইয়া পলায়ন করা ছারা, অন্য কিছু ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই।..... কোন প্রশ্ন নয়,দু-তিন দিন ব্যস্ত থাকবো। তাই অগ্রীম বলে দেই “সবাইকে ঈদ মোবারক"