17-04-2024, 04:27 PM
(This post was last modified: 17-04-2024, 04:45 PM by কাদের. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
গ
মাহফুজের সাথে দুই দিন আগে রাতের বেলা আর শেষ রাতে দুইবার সংগমের পর থেকে নুসাইবা একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে মাহফুজের সাথে। এই দুই দিন ও জোহরার সাথে শুয়েছে, যেহেতু আমিন বাড়িতে নেই। জোহরা কে বলেছে ঐ রুম নাকি বেশি ঠান্ডা। জোহরার কাছে ব্যাপারটা অবাক লাগলেও বেশি কিছু বলে নি কারণ নুসাইবার চাল চলনে এমনিতেই মুগ্ধ হয়ে আছে। তাই নুসাইবার সাথে রাতের বেলা গল্প করা যাবে এই সম্ভাবনাতেই খুশি সে। দিনের বেলায়ও নুসাইবা খেয়াল রাখছে যেন মাহফুজ ওকে ঠিক একা না পায়। মাহফুজ এই কারণে একটু রেস্টলেস হয়ে পড়েছে। ক্ষুধার্ত বাঘের ক্ষুধা বেড়েছে ঐরাতের পর। মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনেই তাই হিসাব করে পা ফেলছে। একজন চাচ্ছে এড়াতে আরেকজন চাচ্ছে যেভাবে হোক বন্দী করতে। মাহফুজ যদি নুসাইবা কে বাড়ির উঠানে একা পায় তবে নুসাইবা হঠাত করে হাক ছাড়ে এই জোহরা কই তুমি? বললা না বড়ই এর ভর্তা বানায়ে দিবা। আবার মাহফুজ তক্কে তক্কে থাকছে কখন জোহরা নুসাইবার কাছ থেকে দূরে সরবে। সংগে সংগে হাজির হচ্ছে নুসাইবার কাছে। বারান্দায় মাহফুজের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিল নুসাইবা, মাহফুজ খেয়াল করে দেখল জোহরা উঠানে বসে বাচ্চা কে কোলে নিয়ে আদর করছে, জোহরার নজর বাচ্চার দিকে ওদের দিকে না। মাহফুজ নুসাইবা কিছু বুঝে উঠার আগে ওর পাছার দাবনা ধরে জোরে একটা চিমটি দিল। খুব চাইল্ডিশ একটা কাজ কিন্তু মজা পেল মাহফুজ। কারণ চিমটি কাটা মাত্র রিফেক্স বশত উফফ করে ছোট একটা লাফ দিল নুসাইবা। পাছার উপর এমন রাম চিমটি খেয়ে একদম জ্বলে উঠেছে পাছাটা কিন্তু বেশি কিছু বলতেও পারছে না। জোহরা ঐদিক থেকে জিজ্ঞেস করল, কি হইল আফা। নুসাইবা বলল কিছু না একটা পিপড়া কামড় দিয়েছে। জোহরার নজর যখন আবার বাচ্চার দিকে গেল তখন সাবধানে হাত দিয়ে চিমটি কাটা জায়গাটা ঢলতে থাকল মাহফুজ। নুসাইবা রাগে মাহফুজের দিকে তাকিয়ে থাকল। মাহফুজ জোহরা কে শুনিয়ে নুসাইবা কে জিজ্ঞেস করল কই কামড় দিল পিপড়া? নুসাইবা তখন পাছার উপর ঢলছে জ্বলুনি কমানোর জন্য। মাহফুজের প্রশ্ন শুনে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিল নুসাইবা যাতে জোহরার নজরে না আবার পড়ে যায়। এই ভাবে শেয়ানে শেয়ানে খেলা চলছে।
তবে দুই জনের এই খেলাটা সবচেয়ে উপভোগ করছে জোহরা। জোহরার বয়স কম না, তিন তিনটা বাচ্চা হয়েছে ওর ফলে নারী পুরুষের মনের খেলার সুক্ষ ইংগিত ধরার ক্ষমতা ওর কম নেই। নুসাইবা আর মাহফুজ ওর কাছে নাটক সিনেমার নায়ক নায়িকার মত। শহরের মানুষ, তার উপর দুইজনেই দেখতে সুন্দর, কথা বলে সুন্দর করে। ওর কাছে সব সময় মনে হয় এমন সুন্দর মানুষেরা জামাই বউ হয় বুঝি খালি নাটক সিনেমায়। এমন দুই জন লোক ওর বাড়িতে আসায় খুব খুশি ও। হাওড়ের মাঝে ওর জীবন প্রায় নিস্তরংগ। ছেলেরা পড়াশুনার জন্য দূরে থাকে। স্বামী মাসের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় কাজের জন্য বাইরে থাকে। বাকিটা সময় মেয়ে কে এত বড় বাড়িতে একা। মাঝে মাঝে হয়ত নৌকা বেয়ে আশেপাশের বাড়িতে গিয়ে কয়েক ঘন্টা গল্প করে আসা। তবে ওর সবচেয়ে বড় বিনোদন হল মোবাইলে নাটক সিনেমা দেখা। আমিন জানে ওর বউ ঘরে একা থাকে আর নাটক সিনেমা পছন্দ করে। তাই প্রতিবার আসলে গঞ্জে গিয়া মোবাইলের মেমরি কার্ডে নাটক সিনেমা ভরে আনে। সেইগুলা দেখে দেখে বেশি সময় কাটে জোহরার। তাই ওর নিরামিষ জীবনে মাহফুজ নুসাইবার আগমন একধরণের বড় ব্যাপার। ওদের হাটা কথা বলার ধরণ সব খুব ভাল করে লক্ষ্য করে জোহরা। আর মানুষ গুলাও কত ভাল। শহরের বড় মানুষ, কত পড়াশুনা করা কিন্তু আমিন বা তার সাথে কথা বলে এমন ভাবে যেন ছোট ভাইবোন ওরা তাদের। এই ভাল করে খেয়াল করতেই গিয়ে জোহরা টের পায় শহরের আপা আর ভাইজানের ভিতরে ভিতরে একটা রাগারাগি চলতেছে। ভাইজান প্রায় কথা বলার চেষ্টা করতেছে আর আপা সেটারে এড়ায়ে যাইতেছে। জোহরার এত উত্তেজনা লাগে। ঠিক সিনেমার মত। নায়িকা নায়ক কে পাত্তা দিচ্ছে না আর নায়ক পাত্তা পাবার জন্য একের পর এক বিভিন্ন জিনিস করে যাচ্ছে। নাটক যেন একদম সামনা সামনি হচ্ছে। নুসাইবা আপা আমিন চলে যাবার পর সেদিন বিকালে যখন বলল আজকে রাতে ওর সাথে ঘুমাবে, গল্প করবে তখন খানিকটা সন্দেহ হইছিল জোহরার। আপা বলছিল ঐ রুমে অনেক ঠান্ডা, তোমার রুমে ঘুমাতে আরাম। জোহরা জিজ্ঞেস করছিল, ভাইজানে রাগ করবে না? নুসাইবা তখন বলল, ভাইজানের সাথে সব সময় থাকি এক দুই দিন নাহয় তোমার সাথে গল্প করলাম। জোহরা খুশি হয় নুসাইবার কথায় তবে এটাও বুঝে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলতেছে। জোহরার এতদিনের বিয়ে, জামাই বউ ঝগড়া করলে কি কি করে এইটা এখন তার মুখস্ত। জোহরা নিজেও এইটা করে। ব্যাটা মানুষের বেশি ঝোক শরীরের উপর। এরা শরীর পেলে সব ভুলে যায়। ওদের মধ্যে ঝগড়া হলে যদি জোহরা কথা বন্ধ করে তাহলে আমিন তারে রাগ কমানোর চেষ্টা করে কারণ নাইলে রাতের বেলা জোহরারে ধরতে পারবে না। দুই দিন জোহরারে ধরতে না পারলে আমিনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। জোহরা এই ব্যাপারটা উপভোগ করে। ব্যাটা মানুষের যত চোটপাট থাক এই এক জায়গায় আইসা এরা খতম। সব জারিজুরি খতম এগো, মাইয়াগো এই চালে। এখন শহরের এই সুন্দরী আপা ভাইজানের মধ্যে সেইম জিনিস হইতেছে দেইখা খুব খুশি হয় জোহরা। খেয়াল করতেছে না এমন ভাব কইরা খুব মনযোগ দিইয়া খেয়াল করে কি করে দুইজন। মাহফুজ ভাই কোন কথা কইতে আইলেই নুসাইবা আপা যে তার লগে গল্প লাগায় দেয় এইটা খেয়াল করছে। আবার গতকাল উঠানে বইসা বাচ্চারে নিয়া খেলতেছিল সেসময়, বারান্দায় নুসাইবা আপার পাছার উপর যে একটা জব্বর চিমটি কাটছে ভাইজান সেইটা ভাইবা হাসতেছে জোহরা। ভাইজান শয়তান আছে। দুই দিন শরীর না পাইয়া একদম গরম হইয়া আছে। জোহরার মনে হইতেছে সেও এই নাটকের পার্টে আছে। নায়ক নায়িকার বান্ধবী বা ছোটবোন থাকে না, প্রেমে সাহায্য করে সেরকম কেউ। জোহরার মনে হয় ও এই নাটকে প্রেমের কারিগর। নায়ক নায়িকার মান অভিমান ভাংগানোর দ্বায়িত্ব ওর।
জোহরা জানে কথা না বলা আর এড়ায়ে যাওয়া হইল মাইয়া মানুষের বড় অস্ত্র। ছেলেরা যত বীর হোক না কেন এই অস্ত্রে কাইত হবেই। তাই নুসাইবার মন প্রথমে নরম করার চেষ্টা করে। মাহফুজের কি কি ভাল গুণ আছে এইগুলা যেন নুসাইবা মনে পড়ে। জোহরা তাই ইচ্ছা করেই নুসাইবা কে প্রশ্ন করে কেমনে দুই জনের বিয়ে হল, কেমনে প্রেম হল। জোহরার এইসব প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পড়ে যায় নুসাইবা কারণ জোহরার কাছে থেকে এমন প্রশ্ন শুনবে আশা করে নি। আবার জোহরা কে ঠিক চুপ করিয়ে দিতে পারতেছে না কারণ তাইলে জোহরা যদি কিছু সন্দেহ করে। নুসাইবা তাই বানায়ে বানায়ে গল্প বলে, যেই গল্পটা আংশিক সত্যি। আসলে নুসাইবার সাথে আরশাদের প্রেমের গল্পটাই নুসাইবা বলে তবে আরশাদের জায়গায় মাহফুজ কে বসিয়ে দেয়। ভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে দেখা হওয়া, প্রেমের প্রস্তাব, প্রেম সব কিছুতে আরশাদের জায়গায় মাহফুজের নাম বসিয়ে গল্প বলতে থাকে। জোহরা মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে। ওর কাছে নুসাইবা মাহফুজে বেহেস্তের জোড়ি। জোহরা মুগ্ধ স্বরে বলে উমা, কি সুন্দর আপনাগো কাহিনি। নুসাইবা খালি জোহরার থেকে বাচার জন্য এই হাফ সত্য গল্প বলতেছিল। জোহরার কথা শুনে ওর মনে হয় আসলে বড় সুন্দর ছিল ওদের প্রেমের গল্পটা। আরশাদ আর ওর প্রেমের গল্প কিন্তু সেই আরশাদ আর এই আরশাদে অনেক পার্থক্য। এই আরশাদ কে চিনে না নুসাইবা। ওর বানানো গল্পের মত না চেনা সেই আরশাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে মাহফুজ। মনের ভিতর বানানো গল্পের এই প্রতীকী ব্যাখ্যা দেখে চমকে উঠে নুসাইবা। ওর মন কি তাহলে আরশাদ কে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
জোহরা মাহফুজকেও বুদ্ধি দেয়। মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে ভাইজান আপার সাথে কি ঝগড়া হইছে? জোহরার মুখে এই প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে যায় মাহফুজ। জোহরা কে মাহফুজ একজন সহজ সরল গ্রাম্য মহিলা ভেবে এসেছে, সে যে এত কিছু খেয়াল করে সেটা বুঝতে পারে নি। মাহফুজ আমতা আমতা করে বলে, না না সেরকম কিছু না। জোহরা বলে ভাইজান, লজ্জার কিছু নাই। জামাই বউয়ে এমন ঝগড়া হয়। আপনে আপারে মানাইবেন না। ব্যাটা মাইনষের কাম হইল মাইয়াগো রাগ মানানো। মাইয়াগো রাগ হইলে হেরা কথা বন্ধ করে কিন্তু মনে মনে কিন্তু চাইয়া থাহে কহন ব্যাটায় আইয়া রাগ ভাংগাইবো। নাটক সিনেমায় দেহেন না, কেম্নে ফুল দেয়। বাড়ির পিছনে একটা কাঠাল চাপা গাছ আছে। এর ফুলের যে সুবাস, এইটা দিলে আপায় আর রাগ কইরা থাকতে পারত না। জোহরার পরামর্শে ভরসা পায় না মাহফুজ। নুসাইবা কে কাঠাল চাপা ফুল দিলে পায়ের চপ্পল ছুড়ে মারে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। মাহফুজ কে ইতস্তত করতে দেখে ব্যাপারটা নিজের হাতে তুলে নেয় জোহরা। বলে আসেন ভাইজান আমার সাথে আসেন। এই বলে মাহফুজ কে বাড়ির পিছনে কাঠাল চাপা গাছের সামনে নিয়ে যায়। মাহফুজ কে দিয়ে এরপর দুইটা ফুল পাড়ায়। সেই ফুল আর মাহফুজ কে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর নুসাইবার কাছে যায়। গিয়ে বলে, দেখেন আপা ভাইজান কিমুন রোমান্টিক। আপনার লাইগা ফুল আনছে, আমারে জিগায় কই ফুল পাওন যাইবো। এই হাওড়ের মইধ্যে আমরা ফুল পামু কই। তহন মনে হইলো কাঠাল চাপা ফুল আছে বাড়িতে। ভাইজান কইলো তাইলে হেইটাই দেও। এরপর ভাইজানরে দেহাইলাম, আর ভাইয়ে সেই ফুল লইয়া আইলো আপনার লাইগা। জোহরার গল্প বানানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয় মাহফুজ। আর ওর জন্য মাহফুজ ফুল খুজছে শুনে অবাক হয় নুসাইবা। শহরে বড় হওয়া নুসাইবা কাঠাল চাপা চিনে না, এরপর এর সুন্দর গন্ধ আর সুন্দর ফুল দেখে মন ভাল হয়ে যায় নুসাইবার। খালি বলে থ্যাংকিউ। মাহফুজ অবাক হয়ে জোহরার দিকে তাকায়। যত বোকা গ্রাম্য মহিলা ভাবছিল জোহরা কে অতটা বোকা না জোহরা। অন্তত নারীর মনের রহস্য কিছুটা হলেও বুঝে।
মাহফুজের সাথে দুই দিন আগে রাতের বেলা আর শেষ রাতে দুইবার সংগমের পর থেকে নুসাইবা একটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে মাহফুজের সাথে। এই দুই দিন ও জোহরার সাথে শুয়েছে, যেহেতু আমিন বাড়িতে নেই। জোহরা কে বলেছে ঐ রুম নাকি বেশি ঠান্ডা। জোহরার কাছে ব্যাপারটা অবাক লাগলেও বেশি কিছু বলে নি কারণ নুসাইবার চাল চলনে এমনিতেই মুগ্ধ হয়ে আছে। তাই নুসাইবার সাথে রাতের বেলা গল্প করা যাবে এই সম্ভাবনাতেই খুশি সে। দিনের বেলায়ও নুসাইবা খেয়াল রাখছে যেন মাহফুজ ওকে ঠিক একা না পায়। মাহফুজ এই কারণে একটু রেস্টলেস হয়ে পড়েছে। ক্ষুধার্ত বাঘের ক্ষুধা বেড়েছে ঐরাতের পর। মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনেই তাই হিসাব করে পা ফেলছে। একজন চাচ্ছে এড়াতে আরেকজন চাচ্ছে যেভাবে হোক বন্দী করতে। মাহফুজ যদি নুসাইবা কে বাড়ির উঠানে একা পায় তবে নুসাইবা হঠাত করে হাক ছাড়ে এই জোহরা কই তুমি? বললা না বড়ই এর ভর্তা বানায়ে দিবা। আবার মাহফুজ তক্কে তক্কে থাকছে কখন জোহরা নুসাইবার কাছ থেকে দূরে সরবে। সংগে সংগে হাজির হচ্ছে নুসাইবার কাছে। বারান্দায় মাহফুজের সামনে দিয়ে হেটে যাচ্ছিল নুসাইবা, মাহফুজ খেয়াল করে দেখল জোহরা উঠানে বসে বাচ্চা কে কোলে নিয়ে আদর করছে, জোহরার নজর বাচ্চার দিকে ওদের দিকে না। মাহফুজ নুসাইবা কিছু বুঝে উঠার আগে ওর পাছার দাবনা ধরে জোরে একটা চিমটি দিল। খুব চাইল্ডিশ একটা কাজ কিন্তু মজা পেল মাহফুজ। কারণ চিমটি কাটা মাত্র রিফেক্স বশত উফফ করে ছোট একটা লাফ দিল নুসাইবা। পাছার উপর এমন রাম চিমটি খেয়ে একদম জ্বলে উঠেছে পাছাটা কিন্তু বেশি কিছু বলতেও পারছে না। জোহরা ঐদিক থেকে জিজ্ঞেস করল, কি হইল আফা। নুসাইবা বলল কিছু না একটা পিপড়া কামড় দিয়েছে। জোহরার নজর যখন আবার বাচ্চার দিকে গেল তখন সাবধানে হাত দিয়ে চিমটি কাটা জায়গাটা ঢলতে থাকল মাহফুজ। নুসাইবা রাগে মাহফুজের দিকে তাকিয়ে থাকল। মাহফুজ জোহরা কে শুনিয়ে নুসাইবা কে জিজ্ঞেস করল কই কামড় দিল পিপড়া? নুসাইবা তখন পাছার উপর ঢলছে জ্বলুনি কমানোর জন্য। মাহফুজের প্রশ্ন শুনে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নিল নুসাইবা যাতে জোহরার নজরে না আবার পড়ে যায়। এই ভাবে শেয়ানে শেয়ানে খেলা চলছে।
তবে দুই জনের এই খেলাটা সবচেয়ে উপভোগ করছে জোহরা। জোহরার বয়স কম না, তিন তিনটা বাচ্চা হয়েছে ওর ফলে নারী পুরুষের মনের খেলার সুক্ষ ইংগিত ধরার ক্ষমতা ওর কম নেই। নুসাইবা আর মাহফুজ ওর কাছে নাটক সিনেমার নায়ক নায়িকার মত। শহরের মানুষ, তার উপর দুইজনেই দেখতে সুন্দর, কথা বলে সুন্দর করে। ওর কাছে সব সময় মনে হয় এমন সুন্দর মানুষেরা জামাই বউ হয় বুঝি খালি নাটক সিনেমায়। এমন দুই জন লোক ওর বাড়িতে আসায় খুব খুশি ও। হাওড়ের মাঝে ওর জীবন প্রায় নিস্তরংগ। ছেলেরা পড়াশুনার জন্য দূরে থাকে। স্বামী মাসের প্রায় অর্ধেকের বেশি সময় কাজের জন্য বাইরে থাকে। বাকিটা সময় মেয়ে কে এত বড় বাড়িতে একা। মাঝে মাঝে হয়ত নৌকা বেয়ে আশেপাশের বাড়িতে গিয়ে কয়েক ঘন্টা গল্প করে আসা। তবে ওর সবচেয়ে বড় বিনোদন হল মোবাইলে নাটক সিনেমা দেখা। আমিন জানে ওর বউ ঘরে একা থাকে আর নাটক সিনেমা পছন্দ করে। তাই প্রতিবার আসলে গঞ্জে গিয়া মোবাইলের মেমরি কার্ডে নাটক সিনেমা ভরে আনে। সেইগুলা দেখে দেখে বেশি সময় কাটে জোহরার। তাই ওর নিরামিষ জীবনে মাহফুজ নুসাইবার আগমন একধরণের বড় ব্যাপার। ওদের হাটা কথা বলার ধরণ সব খুব ভাল করে লক্ষ্য করে জোহরা। আর মানুষ গুলাও কত ভাল। শহরের বড় মানুষ, কত পড়াশুনা করা কিন্তু আমিন বা তার সাথে কথা বলে এমন ভাবে যেন ছোট ভাইবোন ওরা তাদের। এই ভাল করে খেয়াল করতেই গিয়ে জোহরা টের পায় শহরের আপা আর ভাইজানের ভিতরে ভিতরে একটা রাগারাগি চলতেছে। ভাইজান প্রায় কথা বলার চেষ্টা করতেছে আর আপা সেটারে এড়ায়ে যাইতেছে। জোহরার এত উত্তেজনা লাগে। ঠিক সিনেমার মত। নায়িকা নায়ক কে পাত্তা দিচ্ছে না আর নায়ক পাত্তা পাবার জন্য একের পর এক বিভিন্ন জিনিস করে যাচ্ছে। নাটক যেন একদম সামনা সামনি হচ্ছে। নুসাইবা আপা আমিন চলে যাবার পর সেদিন বিকালে যখন বলল আজকে রাতে ওর সাথে ঘুমাবে, গল্প করবে তখন খানিকটা সন্দেহ হইছিল জোহরার। আপা বলছিল ঐ রুমে অনেক ঠান্ডা, তোমার রুমে ঘুমাতে আরাম। জোহরা জিজ্ঞেস করছিল, ভাইজানে রাগ করবে না? নুসাইবা তখন বলল, ভাইজানের সাথে সব সময় থাকি এক দুই দিন নাহয় তোমার সাথে গল্প করলাম। জোহরা খুশি হয় নুসাইবার কথায় তবে এটাও বুঝে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চলতেছে। জোহরার এতদিনের বিয়ে, জামাই বউ ঝগড়া করলে কি কি করে এইটা এখন তার মুখস্ত। জোহরা নিজেও এইটা করে। ব্যাটা মানুষের বেশি ঝোক শরীরের উপর। এরা শরীর পেলে সব ভুলে যায়। ওদের মধ্যে ঝগড়া হলে যদি জোহরা কথা বন্ধ করে তাহলে আমিন তারে রাগ কমানোর চেষ্টা করে কারণ নাইলে রাতের বেলা জোহরারে ধরতে পারবে না। দুই দিন জোহরারে ধরতে না পারলে আমিনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। জোহরা এই ব্যাপারটা উপভোগ করে। ব্যাটা মানুষের যত চোটপাট থাক এই এক জায়গায় আইসা এরা খতম। সব জারিজুরি খতম এগো, মাইয়াগো এই চালে। এখন শহরের এই সুন্দরী আপা ভাইজানের মধ্যে সেইম জিনিস হইতেছে দেইখা খুব খুশি হয় জোহরা। খেয়াল করতেছে না এমন ভাব কইরা খুব মনযোগ দিইয়া খেয়াল করে কি করে দুইজন। মাহফুজ ভাই কোন কথা কইতে আইলেই নুসাইবা আপা যে তার লগে গল্প লাগায় দেয় এইটা খেয়াল করছে। আবার গতকাল উঠানে বইসা বাচ্চারে নিয়া খেলতেছিল সেসময়, বারান্দায় নুসাইবা আপার পাছার উপর যে একটা জব্বর চিমটি কাটছে ভাইজান সেইটা ভাইবা হাসতেছে জোহরা। ভাইজান শয়তান আছে। দুই দিন শরীর না পাইয়া একদম গরম হইয়া আছে। জোহরার মনে হইতেছে সেও এই নাটকের পার্টে আছে। নায়ক নায়িকার বান্ধবী বা ছোটবোন থাকে না, প্রেমে সাহায্য করে সেরকম কেউ। জোহরার মনে হয় ও এই নাটকে প্রেমের কারিগর। নায়ক নায়িকার মান অভিমান ভাংগানোর দ্বায়িত্ব ওর।
জোহরা জানে কথা না বলা আর এড়ায়ে যাওয়া হইল মাইয়া মানুষের বড় অস্ত্র। ছেলেরা যত বীর হোক না কেন এই অস্ত্রে কাইত হবেই। তাই নুসাইবার মন প্রথমে নরম করার চেষ্টা করে। মাহফুজের কি কি ভাল গুণ আছে এইগুলা যেন নুসাইবা মনে পড়ে। জোহরা তাই ইচ্ছা করেই নুসাইবা কে প্রশ্ন করে কেমনে দুই জনের বিয়ে হল, কেমনে প্রেম হল। জোহরার এইসব প্রশ্ন শুনে অস্বস্তিতে পড়ে যায় নুসাইবা কারণ জোহরার কাছে থেকে এমন প্রশ্ন শুনবে আশা করে নি। আবার জোহরা কে ঠিক চুপ করিয়ে দিতে পারতেছে না কারণ তাইলে জোহরা যদি কিছু সন্দেহ করে। নুসাইবা তাই বানায়ে বানায়ে গল্প বলে, যেই গল্পটা আংশিক সত্যি। আসলে নুসাইবার সাথে আরশাদের প্রেমের গল্পটাই নুসাইবা বলে তবে আরশাদের জায়গায় মাহফুজ কে বসিয়ে দেয়। ভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে দেখা হওয়া, প্রেমের প্রস্তাব, প্রেম সব কিছুতে আরশাদের জায়গায় মাহফুজের নাম বসিয়ে গল্প বলতে থাকে। জোহরা মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে। ওর কাছে নুসাইবা মাহফুজে বেহেস্তের জোড়ি। জোহরা মুগ্ধ স্বরে বলে উমা, কি সুন্দর আপনাগো কাহিনি। নুসাইবা খালি জোহরার থেকে বাচার জন্য এই হাফ সত্য গল্প বলতেছিল। জোহরার কথা শুনে ওর মনে হয় আসলে বড় সুন্দর ছিল ওদের প্রেমের গল্পটা। আরশাদ আর ওর প্রেমের গল্প কিন্তু সেই আরশাদ আর এই আরশাদে অনেক পার্থক্য। এই আরশাদ কে চিনে না নুসাইবা। ওর বানানো গল্পের মত না চেনা সেই আরশাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে মাহফুজ। মনের ভিতর বানানো গল্পের এই প্রতীকী ব্যাখ্যা দেখে চমকে উঠে নুসাইবা। ওর মন কি তাহলে আরশাদ কে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে।
জোহরা মাহফুজকেও বুদ্ধি দেয়। মাহফুজ কে জিজ্ঞেস করে ভাইজান আপার সাথে কি ঝগড়া হইছে? জোহরার মুখে এই প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে যায় মাহফুজ। জোহরা কে মাহফুজ একজন সহজ সরল গ্রাম্য মহিলা ভেবে এসেছে, সে যে এত কিছু খেয়াল করে সেটা বুঝতে পারে নি। মাহফুজ আমতা আমতা করে বলে, না না সেরকম কিছু না। জোহরা বলে ভাইজান, লজ্জার কিছু নাই। জামাই বউয়ে এমন ঝগড়া হয়। আপনে আপারে মানাইবেন না। ব্যাটা মাইনষের কাম হইল মাইয়াগো রাগ মানানো। মাইয়াগো রাগ হইলে হেরা কথা বন্ধ করে কিন্তু মনে মনে কিন্তু চাইয়া থাহে কহন ব্যাটায় আইয়া রাগ ভাংগাইবো। নাটক সিনেমায় দেহেন না, কেম্নে ফুল দেয়। বাড়ির পিছনে একটা কাঠাল চাপা গাছ আছে। এর ফুলের যে সুবাস, এইটা দিলে আপায় আর রাগ কইরা থাকতে পারত না। জোহরার পরামর্শে ভরসা পায় না মাহফুজ। নুসাইবা কে কাঠাল চাপা ফুল দিলে পায়ের চপ্পল ছুড়ে মারে কিনা সেটা ভাবার বিষয়। মাহফুজ কে ইতস্তত করতে দেখে ব্যাপারটা নিজের হাতে তুলে নেয় জোহরা। বলে আসেন ভাইজান আমার সাথে আসেন। এই বলে মাহফুজ কে বাড়ির পিছনে কাঠাল চাপা গাছের সামনে নিয়ে যায়। মাহফুজ কে দিয়ে এরপর দুইটা ফুল পাড়ায়। সেই ফুল আর মাহফুজ কে সাথে নিয়ে বাড়ির ভিতর নুসাইবার কাছে যায়। গিয়ে বলে, দেখেন আপা ভাইজান কিমুন রোমান্টিক। আপনার লাইগা ফুল আনছে, আমারে জিগায় কই ফুল পাওন যাইবো। এই হাওড়ের মইধ্যে আমরা ফুল পামু কই। তহন মনে হইলো কাঠাল চাপা ফুল আছে বাড়িতে। ভাইজান কইলো তাইলে হেইটাই দেও। এরপর ভাইজানরে দেহাইলাম, আর ভাইয়ে সেই ফুল লইয়া আইলো আপনার লাইগা। জোহরার গল্প বানানোর দক্ষতায় মুগ্ধ হয় মাহফুজ। আর ওর জন্য মাহফুজ ফুল খুজছে শুনে অবাক হয় নুসাইবা। শহরে বড় হওয়া নুসাইবা কাঠাল চাপা চিনে না, এরপর এর সুন্দর গন্ধ আর সুন্দর ফুল দেখে মন ভাল হয়ে যায় নুসাইবার। খালি বলে থ্যাংকিউ। মাহফুজ অবাক হয়ে জোহরার দিকে তাকায়। যত বোকা গ্রাম্য মহিলা ভাবছিল জোহরা কে অতটা বোকা না জোহরা। অন্তত নারীর মনের রহস্য কিছুটা হলেও বুঝে।