19-04-2024, 09:50 PM
(This post was last modified: 19-04-2024, 10:17 PM by বহুরূপী. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পর্ব ৪
ছায়ামতি নদীর খেয়াঘাটে একটি বড় বটো বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে,কিছুটা দূরে ঘাটের পানে তাকিয়ে আছে হেমলতা। সেই সাথে পুরুষ কন্ঠে গানের আওয়াজ ভেসে এসে লাগছে তার কানে..
আসবার কালে কি জাত ছিলে....
এসে তুমি কি জাত নিলে.....
কি জাত হবে যাবার কালে....
সে কথা ভেবে বলো না....
হেমলতার থেকে কিছুটা দূরে কয়েকজন লোক চিড়েগুড় হাতে বসে মাথা দুলিয়ে চলেছে গানের তালে।তাদের মধ্যেই একজন বেসুরো গলায় গাইছিল গানটি। বেসুরো হলেও ভালোই শুনতে লাগছিল হেমলতার। এমন সময় সঞ্জয় এসে তার হাতখানা ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
জাত গেল জাত গেল বলে....
শেষবারের মত পেছন ফিরে একনজর দেখে নিল হেম।তবে কার জাত কিভাবে কোন বা কারণে গেল,তা সে কথা হেমলতার ভাবলে চলবে কেন! সে যার জাত সে দেখে বুঝে নিলেই হয়।কিন্তু হেমলতার সরল মনখানি বুঝে উঠতে পারছে না সঞ্জয় তাকে নিয়ে এই কোন খেলায় মেতেছে। তবে এই সর্বনাশা খেলায় তার মুখখানি যে পুড়বে;সে কথা ভেবেই হেমের মনখানি আজ বড়ই উতলা হয়ে উঠেছে।
– এতখন ধরে ডাকছি এদিকে মহারানী কানে তুল গুজে বসে আছে।বলি ঘাটের পানে তাকিয়ে নদীর ঐপারে পালানোর মতলব আটছো নাকি শুনি।
সঞ্জয়ের কথা গুলো শুনে হেমেলতা দাঁড়িয়ে গেল। আর গাল দুখানি কিঞ্চিৎ ফুলিয়ে বলল।
– বা'রে পালানোর মতলব কেন করবো শুনি! সব কিছু ঠিক হলে,নদীর পাশেই যেতে হবে যে।
সঞ্জয় হেমের কাছে এগিয়ে এসে সস্নেহে তার ঘন কালো চুলে হাত বুলিয়ে বলল।
– সেটি যে হচ্ছে না হেম।তোমাকে যেতে দিলে তবে তো যাবে।
হেমলতা বেশ অবাক দৃষ্টিতে সঞ্জয়ের মুখটির পানে তাকিয়ে বলল।
– হু্ বললেই হলো!আমি থাকবো কেন এখানে শুনি?
সঞ্জয় হেমলতার কথায় হাসতে হাসতে বলল।তা বললে হবে,তোমাকে যে আমি চরণদাসী বানানোর সংকল্প করেছি,তার কি হবে শুনি।
এটুকুই কথা,আর কিছু না বলে সঞ্জয় হেমলতার হাতখানির আঙ্গুলের ফাঁকে তার আঙুল গুলোকে স্থাপন করে,শক্ত বাঁধনে জরিয়ে নিলো হেমের হাতটিকে।
এদিকে সঞ্জয়ের মুখের ওটুকু কথা হেমলতার মনের অন্দরে এক অজানা ঝড়ের আলোড়ন তুলে দিয়েছে যে,বলি সেই খবর কি সঞ্জয়ের কানে গেছে। যাহার সমুখে দাঁড়াইলে হেমে বুকখানি কাঁপিয়া ওঠে।সেই পুরুষটির সাথে সে এক বাড়িতে,এক ঘরে একা থাকবে কি করে......
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সূর্যটা আজ কোন এক অজানা কারণে প্রচন্ড চটেছে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে।তাই তো সেই সকাল থেকে তার রাগের ছটায় ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পরেছে সবার। এই প্রচন্ড তাপদহ উপেক্ষা করে নয়নতারা তার পুত্র সন্তানটির মুখে তার বাঁ পাশের স্তনবৃন্তটি দিয়ে দূপুরে রান্না সারছে।অবশ্য তার মা মিনতী দেবী বলেছিল বাবুকে দুধ খাইয়ে তবে রান্নায় বসুক।ততক্ষণ না হয় মিনতী দেবী উনুনের পাশে বসিবে।তবে নয়নতারা জানে সেটি ঠিক হবে না।একে তো আজ সকালে তার মা একরকম জোর করেই তার ছোট বোনটিকে সঞ্জয়ের সাথে গঞ্জে পাঠালো।তার ওপরে মন্দিরা ও তা বাবা অসুস্থ।তা বাড়ির মানুষের এই অবস্থায় তার দুজনেই এক সঙ্গে রান্নাঘরে থাকলে চলবে কেন।তবে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে সূর্যটি যতই রাগ ঝারুক না কেন।নয়নতারাকে রক্ষা করছে রান্নাঘরে পাশে বিশাল আঁকার একটি জামগাছ।
– এবার ওঠ তো দেখি মা নয়নতারা।ওদিকে মন্দিরা সেই কখন থেকে মা মা করছে। একটি বারটি গিয়ে দেখে আয় তো ।
নয়নতারা উঠতে উঠতে বলল।মা তখন তুমি হেমেকে ওভাবে জোর করলে কেন?তুমি তো জানোই হেম সঞ্জয়কে কেমন ভয়....
নয়নতারাকে থামিয়ে তিনি বললেন।হয়েছে বোনের জন্যে খবরদারি না করলেও চলবে।আমি যা করেছি তা ভেবে চিন্তেই করেছি।আর শোন ও ছেলেকে অনেকেই ভয় করে,তা বলে কি তার আসে না ওর কাছে।
নয়নতারা আর কিছুই বলল না।মন্দিরার মা ডাকটি তার কানে লাগছে।তাই সে তার ঘরের দিকে পা বারালো। মন্দিরার জ্বর নেমে গেছে,তবে শরীরটা বড্ড দুর্বল এখনো।এদিকে তার বাবার অসুখটা বারছে দিনে দিনে।এই বিষয়টি নিয়ে সঞ্জয় গতকাল কথা বলেছে তার সাথে। সঞ্জয় চায় নয়নতারার বাবাকে শহরে নিয়ে যেতে,সেখানে বড় ডাক্তার দিয়ে তার বাবা চিকিৎসা করাবে।নয়নতারার লজ্জায় বলেনি কিছুই।শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে গেছে। কি বলবে সে,কোন মুখেই বা বলবে।তার বাবা যে সঞ্জয়ের সাথে কখনও ভালো আচরণ করেনি। তবে তার জন্যে সঞ্জয়ের ওত চিন্তা কেন।নয়নতারা জানে সঞ্জয় ভালো ছেলে।কিন্তু তবুও সঞ্জয় যে নয়নতারার মলিন মুখটিতে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে। সেটি নয়নতারা বেশ বুঝতে পারে। কিন্তু হায় রে অদৃষ্ট ছেলের এইটুকু চাওয়া সে পূরণ করতে পারলো না।
– মা মাসি কোথায় গেছে?
মন্দিরা প্রশ্নে ভাবনা থামিয়ে নয়নতারা তা কন্যার মাথার পাশে বসলো।এবং সস্নেহে মন্দিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।হেম গঞ্জে গেছে তোর কাকুর সাথে।
– কেন গেছে?
– তোর মাসির চাটনির বয়ামে ভেঙেছে যে,হেম বলেনি তোকে?
কথাটা শুনে মন্দিরা অবাক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল। তবে মাসি যে বলল চাটনির বয়াম একটি,তাই অল্প অল্প খেতে হবে সব একবারে যেন শেষ না করি।তবে কি মাসি মিথ্যে বলেছে আমায়?
নয়নতারা মন্দিরার কথা বুঝলো না।তবে ততখনে মন্দিরার পাশে বিছানায় চাটনির বয়ামটি চোখে পরলো তার। কিন্তু চাটনির বয়ামখানা তো ভাঙ্গে নি।তবে কি শুধু শুধু সঞ্জয়কে....ছিঃ ছিঃ...। গতকাল বকুনি খেয়ে সঞ্জয় কেন হাসছিল বোঝেনি সে।এখন মনে পরতেই মুখখানি লাল হয়ে গেল তার।মনে মনে হেমলতাকে শাসাতে লাগলো,আজ বাড়ি ফিরলে হয় একবার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে একটি প্রশ্ন দোল খেয়ে গেল।তবে হেম কাঁদছিল কেন!......
~~~~~~~~~~~~~
সামনে যতদূরে চোখ যায়,শুধু কয়েকটি নৌকা চোখে পড়ছে শুধু।তাও ভাটার টানে মাঝ নদীতে বয়ে চলেছে।চার-পাশের প্রকৃতি নির্জন,জনশূন্য।আশেপাশের গাছগুলিও যেন সারি বেঁঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আঁড়াল করতে চাইছে হেম ও সঞ্জয়কে। তারই মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচায় সঞ্জয় শুয়ে আছে চিৎ হয়ে।পায়ে পা তুলে মাথাটি রেখেছে হেমলতার কোলে।গায়ে তার পাঞ্জাবী ও ধূতি।
অন্যদিকে হেম বড্ড নিশ্চুপ।সে দুটো চাটনির বয়াম বুকে জরিয়ে আধবোঝা চোখে একবার সঞ্জয়কে দেখছে।তো একবার এদিক ওদিক তাকাছে।সে যে কিসের সন্ধান করছে,তা বোঝা যাচ্ছে না।গায়ে তার সেই সকালের সবুজ শাড়িটি।আর তার আঁচল খানি এখন সঞ্জয়ের বাঁ হাতে পেছানো। বলতে গেলে হেম এখন সঞ্জয়ের হাতে বন্দিনী।তার মনটা পালাই পালাই করলেও, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তার।
নদীর এইদিকটার এই জমি সরকারি,ঝোপ জঙ্গল গাছ সবই সরকারের। তাই এদিকে ঘরবাড়ি নেই একদম।শুধু হালকা বনাঞ্চল আর পেছনে পাহাড়ের উপড়ে একটি আশ্রম।তাই তো হেমের এত ভয়।আর তার সাথে মিশেছে রাগ।একি সাথে রাগ ও লজ্জায় তার মুখটি হয়েছে লাল।রাগটি তার মায়ের প্রতি।এমন বেহায়া ছেলেটার সাথে তাকে কেন পাঠালো।যে ছেলে সবার উপস্থিতিতে বাড়িতেই চুমু খেয়ে বসে আছে।আর এই নির্জন প্রকৃতির মাঝে হেমলতা যে বড় একলা.....
সঞ্জয় চোখ খুলে হেমলতার দিকে তাকিয়ে দেখে।হেমের রক্তিম ঠোঁট দুখানি মৃদুভাবে নড়ে চলেছে একনাগাড়ে। না জানি কি সব বিড়বিড় করছে মনে মনে। সঞ্চয় তার বাঁ হাতটি তুলে।তা আলতো ভাবে রাখলো হেমলতার গালে। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো হেমলতার সম্পূর্ণ শরীরটা।পরক্ষণেই মুখটা সরিয়ে নিতে চাইলো সে।তা বলি সঞ্জয় ছাড়বে কেন।সে বুঝতে পেরে তার হাতটি নিয়ে গেল কোঁপার কাছে। খোঁপাটা টেনে নামিয়ে আনলো হেমলতার মুখখানি। "আহহ্" বলে মৃদু আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো হেমলতা। মুখখানি কাঁদো কাঁদো করে বলল।
– পায়ে পরি আপনার আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।
হেমেলতার কাঁদো কাঁদো মুখটি দেখে সঞ্জয়ের মনে মায়ার সঞ্চার হলো না একটুও।উল্টো সে একগাল হেসে বলল।এতো কিছুর পরেও আবারও সেই পুরোনো ভুলটি করে,এখন উনি বাড়ি যাবেন,অত সোজা নয়।বলি গতকাল বৌদিমণি কে দিয়ে বকুনি খাওয়ালে কেন শুনি।
– ঘাট হয়েছে আমার।আর কখনো ওমন করবোনা আমি...আআঃ..
হেমলতা কথাটি শেষ করার আগে সঞ্জয় উঠে বসে ডান হাতটি দিয়ে চেপে ধরলো হেমের চিবুক খানি।ভয় হেমলতা তার চোখ দুখানি বন্ধ করে নিলো আবারও।অন্যদিকে সঞ্জয় তার বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে দিতে লাগলো হেমলতার রক্তিম ঠোঁট দুখানির নিচে কালো বিন্দুর মত ছোট্ট তিলটার ওপরে।
– ঘাট হয়েছে বললেই হল।এখনো যে কিছুই হয়নি।এখনও অনেক শাস্তি পাওনা আছে তোমার।কিন্তু তার আগে বলতো তোমার সাথে বৌদিমণির গতরাতে কি কথা হয়েছে?
হেমলতা ধিরে ধিরে তার ডাগর চোখ দুখানি খুলে তাকালো সঞ্জয়ের দিকে। দুরু দুরু বুকে মৃদু স্বরে বলল। সে পারবনা আমি, দিদি জানলে মেরেই ফেলবে আমায়..ওহহ্
সঞ্জয় হেমের মুখখানি টেনে নিয়ে এলো তার ঠোঁটের কাছে।দুজনের ঠোঁটের মাঝে অল্প কিছু দূরত্ব এখন।কোন এক অজানা ভয়ে হেমলতার চোখ দুখানি বন্ধ।সঞ্জয় হেমলতার খোঁপা ছেড়ে দুই হাত রাখলো হেমের দুই গালে।আলতো ভাবে চুমু খেলো তার চোখের পাতায়।
– তা বললে তো হবে না হেম।আজকের পর থেকে কিছু লুকানো চলবে না আমার থেকে। বলেছিল না ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হলে দখল নেব আমি।
এটুকু বলে থামলো সঞ্জয়।হেমলতার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করলো উত্তরের। তবে উত্তর কিভাবে আসবে! সঞ্জয়ের হাতের স্পর্শে যে শিহরিত হচ্ছে হেমলতার সর্বাঙ্গ।তার রক্তিম ওষ্ঠ যুগল তখন কম্পায়মান।মায়াময় চোখদুটি তার তখনও নিজেদের রুদ্ধ রেখেছে।যেন পণ নিয়েছে তার না তাকানোর।
এদিকে হেমলতার লজ্জায় রাঙা মুখ খানি, সঞ্জয়ের মনের ভেতর নিয়ন্ত্রণের শক্ত দেয়ালটি ভঙ্গে দিয়েছে ইতিমধ্যে।তাই তো সঞ্জয় বেচারা বাধ্য হলো হেমে রক্তিম ঠোঁট দুখানি কামড়ে ধরতে।
আর সঞ্জয়ের এমন আচরণ বাধ্য করলো হেমলতার চোখ দুখানি মেলে দেখতে।এদিকে সঞ্জয় হেমলতার মাথাটা একহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে।আর সেই সাথে চলছে হেমেলতার ওষ্ঠ ও অধরে চোষন।অপরদিকে হেমলতা অনুভব করছে সঞ্জয়ের অন্য হাতখানি বিপদজনক ভাবে তার কাঁধের আঁচল খানি নিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এবার হেম চাটনির বয়াম ছেড়ে চেপে ধরলো সঞ্জয়ের হাতখানি।তবে বাধ্য দিতে পারলো না। কিভাবেই বা দেবে! তার দেহের সবটুকু শক্তি যে চুষে নিচ্ছে সঞ্জয়। হেমলতা করুন চোখদুটো তাকিয়ে আছে সঞ্জয়ের চোখের দিকে। তবে এবার যে সঞ্জয়ের চোখ দুখানি বন্ধ। কারণ সে এখন হেমেলতার মনের ভেতর খালি পরে থাকা জমিনের দখল নিতে ব্যস্ত যে......আমিও ব্যস্ত,তবে প্রশ্নটি না করেলেই নয়।তাই বলছি,গল্পটি চলবে তো?
ছায়ামতি নদীর খেয়াঘাটে একটি বড় বটো বৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে,কিছুটা দূরে ঘাটের পানে তাকিয়ে আছে হেমলতা। সেই সাথে পুরুষ কন্ঠে গানের আওয়াজ ভেসে এসে লাগছে তার কানে..
আসবার কালে কি জাত ছিলে....
এসে তুমি কি জাত নিলে.....
কি জাত হবে যাবার কালে....
সে কথা ভেবে বলো না....
হেমলতার থেকে কিছুটা দূরে কয়েকজন লোক চিড়েগুড় হাতে বসে মাথা দুলিয়ে চলেছে গানের তালে।তাদের মধ্যেই একজন বেসুরো গলায় গাইছিল গানটি। বেসুরো হলেও ভালোই শুনতে লাগছিল হেমলতার। এমন সময় সঞ্জয় এসে তার হাতখানা ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
জাত গেল জাত গেল বলে....
শেষবারের মত পেছন ফিরে একনজর দেখে নিল হেম।তবে কার জাত কিভাবে কোন বা কারণে গেল,তা সে কথা হেমলতার ভাবলে চলবে কেন! সে যার জাত সে দেখে বুঝে নিলেই হয়।কিন্তু হেমলতার সরল মনখানি বুঝে উঠতে পারছে না সঞ্জয় তাকে নিয়ে এই কোন খেলায় মেতেছে। তবে এই সর্বনাশা খেলায় তার মুখখানি যে পুড়বে;সে কথা ভেবেই হেমের মনখানি আজ বড়ই উতলা হয়ে উঠেছে।
– এতখন ধরে ডাকছি এদিকে মহারানী কানে তুল গুজে বসে আছে।বলি ঘাটের পানে তাকিয়ে নদীর ঐপারে পালানোর মতলব আটছো নাকি শুনি।
সঞ্জয়ের কথা গুলো শুনে হেমেলতা দাঁড়িয়ে গেল। আর গাল দুখানি কিঞ্চিৎ ফুলিয়ে বলল।
– বা'রে পালানোর মতলব কেন করবো শুনি! সব কিছু ঠিক হলে,নদীর পাশেই যেতে হবে যে।
সঞ্জয় হেমের কাছে এগিয়ে এসে সস্নেহে তার ঘন কালো চুলে হাত বুলিয়ে বলল।
– সেটি যে হচ্ছে না হেম।তোমাকে যেতে দিলে তবে তো যাবে।
হেমলতা বেশ অবাক দৃষ্টিতে সঞ্জয়ের মুখটির পানে তাকিয়ে বলল।
– হু্ বললেই হলো!আমি থাকবো কেন এখানে শুনি?
সঞ্জয় হেমলতার কথায় হাসতে হাসতে বলল।তা বললে হবে,তোমাকে যে আমি চরণদাসী বানানোর সংকল্প করেছি,তার কি হবে শুনি।
এটুকুই কথা,আর কিছু না বলে সঞ্জয় হেমলতার হাতখানির আঙ্গুলের ফাঁকে তার আঙুল গুলোকে স্থাপন করে,শক্ত বাঁধনে জরিয়ে নিলো হেমের হাতটিকে।
এদিকে সঞ্জয়ের মুখের ওটুকু কথা হেমলতার মনের অন্দরে এক অজানা ঝড়ের আলোড়ন তুলে দিয়েছে যে,বলি সেই খবর কি সঞ্জয়ের কানে গেছে। যাহার সমুখে দাঁড়াইলে হেমে বুকখানি কাঁপিয়া ওঠে।সেই পুরুষটির সাথে সে এক বাড়িতে,এক ঘরে একা থাকবে কি করে......
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সূর্যটা আজ কোন এক অজানা কারণে প্রচন্ড চটেছে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে।তাই তো সেই সকাল থেকে তার রাগের ছটায় ঘরে থাকা অসম্ভব হয়ে পরেছে সবার। এই প্রচন্ড তাপদহ উপেক্ষা করে নয়নতারা তার পুত্র সন্তানটির মুখে তার বাঁ পাশের স্তনবৃন্তটি দিয়ে দূপুরে রান্না সারছে।অবশ্য তার মা মিনতী দেবী বলেছিল বাবুকে দুধ খাইয়ে তবে রান্নায় বসুক।ততক্ষণ না হয় মিনতী দেবী উনুনের পাশে বসিবে।তবে নয়নতারা জানে সেটি ঠিক হবে না।একে তো আজ সকালে তার মা একরকম জোর করেই তার ছোট বোনটিকে সঞ্জয়ের সাথে গঞ্জে পাঠালো।তার ওপরে মন্দিরা ও তা বাবা অসুস্থ।তা বাড়ির মানুষের এই অবস্থায় তার দুজনেই এক সঙ্গে রান্নাঘরে থাকলে চলবে কেন।তবে তালদিঘির বাসিন্দাদের ওপরে সূর্যটি যতই রাগ ঝারুক না কেন।নয়নতারাকে রক্ষা করছে রান্নাঘরে পাশে বিশাল আঁকার একটি জামগাছ।
– এবার ওঠ তো দেখি মা নয়নতারা।ওদিকে মন্দিরা সেই কখন থেকে মা মা করছে। একটি বারটি গিয়ে দেখে আয় তো ।
নয়নতারা উঠতে উঠতে বলল।মা তখন তুমি হেমেকে ওভাবে জোর করলে কেন?তুমি তো জানোই হেম সঞ্জয়কে কেমন ভয়....
নয়নতারাকে থামিয়ে তিনি বললেন।হয়েছে বোনের জন্যে খবরদারি না করলেও চলবে।আমি যা করেছি তা ভেবে চিন্তেই করেছি।আর শোন ও ছেলেকে অনেকেই ভয় করে,তা বলে কি তার আসে না ওর কাছে।
নয়নতারা আর কিছুই বলল না।মন্দিরার মা ডাকটি তার কানে লাগছে।তাই সে তার ঘরের দিকে পা বারালো। মন্দিরার জ্বর নেমে গেছে,তবে শরীরটা বড্ড দুর্বল এখনো।এদিকে তার বাবার অসুখটা বারছে দিনে দিনে।এই বিষয়টি নিয়ে সঞ্জয় গতকাল কথা বলেছে তার সাথে। সঞ্জয় চায় নয়নতারার বাবাকে শহরে নিয়ে যেতে,সেখানে বড় ডাক্তার দিয়ে তার বাবা চিকিৎসা করাবে।নয়নতারার লজ্জায় বলেনি কিছুই।শুধু মেঝের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে গেছে। কি বলবে সে,কোন মুখেই বা বলবে।তার বাবা যে সঞ্জয়ের সাথে কখনও ভালো আচরণ করেনি। তবে তার জন্যে সঞ্জয়ের ওত চিন্তা কেন।নয়নতারা জানে সঞ্জয় ভালো ছেলে।কিন্তু তবুও সঞ্জয় যে নয়নতারার মলিন মুখটিতে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছে। সেটি নয়নতারা বেশ বুঝতে পারে। কিন্তু হায় রে অদৃষ্ট ছেলের এইটুকু চাওয়া সে পূরণ করতে পারলো না।
– মা মাসি কোথায় গেছে?
মন্দিরা প্রশ্নে ভাবনা থামিয়ে নয়নতারা তা কন্যার মাথার পাশে বসলো।এবং সস্নেহে মন্দিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল।হেম গঞ্জে গেছে তোর কাকুর সাথে।
– কেন গেছে?
– তোর মাসির চাটনির বয়ামে ভেঙেছে যে,হেম বলেনি তোকে?
কথাটা শুনে মন্দিরা অবাক দৃষ্টিতে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল। তবে মাসি যে বলল চাটনির বয়াম একটি,তাই অল্প অল্প খেতে হবে সব একবারে যেন শেষ না করি।তবে কি মাসি মিথ্যে বলেছে আমায়?
নয়নতারা মন্দিরার কথা বুঝলো না।তবে ততখনে মন্দিরার পাশে বিছানায় চাটনির বয়ামটি চোখে পরলো তার। কিন্তু চাটনির বয়ামখানা তো ভাঙ্গে নি।তবে কি শুধু শুধু সঞ্জয়কে....ছিঃ ছিঃ...। গতকাল বকুনি খেয়ে সঞ্জয় কেন হাসছিল বোঝেনি সে।এখন মনে পরতেই মুখখানি লাল হয়ে গেল তার।মনে মনে হেমলতাকে শাসাতে লাগলো,আজ বাড়ি ফিরলে হয় একবার। কিন্তু পরক্ষণেই মনে একটি প্রশ্ন দোল খেয়ে গেল।তবে হেম কাঁদছিল কেন!......
~~~~~~~~~~~~~
সামনে যতদূরে চোখ যায়,শুধু কয়েকটি নৌকা চোখে পড়ছে শুধু।তাও ভাটার টানে মাঝ নদীতে বয়ে চলেছে।চার-পাশের প্রকৃতি নির্জন,জনশূন্য।আশেপাশের গাছগুলিও যেন সারি বেঁঁধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আঁড়াল করতে চাইছে হেম ও সঞ্জয়কে। তারই মাঝে সবুজ ঘাসের গালিচায় সঞ্জয় শুয়ে আছে চিৎ হয়ে।পায়ে পা তুলে মাথাটি রেখেছে হেমলতার কোলে।গায়ে তার পাঞ্জাবী ও ধূতি।
অন্যদিকে হেম বড্ড নিশ্চুপ।সে দুটো চাটনির বয়াম বুকে জরিয়ে আধবোঝা চোখে একবার সঞ্জয়কে দেখছে।তো একবার এদিক ওদিক তাকাছে।সে যে কিসের সন্ধান করছে,তা বোঝা যাচ্ছে না।গায়ে তার সেই সকালের সবুজ শাড়িটি।আর তার আঁচল খানি এখন সঞ্জয়ের বাঁ হাতে পেছানো। বলতে গেলে হেম এখন সঞ্জয়ের হাতে বন্দিনী।তার মনটা পালাই পালাই করলেও, কোথাও যাওয়ার উপায় নেই তার।
নদীর এইদিকটার এই জমি সরকারি,ঝোপ জঙ্গল গাছ সবই সরকারের। তাই এদিকে ঘরবাড়ি নেই একদম।শুধু হালকা বনাঞ্চল আর পেছনে পাহাড়ের উপড়ে একটি আশ্রম।তাই তো হেমের এত ভয়।আর তার সাথে মিশেছে রাগ।একি সাথে রাগ ও লজ্জায় তার মুখটি হয়েছে লাল।রাগটি তার মায়ের প্রতি।এমন বেহায়া ছেলেটার সাথে তাকে কেন পাঠালো।যে ছেলে সবার উপস্থিতিতে বাড়িতেই চুমু খেয়ে বসে আছে।আর এই নির্জন প্রকৃতির মাঝে হেমলতা যে বড় একলা.....
সঞ্জয় চোখ খুলে হেমলতার দিকে তাকিয়ে দেখে।হেমের রক্তিম ঠোঁট দুখানি মৃদুভাবে নড়ে চলেছে একনাগাড়ে। না জানি কি সব বিড়বিড় করছে মনে মনে। সঞ্চয় তার বাঁ হাতটি তুলে।তা আলতো ভাবে রাখলো হেমলতার গালে। সাথে সাথেই কেঁপে উঠলো হেমলতার সম্পূর্ণ শরীরটা।পরক্ষণেই মুখটা সরিয়ে নিতে চাইলো সে।তা বলি সঞ্জয় ছাড়বে কেন।সে বুঝতে পেরে তার হাতটি নিয়ে গেল কোঁপার কাছে। খোঁপাটা টেনে নামিয়ে আনলো হেমলতার মুখখানি। "আহহ্" বলে মৃদু আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো হেমলতা। মুখখানি কাঁদো কাঁদো করে বলল।
– পায়ে পরি আপনার আমায় বাড়ি নিয়ে চলুন।
হেমেলতার কাঁদো কাঁদো মুখটি দেখে সঞ্জয়ের মনে মায়ার সঞ্চার হলো না একটুও।উল্টো সে একগাল হেসে বলল।এতো কিছুর পরেও আবারও সেই পুরোনো ভুলটি করে,এখন উনি বাড়ি যাবেন,অত সোজা নয়।বলি গতকাল বৌদিমণি কে দিয়ে বকুনি খাওয়ালে কেন শুনি।
– ঘাট হয়েছে আমার।আর কখনো ওমন করবোনা আমি...আআঃ..
হেমলতা কথাটি শেষ করার আগে সঞ্জয় উঠে বসে ডান হাতটি দিয়ে চেপে ধরলো হেমের চিবুক খানি।ভয় হেমলতা তার চোখ দুখানি বন্ধ করে নিলো আবারও।অন্যদিকে সঞ্জয় তার বৃদ্ধা আঙুল বুলিয়ে দিতে লাগলো হেমলতার রক্তিম ঠোঁট দুখানির নিচে কালো বিন্দুর মত ছোট্ট তিলটার ওপরে।
– ঘাট হয়েছে বললেই হল।এখনো যে কিছুই হয়নি।এখনও অনেক শাস্তি পাওনা আছে তোমার।কিন্তু তার আগে বলতো তোমার সাথে বৌদিমণির গতরাতে কি কথা হয়েছে?
হেমলতা ধিরে ধিরে তার ডাগর চোখ দুখানি খুলে তাকালো সঞ্জয়ের দিকে। দুরু দুরু বুকে মৃদু স্বরে বলল। সে পারবনা আমি, দিদি জানলে মেরেই ফেলবে আমায়..ওহহ্
সঞ্জয় হেমের মুখখানি টেনে নিয়ে এলো তার ঠোঁটের কাছে।দুজনের ঠোঁটের মাঝে অল্প কিছু দূরত্ব এখন।কোন এক অজানা ভয়ে হেমলতার চোখ দুখানি বন্ধ।সঞ্জয় হেমলতার খোঁপা ছেড়ে দুই হাত রাখলো হেমের দুই গালে।আলতো ভাবে চুমু খেলো তার চোখের পাতায়।
– তা বললে তো হবে না হেম।আজকের পর থেকে কিছু লুকানো চলবে না আমার থেকে। বলেছিল না ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হলে দখল নেব আমি।
এটুকু বলে থামলো সঞ্জয়।হেমলতার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করলো উত্তরের। তবে উত্তর কিভাবে আসবে! সঞ্জয়ের হাতের স্পর্শে যে শিহরিত হচ্ছে হেমলতার সর্বাঙ্গ।তার রক্তিম ওষ্ঠ যুগল তখন কম্পায়মান।মায়াময় চোখদুটি তার তখনও নিজেদের রুদ্ধ রেখেছে।যেন পণ নিয়েছে তার না তাকানোর।
এদিকে হেমলতার লজ্জায় রাঙা মুখ খানি, সঞ্জয়ের মনের ভেতর নিয়ন্ত্রণের শক্ত দেয়ালটি ভঙ্গে দিয়েছে ইতিমধ্যে।তাই তো সঞ্জয় বেচারা বাধ্য হলো হেমে রক্তিম ঠোঁট দুখানি কামড়ে ধরতে।
আর সঞ্জয়ের এমন আচরণ বাধ্য করলো হেমলতার চোখ দুখানি মেলে দেখতে।এদিকে সঞ্জয় হেমলতার মাথাটা একহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে।আর সেই সাথে চলছে হেমেলতার ওষ্ঠ ও অধরে চোষন।অপরদিকে হেমলতা অনুভব করছে সঞ্জয়ের অন্য হাতখানি বিপদজনক ভাবে তার কাঁধের আঁচল খানি নিয়ে নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। এবার হেম চাটনির বয়াম ছেড়ে চেপে ধরলো সঞ্জয়ের হাতখানি।তবে বাধ্য দিতে পারলো না। কিভাবেই বা দেবে! তার দেহের সবটুকু শক্তি যে চুষে নিচ্ছে সঞ্জয়। হেমলতা করুন চোখদুটো তাকিয়ে আছে সঞ্জয়ের চোখের দিকে। তবে এবার যে সঞ্জয়ের চোখ দুখানি বন্ধ। কারণ সে এখন হেমেলতার মনের ভেতর খালি পরে থাকা জমিনের দখল নিতে ব্যস্ত যে......আমিও ব্যস্ত,তবে প্রশ্নটি না করেলেই নয়।তাই বলছি,গল্পটি চলবে তো?