13-04-2024, 02:39 PM
(This post was last modified: 15-04-2024, 03:34 PM by বহুরূপী. Edited 4 times in total. Edited 4 times in total.)
পর্ব ২
সারাটা দূপুর অসহ্য উত্তাপ ছড়িয়ে সবেমাত্র সূর্যটি মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে বসেছে।তাই চারিদিকে এখন একটু প্রশান্তির ছায়া পরছিল মাঝে মধ্যে।আর সেই ছায়ায় বারান্দায় বসে; আমাদের হেমলতা একটি চাটনির বয়ামে হাত ঢুকিয়ে পায়ে পা তুলে গুনগুন করছিল।
তার পরনে আজ নতুন শাড়ি।শাড়ির রঙটি তার চোখে বেশ লেগেছে।তাই এখন শাড়িটা গায়ে জরিয়ে ফুরফুরে মনে চাটনির বয়ামে হানা দিয়েছে সে।তবে শুধু দুটো শাড়ি ও চাটনির এই বয়ামটিই হস্তগত করেছে হেমলতা।আর কিছু সে নেয় নি।
তবে বলতে হয় হেমলতাকে বেগুনি রঙের শাড়িটিতে বেশ মানিয়েছে। ব্লাউজ বিহীন শাড়ি পড়াতে; তার নগ্ন দুই বাহুতে মাঝে মাঝে সূর্যের মৃদু আলো পরে যে সঞ্জয়ের দুটি চোখে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠছে তাকি সে জানে!
অবশ্য সে কথা তার জানার কথা নয়।সঞ্জয়ের এই সময়ে আসার কথা ছিল না।যদিও নয়নতারা বলে দিয়েছিল এখন থেকে দুপুরের বাড়িতে আসতে।কিন্তু তার যে আজ পাশের গ্রামে একজনের সাথে দেখা করার কথাছিল।কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি বলে একটু জলদিই চলে এসেছে বাড়িতে।তবুও তো আসতে আসতে সেই বিকেল হল। সেই যাই হোক,বাড়িতে ঢুকেই কেমন খালি খালি লাগছিলো।এখন হেমলতাকে দেখে দুষ্টু বুদ্ধিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এদিকে হেমলতার পুরো মনোসংযোগ একত্রিত হয়েছিল চাটনির বয়ামে।তা না হলে সেকি এমন বিপদে পরে!
কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে সঞ্জয় একসময় পা টিপে টিপে হেমলতার পেছন গিয়ে দাঁড়ালো।এরপর ঝুকে পরে তার হাতটি পেছন থেকে এগিয়ে নিয়ে স্থাপন করলো হেমলতার দুই ডাগর চোখে। বলাই বাহুল্য হেমলতা আঁতকে উঠে চাটনির বয়াম দিলো মাটিতে ফেলে।তবে কাঁচের বয়ামটি না ভেঙে গড়িয়ে দূরে সরে গেল কিছুটা সামনে। এদিকে হেমলতার গগনবিদারী চিৎকারে সঞ্জয়ের কানের পর্দায় তালা লাগার যোগার হয় আর কি। তাই হেমলতাকে ছেড়ে কানে আঙুল বোলাতে বোলাতে সে বলল।
– হতচ্ছাড়া মেয়ে এত জোরে কেউ চেঁচায়।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোন জবাব না আসায়,সঞ্জয় মুখ তুলে দেখে,বেচারী হেমলতা ভীষণ আতঙ্কে সংকুচিত হয়ে বারান্দায় এক পিলারে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আর সেই নিশ্বাসের দমকেই কি তার সম্পূর্ণ দেহটি ঐভাবে কাঁপছে!চোখ দুটো বন্ধ তার। তাই দেখে সঞ্চয় এগিয়ে গেল।সামনে দাঁড়িয়ে হেমলতার চিবুকে তার দুটো আঙুল ঠেকিয়ে কম্পিত সেই তরুণীর মুখমণ্ডল টি ঠেলে কিছু টা ওপরে তুলে নরম স্বরে ডাকলো থাকে,
– হেম!
হেমলতা ডাকে সারা দিল।ধিরে ধিরে তাহার কাজল পড়া ডাগর চোখ দুটো মেলে ধরলো সে। সঞ্চয় আবার একি স্বরে বলল।
– এত ভয় পেলে চলে!তোমার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে কি হতো বলতো।
হেমলতার বলবার মত অনেক কিছুই ছিল। এমন ভাবে আচমকা পেছন থেকে চেপে ধরলে চেচামেচি করবে না তো কি করবে শুনি।খুব বললতে ইচ্ছে করছিল তার।কিন্তু তার মুখ ফুটে কোন কথা বেরোলো না।সে যেন কোন এক সমোহনী শক্তির ধারা সমোহিত হয়েছে। কোন এক অজানা ঘোরে আছন্ন হয়ে সঞ্জয়ের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল সে।
– বৌদিমণি কোথায়?
সঞ্জয় আবার প্রশ্ন করল।তবে এই প্রশ্ন হেমলতার মনে সাথে মস্তিষ্কের এক ভীষণ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে দিল।যেখানে চেতনার যুক্তি বলছে"বলিসনে হেম বিপদে পড়বি" সেখানে তাহার মনটিকে সে এককথা বুঝিয়ে উঠতে পারলো না।কি করে মানাবে বল!এমন ভয়ের মূহুর্তে সঞ্জয়ের শান্ত কোমল গলার আওয়াজ তার কানে কঠিন পুরুষালী আদেশ হিসেবে কানে বাজিতেছে যেন।আর সেই আদেশ শুনিবা মাত্র,যেন পেটের ভেতর হইতে কথাগুলো কেউ বাইরে ঠেলিতে শুরু করে দিয়েছে।অগত্যা হেমলতা তোতাপাখির ন্যায় সব বলতে লাগলো।
– দিদি আর মা তালতলা পেরিয়ে নদীর পারে মাঝি পাড়ায় গেছে।
– কেন গেছে সেখানে,কিছু বলেছে?
– তা জানিনে,শুধু বলেছে কি একটা কাজ আছে ওখানে।
– হুমম...মাঝি পাড়া! কখন গেছে?
– ...বেশিখন হয়নি...মমমম...
হেমলতা কথাটা শেষ হতেই সঞ্জয় তার চোয়ালখানা চেপে ধরলো।সঞ্জয়ের শক্ত হাতের চাপে হেমলতার কোমল ত্বকের জ্বালা ধরিয়ে দিল যেন।গালের দুপাশে চাপ পরায় তার ঠোঁট দুটো কিছু টা ফুলে উঠেছিল। সঞ্চয় সেখানে আঙুল বুলিয়ে বলল।
– তা ফাঁকা বাড়িতে এমনই ভাবে সেজে বসে আছো কি আমার জন্যে!
– উম্হ্ম্ম.... মম
হেমলতা গুমড়ে উঠলো এবার।দুহাতে সঞ্জয়ের হাতখানি চেপেধরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তার গায়ে কি আর ওত বল আছে,যে ওমন পুরুষ মানুষের সাথে পেরে উঠবে। তার শত প্রচেষ্টা বিফল হতে লাগলো।তবে সে ভাবতে বসলো কি করিয়া মুক্তি পাওয়া যায়।
– ভালোই হলো,বৌদিমণি আসতে দেরি হবে নিশ্চয়ই।সেই সুযোগে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তিটি বুঝে নেওয়া যাবে।
এই বলে সঞ্জয় হেমলতার মুখটি থেকে যেই হাতখানি সরিয়েছে।ওমনি হেমলতা "দিদি" বলে ডেকে উঠলো জোরে।সঞ্জয় চমকে গিয়ে পেছন ফিরে দেখলো পেছন ফিরলো।কিন্তু কোথায় নয়নতারা!কেউ নেই তো পেছনে!পরক্ষণেই নূপুরের ঝনঝনানি আওয়াজে হেমলতার পানে মুখ ফিরিয়ে দেখলো। হেমলতা এক ছুটে ঠাকুর ঘরে ঢুকে দোরে খিল আটকে দিয়েছে।সঞ্জয় হেমলতার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল।
– তা এভাবে কতদিন বাঁচবে শুনি।এদিকে ক্ষতিপূরণের সুদের পরিমান যে বারছে।শেষমেশ পরিশোধ করতে না পারলে জোর পূর্বক দখল নিতে এলে তখন কি হবে শুনি।
এদিকে হেমলতা সঞ্জয়ের কথায় কান না দিয়ে মনে মনে ঠাকুরকে বললতে লাগলো।
– এবারের মত রক্ষে কর ঠাকুর, আমি আর এবাড়িতে একা থাকবো না।
সঞ্জয় বারান্দা থেকে নেমে আচারের বয়াম টি হাতে তুলে নিল।তারপর সেখানি বন্ধ দরজার সামনে রেখে দরজায় দুটো টোকা দিয়ে বলল।
– বৌদিমণি এলে ডেকো,আমি ওপড়ে যাচ্ছি....
~~~~~~~~|||||||||~~~~~~~~
দেবু,নয়নতারা ও তার মা আরও কয়েকজন রমনীর সাথে তাল তলার পথটি ধরে বাড়ি ফিরছে। নয়নতারার মুখ হাসির রেখা ফুটেছে।সোহমকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে তাই।তবে পয়সা খরচ হবে বেশ কিছু।তা সে কথা নয়নতারার অজানা নয়। তার কাছে যে সোনার গয়নাগুলো আছে,সেগুলো বন্ধক রাখলেই হলো।পরে না হয়ে ছাড়িয়ে নেবে। যদিও তার মা তাকে বোঝাছে সঞ্জয়ের সিন্দুক খুলে টাকা নিতে,দায়িত্ব তো তার হাতেই তুলে দিয়েছে সঞ্জয়।তাছাড়া সঞ্জয় তো বলেছে সিন্দুক খুলে যা লাগে নিয়ে নিতে।শুধু সোহম ওবাড়িতে না ঢুকলেই হলো। কিন্তু নয়নতারা তা মানতে রাজি হবে কেন শুনি! সঞ্জয়ের টাকায় সে কেন হাত দেবে।তার ইচ্ছে হলে সে নিজে ছাড়িয়ে আনুক।নয়নতারা দুই ভাইয়ের মাঝে আসবে না।কিন্তু সে যখন না করেই দিয়েছে,তবে থাক।আশ্রয় দিয়েছে এই ঢের....
– কি গো দিদি কি ভাবছো এত?
ভাবনার মাঝে আচমকা পাশ থেকে কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে ধাক্কা দিল একজন। নয়নতারা কিছু বলার আগেই অন্য একজন বলে উঠলো।
– খুব কপাল করে ওমন দেবর জুটেছে,তার কথা না ভাবলে কি চলে। দেখছো না একদিনে কেমন চেহারা পাল্টে দিয়েছে।
কথাটি শুনে আগের জন নয়নতারার শাড়ির আঁচলটি টেনে নিয়ে চাবির গোছাটা দেখিয়ে বলল।
– তা আর বলতে। কি গো দিদি কিভাবে বশ করলে তোমার দেবরটিকে! আমাদের কেউও একটু বল শুনি...
মায়ের সামনে এসব কথা শুনতে নয়নতারা গা জ্বলে গেল।সে একরকম ধমকের সুরে বলল।
– তাকে বশ করতে হবে কেন শুনি।সবাই কি আর এক রকম হয় নাকি।তাছাড়া সঞ্জয় কেমন ছেলে সেকি তোমাদের অজানা।
নয়নতারার মুখ ভার দেখে তার সুর পাল্টে বলল।
– রাগ করছো কেন! আমার তো শুধু একটু ঠাট্টা করছিলাম। আচ্ছা বাদ দাও সে কথা।কাল সকালে একটু এসতো আমার বাড়িতে। কথা আছে!
তারপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে সবাই দলছাড়া হয়ে যে যার বাড়িতে চলেগেল। এদিকে তালতলা থেকে সঞ্জয়ের বাড়িতে যেতে বামের মাটির রাস্তায় উঠলো নয়নতারা ও তার মা।
এপথে ঘর খুব একটা নেই।রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। সঞ্জয়ের বাড়িটি একদম মাটির রাস্তাটার শেষ সিমান্তে।তার আগে দুটো টিনের বাড়ি ও একটা মাটির দেয়াল তোলা মুদির দোকান পরে। বাড়ি দুটোর আগে ক্ষেতের ওপর দিয়ে একটা পথ চলেছে একদম ক্ষেতের মাঝ বরাবর। আল তোলা রাস্তার শেষে ক্ষেতের মাঝে এক সাথে কিছু বাড়ি। অবশ্য বাড়ি না বলে বস্তি বললেও ভুল হবে না। আচ্ছা সে কথা তাক এখন। নয়নতারা এখন বাড়িতে পা রাখছে।আর তাকে দেখেই হেমলতা কোথা থেকে ছুটে এসে দিদিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। সে কান্না যেন আর থামবার নয়।
–––––––––––৷৷৷৷৷৷৷৷৷-----------
সঞ্চয় পায়ে পা তুলে মাথার পেছনে দুহাত দিয়ে চুপচাপ শুয়েছিল বিছানায়। এমন সময় নয়নতারা হেমলতাকে নিয়ে সঞ্জয়ের ঘরে ঢুকে বলল।
– সঞ্জয় এই কাজটি কিন্তু তুমি ভালো করনি মোটেও।
সঞ্জয় চোখ মেলে তাকিয়ে দুটি বোনকে এক সাথে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল।কোন কাজ বৌদিমণি?
– থাক এখন আর ন্যাকামো করতে হবে না। হেমের চাটনির বয়ামটা ভাঙলে কেন শুনি?
নয়নতারার কথায় সঞ্জয় অবাক হয়ে হেমলতার দিকে তাকালো।পরক্ষণেই ব্যপারটা বুঝে নিয়ে বলল।ও ঐ কথা,তা আমি আর জেনে বুঝে কিছু করিনি বৌদিমণি। তোমার বোনটি ওমন ভীতু যে কথা আমি কিভাবে জানবো বল।
সঞ্জয়ের কথায় হেমলতা তার দিদির পেছন থেকে একটু উঁকি দিয়ে দেখে নিল সঞ্জয়কে। আর মনে মনে নিজেকেই শাসন করতে লাগল আসল কথাটি দিদিকে বলতে না পারায়। এদিকে নয়নতারা বোনের অভিযোগ অনুসারে আসামিকে।বেশ কিছুক্ষণ শাসিয়ে যখন শান্ত হল।তখন অপরাধী তার মিথ্যে অপরাধের অনুতাপে জ্বলিতে জ্বলিতে অবশেষে তার প্রায়শ্চিত্ত করার প্রস্তাব রাখলো তার বৌদিমণির কাছে।
– দেখ বৌদিমণি, ওত রাগ করলে চলে! একটাই আচারের বয়ামই তো ভেঙেছি।সে না হয় কাল গঞ্জে থেকে আরো দশটা নিয়ে আসবো।তবে শর্ত আছে।আমার সাথে তোমার বোনটি কেউ যেতে হবে কিন্তু।
কথাটি শুনিবা মাত্র হেমলতার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে নয়নতারার পায়ের কাছে "ধপ" করে বসে পড়লো। অবশেষে সেই একই প্রশ্ন,গল্প চলবে তো?
সারাটা দূপুর অসহ্য উত্তাপ ছড়িয়ে সবেমাত্র সূর্যটি মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলতে বসেছে।তাই চারিদিকে এখন একটু প্রশান্তির ছায়া পরছিল মাঝে মধ্যে।আর সেই ছায়ায় বারান্দায় বসে; আমাদের হেমলতা একটি চাটনির বয়ামে হাত ঢুকিয়ে পায়ে পা তুলে গুনগুন করছিল।
তার পরনে আজ নতুন শাড়ি।শাড়ির রঙটি তার চোখে বেশ লেগেছে।তাই এখন শাড়িটা গায়ে জরিয়ে ফুরফুরে মনে চাটনির বয়ামে হানা দিয়েছে সে।তবে শুধু দুটো শাড়ি ও চাটনির এই বয়ামটিই হস্তগত করেছে হেমলতা।আর কিছু সে নেয় নি।
তবে বলতে হয় হেমলতাকে বেগুনি রঙের শাড়িটিতে বেশ মানিয়েছে। ব্লাউজ বিহীন শাড়ি পড়াতে; তার নগ্ন দুই বাহুতে মাঝে মাঝে সূর্যের মৃদু আলো পরে যে সঞ্জয়ের দুটি চোখে উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠছে তাকি সে জানে!
অবশ্য সে কথা তার জানার কথা নয়।সঞ্জয়ের এই সময়ে আসার কথা ছিল না।যদিও নয়নতারা বলে দিয়েছিল এখন থেকে দুপুরের বাড়িতে আসতে।কিন্তু তার যে আজ পাশের গ্রামে একজনের সাথে দেখা করার কথাছিল।কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি বলে একটু জলদিই চলে এসেছে বাড়িতে।তবুও তো আসতে আসতে সেই বিকেল হল। সেই যাই হোক,বাড়িতে ঢুকেই কেমন খালি খালি লাগছিলো।এখন হেমলতাকে দেখে দুষ্টু বুদ্ধিগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
এদিকে হেমলতার পুরো মনোসংযোগ একত্রিত হয়েছিল চাটনির বয়ামে।তা না হলে সেকি এমন বিপদে পরে!
কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে সঞ্জয় একসময় পা টিপে টিপে হেমলতার পেছন গিয়ে দাঁড়ালো।এরপর ঝুকে পরে তার হাতটি পেছন থেকে এগিয়ে নিয়ে স্থাপন করলো হেমলতার দুই ডাগর চোখে। বলাই বাহুল্য হেমলতা আঁতকে উঠে চাটনির বয়াম দিলো মাটিতে ফেলে।তবে কাঁচের বয়ামটি না ভেঙে গড়িয়ে দূরে সরে গেল কিছুটা সামনে। এদিকে হেমলতার গগনবিদারী চিৎকারে সঞ্জয়ের কানের পর্দায় তালা লাগার যোগার হয় আর কি। তাই হেমলতাকে ছেড়ে কানে আঙুল বোলাতে বোলাতে সে বলল।
– হতচ্ছাড়া মেয়ে এত জোরে কেউ চেঁচায়।
কিন্তু ওপাশ থেকে কোন জবাব না আসায়,সঞ্জয় মুখ তুলে দেখে,বেচারী হেমলতা ভীষণ আতঙ্কে সংকুচিত হয়ে বারান্দায় এক পিলারে পিঠ ঠেকিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।আর সেই নিশ্বাসের দমকেই কি তার সম্পূর্ণ দেহটি ঐভাবে কাঁপছে!চোখ দুটো বন্ধ তার। তাই দেখে সঞ্চয় এগিয়ে গেল।সামনে দাঁড়িয়ে হেমলতার চিবুকে তার দুটো আঙুল ঠেকিয়ে কম্পিত সেই তরুণীর মুখমণ্ডল টি ঠেলে কিছু টা ওপরে তুলে নরম স্বরে ডাকলো থাকে,
– হেম!
হেমলতা ডাকে সারা দিল।ধিরে ধিরে তাহার কাজল পড়া ডাগর চোখ দুটো মেলে ধরলো সে। সঞ্চয় আবার একি স্বরে বলল।
– এত ভয় পেলে চলে!তোমার চিৎকারে লোকজন ছুটে এলে কি হতো বলতো।
হেমলতার বলবার মত অনেক কিছুই ছিল। এমন ভাবে আচমকা পেছন থেকে চেপে ধরলে চেচামেচি করবে না তো কি করবে শুনি।খুব বললতে ইচ্ছে করছিল তার।কিন্তু তার মুখ ফুটে কোন কথা বেরোলো না।সে যেন কোন এক সমোহনী শক্তির ধারা সমোহিত হয়েছে। কোন এক অজানা ঘোরে আছন্ন হয়ে সঞ্জয়ের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে রইল সে।
– বৌদিমণি কোথায়?
সঞ্জয় আবার প্রশ্ন করল।তবে এই প্রশ্ন হেমলতার মনে সাথে মস্তিষ্কের এক ভীষণ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে দিল।যেখানে চেতনার যুক্তি বলছে"বলিসনে হেম বিপদে পড়বি" সেখানে তাহার মনটিকে সে এককথা বুঝিয়ে উঠতে পারলো না।কি করে মানাবে বল!এমন ভয়ের মূহুর্তে সঞ্জয়ের শান্ত কোমল গলার আওয়াজ তার কানে কঠিন পুরুষালী আদেশ হিসেবে কানে বাজিতেছে যেন।আর সেই আদেশ শুনিবা মাত্র,যেন পেটের ভেতর হইতে কথাগুলো কেউ বাইরে ঠেলিতে শুরু করে দিয়েছে।অগত্যা হেমলতা তোতাপাখির ন্যায় সব বলতে লাগলো।
– দিদি আর মা তালতলা পেরিয়ে নদীর পারে মাঝি পাড়ায় গেছে।
– কেন গেছে সেখানে,কিছু বলেছে?
– তা জানিনে,শুধু বলেছে কি একটা কাজ আছে ওখানে।
– হুমম...মাঝি পাড়া! কখন গেছে?
– ...বেশিখন হয়নি...মমমম...
হেমলতা কথাটা শেষ হতেই সঞ্জয় তার চোয়ালখানা চেপে ধরলো।সঞ্জয়ের শক্ত হাতের চাপে হেমলতার কোমল ত্বকের জ্বালা ধরিয়ে দিল যেন।গালের দুপাশে চাপ পরায় তার ঠোঁট দুটো কিছু টা ফুলে উঠেছিল। সঞ্চয় সেখানে আঙুল বুলিয়ে বলল।
– তা ফাঁকা বাড়িতে এমনই ভাবে সেজে বসে আছো কি আমার জন্যে!
– উম্হ্ম্ম.... মম
হেমলতা গুমড়ে উঠলো এবার।দুহাতে সঞ্জয়ের হাতখানি চেপেধরে সরিয়ে দিতে চাইলো। কিন্তু তার গায়ে কি আর ওত বল আছে,যে ওমন পুরুষ মানুষের সাথে পেরে উঠবে। তার শত প্রচেষ্টা বিফল হতে লাগলো।তবে সে ভাবতে বসলো কি করিয়া মুক্তি পাওয়া যায়।
– ভালোই হলো,বৌদিমণি আসতে দেরি হবে নিশ্চয়ই।সেই সুযোগে ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তিটি বুঝে নেওয়া যাবে।
এই বলে সঞ্জয় হেমলতার মুখটি থেকে যেই হাতখানি সরিয়েছে।ওমনি হেমলতা "দিদি" বলে ডেকে উঠলো জোরে।সঞ্জয় চমকে গিয়ে পেছন ফিরে দেখলো পেছন ফিরলো।কিন্তু কোথায় নয়নতারা!কেউ নেই তো পেছনে!পরক্ষণেই নূপুরের ঝনঝনানি আওয়াজে হেমলতার পানে মুখ ফিরিয়ে দেখলো। হেমলতা এক ছুটে ঠাকুর ঘরে ঢুকে দোরে খিল আটকে দিয়েছে।সঞ্জয় হেমলতার কান্ড দেখে হাসতে হাসতে বলল।
– তা এভাবে কতদিন বাঁচবে শুনি।এদিকে ক্ষতিপূরণের সুদের পরিমান যে বারছে।শেষমেশ পরিশোধ করতে না পারলে জোর পূর্বক দখল নিতে এলে তখন কি হবে শুনি।
এদিকে হেমলতা সঞ্জয়ের কথায় কান না দিয়ে মনে মনে ঠাকুরকে বললতে লাগলো।
– এবারের মত রক্ষে কর ঠাকুর, আমি আর এবাড়িতে একা থাকবো না।
সঞ্জয় বারান্দা থেকে নেমে আচারের বয়াম টি হাতে তুলে নিল।তারপর সেখানি বন্ধ দরজার সামনে রেখে দরজায় দুটো টোকা দিয়ে বলল।
– বৌদিমণি এলে ডেকো,আমি ওপড়ে যাচ্ছি....
~~~~~~~~|||||||||~~~~~~~~
দেবু,নয়নতারা ও তার মা আরও কয়েকজন রমনীর সাথে তাল তলার পথটি ধরে বাড়ি ফিরছে। নয়নতারার মুখ হাসির রেখা ফুটেছে।সোহমকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে তাই।তবে পয়সা খরচ হবে বেশ কিছু।তা সে কথা নয়নতারার অজানা নয়। তার কাছে যে সোনার গয়নাগুলো আছে,সেগুলো বন্ধক রাখলেই হলো।পরে না হয়ে ছাড়িয়ে নেবে। যদিও তার মা তাকে বোঝাছে সঞ্জয়ের সিন্দুক খুলে টাকা নিতে,দায়িত্ব তো তার হাতেই তুলে দিয়েছে সঞ্জয়।তাছাড়া সঞ্জয় তো বলেছে সিন্দুক খুলে যা লাগে নিয়ে নিতে।শুধু সোহম ওবাড়িতে না ঢুকলেই হলো। কিন্তু নয়নতারা তা মানতে রাজি হবে কেন শুনি! সঞ্জয়ের টাকায় সে কেন হাত দেবে।তার ইচ্ছে হলে সে নিজে ছাড়িয়ে আনুক।নয়নতারা দুই ভাইয়ের মাঝে আসবে না।কিন্তু সে যখন না করেই দিয়েছে,তবে থাক।আশ্রয় দিয়েছে এই ঢের....
– কি গো দিদি কি ভাবছো এত?
ভাবনার মাঝে আচমকা পাশ থেকে কাঁধে কাঁধে লাগিয়ে ধাক্কা দিল একজন। নয়নতারা কিছু বলার আগেই অন্য একজন বলে উঠলো।
– খুব কপাল করে ওমন দেবর জুটেছে,তার কথা না ভাবলে কি চলে। দেখছো না একদিনে কেমন চেহারা পাল্টে দিয়েছে।
কথাটি শুনে আগের জন নয়নতারার শাড়ির আঁচলটি টেনে নিয়ে চাবির গোছাটা দেখিয়ে বলল।
– তা আর বলতে। কি গো দিদি কিভাবে বশ করলে তোমার দেবরটিকে! আমাদের কেউও একটু বল শুনি...
মায়ের সামনে এসব কথা শুনতে নয়নতারা গা জ্বলে গেল।সে একরকম ধমকের সুরে বলল।
– তাকে বশ করতে হবে কেন শুনি।সবাই কি আর এক রকম হয় নাকি।তাছাড়া সঞ্জয় কেমন ছেলে সেকি তোমাদের অজানা।
নয়নতারার মুখ ভার দেখে তার সুর পাল্টে বলল।
– রাগ করছো কেন! আমার তো শুধু একটু ঠাট্টা করছিলাম। আচ্ছা বাদ দাও সে কথা।কাল সকালে একটু এসতো আমার বাড়িতে। কথা আছে!
তারপর এটা ওটা নিয়ে কথা বলতে বলতে সবাই দলছাড়া হয়ে যে যার বাড়িতে চলেগেল। এদিকে তালতলা থেকে সঞ্জয়ের বাড়িতে যেতে বামের মাটির রাস্তায় উঠলো নয়নতারা ও তার মা।
এপথে ঘর খুব একটা নেই।রাস্তার দুপাশে ধানক্ষেত। সঞ্জয়ের বাড়িটি একদম মাটির রাস্তাটার শেষ সিমান্তে।তার আগে দুটো টিনের বাড়ি ও একটা মাটির দেয়াল তোলা মুদির দোকান পরে। বাড়ি দুটোর আগে ক্ষেতের ওপর দিয়ে একটা পথ চলেছে একদম ক্ষেতের মাঝ বরাবর। আল তোলা রাস্তার শেষে ক্ষেতের মাঝে এক সাথে কিছু বাড়ি। অবশ্য বাড়ি না বলে বস্তি বললেও ভুল হবে না। আচ্ছা সে কথা তাক এখন। নয়নতারা এখন বাড়িতে পা রাখছে।আর তাকে দেখেই হেমলতা কোথা থেকে ছুটে এসে দিদিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। সে কান্না যেন আর থামবার নয়।
–––––––––––৷৷৷৷৷৷৷৷৷-----------
সঞ্চয় পায়ে পা তুলে মাথার পেছনে দুহাত দিয়ে চুপচাপ শুয়েছিল বিছানায়। এমন সময় নয়নতারা হেমলতাকে নিয়ে সঞ্জয়ের ঘরে ঢুকে বলল।
– সঞ্জয় এই কাজটি কিন্তু তুমি ভালো করনি মোটেও।
সঞ্জয় চোখ মেলে তাকিয়ে দুটি বোনকে এক সাথে দেখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল।কোন কাজ বৌদিমণি?
– থাক এখন আর ন্যাকামো করতে হবে না। হেমের চাটনির বয়ামটা ভাঙলে কেন শুনি?
নয়নতারার কথায় সঞ্জয় অবাক হয়ে হেমলতার দিকে তাকালো।পরক্ষণেই ব্যপারটা বুঝে নিয়ে বলল।ও ঐ কথা,তা আমি আর জেনে বুঝে কিছু করিনি বৌদিমণি। তোমার বোনটি ওমন ভীতু যে কথা আমি কিভাবে জানবো বল।
সঞ্জয়ের কথায় হেমলতা তার দিদির পেছন থেকে একটু উঁকি দিয়ে দেখে নিল সঞ্জয়কে। আর মনে মনে নিজেকেই শাসন করতে লাগল আসল কথাটি দিদিকে বলতে না পারায়। এদিকে নয়নতারা বোনের অভিযোগ অনুসারে আসামিকে।বেশ কিছুক্ষণ শাসিয়ে যখন শান্ত হল।তখন অপরাধী তার মিথ্যে অপরাধের অনুতাপে জ্বলিতে জ্বলিতে অবশেষে তার প্রায়শ্চিত্ত করার প্রস্তাব রাখলো তার বৌদিমণির কাছে।
– দেখ বৌদিমণি, ওত রাগ করলে চলে! একটাই আচারের বয়ামই তো ভেঙেছি।সে না হয় কাল গঞ্জে থেকে আরো দশটা নিয়ে আসবো।তবে শর্ত আছে।আমার সাথে তোমার বোনটি কেউ যেতে হবে কিন্তু।
কথাটি শুনিবা মাত্র হেমলতার পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে গেল। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে নয়নতারার পায়ের কাছে "ধপ" করে বসে পড়লো। অবশেষে সেই একই প্রশ্ন,গল্প চলবে তো?