23-05-2024, 03:40 AM
(This post was last modified: 23-05-2024, 07:13 PM by বহুরূপী. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্ব ১১
দিন পাঁচএক পরের কথা।সেই দিন হেমলতা ভেতরের উঠনে বারান্দায় তার মায়ের পাতে ভাত বাড়িয়া দিয়া অদূরে বসিয়া মন্দিরাকে ভাত খায়িয়ে দিছিল। মিনতী দেবী সেদিকে একবার দেখে নিয়ে বললেন,
– হেম,কোন চিঠিপত্রর দিয়েছে ওরা?
মায়ের কথার জবাবে হেমলতা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল কোন চিঠি দেয়নি। জবাব বুঝে নিয়ে মিনতী দেবী চিন্তিত মুখে বলল
– দেয়নি! আজ পাঁচদিন হলো কোন চিঠিপত্র নেই! বলি একটা খবর দিবি তো। না,এদের নিয়ে আর পারিন আমি। ওবেলে একটা চিঠি লিখে দিস তো দেবুর হাতে।
হেমলতা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে মন্দিরাকে খাইয়ে দিতে লাগলো বটে।কিন্তু তার মায়ের চোখে মেয়ের মুখের মলিনতা ধরা পরলো না। অবশ্য ধরা পরলেও যে বিশেষ কিছু হতো তাও না। মিনতী দেবী সর্বপরি সংসারের বাইরে গিয়ে মেয়েদের প্রতি কখনোই বিশেষ নজর দেননি। নয়নতারা সংসারের হাত লাগানোর পর তা আরো কমিয়া গিয়াছে। স্বামীর সংসারে তাহার কাজটি ছিল শাড়ির আঁচলে চাবির গোছাটি বাধিয়া সিন্দুকের নজরদারি করা, চাবি ঘোরানো আর কাহারও কোন কাজে একটু ত্রুটি হইলে চিৎকার করিয়া বাড়ি মাথায় তোলা।তবে সত্য বলিলে এই কর্ম দুইটি সে বেশ ভালোই পারিতো ইহাতে কারোই সন্দেহ নাই। মায়ের আদর বলিতে হেম যাহা পাইয়াছিল সবেই তাহার দিদির হাতেই।
ছোটবেলা হইতেই হেম কাহারও সহিত মিশিতে পারে নাই। বাড়ির বাইরে কখনও একলা পা ফেলিবার সাহস তার ছিল না।সে সারাখন তার দিদি পেছন পেছন ঘুরিয়া ঘুরিয়া দিদির কাজ দেখিতো,এবং মনে প্রাণ তাই শিখিয়ার চেষ্টায় তার অবসর পার হইতো। নয়নতারার যদি বা বাড়ির বাইরে তার সইয়ের বাড়িতে পুতুলের বিবাহের নিম্নতন খাইতে গিয়াছে; ফিরিতে দেরি হইবে বলিয়া সেদিন হেমলতা চুপচাপ বাড়ির এককোনায় বসিয়া থাকিতো।সারাদিন খিদের জ্বালায় অস্থির হইলেও তাহার মুখে একটি কথার ফুটিতো না।
মোটের ওপরে পিতৃ গৃহে মা বলিয়া সে মিনতী দেবীকে ডাকিলেও,তাহার মনের সমপূর্ণ জগৎ খানি জুড়িয়া ঘুড়িলেও তার অস্তিত্ব বিশেষ পাইবার আশা নাই। হেমলতার সম্পূর্ণ জগতটাই যে নয়নতারা দখল করিয়া বসিয়া আছে।
আর বোধকরি সেই কারণে তার চলাফেরা, বেশভূষা নয়নতারার মতো হইলেও,অতিরিক্ত সংকোচের কারণে যদিওবা নয়নতারার মতো সবার সাথে সহজ হইতে সে পারে না। আর সেই সাথে তার মা মিনতী দেবীকে সে কেমন তর ভয় করিতো তাহা লেখক না বলিলেও বেশ বুঝিয়া লওয়া যায়।
মিনতী দেবী ও মন্দিরা উঠে গেল হেমলতা হাতের কাজ ছেরে সোজা সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল।সঞ্জয়ের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতে শাড়ির আঁচলখানি বুক থেকে সরিয়ে নিল কিছুটা।তার পর ডান হাতের আঙুল গুলে ব্লাউজের গলা দিয়ে চার ইঞ্চির মতো ঢুকিয়ে বুকের বাম পাশ থেকে দুটো চাবি বের করে আনলো সে।
হেমলতার ঘরে ঢোকার অবসরে বলিয়া রাখা ভালো যে, এই চাবি দুখানি সঞ্জয়ের যাওয়ার আগে হেমলতার বুকেই জমা রাখিয়া ছিল। আর সেই সাথে দিয়াছিল একখানা পত্র। যদিও আমাদের হেমলতা ভীত হইয়া পত্রখানা সম্পূর্ণ পড়িতে পারে নাই। পত্রখানি খুলিয়া চোখের সামনে ধরিবা মাত্র তাহার মনে হইতো যেন চারপাশের আসবাবপত্র এমনকি চিঠিখানা ও তাহাকে দেখিয়া অট্টহাস্য করিতেছে। সে বড় জোর দেরাজে কি আছে তার বর্ণনা,সঞ্জয় কলিকাতায় কোথাই উঠিবে তাহার ঠিকানা আর একটুখানি নিচে ভালোবাসার লাইন দুটি এটুকুই সে পরিতে পারে।এরচেয়ে নিচে যাইবার চেষ্টা সে যে করে নাই; তা নয় । সে অনেকবার চেষ্টা করিয়াছে।কি বলছো? বিশ্বাস হয় না! সে নাই বা হলো। ,সবার বিশ্বাস করিবার ঠিকাদারি তো হেম লয় নাই।তোমরা না করিলে তার বয়েই গেল। কি আর এমন ক্ষতি হইবে শুনি। তাছাড়া ওমনতর অসভ্য আর নির্লজ্জ লোকের চিঠি কি পড়া যায় নাকি। না জানি কতসব নোংরা কথা লিখিয়াছে। না না সে ওমন চিঠি পড়িতে পারিবে না। ও চিঠি পড়িবার আগে সে নিশ্চয়ই লজ্জায় মরিয়া যাইবে।
একটু পরেই হেমলতা একটা খাতা ও একখানি কলম হস্তগত করিয়া কক্ষের বাইরে আসিয়া দোর আটিলো।আর ধির পায়ে সিঁড়ির কাছে আসিয়া সোজা ছাদে উঠিয়া গেল।উদেশ্য একখানি পত্র লিখিবে। কিন্তু তার মনটি কোন কারণে ব্যথিত । কারণ ভাবিতে গেল অনেক গুলো মনের কথা একসাথে বলিতে হয়।কিন্তু ওত সময় নাই। শুধু মাত্র এইটুকু জানিয়া রাখো যে, এই কয়েকদিন হেমলতা দুখানি পত্র দিয়াও কোন উত্তর পায় নাই। ইহার কারণেই তাহার মনটি ক্ষণে ক্ষণে ব্যাকুল হইয়া উঠে। যদিও বা হেম লতা আগে কখনো পত্র লেখে নাই! যদিও বা সে পত্রে ঠিকানা বাহিরে না লিখিয়া খামের ভেতরে লিখিয়া খাম খানি আটিয়া দিয়াছে। তাতে এমন কি ক্ষতি হবে শুনি।
যাক সে কথা। হেমলতা ছাদে উঠিয়া তালতলার দিকটিতে যখন চোখ রাখিল। সে দেখলো তাদের বাড়ির একটু দূরে,পথের পাশে একটা ছাউনি ছারা গরু গাড়ি দাঁড়িয়ে। বাড়ির পেছন বিশাল বনানী।সামনে ক্ষেতের মাঝে গায়ে গা লাগিয়ে কিছু বাড়ি আর তালতলির ওই পথ,দোকান,গাছ এগুলো বাদ দিলে,দু-চোখে যতদূর দেখা যায় ততদূর শুধু হলদে পাকা ধানের ক্ষেত। হালকা মিষ্টি বাতাসে আধ পাকা ধানের সোনালি শীষগুলো অনবরত দুলছিল। ধানের ক্ষেতের আইল দিয়ে দুই একটা ছোট্ট ছেলে-মেয়ে পেছন বনের পাশে পুকুরে দিকে চলে গেলো। হেমলতা ধিরে ধিরে আর একটু এগিয়ে এসে ছাদের রেলিংয়ের পাশে দাঁড়ায়। হঠাৎ একটা অন্য রকম অনুভূতিতে তার মনে আনন্দ বয়ে গেল। দু-চোখ ভরে ধানের ক্ষেত দেখতে লাগল। ইতিমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেতে পাকা ধান কাটা হয়েছে। পাকা ধানগুলো আটি বেঁধে ধানের ক্ষেতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। আরো দূরে কৃষকরা দল বেঁধে ধান কাটছে। আবার অনেকে কাটা ধানগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে ধানের বোঝা মাথায় করে নিয়ে গরুর গাড়িটিতে তুলছে। কেউ কেউ বাইঙ্গ দিয়ে পাকা ধান কাঁধে করে বাড়ি ফিরছে। দেখতে দেখতে এক সময় হেম চিঠি লিখতে বসলো। সে সঞ্জয় নাই বা পেল!..
///////
বৈঠক ঘরে সোহম ও মিনতী দেবী মুখোমুখি বসিয়া কিসের যেন আলোচনা করিতেছিল। একটু আগে হেমলতা তাহার মাতার আদেশে সোহমের জন্যে চা ও তার মায়ের জন্যে পান দিয়া কিছু দূরে ভেতরের উঠনের ঢুকিবার দোরের আড়ালে আড়িপাতায় দাড়াইলো।
সোহম এবাড়িতে আসিয়া তাহার শাশুড়ি মাতার পায়ে পড়িয়া অনেকখান কাকুতি মিনতি করিয়া তাহাদের বাড়িখানা ফিরিয়া পাইবার একখানি উপায় বলিয়াছে। তবে সেই উপায় শুনিবা মাত্র হেমলতার কোমল হৃদয় খানিতে এক চরম আঘাতে আনিলো। বিবাহের সম্বন্ধ আসিয়াছে” তার বিবাহের।
ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে ঘটনা এই রূপ দাঁড়ায় যে; রাজেন্দ্র রায় তার ছোটবেলার বন্ধু বা বর্তমানে তার শ্যালক গোবিন্দের সাথে হেমলতার বিবাহের প্রস্তাব করিয়াছে। তবে বিবাহের পাত্রের সমন্ধে বলিতে গেল বলিতে হয়,গোবিন্দ লালের আগে পেছন এক দিদি ছাড়া আর কেহই নাই।তাই দিদির সাথে সে নিজেও জমিদার বাড়িতে উঠিয়াছিল।এবং বয়স ত্রিশ ছাড়াইলেও এখনো বিবাহ করে নাই বা করিতে পারে না।ছোটবেলায় কোন এক কারণে তাহার বাম পা ভাঙ্গিয়া আর ঠিক মত জোড়া লাগে নাই।এছাড়া দেখতে সে খারাপ নাহে।ওই একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাফেরা ছাড়া দিবি মোটাসোটা নাদুসনুদুস দেহখানি লইয়া দিনকয়েক আগে তাহাকে তালদিঘি হাটে দেখিতে পাওয়া যায়।
আর ভাগ্যক্রমে সেইদিনই হেমলতাকে এক বটবৃক্ষের তলায় দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া,তাহার মনে বেশ লাগিয়াছিল।কিন্তু তখনই কোথা হইতে এক বজ্জাত ছোড়া আসিয়া হেমকে হাতে ধরিয়া টানিতে টানিতে তাহার সর্বাঙ্গে আগুন ধরাইয়া চোখের সামনে দিয়া চলিয়া গেল। অবশ্য সে তখন জানি তো না উহার নামটি হেমলতা আর বজ্জাত ছোড়াটা সঞ্জয়।
তবে থাক সে কথা,মিনতী দেবী জমিদার বাড়ির বিবাহের প্রস্তাবে খানিকক্ষণ অবাক হইয়া সোহমের মুখের পানে চাহিয়া রহিলেন।তার কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছে না তার হেম জমিদার বাড়িতে বধূ বেষে উঠিবে। এবং সেই সাথে তাহাদের সকল দেনাপাওনা মাফ করিয়া রাজেন্দ্র রায় মিনতী দেবীর স্বামী গৃহখানি ছাড়িয়া দিবে। ইহা কি করিয়া সম্ভব কর হইলো! আশ্চর্যের বিষয় বটে। তবে সে যে ভাবিয়া ছিল হেমলতাকে, কোন মতে সঞ্জয়ের গলায় ঝুলাইয়া সে শান্ত হইবে। কিন্তু এখন ভাবিয়া দেখিল কোথায় সঞ্জয় আর কোথায় জমিদার বাড়ি। তবে তিনি বুদ্ধিমতী। এই বিষয়টি লইয়া আর কথা না বলিয়া সোহমকে কোন রকম নিশ্চয়তা না দিয়া বিদায় করিলেন। তবে যাহা কেউ দেখিল না,তাহা হইলো হেমলতার আহত হৃদয় খানি কোন এক গভীর বেদনায় থাকিয়া থাকিয়া নিঃশব্দে আর্তনাদ করিতেছিল। কারণ আর কেহ না জানিলেও হেম মিনতী দেবী কি করিতে পারে তা ভালো করিয়াই জানিতো।
এমন সময় হটাৎ মন্দিরা কে দেখিয়া হেমলতা চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল,
– কি হয়েছে ওভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন!
মন্দিরা বিশেষ কিছু বলিতে না পারিলেও এখানি খাম তার মাসির দিকে দুহাতে আগাইয়া ধরিল। চিঠিখানা কাহার আমরা না জানিলেও বোধকরি হেমলতা জানিত।
হেমলতা একখানি চিঠি দেবুর হাতে ডাকে দিয়াছিল।তবে আজ সঞ্জয়ের চিঠি হাতে পাইবে,এই আশা তার কোন মতে ছিল না।
হেম চিঠিখানা হস্তগত করিয়া একবার চুম্বন করিল। অতঃপর চিঠিখানা বুকে জড়াইয়া খানিকক্ষণ বারান্দায় বসিয়া শূন্য দৃশ্যতে আকাশের পানে চাহিয়া রহিলো।
//////
সন্ধ্যায় তূলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে মিনতী দেবী যখন ভেতরে ঘরে গেলেন।তখন পূর্ব দিগন্ত কালো করে মেঘ জমেছে আকাশে।তবে বৃষ্টি আসতে এখনো অনেকটাই দের। এই মুহুর্তে মৃদু বাতাসে গাছে পাতা আর প্রদীপের লাল অগ্নিশিখা হালকাভাবে কাঁপছে।দুই একটা পাখি উড়ে গেল জাম গাছটার ওপড়দিয়ে।তাদের দেখে হেমলতার মনে হলো যেন তাদের বড্ডো বাড়ি ফেরার তারা আছে।বেশ দেরি হয়ে গেছে বোধকরি। মন্দিরা বসার ঘরে বসেই সুর করে পড়া পড়ছিল। আর হেম ভেতর উঠনে বারান্দায় একটা পিলারে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবছিল। না ঠিক কি ভাবছিল বোঝা গেল না।তবে একটু পড়েই মন্দিরাকে থামিয়ে দিয়ে তাকে দোতলায় উঠতে দেখা গেল।
আটারো বছর বয়সে হেম এই বাড়িতে এসে প্রেম শিখলো। আর আজ প্রেম যে যন্ত্রণা দেয় তাও সে জানল। সঞ্জয়ের চিঠিটা সে বিকাল থেকে অনেক বার পড়েছে। পুরো চিঠিতে তার নামে বিশেষ কিছুই ছিল না। চিঠিতে তার বাবার চিকিৎসা,সঞ্জয়ের বন্ধু বাড়িতে না থাকার কারণে তাদের ঠিকানা পরিবর্তন।আর শেষের দুলাইনে হেমলতাকে আলাদাভাবে চিঠি লেখার প্রতিশ্রুতি। এ কেমন তর চিঠি! এদিকে হেম যে প্রতিদিন তার চিঠি আশায় পথচেয়ে বসে থাকে। চিঠিটা পড়ে হেমলতা গালদুটো অভিমানে ফুলে ফুলে উঠছিল। পরক্ষণেই একটু শান্ত হয়ে নিজের মনকে নিজেই বোঝাতে বসলো; চিঠিটা আগের। নিশ্চয়ই তাড়াহুড়ো করে লিখে দিয়েছে,তারা যেনো চিন্তা না করে তাই।দেবু বলছিল ডাকে কি সমস্যার কারণে সময় মতো পৌছায়নি। এর জন্যে সঞ্জয়কে সেই কেনোই বা দোষারোপ করবে। কিন্তু মন মানতে চায় না যে। এদিকে তার চিঠির কি হল! তাছাড়া এই চিঠি পড়ে না তার বাবার চিন্তা দূর হলো না নিজের মনের জ্বালা নিভলো।
দোতলায় সঞ্জয়ের ঘরে আলো জ্বালিয়ে হেমলতা চারপাশে দেখতে লাগলো। এই কাজটি নতুন জুটেছে তার। এই কদিনে সঞ্জয়ের ঘরটির প্রতিটি জিনিস খুব পরিচিত হয়ে গেছে তার। যদিও বিশেষ কিছুই নেই এই ঘরে। দোর দিয়ে ঘরে ঢুকলেই হাতের বাম পাশে একটা বিছানা।আর তার পাশেই জনালার সাথে একটা পড়ার টেবিল। তাতে একটা রেডিও ও এলোমেলো ভাবে কি সব বই পরে থাকে সবসময়। এছাড়া একটা কাঠের বেশ বড় একটা আলমারি।
হেমলতা খাটের পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে।তারপরেই খাটের ওপরে দেহটা ছেড়ে সঞ্জয়ের মাথার বালিশ টা বুকে চেপেধরে সস্নেহে হাত বুলিয়ে এক সময় অবুঝ তরুণী বালিসে চুমু খেয়ে আবার লজ্জায় সেই বালিসেই মুখ লুকায়। কিন্তু হটাৎ কি মনে হতেই ভয়ে বুকের বালিশ খানি আরও শক্ত করে চেপেধরে বুকে। .....বিশেষ কিছু দেবার ইচ্ছা থাকলেও দেওয়া গেল না।কাজের চাপে মাথা উল্টাপাল্টা হয়ে আছে এখন।যাই হোক আজ একটা ভিন্ন প্রশ্ন করি। কোন ভাষায় গল্প বেশি ভালো লাগে চলিত নাকি সাধু?
দিন পাঁচএক পরের কথা।সেই দিন হেমলতা ভেতরের উঠনে বারান্দায় তার মায়ের পাতে ভাত বাড়িয়া দিয়া অদূরে বসিয়া মন্দিরাকে ভাত খায়িয়ে দিছিল। মিনতী দেবী সেদিকে একবার দেখে নিয়ে বললেন,
– হেম,কোন চিঠিপত্রর দিয়েছে ওরা?
মায়ের কথার জবাবে হেমলতা ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দিল কোন চিঠি দেয়নি। জবাব বুঝে নিয়ে মিনতী দেবী চিন্তিত মুখে বলল
– দেয়নি! আজ পাঁচদিন হলো কোন চিঠিপত্র নেই! বলি একটা খবর দিবি তো। না,এদের নিয়ে আর পারিন আমি। ওবেলে একটা চিঠি লিখে দিস তো দেবুর হাতে।
হেমলতা ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে মন্দিরাকে খাইয়ে দিতে লাগলো বটে।কিন্তু তার মায়ের চোখে মেয়ের মুখের মলিনতা ধরা পরলো না। অবশ্য ধরা পরলেও যে বিশেষ কিছু হতো তাও না। মিনতী দেবী সর্বপরি সংসারের বাইরে গিয়ে মেয়েদের প্রতি কখনোই বিশেষ নজর দেননি। নয়নতারা সংসারের হাত লাগানোর পর তা আরো কমিয়া গিয়াছে। স্বামীর সংসারে তাহার কাজটি ছিল শাড়ির আঁচলে চাবির গোছাটি বাধিয়া সিন্দুকের নজরদারি করা, চাবি ঘোরানো আর কাহারও কোন কাজে একটু ত্রুটি হইলে চিৎকার করিয়া বাড়ি মাথায় তোলা।তবে সত্য বলিলে এই কর্ম দুইটি সে বেশ ভালোই পারিতো ইহাতে কারোই সন্দেহ নাই। মায়ের আদর বলিতে হেম যাহা পাইয়াছিল সবেই তাহার দিদির হাতেই।
ছোটবেলা হইতেই হেম কাহারও সহিত মিশিতে পারে নাই। বাড়ির বাইরে কখনও একলা পা ফেলিবার সাহস তার ছিল না।সে সারাখন তার দিদি পেছন পেছন ঘুরিয়া ঘুরিয়া দিদির কাজ দেখিতো,এবং মনে প্রাণ তাই শিখিয়ার চেষ্টায় তার অবসর পার হইতো। নয়নতারার যদি বা বাড়ির বাইরে তার সইয়ের বাড়িতে পুতুলের বিবাহের নিম্নতন খাইতে গিয়াছে; ফিরিতে দেরি হইবে বলিয়া সেদিন হেমলতা চুপচাপ বাড়ির এককোনায় বসিয়া থাকিতো।সারাদিন খিদের জ্বালায় অস্থির হইলেও তাহার মুখে একটি কথার ফুটিতো না।
মোটের ওপরে পিতৃ গৃহে মা বলিয়া সে মিনতী দেবীকে ডাকিলেও,তাহার মনের সমপূর্ণ জগৎ খানি জুড়িয়া ঘুড়িলেও তার অস্তিত্ব বিশেষ পাইবার আশা নাই। হেমলতার সম্পূর্ণ জগতটাই যে নয়নতারা দখল করিয়া বসিয়া আছে।
আর বোধকরি সেই কারণে তার চলাফেরা, বেশভূষা নয়নতারার মতো হইলেও,অতিরিক্ত সংকোচের কারণে যদিওবা নয়নতারার মতো সবার সাথে সহজ হইতে সে পারে না। আর সেই সাথে তার মা মিনতী দেবীকে সে কেমন তর ভয় করিতো তাহা লেখক না বলিলেও বেশ বুঝিয়া লওয়া যায়।
মিনতী দেবী ও মন্দিরা উঠে গেল হেমলতা হাতের কাজ ছেরে সোজা সিড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে গেল।সঞ্জয়ের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁ হাতে শাড়ির আঁচলখানি বুক থেকে সরিয়ে নিল কিছুটা।তার পর ডান হাতের আঙুল গুলে ব্লাউজের গলা দিয়ে চার ইঞ্চির মতো ঢুকিয়ে বুকের বাম পাশ থেকে দুটো চাবি বের করে আনলো সে।
হেমলতার ঘরে ঢোকার অবসরে বলিয়া রাখা ভালো যে, এই চাবি দুখানি সঞ্জয়ের যাওয়ার আগে হেমলতার বুকেই জমা রাখিয়া ছিল। আর সেই সাথে দিয়াছিল একখানা পত্র। যদিও আমাদের হেমলতা ভীত হইয়া পত্রখানা সম্পূর্ণ পড়িতে পারে নাই। পত্রখানি খুলিয়া চোখের সামনে ধরিবা মাত্র তাহার মনে হইতো যেন চারপাশের আসবাবপত্র এমনকি চিঠিখানা ও তাহাকে দেখিয়া অট্টহাস্য করিতেছে। সে বড় জোর দেরাজে কি আছে তার বর্ণনা,সঞ্জয় কলিকাতায় কোথাই উঠিবে তাহার ঠিকানা আর একটুখানি নিচে ভালোবাসার লাইন দুটি এটুকুই সে পরিতে পারে।এরচেয়ে নিচে যাইবার চেষ্টা সে যে করে নাই; তা নয় । সে অনেকবার চেষ্টা করিয়াছে।কি বলছো? বিশ্বাস হয় না! সে নাই বা হলো। ,সবার বিশ্বাস করিবার ঠিকাদারি তো হেম লয় নাই।তোমরা না করিলে তার বয়েই গেল। কি আর এমন ক্ষতি হইবে শুনি। তাছাড়া ওমনতর অসভ্য আর নির্লজ্জ লোকের চিঠি কি পড়া যায় নাকি। না জানি কতসব নোংরা কথা লিখিয়াছে। না না সে ওমন চিঠি পড়িতে পারিবে না। ও চিঠি পড়িবার আগে সে নিশ্চয়ই লজ্জায় মরিয়া যাইবে।
একটু পরেই হেমলতা একটা খাতা ও একখানি কলম হস্তগত করিয়া কক্ষের বাইরে আসিয়া দোর আটিলো।আর ধির পায়ে সিঁড়ির কাছে আসিয়া সোজা ছাদে উঠিয়া গেল।উদেশ্য একখানি পত্র লিখিবে। কিন্তু তার মনটি কোন কারণে ব্যথিত । কারণ ভাবিতে গেল অনেক গুলো মনের কথা একসাথে বলিতে হয়।কিন্তু ওত সময় নাই। শুধু মাত্র এইটুকু জানিয়া রাখো যে, এই কয়েকদিন হেমলতা দুখানি পত্র দিয়াও কোন উত্তর পায় নাই। ইহার কারণেই তাহার মনটি ক্ষণে ক্ষণে ব্যাকুল হইয়া উঠে। যদিও বা হেম লতা আগে কখনো পত্র লেখে নাই! যদিও বা সে পত্রে ঠিকানা বাহিরে না লিখিয়া খামের ভেতরে লিখিয়া খাম খানি আটিয়া দিয়াছে। তাতে এমন কি ক্ষতি হবে শুনি।
যাক সে কথা। হেমলতা ছাদে উঠিয়া তালতলার দিকটিতে যখন চোখ রাখিল। সে দেখলো তাদের বাড়ির একটু দূরে,পথের পাশে একটা ছাউনি ছারা গরু গাড়ি দাঁড়িয়ে। বাড়ির পেছন বিশাল বনানী।সামনে ক্ষেতের মাঝে গায়ে গা লাগিয়ে কিছু বাড়ি আর তালতলির ওই পথ,দোকান,গাছ এগুলো বাদ দিলে,দু-চোখে যতদূর দেখা যায় ততদূর শুধু হলদে পাকা ধানের ক্ষেত। হালকা মিষ্টি বাতাসে আধ পাকা ধানের সোনালি শীষগুলো অনবরত দুলছিল। ধানের ক্ষেতের আইল দিয়ে দুই একটা ছোট্ট ছেলে-মেয়ে পেছন বনের পাশে পুকুরে দিকে চলে গেলো। হেমলতা ধিরে ধিরে আর একটু এগিয়ে এসে ছাদের রেলিংয়ের পাশে দাঁড়ায়। হঠাৎ একটা অন্য রকম অনুভূতিতে তার মনে আনন্দ বয়ে গেল। দু-চোখ ভরে ধানের ক্ষেত দেখতে লাগল। ইতিমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেতে পাকা ধান কাটা হয়েছে। পাকা ধানগুলো আটি বেঁধে ধানের ক্ষেতেই রেখে দেওয়া হয়েছে। আরো দূরে কৃষকরা দল বেঁধে ধান কাটছে। আবার অনেকে কাটা ধানগুলো দড়ি দিয়ে বেঁধে ধানের বোঝা মাথায় করে নিয়ে গরুর গাড়িটিতে তুলছে। কেউ কেউ বাইঙ্গ দিয়ে পাকা ধান কাঁধে করে বাড়ি ফিরছে। দেখতে দেখতে এক সময় হেম চিঠি লিখতে বসলো। সে সঞ্জয় নাই বা পেল!..
///////
বৈঠক ঘরে সোহম ও মিনতী দেবী মুখোমুখি বসিয়া কিসের যেন আলোচনা করিতেছিল। একটু আগে হেমলতা তাহার মাতার আদেশে সোহমের জন্যে চা ও তার মায়ের জন্যে পান দিয়া কিছু দূরে ভেতরের উঠনের ঢুকিবার দোরের আড়ালে আড়িপাতায় দাড়াইলো।
সোহম এবাড়িতে আসিয়া তাহার শাশুড়ি মাতার পায়ে পড়িয়া অনেকখান কাকুতি মিনতি করিয়া তাহাদের বাড়িখানা ফিরিয়া পাইবার একখানি উপায় বলিয়াছে। তবে সেই উপায় শুনিবা মাত্র হেমলতার কোমল হৃদয় খানিতে এক চরম আঘাতে আনিলো। বিবাহের সম্বন্ধ আসিয়াছে” তার বিবাহের।
ঘটনা সংক্ষেপে বলতে গেলে ঘটনা এই রূপ দাঁড়ায় যে; রাজেন্দ্র রায় তার ছোটবেলার বন্ধু বা বর্তমানে তার শ্যালক গোবিন্দের সাথে হেমলতার বিবাহের প্রস্তাব করিয়াছে। তবে বিবাহের পাত্রের সমন্ধে বলিতে গেল বলিতে হয়,গোবিন্দ লালের আগে পেছন এক দিদি ছাড়া আর কেহই নাই।তাই দিদির সাথে সে নিজেও জমিদার বাড়িতে উঠিয়াছিল।এবং বয়স ত্রিশ ছাড়াইলেও এখনো বিবাহ করে নাই বা করিতে পারে না।ছোটবেলায় কোন এক কারণে তাহার বাম পা ভাঙ্গিয়া আর ঠিক মত জোড়া লাগে নাই।এছাড়া দেখতে সে খারাপ নাহে।ওই একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলাফেরা ছাড়া দিবি মোটাসোটা নাদুসনুদুস দেহখানি লইয়া দিনকয়েক আগে তাহাকে তালদিঘি হাটে দেখিতে পাওয়া যায়।
আর ভাগ্যক্রমে সেইদিনই হেমলতাকে এক বটবৃক্ষের তলায় দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া,তাহার মনে বেশ লাগিয়াছিল।কিন্তু তখনই কোথা হইতে এক বজ্জাত ছোড়া আসিয়া হেমকে হাতে ধরিয়া টানিতে টানিতে তাহার সর্বাঙ্গে আগুন ধরাইয়া চোখের সামনে দিয়া চলিয়া গেল। অবশ্য সে তখন জানি তো না উহার নামটি হেমলতা আর বজ্জাত ছোড়াটা সঞ্জয়।
তবে থাক সে কথা,মিনতী দেবী জমিদার বাড়ির বিবাহের প্রস্তাবে খানিকক্ষণ অবাক হইয়া সোহমের মুখের পানে চাহিয়া রহিলেন।তার কিছুতেই বিশ্বাস হইতেছে না তার হেম জমিদার বাড়িতে বধূ বেষে উঠিবে। এবং সেই সাথে তাহাদের সকল দেনাপাওনা মাফ করিয়া রাজেন্দ্র রায় মিনতী দেবীর স্বামী গৃহখানি ছাড়িয়া দিবে। ইহা কি করিয়া সম্ভব কর হইলো! আশ্চর্যের বিষয় বটে। তবে সে যে ভাবিয়া ছিল হেমলতাকে, কোন মতে সঞ্জয়ের গলায় ঝুলাইয়া সে শান্ত হইবে। কিন্তু এখন ভাবিয়া দেখিল কোথায় সঞ্জয় আর কোথায় জমিদার বাড়ি। তবে তিনি বুদ্ধিমতী। এই বিষয়টি লইয়া আর কথা না বলিয়া সোহমকে কোন রকম নিশ্চয়তা না দিয়া বিদায় করিলেন। তবে যাহা কেউ দেখিল না,তাহা হইলো হেমলতার আহত হৃদয় খানি কোন এক গভীর বেদনায় থাকিয়া থাকিয়া নিঃশব্দে আর্তনাদ করিতেছিল। কারণ আর কেহ না জানিলেও হেম মিনতী দেবী কি করিতে পারে তা ভালো করিয়াই জানিতো।
এমন সময় হটাৎ মন্দিরা কে দেখিয়া হেমলতা চোখ মুছিতে মুছিতে বলিল,
– কি হয়েছে ওভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন!
মন্দিরা বিশেষ কিছু বলিতে না পারিলেও এখানি খাম তার মাসির দিকে দুহাতে আগাইয়া ধরিল। চিঠিখানা কাহার আমরা না জানিলেও বোধকরি হেমলতা জানিত।
হেমলতা একখানি চিঠি দেবুর হাতে ডাকে দিয়াছিল।তবে আজ সঞ্জয়ের চিঠি হাতে পাইবে,এই আশা তার কোন মতে ছিল না।
হেম চিঠিখানা হস্তগত করিয়া একবার চুম্বন করিল। অতঃপর চিঠিখানা বুকে জড়াইয়া খানিকক্ষণ বারান্দায় বসিয়া শূন্য দৃশ্যতে আকাশের পানে চাহিয়া রহিলো।
//////
সন্ধ্যায় তূলসী মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে মিনতী দেবী যখন ভেতরে ঘরে গেলেন।তখন পূর্ব দিগন্ত কালো করে মেঘ জমেছে আকাশে।তবে বৃষ্টি আসতে এখনো অনেকটাই দের। এই মুহুর্তে মৃদু বাতাসে গাছে পাতা আর প্রদীপের লাল অগ্নিশিখা হালকাভাবে কাঁপছে।দুই একটা পাখি উড়ে গেল জাম গাছটার ওপড়দিয়ে।তাদের দেখে হেমলতার মনে হলো যেন তাদের বড্ডো বাড়ি ফেরার তারা আছে।বেশ দেরি হয়ে গেছে বোধকরি। মন্দিরা বসার ঘরে বসেই সুর করে পড়া পড়ছিল। আর হেম ভেতর উঠনে বারান্দায় একটা পিলারে মাথা ঠেকিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবছিল। না ঠিক কি ভাবছিল বোঝা গেল না।তবে একটু পড়েই মন্দিরাকে থামিয়ে দিয়ে তাকে দোতলায় উঠতে দেখা গেল।
আটারো বছর বয়সে হেম এই বাড়িতে এসে প্রেম শিখলো। আর আজ প্রেম যে যন্ত্রণা দেয় তাও সে জানল। সঞ্জয়ের চিঠিটা সে বিকাল থেকে অনেক বার পড়েছে। পুরো চিঠিতে তার নামে বিশেষ কিছুই ছিল না। চিঠিতে তার বাবার চিকিৎসা,সঞ্জয়ের বন্ধু বাড়িতে না থাকার কারণে তাদের ঠিকানা পরিবর্তন।আর শেষের দুলাইনে হেমলতাকে আলাদাভাবে চিঠি লেখার প্রতিশ্রুতি। এ কেমন তর চিঠি! এদিকে হেম যে প্রতিদিন তার চিঠি আশায় পথচেয়ে বসে থাকে। চিঠিটা পড়ে হেমলতা গালদুটো অভিমানে ফুলে ফুলে উঠছিল। পরক্ষণেই একটু শান্ত হয়ে নিজের মনকে নিজেই বোঝাতে বসলো; চিঠিটা আগের। নিশ্চয়ই তাড়াহুড়ো করে লিখে দিয়েছে,তারা যেনো চিন্তা না করে তাই।দেবু বলছিল ডাকে কি সমস্যার কারণে সময় মতো পৌছায়নি। এর জন্যে সঞ্জয়কে সেই কেনোই বা দোষারোপ করবে। কিন্তু মন মানতে চায় না যে। এদিকে তার চিঠির কি হল! তাছাড়া এই চিঠি পড়ে না তার বাবার চিন্তা দূর হলো না নিজের মনের জ্বালা নিভলো।
দোতলায় সঞ্জয়ের ঘরে আলো জ্বালিয়ে হেমলতা চারপাশে দেখতে লাগলো। এই কাজটি নতুন জুটেছে তার। এই কদিনে সঞ্জয়ের ঘরটির প্রতিটি জিনিস খুব পরিচিত হয়ে গেছে তার। যদিও বিশেষ কিছুই নেই এই ঘরে। দোর দিয়ে ঘরে ঢুকলেই হাতের বাম পাশে একটা বিছানা।আর তার পাশেই জনালার সাথে একটা পড়ার টেবিল। তাতে একটা রেডিও ও এলোমেলো ভাবে কি সব বই পরে থাকে সবসময়। এছাড়া একটা কাঠের বেশ বড় একটা আলমারি।
হেমলতা খাটের পাশে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবে।তারপরেই খাটের ওপরে দেহটা ছেড়ে সঞ্জয়ের মাথার বালিশ টা বুকে চেপেধরে সস্নেহে হাত বুলিয়ে এক সময় অবুঝ তরুণী বালিসে চুমু খেয়ে আবার লজ্জায় সেই বালিসেই মুখ লুকায়। কিন্তু হটাৎ কি মনে হতেই ভয়ে বুকের বালিশ খানি আরও শক্ত করে চেপেধরে বুকে। .....বিশেষ কিছু দেবার ইচ্ছা থাকলেও দেওয়া গেল না।কাজের চাপে মাথা উল্টাপাল্টা হয়ে আছে এখন।যাই হোক আজ একটা ভিন্ন প্রশ্ন করি। কোন ভাষায় গল্প বেশি ভালো লাগে চলিত নাকি সাধু?