18-12-2023, 04:35 PM
(This post was last modified: 18-12-2023, 04:49 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ঘ
সোলায়মান গতকাল রাতে মাহফুজের ফোন পেয়ে অবাক হয়। রাত দশটার সময় ফোন দিয়ে দেখা করবার জন্য অনুরোধ করে। সাধারণত একবার বাসায় আসলে যদি অফিসের সিনিয়র বা বস কেউ না ডাক দেয় তাহলে কাজের জন্য বাইরে বের হয় না। তবে মাহফুজের গলায় তাড়া টের পায় আর মাহফুজ বারবার বলতে থাকে খুব জরুরী কাজটা। ফোনে কথা বলতে বলে। মাহফুজ প্রাথমিক ভাবে কয়েকটা কথা বলার পর সোলায়মান শেখ বাসার কাছের এক রেস্টুরেন্টের ঠিকানা বলে। রাত একটা পর্যন্ত খোলা থাকে সেটা। দোকানটা একটা গলির মুখে। বেশ চালু রেস্টুরেন্ট। তবে ঠিক টাকা ওয়ালাদের জায়গা না এটা। বরং বলা যায় একটু ভাল ভাতের হোটেল। যেখানে বেশ ভাল করে বসা যায়। খাওয়ার মান ভাল, টাকাও অপেক্ষাকৃত কম নেয়। তাই সকাল ছয়টায় খোলার পর থেকে রাত একটা পর্যন্ত ভীড়ের উপর থাকে। তবে সোলায়মান কে ডিবির লোক বলে সম্মান করে মালিক। আসলে কোণার একটা কেবিনের মত জায়গা আছে সেটা বসার জন্য ছেড়ে দেয়। আর চারপাশে এত কথা, মানুষ যে কেউ খেয়াল করবে না কে কি বলছে। তাই মাহফুজ কে এখানে আসতে বলে। সময়মত হাজির হয় মাহফুজ। এইজন্য মাহফুজ ছেলেটাকে পছন্দ করে সোলায়মান। মাথায় বুদ্ধি যেমন আছে তেমন করে সময়ের দাম দেয়, আর কথা দিলে কথা রাখে। মাহফুজের মুখে চিন্তার রেখা দেখে সোলায়মান। অবশ্য চিন্তা হবার মত কথা। যা বলল তাতে মনে হচ্ছে ভাল একটা ফ্যাসাদে ফেসে গেছে আরশাদ সাহেব আর তার বউ। মাহফুজ টেবিলে বসে একে একে নুসাইবার কাছ থেকে শোনা সব কথা আর পার্টি অফিসে নেওয়া খোজ থেকে যা জেনেছে সব বলে সোলায়মান কে। সোলায়মান মনযোগ দিয়ে সব শুনে।
নুসাইবার সাথে কথা বলার পর পার্টি অফিসে ফোন দিয়ে খোজ নেয় সানরাইজ গ্রুপ সম্পর্কে আর তাদের প্রতিদন্দ্বী ওশন গ্রুপ সম্পর্কে। দুই কর্পোরেট হাউজের প্রতিদন্দ্বীতা এখন ভোটের মাঠে এসে হাজির হয়েছে। এক আসন থেকেই নির্বাচন করতে চায় দুই দল। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে আর ওশন গ্রুপের মালিক। এর আগে এক সময় এই আসন থেকে এমপি ছিল ওশন গ্রুপের মালিক। পরে নানা কারণে আর নমিনেশন পায় নাই। এইবার আবার নমিনেশনের জন্য জোর তদবির করছে। তবে ভিতরে ভিতরে নিউজ হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে পাবার চান্স বেশি নমিনেশন। ছেলে রাজনীতির মাঠে নতুন তাই তেমন কোন স্ক্যান্ডাল নেই পিছনে। তার উপর ছেলে পলিটিক্যালি বুদ্ধিমান আছে। মাহফুজের সাথে মাসুদ চাচার ঐখানে কথা হয়েছে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলের। মাহফুজ নিজেও স্বীকার করে বড়লোকের রাজনীতি করতে চাওয়া ছেলেদের তুলনায় এই ছেলে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে। তবে পার্টি অফিস থেকে আরেকটা খবর পেয়েছে মাহফুজ ওশন গ্রুপে দেদারছে টাকা ঢালছে নমিনেশন পাবার জন্য। নুসাইবা থেকে শোনা খবর এর সাথে এই বার দুইয়ে দুইয়ে চার মিলায় মাহফুজ। মুন্সী তাহলে সম্ভবত ওশন গ্রুপের লোক। আর যেভাবে আরশাদের ফাইলপত্রের খোজ করছে তার মানে সানরাইজ গ্রুপের খবর বের করার জন্য লেগেছে এই লোক। আর পার্টি অফিসের খবরে এটাও বুঝে দুই দল মরিয়া নমিনেশন পাবার জন্য। দরকার হলে দুই একটা লাশ ফেলে দেওয়া, মিথ্যা খবর তৈরি করা সব সম্ভব এই দুই দলের পক্ষে। মাহফুজের একটা গিল্ট ফিলিংস কাজ করে কারণ আরশাদের সাথে সানরাইজ গ্রুপের সম্পর্কের খবর ঐ পত্রিকার নিউজ না হলে হয়ত এইভাবে সামনে আসত না। ফলে আরশাদ বিপদে পড়ত না। আর তার থেকে নুসাইবা এত ঝামেলায় ফেসে যেত না। জেনে বুঝে মানুষের বড় কোন ক্ষতি করতে কখনো চায় না মাহফুজ। কিন্তু এইটা বুঝে আরশাদ বিশেষ করে নুসাইবা কে বড় বিপদে ফেলে দিয়েছে সে। এখান থেকে খুব খারাপ কিছু হলেও হয়ে যেতে পারে।
মাহফুজের কাছে পার্টি অফিসের খবর আর নুসাইবার সাথে মুন্সী আর ম্যানেজারের নজরদারির কথা শুনে ভ্রু কুচকায় সোলায়মান শেখ। অনেক বছর ডিবিতে চাকরি করার জন্য ঢাকার রাঘববোয়ালদের অনেক কথায় জানে সে। ম্যানেজার হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপের সব ইলিগ্যাল কাজ সামলায়। এমনকি সোলায়মান শেখের বসরাও বেশ সমীহ করে কথা বলে এই লোকটার সাথে। আর মুন্সী একটা নরকের কীট। কয়েকবার লোকটাকে হেল্প করতে হয়েছে ওর বসদের নির্দেশে। কি জানি কি জাদু আছে মুন্সীর। এই লোক কোন না কোন ভাবে তার প্রায় সব বসদের জাদু করে রেখেছে। ব্লাকমেইলিং এই লোকের পেশা এবং নেশা। সম্ভবত তার বসদের সম্পর্কেও কিছু না কিছু জানা আছে এই লোকের। যেভাবে অল্প কিছু ইনফরমেশন থেকে মানুষের বেডরুমের খবর পর্যন্ত বের করে ফেলে তাতে অবাক হয়েছে সোলায়মান অনেকবার। তবে এই লাইনে কাজ করা সব মানুষের কিছু নীতি থাকে। মুন্সীর কোন নীতি আছে বলে মনে হয় না। মানুষ কে মেন্টালি টরচার করা এই লোক উপভোগ করে ব্লাকমেইলিং করে। খালি টাকার জন্য কাজ করে এইলোক তেমন না বরং এই লোক কাজটা উপভোগ করে। পারত পক্ষে মুন্সী কে এড়িয়ে যেতে চায় সব সময় সোলায়মান শেখ। তবে আজকে যখন মাহফুজ বলল আরশাদ সাহেব আর তার বউ দুইজনের উপর ম্যানেজার আর মুন্সী নজর রাখছে তখন সোলায়মানের মনে হল জলে কুমীর আর ডাংগায় বাঘের উপযুক্ত ব্যবহার সম্ভবত আরশাদ সাহেব আর তার বউয়ের বর্তমান অবস্থা।
সোলায়মান জিজ্ঞেস করে এখন আপনার প্ল্যান কি? মাহফুজ বলে ভাই শুনেন আপনি তো ঘটনাটা শুরু থেকে জানেন। আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করবার জন্য উনাদের রাজি করানোর জন্য সব শুরু করছিলাম। আপনি আরশাদ সাহেব সম্পর্কে আমাকে খবর জোগাড় করে দিছেন, সেই খবর দিয়ে পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। কিন্তু এখন উনারা সেই নিউজ থেকে এমন বিপদে পড়ে যাবে আমি সেইটা আশা করি নি। সোলায়মান শেখ মাহফুজের গলায় গিল্ট ফিলিংস টের পায়। সোলায়মান ভাবে তার অনুমান ঠিক, ছেলেটার দিল পরিষ্কার। সোলায়মান বলে তা আপনি কি চান? মাহফুজ বলে আরশাদ সাহেব কে তো ঠিক উদ্ধার করার আপাতত কোন উপায় নায়। মনে হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপ উনাকে কোথাও নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। তবে উনার বউ কে আমাদের উদ্ধার করতে হবে। সোলায়মান শেখ বলে কাজটা সহজ হবে না। আপনি যাদের কথা বলছেন, এই মুন্সী বা ম্যানেজার এদের সাথে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ঢাকা শহরের বাঘা বাঘা ক্রিমিনালরাও এদের সমজে চলে। পুলিশের বড়কর্তাদের ড্রয়িংরুম পর্যন্ত এদের দৌড়। আর সাথে আছে দুইটা বড় কর্পোরেট হাউজের টাকা। ফলে কাজটা মোটেও সহজ হবে না বরং বেশ ডেঞ্জারাস। আপনার মাথায় কোন প্ল্যান আছে? মাহফুজের মাথায় এই অল্প কয়েক ঘন্টায় কোন প্ল্যান আসে নি। তবে নুসাইবা একটা বুদ্ধি দিয়েছে। নুসাইবার ইংল্যান্ডের ভিসা করানো আছে। সেখানে ওর ভাইরা থাকে। কোনভাবে বাসা থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছাতে পারলে সহজেই ইংল্যান্ড পৌছাতে পারবে। সেখানে যদি কোন ভাবে ইলেকশন পর্যন্ত সময়টা কাটানো যায় তাহলে হয়ত পরে সব ঠিক হয়ে আসবে।
সোলায়মান বলে ভাই ব্যাপারটা আরশাদ সাহেবের বউ যেভাবে ভাবছে এত সহজ না মোটেই। আমার এই ম্যানেজার আর মুন্সীর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই দুই দলের পকেটে ঢাকা শহেরের শত শত পুলিশ। আমার ডিবির কলিগরাও তাদের হয়ে কাজ করে। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে করি। ফলে উনি বাসা থেকে বের হলেই সহজে ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন বলে মনে হয় না। আমি আগেও এমন কয়েকটা কাজ দেখছি। ইমিগ্রেশনে মানুষের পার্সপোর্ট নাম্বার দিয়ে রাখা থাকে। ফলে আপনি পার্সপোর্ট স্ক্যান করা মাত্র এরা সজাগ হয়ে যাবে। এয়ারপোর্টে থাকা নিজেদের লোক দিয়ে হয় আপনাকে কিডন্যাপ করাবে নাহলে নানা অযুহাতে প্লেনে উঠতে দিবে না। দুইটার রেজাল্ট সেইম মানে আপনি ওদের হাতে এরপর আর ভালভবে বন্দী হয়ে যাবেন। আর আমি চাইলেও সরাসরি আপনাদের হেল্প করতে পারব না। আমাকে মুন্সী আর ম্যানেজার দুইজন ভাল করে চিনে, তাদের অনেক লোকও আমাকে চিনে। ফলে এই সিসি ক্যামেরার যুগে কোনখানে আমার চেহারা দেখলে আমার চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করে দিবে। যেখানে আরশাদ সাহেবের মত সরকারী ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসারের পাত্তা নাই সেখানে আমার মত একজন সেকেন্ড ক্লাস ডিবি ইনেসপেক্টর কে হাওয়া করা এদের জন্য ব্যাপার না। আর আরশাদ সাহেব বা উনার বউয়ের মত হাই প্রোফাইল লোকরা পালানোর সময় প্রথম বিদেশের কথা ভাবে এইটা সবাই জানে, ফলে উনাদের জন্য এয়ারপোর্ট বা কোন বর্ডার দিয়ে গোপনে পালানো প্রায় অসম্ভব। আর যে পরিমাণ টাকা এরা ঢালবে সেটার জন্য উনি বিদেশে গেলেও খুব নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। আমি এমন কিছু কেস জানি, যেখানে ভিক্টিমরা ভাবছে দেশ থেকে বের হতে পারলেই বেচে গেছে। পরে বিদেশের মাটিতে টাকা দিয়ে ঐদেশের লোকদের দিয়ে শায়েস্তা করেছে ভিক্টিমদের। মাহফুজ ব্যাপারটা এইভাবে ভেবে দেখে নি।
মাহফুজ বলে তাহলে এখন উপায় কি? সোলায়মান শেখ গাল চুলকায়। গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে উপায়টা আসলে সহজ। আরশাদ সাহেবের বউকে লুকাতে হবে দেশের ভিতর কোথাও। তবে এরজন্য প্রথমে উনারে বাসা থেকে বের করতে হবে। সেই কাজটা আপনি করবেন। আমি ভুলেও সেইদিকে যাব না। কারণ একবার আমার চেহারা দেখলে ওরা এরপর আরশাদ সাহেবের বউ হাওয়া হলে আমার পিছনে লাগবে। আর একবার বের হলে কোথায় কিভাবে উনাকে রাখা যায় সেইটা আমি একটু খোজ করে দেখছি। এরপর মাহফুজ আর সোলায়মান বসে রেস্টুন্টের ভীড়ের মাঝে দেশের দুইটা টপ কর্পোরেট হাউজ আর তাদের ধুরন্দর দুই সাগরেদ কে এড়ানোর খসড়া পরিকল্পনা করতে থাকে।
সোলায়মান গতকাল রাতে মাহফুজের ফোন পেয়ে অবাক হয়। রাত দশটার সময় ফোন দিয়ে দেখা করবার জন্য অনুরোধ করে। সাধারণত একবার বাসায় আসলে যদি অফিসের সিনিয়র বা বস কেউ না ডাক দেয় তাহলে কাজের জন্য বাইরে বের হয় না। তবে মাহফুজের গলায় তাড়া টের পায় আর মাহফুজ বারবার বলতে থাকে খুব জরুরী কাজটা। ফোনে কথা বলতে বলে। মাহফুজ প্রাথমিক ভাবে কয়েকটা কথা বলার পর সোলায়মান শেখ বাসার কাছের এক রেস্টুরেন্টের ঠিকানা বলে। রাত একটা পর্যন্ত খোলা থাকে সেটা। দোকানটা একটা গলির মুখে। বেশ চালু রেস্টুরেন্ট। তবে ঠিক টাকা ওয়ালাদের জায়গা না এটা। বরং বলা যায় একটু ভাল ভাতের হোটেল। যেখানে বেশ ভাল করে বসা যায়। খাওয়ার মান ভাল, টাকাও অপেক্ষাকৃত কম নেয়। তাই সকাল ছয়টায় খোলার পর থেকে রাত একটা পর্যন্ত ভীড়ের উপর থাকে। তবে সোলায়মান কে ডিবির লোক বলে সম্মান করে মালিক। আসলে কোণার একটা কেবিনের মত জায়গা আছে সেটা বসার জন্য ছেড়ে দেয়। আর চারপাশে এত কথা, মানুষ যে কেউ খেয়াল করবে না কে কি বলছে। তাই মাহফুজ কে এখানে আসতে বলে। সময়মত হাজির হয় মাহফুজ। এইজন্য মাহফুজ ছেলেটাকে পছন্দ করে সোলায়মান। মাথায় বুদ্ধি যেমন আছে তেমন করে সময়ের দাম দেয়, আর কথা দিলে কথা রাখে। মাহফুজের মুখে চিন্তার রেখা দেখে সোলায়মান। অবশ্য চিন্তা হবার মত কথা। যা বলল তাতে মনে হচ্ছে ভাল একটা ফ্যাসাদে ফেসে গেছে আরশাদ সাহেব আর তার বউ। মাহফুজ টেবিলে বসে একে একে নুসাইবার কাছ থেকে শোনা সব কথা আর পার্টি অফিসে নেওয়া খোজ থেকে যা জেনেছে সব বলে সোলায়মান কে। সোলায়মান মনযোগ দিয়ে সব শুনে।
নুসাইবার সাথে কথা বলার পর পার্টি অফিসে ফোন দিয়ে খোজ নেয় সানরাইজ গ্রুপ সম্পর্কে আর তাদের প্রতিদন্দ্বী ওশন গ্রুপ সম্পর্কে। দুই কর্পোরেট হাউজের প্রতিদন্দ্বীতা এখন ভোটের মাঠে এসে হাজির হয়েছে। এক আসন থেকেই নির্বাচন করতে চায় দুই দল। সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে আর ওশন গ্রুপের মালিক। এর আগে এক সময় এই আসন থেকে এমপি ছিল ওশন গ্রুপের মালিক। পরে নানা কারণে আর নমিনেশন পায় নাই। এইবার আবার নমিনেশনের জন্য জোর তদবির করছে। তবে ভিতরে ভিতরে নিউজ হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে পাবার চান্স বেশি নমিনেশন। ছেলে রাজনীতির মাঠে নতুন তাই তেমন কোন স্ক্যান্ডাল নেই পিছনে। তার উপর ছেলে পলিটিক্যালি বুদ্ধিমান আছে। মাহফুজের সাথে মাসুদ চাচার ঐখানে কথা হয়েছে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলের। মাহফুজ নিজেও স্বীকার করে বড়লোকের রাজনীতি করতে চাওয়া ছেলেদের তুলনায় এই ছেলে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে। তবে পার্টি অফিস থেকে আরেকটা খবর পেয়েছে মাহফুজ ওশন গ্রুপে দেদারছে টাকা ঢালছে নমিনেশন পাবার জন্য। নুসাইবা থেকে শোনা খবর এর সাথে এই বার দুইয়ে দুইয়ে চার মিলায় মাহফুজ। মুন্সী তাহলে সম্ভবত ওশন গ্রুপের লোক। আর যেভাবে আরশাদের ফাইলপত্রের খোজ করছে তার মানে সানরাইজ গ্রুপের খবর বের করার জন্য লেগেছে এই লোক। আর পার্টি অফিসের খবরে এটাও বুঝে দুই দল মরিয়া নমিনেশন পাবার জন্য। দরকার হলে দুই একটা লাশ ফেলে দেওয়া, মিথ্যা খবর তৈরি করা সব সম্ভব এই দুই দলের পক্ষে। মাহফুজের একটা গিল্ট ফিলিংস কাজ করে কারণ আরশাদের সাথে সানরাইজ গ্রুপের সম্পর্কের খবর ঐ পত্রিকার নিউজ না হলে হয়ত এইভাবে সামনে আসত না। ফলে আরশাদ বিপদে পড়ত না। আর তার থেকে নুসাইবা এত ঝামেলায় ফেসে যেত না। জেনে বুঝে মানুষের বড় কোন ক্ষতি করতে কখনো চায় না মাহফুজ। কিন্তু এইটা বুঝে আরশাদ বিশেষ করে নুসাইবা কে বড় বিপদে ফেলে দিয়েছে সে। এখান থেকে খুব খারাপ কিছু হলেও হয়ে যেতে পারে।
মাহফুজের কাছে পার্টি অফিসের খবর আর নুসাইবার সাথে মুন্সী আর ম্যানেজারের নজরদারির কথা শুনে ভ্রু কুচকায় সোলায়মান শেখ। অনেক বছর ডিবিতে চাকরি করার জন্য ঢাকার রাঘববোয়ালদের অনেক কথায় জানে সে। ম্যানেজার হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপের সব ইলিগ্যাল কাজ সামলায়। এমনকি সোলায়মান শেখের বসরাও বেশ সমীহ করে কথা বলে এই লোকটার সাথে। আর মুন্সী একটা নরকের কীট। কয়েকবার লোকটাকে হেল্প করতে হয়েছে ওর বসদের নির্দেশে। কি জানি কি জাদু আছে মুন্সীর। এই লোক কোন না কোন ভাবে তার প্রায় সব বসদের জাদু করে রেখেছে। ব্লাকমেইলিং এই লোকের পেশা এবং নেশা। সম্ভবত তার বসদের সম্পর্কেও কিছু না কিছু জানা আছে এই লোকের। যেভাবে অল্প কিছু ইনফরমেশন থেকে মানুষের বেডরুমের খবর পর্যন্ত বের করে ফেলে তাতে অবাক হয়েছে সোলায়মান অনেকবার। তবে এই লাইনে কাজ করা সব মানুষের কিছু নীতি থাকে। মুন্সীর কোন নীতি আছে বলে মনে হয় না। মানুষ কে মেন্টালি টরচার করা এই লোক উপভোগ করে ব্লাকমেইলিং করে। খালি টাকার জন্য কাজ করে এইলোক তেমন না বরং এই লোক কাজটা উপভোগ করে। পারত পক্ষে মুন্সী কে এড়িয়ে যেতে চায় সব সময় সোলায়মান শেখ। তবে আজকে যখন মাহফুজ বলল আরশাদ সাহেব আর তার বউ দুইজনের উপর ম্যানেজার আর মুন্সী নজর রাখছে তখন সোলায়মানের মনে হল জলে কুমীর আর ডাংগায় বাঘের উপযুক্ত ব্যবহার সম্ভবত আরশাদ সাহেব আর তার বউয়ের বর্তমান অবস্থা।
সোলায়মান জিজ্ঞেস করে এখন আপনার প্ল্যান কি? মাহফুজ বলে ভাই শুনেন আপনি তো ঘটনাটা শুরু থেকে জানেন। আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করবার জন্য উনাদের রাজি করানোর জন্য সব শুরু করছিলাম। আপনি আরশাদ সাহেব সম্পর্কে আমাকে খবর জোগাড় করে দিছেন, সেই খবর দিয়ে পত্রিকায় নিউজও হয়েছে। কিন্তু এখন উনারা সেই নিউজ থেকে এমন বিপদে পড়ে যাবে আমি সেইটা আশা করি নি। সোলায়মান শেখ মাহফুজের গলায় গিল্ট ফিলিংস টের পায়। সোলায়মান ভাবে তার অনুমান ঠিক, ছেলেটার দিল পরিষ্কার। সোলায়মান বলে তা আপনি কি চান? মাহফুজ বলে আরশাদ সাহেব কে তো ঠিক উদ্ধার করার আপাতত কোন উপায় নায়। মনে হচ্ছে সানরাইজ গ্রুপ উনাকে কোথাও নিজেদের হেফাজতে রেখেছে। তবে উনার বউ কে আমাদের উদ্ধার করতে হবে। সোলায়মান শেখ বলে কাজটা সহজ হবে না। আপনি যাদের কথা বলছেন, এই মুন্সী বা ম্যানেজার এদের সাথে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। ঢাকা শহরের বাঘা বাঘা ক্রিমিনালরাও এদের সমজে চলে। পুলিশের বড়কর্তাদের ড্রয়িংরুম পর্যন্ত এদের দৌড়। আর সাথে আছে দুইটা বড় কর্পোরেট হাউজের টাকা। ফলে কাজটা মোটেও সহজ হবে না বরং বেশ ডেঞ্জারাস। আপনার মাথায় কোন প্ল্যান আছে? মাহফুজের মাথায় এই অল্প কয়েক ঘন্টায় কোন প্ল্যান আসে নি। তবে নুসাইবা একটা বুদ্ধি দিয়েছে। নুসাইবার ইংল্যান্ডের ভিসা করানো আছে। সেখানে ওর ভাইরা থাকে। কোনভাবে বাসা থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌছাতে পারলে সহজেই ইংল্যান্ড পৌছাতে পারবে। সেখানে যদি কোন ভাবে ইলেকশন পর্যন্ত সময়টা কাটানো যায় তাহলে হয়ত পরে সব ঠিক হয়ে আসবে।
সোলায়মান বলে ভাই ব্যাপারটা আরশাদ সাহেবের বউ যেভাবে ভাবছে এত সহজ না মোটেই। আমার এই ম্যানেজার আর মুন্সীর সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এই দুই দলের পকেটে ঢাকা শহেরের শত শত পুলিশ। আমার ডিবির কলিগরাও তাদের হয়ে কাজ করে। আমি নিজেও মাঝে মধ্যে করি। ফলে উনি বাসা থেকে বের হলেই সহজে ইমিগ্রেশন পার হতে পারবেন বলে মনে হয় না। আমি আগেও এমন কয়েকটা কাজ দেখছি। ইমিগ্রেশনে মানুষের পার্সপোর্ট নাম্বার দিয়ে রাখা থাকে। ফলে আপনি পার্সপোর্ট স্ক্যান করা মাত্র এরা সজাগ হয়ে যাবে। এয়ারপোর্টে থাকা নিজেদের লোক দিয়ে হয় আপনাকে কিডন্যাপ করাবে নাহলে নানা অযুহাতে প্লেনে উঠতে দিবে না। দুইটার রেজাল্ট সেইম মানে আপনি ওদের হাতে এরপর আর ভালভবে বন্দী হয়ে যাবেন। আর আমি চাইলেও সরাসরি আপনাদের হেল্প করতে পারব না। আমাকে মুন্সী আর ম্যানেজার দুইজন ভাল করে চিনে, তাদের অনেক লোকও আমাকে চিনে। ফলে এই সিসি ক্যামেরার যুগে কোনখানে আমার চেহারা দেখলে আমার চৌদ্দগুষ্ঠী উদ্ধার করে দিবে। যেখানে আরশাদ সাহেবের মত সরকারী ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসারের পাত্তা নাই সেখানে আমার মত একজন সেকেন্ড ক্লাস ডিবি ইনেসপেক্টর কে হাওয়া করা এদের জন্য ব্যাপার না। আর আরশাদ সাহেব বা উনার বউয়ের মত হাই প্রোফাইল লোকরা পালানোর সময় প্রথম বিদেশের কথা ভাবে এইটা সবাই জানে, ফলে উনাদের জন্য এয়ারপোর্ট বা কোন বর্ডার দিয়ে গোপনে পালানো প্রায় অসম্ভব। আর যে পরিমাণ টাকা এরা ঢালবে সেটার জন্য উনি বিদেশে গেলেও খুব নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন বলে মনে হয় না। আমি এমন কিছু কেস জানি, যেখানে ভিক্টিমরা ভাবছে দেশ থেকে বের হতে পারলেই বেচে গেছে। পরে বিদেশের মাটিতে টাকা দিয়ে ঐদেশের লোকদের দিয়ে শায়েস্তা করেছে ভিক্টিমদের। মাহফুজ ব্যাপারটা এইভাবে ভেবে দেখে নি।
মাহফুজ বলে তাহলে এখন উপায় কি? সোলায়মান শেখ গাল চুলকায়। গাল চুলকাতে চুলকাতে বলে উপায়টা আসলে সহজ। আরশাদ সাহেবের বউকে লুকাতে হবে দেশের ভিতর কোথাও। তবে এরজন্য প্রথমে উনারে বাসা থেকে বের করতে হবে। সেই কাজটা আপনি করবেন। আমি ভুলেও সেইদিকে যাব না। কারণ একবার আমার চেহারা দেখলে ওরা এরপর আরশাদ সাহেবের বউ হাওয়া হলে আমার পিছনে লাগবে। আর একবার বের হলে কোথায় কিভাবে উনাকে রাখা যায় সেইটা আমি একটু খোজ করে দেখছি। এরপর মাহফুজ আর সোলায়মান বসে রেস্টুন্টের ভীড়ের মাঝে দেশের দুইটা টপ কর্পোরেট হাউজ আর তাদের ধুরন্দর দুই সাগরেদ কে এড়ানোর খসড়া পরিকল্পনা করতে থাকে।