17-11-2023, 03:30 PM
(This post was last modified: 17-11-2023, 03:33 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ঙ
মুন্সীর নুসাইবার সাথে অফিসে দেখা করার কারণ খালি নুসাইবার আত্মবিশ্বাস পরখ করা ছিল না। সাথে সাথে দেখতে চেয়েছিল ঠিক কে আছে আরশাদ আর নুসাইবার পিছনে। সানরাইজ গ্রুপ যে আছে এটা প্রায় নিশ্চিত তবে আর নিশ্চিত হবার জন্য এই কাজ করেছিল। তাই ওর একজন লোক নুসাইবার পিছনে নজর রাখছিল সর্বক্ষণ। নুসাইবা অফিস শেষে একটা কালো প্রাডো জিপে উঠেছে এবং সেই প্রাডো জিপ এক সময় নুসাইবা কে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছে। মুন্সী তখন ওর লোককে বলল জিপটা ফলো করতে। জিপটা থেকে কে নামে যেন ছবি তুলে রাখে। দিনশেষে পাওয়া ছবি থেকে মুন্সী বুঝল ওর অনুমান সঠিক। এইব্যাপারে ডিল করার জন্য ম্যানেজার সরাসরি এসেছে। ম্যানেজার হল সানরাইজ গ্রুপের সবচেয়ে বড় এসেট গুলার একটা। সব অফ দ্যা বুক কাজ ডীল করে। নুসাইবার কাছে সরাসরি এসেছে মানে সানরাইজ গ্রুপের বড় স্বার্থ জড়িতে আরশাদের সাথে। তার মানে ওর অনুমান ঠিক। আরশাদ থেকেই সানরাইজ গ্রুপের আসল খবর বের করা যাবে যেটা নির্বাচনের আগে একটা স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে পারে। তবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হল কিভাবে আরশাদ পর্যন্ত পৌছানো যায় অথবা আরশাদ যা জানে সেই খবরটা জানা যায়।
মুন্সীর এর মধ্যে আরশাদ সম্পর্কে আর খোজ খবর বের করার চেষ্টা করল। লোকটা যেন একদম হাওয়া হয়ে গেছে। কোন নাম নিশানাই নাই। মুন্সীর একবার মনে হল ট্যাক্স অফিসে ওর সোর্স দিয়ে কি সানরাইজ গ্রুপের ট্যাক্স ভ্যাটের ফাইলের খোজ নিবে কিনা। তবে সেখানেও কথা বলে বুঝল এইসব ফাইল বড় জটিল জিনিস। যার আগে থেকে আইডিয়া নাই তার পক্ষে হঠাত করে সেই ফাইল থেকে অনিয়ম বের করা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে সময় কমে আসছে। নির্বাচনের নমিনেশন ফাইনাল হবার সময় চলে আসছে দ্রুত কাছে। ওশন গ্রুপ মুন্সীর উপর চাপ বাড়াচ্ছে। এইবার এই কাজের জন্য অস্বাভাবিক একটা ফি দিয়েছে ওকে। এর আগে কোন কাজের জন্য এত টাকা অফার করে নি কেউ। মুন্সী তাই খুব সিরিয়াস। ওর প্রেসটিজের ব্যাপার। তবে সমস্যা হল যেইসব খবর বের করতে পারছে সব গুজব আকারে। এইসব খবর দিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট করিয়ে কিছু করানো যাবে না। দরকার হার্ডকোর প্রুফ। যেটা পত্রিকায় বের হলে বড় নিউজ হবে। দলের নমিনেশন পাবার চান্স হারাবে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে। মুন্সীর মনে হল আসলে এখন মূল চাবি আছে নুসাইবার কাছে। কারণ নুসাইবার সাথে সরাসরি ম্যানেজার দেখা করায় মনে হল নুসাইবা বেশ গূরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার। হয়ত অনেক কিছু জানে অথবা অন্তত কিছু হিন্টস দিতে পারবে। তবে সমস্যা হল নতুন করে দুইটা লোক দিনরাত ২৪ ঘন্টা নুসাইবা কে পাহারা দিচ্ছে। প্রফেশনাল লোক। তাই এদের নজর এড়িয়ে সরাসরি কিছু করার উপায় নেই। আবার অফিসে গিয়ে দেখা করা যায় নুসাইবা কে তবে এতেও খুব কাজ হবে না বলে মনে হয়। কারণ এখন একটু আসল খেলা দেখানোর সময় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে সেটা করা সম্ভব না। চোখ বন্ধ করতেই নুসাইবার চেহারাটা আর ফিগার ভেসে উঠল চোখে। দারুণ সুন্দরী। টেবিলে বসে থাকায় সরাসরি ফিগারের সবটুকু চেক করা যায় নি তবে যতটুকু চোখে পড়েছে তাতে বুঝেছে লোভনীয়। ব্লাকমেইল ব্যাপারটা উপভোগ করে মুন্সী। আর এমন সুন্দরী কাউকে ব্লাকমেইল করার আনন্দ মুন্সী বলে বুঝাতে পারবে না। টেবিলের উপর যখন হাত রেখে সামনে ঝুকে বসছিল তখন টাইট কামিজে দুধ গুলা যেভাবে ফুটে উঠছিল সেটা একবারে জিহবায় পানি এনে দিচ্ছিল। এমন দুধের মাঝে মুখ গুজে দিতে দারুন লাগে মুন্সীর। মুন্সীর মাঝে মাঝে মনে হয় দুধ হল মেয়েদের আসল সৌন্দর্য। কী এক সৃষ্টি। ছোট বাচ্চাদের জন্য অমৃত সুধা তৈরি করে আর ওর মত বড় বাচ্চাদের বশ মানিয়ে রাখে। নুসাইবার শরীর যে বয়সের সাথে একটু ভারীক্কি আসছে সেটা যেন আর আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে নুসাইবার। এমনিতে কচি মেয়ে পছন্দ মুন্সীর। তবে নুসাইবার মত শরীর যার তার জন্য বয়স কোন ব্যাপার না। মুন্সীর মনে হয় আরশাদ লোকটা শালা হারামি। ঘরে এমন একটা বউ রেখে বাইরে ফষ্টি নষ্টি করে। আবার মনে মনে খুশি হয়। একারণেই না এই সুযোগটা পেল। মুন্সীর মনে হল নুসাইবা নিজেও অত সাধু না শিওর। আর ভাল করে খোজ নিলে দেখা যাবে নিজেই দুই একটা প্রেম করে। এর আগেও কাজ করার সময় দেখেছে। যেখানে জামাই পরকীয়া করে বাইরে তখন বউ যদি জামাই এর সাথে কিছু না বলে থাকে তার মানে বউ নিজেও বাইরে কিছু একটা করছে। তাই মুন্সী মনে মনে বলে এর সাথে খেলে জমবে ভাল। নিজের জামাইরে বাচাইতে চাচ্ছে ভাল কথা। তবে এর জন্য দাম দিতে হবে। তবে মুন্সীর আসল লক্ষ্য খবর বের করা। তাই এই সুযোগে দুইটাই হবে। খবর বের করা হবে আর নুসাইবার খবর নেওয়া হবে। আর এইসব করতে হবে ম্যানেজারের লোকদের নজর এড়িয়ে। মুন্সীর বুকে উত্তেজনা টের পায়। এমন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে। এটাই ওর কাছে ওর কাজের বড় এট্রাকশন।
নুসাইবা গত দুই দিন ধরে একটা চাপা অস্বস্তিতে আছে। একদিকে মুন্সীর করে যাওয়া হাসি মুখের থ্রেট। আবার ম্যানেজার সার্বক্ষনিক ভাবে দুইজন লোক রেখে দিয়েছে ওর পিছনে নিরাপত্তার জন্য। প্রথমে ব্যাপারটা স্বস্তির মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এক ধরনের হাসফাস ভাব। বাসার বাইরে কোথাও যেতে পারছে না। মনে হচ্ছে একপ্রকার নজরবন্দী হয়ে আছে। আবার মুন্সীর ভয়ে ম্যানেজার কে কিছু বলতেও পারছে এইলোক সরানোর জন্য। বাসার নিচে বিল্ডিং এর অপজিটে সার্বক্ষণিক একটা মাইক্রো পার্ক করা থাকে। ম্যানেজারের লোকজন কিভাবে যেন বিল্ডিং এর সিকিউরিটি গার্ডদের ম্যানেজ করে নিয়েছে। তাই তারা কিছু বলে না। নুসাইবার কিছু দরকার হলে বাসার নিচ থেকে ম্যানেজারের লোকরাই জিনসপত্র এনে দিচ্ছে। আর সকালে অফিস যাওয়া আর অফিস থেকে আসার সময় ওর সাথেই গাড়িতে থাকে। প্রতিদিন রাতের বেলা দশটার সময় ওদের একজন এসে বাসায় কলিংবেল দেয়। এরপর জিজ্ঞেস করে সব ঠিক আছে কিনা। তারপর উত্তর শুনে চলে যায়। এটাই রুটিন। আজকেও একটু আগে দশটার সময় কলিংবেল দিয়ে জিজ্ঞেস করে গেছে সব ঠিক আছে কিনা। তাই সাড়ে দশটার সময় আবার কলিংবেল বাজায় অবাক হল। আবার কি জন্য কলিংবেল দিচ্ছে। দরজার পিপহোল দিয়ে বাইরে তাকাতে দেখে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের জামাকাপড় পড়া, মাথায় ক্যাপ দেওয়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। নুসাইবা অবাক হল। এইরাতে এইটা আবার কে? আর ও তো খাবার অর্ডার দেয় নি। ওর মনে হল হয়ত ভুলে পাশের বাশের জায়গায় ওর বাসায় কলিংবেল দিয়ে দিয়েছে। নুসাইবা দরজার ভিতর থেকে বলল কে? ঐপাশ থেকে উত্তর আসল ম্যাডাম ফুড ডেলিভারি। নুসাইবা বলল আমি কোন ফুড অর্ডার করি নি। নুসাইবা বলল আপনি ভুল ফ্ল্যাটে আসছেন। ডেলিভারি ম্যান উত্তর দিল নাহ ম্যাডাম এপে তো এই ঠিকানাই দেখাচ্ছে। নুসাইবা বলল কোন ফ্ল্যাট? উত্তর এল বি ৪। এটা ওর ফ্ল্যাটের নাম্বার। একটু অবাক হল নুসাইবা। কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ও, এটা আবার কে পাঠাল? কি আপদ।
তাই দরজা খুলে যখন বলতে যাবে যে ও কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ঠিক তখন দরজা খোলার পর দেখে ওর সামনে ফুড ডেলিভারি বয়ের জামা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মুন্সী। মুখে সেই হাসি। আতংকে জমে গেল নুসাইবা। মুন্সী বলল কি ম্যাডাম ভিতরে আসতে বলবেন না? নুসাইবা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। নুসাইবা তখনো ঘোরে। মুন্সী নুসাইবা কে বলল ভিতরে আসেন ম্যাডাম। নুসাইবা কি করবে বুঝতে পারল না। হাতে থাকা খাবারের প্যাকেটটা নুসাইবার হাতে দিল। নুসাইবা প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বলল এইটা কি? মুন্সী বলল ডিনার ম্যাডাম। আপনি নাকি বিরিয়ানী পছন্দ করেন। এইটা হাজির বিরিয়ানী। নুসাইবা কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাসার দরজা বন্ধ করে দিল। নুসাইবা চমকে গেছে। ওর পছন্দ যে হাজীর বিরায়িনী এইটা এই লোক জানল কিভাবে। নুসাইবা দ্রুত নিজের সেন্স ফিরে পাচ্ছে। বুঝতে পারল ও একটা ফাদে আটকা পড়ে গেছে। দ্রুত কাউকে জানাতে হবে। ম্যানেজারের কথা মত ওর ফোনে স্পিড ডায়ালে ম্যানেজারের নাম্বার সেভ করা আছে। একবার রিং দিলেই ম্যানেজার নিচের ছেলে আর পুলিশ পাঠাবে। মুন্সী যেন ওর মনের কথা পড়ে ফেলেছে সংগে সংগে। একটু হেসে বলল কি ম্যাডাম ফোন খুজছেন ম্যানেজার সাহেব কে ফোন দিবেন বলে? নুসাইবার গলা শুকিয়ে গেল। নুসাইবা ওর ফোন ডাইনিং টেবিলের উপর রেখেছে। মনে মনে হিসাব করছে কত দ্রুত সেখানে পৌছানো যায়। তাই বলে না না, খাবারটা টেবিলের উপর রেখে দিই। মানুষ অনেক কিছুতে ভয় পেলে সেদিক না তাকানোর চেষ্টা করে যাতে নিজের মন কে বুঝ দেওয়া যায় কিছুই ঘটে নি। নুসাইবা তেমন করে মুন্সীর দিকে না তাকিয়ে টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। ওর মনে একটাই ইচ্ছা তখন যেভাবে হোক মুন্সীর নজর এড়িয়ে স্পীড ডায়ালে একবার কল করা।
নুসাইবা দ্রুত ডাইনিং টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। মোবাইলটা টেবিলের একদম অন্যপ্রান্তে রাখা। জোরে ছুটে গিয়ে মোবাইলটা তোলার আগেই পিছন থেকে মুন্সী ডাক দেয়, ম্যাডাম সাবধান। ফোনটা আমাকে দিয়ে দিন। নুসাইবা মুন্সীর কথা না শুনে ফোনটা টেবিল থেকে তুলে। ফোন লক হয়ে আছে। ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে লক খোলার সময় পিছন থেকে আরেকটা ডাক দেয় মুন্সী জোরে ধমকের সুরে, এদিক তাকান। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই নুসাইবা যেন আতংকে জমে গেল। মুন্সীর হাতে একটা পিস্তল। ওর দিকে তাক করা। একটু আগে নুসাইবা মুন্সী কে দেখে আতংকে জমে গিয়েছিল। কিন্তু মুন্সীর হাতে পিস্তল যেন এখন সেই আতংক কে তুচ্ছ করে দিয়েছে। নুসাইবার চেহারার আতংক মুন্সীর বুকে একটা আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দেয়। ওর প্রফেশনের সবচেয়ে ফেভারিট জায়গা হল এইটা। যখন শিকার টের পায় সে কোণাঠাসা হয়ে গেছে, আর সেই আতংক মুখে ফুটে উঠে। তবে আরেকটু জমে যদি শিকার শেষ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতে প্রতিরোধটা ভেংগে শিকার পোষ মানানোর মজা আর অনন্য। অন্যদিকে নুসাইবার মনে হয় এতদিন ও যতবার ভেবেছে ভয় পেয়েছে সব ভয় বুঝি এখন তুচ্ছ। ওর দিকে তাক করা পিস্তল যেন ওকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এনে দাড় করিয়েছে। ওর চোখ বড় বড় করে হাতের পিস্তল দেখতে থাকে। ফোনের লক খুলে কল করার কথা যেন ভুলে গেছে। মুন্সী বলে ম্যাডাম ফোন করার ভুল করবেন না। তাহলে ভুল করে পিস্তল থেকে একটা দুইটা বুলেট বের হয়ে যেতে পারে। কথাটা বলার সাথে সাথেই নুসাইবার গলায় পর পর দুইবার ঢোক গিলার চিহ্ন দেখে। মুন্সীর মুখের হাসি আর বিস্তৃত হয়। ঠিক যেখানে শিকার কে আটকাতে চেয়েছে সেখানেই আটকেছে। এক পা এক পা করে আগায় মুন্সী। আর পাথরের মত জমে থাকে নুসাইবা। আগাতে আগাতে মুন্সী বলে কত কষ্ট করে আমি আসলাম আর আপনি ম্যানেজার সাহেব কে জানাচ্ছেন? গায়ের ফুড পান্ডার ডেলিভারি জামাটা দেখিয়ে বলল এইটা জোগাড় করতে এক ডেলিভারি বয় কে দুই হাজার টাকা দিতে হইছে জানেন? আপনার নাকি হাজীর বিরিয়ানী প্রিয়। ওরা রাত আটটার পর কোন ফুড ডেলিভারি দেয় না। সেইটা এই রাত সাড়ে দশটায় যোগাড় করে আনতে কত ঝামেলা করতে হইছে চিন্তা করতে পারেন? আপনি আমার এইসব এফোর্টের মূল্য দিবেন না? এই বলতে বলতে একদম নুসাইবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুন্সী হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দেয়। বলে আপাতত আমার কাছে থাকুক, পরে যাবার সময় দিয়ে যাব। আর এত রাতে আপনাকে কে ফোন করবে বলুন? আরশাদ সাহেব তো আর ঢাকায় নেই, দেশের মধ্যে আছে কিনা কে জানে? এই বলেই নুসাইবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলে, আচ্ছা আরশাদ সাহেব কই আছে বলেন তো?
মুন্সীর নুসাইবার সাথে অফিসে দেখা করার কারণ খালি নুসাইবার আত্মবিশ্বাস পরখ করা ছিল না। সাথে সাথে দেখতে চেয়েছিল ঠিক কে আছে আরশাদ আর নুসাইবার পিছনে। সানরাইজ গ্রুপ যে আছে এটা প্রায় নিশ্চিত তবে আর নিশ্চিত হবার জন্য এই কাজ করেছিল। তাই ওর একজন লোক নুসাইবার পিছনে নজর রাখছিল সর্বক্ষণ। নুসাইবা অফিস শেষে একটা কালো প্রাডো জিপে উঠেছে এবং সেই প্রাডো জিপ এক সময় নুসাইবা কে ওর বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েছে। মুন্সী তখন ওর লোককে বলল জিপটা ফলো করতে। জিপটা থেকে কে নামে যেন ছবি তুলে রাখে। দিনশেষে পাওয়া ছবি থেকে মুন্সী বুঝল ওর অনুমান সঠিক। এইব্যাপারে ডিল করার জন্য ম্যানেজার সরাসরি এসেছে। ম্যানেজার হল সানরাইজ গ্রুপের সবচেয়ে বড় এসেট গুলার একটা। সব অফ দ্যা বুক কাজ ডীল করে। নুসাইবার কাছে সরাসরি এসেছে মানে সানরাইজ গ্রুপের বড় স্বার্থ জড়িতে আরশাদের সাথে। তার মানে ওর অনুমান ঠিক। আরশাদ থেকেই সানরাইজ গ্রুপের আসল খবর বের করা যাবে যেটা নির্বাচনের আগে একটা স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে পারে। তবে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হল কিভাবে আরশাদ পর্যন্ত পৌছানো যায় অথবা আরশাদ যা জানে সেই খবরটা জানা যায়।
মুন্সীর এর মধ্যে আরশাদ সম্পর্কে আর খোজ খবর বের করার চেষ্টা করল। লোকটা যেন একদম হাওয়া হয়ে গেছে। কোন নাম নিশানাই নাই। মুন্সীর একবার মনে হল ট্যাক্স অফিসে ওর সোর্স দিয়ে কি সানরাইজ গ্রুপের ট্যাক্স ভ্যাটের ফাইলের খোজ নিবে কিনা। তবে সেখানেও কথা বলে বুঝল এইসব ফাইল বড় জটিল জিনিস। যার আগে থেকে আইডিয়া নাই তার পক্ষে হঠাত করে সেই ফাইল থেকে অনিয়ম বের করা কঠিন এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এদিকে সময় কমে আসছে। নির্বাচনের নমিনেশন ফাইনাল হবার সময় চলে আসছে দ্রুত কাছে। ওশন গ্রুপ মুন্সীর উপর চাপ বাড়াচ্ছে। এইবার এই কাজের জন্য অস্বাভাবিক একটা ফি দিয়েছে ওকে। এর আগে কোন কাজের জন্য এত টাকা অফার করে নি কেউ। মুন্সী তাই খুব সিরিয়াস। ওর প্রেসটিজের ব্যাপার। তবে সমস্যা হল যেইসব খবর বের করতে পারছে সব গুজব আকারে। এইসব খবর দিয়ে পত্রিকার রিপোর্ট করিয়ে কিছু করানো যাবে না। দরকার হার্ডকোর প্রুফ। যেটা পত্রিকায় বের হলে বড় নিউজ হবে। দলের নমিনেশন পাবার চান্স হারাবে সানরাইজ গ্রুপের মালিকের ছেলে। মুন্সীর মনে হল আসলে এখন মূল চাবি আছে নুসাইবার কাছে। কারণ নুসাইবার সাথে সরাসরি ম্যানেজার দেখা করায় মনে হল নুসাইবা বেশ গূরুত্বপূর্ণ ক্যারেক্টার। হয়ত অনেক কিছু জানে অথবা অন্তত কিছু হিন্টস দিতে পারবে। তবে সমস্যা হল নতুন করে দুইটা লোক দিনরাত ২৪ ঘন্টা নুসাইবা কে পাহারা দিচ্ছে। প্রফেশনাল লোক। তাই এদের নজর এড়িয়ে সরাসরি কিছু করার উপায় নেই। আবার অফিসে গিয়ে দেখা করা যায় নুসাইবা কে তবে এতেও খুব কাজ হবে না বলে মনে হয়। কারণ এখন একটু আসল খেলা দেখানোর সময় এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে সেটা করা সম্ভব না। চোখ বন্ধ করতেই নুসাইবার চেহারাটা আর ফিগার ভেসে উঠল চোখে। দারুণ সুন্দরী। টেবিলে বসে থাকায় সরাসরি ফিগারের সবটুকু চেক করা যায় নি তবে যতটুকু চোখে পড়েছে তাতে বুঝেছে লোভনীয়। ব্লাকমেইল ব্যাপারটা উপভোগ করে মুন্সী। আর এমন সুন্দরী কাউকে ব্লাকমেইল করার আনন্দ মুন্সী বলে বুঝাতে পারবে না। টেবিলের উপর যখন হাত রেখে সামনে ঝুকে বসছিল তখন টাইট কামিজে দুধ গুলা যেভাবে ফুটে উঠছিল সেটা একবারে জিহবায় পানি এনে দিচ্ছিল। এমন দুধের মাঝে মুখ গুজে দিতে দারুন লাগে মুন্সীর। মুন্সীর মাঝে মাঝে মনে হয় দুধ হল মেয়েদের আসল সৌন্দর্য। কী এক সৃষ্টি। ছোট বাচ্চাদের জন্য অমৃত সুধা তৈরি করে আর ওর মত বড় বাচ্চাদের বশ মানিয়ে রাখে। নুসাইবার শরীর যে বয়সের সাথে একটু ভারীক্কি আসছে সেটা যেন আর আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে নুসাইবার। এমনিতে কচি মেয়ে পছন্দ মুন্সীর। তবে নুসাইবার মত শরীর যার তার জন্য বয়স কোন ব্যাপার না। মুন্সীর মনে হয় আরশাদ লোকটা শালা হারামি। ঘরে এমন একটা বউ রেখে বাইরে ফষ্টি নষ্টি করে। আবার মনে মনে খুশি হয়। একারণেই না এই সুযোগটা পেল। মুন্সীর মনে হল নুসাইবা নিজেও অত সাধু না শিওর। আর ভাল করে খোজ নিলে দেখা যাবে নিজেই দুই একটা প্রেম করে। এর আগেও কাজ করার সময় দেখেছে। যেখানে জামাই পরকীয়া করে বাইরে তখন বউ যদি জামাই এর সাথে কিছু না বলে থাকে তার মানে বউ নিজেও বাইরে কিছু একটা করছে। তাই মুন্সী মনে মনে বলে এর সাথে খেলে জমবে ভাল। নিজের জামাইরে বাচাইতে চাচ্ছে ভাল কথা। তবে এর জন্য দাম দিতে হবে। তবে মুন্সীর আসল লক্ষ্য খবর বের করা। তাই এই সুযোগে দুইটাই হবে। খবর বের করা হবে আর নুসাইবার খবর নেওয়া হবে। আর এইসব করতে হবে ম্যানেজারের লোকদের নজর এড়িয়ে। মুন্সীর বুকে উত্তেজনা টের পায়। এমন চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে। এটাই ওর কাছে ওর কাজের বড় এট্রাকশন।
নুসাইবা গত দুই দিন ধরে একটা চাপা অস্বস্তিতে আছে। একদিকে মুন্সীর করে যাওয়া হাসি মুখের থ্রেট। আবার ম্যানেজার সার্বক্ষনিক ভাবে দুইজন লোক রেখে দিয়েছে ওর পিছনে নিরাপত্তার জন্য। প্রথমে ব্যাপারটা স্বস্তির মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এক ধরনের হাসফাস ভাব। বাসার বাইরে কোথাও যেতে পারছে না। মনে হচ্ছে একপ্রকার নজরবন্দী হয়ে আছে। আবার মুন্সীর ভয়ে ম্যানেজার কে কিছু বলতেও পারছে এইলোক সরানোর জন্য। বাসার নিচে বিল্ডিং এর অপজিটে সার্বক্ষণিক একটা মাইক্রো পার্ক করা থাকে। ম্যানেজারের লোকজন কিভাবে যেন বিল্ডিং এর সিকিউরিটি গার্ডদের ম্যানেজ করে নিয়েছে। তাই তারা কিছু বলে না। নুসাইবার কিছু দরকার হলে বাসার নিচ থেকে ম্যানেজারের লোকরাই জিনসপত্র এনে দিচ্ছে। আর সকালে অফিস যাওয়া আর অফিস থেকে আসার সময় ওর সাথেই গাড়িতে থাকে। প্রতিদিন রাতের বেলা দশটার সময় ওদের একজন এসে বাসায় কলিংবেল দেয়। এরপর জিজ্ঞেস করে সব ঠিক আছে কিনা। তারপর উত্তর শুনে চলে যায়। এটাই রুটিন। আজকেও একটু আগে দশটার সময় কলিংবেল দিয়ে জিজ্ঞেস করে গেছে সব ঠিক আছে কিনা। তাই সাড়ে দশটার সময় আবার কলিংবেল বাজায় অবাক হল। আবার কি জন্য কলিংবেল দিচ্ছে। দরজার পিপহোল দিয়ে বাইরে তাকাতে দেখে ফুড ডেলিভারি সার্ভিসের জামাকাপড় পড়া, মাথায় ক্যাপ দেওয়া একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। নুসাইবা অবাক হল। এইরাতে এইটা আবার কে? আর ও তো খাবার অর্ডার দেয় নি। ওর মনে হল হয়ত ভুলে পাশের বাশের জায়গায় ওর বাসায় কলিংবেল দিয়ে দিয়েছে। নুসাইবা দরজার ভিতর থেকে বলল কে? ঐপাশ থেকে উত্তর আসল ম্যাডাম ফুড ডেলিভারি। নুসাইবা বলল আমি কোন ফুড অর্ডার করি নি। নুসাইবা বলল আপনি ভুল ফ্ল্যাটে আসছেন। ডেলিভারি ম্যান উত্তর দিল নাহ ম্যাডাম এপে তো এই ঠিকানাই দেখাচ্ছে। নুসাইবা বলল কোন ফ্ল্যাট? উত্তর এল বি ৪। এটা ওর ফ্ল্যাটের নাম্বার। একটু অবাক হল নুসাইবা। কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ও, এটা আবার কে পাঠাল? কি আপদ।
তাই দরজা খুলে যখন বলতে যাবে যে ও কোন খাবার অর্ডার দেয় নি ঠিক তখন দরজা খোলার পর দেখে ওর সামনে ফুড ডেলিভারি বয়ের জামা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে মুন্সী। মুখে সেই হাসি। আতংকে জমে গেল নুসাইবা। মুন্সী বলল কি ম্যাডাম ভিতরে আসতে বলবেন না? নুসাইবা কে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ওকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল। নুসাইবা তখনো ঘোরে। মুন্সী নুসাইবা কে বলল ভিতরে আসেন ম্যাডাম। নুসাইবা কি করবে বুঝতে পারল না। হাতে থাকা খাবারের প্যাকেটটা নুসাইবার হাতে দিল। নুসাইবা প্রায় তোতলাতে তোতলাতে বলল এইটা কি? মুন্সী বলল ডিনার ম্যাডাম। আপনি নাকি বিরিয়ানী পছন্দ করেন। এইটা হাজির বিরিয়ানী। নুসাইবা কে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বাসার দরজা বন্ধ করে দিল। নুসাইবা চমকে গেছে। ওর পছন্দ যে হাজীর বিরায়িনী এইটা এই লোক জানল কিভাবে। নুসাইবা দ্রুত নিজের সেন্স ফিরে পাচ্ছে। বুঝতে পারল ও একটা ফাদে আটকা পড়ে গেছে। দ্রুত কাউকে জানাতে হবে। ম্যানেজারের কথা মত ওর ফোনে স্পিড ডায়ালে ম্যানেজারের নাম্বার সেভ করা আছে। একবার রিং দিলেই ম্যানেজার নিচের ছেলে আর পুলিশ পাঠাবে। মুন্সী যেন ওর মনের কথা পড়ে ফেলেছে সংগে সংগে। একটু হেসে বলল কি ম্যাডাম ফোন খুজছেন ম্যানেজার সাহেব কে ফোন দিবেন বলে? নুসাইবার গলা শুকিয়ে গেল। নুসাইবা ওর ফোন ডাইনিং টেবিলের উপর রেখেছে। মনে মনে হিসাব করছে কত দ্রুত সেখানে পৌছানো যায়। তাই বলে না না, খাবারটা টেবিলের উপর রেখে দিই। মানুষ অনেক কিছুতে ভয় পেলে সেদিক না তাকানোর চেষ্টা করে যাতে নিজের মন কে বুঝ দেওয়া যায় কিছুই ঘটে নি। নুসাইবা তেমন করে মুন্সীর দিকে না তাকিয়ে টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। ওর মনে একটাই ইচ্ছা তখন যেভাবে হোক মুন্সীর নজর এড়িয়ে স্পীড ডায়ালে একবার কল করা।
নুসাইবা দ্রুত ডাইনিং টেবিলের দিকে হেটে যেতে থাকে। মোবাইলটা টেবিলের একদম অন্যপ্রান্তে রাখা। জোরে ছুটে গিয়ে মোবাইলটা তোলার আগেই পিছন থেকে মুন্সী ডাক দেয়, ম্যাডাম সাবধান। ফোনটা আমাকে দিয়ে দিন। নুসাইবা মুন্সীর কথা না শুনে ফোনটা টেবিল থেকে তুলে। ফোন লক হয়ে আছে। ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে লক খোলার সময় পিছন থেকে আরেকটা ডাক দেয় মুন্সী জোরে ধমকের সুরে, এদিক তাকান। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই নুসাইবা যেন আতংকে জমে গেল। মুন্সীর হাতে একটা পিস্তল। ওর দিকে তাক করা। একটু আগে নুসাইবা মুন্সী কে দেখে আতংকে জমে গিয়েছিল। কিন্তু মুন্সীর হাতে পিস্তল যেন এখন সেই আতংক কে তুচ্ছ করে দিয়েছে। নুসাইবার চেহারার আতংক মুন্সীর বুকে একটা আনন্দের ঢেউ খেলিয়ে দেয়। ওর প্রফেশনের সবচেয়ে ফেভারিট জায়গা হল এইটা। যখন শিকার টের পায় সে কোণাঠাসা হয়ে গেছে, আর সেই আতংক মুখে ফুটে উঠে। তবে আরেকটু জমে যদি শিকার শেষ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। তাতে প্রতিরোধটা ভেংগে শিকার পোষ মানানোর মজা আর অনন্য। অন্যদিকে নুসাইবার মনে হয় এতদিন ও যতবার ভেবেছে ভয় পেয়েছে সব ভয় বুঝি এখন তুচ্ছ। ওর দিকে তাক করা পিস্তল যেন ওকে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এনে দাড় করিয়েছে। ওর চোখ বড় বড় করে হাতের পিস্তল দেখতে থাকে। ফোনের লক খুলে কল করার কথা যেন ভুলে গেছে। মুন্সী বলে ম্যাডাম ফোন করার ভুল করবেন না। তাহলে ভুল করে পিস্তল থেকে একটা দুইটা বুলেট বের হয়ে যেতে পারে। কথাটা বলার সাথে সাথেই নুসাইবার গলায় পর পর দুইবার ঢোক গিলার চিহ্ন দেখে। মুন্সীর মুখের হাসি আর বিস্তৃত হয়। ঠিক যেখানে শিকার কে আটকাতে চেয়েছে সেখানেই আটকেছে। এক পা এক পা করে আগায় মুন্সী। আর পাথরের মত জমে থাকে নুসাইবা। আগাতে আগাতে মুন্সী বলে কত কষ্ট করে আমি আসলাম আর আপনি ম্যানেজার সাহেব কে জানাচ্ছেন? গায়ের ফুড পান্ডার ডেলিভারি জামাটা দেখিয়ে বলল এইটা জোগাড় করতে এক ডেলিভারি বয় কে দুই হাজার টাকা দিতে হইছে জানেন? আপনার নাকি হাজীর বিরিয়ানী প্রিয়। ওরা রাত আটটার পর কোন ফুড ডেলিভারি দেয় না। সেইটা এই রাত সাড়ে দশটায় যোগাড় করে আনতে কত ঝামেলা করতে হইছে চিন্তা করতে পারেন? আপনি আমার এইসব এফোর্টের মূল্য দিবেন না? এই বলতে বলতে একদম নুসাইবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মুন্সী হাত বাড়িয়ে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দেয়। বলে আপাতত আমার কাছে থাকুক, পরে যাবার সময় দিয়ে যাব। আর এত রাতে আপনাকে কে ফোন করবে বলুন? আরশাদ সাহেব তো আর ঢাকায় নেই, দেশের মধ্যে আছে কিনা কে জানে? এই বলেই নুসাইবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলে, আচ্ছা আরশাদ সাহেব কই আছে বলেন তো?