25-04-2024, 05:40 AM
(This post was last modified: 25-04-2024, 05:47 AM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ৬
কড়...কড়...কড়াৎ...বিকট শব্দে একটা বাজ পড়লো কোথায়। অবশ্য শব্দটি কানে আসার আগেই আকাশ আলোকিত হয়ে জানান দিয়ে দিয়েছে তা। তবে এখন বজ্রপাতের শব্দের সাথে যোগ হয়েছে উতাল হাওয়া। প্রকৃতি যেন আজ ভয়ঙ্কর এক সাজে সেজেছে! যদিও কিছুক্ষণ পরে ভোরের আলো ফোটার কথা।কিন্তু সম্পূর্ণ আকাশ ঢাকা ঘন কাল মেঘে,তাই চারপাশটা ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।যেন রাত নামলো সবে মাত্র। আর সেই অন্ধকারে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছে সঞ্জয়। উদেশ্য সিঁড়ির থেকে কিছুটা দূরে বসার ঘরের দরজাটির সাথে তার বৌদিমণির ঘরখানি।
অনেক রাত অবধি হেমলতার অপেক্ষায় বসে ছিল সে।কিন্তু কই,মহারানী কোন খোজই নেই। অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভাঙ্গতেই প্রথম মাথায় এলো সেই অভাগিনীর কথা। না জানি আজ কি আছে হেমের কপালে।
অন্ধকারে ভালো মতো কিছুই দেখার উপায় নেই। তারপরও যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নয়নতারার কক্ষের দরজাটি খোলা। এ দেখে বেশ অবাক হল সঞ্জয়। এমনিতে নয়নতারা বাড়ির সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে।উঠেই আগে স্নানটি সেরে নেয় সে। তারপর সোজা ঠাকুর ঘরে ঢোকে। ঠাকুর ঘর থেকে বেড়িয়ে শুরু হয় তার গৃহের কাজকর্ম।তবে এখনো তো সকাল হয়নি।তাছাড়া প্রকৃতির এমন প্রতিকুল অবস্থায় সে বাইরে বেরোবেই বা কেন!
ভাবতে ভাবতে সঞ্জয় পৌঁছায় দোরের সামনে।দরজাটা হাট করে খোলা। সঞ্জয় পাশে দাঁড়িয়ে যখন ঘরের ভেতরের অন্ধকারে চোখ রাখে,ঠিক তখনই এক উজ্জ্বল আলোর ছটা বাইরে থেকে এসে ঘরটি আলোকিত করে দেয় ক্ষনিকের জন্যে।তারপরেই কড়...কড়ৎ.... শব্দে যেন আকাশ টি ভেঙে পরতে চায় মাটিতে। হায় কপাল! আজ যে ভগবানও হেমলতার বিপক্ষে! তা না হলে এমনটি হয় কখনো? বলি এই অন্ধকার রাতে ঘুমন্ত হেমলতা যে বড্ড অসহায় সঞ্জয়ের হাতে।
এদিকে সঞ্চয় বজ্রপাতের ক্ষণস্থায়ী আলোয় দেখল দরজার সোজাসুজি থাকা খাটে পেছন ঘুরে সেই অভাগীনিটি গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। তার দেহটির খুব অল্পই ঢেকে রেখেছে সেই দিনকার সেই বেগুনি শাড়িখানা।হেমলতার নগ্ন পিঠখানি দরজার দিকে ফেরানো।কোরানো চুলগুলো খাটে ধার ঘেষে পরছে মেঝেতে ।সে আর লক্ষ্য করেছে যে বিছানার অপরদিকটিতে শুধু বাবু শুয়ে আছে। এবার একটু চিন্তা হানা দিল তার মনে।এতরাতে তার বৌদিমণি গেল কোথায়! ভেরতের ঘরে গেছে কি? যদি তাই হয় তবে কি এই মুহুর্তে এ ঘরে ঢোকা ঠিক হবে! ধরা পরে যাবে না তো আবার।
এই সব চিন্তা মাথায় এলেও,বেশিক্ষণ তার মনটিকে আটকে রাখা গেল না।"সে যা হয় হবে" মনে মনে এই বলে সে ঘরের ভেতরে পা বাড়িয়ে দিল সঞ্জয়।
হেমলতার কাছে এসে সঞ্জয় ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে ।আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে আরামে ঘুমানো হচ্ছে,ঠিক আছে মজা দেখাছি তোমায়।
তার গলার আওয়াজ টা কেমন যেন নেশালো।যেন শত জন্মের বুভুক্ষু এক খিদের তারণা মিশে আছে ওই গলায়। সঞ্জয় হেমলতার দিকে ঝুকে গিয়ে একটা চুম্বন করে তার নগ্ন পিঠটায়।তবে এতে কি আর মন ভরে। তাইতো হেমের নরম পিঠের বিভাজিকায় একটা একটা করে চুম্বন আছড়ে পড়তে লাগল।তবে এতেও যেন খিদে মিটছে না তার। একটা একটা ফুল তুলতে তুলতে তার মনে গহীন হতে কেউ যেন বলে ওঠে। এই গোটা ফুলগাছটাই তো তার ,এর সব সব ফুল শুধুই তার। তাই তো সখত পাঁচ না ভেবে তার ডান হাতখানি চালান করলো আঁচলের ফাঁকে।মুখটি নামিয়ে আনলো কানের সান্নিধ্যে।পরক্ষণেই একটি অতি পরিচিত ঘ্রাণ নাকে লাগলো তার।
হালকা, তবে স্পষ্ট সুবাস। মনের কোনে প্রশ্ন এসে করা নাড়ছে নারতে শুরু করলো। আজ হেমলতার দেহটি এমন সুগন্ধী হয়ে উঠেছে কেন!সারা দেহে যেন জুঁই ফুলের সুগন্ধে মাখামাখি। মুহূর্তের মধ্যে কেঁপে ওঠে সঞ্জয়ের হৃদয় খানি। তবে ততখনে তার হাতখানি ঘুমন্ত রমনীর শাড়ির ফাঁকে ঢুকে গেছে।তার শক্ত আঙ্গুল গুলির ডগায় সে অনুভব করছে নরম কিছুর ছোঁয়া।
সঞ্জয় এবার ঘুমন্ত রমনীকে ভালো মত দেখতে আলতো হাতে ঘুরিয়ে নেয় তার দিকে।আর তখনি কোন অগ্রিম বার্তা ছাড়াই আকাশ ফেঁটে খুব কাছেই আছড়ে পরে বজ্রপাত। তবে এবার আর বজ্রপাতের ক্ষীণ আলোর কোন প্রয়োজন হয় না সঞ্জয়ের। এতখনে তার জানা হয়ে গেছে তার পরিচয়।
ঘুমন্ত রমনী টি যে নয়নতারা,এটি দেখা মাত্র আড়ষ্ট হয়ে যায় তার সারা দেহ। খাটের এপাশে নয়নতারা তার কন্যা সন্তানটিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল।সঞ্জয় এবার ভেবে পায় না কি করবে সে।তার ডান হাতখানি এখনও যে নয়নতারা আঁচলের তলায়।কোন এক অজানা শক্তি যেন ভর করেছে তাতে।সেই হাতখানি নিয়ন্ত্রণ সঞ্জয় হাড়িয়ে বসেছে যেন।
ডান হাতের থাবার তলায় থাকা নরম মাংসপিন্ডটি যে অস্বাভাবিক রকম উত্তপ্ত।যেন সেটি জ্বালিয়ে দিতে চাইছে সঞ্জয়ের হাতখানি। তবে ইতিমধ্যে তার ডান হাতের শক্ত থাবার চাপে নয়নতারার নরম দুধের ভান্ডারটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন। সঞ্জয় সেই বিস্ফোরণ অনুভব করছে বেশ ভালোই।তার আঙ্গুল গুলি বেয়ে সেই অনুভূতি টি নামছে যে।
তবে এমন সময় একটা ঝন ঝন আওয়াজ ভেসে এসে ধাক্কা লাগায় সঞ্জয়ের কর্ণের অন্দরমহলে। চমকে উঠে হাত সরিয়ে নেয় সে।নিজেকে সামলে নিতে নিতে হেমলতা প্রবেশ করে খোলা দরজাটি দিয়ে। অন্ধকার সঞ্জয়ের দন্ডায়মান বিশাল মূর্তিটি দেখে,আতঙ্কিত হেমলতা চিৎকার দিতে চায়।তবে তা আর হচ্ছে কোথায়!
সঠিক সময় মতো সঞ্জয় চেপেধরে হেমলতার মুখখানি।তারপর হেমকে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঘরের বাইরে।
– শসস্.. একদম চিৎকার করবেনা।
সঞ্জয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে শান্ত হয় হেমলতা।।ভয় কিছুটা কমে তার। তবুও বুকখানি এখনো ধুকপুক করছে যে। নিশ্বাস পরছে ঘনঘন।নিজেকে সামলে নিতে বেশ সময় নেয় হেমলতা। এদিকে হেমলতার নীরবতা দেখে সঞ্জয় প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে।
– এত রাতে কোথায় যাওয়া হয়েছিল শুনি?
মুখতুলে তাকাইয় হেমলতা।জবাব দিতেই গিয়ে ঠোঁট দুখানি একটু নড়ে ওঠে তার।তবে শুধু মাত্র ওটুকুই, আর কোন আওয়াজ বেরিয়ে আসে না তার মুখ থেকে। হটাৎ আতঙ্কে গলার স্বরটি তার রুদ্ধ হয়ে আছে। চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।তবে তাকি আর এই অন্ধকারে সঞ্জয়ের চোখে পড়বে!
অপরদিকে হেমের নীরবতা সঞ্জয়কে বাকূল করে তোলে।সে এক হাতে হেমলতার কোমর জড়িয়ে, হেমকে কাছে টেনে আনে।অন্য হাতের আঙ্গুল গুলো বুলিয়ে দেয় হেমলতার অধর পল্লবে। কোমল স্বরে আবারও প্রশ্ন করে।
– রাতে এলে না কেন শুনি?
সঞ্জয়ের বাহু বন্ধনীথেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কোন চেষ্টা করে না হেমলতা।নিজেকে আরো মিশিয়ে নেয় সঞ্জয়ের বুকের সাথে। যেন এটি তার নিরাপদ আশ্রয়। সঞ্জয় অবাক হয় হেমের এমন কান্ড দেখে।তবে সে অনুভব করে হেমলতার সারা দেহের কাপুনি। মেয়েটির এমন আতঙ্কিত হয়ে পরার কারণ বুঝে উঠতে পারে না সঞ্জয়।তবে তাই বলে এই সুযোগটি কি আর হাতছাড়া করা সাজে!গোটা ফুল গাছটাই যখন হাতের মুঠোয়।তবে একটি দুটি ফুল চুড়ি করার কি দরকার।এই সুযোগে ফুল গুলো তুলতে চায় এক নিমেষে।আদরে আশ্লেষে ভরিয়ে দিতে চায় তাদের। মুখের সামনে আসা চুলগুলোকে ডান হাতে সামনে সরিয়ে নিয়ে গুজে দেয় হেমলতার কানের পেছনে। পরক্ষণেই হাতটি নিয়ে ইসে হেলতার চিবুকের নিচে। হেমলতার কম্পিত চিবুক খানি ঠেলে ওপরে তুলে দেয় কিছুটা। তারপর মুখটি নামিয়ে আনে হেমলতার ঠোঁটের কাছাকাছি।
অপরদিকে ঠোঁটের সাথে সাথে ভিজে নরম জিভের আলতো স্পর্শে শিহরিত হয় হেমলতার সারা শরীর।একজোড়া ঠোঁট মিলিত হয়ে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছে। হেমলতার চোখ দুখানি বন্ধ।আর সঞ্জয়ের দুই চোখে অপার বিস্ময়। একটু আগের সুবাস টি আবারও নাকে লাগছে তা। তবে এবার এটির উৎস হেমলতা।কিন্তু এই ঘ্রাণ যে তাকে পাগল করে তুলেছে।কিন্তু কেন!.......
////////////////
অন্য সব সাধারণ দিনের মতো আজকের দিনটি নয় একদমই। কারণ আজ সকালের ঝড়ে কার কি ক্ষতি হয়েছে কে জানে।তবে এদিকে সঞ্জয়ের বড্ড ক্ষতি হয়ে গেল যে। মন্দিরার জ্বরে সেরে উঠতে এখন নয়নতারা বিছানায় পড়লো।গত রাতে হঠাৎ জ্বর উঠলো তার।বিষয়টি প্রথমে লক্ষ্য করে হেমলতা। বহুবার ডাকার পরেও যখন নয়নতারা কোন জবাব দেয় না,তখন সে স্পর্শ করে তার দিদিকে।তারপর আতঙ্কিত হয়ে ছুটে যায় ভেতর ঘরে তার মায়ের কাছে। তবে মিনতী দেবীর ঘুম যে মারাত্মক শক্ত!
সে যা কিছুই হয়ে যাক না কেন,সে উঠবে তার সময় মত। তবে হেম ভীষণ ভয় পেয়েছে। তাই তো সঞ্জয় বৃষ্টি মাথায় করে ও কাদামাটি উপেক্ষা করে চলেছে ডাক্তার আনতে।তবে তার মনে আজ অনেক চিন্তা। আসার সময় ক্ষেতের মাঝে ঐ বস্তিবাসী দের কান্নার আওয়াজ কানে লেগেছে তার। না জানি কি হয়েছে ওখানে। একটিবার সেখানে খোজ না নিলেই নয়।হায় ভগ'বান রক্ষা সবাইকে।
এইসব ভাবতে ভাবতে সঞ্জয় পৌঁছল ডাক্তার বাবুর বাড়িতে। দুবার কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিল এক মাঝ বয়সি ভদ্রলোক।মাথায় তার চুল নেই একটিও।তবে মুখভর্তি দাড়ি। দাড়ির রঙ সাদাও না কালোও না। সাদাকালোর মাঝামাঝি। মাথা সম্পূর্ণ কামানো। ডাক্তার বাবু সঞ্জয় সব কথা শুনে নিয়ে।এটটি ছাতা ও তার ব্যাগটি হাতে বেরিয়ে পরলেন।
ফেরার পথে রাস্তায় দেখা মিললো চরণ ঘোষের সাথে। আর তাকে দেখেই সঞ্জয়ের চিন্তা কমে গেল অনেকটা।কারণ এনি হলেন তালদিঘি গ্রামের দৈনিক পত্রিকার মতো।কোথায় কি হয়েছে না হয়েছে সব খবর উনার কাছে পাওয়া যায় সবার আগে। তার কাছেই গ্রামের খবর সব শুনলো সঞ্জয়।
মাঝি পাড়ার অধিকাংশ বাড়ির ঘরে টিন নেই। চারদিকে শিশুদের কান্না। মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে মুখোরিত হয়ে আছে মাঝি পাড়া।অল্প সময়ের এই ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গ্রামে। অনেক মানুষতো কাজ করতে নেমেছে ঝড় থামার আগেই। তালতলার তাল গাছ একটি পরেছে শন্তুর চায়ের দোকানে। এটা অবশ্য সঞ্জয় নিজেও দেখেছে আসার সময়।সব মিলিয়ে পুরো গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলেছে এই ঝড়। কোথায়ও কোনো কিছু ঠিক নেই। মনে হয়েছে কেউ এসে তালদিঘি গ্রামকে ধ্বংস করে গেছে যেন।
এদিকে বাড়িতে হলো এক অবাক কান্ড।সঞ্জয় ও ডাক্তার বাড়ি ফিরতেই দেখে নয়নতারা রান্নার তোরজোর করছে।আর হেমলতা মুখ কাচুমাচু করে বারান্দায় বাবুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নয়নতারার এমন তর কান্ডে সঞ্জয়ের গা জ্বলিয়া উঠিল।এবং সে এক রকম চিৎকার করিয়া সারা বাড়ি মাথায় তুলিল।
– কি হচ্ছে কি এইসব! বলি তোমায় কি আমি কাজের ঝি রেখেছি!
সঞ্জয়ের চিৎকারে ভেতর ঘর হতে মিনতী দেবী বেরিয়ে এলো। সঞ্জয়ের এই রূপ তার চেনা না থাকলেও তিনি অবস্থা সামলে নিতে খুব বেশি সময় লাগালেন না। নয়নতারাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক রকম টেনেই নিয়ে গেলেন ভেতর ঘরে।অপরদিকে বারান্দায় এক কোণায় বসিয়া সঞ্জয় প্রচণ্ড রাগে গজগজ করিতে লাগিলো।
ডাক্তার নয়নতারাকে দেখে ওষুধ দিয়ে গেল।আর বলে গেল চিন্তার কিছু নেই।জ্বর নেমে গেছে।তবে শরীর দূর্বল, তাই বিশ্রাম নেওয়াটা আবশ্যক। এই অদ্ভুত জ্বরে পড়িয়া বাড়ি সবার বিশেষ কিছুই হইলো বলে বোঝা গেল না।তবে সঞ্জয় সারাদিন আর অন্ন মুখে তুলিল না। সারাটি দিন এদিক ওদিক ঘুরিয়া ফিরিয়া সন্ধ্যায় ঘরে ফিরিলো।
এদিকে সঞ্জয়ের চিন্তা নয়নতারারও যে খাওয়া- দাওয়া মাথায় উঠেছে। সে সারাটা বিকেল খাবারের থালা নিয়ে বসে ছিল।অবশেষে শরীর দূর্বল হয়ে পরায় বাধ্য হয়ে বিছানায় যেতে হয় তাকে। তবে নয়নতারার অবর্তমানে হেমলতা খাবার ও জলের পাত্র খানিতে দখল বসিয়ে দিল। সঞ্জয় বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরেই হেমলতা সেগুলো নিয়ে হাজির হল সঞ্জয়ের ঘরের দোরের সমুখে।
এদিকে সঞ্জয় খালি গায়ে একটা লুঙ্গি পরে বিছানায় পায়ে পা তুলে শুয়ে আছে। আর মাথার পেছনে দুই হাত দিয়ে,দুচোখ বুঝে ভাবছিল আজ সারাটি দিন যা যা হয়ে গেছে।তবে দূপুর ওমন রাগ দেখানো কি ঠিক হয়েছে! আর সকালের নয়নতারার ঘরে যা হল সেটাই বা কি ভাবে ভুলবে সে।
তার ভাবনার মাঝে নূপুরের ঝনঝনানি কানে এলো তার। চোখ দুখানি খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল।হেমলতা দাড়িয়ে আছে দরজার মুখে। হাতে খাবারের থালা ও জলের পাত্র। সঞ্জয় একটিবার হেমলতার পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলিয়ে নিল।
বোনদুটির মধ্যে উচ্চতা ছাড়া আর বিশেষ কোন পার্থক্য আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলো সঞ্জয়। হেমলতার গায়ে একটি সবুজ শাড়ি।তবে শাড়িটি তার নয়,ওটি নয়নতারার। কারণ এই শাড়িটা নয়নতারাকে পড়তে দেখেছে সঞ্জয় বেশ কয়েকবার। ডাগর দুটি চোখে কাজল লাগিয়েছে,সেই সাথে চুলগুলো খোলা।নয়নতারার মতোই কোঁকড়ানো চুল হেমলতার। চোখে কাজল থাকায় তাকে দেখা আরো বেশি মায়াবী লাগছে।তার ফর্সা মসৃণ ত্বকে ঘরের হলদেটে আলোটা যেন মাখনের মতো পিছলে যাচ্ছে।দেখতে দেখতে সঞ্জয়ের চোখ দুটো আটকে গেল হেমলতার বুকে। কিন্তু না,নয়নতারার বুকের সাথে তুলনা করা সম্ভব নয় হেমের।তবে একটু হাতের কাজ করলেই ওগুলো ফুলে ফেপে উঠবে।ভেবেই আনন্দের শিহরন খেলে গেল সঞ্জয়ের সারা শরীরে।তার সাথে দুষ্টু চিন্তাভাবনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
এদিকে সঞ্জয়ের নীরবতায় অস্থির হয়ে হেমলতা আবারও পা নাড়িয়ে নূপুরের আওয়াজ তুলল। সঞ্জয় এবার বলল।
– এসো
ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে,হেমলতা প্রবেশ ঘরে।তবে চোখ গুলো তার এখনো মেঝেতে আটকে আছে।খাবারের পাত্র টেবিলে রেখে সে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে লাগলো ঘর থেকে। বলি একি হতে দেবে সঞ্জয়! হেমলতা কিছুটা এগুতেই তার আঁচল খানি পেছন থেকে টেনে ধরলো সঞ্জয়। তা এই তো হবারই কথা।একলা ঘরে সুন্দরী রমনীকে কে ছেড়ে দেবে শুনি! কিন্তু এদিকে যে হেমলতার করুণ অবস্থা। তা সেদিকে সঞ্জয় দেখবে কেন? বলি এমন সুযোগ কেউকি করে হাতছাড়া!.....তাই তো আমিও করবো না।একটি ছোট্ট ও চেনা প্রশ্ন করবো।গল্পটি চলবে তো?
কড়...কড়...কড়াৎ...বিকট শব্দে একটা বাজ পড়লো কোথায়। অবশ্য শব্দটি কানে আসার আগেই আকাশ আলোকিত হয়ে জানান দিয়ে দিয়েছে তা। তবে এখন বজ্রপাতের শব্দের সাথে যোগ হয়েছে উতাল হাওয়া। প্রকৃতি যেন আজ ভয়ঙ্কর এক সাজে সেজেছে! যদিও কিছুক্ষণ পরে ভোরের আলো ফোটার কথা।কিন্তু সম্পূর্ণ আকাশ ঢাকা ঘন কাল মেঘে,তাই চারপাশটা ঘুরঘুট্টি অন্ধকার।যেন রাত নামলো সবে মাত্র। আর সেই অন্ধকারে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামছে সঞ্জয়। উদেশ্য সিঁড়ির থেকে কিছুটা দূরে বসার ঘরের দরজাটির সাথে তার বৌদিমণির ঘরখানি।
অনেক রাত অবধি হেমলতার অপেক্ষায় বসে ছিল সে।কিন্তু কই,মহারানী কোন খোজই নেই। অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে টেবিলের সামনে চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ আগে ঘুম ভাঙ্গতেই প্রথম মাথায় এলো সেই অভাগিনীর কথা। না জানি আজ কি আছে হেমের কপালে।
অন্ধকারে ভালো মতো কিছুই দেখার উপায় নেই। তারপরও যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে নয়নতারার কক্ষের দরজাটি খোলা। এ দেখে বেশ অবাক হল সঞ্জয়। এমনিতে নয়নতারা বাড়ির সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে।উঠেই আগে স্নানটি সেরে নেয় সে। তারপর সোজা ঠাকুর ঘরে ঢোকে। ঠাকুর ঘর থেকে বেড়িয়ে শুরু হয় তার গৃহের কাজকর্ম।তবে এখনো তো সকাল হয়নি।তাছাড়া প্রকৃতির এমন প্রতিকুল অবস্থায় সে বাইরে বেরোবেই বা কেন!
ভাবতে ভাবতে সঞ্জয় পৌঁছায় দোরের সামনে।দরজাটা হাট করে খোলা। সঞ্জয় পাশে দাঁড়িয়ে যখন ঘরের ভেতরের অন্ধকারে চোখ রাখে,ঠিক তখনই এক উজ্জ্বল আলোর ছটা বাইরে থেকে এসে ঘরটি আলোকিত করে দেয় ক্ষনিকের জন্যে।তারপরেই কড়...কড়ৎ.... শব্দে যেন আকাশ টি ভেঙে পরতে চায় মাটিতে। হায় কপাল! আজ যে ভগবানও হেমলতার বিপক্ষে! তা না হলে এমনটি হয় কখনো? বলি এই অন্ধকার রাতে ঘুমন্ত হেমলতা যে বড্ড অসহায় সঞ্জয়ের হাতে।
এদিকে সঞ্চয় বজ্রপাতের ক্ষণস্থায়ী আলোয় দেখল দরজার সোজাসুজি থাকা খাটে পেছন ঘুরে সেই অভাগীনিটি গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। তার দেহটির খুব অল্পই ঢেকে রেখেছে সেই দিনকার সেই বেগুনি শাড়িখানা।হেমলতার নগ্ন পিঠখানি দরজার দিকে ফেরানো।কোরানো চুলগুলো খাটে ধার ঘেষে পরছে মেঝেতে ।সে আর লক্ষ্য করেছে যে বিছানার অপরদিকটিতে শুধু বাবু শুয়ে আছে। এবার একটু চিন্তা হানা দিল তার মনে।এতরাতে তার বৌদিমণি গেল কোথায়! ভেরতের ঘরে গেছে কি? যদি তাই হয় তবে কি এই মুহুর্তে এ ঘরে ঢোকা ঠিক হবে! ধরা পরে যাবে না তো আবার।
এই সব চিন্তা মাথায় এলেও,বেশিক্ষণ তার মনটিকে আটকে রাখা গেল না।"সে যা হয় হবে" মনে মনে এই বলে সে ঘরের ভেতরে পা বাড়িয়ে দিল সঞ্জয়।
হেমলতার কাছে এসে সঞ্জয় ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে ।আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে আরামে ঘুমানো হচ্ছে,ঠিক আছে মজা দেখাছি তোমায়।
তার গলার আওয়াজ টা কেমন যেন নেশালো।যেন শত জন্মের বুভুক্ষু এক খিদের তারণা মিশে আছে ওই গলায়। সঞ্জয় হেমলতার দিকে ঝুকে গিয়ে একটা চুম্বন করে তার নগ্ন পিঠটায়।তবে এতে কি আর মন ভরে। তাইতো হেমের নরম পিঠের বিভাজিকায় একটা একটা করে চুম্বন আছড়ে পড়তে লাগল।তবে এতেও যেন খিদে মিটছে না তার। একটা একটা ফুল তুলতে তুলতে তার মনে গহীন হতে কেউ যেন বলে ওঠে। এই গোটা ফুলগাছটাই তো তার ,এর সব সব ফুল শুধুই তার। তাই তো সখত পাঁচ না ভেবে তার ডান হাতখানি চালান করলো আঁচলের ফাঁকে।মুখটি নামিয়ে আনলো কানের সান্নিধ্যে।পরক্ষণেই একটি অতি পরিচিত ঘ্রাণ নাকে লাগলো তার।
হালকা, তবে স্পষ্ট সুবাস। মনের কোনে প্রশ্ন এসে করা নাড়ছে নারতে শুরু করলো। আজ হেমলতার দেহটি এমন সুগন্ধী হয়ে উঠেছে কেন!সারা দেহে যেন জুঁই ফুলের সুগন্ধে মাখামাখি। মুহূর্তের মধ্যে কেঁপে ওঠে সঞ্জয়ের হৃদয় খানি। তবে ততখনে তার হাতখানি ঘুমন্ত রমনীর শাড়ির ফাঁকে ঢুকে গেছে।তার শক্ত আঙ্গুল গুলির ডগায় সে অনুভব করছে নরম কিছুর ছোঁয়া।
সঞ্জয় এবার ঘুমন্ত রমনীকে ভালো মত দেখতে আলতো হাতে ঘুরিয়ে নেয় তার দিকে।আর তখনি কোন অগ্রিম বার্তা ছাড়াই আকাশ ফেঁটে খুব কাছেই আছড়ে পরে বজ্রপাত। তবে এবার আর বজ্রপাতের ক্ষীণ আলোর কোন প্রয়োজন হয় না সঞ্জয়ের। এতখনে তার জানা হয়ে গেছে তার পরিচয়।
ঘুমন্ত রমনী টি যে নয়নতারা,এটি দেখা মাত্র আড়ষ্ট হয়ে যায় তার সারা দেহ। খাটের এপাশে নয়নতারা তার কন্যা সন্তানটিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল।সঞ্জয় এবার ভেবে পায় না কি করবে সে।তার ডান হাতখানি এখনও যে নয়নতারা আঁচলের তলায়।কোন এক অজানা শক্তি যেন ভর করেছে তাতে।সেই হাতখানি নিয়ন্ত্রণ সঞ্জয় হাড়িয়ে বসেছে যেন।
ডান হাতের থাবার তলায় থাকা নরম মাংসপিন্ডটি যে অস্বাভাবিক রকম উত্তপ্ত।যেন সেটি জ্বালিয়ে দিতে চাইছে সঞ্জয়ের হাতখানি। তবে ইতিমধ্যে তার ডান হাতের শক্ত থাবার চাপে নয়নতারার নরম দুধের ভান্ডারটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে যেন। সঞ্জয় সেই বিস্ফোরণ অনুভব করছে বেশ ভালোই।তার আঙ্গুল গুলি বেয়ে সেই অনুভূতি টি নামছে যে।
তবে এমন সময় একটা ঝন ঝন আওয়াজ ভেসে এসে ধাক্কা লাগায় সঞ্জয়ের কর্ণের অন্দরমহলে। চমকে উঠে হাত সরিয়ে নেয় সে।নিজেকে সামলে নিতে নিতে হেমলতা প্রবেশ করে খোলা দরজাটি দিয়ে। অন্ধকার সঞ্জয়ের দন্ডায়মান বিশাল মূর্তিটি দেখে,আতঙ্কিত হেমলতা চিৎকার দিতে চায়।তবে তা আর হচ্ছে কোথায়!
সঠিক সময় মতো সঞ্জয় চেপেধরে হেমলতার মুখখানি।তারপর হেমকে নিয়ে বেরিয়ে আসে ঘরের বাইরে।
– শসস্.. একদম চিৎকার করবেনা।
সঞ্জয়ের গলার আওয়াজ পেয়ে শান্ত হয় হেমলতা।।ভয় কিছুটা কমে তার। তবুও বুকখানি এখনো ধুকপুক করছে যে। নিশ্বাস পরছে ঘনঘন।নিজেকে সামলে নিতে বেশ সময় নেয় হেমলতা। এদিকে হেমলতার নীরবতা দেখে সঞ্জয় প্রশ্ন ছুড়ে দেয় তার দিকে।
– এত রাতে কোথায় যাওয়া হয়েছিল শুনি?
মুখতুলে তাকাইয় হেমলতা।জবাব দিতেই গিয়ে ঠোঁট দুখানি একটু নড়ে ওঠে তার।তবে শুধু মাত্র ওটুকুই, আর কোন আওয়াজ বেরিয়ে আসে না তার মুখ থেকে। হটাৎ আতঙ্কে গলার স্বরটি তার রুদ্ধ হয়ে আছে। চেহারায় ভয়ের ছাপ স্পষ্ট।তবে তাকি আর এই অন্ধকারে সঞ্জয়ের চোখে পড়বে!
অপরদিকে হেমের নীরবতা সঞ্জয়কে বাকূল করে তোলে।সে এক হাতে হেমলতার কোমর জড়িয়ে, হেমকে কাছে টেনে আনে।অন্য হাতের আঙ্গুল গুলো বুলিয়ে দেয় হেমলতার অধর পল্লবে। কোমল স্বরে আবারও প্রশ্ন করে।
– রাতে এলে না কেন শুনি?
সঞ্জয়ের বাহু বন্ধনীথেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার কোন চেষ্টা করে না হেমলতা।নিজেকে আরো মিশিয়ে নেয় সঞ্জয়ের বুকের সাথে। যেন এটি তার নিরাপদ আশ্রয়। সঞ্জয় অবাক হয় হেমের এমন কান্ড দেখে।তবে সে অনুভব করে হেমলতার সারা দেহের কাপুনি। মেয়েটির এমন আতঙ্কিত হয়ে পরার কারণ বুঝে উঠতে পারে না সঞ্জয়।তবে তাই বলে এই সুযোগটি কি আর হাতছাড়া করা সাজে!গোটা ফুল গাছটাই যখন হাতের মুঠোয়।তবে একটি দুটি ফুল চুড়ি করার কি দরকার।এই সুযোগে ফুল গুলো তুলতে চায় এক নিমেষে।আদরে আশ্লেষে ভরিয়ে দিতে চায় তাদের। মুখের সামনে আসা চুলগুলোকে ডান হাতে সামনে সরিয়ে নিয়ে গুজে দেয় হেমলতার কানের পেছনে। পরক্ষণেই হাতটি নিয়ে ইসে হেলতার চিবুকের নিচে। হেমলতার কম্পিত চিবুক খানি ঠেলে ওপরে তুলে দেয় কিছুটা। তারপর মুখটি নামিয়ে আনে হেমলতার ঠোঁটের কাছাকাছি।
অপরদিকে ঠোঁটের সাথে সাথে ভিজে নরম জিভের আলতো স্পর্শে শিহরিত হয় হেমলতার সারা শরীর।একজোড়া ঠোঁট মিলিত হয়ে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছে। হেমলতার চোখ দুখানি বন্ধ।আর সঞ্জয়ের দুই চোখে অপার বিস্ময়। একটু আগের সুবাস টি আবারও নাকে লাগছে তা। তবে এবার এটির উৎস হেমলতা।কিন্তু এই ঘ্রাণ যে তাকে পাগল করে তুলেছে।কিন্তু কেন!.......
////////////////
অন্য সব সাধারণ দিনের মতো আজকের দিনটি নয় একদমই। কারণ আজ সকালের ঝড়ে কার কি ক্ষতি হয়েছে কে জানে।তবে এদিকে সঞ্জয়ের বড্ড ক্ষতি হয়ে গেল যে। মন্দিরার জ্বরে সেরে উঠতে এখন নয়নতারা বিছানায় পড়লো।গত রাতে হঠাৎ জ্বর উঠলো তার।বিষয়টি প্রথমে লক্ষ্য করে হেমলতা। বহুবার ডাকার পরেও যখন নয়নতারা কোন জবাব দেয় না,তখন সে স্পর্শ করে তার দিদিকে।তারপর আতঙ্কিত হয়ে ছুটে যায় ভেতর ঘরে তার মায়ের কাছে। তবে মিনতী দেবীর ঘুম যে মারাত্মক শক্ত!
সে যা কিছুই হয়ে যাক না কেন,সে উঠবে তার সময় মত। তবে হেম ভীষণ ভয় পেয়েছে। তাই তো সঞ্জয় বৃষ্টি মাথায় করে ও কাদামাটি উপেক্ষা করে চলেছে ডাক্তার আনতে।তবে তার মনে আজ অনেক চিন্তা। আসার সময় ক্ষেতের মাঝে ঐ বস্তিবাসী দের কান্নার আওয়াজ কানে লেগেছে তার। না জানি কি হয়েছে ওখানে। একটিবার সেখানে খোজ না নিলেই নয়।হায় ভগ'বান রক্ষা সবাইকে।
এইসব ভাবতে ভাবতে সঞ্জয় পৌঁছল ডাক্তার বাবুর বাড়িতে। দুবার কড়া নাড়তেই দরজা খুলে দিল এক মাঝ বয়সি ভদ্রলোক।মাথায় তার চুল নেই একটিও।তবে মুখভর্তি দাড়ি। দাড়ির রঙ সাদাও না কালোও না। সাদাকালোর মাঝামাঝি। মাথা সম্পূর্ণ কামানো। ডাক্তার বাবু সঞ্জয় সব কথা শুনে নিয়ে।এটটি ছাতা ও তার ব্যাগটি হাতে বেরিয়ে পরলেন।
ফেরার পথে রাস্তায় দেখা মিললো চরণ ঘোষের সাথে। আর তাকে দেখেই সঞ্জয়ের চিন্তা কমে গেল অনেকটা।কারণ এনি হলেন তালদিঘি গ্রামের দৈনিক পত্রিকার মতো।কোথায় কি হয়েছে না হয়েছে সব খবর উনার কাছে পাওয়া যায় সবার আগে। তার কাছেই গ্রামের খবর সব শুনলো সঞ্জয়।
মাঝি পাড়ার অধিকাংশ বাড়ির ঘরে টিন নেই। চারদিকে শিশুদের কান্না। মানুষের হৈ-হুল্লোড়ে মুখোরিত হয়ে আছে মাঝি পাড়া।অল্প সময়ের এই ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গ্রামে। অনেক মানুষতো কাজ করতে নেমেছে ঝড় থামার আগেই। তালতলার তাল গাছ একটি পরেছে শন্তুর চায়ের দোকানে। এটা অবশ্য সঞ্জয় নিজেও দেখেছে আসার সময়।সব মিলিয়ে পুরো গ্রামের অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলেছে এই ঝড়। কোথায়ও কোনো কিছু ঠিক নেই। মনে হয়েছে কেউ এসে তালদিঘি গ্রামকে ধ্বংস করে গেছে যেন।
এদিকে বাড়িতে হলো এক অবাক কান্ড।সঞ্জয় ও ডাক্তার বাড়ি ফিরতেই দেখে নয়নতারা রান্নার তোরজোর করছে।আর হেমলতা মুখ কাচুমাচু করে বারান্দায় বাবুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নয়নতারার এমন তর কান্ডে সঞ্জয়ের গা জ্বলিয়া উঠিল।এবং সে এক রকম চিৎকার করিয়া সারা বাড়ি মাথায় তুলিল।
– কি হচ্ছে কি এইসব! বলি তোমায় কি আমি কাজের ঝি রেখেছি!
সঞ্জয়ের চিৎকারে ভেতর ঘর হতে মিনতী দেবী বেরিয়ে এলো। সঞ্জয়ের এই রূপ তার চেনা না থাকলেও তিনি অবস্থা সামলে নিতে খুব বেশি সময় লাগালেন না। নয়নতারাকে কিছু বলতে না দিয়ে এক রকম টেনেই নিয়ে গেলেন ভেতর ঘরে।অপরদিকে বারান্দায় এক কোণায় বসিয়া সঞ্জয় প্রচণ্ড রাগে গজগজ করিতে লাগিলো।
ডাক্তার নয়নতারাকে দেখে ওষুধ দিয়ে গেল।আর বলে গেল চিন্তার কিছু নেই।জ্বর নেমে গেছে।তবে শরীর দূর্বল, তাই বিশ্রাম নেওয়াটা আবশ্যক। এই অদ্ভুত জ্বরে পড়িয়া বাড়ি সবার বিশেষ কিছুই হইলো বলে বোঝা গেল না।তবে সঞ্জয় সারাদিন আর অন্ন মুখে তুলিল না। সারাটি দিন এদিক ওদিক ঘুরিয়া ফিরিয়া সন্ধ্যায় ঘরে ফিরিলো।
এদিকে সঞ্জয়ের চিন্তা নয়নতারারও যে খাওয়া- দাওয়া মাথায় উঠেছে। সে সারাটা বিকেল খাবারের থালা নিয়ে বসে ছিল।অবশেষে শরীর দূর্বল হয়ে পরায় বাধ্য হয়ে বিছানায় যেতে হয় তাকে। তবে নয়নতারার অবর্তমানে হেমলতা খাবার ও জলের পাত্র খানিতে দখল বসিয়ে দিল। সঞ্জয় বাড়িতে ফেরার কিছুক্ষণ পরেই হেমলতা সেগুলো নিয়ে হাজির হল সঞ্জয়ের ঘরের দোরের সমুখে।
এদিকে সঞ্জয় খালি গায়ে একটা লুঙ্গি পরে বিছানায় পায়ে পা তুলে শুয়ে আছে। আর মাথার পেছনে দুই হাত দিয়ে,দুচোখ বুঝে ভাবছিল আজ সারাটি দিন যা যা হয়ে গেছে।তবে দূপুর ওমন রাগ দেখানো কি ঠিক হয়েছে! আর সকালের নয়নতারার ঘরে যা হল সেটাই বা কি ভাবে ভুলবে সে।
তার ভাবনার মাঝে নূপুরের ঝনঝনানি কানে এলো তার। চোখ দুখানি খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল।হেমলতা দাড়িয়ে আছে দরজার মুখে। হাতে খাবারের থালা ও জলের পাত্র। সঞ্জয় একটিবার হেমলতার পা থেকে মাথা অবধি চোখ বুলিয়ে নিল।
বোনদুটির মধ্যে উচ্চতা ছাড়া আর বিশেষ কোন পার্থক্য আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করলো সঞ্জয়। হেমলতার গায়ে একটি সবুজ শাড়ি।তবে শাড়িটি তার নয়,ওটি নয়নতারার। কারণ এই শাড়িটা নয়নতারাকে পড়তে দেখেছে সঞ্জয় বেশ কয়েকবার। ডাগর দুটি চোখে কাজল লাগিয়েছে,সেই সাথে চুলগুলো খোলা।নয়নতারার মতোই কোঁকড়ানো চুল হেমলতার। চোখে কাজল থাকায় তাকে দেখা আরো বেশি মায়াবী লাগছে।তার ফর্সা মসৃণ ত্বকে ঘরের হলদেটে আলোটা যেন মাখনের মতো পিছলে যাচ্ছে।দেখতে দেখতে সঞ্জয়ের চোখ দুটো আটকে গেল হেমলতার বুকে। কিন্তু না,নয়নতারার বুকের সাথে তুলনা করা সম্ভব নয় হেমের।তবে একটু হাতের কাজ করলেই ওগুলো ফুলে ফেপে উঠবে।ভেবেই আনন্দের শিহরন খেলে গেল সঞ্জয়ের সারা শরীরে।তার সাথে দুষ্টু চিন্তাভাবনা গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।
এদিকে সঞ্জয়ের নীরবতায় অস্থির হয়ে হেমলতা আবারও পা নাড়িয়ে নূপুরের আওয়াজ তুলল। সঞ্জয় এবার বলল।
– এসো
ভেতরে ঢোকার অনুমতি পেয়ে,হেমলতা প্রবেশ ঘরে।তবে চোখ গুলো তার এখনো মেঝেতে আটকে আছে।খাবারের পাত্র টেবিলে রেখে সে চুপচাপ বেরিয়ে যেতে লাগলো ঘর থেকে। বলি একি হতে দেবে সঞ্জয়! হেমলতা কিছুটা এগুতেই তার আঁচল খানি পেছন থেকে টেনে ধরলো সঞ্জয়। তা এই তো হবারই কথা।একলা ঘরে সুন্দরী রমনীকে কে ছেড়ে দেবে শুনি! কিন্তু এদিকে যে হেমলতার করুণ অবস্থা। তা সেদিকে সঞ্জয় দেখবে কেন? বলি এমন সুযোগ কেউকি করে হাতছাড়া!.....তাই তো আমিও করবো না।একটি ছোট্ট ও চেনা প্রশ্ন করবো।গল্পটি চলবে তো?