30-08-2023, 03:04 PM
(This post was last modified: 30-08-2023, 03:11 PM by কাদের. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আসলে ঠিক এই সময় মাহফুজ ফ্লোরার ইন্টেমেসি কোচিং এর কথা জানে না। ফ্লোরা যেহেতু তার এই ইন্টেমেসি কোচিং এর কথা কোথাও বিজ্ঞাপন দেন না বা বলে বেড়ান না তাই খুব কম লোক জানে। তার বেশির ভাগ কাস্টমার হচ্ছে আগের কোন কাপল যারা থেরাপি নিয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনে আসা। মাহফুজ তাই ফ্লোরার সাথে কথা বলতে চাইছিল যখন তখন তার মাথায় এইসব ইন্টেমেসি কোচিং সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। মাহফুজ ভাবছিল ফ্লোরার সাথে কথা বলার জন্য একটা ছুতা দরকার। মাহফুজ একটা ব্যবসা খুবলে সেই রকম কিছু একটা বলে কথা চালাবে এবং একটা উপায় খুজবে যাতে নুসাইবার সাথে ফ্লোরার দেখা করিয়ে দেওয়া যায়। অন্যদিকে ফ্লোরা দেখেছে যারা ওর কাছে ইন্টেমেসি কাউন্সিলিং নিতে আসে তারা বেশির ভাগ সময় সাই থাকে। লাজুক ভাবে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। বা কার রেফারেন্সে সরাসরি আসলে মূল কথা তুলতে লজ্জা পায়। মাহফুজ কে তাই পাশে এসে দাড়াতে দেখে এবং কথা বলতে চায় এটা দেখে ভেবে নেয় নতুন কোন কাস্টমার ইন্টেমিসি কোচিং এর জন্য। এরা সাধারণত দোকানে মানুষ বা সেলস গার্ল বয়দের মাঝে কথা বলতে লজ্জা পাবে। তাই ফ্লোরা বলে আসুন আমার সাথে। আমার অফিস পিছন দিকটায় মাহফুজ তাই হেটে হেটে ফ্লোরার পিছন পিছন তার অফিসের দিকে যায়। মাহফুজ একটু অবাক হয় একবার বলতেই এমন ভাবে অফিসে নিয়ে যাচ্ছে কথা বলার জন্য সেটা ভেবে। অবশ্য দুই জনের কেউ জানে না কে কি ভেবে অফিসে যাচ্ছে।
মাহফুজ অফিসে ঢুকে। সুন্দর করে ডেকরেট করা একটা অফিস। অনেক বড়। এক দিকে জানালার সামনে বড় একটা সেক্রেটারিয়ে টেবিল। টেবিল এর সামনে দুইটা চেয়ার। আর রুমের অন্য সাইডে সোফা। তিন সেট। দুই সেট মুখোমুখি। এই দুই সেটেই দুই জন করে বসতে পারবে। আর একটা সোফা ওয়ান সেট, একজন বসতে পারবে। ওয়ান সেট সোফার পাশে একটা সাইড টেবিল রাখা। সোফা এক সাইডে অন্য সাইডে দেয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। দেয়ালে বেশ কয়েকটা ছবি আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ দামী। জানালার পাশে দুইটা ছোট ছোট টব ঝুলছে। টব গুলো থেকে মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় একটা লতা গাছ দেয়াল বেয়ে নিচে নেমে এসেছে। বেশ এরিস্ট্রোক্রেটিক সাজ সজ্জা অফিসটার। মাহফুজ ভাবে ফ্লোরা ওকে নিয়ে টেবিলে বসাবে। কিন্তু ফ্লোরা ওকে নিয়ে একটা টু সিটার সোফায় বসতে বলে নিজে ওয়ান সিটার সোফায় বসে। আসলে ফ্লোরা ভাবছে মাহফুজ কাউন্সিলিং নিতে এসেছে। আর কাউন্সিলিং এর কাজটা এই সোফা সেটে বসেই করে। মাহফুজ বসতেই বলে, বলুন আপনার কি সমস্যা?
প্রশ্ন শুনে মাহফুজ একটু থতমত খায়। প্রথম কথাই জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা? আসলে ফ্লোরা দেখেছে মানুষ লজ্জায় তার সমস্যা বলতে পারে না তাই নিজে থেকে কথা শুরু করার জন্য এই ডাইরেক্ট এপ্রোচ। মাহফুজ বলে জ্বি কোন সমস্যা না। ফ্লোরা মনে করে আরেকটা ক্লাসিকাল কেস। নিশ্চুয় সেক্স নিয়ে মনে অনেক ইচ্ছা কিন্তু মুখে বলতে পারে না। সেটা নিয়ে বউয়ের সাথে ঝামেলা। এখন এসেছে সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য। বউ কে নিশ্চয় কাউন্সিলিং করতে বলবে যাতে বউ আর খোলামেলা হয়। এইসব ক্ষেত্রে ফ্লোরা দেখেছে জামাই গুলো মনে ইচ্ছা থাকলেও নিজেরা কম লাজুক না। তাই খালি যে কাউন্সিলিং বউদের দরকার হয় সেটা না, এইসব লাজুক জামাইদেরও দরকার হয়। ফ্লোরা এই কয় বছরে প্যাটার্ন ধরে ফেলেছে এদের। তাই এদের সাথে ডিল করার তার নিজস্ব একটা উপায় আছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করা, বিভিন্ন জিনিস সরাসরি ব্যাখ্যা দেওয়া। যদি কথা বলে মনে হয় সত্যি সত্যি ইচ্ছা আছে বা আসলে কাউন্সিলিং এর উপদেশ ঠিক ভাবে মানবে তাহলে খালি সে তাদের কে কাউন্সিলিং এর জন্য নেয়। ফ্লোরা তাই বলে দেখুন আপনি নিশ্চয় আমার কাছে কার রেফারেন্সে এসেছেন। কাউন্সিলিং এর জন্য। মাহফুজ আকাশ থেকে পড়ে কোন কাউন্সিলিং। ফ্লোরা হাসান কি সাইকোলজিস্ট নাকি। মাহফুজের মুখের কনফিউশন দেখে ফ্লোরা ভাবেন আরেকটা লোক যার সেক্স নিয়ে আগ্রহ, নিশ্চয় কোন বন্ধুর মুখে শুনে চলে এসেছে কিন্তু ধারণা নাই জিনিসটা কি। তাই ফ্লোরা নিজেই ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। শুনুন আপনি নিশ্চয় ইন্টেমেসি কোচিং নাম শুনে এসেছেন, এটা আসলে কিন্তু এক ধরনের কাউন্সিলিং। আমার কাউন্সিলিং এর লাইসেন্স আছে। ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে আমার মাস্টার্স করা আছে। আপনি যে সমস্যা নিয়ে এসেছেনে প্রতি বছর অনেক কাপল আসে আমার কাছে এই সমস্যা নিয়ে। কাপলদের মাঝে ইন্টেমসি রিলেটেড প্রব্লেমের একটা বড় অংশ কিন্তু সাইকোলজিক্যাল। আমরা যৌন সমস্যা ভাবলেই খালি ভাবি ফিজিক্যাল কোন প্রবলেম বরং এর বাইরে যৌন সমস্যার একটা বড় অংশ যে সাইকোলজিক্যাল কেউ তা বলে না। আপনার যদি চাইল্ডহুড ট্রমা থাকে, কোন কিছু নিয়ে স্টেসড থাকেন, আপনার কনজারভেটিভ পরিবেশে যদি বড় হন যেখানে সেক্স মানেই বাচ্চা উতপাদন করার উপায় তাহলে আপনি কখনোই সেক্স কে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে নিতে পারবেন না। ফলে আপনার পার্টনারের সাথে আপনি ইন্টেমেট হতে গেলে সেটা প্রভাব ফেলবেই। আমার কাজ হচ্ছে দেখা আপনাদের সমস্যার কতটুকু সাইকোলজিক্যাল আর কতটুকু ফিজিক্যাল। ফিজিক্যাল হলে আমি এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের রেফার করব। আর সাইকোলজিক্যাল অংশটুক্কু আমি ডিল করব।
মাহফুজ ফ্লোরার কথা শুনে কিছুটা ধাধায় পড়ে যায়। ফ্লোরা কি ভাবছে ওকে? আর ফ্লোরা যে এক ধরনের সাইকোলজিস্ট এইটা সোলায়মান শেখ তো ওকে বলে নি। আর কি বলছে এই ইন্টেমেসি কাউন্সেলিং। শুনে মনে হচ্ছে এক ধরনের সেক্স সাইকোলজিস্ট টাইপ কিছু। এরকম কিছু কি সত্যি আছে? মাহফুজ পুরাই কনফিউজড। মাহফুজ তাই কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। ফ্লোরা বুঝে এখনো লজ্জা কাটে নি। ফ্লোরা বুঝে আরেকটু খোলাসা করে বলতে হবে। তাই বলে আমি কিন্তু এক ধরনের ডাক্টার। মনের ডাক্টার বলতে পারেন। নরমাল ডাক্টাররা যেমন কেউ হার্ট স্পেশালিস্ট, কেউ অর্থোপেডিক্স কেউ মেডিসিনের ডাক্টার। সাইকোলজিস্টরাও তেমন আছে। আমি ডিল করি মানুষের যৌনতার সাইকোলজিক্যাল দিক গুলা নিয়ে। আমাদের দেশে কত কাপল খালি প্রপার ট্রেইনিং এর অভাবে নিজেদের মাঝে অশান্তিতে থাকে। বিয়ের বাইরে সম্পর্ক খুজে নেয়। এইসব দূর করা যায় খালি যদি ঠিক কাউন্সিলিং করা যায়। বাংলাদেশে আর কেউ এই ব্যাপারে কাজ করে বলে আমি জানি না। আমিই প্রথম। আপনার কি কোন ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে সেক্স রিলেটেড। মাহফুজ জোড়ে মাথা নাড়ায়, না। ফ্লোরা বলে আপনার বউয়ের আছে? মাহফুজ বুঝে না ওর বৌ আসলে কে? সিনথিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে? কিন্তু সিনথিয়ার ব্যাপার আসবে কেন। ও তো এসেছে নুসাইবার দেখা করানোর ব্যবস্থা করতে। তবে নুসাইবা তো অন্যের বউ। হঠাত করে ওর বাসায় সেই দিনের দৃশ্য গুলো মাথায় চলে আসে। মাহফুজ টের পায় নুসাইবার আকর্ষণ ওর ভিতরে এখনো রয়ে গেছে। এই সময় ফ্লোরা মাহফুজ কে চুপ করে থাকতে দেখে বলে আপনার ওয়াইফের কি কোন সেক্স রিলেটেড প্রব্লেম আছে। মাহফুজ বলে না। ফ্লোরা বলে ঠিকাছে। তাহলে দেখুন আপনার যদি চান কাউন্সিলিং নিবেন তাহলে আমার কাছে আসতে পারেন। আমি শুরুতেই বলে দিচ্ছি আমার পার সেশন খরচ দশ হাজার টাকা। আর প্রথমেই আপনাকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে এন্ট্রি করতে হবে এবং সাথে এক সেশনের টাকা অগ্রিম দিতে হবে। ফ্লোরা ইচ্ছা করেই বেশি ফি রাখে যাতে সবাই আসতে না পারে। এটা ওর প্যাশন। টাকা কামাবার জায়গা না তবে টাকার পরিমাণ বেশি রাখলে পেসেন্ট কম থাকবে। আর যারা আসবে তাদের বেশি সময় দেওয়া যাবে। আর শুরুতেই ত্রিশ হাজার টাকা রাখে কারণ অনেক সময় অনেক পেশেন্ট সময় নিয়ে আর পরে লজ্জায় আসে না। এটা করলে যেন ওর সময় বরবাদ না হয় তাই এই এন্ট্রি ফি আর শুরুর টাকা অগ্রিম নেওয়া। মাহফুজ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। অস্বস্তি হয় ওর। তাই বলে আসলে আমি আরেকটু ভেবে দেখি। কয়দিন পরে নাহয় এসে এন্ট্রি করিয়ে যাব। ফ্লোরা হাসে। মনে মনে ভাবে এই লোক আর আসবে না। প্রতি মাসে এরকম দুই তিনটা কেস আসে। সাহস করে এখানে আসলেও আর কাউন্সিলিং পর্যন্ত যেতে পারে না। তাও ফ্লোরা বলে ওকে, আসবেন ঠিক করলে সামনের কাউন্টারে বলবেন কাউন্সিলিং এর কথা। ওরাই টাকা নিয়ে আমার সাথে কথা বলে সময় জানিয়ে দিবে। মাহফুজ বের হয়ে আসে। ফ্লোরা মনে মনে ভাবে কনফিউজড কাপল।
মাহফুজ বের হয়ে হেটে হেটে ওর মটরসাইকেলের কাছে যায়। এই রকম অভিজ্ঞতা ওর আগে হয় নি। কি ভেবে গিয়েছিল আর কি দেখে আসল। ফ্লোরা হাসান মহিলাটা সুন্দর আছে নো ডাউট। সেই সাথে কথা বার্তায় চটপটে, এলিগেন্ট আর একটা পশ ভাব আছে। তবে চেহারায় হালকা বয়সের ছাপ পড়েছে। তবে ফিগার অবশ্যই ভাল বলতে হবে । মাহফুজ ভেবেছিল ফ্লোরা হাসান হবে কোন এস্কর্ট গার্ল। পরে দেখল দোকানের মালিক। আর এখানে এসে দেখে সাইকোলজিস্ট। তাও সেক্স সাইকোলজিস্ট। মটরসাইকেলের পাশে ফুটপাতে বসে পড়ে। মোবাইলের গুগল করতে থাকে। ফ্লোরা হাসান যা বলছে তা সত্য। আসলেই ইন্টেমেসি কাউন্সিলিং বলে একটা জিনিসা আছে। সাইকোলজিস্টরা আসলেই সেক্সুয়াল ব্যাপার নিয়ে ডিল করে। এইসব ভাবতে ভাবতে মাহফুজের ভাবে নুসাইবা ফ্লোরার সাথে দেখা করতে চায়। কি পসিবল উপায় আছে? আরশাদ আর নুসাইবা যাবে ফ্লোরার সাথে দেখা করতে? নিজেই হেসে উঠে কতটা হাস্যকর হবে ব্যাপারটা। জামাই বউ মিলে গোপন প্রেমিকার কাছে যাচ্ছে সেক্সুয়াল পরামর্শ নিতে। দোকানে ফ্লোরার সাথে দেখা করা কঠিন। কারণ মাহফুজ টের পেয়েছে দোকানে সরাসরি খুব কম আসে ফ্লোরা। যখন আসে তখন পিছনে নিজের অফিসে বসে। তাই নুসাইবার জন্য কোন উপায় খুজে পায় না। ওর বাসার কথা মনে পড়ে। নাজনীন আর মাহমুদ। মাহফুজের মনে হয় এইটা করলে কেমন হয়। ছদ্মবেশ। কাপল হিসেবে সেখানে গেলে কেমন হয়। মাহফুজ হেসে উঠল আবার মনে মনে। নুসাইবা কে এইটা বললে কি হবে ভাবতেই পারছে না। রেগে সম্ভবত মাহফুজ কে খুন করে ফেলবে। নুসাইবা এই লাস্ট কয়দিনে যতবার কথা বলেছে ততবার এমন ভাব করেছে যাতে মনে হয় ওর বাসায় যেন কিছুই হয় নি। এখন কাপল সেজে ইন্টিমেসি কাউন্সিলিং এ যাবার কথা বললে নুসাইবার শকে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এই সময় ফোন আসল নুসাইবার। মাহফুজ ফোন ধরতেই নুসাইবা জিজ্ঞেস করল পারলে দেখা করার কোন ব্যবস্থা করতে। মাহফুজ বলল এখনো না। নুসাইবা সংগে সংগে বলল আমি ভেবেছিলাম তুমি দক্ষ ছেলে। এখন দেখি আমার ধারণা ভুল। একটা সাধারণ মিটিং করাতে পারলে এই প্রস্টিটিউটের সাথে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা রেগে আছে। নুসাইবা সব সময় খুব প্রিম এন্ড প্রপার। কোন খারাপ শব্দ উচ্চারণ করে না, কিন্তু এই কয়দিন মাহফুজ দেখেছে যতবার ফ্লোরার কথা উঠে ততবার প্রস্টিটিইট শব্দটা ছাড়া ফ্লোরার নাম উচ্চারণ করতে পারে না। নুসাইবা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে আই এম রিয়েলি ডিসএপয়েন্টড উইথ ইউ। এই বলে ফোন রেখে দেয়। মাহফুজ মেজাজ হারিয়ে ফেলে। আনগ্রেটফুল বিচ। এত কাজ করছি এর জন্য আর এখন পুরো কথা না শুনেই বলছে আমি কাজ পারি না। মাহফুজের মনে হয় আই নিড টু ডু সামথিং। মাথায় প্ল্যান খেলা করে যায় সংগে সংগে। এতক্ষণ যা খেলারচ্ছলে ভাবছিল সেটাই হবে মূল প্ল্যান বাট নুসাইবা ডাজেন্ট নিড টু নো। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। হেটে হেটে আবার ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজের ভিতরে যায়। ফ্লোরার সাথে দেখা করে বলে আমি রাজি। তবে আমার কিছু শর্ত আছে। ফ্লোরা হাসে। কনফিউজড কাপল যারা আবার ফিরে আসে তারা সব সময় ইন্টারেস্টিং কেস হয়। দেখা যাক এরা কেমন।
মাহফুজ অফিসে ঢুকে। সুন্দর করে ডেকরেট করা একটা অফিস। অনেক বড়। এক দিকে জানালার সামনে বড় একটা সেক্রেটারিয়ে টেবিল। টেবিল এর সামনে দুইটা চেয়ার। আর রুমের অন্য সাইডে সোফা। তিন সেট। দুই সেট মুখোমুখি। এই দুই সেটেই দুই জন করে বসতে পারবে। আর একটা সোফা ওয়ান সেট, একজন বসতে পারবে। ওয়ান সেট সোফার পাশে একটা সাইড টেবিল রাখা। সোফা এক সাইডে অন্য সাইডে দেয়াল জুড়ে বইয়ের তাক। দেয়ালে বেশ কয়েকটা ছবি আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে বেশ দামী। জানালার পাশে দুইটা ছোট ছোট টব ঝুলছে। টব গুলো থেকে মানিপ্ল্যান্ট জাতীয় একটা লতা গাছ দেয়াল বেয়ে নিচে নেমে এসেছে। বেশ এরিস্ট্রোক্রেটিক সাজ সজ্জা অফিসটার। মাহফুজ ভাবে ফ্লোরা ওকে নিয়ে টেবিলে বসাবে। কিন্তু ফ্লোরা ওকে নিয়ে একটা টু সিটার সোফায় বসতে বলে নিজে ওয়ান সিটার সোফায় বসে। আসলে ফ্লোরা ভাবছে মাহফুজ কাউন্সিলিং নিতে এসেছে। আর কাউন্সিলিং এর কাজটা এই সোফা সেটে বসেই করে। মাহফুজ বসতেই বলে, বলুন আপনার কি সমস্যা?
প্রশ্ন শুনে মাহফুজ একটু থতমত খায়। প্রথম কথাই জিজ্ঞেস করল কি সমস্যা? আসলে ফ্লোরা দেখেছে মানুষ লজ্জায় তার সমস্যা বলতে পারে না তাই নিজে থেকে কথা শুরু করার জন্য এই ডাইরেক্ট এপ্রোচ। মাহফুজ বলে জ্বি কোন সমস্যা না। ফ্লোরা মনে করে আরেকটা ক্লাসিকাল কেস। নিশ্চুয় সেক্স নিয়ে মনে অনেক ইচ্ছা কিন্তু মুখে বলতে পারে না। সেটা নিয়ে বউয়ের সাথে ঝামেলা। এখন এসেছে সেই সমস্যা সমাধান করার জন্য। বউ কে নিশ্চয় কাউন্সিলিং করতে বলবে যাতে বউ আর খোলামেলা হয়। এইসব ক্ষেত্রে ফ্লোরা দেখেছে জামাই গুলো মনে ইচ্ছা থাকলেও নিজেরা কম লাজুক না। তাই খালি যে কাউন্সিলিং বউদের দরকার হয় সেটা না, এইসব লাজুক জামাইদেরও দরকার হয়। ফ্লোরা এই কয় বছরে প্যাটার্ন ধরে ফেলেছে এদের। তাই এদের সাথে ডিল করার তার নিজস্ব একটা উপায় আছে। সরাসরি জিজ্ঞেস করা, বিভিন্ন জিনিস সরাসরি ব্যাখ্যা দেওয়া। যদি কথা বলে মনে হয় সত্যি সত্যি ইচ্ছা আছে বা আসলে কাউন্সিলিং এর উপদেশ ঠিক ভাবে মানবে তাহলে খালি সে তাদের কে কাউন্সিলিং এর জন্য নেয়। ফ্লোরা তাই বলে দেখুন আপনি নিশ্চয় আমার কাছে কার রেফারেন্সে এসেছেন। কাউন্সিলিং এর জন্য। মাহফুজ আকাশ থেকে পড়ে কোন কাউন্সিলিং। ফ্লোরা হাসান কি সাইকোলজিস্ট নাকি। মাহফুজের মুখের কনফিউশন দেখে ফ্লোরা ভাবেন আরেকটা লোক যার সেক্স নিয়ে আগ্রহ, নিশ্চয় কোন বন্ধুর মুখে শুনে চলে এসেছে কিন্তু ধারণা নাই জিনিসটা কি। তাই ফ্লোরা নিজেই ব্যাখ্যা দিতে থাকেন। শুনুন আপনি নিশ্চয় ইন্টেমেসি কোচিং নাম শুনে এসেছেন, এটা আসলে কিন্তু এক ধরনের কাউন্সিলিং। আমার কাউন্সিলিং এর লাইসেন্স আছে। ক্লিনিকাল সাইকোলজিতে আমার মাস্টার্স করা আছে। আপনি যে সমস্যা নিয়ে এসেছেনে প্রতি বছর অনেক কাপল আসে আমার কাছে এই সমস্যা নিয়ে। কাপলদের মাঝে ইন্টেমসি রিলেটেড প্রব্লেমের একটা বড় অংশ কিন্তু সাইকোলজিক্যাল। আমরা যৌন সমস্যা ভাবলেই খালি ভাবি ফিজিক্যাল কোন প্রবলেম বরং এর বাইরে যৌন সমস্যার একটা বড় অংশ যে সাইকোলজিক্যাল কেউ তা বলে না। আপনার যদি চাইল্ডহুড ট্রমা থাকে, কোন কিছু নিয়ে স্টেসড থাকেন, আপনার কনজারভেটিভ পরিবেশে যদি বড় হন যেখানে সেক্স মানেই বাচ্চা উতপাদন করার উপায় তাহলে আপনি কখনোই সেক্স কে একটা স্বাভাবিক ব্যাপার হিসেবে নিতে পারবেন না। ফলে আপনার পার্টনারের সাথে আপনি ইন্টেমেট হতে গেলে সেটা প্রভাব ফেলবেই। আমার কাজ হচ্ছে দেখা আপনাদের সমস্যার কতটুকু সাইকোলজিক্যাল আর কতটুকু ফিজিক্যাল। ফিজিক্যাল হলে আমি এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের রেফার করব। আর সাইকোলজিক্যাল অংশটুক্কু আমি ডিল করব।
মাহফুজ ফ্লোরার কথা শুনে কিছুটা ধাধায় পড়ে যায়। ফ্লোরা কি ভাবছে ওকে? আর ফ্লোরা যে এক ধরনের সাইকোলজিস্ট এইটা সোলায়মান শেখ তো ওকে বলে নি। আর কি বলছে এই ইন্টেমেসি কাউন্সেলিং। শুনে মনে হচ্ছে এক ধরনের সেক্স সাইকোলজিস্ট টাইপ কিছু। এরকম কিছু কি সত্যি আছে? মাহফুজ পুরাই কনফিউজড। মাহফুজ তাই কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। ফ্লোরা বুঝে এখনো লজ্জা কাটে নি। ফ্লোরা বুঝে আরেকটু খোলাসা করে বলতে হবে। তাই বলে আমি কিন্তু এক ধরনের ডাক্টার। মনের ডাক্টার বলতে পারেন। নরমাল ডাক্টাররা যেমন কেউ হার্ট স্পেশালিস্ট, কেউ অর্থোপেডিক্স কেউ মেডিসিনের ডাক্টার। সাইকোলজিস্টরাও তেমন আছে। আমি ডিল করি মানুষের যৌনতার সাইকোলজিক্যাল দিক গুলা নিয়ে। আমাদের দেশে কত কাপল খালি প্রপার ট্রেইনিং এর অভাবে নিজেদের মাঝে অশান্তিতে থাকে। বিয়ের বাইরে সম্পর্ক খুজে নেয়। এইসব দূর করা যায় খালি যদি ঠিক কাউন্সিলিং করা যায়। বাংলাদেশে আর কেউ এই ব্যাপারে কাজ করে বলে আমি জানি না। আমিই প্রথম। আপনার কি কোন ফিজিক্যাল প্রবলেম আছে সেক্স রিলেটেড। মাহফুজ জোড়ে মাথা নাড়ায়, না। ফ্লোরা বলে আপনার বউয়ের আছে? মাহফুজ বুঝে না ওর বৌ আসলে কে? সিনথিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে? কিন্তু সিনথিয়ার ব্যাপার আসবে কেন। ও তো এসেছে নুসাইবার দেখা করানোর ব্যবস্থা করতে। তবে নুসাইবা তো অন্যের বউ। হঠাত করে ওর বাসায় সেই দিনের দৃশ্য গুলো মাথায় চলে আসে। মাহফুজ টের পায় নুসাইবার আকর্ষণ ওর ভিতরে এখনো রয়ে গেছে। এই সময় ফ্লোরা মাহফুজ কে চুপ করে থাকতে দেখে বলে আপনার ওয়াইফের কি কোন সেক্স রিলেটেড প্রব্লেম আছে। মাহফুজ বলে না। ফ্লোরা বলে ঠিকাছে। তাহলে দেখুন আপনার যদি চান কাউন্সিলিং নিবেন তাহলে আমার কাছে আসতে পারেন। আমি শুরুতেই বলে দিচ্ছি আমার পার সেশন খরচ দশ হাজার টাকা। আর প্রথমেই আপনাকে বিশ হাজার টাকা দিয়ে এন্ট্রি করতে হবে এবং সাথে এক সেশনের টাকা অগ্রিম দিতে হবে। ফ্লোরা ইচ্ছা করেই বেশি ফি রাখে যাতে সবাই আসতে না পারে। এটা ওর প্যাশন। টাকা কামাবার জায়গা না তবে টাকার পরিমাণ বেশি রাখলে পেসেন্ট কম থাকবে। আর যারা আসবে তাদের বেশি সময় দেওয়া যাবে। আর শুরুতেই ত্রিশ হাজার টাকা রাখে কারণ অনেক সময় অনেক পেশেন্ট সময় নিয়ে আর পরে লজ্জায় আসে না। এটা করলে যেন ওর সময় বরবাদ না হয় তাই এই এন্ট্রি ফি আর শুরুর টাকা অগ্রিম নেওয়া। মাহফুজ কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। অস্বস্তি হয় ওর। তাই বলে আসলে আমি আরেকটু ভেবে দেখি। কয়দিন পরে নাহয় এসে এন্ট্রি করিয়ে যাব। ফ্লোরা হাসে। মনে মনে ভাবে এই লোক আর আসবে না। প্রতি মাসে এরকম দুই তিনটা কেস আসে। সাহস করে এখানে আসলেও আর কাউন্সিলিং পর্যন্ত যেতে পারে না। তাও ফ্লোরা বলে ওকে, আসবেন ঠিক করলে সামনের কাউন্টারে বলবেন কাউন্সিলিং এর কথা। ওরাই টাকা নিয়ে আমার সাথে কথা বলে সময় জানিয়ে দিবে। মাহফুজ বের হয়ে আসে। ফ্লোরা মনে মনে ভাবে কনফিউজড কাপল।
মাহফুজ বের হয়ে হেটে হেটে ওর মটরসাইকেলের কাছে যায়। এই রকম অভিজ্ঞতা ওর আগে হয় নি। কি ভেবে গিয়েছিল আর কি দেখে আসল। ফ্লোরা হাসান মহিলাটা সুন্দর আছে নো ডাউট। সেই সাথে কথা বার্তায় চটপটে, এলিগেন্ট আর একটা পশ ভাব আছে। তবে চেহারায় হালকা বয়সের ছাপ পড়েছে। তবে ফিগার অবশ্যই ভাল বলতে হবে । মাহফুজ ভেবেছিল ফ্লোরা হাসান হবে কোন এস্কর্ট গার্ল। পরে দেখল দোকানের মালিক। আর এখানে এসে দেখে সাইকোলজিস্ট। তাও সেক্স সাইকোলজিস্ট। মটরসাইকেলের পাশে ফুটপাতে বসে পড়ে। মোবাইলের গুগল করতে থাকে। ফ্লোরা হাসান যা বলছে তা সত্য। আসলেই ইন্টেমেসি কাউন্সিলিং বলে একটা জিনিসা আছে। সাইকোলজিস্টরা আসলেই সেক্সুয়াল ব্যাপার নিয়ে ডিল করে। এইসব ভাবতে ভাবতে মাহফুজের ভাবে নুসাইবা ফ্লোরার সাথে দেখা করতে চায়। কি পসিবল উপায় আছে? আরশাদ আর নুসাইবা যাবে ফ্লোরার সাথে দেখা করতে? নিজেই হেসে উঠে কতটা হাস্যকর হবে ব্যাপারটা। জামাই বউ মিলে গোপন প্রেমিকার কাছে যাচ্ছে সেক্সুয়াল পরামর্শ নিতে। দোকানে ফ্লোরার সাথে দেখা করা কঠিন। কারণ মাহফুজ টের পেয়েছে দোকানে সরাসরি খুব কম আসে ফ্লোরা। যখন আসে তখন পিছনে নিজের অফিসে বসে। তাই নুসাইবার জন্য কোন উপায় খুজে পায় না। ওর বাসার কথা মনে পড়ে। নাজনীন আর মাহমুদ। মাহফুজের মনে হয় এইটা করলে কেমন হয়। ছদ্মবেশ। কাপল হিসেবে সেখানে গেলে কেমন হয়। মাহফুজ হেসে উঠল আবার মনে মনে। নুসাইবা কে এইটা বললে কি হবে ভাবতেই পারছে না। রেগে সম্ভবত মাহফুজ কে খুন করে ফেলবে। নুসাইবা এই লাস্ট কয়দিনে যতবার কথা বলেছে ততবার এমন ভাব করেছে যাতে মনে হয় ওর বাসায় যেন কিছুই হয় নি। এখন কাপল সেজে ইন্টিমেসি কাউন্সিলিং এ যাবার কথা বললে নুসাইবার শকে মাথা খারাপ হয়ে যাবে। এই সময় ফোন আসল নুসাইবার। মাহফুজ ফোন ধরতেই নুসাইবা জিজ্ঞেস করল পারলে দেখা করার কোন ব্যবস্থা করতে। মাহফুজ বলল এখনো না। নুসাইবা সংগে সংগে বলল আমি ভেবেছিলাম তুমি দক্ষ ছেলে। এখন দেখি আমার ধারণা ভুল। একটা সাধারণ মিটিং করাতে পারলে এই প্রস্টিটিউটের সাথে। মাহফুজ বুঝে নুসাইবা রেগে আছে। নুসাইবা সব সময় খুব প্রিম এন্ড প্রপার। কোন খারাপ শব্দ উচ্চারণ করে না, কিন্তু এই কয়দিন মাহফুজ দেখেছে যতবার ফ্লোরার কথা উঠে ততবার প্রস্টিটিইট শব্দটা ছাড়া ফ্লোরার নাম উচ্চারণ করতে পারে না। নুসাইবা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলে আই এম রিয়েলি ডিসএপয়েন্টড উইথ ইউ। এই বলে ফোন রেখে দেয়। মাহফুজ মেজাজ হারিয়ে ফেলে। আনগ্রেটফুল বিচ। এত কাজ করছি এর জন্য আর এখন পুরো কথা না শুনেই বলছে আমি কাজ পারি না। মাহফুজের মনে হয় আই নিড টু ডু সামথিং। মাথায় প্ল্যান খেলা করে যায় সংগে সংগে। এতক্ষণ যা খেলারচ্ছলে ভাবছিল সেটাই হবে মূল প্ল্যান বাট নুসাইবা ডাজেন্ট নিড টু নো। মাহফুজ উঠে দাঁড়ায়। হেটে হেটে আবার ফ্লোরা বুটিক এন্ড ফ্যাশন হাউজের ভিতরে যায়। ফ্লোরার সাথে দেখা করে বলে আমি রাজি। তবে আমার কিছু শর্ত আছে। ফ্লোরা হাসে। কনফিউজড কাপল যারা আবার ফিরে আসে তারা সব সময় ইন্টারেস্টিং কেস হয়। দেখা যাক এরা কেমন।