07-04-2024, 11:07 PM
(This post was last modified: 21-12-2024, 08:04 AM by বহুরূপী. Edited 72 times in total. Edited 72 times in total.)
[গল্পটি কাল্পনিক। এর সাথে কোনোরূপ বাস্তবতার মিল নেই। অডিয়েন্সের বিনোদনের উদ্দ্যেশ্যে এই গল্পটির রচনা।]
বৌদিমণি
তালদিঘির মাটিতে এটি এত বড় কোনো ঘটনা ছিল না। মহেশ বাবুর বড় ছেলেটা জুট মিলে কাজ পেয়ে যখন পাশের গ্রামের থেকে বউ নিয়ে এলো; সম্পত্তিতে ভাগ বসিয়ে বাপ মা মরা অসহায় ছোট ভাইকে একা করে, রাত পোহাতে পোহাতে ভিটেমাটি বেঁচে পাশের গ্রামে তার শশুর বাড়িতে গিয়ে উঠলো। কয়েকদিন তালতলায় চায়ের দোকানে মুরব্বিরা চায়ের কাপ মুখে ধরে হুঁকোয় টান মেরে এ ঘটনার সমালোচনা করল বটে; তবে কিছুদিনের মধ্যেই জল থিতল । সোহমের বিবাহ কে আলোচনার বিষয় করে নিলো তারা।আর জঙ্গলার ধারে এক চিলতে জমি জুটল ছোট ভাই সঞ্জয়ের কপালে। কালে কালে ব্যাপারটা ভুলতে লাগলো সবাই।এদিকে খুব কষ্ট করে হলেও, নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে সঞ্জয়। জঙ্গলার পাশে ছোট খুপরিটি এখন দোতলা পাকা বাড়ি।গঞ্জে তার এখন তিনখানা মিস্টির দোকান।তার মিস্টি কথা পুরো গঞ্জের লোকের মুখে মুখে ঘোরে। সঞ্জয়ের পড়া লেখায় বাঁঁধা পড়লেও,বড় দাদার থেকে শিক্ষিত সে কম নয় মোটেও।বয়স কম হলেও তার সামনে মাথা উঁচু করে কথা বলার সাহস আশে পাশের দশগ্রামে কারো নেই। তবে ছেলে খারাপ নয় সঞ্জয়। সুঠাম দেহের গঠন ও উচ্চতা দেখেই ভিমরি খেতে হয় লোকজনকে।তাছাড়া তার দাদার মত ভিতূ ও নেশাগ্রস্ত সঞ্জয় মোটেও নয়। অন্য দিকে নয়নতারা! মানে সঞ্জয়ের বৌদিমণিকে রূপে লক্ষ্মী ও গুণে সরস্বতী বললে মিথ্যে বলা হবে না।নয়নতারা খুব লম্বা নয়।সচরাচর বাঙালি মেয়েরা লম্বা হয় না।নয়নতারাও সেরকমই।পাঁচ ফুট এক কিংবা দুই। তবে অতন্ত্য ফর্সা,দুধে আলতা গায়ের রং।কোমর সরু,উদ্ধত মানানসই পাছা।দুই বাচ্চার মা হলেও শরীরে এক বিন্দু মেদ নেই।স্তনদুটি উন্নত।নতুন মাতৃত্বের দুধে পরিপূর্ণ।কোমড় ছুঁয়ে যাওয়া চুলগুলো কোঁকড়ানো। সবসময় শাড়িই পরে নয়নতারা। সব মিলিয়ে বলা চলে সুন্দর মুখশ্রীর অধিকারী সে। একই সাথে স্নেহময়ী ও কোমল হৃদয় তার। আর সেই জন্যেই বোধ করি স্বামীর শত বাঁধা উপেক্ষা করে অসহায় দেওরটির খোঁজ খবর রাখতো সে। সঞ্জয়ের মুখে বৌদিমণি ডাকটি বেশ ভালো লাগে নয়নতারার।তবে আজ সপরিবারে দেওরের বাড়ির দোরের সামনে বৌদিমণি ডাক শুনতে আসেনি সে।এসেছে ভাগ্যের ফেরে পরে।কারণ তার নেশাগ্রস্ত স্বামীর বদৌলতে আজকে তারা সর্বশান্ত হয়ে পথে বসেছে।তাই নিরুপায় হয়ে দুই তিন জায়গায় ঠোকর খেয়ে,অবশেষে সপরিবারে নদী পার হয়ে এসেছে দেওরের কাছে। একটু আশ্রয় ও তার স্বামীর মুক্তি পাওয়ার আশায়।নয়নতারা স্বামী এখন থানায়।স্বামীর জন্যে চিন্তা যেমন হচ্ছে, তেমনি চিন্তা হচ্ছে তার অসুস্থ বাবার সেই সাথে তার মা,নব তরুণী ছোট বোন আর দুটি ছোট ছোট বাচ্চার। এই মূহুর্তে নয়নতারা একটি সাত বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে অশ্রুসিক্ত ছলছলে দুই নয়নে মেঠোপথটির দিকে তাকিয়ে ভাবছে।বড় দাদার এমন অন্যায়ের পরেও সঞ্জয় কি মেনে নেবে তাদের!সেই বৌদিমণি ডাকের কতটুকু অধিকার ফলাতে পারবে সে তার দেওরের মনে। ভাবনার মাঝে হঠাৎ নয়নতারা লক্ষ্য করে।দূর থেকে ছুটে আসছে একটি সুদর্শন যুবক। তার পেছনে একজন একটি মোটরসাইকেল ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসছে। আর একটু কাছে আসতেই নয়নতারা কানে আসে সেই অতি চেনা পরিচিত গলার আওয়াজ।সঞ্জয় ছুটে চলে এসেছে সামনে। আর অবাক দুটি চোখে নয়নতারা পানে চেয়ে বলছে। বৌদিমণি তুমি কাঁদছো কেন?
﴾সূচীপত্র﴿
༻সমাপ্ত༺