18-12-2023, 04:37 PM
(This post was last modified: 18-12-2023, 04:51 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
চ
মাহফুজ একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মাথায় হেলমেট। সাথে আরেকটা ছেলে। ওর কাছে একটা ফোন আসে। ডাক্টার আদিবার চেম্বারের সামনে ওর আরেকটা ছেলে কে দাড় করিয়ে রেখেছিল। সেখান থেকে ফোন এসেছে। রওনা দিয়েছে নুসাইবা। অবশ্য যে ছেলে ফোন দিয়েছে সে নুসাইবার নাম জানে না। খালি কাপড়ের কালার আর রঙ বলে দেওয়া আছে। বলা আছে এমন ড্রেসের যে এই সময়ের দিকে রিক্সায় উঠবে ঠিক তখন যেন ওকে ফোন দিয়ে জানান হয়। আর রিক্সা চলতে শুরু করলে আশেপাশের আর কে কে নড়ে উঠে, কোন গাড়ি চলতে শুরু করে সব যেন খেয়াল রাখে। ফোন দিয়ে ছবি ভিডিও চ্যাট করার ছুতোয় আশেপাশের লোকজনকে ভিডিও করে রাখে। মাহফুজ এত কম বয়সে যে এত উপরে উঠেছে রাজনৈতিক ভাবে তার একটা কারণ ওর সাংগঠনিক দক্ষতা আর যারা ওর সাথে কাজ করে এরা বেশির ভাগ সময় তাকে প্রশ্নাতীত ভাবে আনুগত্য দেয়। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খবর যোগাড় করা মাহফুজের একটা বড় টেকনিক। এই কাজে অনেক সময় ওর নিজের কাছের এই ছেলে গুলোকে কাজে লাগায়। আজকেও যেমন করছে। ফোনের ছেলেটা বলে রিক্সায় করে মহিলা রওনা দেবার পর একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি পিছন পিছন গেছে। প্রথমে রিক্সা, এরপর পিছনে মাইক্রো আর তার পিছনে সিএনজি। মাইক্রো আর সিএনজি কে সহজে চোখে পড়ছে কারণ এরা অনেক স্লো যাচ্ছে তাই। মাহফুজ ফোন কেটে দেয়। মিনিট সাত আট পর আরেকটা ফোন। এইবার আরেক লোকেশন থেকে। আরেকটা ছেলে ফোন দিয়েছে। হুডখোলা রিক্সায় যে মহিলা যাবার কথা সে যাচ্ছে। পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি। মাহফুজ বুঝে ওর প্ল্যানে কাজ হয়েছে। মাহফুজ নুসাইবা কে বলে দিয়েছিল কয়েকটা পয়েন্টের নাম। এই রাস্তা গুলো বিকালের দিকে বেশ ফাকা থাকে। তাই এই সময় হয়ত তিন চার মিনিটে একটা গাড়ি বা রিক্সা ক্রস করে ঐগলি গুলো। তাই কোন রিক্সা সেই রাস্তায় গেলে আর তার পিছন পিছন কোন গাড়ি গেলে সহজে চিহ্নিত করা যাবে। আর এই ছেলেটাকে বলা ছিল নুসাইবার কাপড়ের রঙ আর চেহারার বর্ণনা। মাহফুজ চাইলে ছবি দিতে পারত। তবে কাউকে ইচ্ছা করে ছবি দেয় নি। সোলায়মান শেখ তাকে সাবধান করেছে। মাহফুজ আর মুন্সী এই খেলার অনেক পুরতন আর ধুরন্ধর খেলোয়াড়। এরা পিছনে লাগলে কোথা থেকে খবর বের করবে সেটা বলা মুশকিল। তাই যত কম লোকের কাছে আসল খবর থাকবে তত ভাল।
মাহফুজ অপেক্ষা করে। রিক্সার পরের রাস্তা ওর দাড়ানোর গলির মুখে। প্রায় আট নয় মিনিট পর রিক্সা ওর সামনে দিয়ে ক্রস করে। নুসাইবা কে অবশ্য বলা হয় নি মাহফুজ আর ওর ছেলেরা ওকে ফলো করবে। তার উপর মুখের উপর হেলমেট পড়া। তাই নুসাইবার কোন ভাবে চিনার কথা না মাহফুজ কে। রিক্সার উপর নুসাইবা কে দেখে বুকের ভিতর একটা টান দিয়ে উঠে। হুডখোলা রিক্সায় খোলা বাতাসে এলোমেলো উড়তে থাকা চুল গুলো মুখের উপর এসে পড়ছে। মুখের মাঝে আলতো করে একটা হাসি। এই হাসিতেই যেন বয়স কমে গেছে অনেক নুসাইবার। নুসাইবার এই বিপদের কারণ মাহফুজের করানো সেই পত্রিকার রিপোর্ট এইটা ভাবতেই মাহফুজের খারাপ লাগে। এই মহিলা কে হেল্প করতেই হবে। মনের ভিতর অবশ্য অন্য একজন বলে উঠে, হেল্প না করলে ফ্লোরার দোকানের সেই নুসাইবা কে তো পাওয়া হবে না তোমার। মাহফুজ সেই ভাবনা মনের এক কোণায় ঠেলে দেয়। রিক্সার পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে একটা সিএনজি যাচ্ছে। এত স্লো যাচ্ছে যাতে বুঝা যাচ্ছে এরা কোন উদ্দ্যেশে আছে। মাহফুজ পুরো ব্যাপার সিওর হওয়ার জন্য তাই তিন জায়গায় লোক রেখেছে। এইবার নুসাইবা ওদের প্ল্যানমত দোকানে যাবে। দেখা যাক সেখান থেকে কি খবর আসে। মাইক্রোর লোকগুলো ম্যানেজারের এইটা নুসাইবার সাথে কথা থেকে সিওর হয়েছে। তবে সিএনজিতে থাকা এই মালটা কে। ফোন দিয়ে তাই সিংগারের শো রুমের সামনে থাকা ছেলেটাকে বলে যে রিক্সা থামবে তার পর একটা সিএনজি থামবে। ওর কাজ হবে সেই সিএনজি থেকে কে নামে তার চেহারা যেভাবে হোক ছবি বা ভিডিওতে তোলা। ওকে ভাই বলে ফোন রেখে দেয় ছেলেটা। করিতকর্মা ছেলে, এই কাজ করতে পারবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত মাহফুজ।
এবার প্ল্যানের পরের অংশগুলো নিয়ে কি কি করা যায় সেটা ভাবতে থাকে মাহফুজ। প্ল্যানের একটা অংশ ঠিক ভাবে করবার জন্য নুসাইবা সিংগারের শো রুমে ঢুকেছে। নুসাইবা যদি সেখানে ঠিকমত কাজ করে আসতে পারে তাহলে এর পরের বড় অংশটা এক্সিকিউট করা মাহফুজের কাজ। সেখানে অনেক গুলো ছোট ছোট পার্ট আছে। তার কিছু অংশ নিয়ে সোলায়মান শেখের সাথে কথা বলতে হবে। মটরসাইকেল ঘুরিয়ে ডিবি অফিসের কাছে একটা চায়ের দোকানে এসে বসে। সন্ধ্যার পর এই দোকানে রিক্সাওয়ালারা ছাড়া তেমন কেউ আসে না। মাঝে মাঝে পথ চলতি দুই একজন এসে বিড়ি সিগারেট কিনে। মাহফুজ দোকানের পিছনে ওর বাইকটা পার্ক করে রাখে। একটু পরে সোলায়মান শেখ এসে হাজির হয়। মাহফুজের কাছে ততক্ষণে সিংগার শো রুমের সামনে সিএনজিতে করে আসা লোকটার ছবি পৌছে গেছে। সোলায়মান শেখ কে ছবিটা দেখায়। বাবুল নাম লোকটার। মুন্সীর সাথে কাজ করে। তবে ছবিটা দেখে অবাক হয় সোলায়মান। সরাসরি এই খানে জড়িতে হতে চাচ্ছে না তাই মাঠের কাজ গুলো মাহফুজ কে করতে হবে বলেছিল। সোলায়মান মাহফুজ কে বিভিন্ন বুদ্ধি আর রিসোর্স বাতলে দিচ্ছে। আর মাহফুজ কিভাবে করবে সেটা মাহফুজ কে বলতে মানা করেছে। কারণ কোন কারণে যদি ম্যানেজার আর মুন্সী মাহফুজ পর্যন্ত পৌছে যায় তাহলে সোলায়মান শেখ অন্তত এইটুকু বলতে পারবে সে কি ঘটবে সেটা জানত না। মাহফুজের কাজ নুসাইবা কে বাসা থেকে বের করে আনা আর কে কে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করা। সোলায়মান ডিবিতে চাকরি করে এত বছর। তাই জানে ব্যাপারটা এত সহজ হবে না। তাই মাহফুজ যেভাবে ম্যানেজার আর মুন্সীর লোকেরা কিভাবে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করে ফেলেছে সেটা দেখে অবাক হল। মনে মনে ভাবে যদি কেউ পারে নুসাইবা কে বের করতে আসলে সেটা মাহফুজ।
সোলায়মান শেখ একটু ভেবে বলে, আপনার রেকি অপারেশন থেকে বুঝা যাচ্ছে ম্যানেজার তিন চার জনের একটা দল কে রেখেছে নুসাইবার সেফটির জন্য। আর মুন্সী একজন কে রেখেছে নজরদারির জন্য। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে একজন কেন? সোলায়মান শেখ বলে মুন্সীর কাজের ধরণ এমন। সে সরাসরি নুসাইবা কে তুলে নিবে না। এমন কিছু একটা করবে বা এমন কিছু একটা ইনফরমেশন বের করবে যাতে নুসাইবা কে ব্লাকমেইল করা যায়। মানুষ তার যে গোপন কথা দুনিয়াতে আর কেউ জানে না বলে ভাবে, মুন্সী কিভাবে কিভাবে যেন সেই খবর বের করে ফেলে। গোপন খবর বের করার ব্যাপারে মুন্সী লোকটা একটা ওস্তাদ। ভয় দেখানো, টাকা খাওয়ানো হেন কোন আকাম নাই যেইটা সে করবে না খবর বের করার জন্য। আর এই লোক দুইয়ে দুইয়ে চার মিলানোর ওস্তাদ। আর আপনি তো বললেন ম্যানেজারের লোকদের নাকের তলা দিয়ে আরশাদ সাহেবের বউ কে রাতের বেলা এসে থ্রেট দিয়ে গেছে যাতে আরশাদ সাহেবের কাগজ পত্রের হদিশ বের করে। ফলে সে জানে চাইলে আরেকবার আসতে পারবে। আমার ধারণা এখন মুন্সী নুসাইবা ম্যাডামের কোন গোপন খবর আছে কিনা সেটা বের করবে। আপনার কথামত তো আমি উনাদের দুইজন সম্পর্কে খোজ নিছি তাই আমি জানি নুসাইবা ম্যাডাম ক্লিন। হয়ত এই জন্য মুন্সী এখনো কিছু করতেছে না। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর বাসার সেই বিকাল বা ফ্লোরা হাসানের দোকানের ট্রায়াল রুমের ঘটনা কি মুন্সী বের করতে পারবে। সোলায়মান শেখ যে ভাবে লোকটা কে ভয় পায় তাতে তো মনে হচ্ছে পারলেও পারতে পারে। মুন্সি সেই খবর বের করলে নুসাইবার প্রতিক্রিয়া কি হবে? নিজের কাছেই স্বীকার করতে চায় না নুসাইবা আর মুন্সী জেনে গেলে বোধহয় আত্মহত্যা করবে। মাহফুজ ভাবে যেভাবেই হোক নুসাইবা কে বাচাতে হবে। মনের ভিতর কেউ বলে নুসাইবা কে বাচাতে হবে নাহলে সেই স্পর্শ আবার কিভাবে পাবে।
সোলায়মান শেখ বলে আপনাদের প্ল্যান তাহলে কি? নুসাইবা ম্যাডাম কে ইংল্যান্ড পাঠানো? মাহফুজ বলে হ্যা। সোলায়মান বলে আমি কিন্তু আপনাকে আগেই বলছি আমি যদি ম্যানেজার আর মুন্সী কে যতদূর চিনি নুসাইবা ম্যাডামের পক্ষে প্লেনে উঠা কঠিন হবে। মাহফুজ বলে এছাড়া আর উপায় কি? সোলায়মান বলে আপনি এর বাইরে কিছু একটা ভেবে রাখেন। যা ভাববেন সেইটা আর কাউকে বলবেন না। মাহফুজ বলে আগামীকাল নুসাইবা ফুফু কে বাসা থেকে বের করতে হবে এর মধ্যে নতুন কি প্ল্যান করব বলেন? আর দেশের ভিতরে কি এমন কোন জায়গা আছে যেখানে ম্যানেজার বা মুন্সীর হাত পৌছাবে না। সোলায়মান শেখ বলে সেটা হয়ত নাই। তবে ডিবিতে থেকে একটা কথা শিখছি চাইলে ভীড়ের মধ্যে অদৃশ্য হওয়া যায়। আর অদৃশ্য মানুষ কে খুজে বের করার সাধ্য কার নাই। সোলায়মান এইবার তার জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছু জ্ঞান দেয় মাহফুজ কে। সহজে অদৃশ্য হবার মন্ত্র। মাহফুজ বুদ্ধিটা শুনে অবাক হয়। সোলায়মান শেখ বলে এমন করে অবশ্য তিন চারদিন লুকায়ে থাকতে পারবেন। সোলায়মান শেখ বলে এর পর আরকেটা বুদ্ধি আছে। তবে সেইটা আগে কিছু জিনিস ঠিক করে তারপর বলতে পারব। আপনি জানেন দরকার হইলে সব ফোন ফেলে দিতে হবে। আর আমার সাথে তারপর কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে। আজকে রাত থেকে আপনার ফোন আপনার বাসা থেকে বের হতে পারবে না। আর নুসাইবা ম্যাডামের ফোন তার বাসা থেকে। আপনারা বাসা থেকে বের হবেন তবে ফোন ছাড়া। আপনাকে যে নতুন সিম কিনতে বলছি সেগুলা একটা বাটনওয়ালা ফোনে লাগাবেন। যদি কোন কারণে এয়ারপোর্টে কিছু হবার চান্স থাকে তাহলে আমি জানব। আমি খোজ লাগাইছি এমন ভাবে যাতে আমার কে কেউ সন্দেহ করবে না কিন্তু আমি জানব। আর আমি জানলেই আপনার নতুন নাম্বারে আমি অন্য কোন নাম্বার থেকে ৫০ টাকা লাগবে এই লিখে একটা এসএমএস করব। এই এসএমএস পাইলে আপনি ভুলেও এয়ারপোর্টের দিকে যাবেন না। আর যদি লিখি ৬০ টাকা লাগবে তাহলে বুঝবেন রাস্তা ক্লিয়ার। মনে রাখবেন আপনার হাতে সময় থাকবে পাচ ঘনটার মত। তাই এমন ভাবে ম্যাডাম কে বের করবেন যাতে হাতে সময় থাকে পাচ ঘন্টার মত। বাসা থেকে বের হয়ে এয়ারপোরট যেতে এক ঘন্টা। মাঝখানে এক ঘন্টা কোথাও চুপচাপ ওয়েট করতে হবে। আর তিন ঘন্টা আগে চেক ইন।
সাথে নিজেদের ফোন নেওয়া যাবে না। এমন ফোন যোগাড় করা ভাল যেটা থেকে মালিকানা সনাক্ত করা না যায় সহজে। ছিনতাই হওয়া ফোন কোথায় পাওয়া যায় সেটা অবশ্য মাহফুজ জানে। সেখান থেকেই কিনবে ভাবে। যাতে কেউ খুজতে চাইলে আর কঠিন হয় কাজটা। মাহফুজ বলে তাহলে পুরো ব্যাপারটা কি দাড়াল? যদি প্লেনে উঠতে না পারে ফুফু তাহলে উনাকে নিইয়ে হাওয়া হতে হবে আপনার বুদ্ধিমত। সোলায়মান বলে ঠিক। সোলায়মান বলে আপনাদের লাক ভাল হলে তিন চারদিন সময় পাবেন। আমি এর মধ্যে আপনাদের একটা ব্যবস্থা করতে পারব। তবে এরজন্য আপনাদের তিন চারদিন নিজেদের মত করে টিকে থাকতে হবে। মাহফুজ বলে এটা তো অনেক ঝামেলার আর অনেক রিস্কি। সোলায়মান শেখ বলে সেই জন্য বললাম দোয়া করেন যাতে কোন মতে প্লেনে উঠে বসতে পারেন নুসাইবা ম্যাডাম কোন ঝামেলা ছাড়া। আর আরেকটা ব্যাপার। এয়ারপোর্টে নুসাইবা ম্যাডাম কে নামানোর সময় কোন সিসি ক্যামেরায় যেন আপনার ছবি না আসে। তাহলে নুসাইবা ম্যাডাম দেশ থেকে বের হলেও আপনার বিপদ কমবে না। এরা যত বড় হারামি। আপনাকে ছাড়বে না। ফলে যাই করেন নিজের পরিচয় যেন ফাস না হয়। সোলায়মানের সতর্কবাণীতে মাহফুজ বুঝে জীবনের সবচেয়ে বড় আর ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।
মাহফুজ একটা নির্দিষ্ট জায়গায় মটর সাইকেল নিয়ে অপেক্ষা করছিল। মাথায় হেলমেট। সাথে আরেকটা ছেলে। ওর কাছে একটা ফোন আসে। ডাক্টার আদিবার চেম্বারের সামনে ওর আরেকটা ছেলে কে দাড় করিয়ে রেখেছিল। সেখান থেকে ফোন এসেছে। রওনা দিয়েছে নুসাইবা। অবশ্য যে ছেলে ফোন দিয়েছে সে নুসাইবার নাম জানে না। খালি কাপড়ের কালার আর রঙ বলে দেওয়া আছে। বলা আছে এমন ড্রেসের যে এই সময়ের দিকে রিক্সায় উঠবে ঠিক তখন যেন ওকে ফোন দিয়ে জানান হয়। আর রিক্সা চলতে শুরু করলে আশেপাশের আর কে কে নড়ে উঠে, কোন গাড়ি চলতে শুরু করে সব যেন খেয়াল রাখে। ফোন দিয়ে ছবি ভিডিও চ্যাট করার ছুতোয় আশেপাশের লোকজনকে ভিডিও করে রাখে। মাহফুজ এত কম বয়সে যে এত উপরে উঠেছে রাজনৈতিক ভাবে তার একটা কারণ ওর সাংগঠনিক দক্ষতা আর যারা ওর সাথে কাজ করে এরা বেশির ভাগ সময় তাকে প্রশ্নাতীত ভাবে আনুগত্য দেয়। প্রতিপক্ষ সম্পর্কে খবর যোগাড় করা মাহফুজের একটা বড় টেকনিক। এই কাজে অনেক সময় ওর নিজের কাছের এই ছেলে গুলোকে কাজে লাগায়। আজকেও যেমন করছে। ফোনের ছেলেটা বলে রিক্সায় করে মহিলা রওনা দেবার পর একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি পিছন পিছন গেছে। প্রথমে রিক্সা, এরপর পিছনে মাইক্রো আর তার পিছনে সিএনজি। মাইক্রো আর সিএনজি কে সহজে চোখে পড়ছে কারণ এরা অনেক স্লো যাচ্ছে তাই। মাহফুজ ফোন কেটে দেয়। মিনিট সাত আট পর আরেকটা ফোন। এইবার আরেক লোকেশন থেকে। আরেকটা ছেলে ফোন দিয়েছে। হুডখোলা রিক্সায় যে মহিলা যাবার কথা সে যাচ্ছে। পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর একটা সিএনজি। মাহফুজ বুঝে ওর প্ল্যানে কাজ হয়েছে। মাহফুজ নুসাইবা কে বলে দিয়েছিল কয়েকটা পয়েন্টের নাম। এই রাস্তা গুলো বিকালের দিকে বেশ ফাকা থাকে। তাই এই সময় হয়ত তিন চার মিনিটে একটা গাড়ি বা রিক্সা ক্রস করে ঐগলি গুলো। তাই কোন রিক্সা সেই রাস্তায় গেলে আর তার পিছন পিছন কোন গাড়ি গেলে সহজে চিহ্নিত করা যাবে। আর এই ছেলেটাকে বলা ছিল নুসাইবার কাপড়ের রঙ আর চেহারার বর্ণনা। মাহফুজ চাইলে ছবি দিতে পারত। তবে কাউকে ইচ্ছা করে ছবি দেয় নি। সোলায়মান শেখ তাকে সাবধান করেছে। মাহফুজ আর মুন্সী এই খেলার অনেক পুরতন আর ধুরন্ধর খেলোয়াড়। এরা পিছনে লাগলে কোথা থেকে খবর বের করবে সেটা বলা মুশকিল। তাই যত কম লোকের কাছে আসল খবর থাকবে তত ভাল।
মাহফুজ অপেক্ষা করে। রিক্সার পরের রাস্তা ওর দাড়ানোর গলির মুখে। প্রায় আট নয় মিনিট পর রিক্সা ওর সামনে দিয়ে ক্রস করে। নুসাইবা কে অবশ্য বলা হয় নি মাহফুজ আর ওর ছেলেরা ওকে ফলো করবে। তার উপর মুখের উপর হেলমেট পড়া। তাই নুসাইবার কোন ভাবে চিনার কথা না মাহফুজ কে। রিক্সার উপর নুসাইবা কে দেখে বুকের ভিতর একটা টান দিয়ে উঠে। হুডখোলা রিক্সায় খোলা বাতাসে এলোমেলো উড়তে থাকা চুল গুলো মুখের উপর এসে পড়ছে। মুখের মাঝে আলতো করে একটা হাসি। এই হাসিতেই যেন বয়স কমে গেছে অনেক নুসাইবার। নুসাইবার এই বিপদের কারণ মাহফুজের করানো সেই পত্রিকার রিপোর্ট এইটা ভাবতেই মাহফুজের খারাপ লাগে। এই মহিলা কে হেল্প করতেই হবে। মনের ভিতর অবশ্য অন্য একজন বলে উঠে, হেল্প না করলে ফ্লোরার দোকানের সেই নুসাইবা কে তো পাওয়া হবে না তোমার। মাহফুজ সেই ভাবনা মনের এক কোণায় ঠেলে দেয়। রিক্সার পিছন পিছন একটা মাইক্রো আর তার থেকে বেশ দূরত্ব রেখে একটা সিএনজি যাচ্ছে। এত স্লো যাচ্ছে যাতে বুঝা যাচ্ছে এরা কোন উদ্দ্যেশে আছে। মাহফুজ পুরো ব্যাপার সিওর হওয়ার জন্য তাই তিন জায়গায় লোক রেখেছে। এইবার নুসাইবা ওদের প্ল্যানমত দোকানে যাবে। দেখা যাক সেখান থেকে কি খবর আসে। মাইক্রোর লোকগুলো ম্যানেজারের এইটা নুসাইবার সাথে কথা থেকে সিওর হয়েছে। তবে সিএনজিতে থাকা এই মালটা কে। ফোন দিয়ে তাই সিংগারের শো রুমের সামনে থাকা ছেলেটাকে বলে যে রিক্সা থামবে তার পর একটা সিএনজি থামবে। ওর কাজ হবে সেই সিএনজি থেকে কে নামে তার চেহারা যেভাবে হোক ছবি বা ভিডিওতে তোলা। ওকে ভাই বলে ফোন রেখে দেয় ছেলেটা। করিতকর্মা ছেলে, এই কাজ করতে পারবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত মাহফুজ।
এবার প্ল্যানের পরের অংশগুলো নিয়ে কি কি করা যায় সেটা ভাবতে থাকে মাহফুজ। প্ল্যানের একটা অংশ ঠিক ভাবে করবার জন্য নুসাইবা সিংগারের শো রুমে ঢুকেছে। নুসাইবা যদি সেখানে ঠিকমত কাজ করে আসতে পারে তাহলে এর পরের বড় অংশটা এক্সিকিউট করা মাহফুজের কাজ। সেখানে অনেক গুলো ছোট ছোট পার্ট আছে। তার কিছু অংশ নিয়ে সোলায়মান শেখের সাথে কথা বলতে হবে। মটরসাইকেল ঘুরিয়ে ডিবি অফিসের কাছে একটা চায়ের দোকানে এসে বসে। সন্ধ্যার পর এই দোকানে রিক্সাওয়ালারা ছাড়া তেমন কেউ আসে না। মাঝে মাঝে পথ চলতি দুই একজন এসে বিড়ি সিগারেট কিনে। মাহফুজ দোকানের পিছনে ওর বাইকটা পার্ক করে রাখে। একটু পরে সোলায়মান শেখ এসে হাজির হয়। মাহফুজের কাছে ততক্ষণে সিংগার শো রুমের সামনে সিএনজিতে করে আসা লোকটার ছবি পৌছে গেছে। সোলায়মান শেখ কে ছবিটা দেখায়। বাবুল নাম লোকটার। মুন্সীর সাথে কাজ করে। তবে ছবিটা দেখে অবাক হয় সোলায়মান। সরাসরি এই খানে জড়িতে হতে চাচ্ছে না তাই মাঠের কাজ গুলো মাহফুজ কে করতে হবে বলেছিল। সোলায়মান মাহফুজ কে বিভিন্ন বুদ্ধি আর রিসোর্স বাতলে দিচ্ছে। আর মাহফুজ কিভাবে করবে সেটা মাহফুজ কে বলতে মানা করেছে। কারণ কোন কারণে যদি ম্যানেজার আর মুন্সী মাহফুজ পর্যন্ত পৌছে যায় তাহলে সোলায়মান শেখ অন্তত এইটুকু বলতে পারবে সে কি ঘটবে সেটা জানত না। মাহফুজের কাজ নুসাইবা কে বাসা থেকে বের করে আনা আর কে কে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করা। সোলায়মান ডিবিতে চাকরি করে এত বছর। তাই জানে ব্যাপারটা এত সহজ হবে না। তাই মাহফুজ যেভাবে ম্যানেজার আর মুন্সীর লোকেরা কিভাবে নুসাইবার উপর নজর রাখছে সেটা বের করে ফেলেছে সেটা দেখে অবাক হল। মনে মনে ভাবে যদি কেউ পারে নুসাইবা কে বের করতে আসলে সেটা মাহফুজ।
সোলায়মান শেখ একটু ভেবে বলে, আপনার রেকি অপারেশন থেকে বুঝা যাচ্ছে ম্যানেজার তিন চার জনের একটা দল কে রেখেছে নুসাইবার সেফটির জন্য। আর মুন্সী একজন কে রেখেছে নজরদারির জন্য। মাহফুজ জিজ্ঞেস করে একজন কেন? সোলায়মান শেখ বলে মুন্সীর কাজের ধরণ এমন। সে সরাসরি নুসাইবা কে তুলে নিবে না। এমন কিছু একটা করবে বা এমন কিছু একটা ইনফরমেশন বের করবে যাতে নুসাইবা কে ব্লাকমেইল করা যায়। মানুষ তার যে গোপন কথা দুনিয়াতে আর কেউ জানে না বলে ভাবে, মুন্সী কিভাবে কিভাবে যেন সেই খবর বের করে ফেলে। গোপন খবর বের করার ব্যাপারে মুন্সী লোকটা একটা ওস্তাদ। ভয় দেখানো, টাকা খাওয়ানো হেন কোন আকাম নাই যেইটা সে করবে না খবর বের করার জন্য। আর এই লোক দুইয়ে দুইয়ে চার মিলানোর ওস্তাদ। আর আপনি তো বললেন ম্যানেজারের লোকদের নাকের তলা দিয়ে আরশাদ সাহেবের বউ কে রাতের বেলা এসে থ্রেট দিয়ে গেছে যাতে আরশাদ সাহেবের কাগজ পত্রের হদিশ বের করে। ফলে সে জানে চাইলে আরেকবার আসতে পারবে। আমার ধারণা এখন মুন্সী নুসাইবা ম্যাডামের কোন গোপন খবর আছে কিনা সেটা বের করবে। আপনার কথামত তো আমি উনাদের দুইজন সম্পর্কে খোজ নিছি তাই আমি জানি নুসাইবা ম্যাডাম ক্লিন। হয়ত এই জন্য মুন্সী এখনো কিছু করতেছে না। মাহফুজ মনে মনে ভাবে ওর বাসার সেই বিকাল বা ফ্লোরা হাসানের দোকানের ট্রায়াল রুমের ঘটনা কি মুন্সী বের করতে পারবে। সোলায়মান শেখ যে ভাবে লোকটা কে ভয় পায় তাতে তো মনে হচ্ছে পারলেও পারতে পারে। মুন্সি সেই খবর বের করলে নুসাইবার প্রতিক্রিয়া কি হবে? নিজের কাছেই স্বীকার করতে চায় না নুসাইবা আর মুন্সী জেনে গেলে বোধহয় আত্মহত্যা করবে। মাহফুজ ভাবে যেভাবেই হোক নুসাইবা কে বাচাতে হবে। মনের ভিতর কেউ বলে নুসাইবা কে বাচাতে হবে নাহলে সেই স্পর্শ আবার কিভাবে পাবে।
সোলায়মান শেখ বলে আপনাদের প্ল্যান তাহলে কি? নুসাইবা ম্যাডাম কে ইংল্যান্ড পাঠানো? মাহফুজ বলে হ্যা। সোলায়মান বলে আমি কিন্তু আপনাকে আগেই বলছি আমি যদি ম্যানেজার আর মুন্সী কে যতদূর চিনি নুসাইবা ম্যাডামের পক্ষে প্লেনে উঠা কঠিন হবে। মাহফুজ বলে এছাড়া আর উপায় কি? সোলায়মান বলে আপনি এর বাইরে কিছু একটা ভেবে রাখেন। যা ভাববেন সেইটা আর কাউকে বলবেন না। মাহফুজ বলে আগামীকাল নুসাইবা ফুফু কে বাসা থেকে বের করতে হবে এর মধ্যে নতুন কি প্ল্যান করব বলেন? আর দেশের ভিতরে কি এমন কোন জায়গা আছে যেখানে ম্যানেজার বা মুন্সীর হাত পৌছাবে না। সোলায়মান শেখ বলে সেটা হয়ত নাই। তবে ডিবিতে থেকে একটা কথা শিখছি চাইলে ভীড়ের মধ্যে অদৃশ্য হওয়া যায়। আর অদৃশ্য মানুষ কে খুজে বের করার সাধ্য কার নাই। সোলায়মান এইবার তার জ্ঞান ভান্ডার থেকে কিছু জ্ঞান দেয় মাহফুজ কে। সহজে অদৃশ্য হবার মন্ত্র। মাহফুজ বুদ্ধিটা শুনে অবাক হয়। সোলায়মান শেখ বলে এমন করে অবশ্য তিন চারদিন লুকায়ে থাকতে পারবেন। সোলায়মান শেখ বলে এর পর আরকেটা বুদ্ধি আছে। তবে সেইটা আগে কিছু জিনিস ঠিক করে তারপর বলতে পারব। আপনি জানেন দরকার হইলে সব ফোন ফেলে দিতে হবে। আর আমার সাথে তারপর কিভাবে যোগাযোগ করতে হবে। আজকে রাত থেকে আপনার ফোন আপনার বাসা থেকে বের হতে পারবে না। আর নুসাইবা ম্যাডামের ফোন তার বাসা থেকে। আপনারা বাসা থেকে বের হবেন তবে ফোন ছাড়া। আপনাকে যে নতুন সিম কিনতে বলছি সেগুলা একটা বাটনওয়ালা ফোনে লাগাবেন। যদি কোন কারণে এয়ারপোর্টে কিছু হবার চান্স থাকে তাহলে আমি জানব। আমি খোজ লাগাইছি এমন ভাবে যাতে আমার কে কেউ সন্দেহ করবে না কিন্তু আমি জানব। আর আমি জানলেই আপনার নতুন নাম্বারে আমি অন্য কোন নাম্বার থেকে ৫০ টাকা লাগবে এই লিখে একটা এসএমএস করব। এই এসএমএস পাইলে আপনি ভুলেও এয়ারপোর্টের দিকে যাবেন না। আর যদি লিখি ৬০ টাকা লাগবে তাহলে বুঝবেন রাস্তা ক্লিয়ার। মনে রাখবেন আপনার হাতে সময় থাকবে পাচ ঘনটার মত। তাই এমন ভাবে ম্যাডাম কে বের করবেন যাতে হাতে সময় থাকে পাচ ঘন্টার মত। বাসা থেকে বের হয়ে এয়ারপোরট যেতে এক ঘন্টা। মাঝখানে এক ঘন্টা কোথাও চুপচাপ ওয়েট করতে হবে। আর তিন ঘন্টা আগে চেক ইন।
সাথে নিজেদের ফোন নেওয়া যাবে না। এমন ফোন যোগাড় করা ভাল যেটা থেকে মালিকানা সনাক্ত করা না যায় সহজে। ছিনতাই হওয়া ফোন কোথায় পাওয়া যায় সেটা অবশ্য মাহফুজ জানে। সেখান থেকেই কিনবে ভাবে। যাতে কেউ খুজতে চাইলে আর কঠিন হয় কাজটা। মাহফুজ বলে তাহলে পুরো ব্যাপারটা কি দাড়াল? যদি প্লেনে উঠতে না পারে ফুফু তাহলে উনাকে নিইয়ে হাওয়া হতে হবে আপনার বুদ্ধিমত। সোলায়মান বলে ঠিক। সোলায়মান বলে আপনাদের লাক ভাল হলে তিন চারদিন সময় পাবেন। আমি এর মধ্যে আপনাদের একটা ব্যবস্থা করতে পারব। তবে এরজন্য আপনাদের তিন চারদিন নিজেদের মত করে টিকে থাকতে হবে। মাহফুজ বলে এটা তো অনেক ঝামেলার আর অনেক রিস্কি। সোলায়মান শেখ বলে সেই জন্য বললাম দোয়া করেন যাতে কোন মতে প্লেনে উঠে বসতে পারেন নুসাইবা ম্যাডাম কোন ঝামেলা ছাড়া। আর আরেকটা ব্যাপার। এয়ারপোর্টে নুসাইবা ম্যাডাম কে নামানোর সময় কোন সিসি ক্যামেরায় যেন আপনার ছবি না আসে। তাহলে নুসাইবা ম্যাডাম দেশ থেকে বের হলেও আপনার বিপদ কমবে না। এরা যত বড় হারামি। আপনাকে ছাড়বে না। ফলে যাই করেন নিজের পরিচয় যেন ফাস না হয়। সোলায়মানের সতর্কবাণীতে মাহফুজ বুঝে জীবনের সবচেয়ে বড় আর ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে।