28-01-2024, 04:20 PM
(This post was last modified: 28-01-2024, 04:32 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
জোহরার সাথে ঘরের ভিতরে ঢুকে নুসাইবা। সোলার পাওয়ারে চলা একটা ফ্লুরোসেন্ট লাইন্ট। অত পাওয়ার নেই আলোর। তাই ঘরের ভিতর একটা সাদা ঝাপসা আলো। নুসাইবা জোহরার দিকে তাকায়। পাচ ফুটের মত হবে। বয়স কত বুঝা যাচ্ছে না। ৩৫-৪৫ এর মধ্যে যে কোন কিছু হতে পারে। বিছানায় একটা বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে আপনার? জোহরা উত্তর দেয়, জ্বী ভাবী। নুসাইবা জিজ্ঞেস করে কয় ছেলেমেয়ে আপনার? তিনজন। বাকিরা কই? জোহরা উত্তর দেয়, বড় দুই পোলা সুনামগঞ্জে ওগো মামার লগে থাকে। ভাল কলেজ আছে। এইখানে কলেজ ভালা না ভাবী। প্রতি বছর এক দুইজন পাশ করে ম্যাট্রিক দিইয়া। নুসাইবা ভাল করে জোহরা কে দেখে। জোহরার বারবার ভাবী বলা ওর জন্য অস্বস্তিকর। কি করা যায়? কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাল মহিলা। এইখানে কয়েক সাপ্তাহ থাকতে গেলে এই মহিলার হেল্প লাগবে। নুসাইবা ছোট থাকতে দুই একবার ওদের গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। নুসাইবার দাদা বহু বছর আগে গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলেন শহরে পড়াশুনার জন্য। ফলে ওর বাবার সময় গ্রামের সাথে সম্পর্ক অনেক কমে গিয়েছিল। তাই দুই একবার দাদা বেচে থাকতে গ্রামে গিয়েছে। এরপর তেমন আর গ্রামে যাওয়া হয় নি। নুসাইবার কাছে গ্রাম তাই নাটক সিনেমায় দেখা জিনিস। গ্রামের মানুষদের সম্পর্কে একধরনের অজ্ঞতা আছে সেই অজ্ঞতা থেকে তুচ্চতাচ্ছিল্য। তবে নুসাইবা বোকা না। ও জানে এই মুহুর্তে মাহফুজের পর ওর সবচেয়ে কাছের মিত্র হবার চান্স আছে এই মহিলার। আর গ্রাম সম্পর্কে বা গ্রামের মানুষ সম্পর্কে কম জানা থাকলেও একটা জিনিস জানে নুসাইবা। প্রশংসা সবাই পছন্দ করে। বিশেষ করে মহিলারা তাদের রূপের প্রশংসা। এইটা বিশ্বজনীন। নুসাইবা বলে আপনাকে দেখলে বুঝাই যায় না আপনার তিন তিনটা বাচ্চা আছে। আমি তো ভাবছি বিছানায় যে ছোট বাচ্চা এইটাই বুঝি আপনার প্রথম বাচ্চা। খুশিতে মুখ ঝলমল করে উঠে জোহরার। এইরকম সুন্দর স্মার্ট শহুরে মানুষের কাছে এই রকম প্রশংসা পেয়ে খুশি আর লজ্জা দুইটাই হয় জোহরা। জোহরা বলে কি যে কন ভাবী। ভাবী ডাকে আবার অস্বস্তি হয় নুসাইবার। ভাবে এইটা নিয়ে কিছু একটা করতে হবে। নুসাইবা বলে আরে না না দেখেন না আপনার দিকে। একটু সাজগোজ করলে একদম নাটকে নামতে পারবেন। জোহরা ফিক ফিক করে হেসে বলে হানিফের বাপ হেইটা কয় মাঝে মধ্যে। নুসাইবা বলে বড় পোলার নাম। নুসাইবা বলে আপনার যে একটা বড় ছেলে আছে এইটাই তো বিশ্বাস হইতে চায় না আপনাকে দেখে। আর গলে যায় জোহরা। এই ভাবী দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি দিল পরিষ্কার। কেমনে ওর প্রশংসা করতেছে। জোহরা বলে আপনে খুব ভালা মানুষ ভাবী। আপনে এত সুন্দর তাও আমারে কইতেছেন সুন্দর। নুসাইবা বলে আরে আমারে ভাবী বইলেন না, আপা ডাকেন। আপনে আমার বোনের মত। জোহরা নুসাইবার এই কথায় আর গলে যায়। এত দিল দরিয়া মানুষ এই আপা। জোহরা বলে আসেন আপা আপনারে আমি ঘরের সব দেখাইতেছি।
মাহফুজ আমিনের দেওয়া লুংগি আর গেঞ্জি পড়ে নেয়। হালকা একটা শীতের মত পরে গ্রামের দিকে সন্ধ্যার পর। তার উপর এটা হাওড় এলাকা। তাই আমিন থেকে একটা চাদর চেয়ে নেয় মাহফুজ। ঐদিকে নুসাইবার হয় অসুবিধা। জোহরার কাছ থেকে শাড়ি পেটোকোট তো নিয়ে পড়ে নেয় কিন্তু ব্লাউজের সাইজে সমস্যা বেধে যায়। জোহরার শরীরে এখনো ছিপছিপে একটা ভাব আছে। তিন বাচ্চার পরেও দুধ অত বড় হয় নি। ৩২ সি হবে। অন্যেদিকে নুসাইবার হল ৩৬ সি। ফলে নুসাইবার পক্ষে জোহরার ব্লাউজ পড়া প্রায় অসম্ভব। ফলে জোহরা অন্য বুদ্ধি বের করে। আমিনের বোন মানে জোহরার ননদ কিছুদিন আগে বেড়াতে এসছিল, যাওয়ার সময় একটা ব্লাউজ ফেলে গেছে। আমিনের বোনের স্বাস্থ্য বেশ ভাল। তাই সেটা দেয় নুসাইবা কে পড়ার জন্য। পড়তে গিয়ে টের পায় এইটা অনেক ঢলঢলে। কাধের উপর থেকে ঢলে ঢলে পড়ে যেতে চায়। তাই জোহরা এইবার অন্য বুদ্ধি দেয়। সারা গা চাদর দিয়ে মুড়িয়ে নেয়। ফলে ঢিলা ব্লাউজ ঐভাবে বুঝা যাবে না। জোহরা বলে আপা আমার কাছে সিলাই মেশিন আছে, আমি সিলাই পারি ভাল। কালকে আপনারে একটা ব্লাউজ সিলাই দিমু নে। আশেপাশের বাড়ির মেয়েরা আমার কাছে থেকে সিলায়ে নেয় ব্লাউজ।
আমিন মাহফুজ কে অন্ধকারে টর্চের আলোয় ওর বাড়ির সবকিছু দেখাতে থাকে। আমিনের গর্বের জায়গা এই বাড়ি। জায়গাটা বাপের কাছ থেকে পেলেও বাকি সবকিছু নিজে নিজে গড়ে তুলেছে। আগে যখন ড্রাগ এর ক্ষেপ দিত তখন বেশ কিছু টাকা জমিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে গঞ্জে দুইটা দোকান কিনে নিয়েছে। এখন সেগুলো ভাড়ায় দেয়। এরপর আমিনের ব্যবসা বুদ্ধি ভাল। মাইক্রো চালানোর সাথে সাথে জমির দালালিও করে। এর উপর দুই একটা টুরিস্ট এজেন্সির সাথে যোগাযোগ আছে। আমিন বিশ্বস্ত ড্রাইভার বলে বিদেশী টুরিস্ট আসলে আমিনের মাইক্রো ভাড়া নেয়। বিদেশি টুরিস্টের ভাল জিনিস হল এরা যাবার সময় প্রচুর বকশিস দেয়। সব মিলিয়ে আমিনের ইনকাম খারাপ না। মাহফুজ ঘুরে ঘুরে দেখে আমিনের সাথে আর মনে মনে ভাবে আমিন গ্রামের তুলনায় যথেষ্ট বড়লোক। বাড়িতে সোলার লাইট আছে। যদিও রাত দশটার পর আলো জ্বলে না। বাড়িতে প্রচুর গাছগাছালি। চারটা গরু আছে। টিনের ঘর। ভিটা পাকা। টয়লেট বাড়ি থেকে হালকা দূরে। গ্রামে অবশ্য এমন হয়। লোকজন ঘরের ভিতর টয়লেট রাখা পছন্দ করে না। টয়লেটের সামনে একটা টিউবওয়েল। সব মিলিয়ে যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ঘরের ছবি আমিনের। রাতে নুসাইবা আর মাহফুজ কে প্রথমে খাবার দিল ওরা টেবিলে। ছোট একটা টেবিল আছে ঘরের ভিতর। সেইটাতে নরমালি মেহমান আসলে খাবার দেয়। দুইটাই চেয়ার। তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ছাড়া অন্যদের বসার জায়গা নেই। তবে এইবার মাহফুজ বলল আমিন ভাই এইভাবে তো খাব না। খাইলে সবাই মিলে একসাথে বসে খাব। আমিন যত না না করুক না কেন মাহফুজের এক কথা। শেষ পর্যন্ত মাটিতে পাটি বিছিয়ে সবাই মিলে একসাথে খেতে বসে। নুসাইবার অস্বস্তি হতে থাকে এইভাবে মাটিতে বসে। মাটিতে বসে খেয়ে অভ্যস্ত না ও। তবে এখন কিছু করার নাই। তার উপর চাদরের ভিতর ব্লাউজ বার বার খসে খসে পড়ছে মনে হয়। কিন্তু আমিন আর মাহফুজের সামনে সেটা ঠিক করা যাচ্ছে না। ওরা চাদরের কারণে দেখছে না কিন্তু নুসাইবার মনে হচ্ছে গা থেকে ব্লাউজ খসে পড়ছে আর সবাই বুঝি ওকে দেখছে। কোন আয়োজন করার সময় পায় নি জোহরা। মাছ ছিল রান্না করা। আর ওরা আসার পর ডিমের তরকারি করেছে। যদিও বেশি কিছু না। তবে প্রচন্ড ক্ষিধা ছিল সবার। গোগ্রাসে গিলতে থাকে। হাওড় অঞ্চলের লোকেরা বেশ ঝাল খায়। খেতে গিয়ে টের পেল নুসাইবা আর মাহফুজ। দুই জনেই হু হা করছে কিন্তু পেটে এত ক্ষুধা যে যতক্ষণ পারা যায় খেল দুইজনেই। আমিন আর জোহরা খালি বারবার বলছে ভাইজান কালকে থেকে ঝাল কমায়ে দিমু। আমরা ঝাল একটু বেশি খাই কিছু মনে কইরেন না।
রাতে খাওয়ার পর দেখা দেয় নতুন সমস্যা। শুবে কই ওরা। জোহরা আর আমিন ওদের মেইন বেডরুমে থাকার ব্যবস্থা করেছে নুসাইবা আর মাহফুজের জন্য। আর নিজেরা থাকবে অন্য একটা রুমে। সেইটা ছোট আর পরিষ্কার করাও নাই। মাহফুজ বলে না না আমরা ঐখানে থাকি। জোহরা আর আমিন বলে না না আপনারা মেহমান তাই কেমনে হয়। এই সময় নুসাইবা দেখে এইখানে একটা বুদ্ধি খাটানো যায়। তাই ও বলে আচ্ছা এক কাজ করি আমরা। জোহরা ভাবী আর আমি একসাথে থাকি। আর আপনারা একসাথে থাকেন। ছোট বাচ্চা নিয়ে ভাবীর ঐ রুমে থাকা ঠিক হবে না, পরিষ্কার নাই রুম। আবার আপনারা আমাদের ঐ রুমে থাকতে দিবেন না। তাইলে সবার কথাই থাকল। কেউ আর অখুশি থাকবে না। আমিন বলে মাশাল্লাহ, ভাবী একটা ভাল জিনিস বলছে। আমরা ছেলেরা তাইলে ঐ রুমে থাকি আজকের মত। আপনারা এই রুমে থাকেন। মাহফুজ মনে মনে হাসে। ও জানে নুসাইবার এই কথার মানে কি। ওর থেকে আলাদা থাকতে চাচ্ছে। নুসাইবাও মনে মনে ভাবে আজকের মত অন্তত একটু আড়াল পাওয়া গেল। তবে মাহফুজ আর নুসাইবা দুইজনেই ভাবে কালকে ব্যাপারটা ডিল করা যাবে, তবে দুই জনের লক্ষ্য থাকে ভিন্ন। সেই রাতে ক্লান্ত সবার ঘুম আসতে দেরি হয় না। সামনে দীর্ঘ সময় পরে আছে। সামনে কি হবে? লুকিয়ে থাকতে পারবে কিনা এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে দুইজনেই ভিন্ন রুমে।