17-05-2024, 08:02 AM
(This post was last modified: 17-05-2024, 09:10 AM by বহুরূপী. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
পর্ব ১০
ট্রেনের কামরায় লোকের ভিড় যে খুব ছিল তা বলা চলে না।কিন্তু অভিনাথ যখন বলল অন্যসব দিন থেকে আজ লোক বেশি। তখন এই কথার সত্যতা যাচাই করার কোন উপায় তার ছিল না। সেই কারণেই সঞ্জয় রাগে গাল ফুলিয়ে বসে। তার মতে একটি অচেনা ছেলের কথায় টিকিট কাটা মোটেও ঠিক হয়নি। অবশ্য সে কিছু পয়সা ঝড়িয়ে সরে পরতেই পারতো। কিন্তু নয়নতারার কারণে সেটিও সম্ভব নয়।
তাই এখন আর লোকজন বেশি না কম,তা ভেবে তার বিশেষ কোন লাভ তো নেই।সেই কারণেই সকল বিরক্তি এই মুহুর্তে তার কোলে থাকা নয়নতারার পুত্র সন্তানটির ওপরে গিয়ে পড়লো। তবে নয়নতারার পুত্র টি অতি শান্ত সভাবের বলিয়াই মনে হয়। সে তার কাকামণির বিরক্তির দৃষ্টি উপেক্ষা করিয়া কাপড়ের এক কোণ মুখে লইয়া কামড়ানোর চেষ্টা করিতেছিল।
ট্রেনে উঠে রোগীকে এক পাশে শোয়ানোর পরে,অপর পাশে নয়নতারা ও সঞ্জয় বসেছিল। ঘন্টা খানেক পরে নয়নতারা তার নতুন সইয়ের কাছে গিয়ে একসাথে বসলো আলোচনায়।অবশ্য এতে তার কোন সমস্যা ছিল না,যদি না এই ক্ষুদ্র আপদ খানি তার কাধে চড়ানো না হতো। সঞ্জয়ের কোলে নয়নতারার পুত্র সন্তান টি এই মুহুর্তে চোখ বড় বড় করে তাকেই দেখছিল। বোধকরি অচেনা এই লোকটিকে চিনে নিতে চাইছে সে।নয়নতারা সঞ্জয়ের বাড়িতে আসা অবধি মন্দিরার সাথে তার ভাব হইলেও বাবুকে কোলে নেওয়ার দুঃসাহস সে দেখায় নি কখনোই।এর যথাযথ ইতিহাস ও কারণ থাকলেও ঐসব নিয়ে ভাবার সময় তার এখন নেই বলিলেই চলে।
এদিকে নতুন সইয়ের সাথে নয়নতারার গল্প বেশ জমেছে। আর তাদের এই গল্পে যোগ দিয়েছে অপরপাশে বসা একটি যুবতী মেয়ে। মেয়েটি আধুনিকা বটে। তবে তাহাদের আলোচনায় বাঁধা পরলো বাবুর কান্নার আওয়াজে।কি হয়েছে দেখার জন্যে উঠে নয়নতারা অবাক ও তার সই ও অপর মেয়েটি মুখে হাত দিয়া হাসি চাপিবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করিয়া সরিয়া পরিলো।
ঘটনা এই রূপ যে,সঞ্জয় বাবুর পিঠে আনাড়ির মত থাবরাইয়া থাবরাইয়া ঘুম পাড়ানোর প্রচেষ্টা করিতেছিল।আর ইহাতে অসন্তোষ হইয়া নয়নতারার শান্ত শিশুপুত্রটি হাত পা ছুড়িয়া কাদিতে আরম্ভ করিয়াছে।
এই রূপ কান্ড দেখি নয়নতারা এরকম ছো মেরে বাবুকে তার কোলে তুলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল।
– একি সৃষ্টি ছাড়া কাজ হচ্ছে শুনে!এভাবে ঘুম পারায় বুঝি।
সঞ্জয় কি একটা বলতে গিয়েও বলল না।নয়নতারা তার বাবাকে একটিবার দেখে নিল।তিনি নিরব হয়ে চোখ বুঝে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছেন। নয়নতারা বাবুকে কোলে নিয়ে বসলো সঞ্জয়ের পাশে জালনার ধারে। বাবু তার মায়ের কোলে যাওয়া মাত্রই শান্ত। এইটি দেখে সঞ্জয়ের রাগ বাড়লো বই কমলো না। কিছুক্ষণ পর নয়নতারা তার অশান্ত মুখখানি দেখে বলল।
– এখনো রাগ যায়নি বুঝে!....একটু শুনবে!
জবাবে সঞ্জয় একটিবার তার মুখের পানে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল আবার।তবে নয়নতারার লজ্জা মিশ্রিত চোখের দৃষ্টি সঞ্জয়ের চোখ এড়িয়ে গেল না। ব্যপার বুঝে সঞ্জয় ব্যাগ নামিয়ে একটি চাদর বের করে আনলো,এবং তা মাতা ও শিশু পুত্রটির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে সিটে পিঠ এলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নয়নতারা চাদরের আড়ালে তার একটি স্তন উন্মুক্ত করে সন্তানের মুখে দিয়ে নিজে মুখ তুলে তাকালো তার পাশে বসা রাগি পুরুষটির দিকে। তবে এবার আর রাগের কোন চিহ্ন তার মুখে দেখা গেল না। সে শান্ত নয়ন জানালার বাইরে কি যেন খুঁজে চলেছে এক মনে।
সঞ্জয়ের শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আজ নদীর পারে কমলার কথাটি মনে পরলো তার।পরিচয় হওয়ার পর কথায় কথায় কমলা বলছিল "রাজপুত্রের মত বর পেয়েছো দিদি,নিশ্চয়ই অনেকে সোহাগ করে তোমায়" নয়নতারা হ্যাঁ বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু কথা আর এগোয়নি কারণ ঠিক তখনি সঞ্জয় এসে বৌদিমণি ডেকে বসলো তাকে। একটা অচেনা মেয়ের সামনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল তার। সেই সাথে রাগও হয়েছিল কিছুটা।কি দরকার ছিল তাকে ওভাবে ডেকে লজ্জায় ফেলার। সময় মত সে নিজেই ভুল ভাঙিয়ে দিত না হয়। আর না ভাঙালেই বা কি এমন ক্ষতি হতো,তারা কেউ তো তাদের চেনা কেউ নয়।
– কিছু বলবে?
সঞ্জয়ের কথায় হুশ ফিরলো নয়নতারার। তার গৌরবর্ণ মুখখানি পলকের মধ্যেই রাঙা হয়ে উঠলো। তার ঠোঁট দুখানি খানিক কেঁপে উঠলো তৎক্ষণাৎ কোন উত্তর সে দিতে পারিলো না। তার বদলে তার চোখ দুখানির দৃষ্টি অপরদিকে এক দম্পতির দিকে পরলো।অপরপাশের বধূ টি তার স্বামীর বুকে মাথা দিয়া বোধকরি ঘুমাইতে ছিল। সুখের দৃশ্য,দুঃখের মোটেই নয়। তবুও নয়নতারার কাজল কালো চোখ দুখানি আদ্র হইতে খুব বেশি সময় ব্যয় করিলো না। নয়নতারার আবেগ নামক বস্তুটি একটু বেশি কিনা তাই।
ক্ষণকাল অপেক্ষার পরে সঞ্জয় কি বুঝে একটি হাত নয়নতারার গলার পেছন দিয়ে নিয়ে নয়নতারার মাথাটি তার বুকে টেনে নিল। তারপর আবার সিটে হেলান দিয়ে দুচোখ বন্ধ করলো সে। আর নয়নতারা! তার কথা না হয় নাই বললাম এখন। এই অভাগীনির কথা না হয় তোলা রইলো। শুনবো না হয় নীরবে,অন্য কোন সময়।যখন চারিপাশে এত অচেনা লোকের ভিড় থাকবে না।সে আমাদের মনের মানুষ,তার মনের কথা গুলি না হয় আড়ালেই শুনবো.....
//////
বিশাল একটি ঘরে এক রূপসী ললনাময়ী অল্পবয়সী মেয়ে একটি সোনালী গালিচায় তার পায়ের মলের ঝনঝন শব্দে ঝংকার তুলে নাচছিল। আর সেই নৃত্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে কিছু মধ্য বয়স্ক লোকের মদপান। তার মধ্যে বিশেষ গণ্যমান্য লোক বলিতে যাহা বোঝায়; তাহাদের অনেকেই উপস্থিত।তবে সেই বিশেষ লোকেদের মধ্যে বিশেষ করিয়া যাহারা উল্লেখযোগ্য। তার মধ্যে রাজেন্দ্র রায়,থানার বড় বাবু,গোবিন্দ লাল ও সঞ্জয়ের দাদা সোহম এপাশে বসে। তবে সোহমের চেতনা আছে, এমনটা মনে হচ্ছে না। সে কোন রকমে চোখের পর্দা দুখানি জোর করিয়ে আধো আধো খুলিয়া এক লাস্যময়ী রমণীর নৃত্য উপভোগ করিতেছে মাত্র।আর তার পাশে বসে চলছে আলোচনা।
– সামান্য কয়েটা টাকার জন্যে আমার হুকুম ছাড়াই ওকে ছাড়লে কোন সাহসে?
– বলি আমার চাকরীটা তো আর তোমার হুকুমে চলবে না রাজেন্দ্র। তাছাড়া ওই ছেলের সাথে আমি কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাই না,একথা আগেও বলেছি তোমায়।
– তাহলে এই বুঝি তোমার ক্ষমতা! কোথাকার এক পুচকে ছোড়ার ভয়ে গর্তে সেঁধিয়ে গেলো।
গোবিন্দ লাল এতখন চুপচাপ শুনছিল।এবারে রাজেন্দ্র রায় কথা শেষ করতেই অন্তত গম্ভীর স্বরে বললেন।
– রাজেন্দ্র তুমি বলছো বটে তবে কাজের কাজ তো তুমিও করোনি।
– মানে!
– বাড়িটা ভাঙার কথা কিন্তু তুমিই তুলেছিল।তা বাড়িটি তো এখনো দিবি দাঁড়িয়ে।
কথা শেষ হওয়া মাত্রই থানার বড় বাবু ঠোঁটের কোণে
তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে বললেন।
– কি বলছেন মশাই! আপনি শোনেনি এখনো, দুদিন আগে যে দর্শন দিয়ে গেল তার ভয়েই বোধকরি জমিদার পুত্রের সাহসে কুলোয়নি।
– মুখ সামলে কথা বল হে! ও শালাকে আমি..
অতিরিক্ত রাগের কারণেই হোক বা কি করা যায় তা ভেবে না পাওয়ার জন্যেই হোক।জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র রায়ের মুখের কথা শেষ হলো না।
– কি হল হে! কথা শেষ করলে না যে। তুমি কতটুকু কি করবে তা আমি কেন,পুরো গ্রামের লোক জানে।তোমার বাবার জমিদারি তো গেছে অনেক আগেই।এবার তার সম্মান যেটুক যা ছিল তাও যাবে তার সুপুত্রের হাত ধরে। ছিঃছিঃ গ্রামে মুখ দেখানোর আর উপায় রইলো না।
ইহাদের মধ্যে সবচেয়ে চালাক যে লোকটি, তিনি হলেন গোবিন্দ লাল।অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি বললেন।
– কি শুরু করলে বলত তোমরা। এইসব ছাড়ো এখন, ও পরে দেখা যাবে না হয়; দেখি বোতল টা এদিকে দাউ দেখি, গলা শুকিয়ে গেলে একেবারে।
এই বলে তিনি বোতল নিতে হাত বাড়ালেন। এদিকে সোহম মেঝের গালিচায় শুয়ে ঝিমুছে।তবে সেই দিকে কারো নজর নেই। সামনের রমণীর নৃত্য এখনো শেষ হয়নি।তা নৃত্য চলুক না হয়।সেই অবসরে আমরা একটু ইহাদের ইতিহাস চর্চা করি।
রাজেন্দ্র রায়ের পিতা নাম জমিদার নারায়ণ রায়।তাহাদের জমিদার ছিল সাত পুরুষ ধরে।আর সেই সাত পুরুষের শেষ পুরুষ রাজেন্দ্র রায়ের পিতা।যদিও জমিদারি তাদের অনেক আগেই শেষ।তবুও লোকমুখে এখনো শোনা যায় জমিদার না হয়েও নারায়ণ রায়ের জমিদারির কথা। সে মিথ্যাই হোক আর সত্যই হোক তার জমিদারি নদীর এপার থেকে ওপার সবাই মানতো।তবে নারায়ণ রায়ও গেলো আর সেই সাথে গেলো তার বংশের জমিদারি।ধিরে ধিরে জমিদার বাড়িটি হলো পরিত্যক্ত। আর সেই নামের জমিদার খুব বেশিদিন না টিকিলেও নামটি কোন কারণে টিকিয়া গেল।এখন তাহাদের যা আছে তাতে বড়লোক বললেও জমিদার বলা চলে না। তবে এখনও গ্রামের লোকে তাদের নতুন বাড়িটি জমিদার বাড়ি বলেই চেনে।আর এই জমিদার বাড়ি একমাত্র কন্যাটিকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক থানার বড় বাবু। শুধু অতিরিক্ত ভুড়ির দোষটি বাদ দিলে দেখতে সে মন্দ নহে।
অপরদিকে গোবিন্দ লাল। ধান ব্যবসায়ী এবং রাজেন্দ্র রায়ের শ্যালক।তার পরিচয়টি পরে আবার দেখা হলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হবে না হয়।আপাতত নাচ শেষ।
নাচের শেষে গোবিন্দ লাল বললেন।
– একে নিয়ে কি করবে বলো তো,এর একটা ব্যবস্থা না করলেই যে নয়।
তার কথায় কর্ণপাত না করিয়া মদের নেশায় ঢুলিতে ঢুলিতে রাজেন্দ্র শুধু একবার এদিক ওদিক দেখিয়া লইয়া উঠিলো। সে যখন ঘরের মধ্যে থাকা নর্তকীটির দিকে একটু অগ্রসর হইতে পা বাড়াইলো।ঠিক তখনি সোহম উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে গিয়ে নর্তকীর দুই পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো
– নয়নতারার মাফ কর আমায়..শুধু এবারের মতো মাফ কর..
মেয়েটির মুখ ভয়ে বিবর্ণ হতে দেরি হলো না। খুব সম্ভব এই রূপ কোন ঘটনার অগ্রিম পূর্বাভাস তাহাকে কেহ বলিয়া দেয় নাই।সে কি করিবে বুঝিতে না পাড়িয়া একসময় গলা ছাড়িয়া চিৎকার জুড়িলো। এরপর আর বিশেষ কিছু বলিবার নাই।
///////
রাতে একবার সঞ্জয়ের ঘুম ভাঙলো খানিকটা অকারণেই।চোখ মেলে সে দেখল এক লোক তার সমুখ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। তার হাতে ছোট্ট দুখানি পায়ের স্পর্শ অনুভব করে ভালো ভাবে দেখলো,নয়নতারার দেহে চাপানো চাদরটা কখন যেন তার গায়ে দিয়ে দিয়েছে নয়নতারা।আর সেই চাদরের ভেতরে বাবুর পা দুখানি ওপড়ে তার হাত খানি রাখা।
নয়নতারা এখন ঘুমিয়ে থাকলেও সঞ্জয় বুঝলো তার ঘুম ভালো হয়নি।তার নিজের ঘুমটিও ঠিক সুবিধার হয়নি।আশেপাশের দুএকজন ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে আছে। চাদরটা বাবুর মুখের ওপরে পরে ছিল দেখে,
সঞ্জয় হাতদিয়ে যখন চাদরটা সরিয়ে দিতে গেল,,হঠাৎ নয়নতারা তার বুকের আরো কাছে সরে এলো যেন। সে দেখলো নয়নতারা একহাতে তার সন্তান ও অন্য হাতে সঞ্জয়ের বুকের কাছে পাঞ্জাবীর খানিকটা শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে। সঞ্জয় হাতটি ধরে সরিয়ে দিতে চাইলো,কিন্তু তার হাতটি নয়নতারার হাত স্পর্শ করতেই কেমন কেঁপে উঠলো নয়নতারা। তার পাকা লঙ্কার মত ঠোঁট দুটি ইষৎ ফাঁক হয়ে কি যেন বলতে চাইলো। সেই সাথে একটা উষ্ণ নিশ্বাস সঞ্জয়ের বুকে আবেগের মৃদু আলোড়ন তুলে দিল যেন। নিজের অজান্তেই নয়নতারাকে জড়িয়ে রাখা হাতখানা হটাৎ শক্ত করে আকড়ে ধরলো। এদিকে সঞ্জয়ের বাহুবন্ধনে নয়নতারা তার মুখখানি বুকে গুজে সঞ্জয়ের উত্তেজনা যেন আরো বারিয়ে দিল কিছুটা।চাদরটা আরো কিছু টেনে নিল সে।তার মনে এখন অনেক গুলো অনুভূতি পাক খেতে শুরু করেছে। ঐদিন ঝড়ের রাতের ঘটনাটি মনে পরে গেল তার।আর সাথে সাথেই তার হাতের পাঁচটি আঙ্গুল চেপে বসেছে নয়নতারার কোমড়ে। অন্য হাতটি কোনো এক মায়া বলে ধিরে ধিরে পৌঁছে গেছে নয়নতারার বুকের কাছাকাছি। তারপর হঠাৎই এক চেনা অনুভুতি শিহরণ জাগিয়ে দিলো সারা শড়ীলে। একটা ঢোক গিলে সঞ্জয় হাতটা আর একটু বাড়িয়ে দিল সামনে। তার গলা শুকিয়ে গেছে। বুকের ধুকপুক শব্দটা যেন তার নিজের কানে এসেই ধাক্কা দিচ্ছে বারবার। এই অনুভূতি গুলো একদমই নতুন তার কাছে। অচেনা অনুভূতি, বিশেষ কিছু পাওয়া ও একি সাথে হারানোর অনুভূতি। তবে উত্তেজনা সেই অনুভূতির সীমানা ডিঙিয়ে অনেক দূরে এসে থেমেছে এতোখনে। সঞ্জয়ের হাতটি এখন নয়নতারার ব্লাউজের ওপড়দিয়ে তার একটি পরিপুষ্ট স্তন চেপেধরেছে।সেই সাথে সঞ্জয় অনুভব করছে নয়নতারার দেহের উষ্ণতা ও মৃদুমন্দ কম্পন। ক্ষণকাল এই ভাবেই বসে রইলো সে আর ঠিক পরক্ষণেই ঘোর কেটে গেল তার।মনের এক কোন থেকে জেগে উঠলো অপরাধ বোধ।নিজেকে সামলে নয়নতারাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো সঞ্জয়।আচমকা এমনটি হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেল নয়নতারার।তবে ততখনে সঞ্জয় সরে গেছে সেখান থেকে। নয়নতারার দেখলো সঞ্জয়ের যাওয়া তবে ডাকতে পারলো না।সে বুঝে উঠতে পারলো না কি হয়েছে।এদিকে নয়নতারার সাথে তার ছোট্ট শিশুটিও ঘুম ভেঙে গেল। ব্যস্ত হয়ে তাকে সামলাতে মন দিল সে।
রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের নতুন আলো ছড়িয়ে পড়েছে ধিরে ধিরে আকাশ আলো করে। আর সেই ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় পরছে নয়নতারার মুখমণ্ডলে।নয়নতারার তার সন্তানের নাকে নাক ঘষে আদর করছিল। সঞ্জয় কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি সে।তার চোখে চোখ পরতেই সঞ্জয় চোখ নামিয়ে নিল।কিছুটা অবাক হলো নয়নতারা।একটি হাত বাড়িয়ে সঞ্জয়ের গাল স্পর্শ করে সে বলল।
– তোমায় এমন কেন দেখাছে,কিছু হয়েছে!
সঞ্জয় চোখ না তুলেই বলল। আমার এসে গেছি তৈরি হয়ে তোমার বাবাকে ডেকে ওঠাও...
অবশেষে গন্তব্যে নায়িকা।তবে গল্প এখনো অনেকটুকু বাকি।তাই বলছি অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না আপনার অনুভুতি এবং আমার প্রশ্নের উত্তর টি,গল্পটি চলবে কি না?
ট্রেনের কামরায় লোকের ভিড় যে খুব ছিল তা বলা চলে না।কিন্তু অভিনাথ যখন বলল অন্যসব দিন থেকে আজ লোক বেশি। তখন এই কথার সত্যতা যাচাই করার কোন উপায় তার ছিল না। সেই কারণেই সঞ্জয় রাগে গাল ফুলিয়ে বসে। তার মতে একটি অচেনা ছেলের কথায় টিকিট কাটা মোটেও ঠিক হয়নি। অবশ্য সে কিছু পয়সা ঝড়িয়ে সরে পরতেই পারতো। কিন্তু নয়নতারার কারণে সেটিও সম্ভব নয়।
তাই এখন আর লোকজন বেশি না কম,তা ভেবে তার বিশেষ কোন লাভ তো নেই।সেই কারণেই সকল বিরক্তি এই মুহুর্তে তার কোলে থাকা নয়নতারার পুত্র সন্তানটির ওপরে গিয়ে পড়লো। তবে নয়নতারার পুত্র টি অতি শান্ত সভাবের বলিয়াই মনে হয়। সে তার কাকামণির বিরক্তির দৃষ্টি উপেক্ষা করিয়া কাপড়ের এক কোণ মুখে লইয়া কামড়ানোর চেষ্টা করিতেছিল।
ট্রেনে উঠে রোগীকে এক পাশে শোয়ানোর পরে,অপর পাশে নয়নতারা ও সঞ্জয় বসেছিল। ঘন্টা খানেক পরে নয়নতারা তার নতুন সইয়ের কাছে গিয়ে একসাথে বসলো আলোচনায়।অবশ্য এতে তার কোন সমস্যা ছিল না,যদি না এই ক্ষুদ্র আপদ খানি তার কাধে চড়ানো না হতো। সঞ্জয়ের কোলে নয়নতারার পুত্র সন্তান টি এই মুহুর্তে চোখ বড় বড় করে তাকেই দেখছিল। বোধকরি অচেনা এই লোকটিকে চিনে নিতে চাইছে সে।নয়নতারা সঞ্জয়ের বাড়িতে আসা অবধি মন্দিরার সাথে তার ভাব হইলেও বাবুকে কোলে নেওয়ার দুঃসাহস সে দেখায় নি কখনোই।এর যথাযথ ইতিহাস ও কারণ থাকলেও ঐসব নিয়ে ভাবার সময় তার এখন নেই বলিলেই চলে।
এদিকে নতুন সইয়ের সাথে নয়নতারার গল্প বেশ জমেছে। আর তাদের এই গল্পে যোগ দিয়েছে অপরপাশে বসা একটি যুবতী মেয়ে। মেয়েটি আধুনিকা বটে। তবে তাহাদের আলোচনায় বাঁধা পরলো বাবুর কান্নার আওয়াজে।কি হয়েছে দেখার জন্যে উঠে নয়নতারা অবাক ও তার সই ও অপর মেয়েটি মুখে হাত দিয়া হাসি চাপিবার একটা ব্যর্থ চেষ্টা করিয়া সরিয়া পরিলো।
ঘটনা এই রূপ যে,সঞ্জয় বাবুর পিঠে আনাড়ির মত থাবরাইয়া থাবরাইয়া ঘুম পাড়ানোর প্রচেষ্টা করিতেছিল।আর ইহাতে অসন্তোষ হইয়া নয়নতারার শান্ত শিশুপুত্রটি হাত পা ছুড়িয়া কাদিতে আরম্ভ করিয়াছে।
এই রূপ কান্ড দেখি নয়নতারা এরকম ছো মেরে বাবুকে তার কোলে তুলে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল।
– একি সৃষ্টি ছাড়া কাজ হচ্ছে শুনে!এভাবে ঘুম পারায় বুঝি।
সঞ্জয় কি একটা বলতে গিয়েও বলল না।নয়নতারা তার বাবাকে একটিবার দেখে নিল।তিনি নিরব হয়ে চোখ বুঝে সিটে হেলান দিয়ে বসে আছেন। নয়নতারা বাবুকে কোলে নিয়ে বসলো সঞ্জয়ের পাশে জালনার ধারে। বাবু তার মায়ের কোলে যাওয়া মাত্রই শান্ত। এইটি দেখে সঞ্জয়ের রাগ বাড়লো বই কমলো না। কিছুক্ষণ পর নয়নতারা তার অশান্ত মুখখানি দেখে বলল।
– এখনো রাগ যায়নি বুঝে!....একটু শুনবে!
জবাবে সঞ্জয় একটিবার তার মুখের পানে চেয়ে চোখ সরিয়ে নিল আবার।তবে নয়নতারার লজ্জা মিশ্রিত চোখের দৃষ্টি সঞ্জয়ের চোখ এড়িয়ে গেল না। ব্যপার বুঝে সঞ্জয় ব্যাগ নামিয়ে একটি চাদর বের করে আনলো,এবং তা মাতা ও শিশু পুত্রটির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে সিটে পিঠ এলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো। নয়নতারা চাদরের আড়ালে তার একটি স্তন উন্মুক্ত করে সন্তানের মুখে দিয়ে নিজে মুখ তুলে তাকালো তার পাশে বসা রাগি পুরুষটির দিকে। তবে এবার আর রাগের কোন চিহ্ন তার মুখে দেখা গেল না। সে শান্ত নয়ন জানালার বাইরে কি যেন খুঁজে চলেছে এক মনে।
সঞ্জয়ের শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আজ নদীর পারে কমলার কথাটি মনে পরলো তার।পরিচয় হওয়ার পর কথায় কথায় কমলা বলছিল "রাজপুত্রের মত বর পেয়েছো দিদি,নিশ্চয়ই অনেকে সোহাগ করে তোমায়" নয়নতারা হ্যাঁ বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু কথা আর এগোয়নি কারণ ঠিক তখনি সঞ্জয় এসে বৌদিমণি ডেকে বসলো তাকে। একটা অচেনা মেয়ের সামনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল তার। সেই সাথে রাগও হয়েছিল কিছুটা।কি দরকার ছিল তাকে ওভাবে ডেকে লজ্জায় ফেলার। সময় মত সে নিজেই ভুল ভাঙিয়ে দিত না হয়। আর না ভাঙালেই বা কি এমন ক্ষতি হতো,তারা কেউ তো তাদের চেনা কেউ নয়।
– কিছু বলবে?
সঞ্জয়ের কথায় হুশ ফিরলো নয়নতারার। তার গৌরবর্ণ মুখখানি পলকের মধ্যেই রাঙা হয়ে উঠলো। তার ঠোঁট দুখানি খানিক কেঁপে উঠলো তৎক্ষণাৎ কোন উত্তর সে দিতে পারিলো না। তার বদলে তার চোখ দুখানির দৃষ্টি অপরদিকে এক দম্পতির দিকে পরলো।অপরপাশের বধূ টি তার স্বামীর বুকে মাথা দিয়া বোধকরি ঘুমাইতে ছিল। সুখের দৃশ্য,দুঃখের মোটেই নয়। তবুও নয়নতারার কাজল কালো চোখ দুখানি আদ্র হইতে খুব বেশি সময় ব্যয় করিলো না। নয়নতারার আবেগ নামক বস্তুটি একটু বেশি কিনা তাই।
ক্ষণকাল অপেক্ষার পরে সঞ্জয় কি বুঝে একটি হাত নয়নতারার গলার পেছন দিয়ে নিয়ে নয়নতারার মাথাটি তার বুকে টেনে নিল। তারপর আবার সিটে হেলান দিয়ে দুচোখ বন্ধ করলো সে। আর নয়নতারা! তার কথা না হয় নাই বললাম এখন। এই অভাগীনির কথা না হয় তোলা রইলো। শুনবো না হয় নীরবে,অন্য কোন সময়।যখন চারিপাশে এত অচেনা লোকের ভিড় থাকবে না।সে আমাদের মনের মানুষ,তার মনের কথা গুলি না হয় আড়ালেই শুনবো.....
//////
বিশাল একটি ঘরে এক রূপসী ললনাময়ী অল্পবয়সী মেয়ে একটি সোনালী গালিচায় তার পায়ের মলের ঝনঝন শব্দে ঝংকার তুলে নাচছিল। আর সেই নৃত্যের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে কিছু মধ্য বয়স্ক লোকের মদপান। তার মধ্যে বিশেষ গণ্যমান্য লোক বলিতে যাহা বোঝায়; তাহাদের অনেকেই উপস্থিত।তবে সেই বিশেষ লোকেদের মধ্যে বিশেষ করিয়া যাহারা উল্লেখযোগ্য। তার মধ্যে রাজেন্দ্র রায়,থানার বড় বাবু,গোবিন্দ লাল ও সঞ্জয়ের দাদা সোহম এপাশে বসে। তবে সোহমের চেতনা আছে, এমনটা মনে হচ্ছে না। সে কোন রকমে চোখের পর্দা দুখানি জোর করিয়ে আধো আধো খুলিয়া এক লাস্যময়ী রমণীর নৃত্য উপভোগ করিতেছে মাত্র।আর তার পাশে বসে চলছে আলোচনা।
– সামান্য কয়েটা টাকার জন্যে আমার হুকুম ছাড়াই ওকে ছাড়লে কোন সাহসে?
– বলি আমার চাকরীটা তো আর তোমার হুকুমে চলবে না রাজেন্দ্র। তাছাড়া ওই ছেলের সাথে আমি কোন ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাই না,একথা আগেও বলেছি তোমায়।
– তাহলে এই বুঝি তোমার ক্ষমতা! কোথাকার এক পুচকে ছোড়ার ভয়ে গর্তে সেঁধিয়ে গেলো।
গোবিন্দ লাল এতখন চুপচাপ শুনছিল।এবারে রাজেন্দ্র রায় কথা শেষ করতেই অন্তত গম্ভীর স্বরে বললেন।
– রাজেন্দ্র তুমি বলছো বটে তবে কাজের কাজ তো তুমিও করোনি।
– মানে!
– বাড়িটা ভাঙার কথা কিন্তু তুমিই তুলেছিল।তা বাড়িটি তো এখনো দিবি দাঁড়িয়ে।
কথা শেষ হওয়া মাত্রই থানার বড় বাবু ঠোঁটের কোণে
তাচ্ছিল্যের হাসি নিয়ে বললেন।
– কি বলছেন মশাই! আপনি শোনেনি এখনো, দুদিন আগে যে দর্শন দিয়ে গেল তার ভয়েই বোধকরি জমিদার পুত্রের সাহসে কুলোয়নি।
– মুখ সামলে কথা বল হে! ও শালাকে আমি..
অতিরিক্ত রাগের কারণেই হোক বা কি করা যায় তা ভেবে না পাওয়ার জন্যেই হোক।জমিদার পুত্র রাজেন্দ্র রায়ের মুখের কথা শেষ হলো না।
– কি হল হে! কথা শেষ করলে না যে। তুমি কতটুকু কি করবে তা আমি কেন,পুরো গ্রামের লোক জানে।তোমার বাবার জমিদারি তো গেছে অনেক আগেই।এবার তার সম্মান যেটুক যা ছিল তাও যাবে তার সুপুত্রের হাত ধরে। ছিঃছিঃ গ্রামে মুখ দেখানোর আর উপায় রইলো না।
ইহাদের মধ্যে সবচেয়ে চালাক যে লোকটি, তিনি হলেন গোবিন্দ লাল।অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি বললেন।
– কি শুরু করলে বলত তোমরা। এইসব ছাড়ো এখন, ও পরে দেখা যাবে না হয়; দেখি বোতল টা এদিকে দাউ দেখি, গলা শুকিয়ে গেলে একেবারে।
এই বলে তিনি বোতল নিতে হাত বাড়ালেন। এদিকে সোহম মেঝের গালিচায় শুয়ে ঝিমুছে।তবে সেই দিকে কারো নজর নেই। সামনের রমণীর নৃত্য এখনো শেষ হয়নি।তা নৃত্য চলুক না হয়।সেই অবসরে আমরা একটু ইহাদের ইতিহাস চর্চা করি।
রাজেন্দ্র রায়ের পিতা নাম জমিদার নারায়ণ রায়।তাহাদের জমিদার ছিল সাত পুরুষ ধরে।আর সেই সাত পুরুষের শেষ পুরুষ রাজেন্দ্র রায়ের পিতা।যদিও জমিদারি তাদের অনেক আগেই শেষ।তবুও লোকমুখে এখনো শোনা যায় জমিদার না হয়েও নারায়ণ রায়ের জমিদারির কথা। সে মিথ্যাই হোক আর সত্যই হোক তার জমিদারি নদীর এপার থেকে ওপার সবাই মানতো।তবে নারায়ণ রায়ও গেলো আর সেই সাথে গেলো তার বংশের জমিদারি।ধিরে ধিরে জমিদার বাড়িটি হলো পরিত্যক্ত। আর সেই নামের জমিদার খুব বেশিদিন না টিকিলেও নামটি কোন কারণে টিকিয়া গেল।এখন তাহাদের যা আছে তাতে বড়লোক বললেও জমিদার বলা চলে না। তবে এখনও গ্রামের লোকে তাদের নতুন বাড়িটি জমিদার বাড়ি বলেই চেনে।আর এই জমিদার বাড়ি একমাত্র কন্যাটিকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক থানার বড় বাবু। শুধু অতিরিক্ত ভুড়ির দোষটি বাদ দিলে দেখতে সে মন্দ নহে।
অপরদিকে গোবিন্দ লাল। ধান ব্যবসায়ী এবং রাজেন্দ্র রায়ের শ্যালক।তার পরিচয়টি পরে আবার দেখা হলে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা হবে না হয়।আপাতত নাচ শেষ।
নাচের শেষে গোবিন্দ লাল বললেন।
– একে নিয়ে কি করবে বলো তো,এর একটা ব্যবস্থা না করলেই যে নয়।
তার কথায় কর্ণপাত না করিয়া মদের নেশায় ঢুলিতে ঢুলিতে রাজেন্দ্র শুধু একবার এদিক ওদিক দেখিয়া লইয়া উঠিলো। সে যখন ঘরের মধ্যে থাকা নর্তকীটির দিকে একটু অগ্রসর হইতে পা বাড়াইলো।ঠিক তখনি সোহম উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে গিয়ে নর্তকীর দুই পা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো
– নয়নতারার মাফ কর আমায়..শুধু এবারের মতো মাফ কর..
মেয়েটির মুখ ভয়ে বিবর্ণ হতে দেরি হলো না। খুব সম্ভব এই রূপ কোন ঘটনার অগ্রিম পূর্বাভাস তাহাকে কেহ বলিয়া দেয় নাই।সে কি করিবে বুঝিতে না পাড়িয়া একসময় গলা ছাড়িয়া চিৎকার জুড়িলো। এরপর আর বিশেষ কিছু বলিবার নাই।
///////
রাতে একবার সঞ্জয়ের ঘুম ভাঙলো খানিকটা অকারণেই।চোখ মেলে সে দেখল এক লোক তার সমুখ দিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। তার হাতে ছোট্ট দুখানি পায়ের স্পর্শ অনুভব করে ভালো ভাবে দেখলো,নয়নতারার দেহে চাপানো চাদরটা কখন যেন তার গায়ে দিয়ে দিয়েছে নয়নতারা।আর সেই চাদরের ভেতরে বাবুর পা দুখানি ওপড়ে তার হাত খানি রাখা।
নয়নতারা এখন ঘুমিয়ে থাকলেও সঞ্জয় বুঝলো তার ঘুম ভালো হয়নি।তার নিজের ঘুমটিও ঠিক সুবিধার হয়নি।আশেপাশের দুএকজন ছাড়া সবাই ঘুমিয়ে আছে। চাদরটা বাবুর মুখের ওপরে পরে ছিল দেখে,
সঞ্জয় হাতদিয়ে যখন চাদরটা সরিয়ে দিতে গেল,,হঠাৎ নয়নতারা তার বুকের আরো কাছে সরে এলো যেন। সে দেখলো নয়নতারা একহাতে তার সন্তান ও অন্য হাতে সঞ্জয়ের বুকের কাছে পাঞ্জাবীর খানিকটা শক্ত করে আকড়ে ধরে রেখেছে। সঞ্জয় হাতটি ধরে সরিয়ে দিতে চাইলো,কিন্তু তার হাতটি নয়নতারার হাত স্পর্শ করতেই কেমন কেঁপে উঠলো নয়নতারা। তার পাকা লঙ্কার মত ঠোঁট দুটি ইষৎ ফাঁক হয়ে কি যেন বলতে চাইলো। সেই সাথে একটা উষ্ণ নিশ্বাস সঞ্জয়ের বুকে আবেগের মৃদু আলোড়ন তুলে দিল যেন। নিজের অজান্তেই নয়নতারাকে জড়িয়ে রাখা হাতখানা হটাৎ শক্ত করে আকড়ে ধরলো। এদিকে সঞ্জয়ের বাহুবন্ধনে নয়নতারা তার মুখখানি বুকে গুজে সঞ্জয়ের উত্তেজনা যেন আরো বারিয়ে দিল কিছুটা।চাদরটা আরো কিছু টেনে নিল সে।তার মনে এখন অনেক গুলো অনুভূতি পাক খেতে শুরু করেছে। ঐদিন ঝড়ের রাতের ঘটনাটি মনে পরে গেল তার।আর সাথে সাথেই তার হাতের পাঁচটি আঙ্গুল চেপে বসেছে নয়নতারার কোমড়ে। অন্য হাতটি কোনো এক মায়া বলে ধিরে ধিরে পৌঁছে গেছে নয়নতারার বুকের কাছাকাছি। তারপর হঠাৎই এক চেনা অনুভুতি শিহরণ জাগিয়ে দিলো সারা শড়ীলে। একটা ঢোক গিলে সঞ্জয় হাতটা আর একটু বাড়িয়ে দিল সামনে। তার গলা শুকিয়ে গেছে। বুকের ধুকপুক শব্দটা যেন তার নিজের কানে এসেই ধাক্কা দিচ্ছে বারবার। এই অনুভূতি গুলো একদমই নতুন তার কাছে। অচেনা অনুভূতি, বিশেষ কিছু পাওয়া ও একি সাথে হারানোর অনুভূতি। তবে উত্তেজনা সেই অনুভূতির সীমানা ডিঙিয়ে অনেক দূরে এসে থেমেছে এতোখনে। সঞ্জয়ের হাতটি এখন নয়নতারার ব্লাউজের ওপড়দিয়ে তার একটি পরিপুষ্ট স্তন চেপেধরেছে।সেই সাথে সঞ্জয় অনুভব করছে নয়নতারার দেহের উষ্ণতা ও মৃদুমন্দ কম্পন। ক্ষণকাল এই ভাবেই বসে রইলো সে আর ঠিক পরক্ষণেই ঘোর কেটে গেল তার।মনের এক কোন থেকে জেগে উঠলো অপরাধ বোধ।নিজেকে সামলে নয়নতারাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো সঞ্জয়।আচমকা এমনটি হওয়ায় ঘুম ভেঙে গেল নয়নতারার।তবে ততখনে সঞ্জয় সরে গেছে সেখান থেকে। নয়নতারার দেখলো সঞ্জয়ের যাওয়া তবে ডাকতে পারলো না।সে বুঝে উঠতে পারলো না কি হয়েছে।এদিকে নয়নতারার সাথে তার ছোট্ট শিশুটিও ঘুম ভেঙে গেল। ব্যস্ত হয়ে তাকে সামলাতে মন দিল সে।
রাতের অন্ধকার কাটিয়ে ভোরের নতুন আলো ছড়িয়ে পড়েছে ধিরে ধিরে আকাশ আলো করে। আর সেই ভোরের স্নিগ্ধ আলোয় পরছে নয়নতারার মুখমণ্ডলে।নয়নতারার তার সন্তানের নাকে নাক ঘষে আদর করছিল। সঞ্জয় কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি সে।তার চোখে চোখ পরতেই সঞ্জয় চোখ নামিয়ে নিল।কিছুটা অবাক হলো নয়নতারা।একটি হাত বাড়িয়ে সঞ্জয়ের গাল স্পর্শ করে সে বলল।
– তোমায় এমন কেন দেখাছে,কিছু হয়েছে!
সঞ্জয় চোখ না তুলেই বলল। আমার এসে গেছি তৈরি হয়ে তোমার বাবাকে ডেকে ওঠাও...
অবশেষে গন্তব্যে নায়িকা।তবে গল্প এখনো অনেকটুকু বাকি।তাই বলছি অবশ্যই জানাতে ভুলবেন না আপনার অনুভুতি এবং আমার প্রশ্নের উত্তর টি,গল্পটি চলবে কি না?