05-01-2024, 12:53 AM
(This post was last modified: 05-01-2024, 01:00 AM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
খ
প্রতিটা প্ল্যান যারা বানায় তারা ভাবে এইটা ফুলপ্রুফ। অন্তত একটা লেভেল পর্যন্ত। বেশির ভাগ সময় এই সব প্ল্যানের বিপর্যয় ঘটে বাস্তবায়নের সময়। অর্থাৎ যা প্ল্যান করা হয় সেই অনুযায়ী কাজ হয় না কিছু না কিছু একটা ভজঘট পাকে। তাই নুসাইবা যখন কোন রকম সমস্যা ছাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারল আর কেউ তেমন কিছু টের পেল না তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ভেবেছিল প্রাথমিক ভাবে ওরা সফল। ওদের প্ল্যান অনুযায়ী পরের দিন সকাল বেলার আগে ম্যানেজার বা মুন্সী কার লোক কিছুই টের পাবে না। এর মাঝে নুসাইবা ইংল্যান্ডের পথে প্রায় অর্ধেকটা পথ চলে যাবে। আর যখন টের পাবে তার পর নুসাইবার হদিস বের করতে করতে নুসাইবা ইংল্যান্ড পৌছে যাবে। ফলে তখন ম্যানেজার বা মুন্সীর আর কিছু করার থাকবে না। মাহফুজের অনুমান এরপর ম্যানেজার ঠিক তেমন কিছু বলবে না। কারণ ওদের প্ল্যান ছিল আরশাদের বন্ধুর মাধ্যমে সানরাইজ গ্রুপের কাছে খবর পাঠানো যে নুসাইবা ইংল্যান্ড আছে এবং ওর সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে কিছু করার ইচ্ছা নাই। এরফলে সানরাইজ গ্রুপ নুসাইবার অন্তর্ধানের কারণে আরশাদের উপর উলটা পালটা কিছু করবে না। আর মুন্সী বা ওশন গ্রুপ ওর গায়ে হাত দিতে পারবে না কারণ ও তখন দেশের বাইরে। আর নির্বাচন যেহেতু সামনে আসছে তাই তখন আর নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে দুই গ্রুপ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর একবার নির্বাচন হয়ে গেলে ঝামেলা এমনিতে কমে আসবে।
তবে সব প্ল্যানে একটা ব্যাপার পরিকল্পনাকারীরা ভুলে যায়- অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজ। মাহফুজ এবং নুসাইবা যখন সব বড় বড় বাধা চতুর পরিকল্পনার সাথে অতিক্রম করে বাসার বাইরে চলে গিয়েছে তখন অপ্রত্যাশিত একটা ব্যাপার ঘটল। পরিকল্পনা অনুযায়ী নুসাইবা বাসার বুয়া কে সেইদিন বাসায় আসতে মানা করে দিয়েছিল। বলেছিল যথেষ্ট রান্না আছে তাই সেইদিন আর আসার দরকার নেই। বুয়াও খুশি হয়েছিল অপ্রত্যাশিত একটা ছুটি পেয়ে। তবে বুয়া নুসাইবার বাসার আগে যে বাসায় কাজ করে সেই বাসা থেকে নিজের ঘরে ফিরত যাবার রাস্তাতেই নুসাইবার ফ্ল্যাট। এর আগের দিন ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য বাসার কিছু খাবার প্ল্যাস্টিকের বাটিতে করে বুয়া কে দিয়েছিল যাতে বাসায় নিয়ে ফ্যামিলির অন্যদের সাথে করে খেতে পারে। বুয়া সেইদিন সকালে ভাবল বাটি তো খালি হয়ে গিয়েছে তাই ধুয়ে নিয়ে যাই, ফেরত যাবার সময় নুসাইবা খালাম্মার বাসায় বাটি গুলা দিয়ে যাব। আর নুসাইবার বাসায় অল্প কোন কাজ থাকলে সেগুলাও নাহয় করে দিয়ে যাবে, যদিও নুসাইবা বলেছে আসার দরকার নেই। আসল ব্যাপার হল নুসাইবা কে বুয়া এত পছন্দ করে তাই ভাবছিল বাটি ফেরত দিবে আর অল্প কোন কাজ থাকলে সেটাও করে দিবে তাহলে নুসাইবার হেল্প হবে। নুসাইবা বাসা থেকে মাহফুজ আর তার সাংগপাংগদের নিয়ে বের হয়ে যাবার মিনিট বিশ পচিশ পরেই হাজির হল বুয়া। লিফট দিয়ে উপরে উঠে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজাল। কেউ সাড়া দিল না। বুয়া একবার ফোন দিল নুসাইবার ফোনে। নুসাইবা পরিকল্পনা অনুযায়ী ওর ফোন বাসায় রেখে গেছে। যাতে কেউ ফোন ট্রাক করলে দেখে নুসাইবা বাসাতেই আছে। বুয়া খেয়াল করে দেখল ভিতর থেকে ফোনের আওয়াজ আসছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। ভাবল নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে গেল না তো। এর আগেও এমন একবার শুনেছিল নুসাইবার কাছে, সকালবেলা নাকি নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে অফিসে চলে গিয়েছিল। বুয়া ভাবল যাই হোক এখন এখানে থেকে লাভ নেই। তাই চলে যাবার সময় বাসার গার্ড জিজ্ঞেস করল কি খবর বুয়া আজকে কাজ এত তাড়াতাড়ি শেষ? বুয়া বলল আজকে কাজ ছিল না, আসছিলাম এই প্লাস্টিকের পট গুলা ফেরত দিয়ে যেতে। গার্ড জিজ্ঞেস করল তাইলে ফেরত দিলা না কেন। বুয়া বলল খালাম্মা মনে হয় বাসায় নাই। কলিংবেল দিলাম দরজা খুলল না তো। কল দিলাম তাও রিসিভ করল না। গার্ড বলল তাইলে তুমি পট গুলা রেখে যাও, আমি খালাম্মার কাছে পৌছে দিব নে। গার্ড আসলে চিন্তিত। মুন্সী ওকে দায়িত্ব দিয়েছে নুসাইবার বাসার সব খোজ খবর রাখতে। প্রতিদিন কড়কড়ে একটা হাজার টাকার নোট দেয়। তাই বুয়া চলে যেতেই গার্ড তাড়াতাড়ি উপরে গেল। নুসাইবার বাসায় কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খুলল না। নুসাইবার নাম্বার আছে গার্ডের কাছে। তাই সেই নাম্বারে ফোন দিল। ভিতর থেকে ফোন বাজার শব্দ আসছে তবে কেউ ফোন রিসিভ করল না। গার্ড এবার ভয় পেয়ে গেল। কারণ মুন্সী ওকে যথেষ্ট ভয় দেখিয়ে গেছে। বলেছে টাকার সমস্যা নাই, যত চাও পাবা। তবে সব খবর দিতে হবে টাইম অনুযায়ী। কিছু মিস করলে লাশ পড়ে যাবে। মুন্সী লোকটাকে আগে কখনো দেখে নাই, কিন্তু যেভাবে শীতল গলায় হাসতে হাসতে লাশ ফেলার কথা বলেছে তাতে গার্ডের সন্দেহ নাই এই লোক চাইলে সহজেই এই কাজ করতে পারবে। ভয়ে ভয়ে গার্ড তাই তাড়াতাড়ি মুন্সীর নাম্বারে ফোন লাগায়।
মুন্সীর ফোন যখন বেজে উঠে তখন মুন্সী গাজীপুরে। ওশন গ্রুপ ওকে প্রথমে সানরাইজ গ্রুপের গোপন খবর বের করার কাজে লাগালেও এখন আর বেশ কিছু কাজ দিয়েছে ওকে। নির্বাচনী এলাকার নানা প্রতিনিধিদের কিভাবে টাকা, ক্ষমতার লোভ বা ভয় দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে আনা যায়। সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় কোন রিপোর্ট করাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না মুন্সী বা ওশন গ্রুপের মালিক কারো। মুন্সী যদিও ভেবেছিল আরশাদ নুসাইবা একটা ভাল লিড হবে তবে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোন খবর বের করতে পারে নি। আর নমিনেশন ফাইনাল করার সময় হয়ে এসেছে। ওশন গ্রুপ তাই এখন মুন্সীর উপর নতুন কাজ দিয়েছে নির্বাচনী এলাকার ছোটখাট নেতাদের এক এক করে হাত করার। নমিনেশন যেই পক্ষেই যাক না কেন, এদের সমর্থন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জেতার জন্য বড় হাতিয়ার হবে। তবে মুন্সী এখনো আরশাদ আর নুসাইবার উপর থেকে নজর সরায় নাই। বলা যায় না কি বের হয়ে আসে। নুসাইবা কে সেই রাতে যখন থেরাপী দিচ্ছিল তখন মনে হয়েছে নুসাইবার কাছে আসলেই কাজের কিছু নাই। তবে এটাও ঠিক নুসাইবা হয়ত এমন কোন দিকে ইংগিত দিতে পারবে যেদিকে কিছু খবর পাওয়া যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা নুসাইবা মুন্সীর মনে এমন একটা প্রভাব বিস্তার করছে যে নুসাইবা কে আরেকবার না ছুইতে পারলে জীবন বৃথা মনে হচ্ছে মুন্সীর। এই কয়দিন ওশন গ্রুপ তাকে ভাল প্রেসারে রাখছে তাই সারাদেশ ব্যাপী ছুটা ছুটি করতে হইছে। তবে সম্ভবত দুই তিন দিনের মধ্যে নুসাইবা কে একবার দেখতে যেতে পারবে। এইটা ভেবেই মুন্সীর শরীরটা চাংগা হয়ে উঠে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। নুসাইবার বাসার দারওয়ান ফোন দিল কেন? এই লোকটাকে হাত করে রেখেই নুসাইবার উপর নজরদারী করছিল মুন্সী। সাথে ওর আরেকটা লোক রাখা ছিল। ম্যানেজার যে পরিমান ম্যান পাওয়ার ইউজ করতেছে নুসাইবা কে সেফ করার জন্য সেখানে একটা দারওয়ান কে দৈনিক কিছু টাকা দিয়েই সব খবর পেয়ে যাচ্ছে মুন্সী। ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে সালাম আসল। উত্তর দিতেই দারোয়ান বলল, নুসাইবা ম্যাডামের বাসায় নক করলেও কোন খবর উত্তর আসতেছে না। মুন্সী বলল, ম্যাডাম কি বাসা থেকে বের হইছে? দারোয়ান বলল না, বাসাতেই আছে। আজকে কেউ আসছিল ম্যাডামের কাছে? দারোয়ান বলল উনার কাছে কেউ আসে নাই তবে উনার বাসায় আজকে একটা ফ্রিজ ডেলিভারি হইছে। মুন্সী এইবার নড়েচড়ে বসে। বলে দেখ তো তোমাদের বাসার সামনে যে একটা মাইক্রো বসে থাকে সব সময় ঐটা আছে কিনা। দারোয়ান বলে স্যার চেক করছি ঐটা আছে। নড়ে নায় সামনে থেকে। মুন্সী এইবার বলে তুমি সিওর ম্যাডাম বাসা থেকে বের হয় নায়। দারোয়ান বলে সিওর স্যার, ম্যাডাম বের হয় নায়। মুন্সী জিজ্ঞেস করে যারা ফ্রিজ দিতে আসছিল তারা কারা। দারোয়ান বলে স্যার আমি তো চিনি না, তবে সিংগার কোম্পানির লোক। মুন্সী বলে তুমি দশ মিনিট পর গিয়ে আবার বাসা চেক কর। দেখ দরজা খুলে কিনা। আর যাই হবে জানাবা আমাকে।
দারোয়ানের সাথে কথা শেষ করে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে ব্যাপার কি হল। বাসার সামনে এখনো মাইক্রো আছে এর মানে ম্যানেজারের লোকেরা এখনো পাহারা দিচ্ছে। নরমালি নুসাইবা বের হলে এরা সাথে সাথে যায়। তার মানে নুসাইবা বের হয় নায়। আবার বাসার দরজা খুলছে না। এর মধ্যে ফ্রিজের ডেলিভারি। মুন্সী ওর যে লোক নুসাইবার বাসার উপর নজর রাখে তাকে ফোন দিল। ফোন ধরতেই মুন্সী জিজ্ঞেস করল আজকে কোন ফ্রিজ ডেলিভারি হবার কথা ছিল। লোকটা উত্তর দিল জ্বি বস। মুন্সী বলল ডেলিভারী হইছে? লোকটা বলল হ্যা বস, ৪০/৪৫ মিনিট আগে ডেলিভারি হয়ে গেছে। মুন্সী বলল তুমি সিওর যারা আসছিল তারা ডেলিভারি কোম্পানীর লোক? লোকটা বলল বস সবাই তো সিংগার কোম্পানীর লোক ছিল। আর সিংগার কোম্পানিতেই অর্ডার দেওয়া ছিল। মুন্সী বলল, শালা বলদ। তুমি তাড়াতাড়ি ঐ সিংগারে যাও আর যেমনে পার খোজ বের কর আজকে কোন ডেলিভারি হইছে কিনা ম্যাডামের বাসায়। ফোন রেখে মুন্সী এইবার এয়ারপোর্টে নিজের এক লোক কে ফোন দিল। বলল, শোন একটা জরুরী কাজ কর। দেখতো নুসাইবা করিম নামে কার টিকেট কাটা আছে কিনা আজকে বা আগামীকালকের জন্য। থাকলে আমাকে তাড়াতাড়ি জানাও। ফোন রেখে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে। হিসাব মিলছে না। ম্যানেজারের লোকেরা এখানে আবার যদি নুসাইবা হাওয়া হয় তাহলে কিভাবে সম্ভব। নাকি ম্যানেজার ওকে ধোকা দিল। যা চাল্লু লোক হতেও পারে। একদল লোক দিয়ে নুসাইবা কে হাওয়া করে আরেকদল কে সামনে বসিয়ে রেখেছে ধোকা দেবার জন্য। নাকি অন্য কোন প্লেয়ার আছে খেলায়। মুন্সীর মাথার চিন্তার রেখা বাড়ে। শালা নুসাইবার কেস যত সহজ হবে ভাবছিল অত সহজ বলে এখন মনে হচ্ছে না।
প্রতিটা প্ল্যান যারা বানায় তারা ভাবে এইটা ফুলপ্রুফ। অন্তত একটা লেভেল পর্যন্ত। বেশির ভাগ সময় এই সব প্ল্যানের বিপর্যয় ঘটে বাস্তবায়নের সময়। অর্থাৎ যা প্ল্যান করা হয় সেই অনুযায়ী কাজ হয় না কিছু না কিছু একটা ভজঘট পাকে। তাই নুসাইবা যখন কোন রকম সমস্যা ছাড়া বাসা থেকে বের হয়ে আসতে পারল আর কেউ তেমন কিছু টের পেল না তাই মাহফুজ আর নুসাইবা ভেবেছিল প্রাথমিক ভাবে ওরা সফল। ওদের প্ল্যান অনুযায়ী পরের দিন সকাল বেলার আগে ম্যানেজার বা মুন্সী কার লোক কিছুই টের পাবে না। এর মাঝে নুসাইবা ইংল্যান্ডের পথে প্রায় অর্ধেকটা পথ চলে যাবে। আর যখন টের পাবে তার পর নুসাইবার হদিস বের করতে করতে নুসাইবা ইংল্যান্ড পৌছে যাবে। ফলে তখন ম্যানেজার বা মুন্সীর আর কিছু করার থাকবে না। মাহফুজের অনুমান এরপর ম্যানেজার ঠিক তেমন কিছু বলবে না। কারণ ওদের প্ল্যান ছিল আরশাদের বন্ধুর মাধ্যমে সানরাইজ গ্রুপের কাছে খবর পাঠানো যে নুসাইবা ইংল্যান্ড আছে এবং ওর সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে কিছু করার ইচ্ছা নাই। এরফলে সানরাইজ গ্রুপ নুসাইবার অন্তর্ধানের কারণে আরশাদের উপর উলটা পালটা কিছু করবে না। আর মুন্সী বা ওশন গ্রুপ ওর গায়ে হাত দিতে পারবে না কারণ ও তখন দেশের বাইরে। আর নির্বাচন যেহেতু সামনে আসছে তাই তখন আর নতুন নতুন ইস্যু নিয়ে দুই গ্রুপ ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আর একবার নির্বাচন হয়ে গেলে ঝামেলা এমনিতে কমে আসবে।
তবে সব প্ল্যানে একটা ব্যাপার পরিকল্পনাকারীরা ভুলে যায়- অপ্রত্যাশিত সারপ্রাইজ। মাহফুজ এবং নুসাইবা যখন সব বড় বড় বাধা চতুর পরিকল্পনার সাথে অতিক্রম করে বাসার বাইরে চলে গিয়েছে তখন অপ্রত্যাশিত একটা ব্যাপার ঘটল। পরিকল্পনা অনুযায়ী নুসাইবা বাসার বুয়া কে সেইদিন বাসায় আসতে মানা করে দিয়েছিল। বলেছিল যথেষ্ট রান্না আছে তাই সেইদিন আর আসার দরকার নেই। বুয়াও খুশি হয়েছিল অপ্রত্যাশিত একটা ছুটি পেয়ে। তবে বুয়া নুসাইবার বাসার আগে যে বাসায় কাজ করে সেই বাসা থেকে নিজের ঘরে ফিরত যাবার রাস্তাতেই নুসাইবার ফ্ল্যাট। এর আগের দিন ফ্রিজ পরিষ্কার করার জন্য বাসার কিছু খাবার প্ল্যাস্টিকের বাটিতে করে বুয়া কে দিয়েছিল যাতে বাসায় নিয়ে ফ্যামিলির অন্যদের সাথে করে খেতে পারে। বুয়া সেইদিন সকালে ভাবল বাটি তো খালি হয়ে গিয়েছে তাই ধুয়ে নিয়ে যাই, ফেরত যাবার সময় নুসাইবা খালাম্মার বাসায় বাটি গুলা দিয়ে যাব। আর নুসাইবার বাসায় অল্প কোন কাজ থাকলে সেগুলাও নাহয় করে দিয়ে যাবে, যদিও নুসাইবা বলেছে আসার দরকার নেই। আসল ব্যাপার হল নুসাইবা কে বুয়া এত পছন্দ করে তাই ভাবছিল বাটি ফেরত দিবে আর অল্প কোন কাজ থাকলে সেটাও করে দিবে তাহলে নুসাইবার হেল্প হবে। নুসাইবা বাসা থেকে মাহফুজ আর তার সাংগপাংগদের নিয়ে বের হয়ে যাবার মিনিট বিশ পচিশ পরেই হাজির হল বুয়া। লিফট দিয়ে উপরে উঠে বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজাল। কেউ সাড়া দিল না। বুয়া একবার ফোন দিল নুসাইবার ফোনে। নুসাইবা পরিকল্পনা অনুযায়ী ওর ফোন বাসায় রেখে গেছে। যাতে কেউ ফোন ট্রাক করলে দেখে নুসাইবা বাসাতেই আছে। বুয়া খেয়াল করে দেখল ভিতর থেকে ফোনের আওয়াজ আসছে কিন্তু কেউ দরজা খুলছে না। ভাবল নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে গেল না তো। এর আগেও এমন একবার শুনেছিল নুসাইবার কাছে, সকালবেলা নাকি নুসাইবা ফোন বাসায় ফেলে অফিসে চলে গিয়েছিল। বুয়া ভাবল যাই হোক এখন এখানে থেকে লাভ নেই। তাই চলে যাবার সময় বাসার গার্ড জিজ্ঞেস করল কি খবর বুয়া আজকে কাজ এত তাড়াতাড়ি শেষ? বুয়া বলল আজকে কাজ ছিল না, আসছিলাম এই প্লাস্টিকের পট গুলা ফেরত দিয়ে যেতে। গার্ড জিজ্ঞেস করল তাইলে ফেরত দিলা না কেন। বুয়া বলল খালাম্মা মনে হয় বাসায় নাই। কলিংবেল দিলাম দরজা খুলল না তো। কল দিলাম তাও রিসিভ করল না। গার্ড বলল তাইলে তুমি পট গুলা রেখে যাও, আমি খালাম্মার কাছে পৌছে দিব নে। গার্ড আসলে চিন্তিত। মুন্সী ওকে দায়িত্ব দিয়েছে নুসাইবার বাসার সব খোজ খবর রাখতে। প্রতিদিন কড়কড়ে একটা হাজার টাকার নোট দেয়। তাই বুয়া চলে যেতেই গার্ড তাড়াতাড়ি উপরে গেল। নুসাইবার বাসায় কড়া নাড়লেও কেউ দরজা খুলল না। নুসাইবার নাম্বার আছে গার্ডের কাছে। তাই সেই নাম্বারে ফোন দিল। ভিতর থেকে ফোন বাজার শব্দ আসছে তবে কেউ ফোন রিসিভ করল না। গার্ড এবার ভয় পেয়ে গেল। কারণ মুন্সী ওকে যথেষ্ট ভয় দেখিয়ে গেছে। বলেছে টাকার সমস্যা নাই, যত চাও পাবা। তবে সব খবর দিতে হবে টাইম অনুযায়ী। কিছু মিস করলে লাশ পড়ে যাবে। মুন্সী লোকটাকে আগে কখনো দেখে নাই, কিন্তু যেভাবে শীতল গলায় হাসতে হাসতে লাশ ফেলার কথা বলেছে তাতে গার্ডের সন্দেহ নাই এই লোক চাইলে সহজেই এই কাজ করতে পারবে। ভয়ে ভয়ে গার্ড তাই তাড়াতাড়ি মুন্সীর নাম্বারে ফোন লাগায়।
মুন্সীর ফোন যখন বেজে উঠে তখন মুন্সী গাজীপুরে। ওশন গ্রুপ ওকে প্রথমে সানরাইজ গ্রুপের গোপন খবর বের করার কাজে লাগালেও এখন আর বেশ কিছু কাজ দিয়েছে ওকে। নির্বাচনী এলাকার নানা প্রতিনিধিদের কিভাবে টাকা, ক্ষমতার লোভ বা ভয় দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে আনা যায়। সানরাইজ গ্রুপের বিরুদ্ধে বড় কোন রিপোর্ট করাতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না মুন্সী বা ওশন গ্রুপের মালিক কারো। মুন্সী যদিও ভেবেছিল আরশাদ নুসাইবা একটা ভাল লিড হবে তবে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোন খবর বের করতে পারে নি। আর নমিনেশন ফাইনাল করার সময় হয়ে এসেছে। ওশন গ্রুপ তাই এখন মুন্সীর উপর নতুন কাজ দিয়েছে নির্বাচনী এলাকার ছোটখাট নেতাদের এক এক করে হাত করার। নমিনেশন যেই পক্ষেই যাক না কেন, এদের সমর্থন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে জেতার জন্য বড় হাতিয়ার হবে। তবে মুন্সী এখনো আরশাদ আর নুসাইবার উপর থেকে নজর সরায় নাই। বলা যায় না কি বের হয়ে আসে। নুসাইবা কে সেই রাতে যখন থেরাপী দিচ্ছিল তখন মনে হয়েছে নুসাইবার কাছে আসলেই কাজের কিছু নাই। তবে এটাও ঠিক নুসাইবা হয়ত এমন কোন দিকে ইংগিত দিতে পারবে যেদিকে কিছু খবর পাওয়া যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা নুসাইবা মুন্সীর মনে এমন একটা প্রভাব বিস্তার করছে যে নুসাইবা কে আরেকবার না ছুইতে পারলে জীবন বৃথা মনে হচ্ছে মুন্সীর। এই কয়দিন ওশন গ্রুপ তাকে ভাল প্রেসারে রাখছে তাই সারাদেশ ব্যাপী ছুটা ছুটি করতে হইছে। তবে সম্ভবত দুই তিন দিনের মধ্যে নুসাইবা কে একবার দেখতে যেতে পারবে। এইটা ভেবেই মুন্সীর শরীরটা চাংগা হয়ে উঠে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। নুসাইবার বাসার দারওয়ান ফোন দিল কেন? এই লোকটাকে হাত করে রেখেই নুসাইবার উপর নজরদারী করছিল মুন্সী। সাথে ওর আরেকটা লোক রাখা ছিল। ম্যানেজার যে পরিমান ম্যান পাওয়ার ইউজ করতেছে নুসাইবা কে সেফ করার জন্য সেখানে একটা দারওয়ান কে দৈনিক কিছু টাকা দিয়েই সব খবর পেয়ে যাচ্ছে মুন্সী। ফোন রিসিভ করতেই ঐপাশ থেকে সালাম আসল। উত্তর দিতেই দারোয়ান বলল, নুসাইবা ম্যাডামের বাসায় নক করলেও কোন খবর উত্তর আসতেছে না। মুন্সী বলল, ম্যাডাম কি বাসা থেকে বের হইছে? দারোয়ান বলল না, বাসাতেই আছে। আজকে কেউ আসছিল ম্যাডামের কাছে? দারোয়ান বলল উনার কাছে কেউ আসে নাই তবে উনার বাসায় আজকে একটা ফ্রিজ ডেলিভারি হইছে। মুন্সী এইবার নড়েচড়ে বসে। বলে দেখ তো তোমাদের বাসার সামনে যে একটা মাইক্রো বসে থাকে সব সময় ঐটা আছে কিনা। দারোয়ান বলে স্যার চেক করছি ঐটা আছে। নড়ে নায় সামনে থেকে। মুন্সী এইবার বলে তুমি সিওর ম্যাডাম বাসা থেকে বের হয় নায়। দারোয়ান বলে সিওর স্যার, ম্যাডাম বের হয় নায়। মুন্সী জিজ্ঞেস করে যারা ফ্রিজ দিতে আসছিল তারা কারা। দারোয়ান বলে স্যার আমি তো চিনি না, তবে সিংগার কোম্পানির লোক। মুন্সী বলে তুমি দশ মিনিট পর গিয়ে আবার বাসা চেক কর। দেখ দরজা খুলে কিনা। আর যাই হবে জানাবা আমাকে।
দারোয়ানের সাথে কথা শেষ করে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে ব্যাপার কি হল। বাসার সামনে এখনো মাইক্রো আছে এর মানে ম্যানেজারের লোকেরা এখনো পাহারা দিচ্ছে। নরমালি নুসাইবা বের হলে এরা সাথে সাথে যায়। তার মানে নুসাইবা বের হয় নায়। আবার বাসার দরজা খুলছে না। এর মধ্যে ফ্রিজের ডেলিভারি। মুন্সী ওর যে লোক নুসাইবার বাসার উপর নজর রাখে তাকে ফোন দিল। ফোন ধরতেই মুন্সী জিজ্ঞেস করল আজকে কোন ফ্রিজ ডেলিভারি হবার কথা ছিল। লোকটা উত্তর দিল জ্বি বস। মুন্সী বলল ডেলিভারী হইছে? লোকটা বলল হ্যা বস, ৪০/৪৫ মিনিট আগে ডেলিভারি হয়ে গেছে। মুন্সী বলল তুমি সিওর যারা আসছিল তারা ডেলিভারি কোম্পানীর লোক? লোকটা বলল বস সবাই তো সিংগার কোম্পানীর লোক ছিল। আর সিংগার কোম্পানিতেই অর্ডার দেওয়া ছিল। মুন্সী বলল, শালা বলদ। তুমি তাড়াতাড়ি ঐ সিংগারে যাও আর যেমনে পার খোজ বের কর আজকে কোন ডেলিভারি হইছে কিনা ম্যাডামের বাসায়। ফোন রেখে মুন্সী এইবার এয়ারপোর্টে নিজের এক লোক কে ফোন দিল। বলল, শোন একটা জরুরী কাজ কর। দেখতো নুসাইবা করিম নামে কার টিকেট কাটা আছে কিনা আজকে বা আগামীকালকের জন্য। থাকলে আমাকে তাড়াতাড়ি জানাও। ফোন রেখে মুন্সী চিন্তা করতে থাকে। হিসাব মিলছে না। ম্যানেজারের লোকেরা এখানে আবার যদি নুসাইবা হাওয়া হয় তাহলে কিভাবে সম্ভব। নাকি ম্যানেজার ওকে ধোকা দিল। যা চাল্লু লোক হতেও পারে। একদল লোক দিয়ে নুসাইবা কে হাওয়া করে আরেকদল কে সামনে বসিয়ে রেখেছে ধোকা দেবার জন্য। নাকি অন্য কোন প্লেয়ার আছে খেলায়। মুন্সীর মাথার চিন্তার রেখা বাড়ে। শালা নুসাইবার কেস যত সহজ হবে ভাবছিল অত সহজ বলে এখন মনে হচ্ছে না।