05-01-2024, 12:54 AM
(This post was last modified: 05-01-2024, 01:00 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গ
গাড়ি এয়ারপোর্টের মুখে ঢুকে পড়েছে। সিকিউরিটির জন্য পুলিশ আর র্যাব রাস্তায় একটু পর পর ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। গাড়ি গুলো অল্প অল্প করে সামনে এগুচ্ছে। নুসাইবার মনে হয় এখন কথা বলার উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওকে এত বড় উপকার করেছে সেটা নিয়ে যেমন কথা বলা দরকার ঠিক তেমনি একটু আগে গাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ওর কথা বলা দরকার। মাঝখানে কয়মাস যেমন সব কিছু নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছিল এখন আর তেমন ঘটতে দেওয়া যায় না। নিজেই কয়েক দিন আগে নিজেকে সাহস দেবার জন্য বলা কথাটা আবার আউড়ে যায়। মাস্টার অফ মাই ফেইট, ক্যাপ্টেইন অফ মাই সোল। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেকেই নিতে হবে। কয়েকদিন আগে নিয়তির উপর ভরসা ছেড়ে নিজে উদ্যোগ নেওয়াতেই আজকে এতটুকু আসতে পেরেছে। সারাজীবন সবাই ওকে সুনাম করেছে ওর আত্মবিশ্বাসের জন্য, বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের জন্য। আজকেই সেইভাবে কথা বলতে হবে। ভুল সব মানুষের হয় তবে সফল মানুষ সেই ভুল কে স্বীকার করে সঠিক রাস্তা খুজে নেয়, ভুলের চক্করে বাকি জীবনটা কাটায় না। নুসাইবা তাই কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
নুসাইবা ডাক দেয় পিছন থেকে, মাহফুজ। মাহফুজ। সামনের গাড়ি গুলো খুব ধীর গতিতে পুলিশের চেক পয়েন্ট এড়িয়ে সামনে যাচ্ছে। মাহফুজ ব্রেকে পা রেখে পিছনে তাকায়। গাড়ি সেই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে বের হবার পর থেকে নুসাইবা কোন কথা বলে নি। মাহফুজ তাই নুসাইবার মন বুঝার চেষ্টা করেছে বারবার রিয়ারভিউ মিররে চোখ রেখে। কনস্ট্রাকশন গ্রাউন্ডে যা হয়েছে সেটা কোন রকম প্ল্যান ছিল না, মাহফুজের পরিকল্পনার কোথাও তা ছিল না। তবে নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা থেকে অনেক কথা বলতে থাকল মাহফুজ তখন অনেকটা ঘোরে থাকা মানুষের মত পিছনের সিটে গিয়ে বসল। এরপর নুসাইবা মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরতেই সব কিছু যেন উলট পালট হয়ে গেল। মনের ভিতর থাকা সব হিসাব নিকেষ উড়ে গিয়ে সেখানে ভর করল খালি আবেগ। মাঝখানে কয়দিন নুসাইবা কে ভেবে মনের ভিতর যে আবেগ গুলো জন্ম হয়েছিল সেইগুলাই যেন এখন বের হয়ে আসার জন্য লাফ দিল। আর সেই লাফে উড়ে গেল মাহফুজের মনের সব বাধা। এমনিতেই সাবরিনা দেশের বাইরে কিছুদিনের জন্য। সিনথিয়ার পরীক্ষা। সব মিলিয়ে শরীরের যে তাড়নার রিলিজ হবার দরকার ছিল সেটা হয় নি ঠিকমত। মাহফুজ ভাবে হয়ত সেই জন্য এমন করে উতলা হয়ে উঠেছিল সেই সময়টাতে। তবে মাহফুজ অবাক হয়েছে নুসাইবার আচরণে। আর অনেক বাধা আশা করেছিল নুসাইবার কাছ থেকে। ঠিক ওর সাথে তাল মিলিয়েছে বলা যাবে না তবে নুসাইবা যেন ওর শরীর কে ফলো করছিল। প্রচন্ড ঝড়ে গাড়ির ভিতর তখন আর কার মাথায় কিছু ছিল না। এর আগে এর থেকে অনেক অল্প ব্যাপারে নুসাইবা যেভাবে রিএক্ট করেছে সেই তুলনায় এইটা মহাভারত। পিছে চুপচাপ বসে থাকা নুসাইবার মুখ গাড়ির ভিতর রাস্তা থেকে আসা অল্প আলোয় প্রায় বোঝা যায় না। মাহফুজ তাই ওর নাম শুনে ঘুড়ে তাকায়। কি বলবে নুসাইবা?
নুসাইবা ওর প্রফেশনাল, কঠিন প্রবলেম সলভ করা পার্সনালিটিটা বের করে আনে। এখন মাহফুজ কে ও যা বলবে এইটা ওর জীবনের দেওয়া সবচেয়ে কঠিন বক্তব্য হবে। কারণ মাহফুজের এত বড় উপকারের পর মাহফুজ কে এমন কিছু বলতে চায় না যাতে মাহফুজ কে অপমান করা হয় বা ওর মন ভেংগে দেওয়া হয়। আবার এমন কোন ইংগিত রেখে যেতে চায় না যাতে মাহফুজের মনে হয় ওর বা মাহফুজের মাঝে ভবিষ্যতে কোন সম্পর্ক হবার সম্ভাবনা আছে। নুসাইবা নিজের ভিতরের মেজাজ কন্ট্রোল করে যতটা সম্ভব সুন্দর করে ওর কথাগুলো উপস্থাপন করতে চায়। মাহফুজ কে ও কথা দিয়েছে সিনথিয়ার ব্যাপারে হেল্প করবে, এত বড় উপকারের পর সেটা থেকে সরে আসা ওর পক্ষে কঠিন। আর মাহফুজ এত কিছুর পরেও সিনথিয়ার প্রতি ডেডিকেটেড। যদিও আরশাদ কান্ডের পর পুরুষ মানুষের ডেডিকেশনের প্রতি ওর আস্থা কমে এসেছে। আবার মাহফুজ ওকে যেভাবে রিস্ক নিয়ে উদ্ধার করেছে সেটাও ভুলতে পারছে না। শুধুমাত্র সিনথিয়ার কারণে ওর জন্য এত কিছু করেছে। যদিও ওর মনে একটা আশংকা হচ্ছে ওর প্রতিও মাহফুজের এট্রাকশন একটা কারণ। তবে এইটা দূর করতে হবে। ওর প্রতি বেশি থেকে কম বয়স্ক ছেলেদের একটা ফ্যাসিনেশন সব সময় খেয়াল করেছে। অন্যদের কে পাত্তা না দিলেও সময় আর পরিস্থিতির কারণে মাহফুজের সাথে কিছু লাইন ক্রস করে ফেলেছে কিন্তু এখন সেগুলো কে দূরে সরিয়ে নতুন করে ভাবার সময়। নুসাইবা তাই বলে, মাহফুজ তুমি আমার জন্য যা করেছ তার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার নিজের কাছের মানুষেরাও আমার বিপদে আমাকে কোন সাহায্য করতে পারে নায়। সেই জায়গায় তুমি আমাকে নিজের রিস্ক নিয়ে এত বড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছ। তোমার হেল্পার কারণে আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হয়ত ইংল্যান্ডের প্লেনে উঠে যেতে পারব। একবার প্লেন ছাড়লে, আশা করি নির্বাচনের পর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন আবার ঠিকমত দেশে ফেরত আসতে পারব। আর যখন ফেরত আসব তখন আমি তোমাকে আমার দেওয়া কথা রাখব। আমি তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারে ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলব। যদিও ভাবী এই ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত দিবে তবে আশা করি আমি সুপারিশ করলে ভাবী রাজী হবে। আর ভাবী যেদিকে রাজি হবে ভাইয়া শেষ পর্যন্ত সেদিকেই যাবে। মাহফুজ নুসাইবার কথা শুনে আর গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ হাত দিয়ে মাথা নাড়ায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না মাহফুজ। নুসাইবা তার কমান্ডিং ভয়েসে কথা বলছে আর যা বলছে এতক্ষণ পর্যন্ত সব ওর পক্ষে তাই মাহফুজ এর মাঝে নতুন করে কিছু বলার খুজে পায় না।
প্রথমে সহজ কথাগুলো বলা শেষ করে নুসাইবা। এরপর কঠিন প্রসংগ। কিভাবে বলবে বা বলতে হয় জানে না নুসাইবা কিন্তু যেভাবেই হোক এই গাড়ি থেকে নামার আগে বলতে হবে। হাত হয়ত আর তিন চার মিনিট সময় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওর কথায় কোন নেগেটিভ রিএকশন দিতে চাইলেও সময় পাবে না। নুসাইবা তাই এইবার গলা আর দৃঢ় করে। বলে মাহফুজ, শোন। আমাদের মধ্যে একটু আগে যা হয়েছে তা হওয়া উচিত হয় নি। তোমার আর আমার সম্পর্ক এমন নয়। আর আমি এমন মহিলা নই যে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্য কার সাথে রিলেশনে জড়াব। আর তুমি আমার ভাতিজির বন্ধু, ওকে বিয়ে করতে চাও। এমন অবস্থায় তোমার আর আমার মধ্যে যা হয়েছে সেটা কার জন্য ভাল না। আমরা দুই জনই সিনথিয়ার সাথে প্রতারণা করছি। আরশাদ আমার সাথে যাই করুক আইনগত ভাবে ও আমার স্বামী। আরশাদ তোমাকেও অনেক বিশ্বাস করে। তাই আমাদের এই কাজ ঠিক হয় নি। আরশাদ এত বছর আমার সাথে যা করেছে তোমার সাথে আমি সেই একই কাজ করে ফেলেছি। আরশাদ আর আমার মাঝে এতে আর কোন পার্থক্য থাকে না। আমি সব সময় ভালভাবে থাকতে চেয়েছি। তাই আমাদের মাঝে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা একটা ভুল। নুসাইবার গলা দৃঢ় করতে চাইলেও গলা কাপছে। একটু আগে কি ঘটছে সেটা যেন মুখে উল্ল্যেখ করতে পারছে না। একটু আগে ঘটনা, একটু আগে ঘটা ঘটানা এইভাবে বলে মনের পাপবোধ কমাতে চাচ্ছে। নিজে এমন কিছুতে জড়িয়ে যাবে সেইটা ভাবতেই পারছে না। আর জড়ালেও এইভাবে উপভোগ করবে সেটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তবে এখন সব ভুল কে পিছনে ফেলে সামনে এগুনোর সময়। নুসাইবা তাই আবার কথা বলে। মাহফুজ ছেলে আর মেয়েদের সংস্পর্শে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যেটা কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আমাদের মনের ভিতর থাকা আদিম অংশটা এমন কিছু ঘটায় যেটা আমাদের সমাজের নিয়মনীতির সাথে যায় না। আমি জানি আমি তোমার থেকে বয়সে বড় আমার অভিজ্ঞতা বেশি তাই আমার আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তবে তুমিও ছোট নও, তোমারো আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তোমার মনে রাখা উচিত তুমি সিনথিয়া কে ভালবাস, আর আমি সিনথিয়ার ফুফু। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যাতে তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা ঘোলাটে হয়ে যায়।
মাহফুজ কথা গুলো শুনছে আর ওর কান দিয়ে যেন গরম বাতাস বের হচ্ছে। নুসাইবা যে কথাগুলো বলছে সেগুলো যে মাহফুজ জানে না এমন না। তবে অনেক সময় আমরা কিছু কথা অন্যদের মুখ থেকে শুনতে চাই না কারণ সেগুলো আমাদের জন্য বিব্রতকর। নুসাইবার কথা গুলো মাহফুজের কান গরম করে দিচ্ছে। মাহফুজ ভাবছিল নুসাইবা কতদিনের জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছে জানে না, আবার কবে দেখা হবে জানে, আবার কখনো কিছু হবে কিনা জানে না। তাই এই অল্প কয়েকটা মিনিট নুসাইবার সাথে যে গাড়িতে কাটাচ্ছে এইটা একটা মিষ্টি স্মৃতি হয়ে থাকুক। এরপর না হয় আগামীকাল থেকে সব জটিলটা নিয়ে ভাবা যাবে। সিনথিয়া কে কি সব বলা দরকার? সাবরিনার ঘটনা তো বলে নি। তাহলে নুসাইবার টা না বললেই হয়। নুসাইবাও নিশ্চয় বলবে না। তাই নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কথা শুরু করেছিল তখন মাহফুজের মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠেছিল। যাক অন্তত একবার বিদায় বেলায় নুসাইবার কড়া কথা শুনতে হবে না আর পরে সেইটা নিয়ে মনের ভিতর গিল্ট ফিলিংস নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না। কিন্তু কথার দ্বিতীয় অংশ শুরু হতেই মাহফুজ বুঝল ওর অনুমান ভুল। মনে একটা হাসিও আসল। সাধারণত পলিটিক্সে এই ব্যাপারটা হয়। কাউকে বাশ দেবার আগে ডেকে ভাল ভাল কথা বলে পরে আসল কথাটা বলা হয়। যাতে গায়ে ক্ষত কম লাগে। নিজেই সেইম ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে। এভার ক্লেভার নুসাইবা। একদম শেষ মূহুর্তে কথাটা বলছে যেন মাহফুজ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারে। মাহফুজ হাসে। ও নিজে হলেও এই কাজটা করত। হয়ত নুসাইবা কে এই কারণে ভাল লাগে। সৌন্দর্যের বাইরেও এই কঠিন দেয়ালের জন্য। সিনথিয়ার ফ্যামিলির সব মেয়ে কি এমন? একটা কঠিন দেয়াল তুলে রাখে। একেক জনের দেয়াল একেক রকম। এই কারণে কি সিনথিয়ার ফ্যামিলির মেয়েদের জন্য মাহফুজ অন্য একরকম এট্রাকশন ফিল করে? খালি সৌন্দর্য না সাথে এই দেয়ালের এক্স-ফ্যাক্টর। যেখানে সামনে থাকা সৌন্দর্য ধরতে পারা যায় না এত কাছে থেকেও। এই এক্স-ফ্যাক্টর কি ওদের কে মাহফুজের কাছে আরাধ্য করে তুলে? মাহফুজ খেয়াল করে নুসাইবা কথা বলে যাচ্ছে। তবে ওর কানে এখন আর তেমন কথা ঢুকছে না। এইসব নানা চিন্তা খেলা করছে মাথায়। নুসাইবা বলে যাচ্ছে। মাহফুজ কত ভাল ছেলে। একটা ভুলের জন্য ওর জীবন নষ্ট হওয়ার দরকার নেই। মাহফুজ হাসে নুসাইবা ভয় পাচ্ছে। ওর সাজানো সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, অবশ্য সেই সাজানো জীবনের আর কি কিছু অবশিষ্ট আছে? এই হাইক্লাস মানুষগুলো এত স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে ইচ্ছুক যে ভুলে যায় মাঝে মাঝে একটা ইলুশন এর মাঝে আছে। মাহফুজ এইসব ইলুশনের মধ্যে নাই। ও জানে কি করেছে কি করতে চায় আর কিভাবে করতে চায়। হ্যা, নুসাইবা ওকে একটু ঘোরগ্রস্ত করে দেয়, সাবরিনার জন্য একটা এট্রাকশন ফিল করে কিন্তু ওর আসল লক্ষ্য সিনথিয়া। সিনথিয়া কে হারানো যাবে না। ওর জীবনের ভাগ্যলক্ষী। কিছু না কিছু একটা উপায় বের হবে। তবে নুসাইবা যেভাবে কিভাবে সব ভুলে সামনে এগুনো দরকার এই বক বক করছে তাতে মাহফুজের সন্দেহ হচ্ছে কতটা ওর আর সিনথিয়ার জন্য আর কতটুকু নিজের জন্য। মাহফুজ জোরে হেসে উঠে।
নুসাইবা একটু অবাক হয় বিব্রত হয়। হাসির কিছু কি বলল ও। নুসাইবা গলার স্বর দৃঢ় করে নিজের উপর আস্থা আনতে চায়। জিজ্ঞেস করে, এনি প্রবলেম মাহফুজ? মাহফুজ হাসতে হাসতে মাথা নাড়ে। বলে কিছু না আপনার কথা শুনছি তাই হাসছি। নুসাইবা এইবার নিজের উপর আস্থা পায় না কিন্তু বুঝতে দেয় না মনের ভিতরের ডাউট। বলে কেন ভুল কিছু বললাম? মাহফুজ বলল না, কিন্তু দেখেন অবস্থা কতটা চেঞ্জ হয়েছে। আপনি শুরুতে আমাকে মানতেই চান নাই আমাকে। বুদ্ধি করে এক মেয়েকে দাওয়াত দিয়েছেন আমার সাথে যাতে আমার সেখানে একটা প্রেম হয়। সব চাল চেলেছেন। আর এখন আপনি নিজে বলছেন সিনথিয়ার বাবা মায়ের কাছে আমার জন্য তদবির করবেন। গত কয়েকমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে তাই না। নুসাইবা কথাটা ফেলতে পারে। গাড়ি এয়ারপোর্টের র্যাম্পে উঠছে। সামনে গাড়ির জ্যাম। খুব স্লো গাড়ি আগাচ্ছে। রাতের এই সময়টাতে প্রচুর ফ্লাইট থাকে তার উপর পুলিশের চেকিং সব মিলিয়ে খুব স্লো সব। মাহফুজের এই বোল্ডনেস টা একসাথে ইরেটেটিং আবার নুসাইবার মনে হয় এই একটা জিনিস মাহফুজ কে অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেলে। কী অবলীলায় বলে দিল সত্য কথাটা। নুসাইবা বলে না, না এমন কিছু না। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে কথা লুকিয়ে কি লাভ বলেন ফুফু। ফুফু শব্দটার উপর জোর দেয়। নুসাইবা লাল হয়ে যায়। মাহফুজের মনে হচ্ছে একটু মজা নেওয়া দরকার নুসাইবার সাথে। সব সময় শেষ কথা নুসাইবা কেন বলবে এইবার নাহয় ও বলবে। তাই বলে এই দেখুন না একটু আগের ঘটনা টা না ঘটলে আপনি কি ভাবতেন বলেন তো? নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। প্রশ্নটা বুঝতে পারে না। আমতা আমতা করে নুসাইবা। মাহফুজ হাসে। বলে একটা জিনিস দেখছেন ফুফু। আমি আর আপনি দুই জনেই এক ঘন্টা আগের ঘটনাটার কোন নাম নিতে পারছি না। মজা না। আপনি আর আমি অন্তত এই জায়গায় এক তাই না। গাড়ি প্রায় র্যাম্পের উপর উঠে এসেছে। এইবার নুসাইবার কান গরম হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। সময় শেষ হচ্ছে না কেন। কিছু সত্য কে কখনো ফেস করতে নেই। মাহফুজ বলে আমি জানি ফুফু এইবার আপনি ইংল্যান্ড গেলে আমাদের হয়ত এই বিষয়ে আর কথা হবে না। কথা না হওয়াই ভাল। আর যাই হোক বিলিভ মি আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি। তাই আপনার আমার দুইজনের লাভ আর কিছু না হলে। তবে একটা কথা না বললে পারতেছি না ফুফু। ইউ আর সামথিং। ইউ হ্যাভ সামথিং দ্যাট ইজ ওয়াইল্ড। মাহফুজের বোল্ডনেস একসাথে নুসাইবার কান লাল করে দেয়, মেজাজ গরম করে দেয় আবার মনের মধ্যে একটা কেমন যেন হালকা ভাল অনুভূতি এনে দেয়। যে মেয়ের স্বামী গোপনে প্রেম করে বেড়ায় তার কিছুটা ইগো বুস্টাপের দরকার আছে। মাহফুজের কথাটা বেশ অসভ্য হলেও মনে একটা ইগো বুস্টাপ এনে দেয়। নুসাইবা কিছু বলে না। মাহফুজও আর কিছু বলে না। যেন সব কথা শেষ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টের গেটের সামনে এসে।
গাড়ি এয়ারপোর্টের মুখে ঢুকে পড়েছে। সিকিউরিটির জন্য পুলিশ আর র্যাব রাস্তায় একটু পর পর ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে। গাড়ি গুলো অল্প অল্প করে সামনে এগুচ্ছে। নুসাইবার মনে হয় এখন কথা বলার উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওকে এত বড় উপকার করেছে সেটা নিয়ে যেমন কথা বলা দরকার ঠিক তেমনি একটু আগে গাড়িতে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে ওর কথা বলা দরকার। মাঝখানে কয়মাস যেমন সব কিছু নিয়তির উপর ছেড়ে দিয়েছিল এখন আর তেমন ঘটতে দেওয়া যায় না। নিজেই কয়েক দিন আগে নিজেকে সাহস দেবার জন্য বলা কথাটা আবার আউড়ে যায়। মাস্টার অফ মাই ফেইট, ক্যাপ্টেইন অফ মাই সোল। নিজের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেকেই নিতে হবে। কয়েকদিন আগে নিয়তির উপর ভরসা ছেড়ে নিজে উদ্যোগ নেওয়াতেই আজকে এতটুকু আসতে পেরেছে। সারাজীবন সবাই ওকে সুনাম করেছে ওর আত্মবিশ্বাসের জন্য, বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের জন্য। আজকেই সেইভাবে কথা বলতে হবে। ভুল সব মানুষের হয় তবে সফল মানুষ সেই ভুল কে স্বীকার করে সঠিক রাস্তা খুজে নেয়, ভুলের চক্করে বাকি জীবনটা কাটায় না। নুসাইবা তাই কথা বলার সিদ্ধান্ত নেয়।
নুসাইবা ডাক দেয় পিছন থেকে, মাহফুজ। মাহফুজ। সামনের গাড়ি গুলো খুব ধীর গতিতে পুলিশের চেক পয়েন্ট এড়িয়ে সামনে যাচ্ছে। মাহফুজ ব্রেকে পা রেখে পিছনে তাকায়। গাড়ি সেই কনস্ট্রাকশন সাইট থেকে বের হবার পর থেকে নুসাইবা কোন কথা বলে নি। মাহফুজ তাই নুসাইবার মন বুঝার চেষ্টা করেছে বারবার রিয়ারভিউ মিররে চোখ রেখে। কনস্ট্রাকশন গ্রাউন্ডে যা হয়েছে সেটা কোন রকম প্ল্যান ছিল না, মাহফুজের পরিকল্পনার কোথাও তা ছিল না। তবে নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা থেকে অনেক কথা বলতে থাকল মাহফুজ তখন অনেকটা ঘোরে থাকা মানুষের মত পিছনের সিটে গিয়ে বসল। এরপর নুসাইবা মাহফুজ কে জড়িয়ে ধরতেই সব কিছু যেন উলট পালট হয়ে গেল। মনের ভিতর থাকা সব হিসাব নিকেষ উড়ে গিয়ে সেখানে ভর করল খালি আবেগ। মাঝখানে কয়দিন নুসাইবা কে ভেবে মনের ভিতর যে আবেগ গুলো জন্ম হয়েছিল সেইগুলাই যেন এখন বের হয়ে আসার জন্য লাফ দিল। আর সেই লাফে উড়ে গেল মাহফুজের মনের সব বাধা। এমনিতেই সাবরিনা দেশের বাইরে কিছুদিনের জন্য। সিনথিয়ার পরীক্ষা। সব মিলিয়ে শরীরের যে তাড়নার রিলিজ হবার দরকার ছিল সেটা হয় নি ঠিকমত। মাহফুজ ভাবে হয়ত সেই জন্য এমন করে উতলা হয়ে উঠেছিল সেই সময়টাতে। তবে মাহফুজ অবাক হয়েছে নুসাইবার আচরণে। আর অনেক বাধা আশা করেছিল নুসাইবার কাছ থেকে। ঠিক ওর সাথে তাল মিলিয়েছে বলা যাবে না তবে নুসাইবা যেন ওর শরীর কে ফলো করছিল। প্রচন্ড ঝড়ে গাড়ির ভিতর তখন আর কার মাথায় কিছু ছিল না। এর আগে এর থেকে অনেক অল্প ব্যাপারে নুসাইবা যেভাবে রিএক্ট করেছে সেই তুলনায় এইটা মহাভারত। পিছে চুপচাপ বসে থাকা নুসাইবার মুখ গাড়ির ভিতর রাস্তা থেকে আসা অল্প আলোয় প্রায় বোঝা যায় না। মাহফুজ তাই ওর নাম শুনে ঘুড়ে তাকায়। কি বলবে নুসাইবা?
নুসাইবা ওর প্রফেশনাল, কঠিন প্রবলেম সলভ করা পার্সনালিটিটা বের করে আনে। এখন মাহফুজ কে ও যা বলবে এইটা ওর জীবনের দেওয়া সবচেয়ে কঠিন বক্তব্য হবে। কারণ মাহফুজের এত বড় উপকারের পর মাহফুজ কে এমন কিছু বলতে চায় না যাতে মাহফুজ কে অপমান করা হয় বা ওর মন ভেংগে দেওয়া হয়। আবার এমন কোন ইংগিত রেখে যেতে চায় না যাতে মাহফুজের মনে হয় ওর বা মাহফুজের মাঝে ভবিষ্যতে কোন সম্পর্ক হবার সম্ভাবনা আছে। নুসাইবা নিজের ভিতরের মেজাজ কন্ট্রোল করে যতটা সম্ভব সুন্দর করে ওর কথাগুলো উপস্থাপন করতে চায়। মাহফুজ কে ও কথা দিয়েছে সিনথিয়ার ব্যাপারে হেল্প করবে, এত বড় উপকারের পর সেটা থেকে সরে আসা ওর পক্ষে কঠিন। আর মাহফুজ এত কিছুর পরেও সিনথিয়ার প্রতি ডেডিকেটেড। যদিও আরশাদ কান্ডের পর পুরুষ মানুষের ডেডিকেশনের প্রতি ওর আস্থা কমে এসেছে। আবার মাহফুজ ওকে যেভাবে রিস্ক নিয়ে উদ্ধার করেছে সেটাও ভুলতে পারছে না। শুধুমাত্র সিনথিয়ার কারণে ওর জন্য এত কিছু করেছে। যদিও ওর মনে একটা আশংকা হচ্ছে ওর প্রতিও মাহফুজের এট্রাকশন একটা কারণ। তবে এইটা দূর করতে হবে। ওর প্রতি বেশি থেকে কম বয়স্ক ছেলেদের একটা ফ্যাসিনেশন সব সময় খেয়াল করেছে। অন্যদের কে পাত্তা না দিলেও সময় আর পরিস্থিতির কারণে মাহফুজের সাথে কিছু লাইন ক্রস করে ফেলেছে কিন্তু এখন সেগুলো কে দূরে সরিয়ে নতুন করে ভাবার সময়। নুসাইবা তাই বলে, মাহফুজ তুমি আমার জন্য যা করেছ তার জন্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমার নিজের কাছের মানুষেরাও আমার বিপদে আমাকে কোন সাহায্য করতে পারে নায়। সেই জায়গায় তুমি আমাকে নিজের রিস্ক নিয়ে এত বড় একটা বিপদ থেকে উদ্ধার করেছ। তোমার হেল্পার কারণে আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমি হয়ত ইংল্যান্ডের প্লেনে উঠে যেতে পারব। একবার প্লেন ছাড়লে, আশা করি নির্বাচনের পর সব ঠান্ডা হয়ে যাবে। তখন আবার ঠিকমত দেশে ফেরত আসতে পারব। আর যখন ফেরত আসব তখন আমি তোমাকে আমার দেওয়া কথা রাখব। আমি তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারে ভাইয়া ভাবীর সাথে কথা বলব। যদিও ভাবী এই ব্যাপারে শেষ সিদ্ধান্ত দিবে তবে আশা করি আমি সুপারিশ করলে ভাবী রাজী হবে। আর ভাবী যেদিকে রাজি হবে ভাইয়া শেষ পর্যন্ত সেদিকেই যাবে। মাহফুজ নুসাইবার কথা শুনে আর গাড়ির স্ট্যায়ারিং এ হাত দিয়ে মাথা নাড়ায়। কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না মাহফুজ। নুসাইবা তার কমান্ডিং ভয়েসে কথা বলছে আর যা বলছে এতক্ষণ পর্যন্ত সব ওর পক্ষে তাই মাহফুজ এর মাঝে নতুন করে কিছু বলার খুজে পায় না।
প্রথমে সহজ কথাগুলো বলা শেষ করে নুসাইবা। এরপর কঠিন প্রসংগ। কিভাবে বলবে বা বলতে হয় জানে না নুসাইবা কিন্তু যেভাবেই হোক এই গাড়ি থেকে নামার আগে বলতে হবে। হাত হয়ত আর তিন চার মিনিট সময় আছে। এটাই উপযুক্ত সময়। মাহফুজ ওর কথায় কোন নেগেটিভ রিএকশন দিতে চাইলেও সময় পাবে না। নুসাইবা তাই এইবার গলা আর দৃঢ় করে। বলে মাহফুজ, শোন। আমাদের মধ্যে একটু আগে যা হয়েছে তা হওয়া উচিত হয় নি। তোমার আর আমার সম্পর্ক এমন নয়। আর আমি এমন মহিলা নই যে বিবাহিত থাকা অবস্থায় অন্য কার সাথে রিলেশনে জড়াব। আর তুমি আমার ভাতিজির বন্ধু, ওকে বিয়ে করতে চাও। এমন অবস্থায় তোমার আর আমার মধ্যে যা হয়েছে সেটা কার জন্য ভাল না। আমরা দুই জনই সিনথিয়ার সাথে প্রতারণা করছি। আরশাদ আমার সাথে যাই করুক আইনগত ভাবে ও আমার স্বামী। আরশাদ তোমাকেও অনেক বিশ্বাস করে। তাই আমাদের এই কাজ ঠিক হয় নি। আরশাদ এত বছর আমার সাথে যা করেছে তোমার সাথে আমি সেই একই কাজ করে ফেলেছি। আরশাদ আর আমার মাঝে এতে আর কোন পার্থক্য থাকে না। আমি সব সময় ভালভাবে থাকতে চেয়েছি। তাই আমাদের মাঝে একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা একটা ভুল। নুসাইবার গলা দৃঢ় করতে চাইলেও গলা কাপছে। একটু আগে কি ঘটছে সেটা যেন মুখে উল্ল্যেখ করতে পারছে না। একটু আগে ঘটনা, একটু আগে ঘটা ঘটানা এইভাবে বলে মনের পাপবোধ কমাতে চাচ্ছে। নিজে এমন কিছুতে জড়িয়ে যাবে সেইটা ভাবতেই পারছে না। আর জড়ালেও এইভাবে উপভোগ করবে সেটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তবে এখন সব ভুল কে পিছনে ফেলে সামনে এগুনোর সময়। নুসাইবা তাই আবার কথা বলে। মাহফুজ ছেলে আর মেয়েদের সংস্পর্শে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটে যেটা কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। আমাদের মনের ভিতর থাকা আদিম অংশটা এমন কিছু ঘটায় যেটা আমাদের সমাজের নিয়মনীতির সাথে যায় না। আমি জানি আমি তোমার থেকে বয়সে বড় আমার অভিজ্ঞতা বেশি তাই আমার আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তবে তুমিও ছোট নও, তোমারো আর বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল। তোমার মনে রাখা উচিত তুমি সিনথিয়া কে ভালবাস, আর আমি সিনথিয়ার ফুফু। আমাদের এমন কিছু করা উচিত না যাতে তোমার আর সিনথিয়ার ব্যাপারটা ঘোলাটে হয়ে যায়।
মাহফুজ কথা গুলো শুনছে আর ওর কান দিয়ে যেন গরম বাতাস বের হচ্ছে। নুসাইবা যে কথাগুলো বলছে সেগুলো যে মাহফুজ জানে না এমন না। তবে অনেক সময় আমরা কিছু কথা অন্যদের মুখ থেকে শুনতে চাই না কারণ সেগুলো আমাদের জন্য বিব্রতকর। নুসাইবার কথা গুলো মাহফুজের কান গরম করে দিচ্ছে। মাহফুজ ভাবছিল নুসাইবা কতদিনের জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছে জানে না, আবার কবে দেখা হবে জানে, আবার কখনো কিছু হবে কিনা জানে না। তাই এই অল্প কয়েকটা মিনিট নুসাইবার সাথে যে গাড়িতে কাটাচ্ছে এইটা একটা মিষ্টি স্মৃতি হয়ে থাকুক। এরপর না হয় আগামীকাল থেকে সব জটিলটা নিয়ে ভাবা যাবে। সিনথিয়া কে কি সব বলা দরকার? সাবরিনার ঘটনা তো বলে নি। তাহলে নুসাইবার টা না বললেই হয়। নুসাইবাও নিশ্চয় বলবে না। তাই নুসাইবা যখন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কথা শুরু করেছিল তখন মাহফুজের মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠেছিল। যাক অন্তত একবার বিদায় বেলায় নুসাইবার কড়া কথা শুনতে হবে না আর পরে সেইটা নিয়ে মনের ভিতর গিল্ট ফিলিংস নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে না। কিন্তু কথার দ্বিতীয় অংশ শুরু হতেই মাহফুজ বুঝল ওর অনুমান ভুল। মনে একটা হাসিও আসল। সাধারণত পলিটিক্সে এই ব্যাপারটা হয়। কাউকে বাশ দেবার আগে ডেকে ভাল ভাল কথা বলে পরে আসল কথাটা বলা হয়। যাতে গায়ে ক্ষত কম লাগে। নিজেই সেইম ট্রিটমেন্ট পাচ্ছে। এভার ক্লেভার নুসাইবা। একদম শেষ মূহুর্তে কথাটা বলছে যেন মাহফুজ কোন প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারে। মাহফুজ হাসে। ও নিজে হলেও এই কাজটা করত। হয়ত নুসাইবা কে এই কারণে ভাল লাগে। সৌন্দর্যের বাইরেও এই কঠিন দেয়ালের জন্য। সিনথিয়ার ফ্যামিলির সব মেয়ে কি এমন? একটা কঠিন দেয়াল তুলে রাখে। একেক জনের দেয়াল একেক রকম। এই কারণে কি সিনথিয়ার ফ্যামিলির মেয়েদের জন্য মাহফুজ অন্য একরকম এট্রাকশন ফিল করে? খালি সৌন্দর্য না সাথে এই দেয়ালের এক্স-ফ্যাক্টর। যেখানে সামনে থাকা সৌন্দর্য ধরতে পারা যায় না এত কাছে থেকেও। এই এক্স-ফ্যাক্টর কি ওদের কে মাহফুজের কাছে আরাধ্য করে তুলে? মাহফুজ খেয়াল করে নুসাইবা কথা বলে যাচ্ছে। তবে ওর কানে এখন আর তেমন কথা ঢুকছে না। এইসব নানা চিন্তা খেলা করছে মাথায়। নুসাইবা বলে যাচ্ছে। মাহফুজ কত ভাল ছেলে। একটা ভুলের জন্য ওর জীবন নষ্ট হওয়ার দরকার নেই। মাহফুজ হাসে নুসাইবা ভয় পাচ্ছে। ওর সাজানো সুন্দর জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, অবশ্য সেই সাজানো জীবনের আর কি কিছু অবশিষ্ট আছে? এই হাইক্লাস মানুষগুলো এত স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে ইচ্ছুক যে ভুলে যায় মাঝে মাঝে একটা ইলুশন এর মাঝে আছে। মাহফুজ এইসব ইলুশনের মধ্যে নাই। ও জানে কি করেছে কি করতে চায় আর কিভাবে করতে চায়। হ্যা, নুসাইবা ওকে একটু ঘোরগ্রস্ত করে দেয়, সাবরিনার জন্য একটা এট্রাকশন ফিল করে কিন্তু ওর আসল লক্ষ্য সিনথিয়া। সিনথিয়া কে হারানো যাবে না। ওর জীবনের ভাগ্যলক্ষী। কিছু না কিছু একটা উপায় বের হবে। তবে নুসাইবা যেভাবে কিভাবে সব ভুলে সামনে এগুনো দরকার এই বক বক করছে তাতে মাহফুজের সন্দেহ হচ্ছে কতটা ওর আর সিনথিয়ার জন্য আর কতটুকু নিজের জন্য। মাহফুজ জোরে হেসে উঠে।
নুসাইবা একটু অবাক হয় বিব্রত হয়। হাসির কিছু কি বলল ও। নুসাইবা গলার স্বর দৃঢ় করে নিজের উপর আস্থা আনতে চায়। জিজ্ঞেস করে, এনি প্রবলেম মাহফুজ? মাহফুজ হাসতে হাসতে মাথা নাড়ে। বলে কিছু না আপনার কথা শুনছি তাই হাসছি। নুসাইবা এইবার নিজের উপর আস্থা পায় না কিন্তু বুঝতে দেয় না মনের ভিতরের ডাউট। বলে কেন ভুল কিছু বললাম? মাহফুজ বলল না, কিন্তু দেখেন অবস্থা কতটা চেঞ্জ হয়েছে। আপনি শুরুতে আমাকে মানতেই চান নাই আমাকে। বুদ্ধি করে এক মেয়েকে দাওয়াত দিয়েছেন আমার সাথে যাতে আমার সেখানে একটা প্রেম হয়। সব চাল চেলেছেন। আর এখন আপনি নিজে বলছেন সিনথিয়ার বাবা মায়ের কাছে আমার জন্য তদবির করবেন। গত কয়েকমাসে অনেক কিছু বদলে গেছে তাই না। নুসাইবা কথাটা ফেলতে পারে। গাড়ি এয়ারপোর্টের র্যাম্পে উঠছে। সামনে গাড়ির জ্যাম। খুব স্লো গাড়ি আগাচ্ছে। রাতের এই সময়টাতে প্রচুর ফ্লাইট থাকে তার উপর পুলিশের চেকিং সব মিলিয়ে খুব স্লো সব। মাহফুজের এই বোল্ডনেস টা একসাথে ইরেটেটিং আবার নুসাইবার মনে হয় এই একটা জিনিস মাহফুজ কে অন্য ছেলেদের থেকে আলাদা করে ফেলে। কী অবলীলায় বলে দিল সত্য কথাটা। নুসাইবা বলে না, না এমন কিছু না। মাহফুজ হাসতে হাসতে বলে কথা লুকিয়ে কি লাভ বলেন ফুফু। ফুফু শব্দটার উপর জোর দেয়। নুসাইবা লাল হয়ে যায়। মাহফুজের মনে হচ্ছে একটু মজা নেওয়া দরকার নুসাইবার সাথে। সব সময় শেষ কথা নুসাইবা কেন বলবে এইবার নাহয় ও বলবে। তাই বলে এই দেখুন না একটু আগের ঘটনা টা না ঘটলে আপনি কি ভাবতেন বলেন তো? নুসাইবা অবাক হয়ে যায়। প্রশ্নটা বুঝতে পারে না। আমতা আমতা করে নুসাইবা। মাহফুজ হাসে। বলে একটা জিনিস দেখছেন ফুফু। আমি আর আপনি দুই জনেই এক ঘন্টা আগের ঘটনাটার কোন নাম নিতে পারছি না। মজা না। আপনি আর আমি অন্তত এই জায়গায় এক তাই না। গাড়ি প্রায় র্যাম্পের উপর উঠে এসেছে। এইবার নুসাইবার কান গরম হয়ে গেছে। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হচ্ছে। সময় শেষ হচ্ছে না কেন। কিছু সত্য কে কখনো ফেস করতে নেই। মাহফুজ বলে আমি জানি ফুফু এইবার আপনি ইংল্যান্ড গেলে আমাদের হয়ত এই বিষয়ে আর কথা হবে না। কথা না হওয়াই ভাল। আর যাই হোক বিলিভ মি আমি সিনথিয়া কে ভালবাসি। তাই আপনার আমার দুইজনের লাভ আর কিছু না হলে। তবে একটা কথা না বললে পারতেছি না ফুফু। ইউ আর সামথিং। ইউ হ্যাভ সামথিং দ্যাট ইজ ওয়াইল্ড। মাহফুজের বোল্ডনেস একসাথে নুসাইবার কান লাল করে দেয়, মেজাজ গরম করে দেয় আবার মনের মধ্যে একটা কেমন যেন হালকা ভাল অনুভূতি এনে দেয়। যে মেয়ের স্বামী গোপনে প্রেম করে বেড়ায় তার কিছুটা ইগো বুস্টাপের দরকার আছে। মাহফুজের কথাটা বেশ অসভ্য হলেও মনে একটা ইগো বুস্টাপ এনে দেয়। নুসাইবা কিছু বলে না। মাহফুজও আর কিছু বলে না। যেন সব কথা শেষ হয়ে গেছে এয়ারপোর্টের গেটের সামনে এসে।