28-01-2024, 04:19 PM
(This post was last modified: 28-01-2024, 04:30 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ
গত এক ঘন্টা ধরে ট্রলারে বসে আছে নুসাইবা আর মাহফুজ। আমিনও আছে সাথে। মালবাহী ট্রলার। চালের বস্তা থেকে নানা রকম জিনিস আছে ট্রলারে। আমিনের বাড়ির পাশে যে হাট সেখানে কয়েকটা দোকানের মাল নিয়ে যাচ্ছে এই ট্রলার। ট্রলারের সুকানি আমিনের কলেজের বন্ধু। আমিন তাই ওর ট্রলারেই নিয়ে যাচ্ছে। আমিন জানে ওর এই বন্ধু বিশ্বস্ত। ও বলে দিলে ভুলেও কোন কথা কোথাও বলবে না। আর ওর ট্রলারের বাকি ছেলে গুলা ওরে বিশাল ভক্তি করে। সাড়ে তিনটার মত বাজে। নুসাইবা ওড়নাটা টেনে ঠিকমত মাথার উপর দেয়। আজকে ঝলমলে রোদ আকাশজুড়ে। যতদূরে চোখ যায় খালি পানি আর পানি। মনে হচ্ছে যেন সমুদ্র। মাঝে মাঝে হঠাত করে জেগে উঠা গ্রাম অথবা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত একটা ভূমিখন্ড আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি ভুলে ভেংগে দেয়, মনে করিয়ে দেয় এইটা হাওড়। ঝকঝকে আকাশ থেকে আসা সূর্যকিরণ স্বচ্ছ পানিতে পড়ে ঝিকমিক করছে। বেশিক্ষণ সেই পানির দিকে তাকিয়ে থাকা যায় না। সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে চোখে লাগে। নিস্তব্ধ হাওরের মাঝে খালি ট্রলারের ইঞ্জিনের শব্দ। আমিন আর তার বন্ধু ট্রলারের মাঝ বরাবর একটা জায়গায় বসে কথা বলছে। ট্রলারের হাল আমিনের বন্ধু ট্রলারে কাজ করে একটা ছেলের উপর দিয়ে রেখেছে। এই মূহুর্তে আর কিছু করার নেই। খালি হাল সোজা করে ধরে রাখতে হবে। জটিল জায়গা আসলে আমিনের বন্ধু হাল ধরবে। রোদের কারণে ভাল করে চারপাশ দেখতে পারছে না নুসাইবা। খালি বিস্কুট খেয়েছে। মাইক্রোর ভিতর হালকা করে কয়েক দফায় ঘুম দিয়েছে তবে সেই রকম ভাল ঘুম হয় নি। এখন প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে তবে এই রোদের মধ্যে ঠিক ঘুম আসছে না। পাশ দিয়ে আরেকটা ট্রলার গেল। সেই ট্রলারের ঢেউয়ে দুলে উঠছে ওদের ট্রলার। শান্ত পানিতে শুধু আরেকটা ট্রলারের ঢেউ কাপুনি ধরিয় দিয়েছে ওদের ট্রলারে। নুসাইবার মনে হয় ওর জীবনটা কত শান্ত ছিল। যা চাওয়া যায় প্রায় সবকিছু ছিল ওর জীবনে। কিন্তু গত কিছুদিনে একের পর এক মানুষের সাথে ওর পরিচয় হচ্ছে যাদের ধাক্কায় ওর জীবনের বাক বদলে যাচ্ছে। প্রথমে এই মাহফুজ, পরে ম্যানেজার আর শেষে মুন্সী। ওর শান্ত নিস্তরংগ জীবনে এরা যেন পাশ কাটিয়ে যাওয়া ট্রলার। প্রত্যেকেই ওর জীবনে উথাল পাতাল ঠেউ তুলে দিচ্ছে।
মাহফুজ হাত দিয়ে রোদের আড়াল করতে চায় চোখ কে। যুব কমিটিতে যখন বড় পদ পেল তখন ওদের যুব সংগঠনের সভাপতি ওকে একটা কমিটির মেম্বার করে দিয়েছিল। যে কমিটির কাজ ছিল দেশ জুড়ে ঘুরে ঘুরে সংগঠনের নানা ইউনিটের সাথে কথা বলে একটা দেশব্যাপী সংগঠন পূর্নগঠনের খসড়া তৈরি করা। সেই সূত্রে বহু জায়গায় যাওয়া হয়েছে। তবে এমন ভ্রমণ করা হয় নি। চারপাশে তাকায় মাহফুজ। আমিন বন্ধুর সাথে গল্প করে। ট্রলারের গলুইয়ে বসে আছে একটা ছেলে, হাল ধরে আছে আরেকজন। ট্রলারের ইঞ্জিন রূমে পানি পরিষ্কার করছে আরেকটা ছেলে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর জড়সড় হয়ে বসে আছে। ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশ দেখছে। পাশ দিয়ে যাওয়া আরেক ট্রলারের ঠেউয়ে বেশ ভাল ভাবে কেপে উঠেছে ওদের ট্রলার। নুসাইবা খামচে চালের বস্তা ধরে নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে। মাহফুজ হাসে। নুসাইবা ওর কমফোর্ট জোনের বাইরে চলে এসেছে। এইসব পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত নয় বুঝায় যাচ্ছে ওর আচার আচরণে। এমন করে ট্রলারের মধ্যে চালের বস্তায় বসে আর কোথাও নুসাইবা যায় নি এইটা কোটি টাকা বাজি ধরে বলা যায়। অন্য সময় হলে আমিন বা আমিনের বন্ধু অথবা ট্রলারের ছেলে গুলো নুসাইবা কে ম্যাডাম ম্যাডাম বলতে বলতে অস্থির হয়ে যেত। কেউ একজন হয়ত মাথায় ছাতা ধরে থাকত। আমিনের বাড়ি হাওড়ের মাঝে একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, কথা বলে যা বুঝেছে মাহফুজ। মনে মনে হাসে। এই ট্রলারের চালের বস্তাতে বসে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সেই বাড়িতে দুই তিন সাপ্তাহ থাকলে কি হবে ভাবে মাহফুজ। নুসাইবা কে গ্রামের পরিবেশে চিন্তা করেই হাসি পায় মাহফুজের। দিস ইজ গনা বি ফান। সিনথিয়া সব সময় যেভাবে ওর পশ ফুফুর বর্ণনা দিয়েছে সেই পশ ফুফু এখ হাওড়ের মাঝে এক গ্রামের বাড়িতে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে এর থেকে হাস্যকর আর কি হতে পারে। তবে এর থেকেও বড় চিন্তা ঘুরছে মাহফুজের মাথায়। মুন্সী বা ম্যানেজার এখন কি করবে? এই অজপাড়াগায়ে এই লুকালেও কি বাচা যাবে কিনা? আপাতত খালি ভাবা ছাড়া কোন কাজ নেই মাহফুজের। ওর পলিটিক্যাল ক্যারিয়ারে এতদিন নিজেকে অনেক ডেয়ারিং ভেবে এসেছে মাহফুজ তবে এইবারের মত এমন কিছু করে নি আগে। এখন প্রতিপক্ষ অনেক বেশি শক্তিশালী আবার ওর পিছনে কোন শক্তিশালী কার হাত নেই। ডিবির ইন্সপেক্টর সোলায়মান শেখ আর তার পুরাতন সোর্স আমিন ওর ভরসা। ম্যানেজার আর মুন্সীর তুলনায় এরা চুনপুটি। তাই হিসাবে কোন ভুল করা যাবে না। কারণ এইবার কিছু হলে জানের উপর দিয়ে যাবার চান্স আছে। পেয়াজের বস্তার গায়ে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে দেয় মাহফুজ। আপাতত অপেক্ষা করা ছাড়া কিছু করার নেই।
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা হয়ে আসছে। সূর্য মাথার উপর থেকে আস্তে আস্তে পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে। সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে তখন আকাশে নানা রকম রঙ খেলা করে। রোদের কড়া তাপ তখন মিষ্টি আলো হয়ে আসে। আসরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে আসছে। আমিন ট্রলারে একটা গামছার মত বিছিয়ে নামায পড়ে নেয়। হাওড়ের আকাশ অনেক পরিষ্কার। শহরের আকাশে আলোর যে খেলা গুলো দেখা যায় না সেটাই হাওড়ের আকাশে দূর্দান্ত ভাবে পরিষ্কার হয়ে উঠে। লাল থেকে বেগুনীর মাঝে সব গুলো রঙ যেন আকাশে স্তরে স্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। আর প্রতি পাচ মিনিটে বদলে যাচ্ছে আকাশের রঙ। এতক্ষণ সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করা পানি এই মিষ্টি আলোতে যেন নরম আভা ছড়াচ্ছে। আমিনের বন্ধু এখন হাল ধরছে। হাল থেকে গলা ছেড়ে হাক দেয়, এই মিরাজ গান ধর। যে ছেলেটা ট্রলারের সামনে বসা ছিল সেই ছেলেটা উত্তর দেয় ওস্তাদ কোনটা গামু। আমিনের বন্ধু বলে, গা, তোর পছন্দের একটা গান গা। ছেলেটা খালি গলায় টান দেয়। গলা ভীষণ শক্তিশালী। হাওড়ের বাতাসে ভেসে ভেসে যেন সেই গলা অনেকদূর ভেসে যায়।
বন্ধু তোর লাইগা রে
বন্ধু তোর লাইগা রে আমার তনু জর জর।
মাহফুজ চোখ খুলে উঠে বসে। নুসাইবা চালের বস্তার উপর পা গুলা কে দয়ের মত করে বসে আছে আর মুখ গুজে রেখেছে হাটুর উপর।
বন্ধু তোর লাইগারে বন্ধু তোর লাইগারে
মনে লয় ছাড়িয়া যাইতে বাড়ি ঘর
বন্ধু তর লাইগারে
ছেলেটার গলার দরদ আশেপাশের সবাই কে যেন ছুয়ে যায়। বাতাসে ভেসে যায় সেই দরদ। প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসা ট্রলারের সবাই তন্ময় হয়ে শুনে সেই গলা।
অরণ্য জংলার মইধ্যে আমার একটা ঘর
ভাইও নাই বান্ধবও নাই আমার
কে লইব খবর
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর
ছেলেটার গলার বিষাদ আকাশের রঙের সাথে মিশে যায়। আমিনের বন্ধু হাল ধরে সুরের তালে তালে মাথা দোলায়। আমিন পানিতে তাকিয়ে থাকে। গানের কথা যেন ওকে জোহরার কথা মনে করায়ে দেয়। আরেকটা ছেলে বালতির উপর তবলার মত তাল দিতে থাকে। ছেলেটার গলা অনেক শক্তিশালী। নুসাইবা তন্ময় হয়ে শুনে। ওর মনে হয় ছেলেটা কি ওর মনের কথা জানে? কিছুদিন আগেও সব কিছু থাকলেও আজ আর কিছু নেই। আরশাদের জন্য সব ছেড়ে এখন অজানার পথে। মাহফুজের মনে হয় এই কয়দিনে কই থেকে কই এসে পড়ল।
বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
বট বৃক্ষের তলে আইলাম ছায়া পাইবার আশে
ঢাল ভাংগিয়া রোইদ্দ উঠে আমার কর্ম দুষে
বন্ধু তোর লাইগারে আমার তনু জর জর
নুসাইবার মনে হয় এইসবের জন্য কি ও দোষী? আরশাদ কি ওকে খুশি করবার জন্য এইসব ইউরোপ ট্যুর, জমি, বাড়ি করেছে? সব কি ওর দোষ? কিন্তু তাহলে আরশাদ ফ্লোরার কাছে কেন যায়? ওকি আর সুন্দর নাই? আরশাদের ডিমান্ড কি আর ওকে দিয়ে পূরণ হয় না? নুসাইবা আবার নিজেই বলে নাহ। তাহলে আরশাদ জুয়া খেলে কেন? কিন্তু ওর এখন কি উপায়। মাহফুজ ছাড়া এই মূহুর্তে ওর কোন সহায় নাই। এই অজানায় হাওড়ের মাঝে মাহফুজ ওর একমাত্র সহায়। কিন্তু মাহফুজ ওর কাছে কি চায়? আশেপাশের সবাই যেমন ওকে একটা শরীর হিসেবে দেখে মাহফুজ কি ওকে সেইভাবেই দেখে? সিনথিয়া কে ভালবেসে আবার ওকে কেন চায় মাহফুজ? কামনা? ভাবতে একটু হলেও ইগো বুস্টাপ হয় নুসাইবার। আরশাদ ফ্লোরার কাছে গেলেও মাহফুজের মত হ্যান্ডসাম ছেলের মাথা ঘুরানোর মত উপায় আছে ওর। কিন্তু এখন কিভাবে সম্ভব সব। মাহফুজ কেন বুঝছে না ও সিনথিয়ার ফুফু। তবে মাহফুজ কে গতরাতে বাস্টার্ড বলা হয়ত বেশি হয়ে গেছে। সেই মুহুর্তে প্যানিকে ওর মাথা ঠিক ছিল না। এখন আস্তে আস্তে চিন্তা করে সব মিলাচ্ছে। মুন্সীর লোক ওকে ধরলে ওকে বাচিয়ে রাখবে কিন্তু মাহফুজের অবস্থা আর খারাপ হতে পারে। মাহফুজ হয়ত মুন্সীর লোক কে খবর দেয় নি। যতই ভাবে কুল কিনারা পায় না।
নদী পার হইতে গেলাম
নদীর কিনারে
আমারে দেখিয়া নৌকা
সরে দূরে দূরে
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু তোর লাইগারে
ছেলেটা গলায় লম্বা টান দেয়। বন্ধু তোর লাইগা রে। নুসাইবা ভাবে মাহফুজ কে এখন কি বলবে ও। সাধারণত কোন ঝগড়ার পর মানুষ কে প্রথম স্যরি বলার অভ্যাস নাই ওর। ছোটবেলা থেকে বাসার একমাত্র মেয়ে হয়ে সব সময় ওকে মাথায় তুলে রেখেছে। কলেজ, কলেজে ভাল ছাত্রী হিসেবে ভাল ফ্যামিলির মেয়ে হিসেবে সবার কাছে দাম পেয়েছে। আর আরশাদ বাইরে যাই করুক ওকে সব সময় মাথায় তুলে রেখেছে। ঝগড়া যার দোষে হোক আরশাদ প্রথম স্যরি বলেছে। তাই স্যরি কিভাবে বলতে হয় সেটাই যেন ভুলে গেছে। কিন্তু মাহফুজের সাথে একটা মিটমাট করা দরকার। আবার এমন কিছু বলা যাবে না যাতে মাহফুজ রঙ সিগনাল পায়।
সৈয়দ শাহ নূরে কান্দে
নদীর কূলে বইয়া
পার হইমু হইমু কইরা
দিন তো যায় চলিয়া
বন্ধু তোর লাইগা আমার তনু জর জর
মনে চায় ছাড়িয়া যাই বাড়ি ঘর
বন্ধু তোর লাইগা রে বন্ধু বন্ধু তোর লাইগা রে।
গানের পরশে সবাই যেন আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অন্ধকার হয়ে এসেছে প্রায়। আমিন উঠে আসে মাহফুজের কাছে, বলে ভাই আইসা গেছি প্রায়। ঐ দেখেন দূরে যে বাড়িটা দেখা যায় ঐটা আমার বাড়ি। মাহফুজ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়। দূরে একটা দ্বীপের মত জায়গা। গাছপালার মাঝ দিয়ে একটা টিনের ঘর দেখা যাচ্ছে। ওদের আগামী কয়েক সাপ্তাহের আস্তানা। আমিন বলে ভাবীসাবরে বলেন রেডি হয়ে নিতে। আর পাচ মিনিটের মধ্যে বাড়ির ঘাটে লাগবে ট্রলার। মাহফুজ উঠে নুসাইবার কাছে এসে বসে। বলে আমরা এসে গেছি রেডি হয়ে নিন। আর মনে রাখবেন এখানে খাপ খাওয়ানোর উপর আমাদের জীবন মরণ নির্ভর। সো এমন কিছু করবেন না যাতে নিজে বিপদে পড়েন আবার আমাকেও বিপদে ফেলবেন। নুসাইবা অবস্থার গভীরতা জানে তাই কথা বাড়ায় না। ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। ট্রলারের ইঞ্জিন গতি কমিয়ে এনেছে। ধীরে ধীরে ট্রলার বাড়ির ঘাটে লাগে। ঘাট বললেও আসলে তেমন কিছু না। একটা গাছের সাথে একটা নৌকা বাধা। ট্রলার ভিড়ালেও ঠিক মাটির সাথে মিশে নি। তাই একটা কাঠের পাটাতন সেট করে দিয়েছে ট্রলারের ছেলে গুলো সেখান থেকে নামতে হবে। নুসাইবা উঠে দাঁড়ায়। হাওড়ের ঢেউয়ে অল্প অল্প করে দুলছে ট্রলার। প্রথমে আমিন নেমে যায় পাতাতন বেয়ে। বাড়ির ভিতরের দিকে হাটা দেয়, আর জোরে জোরে হাক দেয়। ও জোহরা, জোহরা। মেহমান আইছে বাড়িতে, মেহমান আইছে। নুসাইবা ট্রলারের উপর পাটাতনের কাছে যায়। প্রায় দশ বারফুট লম্বা পাটাতন। কাপছে ট্রলারের সাথে সাথে। নুসাইবা সাতার জানে না। পানিতে ওর সারাজীবন ভয়। এখন এমন সরু পাটাতনে হেটে নিচে নামতে পারবে বলে মনে হয় না। ওর পা কাপতে থাকে। মাহফুজ পিছন থেকে বলে নেমে পড়। মাহফুজ ওকে তুমি বলছে কিছু বলবার জন্য ঘাড় ঘুরায় নুসাইবা তখন মনে পড়ে সোলায়মান শেখের কথা, আপনারা এখন অভিনেতা অভিনেত্রী। আপনাদের অভিনয়ের উপর আপনাদের সব কিছু নির্ভর করছে। নুসাইবা তাই কিছু না বলে আবার সামনে তাকায়। একবার এক পা দেয় পাটাতনে কিন্তু আবার পা সরিয়ে আনে। গলা শুকিয়ে যায়। আমিনের বন্ধু বলে উঠে, ভাইসাব, ভাবীসাব মনে হয় ভয় পাইছে। আপনে হাত ধইরা নামায়ে দেন। ভাবীর অভ্যাস নাই মনে হয়। মাহফুজ এইবার নুসাইবা কে ক্রস করে পাটাতনে উঠে। পাটাতন কাপছে তবে মাহফুজের ব্যালেন্স ভাল। সাতার জানে ভাল। ওর দাদা বাড়ি পানির এলাকায়। বড় হইছে বুড়িগংগার কাছে। সাতার ওর জন্য ছেলেখেলা। নুসাইবার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়, আর বলে আসেন এই বাস্টার্ডের হাত ধরেন। আর কেউ হেল্প না করলেও এই বাস্টার্ড আপনাকে হেল্প করবে। নুসাইবা বুঝে মাহফুজ ওকে খোচা দিল। তবে নুসাইবা উত্তর দেয় না, খোচাটা নিরবে খেয়ে নেয়। এখন এই বিরন জায়গায় মাহফুজ ছাড়া ওর কোন মিত্র নেই। মাহফুজের হাত ধরে কাপতে থাকা পাটাতন বেয়ে ভয়ে ভয়ে এক এক পা করে আগায় নুসাইবা। নিজেকে নিজে সাহস দেয় আর কয়েক পা এগুলেই মাটি। শক্ত করে নুসাইবা হাত ধরে রাখে মাহফুজ যেন পড়ে না যায়। দুলতে থাকা পাটাতন ভয় জাগালেও মাটিতে নামতেই হবে নুসাইবা কে আর এই জন্য মাহফুজ ছাড়া আর কোন বিশ্বস্ত হাত নেই ওর পাশে।